প্রার্থী- সুকান্ত ভট্টাচার্য

প্রার্থী
প্রার্থী

প্রার্থী
সুকান্ত ভট্টাচার্য

হে সূর্য। শীতের সূর্য!
হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়
আমরা থাকি,
যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ
ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
হে সূর্য, তুমি তো জানো,
আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!
সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে,
এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!
সকালের এক টুকরো রোদ্দুর-
এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামি।
ঘর ছেড়ে আমরা এদিক-ওদিকে যাই-
এক টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায়।
হে সূর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও,
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
হে সূর্য।
তুমি আমাদের উত্তাপ দিও-
শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড,
তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে
একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই
এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হব!
তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা,
তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারব
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী।
মারিয়া মেহজাবিন মৌ, শ্রেনি- চতুর্থ (জিনিয়া)
মারিয়া মেহজাবিন মৌ, শ্রেনি- চতুর্থ (জিনিয়া)
‘প্রার্থী’ কবিতার উৎস নির্দেশ :
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রার্থী’ কবিতাটি ‘ছাড়পত্র’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য বিখ্যাত কবিতাগুলো হলো- ছাড়পত্র, আগামী, প্রার্থী, চারাগাছ, লেলিন, ঠিকানা, রবীন্দ্রনাথের প্রতি ইত্যাদি।

‘প্রার্থী’ কবিতার শব্দার্থ ও টীকা :
➠ প্রার্থী- প্রার্থনাকারী, আবেদনকারী।
➠ হিমশীতল- তুষারের মতো ঠান্ডা।
➠ প্রতীক্ষায়- অপেক্ষায়। প্রত্যাশায়।
➠ রোমাঞ্চকর- রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে বা শিহরন জাগায় এমন।
➠ খড়কুটো- জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত শুকনো খড় লতাপাতা প্রভৃতি।
➠ রোদ্দুর- ‘রোদ’-এর কথ্য রূপ।
এদিক-ওদিক- চারদিক।
➠ তৃষ্ণা- কোনো কিছু পাওয়ার জন্য প্রবল বাসনা।
➠ স্যাঁতসেঁতে- ভেজা ভাবযুক্ত।
➠ উত্তাপ- তাপ, উষ্ণতা।
➠ জ্বলন্ত- জ্বলছে এমন, প্রজ্বলিত। তেজোময় (জ্বলন্ত অগ্নি)।
➠ অগ্নিপিড- আগুনের গোলা।
➠ পরিণত- রূপান্তরিত।
➠ জড়তা- জড়ের ভাব, আড়ষ্টতা।
➠ অকৃপণ- কৃপণ নয় এমন। উদার।

‘প্রার্থী’ কবিতার পাঠের উদ্দেশ্য :
‘প্রার্থী’ কবিতা পাঠ করে শিক্ষার্থীদের মনে অবহেলিত, বঞ্চিত ও দীন-দরিদ্র মানুষের প্রতি মমতা সৃষ্টি হবে। অন্নহীন, বস্ত্রহীন ও আশ্রয়হীন মানুষের দুর্দশায় তারা ব্যথিত হবে।

‘প্রার্থী’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব :
‘প্রার্থী’ কবিতাটিতে আমাদের এই পৃথিবীতে শক্তির মূল উৎস সূর্য। সূর্য যে তাপ বিকিরণ করে তার সাহায্যেই ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ, জীবজন্ত ও মানুষ জীবনধারণ করে। প্রচণ্ড শীতে সূর্যের এই উত্তাপের জন্য সারারাত অপেক্ষা করে বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন শীতার্ত মানুষ। কবি সমাজের নিচুতলার মানুষের প্রতি গভীর মমতা থেকে সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন। অবহেলিত বঞ্চিতদীনদরিদ্র শিশুর প্রতি তাঁর অসীম মমতা। কবি এই শিশুদের কল্যাণে সূর্যের অবদান থেকে প্রেরণা নিতে চান। তিনি এমন সমাজ গড়তে চান, যেখানে বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষের জীবন থেকে সব দুঃখ চিরতরে ঘুচে যাবে।

‘প্রার্থী’ কবিতার কবি পরিচিতি :
সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই সন্তান অল্প বয়সেই শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। বামপন্থি-বিপ্লবী কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বঞ্চনাকাতর মানুষের জীবন-যন্ত্রণার চিত্র যেমন তাঁর কবিতায় অঙ্কিত হয়েছে তেমনি প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের সুরও উচ্চারিত হয়েছে। তিনি সেকালের দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। আমৃত্যু তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কবিতায় মানবমুক্তির জয়গান বলিষ্ঠভাবে উচ্চারিত হয়েছে। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ: ছাড়পত্র(১৯৪৭), ঘুম নেই(১৯৫০), পূর্বাভাস(১৯৫০); ছড়াগ্রন্থ: মিঠেকড়া; নাটিকা:অভিযান(১৯৫৩); ছোটগল্প: হরতাল ইত্যাদি।
ও গানের সংকলন: ‘গীতিগুচ্ছ’
সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র একুশ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

চিত্তারকর: সফিয়া ইসলাম তাসনিম, শ্রেনি- কে.জি. (ডালিয়া)
চিত্তারকর: সফিয়া ইসলাম তাসনিম, শ্রেনি- কে.জি. (ডালিয়া)
‘প্রার্থী’ কবিতার কর্ম-অনুশীলন :
ক. ‘সামাজিক বৈষম্য জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা’ এই মতের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কের আয়োজন করো (দলগত কাজ)।
খ. গত সপ্তাহে কে, কী ধরনের ভাল কাজ করেছ, এর একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো (একক কাজ)।

‘প্রার্থী’ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


‘প্রার্থী’ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত কার অপেক্ষায় থাকে?
উত্তর : হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত সূর্যের অপেক্ষায় থাকে।
প্রশ্ন- ২: শীতের রাতে আমরা কার অপেক্ষায় থাকি?
উত্তর : শীতের রাতে আমরা সূর্যের অপেক্ষায় থাকি।
প্রশ্ন- ৩: কৃষকের চঞ্চল চোখ কীসের প্রতীক্ষায় থাকে?
উত্তর : কৃষকের চঞ্চল চোখ ধান কাটার রোমাঞ্চকর দিনের অপেক্ষায় থাকে।
প্রশ্ন- ৪: আমাদের গরম কাপড়ের অভাবের কথা কে জানে?
উত্তর : আমাদের গরম কাপড়ের অভাবের কথা সূর্য জানে।
প্রশ্ন- ৫: আমরা খড়কুটো জ্বালাই কখন?
উত্তর : আমরা খড়কুটো জ্বালাই শীতের রাতে।
প্রশ্ন- ৬: এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে আমরা কী আটকাই?
উত্তর : এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে আমরা শীত আটকাই।
প্রশ্ন- ৭: সকালের এক টুকরো রোদকে কীসের চেয়ে দামি মনে হয়?
উত্তর : সকালের এক টুকরো রোদকে সোনার চেয়ে দামি মনে হয়।
প্রশ্ন- ৮: ঘর ছেড়ে আমরা এদিক-ওদিকে যাই কেন?
উত্তর : ঘর ছেড়ে আমরা এদিক-ওদিক যাই এক টুকরো রোদের আশায়।
প্রশ্ন- ৯: আমাদের স্যাঁতসেঁতে ঘরের জন্য কবি সূর্যের কাছে কী প্রার্থনা করেছেন?
উত্তর : আমাদের স্যাঁতসেঁতে ঘরের জন্য কবি সূর্যের কাছে উত্তাপ আর আলো প্রার্থনা করেছেন।
প্রশ্ন- ১০: রাস্তার উলঙ্গ ছেলের জন্য কবি সূর্যের কাছে কী চেয়েছেন?
উত্তর : রাস্তার উলঙ্গ ছেলের জন্য কবি সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছেন।
প্রশ্ন- ১১: কবি সূর্য সম্পর্কে কী শুনেছেন?
উত্তর : কবি শুনেছেন সূর্য এক জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড।
প্রশ্ন- ১২: সূর্যের আলো পেয়ে হয়তো একদিন আমরা কীসে পরিণত হব?
উত্তর : সূর্যের আলো পেয়ে হয়তো একদিন আমরা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হব।
প্রশ্ন- ১৩: ‘হরতাল’ কাব্যগ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর : ‘হরতাল’ কাব্যগ্রন্থটির সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা।
প্রশ্ন- ১৪: সুকান্ত ভট্টাচার্যের পিতৃনিবাস কোথায়?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্যের পিতৃনিবাস গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়।
প্রশ্ন- ১৫: সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় কীসের জয়গান বলিষ্ঠভাবে ধ্বনিত হয়েছে?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় বলিষ্ঠভাবে মানবমুক্তির জয়গান ধ্বনিত হয়েছে।
প্রশ্ন- ১৬: পৃথিবীতে শক্তির মূল উৎস কী?
উত্তর : পৃথিবীতে শক্তির মূল উৎস হলো সূর্য।
প্রশ্ন- ১৭: ‘প্রার্থী’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ‘প্রার্থী’ শব্দটির অর্থ হলো প্রার্থনাকারী।
প্রশ্ন- ১৮: হিমশীতল শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : হিমশীতল শব্দের অর্থ হলো তুষারের মতো ঠাণ্ডা।

‘প্রার্থী’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :

প্রশ্ন- ১: কবি সূর্যের কাছ থেকে প্রেরণা নিতে চান কেন?
উত্তর : কবি শিশুদের কল্যাণের জন্য সূর্যের কাছ থেকে প্রেরণা নিতে চান।
➠ কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছিল অবহেলিত শিশুদের প্রতি গভীর মমত্ববোধ। কবি এই শিশুদের কল্যাণে সূর্যের অবদান থেকে প্রেরণা নিতে চান। তিনি নিজেকে সূর্যের ন্যায় অগ্নিপিণ্ডে পরিণত করতে চান যেন ভবিষ্যতে তিনি ঐ পথের ধারের উলঙ্গ শিশুটাকে উত্তাপ দিতে পারেন।

প্রশ্ন- ২: কবি কীভাবে বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষের দুঃখ দূর করতে চান?
উত্তর : সমাজে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কবি অসহায় মানুষের দুঃখ দূর করতে চান।
➠ আমাদের সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আছে। দরিদ্র মানুষ সবসময় তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। বস্ত্রহীন, শীতার্ত, আশ্রয়হীন মানুষ সারারাত অপেক্ষা করে সূর্যের উত্তাপের জন্য। এদের প্রতি মমতা থেকে কবি সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছেন। সূর্যের কাছ থেকে প্রেরণা নিয়ে কবি এমন সমাজ গড়তে চান যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। আর এভাবেই শীতার্ত, বস্ত্রহীন মানুষের দুঃখ কবি দূর করতে প্রত্যাশী।

প্রশ্ন- ৩: কৃষকের চঞ্চল চোখ কীসের প্রতীক্ষায় থাকার কারণ? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ফসল তোলার দিনের জন্যই কৃষকের চঞ্চল চোখ প্রতীক্ষা করে।
➠ কৃষকের কাজ ফসল উৎপাদন করা। তাই সে সারা বছর মাঠে কঠোর পরিশ্রম করে। কৃষক সারা বছর ঘরে ফসল তুলতে পারে না। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সে জমি চাষ করে। ফসলের বীজ বোনে আর গাছ পরিচর্যা করে, কঠোর এ পরিশ্রম স্বীকার করার একমাত্র কারণ হলো ফসল তোলার আনন্দ উপভোগ করে। ধান কাটার রোমাঞ্চকর দিনের অপেক্ষাতেই কৃষক সারা বছর কাজ করে।

প্রশ্ন- ৪: ‘আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব’ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আমাদের দেশের দরিদ্র ও শীতার্ত মানুষগুলোর যে সামান্য শীতবস্ত্রও নেই, সে কথাই বুঝিয়েছেন কবি আলোচ্য উদ্ধৃতিতে।
➠ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের একটা বিরাট অংশ চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। প্রতিদিন তিনবেলা খাদ্যের জোগাড় যেমন তারা করতে পারে না, তেমনি প্রচণ্ড শীত থেকে বাঁচার মতো সামান্য শীত বস্ত্রও নেই তাদের। এসব দরিদ্র মানুষের সঙ্গে একত্মবোধ করে কবি সূর্যকে তাই বলেছেন ‘তুমি তো জানো, আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব’।

প্রশ্ন- ৫: সকালের এক টুকরো রোদ সোনার চেয়ে দামি মনে হয় কেন?
উত্তর : প্রচণ্ড শীতে সারা রাত ভোগার পর যখন সকালের এক টুকরো রোদ দরিদ্র মানুষগুলোকে উষ্ণতা দেয়, তখন সেই এক টুকরো রোদ মনে হয় সোনার চেয়ে দামি।
➠ দারিদ্র্যপীড়িত শীতার্ত মানুষগুলোর প্রচণ্ড শীতকে নিবারণ করার মতো সামান্য শীতবস্ত্র নেই। সামান্য কাপড়ে কান ঢেকে এবং খড়কুটো জ্বালিয়ে তারা শীত কাটায়। সকালের এক টুকরো সোনারোদের প্রতীক্ষায় থাকে সারারাত, তাই এ রোদ তাদের কাছে এত মূল্যবান মনে হয়।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
দামি গাড়ি হাঁকিয়ে বারিধারা অফিসে যাবার পথে বিজয় সরণি সিগন্যালে জীর্ণ-শীর্ণ এক ভিক্ষুক নাদিম সাহেবের গাড়ির জানালার পাশে ভিক্ষার থালা বাড়িয়ে দিলে তিনি জানালার কালো গ্লাস তুলে দেন। আর ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন- রাবিশ, ভিক্ষুকে দেশটা ভরে গেছে। কথা শুনে ড্রাইভার আবদুল বলে- স্যার, গরিব মানুষ, কী করবে বলেন? এই ভিক্ষার আয় রোজগার দিয়েই তো ওরা সংসায় চালায়।

ক. ‘প্রার্থী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. কবি সূর্যকে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণ ‘প্রার্থী’ কবিতার কোন ভাবের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ- বর্ণনা কর।
ঘ. ড্রাইভার আবদুলের অভিব্যক্তিতে ‘প্রার্থী’ কবিতার মূল চেতনা প্রকাশ পেলেও কবি সুকান্তের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

ক. ‘প্রার্থী’ কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
খ. সূর্যের অফুরন্ত উত্তাপের প্রখরতা বোঝাতেই কবি সূর্যকে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড বলেছেন।
➠ এ পৃথিবীর যাবতীয় শক্তির উৎস সূর্য। সূর্য যে তাপ বিকিরণ করে তার সাহায্যেই ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষ জীবনধারণ করে। বিশেষ করে শীতকালে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের প্রধান সহায় এ সূর্যের উত্তাপ। তাই তিনি সূর্যের তেজের প্রখরতা বোঝাতে একে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড বলেছেন।

গ. উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণ ‘প্রার্থী’ কবিতায় প্রকাশিত সমাজের অসহায় মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় অন্ন-বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষের প্রতি কবির অসীম মমতা ফুটে উঠেছে। কারণ শীতের রাতে রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটি সূর্যের একটু উত্তাপ পাওয়ার আশায় প্রহর গোনে। কবি ওই ছেলেটির পাশে দাঁড়িয়ে গভীর মমতায় তার দুঃখ দূর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এতে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার দিকটি গভীর সমবেদনায় প্রকাশিত হয়েছে।
➠ উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণে ‘প্রার্থী’ কবিতার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র প্রকাশিত। তিনি দরিদ্র ভিক্ষুককে সহায়তা না করে বরং বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। উঁচুতলার মানুষ নাদিম সাহেব সমাজের অসহায় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার বদলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। কবির মতো সমাজের অসহায়ের প্রতি মমত্বের বিপরীতে তার কর্মকাণ্ডে ফুটে উঠেছে বিরক্তি এবং নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা। এভাবেই উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণ ‘প্রার্থী’ কবিতায় প্রকাশিত সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত ও দীন-দরিদ্র মানুষের প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ড্রাইভার আবদুলের অভিব্যক্তিতে ‘প্রার্থী’ কবিতার মূল চেতনা প্রকাশ পেলেও কবি সুকান্তের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি এমন সমাজ গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ যেখানে বস্ত্রহীন মানুষের কোনো দুঃখ থাকবে না। অবহেলিত ও বঞ্চিত শিশুদের প্রতি কবির অসীম মমতা, আর এ মমত্ববোধ থেকেই তিনি এমন সমাজ গড়তে চান যাতে শীতার্ত, বস্ত্রহীন মানুষের জীবন থেকে সব দুঃখ চিরতরে ঘুচে যায়। কিন্তু উদ্দীপকে নাদিম সাহেবের ড্রাইভার আবদুল রাস্তার ভিক্ষুকের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও এদের জন্য নতুন সমাজ গড়ার মতো কোনো ভাবনা উঠে আসেনি।
➠ উদ্দীপকের ড্রাইভার আবদুলের প্রচেষ্টার মধ্যে ‘প্রার্থী’ কবিতার কবির মতোই অসহায় মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। ড্রাইভার ভিক্ষুকদের দুর্দশা দেখে ব্যথিত ঠিকই তবে সে এর প্রতিকার প্রত্যাশী নয়। তার অভিব্যক্তিতে দুর্বল মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যায়। তাই তাকে অসহায় ভিক্ষুকটির সাহায্যার্থে নাদিম সাহেবের কাছে কোনো আবেদন করতে দেখা যায়নি।
➠ সুতরাং বলা যায় যে, ড্রাইভার আবদুলের অভিব্যক্তিতে ‘প্রার্থী’ কবিতার মূল চেতনা প্রকাশ পেলেও কবি সুকান্তের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি- মন্তব্যটি যথার্থ।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ২:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
দেখিনু সেদিন রেলে
কুলি বলে এক বাবু সাব
তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে।
চোখ ফেটে এল জল
এমনি করিয়া কী জগৎ জুড়িয়া
মার খাবে দুর্বল? উৎস: কুলি-মজুর - কাজী নজরুল ইসলাম

ক. সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম সাল কত?
খ. ‘আমরা প্রত্যেকেই এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হব’-বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. কবিতাংশের প্রথম তিন চরণে ‘প্রার্থী’ কবিতার যে দিকটির সাথে বৈসাদৃশ্য রয়েছে তার বর্ণনা দাও।
ঘ. ভাবের উক্ত বৈসাদৃশ্যকে সাদৃশ্যপূর্ণ করতে ‘প্রার্থী’ কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের অভিমত বিশ্লেষণ কর।

ক. সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. আর্তমানবতার কল্যাণে সব মানুষ অনুপ্রাণিত হবে- উক্তিটিতে কবি একথাটিই বোঝাতে চেয়েছেন।
➠ সূর্যের আলো ও তাপ ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই সমানভাবে উপভোগ করতে পারে। দরিদ্র মানুষদের জন্য সূর্যের তাপ শীতকালে আশীর্বাদ হয়ে আসে। কবির আশা, সূর্যের এ পরোপকারী মনোভাব আমাদের মাঝে সঞ্চালিত হবে- আমরা সবাই সূর্যের মতো অন্যের কল্যাণে নিবেদিত এক-একটি জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হব।

গ. কবিতাংশের প্রথম তিন চরণে অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠলেও এসব মানুষের মুক্তির সংকল্পের কথা প্রকাশ পায়নি, যা কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে। এখানেই কবিতাংশের প্রথম তিন চরণের সঙ্গে ‘প্রার্থী’ কবিতার বৈসাদৃশ্য।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় সমাজের অসহায় মানুষের প্রতি কবির প্রগাঢ় মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ‘সূর্য’ নামক রূপকের অন্তরালে কবি এমনিই এক শক্তিময় চেতনার কামনা করেছেন, যা আমাদের সবার মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে। তার শক্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা জড়তা মুক্ত হব এবং পৃথিবী থেকে দূর করব সব শোষণ, বঞ্চনা আর অভাব-অনটন।
➠ কিন্তু উদ্দীপকের কবিতাংশের প্রথম তিন চরণে ‘প্রার্থী’ কবিতার বিপরীতমুখী ভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এখানে জনৈক বাবু সাবকে কুলি বলে এক দরিদ্র মানুষকে নিচে ঠেলে ফেলে দিতে দেখা যায়। এর মাধ্যমে অসহায় মানুষের প্রতি মমত্ববোধের পরিবর্তে, অত্যাচার-নির্যাতন ও মিথ্যা অহমিকার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অর্থাৎ কবিতায় কবি যাদেরকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উদ্দীপকে দেখা যায় সেসব মানুষই অসহায়দেরকে নির্যাতন করছে। অর্থাৎ কবিতাংশের প্রথম তিন চরণের সাথে ‘প্রার্থী’ কবিতার অসহায়ের প্রতি মমত্ববোধের দিকটির বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে যে অমানবিকবোধের প্রকাশ ঘটেছে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘প্রার্থী’ কবিতায় তা দূর করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
➠ উদ্দীপকের কবি কুলির অসহায় অবস্থায় কষ্ট পেয়েছেন। তিনি যদি এর প্রতিকারের ভাবনাও প্রকাশ করতেন, তাহলে কবি সুকান্তের অভিমতের সঙ্গে চমৎকার এক সাদৃশ্য গড়ে উঠত। অভাবী ও দুঃখী মানুষদের জন্য সূর্যের অফুরন্ত তাপের প্রত্যাশা করেছেন কবি। কারণ তিনি তাদের কষ্ট হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন। উদ্দীপকের কবিও তেমনি কুলির দুর্দশায় চোখের জল ফেলেছেন। এদিক থেকে তাদের অনুভূতির আংশিক সাদৃশ রয়েছে।
➠ উদ্দীপকের কবিতায় অসহায়ের জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ পেলেও আমাদেরকে সেখানেই থেমে থাকলে চলবে না। তাদের দুঃখ দূর করার দৃঢ় সংকল্পে নিজেকে তৈরি করার কথা কবি সুকান্ত তার ‘প্রার্থী’ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন।
➠ তাই আমাদের সকলকে অমানবিকতা ত্যাগ করে হৃদয়ে সূর্যের মতো অকৃপণ মানব সত্তা গড়ে তুলতে হবে। গভীর মমতা নিয়ে সমাজে সকলের বিপদে এগিয়ে আসতে হবে। এমন হলেই উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্যপূর্ণ ভাবকে দূর করা যাবে।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ঈদে যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে ২৭ জন নিহত হবার খবর জেনে উপল মর্মাহত হলো। সে যাকাতের টাকা দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নিল। সে দেখেছে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অনাহারে, অর্থাভাবে কষ্টে থাকে। এসব নিঃস্ব পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করার জন্য সে সেলাই মেশিন, ভ্যান, গরু ও ছাগল কিনে দিল। উপলের এই উদ্যোগের খবর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে।

ক. ‘প্রার্থী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. কবি সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নিঃস্ব মানুষগুলো ‘প্রার্থী’ কবিতার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের উপলের উদ্যোগ যেন ‘প্রার্থী’ কবিতার কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন।”-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক. ‘প্রার্থী’ কবিতাটি ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
খ. কবি সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন, কারণ নিপীড়িত মানুষরা সবসময়ই শীতার্ত।
➠ শীতের নিদারুণ কনকনে আঘাত শোচিতদের হাড়ে বাজে। শীত নিবারণের মতো যথেষ্ট কাপড়-চোপড় তাদের নেই। সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে অথবা এক টুকরা কাপড়ে কান ঢেকে আমরা শীত নিবারণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাই। আমাদের এই কষ্ট দেখে কবি সূর্যের কাছে মিনতি জানিয়েছেন, যেন সূর্য আমাদের উত্তাপ দেয়।

গ. উদ্দীপকের নিঃস্ব মানুষগুলো ‘প্রার্থী’ কবিতায় বঞ্চিত, অবহেলিত, অসহায় মানুষের প্রতি সমবেদনার দিক থেকে সম্পর্কযুক্ত।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় ফুটে ওঠা দিকটি হচ্ছে অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন। কবি বস্ত্রহীন, অসহায় মানুষের শীত নিবারণের জন্য সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন। অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি কবির মমত্ববোধ অসীম। তিনি এমন সমাজ গড়তে চান যাতে বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষের জীবন থেকে সব দুঃখ চিরতরে ঘুচে যায়।
➠ উদ্দীপকের উপল যাকাতের টাকা দিয়ে গ্রামের অসহায়, বুভুক্ষু, নিঃস্ব মানুষগুলোকে সাহায্য করে। অসহায় মানুষগুলোকে স্বাবলম্বী করার জন্য সেলাই মেশিন, ভ্যান, গরু ও ছাগল, কিনে দিল। সুতরাং ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবির সহানুর্ভূতিশীল মনোভাবটি উদ্দীপকের আলোকে ফুটে উঠেছে।

ঘ. “উদ্দীপকের উপলের উদ্যোগ যেন ‘প্রার্থী কবিতার কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন”- মন্তব্যটি সম্পূর্ণ যথাযথ।
➠ উদ্দীপকের উপল ও ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবির মধ্যে পরোপকার ও মানুষের সেবা করার মানসিকতার মিল রয়েছে। উপলের এ মানসিকতা জেগে উঠেছে যাকাতের কাপড়-এর জন্য পৃষ্ট মানুষের আর্তনাদ দেখে। আর কবির এ অনুভূতি এসেছে বঞ্চিত মানুষের অবস্থা দেখে। দুঃখী মানুষের দুর্দশা লাঘবের ক্ষেত্রে উপল ও কবির চেতনাগত মিল রয়েছে।
➠ উদ্দীপকের উপল যাকাতের টাকা দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নিঃস্ব পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করার জন্য সেলাই মেশিন, ভ্যান, গরু, ছাগল কিনে দেয়। অন্যদিকে ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি অভাবী ও দুঃখী মানুষের জন্য সূর্যের অফুরন্ত তাপের প্রত্যাশা করেছেন। তাদের কষ্টকে তিনি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন।
➠ সামগ্রিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উদ্দীপকের উপলের উদ্যোগ আর ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবির প্রত্যাশা যেন একই সুতোয় গাঁথা।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
প্রচণ্ড শীতের রাত্র কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেল কিছু অসহায় ছিন্নমূল শিশু প্লাটফর্মের উপরে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে। ছিন্ন বস্ত্র গায়ে দিয়ে তারা শীত নিবারণের বৃথা চেষ্টা করছে।

ক. সকালের এক টুকরো রোদ্দুর কীসের চেয়ে দামি?
খ. ‘প্রার্থী’ কবিতায় ‘রোদ্দুরের তৃষ্ণা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকটিতে বর্ণিত দিকটি ‘প্রার্থী’ কবিতার যে দিকের সাথে সংগতিপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘প্রার্থী’ কবিতায় বর্ণিত শ্রেণির ভাগ্য উন্নয়নই ছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্য”- বিশ্লেষণ কর।

ক. সকালের এক টুকরো রোদ্দুর সোনার চেয়ে দামি।
খ. ‘প্রার্থী’ কবিতায় ‘রোদ্দুরের তৃষ্ণা’ বলতে শীতের সকালে রোদের প্রতি মানুষের আকাক্সক্ষাকে বোঝানো হয়েছে।
শীতের সকালের রোদ অনেক প্রতীক্ষিত। আমাদের সমাজে অনেক দরিদ্র মানুষ বাস করে। এদের বস্ত্র ও আশ্রয়ের অভাব। বিশেষ করে যাদের গরম কাপড়ের খুব অভাব তারা রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে এক টুকরো কাপড় দিয়ে কান ঢেকে বহু কষ্টে শীত আটকায়। তাই শীতার্ত মানুষ এক টুকরো রোদ প্রত্যাশা করে যা তাকে একটু উষ্ণতা দেবে।

গ. উদ্দীপটিতে বর্ণিত দিকটি ‘প্রার্থী’ কবিতার দরিদ্র-অসহায় মানুষের শীত নিবারণের চেষ্টার সাথে সংগতিপূর্ণ।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় দরিদ্র, অসহায়, বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষের কথা বর্ণিত হয়েছে; যারা দীন-দরিদ্র মানুষ। সামান্য শীত নিবারণের জন্য যারা নানা চেষ্টা করে। শেষে সব আশা ছেড়ে সূর্যের উত্তাপ প্রার্থনা করে। এ অসহায় মানুষগুলো অন্নহীন, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন।
➠ উদ্দীপকেও একই বিষয়বস্তুর প্রতিফলন ঘটেছে। এসব মানুষ দীন-দরিদ্র বলে আশ্রয় নিয়েছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। ছিন্নমূল এ মানুষগুলো প্লাটফর্মে জড়সড় হয়ে বসে আছে। ছিন্নবস্ত্র গায়ে দিয়ে শীত নিবারণের বৃথা চেষ্টা করছে। অর্থাৎ শীতে কষ্ট ভোগের দিক দিয়ে উদ্দীপকের বিষয়টি ‘প্রার্থী’ কবিতায় শীত বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষের প্রতিচ্ছবি।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘প্রার্থী’ কবিতায় বর্ণিত শ্রেণির ভাগ্য উন্নয়নই ছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্যই” এ মন্তব্যটি সঠিক।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায়, কবির অসহায়, দরিদ্র মানুষের প্রতি গভীর মমত্ব প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের সমাজের এমন কিছু মানুষ আছে, যারা আশ্রয়হীন ও বস্ত্রহীন। এ মানুষগুলো চির অবহেলিত। আমাদের সমাজে তারা শোষিত, যা কবির হৃদয়কে দারুণভাবে ব্যথিত করে তিনি এ বৈষম্য দূর করতে চান। সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়তে চান। যেখানে এ মানুষগুলো পাবে তাদের প্রাপ্য অধিকার।
➠ উদ্দীপকে অসহায়-দরিদ্র মানুষের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ মানুষগুলো আশ্রয়হীন। তাই তারা থাকে কমলাপুর রেলস্টেশনে। শীত নিবারণের সামান্য বস্ত্রও তাদের নেই। তারাও আমাদের সমাজের মানুষ। তাই তাদের এমন হীন অবস্থা কখনই কাম্য নয়।
➠ উদ্দীপকে যেসব অসহায় মানুষের কথা বলা হয়েছে, কবিতায় তাদের প্রতি গভীর মমত্ব প্রকাশ পেয়েছে। কবি এদের নিয়ে সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়তে চান।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গত বছর কয়লা কুড়ানির দলে রাতুল নিজের নাম লিখিয়েছে। সারারাত স্টেশনে কয়লার চালান আসে। মাল খালাসের পর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কয়লার টুকরো। সেসব কুড়িয়ে রাতুল অন্যদের মতো হাটে বিক্রি করে। সারাবছরই রাত জাগতে হয় রাতুলদের। তেমন কষ্ট হয় না। শুধু শীতের সময় ছাড়া। শীতের রাতে শরীর কুঁকড়ে যায়। রক্ত চলাচল স্তিমিত হয়ে যায়। নাক দিয়ে কুয়াশা চলাচল করে। সে কুয়াশা একেবারে কলিজা পর্যন্ত ঠাণ্ডা করে দেয়। এ শীতে মাত্র একটা জামা আছে রাতুলের। প্রচণ্ড শীতের রাতে সে স্টেশনে কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমায়।

ক. শীত নিবারণের জন্য সাধারণত কী জ্বালানো হয়?
খ. “কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!”-চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে ‘প্রার্থী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ ‘প্রার্থী’ কবিতার সমগ্রভাব উদ্দীপক ধারণ করেনি।” - মন্তব্যটির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।

ক. শীত নিবারণের জন্য সারারাত খড়কুটো জ্বালানো হয়।
খ. “কত কষ্টে আমরা শীত অটিকাই!”- এ চরণটি দ্বারা অসহায়ের আর্তনাদকে বোঝানো হয়েছে।
➠ দরিদ্রনিপীড়িত শীতার্ত মানুষগুলোর প্রচণ্ড শীতকে নিবারণ করার মতো সামান্য শীতবস্ত্রও নেই। সামান্য কাপড়ে কান ঢেকে এবং খড়কুটো জ্বালিয়ে রাত কাটায়। প্রচণ্ড শীতে সূর্যের উত্তাপের জন্য অপেক্ষা করে অসহায় মানুষগুলো। প্রশ্নোক্ত চরণটি দ্বারা তাদের এ অসহায় আর্তনাদকে বোঝানো হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে ‘প্রার্থী’ কবিতায় শীতের রাতে কষ্ট পাওয়া বস্ত্রহীন বালকটির কষ্টের চিত্র ফুটে উঠেছে।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি কবির সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। প্রচণ্ড শীতে সূর্যের উত্তাপের জন্য সারারাত অপেক্ষা করা বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন শীতার্ত মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্ট-যন্ত্রণা থেকে কবি মুক্তি দিতে চেয়েছেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের এ চাওয়া মূলত উদ্দীপক ও ‘প্রার্থী’ কবিতায় বর্ণিত শ্রেণির ভাগ্য উন্নয়নে কবির প্রত্যাশা ও উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে।
➠ উদ্দীপকের রাতুল অত্যন্ত গরিব, পেটের ক্ষুধা মেটাতে তাকে কয়লা কুড়াতে হয়। এ জন্য প্রায় সারা বছরই রাতুলকে রাত জাগতে হয়। রাতুলের এসবে বিশেষ কষ্ট হয় না; শুধু শীতের রাত বাদে। শীতকালে তার নাক দিয়ে কুয়াশা চলাচল করে। সে ঠাণ্ডা রাতুলের কলিজা হিম করে দেয়। বস্তুত শীত নিবারণের মতো কাপড় রাতুলের নেই, প্রচণ্ড শীতে তাই স্টেশনে সে কুণ্ডলী হয়ে ঘুমায়। তাই কবি সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন। কারণ সূর্য ছাড়া পৃথিবীর কেউ তাকে উত্তাপ দিতে পারবে না। ‘প্রার্থী’ কবিতার এ ভাবটিই উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রার্থী’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করতে পারেনি।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি দৈন্য মানুষের শীতে কষ্ট পাওয়ার চিত্র ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে চেয়েছেন দারুণভাবে। আমাদের সমাজের অনেক দরিদ্র ও অসহায় মানুষ শীতে কষ্ট পায়। কিন্তু যাদের অনেক আছে, তাদের বিবেক ঘুমিয়ে আছে। কবির মতে, সূর্যের অসীম তেজে অর্থাৎ জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে যখন আমাদের সব জড়তা পুড়ে যাবে, তখন বিবেক জাগ্রত হয়ে উঠবে। আর আমাদের বিবেক জাগ্রত হলে রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির বস্ত্রের অভাব ঘুচে যাবে।
➠ উদ্দীপকের রাতুলও পেটের খাবার জোগাতে শিশু বয়সেই তাকে পরিশ্রমের পথে নামতে হয়েছে কয়লা কুড়ানোর জন্য। প্রায় সারা বছরই রাতুলকে রাত জাগতে হয়। এতে তার তেমন সমস্যা হয় না, কিন্তু শীতকালে রাতুলের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড শীতে রাতুল স্টেশনের বারান্দায় কুণ্ডলী হয়ে শুয়ে থাকে। কারণ শীত আটকানোর মতো যথেষ্ট জামাকাপড় তার নেই। এখানে, রাতুলের দৈন্যদশা তথা দুর্ভোগের চিত্রটিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর এ সমস্যা প্রতিকারের কোনো ভাব উদ্দীপকে ব্যক্ত হয়নি।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি শীতের সময় যন্ত্রণার কথা প্রকাশের মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণির শীতার্ত মানুষের বিবেককেও জাগ্রত করতে চেয়েছেন। আর উদ্দীপকে শুধু রাতুলের দুর্ভোগের কথা প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘প্রার্থী’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বেঁচে থাকার জন্য সূর্যের আলো অপরিহার্য। শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর সব উদ্ভিদ ও প্রাণী সূর্যের মুখাপেক্ষী। কিন্তু সূর্য কৃপণ নয়। অকৃপণভাবে সবার কাছে সমান উত্তাপ পৌঁছে দেয়। সূর্য থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সমাজ গড়তে হবে। সমাজে যারা সম্পদশালী আছে, তাদের মধ্যে মানবতার ঘাটতি থাকে। মানবতার এ ঘাটতি পূরণ করে আমরা যদি সূর্যের মতো সবার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। তবে সমাজের কেউ আর শীতের মতো কঠিন কষ্টে ভুগবে না।

ক. কীসের উত্তাপে আমাদের জড়তা পুড়ে যাবে?
খ. শীতার্ত মানুষেরা সূর্যের জন্য অপেক্ষা করে কেন?
গ. বিবেক জাগানোর মাধ্যম হিসেবে উদ্দীপকের উপমার সাথে ‘প্রার্থী’ কবিতার কোন দিকটির মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘প্রার্থী’ কবিতার মূলভাবের স্ফুরণ ঘটেছে” - বিশ্লেষণ কর।

ক. সূর্যের উত্তাপে আমাদের জড়তা পুড়ে যাবে।
খ. প্রচণ্ড হিমশীতে শরীরটাকে একটু উষ্ণ করার জন্য মানুষেরা সূর্যের জন্য অপেক্ষা করে।
➠ আমাদের দেশের দরিদ্র নিপীড়িত মানুষ শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো সামান্য উষ্ণ কাপড়ও নেই। এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে তারা শীত আটকায়। এজন্য তারা সকালের সূর্যের উত্তাপের জন্য হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত অপেক্ষা করে।

গ. বিবেক জাগানোর মাধ্যম হিসেবে উদ্দীপকের সূর্যের অফুরন্ত অবদানের সাথে ‘প্রার্থী’ কবিতার সূর্যের মতো জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডের উপমার দিকটির মিল রয়েছে।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি সূর্যের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যেন সূর্য আমাদের আর রাস্তার উলঙ্গ ছেলেটাকে শীত নিবারণের জন্য উত্তাপ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। কারণ সূর্যের কোনো জড়তা নেই। সবার জন্য সে সমান মমতা সরবরাহ করে। কবি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যদি সূর্যের প্রচণ্ড প্রভাবে আমাদের বিবেকের জড়তা পুড়ে যায়, তবে আমরা শীতার্তের কষ্টে এগিয়ে আসব।
➠ উদ্দীপকে বেঁচে থাকার জন্য সূর্যের প্রয়োজনীয়তা ও সূর্যের মহানুভবতার দিকটিই ফুটে উঠেছে। কোনো বিশেষ প্রাণী বা জাতির প্রতি সূর্য বিশেষ দরদ বা হিংসা প্রদর্শন করে না, জগতের প্রত্যেককে সূর্য সমানভাবে আলো বিতরণ করে। আমাদের সমাজে যারা বিত্তবান, তাদের সূর্যের অনুসারী হওয়া উচিত। কারণ সূর্যের মতো আমরা যদি সর্বজনীন বিবেকের ধারক হতে পারি, তবে শীতের মতো কঠিন কষ্টে কাউকে ভুগতে হবে না। অর্থাৎ উদ্দীপকের সঙ্গে ‘প্রার্থী’ কবিতার সূর্যের আলোর নিঃস্বার্থ প্রয়োগ করার দিকটিরই মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ‘প্রার্থী’ কবিতার মূলভাবের স্ফুরণ ঘটেছে।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি আমাদের দৈন্যের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন, শীতের রাতে কবি বা আমাদের কষ্ট পাওয়ার একমাত্র কারণ হলো শীত আটকানোর মতো বিশেষ কাপড় বা সরঞ্জাম আমাদের নেই। কবি সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, সূর্য একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড। যেদিন সূর্যের প্রখর উত্তাপে আমাদের বিবেকের জড়তা পুড়ে যাবে, সেদিন রাস্তার উলঙ্গ ছেলেটাকে শীতে কষ্ট পোহাতে হবে না।
➠ বিবেকের জাগরণ ঘটানোর উপায় হিসেবে উদ্দীপকে আদর্শ হিসেবে সূর্যকে ধরা হয়েছে। জীবনধারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রাণীই প্রত্যক্ষভাবে সূর্যের মুখাপেক্ষী। কিন্তু সূর্য কৃপণ নয়, জগতের সব কিছুতে সে সমান আলো প্রদান করে। আমাদের সমাজে যারা অঢেল বিত্তবান, তারা যদি সূর্যের আদর্শে বলীয়ান হয়ে আর্তের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তবে সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমরা এটা করতে পারি না। কারণ আমাদের বিবেক জড়তার কঠিন নিগড়ে বন্দি। যেদিন আমাদের মানবিক জড়তা দূরীভূত হবে, সেদিন মানুষ আর শীতের মতো দুঃসহ কষ্টে ভুগবে না।
➠ পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকে ‘প্রার্থী’ কবিতার মূলভাবের স্ফুরণ ঘটেছে।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রায়হান ৫ বছর দেশের বাইরে রয়েছে। এ বছর ঈদ করার জন্য দেশে ফেরার পথে দেখল রাস্তার পাশে অসংখ্য মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে। এ দৃশ্যটি তার বিদেশে ফিরে যাওয়ার উৎসাহকে দমিয়ে ফেলল। সে তার পরিকল্পনা বদলে তথ্যচিত্র বানানোর উদ্যোগ নিল। রায়হানের এ উদ্যোগকে সকলে সাধুবাদ জানাল।

ক. কে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড?
খ. শীতের সূর্য বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের রায়হানের-এর দেখা দৃশ্যের সাথে ‘প্রার্থী’ কবিতাটি কীভাবে সম্পর্কিত? তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. কবির চিন্তা উদ্দীপকের রায়হানের পরিবর্তিত পরিকল্পনা ও লক্ষ্যের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে-  বিশ্লেষণ কর।

ক. সূর্য জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড।
খ. শীতের সূর্য হলো শীতকালের সকালের সূর্য। যে সূর্য আমাদের সমাজের বস্ত্রহীন ও আশ্রয়হীন শীতার্ত মানুষের জীবন থেকে শীতের কষ্ট দূর করে থাকে তাকে শীতের সূর্য বলে।
➠ হিমশীতল সুদীর্ঘ রাতে শীতের সূর্যের জন্য আমরা প্রতীক্ষা করে থাকি। এছাড়া প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ ধান কাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলোর জন্য। এমনকি আমাদের স্যাঁত সেঁতে ভিজে ঘরে উত্তাপ আর আলো দেয়, উত্তাপ দেয় রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেকে। সুতরাং শীতের সূর্য অসহায় মানুষ ও শিশুদের জন্য কল্যাণকর।

গ. ‘প্রার্থী’ কবিতার শীতার্ত মানুষের কষ্টের যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্দীপকের রায়হানের দেখা দৃশ্যের সাথে মিলে যায়।
➠ সমাজের নিচুতলার মানুষদের শীতের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যথেষ্ট শীতবস্ত্র থাকে না। ফলে তীব্র শীতে তাদের খুব কষ্ট পেতে হয়। এ বিষয়টিই উদ্দীপকের রায়হানের চোখে ধরা পড়েছে, যা ‘প্রার্থী’ কবিতায়ও প্রকাশ পেয়েছে।
➠ সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি প্রচণ্ড শীতে জর্জরিত দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন। উদ্দীপকের রায়হানও রাস্তার পাশের শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ দেখে ব্যাথিত হয়েছে। শীতের কারণে সহায় সম্বলহীন মানুষদের অসহায়ত্ব দেখে সমব্যথী হওয়ায় চিত্রটিই প্রকাশিত হয়েছে উদ্দীপক এবং ‘প্রার্থী’ কবিতায়।

ঘ. উদ্দীপকের রায়হানের পরিবর্তিত পরিকল্পনা ও লক্ষ্যই ‘প্রার্থী’ কবিতায় প্রকাশিত যা কবির মূল চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
➠ উদ্দীপকের রায়হান বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় রাস্তার পাশে দরিদ্র মানুষদের তীব্র শীতে কাতরাতে দেখে। তাদের দুর্ভোগ রায়হানের মনোজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং রায়হান এই মানুষদের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করে তার পরিকল্পনার পরিবর্তন ঘটায়। ‘প্রার্থী’ কবিতার কবিও দরিদ্র মানুষের শীতের কষ্টে অনুভূতিপ্রবণ হয়েছেন। অবহেলিত এ মানুষদের দুঃখ যেন চিরতরে ঘুচে যায় এ তার বাসনা।
➠ কবিতায় কবি অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষদের প্রতি শীতের উত্তাপ ও আলো প্রার্থনা করেছেন। তার এ অনুভূতি নিচু তলার মানুষদের প্রতি তাঁর গভীর মমতারই আভাস দেয়। উদ্দীপকের রায়হান দরিদ্র শীতার্ত মানুষের কষ্ট নিয়ে তথ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনা করে। ঈদ শেষে বিদেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তা বাতিল করে। এ পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে গরিব মানুষদের প্রতি রায়হানের সহানুভূতি প্রকাশেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। রায়হানের তথ্য চিত্রের লক্ষ্য দরিদ্র মানুষের কষ্ট বিমোচন, যা ‘প্রার্থী’ কবিতায় প্রকাশিত কবির চেতনার অনুরূপ।
➠ অতএব, আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, কবির চিন্তা উদ্দীপকের রায়হানের পরিবর্তিত পরিকল্পনা ও লক্ষ্যের মধ্য আত্মপ্রকাশ করেছে।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
টেলিভিশনে বন্যার্ত মানুষের দুর্দশা দেখে সৈকত মর্মাহত। এসব মানুষের জন্য কী করা যায় রাত জেগে সে চিন্তাই করেছে সৈকত। সকালে রাহাতকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দুই বন্ধু নিজেদের এবং পাশের বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বুঝিয়ে তাদের থেকে জামাকাপড়, টাকাপয়সা, শুকনো খাবার সংগ্রহ করে বন্যার্তদের সাহায্য করবে।

ক. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বছর বয়সে মারা যান?
খ. ধান কাটার দিনগুলো রোমাঞ্চকর হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. সৈকতের পদক্ষেপে ‘প্রার্থী’ কবিতায় ফুটে ওঠা দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের সৈকত ও ‘প্রার্থী’ কবিতার কবির মধ্যে মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

ক. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র একুশ বছর বয়সে মারা যান।
খ. ধান কাটার দিনগুলো রোমাঞ্চকর হওয়ার কারণ হলো নিজের পরিশ্রমের প্রতীক্ষিত ফসল কৃষক তার ঘরে তোলার পর্বটি শুরু করে।
➠ বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষক সারাবছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসলের মাঠে কাজ করে। হাল দেওয়া, জমি পরিষ্কার করা, বীজ বোনা, ফসলকে অনিষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা ইত্যাদি কাজ পরম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে সারা বছর কৃষকের পরম ধৈর্যের পরিচয় দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো ফসলের আনন্দ। এ কারণেই ধান কাটার দিনগুলো রোমাঞ্চকর।

গ. ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি যে উত্তাপের প্রত্যাশা করেছেন সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে উদ্দীপকের সৈকতের পদক্ষেপে।
➠ ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, এ পৃথিবীকে শক্তির মূল উৎস সূর্য। সূর্য যে তাপ বিকিরণ করে তার সাহায্যেই ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষ জীবনধারণ করে। কবি এখানে সূর্য বলতে মূলত সমাজের বিত্তবান মানুষদের বুঝিয়েছেন। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা অন্ন, বস্ত্র ও আশ্রয়হীন। কবি এ সকল মানুষের জন্য সমাজের সে বিত্তবানদের কাছ থেকে সাহায্য ও সহানুভূতির প্রত্যাশা করেছেন।
➠ উদ্দীপকের সৈকত টেলিভিশনে বন্যার্ত মানুষের দুর্দশা দেখে মর্মাহত। এসব মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তায় সে সারাবাত জেগে ছিল। অবশেষে বন্ধু রাহাতকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিজেদের এবং পাশের স্কুলের ছাত্রদের কাছ থেকে জামা, কাপড়, টাকা-পয়সা, শুকনো খাবার সংগ্রহ করে তাদের সাহায্য করার। রাহাতের এ সিদ্ধান্ত থেকে অসহায়, বঞ্চিত মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ও সহানুভূতির পরিচয় পাই। ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি এটিই প্রত্যাশা করেছেন। কবি চেয়েছেন অসহায় দরিদ্র মানুষে জীবন থেকে সব দুঃখ যেন ঘুচে যায়।

ঘ. “উদ্দীপকের সৈকত ও ‘প্রার্থী’ কবিতার কবির মধ্যে মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন”-  এ মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ কারণ উদ্দীপকের সৈকত বন্যার্ত মানুষের সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সে তাদের দুঃখ-দুর্দশা অনুভব করে নিজের দিক থেকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছে। এজন্য সে নিজের স্কুল ও পাশের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে জামা-কাপড়, টাকা-পয়সা, শুকনো খাবার সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। সৈকত যথার্থভাবেই এদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সৈকত যেন ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবির প্রত্যাশিত সূর্য। এই সূর্যের উত্তাপে সমাজের অসহায় মানুষদের দুঃখ দূর হবে।
➠ উদ্দীপকের সৈকত ও ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবির মধ্যে মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ উদ্দীপকের সৈকত বন্যার্ত মানুষের দুর্দশা দেখে মর্মাহত। অপরদিকে প্রার্থী কবিতার কবি শীতার্ত মানুষের দুর্দশা দেখে মর্মাহত।
➠ উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকের সৈকত এবং প্রার্থী কবিতায় কবির মধ্যে মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বিত্তশালী রায়হান সাহেব একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বললেন, ‘শিক্ষা গ্রহণ আমাদের মৌলিক অধিকার। আমাদের প্রত্যেকের উচিত সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করা। আমি কথা দিচ্ছি, শিক্ষা গ্রহণের মহৎ কাজে আমার দরজা সবার জন্য খোলা।’ এতে আশাবাদী হয়ে রহিম শেখ তার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য এক হাজার টাকা সাহায্য চাইতে তার বাড়ি গেলে তিনি তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, ‘ইডিয়ট। এটা কি দান-খয়রাতের ঘর?’ পেছনে দাঁড়ানো রায়হান সাহেবের ছোট ছেলে অপু বলে, ‘বাবা, তোমার তো অনেক আছে, তোমরা না দিলে ওদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে কী করে?’

ক. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন?
খ. কবি রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটার জন্য উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন কেন?
গ. রায়হান সাহেবের শেষোক্ত আচরণে ‘প্রার্থী’ কবিতার ভাবার্থের বিপরীত চিত্র বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সামগ্রিক বক্তব্য কি ‘প্রার্থী’ কবিতার বক্তব্যের অনুরূপ? যুক্তিসহ আলোচনা কর।


‘প্রার্থী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাত প্রায় সাড়ে তিনটা। একটা ছেঁড়া কাঁথায় হাত-পা গুঁজে শুয়ে আছে তিন ভাইবোন। তাদের মাথার উপরে খড়ের ছাউনি। ছাউনির ফাঁক দিয়ে কুয়াশা ঢুকছে ঘরের ভেতর। সবচেয়ে ছোট ভাইটি শীতে ঠকঠক করে কাঁপে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। হাত-পা নিঃসাড়। চোখের পানিও যেন ঠাণ্ডা বরফ। মেজটা ধীরে ধীরে হাত ঘষে, গাল ঘষে। দু-এক ফোঁটা উত্তাপ বেরুলে ক্ষতি কী? বড় বোন প্রবোধ দেয়- “আর কাঁদিসনে। একটু পরই আলো ফুটবে। সূর্য উঠবে। শীত পালাবে লেজ গুটিয়ে।" কিন্তু ছোটটি কাঁদতেই থাকে। তার চোখে এখন শুধুই বরফ শীতল কুয়াশার বসবাস।

ক. আমরা কার প্রতীক্ষায় থাকি?
খ. ধান কাটার দিনগুলো রোমাঞ্চকর হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘প্রার্থী’ কবিতার সাদৃশ্যের দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে অসহায় মানুষের কষ্ট প্রকাশিত হলেও ‘প্রার্থী’ কবিতায় ইঙ্গিতকৃত অসহায়ত্ব থেকে মুক্তির পরিপূর্ণ সমাধান এখানে অনুপস্থিত- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।


তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url