জাগো তবে অরণ্য কন্যারা- সুফিয়া কামাল

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা
জাগো তবে অরণ্য কন্যারা

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা
সুফিয়া কামাল

মৌসুমি ফুলের গান মোর কণ্ঠে জাগে নাকো আর
চারিদিকে শুনি হাহাকার
ফুলের ফসল নেই, নেই কারও কণ্ঠে আর গান
ক্ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন সব মুখ স্নান

মাটি অরণ্যে র পানে চায়
সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবেনিবিড় ছায়ায়।
জাগো তবে অরণ্য কন্যারা।। জাগো আজি,
মর্মরে মর্মরে ওঠে বাজি
বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা
মেলি লেলিহান শিখা তোমরা জাগিয়া ওঠো বালা!
কঙ্কণে তুলিয়া ছন্দ তান
জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ
ফুলের ফসল আনো, খাদ্য আনো ক্ষুধার্তের লাগি
আত্মার আনন্দ আনো, আনো যারা রহিয়াছে জাগি
তিমির প্রহর ভরি অতন্দ্র নয়ন, তার তরে
ছড়াও প্রভাত আলো তোমাদের মুঠি ভরে ভরে [অংশবিশেষ]

চিত্রকর: তাসরিক আহসান; ৬ষ্ঠ শ্রেণি
চিত্রকর: তাসরিক আহসান; ৬ষ্ঠ শ্রেণি
‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার উৎস নির্দেশ :
‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতাটি সুফিয়া কামালের ‘উদাত্ত পৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার শব্দার্থ ও টীকা :
➠ হাহাকার- আর্তনাদের উচ্চধ্বনি।
ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি- প্রকৃতিতে ফুল ও ফসলের সম্ভার কমে যাওয়ায় মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় মানুষ ভীত।
➠ স্নান- মলিন।
➠ অরণ্য- বন; জঙ্গল।
➠ ক্ষরিছে- চুয়ে চুয়ে পড়ছে।
➠ পল্লব- গাছের নতুন পাতা। ডালের নতুন পাতাযুক্ত আগা।
➠ নিবিড়- ঘন।
সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়ায়।- মাটির মমতা রস পেয়ে বৃক্ষ শাখায় নতুন পাতা গজিয়েছে।
জাগো তবে অরণ্য কন্যারা- কবি বৃক্ষ-কন্যাদের জেগে ওঠার আহবান জানাচ্ছেন প্রকৃতিকে আবার শ্যামল সবুজে ফলে-ফুলে ভরিয়ে তোলার জন্যে।
➠ মর্মরে মর্মরে- শুকনো পাতা মাড়ানোর শব্দ।
➠ বক্ষ- বুক।
➠ বহ্নিজ্বালা- অগ্নিশিখা।
বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা- মানুষ প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ করায় বন উজাড় হচ্ছে। বৃক্ষনিধন বাড়ছে। বৃক্ষের বুকে তাই যন্ত্রণার আগুন।
➠ লেলিহান- পুনঃপুন লেহনকারী।
মেলি লেলিহান শিখা- কবি তবু কন্যাকে আহ্বান জানাচ্ছেন তার শাখায় শাখায় আগুন রঙা ফুল ফুটিয়ে আকাশে শাখা বিস্তার করতে।
➠ কঙ্কণ- কাঁকন, নারীর হাতের অলঙ্কার বিশেষ।
➠ তান- সংগীতের সুর।
➠ মুমুর্ষু- মৃতপ্রায়; মরণাপন্ন; মরে যাচ্ছে এমন।
ধরা-প্রাণ- পৃথিবীর জীবন।
➠ তিমির- অন্ধকার।
➠ প্রহর- ৩ঘণ্টা সময়।
➠ অতন্দ্র- তন্দ্রাহীন। ঘুমহীন। নির্ঘুম। নিদ্রাহীন।
➠ নয়ন- চোখ।

‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার পাঠের উদ্দেশ্য :
এ কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতি জগতের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে আগ্রহী হবে এবং প্রকৃতির ঐশ্বর্য রক্ষায় সচেতন হবে।

‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব :
‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতাটিতে প্রকৃতির রূপ-সচেতন কবি চারপাশের অরণ্য-নিধন লক্ষ্য করে ব্যথিত। তাই মৌসুমি ফুলের গান আর তার কণ্ঠে জাগে না। বরং চারপাশে সবুজ প্রকৃতির বিলীন হওয়া দেখে তাঁর মন হাহাকার করে ওঠে। কবি তাই অরণ্য-কন্যাদের জাগরণ প্রত্যাশা করেন। তিনি চান দিকে দিকে আবার সবুজ বৃক্ষের সমারোহের সৃষ্টি হোক; ফুলে ও ফসলে ভরে উঠুক পৃথিবী; মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা পাক বিপন্নতার হাত থেকে।

চিত্রকর: জাহারাতুল জান্নাহ আরুশা; ৩য় শ্রেণি
চিত্রকর: জাহারাতুল জান্নাহ আরুশা; ৩য় শ্রেণি
‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবি পরিচিতি :
সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০শে জুন বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদ গ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল কুমিল্লায়। সে আমলে মেয়েদের লেখাপড়ার মোটেই সুযোগ ছিল না। তিনি নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শিখে ছোটবেলা থেকেই কবিতাচর্চা শুরু করেছিলেন। কিছুকাল তিনি কলকাতার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সুদীর্ঘকাল ধরে সাহিত্যচর্চা, সমাজসেবা ও নারীকল্যাণমূলক নানা কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর কবিতা সহজ, ভাষা সুললিত, ছন্দ ব্যঞ্জনাময়। কবি সুফিয়া কামালের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো: সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মোর যাদুদের সমাধি পরে। তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ একাত্তরের ডাইরি; শিশুদের জন্য তিনি লিখেছেন ইতল বিতল ও নওল কিশোরের দরবারে
কবি সুফিয়া কামাল তাঁর কবি প্রতিভার জন্য অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন। সেসব হলো: বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, একুশে পদক, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার, মুক্তধারা ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ইত্যাদি।
তিনি ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কর্ম-অনুশীলন :
ক. প্রকৃতিতে রক্ষার ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি যুক্ত করে পোস্টার তৈরি করো (একক কাজ)।
খ. বাড়িতে একটি গাছ লাগাও এবং এই ছবি শ্রেণিকক্ষে প্রর্দশনের ব্যবস্থা করো।

চিত্রকর: হৃদ্ধি চাকমা; ৩য় শ্রেণি
চিত্রকর: হৃদ্ধি চাকমা; ৩য় শ্রেণি
‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ০১: সুফিয়া কামাল কোথায় জন্মগ্রহণ?
উত্তর : সুফিয়া কামাল বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন- ০২: কার কণ্ঠে মৌসুমি ফুলের গান জাগে না?
উত্তর : কবির কণ্ঠে মৌসুমি ফুলের গান জাগে না।
প্রশ্ন- ০৩: কবি চারদিকে কী শোনেন?
উত্তর : কবি চারদিকে হাহাকার শোনেন।
প্রশ্ন- ০৪: ফুলের কী নেই?
উত্তর : ফুলের ফসল নেই।
প্রশ্ন- ০৫: সব মুখ কী?
উত্তর : সব মুখ ম্লান।
প্রশ্ন- ০৬: কোথায় স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়া ক্ষরিত হচ্ছে?
উত্তর : অরণ্যে স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়া ক্ষরিত হচ্ছে।
প্রশ্ন- ০৭: কবি কাদের জাগতে বলেছেন?
উত্তর : কবি অরণ্য কন্যাদের জাগতে বলেছেন।
প্রশ্ন- ০৮: কবি কাদের মর্মরে মর্মরে বেজে জেগে উঠতে বলেছেন?
উত্তর : কবি অরণ্য কন্যাদের মর্মরে মর্মরে বেজে জেগে উঠতে বলেছেন।
প্রশ্ন- ০৯: লেলিহান শিখা মেলে কাদের জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়েছে?
উত্তর : অরণ্য কন্যাদের লেলিহান শিখা মেলে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রশ্ন- ১০: মুমূর্ষু প্রাণ কীভাবে জাগাতে বলা হয়েছে?
উত্তর : কঙ্কণে ছন্দ তান তুলে মুমূর্ষু প্রাণ জাগাতে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন- ১১: ফুলের জন্য কী আনতে বলা হয়েছে?
উত্তর : ফুলের জন্য ফসল আনতে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন- ১২: কবি সুফিয়া কামাল কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : কবি সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন- ১৩: ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থটি কার লেখা।
উত্তর : ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থটি কবি সুফিয়া কামালের লেখা।
প্রশ্ন- ১৪: ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি কী লক্ষ করে ব্যথিত হয়েছেন?
উত্তর : ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবি নির্বিচারে অরণ্য নিধন লক্ষ্য করে ব্যথিত হয়েছেন।
প্রশ্ন- ১৫: ‘ধরা-প্রাণ’ কথাটির অর্থ কী?
উত্তর : ধরা-প্রাণ কথাটির অর্থ হলো পৃথিবীর জীবন।
প্রশ্ন- ১৬: ক্ষরিছে শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ক্ষরিছে শব্দটির অর্থ হচ্ছে চুয়ে চুয়ে পড়ছে।
প্রশ্ন- ১৭: কঙ্কণ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : কঙ্কণ শব্দের অর্থ হলো কাঁকন, নারীর হাতের অলঙ্কার বিশেষ।
প্রশ্ন- ১৮: বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় কারা ভীত?
উত্তর : বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় মানুষ ভীত।

‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :

প্রশ্ন- ১: “মেলি লেলিহান শিখা তোমরা জাগিয়া ওঠো বলো!”- চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘মেলি লেলিহান শিখা তোমরা জাগিয়া ওঠো বলো!”চরণটি দ্বারা কবি তরুকন্যাকে আহ্বান জানিয়েছেন আগুন রাঙা ফুল ফুটিয়ে আকাশে শাখা বিস্তার করতে।
সুফিয়া কামাল তার কবিতায় বর্তমান সময়ে বৃক্ষনিধনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাই মৌসুমি ফুলের গান আর তার কণ্ঠে জাগে না। বরং চারপাশের সবুজ প্রকৃতির বিলীন হওয়া দেখে তার মন হাহাকার করে ওঠে। এ অবস্থা থেকে বৃক্ষকে কবি জেগে উঠতে বলেছেন। ফুলের সমারোহে আকাশ রঙিন করতে বলেছেন আলোচ্য চরণ দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন- ২: কবি কঙ্কণে ছন্দ তুলে কী করতে বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কবি কঙ্কণে ছন্দ তুলে মরণাপন্ন পৃথিবীর জীবন জাগিয়ে তুলতে বলেছেন।
প্রকৃতিতে ফুল ও ফসলের সম্ভার কমে যাওয়ায় সবুজ-শ্যামল পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। কবি তাই তরুকন্যাকে আগুনের লেলিহান শিখার মতো জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। কঙ্কণে ছন্দ তুলে বিপন্নতার হাত থেকে প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলার কথা বলেছেন।

প্রশ্ন- ৩: ‘ছড়াও প্রভাত আলো তোমাদের মুঠি ভরে ভরে’- এ আহ্বানের মাধ্যমে কবি কোথায় আলো ছড়াতে বলেছেন?
উত্তর : বিনিদ্র চোখে যারা জেগে আছে, কবি তাদের জন্য আলো ছড়িয়ে দিতে বলেছেন।
কবি তরুকন্যাকে জেগে উঠতে বলেছেন, ফসল আনতে, ক্ষুধার্তের জন্য খাদ্য আনতে। নির্ঘুম চোখে যারা জেগে আছে কবি তাদের মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিতে বলেছেন।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
দোয়েল পাখি বাসা বেঁধেছে জবা গাছে। সোহেল তার নতুন ঘর তোলার জন্য আঙিনার অন্যান্য গাছের সাথে জবা গাছও কেটে ফেলে। দোয়েলের চোখে-মুখে বাসা হারানোর বেদনা। দোয়েল আর গান গায় না। ফুলের সাথে খেলা করে না। অন্যদিকে নিলয় তার বাড়ির আঙিনার খালি জায়গায় ফুল, ফল ও অন্যান্য গাছ লাগায়। গাছগুলোকে সে নিজের মতো ভালোবাসে। তার বাগান দেখে সকলের চোখ জুড়ায়। পাখিরা তার বাগানে চলে আসে। তারা গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন ফলের গাছ থেকে খাদ্য জোগাড় করে, ফুলের সাথে খেলা করে, গান গায়। দিনের শেষে নিশ্চিন্ত মনে বাসায় ফিরে ঘুমায়। নিলয়কে দেখে অনেকেই গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ হয়।

ক. গাছের নতুন পাতাকে কী বলে?
খ. ‘বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
গ. দোয়েলের অভিব্যক্তিতে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের নিলয়ের কর্মকাণ্ডের মধ্যেই কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে বক্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

ক. গাছের নতুন পাতাকে পল্লব বলে।
খ. ‘বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা’ বলতে প্রকৃতিজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় বৃক্ষের বুকের যন্ত্রণাকাতর অভিব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
➠ মানুষ প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ করায় বন উজাড় হচ্ছে। নানা কারণে মানুষ বৃক্ষনিধন করছে। দিনের পর দিন তা বেড়েই চলেছে। এসব দেখে কবির মনে ধারণা জন্মেছে যে, এভাবে বৃক্ষ নিধনের কারণে বৃক্ষের বুকে যন্ত্রণার আগুন জ্বলছে। ‘বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা’ বলতে কবির কল্পিত বৃক্ষের বুকের এই যন্ত্রণার আগুনকেই বোঝানো হয়েছে।

গ. দোয়েলের অভিব্যক্তিতে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় অস্তিত্ব বিপন্ন মানুষের দুঃখ ভারাক্রান্ত ব্যথিত হৃদয়ের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় বেগম সুফিয়া কামাল বৃক্ষ নিধনের নিদারুণ চিত্র তুলে ধরেছেন। তার রচনায় প্রকাশ পেয়েছে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রকৃতির বৃক্ষহীন, প্রাণহীন, মরুপ্রায় অবস্থা। আরও ফুটে উঠেছে, এভাবে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে পৃথিবীর মানুষ যারা খাদ্যের জন্য বৃক্ষের ওপর নির্ভরশীল তাদের ভীতি ও শঙ্কিত মলিন মুখাবয়ব। তাই কবির কণ্ঠে আজ আর বসন্ত ফুলের গান বেজে ওঠে না। তার যন্ত্রণাকাতর হৃদয়ে আজ শুধু অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান।
➠ উদ্দীপকে দোয়েল পাখির অভিব্যক্তিতেও কবির মতো একই বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কেননা সে সোহেলদের আঙিনার জবা গাছে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু নতুন ঘর তোলার জন্য সোহেল আঙিনার অন্যান্য গাছের সঙ্গে জবা গাছও কেটে ফেলেছে। দোয়েলের চোখে-মুখে আজ তাই বাসা হারানোর বেদনা। কবির মতো সেও আজ আর গান গায় না। খেলা করে না ফুলের সঙ্গে। সামগ্রিক আলোচনায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আশ্রয়হীন দোয়েলের অভিব্যক্তিতে “জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় মানুষের অনিশ্চিত জীবনের বিপর্যয়ের দিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. ‘উদ্দীপকে নিলয়ের কর্মকাণ্ডের মধ্যেই কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।’-বক্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় দেখা যায়, পৃথিবীর মানুষের নির্বিচার বৃক্ষ নিধনে প্রকৃতি হয়ে পড়ছে প্রাণশূন্য। তাই কবি অত্যন্ত ব্যথিত ও ভারাক্রান্ত। তার কণ্ঠে আজ আর বসন্ত ফুলের গান জাগে না। চারপাশে সবুজ প্রকৃতির বিলীন হওয়া দেখে তার মন হাহাকার করে ওঠে। তাই আজ তার কণ্ঠে শুধু অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান। যাতে পৃথিবী নতুন করে আবার সবুজে শ্যামলে, ফুলে-ফলে ভরে ওঠে। আর এভাবে তারা ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করে বিপন্নতার হাত থেকে।
➠ উদ্দীপকের নিলয় তার বাড়ির আঙিনায় ফুল, ফল ও অন্যান্য গাছ লাগায়। পাখিরা তার বাগানে ঘুরে বেড়ায় গাছ থেকে গাছে খাদ্য সংগ্রহ করে, ফুলের সঙ্গে খেলা করে, গান করে। দিন শেষে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়। তার বাগান দেখে সকলের চোখ জুড়ায়। বিপন্ন মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় কবির এ রূপ জগৎই ছিল প্রত্যাশিত। অর্থাৎ কবি বৃক্ষ নিধনের ভয়াবহতা অনুধাবন করে ব্যথিতচিত্তে যে উদ্দেশ্যে অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন, নিলয়ের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়েছে।
➠ সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের পরিবেশে সচেতন নিলয়ের কর্মকাণ্ডের মধ্যেই কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ০২:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সিডরের খবর শুনে তিয়ার ভীষণ মন খারাপ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ঘর-বাড়ি হারা, খাবার নেই। কী ভীষণ বিপন্ন মানুষ। অথচ এর জন্য মানুষই অনেকটা দায়ী। মানুষ গাছ কেটে বন উজাড় করছে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। এসব দেখে তিয়া অনুভব করে একটা কিছু করবে। সে তার বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির খালি আঙিনায়, ছাদে গাছ লাগানোর জন্য মানুষকে সচেতন করে তোলে। তাছাড়া গাছ কেটে বন উজাড় করার বিরুদ্ধে সে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সে ভাবে এই সুন্দর বনই অনেক বেশি ক্ষতির হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়েছে। তিয়া স্বপ্ন দেখে ফুলে-ফলে ভরা সতেজ-সবুজ প্রকৃতির।

ক. কবি সুফিয়া কামাল এখন আর কীসের গান শুনতে পান না?
খ. ‘ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. তিয়ার মন খারাপের বিষয়টির সাথে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কোন দিকটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘তিয়া যেন কবির সেই অরণ্য কন্যা’- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

ক. কবি সুফিয়া কামাল এখন আর ফুল, ফসলের গান শুনতে পান না।
খ. ‘ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি’ বলতে কবি বৃক্ষ নিধনের কারণে ভীত ও ক্ষুধার্ত সাধারণ মানুষের ভয়ার্ত অভিব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন।
➠ নানা কারণে পৃথিবীর মানুষ প্রতিনিয়ত বৃক্ষ-নিধন করে চলছে। অথচ এই বৃক্ষ আমাদের খাদ্য চাহিদার পাশাপাশি কিছু মানসিক চাহিদাও পূরণ করে। প্রকৃতিতে ফুল ও ফসলের সম্ভার কমে যাওয়ায় মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। আপন অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় মানুষ তাই ভীত। মানুষের এই অভিব্যক্তিকেই কবিতায় ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি এ শব্দগুলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

গ. তিয়ার মন খারাপের বিষয়টির সাথে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি হৃদয়ের ব্যথাতুর দিকটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় দেখা যায় নির্বিচারে মানুষের বৃক্ষ-নিধন কবিকে ব্যথিত করে তোলে। কবি চারিদিকে বৃক্ষশূন্যতা ফসলহীনতা, পাখির কলরবহীন আর ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত মানুষের সম্মিলনে গঠিত পরিবেশ দেখে শঙ্কিত। কেননা এভাবে অবাধে বৃক্ষ নিধন চলতে থাকলে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয়ে বিপন্ন হবে মানুষের অস্তিত্ব। তাই কবিতার মাধ্যমে পরিবেশের প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে।
➠ উদ্দীপকেও দেখা যায়, সিডরের খবর শুনে তিয়ার মন খারাপ। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ঘরবাড়ি হারায়, অনাহারে থাকে। আর তার মতে, এজন্য মানুষই অনেকটা দায়ী। কারণ, মানুষ বন কেটে উজাড় করায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই সিডরের মতো মহাদুর্যোগ দেখা দিয়েছে। সুতরাং, প্রকৃতির প্রতি মনুষ্যসত্তার প্রবল অনভূতিই প্রকাশ পেয়েছে কবিতার কবি ও উদ্দীপকের তিয়ার মাঝে।

ঘ. “তিয়া যেন কবির সেই অরণ্য কন্যা”- এ উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবির প্রকৃতির প্রতি গভীর মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নির্বিচারে পৃথিবীর মানুষ বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে ফুল-ফসলহীন, কবির কণ্ঠে নেই গান। বরং চারপাশের সবুজ প্রকৃতির বিলীন হওয়া দেখে তার মন দুঃখ ভারাক্রান্ত। অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় মানুষ হয়ে পড়েছে ভীত-শঙ্কিত। আর সমস্ত কিছু দেখে কবি ব্যথিত ভারাক্রান্তচিত্তে অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
➠ উদ্দীপকে তিয়াকে দেখা যায়, সিডরের খবরে বিপন্ন মানুষের কথা চিন্তা করে সে ব্যথিত হয়। আর এর কারণ অনুধাবন করে সে তার বন্ধুদের নিয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযানে নেমে পড়ে। তাছাড়া বন উজাড় করার বিরুদ্ধে সে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আর এভাবে সে কবির মতো স্বপ্ন দেখে ফুলে ফলে ভরা শ্যামল-সবুজ প্রকৃতির যা আমাদের রক্ষা করবে বিপন্নতার হাত থেকে। কবি অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের আহ্বান জানিয়েছেন পৃথিবীকে সবুজে শ্যামলে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্দীপকের তিয়া সিডরের ভয়াবহতা অনুধাবন করে অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের মতো জেগে উঠেছে। পৃথিবীকে সবুজে শ্যামলে, ফুলে-ফলে ভরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষার জন্য যেন সে কবির আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।
➠ তাই উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায়, তিয়া যেন কবির সেই অরণ্য কন্যা।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ০৩:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাকা স্কুল থেকে ফিরে দেখে আসবাব বানানোর জন্য জামগাছটা কেটে ফেলা হয়েছে। রাকা অভিমান করে বলল, জামগাছটায় সকালে দুটি সুন্দর হলদে পাখি এসে বসে, আমি নির্মল বাতাসে দোলনায় দোল খাই- সেটা তুমি কেটে ফেললে বাবা! রাকার অভিমান উপলব্ধি করে বাবা বাড়ির আঙিনায় বেশ ক’টি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ক. কবি সুফিয়া কামালের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
খ. মাটি অরণ্যের পানে চায় কেন?
গ. উদ্দীপকের রাকার মাঝে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবির যে চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রাকার বাবার উপলব্ধি যেন কবি সুফিয়া কামালের উপলব্ধিকেই অনুসরণ- বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক. কবি সুফিয়া কামালের পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়।
খ. মাটি অরণ্যের দিকে চেয়ে থাকার কারণ হলো- অরণ্যে ফুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, ফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা মাটিকে প্রাচুর্য দিতে পারে।
➠ পৃথিবীর যেখানে অরণ্য বেশি থাকে, সেখানে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। আর বৃষ্টি হলেই মাটি প্রাণ ফিরে পায়। প্রাণ ফিরে পাওয়ার নিমিত্তেই মাটি অরণ্যের দিকে চেয়ে থাকে। কিন্তু অরণ্যের অবস্থাও দৈন্য। সেখানে সবুজের প্রাচুর্য নেই। ফুলের সমারোহ নেই।

গ. উদ্দীপকে রাকার মাঝে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবির বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা ও বৃক্ষ নিধনের ক্ষতিকর প্রভাবের চিত্রটি প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ মানুষের ভোগবাদী প্রবণতার কারণে প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি সবুজ পরিবেশ বিলীন হওয়া দেখে ব্যথিত। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের জন্য তার মন হাহাকার করে। এ বাস্তবতার দিকটিই উদ্দীপক এবং ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার মাঝে দেখা যায়।
➠ উদ্দীপকের রাকা স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখে আসবাবপত্র বানানোর জন্য জামগাছটা কেটে ফেলা হয়েছে। রাকা অভিমান করে বলে জামগাছটায় সকালে দুটি হলদে পাখি এসে বসে, আমি নির্মল বাতাসে দোলনায় দোল খাই- সেটা তুমি কেটে ফেললে বাবা! সবুজের নিধন দেখে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবির মনও বিষণœ। এ বিষণ্নতাই উদ্দীপকের রাকার মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থাৎ উদ্দীপকের রাকার মাঝে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবির বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা ও বৃক্ষ নিধনের ক্ষতিকর প্রভাবের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. ‘উদ্দীপকে রাকার বাবার উপলব্ধি যেন কবি সুফিয়া কামালের উপলব্ধিকেই অনুসরণ করে- এ মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামাল একজন প্রকৃতি প্রেমি। প্রকৃতি নিধন দেখে তার মন হাহাকার করে ওঠে। তিনি অরণ্য কন্যাদের (বৃক্ষ) জাগরণ কামনা করেন। তিনি চান দিকে দিকে আবার সবুজ বৃক্ষের সমারোহ সৃষ্টি হোক; ফুলে ও ফসলে ভরে উঠুক পৃথিবী। মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা পাক বিপন্নতার হাত থেকে।
➠ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে বিলাসী মানুষেরা যে সভ্যতা তৈরি করেছে তা প্রকৃতপক্ষে সমগ্র জীববৈচিত্র্যের জন্য বিশাল হুমকি তৈরি করছে তা উদ্দীপকের রাকা উপলব্ধি করতে পেরেছে। ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতাতে সেই বিপদের আভাস রয়েছে। সবুজের সমারোহ বিলীন হওয়ার কারণেই বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানুষের অস্তিত্ব হয়ে পড়ছে বিপন্ন।
পুত্রের ভালোবাসা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি উপলব্ধি করে রাকার বাবা বাড়ির আঙিনায় বেশ কিছু গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।
➠ অতএব, উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকের রাকার বাবার উপলব্ধি কবি সুফিয়া কামালের উপলব্ধিরই অনুরূপ অনুসরণ।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ০৪:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মৌরি একদিন বাবার কাছে বায়না ধরে বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেড়াতে যাবে। বাবা তাকে নিয়ে গেলে নানা জাতের ফুল-ফলের সমারোহ দেখে সে অভিভূত হয়। দীর্ঘদিন সে যেসব ফুল-ফলের নাম শুনেছে সেগুলো আজ নিজ চোখে দেখে খুবই আনন্দিত হয়। আর তখনি সে সিদ্ধান্ত নেয়- বাড়ির আঙিনায় ছোট একটি বাগান করবে এবং ফুলে-ফলে চারদিক শোভিত করে তুলবে।

ক. ‘ম্লান’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কবি অরণ্য কন্যাদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন কেন?
গ. মৌরির অভিব্যক্তিতে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কোন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে মৌরির সিদ্ধান্তের মধ্যেই কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। -বক্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

ক. ‘ম্লান’ শব্দের অর্থ মলিন।
খ. পৃথিবীতে সবুজের সংকট সৃষ্টি হওয়ার কারণে কবি অরণ্য কন্যাদের জেগে উঠতে বলেছেন।
➠ পারিপার্শ্বিক আঘাতের ফলে বর্তমান পৃথিবীতে সবুজের প্রাচুর্য নেই। ফলে ফুল-ফসলে ভরা শ্যামলিমা নেই, কারও কণ্ঠে গান নেই, চারদিকে হাহাকার। তাই কবির কণ্ঠেও কোনো গান নেই। পৃথিবীকে আবার জাগরিত করতেই কবি অরণ্য কন্যাদেরকে জেগে উঠতে বলেছেন।

গ. বৃক্ষ যে ফুলে-ফলে চারদিক শোভিত করে তোলে এ বিষয়টি ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
➠ বৃক্ষ আমাদের চারপাশকে সবুজ করে তোলে। আমাদের আত্মাকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। বৃক্ষের কচি পাতা প্রথম প্রাতে আলোর সাথে কথা বলে আমাদের চারপাশকে স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে তোলে।
➠ উদ্দীপকের মৌরিও বৃক্ষের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাড়ির আঙিনায় বাগান করার সিদ্ধান্ত নেয়। মৌরি বোটানিক্যাল গার্ডেনের ফুল-ফুলের গাছ দেখে একইরূপ আনন্দ পেয়েছে, মৌরি চায় বাড়ির আঙিনায় গাছ লাগিয়ে একই রূপ আনন্দ পেতে। অপরদিকে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতাতেও কবির একই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. ‘উদ্দীপকে মৌরির সিদ্ধান্তের মধ্যেই কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে’ -মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামাল যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সেই প্রেরণাতেই অনুপ্রাণিত হয়েছে উদীপকের মৌরি। কবিতায় সুফিয়া কামাল অরণ্য জাগরণ তথা বৃক্ষের বিস্তৃতির কামনা করেছেন। উদ্দীপকের মৌরি বাড়ির আঙিনায় ছোট একটি বাগান করবে এবং ফুলে-ফলে চারদিক শোভিত করে সবুজে বসবাস করবে।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামাল আশা প্রকাশ করেছেন সবুজ বৃক্ষের সমারোহের, ফুলে ও ফসলে পুনরায় ভরে উঠলেই পৃথিবীকে জীবজগতের অস্তিত্বকে হুমকির মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক পরিবেশ প্রদান করা সম্ভব হবে। কবিতার মতোই উদ্দীপকের মৌরি প্রকৃতির সবুজের সমারোহ খোঁজার জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেনে যায়। মৌরি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বাড়ির আঙিনায় একটি বাগান করবে এবং ফুলে-ফলে চারদিক শোভিত করে তুলবে, তার এমন পদক্ষেপই ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবির বাসনাকে পূরণ করতে যথার্থ ভূমিকা পালন করবে।
➠ উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায় যে, উদ্দীপকে মৌরির সিদ্ধান্তের মধ্যেই কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ০৫:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গ্রামে একসময় বলা যায় কোনো গাছই ছিল না। সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত গ্রামবাসী বিশ্রামের জন্য কোনো গাছের ছায়া পাচ্ছে না দেখে কিশোর আফাজ উদ্দিন রাস্তার ধারে, বাজারের আশপাশে, খোলামাঠসহ আরও অনেক জায়গায় গাছ লাগাতে শুরু করেছিলেন। কিশোর বয়সের সে কাজটি বৃদ্ধ আফাজ উদ্দিন আজও করে যাচ্ছেন। তার ফলে ‘বৃক্ষ গ্রাম’ নামে পরিচয় পেয়েছে আফাজ উদ্দিনের নাগরপুর।

ক. মাটি কীসের পানে চায়?
খ. মৌসুমি ফুলের গান কবির কণ্ঠে আর জাগে না কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আফাজ উদ্দিনের গ্রামের প্রথম অবস্থা ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কোন দিক নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “আফাজ উদ্দিন যেন কবি সুফিয়া কামালের প্রত্যাশা পূরণে তৎপর।”- ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটির বিশ্লেষণ কর।

ক. মাটি অরণ্যের পানে চায়।
খ. কবির কণ্ঠে গান না জাগার কারণ হলো অবাধে বৃক্ষনিধনের ফলে চারদিকের হাহাকার আর শুষ্ক পরিবেশ।
➠ পরিবেশের দৈন্যের কারণে কবির কণ্ঠে মৌসুমি ফুলের গান আর জাগে না। মানুষ প্রতিনিয়ত বৃক্ষনিধন করছে। দিনের পর দিন এ বৃক্ষনিধন বেড়েই চলছে। চারদিকে অবাধ বৃক্ষনিধনের কারণে পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। সবুজের সমারোহ ম্লান হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু রুক্ষতা আর শূন্যতা। কোথাও প্রাণের চিহ্ন নেই। এসব দেখে কবির মন হাহাকার করে ওঠে। তাই মৌসুমি ফুলের গান আর কবির কণ্ঠে জাগে না।

গ. প্রকৃতির থেকে সবুজের বিলীন হয়ে যাওয়ার যে দিকটি ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্দীপকেও বিদ্যমান। আধিপত্যবাদী মানুষের লোভের কারণে প্রকৃতি আজ শ্রীহীন। প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল মানুষও আজ বিপন্ন।
➠ এ চিত্রই প্রকাশিত হয়েছে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে। ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবি প্রকৃতির রূপহীনতা দেখে মর্মাহত। বৃক্ষ নিধনের ফলস্বরূপ গোটা জীবজগতের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে।
➠ উদ্দীপকেও জীবজগৎ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যস্ত অবস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়। কবিতার মতো উদ্দীপকেও বৃক্ষ নিধনই বিরূপ বাস্তবতা সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। উদ্দীপক ও কবিতা উভয় ক্ষেত্রে প্রকৃতি ধ্বংসের বিরূপ প্রতিক্রিয়াকেই তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ উদ্দীপকে আফাজউদ্দিনের গ্রামের প্রথম অবস্থা প্রকৃতি থেকে সবুজের বিলীন হয়ে যাওয়ার দিকটিকেই নির্দেশ করে।

ঘ. “আফজাল উদ্দিন যেন কবি সুফিয়া কামালের প্রত্যাশা পূরণে তৎপর।” -এ মন্তব্যটি সঠিক।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামাল অরণ্য কন্যাদের জাগরণ তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের বিস্তৃতির পরিবর্ধন কামনা করেছেন। এই প্রেরণাই অনুপ্রাণিত হয়ে কিশোর আফাজ উদ্দীন রাস্তার ধারে, বাজারের আশপাশে, খোলা মাঠসহ আরও অনেক জায়গায় গাছ লাগাতে শুরু করেছিলেন। কিশোর বয়সের সে কাজটি বৃদ্ধ আফাজ উদ্দিন আজও করে যাচ্ছেন। তার ফলে ‘বৃক্ষগ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে নাগরপুর।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি আশা প্রকাশ করেছেন সবুজের বৃক্ষের সমারোহের। ফুলে ও ফসলে পুনরায় পৃথিবী ভরে উঠলেই পৃথিবীতে জীবজগতের অস্তিত্বকে হুমকির মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক পরিবেশ প্রদান করা সম্ভব হবে। উদ্দীপকের আফাজ উদ্দিনও কবির মতো প্রাকৃতিক বিরূপ বাস্তবতা লক্ষ্য করে এর সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। কবিতার মতোই সবুজের মাঝে সমাধান খোঁজার বাসনায় বনায়নের কাজে আত্মনিয়োগ করেন আফাজ উদ্দিন।
➠ তাই উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আফাজ উদ্দিন যেন কবি সুফিয়া কামালের প্রত্যাশা পূরণে তৎপর।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ০৬:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আলিফ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। প্রতিদিন পাখির কলকাকলিতে তার ঘুম ভাঙে। আলিফের ভালো লাগে পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ। একটা কোম্পানি কারখানা গড়ে তোলার জন্য বড় বড় গাছ কাটতে শুরু করেছে, তা দেখে আলিফের মন খুবই বিষণœ হয়ে পড়ে। পাখিরা আর এখানে ডাকবে না। এভাবেই হয়তো পৃথিবীর এ সবুজ অরণ্য শেষ হয়ে যাবে।

ক. মর্মরে মর্মরে কী বেজে ওঠে?
খ. কবিকণ্ঠে মৌসুমি ফুলের গান জাগে না কেন?
গ. উদ্দীপকটির সাথে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “আলিফের বিষণœতার কারণ আর ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবির বিষণ্নতা যেন একই সূত্রে গাঁথা।” -বিশ্লেষণ কর।

ক. বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা মর্মরে মর্মরে বেজে ওঠে।
খ. ৫নং প্রশ্ন সমাধান এর ‘খ’ নং দ্রষ্টব্য।

গ. অরণ্য নিধনের ফলে বিপন্ন প্রকৃতির সাথে মানুষের অস্তিত্ব সংকটের যে আশঙ্কা কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে তা উদ্দীপকেও বিদ্যমান।
➠ মানুষ জীবনধারণের জন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কারণ প্রকৃতি মানুষের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। বলতে গেলে মানুষের টিকিয়ে থাকার জন্য প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখা আবশ্যক। কিন্তু অবিবেচক মানুষ অবিরতভাবে প্রকৃতি নিধন করে চলেছে। যার পরিণতি ভয়াবহ।
➠ উদ্দীপকের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আলিফের ঘুম ভাঙে পাখির কলকাকলিতে। তার ভালো লাগে সবুজের সমারোহ, পাখির কলতান। কিন্তু বৃক্ষনিধন দেখে সে আঁতকে ওঠে। আশঙ্কা ব্যক্ত করে সবুজ অরণ্য নিঃশ্বেষ হওয়ার। ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবি সুফিয়া কামালও অনুরূপ অবস্থা দেখে হাহাকার করে ওঠেন। এ বিষয়টিতে উদ্দীপকের সাথে কবিতার সাদৃশ্য স্পষ্ট।

ঘ. “আলিফের বিষণ্নতার কারণ আর ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবির বিষণ্নতা যেন একই সূত্রে গাঁথা।”- উক্তিটি যথার্থ।
➠ প্রকৃতি সৌন্দর্যের আধার, ঐশ্বর্যের আধার। সর্বোপরি জীবনের অস্তিত্ব ও বিস্তারের অন্যতম অনুষঙ্গ। এ কারণে সমাজসচেতন মানুষেরা চান দিকে দিকে সবুজ বৃক্ষের সমারোহ হোক, ফুলে ফসলে ভরে উঠুক পৃথিবী; মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা পাক বিপন্নতার হাত থেকে।
➠ উদ্দীপকের আলিফের ঘুম ভাঙে পাখির কাকলিতে। তার ভালো লাগে পাখপাখালির কিচিরমিচির, সবুজের সমারোহ। কিন্তু চারদিকে যেন আজ প্রকৃতি নিধনের উৎসব। বৃক্ষদের নিশ্চিহ্ন করার অমানবিক প্রচেষ্টাও-এর ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কায় আলিফের মন বিষণœ। অনুরূপ বিষণœতা ধ্বনিত হয়েছে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবির কণ্ঠে। প্রকৃতির রূপ সচেতন এ কবি চারপাশের অরণ্য-নিধন দেখে ব্যথিত। এ পরিস্থিতিতে তার মন হাহাকার করে ওঠে। তাই মৌসুমি ফুলের গান তার কণ্ঠে জাগে না।
➠ উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার বিশ্লেষণে বলা যায়, দিকে দিকে প্রকৃতি নিধনের মহোৎসব দেখে তার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি উপলব্ধি করে বিষণœ হওয়া সচেতন মানুষের বৈশিষ্ট্য। যা উদ্দীপকের আলিফ ও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কবিকে বিষণ্ন করেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের চরিত্র দুটি একই সূত্রে গ্রথিত।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ০৭:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য অপরিহার্য। প্রাণী মাত্রই খাদ্যের মুখাপেক্ষী। মানুষের খাবারে বিভিন্নতা আছে। যেমন : মাছ, মাংস, শাকসবজি। এই তিন প্রকার খাদ্যের সঙ্গেই গাছের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষভাবে এসব খাদ্য গাছের ওপর নির্ভরশীল, যাকে খাদ্যচক্র বলা হয়। গাছের সংখ্যা যত কমবে, খাদ্যের পরিমাণও তত কমবে। কিন্তু চাহিদা কমবে না বরং বাড়তে থাকবে। খাদ্য যত কমবে, পরিবেশের ভারসাম্য তত খারাপ হবে, যা বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। সুতরাং প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ও বিশ্বশান্তি রক্ষা করতে হলে পৃথিবীতে বৃক্ষের সংখ্যা আরও অনেক বাড়াতে হবে।

ক. ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি কেমন?
খ. ‘ফুলের ফসল নেই’- চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সমগ্রভাব প্রকাশ পায়নি”- উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।

ক. ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন।
খ. ‘ফুলের ফসল নেই’- চরণটি দ্বারা বৃক্ষের দৈন্য অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।
➠ ফুল-ফসলের জন্য শক্তির প্রয়োজন। সবুজের প্রাচুর্যের প্রয়োজন। কিন্তু পারিপার্শি¦ক নির্মম আঘাতে সবুজ প্রাচুর্য হারাচ্ছে, বৃক্ষ নি®প্রাণ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। বৃক্ষ যদি সতেজ হয়, তবে ফুল এবং ফসলও ভালো হয়। আর বৃক্ষ যদি জীর্ণ কাতর হয়, তবে ফুল-ফসল হয় না। আলোচ্য চরণ দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ বৃক্ষকে জেগে ওঠার যে আহ্বান সে দিকটিই মিল রয়েছে।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় পৃথিবীর মুমূর্ষু অবস্থা দেখে কবি ব্যথিত। প্রকৃতির প্রাচুর্য কমে যাওয়ায় পৃথিবী নিরানন্দ হয়ে পড়েছে। মানুষের মনে সুখ নেই। ফুলের ফসল নেই। পাখির গান নেই। চারদিকের হাহাকার শুনে কবি স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। পৃথিবীর এ বিষণœ অবস্থার জন্য একমাত্র পরিবেশের দৈন্যই দায়ী। কবি মুমূর্ষু পৃথিবীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে বৃক্ষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা আবার জেগে ওঠে। মূলত এর দ্বারা কবি মানুষকেই সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
➠ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের অপরিহার্যতা উদ্দীপকে আলোচিত হয়েছে। কারণ পৃথিবীর সর্বপ্রকার খাদ্যই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে গাছপালার ওপর নির্ভরশীল। গাছপালা যত কমবে, খাদ্যের উৎপাদন তত কমবে। আর খাদ্য যত কমবে, মানুষের মধ্যে চাহিদা তত বাড়বে। ফলে সৃষ্টি হবে দুর্ভিক্ষ, যা বিশ্বশান্তির জন্য প্রবল হুমকিস্বরূপ। মূলত মানুষের জীবন রক্ষার্থে ও বিশ্বশান্তি ঠিক রাখতে গাছপালা অপরিহার্য। অর্থাৎ উদ্দীপকে মূলত ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার পরিবেশ রক্ষায় মানুষের সচেতনতা তথা বৃক্ষরোপণে মানুষের উদ্যোগী হওয়ার দিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. “উদ্দীপকে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশ পায়নি”- উক্তিটি যথার্থ।
➠ গাছের অভাবে চারপাশের প্রকৃতি আজ বিপন্ন। বৃক্ষের অন্তরে আজ দুর্বিষহ জ্বালা। কবিতায় এসব বিষয় উঠে আসলেও উদ্দীপকে কেবল বৃক্ষের অভাবে বিপন্ন পরিবেশের দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে।
খাদ্যের অভাবে প্রাণের বিপন্নতা ছাড়াও আরও অনেক ভাবের প্রকাশ ঘটেছে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায়। মাটি জীবনরস সঞ্চয়ের জন্য গাছের পানে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। কারণ গাছ থাকলেই মাটিতে প্রাণের আবাদ ঘটবে। এছাড়া বৃক্ষের অন্তরের দুর্বিষহ যন্ত্রণাও প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ পৃথিবীর গাছ বিনা প্রয়োজনে নিধন করে। কিন্তু বৃক্ষের অভাব, তা পূরণ করে না, এই কারণে বৃক্ষের মনে অনেক জ্বালা রয়েছে।
➠ বিশ্বশান্তি রক্ষায় বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ গাছপালার মুখাপেক্ষী। পৃথিবীর গাছ যত বিনাশ হবে, খাদ্য তত কমবে, খাদ্য যত কমবে, চাহিদা তত প্রকট হবে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। খাদ্য সংকট প্রাণিকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন করবে এবং বিশ্বশান্তিতে চরম আঘাত হানবে। তাই, প্রাণিকুলের জীবন রক্ষার্থে ও বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে গাছের পরিমাণ বাড়াতে হবে। উদ্দীপকে বৃক্ষের অভাবে প্রাণিকুল ও বিশ্বশান্তি পরিস্থিতি কেমন হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলেও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় আলোচিত বৃক্ষের মর্মজ্বালা ও পরিবেশের হাহাকারের ভাবটি প্রকাশ পায়নি।
➠ সার্বিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সমগ্র ভাবের প্রকাশ ঘটেনি।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ০৮:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আহা! আজি এ বসন্তে
এত ফুল ফোটে
এত পাখি গায়
এত বাঁশি বাজে...
এ গান যখন লেখা হয়েছিল, তখন বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে গানের বেশ সংগতি ছিল। কিন্তু বর্তমান বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে এ গান বেমানান। বাংলার বুকে বসন্ত আসে ঠিকই, কিন্তু ফুলের মেলা বসে না, পাখির কলকাকলিতে প্রভাত মুখর হয় না। কারণ, বাংলার প্রকৃতিতে ভাটা এসেছে, সবুজের ভাটা। প্রতিনিয়ত বৃক্ষ নিধন এই ভাটার মূল কারণ। বৃক্ষহীনতায় শুধু ফুল আর পাখির সংখ্যা কমেনি। মানুষের আনন্দও কমেছে, কমেছে বসন্তের তাৎপর্য। বসন্তের আনন্দঘন বাসন্তী দিনগুলো ফিরিয়ে আনতে হলে প্রচুর গাছ লাগানোর মাধ্যমে বাংলার প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দিতে হবে হারানো সবুজের প্রাচুর্য।

ক. মাটি কার পানে চায়?
খ. ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’-ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের গানের কলি দুটির সঙ্গে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার বৈসাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. প্রমাণ কর যে, উদ্দীপক ও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতা একই বিষয় নির্দেশ করে।

ক. মাটি অরণ্যের পানে চায়।
খ. ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’- লাইনটি দ্বারা কবি অরণ্য কন্যাদের তথা বৃক্ষদের জেগে উঠতে বলেছেন।
➠ পরিবেশের বিপর্যয়ে চারদিকে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ফুলের ফসল নেই, মানুষের মনে সুখ নাই। তাই কবির কণ্ঠেও মৌসুমি ফুলের গান নাই, প্রকৃতিতে ফুল ও ফসলের সম্ভার কমে যাওয়ায় মানুষের অস্তিত্ব হুমকির আশঙ্কায় মানুষ ভীত। তাই কবি বৃক্ষ কন্যাদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন পৃথিবীকে আবার সবুজে শ্যামলে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দিয়ে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য মূলত বৃক্ষ কন্যাদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কবি মানুষের প্রতিই আহ্বান জানিয়েছেন।

গ. উদ্দীপকের গানের কলি দুটির সাথে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার বৈসাদৃশ্য রয়েছে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় প্রকৃতির বিপর্যয়ে বিপন্ন পরিবেশ তথা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হতাশার স্তর কবির কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে।
➠ উদ্দীপকে কেবল প্রকৃতির অনাবিল রূপ বৈচিত্র্যের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি ব্যথিত কণ্ঠে অরণ্য কন্যাদের জেগে ওঠার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ প্রকৃতি ফুল-ফল শূন্য হয়ে পড়েছে। মানুষ নিদারুণভাবে বন উজাড় করার ফলে প্রকৃতি হারিয়ে ফেলছে তার সৌন্দর্য। পাখির কণ্ঠে নেই কোনো গান, বসন্তে গাছে ফোটে না কোনো ফুল। তাই কবিকণ্ঠে হাহাকারের সুর ধ্বনিত হয়েছে। কবি প্রকৃতিকে ফুলে ফলে সুশোভিত করার জন্য অরণ্য কন্যাদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন আলোচ্য কবিতায়।
➠ কিন্তু উদ্দীপকের গানের কলি দুটির চিত্র কবিতার ঠিক উল্টো। এখানে বলা হয়েছে, বসন্তে পাখির কণ্ঠে গান, গাছে গাছে ফুলের সমারোহ গানের লেখকের মনে এক নতুন আনন্দের সৃষ্টি করেছে। পাখির কণ্ঠের গান, বাঁশির সুর, গাছের ফোটা নানা ধরনের ফুল লেখকের মনেও সুরের সৃষ্টি করেছে। তার মনে কোনো দুঃখ নেই, নেই কোনো হাহাকার। কবি ও উদ্দীপকের গানের লেখকের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতা একই বিষয় নির্দেশ করেছে।
➠ নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। কবিতায় কবি পরিবেশের প্রাচুর্যতা অন্যদিকে উদ্দীপকে প্রকৃতির পুনর্জাগরণ কামনা করা হয়েছে।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার আহ্বান রয়েছে। কারণ, প্রকৃতিতে আগের মতো মৌসুমি ফুল নেই। ফুল না থাকায় ফলও হচ্ছে না। খাদ্যের অভাবে মানুষ অস্থির হয়ে উঠছে। এসব কারণে কবির কণ্ঠেও মৌসুমি ফুলের গান নেই। মুমূর্ষু পৃথিবীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য কবি অরণ্য কন্যাদের আহ্বান করেছেন। অরণ্য কন্যাদের জাগরণেই পৃথিবী আবার সবুজ শ্যামলে ভরে উঠবে। ফুলের ফসল হবে। কবির কণ্ঠে জাগবে মৌসুমি ফুলের গান।
➠ বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটা বসন্তের গান দ্বারা উদ্দীপকে হারানো প্রকৃতির কথা বোঝানো হয়েছে। একসময় বাংলার প্রকৃতি ছিল অত্যন্ত সুন্দর, কিন্তু বর্তমানে সে প্রকৃতি নেই। ক্রমাগত বৃক্ষ নিধনে ও প্রকৃতির প্রতি মানুষের ঔদাসীন্যে বর্তমান প্রকৃতিতে দৈন্য প্রকাশ পাচ্ছে। ঋতুর অন্তে ঋতু আসছে ঠিকই, কিন্তু ঋতুর সৌন্দর্য প্রকৃতিতে বিশেষ প্রকাশ পাচ্ছে না। আগের মতো পাখির মেলা বসছে না। বাংলার এই নিরানন্দ পরিবেশের অবসান ঘটাতে হলে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। তবেই আমরা আবার ফিরে পাব আমাদের সবুজ ঐতিহ্য। সুতরাং বলা যায় কবিতা ও উদ্দীপক একই বিষয়ে রচিত।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ০৯:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ধুলো ঢাকা পথ, ধূসর আলোয় পাড়ি দিতে দিতে
আমার দৃষ্টি ধূসর হয়ে আসে
কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাগরে
আমার ফুসফুস এক টুকরো অক্সিজেন খোঁজে।
ইটভাটার কালো পৃথিবীতে
আমার দু’চোখ কুয়াশা চায়।
আমায় সবুজ পৃথিবী দাও
আমায় আরও অক্সিজেন দাও
আমায় একটু কুয়াশা দাও
না হয় তোমাদের ধূসর পৃথিবী
আমায় হারিয়ে ফেলবে।

ক. কার জন্য খাদ্য আনতে বলা হয়েছে?
খ. ‘জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ’- কথাটা বলা হয়েছে কেন।
গ. ‘আমায় সবুজ পৃথিবী দাও আমায় আরও অক্সিজেন দাও’ উদ্দীপকের এ চরণ দুটির সাথে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’- কবিতার সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রমাণ কর যে, উদ্দীপক ও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতা একই যন্ত্রণার ফসল।

ক. ক্ষুধার্তের জন্য খাদ্য আনতে বলা হয়েছে।
খ. ‘জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ’ চরণটি দ্বারা মুমূর্ষু পৃথিবীতে পুনর্জাগরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
➠ পৃথিবীতে আগের মতো ফুলের ফসল হয় না। কবির কণ্ঠে গান জাগে না। খাদ্যের অভাবে মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে। তাদের দৃষ্টি প্রাণহীন, বৃক্ষের বুকে বহ্নিজ্বালা। পৃথিবীর এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে কবি বৃক্ষদের কাছে আহ্বান করেছেন, তারা যেন জাগরণের মাধ্যমে ধরার মুমূর্ষু প্রাণের জাগরণ ঘটায়। প্রশ্নে উল্লিখিত চরণ দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।

গ. ‘আমায় সবুজ পৃথিবী দাও, আমায় আরও অক্সিজেন দাও’ উদ্দীপকের এ চরণ দুটির সাথে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার অরণ্য কন্যাদের জেগে ওঠার আহ্বানের বিষয়টির সাদৃশ্য রয়েছে।
➠ গাছ পরিবেশের প্রধান নিয়ামক। কিন্তু মানুষ নিত্যপ্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছ কেটে বন উজার করে ফেলছে। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সবুজ পৃথিবীকে ফিরে পেতে পারি। জাগো তবে অরণ্য কবিতার এ সুর যেন উদ্দীপকেও ফুটে ওঠেছে।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবি অরণ্য কন্যাদের নতুনভাবে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। মুমূর্ষু পৃথিবীকে ফুলে ফলে সুশোভিত করে তোলার জন্য কবি মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। মানুষ প্রতিনিয়ত বৃক্ষ কেটে পৃথিবীকে মরুময়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে বাড়ছে বৈষ্ণিক উষ্ণতা, যা সৃষ্টি করছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই এ বিশ্বকে বৃক্ষময় করে তোলার জন্য কবি মানুষের প্রতি পরোক্ষভাবে আহ্বান জানিয়েছেন বৃক্ষ কন্যাদের জেগে ওঠার মাধ্যমে।
➠ উদ্দীপকের আলোচ্য চরণ দুটি পরোক্ষভাবে বৃক্ষরোপণকেই ইঙ্গিত করছে। কারণ গাছই আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছই পৃথিবীকে সবুজ সমারোহে ভরে দিতে পারে। তাই উদ্দীপকের লেখক পৃথিবীকে সবুজ করে তোলার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন। তিনি অক্সিজেন পাওয়ার আকাক্সক্ষা করেছেন। এখানে তিনি বৃক্ষময় পৃথিবীর আকাক্সক্ষাই ব্যক্ত করেছেন। পরিশেষে বলা যায় উদ্দীপকের সবুজ পৃথিবী গড়ার আহ্বান ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার মূল স্তরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতা একই যন্ত্রণার ফসল”এ মন্তব্যটি প্রাসঙ্গিক।
➠ উদ্দীপক ও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ একই বোধ থেকে উচ্চারিত হয়েছে। কারণ সবুজ প্রাচুর্যের অভাবে পরিবেশের দৈন্যে দিশেহারা দেখে কবি সুফিয়া কামাল ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতা রচনা করেছেন। উদ্দীপকেও একই দৃশ্যের অবতারণা লক্ষ করা যাচ্ছে। ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায়ও হতাশার সুর আর বেদনার চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। কবি পৃথিবীতে হাহাকার আর বেদনা শুনেছেন। প্রকৃতিতে ফুল নেই, ফুলের ফসল নেই, পাখির কণ্ঠে গান নেই, মানুষের মনে আনন্দ নেই। ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির মানুষ। মাটি অরণ্যের পানে করুণ আকুতি জানায়। গাছের প্রাণে দুঃখের জ্বালা, এসব দেখে কবির মনেও মৌসুমি ফুলের গান জাগে না। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে আসে কবির কণ্ঠ।
➠ উদ্দীপকের কবির কণ্ঠে চরম মানসিক যন্ত্রণা ও হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। ধুলো ঢাকা পথ আর ধূসর আলোয় পাড়ি দিতে দিতে কবির দৃষ্টি ধূসর হয়ে গেছে। পৃথিবীর পরিসর কার্বন ডাইঅক্সাইডে ভর্তি হওয়ায় কবি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। ইট ভাটায় ঢাকা পৃথিবীতে কবির চোখ এক টুকরো সাদা কুয়াশার খোঁজ করে। কিন্তু এসব কবির ভাগ্যে জোটে না। বর্তমানের নিষ্ঠুর নিরানন্দ পরিবেশ কবিকে এসব থেকে বঞ্চিত করে। কবির হৃদয় কুয়াশা চায়, ফুসফুস অক্সিজেন চায়, দৃষ্টি সবুজ চায়। এসব না পেলে একদিন প্রকৃতি কবিকে হারাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
➠ সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, উদ্দীপক ও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা ‘কবিতা একই যন্ত্রণায় ফসল’।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গাছ যে মানুষকে শুধু অক্সিজেন দেয়, তা নয়। গাছের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী দৈনন্দিন। সবখানেই কাঠের ব্যবহার হয়। জ্বালানিতে কাঠ লাগে, ঘর সাজাতে কাঠ লাগে, আবার চিতাও কাঠের দ্বারাই সাজানো হয়। অর্থাৎ কাঠ ছাড়া পৃথিবীর মানুষের একদণ্ড চলে না। সুতরাং গাছ আমাদের কাটতেই হবে। এক্ষেত্রে আমরা কার্পণ্য করি না। অতি উৎসাহ নিয়ে গাছ কাটি। কিন্তু পৃথিবীর বুক যে খালি করি, তা পূরণে উৎসাহ পাই না। এই পৃৃথিবী বিশ্ববাসীর আবাসন। এই আবাসনের যত্ন আমাদেরকে নিতে হবে। একটা বৃক্ষনিধন করলে অন্তত তিনটা গাছ রোপণ করতে হবে, আমরা পৃথিবীর চাহিদা মেটালে পৃথিবীও আমাদের চাহিদা মেটাবে।

ক. আনন্দ কীসের জন্য প্রয়োজন?
খ. কবি কেন আত্মার জন্য আনন্দ আনতে বলেছেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার পরোক্ষ সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. দেখাও যে, উদ্দীপক ও ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতা একই সার্থকতা বহন করে।

ক. আত্মার জন্য আনন্দ প্রয়োজন।
খ. আত্মা আনন্দ ছাড়া নির্জীব হয়ে পড়ে। এ জন্যই কবি আত্মার জন্য আনন্দ আনতে বলেছেন।
➠ আমাদের শরীর ঠিক রাখতে হলে যেমন খাদ্য এবং ভিটামিন প্রয়োজন, তেমনি আত্মার প্রয়োজন আনন্দ। কারণ আনন্দকে বলা হয় আত্মার খাদ্য। এজন্যই কবি আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আনন্দ আনতে বলেছেন।

গ. ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় প্রকৃতিকে আবার সবুজে-শ্যামলে, ফুলে-ফলে ভরিয়ে তোলার আহ্বানের দিকের সঙ্গে উদ্দীপকের পরোক্ষ সাদৃশ্য রয়েছে।
➠ বৃক্ষরোপণের উৎসাহ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায়ও পাওয়া যায়। কবি বৃক্ষকে জাগরণের আহ্বান জানানোর দ্বারা মূলত মানুষের জাগরণ কামনা করেছেন। কারণ, মানুষ যদি সচেতন হয়ে বৃক্ষের আবাসন বৃদ্ধি করে, তবে ক্ষুধার্তের জন্য খাদ্য আসবে, নিরানন্দের জন্য আনন্দ আসবে, মাটি তার জীবনী শক্তি ফিরে পাবে, যারা সুন্দর প্রকৃতির জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করছে, তাদের জীবনে প্রকৃতির আনন্দ আসবে।
➠ উদ্দীপকেও বৃক্ষ আমাদের যে চাহিদা পূরণ করে, তার স্বীকৃতি রয়েছে। উদ্দীপকে গাছের প্রয়োজনীয়তার কথা ফুটে উঠেছে। গাছ আমাদের অক্সিজেনের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু দেয়। যেমন : কাঠের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী। দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে চিতা জ্বালানো পর্যন্ত কাঠের ব্যবহার হয়ে থাকে। এজন্য মানুষ গাছ কাটে। কিন্তু গাছ আর লাগায় না। পৃথিবী হলো জীবকুলের আবাসন। গাছের অভাবে এই আবাসন ধীরে ধীরে হুমকির সম্মুখীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি পৃথিবীর এ বিপন্ন অবস্থায় সতর্ক না হই, তবে আমরাই বিপদে পড়ব। আমরা পৃথিবীর চাহিদা মেটালে পৃথিবীও আমাদের চাহিদা মেটাবে। সুতরাং, উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার পরোক্ষ সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক এবং ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতা একই সার্থকতা বহন করে।
➠ ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায়ও কবি গাছ লাগানোর জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানে পৃথিবীতে ফুলের ফসল নেই। মানুষের মনে সুখ নেই। পৃথিবীব্যাপী খাদ্যের অভাব। ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার চারদিকে। এসব কারণে কবির কণ্ঠেও আর গান আসে না। কবি বৃক্ষকে আহ্বান করেছেন জেগে ওঠার জন্য। মূলত এই আহ্বান মানুষের প্রতি, বৃক্ষের পুনর্জাগরণে ক্ষুধার্তের জন্য খাদ্য আসবে, আত্মার জন্য আনন্দ আসবে। মাটিতে প্রাণ ফিরে আসবে। কবির কণ্ঠে আবার বাজবে মৌসুমি গান।
➠ উদ্দীপকে গাছের নানাবিধ ব্যবহার আলোচিত হয়েছে। গাছ শুধু আমাদের অক্সিজেন দেয় না, বরং প্রতিদিনই আমরা নানা কাজে কাঠের ব্যবহার করছি। সর্বত্রই বিশ্বব্যাপী কাঠের প্রয়োজন রয়েছে। ফলে মানুষ গাছ কাটছে। কিন্তু গাছ লাগাতে তারা উৎসাহী হচ্ছে না। এ কারণে প্রতিনিয়ত পৃথিবী বৃক্ষশূন্য হচ্ছে। প্রাণীর জীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের এই পৃথিবীকে এখনো রক্ষা না করি, তবে আমাদের বেঁচে থাকাটাই সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা যদি বিশ্বের চাহিদা পূরণ করি, তবে বিশ্বও আমাদের চাহিদা পূরণ করবে।
➠ বৃক্ষের জাগরণে পৃথিবীর হাহাকার ঘুচে যাবে এমন মত কবি ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। উদ্দীপকেও বলা হয়েছে- বৃক্ষ লাগানোর মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর চাহিদা পূরণ করলে পৃথিবীও আমাদের চাহিদা পূরণ করবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও কবিতা একই সার্থকতা বহন করে।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে গিয়েছিল শায়ক। র‌্যালি শেষে পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘বৃক্ষ বাঁচায় মানুষের জীবন’ শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারে অংশগ্রহণ করে। বক্তারা বৃক্ষনিধনে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলে দাবি করেন। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

ক. সুফিয়া কামালের সময় কাদের পড়াশোনার কোনো সুযোগ ছিল না?
খ. মাটির সাথে অরণ্যের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বক্তাদের বক্তব্যে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতায় কবির ব্যথিত হওয়ার কারণ নিহিত কীভাবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “বৃক্ষ বাঁচায় মানুষের জীবন”- ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।


‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জাফর সাহেব একজন প্রকৃতি প্রেমিক। তাই তিনি তার বাড়ির আশপাশে অনেক গাছ রোপণ করেন। তিনি চান পুরো দেশটাকে সবুজে সবুজে ভরে দিতে। পুরো দেশটা ফুলে ফলে ভরে উঠলেই তার দৃষ্টি জুড়াবে ও ভালো লাগবে। কারণ, মানুষ পরিবেশের বন্ধু বৃক্ষকে নির্বিচারে ধ্বংস করছে। ফলে পৃথিবী ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে।

ক. সুফিয়া কামাল কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘আত্মার আনন্দ আনো’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ কবিতার মূলভাব ফুটে উঠেছে কি? বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।


তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url