দশম পরিচ্ছেদ: শব্দার্থ

 শব্দার্থ
শব্দার্থ

দশম পরিচ্ছেদ
শব্দার্থ

১০. শব্দার্থ :
অর্থপূর্ণ শব্দের দ্বারা মানুষ পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদান করে। আর অর্থ হচ্ছে শব্দের প্রাণ।
ভাষার ভাব (বাক্য, বাক্যাংশ, রূপ, শব্দ, বাগধারা ইত্যাদি) যখন ইন্দ্রিয় (প্রধানত চোখ, কান) গ্রহণ করে এবং তার উপরে যে মানসিক ধারণা জন্মায়, তখন তাকে শব্দার্থ বলে।
নানা কারণে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে। নিচে শব্দের অর্থ পরিবর্তনের কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো।

১০.১ একই শব্দ বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করে বাক্য রচনা :
বাংলা ভাষায় কতগুলো শব্দ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ্য, বিশেষণ ও ক্রিয়া জাতীয় এই পদগুলো বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে। এগুলো একদিকে যেমন একটি শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে, অপরদিকে তেমনি বাক্যের সৌন্দর্য সাধন করে থাকে। যেমন:
১. কথা
উক্তি : রবীন্দ্রনাথের কথা, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’
তর্ক: এই ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে।
প্রতিশ্রুতি: তোমাকে আমি কথা দিলাম।
প্রস্তাব : তোমার কথায় আমি রাজি।
তিরস্কার: পড়া না পারায় স্যারের কাছে কথা শুনতে হলো।
প্রসঙ্গক্রমে: কথায় কথায় তোমার নামটি এসে গেল।
২. কান
শ্রবণ অঙ্গ নোভা কানে দুল পরেছে।
বধির : লোকটি কানে শোনে না।
কর্ণগোচর কথাটা বড় সাহেবের কানে পৌঁছেছে।
মনোযোগ আমার কথায় কান দাও।
প্রকাশ : কথাটা পাঁচ কান করো না।
নির্লজ্জ : সানুর মতো দুকান কাটা লোক আর দেখি নি।
৩. কাঁচা
অপকূ : আমটি কাঁচা হলেও বেশ মিষ্টি।
অসিদ্ধ : কাঁচা দুধ সবার হজম হয় না।
অপূর্ণ : আমার কাঁচা ঘুমটি ভাঙালে কেন?
অদক্ষ : কাঁচা লোক দিয়ে বাড়ি বানিয়ো না।
অশুষ্ক : কাঁচা কাঠে আগুন জ্বলে না।
অপরিণত: এই শক্ত কাজের জন্য ছেলেটি বড্ড কাঁচা।
দুর্বল : ছেলেটি অঙ্কে কাঁচা।
৪. কাটা
ক্ষত : কাটা ঘায়ে আর নুনের ছিটা দিও না।
নষ্ট : পোকায় কাটা বইগুলো আর পড়ার মতো নেই।
চুরি : পরের গাঁট কাটা ওর স্বভাব।
ছোবল : সাপে কাটা লোকটিকে সবাই দেখতে এসেছে।
ছন্দপতন তাল কাটা গান শুনতে ভালো লাগে নাকি?
৫. খাওয়া
ভোজন : আমার খাওয়া হয়েছে।
ঘুষ : মনির সাহেবকে সবাই টাকা খাওয়া অফিসার হিসেবেই চেনে।
বাধা : কাজের শুরুতেই ধাক্কা খাওয়া ভালো লক্ষণ নয়।
দিব্যি : মাথা খাও, এখন যেও না।
তিরস্কার: শিক্ষকের কাছে ধমক খাওয়া বিথুর নিত্যদিনের অভ্যাস।
মানিয়ে চলা: সংসারে সবার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয়।
৬. গরম
উষ্ণ : এক কাপ খুব গরম চা দাও।
গ্রীষ্ম : বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গরমকাল।
উগ্র : তোমার গরম মেজাজকে আমি ভয় পাই না।
অহংকার দু নম্বরি টাকার গরমে রহিমের পা যেন মাটিতে পড়ে না।
চড়া : সরবরাহ কম থাকলে বাজার গরম থাকে।
শীত নিবারক: শীতকালে গরম কাপড় না হলে চলে না।
৭. গা
শরীর : রোমানার গায়ের রং ফর্সা।
গ্রাহ্য : তার কোনো কথাই আমি গায়ে মাখি না।
ঈর্ষা : পরের ভালো দেখলে কারো কারো গা জ্বলে।
পরিধান : গায়ে নতুন জামা দেখছি, কবে কিনলে?
আত্মগোপন: পুলিশ দেখে চোরটি গা-ঢাকা দিল।
অভ্যস্ত : মাস্তানদের দৌরাত্ম্য এখন গা সওয়া হয়ে গেছে।
৮. গলা
গ্রীবা : চিড়িয়াখানায় লম্বা গলার জিরাফ দেখেছি।
কণ্ঠ : তার সুরেলা গলার গান ভোলা যায় না।
প্রীতির ভাব: ওদের দুজনের বেশ গলায় গলায় ভাব।
অতি বিনয়: গলবস্ত্র হয়ে রতনবাবু সাহায্য চাইলেন।
বোঝা : পরের গলগ্রহ হয়ে থাকার ইচ্ছে আমার নেই।
অপমান লোকটাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও।
৯. চাল
তন্ডুল : ঘরে চাল বাড়ন্ত, খাবে কী?
ঘরের ছাদ: ফুটো চাল দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে।
আচার-ব্যবহার: তার চাল-চলন মোটেই ভালো নয়।
মতলব : সেলিম খুব গভীর জলের মাছ, তার চাল বোঝা কঠিন।
আড়ম্বর রহিমের বাইরেই যত চাল, ভেতরে একেবারেই ফাঁপা।
ঘর-সংসার: চাল-চুলোর ঠিক নেই, তোমাকে মেয়ে দেবে কে?
১০. চোখ
আঁখি : আমরা চোখ দিয়ে দেখি।
দৃষ্টি : পুলিশের চোখ আসামির দিকে।
ফাঁকি : চোরটি পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে গেল।
রোগ : রফিকের চোখ উঠেছে বলে ভীষণ কষ্টে আছে।
ভয় দেখানো: আমাকে চোখ রাঙিয়ে লাভ হবে না।
লজ্জা : তোমার চোখের চামড়া থাকলে আর আমার সামনে আসতে না।
১১. ছোট
কনিষ্ঠ: রবিন আমার ছোট ভাই।
নীচ : তোমার মতো ছোট মনের মানুষ আমি আর দুটো দেখি নি।
হীন : ছোট কাজ বলে কিছু নেই।
বিনীত : বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।
হেয় করা জাতের কথা বলে কাউকে ছোট করা ঠিক না।
১২. ছাড়া
ত্যাগ : তার মতো সংসার ছাড়া লোক আমি আর দেখি নি।
মুক্তি : মাসুম আজই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।
শ্রীহীন: লক্ষ্মীছাড়া সংসারে ভালো কিছু চিন্তা করাই ভুল।
উচ্চস্বরে গান শিখতে হলে ছাড়া গলায় প্রতিদিন রেওয়াজ করতে হবে।
ব্যতীত : সত্যের পথ ছাড়া মুক্তি নেই।
১৩. তাল
তবলার বোল: তবলায় তাল বেজেছে তাক ধিনা ধিন্ ধিন্।
ছন্দহীন: তাল কাটা গান ভালো লাগে না।
ফল বিশেষ: ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উকি মারে আকাশে।’
ধীরে: বাড়ি তৈরির কাজ ঢিমা তালে চলছে।
মানিয়ে চলা: সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলার মেয়ে মিনি নয়।
১৪. তোলা
উত্তোলন: ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে।
উত্থাপন: কথাটা আমার তোলার কথা না, তুমি বল।
সংগ্রহ: সরকার যেকোনো ধরনের চাঁদা তোলা নিষিদ্ধ করেছে।
ছেঁড়া: গাছ থেকে ফুল তুলো না।
গ্রাহ্য করা: সে আমার কথা কানেই তুলল না।
১৫. ধরা
আটক: চোরটাকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে।
স্পর্শ: তোমার হাতখানা একবার ধরতে চাই।
ভালো লাগা: তার গল্পটি আমার মনে ধরেছে।
নির্ধারণ: তুমি নিজে থেকে একটা দাম ধরে দাও।
তোষামুদে সংসারে ধামাধরা লোকের অভাব নেই।
যন্ত্রণা: মাথাটা বড্ড ধরেছে।
১৬. নাক
নাসিকা: তিসা নাকে নথ পরেছে।
শব্দ করা: ঘুমের মধ্যে অনেকেই নাক ডাকে।
নিশ্চিন্ত: পরীক্ষা শেষ, এবার নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও।
ক্ষতি: নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করে তোমার কী লাভ হলো?
অনধিকার চর্চা: আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না।
১৭. নাম
পরিচয়: তোমার নাম কী?
খ্যাতি: ক্রিকেট খেলে রাজন বেশ নাম করেছে।
খ্যাতিমান: তিনি একজন নামকরা উকিল।
স্মরণ: সব সময় সৃষ্টিকর্তার নাম নেবে।
স্বল্পমূল্য: নামমাত্র দামে বাড়িটি বিক্রি হয়ে গেল।
উল্লেখ: একটা নদীর নাম বল।
১৮. পাকা
পরিপত্ত্ব: আমটি পাকা।
অকাসপত্ত্ব: ছেলেটির বয়স অল্প, কিন্তু কথায় পাকা।
নিপুণ: মিনা ইংরেজিতে পাকা।
দক্ষ: পাকা মিস্ত্রি দিয়ে বাড়ি বানিয়েছি।
স্থায়ী: কাপড়টির রং পাকা।
পুরোপুরি: পাকা চল্লিশ দিন স্কুল ছুটি।
১৯. বড়
অগ্রজ: রাম আমার বড় ভাই।
দীর্ঘ: পদ্মা বাংলাদেশের বড় নদী।
ধনী: লোকমান সাহেব বড়লোক।
অত্যন্ত: বড় বিপদে পড়ে তোমার কাছে এসেছি।
উন্নতি করা: বড় হও নিজের চেষ্টায়।
আত্মীয়: বাড়িতে বড় কুটুম এসেছে।
২০. বুক
বক্ষ: বাবার বুকে হঠাৎ ব্যথা উঠেছে।
সাহস: তোমার দেখছি খুব বুকের পাটা!
গর্ব: তোমার কৃতিত্বে আমাদের বুক ফুলে উঠেছে।
শাস্তি: এসির বাতাসে বুকটা জুড়িয়ে গেল।
হতাশ: রিতা ফেল করেছে শুনে তার বাবার বুকটা যেন ভেঙে গেল।
ভীষণ কষ্ট: কন্ধুর মৃত্যুর খবরে আমার বুক ফেটে কান্না আসছিল।
২১. ভালো
কুশল: ভালো আছ তো?
মঙ্গল: ঈশ্বর সবার ভালো করুন।
সৎ: চৌধুরী সাহেব খুব ভালো লোক।
সুন্দর: মেয়েটির চেহারা এত ভালো যে কী বলব!
হিতবাক্য: ভালো কথা শুনলে তোমারই মঙ্গল।
সুখবর: তোমার জন্য একটা ভালো খবর আছে।
২২. মন্দ
খারাপ: মন্দ লোকের সাথে মিশতে নেই।
অসৎ: মন্দ কাজের পরিণাম ভালো হয় না।
অশুভ: লোকটি মন্দভাগ্য নিয়েই জন্মেছে।
ধীরে ধীরে: জাহাজটি মন্দ মন্দ এগুচ্ছে।
দাম কমা: শেয়ার-বাজারে অধিকাংশ শেয়ারের দামই এখন মন্দা।
২৩. মাথা
মস্তক: তার মাথায় অনেক চুল।
প্রধান: তিনি এ গাঁয়ের মাথা।
প্রণাম: ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।’
সংযোগস্থলে: রাস্তার চৌমাথায় আমাদের বাড়ি।
পরিশ্রমে: শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করে।
বুঝতে পারা: অঙ্কটি আমার মাথায় ঢুকছে না।
২৪. মুখ
শরীরের অঙ্গ: তোমার মুখটা ভীষণ সুন্দর।
কথা: '‘খে মধু অন্তরে বিষ।’
সংযত: মুখ সামলে কথা বলো।
ক্ষমতা: ‘যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা।’
প্রবেশপথ: গলির মুখেই আমাদের বাড়ি।
সাহস: মুখ ফুটে কথাটা বলে ফেল।
২৫. মাটি
ধুলা/ কাদা: ছেলেটি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে।
শান্ত/ সরল: রফিক সাহেব একজন মাটির মানুষ।
বোকামি: শেয়ারের ব্যবসায় নেমে একেবারে মাটি খেয়েছি।
কবর: তাকে কোথায় মাটি দেওয়া হবে আমি জানি না।
নষ্ট: পড়াশুনা না করে জীবনটা মাটি করো না।
নাছোড়বান্দা: সরকারি কাজ পেতে হলে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয়।
২৬. রাখা
স্থাপন: বইগুলো জায়গামতো রাখো।
গচ্ছিত: টাকাগুলো ব্যাংকে রেখে এসো।
আশ্রয়: আমাকে তোমার পায়ে রাখো প্রভু।
নামকরণ: ‘ম রেখেছি বনলতা।’
সম্মান: ছেলেটি বাবার নাম রেখেছে।
ফেলে আসা: টাকার থলিটি রেখে এসেছি।
২৭. লাগা
স্পর্শ: তোমার শরীরে কি আমার হাত লেগেছে।
থামা: নৌকাটি ঘাটে লেগেছে।
নিযুক্ত: সুমন কাজে লেগে গেছে।
শুরু: সূর্যগ্রহণ লাগার সময় হয়ে এসেছে।
শত্রুতা: কারও পিছনে লাগা ঠিক না।
২৮. লাল
রং: লাল জামাতে তোমাকে বেশ মানিয়েছে।
জেলখানা: মস্তানি করলে লালদালানে পাঠিয়ে দেব।
বন্ধ হওয়া: অসৎ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে তার ব্যবসায় লালবাতি জ্বলেছে।
ক্রোধ: আমাকে লালচোখ দেখিও না, আমি ভয় পাই না।
পুত্র: “আম্মা লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া।”
২৯. লোক
মানুষ: রহিম সাহেব ভালো লোক।
জনসাধারণ: খারাপ কাজ করলে লোকনিন্দা শুনতে হয়।
মৃত্যু: জসিম সাহেব গতকাল পরলোকগমন করেছেন।
মজুর: লোক দিয়ে কাজ করালে নজর রাখতে হয়।
গল্প: শিশুরা লোক-কাহিনি শুনতে ভালোবাসে।
৩০. সারা
সমগ্র/সব: সারা গ্রাম জুড়ে হৈচৈ পড়ে গেছে।
আকুল: শিশুটি মাকে খুঁজে না পেয়ে কেঁদে সারা হলো।
মেরামত: নৌকার ফুটো সারা হয়েছে।
সমাপ্ত: যাক্, এতক্ষণে কাজটি সারা হয়েছে।
হয়রান/ক্লান্ত: রৌদ্রে ঘুরে ঘুরে সারা হয়েছি।

১০.২ সমার্থক শব্দের প্রয়োগে বাক্য রচনা :
বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে এমন কতকগুলো শব্দ আছে যেগুলো একই অর্থ বহন করে। এ রকম সম-অর্থজ্ঞাপক ভিন্ন শব্দকে সমার্থকশব্দ, সমার্থশব্দ, বিকল্পশব্দ বা প্রতিশব্দ বলে।
একই অর্থবহ শব্দের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকে। আকৃতি, ব্যঞ্জনা ও গাম্ভীর্যের দিক থেকে এসব শব্দের পার্থক্য থাকে। সমার্থকশব্দ জানা থাকলে লেখার বা বলার সময় একই শব্দ বার-বার ব্যবহার করতে হয় না। ফলে বক্তার বা লেখকের মনের ভাব অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশিত হয়। নিচে সমার্থকশব্দ বা প্রতিশব্দের কতিপয় দৃষ্টান্ত বাক্যে প্রয়োগ করে দেখানো হলো:
১. অগ্নি: ঘরে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনজন মারা গেছে।
অনল: ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল।’
আগুন: ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।’
বহ্নি: ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা।’
বৈশ্বানর: দেখতে দেখতে নিমতলি বস্তিটি বৈশ্বানরের উদরে চলে গেল।
২. অশ্ব : অশ্বখুরে ধুলা উড়িয়ে অশ্বারোহী ছুটে চলে গেল।
ঘোটক: জগা ধোপার ঘোটক তার মতোই দুর্বল আর হাড় জিরজিরে।
ঘোড়া ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল।’
তুরঙ্গ: দুরন্ত গতিতে তুরঙ্গ ছুটে চলেছে।
বাজি : নবাবের আদেশে বাজিপাল বাজি নিয়ে হাজির হলো।
৩. অনুমতি: আমার ঘরে ঢুকতে তোমাকে অনুমতি নিতে হবে না।
আজ্ঞা: আসতে আজ্ঞা হোক।
আদেশ: ‘আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।’
নির্দেশ: স্কুলের বেতন পরিশোধ করার জন্য প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের নির্দেশ দিলেন।
হুকুম: ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমে পুলিশ আসামিকে কাঠগড়ায় উঠাল।
৪. আকাশ: আকাশে আজ মেঘ নেই।
আসমান: ‘নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া।’
গগন: ‘গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা।’
দ্যুলোক: “ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর।”
নভ: ‘হেথা শ্যামল দূর্বাদল, নবনীল নভস্তল।’
৫. আকাঙ্ক্ষা: মানুষের আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই।
ইচ্ছা: ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
কামনা: বাংলাদেশের কল্যাণ কামনা করি।
বাঞ্ছা: ঈশ্বর তোমার মনোবাঞ্ছা পূরণ করুন।
সাধ: ‘আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল সকলই ফুরায়ে যায় মা।’
৬. উত্তম: ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে।’
উপাদেয়: বহুদিন এমন উপাদেয় খাবার খাই নি।
বরেণ্য: শামসুর রাহমান একজন দেশবরেণ্য কবি।
ভালো: বকুল খুব ভালো ছেলে।
শ্রেষ্ঠ: রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ কোনটি তা বলা কঠিন।
৭. কুল: বরুণের তিন কুলে কেউ নেই।
গোত্র: তোমার গোত্র পরিচয় দাও।
জাত: ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে।’
জাতি: ‘জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি, সে জাতির নাম মানুষ জাতি।’
বর্ণ: মানুষে মানুষে বর্ণভেদ থাকা ভালো না।
৮. আলয়: শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
গৃহ: ‘গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে।’
ঘর : ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর।’
ধাম : এ ধরাধাম ছেড়ে একদিন সকলকেই চলে যেতে হবে।
বাড়ি: ‘আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর বসতে দেব পিড়ে।’
৯. চন্দ্র: আজ চন্দ্রগ্রহণ হবে।
চাঁদ : ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’
শশাঙ্ক: শশাঙ্কে কলঙ্করেখা কে দিয়েছে এঁকে?
শশধর: শশধরের পূর্ণ আলোয় পৃথিবী ঝলমল করছে।
শশী : ‘একলা শশী জাগিলে আকাশে বাতায়ন খুলে দিয়ো।’
১০. জল : ‘জল পড়ে পাতা নড়ে।’
পয়ঃ: এ শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো নয়।
পানি: বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন।
বারি: বর্ষার বারিধারায় পৃথিবী সজীব হয়ে উঠেছে।
সলিল: ঝড়ে লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় অনেক লোকের সলিল-সমাধি হলো।
১১. অর্থ: জগতে অর্থই সকল অনর্থের মূল।
কড়ি: পার ঘাটেতে এসে দেখি পারের কড়ি নাই।
টাকা: টাকা হলে বাঘের দুধও মেলে।
দৌলত: ‘দৌলত পানিতে ফেলে নেকি কর।’
ধন : ‘ধনের মানুষ বড় নয়, মনের মানুষ বড়।’
১২. গাঙ: মরা গাঙে বান এসেছে।
তটিনী: তটিনীর তরঙ্গে ভাসালাম এবার ভেলা।
তরঙ্গিণী: ঘর বেঁধেছি শেরি নামক তরঙ্গিণীর তীরে।
নদী : ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে।’
প্রবাহিণী: প্রবাহিণী ছুটে চলে সাগরের পানে।
১৩. জন : জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস।
নর : নর-বানরের যুদ্ধে রাবণ নিহত হয়।
মানব: বিজ্ঞানীরা মানব জাতির কল্যাণে নিরলস গবেষণা করে চলেছেন।
মানুষ: মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
লোক: ‘লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি ভালা না আমার।’
১৪. পর্বত: ‘পর্বতমালা আকাশের পানে চাহিয়া না কহে কথা।’
গিরি: ‘দুর্গম-গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার।’
পাহাড়: ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই।’
ভূধর: ‘আছ অনল-অনিলে, চির-নভোনীলে ভূধর সলিলে গহনে।’
শৈল: শৈলশৃঙ্গ তুষারে ঢাকা পড়েছে।
১৫. পাখি: ‘পাখিসব করে রব, রাতি পোহাইল।’
খগ: ‘ময়ূর-ময়ূরী সারী-শুক আদি খগ।’
খেচর খেচর চলেছে উড়ে নৈঋত কোণে।
পথি: ‘উইড়া যায়রে হংসপঙ্খি, পইড়া রয়রে ছায়া।’
বিহঙ্গ: ‘যাবার সময় হলো বিহঙ্গের।’
১৬. পৃথিবী: পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে।
জগৎ: এই জগতে আমার আপন বলতে কেউ নেই।
ধরা: ‘শরতে ধরাতল শিশিরে ঝলমল।’
বসুন্ধরা: ‘ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।’
বিশ্ব: ‘বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র।’
ভুবন: ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’
১৭. ফুল সবাই ফুল পছন্দ করে।
কুসুম: ‘কাননে কুসুম-কলি সকলই ফুটিল।’
পুষ্প: ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।’
প্রসূন: মরি মরি! এ কী প্রসূন শোভায় সেজেছে আমার গৃহ!
১৮: বন: বন্যেরা বনে সুন্দর।
অটবি: ‘অটবি বায়ুবশে উঠিত সে উছসি।’
অরণ্য: ‘দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর।’
জাল: জঙ্গলে বাঘ থাকে।
বনানী: ‘স্তব্ধ শরৎ দুপুরে ঘন বনানীর মধ্যে ঘুঘুর ডাক শুনিয়াছে।’
১৯. বাতাস: ঝড়ো বাতাস সব লন্ডভন্ড করে দিল।
পবন পবনবেগে সে গাড়ি চালিয়ে দিল।
বায় : ‘দখিনা বায় মাগিছে বিদায় শাল বীথিকার কাছে।’
বায়ু : ডাক্তার তাকে বায়ু পরিবর্তন করতে বলেছেন।
সমীর: ‘গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।’
২০. বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন এখন অকল্পনীয়।
ক্ষণপ্রভা: ক্ষণিকের ক্ষণপ্রভায় তাকে এক ঝলক দেখলাম।
তড়িৎ: লোকটি তড়িতাহত হয়ে মারা গেল।
বিজলি: বিজলিবাতিতে পুরো শহরটা যেন চমকাচ্ছে।
বিজুরি: ‘বিজুরি ঝলসে যেন মনে।’
২১. রাত: দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছি, সুখের নাগাল পাই না।
নিশি নিশি ভোর হয়েছে, এবার আঁখি খোল।
নিশীথ: ‘নিশীথে যাইও ফুল বনে।’
নিশীথিনী: ‘মধুর হলো বিধুর হলো মাধবী নিশীথিনী।’
যামিনী: ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না।’
২২. রাজা: এক দেশে ছিল এক রাজা।
অধিপতি: বাবর ছিলেন ভারতের প্রথম মুঘল অধিপতি।
নৃপতি: আলেকজান্ডারের মতো বীর নৃপতি বিশ্বে বিরল।
ভূপতি: ভূপতিকে দেখে মন্ত্রিবর্গ উঠে দাঁড়ালেন।
সম্রাট: সম্রাট অশোক ছিলেন জগদ্বিখ্যাত বীর।
২৩. সাগর: এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা।
জলধি: উত্তাল জলধি বক্ষে কার ক্ষুদ্র তরীখানি নির্বিঘ্নে চলেছে পারে?
পাথার: অকূল পাথারে আমি ভাসিয়েছি আমার তরী।
সমুদ্র: সাত সমুদ্র তের নদীর পারে আছে এক রূপকথার দেশ।
সিন্ধু: ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সংগীত ভেসে আসে!’
২৪. সুন্দর: আমাদের দেশটি খুব সুন্দর।
মনোরম: মনোরম ধরণীর তুলনা হয় না।
মনোহর: তার মনোহর চেহারা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়।
রমণীয়: বাহ! কী রমণীয় স্থান!
শোভন: তার পোশাক-আশাক চাল-চলন বেশ শোভন।
২৫. সোনা: সোনা অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু।
কনক: ‘কনককষিত কান্তি কমনীয় কায়।’
কাঞ্চন: প্রাচীনকালে আমাদের দেশে কাঞ্চন মুদ্রার প্রচলন ছিল।
স্বর্ণ: স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বী।
হিরণ: ‘হিরণ জরির ওড়না গায়।’
২৬. সূর্য: ‘পূর্বদিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্তলাল।’
অরুণ: অরুণ কিরণ দেয় মধ্যগগনে।
দিবাকর: মেঘে মেঘে ঢেকে গেছে দিবাকর।
ভানু: ভানুর কৃপায় শীতের প্রকোপ থেকে উলঙ্গ ছেলেটি রক্ষা পেল।
রবি: ‘রবির কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।’
২৭. সর্প: ‘সর্প হয়ে দংশন করো, ওঝা হয়ে ঝাড়ো।’
অহি: অহি-নকুলের যুদ্ধ লেগেছে।
আশীবিষ: ‘কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনি যারে।’
নাগ: ‘সর্বাঙ্গে দংশিল মোরে নাগ নাগবালা।’
ফণী: প্রবাদ আছে- ফণীর মাথায় মণি থাকে।
সাপ: বাপরে বাপ! কত্তো বড় সাপ।
২৮. মাথা: তার মাথায় অনেক চুল।
মস্তক: মস্তিষ্ক আছে বলেই মস্তকের দাম।
মুণ্ডু : কথায় কথায় সে কেন তোমার মুগ্ধপাত করে?
মুড়ো: বাবা মাছের মুড়োটি ছেলের পাতে তুলে দিলেন।
শির: ‘শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।’
২৯. চোখ: তোমার চোখ দুটি খুব সুন্দর।
আঁখি: ‘তোমার আঁখির মতো আকাশের দুটি তারা।’
চক্ষু: চক্ষু থাকতে অন্ধের মতো চলো কেন?
নয়ন: 'নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল।’
নেত্র: তার নেত্র থেকে টপটপ করে অশ্রু পড়তে লাগল।
৩০. কান: কান টানলে মাথা আসে।
কর্ণ: তার কথায় কর্ণপাত করো না।
শ্রুতি: তোমার কথা বাবার কর্ণগোচর হয়নি।
শ্রুতিপথ: চিৎকার করে বলো নয়তো তার শ্রুতিপথে ঢুকবে না।

১০.৩ বিপরীতার্থক শব্দ প্রয়োগে বাক্য রচনা :
বাংলা ভাষায় এমন কতকগুলো শব্দ আছে যেগুলো পরস্পরের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে। পরস্পরের সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ প্রকাশক এসব শব্দকে বিপরীতার্থক শব্দ বলে।
ভাষার সৌন্দর্য সৃষ্টি এবং ভাব-প্রকাশের ব্যাপকতার জন্য এ জাতীয় শব্দ জানা জরুরি। নিচে কয়েকটি বিপরীতার্থক শব্দের নমুনা বাক্য সহযোগে তুলে ধরা হলো।
অধম - উত্তম তুমি অধম বলেই আমাকে উত্তম হতে হবে।
আয় - ব্যয় আয় বুঝে ব্যয় কর।
উপকার - অপকার কারও উপকার করতে না পারো, অপকার করো না।
ঊর্ধ্ব - নিম্ন “ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল, নিম্নে উতলা ধরণীতল।”
কুৎসিত - সুন্দর তোমরা তার বাইরের সুন্দর চেহারাটি দেখেছ, ভেতরের কুৎসিত মনটি দেখ নি।
খ্যাতি - অখ্যাতি সেলিমের খ্যাতির সাথে সাথে কিছু অখ্যাতিও আছে।
গদ্য - পদ্য আমি গদ্য লিখি, পদ্য লিখতে পারি না।
ঘটন - অঘটন লেখকরা অঘটন ঘটন পটীয়সী প্রতিভা নিয়ে জন্মান।
চলা - থামা চলতে চলতে থামলে কেন?
জন্ম - মৃত্যু জন্ম যখন নিয়েছি, মৃত্যু তো অবধারিত।
টক - মিষ্টি বেণু টক খেতে পছন্দ করে, মিষ্টি মোটেই খায় না।
ঠান্ডা - গরম গরমে গলা শুকিয়ে গেছে, একটু ঠান্ডা পানি খাওয়াবে?
ডান - বাম রাস্তায় চলার সময় বামদিক দিয়ে চলবে, ডানদিক দিয়ে নয়।
ঢাকা - খোলা খাবার ঢাকা দিয়ে না রেখে খোলা রেখেছ কেন?
তরল - কঠিন তরল পানি জমে কঠিন বরফে পরিণত হয়।
দিন - রাত ‘রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকাতায় আছি।’
ধ্বংস - সৃষ্টি “আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান, আমি অবসান, নিশাবসান।”
নিরীহ - দুর্দান্ত তাকে দেখে যতটা নিরীহ ভাবছ, ও ততটাই দুর্দান্ত।
পটু - অপটু প্রকাশ কাজে যত অপটু, খাওয়ায় ততখানিই পটু।
প্রকাশ - গোপন সত্যি কখনো গোপন থাকে না, একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই।
ফর্সা - কালো ফর্সা-কালোয় কিছু যায়-আসে না, আমি একজন সৎ ও বিশ্বাসী বন্ধু চাই।
বড়ো - ছোটো ‘বড়ো যদি হতে চাও, ছোটো হও তবে।’
ভেজা - শুকনো তোমার ভেজা মাথাটা শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে নাও।
যত - তত ‘যত বড়ো মুখ নয়, তত বড় কথা।’
শূন্য - পূর্ণ “শূন্যেরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।”

১০.৪ বাগধারা :
যে শব্দ বা শব্দ সমষ্টি বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে নিজস্ব অর্থ অতিক্রম করে অপর কোনো বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, সেই শব্দ বা শব্দ সমষ্টিকে বলা হয় বাগধারা।
বাগধারা। বাংলা ভাষার বিশিষ্ট সম্পদ। বাগধারার মাধ্যমে বক্তার মনের গভীর ভাবকে অল্প কথায় সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায়। এগুলো ভাষাকে শক্তিশালী, ব্যঞ্জনাময় ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। তাই সব ভাষাতেই বাগধারার বিশেষ প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
নিচে বাগধারার কিছু নমুনা দেওয়া হলো।
বাগধারা বাগধারার অর্থ ও বাক্য গঠন
অ আ ক খ ➠ প্রাথমিক জ্ঞান
➠ তোমার তো দেখছি অ আ ক খ জ্ঞান নেই, চাকরিটা পেলে কীভাবে?
অকালকুম্মাণ্ড ➠ অপদার্থ
➠ অকালকুষ্মাণ্ড ছেলেকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না।
আমড়াগাছি করা ➠ তোষামুদে
➠ আজকাল আমড়াগাছি না করলে কোনো কাজ হাসিল হয় না।
ইঁদুর কপালে ➠ মন্দভাগ্য
➠ এত বড় চাকরি পেয়েও ধরে রাখতে পারলে না, তোমার মতো ইঁদুর কপালে আর কে আছে!
উজানের কই ➠ সহজলভ্য
➠ মোবাইল ফোন এখন উজানের কইয়ের মতো, যেখানে সেখানে পাওয়া যায়।
কাপুড়ে বাবু ➠ বাহ্যিক সভ্য
➠ আজকাল সত্যিকার অর্থে ভদ্রলোক নেই, সবাই কাপুড়ে বাবু।
খিচুড়ি পাকানো ➠ জটিল করা
➠ যা বলবে সহজ করে বল, অযথা খিচুড়ি পাকিয়ো না।
গরজ বড় বালাই ➠ প্রয়োজনে গুরুত্ব
➠ পরীক্ষা ঘাড়ের ওপর, তাই বই কিনতে হবে, গরজ বড় বালাই।
ঘর থাকতে বাবুই ভেজা ➠ সুযোগ থাকতে কষ্ট
➠ বাবার অগাধ টাকা, অথচ তুমি কিনা টিউশনি করে চলো, ঘর থাকতে বাবুই ভেজা কেন?
চোখে সাঁতার পানি ➠ অতিরিক্ত মায়াকান্না
➠ ব্যাঙের শোকে সাপের চোখে দেখি সাঁতার পানি।
ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধা ➠ বৃথা চেষ্টা
➠ বাবার সামান্য আয়ে সংসারই চলে না, সেখানে আমার প্রাইভেট পড়ার শখ ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধার মতোই হাস্যকর।
ঝাঁকের কৈ ➠ একই দলভুক্ত
➠ ওরা সবাই ঝাঁকের কৈ; একই উদ্দেশ্য নিয়ে চলে।
টাকার গরম ➠ অর্থের অহংকার
➠ টাকার গরমে মোহনের পা মাটিতে পড়ে না।
তামার বিষ ➠ অর্থের কু-প্রভাব
➠ মেধাবী ছেলেকে তামার বিষে ধরায় সে এবার পরীক্ষায় ফেল করেছে।
তুলসী বনের বাঘ ➠ ভণ্ড
➠ রনি দিনে যে বাড়িতে কাজ করে, রাতে সেই বাড়িতেই চুরি করতে যায়; ও হচ্ছে তুলসী বনের বাঘ।
দুধে-ভাতে থাকা ➠ সুখে থাকা
➠ ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’
নাড়ির টান ➠ গভীর মমত্ববোধ
➠ বিদেশে গিয়েও অনেকে দেশের প্রতি নাড়ির টান অনুভব করেন।
পালের গোদা ➠ দলপতি
➠ পালের গোদা ধরা পড়েছে, এবার বাকিরাও ধরা পড়বে।
পেটে পেটে বুদ্ধি ➠ দুষ্টুবুদ্ধি
➠ মেয়েটির পেটে পেটে এত বুদ্ধি জানতাম না তো!
ব্যাঙের আধুলি ➠ সামান্য অর্থ
➠ ব্যাঙের আধুলি সম্বল করে ব্যবসা করা যায় না।
ভিটায় ঘুঘু চরানো ➠ সর্বস্বান্ত
➠ তোমার ভিটায় ঘুঘু চরিয়ে ছাড়ব।
মাছের মায়ের পুত্রশোক ➠ মিথ্যা শোক
➠ গরিবের জন্য বড়লোকের দরদটা মাছের মায়ের পুত্রশোকের মতোই।
শিবরাত্রির সলতে ➠ একমাত্র সন্তান
➠ অর্জুন তার বাবা-মায়ের শিবরাত্রির সলতে, তাই সবাই তাকে সব সময় চোখে চোখে রাখে।
সোনার পাথরবাটি ➠ অসম্ভব বস্তু
➠ সাপের পাঁচ পা দেখা আর সোনার পাথরবাটিতে স্যুপ খাওয়া দুটোই আমার কাছে আষাঢ়ে গল্পের মতো।
হ-য-ব-র-ল ➠ বিশৃঙ্খল
➠ বাবার মৃত্যুতে গোছানো সংসারটা কেমন যেন হ-য-ব-র-ল হয়ে গেল।

১০.৫ কর্ম-অনুশীলন :
১. বাজারে আগুন লেগেছে। ঝড়ো বাতাস বইছে। পানি দিতে হবে। দমকল-বাহিনীর লোকজন এসেছে। আগুন লকলকিয়ে আকাশের দিকে উঠছে। উজ্জ্বল আগুনে অদ্ভুতভাবে সবকিছু পুড়ছে।
-উপরের অনুচ্ছেদটুকু ভালো করে পড়। অনুচ্ছেদে যেসব শব্দের সমার্থক শব্দ তোমার জানা আছে সেগুলোর সমার্থক শব্দ লেখ এবং দুটি করে বাক্য বানাও।
২. মানুষ-এর মাথা থেকেই সব নির্দেশ আসে। চোখ দেখে, কান শোনে আর ঠোঁট নড়ে নড়ে কথা বলে। সব ইচ্ছা-অনিচ্ছা, দুঃখ ও আনন্দ-এর বার্তা আসে মাথা থেকে।
-অনুচ্ছেদটিতে মোটাদাগের যেসব শব্দ আছে, সেগুলোর প্রতিশব্দ লিখে মনের মতো বাক্য তৈরি কর।
৩. মেঘমুক্ত রাতের আকাশ। শীতল বাতাসে ফুলের সুগন্ধ। নির্মল পবিত্র এ রাত শুধুই মিলনের। প্রসন্ন চিত্ত তাই যেন উন্মুখ হয়ে কবিতার মিল খুঁজে ফেরে।
-উপরের অনুচ্ছেদের মোটা দাগের শব্দগুলোর অর্থসহ বিপরীতার্থক শব্দ লেখ।
৪. তুমি নিজে এ রকম একটি অনুচ্ছেদ রচনা কর এবং সেখান থেকে একটি বা দুটি শব্দ বেছে নিয়ে সেটির বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ দেখিয়ে বাক্য তৈরি কর।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


তথ্যসূত্র :
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ: বাংলা একাডেমি, প্রথম খণ্ড, ঢাকা, ২০১২।
৩. প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১৬।
৪. ভাষা শিক্ষা: দি অ্যাটলাস পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, অক্টোবর ২০২১-২২।
৫. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, এপ্রিল, ২০১৮।
৬. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৮তম, ২০১৫।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url