নয়া পত্তন- জহির রায়হান

নয়া পত্তন
নয়া পত্তন

নয়া পত্তন
জহির রায়হান

ভোরের ট্রেনে গাঁয়ে ফিরে এলেন শনু পণ্ডিত।

ন্যুজ দেহ, রুক্ষ চুল, মুখময় বার্ধক্যেজ্যামিতিক রেখা।

অনেক আশা-ভরসা নিয়েই শহরে গিয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, কিছু টাকাপয়সা সাহায্য পেলে আবার নতুন করে দাঁড় করাবেন স্কুলটাকে।

আবার শুরু করবেন গাঁয়ের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর কাজ। কত আশা! আশার মুখে ছাই!

কেউ সাহায্য দিল না স্কুলটার জন্য। না চৌধুরীরা। না সরকার। সরকারের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে তো রীতিমতে ধমকই খেলেন শনু পণ্ডিত।

শিক্ষা বিভাগের বড়ো সাহেব শমসের খান বললেন, রাজধানীতে দুটো নতুন হোটেল তুলে, আর সাহেবদের ছেলেমেয়েদের জন্য একটা ইংলিশ স্কুল দিতে গিয়ে প্রায় কুড়ি লাখ টাকার মতো খরচ। ফান্ডে এখন আধলা পয়সা নেই সাহেব। অযথা বারবার এসে জ্বালাতন করবেন না আমাদের। পকেটে যদি টাকা না থাকে, স্কুল বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকুন। এমনভাবে ধমকে উঠেছিলেন তিনি যেন স্কুলের জন্য সাহায্য চাইতে এসে ভারি অন্যায় করে ফেলেছেন শনু পণ্ডিত।

হেঁট মাথায় সেখান থেকে বেরিয়ে চলে এলেও, একেবারে আশা হারাননি তিনি। ভেবেছিলেন সরকার সাহায্য দিল না, চৌধুরী সাহেব নিশ্চয়ই দেবেন। এককালে তো চৌধুরী সাহেবের সহযোগিতা পেয়েই না স্কুলটা দিয়েছিলেন শনু পণ্ডিত।

সে আজ বছর পঁচিশেক আগের কথা-

আশেপাশে দু-চার গাঁয়ে স্কুল বলতে কিছুই ছিল না।

লেখাপড়া কাকে বলে তা জানতই না গাঁয়ের লোক।

তখন সবেমাত্র এনট্রান্স পাশ করে বেরিয়েছেন শনু পণ্ডিত। বাইশ বছরের জোয়ান ছেলে

চৌধুরীর তখন যৌবনকাল। গাঁয়েই থাকতেন তিনি। গাঁয়ে থেকে জমিদারির তদারক করতেন। অবসর সময় তাস, পাশা আর দাবা খেলতেন বসে বসে। কথায় কথায় গাঁয়ে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার ইচ্ছেটা তাঁর কাছে ব্যক্ত করেছিলেন শনু পণ্ডিত। জুলু চৌধুরী বেশ আগ্রহ দেখালেন। বললেন, সে তা বড়ো ভাল কথা, গাঁয়ের লোকগুলো সব গণ্ডমূর্খ রয়ে যাচ্ছে। একটা স্কুলে যদি ওদের লেখাপড়া শেখাতে পারো সে তো বড়ো ভালো কথা। কাজ শুরু করে দাও।

টাকাপয়সা খুব বেশি না দিলেও, স্কুলের জন্য একটা অনাবাদি জমি ছেড়ে দিয়েছিলেন জুলু চৌধুরী। শহর থেকে ছুতোর মিস্ত্রি নিয়ে এসে গুটিকয়েক ছোটো ছোটো টুল আর টেবিলও তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি।

একমাত্র সম্বল দু-টুকরো ধেনো জমি ছিল শনু পণ্ডিতের। সে দুটো বিক্রি করে, স্কুলের জন্য টিন, কাঠ আর বেড়া তৈরির বাঁশ কিনেছিলেন তিনি।

ব্যয়ের পরিমাণটা তাঁরই বেশি ছিল, তবু চৌধুরীর নামেই স্কুলটার নামকরণ করেছিলেন তিনি-জুলু চৌধুরীর স্কুল। আটহাত কাঠের মাথায় পেরেক আঁটা চারকোনি ফলকের ওপর জুলু চৌধুরীর নামটা জ্বলজ্বল করত সকাল,বিকেল।

আজো করে।

যদিও আকস্মিক ঝড়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে ভেঙে পড়েছে স্কুলটা। আর তার টিনগুলো জং ধরে অকেজো হয়ে গেছে বয়সের বার্ধক্যহেতু। স্কুলটা ভেঙে পড়েছে। সেটা আবার নতুন করে তুলতে হলে অনেক টাকার দরকার। শনু পণ্ডিত ভেবেছিলেন, সরকার সাহায্য দিল না, জুলু চৌধুরী নিশ্চয়ই দেবেন। কিন্তু ভুল ভাঙল।

সাহায্যের নামে রীতিমতো আঁতকে উঠলেন জুলু চৌধুরী। বললেন, পাগল, টাকাপয়সার কথা মুখে এনো না কখনো। দেখছ না কত বড়ো স্টাব্লিশমেন্ট। চালাতে গিয়ে রেগুলার হাঁসফাঁস হয়ে যাচ্ছি। আধলা পয়সা নেই হাতে। এদিক দিয়ে আসছে, ওদিক দিয়ে যাচ্ছে। শনু পণ্ডিত বুঝলেন, গাঁয়ের ছেলেগুলো লেখাপড়া শিখুক, তা আর চান না চৌধুরী সাহেব।

কেউই চান না।

না চৌধুরী, না সরকার, কেউ না।

অগত্যা গাঁয়ে ফিরে এলেন শনু পণ্ডিত।

ভেঙে পড়া স্কুলটার পাশ দিয়ে আসবার সময় দু-চোখে পানি উপচে পড়ছিল শনু পণ্ডিতের। লুঙ্গির খুঁটে চোখের পানিটা মুছে নিলেন। গ্রামের লোকগুলো উন্মুখ হয়ে প্রতীক্ষা করছিল তাঁর অপেক্ষায়। ফিরে আসতেই জিজ্ঞেস করল, কী পণ্ডিত, টাকা-পয়সা কিছু দিল চৌধুরী সাহেব? না, গম্ভীর গলায় উত্তর দিলেন শনু পণ্ডিত। চৌধুরীর আশা ছাইড়া দাও মিয়ারা। এক পয়সাও আর পাইবা না তার কাছ থাইকা। সেই আশা ছাইড়া দাও।

পণ্ডিতের কথা শুনে কেমন ম্লান হয়ে গেল উপস্থিত লোকগুলো। বুড়ো হাশমত বলল, আমাগো ছেইলাপেইলাগুলা বুঝি মূর্খ থাইকবো?

তা, আর কী করার আছে বলো আমি তো আমার সাধ্যমতো করছি? আস্তে বলল শনু পণ্ডিত!

বুড়ো হাশমত বলল, তুমি আর কী কইরবা পণ্ডিত। তুমি তো এমনেও বহুত কইরছ। বিয়া কর নাই, শাদি কর নাই। সারা জীবনটাই তো কাটাইছ ওই স্কুলের পিছনে। তুমি আর কী কইরবা।

দুপুরে তপ্ত রোদে তখন খাঁ খাঁ করছিল মাঠ ঘাট, প্রান্তর। দূরে খাসাড়ের মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বসে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিল কোনো রাখাল ছেলে। বাতাসে বেগ ছিল না। আকাশটা মেঘশূন্য।

সবাইকে চুপচাপ দেখে আমিন বেপারি বলল, আর রাইখা দাও লেখাপড়া। আমাগো বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষে কোনো দিন লেখাপড়া করে নাই। খেতের কাজ কইরা খাইছে। আমাগো ছেইলাপেইলারাও তাই কইরবো। লেখাপড়ার দরকার নাই।

তা মন্দ কও নাই বেপারি। তাকে সমর্থন জানাল মুন্সি আকরম হাজি। লেখাপড়ার কোনো দরকার নাই। আমাগো বাপ-দাদায় লেখাপড়া কারে কয় জাইনতোও না।

বাপ-দাদায় জাইনতোও না দেইখা বুঝি আমাগো ছেইলাপেইলাগুলাও কিছু জাইনবো না।ইতা কিতা কও মিয়া তকু শেখ রুখে উঠল ওদের ওপর। শনু পণ্ডিত বলল, আগের জমানা চইলা গেছে মিয়া। এই জমানা অইছে লেখাপড়ার জমানা। লেখাপড়া না জাইনলে এই জমানায় মানুষের কদর অয় না।

তা তোমরা কি কেবল কথা কইবা, না কিছু কইরবা। জোয়ান ছেলে তোরাব আলী অধৈর্য হয়ে পড়ল। বলল, চৌধুরীরা তো কিছু দিব না, তা বুঝাই গেল। আর গরমেন্টো-গরমেন্টোর কথা রাইখা দাও। গরমেন্টোও মইরা গেছেএহন কী কইরবা, একডা কিছু করো।

হুঁ। কী কইরবা করো। চিন্তা করো মিয়ারা। বিড়বিড় করে বলল শনু পণ্ডিত। বুড়ো হাশমত চুপচাপ কী যেন ভাবছিল এতক্ষণ। ছেলে দুটো আর বাচ্চা নাতিটাকে অনেক আশা-ভরসা নিয়ে স্কুলে দিয়েছিল সে। আশা ছিল আর কিছু না হোক লেখাপড়া শিখে অন্তত কাচারিপিয়ন হতে পারবে ওরা। গভীরভাবে হয়তো তাদের কথাই ভাবছিল সে। হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে বলল, যতসব ইয়ে অইছে-যাও ইস্কুল আমরাই দিমু। কারো পরোয়া করি না। না গরমেন্টো। না চৌধুরী, বলে কোমরে গামছা আঁটল হাশমত। বুড়ো হাশমতকে গামছা আঁটতে দেখে জোয়ান ছেলে তোরাব আলীও লাফিয়ে উঠল। বলল, টিনের ছাদ যদি না দিবার পারি অন্তত ছনের ছাদ তো দিবার পারমু একডা। কি মিয়ারা?

হ-হ ঠিক। ঠিক কথাই কইছ আলির পো। গুঞ্জরন উঠল চারদিকে।

হাশমত বলল, মোক্ষম প্রস্তাব। ছনের ছাদই দিমু আমরা। ছনের ছাদ দিতে কয় আঁটি ছন লাইগবো? কী পণ্ডিত, চুপ কইরা রইলা ক্যান। কও না? কমপক্ষে তিরিশটা লাইগবো। মুখে মুখে হিসাব করে দিল শনু পণ্ডিত। তকু বলল, ঘাবড়াইবার কি আছে, আমি তিনডা দিমু তোমাগোরে।

আমি দুইডা দিমু পণ্ডিত। আমারডাও লিস্টি করো। এগিয়ে এসে বলল কদম আলী।

তোরাব বলল, আমার কাছে ছন নাই। ছন দিবার পারমু না আমি। আমি বাঁশ দিমু গোটা সাত কুড়ি। বাঁশও তো সাত-আট কুড়ির কম লাইগবো না।

হ-হ ঠিক ঠিক। সবাই সায় দিল ওর কথায়।

দু দিনের মধ্যে জোগাড়যন্ত্র সব শেষ।

বাঁশ এল, ছন এল। তার সঙ্গে বেতও এল বাঁশ আর ছন বাঁধবার জন্য।

আয়োজন দেখে আনন্দে বুকটা নেচে উঠল শনু পণ্ডিতের। এতক্ষণ গম্ভীর হয়ে কী যেন ভাবছিল আমিন বেপারি।

সবার যাতে নজরে পড়ে এমন একটা জায়গায় গলা খাঁকরিয়ে বলল সে, জিনিসপত্তর তো জোগাড় কইরাছ মিয়ারা। কিন্তুক যারা গতর খাইটবো তাগোরে পয়সা দিবো কে?

হাঁ, তাই তো। কথাটা যেন এক মুহূর্তে নাড়া দিল সবাইকে।

হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠলেন শনু পণ্ডিত। এইডা বুঝি একটা কথা অইল। নিজের কাম নিজে করমু পয়সা আবার কে দিবো? বলে বাঁশ কেটে চালা বাঁধতে শুরু করলেন তিনি। বললেন, নাও নাও মিয়ারা শুরু করো।

হুঁ। শুরু করো মিয়ারা। বলল তকু শেখ।

স্কুলের খুঁটি তৈরির জন্য লম্বা একটা গাছের গুঁড়ি খালপার থেকে টেনে নিয়ে এল তোরাব। হুঁ, টান মারো না মিয়ারা। টান মারো।

হুঁ। মারো জোয়ান হেঁইয়ো-সাবাস জোয়ান হেঁইয়ো। টান মারো। টান মারো।

আন্তে আস্তে। এত তড়বড় করলে অয়। বলল বুলির বাপ। হুঁ।

কামের মানুষ হেঁইয়ো-আপনা কাম হেইয়ো। টান টান।

মরা চৌধুরী হেঁইয়ো। চৌধুরীর লাশ হেঁইয়ো। হঠাৎ খিলখিলিয়ে হেসে উঠল তোরাব আর তকু।

হাসল সবাই।

খকখক করে কেশে নিয়ে বুড়ো হাশমত বলল, মরা গরমেন্টো কইলানা মিয়ারা? মরা গরমেন্টো কইলা না?

হুঁ। মরা গরমেন্টো হেঁইয়ো। -গরমেন্টোর লাশ হেঁইয়ো। টান টান। করম মাঝি চুপ করে এতক্ষণ। বলল,

ফুর্তিছে কাম কর মিয়া সিন্নি পাকাইবার বন্দোবস্ত করিগা।

বাহবা, মাজির পো, বাবা। চালাও ফুর্তি। কলকন্ঠেঠে চিৎকার উঠল চারদিক থেকে- পাটারি বাড়ির রোগা লিকলিকে বুড়ো কাদের বক্সটাও এসে জুটেছে সেখানে। তাকে দেখে আমিন বেপারি ভ্রূ কুঁচকালো। কী বক্স আলী। সিন্নিগন্ধে ধাইয়া আইছ বুঝি?? কয় দিনের উপাস?

যত দিনের অই; তোমার তাতে কী? বেপারির কথায় খেপে উঠল কাদের বক্স। এত দেমাক দেহাও ক্যান মিয়া উপাস ক্যাডা না থাকে? সক্কলে থাকে।

ঠিক ঠিক। তফু সমর্থন করল তাকে। চৌধুরীরা ছাড়া আর সক্কলেই এক-আধ বেলা উপাস থাকে। এমন কোনো বাপের ব্যাটা নাই যে বুক থাবড়াইয়া কইবার পারব-জীবনে একদিনও উপাস থাকে নাই-হ।

তকু আর কাদেরের কথায় চুপসে গেল আমিন বেপারি।

তোরাব বলল, কী মিয়ারা, কিতা নিয়া তর্ক কর তোমরা। বেড়াটা ধরো। টান মারো।

হুঁ। মারো জোয়ান হেঁইয়ো-চৌধুরীর লাশ হেঁইয়ো-মরা চৌধুরী হেঁইয়ো। আহ্হারে চৌধুরী রে! খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সবাই একসঙ্গে।

আকরম হাজি রুষ্ট হলো এদের ওপর। এত বাড়াবাড়ি ভালা না মিয়ারা। এত বাড়াবাড়ি ভালা না। এহনও চৌধুরীর জমি চাষ কইরা ভাত খাও। তারে নিয়া এত বাড়াবাড়ি ভালা না।

চাষ করি তো মাগনা চাষ করি নাকি মিয়া। তোরাব রেগে উঠল ওর কথায়। পাল্লায় মাইপা অর্ধেক ধান দিয়া দিই তারে।

পাক্কা অর্ধেক। বলল কাদের।

সন্ধ্যা নাগাদ তৈরি হয়ে গেল স্কুলটা।

শেষ বানটা দিয়ে চালার ওপর থেকে নেমে এলেন শনু পণ্ডিত।

লম্বা স্কুলটার দিকে তাকাতে আনন্দে চিকচিক করে উঠল কর্মক্লান্ত চোখগুলো। সৃষ্টির আনন্দ।

কদম আলী বলল, গরমেন্টোরে আর চৌধুরীরে আইনা একবার দেখাইলে ভালা অইবো পণ্ডিত। তাগোরে ছাড়াও চইলবার পারি আমরা।

হ-হ। তাগোরে ছাড়াও চইলবার পারি আমরা।। ঘাড় বাঁকাল শনু পণ্ডিত।

একটু দূরে সরে গিয়ে বটগাছের নিচে বসতেই কাঠের ফলকটার দিকে চোখ গেল তকু শেখের। আট-হাত লম্বা কাঠের ওপর পেরেক-আঁটা ফলক।

তার ওপর জুলু চৌধুরীর নামটা জ্বলজ্বল করে সকাল বিকেল।

ওইটা আর এইহানে ক্যান? বলল তকু শেখ। ওইটারে ফালাইয়া দে খালে; চৌধুরী খালে ভাসুক। হঠাৎ কী মনে করে আবার নিষেধ করল তোরাব।

থাম-থাম-ফালাইস না। ইদিকে আন। কালো চারকোনি ফলকটার ওপর ঝুঁকে পড়ে একখানা দা দিয়ে ঘষে ঘষে চৌধুরীর নামটা তুলে ফেলল তোরাব আলী। তারপর বুড়ো হাশমতের কল্কে থেকে একটা কাঠকয়লা তুলে নিয়ে অপটু হাতে কী যেন লিখল সে ফলকটার ওপর।

শনু পণ্ডিত জিরোচ্ছিল বসে বসে। বলল, ওইহানে কী লেইখবার আছ আলীর পো। কিতা লেইখবার আছ ওইহানে?

পইড়া দেহ না পণ্ডিত, আহ পইড়া দেহ। আটহাত লম্বা কাঠের ওপর পেরেক-আঁটা ফলকটাকে যথাস্থানে গেঁড়ে দিল তোরাব।

অদূরে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত দৃষ্টি মেলে মৃদুস্বরে পড়লেন পণ্ডিত। শনু পণ্ডিতের ইস্কুল। পড়েই বার্ধক্য-জর্জরিত মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল তাঁর।

বিড়বিড় করে বললেন, ইতা কিতা কইরাছ আলীর পো। ইতা কিতা কইরাছ? ঠিক কইরছে। একদম ঠিক। ফোকলা দাঁত বের করে মৃদু হাসল বুড়ো হাশমত। লজ্জায় তখন মাথাটা নুয়ে এসেছে শনু পণ্ডিতের।

উৎস নির্দেশ :
‘নয়া পত্তন’ গল্পটি জহির রায়হানের ‘গল্পসমগ্র’ থেকে সংকলিত হয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ পত্তন- আরম্ভ, সূচনা।
➠ গাঁয়ে- গ্রামে।
➠ ন্যুজ- কুঁজো।
➠ রুক্ষ- খসখসে।
➠ বার্ধক্য- বৃদ্ধ অবস্থা।
➠ জ্যামিতিক- জ্যামিতির নকশা জাতীয়।
➠ আশা-ভরসা- অবলম্বন।
➠ রীতিমতে- রীতি অনুসারে।
➠ ধমক- তিরস্কার; ভীতি প্রদর্শক বাক্য।
➠ ফান্ড- তহবিল। ইংরেজি Fund.
➠ কুড়ি- ২০।
আধলা পয়সা- অর্ধেক পয়সা; আধ-পয়সা।
➠ অযথা- খামোখা।
➠ জ্বালাতন- বিরক্ত।
➠ হেঁট- মাথা নিচু করা।
➠ এনট্রান্স- প্রবেশিকা পরীক্ষা। এ সময়ের এসএসসি সমমানের।
➠ জোয়ান ছেলে- যুবক ছেলে।
➠ তদারক- দেখাশোনা।
➠ তাস- খেলার জন্য চারকোনাবিশিষ্ট মোটা চিত্রিত কাগজখণ্ড বিশেষ।
➠ পাশা- ছয়-পার্শ্বযুক্ত পাশা। পাশা খেলার বর্তমান নাম হলো ছক্কা খেলা বা লুডু খেলা। এটি প্রাচীন কৌশল এবং ভাগ্য-নির্ভর খেলা, যা মূলত একটি ছোটো সংখ্যাযুক্ত পাশা (বা ছক্কা) নিক্ষেপ করে খেলা হয়। এই খেলার উদ্দেশ্য হল পাশার নিক্ষেপ থেকে প্রাপ্ত সংখ্যার উপর ভিত্তি করে খেলার গুটি চালনা করা।
➠ দাবা- এটি কৌশলগত বোর্ড গেম যা দুজন খেলোয়াড় ৬৪টি বর্গক্ষেত্রযুক্ত একটি বোর্ডে খেলে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ১৬টি ঘুঁটি থাকে। খেলাটি মূলত ভারত থেকে উদ্ভূত এবং এর লক্ষ্য হলো বিপক্ষের রাজাকে কোণঠাসা করে চেকমেট করা।
কথায় কথায়- কথা বলতে বলতে।
➠ ব্যক্ত- প্রকাশ পেয়েছে এমন।
➠ গণ্ডমূর্খ- জ্ঞানবুদ্ধিহীন।
➠ অনাবাদি- চাষ বা আবাদ করা হয় না এমন।
➠ ছুতোর- কাঠের কাজ করা শ্রমিক।
গুটিকয়েক- অল্প পরিমান; কয়েকটি।
➠ সম্বল- জীবিকা অর্জনের উপায়।
ধেনো জমি- যে জমিতে ধান হয়।
➠ বেড়া- যা দিয়ে বেষ্টন বা ঘেড়াও করা হয়।
পেরেক আঁটা- লোহার ছোট কাঁটা লাগানো।
➠ জ্বলজ্বল- উজ্জ্বল হয়ে থাকা।
➠ আকস্মিক- হঠাৎ।
➠ জং- মরিচা
➠ অকেজো- কাজের অযোগ্য; যা কোনো কাজে আসে না।
➠ বার্ধক্যহেতু- বয়সের কারণে; বৃদ্ধ অবস্থার কারণে।
➠ আঁতকে- চমকে।
➠ স্টাব্লিশমেন্ট- প্রতিষ্ঠান। ইংরেজি Establishment.
➠ রেগুলার- নিয়মিত। ইংরেজি Regular.
➠ হাঁসফাঁস- অতিকষ্টে শ্বাস নেওয়া ও ত্যাগ করা।
➠ অগত্যা- নিরুপায় হয়ে।
➠ খুঁট- কোনা, প্রান্তে।
➠ উন্মুখ- উৎসুক; তৎপর।
➠ প্রতীক্ষা- অপেক্ষা।
ছাইড়া দাও- ছেড়ে দাও।
➠ থাইকা- থেকে।
➠ ম্লান- মলিন।
আমাগো ছেইলাপেইলাগুলা বুঝি মূর্খ থাইকবো?- আমাদের ছেলে-মেয়েগুলো বুঝি মূর্খ থাকবে?
আর কী কইরবার আছে কও?- আর কী করার আছে বলো?
➠ সাধ্যমতো- ক্ষমতা অনুয়ায়ী; যথাশক্তি।
➠ কইরবা- করবে।
➠ তপ্ত - গরম।
➠ খাঁ খাঁ- শূন্যতা প্রকাশে।
➠ প্রান্তর- জনবসতিহীন বিস্তৃত ভূমি।
➠ বেগ- গতির পরিমাণ।
চৌদ্দপুরুষে- চৌদ্দ প্রজন্মে (সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের গড় সময় হলো প্রজন্ম।)।
ইতা কিতা কও মিয়া- এটা কি বল মিয়া।
➠ জমানা- যুগ।
চইলা গেছে- চলে গেছে।
এই জমানা অইছে লেখাপড়ার জমানা- এই যুগ হলো লেখাপড়ার যুগ।
লেখাপড়া না জাইনলে এই জমানায় মানুষের কদর অয় না।- লেখাপড়া না জানলে এই যুগে মানুষের সম্মান হয় না।
➠ কদর- সম্মান; মূল্য।
➠ অধৈর্য- অস্থির; ব্যাকুল।
➠ গরমেন্টো- Government.
➠ রাইখা- রেখে।
মইরা গেছে- মরে গেছে।
এহন কী কইরবা, একডা কিছু করো।- এখন কী করবে, একটা কিছু করো।
➠ বিড়বিড়- অস্পষ্ট ও অনুচ্চ স্বরে উচ্চারিত কথা।
➠ কাচারি- সরকারি অফিস।
➠ পিয়ন- পত্র বিলিকারী ব্যক্তি।
➠ গুঞ্জরন- গুনগুন রব।
➠ মোক্ষম- জুতসই।
পরোয়া করি না- ভয় করি না।
➠ গামছা- গা মোছবার জন্য ব্যবহৃত ক প্রকার কাপড়ের টুকরো।
➠ আঁটল- শক্ত করে বাঁধল।
➠ আঁটি- এটি আঞ্চলিক শব্দ। তৃণ বা শষ্যাদির গুচ্ছ।
➠ ছন- শন। এক ধরনের ঘাস, যা দিয়ে গ্রামে ঘরের ছাদ তৈরি করা হয়।
➠ ঘাবড়াইবার- ঘাবড়ানো অর্থ ভয় পাওয়া; হতবুদ্ধি হওয়া।
➠ লিস্টি- তালিকা; list.
➠ কুড়ি- ২০।
➠ জোগাড়যন্ত্র- আয়োজন বা প্রস্তুতি।
জিনিসপত্তর- জিনিসপত্র।
➠ জোগাড়- সংগ্রহ।
➠ কইরাছ- করেছো।
গতর খাইটবো- শারীরিক পরিশ্রম।
➠ তাগোরে- তাদেরকে।
➠ অইল- হলো।
➠ গুঁড়ি- গাছের খণ্ড।
➠ খালপার- খালের কিনারা/কূল।
➠ তড়বড়- তাড়াহুড়া।
➠ খিলখিলিয়ে- ক্রমাগত হাসির শব্দ; বিদ্রুপাত্মক হাসির শব্দ।
➠ খকখক- ক্রমাগত কাশির শব্দ।
➠ পো- পুত্র।
➠ পাকাইবার - রান্নার।
➠ ফুর্তিছে- আনন্দের সঙ্গে।
➠ সিন্নি- শিরনি। এক ধরনের খাবার।
➠ বন্দোবস্ত- আয়োজন।
➠ কলকন্ঠে- মধুর সুরে; ললিত কণ্ঠে।
➠ লিকলিকে- অত্যন্ত সরু ও লম্বা বোঝাতে।
➠ ভ্রূ- চোখের উপরে ও কপালের নিচের লোম/চুলসমূহ।
➠ কুঁচকালো- সংকচিত করা।
সিন্নির গন্ধে ধাইয়া আইছ বুঝি?- শিরনির সুবাসে দৌঁড়ে আসছো বুঝি?
➠ উপাস - অনাহারে থাকা।
➠ দেমাক- অহঙ্কার।
এত দেমাক দেহাও ক্যান মিয়া উপাস ক্যাডা না থাকে?- এত অহঙ্কার দেখাও কেন মিয়া অনাহারে কে না থাকে?
কিতা নিয়া- কী নিয়ে।
➠ রুষ্ট - রাগান্বিত।
➠ এহনও- এখনও
➠ মাগনা- বিনামূল্যে পাওয়া।
➠ পাল্লায়- ওজনের যন্ত্রে দ্রব্য বা বাটখারা রাখার পাত্র (দাঁড়ি পাল্লা)।
➠ মাইপা- মেপে।
➠ বান- বেঁধে দেওয়া।
➠ পাক্কা- পুরোপুরি।
➠ নাগাদ- পর্যন্ত।
➠ চিকচিক- দীপ্তিময়তা ও মসৃণতাব্যঞ্জক।
➠ আইনা- এনে।
দেখাইলে ভালা অইবো- দেখালে ভালো হবে।
তাগোরে ছাড়াও চইলবার পারি আমরা।- তাদেরকে ছাড়াও চলতে পারি আমরা।
কিতা লেইখবার আছ ওইহানে?- কী লেখার আছে ঐখানে?

পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব :
‘নয়া পত্তন’ গল্পটি পাকিস্তানি শাসনামলের পটভূমিতে রচিত। গল্পে দেখা যায়, এনট্রান্স পাশ শনু পণ্ডিত গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য জমিদারের সহায়তায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঝড়ে জরাজীর্ণ স্কুলটি ভেঙে গেলে শনু পণ্ডিতসহ গ্রামবাসী সংকটে পড়েন। গ্রামের সম্পন্ন ব্যক্তি জুলু চৌধুরী কোনো সাহায্য করতে রাজি হন না। আশেপাশের গ্রামেও আর স্কুল নেই। এ অবস্থায় সবাই সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে পরিশ্রম করে নিজেদের স্কুল নিজেরাই পুনর্নির্মাণ করবেন এবং সন্ধ্যার মধ্যেই তাঁরা স্কুল ঘর তৈরি করতে সক্ষম হন। আবার তাঁদেরই উৎসাহে চাষি তোরাব আলী স্কুলের নাম ফলকে আগের নামের পরিবর্তে লেখেন ‘শনু পণ্ডিতের ইস্কুল’ সবাই মিলে মানুষের জন্য ভালো কাজ করতে চাইলে যে কোনো বাধা সহজে অতিক্রম করা সম্ভব। আর সে কাজের সফলতায় বাড়ে মনের উদারতাও। গল্পটি সে ইঙ্গিত দেয়।

লেখক পরিচিতি :
জহির রায়হান ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ছোটোগল্প ও উপন্যাস লিখে তিনি খ্যাতি লাভ করেছেন। ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘বরফ গলা নদী’ তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তাঁর একমাত্র গল্পগ্রন্থ ‘সূর্য গ্রহণ’। চলচ্চিত্রকার হিসেবেও জহির রায়হান প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কাচের দেয়াল’ তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য চলচ্চিত্র। এছাড়া বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চিত্র ‘Stop Genocide’‘Birth of a Nation’ তাঁর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি।
মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বড়ো ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে জহির রায়হান ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে নিখোঁজ হন।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ১:
ক. ‘মরা চৌধুরী হইয়ো। চৌধুরী লাশ কাইয়্যো।’— কথা কেন বলা হয়েছে ব্যাখ্যা করো।
খ. ‘নয়া পত্তন’ গল্পে ফুটে ওঠা সমাজচিত্রের বর্ণনা দাও।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ২:
ক. শম্ভু পণ্ডিত শহরে গিয়েছিলেন কেন?
খ. ‘নয়া পত্তন’ গল্পে নয়া পত্তন ঘটে কীভাবে— বিচার করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ৩:
ক. ‘এত বাড়াবাড়ি ভালো না মিয়ারা’— কথাটি কোন প্রসঙ্গে কে বলেছে।
খ. ‘একতাই বল’— ‘নয়া পত্তন’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ৪:
ক. ‘এত দেমাক দেখাও ক্যান মিয়া’— কথাটি কে কোন প্রসঙ্গে বলেছে? বুঝিয়ে দাও।
খ. ‘বাঁধার প্রাচীর ডিঙিয়ে যেতে পারলেই সাফল্য আসে’— মন্তব্যটি ‘নয়া পত্তন’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ৫:
ক. শনু পণ্ডিত শহরে গিয়ে কী ধরনের সাহায্য আশা করেছিলেন? কেন করেছিলেন?
খ. শহরে গিয়ে তাকে কী ধরনের অবহেলা ও অপমানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল?

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ৬:
ক. চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে শনু পণ্ডিতের সম্পর্ক কেমন ছিল? তিনি কীভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য সাহায্য করেছিলেন?
খ. চৌধুরী সাহেব কেন স্কুলের পুনর্গঠন নিয়ে কোনো সাহায্য করতে রাজি হননি?

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ৭:
ক. ‘আশার মুখে ছাই!’ উক্তিটিতে শনু পন্ডিতের কোন মনোভাব পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
খ. গ্রামে প্রথমবার স্কুল তৈরির ঘটনাটি বর্ণনা করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ৮:
ক. নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠায় গ্রামবাসীরা কীভাবে সহযোগিতা করে? ব্যাখ্যা করো।
খ. ‘সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।’ ‘নয়া পত্তন’ গল্পের আলোকে আলোচনা করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ৯:
ক. শিক্ষা বিভাগের বড় অফিসারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরো।
খ. শনু পণ্ডিত চরিত্রটিকে মূল্যায়ন করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ১০:
ক) ‘এত দেমাক দেখনো ক্যান মিয়া, উপাস ক্যাডা না থাকে।’- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
(খ) ‘নয়া পত্তন’ গল্পটি একটি শ্রেণিসংগ্রামের গল্প-উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ১১:
ক. ‘পড়েই বার্ধক্য-জর্জরিত মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল তার।’- কার মুখ রাঙা হলো ও কারণ কী?
খ. ‘নয়া পত্তন’ গল্প থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ১২:
ক. ‘যাও স্কুল আমরাই দিমু’- কে এবং কেন একথা বলেছে?
খ. ‘মরা চৌধুরী হইলেও, চৌধুরীর লাশ হইলেও’- চরণটি কী প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে?

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ১৩:
ক. ‘যতসব হইয়ে আইছে- যাও স্কুল আমরাই দিমু।’ উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
খ. ‘শনু পণ্ডিত একটি অনুকরণীয় আদর্শ’- মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।

বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ১৪:

তথ্যসূত্র :
১. আনন্দপাঠ: অষ্টশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. গল্পসমগ্র: জহির রায়হান,অনুপম প্রকাশনী, ঢাকা, ২০২৩।
৩. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url