‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
অতিথির স্মৃতি |
মূলপাঠ:
চিকিৎসকের আদেশে দেওঘরে এসেছিলাম বায়ু পরিবর্তনের জন্যে। প্রাচীর (দেওয়াল) ঘেরা বাগানের মধ্যে একটা বড় বাড়িতে থাকি। রাত্রি তিনটে থেকে কাছে কোথাও একজন গলাভাঙা একঘেয়ে (বিরক্তিকর) সুরে ভজন (মহিমাকীর্তন; প্রার্থনামূলক গান) শুরু করে, ঘুম ভেঙে যায়, দোর (দরজা) খুলে বারান্দায় এসে বসি। ধীরে ধীরে রাত্রি শেষ হয়ে আসে- পাখিদের আনাগোনা (যাতায়াত) শুরু হয়। দেখতাম ওদের মধ্যে সবচেয়ে ভোরে ওঠে দোয়েল। অন্ধকার শেষ না হতেই তাদের গান আরম্ভ হয়, তারপরে একটি দুটি করে আসতে থাকে বুলবুলি, শ্যামা, শালিক, টুনটুনি- পাশের বাড়ির আমগাছে, এ বাড়ির বকুল-কুঞ্জে (লতাপাতায় আচ্ছাদিত বৃত্তাকার স্থান), পথের ধারের অশ্বত্থগাছের (অশ্শত্থো, অশথ গাছ, পিপ্পল, বট জাতীয় বৃক্ষ) মাথায়- সকলকে চোখে দেখতে পেতাম না, কিন্তু প্রতিদিন ডাক শোনার অভ্যাসে মনে হতো যেন ওদের প্রত্যেককেই চিনি। হলদে রঙের একজোড়া বেনে-বৌ পাখি একটু দেরি করে আসত। প্রাচীরের ধারের ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটায় বসে তারা প্রত্যহ (প্রতিদিন, প্রতি+অহ) হাজিরা হেঁকে (ডেকে) যেত। হঠাৎ কী জানি কেন দিন-দুই এলো না দেখে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম, কেউ ধরলে না তো? এদেশে ব্যাধের (শিকারী জাতি বিশেষ) অভাব নেই, পাখি চালান দেওয়াই তাদের ব্যবসা- কিন্তু তিন দিনের দিন আবার দুটিকে ফিরে আসতে দেখে মনে হলো যেন সত্যিকার একটা ভাবনা ঘুচে (দূরীভূত হওয়া) গেল।
এমনি করে সকাল কাটে। বিকালে গেটের বাইরে পথের ধারে এসে বসি। নিজের সামর্থ্য নেই বেড়াবার, যাদের আছে তাদের প্রতি চেয়ে চেয়ে দেখি। দেখতাম মধ্যবিত্ত গৃহস্থের ঘরে পীড়িতদের (অসুস্থদের) মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই ঢের (অনেক) বেশি। প্রথমেই যেত পা ফুলো ফুলো অল্পবয়সী একদল মেয়ে। বুঝতাম এরা বেরিবেরির (ভিটামিন বি-এর অভাবে হাত-পা ফুলে যাওয়া রোগ।) আসামি (এখানে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।) ফোলা পায়ের লজ্জা ঢাকতে বেচারাদের কত না যত্ন। মোজা পরার দিন নয়, গরম পড়েছে, তবু দেখি কারও পায়ে আঁট করে মোজা পরা। কেউ বা দেখলাম মাটি পর্যন্ত লুটিয়ে কাপড় পরেছে- সেটা পথ চলার বিঘ্ন, তবু, কৌতূহলী (উৎসুক; নতুন কিছু জানার জন্য আগ্রহী বা ইচ্ছুক) লোকচক্ষু থেকে তারা বিকৃতিটা আড়াল রাখতে চায়। আর সবচেয়ে দুঃখ হতো আমার একটি দরিদ্র ঘরের মেয়েকে দেখে। সে একলা যেত। সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন নেই, শুধু তিনটি ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে। বয়স বোধ করি চব্বিশ-পঁচিশ, কিন্তু দেহ যেমন শীর্ণ (রোগা), মুখ তেমনি পাণ্ডুর (ফ্যাকাশে)- কোথাও যেন এতটুকু রক্ত নেই। শক্তি নেই নিজের দেহটাকে টানবার, তবু সবচেয়ে ছোটো ছেলেটি তার কোলে। সে তো আর হাঁটতে পারে না-
অথচ, ফিরে আসবারও ঠাঁই নেই? কী ক্লান্তই না মেয়েটির চোখের চাহনি।
সেদিন সন্ধ্যার তখনও দেরি আছে, দেখি জনকয়েক বৃদ্ধ ব্যক্তি ক্ষুধা হরণের কর্তব্যটা সমাধা করে যথাশক্তি দ্রুতপদেই (সত্বর, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে) বাসায় ফিরছেন। সম্ভবত এরা বাতব্যাধিগ্রস্ত (মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে প্রদাহজনিত রোগ।), সন্ধ্যার পূর্বেই এদের ঘরে প্রবেশ করা প্রয়োজন।
তাঁদের চলন (যাওয়া, ভ্রমণ) দেখে ভরসা হলো, ভাবলাম যাই, আমিও একটু ঘুরে আসিগে। সেদিন পথে পথে অনেক বেড়ালাম। অন্ধকার হয়ে এলো, ভেবেছিলাম আমি একাকী, হঠাৎ পেছনে চেয়ে দেখি একটি কুকুর আমার পেছনে চলেছে। বললাম, কী রে, যাবি আমার সঙ্গে? অন্ধকার পথটায় বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিতে পারবি?
সে দূরে দাঁড়িয়ে ল্যাজ নাড়তে লাগল। বুঝলাম সে রাজি আছে। বললাম, তবে আয় আমার সঙ্গে। পথের ধারের একটা আলোতে দেখতে পেলাম কুকুরটার বয়স হয়েছে; কিন্তু যৌবনে একদিন শক্তিসামর্থ্য ছিল। তাকে অনেক কিছু প্রশ্ন করতে করতে বাড়ির সমুখে এসে পৌঁছলাম। গেট খুলে দিয়ে ডাকলাম, ভেতরে আয়। আজ তুই আমার অতিথি (মেহমান)। সে বাইরে দাঁড়িয়ে ল্যাজ (লেজ) নাড়তে লাগল, কিছুতে ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না। আলো নিয়ে চাকর এসে উপস্থিত হলো, গেট বন্ধ করে দিতে চাইল, বললাম, না, খোলাই থাক। যদি আসে, ওকে খেতে দিস। ঘণ্টাখানেক পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম সে আসে নি- কোথায় চলে গেছে।
পরদিন সকালে বাইরে এসেই দেখি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আমার সেই কালকের অতিথি। বললাম, কাল তোকে খেতে নেমন্তন্ন (নিমন্ত্রণ- দাওয়াত; ভোজনে আহ্বান) করলাম, এলিনে কেন?
জবাবে সে মুখপানে চেয়ে তেমনি ল্যাজ নাড়তে লাগল। বললাম, আজ তুই খেয়ে যাবি, না খেয়ে যাসনে বুঝলি? প্রত্যুত্তরে (প্রতি উত্তরে) সে শুধু ঘন ঘন ল্যাজ নাড়ল- অর্থ বোধ হয় এই যে, সত্যি বলছো তো?
রাত্রে চাকর এসে জানাল সেই কুকুরটা এসে আজ বাইরের বারান্দার নিচে উঠানে বসে আছে। বামুনঠাকুরকে ডেকে বলে দিলাম, ও আমার অতিথি, ওকে পেট ভরে খেতে দিও।
পরের দিন খবর পেলাম অতিথি যায় নি। আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন করে সে আরামে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে। বললাম, তা হোক, ওকে তোমরা খেতে দিও।
আমি জানতাম, প্রত্যহ খাবার তো অনেক ফেলা যায়, এতে কারও আপত্তি হবে না। কিন্তু আপত্তি ছিল এবং অত্যন্ত গুরুতর আপত্তি। আমাদের বাড়তি খাবারের যে প্রবল অংশীদার ছিল এ বাগানের মালির (বেতনের বিনিময়ে বাগানের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি) মালিনী (মালির স্ত্রী)- এ আমি জানতাম না। তার বয়স কম, দেখতে ভালো এবং খাওয়া সম্বন্ধে নির্বিকারচিত্ত (উদাসীন মন)। চাকরদের দরদ তার পরেই বেশি। অতএব, আমার অতিথি করে উপবাস। বিকালে পথের ধারে গিয়ে বসি, দেখি অতিথি আগে থেকেই বসে আছে ধুলোয়। বেড়াতে বার হলে সে হয় পথের সঙ্গী; জিজ্ঞাসা করি, হ্যাঁ অতিথি, আজ মাংস রান্নাটা কেমন হয়েছিল রে? হাড়গুলো চিবোতে লাগল কেমন? সে জবাব দেয় ল্যাজ নেড়ে, মনে করি মাংসটা তা হলে ওর ভালোই লেগেছে। জানিনে যে মালির বউ তারে মেরেধরে বার করে দিয়েছে- বাগানের মধ্যে ঢুকতে দেয় না, তাই ও সমুখের পথের ধারে বসে কাটায়। আমার চাকরদেরও তাতে সায় ছিল।
হঠাৎ শরীরটা খারাপ হলো, দিন-দুই নিচে নামতে পারলাম না। দুপুরবেলা উপরের ঘরে বিছানায় শুয়ে, খবরের কাগজটা যেইমাত্র পড়া হয়ে গেছে, জানালার মধ্য দিয়ে বাইরের রৌদ্রতপ্ত নীল আকাশের পানে চেয়ে অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিলাম। সহসা (হঠাৎ) খোলা দোর দিয়ে সিঁড়ির উপর ছায়া পড়ল কুকুরের। মুখ বাড়িয়ে দেখি অতিথি দাঁড়িয়ে ল্যাজ নাড়ছে। দুপুরবেলা চাকরেরা সব ঘুমিয়েছে, ঘর তাদের বন্ধ, এই সুযোগে লুকিয়ে সে একেবারে আমার ঘরের সামনে এসে হাজির। ভাবলাম, দুদিন দেখতে পায় নি, তাই বুঝি আমাকে ও দেখতে এসেছে। ডাকলাম, আয় অতিথি, ঘরে আয়। সে এলো না, সেখানে দাঁড়িয়েই ল্যাজ নাড়তে লাগল। জিজ্ঞাসা করলাম-
খাওয়া হয়েছে তো রে? কী খেলি আজ?
হঠাৎ মনে হলো ওর চোখ দুটো যেন ভিজেভিজে, যেন গোপনে আমার কাছে কী একটা নালিশ (অভিযোগ; ফরিয়াদ) ও জানাতে চায়। চাকরদের হাঁক দিলাম, ওদের দোর খোলার শব্দেই অতিথি ছুটে পালাল।
জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাঁ রে, কুকুরটাকে আজ খেতে দিয়েছিস?
আজ্ঞে (কথায় সম্মাতসূচক শব্দ) না। মালি-বৌ ওরে তাড়িয়ে দিয়েছে যে।
আজ তো অনেক খাবার বেঁচেছে, সে সব হলো কী?
মালি-বৌ চেঁচেপুঁছে (সম্পূর্ণ) নিয়ে গেছে।
আমার অতিথিকে ডেকে আনা হলো, আবার সে বারান্দার নিচে উঠানের ধুলোয় পরম নিশ্চিন্তে (ভাবনাহীন; চিন্তাহীন) স্থান করে নিল। মালি-বৌয়ের ভয়টা তার গেছে। বেলা যায়, বিকাল হলে উপরের বারান্দা থেকে দেখি অতিথি এই দিকে চেয়ে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে। বেড়াতে যাবার সময় হলো যে।
শরীর সারলো না, দেওঘর থেকে বিদায় নেবার দিন এসে পড়ল। তবু দিন-দুই দেরি করলাম নানা ছলে। আজ সকাল থেকে জিনিস বাঁধাবাঁধি শুরু হলো, দুপুরের ট্রেন। গেটের বাইরে সার সার গাড়ি (সারিসারি গাড়ি) এসে দাঁড়াল, মালপত্র বোঝাই দেওয়া চলল। অতিথি মহাব্যস্ত (অতিশয় ব্যস্ত), কুলিদের সঙ্গে ক্রমাগত ছুটোছুটি করে খবরদারি করতে লাগল, কোথাও যেন কিছু খোয়া (হারানো) না যায়। তার উৎসাহই সবচেয়ে বেশি।
একে একে গাড়িগুলো ছেড়ে দিলে, আমার গাড়িটাও চলতে শুরু করল। স্টেশন দূরে নয়, সেখানে পৌঁছে নামতে গিয়ে দেখি অতিথি দাঁড়িয়ে। কী রে, এখানেও এসেছিস? সে ল্যাজ নেড়ে তার জবাব দিল, কী জানি মানে তার কী।
টিকিট কেনা হলো, মালপত্র তোলা হলো, ট্রেন ছাড়তে আর এক মিনিট দেরি। সঙ্গে যারা তুলে দিতে এসেছিল তারা বকশিশ (পুরস্কার) পেল সবাই, পেল না কেবল অতিথি। গরম বাতাসে ধুলো উড়িয়ে সামনেটা আচ্ছন্ন করেছে, যাবার আগে তারই মধ্য দিয়ে ঝাপসা দেখতে পেলাম- স্টেশনের ফটকের (সদর দরজা) বাইরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে চেয়ে আছে অতিথি। ট্রেন ছেড়ে দিলে, বাড়ি ফিরে যাবার আগ্রহ মনের মধ্যে কোথাও খুঁজে পেলাম না। কেবলই মনে হতে লাগল, অতিথি আজ ফিরে গেয়ে দেখবে বাড়ির লোহার গেট বন্ধ, ঢুকবার জো (উপায়; পথ) নেই। পথে দাঁড়িয়ে দিন-দুই তার কাটবে, হয়তো নিস্তব্ধ (নীরব; নিস্পন্দ) মধ্যাহ্নের (দুপুরে) কোনো ফাঁকে লুকিয়ে উপরে উঠে খুঁজে দেখবে আমার ঘরটা। হয়তো, ওর চেয়ে তুচ্ছ জীব শহরে আর নেই, তবু দেওঘরে বাসের কটা দিনের স্মৃতি ওকে মনে করেই লিখে রেখে গেলাম।
উৎস নির্দেশ : |
---|
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেওঘরের স্মৃতি’ গল্পটির নাম পাল্টে এবং ঈষৎ পরিমার্জনা করে এখানে ‘অতিথির স্মৃতি’ হিসেবে সংকলন করা হয়েছে। |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ ভজন- ঈশ্বর বা দেবদেবীর স্তুতি বা মহিমাকীর্তন। প্রার্থনামূলক গান। ➠ দোর- দুয়ার বা দরজা। বাড়ির ফটক। ➠ কুঞ্জ- লতাপাতায় আচ্ছাদিত বৃত্তাকার স্থান, উপবন। ➠ বেরিবেরি- ভিটামিনের অভাবে হাত-পা ফুলে যাওয়া রোগ। ➠ আসামি- এ শব্দটি দিয়ে সাধারণত আদালতে কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে রোগাক্রান্তদের বোঝানো হয়েছে। ➠ পাণ্ডুর- ফ্যাকাশে। ➠ মালি-মালা রচনাকারী, মালাকর। বেতনের বিনিময়ে বাগানের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি। ➠ মালিনি- মালির স্ত্রী। |
পাঠের উদ্দেশ্যে: |
---|
এ গল্প পড়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। নতুন কোনো জায়গা ভ্রমণ করলে ওই অভিজ্ঞতা লিখে রাখতেও আগ্রহী হবে। |
পাঠ পরিচিতি : |
---|
একটি প্রাণীর সঙ্গে একজন অসুস্থ মানুষের কয়েকদিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মমত্বের সম্পর্কই এ গল্পের বিষয়। লেখক দেখিয়েছেন, মানুষে-মানুষে যেমন স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু সেই সম্পর্ক নানা প্রতিকূল কারণে স্থায়ীরূপ পেতে বাধাগ্রস্ত হয়। আবার এই সম্পর্কের সূত্র ধরে একটি মানুষ ওই জীবের প্রতি যখন মমতায় সিক্ত হয় তখন অন্য মানুষের আচরণ নির্মম হয়ে উঠতে পারে। এ গল্পে সম্পর্কের এই বিচিত্র রূপই প্রকাশ করা হয়েছে। |
লেখক পরিচিতি : |
---|
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কৈশোর ও যৌবনের অধিকাংশ সময় ভাগলপুরের
মাতুলালয়ে অতিবাহিত হয়। তিনি কলেজশিক্ষা শেষ করতে পারেননি। ১৯০৩ সালে
জীবিকার সন্ধানে রেঙ্গুন যাত্রা করেন। ১৯১৬ সাল পর্যন্ত তিনি রেঙ্গুনে
ছিলেন এবং সেখানে অবস্থানকালে সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯০৭ সালে
‘ভারতী’ পত্রিকায় ‘বড়দিদি’ প্রকাশিত হলে তাঁর সাহিত্যিক খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর একে একে গল্প-উপন্যাস লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকে
পরিণত হন। সাধারণ বাঙালি পাঠকের আবেগকে তিনি যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে
পেরেছিলেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘পল্লীসমাজ’, ‘দেবদাস’,
‘শ্রীকান্ত’ (চার পর্ব), ‘গৃহদাহ’, ‘দেনাপাওনা’, ‘পথের দাবী’, ‘শেষ প্রশ্ন’
প্রভৃতি। সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
জগত্তারিণী স্বর্ণপদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট, উপাধি লাভ
করেন। বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী কথাশিল্পীর জীবনাবসান ঘটে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায়। |
কর্ম অনুশীলন : |
---|
ক. তোমার অভিজ্ঞতা থেকে একটি ভ্রমণকাহিনির বিবরণ লেখো (একক কাজ)। খ. তোমার প্রিয় কোনো পশু বা পাখির কোন কোন আচরণ তোমার কাছে মানুষের আচরণের মতো মনে হয়, তার একটি বর্ণনা দাও (একক কাজ)। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
১. বাত ব্যাধিগ্রস্ত রোগীরা কখন ঘরে প্রবেশ করে? ক. সন্ধ্যার পূর্বে খ. সন্ধ্যার পরে গ. বিকেল বেলা ঘ. গোধূলি বেলা ২. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি পেয়েছেন? ক. ঢাকা গ. অক্সফোর্ড খ. কলকাতা ঘ. কেমব্রিজ ৩. আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন বলতে বোঝায়? i. কোনো তিথি না মেনে কারো আগমনকে ii. মাত্রাতিরিক্ত সময় আতিথেয়তা গ্রহণ করাকে iii. অবাঞ্ছিতভাবে কোনো অতিথির অধিক সময় অবস্থানকে নিচের কোনটি সঠিক? ক. i খ. i ও ii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii উদ্দীপকটি পড়ে ৪ ও ৫ নং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: বাবা-মার আদরের দুই ছেলে আশিক ও আকাশ এবার ক্লাস টুতে পড়ে। ওদের বাবা একদিন ছোট্ট খাঁচায় একটি ময়না পাখি উপহার দেয়। সেই থেকে সারাক্ষণ দুই ভাই প্রতিযোগিতা করে পাখিটিকে খাবার ও পানি দেওয়া, কথা বলা আর কথা শেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু একদিন সকালে দেখে, বিড়াল এসে রাতে পাখিটাকে মেরে ফেলেছে। সেই থেকে যে তাদের অঝোর ধারায় কান্না, কেউ আর থামাতেই পারে না। আজও সেই ময়নার কথা মনে হলে ওরা কেঁদে ওঠে। ৪. উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে ভাব প্রকাশ পেয়েছে তা হলো- i. পশু-পাখির সাথে মানুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক ii. পশু-পাখির সাথে মানুষের স্নেহপূর্ণ সম্পর্ক iii. ভালোবাসায় সিক্ত পশু-পাখির বিচ্ছেদ বেদনায় কাতরতা নিচের কোনটি সঠিক? ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii ৫. উক্ত সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবটি নিচের কোন চরণে প্রকাশ পেয়েছে? ক. বাড়ি ফিরে যাবার আগ্রহ মনের মধ্যে কোথাও খুঁজে পেলাম না। খ. আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন করে সে আরামে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে। গ. অতএব আমার অতিথি উপবাস করে। ঘ. তা হোক, ওকে তোমরা খেতে দিও। |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন- ১: পাখি চালান দেওয়া কাদের ব্যবসায়? উত্তর : পাখি চালান দেওয়া ব্যাধদের ব্যবসায়। প্রশ্ন- ২: কাকে দেখে লেখকের সবচেয়ে বেশি দুঃখ হতো? উত্তর : একটা দরিদ্র ঘরের মেয়েকে দেখে লেখকের সবচেয়ে বেশি দুঃখ হতো। প্রশ্ন- ৩: ‘কী রে, যাবি আমার সঙ্গে? -এ প্রশ্ন কাকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে? উত্তর : ‘কী রে, যাবি আমার সঙ্গে?’-এ প্রশ্ন একটা কুকুরকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে। প্রশ্ন- ৪: কার যৌবনে শক্তিসামর্থ্য ছিল? উত্তর : কুকুরটার যৌবনে শক্তিসামর্থ্য ছিল। প্রশ্ন- ৫: লেখক কাকে অতিথি হিসেবে ঘরে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানান? উত্তর : লেখক একটি কুকুরকে অতিথি হিসেবে ঘরে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানান। প্রশ্ন- ৬: আলো নিয়ে কে এসে উপস্থিত হলো? উত্তর : আলো নিয়ে চাকর এসে উপস্থিত হলো। প্রশ্ন- ৭: ‘ও আমার অতিথি, ওকে পেট ভরে খেতে দিও’-কাকে এ আদেশ দেয়া হয়েছে? উত্তর : ‘ও আমার অতিথি, ওকে পেট ভরে খেতে দিও।’-বামুন ঠাকুরকে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন- ৮: বেড়াতে বের হলে লেখকের পথসঙ্গী হয় কে? উত্তর : বেড়াতে বের হলে লেখকের পথসঙ্গী হয় কুকুরটি। প্রশ্ন- ৯: মালির বউ কাকে মারধর দিয়ে বের করে দিয়েছে? উত্তর : মালির বউ লেখকের অতিথি তথা কুকুরটাকে মারধর দিয়ে বের করে দিয়েছে। প্রশ্ন- ১০: কে লেখকের কাছে গোপনে নালিশ জানাতে চায়? উত্তর : কুকুরটি লেখকের কাছে গোপনে নালিশ জানাতে চায়। প্রশ্ন- ১১: কাদে দরজা খোলার শব্দে অতিথি পালাল? উত্তর : চাকরদের দোর খোলার শব্দে অতিথি পালাল। প্রশ্ন- ১২: শরীর না সারলেও লেখককে কোথা থেকে বিদায় নিতে হলো? উত্তর : শরীর না সারলেও লেখককে দেওঘর থেকে বিদায় নিতে হলো। প্রশ্ন- ১৩: সবাই বকশিশ পেলেও কে বকশিশ পেল না? উত্তর : সবাই বকশিশ পেলেও অতিথি অর্থাৎ কুকুরটি বকশিশ পেল না। প্রশ্ন- ১৪: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে রাত তিনটায় লেখকের ঘুম ভেঙে যায় কেন? উত্তর : ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একজনের গলাভাঙা একঘেয়ে সুরে ভজনের শব্দ শুনে রাত তিনটায় লেখকের ঘুম ভেঙে যায়। প্রশ্ন- ১৫: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে উল্লিখিত বেনে-বৌ পাখির গায়ের রং কেমন? উত্তর : ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে উল্লিখিত বেনে-বৌ পাখির গায়ের রং হলুদ। প্রশ্ন- ১৬: লেখক বেরিবেরি রোগীদের চিনতেন কীভাবে? উত্তর : লেখক পা ফোলা দেখে বেরিবেরি রোগীদের চিনতেন। প্রশ্ন- ১৭: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে বেনে-বৌ পাখি কোথায় বসে হাজিরা হাঁকত? উত্তর : ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে বেনে-বৌ পাখি দুটি প্রাচীরের ধারের ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটায় বসে হাজিরা হাঁকত। প্রশ্ন- ১৮: দেওঘরে কোন ঘরে পীড়িতদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি? উত্তর : দেওঘরে মধ্যবিত্ত গৃহস্থের ঘরে পীড়িতদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। প্রশ্ন- ১৯: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক কাকে অতিথি বলেছেন? উত্তর : ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক একটি কুকুরকে অতিথি বলেছেন। প্রশ্ন- ২০: সন্ধ্যার পূর্বেই কাদের ঘরে প্রবেশ করা প্রয়োজন ছিল? উত্তর : বাতব্যাধিগ্রস্তদের সন্ধ্যার পূর্বেই ঘরে প্রবেশ করা প্রয়োজন ছিল। প্রশ্ন- ২১: অতিথিশালার বাড়তি খাবারের প্রবল অংশীদার কে ছিল? উত্তর : অতিথিশালার বাড়তি খাবারের প্রবল অংশীদার ছিল বাগানের মালির স্ত্রী মালিনী। প্রশ্ন- ২২: কুকুরটি কখন লুকিয়ে বাড়িতে এসেছিল? উত্তর : কুকুরটি দুপুরবেলা লুকিয়ে বাড়িতে এসেছিল। প্রশ্ন- ২৩: বেঁচে যাওয়া খাবার কে নিয়ে গিয়েছিল? উত্তর : মালির বৌ বেঁচে যাওয়া খাবার নিয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন- ২৪: শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসের খণ্ড কয়টি? উত্তর : শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসের খণ্ড চারটি। প্রশ্ন- ২৫: ‘বেরিবেরি’ কী? উত্তর : বেরিবেরি শোথ জাতীয় রোগ, যাতে হাত পা ফুলে যায়। প্রশ্ন- ২৬: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে ভোরে ওঠে কোনটি? উত্তর : ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে ভোরে ওঠে দোয়েল। প্রশ্ন- ২৭: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি উপন্যাসের নাম লেখো। উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি উপন্যাস হলো দেবদাস। প্রশ্ন- ২৮: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল বিষয় কী? উত্তর : মানবেতর প্রাণীর সঙ্গে মানুষের মমত্বের সম্পর্কের স্বরূপই হলো ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল বিষয়। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন- ১: বেরিবেরির আসামি বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। উত্তর : বেরিবেরির আসামি বলতে শোথ জাতীয় রোগাক্রান্তদের বোঝানো হয়েছে। বেরিবেরি একটি কঠিন রোগ। এ রোগ হলে হাত-পা ফুলে যায়। ফলে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ অসহায় বোধ করে। মানুষের বাঁকা চোখের চাহনি থেকে রক্ষা পেতে তারা রোগাক্রান্ত স্থান ঢেকে রাখতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। তাই শোথ জাতীয় রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের লেখক বেরিবেরির আসামি বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রশ্ন- ২: বেনে-বৌ পাখির অনুপস্থিতিতে লেখকের ব্যস্ত হয়ে ওঠার কারণ কী? উত্তর : বেনে-বৌ পাখির অনুপস্থিতিতে লেখক অজানা ভয়ের নীরব বেদনায় ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। দেওঘরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল অপূর্ব। প্রাচীরঘেরা বাগানের মধ্যে সকালবেলায় লেখক বিভিন্ন পাখির আনাগোনা লক্ষ করতেন। তিনি লক্ষ করতেন হলদে রঙের একজোড়া বেনে-বৌ পাখি প্রতিদিন একটু বিলম্বে আসত। এরা প্রাচীরের ধারের ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটায় বসে হাজিরা হেঁকে যেত। হঠাৎ একদিন তাদের অনুপস্থিতিতে লেখক অজানা ভয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ভাবলেন হয়তো পাখি দুটি ব্যাধের হাতে ধরা পড়েছে। প্রশ্ন- ৩: লেখক বাড়ি পৌঁছাতে কুকুরের সাহায্য কামনা করলেন কেন? উত্তর : অন্ধকার রাতে নিঃসঙ্গ সময়ের নিকটতম বন্ধু মনে করে বাড়ি পৌঁছাত লেখক কুকুরের সাহায্য কামনা করলেন। দেওঘরে লেখক একদিন বাতব্যাধিগ্রস্ত কয়েকজন বৃদ্ধের হাঁটার গতিময়তা দেখে হাঁটতে অনুপ্রাণিত হন। সেদিনই তিনি হাঁটতে বের হন এবং বহুদূর চলে যান। অন্ধকার ঘনিয়ে এলে লেখক নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করেন। আর তখনই পেছনে একটি কুকুরের উপস্থিতি লক্ষ করলেন। এই মানবেতর প্রাণীটিকে দেখে লেখকের মাঝে মানবতাবোধ জেগে উঠল। লেখক আপন সঙ্গী ভেবে অন্ধকার রাতে বাড়ি পৌঁছাতে কুকুরটির সাহায্য কামনা করলেন। প্রশ্ন- ৪: লেখকের অতিথি বারান্দার নিচে বসেছিল কেন? উত্তর : লেখকের প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসা থাকায় তারই সান্নিধ্য কামনায় অতিথি কুকুরটি বাইরের বারান্দার নিচে বসেছিল। একদিনের পরিচয়েই লেখকের সঙ্গে কুকুরটির বন্ধুত্ব হয়। কুকুরটির প্রতি যেমন লেখকের মমত্ববোধ সৃষ্টি হয় তেমনি লেখকের প্রতিও অতিথি কুকুরটির আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশ পায়। প্রথমে কুকুরটি লেখকের অপেক্ষায় গেটের বাইরে অবস্থান করে। পরবর্তীতে তারই সান্নিধ্য কামনায় বাইরের বারান্দার নিচে বসে থাকে। প্রশ্ন- ৫: ‘ফোলা পায়ের লজ্জা ঢাকতে বেচারাদের কত না যত্ন’- বুঝিয়ে লেখো। উত্তর : ‘ফোলা পায়ের লজ্জা ঢাকতে বেচারাদের কত না যত্ন।’ কথাটি বেরিবেরি রোগে ভোগা মেয়েদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। বিকেলবেলা লেখকের বাড়ির সামনে দিয়ে পা ফোলা মেয়েরা দলবেঁধে যেত। বেরিবেরি রোগের কারণে তাদের পা ফুলে গেছে, যা পায়ের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলেছে। পায়ের এ ফোলা অবস্থা ঢাকতেই তারা গরমের দিনেও মোজা পরত। প্রশ্ন- ৬: ‘দেহ যেমন শীর্ণ মুখ তেমনি পাণ্ডুর’ কথাটি ব্যাখ্যা কর। উত্তর : দেওঘরে দেখা দরিদ্র ঘরের মেয়েটির শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে লেখক এ কথাটি বলেছেন। লেখক পথের ধারে বসে বৈকালিক ভ্রমণে বেরুনো রোগীদের লক্ষ করতেন। বেরিবেরি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে একটি অল্পবয়সি মেয়ের শরীর ছিল রোগা, চেহারা বিবর্ণ। তার চলার শক্তি ছিল না, অথচ কোলে একটি শিশু। উদ্ধৃত উক্তিটি মেয়েটির করুণ অবস্থাকেই তুলে ধরেছে। প্রশ্ন- ৭: মালির বউ কুকুরটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল কেন? উত্তর : মালির বউয়ের খাবারে কুকুরটি ভাগ বসিয়েছিল বলে মালির বউ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। অতিথিশালার অতিথিদের জন্য রাঁধা উদ্বৃত্ত খাবারগুলো নিয়মিত ভোগ করত মালির বউ। কুকুরটি সে খাদ্যের অংশীদার হিসেবে জুটলে তাতে মালির বউয়ের স্বার্থে বাধা পড়ে। তাই কুকুরটিকে সে মেরে বের করে দিয়েছিল। প্রশ্ন- ৮: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের গল্পকারের সকাল কাটে কীভাবে? উত্তর : ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে গল্পকারের পাখিদের ভাবনায় সকাল কাটে। রাত শেষ হতে না হতেই পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়। সেই সাথে গল্পকারের ব্যস্ততাও বেড়ে যায়। একের পর এক পাখিরা আমগাছ, বকুলকুঞ্জ, অশ্বত্থ গাছের মাথা থেকে বের হয়ে আসে। গল্পকার তা পরমানন্দে দেখতে থাকেন। পাখিরা যেমন প্রত্যহ হাজিরা হাঁকে, তেমনি গল্পকারও নিয়মিতভাবে সকালবেলা পাখিদের সময় দেন। কোনো পাখি এক, দুইদিন না আসলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন। আবার পাখিদের ফিরে আসা দেখে ভাবনা ঘোচে তার। এমনিভাবে গল্পকারের প্রতিটি সকাল পাখিদের সাথেই কেটে যায়। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : মহেশ। দরিদ্র বর্গাচাষি গফুরের অতি আদরের একমাত্র ষাঁড়। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ওকে ঠিকমত খড়-বিচুলি খেতে দিতে পারে না। জমিদারের কাছে সামান্য খড় ধার চেয়েও পায় না। নিজে না খেয়ে থাকলেও গফুরের দুঃখ নেই। কিন্তু মহেশকে খাবার দিতে না পেরে তার বুক ফেটে যায়। সে মহেশের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে- মহেশ, তুই আমার ছেলে। তুই আমাদের আট সন প্রতিপালন করে বুড়ো হয়েছিস। তোকে আমি পেট পুরে খেতে দিতে পারি নে, কিন্তু তুই তো জানিস আমি তোকে কত ভালোবাসি। মহেশ প্রত্যুত্তরে গলা বাড়িয়ে আরামে চোখ বুজে থাকে। সূত্র: মহেশ- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেওঘরে যাওয়ার কারণ কী? খ. অতিথি কিছুতে ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন? ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের গফুরের সাথে লেখকের চেতনাগত মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন-‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো। |
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। খ. নতুন পরিচয়ের সংকোচে অতিথি কিছুতে ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না। হাওয়া বদলের জন্য দেওঘরে গিয়ে পথে এক কুকুরের সঙ্গে লেখকের পরিচয় হয়। পথ চলতে চলতে কুকুরের সঙ্গে লেখকের হৃদ্যতা সৃষ্টি হলেও লেখক বাড়িতে পৌঁছে গেট খুলে দিলে সে ভেতরে ঢুকতে ভয় পায়। কারণ অচেনা কুকুর বাড়ির ভেতরে ঢুকলে অনেক সময় তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। তাই ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পেরে লেখকের আমন্ত্রণ সত্ত্বেও অতিথি কুকুরটি ভেতরে ঢোকার সাহস পায়নি। গ. উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথির প্রতি লেখকের ভালোবাসার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। শুধু মানুষের সঙ্গে মানুষেরই যে মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে এমন নয় বরং অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। পশুর প্রতি মানুষের এ মমত্ববোধের বিষয়টিই ফুটে উঠেছে উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথি হলো একটি কুকুর। সে লেখকের বেড়াতে যাওয়ার সঙ্গী। লেখক কুকুরটিকে যে বাড়িতে অবস্থান করছেন সে বাড়ির মালিকে খাবার দিতে বলেছেন। কিন্তু কুকুরটিকে খাবার দেয়া হয়নি বলে তারও খুব কষ্ট হয়। অতিথির চোখের জল দেখে লেখকের বুকে হাহাকার ওঠে। অন্যদিকে উদ্দীপকের মহেশ একটি ষাঁড়। মহেশের মালিক গফুর তাকে নিয়মিত যত্ন করে, তাকে ভালোবাসে। দারিদ্র্যের কারণে নিজে খেতে না পারলেও সে মহেশকে ঠিকই খাওয়ায়। মহেশের প্রতি গফুরের এ মমতার অশ্রু ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কুকুরের প্রতি লেখকের মমত্ববোধকেই ইঙ্গিত করে। ঘ. ‘উদ্দীপকের গফুরের সাথে লেখকের চেতনাগত মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন’- মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে জীবের প্রতি মানুষের স্নেহ-ভালোবাসার বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠলেও উদ্দীপকের পটভূমিতে কিছুটা ভিন্নতা উঠে এসেছে। এখানে জমিদারের অন্যায় শোষণে শোষিত দরিদ্র বর্গাচাষি গফুরের অসহায় জীবনের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অসুস্থ লেখকের সাথে অতিথি কুকুরের সখ্যের সম্পর্ক নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যায়। মালি-বৌয়ের নির্মমতার পরাজয় ঘটে তাদের সখ্যের কাছে। কিন্তু বাস্তবতার নিষ্ঠুরতায় তাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত আবার বিচ্ছেদ ঘটে। নির্দিষ্ট সময় শেষে অতিথি কুকুরের স্মৃতি পেছনে ফেলে লেখক ফিরে আসেন তার পুরনো আস্তানায়। এভাবেই ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি লেখকের অসুস্থতার প্রেক্ষাপটে শেষ হয়েছে। উদ্দীপকে অভাবক্লিষ্ট গফুর জীবনের কাছে পরাজিত এক অসহায় সৈনিক। যেখানে দারিদ্র্যের সাথে প্রতিনিয়ত তার যুদ্ধ। এর মধ্যেও পোষা ষাঁড় মহেশের প্রতি তার ভালোবাসার কমতি নেই। প্রভাবশালী জমিদারের রাজত্বে নিজে দু’মুঠো খেতে না পারলেও মহেশের জন্য খাবারের চিন্তায় সে ব্যাকুল হয়। তার এ ব্যাকুলতার মধ্যে অভাবক্লিষ্ট জীবনের প্রতিচ্ছবিই ভেসে ওঠে, যা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের ভিন্নতা তৈরি করেছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : লালমনিরহাটের যুবায়ের প্রায় ১০ বছর ধরে তার পোষাহাতি, কালাপাহাড়কে দিয়ে লাকড়ি টানা, চাষ করা, সার্কাস দেখানো ইত্যাদি কাজ করে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে দারিদ্র্যের কারণে হাতির খোরাক জোগাড় করতে না পেরে একদিন সে কালাপাহাড়কে বিক্রি করে দিল। ক্রেতা কালাপাহাড়কে নিতে এসে ওর পায়ে বাঁধা রশি ধরে হাজার টানাটানি করে একচুলও নাড়াতে পারল না। কালাপাহাড়ের দুচোখ বেয়ে শুধু টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। পরদিন খদ্দের আরও বেশি লোকজন সাথে করে এসে কালাপাহাড়কে নিয়ে যাবে বলে চলে যায়। কিন্তু ভোরবেলা যুবায়ের দেখে- কালাপাহাড় মরে পড়ে আছে। হাউমাউ করে সে চিৎকার করে আর বলে- ‘রে আমার কালাপাহাড়, অভিমান করে তুই চলে গেলি।’ ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন পদক লাভ করেন? খ. লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন কেন? ব্যাখ্যা করো। গ. কালাপাহাড়ের আচরণ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথির আচরণ কীভাবে ভিন্ন- বর্ণনা করো। ঘ. “উদ্দীপকের যুবায়ের এর অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো। |
------------------ |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ায় ফারহান ঢাকা চলে যাচ্ছে। ট্রেন ছেড়ে দেয়ার মুহূর্তেও সে দেখে টমি তার বগির জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্র মাস খানেক আগে এ কুকুরটা তাদের বাড়িতে আসে। অত্যন্ত ক্ষুধার্ত মনে হওয়ায় ফারহান কুকুরটাকে খাবার দিয়েছিল। আর সেই থেকেই কুকুরটা সারাক্ষণ তার আশেপাশে ঘুর ঘুর করে। ফারহানের কেমন মায়া পড়ে যায় কুকুরটার উপর। সে নিয়মিত ওকে খাবার দিতে যায়। আর আদর করে ওর নাম দেয় টমি। ক.‘বড়দিদি’ উপন্যাস কোন পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়? খ. চাকরদের দরজা খোলার শব্দ শুনে অতিথি ছুটে পালিয়েছিল কেন? গ. উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। |
ক. ‘বড়দিদি’ উপন্যাসটি সর্বপ্রথম ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। খ. চাকরদের দরজা খোলার শব্দে অতিথি (কুকুরটি) ছুটে পালিয়েছিল পুনর্বার মার খাওয়ার ভয়ে। লেখক তার প্রিয় অতিথিকে খেতে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন বাড়ির মালি বউকে। চাকরদের তাতে ভীষণ আপত্তি ছিল। কারণ বেঁচে যাওয়া খাবারের অংশীদার ছিলেন তিনি। তাই মালি বউ লেখকের অতিথিকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় সুযোগ পেয়ে অতিথি লেখকের দুয়ারে এসে নীরব ভাষায় অভিযোগ জানায় আর মালি বউয়ের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে পুনরায় যেন আবার মার খেতে না হয় সেজন্য ছুটে পালায়। গ. উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রতিফলিত দিক হচ্ছে মানবেতর প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক দেওঘর ছেড়ে আসার সময় অতিথি কুকুরের জন্য তীব্র টান অনুভব করেন; ঠিক একইভাবে উদ্দীপকের ফারহান ঢাকা ছাড়ার সময় প্রিয় কুকুর টমির জন্য তীব্র টান অনুভব করেন। গল্পকার এবং উদ্দীপকের ফারহান উভয়েই মানবেতর প্রাণীর সাথে এক আত্মীক ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে যান। লেখক যেরূপভাবে তার অতিথিকে ভালোবেসেছিলেন, অতিথির আঘাত পাওয়ায় মর্মাহত হয়েছিলেন এবং অতিথির সাহচর্যে আনন্দিত হয়েছিলেন, উদ্দীপকের ফারহানও তার প্রিয় কুকুর টমির উপর একই রূপ টান অনুভব করে ট্রেন ছেড়ে যাবার সময়। তাই বলা যায় ভালোবাসার দিকটি উদ্দীপক এবং গল্পে সমানভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্রভাবকে ধারণ করে না” মন্তব্যটি যথাযথ। লেখক দেওঘর যাবার পর তার একাকীত্বের অবসান ঘটে মানবেতর একটি প্রাণীর আন্তরিক সাহচর্যে। এই প্রাণীটি কুকুর কিন্তু লেখক তাকে অভিহিত করেন অতিথি হিসেবে। তবে লেখক তার অতিথিকে আদর-আপ্যায়ন করার দিক দিয়ে বেশ অসহায়ত্বের পরিচয় দিয়েছেন। মালি বউ লেখকের অতিথিকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছেন, লেখক এহেন কার্যের কোনো প্রতিবাদ করেননি। অপরদিকে ফারহান তার প্রিয় টমিকে নিয়মিত খাবার দিত, আদর-যত্ন করত। আর টমিও তার প্রতিদান স্বরূপ সর্বক্ষণ তার পাশে পাশে থাকত। তাই ফারহান যখন টমিকে ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে তখন খুব খারাপ লাগে তার। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বায়ু পরিবর্তন করতে গিয়ে কুকুরের সাথে অন্তরঙ্গতায় জড়ান। আর ফারহান তার নিজ বাড়িতে কুকুরটির সাক্ষাৎ পান। লেখক কুকুরের তেমন যত্ন নিতে না পারলেও ফারহান পেরেছে। তাই বলা যায় উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্রভাবকে ধারণ করে না। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : লোপা কবুতর খুব ভালোবাসে। তার দুটো কবুতর আছে। একটির নাম হীরা, অন্যটির নাম মানিক। হীরা-মানিক বলে ডাকলেই উড়ে এসে লোপার ঘাড়ে-মাথায় বসে ‘বাক-বাকুম’ ‘বাক-বাকুম’ শব্দ করে। নিজের হাতে ওদের খাইয়ে দেয় লোপা। লোপার মা বলে, “কবুতর নিয়ে এত বাড়াবাড়ি আমার ভালো লাগে না।” মার কথা শুনে চুপ করে থাকে লোপা। ক. পাণ্ডুর শব্দের অর্থ কী? খ. লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন কেন? বুঝিয়ে লেখো। গ. উদ্দীপকে লোপার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়? -ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব একই।” -উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। |
ক. পাণ্ডুর শব্দের অর্থ বিবর্ণ। খ. গল্পকথক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। বায়ু পরিবর্তন বলতে খোলামেলা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কিছুদিনের জন্য ভ্রমণকে বোঝায়। এর ফলাফল সম্পর্কে গল্পকথকের ধারণা খুব ইতিবাচক ছিল না। তবু চিকিৎসকের নির্দেশ পালনের জন্য তিনি দেওঘর নামক জায়গাটিতে গিয়েছিলেন। গ. উদ্দীপকের লোপার সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য এবং সুস্থ হওয়ার আশায় দেওঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকাকালীন অবস্থায় একটি কুকুরের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। কুকুরটি লেখক বাইরে বের হলেই সংকেত দিত, লেখকের প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ শুনত। যেমনটি আমরা উদ্দীপকের লোপার মধ্যে লক্ষ করি। লোপার প্রিয় কবুতরগুলো লোপার ডাকে সাড়া দিয়ে মাথায় এসে বসত। বাকুম-বাকুম ডাকত। উদ্দীপকের লোপা এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক উভয়েই পাখি এবং প্রাণীর প্রতি নিজের অজান্তেই অনুরক্ত হয়েছেন। পাখি এবং পশুর সাহচর্য উভয়কে আনন্দ দিয়েছে। তাই পশুপ্রীতি ও আনন্দ পাওয়ার দিক থেকে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব একই”।- উক্তিটি যথাযথ। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে আমরা দেখি লেখক তার অতিথির (কুকুর) উপর খুবই প্রীত হন। যে বিষয়টি বাড়ির মালিনী ভালো চোখে দেখত না। উদ্দীপকের লোপার মাও লোপার কবুতর প্রীতিকে ভালো চোখে দেখত না। লেখক দেওঘর গিয়ে কুকুরের অন্তরঙ্গতা ও সান্নিধ্যে মুগ্ধ হন এবং মালি বউকে তার প্রিয় কুকুরকে খাবার দেখার অনুরোধ করেন। মালি বউ কুকুরটিকে একেবারেই সহ্য করতে পারত না এবং তাকে মেরে তাড়িয়ে দিত। লেখক পরবর্তী সময় মালি বউয়ের এ আচরণ সম্পর্কে জানতে পেরে হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করেছিলেন। উদ্দীপকের লোপাও কবুতরের কারণে মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে একইরূপ কষ্ট অনুভব করেছে। তাই উপর্যুক্ত আলোচনায় শেষে বলা যায় প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা এবং কষ্ট অনুভব করার দিক দিয়ে উদ্দীপক এবং অতিথির স্মৃতি গল্পের মূলভাব একই। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : জামাল একটি ছাগল পোষে, তার নাম পুটু। জামাল তার নিজের খাবার এবং বাজার থেকে ভালো ভালো খাবার কিনে এনে খাইয়ে তাকে নাদুস-নুদুস করে তুলেছে। সে পুটুকে খুবই ভালোবাসে। চোরেরা একদিন পুটুকে চুরি করে নিয়ে গেলে পুটুর শোকে জামাল অসুস্থ হয়ে যায়। [দি. বো. ২০১৫] ক. ভজন শুরু হয় কখন? খ. কুকুরটি ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটির সাদৃশ্য আছে তা বর্ণনা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সামগ্রিক দিকটি তুলে ধরেনি” -বিশ্লেষণ কর। |
ক. রাত তিনটে থেকে ভজন শুরু হয়। খ. নতুন পরিচয়ের সংকোচে অতিথি কিছুতে ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না। হাওয়া বদলের জন্য দেওঘরে গিয়ে পথে এক কুকুরের সঙ্গে লেখকের পরিচয় হয়। পথ চলতে চলতে কুকুরের সঙ্গে লেখকের হৃদ্যতা সৃষ্টি হলেও লেখক বাড়িতে পৌঁছে গেট খুলে দিলে সে ভেতরে ঢুকতে ভয় পায়। কারণ অচেনা কুকুর বাড়ির ভেতরে ঢুকলে অনেক সময় তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। তাই ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পেরে লেখকের আমন্ত্রণ সত্ত্বেও অতিথি কুকুরটি ভেতরে ঢোকার সাহস পায়নি। গ. উদ্দীপকটিতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের পশুপ্রেমের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দেখা যায় যে, দেওঘরে গিয়ে লেখকের একটা কুকুরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। কুকুরের আনুগত্য ও ভালোবাসার কারণে লেখক কুকুরটাকে ‘অতিথি’ হিসিবে সম্বোধন করতেন। এছাড়াও লেখক একজন ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু দেওঘর থেকে আসার সময় তাঁর মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল কুকুরটির জন্য। পশুপ্রেমের এই দৃষ্টান্তের সাথেই উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে। উদ্দীপকের দেখা যায়, জামাল পুটু নামক ছাগলটিকে খুবই ভালোবাসে। বাজার থেকে ভালো খাবার কিনে এনে পুটুকে খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলে এবং চোরেরা পুটুকে চুরি করে নিয়ে গেলে জামাল পুটুর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এটিও পশুর প্রতি প্রেমের একটা বিরল দৃষ্টান্ত। ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে যতগুলো দিক প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকে তার সবগুলো দিক প্রকাশিত হয়নি। যেসব পশু লোকালয়ে বাস করে অভ্যস্ত, তাদের সাথে মানুষের এক প্রকার অদৃশ্য সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এসব পশু লোকালয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে অবস্থান করে। যেমন : কুকুর, বিড়াল, ছাগল, ময়ূর ইত্যাদি। এসব প্রাণীর প্রতি অনেক মানুষের ভালোবাসা রয়েছে। উদ্দীপকে পশুর প্রতি প্রেমের এক দারুণ দৃষ্টান্ত প্রকাশিত হয়েছে। জামাল তার ছাগল পুটুকে এই মাত্রায় ভালোবাসে যে পুটুর জন্য জামাল অসুস্থ হয়ে পড়ে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে পশুর প্রতি আন্তরিকতার এ বিষয়টি বেশ স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের জীবনে অতিথি মাত্র কয়েকদিন ছিল। লেখক দেওঘরে অতিথি তথা কুকুরটাকে নিয়ে আসেননি। আবার কুকুরটার জন্য লেখক যে পরিমাণ খাবার বরাদ্দ করেছেন, তা কুকুরটা ঠিকমতো পেয়েছে কিনা, এসব বিষয়ে তার খেয়াল ছিল মনে মনে। এসব বিষয় উদ্দীপকে নেই। এসব দিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ হয়েছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : নানাবাড়ি থেকে সাদা রঙের ছাগলের বাচ্চা উপহার হিসেবে পায় সাকিব। বাচ্চাটি পেয়ে সে খুব খুশি হয়। সারাক্ষণ সে বাচ্চাটিকে যতেœ রাখে। ছাগল ছানাটিও সাকিবের পিছু ছাড়ে না। দেখতে দেখতে ছানাটি হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠল। একদিন ভোরবেলা দেখা গেল ছাগল ছানাটি মরে পড়ে আছে। বিষাক্ত সাপের কামড়ে ছানাটির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সাকিব খুব মুষড়ে পড়ে। ক. কত সালে ‘বড়দিদি’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়। খ. লেখকের সত্যিকার ভাবনা ঘুচে গেল কীভাবে? গ. উদ্দীপকে ছাগল ছানাটির ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অতিথির মধ্যে বিদ্যমান সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো চিহ্নিত করো। ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অতিথি উদ্দীপকের ছাগল ছানাটির মতো ততটা জীবনঘনিষ্ঠ নয়- মন্তব্যটি গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো। |
ক. ১৯০৭ সালে ‘বড়দিদি’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়। খ. ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের ‘খ’ নং উত্তর দ্রষ্টব্য। গ. অতিথি ও ছাগলছানা দুটি প্রাণীই প্রভুভক্তির পরিচয় দিয়েছে। ইতর প্রাণী হয়েও মানুষের সঙ্গে তাদের চমৎকার সম্পর্ক রচিত হয়েছে। কিন্তু তাদের করুণ পরিণতি আমাদের বেদনাহত করে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দেওঘরে বেড়াতে গিয়ে লেখকের সঙ্গে পথের অচেনা কুকুরের সাথে অতিথির এক মধুর সম্পর্ক রচিত হয়। অতিথিও লেখকের ভালোবাসার মূল্য দিতে কার্পণ্য করেনি। লেখকের বিদায়ের দিন তাকে অনুসরণ করে অতিথি রেল স্টেশন পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু প্রিয়জনকে কোনো বাঁধনে বেঁধে রাখতে পারেনি অতিথি। কর্তব্যের টানে লেখক অতিথিকে ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ান। উদ্দীপকের সাকিবের সঙ্গেও তার পোষা ছাগলছানার ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাগলছানার সঙ্গে সাকিবের চিরবিচ্ছেদ ঘটে যায়। সাপের কামড়ে ছাগল ছানাটি অকালে মারা যায়। উদ্দীপক এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে সাকিব ও লেখক একইভাবে ইতর প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে। অপরদিকে উভয় ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিণতি দৃষ্টিগোচর হয়। উদ্দীপকের প্রিয় ছাগলছানাটি সাপের কামড়ে মারা যায় আর গল্পের লেখক দেওঘরে প্রিয় কুকুরটিকে ছেড়ে চলে আসেন। ঘ. “‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অতিথি উদ্দীপকের ছাগলছানাটির মতো ততটা জীবন ঘনিষ্ঠ নয়” - মন্তব্যটি যথাযথ। চিকিৎসকের পরামর্শে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক একবার দেওঘরে যান এবং সেখানে একটি মানবেতর প্রাণী অর্থাৎ কুকুরের সঙ্গে তার মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই সম্পর্ক স্থায়ী রূপ পেতে বাধাগ্রস্ত হয় নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু লেখক দেওঘর ছেড়ে আসার সময়ও কুকুরটিকে ভুলতে পারেননি এবং কুকুরটিও তাকে রেলস্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিল। গল্পে দেখা যায়, অসুস্থ লেখক দেওঘরে গিয়ে একটি মানবেতর প্রাণীর সঙ্গে মমত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলেও সেখানকার নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাকে যথার্থ আদর-আপ্যায়ন করতে পারেননি। কিন্তু সাকিবকে তেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। সাকিব তার পোষা ছাগলছানাটিকে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে ভালোবেসেছিল। সাদা ছাগলছানাটিও তার প্রতিদান দিয়েছিল। সবসময় সে সাকিবের গা ঘেষে থাকত। তাই উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে দেখা যায়, সাকিব তার ছাগলছানাটিকে ছোট থেকে লালন-পালন করে বড় করে এবং সবসময় তার খেয়াল রাখে। যদিও ছাগলছানাটির শেষ পরিণতি হয় সাপের কামড়ে মৃত্যু। কিন্তু সাকিবের জীবনে ছাগলছানাটি ছিল ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। যে অনুভূতি আমরা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের মধ্যে দেখতে পাই না। লেখক অতিথির জন্য তীব্র মমতা উপলব্ধি করলেও তার জন্য বেশি কিছু করতে পারেননি। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : গাড়িটা থামতেই লোকটা ছুটে এলো। যেন এক্ষুণি কেঁদে ফেলবে, এমন একটা ভাব। ছুটে এসে কেমন করুণ গলায় বলল, আপনাদের কাছে স্যার রক্ত বন্ধ করার কোনো ওষুধ আছে? রীতিমতো অবাক হবার পালা। মেজদা জিজ্ঞেস করলেন, কেন, কী দরকার? স্যার, একটা খরগোশ মানে একটা খরগোশ খুব আঘাত পেয়েছে। খুব রক্ত পড়ছে ওটার পা থেকে। আমি খরগোশটাকে ওখানে রেখে এসেছি, স্যার। ওষুধ লাগাতে পারলে হয়তো বাঁচাতে পারতাম। ক. সবচেয়ে ভোরে ওঠে কোন পাখি? খ. লেখকের অতিথির চোখ দুটো ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল কেন? গ. উদ্দীপকের লোকটির আকুতি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কার অনুভূতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুরই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। |
ক. সবচেয়ে ভোরে ওঠে দোয়েল পাখি। খ. অতিথিশালার লোকদের কাছে নিগৃহীত হয়ে লেখকের কাছে নালিশ জানাতে এসে কুকুরটির চোখ ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল। লেখকের নির্দেশমতো খাদ্য পাওয়ার পরিবর্তে কুকুরটির কপালে জুটেছিল মারধর। তাই একদিন দুপুরে বাড়ির চাকরদের অগোচরে কুকুরটি নালিশ জানাতে সমব্যথীর কাছে নিজের দুর্ভাগ্যের কথা জানাতে গিয়ে তার চোখ দুটি ভিজে ভিজে হয়ে যায়। গ. উদ্দীপকে লোকটির আকুতির সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনুভূতির পুরোপুরি সাদৃশ্য রয়েছে। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি কুকুরের সঙ্গে অসুস্থ লেখকের কয় দিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মমত্বের সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকেরও মূলবিষয় পশুপাখির মতো তুচ্ছ জীবের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম মমত্ববোধ। উদ্দীপকে প্রাণিপ্রেমিক লোকটি পাখিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। আহত খরগোশকে সুস্থ করার জন্য রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ওষুধ খোঁজে। খরগোশের কষ্ট যেন তাকেও সমান কষ্ট দেয়। অনুরূপ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে বেড়াতে গেলে কুকুরটির সঙ্গে তার দেখা হয় এবং উভয়ের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক কদিনেই অত্যন্ত গভীর হয়। দেওঘর থেকে বিদায় নেয়ার দিনে লেখক কুকুরটির কথা ভেবে ব্যথিত হন। ঘ. “প্রেক্ষাপটে ভিন্ন হলেও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুরই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।” -উক্তিটি যথাযথ। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি অচেনা কুকুরের সঙ্গে লেখকের মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। আর উদ্দীপকে দেখতে পাই বন্য পশুপাখিদের প্রতি লোকটির মমত্ববোধ। উদ্দীপকে বর্ণিত প্রাণিপ্রেমিক লোকটি পশুপাখিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য ব্যস্ত। অসুস্থ ও আহত প্রাণীদের সুস্থ করার জন্য সে ওষুধ খুঁজে বেড়ায় এবং চিকিৎসা করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের সঙ্গে পথের কুকুরটির সখ্য গড়ে ওঠে। এমনকি বিদায় নেয়ার দিনে কুকুরটাকে ছেড়ে আসতে লেখকের মন সায় দিচ্ছিল না। উভয় দৃষ্টান্ত বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাই, উদ্দীপকের লোকটি ছিল প্রাণিপ্রেমিক। প্রাণীদের দুঃখ-কষ্ট ও অসুস্থতায় তার দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তেমনি আলোচ্য গল্পের লেখকও ছিলেন মানবেতর প্রাণীর প্রতি সহমর্মী। তুচ্ছ একটি জীবের প্রতি লেখকের মনের মধ্যে যে দুর্নিবার আকর্ষণ, তাই এ গল্পের মূল উপজীব্য। এভাবে উদ্দীপকের প্রাণিপ্রেমিক লোকটির মধ্যে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুরকে প্রতিফলিত করেছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : রতন প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসে তার পোষা ময়নাটিকে। ময়নার প্রতি রতনের এমন দরদ দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে তারই প্রতিবেশী রানা। একসময় রানা রাতের আঁধারে ময়নাকে মেরে ফেলে। ময়নার শোকে নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেল রতন। তার অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ে দুচোখ বেয়ে। ক. প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম কী? খ. ‘সত্যিকারের একটা ভাবনা ঘুচে গেল’ কীভাবে? গ. রানার সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে কাকে মেলানো যায়। ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকের রতনের মাঝে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখককে খুঁজে পাওয়া যায়।” উক্তিটি বিচার কর। |
ক. প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম ইউক্যালিপটাস। খ. হলদে রঙের বেনে-বৌ পাখি দুটিকে আবার দেখতে পেয়ে লেখকের সত্যিকারের ভাবনাটা ঘুচে গেল। প্রতিদিন সকালে দেওঘরে ইউক্যালিপটাস গাছে এক জোড়া হলদে রঙের বেনে-বৌ পাখি এসে বসত এবং লেখক তা দেখতেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন পাখি দুটি না আসায় লেখক ভাবলেন, হয়তো কেউ পাখি দুটিকে শিকার করেছে। কিন্তু তিন দিনের দিন পাখি দুটি আবার ফিরে আসে। তা দেখে লেখকের সত্যিকার একটা ভাবনা ঘুচে যায়। গ. রানার সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালির বৌ মালিনীকে মেলানো যায়। আমাদের গৃহে ও চারপাশের পরিবেশে অসংখ্য অবলা প্রাণী বাস করে। এদের সাথে কখনো কখনো মানুষের হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু এ সম্পর্ক স্থায়ীরূপ পেতে অনেক সময় মানবীয় আচরণ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিছু মানুষ তাদের হীনম্মন্যতার কারণে এ বাধার সৃষ্টি করে। এমনই দুটি চরিত্র হলো উদ্দীপকের রানা ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালির বৌ। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক যে বাড়িতে উঠেছিলেন সে বাড়িতে মালির স্ত্রী সর্বদা নিজের স্বার্থোদ্ধারে তৎপর থাকত। প্রাণীর প্রতি সামান্যতম মমত্বও তার মধ্যে ছিল না। তাইতো লেখক বেচে যাওয়া খাবার কুকুরটিকে দিতে বললেও সে দেয় না। বরং কুকুরটিকে মেরে তাড়িয়ে দেয়। উদ্দীপকেও দেখা যায় রতন তার পোষা ময়নাকে অত্যন্ত ভালোবাসে। কিন্তু বিষয়টি সহ্য হয় না রানার। প্রাণীর প্রতি সামান্য মমত্বও তার নেই। তাই ঈর্ষান্বিত হয়ে ময়না পাখিটিকে হত্যা করে সে। তাই বলা যায়, এখানে রানার সঙ্গে গল্পের মালিনী সাদৃশ্য রয়েছে। ঘ. “উদ্দীপকের রতনের মাঝে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখককে খুঁজে পাওয়া যায়” মন্তব্যটি যথার্থ। আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও গৃহে অসংখ্য অবলা প্রাণী বাস করে। এদের সাথে কখনো কখনো মানুষের হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক কখনো এতটাই প্রবল হয় যে, এদের সাথে বিচ্ছেদ মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে চায় না। উদ্দীপকের রতন ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মধ্যে এ বিষয়টির প্রবল প্রকাশ লক্ষণীয়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের মধ্যে প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। পথের কুকুরকে তিনি ভালোবেসেছেন গভীরভাবে। কুকুরটিকে তিনি অতিথি বানিয়েছেন। কুকুরটিকে খাওয়ানোর জন্য তার বাড়ির লোককে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কুকুরটির জন্য দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় দুঃখ প্রকাশ করেন। উদ্দীপকের রতনের মাঝেও প্রাণিপ্রীতি বিদ্যমান। সে একটি ময়না পাখি পোষে। পাখিটির প্রতি তার অসীম দরদ রয়েছে। তাইতো পাখিটি মারা গেলে সে শোকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এমনকি নিজের অজান্তেই চোখের কোণে নেমে এসেছে জল। উল্লিখিত আলোচনায় প্রমাণিত হয়, প্রশ্নোক্ত, মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : রুবা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে ঢাকায় থাকে। মাঝে মধ্যে গ্রামে যায়। ঢাকার যানজট পেরিয়ে গ্রামের শ্যামল প্রান্তরে গেলেই তার মন ভালো হয়ে যায়। গ্রামের প্রত্যেকটি জিনিস সে উপভোগ করে। গাছপালা, নদী, বন-জঙ্গল সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখে আর সৌন্দর্য উপভোগ করে। তার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে পাখিদের কলকাকলি। পাখিদের জন্য তার খুব মায়া। প্রতিদিন চড়ুই পাখির ডাকে তার ঘুম ভাঙে। চড়ুই পাখির বাসাটি ছিল ঘরের চালের কোণে। একদিন চড়ুই পাখিকে না দেখলে তার মন খারাপ লাগে। ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি কে লিখেছেন? খ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে নালিশ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। গ. রুবার মন খারাপের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কী মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘রুবার সৌন্দর্য চেতনা আর লেখকের সৌন্দর্য চেতনা একই সূত্রে গাঁথা’- মন্তব্যটি বিচার করো। |
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি লিখেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। খ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে নালিশ বলতে মালিনীর প্রতি অবলা কুকুরটির অভিযোগসুলভ অভিব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে। গল্পে অতিথি কুকুরটি ভেজাভেজা চোখে গল্পকারের কাছে মালিনী ও চাকরদের দুর্ব্যবহারের জন্য অভিযোগ প্রকাশ করছে নীরব ভাষায়। কুকুরটির এ নির্বাক চাহনিকে লেখক নালিশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। গ. রুবার মন খারাপের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতির চমৎকার একটি মিল পাওয়া যায়। মানুষের প্রতি মানুষের যেমন ভালোবাসা, ভালো লাগা তৈরি হয় তেমনি প্রকৃতিতে বাস করে এমন অনেক প্রাণীর প্রতিও মানুষের ভালোবাসা, ভালো লাগা তৈরি হয়। প্রকৃতির এসব প্রাণীর মধ্যে পাখির প্রতি অনুরক্তির বিষয়টি উদ্দীপকের রুবা ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতিতে ফুটে উঠেছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক যখন দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য গিয়েছিলেন তখন পাখিদের মায়ায় পড়ে যান। একজোড়া বেনে-বৌ পাখি প্রত্যহ এসে বসত ইউক্যালিপটাস গাছের উঁচু ডালে। কিন্তু পরপর দুদিন পাখিরা না এলে লেখক ভাবনায় পড়ে যান। লেখকের এই মানসিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের রুবার মধ্যে। রুবার পাখিদের কলকাকলি খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন চড়ুই পাখির ডাকে তার ঘুম ভাঙে। একদিন চড়ুই পাখি না দেখলে তার মন খারাপ লাগে। তাই বলা যায়, রুবার মন খারাপের এ দিকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের পাখির জন্য মন খারাপের বিষয়টিকেই নির্দেশ করে। ঘ. ‘রুবার সৌন্দর্যচেতনা আর লেখকের সৌন্দর্যচেতনা একই সূত্রে গাঁথা।’ মন্তব্যটি যথার্থ। প্রকৃতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। প্রকৃতির প্রায় প্রতিটি অনুষঙ্গের মধ্যেই কিছু মানুষ পরম সৌন্দর্য খুঁজে পান। এই সৌন্দযানুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উদ্দীপকের রুবা ও লেখকের মধ্যে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুসন্ধানী চোখ শুধু প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়িয়েছে। তিনি দেখেছেন প্রকৃতির রূপ। কোন গাছে কোন পাখি থাকে। তারা কখন গান করে। তারা কীভাবে সময় কাটায়। গায়ের রং, অবস্থান, অঙ্গভঙ্গি সবকিছু মনোযোগ সহকারে দেখেছেন। উদ্দীপকের রুবা শহরের মেয়ে। গ্রামে এসেছে বেড়াতে। লেখকও শহর থেকে দেওঘরে গিয়েছেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। লেখক ও রুবার সৌন্দর্যচেতনা এক হলেও উদ্দেশ্য ভিন্নমুখী। র“বা গ্রামে এসেছে বেড়াতে। প্রকৃতি তার খুব ভালো লাগে। প্রকৃতির প্রত্যেকটি বস্তু তাকে টানে। ঘুরে ঘুরে গাছপালা দেখে। পাখিদের কলকাকলিতে সে উদ্বেল হয়ে ওঠে। প্রকৃতির মাঝে সে হারিয়ে যায়। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও রুবার সৌন্দর্য চেতনা ও লেখকের সৌন্দর্য চেতনা একই সূত্রে গাঁথা। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : দীর্ঘদিন রোগভোগের কারণে সিয়ামের স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে। ডাক্তারের নির্দেশে তখন সিয়ামকে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান এলাকায় পাঠানো হয়। কিছুদিন থাকার ব্যবস্থা করা হয় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। সেখানে বিচিত্র পাখির কলকাকলি, প্রকৃতির সবুজ পরিবেশ ও ভিন্ন আবহাওয়ায় সিয়াম বেশ সুস্থবোধ করে। ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য কোথায় গিয়েছিলেন। খ. ‘পাখি চালান দেয়াই তাদের ব্যবসা’ কোন প্রসঙ্গে এ কথাটি বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের সিয়ামের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কার সাদৃশ্য রয়েছে? ঘ. মানুষের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর। |
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। খ. পাখি শিকারিদের প্রসঙ্গে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে তিনি নানা জাতের পাখি দেখতে পান। এদের মধ্যে ছিল হলদে রঙের একজোড়া বেনে-বৌ পাখি। ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটাতে বসে তারা প্রত্যহ হাজিরা হেঁকে যেত। হঠাৎ দিন দুয়েক এ পাখি জোড়াকে আসতে না দেখে লেখকের মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তার মনে সন্দেহ জাগে, ব্যাধেরা হয়তো তাদের ধরে বিক্রি করে দিয়েছে। গ. উদ্দীপকের সিয়ামের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সাদৃশ্য রয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে দেওঘরে যান। সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ লেখককে মুগ্ধ করে। সে পরিবেশের সাথে তিনি একাত্ম হয়ে যান। বারান্দায় বসে পাখপাখালির সাথে তিনি স্নেহপূর্ণ ভাবাবেগ আদান-প্রদান করেন। উদ্দীপকের সিয়াম দীর্ঘদিন রোগভোগের কারণে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই ডাক্তারের নির্দেশে তাকে সুস্থ করে তোলার উদ্দেশ্যে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে পাঠানো হয়। কয়েক দিনের মধ্যে সেখানকার বিচিত্র পাখপাখালির প্রতি সিয়ামের মনে প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সিয়াম ও লেখকের মানসিকতার মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান। ঘ. মানুষের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম, যা উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের আবেগ-অনুভূতির উদয় হয় কখনোবা মনের মধ্যে জন্ম দেয় সুখের অনুভূতি আবার কখনো প্রকৃতির অনুষঙ্গেই মন বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে। মানুষের ওপর প্রকৃতির এই প্রভাবই উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে ফুটে উঠেছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পবির্তনের উদ্দেশ্যে দেওঘরে যান। সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। সেখানে লেখকের ঘুম ভাঙে দোয়েলের গানে। পাশের বাড়ির আমগাছে, পথের ধারে অশ্বত্থ গাছের মাথায় বসে বিভিন্ন ধরনের পাখি কলকাকলিতে মেতে ওঠে। পরিবেশের প্রতিটি অনুষঙ্গ লেখকের মনে মায়ার বন্ধন তৈরি করে। উদ্দীপকেও দেখা যায়, দীর্ঘদিন রোগভোগের পর সিয়ামের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। ডাক্তারের নির্দেশে তখন সিয়ামকে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানে পাঠানো হয়। সেখানকার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিচিত্র পাখির কলকাকলি, প্রকৃতির ছায়াঘেরা মনোমুগ্ধকর আবহাওয়ায় সিয়াম বেশ সুস্থ বোধ করে। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, মানুষের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : তন্ময় একটি কুকুর পোষে, কিন্তু বাড়ির বুয়ার জন্য সময়মতো তাকে খাবার দিতে পারে না তার মাকেও নানা কাজে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। তন্ময় যখন কাজের ব্যস্ততায় বাড়ির বাইরে থাকে বুয়া তখন লাঠি দিয়ে মেরে কুকুরটাকে গেটের বাইরে বের করে দেয়। কুকুরের জন্য বরাদ্দ খাবারটুকু গোপনে পাঠিয়ে দেয় তার নিজের লোকদের কাছে। বিষয়টি কুকুরটি বোঝে কিন্তু বোঝাতে পারে না তার প্রভু তন্ময়কে। ছুটির দিনে কুকুরটিকে নিয়েই বেড়াতে গিয়ে তন্ময় তাকে কিছু কিনে খেতে দেয়, এতেই সে খুশি। তন্ময় কাজে যাওয়ার সময় কুকুরটি তাকে কিছুটা পথ এগিয়ে দেয়। ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথি কে? খ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি পাঠের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের বুয়া চরিত্রটিতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাবের নির্দেশ করে” মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।” |
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথি একটি বয়স্ক কুকুর। খ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্প পাঠের উদ্দেশ্য হলো পাঠক যেন মানবেতর প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা পরিহার করে সহানুভূতিতে সিক্ত হয়। গল্পটিতে লেখক তাঁর লেখায় মানবেতর একটি প্রাণীর সঙ্গে একটি অসুস্থ মানুষের কয়েক দিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে মমত্বের সম্পর্ককে ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখক দেখিয়েছেন মানুষে মানুষে যেমন স্নেহপ্রীতির সম্পর্ক অন্য জীবের সঙ্গে মানুষের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। গ. উদ্দীপকের বুয়া চরিত্রটিতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বাগানের মালীর বউ অর্থাৎ মালিনী চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষ ও অবলা জীব যখন স্নেহপ্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন সেই সম্পর্ক স্থায়ী রূপ পেতে অনেকে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে বাধা দেয়া চরিত্রটি নির্মম হয়েও উঠতে পারে। এমন নির্মমতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উদ্দীপকের বুয়া এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালিনী। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দেখা যায়, লেখকের সাথে আসা কুকুরটিকে লেখক অতিথির মর্যাদা দেন এবং বামুন ঠাকুরকে খাবার দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু কুকুরটির ভাগ্যে খাদ্য জোটেনি। একটু ভিন্ন আঙ্গিকে হলেও এই ঘটনারই প্রতিফলন উদ্দীপকে লক্ষণীয়। উদ্দীপকে বর্ণিত তন্ময় একটি কুকুর পোষে। কিন্তু সময়মতো তাকে খাবার দিতে পারে না বাড়ির বুয়ার জন্য। এদিক থেকে উদ্দীপকের বুয়া চরিত্রটিতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালী-বৌ চরিত্রের প্রতিফলন ঘটে। ঘ. “উদ্দীপকটি অতিথির স্মৃতি গল্পের মূলভাব ধারণ করে মন্তব্যটি যথার্থ।” ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক মূলত দেখিয়েছেন, মানুষে-মানুষে যেমন সেহপ্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে, অন্য জীবের সঙ্গেও তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু সেই সম্পর্ক নানা প্রতিকূলতার কারণে স্থায়ী রূপ পায় না। আবার এই সম্পর্কের সূত্র ধরে একটি মানুষ ওই জীবের প্রতি যখন মমতায় সিক্ত হয়, তখন অন্য মানুষের আচরণ হয়ে উঠতে পারে নির্মম। উদ্দীপকের তন্ময় ও কুকুরটির সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের জীবের সাথে মানুষের সম্পর্কের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। আর কুকুরটির প্রতি চাকরানির ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তুচ্ছ জীব ও মানুষের মধ্যে সম্পর্কের বাধার নির্মমতার দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাবে যে বিষয় প্রকাশ পায় সেই বিষয়গুলোরই প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্দীপকে। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাবের ধারক। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বরিশাল শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আরিফুর রহমানের দুই ছেলেকে তিনি অতি যত্নে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। ছোট ছেলে সাদ গরিব মানুষকে অকাতরে সাহায্য করে। কেউ কোনো কষ্টে পড়লে তার হৃদয় কেঁদে ওঠে। জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসার কারণে সে ঘরে বিড়াল, কুকুর, পাখি ইত্যাদি পোষে। তার পালিত একটি বিড়াল বড় ভাই আকাশের ঘরে গেলে আকাশ খুব বিরক্ত হয়। সে লাঠিপেটা করে এক পর্যায়ে বিড়ালটিকে মেরে ফেলে। ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথক কার আদেশে দেওঘরে গিয়েছিলেন? খ. অতিথি আজ ফিরে গিয়ে দেখবে বাড়ির লোহার গেট বন্ধ ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের আকাশের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের গল্প কথকের বৈসাদৃশ্য নির্ণয় কর। ঘ. উদ্দীপকের সাদের মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রতিফলিত মানব মনের মহানুভবতার পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। |
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথক চিকিৎসকের আদেশে দেওঘরে গিয়েছিলেন। খ. দেওঘরের সেই বাড়িতে অতিথি কুকুরটা আজ আর ঢুকতে পারবে না অনুমান করে লেখক এ মন্তব্যটি করেছেন। লেখক দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য এসে একটা কুকুরের প্রতি গভীর মানবেতর ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েন। লেখক কুকুরটাকে আদর করে বাড়ির ভেতরে নেন। কিন্তু বাড়ির মালিনী, চাকরদের কেউ কুকুরটাকে বাড়িতে ঢুকতে দিত না। লেখকের মুখের ওপর তারা কুকুরটার আসা বন্ধ করতে পারেনি। তবে লেখকের অনুমান আজ তার অনুপস্থিতিতে অতিতি বন্ধু কুকুরটার জন্য বাড়ির দরজা বন্ধ হবে। গ. মানবেতর প্রাণীর প্রতি আচরণের দিক দিয়ে উদ্দীপকের আকাশের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথকের বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। আমাদের আশপাশে বিভিন্ন ধরনের মানবেতর প্রাণী রয়েছে। কখনো কোনো কোনো মানুষের সাথে এসব প্রাণীর মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আবার কেউ কেউ এসব প্রাণীর প্রতি নির্মম আচরণ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এই প্রাণীর প্রতি আচরণগত ভিন্নতার বিষয়টিই গল্পের কথক ও উদ্দীপকের আকাশের মধ্যে ফুটে উঠেছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথক দেওঘরে বেড়াতে বের হয়ে ফেরার সময় একটি কুকুর তার সঙ্গী হয়। কুকুরটিকে তিনি বাড়ি এনে অতিথির মর্যাদা দিয়ে বাড়ির চাকরকে তার খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বললেন। একপর্যায়ে কথকের সাথে কুকুরটির আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। অপরপক্ষে, উদ্দীপকের আকাশের ঘরে তার ছোট ভাইয়ের পোষা একটি বিড়াল ঢুকলে সে খুব বিরক্ত হয়। লাটিপেটা করে একপর্যায়ে সে বিড়ালটিকে মেরে ফেলে। এতে মানবেতর প্রাণীর প্রতি আকাশের নিষ্ঠুরতার প্রকাশ ঘটে। তাই বলা যায়, প্রাণীর প্রতি আচরণের দিক দিয়ে আকাশ ও গল্পকথকের বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। ঘ. “উদ্দীপকের সাদের মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রতিফলিত মানব মনের মহানুভবতার পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে” মন্তব্যটি যথার্থ। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে এক অসুস্থ ব্যক্তি দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য এলে সেখানকার মানুষ ও পশুপাখির সাথে ভালোবাসার সুগভীর বন্ধনে জড়িয়ে যান। সকালে ঘুম ভাঙানো দোয়েল পাখি না এলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি তার সহানুভূতির প্রকাশ লক্ষণীয়। এছাড়া পথের কুকুরকে অতিথি করে বাড়িতে নিয়ে আসার মধ্যদিয়ে তার জীবপ্রেম মানসিকতার পরিচয় পূর্ণতা লাভ করেছে। মানবেতর প্রাণী ও মানুষের মধ্যে এ সম্পর্কের আড়ালে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে নিঃস্বার্থ মানবমনের মহানুভবতাকেই তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দীপকের সাদ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও ধনাঢ্য বাবার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও গরিব মানুষকে অকাতরে সাহায্য করে। অন্যের কষ্টে তার হৃদয় কেঁদে ওঠে। জীবপ্রেমের কারণে সে নিজের ঘরে বিড়াল, কুকুর, পাখি ইত্যাদি পালন করে। তার এ কর্মকাণ্ডে মধ্য দিয়ে মানবমনের মহানুভবতারই প্রকাশ ঘটেছে। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বিল্লি আশার প্রিয় পোষা বিড়াল। সকালে উঠেই সে বিল্লির খোঁজ করে, স্কুল থেকে ফিরে বিল্লিকে খাওয়ায়, বিকালে বিল্লিকে নিয়ে খেলা করে বাগানে। দিন শেষে আশা যখন পড়তে বসে, বিল্লি তখন তার পায়ের কাছে বসে থাকে। ক. বেনে- বৌ পাখি কোন গাছে বসে হাজিরা হেঁকে যেত? খ. ‘বকশিশ পেল সবাই, পেল না কেবল অতিথি’- কারণ লেখ। গ. আশার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত আশার অনুভূতি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সমধর্মী হলেও পুরোপুরি এক নয়। মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর। |
ক. বেনে-বৌ পাখি প্রাচীরের ধারের ইউক্যালিপটাস গাছের উঁচু ডালে বসে হাজিরা
হেঁকে যেত। খ. অতিথির সঙ্গে লেখকের শুধু মমত্ব বা স্নেহপ্রীতির সম্পর্ক থাকায় সে কোনো বকশিশ অর্থাৎ পারিতোষিক পেল না। লেখক স্বাস্থ্যগত কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে দেওঘরে যাওয়ার পর একটা কুকুরের সঙ্গে তার মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেওঘর ছেড়ে আসার দিন মমত্বের টানেই সে রেলস্টেশন পর্যন্ত আসে। লেখককে ট্রেনে তুলে দেওয়ার জন্য মালপত্র বহন করে যারা এসেছিল, তারা সবাই পারিতোষিক পেয়েছিল। কিন্তু অতিথি কুকুরটির সঙ্গে লেখকের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে কেবল স্নেহপ্রীতির সম্পর্ক ছিল বলে সে কোনো বকশিশ বা পারিতোষিক পায়নি। কারণ সবাই এসেছিল অর্থের বিনিময়ে আর অতিথি এসেছে মমত্বের টানে। গ. আশার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্বের সম্পর্কের দিকটি ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকের আশার মধ্যে মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। বিল্লি নামে তার একটি পোষা বিড়াল আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে বিল্লির খোঁজখবর নেয় এবং স্কুল থেকে ফিরে এসেই তাকে খাওয়ায়। বিকালে আশা বিল্লিকে সঙ্গে নিয়ে বাগানে যায় এবং তার সাথে খেলা করে। আশা যখন রাতে পড়তে বসে, তখন বিল্লিও তার পায়ের কাছে বসে থাকে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অসুস্থ লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে যান। সেখানে একটি কুকুরের সাথে লেখকের পরিচয় হয় এবং কয়েক দিনের পরিচয়ে মানবেতর এই প্রাণীটির সঙ্গে তাঁর মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখক তাকে অতিথির মর্যাদায় আদর-আপ্যায়ন করেন। দেওঘর থেকে ফিরে আসার সময়ও তিনি কুকুরটিকে ভুলতে পারেননি। আশার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের এই মমত্বের দিকটিই ফুটে উঠেছে। ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত আশার অনুভূতি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সমধর্মী হলেও পুরোপুরি এক নয়”- প্রেক্ষাপটের দিক থেকে মন্তব্যটি যথার্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক একবার দেওঘরে যান এবং সেখানে একটি মানবেতর প্রাণী অর্থাৎ কুকুরের সঙ্গে তার মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই সম্পর্ক স্থায়ী রূপ পেতে বাধাগ্রস্ত হয় নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে। লেখক কুকুরটিকে অতিথির মর্যাদায় আদর-আপ্যায়ন করতে চেয়েও সেখানকার মালির বউয়ের আপত্তির কারণে পারেন না। অতিথিকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে লেখকের বাড়তি খাবারের অংশীদার হয় বাগানের মালির বউ মালিনী। কিন্তু লেখক দেওঘর ছেড়ে আসার সময়ও কুকুরটিকে ভুলতে পারেননি এবং কুকুরটিও তাকে রেলস্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিল। উদ্দীপকে একটা পোষা বিড়ালের সঙ্গে আশার সম্পর্কের চিত্র ফুটে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আশা তার প্রিয় পোষা বিড়াল বিল্লির খোঁজখবর নেয় এবং স্কুল থেকে ফিরে এসেই সে বিল্লিকে আদর করে খাওয়ায়। বিকাল বেলায় আশা বিল্লিকে নিয়ে বাগানে খেলার মাধ্যমে আনন্দময় সময় কাটায়। রাতে পড়ার সময়ও বিল্লি বসে থাকে আশার পায়ের কাছে। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : নিলয় গ্রীষ্মের ছুটিতে ফুফুর বাড়ি বেড়াতে গেল। প্রথম দিন থেকেই ফুফুদের পোষা ময়নার সঙ্গে তার ভীষণ ভাব হয়ে গেল। ময়না পাখিটি সুন্দর করে কথা বলতে পারে। নিলয়ের সঙ্গে পাখিটির বন্ধুত্ব তৈরি হলো। কিন্তু ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় নিলয় একদিন বাড়ি চলে এলো। নিলয়ের যাওয়ার বেলা পাখিটি করুণ দৃষ্টিতে পথের দিকে চেয়ে রইল। ক. ‘খাওয়া হয়েছে তো রে? কী খেলি আজ’- উক্তিটি কার? খ. ‘খাওয়া সম্বন্ধে নির্বিকারচিত্ত’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. উদ্দীপকের নিলয় চরিত্রের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. মানবেতর পশুপাখির সঙ্গে কোন ধরনের আচরণ করা উচিত বলে তুমি মনে কর? উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের আলোকে বুঝিয়ে লেখ। |
----- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : অনাথিনী রতনকে ছেড়ে পোস্টমাস্টার চলে গেলেন। এতদিন পোস্টমাস্টারের তত্ত্বাবধানে রতনের দিনগুলো ভালোই কাটছিল। কিন্তু পোস্টমাস্টারকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। সেখানে রতনকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সমাজের ভয় আছে। নৌকা ছেড়ে দিয়েছে। পোস্টমাস্টারের নৌকার পালে বাতাস লেগেছে। কিন্তু তার মন পড়ে আছে গ্রামের মেয়ে রতনের কাছে। এখন অভাগী রতন দেখবে তার মনিবের ঘরটি ফাঁকা পড়ে আছে। ক. দেওঘরে এসে লেখক কোথায় থাকতেন? খ. লেখকের শরীর না সারলেও দেওঘর থেকে বিদায় নিতে হলো কেন? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাবকে ধারণ করে কি? মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৬ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ১. জীবে প্রেম করে যেই জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর। ২. আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। ক. ‘পথের দাবি’ উপন্যাসটি কে রচনা করেছেন? খ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের গল্পকারের সকাল কাটে কীভাবে? গ. উদ্দীপকের প্রথম কবিতাংশের আদর্শ কীভাবে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মাঝে প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় কবিতাংশটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুরকেই ধারণ করে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। |
---------- |
তথ্যসূত্র: |
---|
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
বাংলাদেশ, ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৮তম , ২০১৫। |