কোথা থেকে এসেছে আমাদের বাংলা ভাষা? ভাষ্য কি জন্ম নেয় মানুষের মতো? বা যেমন
বীজ থেকে গাছ জন্মে তেমনভাবে জন্ম নেয় ভাষা? না, ভাষা মানুষ বা তরুর মতো জন্ম
নেয় না। বাংলা ভাষাও মানুষ বা তরুর মতো জন্ম নেয়নি, কোনো কল্পিত স্বর্গ থেকেও
আসেনি। এখন আমরা যে বাংলা ভাষা বলি, এক হাজার বছর আগে তা ঠিক এমন ছিল না। এক
হাজার বছর পরও ঠিক এমন থাকবে না। ভাষার ধর্মই বদলে যাওয়া। বাংলা ভাষার আগেও
এদেশে ভাষা ছিল। সে ভাষায় এদেশের মানুষ কথা বলত, গান গাইত, কবিতা বানাত।
মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি। রূপ বদলে যায় শব্দের, বদল ঘটে অর্থের।
অনেকদিন কেটে গেলে মনে হয় ভাষাটি একটি নতুন ভাষা হয়ে উঠেছে। আর সে ভাষার বদল
ঘটেই জন্ম হয়েছে বাংলা ভাষার।
আজ থেকে একশ বছর আগেও কারও কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না বাংলা ভাষার ইতিহাস
সম্পর্কে। কেউ জানত না কত বয়স এ ভাষার। সংস্কৃত ভাষার অনেক শব্দ ব্যবহৃত হয়
বাংলা ভাষায়। এক দল লোক মনে করতেন ওই সংস্কৃত ভাষাই বাংলার জননী। বাংলা
সংস্কৃতের মেয়ে। তবে দুষ্টু মেয়ে, যে মায়ের কথা মতো চলেনি। না চলে চলে অন্য রকম
হয়ে গেছে। তবে উনিশ শতকেই আরেক দল লোক ছিলেন, যাঁরা মনে করতেন বাংলার সাথে
সংস্কৃতের সম্পর্ক বেশ দূরের। তাঁদের মতে, বাংলা ঠিক সংস্কৃতের কন্যা নয়।
অর্থাৎ সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি ঘটেনি বাংলার। ঘটেছে অন্য কোনো ভাষা
থেকে। সংস্কৃত ছিল সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষের লেখার ভাষা। তা কথ্য ছিল না।
কথা বলত মানুষেরা নানা রকম 'প্রাকৃত' ভাষায়। প্রাকৃত ভাষা হচ্ছে সাধারণ মানুষের
দৈনন্দিন জীবনের কথ্য ভাষা। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, সংস্কৃত থেকে নয়, প্রাকৃত
ভাষা থেকেই উল্ফ ঘটেছে বাংলা ভাষার।
কিন্তু নানা রকম প্রাকৃত ছিল ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে। তাহলে কোন প্রাকৃত
থেকে উদ্ভব ঘটেছিল বাংলার? এ সম্পর্কে প্রথম স্পষ্ট মত প্রকাশ করেন জর্জ
আব্রাহাম গ্রিয়ারসন। বহু প্রাকৃতের একটির নাম মাগধী প্রাকৃত। তাঁর মতে মাগধী
প্রাকৃতের কোনো পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয় বাংলা ভাষা। পরে বাংলা ভাষার
উদ্ভব ও বিকাশের বিস্তৃত ইতিহাস রচনা করেন ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং
আমাদের চোখে স্পষ্ট ধরা দেয় বাংলা ভাষার ইতিহাস। যে ইতিহাস বলার জন্য আমাদের
একটু পিছিয়ে যেতে হবে। পিছিয়ে যেতে হবে অন্তত কয়েক হাজার বছর। ইউরোপ ও এশিয়ার
বেশ কিছু ভাষার ধ্বনিতে, শব্দে লক্ষ করা যায় গভীর মিল। এ ভাষাগুলো যে সব অঞ্চলে
ছিল ও এখন আছে, তার সবচেয়ে পশ্চিমে ইউরোপ আর সবচেয়ে পূর্বে ভারত ও বাংলাদেশ।
ভাষাতাত্ত্বিকেরা এ ভাষাগুলোকে একটি ভাষাবংশের সদস্য বলে মনে করেন। ওই
ভাষাবংশটির নাম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ বা ভারতী-ইউরোপীয় ভাষাবংশ। ইন্দো-ইউরোপীয়
ভাষাবংশে আছে অনেকগুলো ভাষা-শাখা, যার একটি হচ্ছে ভারতীয় আর্যভাষা। ভারতীয়
আর্যভাষার প্রাচীন ভাষাগুলোকে বলা হয় প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা। প্রাচীন ভারতীয়
আর্যভাষার প্রাচীন রূপ পাওয়া যায় ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলোতে। এগুলো সম্ভবত লিখিত
হয়েছিল যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও এক হাজার বছর আগে, অর্থাৎ ১০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। বেদের শ্লোকগুলো পবিত্র বিবেচনা করে তার অনুসারীরা সেগুলো
মুখস্থ করে রাখত। শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে যেতে থাকে। মানুষ দৈনন্দিন জীবনে যে
ভাষা ব্যবহার করত বদলে যেতে থাকে সে ভাষা। এক সময় সাধারণ মানুষের কাছে
দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে বেদের ভাষা বা বৈদিক ভাষা। তখন ব্যাকরণবিদরা নানা নিয়ম
বিধিবদ্ধ করে একটি মানসম্পন্ন ভাষা সৃষ্টি করেন। এই ভাষার নাম 'সংস্কৃত',
অর্থাৎ বিধিবদ্ধ, পরিশীলিত, শুদ্ধ ভাষা। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের আগেই এ ভাষা
বিধিবদ্ধ হয়েছিল।
যিশুর জন্মের আগেই পাওয়া যায় ভারতীয় আর্য-ভাষার তিনটি স্তর। প্রথম স্তরটির নাম
বৈদিক বা বৈদিক সংস্কৃত। খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দ এ
ভাষার কাল। তারপর পাওয়া যায় সংস্কৃত। খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দের দিকে এটি সম্বত
বিধিবদ্ধ হতে থাকে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে ব্যাকরণবিদ পাণিনির হাতেই
এটি চূড়ান্তভাবে বিধিবদ্ধ হয়। বৈদিক ও সংস্কৃতকে বলা হয় প্রাচীন ভারতীয়
আর্যভাষা। প্রাকৃত ভাষাগুলোকে বলা হয় মধ্যভারতীয় আর্যভাষা। মোটামুটিভাবে
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ ভাষাগুলো কথ্য ও লিখিত
ভাষারূপে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত থাকে। এ প্রাকৃত ভাষাগুলোর শেষ স্তরের
নাম অপভ্রংশ অর্থাৎ যা খুব বিকৃত হয়ে গেছে। বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকেই উৎপন্ন হয়েছে
নানান আধুনিক ভারতীয় আর্যভাষা-বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, পাঞ্জাবি
প্রভৃতি ভাষা।
ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে উদ্ধৃত
হয়েছে বাংলা; আর আসামি ও ওড়িয়া ভাষা। তাই বাংলার সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আসামি
ও ওড়িয়ার। আর কয়েকটি ভাষার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা রয়েছে বাংলার সঙ্গে; কেননা সেগুলোও
জন্মেছিল মাগধী অপভ্রংশের অন্য দুটি শাখা থেকে। ওই ভাষাগুলো হচ্ছে মৈথিলি,
মাগবি, ভোজপুরিয়া। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে
অবশ্য একটু ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি একটি প্রাকৃতের নাম বলেন গৌড়ী প্রাকৃত।
তিনি মনে করেন, গৌড়ী প্রাকৃতেরই পরিণত অবস্থা গৌড়ী অপভ্রংশ থেকে উৎপত্তি ঘটে
বাংলা ভাষার।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের উৎস নির্দেশ :
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধটি হুমায়ুন আজাদের ‘কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী’ গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের শব্দার্থ ও টীকা :
➠ সংস্কৃত ভাষা- সংস্কৃত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের সদস্য। হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের পবিত্র দেবভাষাও এটি। খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বৈদিক বা বৈদিক সংস্কৃত ভাষার অস্তিত্ব ছিল, যা সংস্কৃত ভাষার প্রাচীনতম রূপ। ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলো এই ভাষায় রচিত হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দের দিকে এই ভাষা বিধিবদ্ধ হতে শুরু করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে ব্যাকরণবিদ পাণিনির হাতে বিধিবদ্ধ হয়ে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। সংস্কৃত ছিল উঁচুশ্রেণির মানুষের লেখার ভাষা। তা কথ্য ছিল না। বাংলাসহ ভারত ও নেপালের অধিকাংশ আধুনিক ভাষাই এই ভাষা দ্বারা প্রভাবিত।
➠ ভাষাতাত্ত্বিক- ভাষাবিজ্ঞানী, ভাষা নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন।
➠ শ্লোক- সংস্কৃত ভাষার রচিত দুই পঙ্ক্তির কবিতা।
➠ দুর্বোধ্য- যা বোঝা কঠিন, সহজে বোঝা যায় না এমন।
➠ বিধিবদ্ধ- নিয়ম দ্বারা শাসিত, নিয়মের অধীন।
➠ ঘনিষ্ঠ- নিকট, নিবিড়, খুব কাছের।
➠ উদ্ধৃত- উৎপন্ন, জাত।
➠ উৎপত্তি- সূচনা, শুরু, জন্ম।
➠ উদ্ভব- সূচনা, জন্ম, অভ্যুদয়, উৎপত্তি।
➠ মাগধী প্রাকৃত- মগধ অঞ্চলে প্রচলিত সেকালের মানুষের মুখের ভাষা।
➠ গৌড়ী প্রাকৃত- গৌড় অঞ্চলে প্রচলিত সেকালের মানুষের মুখের ভাষা।
➠ অপভ্রংশ- মুখের ভাষার পরিবর্তিত রূপ, প্রাকৃত ভাষার শেষ স্তর।
➠ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়- একজন শিক্ষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পেশাজীবনে বিদ্যাসাগর কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ‘বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ’ (Origins and Development of Bengali Language) তাঁর অমর গবেষণাকর্ম। তাঁর মতে, বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে। বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনের মতের সমর্থক ছিলেন।
➠ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্- বাংলাদেশের একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, বহুভাষাবিদ, অধ্যাপক, সাহিত্যিক ও দার্শনিক। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এখানে শিক্ষাদান কালে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে মৌলিক গবেষণা করেন এবং ১৯২৫ সালে প্রমাণ করেন যে গৌড়ী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের কথা, বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত, আঞ্চলিক ভাষার অভিধান তাঁর অনন্যসাধারণ কীর্তি।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের পাঠের উদ্দেশ্য :
বাংলা ভাষার জন্মকথা রচনাটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষার জন্মকথা জানতে পারবে। বাংলা ভাষা যে সাধারণ মানুষের কথ্যভাষা সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করবে এবং মাতৃভাষা বাংলার প্রতি তাদের মমত্ববোধ জাগবে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব :
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে লেখক বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ভাষার ধর্ম বদলে যাওয়া। মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি। শব্দেরও বদল ঘটে এবং সে সঙ্গে শব্দের অর্থেরও। এক সময় ধারণা করা হতো বাংলা এসেছে সংস্কৃত থেকে। কিন্তু সংস্কৃত ছিল লেখার ভাষা। আর প্রাকৃত ছিল মুখের ভাষা। বিশ শতকের গোড়ার দিকে মানুষের ধারণা হয়, প্রাকৃত ভাষা থেকে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলোর জন্ম হয়েছে।
জর্জ আব্রাহাম প্রিয়ারসন প্রথম ভারতীয় উপভাষা নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা করেন এবং দেখান যে, মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন, মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। তবে মুহম্মাদ শহীদুল্লাহ মনে করেন, গৌড়ী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের লেখক পরিচিতি :
হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার রাড়িখাল গ্রামে। একজন কৃতী ছাত্র হিসেবে তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন শেষ করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন গবেষক হিসেবে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন। তাঁর গবেষণা গ্রন্থ হচ্ছে ‘শামসুর রাহমান নিঃসঙ্গ শেরপা’, ‘বাক্যতত্ত্ব’ ইত্যাদি। কিশোর পাঠকদের জন্য লেখা দুটি গ্রন্থ ‘লালনীল দীপাবলি’, ‘কতো নদী সরোবর’। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ ও 'জ্বলো চিতাবাঘ' উল্লেখযোগ্য। তিনি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
কর্ম-অনুশীলন :
ক. বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন কর (শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে হুমায়ুন আজাদ রচিত 'কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী' শীর্ষক গ্রন্থটি সংগ্রহ করতে পারলে ভালো হয়।)
খ. তোমার এলাকার আঞ্চলিক শব্দের একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণি শিক্ষকের নিকট জমা দাও (একক কাজ)।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন
-এর মধ্যে!
যা
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষাকে কার মেয়ে বলা
হয়েছে?
উত্তর : ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃত ভাষার মেয়ে
বলা হয়েছে।
প্রশ্ন- ২: উনিশ শতকের একদল লোকের মতে, বাংলা ভাষার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার
সম্পর্ক কেমন?
উত্তর : উনিশ শতকের একদল লোকের মতে, বাংলা ভাষার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার
সম্পর্ক বেশ দূরের।
প্রশ্ন- ৩: সংস্কৃত কাদের লেখার ভাষা ছিল?
উত্তর : সংস্কৃত ছিল সমাজের উঁচুশ্রেণির মানুষের লেখার ভাষা।
প্রশ্ন- ৪: প্রাকৃত ভাষা কী?
উত্তর : প্রাকৃত ভাষা হচ্ছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথ্য ভাষা।
প্রশ্ন- ৫: মাগধী প্রাকৃতের কোন অঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয় বাংলা
ভাষা?
উত্তর : মাগধী প্রাকৃতের পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয় বাংলা ভাষা।
প্রশ্ন- ৬: বাংলা ভাষার ইতিহাস আলোচনার জন্য আমাদের কত বছর পিছিয়ে যেতে
হবে?
উত্তর : বাংলা ভাষার ইতিহাস আলোচনার জন্য আমাদের অন্তত কয়েক হাজার বছর
পিছিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন- ৭: ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের একটি শাখার নাম লেখ।
উত্তর : ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের একটি শাখার নাম হলো ভারতীয় আর্যভাষা।
প্রশ্ন- ৮: ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি স্তর কখন পাওয়া যায়?
উত্তর : যিশুখ্রিষ্টের জন্মের আগেই ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি স্তর পাওয়া
যায়।
প্রশ্ন- ৯: ‘প্রাকৃত’ ভাষাগুলোকে কী বলা হয়?
উত্তর : প্রাকৃত ভাষাগুলোকে মধ্যভারতীয় আর্যভাষা বলা হয়।
প্রশ্ন- ১০: ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষার
উৎপত্তি?
উত্তর : ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, গৌড় অপভ্রংশ থেকেই বাংলা ভাষার
উৎপত্তি হয়েছে।
প্রশ্ন- ১১: মাগধী প্রাকৃতের কোনো পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয় বাংলা
ভাষা- মতটি কার।
উত্তর : উত্তর মাগধী প্রাকৃতের কোনো পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয় বাংলা
ভাষা- মতটি জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনের।
প্রশ্ন- ১২: প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার প্রাচীন রূপগুলো কোথায় পাওয়া
যায়?
উত্তর : প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার প্রাচীন রূপগুলো ঋগে¦দের মন্ত্রগুলোতে
পাওয়া যায়।
প্রশ্ন- ১৩: ‘ভাষার’ ধর্ম কী?
উত্তর : ভাষার ধর্ম বদলে যাওয়া।
প্রশ্ন- ১৪: পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বাংলা ভাষার- মতটি
কার?
উত্তর : পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বাংলা ভাষার- এ মতটি ড.
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের।
প্রশ্ন- ১৫: ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’- প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে নেয়া
হয়েছে?
উত্তর : ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধটি ‘কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার
জীবনী’ গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: ‘মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি’- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উচ্চারণগত পার্থক্যের জন্যই মানুষের মুখে মুখে ভাষার ধ্বনি বদলে
যায়।
অঞ্চলভিত্তিক ভাষায় ধ্বনিতে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। একেক অঞ্চলে এক একটি
শব্দকে একেকভাবে উচ্চারণ করা হয়। এর কারণ মানুষের উচ্চারণগত পার্থক্য। এ
পার্থক্যের জন্যই মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি।
প্রশ্ন- ২: বাংলা ভাষার জন্ম ইতিহাস ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাংলা ভাষার বয়স সম্পর্কে কেউ নির্দিষ্ট কিছু জানে না।
কারণ বাংলা ভাষা নির্দিষ্ট কোন ভাষা থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ
শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বাংলা ভাষার ইতিহাস খুবই অস্পষ্ট। একশ বছর
পূর্বেও বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে কারও কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তবে
একদল লোকের মতে, সংস্কৃত ভাষাই বাংলা ভাষার জননী।
প্রশ্ন- ৩: ‘মাগধী প্রাকৃতের কোনো পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয়
বাংলা ভাষা’- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন এ মত প্রকাশ করেন। অনেকের মতে, সংস্কৃত
সাধারণ লোকের কথ্যভাষা ছিল না। তখন সাধারণ মানুষ কথা বলত নানা রকম
প্রাকৃত ভাষায়। প্রাকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথ্যভাষা।
জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন মনে করেন বহু প্রাকৃতের একটি হলো মাগধী প্রাকৃত।
এ মাগধী প্রাকৃতের কোনো পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয় বাংলা ভাষা।
প্রশ্ন- ৪: ‘বাংলা সংস্কৃতের দুষ্ট মেয়ে।’- কথাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘বাংলা সংস্কৃতের দুষ্ট মেয়ে’- কথাটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে-
বাংলা ভাষার জন্ম সংস্কৃত ভাষা থেকে হলেও বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষা থেকে
অনেক দূরে সরে গেছে।
সংস্কৃত ভাষার অনেক শব্দই বাংলা ভাষায় আছে। তবে এর সঙ্গে মিশেছে আরও অনেক
ভাষার শব্দ। আরবি, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, ফারসি, জাপানি, ফরাসি,
গুজরাটি, জার্মানি প্রভৃতি ভাষার শব্দও আছে বাংলা ভাষায়। তবে সংস্কৃত
ভাষার শব্দ বিদেশি ভাষার শব্দের চেয়ে তুলনামূলক বেশি আছে বাংলা ভাষায়।
প্রশ্ন- ৫: ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতাবলম্বনে কোন কোন ভাষার
সঙ্গে বাংলা ভাষার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে?
উত্তর : ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলা ভাষার সঙ্গে খুব
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে আসামি ও ওড়িয়া ভাষার।
কারণ পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকেই উদ্ভূত হয়েছে বাংলা ভাষার। অন্য কয়েকটি
ভাষার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বাংলা ভাষার, কারণ সেগুলোর উৎপত্তি হয়েছে
মাধী অপভ্রংশের অন্য দুটি থেকে। ভাষাগুলো হলো : মৈথিলি, মগহি ও
ভোজপুরিয়া।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পারমিতা অষ্টম শ্রেণির
ছাত্রী। একদিন বাংলা ব্যাকরণে ভাষার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পড়ার সময় দুটো
বৈশিষ্ট্যের দিকে ওর নজর আটকে গেল। বৈশিষ্ট্য দুটি হলো (ক) ভাষা যত কঠিন
শব্দ দিয়েই শুরু হোক না কেন, ক্রমান্বয়ে ব্যবহারের ফলে তা সহজ ও সরল হয়ে
ওঠে। যেমন চক্র > চক্ক > চাকা, চর্মকার > চম্মআর > চামার, হস্ত > হত্থ >
হাত ইত্যাদি। এবং একসময় এরকম সরলীকরণ হতে হতে একটি নতুন ভাষারই উদ্ভব হয়।
(খ) কালের পরিক্রমায় একটি ভাষা স্থানিক ও কালিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ
করে বহুরূপী হয়ে ওঠে। যেমন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে পৃথিবীতে
বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো ভাষা ছড়িয়ে পড়েছে। পারমিতা ভাবতে
থাকে।
ক. ‘সংস্কৃত’ শব্দের অর্থ কী?
খ. একদল লোক বাংলাকে ‘সংস্কৃতের মেয়ে’ মনে করত কেন?
গ. অনুচ্ছেদের (ক)নং বৈশিষ্ট্যটির মধ্য দিয়ে ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’
প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে?
ঘ. পারমিতার পঠিত (খ)নং বৈশিষ্ট্যটি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের
আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ক. সংস্কৃত শব্দের অর্থ বিধিবদ্ধ, পরিশীলিত এবং শুদ্ধ।
খ. সংস্কৃত ভাষার প্রচুর শব্দ সরাসরি বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হওয়ার কারণেই
একদল লোক বাংলাকে ‘সংস্কৃতের মেয়ে’ মনে করতেন।
আজ থেকে এক শ বছর আগেও কারো কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না বাংলা ভাষার ইতিহাস
সম্পর্কে। ফলে এ ভাষা জন্মের ইতিহাস নিয়ে ভাষাবিদদের মধ্যে নানারকম ধারণা
প্রচলিত ছিল। তবে এক দল লোক মনে করতেন ওই সংস্কৃত ভাষাই বাংলার জননী।
বাংলা সংস্কৃতের মেয়ে কারণ সংস্কৃত ভাষার অনেক শব্দ ব্যবহৃত হয় বাংলা
ভাষায়। সে কারণে অনেকে ভুলবশত বাংলাকে ‘সংস্কৃতের মেয়ে’ মনে করতেন।
গ. অনুচ্ছেদের ক. নং বৈশিষ্ট্যটির মধ্য দিয়ে ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’
প্রবন্ধের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো ভাষার ধর্মই বদলে যাওয়া এবং
মানুষের মুখে মুখে ব্যবহারের ফলে ভাষার ধ্বনি ও শব্দের রূপ বদলে যায়।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা
হয়েছে। ভাষার ধর্মই হচ্ছে বদলে যাওয়া, মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার
ধ্বনি, ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের পাশাপাশি শব্দের অর্থও বদলে যায়। একসময় মনে
করা হতো বাংলা এসেছে সংস্কৃত থেকে, সংস্কৃত ছিল উঁচুশ্রেণির মানুষের
লেখার ভাষা। সাধারণ মানুষ কথা বলত প্রাকৃত ভাষায়, আর প্রাকৃত অপভ্রংশের
মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার জন্ম। অপভ্রংশ হচ্ছে প্রাকৃত ভাষাগুলোর শেষের
স্তর, যা খুব বিকৃত হয়ে গেছে।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, পারমিতা বাংলা ব্যাকরণের ভাষার বৈশিষ্ট্য পড়ার সময়
লক্ষ করে যে, বাংলা ভাষা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আজকের এ অবস্থায় উপনীত
হয়েছে, অর্থাৎ চক্র > চক্ক > চাকা, চর্মকার > চম্মআর > চামার, হস্ত >
হন্ত > হাত এ শব্দগুলো পরিবর্তনেরই ফল। এ পরিবর্তন প্রমাণ করে যে,
মানুষের মুখে মুখে ব্যবহৃত হতে হতেই বাংলা ভাষার শব্দগুলো বর্তমান এ
অবস্থায় এসেছে। অর্থাৎ অনুচ্ছেদের ‘ক’ নং বৈশিষ্ট্যটির মধ্য দিয়ে বাংলা
ভাষার উদ্ভবের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. পারমিতার পঠিত ‘খ’ নং বৈশিষ্ট্যটিতে ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে
বর্ণিত ভাষার প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীলতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বক্তব্য
অনুযায়ী বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর আরও অনেক ভাষার সৃষ্টি হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয়
ভাষা পরিবার থেকে। এ ভাষা পরিবারের অন্যান্য ভাষার সাথে বাংলা ভাষার একটি
যোগসূত্র রয়েছে।
উদ্দীপকের ‘খ’ নম্বর বৈশিষ্ট্যে উল্লিখিত হয়েছে ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের
মৌলিক বিষয়টি। নির্দিষ্ট একটি ভাষা বংশ থেকে যেমন অনেক ভাষার সৃষ্টি হয়।
তেমনি বিভিন্ন অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য ধারণ করেও ভাষার মৌলিক পরিবর্তন ঘটে।
অর্থাৎ স্থান ও কালের পরিবর্তনে ভাষার পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এসব
বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে ভাষা ক্রমে ক্রমে বহুরূপী হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট একটি
কেন্দ্র তথা ভাষাবংশ থেকে উৎপত্তি লাভ করে হাজার হাজার নতুন ভাষার।
আলোচ্য প্রবন্ধেও লেখক সে কথাই উত্থাপন করেছেন।
তাই উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পারমিতার পঠিত ‘খ’ নম্বর
বৈশিষ্ট্যটি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলা
ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের হাজার বছরের ইতিহাসের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ২:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
অষ্টম শ্রেণির বাংলা ক্লাসে শিক্ষক বলেন, সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার
উৎপত্তি ঘটেনি। কিছু সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহার হলেও প্রকৃতপক্ষে
এ ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়নি। তার অনেক কারণ আছে। সংস্কৃত হলো
মৃতভাষা। সাধারণ মানুষ কথা বলত বিভিন্ন রকম প্রাকৃত ভাষায়। প্রাকৃতের
পরবর্তী রূপ অপভ্রংশ। এই অপভ্রংশ থেকে বিভিন্ন ভাষার মতোই বাংলা ভাষার
জন্ম হয়েছে। ভাষা পণ্ডিতগণও তাই প্রমাণ করেছেন।
ক. পৃথিবীর আদি ভাষাগোষ্ঠীর নাম কী?
খ. কীভাবে একটি নতুন ভাষার জন্ম হয়?
গ. সংস্কৃতকে মৃতভাষা বলার কারণ ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলোকে
ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ভাষা পণ্ডিতগণ কীভাবে বাংলা ভাষার জন্ম ইতিহাস প্রমাণ করেছেন? উদ্দীপক
ও ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ক. পৃথিবীর আদি ভাষাগোষ্ঠীর নাম হলো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী বা
ভারতীয়-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী।
খ. ক্রম পরিবর্তনশীলতার মাধ্যমেই একটি নতুন ভাষার জন্ম হয়। বদলে যাওয়াই
ভাষার ধর্ম।
ভাষা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি।
রূপ বদলে যায় শব্দের, বদল ঘটে অর্থের। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে নানা
পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মূল ভাষার সাথে ব্যপক পার্থক্য তৈরি হয় এবং তখন
জন্ম হয় নতুন ভাষা।
গ. সমাজে বসবাসকারী বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথ্য ভাষা না হওয়ায় সংস্কৃতকে মৃতভাষা
বলা হয়েছে।
সংস্কৃত ছিল উঁচুশ্রেণির মানুষের ভাষা। সর্ব সাধারণের মধ্যে এ ভাষা
প্রচলিত ছিল না। তাছাড়া সংস্কৃত ভাষা লেখার ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
এজন্য মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজে প্রাকৃত ভাষা ব্যবহার করত।
উদ্দীপকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ক্লাসে শিক্ষক বলেন, সংস্কৃত ভাষা থেকে
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেনি। কিছু সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহার হলেও
প্রকৃতপক্ষে এ ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়নি। তার অনেক কারণ আছে।
সংস্কৃত হলো মৃতভাষা। এ প্রসঙ্গে ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বলা
হয়েছে, বৈদিক ব্যাকরণবিদরা নানা নিয়ম বিধিবদ্ধ করে একটি মানসম্পন্ন ভাষার
সৃষ্টি করেন যা সংস্কৃত’ ভাষা নামে অভিহিত হয়। সংস্কৃত ছিল সমাজের
উঁচুশ্রেণির মানুষের লেখার ভাষা। তা কথ্য ভাষা ছিল না। যেহেতু সংস্কৃত
ভাষা বিশেষ লোকসমাজে প্রচলিত ও কথ্য ছিল না; তাই সংস্কৃতকে বদ্ধ ভাষা বা
মৃতভাষা বলা সংগত।
ঘ. পৃথিবীর আদিভাষা জনগোষ্ঠীর সূত্রানুসারে ভাষাপণ্ডিতগণ বাংলা ভাষার
জন্ম ইতিহাস প্রমাণ করেছেন।
বর্তমানে ভাষাপণ্ডিতগণ পৃথিবীর অধিকাংশ সুসংগঠিত ভাষার আদি উৎস খুঁজে বের
করতে সক্ষম হয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি মূল ভাষাগোষ্ঠী থেকে পৃথিবীর
অধিকাংশ ভাষারই জন্ম হয়েছে। ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কিছু ভাষার ধ্বনিতে,
শব্দে গভীর মিল লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, অষ্টম শ্রেণির বাংলা ক্লাসে শিক্ষক বলেন, সংস্কৃত
ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেনি। কিছু সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষায়
ব্যবহার হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়নি। তার অনেক
কারণ আছে। সংস্কৃত হলো মৃতভাষা। সাধারণ মানুষ কথা বলত বিভিন্ন রকম
প্রাকৃত ভাষায়। প্রাকৃতের পরবর্তী রূপ অপভ্রংশ। এই অপভ্রংশ থেকে বিভিন্ন
ভাষার মতই বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। ভাষা পণ্ডিতগণও তাই প্রমাণ করেছেন।
উদ্দীপকের এ বিষয়টি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধেও আলোচিত হয়েছে।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে,
ভারতীয় আর্যভাষার পরিশীলিত রূপ ‘সংস্কৃত’ ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্মের
কথা কোনো কোনো পণ্ডিত বললেও সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষার
উৎপত্তি ঘটেনি। মধ্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলো কথ্য ও লিখিত ভাষারূপে ভারতের
বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃত ভাষারূপে প্রচলিত থাকে। এ প্রাকৃত ভাষাগুলোর শেষ
স্তর অপভ্রংশ থেকেই উৎপন্ন হয়েছে গুজরাটি, পাঞ্জাবি, মারাঠি, হিন্দি ও
বাংলার মতো আধুনিক ভাষার। এ প্রসঙ্গে ভাষাতত্ত্ববিদ জর্জ আব্রাহাম
গ্রিয়ারসন ও ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, বহু প্রাকৃতের একটির
নাম মাগধী প্রাকৃত। পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বাংলা ভাষার।
এভাবে ভাষা পণ্ডিতগণ বাংলা ভাষার জন্ম ইতিহাস প্রমাণ করেছেন।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ভাষা বহতা নদীর মতো গতিশীল। নদী যেমন চলতে চলতে মোড় বদলায়, বাঁক নেয়,
ভাষাও তেমনি মানুষের মুখে মুখে বদলাতে বদলাতে নতুন রূপ নেয়। এভাবে সৃষ্টি
হয় নতুন ভাষার। মূলত ভাষার ধর্মই হচ্ছে বদলে যাওয়া। বাংলা ভাষার হাজার
বছরের ইতিহাস পর্যালোচনায় গবেষকরা দেখিয়েছেন কত রকম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে
আজকের বাংলা ভাষার উদ্ভব। বিভিন্ন পণ্ডিত নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বাংলা ভাষার যে বর্তমান রূপ তা বহু বছরের পরিবর্তন-পরিবর্ধন,
সংযোজন-বিয়োজন, আবর্তন-বিবর্তনের ফল।
ক. ভাষাতাত্ত্বিক কারা?
খ. ভারতীয়-ইউরোপীয় ভাষাবংশ সম্পর্কে যা জান লেখ।
গ. উদ্দীপকের অংশটি কীভাবে ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সঙ্গে
সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলা ভাষার বিবর্তনের প্রকৃতি ‘বাংলা ভাষার
জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ক. ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে যারা গবেষণা করেন তাদের
ভাষাতাত্ত্বিক বলা হয়।
খ. ভারতীয়-ইউরোপীয় ভাষাবংশের অন্য নাম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ।
ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে এ ভাষা প্রচলিত। এদের ধ্বনিতে শব্দে অনেক
মিল রয়েছে। ভারতীয়-ইউরোপীয় ভাষা যেসব অঞ্চলে বিস্তৃত, তার সর্বপশ্চিমে
ইউরোপ ও পূর্বে ভারত এবং বাংলাদেশ অবস্থিত। ভাষাতাত্ত্বিকরা মনে করেন,
এসব অঞ্চলের ভাষাগুলো একই ভাষাবংশের সদস্য।
গ. উদ্দীপকের ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের ধারাটি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’
প্রবন্ধের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
বাংলা ভাষা বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ভাষার একটি, নানা পরিবর্তনশীলতার মধ্য
দিয়ে বাংলা ভাষা বর্তমান রূপ লাভ করেছে। ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে
বাংলা ভাষার এই উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ইন্দো-ইউরোপীয়
ভাষাবংশের নির্যাস নিয়ে হাজার হাজার বছর পাড়ি দিয়ে বাংলা ভাষা নিজস্বতা
দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। নিয়ত গতিশীলতা তার ধর্ম। বৈদিক, সংস্কৃত,
প্রাকৃত, অপভ্রংশ ইত্যাদি ধাপ পেরিয়ে বাংলা ভাষার সংহত রূপ প্রকাশ পেয়েছে
আজ।
উদ্দীপকে ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ কীভাবে ঘটে তার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
পরিবর্তনশীলতার মাধ্যমে বাংলা ভাষা যে বর্তমান অবস্থায় এসেছে উদ্দীপকে
তার উল্লেখ পাওয়া যায়। এ দিক থেকে উদ্দীপকের অংশটি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’
প্রবন্ধের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
ঘ. বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ লক্ষ করলে দেখা যায় পরিবর্তনশীলতার মধ্য
দিয়ে বাংলা ভাষা বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়,
বদলে যাওয়াই ভাষার ধর্ম। মানুষের মুখে মুখে ভাষার ধ্বনি-বর্ণ-শব্দ-অর্থের
পরিবর্তন ঘটে। ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কিছু ভাষার ধ্বনি ও শব্দে গভীর মিলের
কারণে ভাষাতাত্ত্বিকরা এ ভাষাগুলোকে একটি ভাষাবংশের সদস্য বলে মনে করেন।
ওই ভাষাবংশটির নাম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ বা ভারতীয় ইউরোপীয় ভাষাবংশ। এ
ভাষাবংশের অনেক শাখার মধ্যে একটি হচ্ছে ভারতীয় আর্যভাষা।
সংস্কৃত ছিল উঁচুশ্রেণির মানুষের লেখার ভাষা আর সাধারণ মানুষ কথা বলত
প্রাকৃত ভাষায়। প্রাকৃত ভাষাগুলোকে বলা হয় মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা। আর এ
প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। এ প্রাকৃত ভাষাগুলোর বিকৃত রূপ হচ্ছে
অপভ্রংশ। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে
বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলা ভাষার উৎপত্তি
সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁর মতে, গৌড়ী অপভ্রংশ থেকেই জন্ম নিয়েছে
বাংলা ভাষা।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, ভাষা নদীর বহতার মতো গতিশীল। মানুষের মুখে মুখে
বদলাতে বদলাতে নতুন রূপ নেয়। পণ্ডিতরা হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে
বলেছেন বর্তমান বাংলা ভাষা আবর্তন বিবর্তনের ফল। পরিশেষে বলা যায় যে,
বিবর্তনের মাধ্যমেই বাংলা ভাষা বর্তমান এ অবস্থায় আসীন হয়েছে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বাংলাদেশে আঞ্চলিক ভাষাগুলোর একটি থেকে আর একটির পার্থক্য রয়েছে। যেমন
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা, বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষা, বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা।
কালক্রমে প্রমিত ভাষা থেকে এগুলো এত দূর আলাদা হয়ে উঠতে পারে যে তখন আর
একে বাংলা ভাষা বলা যাবে না। এভাবে নতুন ভাষা তৈরি হয়। প্রাকৃত ভাষা থেকে
এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে বাংলা ভাষা।
ক. ভাষাবংশ কী?
খ. ভাষাকে বহতা নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকের আলোকে ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ পর্যালোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে নতুন ভাষা তৈরির যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে ‘বাংলা ভাষার
জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলোকে তার যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
ক. উৎপত্তি অনুসারে পৃথিবীর ভাষাগুলোকে কয়েকটি বংশে ভাগ করা হয়েছে, এরকম
একেকটি বংশকে ভাষাবংশ বলা হয়।
খ. পরিবর্তনশীলতার কারণে ভাষাকে বহতা নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
নদী বয়ে চলে, প্রবহমানতাই নদীর ধর্ম। আর প্রবহমান স্রোতধারা মাঝে মাঝে
দিক পরিবর্তন করে বয়ে চলে সাগরের দিকে। তেমনই ভাষা কালের বিবর্তনে
পরিবর্তিত হয়ে আজকের রূপ ধারণ করছে। ভাষার ধর্মই বদলে যাওয়া। মানুষের
মুখে মুখে ভাষার ধ্বনি-শব্দ-অর্থের পরিবর্তন ঘটে। আর এরকম বদলাতে বদলাতেই
ভাষা বর্তমান অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। নদীর স্রোতের মতো ভাষার এ প্রবহমান
গতিধারার কারণে ভাষাকে বহতা নদীর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
গ. ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলা
ভাষার উদ্ভবের ইতিহাস আলোচিত হয়েছে, যা উদ্ধৃত উদ্দীপকের সঙ্গে
সংগতিপূর্ণ।
আলোচ্য উদ্দীপকটি পাঠের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, বাংলা ভাষা বিভিন্ন
আঞ্চলিক ভাষায় পরিণত হওয়ার পর তার নিজস্ব রূপ কীভাবে বদলে গেছে। অর্থাৎ
আঞ্চলিক ভাষাগুলো বাংলা ভাষা থেকে এখন অনেকটাই পৃথক।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধেও দেখা যায়, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে
নানা রূপ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে।
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের একটি শাখা হচ্ছে প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা। এ
ভাষা বৈদিক, সংস্কৃত ও প্রাকৃত; এ তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়। প্রাকৃত ভাষা
আবার বিকৃত হয়ে অপভ্রংশে পরিণত হয় এবং এ অপভ্রংশ থেকেই বর্তমান বাংলা
ভাষার উৎপত্তি হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে নতুন ভাষা তৈরির প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে তা ‘বাংলা ভাষার
জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলোকে যথার্থ।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বাংলা ভাষা নানারকম আঞ্চলিক ভাষায় বিভক্ত হয়ে এমন
স্বতন্ত্র রূপ ধারণ করেছে যে, এ ভাষাগুলো এখন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা,
বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষা এবং বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে পরিচিত।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধ অনুযায়ী ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের অন্যতম
একটি শাখা হচ্ছে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা। এ প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার
একটি স্তর হলো প্রাকৃত ভাষা। প্রাকৃত ভাষা বিকৃত হয়ে অপভ্রংশে পরিণত
হয়েছে। এ অপভ্রংশ থেকেই নানা আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষা, যেমন : বাংলা,
গুজরাটি, মারাঠি, আসামি প্রভৃতি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানীরা মনে
করেন, একই ভাষাবংশ থেকে উৎপন্ন এ ভাষাগুলোর মধ্যে ধ্বনিগত ও শব্দগত কিছু
মিল রয়ে গেছে।
উদ্দীপকে বাংলা ভাষা থেকে আঞ্চলিক ভাষাগুলো যেমন বিবর্তিত হচ্ছে, তেমনি
প্রাকৃতি ভাষা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার আবির্ভাব ঘটেছে।
উদ্দীপকটিতে নতুন ভাষা তৈরির যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে ‘বাংলা ভাষার
জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলোকে তা যৌক্তিক।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
তমাল তার নানুর কাছে শুনেছে কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কাব্যের কথা। জেনেছে এটি
সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। নানু এ কাব্য থেকে দুটি শ্লোক আবৃত্তি করে শোনান
তমালকে। সে তার একটি বর্ণও বুঝতে পারে না। তমাল অবাক হয়, বাংলা ও সংস্কৃত
ভাষায় এতো পার্থক্য। অথচ নানু বলেন, সংস্কৃত থেকেই নাকি জন্ম হয়েছে বাংলা
ভাষার।
ক. প্রাচীন আর্যভাষার কয়টি স্তর?
খ. বৈদিক ভাষা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে সংস্কৃত ভাষার যে দুর্বোধ্যতার কথা বলা হয়েছে তা ‘বাংলা
ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণ, বর্ণনা কর।
ঘ. বাংলা ভাষার জন্মের ইতিহাস প্রসঙ্গে উদ্দীপকের নানুর বক্তব্যের
যথার্থতা তোমার পঠিত প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর।
ক. প্রাচীন আর্যভাষার তিনটি স্তর।
খ. যিশু খ্রিষ্টের জন্মের মোটামুটি এক হাজার বছর পূর্বে রচিত বেদের ভাষা
হলো বৈদিক ভাষা।
বেদকে প্রাচীনতম ধর্মশাস্ত্র গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেদ রচিত
হয়েছিল বৈদিক ভাষায়। কিন্তু এ ভাষার মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল না।
শ্লোকগুলো পবিত্র বিবেচনা করে অনুসারী ব্যক্তিরা তা মুখস্থ করত। বৈদিক
ভাষা দুর্বোধ্য ছিল বলে এ ভাষায় মানুষ কথা বলত না।
গ. হুমায়ুন আজাদ রচিত ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বর্ণিত সংস্কৃত
ভাষার এ দুর্বোধ্যতার সঙ্গে উদ্দীপকের বক্তব্য সংগতিপূর্ণ।
ভাষা সহজ ও প্রাঞ্জল না হলে তা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। উদ্দীপকে
নানু সংস্কৃত ভাষায় লিখিত কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কাব্যের আবৃত্তি শুনিয়েছে
তমালকে, কিন্তু দুর্বোধ্যতার কারণে সে কিছুই বুঝতে পারেনি। নানু সহজ ও
প্রাঞ্জল বাংলায় অনুবাদ করে শোনালে তখন বুঝতে পেরেছে। সংস্কৃত ভাষা
দুর্বোধ্য ও অস্পৃষ্ট এবং বাংলা ভাষা সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল, এ কথা তমাল
বুঝতে পেরেছে।
উদ্দীপকে তমাল সংস্কৃত কঠিন ও জটিল ভাষার কারণে মেঘদূতের মর্মার্থ বুঝতে
পারেনি। ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধেও সংস্কৃত ভাষার এ দুর্বোধ্যতা ও
জটিলতার কথাই তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ উদ্দীপকে সংস্কৃত ভাষার যে
দুর্বোধ্যতার কথা বলা হয়েছে তা ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সাথে
পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ।
ঘ. বাংলা ভাষার জন্মের ইতিহাস প্রসঙ্গে উদ্দীপকের নানুর বক্তব্য যথার্থ
নয়।
সংস্কৃত পরিশীলিত ও শুদ্ধ ভাষা। এ ভাষা সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা ছিল
না। কাজেই এ ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়নি, হয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃত
ভাষা থেকে। ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে সংস্কৃতের অনেক শব্দ বাংলা
ভাষায় গৃহীত হয়েছে জেনে এক দল গবেষক মন্তব্য করেছেন, সংস্কৃত বাংলার
জননী। উদ্দীপকের নানুও এ মত পোষণ করেন। সংস্কৃত কথোপকথনের ভাষা ছিল না।
ছিল লেখা ও পড়ার ভাষা। কাজেই সে ভাষা থেকে কোনোক্রমেই অন্য একটি ভাষার
জন্ম হতে পারে না।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ‘গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে জন্ম লাভ করেছে বাংলা
ভাষা।’ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে
জন্ম লাভ করেছে বাংলা ভাষা।’ জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনের মতে, ‘মাগধী
প্রাকৃতের কোনো পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নিয়েছে বাংলা ভাষা।
অতএব আলোচনার মাধ্যমে বলা যায়, বাংলা ভাষা জন্মের ইতিহাস প্রসঙ্গে
উদ্দীপকের নানুর মন্তব্য সঠিক নয়।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আমাদের বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে ভাষার প্রয়োগে ভিন্নতা রয়েছে।
নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষজন যেভাবে কথা বলে, তার সঙ্গে বরিশাল অঞ্চলের
মানুষের মুখের ভাষার বেশ পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়; ‘আমাদের
বাড়ি এসো’। এ বাক্যটিকে নোয়াখালী অঞ্চলের লোকেরা বলবে, ‘আংগো বাড়ি আইও’
আর বরিশাল অঞ্চলের লোকেরা বলবে, “মোগো বাড়ি যাইও।” এ পার্থক্যের কারণ
হচ্ছে আঞ্চলিকতা। তাই অঞ্চলভেদে বাংলা ভাষার ব্যবহারে রয়েছে নানা
বৈচিত্র্য।
ক. আর্যভাষার প্রথম স্তরের নাম কী?
খ. “সংস্কৃত নয়, প্রাকৃত ভাষা থেকেই উদ্ভব ঘটেছে বাংলা ভাষার।”- ব্যাখ্যা
কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অঞ্চলভেদে ভাষার বৈচিত্র্য ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’
প্রবন্ধে বর্ণিত ভাষার কোন বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে? বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনার সঙ্গে ভাষা বিবর্তনের যে চিত্র তা ‘বাংলা ভাষার
জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর।
ক. আর্যভাষার প্রথম স্তরের নাম বৈদিক বা বৈদিক সংস্কৃত।
খ. “সংস্কৃত নয়, প্রাকৃত ভাষা থেকেই উদ্ভব ঘটেছে বাংলা ভাষার।”- এ
উক্তিটি যথার্থ।
কারণ সংস্কৃত ছিল তৎকালীন সমাজের উঁচুশ্রেণির লোকের লেখার ভাষা। এ ভাষা
আপামর জনসাধারণ ব্যবহার করত না। সাধারণ জনগণ ব্যবহার করত প্রাকৃত ভাষা বা
কথ্য ভাষা। তাই সংস্কৃত ভাষার অনেক শব্দ বাংলা ভাষায় থাকলেও ধারণা করা হয়
প্রাকৃত ভাষা থেকেই বাংলার উদ্ভব ঘটেছে।
গ. অঞ্চলভেদে ভাষার যে বিচিত্রতা ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে ভাষার
বদলে যাওয়ার বৈশিষ্ট্যকেই প্রকাশ করে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে ড. হুমায়ুন আজাদ দেখিয়েছেন বাংলা ভাষার
উৎপত্তি ও বিকাশ। ভাষার কতগুলো ধর্মের বর্ণনাও দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম
ধর্ম হলো ভাষার বদলে যাওয়া। ভাষা ব্যবহারের কারণে এবং ভাষার ভৌগোলিক
অবস্থানের কারণেও বদলে যায়। তাই একই ভাষা একেক অঞ্চলে একেক রকম। বাংলা
ভাষাও অবস্থানের তার আপন অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বৈচিত্র্যময়।
উদ্দীপকে অঞ্চলভেদে আঞ্চলিক ভাষার ভিন্নতর রূপ দেখা যায়। আঞ্চলিক ভাষার
বৈশিষ্ট্য মূলত নির্ভর করে স্থানিক ও কালিক অবস্থানের ওপর। তাই বরিশাল ও
নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষার পার্থক্য বিদ্যমান। অঞ্চলভেদে ভাষা
ব্যবহার রয়েছে নানা বৈচিত্র্য।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে ভাষা অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং ভাষায়
ধ্বনির ব্যবহারের বৈচিত্র্যের বিষয়টি যা ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে
প্রকাশ পেয়েছে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে প্রবন্ধকার বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও
ক্রমবিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি,
রূপ বদলে যায় শব্দের, বদল ঘটে অর্থের। দীর্ঘদিন কেটে গেলে মনে যে ভাষাটি
একটি নতুন ভাষা হয়ে উঠেছে। আর সে ভাষার বদল ঘটেই জন্ম হয়েছে বাংলা
ভাষার।
উদ্দীপকের বর্ণনায় ভাষার বিবর্তনের চেয়ে ব্যবহারগত ভিন্নতার পার্থক্য
বেশি দেখানো হয়েছে। ভাষার ধর্মই হলো, বদলে যাওয়া। মানুষের মুখে মুখে যেমন
ভাষার বদল ঘটে, তেমনি অঞ্চলভেদেও ভাষার, শব্দের ও অর্থের বদল ঘটে। তাই
মূলভাষাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা এ আঞ্চলিক ভাষাগুলো একটি থেকে অন্যটি
সম্পূর্ণরূপে আলাদা যা উদ্দীপকের বরিশাল ও নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষের
মুখের ভাষায় ফুটে উঠেছে। এভাবেই সূচিত হয় ভাষার বিবর্তন।
তাই প্রবন্ধের আলোকে বলা যায়, হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয় না। এটা মানুষের মুখে
মুখে ও বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহৃত হতে হতে পরিবর্তিত হয়। ঘটতে থাকে ভাষার
বিবর্তন সৃষ্টি হয় নতুন নতুন ভাষা।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জসিমের জন্ম হয়েছিল সিলেটের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে দাদার বাড়িতে। বড় হয়েছে
এবং পড়ালেখা করেছে ঢাকা শহরে। নিজের জন্মস্থানে খুব বেশি যাওয়াই হয়নি বড়
হওয়ার পর থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের নিয়ে কিছুদিন আগে পিতৃভূমিতে
বেড়াতে গিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তাকে। কেননা, ওই অঞ্চলের
লোকেরা সবাই বাংলায় কথা বললে জসিম ও তার বন্ধুদের বুঝতে খুবই অসুবিধা
হচ্ছিল।
ক. আর্যভাষার কোন স্তর থেকে বাংলা ভাষার জন্ম?
খ. গৌড়ী প্রাকৃত বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. নিজের জন্মস্থানের লোকদের ভাষা বুঝতে জসিমের অসুবিধা হওয়ার কারণ কী?
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি’ ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’
প্রবন্ধের এ উক্তটি উদ্দীপকে কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ কর।
ক. মধ্যভারতীয় আর্যভাষার একটি স্তর প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম।
খ. গৌড়ী প্রাকৃত বলতে একটি প্রাকৃত ভাষাকে বোঝায়।
প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও সুপণ্ডিত ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার
উৎপত্তি সম্পর্কে একটু ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি একটি প্রাকৃতের নাম
বলেন গৌড়ী প্রাকৃত। তিনি মনে করেন, গৌড়ী প্রাকৃতের পরিণত অবস্থা গৌড়ী
অপভ্রংশ থেকে উৎপত্তি ঘটেছে বাংলা ভাষার। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
বলেছেন, পূর্বমাগধী অপভ্রংশ থেকে উদ্ভব হয়েছে বাংলা ভাষার। তবে উভয়ের মতে
প্রাকৃতের কোনো রূপ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম বলে মনে করা হয়।
গ. স্থানকালপাত্রভেদে ভাষার যে রূপ বদল হয় সেটিই মূলত জসিমের নিজের
জন্মস্থানের লোকদের ভাষা না বোঝার প্রধান কারণ।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে লেখক বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে
আলোচনা করতে গিয়ে ভাষার পরিবর্তন ও বিবর্তন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
ভাষার ধর্মই হচ্ছে বদলে যাওয়া। মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার
ধ্বনি।
উদ্দীপকের জসিমের ক্ষেত্রে আলোচ্য প্রবন্ধের এ উক্তিটি পুরোপুরিভাবেই
প্রযোজ্য। স্থানকালপাত্রভেদে ভাষার যে রূপ বদল হয় সেটিই মূলত জসিমের
নিজের জন্মস্থানের লোকদের ভাষা না বোঝার প্রধান কারণ। সময়ের বিবর্তনে
ভাষার ব্যাপক রূপ বদলের কারণে নতুন নতুন ভাষা যেভাবে সৃষ্টি হতে পারে ঠিক
তেমনিভাবে ভৌগোলিক দূরত্বের কারণও এক এলাকার মানুষের মুখের ভাষা অন্য
এলাকার চেয়ে আলাদা রূপ লাভ করে থাকে। আমাদের দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার
বৈচিত্র্যটিও এভাবেই সংঘটিত হয়েছে। অর্থাৎ আঞ্চলিকতার রূপভেদের কারণেই
ঢাকা শহরে বড় হওয়া জসিমের পক্ষে নিজের জন্মস্থানের লোকদের ভাষা বুঝতে
অসুবিধা হয়েছিল।
ঘ. ‘মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি’- ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’
প্রবন্ধের এ উক্তিটি উদ্দীপকে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়েছে।
লেখক ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে
আলোচনা করতে গিয়ে ভাষার পরিবর্তন ও বিবর্তন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন এবং
বাংলা ভাষার জন্মবৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। আলোচনা প্রসঙ্গে লেখক এ রচনায়
মন্তব্য করেছেন, ‘ভাষার ধর্মই হচ্ছে বদলে যাওয়া। মানুষের মুখে মুখে বদলে
যায় ভাষার ধ্বনি।’ বাংলা ভাষা মূলত অন্য সব ভাষার মতোই নানা পরিবর্তনের
মধ্যদিয়ে বিবর্তিত হতে হতে তার বর্তমান রূপটি লাভ করেছে। সময়ের বিবর্তন,
ভৌগোলিক দূরত্ব ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যের কারণে মানুষের আচরণগত ও ভাষার
পার্থক্য সৃষ্টি হয়।
স্থান কাল পাত্রভেদে ভাষার যে রূপ বদল হয় সেটিই মূলত উদ্দীপকের জসিমের
নিজের জন্মস্থানের লোকদের ভাষা না বোঝার অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা লক্ষ
করলে খুব সহজেই এ ব্যাপারটি টের পাই যে, আমাদের পরিচিত পরিমণ্ডলেই দেশের
বিভিন্ন এলাকা থেকে আগমনকারী লোকদের মুখের ভাষা ভিন্ন হয়ে থাকে। এজন্য
ভৌগোলিক দূরত্ব ও আঞ্চলিকতার রূপভেদের কারণেই ঢাকা শহরে বড় হওয়া জসিম তার
নিজ জন্মস্থানের মানুষের মুখের ভাষা ভালোভাবে বুঝতে পারেনি।
তাই বলা যায়, মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি- ‘বাংলা ভাষার
জন্মকথা’ প্রবন্ধের এ উক্তিটিতে উদ্দীপকের ঘটনা পুরোপুরি প্রতিফলিত
হয়েছে।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮:
আরিফ ও জাহান বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলছে। আরিফ বলছে, আগে মানুষ সংস্কৃত
ভাষায় কথা বলত এবং সেই ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহার বেশি ছিল। মানুষ সহজে
অনেক কিছু বুঝতে পারত না। আজকাল মানুষ তদ্ভব শব্দবহুল চলিত ভাষারও
পরিবর্তন ঘটতে পারে। চলতি ভাষার স্থান অন্য কোনো ভাষা দখল করতে পারে। আর
এটাই তো ভাষার ধর্ম।
ক. ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় কে?
খ. ‘প্রাকৃত ভাষা’ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকটি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের কোন বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে?
ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাব ধারণ করে কি?
মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
----------------------
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯:
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’
ক. ভাষার ধর্ম কী?
খ. ‘বাংলা ঠিক সংস্কৃতের কন্যা নয়’- বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপকের ছকটি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের কোন দিকটিকে নির্দেশ
করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকেই উৎপন্ন হয়েছে আধুনিক ভারতীয় আর্যভাষা’- ‘বাংলা
ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
----------------------
তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য-কণিকা: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।