‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

সততার পুরস্কার : মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
 সততার পুরস্কার 

সততার পুরস্কার
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

সেকালে আরব দেশে তিনটি লোক ছিল- একজনের সর্বাঙ্গে ধবল, একজনের মাথায় টাক, আরেকজনের দুই চোখ অন্ধ। আল্লাহ তাহাদের পরীক্ষার জন্য এক ফেরেশতা পাঠাইলেন। ফেরেশতা হইলেন আল্লাহর দূত। তাহারা নূরেতৈয়ারী। এমনি কেহ তাহাদিগকে দেখিতে পায় না। আল্লাহর হুকুমে তাহারা সকল কাজ করিয়া থাকেন।
ফেরেশতা মানুষের রূপ ধরিয়া প্রথমে ধবল রোগীর নিকটে আসিলেন। তিনি তাহাকে বলিলেন, কী তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো?

ধবলরোগী বলিল, আহা। আমার গায়ের রং যদি ভালো হয়। সকলে যে আমাকে বড় ঘৃণা করে।
স্বর্গীয় দূত তাহার গায়ে হাত বুলাইয়া দিলেন। তাহার রোগ সারিয়া গেল। তাহার গায়ের চামড়া ভালো হইল।
তারপর আল্লাহর দূত পুনরায় তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এখন তুমি কী চাও?
সে বলিল, আমি উট চাই।
দূত তাহাকে একটি গাভিন উট দিয়া বলিলেন, এই লও। ইহাতে তোমার ভাগ্য খুলিবে। তারপর সেই ফেরেশতা টাকওয়ালার কাছে গিয়া বলিলেন, কী তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো?
সে বলিল, আহা! আমার এই রোগ যদি সারিয়া যায়। যদি আমার মাথায় চুল উঠে।
আল্লাহর দূত তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া দিলেন। তাহার টাক সারিয়া গেল। তাহার মাথায় চুল গজাইল। দূত পুনরায় বলিলেন, এখন তুমি কী চাও?
সে বলিল, গাভি।

তিনি তাহাকে একটি গাভিন গাই দিয়া বলিলেন, এই লও। ইহাতে তোমার ভাগ্য খুলিবে।
তারপর স্বর্গীয় দূত অন্ধের কাছে গেলেন। গিয়া বলিলেন, কী তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো?
সে বলিল, আল্লাহ্ আমার চোখ ভালো করিয়া দিন। আমি যেন লোকের মুখ দেখিতে পাই।
স্বর্গীয় দূত তাহার চোখে হাত বুলাইয়া দিলেন। তাহার চোখ ভালো হইয়া গেল।
তারপর তিনি তাহাকে বলিলেন, এখন তুমি কী চাও?
সে বলিল, আমি ছাগল চাই।
স্বর্গীয় দূত তাহাকে একটি গাভিন ছাগল দিয়া বলিলেন, এই লও। ইহাতে তোমার ভাগ্য খুলিবে।

তারপর উটের বাচ্চা হইল, গাভির বাছুর হইল, ছাগলের ছানা হইল। এই রকম করিয়া উটে, গাভিতে, ছাগলে তাহাদের মাঠ বোঝাই হইয়া গেল।
কিছুদিন পর আবার সেই ফেরেশতা পূর্বের মতো মানুষের রূপ ধরিয়া, সেই যে আগের ধবলরোগী ছিল, তাহার নিকট উপস্থিত হইলেন।

সেখানে গিয়া তিনি বলিলেন, আমি এক বিদেশি। বিদেশে আসিয়া আমার সব পুঁজি ফুরাইয়া গিয়াছে। এখন আল্লাহর দয়া ছাড়া আমার আর দেশে ফিরিবার উপায় নাই। যিনি তোমারে সুন্দর গায়ের রং দিয়াছেন, সুন্দর চামড়া দিয়াছেন, আর এত ধনদৌলত দিয়াছেন, তাঁহার দোহাই দিয়া তোমার কাছে একটি উট চাহিতেছি।
সে বলিল, উটের অনেক দাম, কী করিয়া দিই?
স্বর্গীয় দূত বলিলেন, ওহে। আমি যেন তোমাকে চিনিতে পারিতেছি। তুমি না ধবলরোগী ছিলে, আর সকলে তোমাকে ঘৃণা করিত? তুমি না গরিব ছিলে, পরে আল্লাহ তোমাকে ধনদৌলত দিয়াছেন?
সে বলিল, না, তা কেন? এসব তো আমার বরাবরই আছে।
স্বর্গীয় দূত বলিলেন, আচ্ছা। যদি তুমি মিথ্যা বলিয়া থাক, তবে তুমি যেমন ছিলে আল্লাহ আবার তোমাকে তাহাই করিবেন।

তারপর স্বর্গীয় দূত পূর্বে যে টাকওয়ালা ছিল, তাহার কাছে গেলেন। সেখানে গিয়া আগের মতো একটি গাভি চাহিলেন। সেও ধবলরোগীর মতো তাহাকে কিছুই দিল না। তখন স্বর্গীয় দূত বলিলেন, আচ্ছা, যদি তুমি মিথ্যা কথা বলিয়া থাক, তবে যেমন ছিলে আল্লাহ তোমাকে আবার তেমনি করিবেন।
তারপর স্বর্গীয় দূত পূর্বে যে অন্ধ ছিল, তাহার কাছে গিয়া বলিলেন, আমি এক বিদেশি। বিদেশে আমার সম্বল ফুরাইয়া গিয়াছে। এখন আল্লাহর দয়া ছাড়া আমার দেশে পৌঁছিবার আর কোনো উপায় নাই। যিনি তোমার চক্ষু ভালো করিয়া দিয়াছেন, আমি তোমাকে সেই আল্লাহর দোহাই দিয়া একটি ছাগল চাহিতেছি; যেন আমি সেই ছাগল-বেচা টাকা দিয়া দেশে ফিরিয়া যাইতে পারি।
তখন সে বলিল, হ্যাঁ ঠিক তো। আমি অন্ধ ছিলাম, পরে আল্লাহ আমাকে দেখিবার ক্ষমতা দিয়াছেন। আমি গরিব ছিলাম, তিনি আমাকে আমির করিয়াছেন। তুমি যাহা চাও লও। আল্লাহর কসম, আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে জিনিস লইতে তোমার মন চায়, তাহা যদি তুমি না লও, তবে আমি তোমাকে কিছুতেই ভালো লোক বলিব না।
ফেরেশতা তখন বলিলেন, বাস্। তোমার জিনিস তোমারই থাক। তোমাদের পরীক্ষা লওয়া হইল। আল্লাহ তোমার উপর খুশি হইয়াছেন, আর তাহাদের উপর বেজার হইয়াছেন।

উৎস নির্দেশ :
--

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ ধবল - সাদা; শ্বেত; এক প্রকার চর্মরোগ- এই রোগে শরীরে চামড়া ও চুল সাদা হয়ে যায়।
➠ গাভিন- গর্ভধারণ করেছে এমন (গাভিন গরু)।
➠ আমির- ধনী; ধনবান।
➠ সর্বাঙ্গে- (সর্ব+অঙ্গ> সর্বাঙ্গ+এ বিভক্তি) সারা শরীরে; সমস্ত দেহে।
➠ কসম- শপথ; দিব্যি।
➠ স্বর্গীয় দূত- আল্লাহর বার্তা বাহক; সংবাদবাহক।
➠ নূর- জ্যোতি; আলো।
➠ পুঁজি- সম্বল; মূলধন।
➠ দোহাই- শপথ; কসম।
➠ সম্বল- পাথেয়; পুঁজি।
➠ বেজার- অখুশি; অসন্তুষ্ট।

পাঠের উদ্দেশ্য :
সততা, পরোপকার ও নৈতিক মূল্যবোধ অর্জন।

পাঠ-পরিচিতি :

সাধুরীতিতে রচিত এই গল্পে হাদিসের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এই গল্পের মূলবাণী হচ্ছে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন এবং সৎলোককে যথাযথ পুরস্কার দেন।

আরব দেশের তিন জন লোককে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠান। এদের একজন ধবলরোগী একজন টাকওয়ালা এবং আরেকজন অন্ধ।

ফেরেশতার অনুগ্রহে এই তিন জনেরই শারীরিক ত্রুটি দূর হলো। তিন জনই সুন্দর সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের চেহারা পেল। শুধু তাই নয়, ফেরেশতার কৃপায় প্রথম জন একটি উট থেকে বহু উটের, দ্বিতীয় জন একটি গাভি থেকে বহু গাভির এবং তৃতীয় জন একটি ছাগল থেকে বহু ছাগলের মালিক হয়ে গেল।

কিছুদিন পর এদের পরীক্ষা করার জন্য ফেরেশতা গরিব বিদেশির ছদ্মবেশে এদের কাছে হাজির হলেন। তিনি একেক জনের কাছে গিয়ে তাদের আগের দুরবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে কিছু সাহায্য করতে বললেন। প্রথম দুজন তাদের আগের অবস্থার কথা অস্বীকার করে ছদ্মবেশী ফেরেশতাকে খালি হাতে বিদায় দিল। অন্যদিকে তৃতীয় জন নির্দ্বিধায় ফেরেশতার ইচ্ছেমতো সবকিছু দিতে রাজি হল। আল্লাহ তার উপর খুশি হলেন এবং তার সম্পদ তারই রয়ে গেল। প্রথম দুজনের উপর আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাদের অবস্থা আগের মতো হয়ে গেল। অকৃতজ্ঞরা তাদের অকৃতজ্ঞতার উপযুক্ত ফল পেল।


লেখক পরিচিতি :

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্য ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার পেয়ারা গ্রামে। তিনি বহুভাষাবিদ ও পণ্ডিত হিসেবে খ্যাত। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে বিএ অনার্স ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ পাস করেন। তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রথম ছাত্র। পরে তিনি প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলা ব্যাকরণ রচনাতেও তাঁর অবদান স্মরণীয়।

কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ছোটদের জন্য তাঁর লেখা রচনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘শেষ নবীর সন্ধানে’ ও ‘গল্প মঞ্জুরী’। তাঁর সম্পাদনায় শিশু-পত্রিকা ‘আঙুর' প্রকাশিত হয়। ‘বাংলা ভাষার আঞ্চলিক অভিধান’ সম্পাদনা তাঁর অসামান্য কীর্তি।
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয়।


বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. ফেরেশতা কেন আরব দেশের লোকদের কাছে এসেছিলেন?
ক. সাহায্য নেওয়ার জন্য
খ. পরীক্ষা নেওয়ার জন্য
গ. শিক্ষা দেওয়ার জন্য
ঘ. মূল্যায়নের জন্য
২. অন্ধ ব্যক্তি ফেরেশতাকে সবকিছু দিতে রাজি হয়েছিল কেন?
ক. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকায়।
খ. তার ছাগল বেশি হয়েছিল।
গ. তার আর ধনসম্পদের দরকার ছিল না।
ঘ. সে অকৃপণ ছিল।
উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
নন্দীপাড়া গ্রামের নওশাদ পরোপকারী মানুষ। এইতো সেদিন প্রতিবেশী কাশিমের বাড়িতে আগুন লাগলে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাশিমকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করে নওশাদ। এর কিছুদিন পর নওশাদ একটি দুর্ঘটনায় হাসপাতালে যখন চিকিৎসাধীন তখন কাশিম নিজের রক্ত দিয়ে নওশাদকে সুস্থ করে তোলেন।
৩. উদ্দীপকের কাশিমের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কার সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. ধবলরোগী
খ. টাকওয়ালা
গ. অন্ধলোক
ঘ. বিদেশি
৪. উদ্দীপকের কাশিমের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো-
i . নৈতিক মূল্যবোধ
ii. পরোপকার
iii. কৃতজ্ঞতাবোধ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি লাভ করেন?
উত্তর : মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি লাভ করেন।
প্রশ্ন- ২: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত শিশু পত্রিকার নাম কী?
উত্তর : মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত শিশু পত্রিকার নাম ‘আঙুর’।
প্রশ্ন- ৩: বাংলা ব্যাকরণ রচনায় কে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন?
উত্তর : বাংলা ব্যাকরণ রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
প্রশ্ন- ৪: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কত সালে বিএ অনার্স পাস করেন?
উত্তর : মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯১০ সালে বিএ অনার্স পাস করেন।
প্রশ্ন- ৫: কোন বংশের লোককে পরীক্ষার জন্য আল্লাহ ফেরেশতা পাঠান?
উত্তর : ইহুদি বংশের তিন লোককে পরীক্ষার জন্য আল্লাহ ফেরেশতা পাঠান।
প্রশ্ন- ৬: ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মূলত কোন কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছেন?
উত্তর : ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মূলত হাদিসের কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছেন।
প্রশ্ন- ৭: কার অনুগ্রহে তিনজনের শারীরিক ত্রুটি দূর হয়েছে?
উত্তর : ফেরেশতার অনুগ্রহে তিনজনের শারীরিক ত্রুটি দূর হয়েছে।
প্রশ্ন- ৮: অন্ধ ব্যক্তিকে ফেরেশতা কী প্রদান করেছিলেন?
উত্তর : অন্ধ ব্যক্তিকে ফেরেশতা ছাগল প্রদান করেছিলেন।
প্রশ্ন- ৯: ফেরেশতা কোন ছদ্মবেশে তিন জনের কাছে হাজির হলেন?
উত্তর : ফেরেশতা গরিব বিদেশির ছদ্মবেশে তিন জনের কাছে হাজির হলেন।
প্রশ্ন- ১০: কারা নিজেদের পূর্বের অবস্থা অস্বীকার করল?
উত্তর : প্রথম দুজন নিজেদের পূর্বের অবস্থা অস্বীকার করল।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: ‘ফেরেশতা হইলেন আল্লাহর দূত’- কথাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ফেরেশতা হচ্ছেন আল্লাহর দূত। ‘দূত’ অর্থ বার্তাবাহক।
ফেরেশতা আল্লাহ্র আদেশ নির্দেশ মানুষের কাছে অর্থাৎ আল্লাহ্র বান্দার কাছে পৌঁছে দেয়। আল্লাহর নির্দেশে কাজ করেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন যা বলেন বা নির্দেশ দেন তা পালন করাই তাঁদের একমাত্র কাজ।
প্রশ্ন- ২: ধবলরোগীকে গাভিন গাই কেন দেওয়া হয়েছিল?
উত্তর : ধবলরোগীকে তার দারিদ্র্য দশা হতে মুক্তির জন্য গাভীন গাই দেওয়া হয়েছিল।
ধবলরোগী রোগশোকে জর্জরিত ছিল। কাজ করতে পারত না। সমাজে তার মর্যাদা ছিল না। তার সততা ও কৃতজ্ঞতা পরীক্ষা করতে তাকে গাভিন গাই দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন-৩: অন্ধ ব্যক্তির চোখ কীভাবে ভালো হলো?
উত্তর : আল্লাহ্র নির্দেশে ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে তার সমস্যা জানতে চাইলেন। অন্ধ ব্যক্তি বললেন তিনি রোগ থেকে মুক্তি চান। ফেরেশতা তার চোখে হাত বুলিয়ে দিলে তার চোখ রাব্বুল আলামিনের রহমতে ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন- ৪: অন্ধ ব্যক্তি ছাগল চেয়েছিল কেন?
উত্তর : অন্ধ ব্যক্তি গরিব ছিল। সে যখন ফেরেশতার মাধ্যমে সুস্থ হলো তখন ফেরেশতা তাকে আবার জিজ্ঞাস করে- তুমি আর কী চাও? তখন সে বলল, সে ছাগল চায়। অন্ধ ব্যক্তি ভাগ্য ফেরানোর জন্য তাকে ছাগল দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন- ৫: ফেরেশতা দ্বিতীয়বার ধবলরোগীর কাছে গিয়ে কী বলেছিল?
উত্তর : আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা মানুষের বেশে ধবলরোগী পরীক্ষা করার জন্য দ্বিতীয় বার তার কাছে যায় এবং বলে আমি বিদেশি। আমি অসহায়। আমাকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহর ওয়াস্তে একটি উট দাও। আল্লাহ তো তোমাকে সবকিছু দিয়েছেন।
প্রশ্ন- ৬: ফেরেশতা উট চাইলে ধবল রোগী কী জবাব দিয়েছিল?
উত্তর : মানুষরূপী ফেরেশতা উট চাইলে ধবলরোগী বলেছিল- উটের অনেক দাম। দামি জিনিস তোমাকে কীভাবে দিই। ধবলরোগী আল্লাহর দান ভুলে গিয়ে অকৃতজ্ঞের মতো বলল, এসব তার আগে থেকেই ছিল।
প্রশ্ন- ৭: কেন তিন ইহুদির পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল?
উত্তর : তিন ইহুদির সমস্যা দূর করে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। কারণ আল্লাহ দেখতে চাইলেন মানুষ তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কি না। তাছাড়া সৎ মানুষকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য এই পরীক্ষা নেওয়া হয়।
প্রশ্ন- ৮: ‘সততার পুরস্কার’ রচনাটির বৈশিষ্ট্য কেমন?
উত্তর : সততার পুরস্কার একটি আদর্শিক রচনা।
এ রচনার মাধ্যমে সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষ তার প্রভুকে ভুলে যায় কি না। কৃতজ্ঞ মানুষ তাদের প্রভুর কাছে যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা পায়। এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করাও এই রচনার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
কালাম, আবুল ও হাফিজ একই গ্রামে বাস করে। তাদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। কোনো মতে দিন অতিবাহিত করে। এ কারণে হাজি সাহেব তার যাকাতের টাকা দিয়ে আবুলকে একটা রিক্সা, কালামকে একটা ভ্যানগাড়ি আর হাফিজকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দিলেন। তিনি বললেন, তোমরা পরিশ্রম করে খাও, আর তোমাদের সাধ্যমতো গরিব মানুষের উপকার করো। কিছুদিন পর হাজি সাহেব তাদের পরীক্ষা করার জন্য এক ভিক্ষুককে পাঠালেন তাদের কাছে সাহায্য চাইতে। আবুল আর কালাম কোনো সাহায্যই করলো না। কিন্তু হাফিজ বিনা পয়সায় ভিক্ষুকের জামাটা সেলাই করে দিল।
ক. স্বর্গীয় দূত কতজন ইহুদিকে পরীক্ষা করেছিলেন?
খ. স্বর্গীয় দূত মানুষের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন কেন?
গ. কালাম ও আবুলের কাজের মধ্যে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের যে দিকটি প্রতিফলিত তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “হাফিজের কাজের মধ্যেই ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূল শিক্ষা নিহিত।”- কথাটি বিশ্লেষণ কর।
ক স্বর্গীয় দূত তিনজন ইহুদিকে পরীক্ষা করেছিলেন।
খ স্বর্গীয় দূত তিনজন ইহুদির মনের প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য মানুষের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল।
➠ আল্লাহর নির্দেশে একজন ফেরেশতা তিন ইহুদির সমস্যা ধবলরোগ, টাক ও অন্ধত্ব দূর করে দেয় এবং তাদের সচ্ছল করে দেয়। কিছুদিন পর তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য তাদের পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে ছদ্মবেশ ধারণ করে।

গ উদ্দীপকের কালাম ও আবুলের কাজের মাঝে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের ধবলরোগী ও টাকওয়ালা চরিত্রের অকৃতজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে এক ফেরেশতা ধবলরোগী ও টাকওয়ালার কাছে এসে তাদের রোগসমূহ দূর করে দেয়। সেই সাথে তাদের দেয়া হয় গাভিন উট ও গাভিন গাই। যা বাচ্চা দিয়ে দিয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। পরে ঐ ফেরেশতা অসহায় মানুষের ছদ্মবেশ ধারণ করে তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তাদের পূর্বের অবস্থায় কথা। তথাপি তাদের চৈতন্যোদয় হয়নি, তারা সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে তাদের অবস্থা পূর্বের মতো ফিরিয়ে দেয়া হয়।
➠ উদ্দীপকের কালাম ও আবুলকে হাজী মকবুল সাহেব যাকাতের টাকা দিয়ে রিকশা ও একটা ভ্যানগাড়ি কিনে দেন। তাদের বলা হলো পরিশ্রম করে খেতে আর সাধ্যমতো অন্য গরিবদের উপকার করতে। হাজী সাহেব একবার ভিক্ষুক পাঠিয়ে তাদের পরীক্ষা করলেন। কিন্তু তারা ভিক্ষুককে কোনো সাহায্যই করেনি। অন্যের সাহায্যে তাদের জীবনে সফলতা এলেও তারা কাউকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি। সুস্পষ্টভাবেই তারা অকৃতজ্ঞ। ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের ধবলরোগী ও টাকওয়ালা চরিত্রের প্রতিরূপ হলো কালাম ও আবুল। এদের চরিত্রে স্বার্থপরতা ও অকৃতজ্ঞতাই ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের হাফিজ ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ ব্যক্তির কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে সততা, সত্যবাদিতা ও মানবিকতার মতো মহৎ গুণাবলির।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে স্বর্গীয় দূত ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির অন্ধত্ব দূর করে দেয়। সাথে তাকে দান করা হয় গাভিন ছাগল। এই ছাগল বৃদ্ধি পায় বহুগুণে। পরবর্তী সময় যখন মানুষরূপী ফেরেশতা আসেন, অন্ধ ব্যক্তির পরীক্ষা করতে তখন সে ফেরেশতারূপী মানুষকে যে কয়টা ছাগল ইচ্ছে নিয়ে যেতে বলে। ফেরেশতা তখন বলে তোমার জিনিস তোমারই থাক। আল্লাহ তোমার ওপর খুশি হয়েছেন।” অন্ধ ব্যক্তিটির রোগমুক্তি ও সচ্ছলতা এলেও সে মনুষ্যত্বকে ত্যাগ করেনি।
➠ উদ্দীপকের হাফিজ একজন সৎ মানুষ। হাজী মকবুল তাকে সেলাই মেশিন দিলে সে তা ব্যবহার করে তার অভার দূর করেছে। অসহায় দরিদ্র মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সে ভিক্ষুকের জামাটা বিনা পয়সায় সেলাই করে দিয়েছে।
➠ উদ্দীপকের হাফিজ যেমন মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখার ইচ্ছে পোষণ করে তেমনি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ ব্যক্তিও একজন পরোপকারী মানুষ। এরা শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেনি। সমাজের দীন-হীন মানুষের প্রতিও জেগে উঠেছে তাদের মমত্ববোধ। যে কারণে বলা হয়েছে, হাফিজের কাজের মধ্যেই ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূল শিক্ষা নিহিত।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
একবার কাঁটা ফুটল বাঘের গলায়। এ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়ল বাঘ। উপায়ান্তর না পেয়ে শরণাপন্ন হলো বকের। বড় বকশিশ পাবে এই আশায় বক কাঁটা বের করতে রাজি হলো। কথামতো বক তার লম্বা ঠোঁট বাঘের গলায় ঢুকিয়ে কাঁটা বের করে নিয়ে এলো। স্বস্তি পেল বাঘ। বক এবার তার বকশিশ চাইলে বাঘ বলল “তুই আমার মুখে গলা ঢুকিয়েছিলি তখন যে চিবিয়ে খাইনি তাইতো বেশি।”
ক. কে বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ছিলেন?
খ. এক ফেরেশতা কী জন্য ইহুদি বংশের তিন লোকের কাছে গিয়েছিলেন?
গ. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের তিন ব্যক্তি এবং উদ্দীপকের বাঘটির ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
ক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন বহুভাষাবিদ পণ্ডিত।
খ আল্লাহর নির্দেশে এক ফেরেশতা ইহুদি বংশের তিন লোকের কাছে গিয়েছিল তাদের পরীক্ষা করার জন্য।
➠ আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা ধবলরোগী, টাকওয়ালা ও অন্ধ ব্যক্তির কাছে গেল। পূর্বে রোগমুক্তির পাশাপাশি তারা উট, গাভি, ছাগল ইত্যাদি লাভ করেছিল। যা পরবর্তীতে বহুগুণে বর্ধিত হয়। এবার ফেরেশতা তাদের কাছে একটি উট, গাভি ও ছাগল চাইলে অন্ধ ব্যক্তিটি ছাড়া বাকি দুজন তা দিতে অস্বীকার করল। অন্ধ ব্যক্তি তার সততার পুরস্কার পেলেও অন্য দুজন সম্পদ হারিয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল।

গ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হচ্ছে ধবলরোগী, টাকওয়ালা এবং বাঘ সকলেই ছিল চরমভাবে অকৃতজ্ঞ।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে আল্লাহর নির্দেশে এক ফেরেশতা ধবলরোগী টাকওয়ালা ও অন্ধ ব্যক্তির রোগমুক্তি দান করে এবং তাদের অতিরিক্ত দান হিসেবে উট, গাভি ও ছাগল প্রদান করে। যা পরবর্তীতে বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। কিছুদিন পর ঐ ফেরেশতা তাদের কাছে একটি উট, একটি গাভি ও একটি ছাগল চাইলে প্রথম দুজন তা প্রদান করতে অস্বীকার করে। কিন্তু অন্ধ ব্যক্তি তার পূর্বের অবস্থা স্মরণ করল এবং মানুষরূপী ফেরেশতাকে যা খুশি তা ইচ্ছেমতো নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। উদ্দীপকের বাঘ তার গলায় কাঁটা ফুটে যাওয়ার কারণে মহাবিপদের সম্মুখীন হলো এবং লম্বা ঠোঁটওয়ালা বককে অনুরোধ করে তার কাঁটা বের করে দেওয়ার জন্য। এ কাজ করার বিনিময়ে বকশিশ প্রদানের ওয়াদাও করে বাঘ। বক কাঁটা বের করে দেয়ার পর বকশিশ চাইলে, বাঘ রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। ক্ষুদ্র একটি বকের পক্ষে করার কিছুই ছিল না।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের প্রথম দু’ব্যক্তি রোগমুক্ত হয়ে সচ্ছল জীবনযাপন শুরু করলেও তারা ভুলে যায় তাদের অতীত। এর ঠিক বিপরীত আচরণ করে অন্ধ ব্যক্তিটি। যে তার অতীতকে মনে রেখেছে। উদ্দীপকের বাঘটি বকের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়েছে। সে তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। বাঘের ভূমিকা ন্যক্কারজনক। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের দুজন ব্যক্তির অকৃতজ্ঞতার দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ উদ্দীপকের বক একটি অকৃতজ্ঞ চরিত্র যাকে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ ব্যক্তির বিপরীত চরিত্র হিসেবে গণ্য করা যায়।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির নিকট তার কি চাই জিজ্ঞাসা করলেন। অন্ধ ব্যক্তি বললেন, ‘আমার চোখ ভালো করিয়া দিন।’। স্বর্গীয় দূত তার চোখে হাত বুলিয়ে দিলে তার চোখ ভালো হয়ে গেল। দূত তাঁর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একটি গাভিন ছাগলও প্রদান করলেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বস্ততা ও সততা পরীক্ষার জন্য ঐ ফেরেশতা কিছুদিন পর আবার তার কাছে এলেন। ফেরেশতা তার সাহায্য হিসেবে একটি ছাগল চাইলে সন্তুষ্টচিত্তে তা প্রদানে সম্মত হলেন। সৃষ্টিকর্তা তার সততা ও কৃতজ্ঞতাবোধে সন্তুষ্ট হলেন।
➠ উদ্দীপকের বাঘ হিংস্র প্রাণী হলেও গলায় কাঁটা ফুটলে সে শরণাপন্ন হয় লম্বা গলাবিশিষ্ট বকের। বককে বকশিশ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বাঘের কথায় রাজি হয়ে বক বাঘের গলা থেকে কাঁটা বের করে দেয়। বক তার প্রাপ্য বকশিশ চাইলে বাঘ তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। তাকে গলার ভেতর পেয়েও যে বাঘ তাকে চিবিয়ে খায়নি তা স্মরণ করিয়ে দেয়।
➠ উদ্দীপকের বাঘ ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ ব্যক্তির চরিত্র মূল্যায়ন করলে আমরা পাই বাঘ চরম অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর একটি চরিত্র আর অন্ধ ব্যক্তি সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও বিশ্বস্ততার প্রতীক। সে তার পূর্বের দুরাবস্থার কথা মনে রেখেছে তাই অন্যের বিপদে সাহায্যের জন্য সে সদাপ্রস্তুত। তাই ফেরেশতা তার নিকট একটি ছাগল চাইলে সে যা চায় তাই নিতে অনুরোধ করেছে। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায় উদ্দীপকের বাঘের চরিত্রটি অন্ধ ব্যক্তির বিপরীত ও একটি অকৃতজ্ঞ চরিত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
“মসজিদে কাল শিরনি আছিল,- অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি,
এমন সময় এলো মুসাফির গায় আজারির চিন
বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা-ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,
‘ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে নমাজ পড়িস বেটা?”
ক. ফেরেশতা কীসের তৈরি?
খ. তিন ব্যক্তির কীভাবে রোগমুক্ত হয়েছিল?
গ. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন বিষয়টি উদ্দীপকের সাথে সংগতিপূর্ণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলভাবকে ধারণ করে কি- বিশ্লেষণ করো।
ক. ফেরেশতা নূরের তৈরি।
খ. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে তিন ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতার মাধ্যমে রোগমুক্ত হয়েছিল।
➠ তিন ব্যক্তি ছিল ধবলরোগী, টাকওয়ালা ও অন্ধ। ফেরেশতা গায়ে হাত ঝুলিয়ে দিলে ধবলরোগী, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে টাকওয়ালা ও চোখে হাত বুলিয়ে দিলে অন্ধব্যক্তি রোগমুক্ত ও সুস্থ হয়ে যায়।

গ. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে প্রকাশিত কোনো সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য না করার অমানবিক দিকটি উদ্দীপকের সাথে সংগতিপূর্ণ।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা ধবল রোগ ও টাক সমস্যা থেকে মুক্ত করেন দুই ব্যক্তিকে। রোগমুক্ত হওয়ার পর ঐ দু ব্যক্তিকে সচ্ছল জীবনযাপনের জন্য গাভিন উট ও গাভিন গাই প্রদান করা হয়। আল্লাহর কৃপায় তারা সচ্ছল হয়ে ওঠে। তাদের মনুষ্যত্ব ও মনের অবস্থা পরীক্ষার জন্য কিছুদিন পর পুনরায় ফেরেশতা পাঠানো হয়। ফেরেশতা মানুষের বেশে তাঁর বিপদ দূর করার জন্য একটি উট ও একটি গাভি চাইলে তারা তা দিতে অস্বীকার করে। এমনকি তারা তাদের পূর্বের অসহায় অবস্থার কথাও অস্বীকার করে।
➠ উদ্দীপকে ক্ষুধার্ত ভিখারি মোল্লা সাহেবের কাছে কিছু খাবার প্রার্থনা করেছিল। অঢেল গোস্ত রুটি থাকা সত্ত্বেও মোল্লা সাহেব সাতদিনের অনাহারি ভিখারিকে নামাজ না পড়ার অজুহাতে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ঔদ্ধত্ববশত তাকে গো-ভাগাড়ে গিয়ে মরতে বলেছে। মুসাফিরের করুণ আহাজারিতে মোল্লা সাহেবের হৃদয় এতটুকু বিগলিত হয়নি। ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের ধবলরোগী ও টাকওয়ালা তেমনি স্বার্থপর ব্যক্তি। তারা শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত ছিল। অন্যের দুঃখকষ্ট তাদের হৃদয় স্পর্শ করেনি। সম্পদের লোভে তারা অন্ধ হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। সাহায্য প্রার্থীকে সাহায্য না করার ঘৃণ্য মানসিকতার বিষয়টি আমরা উদ্দীপক ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে দারুণভাবে লক্ষ করি।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলভাবকে নয় বরং আংশিকভাবকে ধারণ করে।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে আমরা দেখি আল্লাহর নির্দেশিত ফেরেশতার কাছে ধবলরোগী, টাকওয়ালা ও অন্ধব্যক্তি তাদের রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করে। ফেরেশতা তাদের রোগমুক্ত করেন এবং আল্লাহর নির্দেশে তাদের গাভিন উট, গাভিন গাই ও ছাগল প্রদান করেন। যা পেয়ে তারা অত্যন্ত সচ্ছল হয়ে ওঠে। তারা আল্লাহর প্রতি অনুগত কৃতজ্ঞতাবোধসম্পন্ন কি না তা পরীক্ষা করার জন্য ফেরেশতা আবার মানুষের বেশে তাদের কাছে আসেন। ফেরেশতা তাঁর অসহায়ত্বের কথা বলে তাদের কাছে একটি উট, গাভি ও ছাগল চাইলে প্রথম দু ব্যক্তি তা দিতে অস্বীকার করে অবশ্য অন্ধ ব্যক্তি তার পূর্বের কথা স্মরণ করে এবং বিনীতভাবে ফেরেশতাকে তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।
➠ উদ্দীপকে মসজিদে অঢেল গোস্ত রুটি বেচে যাওয়ায় মোল্লা সাহেব খুশিতে আটখানা। ঠিক তখনই সাতদিনের অনাহারি এক মুসাফির তার কাছে খাবার প্রার্থনা করলে তাকে বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেয়। নামাজ না পড়ার অজুহাত দেখিয়ে তাকে খাবার থেকে বঞ্চিত করে। ক্ষুধায় তার পেট জ্বলেপুড়ে গেলেও প্রতি তার কোনোরূপ মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়নি। অত্যন্ত নির্দয়ভাবে মোল্লা সাহেব অনাহারিকে গো-ভাগাড়ে গিয়ে মরতে বলেছে।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে আমরা দেখি দুজন ব্যক্তি স্বার্থের মোহে অন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার প্রতিফল হিসেবে তারা তাদের পূর্বের দরিদ্রদশায় পতিত হয়েছে। তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে সততা ও বিচার বুদ্ধি থাকায় সে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দান পেয়েছিল তা সে স্থায়ীভাবে পেল। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু প্রথম দুই ব্যক্তির আচরণের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থাৎ সাহায্যপ্রার্থীকে কোনোরূপ সহায়তা না দেয়ার কথাই বলা হয়েছে। তাই বলা যায় উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলভাবকে ধারণ করে না বরং আংশিক ভাবকে ধারণ করে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী-’পরে।
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’
ক. আল্লাহর দূতের কাছে ধবলরোগী কি চেয়েছিল?
খ. অন্ধ ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হয়েছেন কেন?
গ. ‘উদ্দীপকের মূলভাব ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ’- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সমগ্রভাব উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।- বিশ্লেষণ করো।
ক. আল্লাহর দূত ফেরেশতার কাছে ধবলরোগী একটি উট চেয়েছিল।
খ. অন্ধ ব্যক্তির সততা ও কৃতজ্ঞতাবোধের কারণে আল্লাহ তার প্রতি খুশি হয়েছেন।
➠ অন্ধ ব্যক্তিকে তার প্রার্থনা অনুযায়ী তার অন্ধত্ব দূর করা হয়েছিল। সচ্ছলতার জন্য তাকে দেয়া হয়েছিল একটি গাভিন ছাগল। সে গরিব থেকে আমিরে পরিণত হয়েছিল। তার কাছে যখন ছদ্মবেশি ফেরেশতা একটি ছাগল চাইল তখন সে তা প্রদানের জন্য সম্মত হলো। তার এই কৃতজ্ঞতাবোধের কারণে আল্লাহর তার প্রতি খুশি হলেন।

গ. মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধের দিক থেকে উদ্দীপকের মূলভাবের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে তিন ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থা থেকে সুস্থতা দান করা হয়। তাদের দরিদ্রদশা থেকে সচ্ছল ও ধনাঢ্য করা হয়। তারা সৃষ্টিকর্তার প্রতি অনুগত কি না মানুষের বিপদে সাহায্য করে কি না তার পরীক্ষা নেওয়া হয়। অন্ধ ব্যক্তি এতে সফলকাম হলেও দু’ব্যক্তি পরীক্ষা-উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়। কারণ তারা অপরের দুঃখকষ্টের সাথি হতে পারেনি, তারা শুধু নিজেদের নিয়েই শুধু ব্যস্ত ছিল।
➠ উদ্দীপকে বলা হয়েছে, মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যই পৃথিবীতে আসেনি। মানুষ মানুষের জন্য। তারা একে অপরের বিপদে আপদে এগিয়ে আসবে এটাই মনুষ্যত্বের ধর্ম। মানুষ যখন মানুষের উপকারের জন্য অগ্রগামী হয় তখনই সে সত্যিকার মানুষ হয়ে ওঠে। ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে মানুষরূপী ফেরেশতার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি বলে ধবল রোগী ও টাকওয়ালার জীবন ব্যর্থতার পর্যবসিত হয়েছে। তাই বলা যায় উদ্দীপকের মূলভাবের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলভাব সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. বিষয়বস্তু বিবেচনায় ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সমগ্রভাবই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে তিন ইহুদি ব্যক্তিকে আল্লাহর নির্দেশে এক ফেরেশতা তাদের রোগমুক্ত করে দেন। তাদের ধবল রোগ, টাক সমস্যা ও অন্ধত্ব দূর হওয়ার পর তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য তাদের গাভিন উট, গাভি ও ছাগল প্রদান করা হয়। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তারা সচ্ছল ও ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়। তাদের সততা, সত্যবাদিতা ও মনুষ্যত্ববোধ পরীক্ষা করার জন্য ঐ ফেরেশতা মানুষরূপে এসে তাদের কাছে সাহায্য চাইলে ধবলরোগী ও টাকওয়ালা সাহায্য না করে ফিরিয়ে দেয়। তৃতীয় অর্থাৎ অন্ধ ব্যক্তি সন্তুষ্টচিত্তে ছাগল প্রদানে সম্মত হয়। অকৃতজ্ঞতার ফলস্বরূপ দুই ব্যক্তিতে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অন্ধ ব্যক্তি তার সততার পুরস্কার লাভ করে।
➠ উদ্দীপকে কবিতাংশটুকু ভাব ও বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে কবি বলেছেন পৃথিবীতে মানুষ শুধু নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই আসেনি। তার আগমনের প্রধানতম উদ্দেশ্য মানবতার কল্যাণসাধন করা। অর্থাৎ একে অন্যের বিপদে আপদে এগিয়ে আসা। সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। মানুষ শুধু মানুষের কল্যাণেই কাজ করবে। প্রত্যেকে যদি পরের জন্য কাজ করে তবে পৃথিবীতেই স্বর্গ নেমে আসবে।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে আমরা দেখি অন্ধ ব্যক্তি তার সততার জন্য পুরস্কার লাভ করেছেন। আর উদ্দীপকের বিষয়বস্তুও অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করা। মানুষ মানুষের জন্য সে শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে। কাজেই উদ্দীপক ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্প বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় উদ্দীপকটিতে গল্পের সমগ্রভাবই প্রতিফলিত হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
নবম শ্রেণির ছাত্র জুনায়েদ। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে সে একটি মানিব্যাগ খুঁজে পায়। খুলে দেখে অনেক টাকা। মানিব্যাগে মোবাইল নম্বর খুঁজে পেয়ে এর মালিককে ফোন দেয়। মানিব্যাগের মালিক টাকা ফেরত পেয়ে জুনায়েদের সততায় মুগ্ধ হয়।
ক. স্বর্গীয় দূতের কাছে ধবলরোগী কী চেয়েছিল?
খ. ধবলরোগী ও টাকওয়ালার প্রতি আল্লাহ বেজার হলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের জুনায়েদের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন চরিত্র সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা’ উক্তিটি উদ্দীপক ও সততার পুরস্কার গল্পের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ক. স্বর্গীয় দূতের কাছে ধবলরোগী একটি উট চেয়েছিল।
খ. ধবলরোগী ও টাকাওয়ালার কৃতজ্ঞতা বোধ না থাকায় আল্লাহ তাদের প্রতি বেজার হলেন।
➠ ধবলরোগী ও টাকওয়ালা আল্লাহর করুণায় রোগমুক্তি ও সচ্ছলতা লাভের পরও তারা ফেরেশতার কাছে অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেছে। তাই আল্লাহ তাদের প্রতি বেজার হয়েছিলেন।

গ. উদ্দীপকের জুনায়েদের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ ব্যক্তি চরিত্রটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে অন্ধ ব্যক্তি চরিত্রটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর নির্দেশে এক ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির নিকট গমন করেন এবং তার প্রার্থনা অনুযায়ী তার অন্ধত্ব দূর করে দেন। তার আর্থিক সচ্ছলতার জন্য তাকে একটি গাভিন ছাগল প্রদান করা হয়। যা পরে বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং পূর্বে অন্ধ থাকা ব্যক্তিটি ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়। তাকে পরীক্ষার জন্য যখন দ্বিতীয় বার ঐ ফেরেশতা মানুষরূপে এসে তার কাছে সাহায্য প্রার্থী হলো তখন তিনি তাকে যা খুশি নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ফেরেশতা তার কাছ থেকে কিছুই গ্রহণ না করে বলেন তোমাকে পরীক্ষা করা হলো। আল্লাহ তোমার ওপর খুশি হয়েছেন।
➠ উদ্দীপকের জুনায়েদ একজন স্কুল ছাত্র। সে রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগে অনেক টাকা পেয়েও তার ভেতর লোভ জেগে ওঠেনি। সে মালিককে তা পেঁৗছে দেয়াটা দায়িত্ব মনে করছে। তাই সে মালিককে ফোন করে মানিব্যাগটা পৌঁছে দিয়েছে। তার এই সাধুতা ও সত্যবাদিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে অন্ধ ব্যক্তির চরিত্র। উদ্দীপকের জুনায়েদ ও গল্পের অন্ধব্যক্তি উভয়েই ন্যায়পরায়ণ মানুষ। তাদের সাধুতা ও সত্যবাদিতা প্রশ্নাতীত। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তাদের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. ‘সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা’ এই উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে চরমভাবে সত্য হয়ে উঠেছে।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে আমরা দেখি তিন ইহুদি ব্যক্তিকে পরীক্ষার জন্য আল্লাহ তাদের কাছে ফেরেশতা পাঠান। ফেরেশতা প্রথম মানুষরূপে ঐ তিন ব্যক্তি ধবলরোগী, টাকওয়ালা ও অন্ধ ব্যক্তির কাছে গিয়ে প্রার্থনা অনুযায়ী তাদের রোগমুক্ত করেন এবং সচ্ছলতার জন্য উট, গাই ও ছাগল প্রদান করেন। তিনজনের অবস্থাই তখন ভালো হয়ে যায়। কিছুদিন পর তাদের পরীক্ষার জন্য ঐ ফেরেশতা সাহায্যপ্রার্থী হয়ে তাদের কাছে সাহায্য চান কিন্তু শুধু অন্ধব্যক্তিটি তাকে স্বাচ্ছন্দে সাহায্য করতে সম্মত হন। এই ঘটনায় আল্লাহ অন্ধ ব্যক্তির ওপর খুশি হন এবং ধবলরোগী ও টাকওয়ালার ওপর বেজার হয়ে তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
➠ উদ্দীপকে স্কুল ছাত্র প্রচুর টাকা সমেত মানিব্যাগ পাওয়ার পরও সে তার চারিত্রিক বলিষ্ঠতার কারণে সে ফোন করে মানিব্যাগের টাকাসহ মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছে। টাকা আত্মসাৎ করে সে তার নিজের মনে কালিমা লেপন করতে চায়নি। সে লোভের বশবর্তী না হয়ে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকেই সমুন্নত রেখেছে। পাশাপাশি অন্ধ ব্যক্তিও লোভের বশবর্তী হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করেনি। সে আরো বিনয়ী ও কৃতজ্ঞ হয়েছে। সে সততার সাথে ফেরেশতার কাছে পূর্বের সবকিছু স্বীকার করে নিয়েছে। তার ‘সততার পুরস্কার’ সে সাথে সাথেই পেয়েছে।
➠ তাই দেখা যায় ‘সততাই যে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা’ সেই আদর্শই উদ্দীপক ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে মুখ্য হয়ে উঠেছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
‘দিয়ে ধন
দেখে মন
কেড়ে নিতে
কতক্ষণ।’
ক. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের লেখকের নাম কী?
খ. অন্ধ ব্যক্তির দেওয়া ছাগল ফেরেশতা গ্রহণ করলেন না কেন?
গ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের ঘটনাপ্রবাহের মাঝে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের আলোকে উদ্দীপকের বিষয়বস্তুর যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের লেখকের নাম মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
খ অন্ধ ব্যক্তি তার ওপর কৃত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বিধায় তার দেওয়া ছাগল ফেরেশতা গ্রহণ করেননি।
➠ উপরন্তু ফেরেশতা বলেছেন, ‘তোমার জিনিস তোমারই থাক। তোমার পরীক্ষা নেওয়া হলো। আল্লাহ তোমার ওপর খুশি হয়েছেন।

গ. উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের ঘটনাপ্রবাহের সাথে যথার্থ সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে তিন ইহুদি ব্যক্তিকে রোগমুক্ত করা হয়েছে। আবার তার সাথে সচ্ছলতার জন্য উট, গাই ও ছাগল প্রদান করা হয়েছে। আবার তাদের পরীক্ষা করার জন্য সাহায্যপ্রার্থী হিসেবে মানুষরূপী হয়ে ফেরেশতা তাদের দ্বারে উপস্থিত হয়েছেন। আল্লাহর এত অনুগ্রহ লাভের পরও প্রথম দু’ব্যক্তি সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় ব্যক্তি যিনি অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে, বহু সম্পদের মালিক হওয়ার পরও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থেকেছে। তাই সাহায্যপ্রার্থীকে ফিরিয়ে না দিয়ে যা খুশি তাই নিয়ে যেতে বলেছেন। এ ঘটনায় প্রথম দু’ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ বিরাগভাজন হয়েছেন এবং শেষ ব্যক্তির ওপর খুশি হয়েছেন। শেষ ব্যক্তির ওপর দান অনুদান বহাল থেকেছে আর প্রথম দুজনের দান ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
➠ উদ্দীপকে সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার কাছে সম্পদের অভাব নেই। তিনি যখন যাকে ইচ্ছে দান করতে পারেন। তিনি মানুষকে সম্পদ দিয়েও পরীক্ষা করেন, না দিয়েও পরীক্ষা করেন। মানুষ তাঁর প্রতি অনুগত ও বিশ্বস্ত থাকে কি না তাই যাচাই করেন। মানুষকে সম্পদ দিয়ে তিনি যেকোনো সময় তা কেড়ে নিতে পারেন। ‘সততার পুরস্কার’ গল্পেও তাই আমরা দেখি আল্লাহ ধবলরোগী ও টাকওয়ালার অভাব দূর করার পর তারা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ না হওয়ায় তিনি তাদের দেয়া অনুগ্রহ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে তারা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। যা উদ্দীপকের মূল বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে ধবলরোগী ও টাকওয়ালা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দানে কৃতজ্ঞ না হয়ে অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেছে। তাই আল্লাহ তাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং তাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছিলেন তা তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে অন্ধব্যক্তি তাঁর প্রতি অনুগত ও কৃতজ্ঞ থাকার কারণে তার প্রতি খুশি হয়েছেন এবং অনুগ্রহ দানে তাকে ধন্য করেছেন।
উদ্দীপকের মূলবক্তব্য হচ্ছে মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বিভিন্ন ধনসম্পদ দিয়ে তাদের মন পরীক্ষা করেন। ধনসম্পদের মালিক হয়ে সে অহঙ্কারী কিংবা ধরাকে সরাজ্ঞান করে কি না। সেক্ষেত্রে আল্লাহ ঐ ব্যক্তির কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাকে নিঃস্ব করে দিতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা এসব মুহূর্তের মধ্যেই করতে পারেন।
➠ উদ্দীপক ও গল্পের বিষয়বস্তু মূল্যায়ন করলে আমরা বুঝতে পারি সৃষ্টিকর্তার একচ্ছত্র ক্ষমতা উভয় ক্ষেত্রে সত্য হয়ে উঠেছে। আল্লাহর দানের প্রতি কৃতজ্ঞ হলে ধবলরোগী ও টাকওয়ালা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। তারাও অন্ধ ব্যক্তির মতো সৃষ্টিকর্তার করুণা লাভে ধন্য হতো।
➠ সৃষ্টিকর্তা ক্ষমতার কাছে মানুষের ক্ষমতা খুবই নগণ্য। ধবলরোগী ও টাকওয়ালার মন পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ লাভের জন্য সঠিক ব্যক্তি ছিল না। তাই তারা বঞ্চিত হয়েছে। তাই উদ্দীপকের বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭
সাদেক ও রনি দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শিক্ষাজীবনের পাঠ চুকিয়ে দুই বন্ধু অনেক ঘোরাঘুরি করেও কোনো চাকরি জোটাতে পারল না। দুই জনে স্থির করল ব্যবসা করবে। কিন্তু টাকা কোথায়। এগিয়ে এলেন ধনী ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান। তিনি সাদেক ও রনিকে কোনো শর্ত ছাড়াই ব্যবসা করার জন্য পুঁজি দিলেন, তবে শর্ত হিসেবে একটি শর্ত দিলেন আর তা হচ্ছে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হলে গরিব দুঃখীদের যথাসাধ্য সাহায্য করতে হবে। সাদেক ও রনি বেশ উদ্যমের সাথে ব্যবসায় শুরু করলেও অল্প কিছুকাল পরই লোকসান দিয়ে দিয়ে ঋণে জর্জরিত হয় ব্যবসায় ইস্তফা দিল।
ক. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কত খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?
খ. ‘তোমার জিনিস তোমারই থাক’ ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্য আলোচনা করো।
ঘ. “‘সততার পুরস্কার’ গল্পে আল্লাহর কৃপা থাকলেও উদ্দীপকে ঘটেছে তার উল্টো চিত্র।” উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
ক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
খ ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তিকে আল্লাহর নির্দেশে পরীক্ষা নেওয়া শেষে এ উক্তিটি করেছিলেন।
➠ ফেরেশতা টাকওয়ালা ও ধবলরোগীর কাছে উট ও গাই চেয়ে ব্যর্থ হন। তারপর অন্ধ ব্যক্তির কাছে ছাগল চাইলে তিনি তা দিতে সম্মত হন। পূর্বের দুইজন ফেরেশতাকে কিছু না দিয়ে তারা সকল কিছু হারায়। অন্যদিকে অন্ধ ব্যক্তির কৃতজ্ঞতাবোধে ফেরেশতা খুশি হয়ে তাকে বলেন- তোমার জিনিস, তোমারই থাক।

গ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ ব্যক্তির কৃতজ্ঞতাকে ও অন্য দুই জনের অকৃতজ্ঞতা এবং উদ্দীপকের দুই বন্ধুর ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরতে হবে।
ঘ উদ্দীপকে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়টি আলোচনা করতে হবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮
চুরির অভিযোগে কিছু লোক জনৈক ব্যক্তিকে চেয়ারম্যানের ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করল। ঘটনার বিবরণ শুনে তিনি চৌকিদার আমজাদকে ডেকে নির্দেশ দিলেন বন্দিকে তার বাড়িতে রাখতে। ঘটনাক্রমে আমজাদ জানতে পারল বন্দি ব্যক্তি আর কেউ নয়, সে দশ বছর আগে আমজাদের সন্তানকে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়েছিল, নিজ গৃহে নিয়ে গিয়ে আহত সন্তানের সেবা করেছিল। আমজাদ তখন তাকে বাঁচানোর সংকল্প করল এবং বন্দির কাছ থেকে জেনে নিল যে চুরিতে তার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না। যখন সে জানতে পারল চুরিতে দোষীসাব্যস্ত করা ব্যক্তির কোনো হাত নেই তখন সে যুক্তি প্রমাণ সংগ্রহ করতে লাগল দোষীব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য।
ক. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূল বাণী কী?
খ. অন্ধ ব্যক্তির সম্পদ তার নিজের কাছে রয়ে গেল কেন?
গ. আমাদের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ ব্যক্তির কীরূপ সাদৃশ্য রয়েছে বুঝিয়ে বলো।
ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের উভয় ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতাবোধের পরিচয় পাওয়া যায়”- উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
ক ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূল বাণী হচ্ছে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন এবং সৎলোককে যথাযথ পুরস্কার দেন।
খ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের জন্য অন্ধ ব্যক্তির সম্পদ তার নিজের কাছে রয়ে গেল।
➠ ফেরেশতা যখন অন্ধ ব্যক্তিকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ দোহাই দিয়ে তার কাছে ছাগল চাইল। তখন শুধু অন্ধ ব্যক্তিই ছাগল দিতে সম্মত হয়েছিল। কারণ ছাগল দেওয়ার সময়ও সে উচ্চারণ করেছিল আমি অন্ধ ছিলাম আল্লাহর কৃপায় সুস্থ হয়েছি। আল্লাহর প্রতি এরূপ কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করায় চিরতরে অন্ধ ব্যক্তির সম্পদ তার কাছে রয়ে গেল।
গ অন্ধ ব্যক্তির আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং আমজাদের দোষীসাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতার সাদৃশ্য তুলে ধরতে হবে।
ঘ উদ্দীপকের আমজাদ ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধব্যক্তি দুজনেই কৃতজ্ঞতার উপযুক্ত পরিচয় দিয়েছেন। সে বিষয়টি যথাযথভাবে আলোচনা করতে হবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯
দুবাইপ্রবাসী ফিলিপিনের এক নাগরিকের ফেলে যাওয়া ব্যাগ কুড়িয়ে পেয়ে তা ওই নাগরিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সততার নজির স্থাপন করেছেন বাংলাদেশি নাগরিক ছরোয়ার হালদার। ফলশ্রুতিতে দুবাই এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সততার পুরস্কার পেয়েছেন দুবাইপ্রবাসী বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ বিল্বগ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ হালদারের পুত্র ছরোয়ার হালদার।
[তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ; ২৯ জুন, ২০১৮]
ক. টাকওয়ালা লোকটি কী চেয়েছিল?
খ. ‘এসব তো আমার বরাবরই আছে’- এ উক্তিতে কী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “ছরোয়ারের মতো লোকেরাই সমাজ এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়”- উক্তিটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০
রহিম ষষ্ঠ শ্রেণির একজন ছাত্র। সে তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু করিমের কাছে একটি গল্পের বই পড়ার জন্য ধার নেয়। কিছুদিন পর করিম বইটি ফেরত চাইলে রহিম তা অস্বীকার করে এবং তাকে উল্টো গালাগালি করে।
ক. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলকথা কী?
খ. ফেরেশতা তিনজন ইহুদির কাছে গেলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের রহিম চরিত্র ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন চরিত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বুঝিয়ে লেখো।
ঘ. “উদ্দীপকের রহিম ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ লোকটির বিপরীত চরিত্র”- উক্তিটির মূল্যায়ন করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১
কাঠুরিয়া কাঠ কাটার সময় হঠাৎ তার কুঠারটি নদীর পানিতে পড়ে গেল। উপার্জনের একমাত্র সম্বল হারিয়ে সে কাঁদতে লাগল। কান্না শুনে এক জলপরী পানি থেকে উঠে সোনার একটি কুঠার দেখিয়ে তাকে বলল এটি তার কিনা। কাঠুরিয়া না বললে তাকে আরেকটি র“পার কুঠার দেখালে সে আবারও না বলল। এরপর জলপরী আসল কুঠার দেখালে কাঠুরিয়া বলল এটিই তার কুঠার। জলপরী তার সততায় মুগ্ধ হয়ে তাকে তিনটি কুঠারই দিয়ে দিল। কাঠুরিয়ার আর অভাব রইল না।
ক. কে নূরের তৈরি?
খ. অন্ধ ব্যক্তি ছাড়া বাকি দুজন অভিশপ্ত হলো কেন?
গ. উদ্দীপকের কাঠুরিয়া ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সমগ্রভাব বহন করে না। উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২
খোদা বলিবেন- হে আদম সন্তান
আমি চেয়েছিনু ক্ষুধার অন্ন, তুমি কর নাই দান।
মানুষ বলিবে- তুমি জগতের প্রভু
আমরা কেমনে খাওয়াব তোমায় সে কাজ কি হয় কভু?
বলিবেন খোদা- ক্ষুধিত বান্দা গিয়াছিল তব দ্বারে।
মোরে কাছে ফিরে পেতে তাহা যদি খাওয়াইতে তারে?
ক. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি লাভ করেন?
খ. আল্লাহ প্রথম দুই ইহুদিকে শাস্তি দিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের ক্ষুধিত বান্দার সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সাদৃশ্য নির্ণয় করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি যেন ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূল চেতনার অনুসারী।”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩
জাহিদ, কলিম, সুজন ও হাফিজ স্কুলপড়ুয়া চার বন্ধু। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তারা একটি হাতব্যাগ কুড়িয়ে পায়, যার ভেতর অনেকগুলো টাকা ছিল। জাহিদ ও কলিম ব্যাগটা লুকিয়ে রেখে টাকাগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে চায়। কিন্তু সুজন ও হাফিজ বড়দের সহায়তায় প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করে টাকাগুলো ফেরত দেয়। ওই ব্যক্তি সুজন ও হাফিজকে অনেক দোয়া করেন এবং তাদের খেলার জন্য একটি ফুটবল কিনে দেন।
ক. ফেরেশতা প্রথমে কার কাছে আসেন?
খ. ফেরেশতাদের পরিচয় ব্যাখ্যা করো।
গ. জাহিদ ও কলিম চরিত্রের সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে কাদের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের সুজন ও হাফিজ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের তৃতীয় ইহুদির সমতুল্য কাজ করেছে”- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪
মবিন মিয়া তার আদরের ছোট ভাই রবিনকে নিজ সন্তানের মতো করে মানুষ করেছেন। অনেক কষ্টে ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। কিন্তু রবিন উপার্জনক্ষম হওয়ার পর বড় ভাইয়ের অবদান অস্বীকার করে। একদিন এক দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে রবিনের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। সবাই বলাবলি করতে থাকে, বড় ভাইয়ের অšড়রে দুঃখ দেওয়াতেই এমনটি হয়েছে।
ক. ফেরেশতা টাকওয়ালাকে কী দিলেন?
খ. কীভাবে তিন ইহুদির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে?
গ. উদ্দীপকের রবিনের আচরণের সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন অংশের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির পরিণাম ভালো হয় না’- উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘সততার পুরস্কার’ গল্প অবলম্বনে মূল্যায়ন করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৫
একদিন এক বাঘের গলায় হাড় আটকে যায়। একটি বক তার লম্বা ঠোঁট দিয়ে আহত বাঘের গলা থেকে হাড়টি বের করে দেয়, বাঘটি সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু সুস্থ হয়েই বাঘটি হুংকার দিয়ে বককে আক্রমণ করতে যায়। বক ভয় পেয়ে উড়ে গিয়ে তালগাছের উপরে বসে। তখন একটি পাকা তাল বাঘের মাথায় পড়ে, বাঘটি সেখানেই মারা যায়।
ক. ‘বেজার’ শব্দের অর্থ কী?
খ. স্বর্গীয় দূত কীভাবে প্রথম ইহুদিকে তার আগের অবস্থা স্মরণ করিয়ে দেন?
গ. উদ্দীপকের বাঘের মনোভাবের সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন বিষয়টির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূল ভাবনাকে কতটুকু ধারণ করতে পেরেছে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৬
রহিম তার বন্ধু করিমের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে এবং একসময় সে প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হয়। এর কিছুকাল পর বিপদে পড়ে বন্ধুর কাছে কিছু টাকা সাহায্য চায় করিম। কিন্তু রহিম তাকে কোনো সাহায্য করে না। এ সময় সে তাকে পূর্বে উপকার করার কথা মনে করিয়ে দিলে সে তা অস্বীকার করে।
ক. ফেরেশতা কারা?
খ. ‘ইহাতে তোমার ভাগ্য খুলিবে’- উক্তিটির দ্বারা ছদ্মবেশী ফেরেশতা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের রহিমের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন চরিত্রের বৈসাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাবের ধারক হতে পারেনি”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৭
স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে শাবাব একটি দামি ঘড়ি কুড়িয়ে পেল। বাসায় ফিরে শাবাব তার বড় ভাইকে ঘড়িটি দেখালে সে সাথে সাথে থানায় গিয়ে জমা দিয়ে এলো। শাবাবের বড় ভাই তৌসিফ ছবি তুলে ফেসবুকেও পোস্ট দিল। ২ দিন পর প্রকৃত মালিক ঘড়িটি থানা থেকে নিয়ে গেলেন এবং শাবাব ও তৌসিফকে ফোন করে ধন্যবাদ জানালেন।
ক. ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের রচয়িতা কে?
খ. ‘আল্লাহ তোমার ওপর খুশি হইয়াছেন, আর তাহাদের ওপর বেজার হইয়াছেন’- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের শাবাব ও তার বড় ভাই তৌসিফের মনোভাবের সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন বিষয়টির সাদৃশ্য রয়েছে? নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূল ভাবনাকে কতটুকু ধারণ করতে পেরেছে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৮
ওসমান চৌধুরী সততার জন্য বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছেন। কেননা পাঁচ লাখ ডলার মূল্যের ডায়মন্ড পেয়েও তিনি তা ফিরিয়ে দিলেন নিজ উদ্যোগে। বিনিময়ে কিছুই গ্রহণ করেননি তিনি। উপরন্তু বলেছেন, ‘আমি যা করেছি তার জন্য আমি গর্বিত। এর বিনিময়ে আমি কিছুই চাই না, কারণ আমি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।”
ক. টাকওয়ালা লোকটি কী চাইল?
খ. ‘আমার গায়ের রং যদি ভালো হয়’- ধবলরোগীটি কেন এ কথা বলেছে?
গ. উদ্দীপকের ওসমান চৌধুরীর সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন কোন চরিত্রের বৈসাদৃশ্য রয়েছে? তুলো ধরো।
ঘ. “উদ্দীপকের ওসমান চৌধুরীর কাজের মধ্যেই ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূল শিক্ষা নিহিত”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৯
আলাল, আকিজ ও আবিদ একই গ্রামের বাসিন্দা। তাদের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। ছেলেমেয়ে নিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটায়। বিষয়টি গ্রামের সম্ভ্রাšড় ব্যক্তি হাজী সাহেবের নজরে পড়ল। তিনি তাদের দুরবস্থা লাঘবের জন্য নিজের টাকা দিয়ে আলালকে একখানা রিকশা, আকিজকে একটা সেচ মেশিন এবং আবিদকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দিলেন এবং বললেন এখন থেকে মন দিয়ে কাজ করো এবং অসহায়-দুঃখী মানুষকে যতটা সম্ভব সাহায্য করিও। তারা প্রতিশ্রুতিও দিল। একদিন হাজী সাহেব তাদের পরীক্ষা করার জন্য একজন গরিব মানুষকে সাহায্যের জন্য তাদের কাছে পাঠালেন। আলাল ও আকিজ তাকে সাহায্য না করে বরং দূর করে তাড়িয়ে দিল। আবিদ গরিব লোকটাকে সম্মান জানাল এবং বিনা পয়সায় তার জামাটা সেলাই করে দিল।
ক. স্বর্গীয় দূত কয়জন ইহুদিকে পরীক্ষা করেছিলেন?
খ. স্বর্গীয় দূত মানুষের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন কেন?
গ. আলাল ও আকিজের কাজের মাঝে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আবিদের কাজের মাঝে ‘সততার পুরষ্কার’ গল্পের মূল শিক্ষা নিহিত। কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২০
করিম তার বন্ধু কাজলের কাছ থেকে ৫০,০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করে এবং একসময় সে প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হয়। কাজল একদিন বিপদে পড়ে বন্ধুর কাছে কিছু টাকা সাহায্য চায়। কিন্তু করিম তাকে কোনো সাহায্য করে না। কাজল তাকে পূর্বের উপকার করার কথা মনে করিয়ে দিলে তা অস্বীকার করে।
ক. ‘নূর’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘উঠের অনেক দাম কী করিয়া দিই’ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের করিমের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন চরিত্রের বৈসাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি সততার পুরস্কার গল্পের সম্পূর্ণ ভাবের ধারক হতে পারেনি।’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২১
হাসান একটি সরকারি অফিসের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করে। বেতন অল্প। এ বেতনেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে কোনোমতে সংসার চালিয়ে নেয়। অফিসে অবৈধভাবে উপার্জনের অনেক পথ থাকলেও হাসান সেদিকে নজর দেয় না। সৎভাবে জীবন-যাপন করে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত হতে চায় সে।
ক. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ সম্পাদিত শিশু পত্রিকাটির নাম কী?
খ. ‘এসব তো আমার বরাবরই আছে’- এ উক্তিতে কার কী মনোভব প্রকাশ পেয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘হাসানের মতো লোকেরাই সমাজ এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়’- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২২
অপু ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। একদিন অপুর বাবা মাটি খুঁড়তে গিয়ে এক ঘড়া সোনার মোহর পান। এতে তাদের দুরবস্থা কেটে যায়। আগের দরিদ্র অবস্থা কাটিয়ে অপুদের পরিবার এখন বেশ সুখে আছে। ক. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি লাভ করেন?
খ. তৃতীয় ব্যক্তিটি অসহায় বিদেশিকে কীভাবে সাহায্য করতে চাইল?
গ. অপুর বাবার মোহর প্রাপ্তির বিষয়টি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন বিষয়টির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করে না- উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২৩
খলিফা হারুন-অর-রশীদের শাসনকালে বাগদাদে আলী কোজাই নামে এক বণিক বাস করত। সে হজব্রত পালনের জন্য মক্কায় যাওয়ার সময় তার সারাজীবনের সঞ্চয় একটি কলসিতে লুকিয়ে তার বন্ধু নাজিমের কাছে রেখে যায়। কলসির নিচে মোহর লুকিয়ে উপরে জলপাই দিয়ে তা ঢেকে রাখে এবং বন্ধুকে জলপাইয়ের কলসি বলেই উল্লেখ করে। অনেক দিন বন্ধু ফিরে না আসায় নাজিম খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে। এর মধ্যে একদিন তার স্ত্রী জলপাই খেতে চাইলে সে বন্ধুর কলসি থেকে জলপাই এনে দিতে যায় এবং ভাবে পরে নতুন জলপাই কিনে কলসিতে রেখে দেবে। জলপাই আনতে গিয়ে সে দেখে কলসির ভেতরে সোনার মোহর। তার মাথায় দুষ্টবুদ্ধি এলো। সে সব সোনার মোহর নিয়ে সিন্দুকে লুকিয়ে রাখল এবং কলসি নতুন জলপাই দিয়ে ভরে রাখল।
ক. ফেরেশতারা কার হুকুমে সকল কাজ করে?
খ. ফেরেশতা কেন তৃতীয় ইহুদিকে ভালো লোক বললেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের কোন বিষয়ের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের একটিমাত্র দিক ধারণ করে”- উক্তিটির সপক্ষে যুক্তি দাও।
-----------

তথ্যসূত্র :
১. চারুপাঠ: ষষ্ঠ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫।

Next Post Previous Post