‘রানার’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
রানার : সুকান্ত ভট্টাচার্য |
রানার
সুকান্ত ভট্টাচার্য
রানার
ছুটেছে তাই ঝুমঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার!
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে
নতুন খবর আনার।
রানার! রানার!
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, এ রানার
দুর্বার
দুর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মতো পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ।
অবাক রাতের তারারা, আকাশে মিটমিট করে চায়;
কেমন করে এ রানার সবেগে
হরিণের মতো যায়!
কত গ্রাম কত পথ যায় সরে সরে-
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে
লন্ঠন
করে ঠনঠন, জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ
রানার। এখনো রাতের কালো।
এমনি করেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে
‘মেলে’।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।
অনেক দুঃখে, বহু বেদনায়, অভিমানে, অনুরাগে,
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।
রানার! রানার!
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে।
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে।
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ,
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই
কালো রাত্রির খামে।
দরদে
তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি,-
এ-কে যে ভোরের আকাশ পাঠাবে সহানুভূতির চিঠি-
রানার! রানার! কী হবে এ বোঝা বয়ে?
কী হবে ক্ষুধার ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে?
রানার! রানার! ভোর তো হয়েছে আকাশ হয়েছে লাল
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল?
রানার! গ্রামের রানার!
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চলো আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে-
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর,
অগ্রগতির ‘মেলে’,
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরি নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো, আরো বেগে
দুর্দম,
হে রানার ।।
উৎস নির্দেশ : |
---|
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতাটি কবির ‘ছাড়পত্র’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য বিখ্যাত কবিতাগুলো হলো- ছাড়পত্র, আগামী, প্রার্থী, চারাগাছ, লেলিন, ঠিকানা, রবীন্দ্রনাথের প্রতি ইত্যাদি। |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ রানার- ইংরেজি শব্দ ‘runner’-এর আভিধানিক অর্থ যিনি দৌড়ান। এখানে ‘ডাক
হরকরা’ বা ‘ডাক বাহক’ অর্থে ব্যবহৃত। যে কর্মচারী চিঠিপত্রাদির থলে করে এক
ডাকঘর হতে অন্য ডাকঘরে পৌঁছে দেয়, সে রানার বা ডাক বহনকারী, Mail Runner ➠ ডাকপিয়ন/ডাকপেয়াদা- ডাক বিভাগের যে কর্মচারী চিঠিপত্রাদি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয় বা বিলি করে। ➠ নতুন খবর আনার- ডাক হরকরার ব্যাগে মানুষের সুখ-দুঃখের অনেক অজানা সংবাদ থাকে। চিঠি বিলি হলে সে সংবাদ মানুষ জানতে পারে। তাই ডাক হরকরাকে নতুন খবরের বাহক বলা হয়েছে। ➠ দুর্বার- যাকে নিবারণ করা যায় না। ➠ দুর্জয়- যা কষ্টে জয় করা যায়। ➠ হরিণের মতো যায়- এটি একটি উপমা। হরিণ যেমন নিঃশব্দে কিন্তু অতি দ্রুত দৌড়ায়, রানারও তেমনি। ➠ লন্ঠন- হারিকেন বা তেল দিয়ে চালিত আলোর আধার। {(ইংরেজি) lantern} ➠ মাভৈঃ- অভ্যয় ব্যঞ্জক। ➠ মেলে- মেল+এ (mail); ডাকে। ➠ ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল- এটি প্রতীক। বাচ্যার্থে রাত্রির অন্ধকার শেষ হয়ে আকাশে সূর্য উঠছে। কিন্তু প্রতীকী অর্থে কষ্টের কালিমা দূরীভূত হয়ে সুখের সোনালি আলো দেখা দিচ্ছে। ➠ কালো রাত্রির খামে- লোকচক্ষুর আড়ালে। ➠ দরদে- সমবেদনায়; সহানুভূতিতে; মমতায়। ➠ দুর্দম- যা দমন করা কঠিন। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
‘রানার’ কবিতাটি শ্রমজীবী মানুষ রানারদের নিয়ে লেখা। তাদের কাজ হচ্ছে গ্রাহকদের কাছে ব্যক্তিগত ও প্রয়োজনের চিঠি পৌঁছে দেওয়া। রানাররা এতটাই দায়িত্বশীল যে কোনো কিছুই তাদের কাজের বাধা হয়ে ওঠে না। রাত হোক, দুর্গম পথ হোক, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হোক-নিরন্তর তাদের এই কাজ করে যেতে হয়। চিঠি মানেই সুখে-আনন্দে, দুঃখে-শোকে ভরা সংবাদ। এই সংবাদের জন্যেই অপেক্ষায় থাকে প্রিয়জনরা। প্রিয়জনদের কাছে যথাসময়ে এই খবর পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। রানারদের তাই ক্লান্তি নেই, অবসর নেওয়ার অবকাশ নেই। তারা ছুটছেন তো ছুটছেনই। এই মহান পেশায় যারা নিয়োজিত রয়েছেন তারা যে মানুষ হিসেবে কতটা মহৎ, কবিতাটিতে এই ভাবনারই প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। |
কবি পরিচিতি : |
---|
সুকান্ত ভট্টাচার্য ৩০শে শ্রাবণ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দে কলকাতার কালীঘাটে জন্মগ্রহণ
করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে
বিশ্বব্যাপী ধ্বংসও মৃত্যুর তাণ্ডবলীলা কিশোর সুকান্তকে দারুণভাবে স্পর্শ
করে। এছাড়া সামাজিক নানা অনাচার ও বৈষম্য তাঁকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে। তাঁর
কবিতায় এই অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ধ্বনিত প্রবল প্রতিবাদ আমাদের সচকিত
করে। নিপীড়িত গণমানুষের প্রতি গভীর মমতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। তাঁর
কাব্যগ্রন্থ: ছাড়পত্র, ঘুম নেই, পূর্বাভাস, অভিযান; ছোটগল্প:
হরতাল
ইত্যাদি। ২৯শে বৈশাখ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে মাত্র একুশ বছর (২১) বয়সে কবি মৃত্যুবরণ করেন।। |
কর্ম-অনুশীলন : |
---|
১। ‘শ্রমজীবী মানুষ যেসব পণ্য উৎপাদন করে তারা সে পণ্য ব্যবহার করতে পারে না’-শিরোনামে একটি রচনা লিখো। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
১। রানারের কাছে পৃথিবীটা ‘কালো ধোঁয়া’ মনে হয় কেন? ক. মেঘাচ্ছন্ন থাকায় খ. অভাবের তাড়নায় গ. সূর্য না ওঠায় ঘ. কলকারখানার কারণে ২। দস্যুর ভয়ের চেয়েও রানার সূর্য ওঠাকে বেশি ভয় পায় কেন? ক. চাকরি হারানোর জন্য খ. ডাক না পাওয়ার ভয়ে গ. বাড়ি ফেরার তাড়া থাকায় ঘ. দায়িত্ববোধের কারণে নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩-সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও: সুমন বেশ স্বেচ্ছাচারী। সব কাজই দায়সারা গোছে শেষ করে। ইচ্ছামতো অফিসে যাতায়াত করে। একদিন জরুরি সভা উপলক্ষে কর্মকর্তা অফিসে এসে দেখেন গেট বন্ধ। ফলে সমস্ত আয়োজন পণ্ড হয়ে যায়। ৩। উদ্দীপকের সুমন ও ‘রানার’ কবিতার রানার-এর সাদৃশ্যের দিকটি হলো তারা উভয়েই- i. চাকরিজীবী ii. দায়িত্ব সচেতন iii. সেবাদানকারী নিচের কোনটি সঠিক? ক. i খ. ii ও iii গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
সামাদ সাহেব ব্যাংকে ক্যাশিয়ার হিসেবে ৩০ বছর যাবৎ কর্মরত আছেন। সবার আগে
অফিসে আসেন এবং সবশেষে অফিস ত্যাগ করেন। একদিন ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে
অপরাহ্ণে তিনি বাড়ি যান। পরদিন যথাসময়ে তিনি ফিরে আসেন। তার কারণে কারো
এতটুকু কষ্ট যাতে না হয় সে ব্যাপারে তিনি বেশ সচেতন। ক. রানার ভোরে কোথায় পৌঁছে যাবে? খ. ‘রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে’ রানার কেন ছোটে? গ. উদ্দীপকের সামাদ সাহেবের মাঝে 'রানার' কবিতার রানার চরিত্রের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো। ঘ. “সামাদ সাহেব ‘রানার’ চরিত্রের বিশেষ দিককে ধারণ করলেও রানার স্বতন্ত্র” মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো। |
(ক) রানার ভোরে শহরে পৌঁছে যাবে। (খ) “রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে”- কারণ রানারের পেশাগত দায়িত্ববোধ। ➠‘রানার’ কবিতায় কবি শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন, দুঃখবোধ এবং তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সততার দিকটি তুলে ধরেছেন। রানার মানুষের সুখ-দুঃখের অনেক অজানা সংবাদবাহক। পিঠে খবরের বোঝা, মানি অর্ডার নিয়ে রাতের অন্ধকারে লন্ঠন জ্বালিয়ে, ঝুম্ঝুম্ ঘণ্টা বাজিয়ে ছুটে চলে রানার। সূর্য ওঠার আগেই সে গন্তব্যে পৌঁছতে চায়। তাই নির্জন পথে দস্যুর ভয়ের চেয়ে সূর্য ওঠায় তার বড় ভয়। (গ) উদ্দীপকের সামাদক সাহেবের মাঝে ‘রানার’ কবিতার রানার চরিত্রের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো পেশাগত দায়িত্ববোধ। ➠ পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা উচিত নয়। অথচ বহু লোক আছে যারা দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে না। এরা দেশ, জাতি ও সমাজের উন্নতির অন্তরায়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রাণপাত করে। তারাই সভ্যতার নির্মাতা, অগ্রযাত্রী। উদ্দীপকে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার সামাদ সাহেবের দায়িত্ববোধ, সততা ও সময়নিষ্ঠার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সামাদ সাহেব ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বাড়িতে গেলেও পরদিন অফিসে আসতে তার দেরি হয়নি। তিনি দীর্ঘ চাকরি জীবনে সবার আগে অফিসে আসেন এবং সবার পরে যান। এই বিষয়টি তাঁর দায়িত্ববোধের ও সময়নিষ্ঠার পরিচয় বহন করে। ➠ ‘রানার’ কবিতায় রানার তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত সচেতন। পিঠে খবরের বোঝা, মানি অর্ডার নিয়ে রাতের অন্ধকারে লণ্ঠন জ্বালিয়ে সে ছুটে চলে। পথে দস্যুর চেয়েও তার সূর্য ওঠার ভয়। ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে সে ছুটে চলে, তার দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে। ক্যাশিয়ার হয়েও ক্যাশের কোনো গড়মিল করেন না উদ্দীপকের সামাদ সাহেব। এই বিষয়টি ‘রানার’ কবিতার রানারের পিঠিতে টাকার বোঝা সে বহন করে কিন্তু ছুঁয়ে না দেখার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপক ও যকবিতা উভয়ক্ষেত্রেই দুজন কর্তব্যনিষ্ঠ ও সময়নিষ্ঠ পেশাজীবী। (ঘ) সামাদ সাহেব রানার চরিত্রের বিশেষ দিককে ধারন করলেও রানার স্বতন্ত্র মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ সমাজে নানা বৈশিষ্ট্যের এবং পেশার লোক বসবাস করে। তাদের একের আচরণের সাথে অন্যের আচরণের মিল অমিল দুটোই লক্ষ করা যায়। পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে এদের মধ্যে অনেক সময় যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়। কিন্তু জীবনযাপন, জীবনের দুঃখবোধ, কাজের ধরন ইত্যাদির মধ্যে মিল থাকে না। থাকলে তা পুরোপুরি নয়, খণ্ডিত বা আংশিক থাকে। উদ্দীপকে সামাদ সাহেব ক্যাশিয়ার হিসেবে ব্যাংকের অন্য সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারও কোনো ক্ষতি করেন না। যথাসময়ে অফিসে আসেন এবং সময় শেষ হওয়ার পর অফিস ত্যাগ করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বাড়িতে গেলেও পরদিন যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত থাকেন। ➠ উদ্দীপকে ক্লান্ত শ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে, তাদের কথা নেই। এই কথার বাস্তব উদাহরণ হয়েছেন ‘রানার’ কবিতার রানার। ক্ষুধিত রানারের জীবনযন্ত্রণা পথের তৃণ যেভাবে জানে শহরে কিংবা গ্রামের লোকেরা তা জানে না। রানার কবিতার ‘রানার চরিত্রের এই ট্র্যাজেডি উদ্দীপকে নেই। উদ্দীপকের সামাদ সাহেবের পেশাগত দায়িত্ববোধ ও সময়নিষ্ঠা রানার চরিত্রের বিশেষ দিককে ধারণ করে। কিন্তু রানার চরিত্রের অন্যসব দিক তার চরিত্রের মধ্যে ফুটে ওঠেনি। ➠ ‘রানার’ কবিতায় রানার শ্রমজীবী নিম্নশ্রেণির মানুষের প্রতিনিধি। সে অসাম্যের অমানবিকতার শিকার। কিন্তু উদদ্দীপকের সামাদ সাহেব তা নয়। সামাদ সাহেবের অফিসের সময়সূচি এবং ‘রানার’ কবিতার রানারের সময়সূচি এক নয়। রানারের জীবনের সমস্ত দুঃখ-কালো রাতের খামে ঢাকা পড়ে থাকে। এসব কারণে রানার স্বতন্ত্র। কাজেই প্রশ্নে উল্লেখিত মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
সে চলিতেছিল দুর্গম কাঁটাভরা পথ দিয়া। পথ চলিতে চলিতে সে একবার পিছনে
ফিরিয়া দেখিল, লক্ষ আঁখির অনিমিখ দৃষ্টি তাহার দিকে চাহিয়া আছে। সে
দৃষ্টিতে আশা-উন্মাদনার যে ভাস্বর জ্যোতি ঠিকরাইয়া পড়িতেছিল, তাহাই ঐ
দুরন্ত পথিকের বক্ষ এক মাদকতা ভরা গৌরবে ভরপুর করিয়া দিল। সে প্রাণভরা
তৃপ্তির হাসি হাসিয়া বলিল হাঁ ভাই! তোমাদের এমন শক্তিভরা দৃষ্টি পেলে
কোথায়? অযুত আঁখির নিযুত দীপ্ত চাউনি বলিয়া উঠিল ‘ওগো সাহসী পথিক, এ দৃষ্টি
পেয়েছি তোমারই ওই চলার পথ চেয়ে।’ (ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন? (খ) ‘কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার’ চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? (গ) উদ্দীপকের দুরন্ত পথিকের সঙ্গে ‘রানার’ কবিতার রানারের সাদৃশ্য নিরূপণ করো। (ঘ) “উদ্দীপকের দুরন্ত পথিকের চলার পথ এবং ‘রানার’ কবিতার রানারের চলার পথ একই।” মন্তব্যটি তুমি সমর্থন কর কি? মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করো। |
(ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য ২১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন? (খ) চরণটিতে বোঝানো হয়েছে রানারের কাজ হলো নির্দিষ্ট স্থানে যথাসময়ে খবর পৌঁছে দেওয়া। ➠ রানার ছুটে চলে দুর্বার গতিতে। সব বাধা অতিক্রম করে রানার ছুটে চলে খবরের ঝোলা নিয়ে। চিঠিতে থাকে সুখ-আনন্দ, দুঃখ-শোক ভরা সংবাদ। যার জন্য অপেক্ষায় থাকে প্রিয়জনরা। আর রানারের কাজ এই খবর যথাসময়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া। তাই বলা হয়েছে, রানার কাজ নিয়েছে নতুন খবর আনার। (গ) ছুটে চলার গতিতে উদ্দীপকের দুরন্ত পথিক এবং ‘রানার’ কবিতার পরানারের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ➠ পথ যত দুর্গম হোক না কেন, সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় রানার। নিজের কষ্ট বিসর্জন দিয়ে অন্যের জন্য কাজ করে রানার। ছুটে চলাই রানারের বৈশিষ্ট্য। কাঁটাভরা দুর্গম পথ দিয়ে হেঁটে চলে দুরন্ত পথিক। চলার পথের প্রতিবন্ধকতা সাহসের সঙ্গে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় সে। তার চলার পথে থাকে উজ্জ্বল আলোর জ্যোতি, যা সে অর্জন করেছে সাহসিকতার মধ্য দিয়ে। ➠ ‘রানার’ কবিতার রানারও অন্ধকার দুর্গম পথে অবিরাম ছুটে চলে। ক্লান্তিকেক পেছনে ফেলে সে এগিয়ে যায় উজ্জ্বল আলোর দিকে। খবরের বোঝা হাতে ছুটে চলে রানার। রানারের পথচলা উদ্দীপকের দুরন্ত পথিকের মতো। তাই বলা যায়, উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য বিদ্যমান। (ঘ) হ্যাঁ, উদ্দীপকের দুরন্ত পথিকের চলার পথ এবং ‘রানার’ কবিতার রানারের চলার পথ একই। ➠ রানার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। কিন্তু তাঁর চলার পথ মসৃণ নয়। অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে তাকে চলতে হয়। নিজের বিষাদকে তুচ্ছ করে রানার ছুটে চলে সামনের দিকে। ➠ উদ্দীপকের দুরন্ত পথিক আশা-উন্মাদনায় ভর করে মহৎ উদ্দেশ্যে সামনে এগিয়ে চলে। ব্যাপক সাহসিকতায় পথের কাঁটাগুলো সে দূর করে। উদ্দেশ্য সফলভাবে কা•িক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো। সবার কাছে ঈর্ষণীয় হয়ে থাকে দুরন্ত পথিকের চলার পথ। ‘রানার’ কবিতার রানারও খবরের বোঝা হাতে ছুটে চলে দুর্বার গতিতে। রানারের দায়িত্বশীলতার কাছে কোনোকিছুই তার সামনে বাধা হয়ে ওঠে না। অন্ধকার রাতে, নির্জন পথে রানার ছুটে চলে সামনের দিকে। ➠ রানার মহান পেশার মহৎ কাজটি সাহসিকতার সঙ্গে সম্পন্ন করে, যা উদ্দীপকের দুরন্ত পথিকের চলার পথের মতোই। দুরন্ত পথিক এবং রানার দুজনই পথের বাধাকে অতিক্রম করে ছুটে যায় সামনের লক্ষ্যে উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের দুরন্ত পথিকের চলার পথ এবং ‘রানার’ কবিতায় বর্ণিত রানারের চলার পথ একই। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
সকলের মুখ হাসি-ভরা দেখে পার না মুছিতে নয়ন ধার? পরহিত-ব্রতে পার না রাখিতে চাপিয়া আপন বিষাদ-ভার? আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী ’পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। (ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বছর বয়সে মারা যান? (খ) ‘দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে।’ রানার কেন সূর্য ওঠার ভয়ে ভীত? ব্যাখ্যা করো। (গ) উদ্দীপকটির ভাবার্থ ‘রানার’ কবিতার কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। (ঘ) “অপরের কল্যাণে নিজের সুখ বিসর্জনের বিষয়টি উদ্দীপকের পাশাপাশি ‘রানার’ কবিতায়ও প্রকাশিত।” উক্তিটি মূল্যায়ন করো। |
(ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য ২১ বছর বয়সে মারা যান। (খ) সূর্য ওঠার আগেই রানারকে শহরে পৌঁছাতে হবে। দায়িত্বশীলতার কারণে রানার ভীত। ➠ অন্ধকার রাতে রানারের চলার পথ সহজ নয়। রানারের কাঁধে থাকে চিঠিপতের বোঝা, সাথে টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিস। নির্জন রাতে রানারের চলার পথে রয়েছে দস্যুর ভয়। কিন্তু দায়িত্বের বোঝা নিয়ে রানারকে সূর্য ওঠার আগেই শহরে পৌঁছাতে হবে। পাছে দেরি হয় এটাই রানারের বড় ভয়। (গ) উদ্দীপকের ভাবার্থ ও ‘রানার’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক হলো নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে অপরের মঙ্গলের জন্য কাজ করা। ➠ পৃথিবীতে অনেকেই ছোট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ছোট এই কাজ দূর করতে পারে না তার ঘরের অভাব। তারপরও সততার পরিচয় দিয়ে তারা ছুটে চলে সামনের দিকে। উদ্দীপকের কবিতার চরণগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে অন্যের জন্য কাজ করার প্রবণতা। সবার মুখে হাসি দেখে নিজ দুঃখ মুছে ফেলা যায়। পরের জন্য উপাকার করতে পারাই নিজের সুখ। আসলে আমরা পৃথিবীতে এসেছি সবাই মিলে থাকার জন্য। রানারও নিজের কষ্টগুলো দূরে সরিয়ে রাখে অপরের সুখের কথা চিন্তা করে। নিজের ক্লান্তি তার কাছে বড় মনে হয় না। কারণ রানার কাজ করে মানুষের প্রয়োজনে। ➠ উদ্দীপক ও ‘রানার’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই অন্যের মঙ্গল করার মধ্যে নিহিত সুখের কথা রয়েছে। এই দিক থেকে উদ্দীপকটির ভাবার্থ ‘রানার’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। (ঘ) “অপরের কল্যাণে নিজের সুখ বিসর্জনের বিষয়টি উদ্দীপকের পাশাপাশি ‘রানার’ কবিতায়ও প্রকাশিত।” উক্তিটি সত্য। রানার ছুটে চলে দুর্বার গতিতে। রানার ছুটে চলে হরিণের মতো। অন্ধকারে রানারের ছুটে চলার পেছনে রয়েছে দায়িত্বশীলতা। রানার অন্যের সুখের জন্য বয়ে নিয়ে যায় চিঠিপত্র, টাকা-পয়সা। ‘রানার’ কবিতায় রানার অন্ধকারে দস্যুর ভয় উপেক্ষা করে ছুটে চলে। রানারের ।ছুটে চলার মধ্যে রয়েছে গতিশীলতা। রানার তার সাহসী গতিশীলতার মধ্য দিয়ে অন্যের জন্য সুখের বার্তা নিয়ে আসে। রাতের অন্ধকারে ছুটে চলে রানার। উদ্দেশ্য গ্রাহকদের কাছে ব্যক্তিগত ও প্রয়োজনীয় চিঠি পৌঁছে দেওয়া। রানারের কোনো ক্লান্তি নেই। নেই বিশ্রাম নেওয়ার অবকাশ নিজের সুখ পিছনে রেখে রানার ছুটে চলে মানুষের কল্যাণে। উদ্দীপকেও বলা হয়েছে অন্যের জন্য কিছু করতে পারার মাঝেই রয়েছে প্রকৃত সুখ। নিজের দুঃখ ভুলে থাকা যায় অপরের সুখের দিকে চেয়ে। রানারের কাজে প্রতিফলিত হয় যথেষ্ট মহানুভবতার ছোঁয়া। সেই সঙ্গে উদ্দীপক ও ‘রানার’ কবিতায় অপরের কল্যাণচিন্তার বিষয়টিই প্রকাশিত হয়েছে। তাই বলা যায়, “অপরের কল্যাণে নিজের সুখ বিসর্জনের বিষয়টি উদ্দীপকের পাশাপাশি ‘রানার’ কবিতায়ও প্রকাশিত।” |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যারা দুর্জয়ে করে জয় তাহাদের পরিচয় লিখে রাখে মহাকাল, সব যুগে যুগে সব কালে টিকা ভাস্বরে শোভে ভাল। সব ক্ষয়ক্ষতি খেয়াল খুশিতে পশ্চাতে যায় ফেলে বন্ধুর পথ একদা তাদের পদতলে ধরে মেলে আনন্দ শতদল সেই তো জীবন, জয়গৌরবে হেসে উঠে ঝলমল। (ক) রানার সবেগে কার মতো যায়? (খ) ‘আরো পথ, আরো পথ বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ’ বুঝিয়ে লেখো। (গ) উদ্দীপকের চরণগুলোতে প্রকাশিত ভাবের সঙ্গে ‘রানার’ কবিতার রানারের চলার পথের সাদৃশ্যতা নির্ণয় করো। (ঘ) “উদ্দীপকের অভিযাত্রিকের জয়গৌরব যেন ‘রানার’ কবিতার রানারের মহৎ কাজের প্রতিফলন।” উক্তিটির যথার্থতা যাচাই করো। |
(ক) রানার সবেগে হরিণের মতো যায়। (খ) চরণটি দ্বারা সূর্যোদয়ের আগে রানারের শহরে পৌঁছানোর ব্যাকুলতা প্রকাশ পেয়েছে। ➠ রানার তার দায়িত্ব নিয়ে ছুটে চলে রাতের অন্ধকার পথে। তাকে ভোর হওয়ার আগেই শহরে পৌঁছাতে হবে। দিগন্ত থেকে দিগন্তের পানে ছুটে চলে রানার। চলার পথে সে কোনো বাধা মানে না। কিন্তু তাকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। মনের মধ্যে থাকে, এক ভাবনা কখন সূর্যোদয় হয়। (গ) রানারের চলার পথের বৈশিষ্ট্যসমূহ উদ্দীপকেও প্রতিফলিত। অনেক ধরনের পেশা আছে যেগুলো পদমর্যাদায় ছোট। ➠ কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এসব পেশা সব থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। উদ্দীপকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। নিজের ক্লান্তি, ক্ষয়ক্ষতি সব পিছনে ফেলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রবণতা উদ্দীপকে বিদ্যমান। বাস্তবে প্রতিদান না পেলেও তাদের পরিচয় লিখে রাখে মহাকাল। ‘রানার’ কবিতার রানারও নতুন খবর নিয়ে ছুটে চলে শহরের দিকে। নিজের কষ্ট ম্লান হয়ে যায় অন্যের সুখের পানে চেয়ে। এই মহৎ কাজের মূল্যায়ন হয়তো রানার পায় না, কিন্তু তাতে থেমে থাকে না রানারের পথচলা। ➠ রানারের চলার পথের এই দিকটি উদ্দীপকেও বিদ্যমান। এভাবেই উদ্দীপকের চরণগুলোতে ‘রানার’ কবিতার রানারের চলার পথের সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়। (ঘ) “উদ্দীপকের অভিযাত্রিকের জয়গৌরব যেন ‘রানার’ কবিতার রানারের মহৎ কাজের প্রতিফলন।” ➠ উক্তিটি যথার্থ। রানারের ছুটে চলা মানুষের জন্য। মানুষের জন্য চিঠি আর সংবাদ বয়ে নিয়ে যায় রানার। গতিময় চলার পথে রানার হার মানে না। দুঃখ, বেদনা, অভিমান পিছনে রেখে রানার ছুটে চলে মহতের দিকে। উদ্দীপকের অভিযাত্রিকের চলার পথ গৌরবময়। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সে জয় ছিনিয়ে আনতে চায়। নিজ জীবনের সুখ বিসর্জন দিয়ে সে এগিয়ে চলে সামনের দিকে। পাড়ি দেয় বন্ধুর পথ। কবিতায় রানার ছুটে খবরের বোঝা হাতে। রাতের চলার পথে সে কোনো নিষেধ মানে না। নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানোর তাগিদে রানার ছুটে চলে জোরে, আরও জোরে। উদ্দীপকের অভিযাত্রিকের চলার পথ যেমন মহৎ তেমনি রানারের পথ চলাও মানবকল্যাণে। দায়িত্বশীলতার দিকে রানার দুর্গম পথ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াকে কোনো বাধাই মনে করে না। ➠ ‘রানার’ কবিতায় শ্রমজীবী মানুষ রানারের ছুটে চলা বর্ণিত হয়েছে। তার কাজ গ্রাহকদের কাছে প্রয়োজনীয় চিঠি-পত্র পৌঁছে দেওয়া। এই মহৎ কাজের প্রতিফলন ঘটেছে ‘অভিযাত্রিক’ কবিতায়। মহৎ কাজের দিক থেকে উদ্দীপকের অভিযাত্রিক এবং কবিতার রানার এক ও অভিন্ন। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি, তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি; তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান, তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান! (ক) ‘দুর্বার’ শব্দের অর্থ কী? (খ) “এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে।” ব্যাখ্যা করো। (গ) উদ্দীপকে শ্রমজীবী মানুষের অবদানের সঙ্গে ‘রানার’ কবিতার রানারের অবদানের মিল কোথায়? বুঝিয়ে লেখো। (ঘ) “সেবার দিক থেকে উদ্দীপকের শ্রমজীবী মানুষ এবং ‘রানার’ কবিতার রানার যেন একসূত্রে গাঁথা।” উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। |
(ক) ‘দুর্বার’ শব্দের অর্থ যাকে নিবারণ করা যায় না। (খ) “এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে।” চরণটিতে সাহসী রানারের অবদান অপ্রকাশিত থাকার কথা বলা হয়েছে। ➠ রানার ছুটে চলে টাকার বোঝা পিঠে নিয়ে। কিন্তু নিজ সততার গুণে রানার তা ছুঁয়েও দেখে না। নির্জন রাতে পথের ভয়কে অতিক্রম করে রানার ছুটে চলে মানুষের প্রয়োজনে। নিজে কষ্ট সহ্য করে অন্যের মুখে হাসি এনে দেয় রানার। কিন্তু তা কারও কাছে প্রকাশিত হয় না। ঢাকা পড়ে থাকে রাতের অন্ধকারে। (গ) উদ্দীপকের শ্রমজীবী মানুষের অবদানের সঙ্গে ‘রানার’ কবিতার রানারের শ্রমের অবদানের দিক থেকে মিল রয়েছে। ➠ যুগে যুগে শ্রমজীবী মানুষেরাই গড়ে তোলে সভ্যতা। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত ও নির্যাতিত তারাই হয়। এখনও পর্যন্ত সভ্যতা টিকে আছে তাদেরই অক্লান্ত অবদানের ফলে। কবি ‘রানার’ কবিতায় করানারের কষ্টের দিকটি তুলে ধরেছেন। মানুষের সেবার জন্য রানার কাঁধে নিয়েছে বোঝা, হাতে খবরের বোঝা, পিঠে টাকার বোঝা। রানার ছুটে চলে দুর্গম বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আলোর দিকে। রানারের এই কষ্টের বুকে ভর করেই আসে অন্যের সুখ। উদ্দীপকেও প্রকাশিত হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের কথা। যাদের ব্যথার বুকে পা দিয়ে আসে নব উত্থান। যা রানারের কাজের অবদানের সঙ্গে এক ও অভিন্ন। মানুষের সেবায় উদ্দীপকের শ্রমজীবী মানুষ এবং কবিতার রানার কাজ করে যায়। (ঘ) “সেবার দিক থেকে উদ্দীপকের শ্রমজীবী মানুষ এবং ‘রানার’ কবিতার রানার যেন একসূত্রে গাঁথা।” উক্তিটি যথার্থ। ➠ সমাজ সভ্যতা যাদের শ্রমে গড়ে ওঠে তারাই সবচেয়ে অবহেলিত। তাদের শ্রমের মূল্য যথাযথভাবে পায় না তারা। উদ্দীপকে প্রতিফলিত শ্রমজীবী মানুষ সেবার কাছে নিয়োজিত। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, নিজের অঙ্গে ধূলি লাগিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে। আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম। সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘রানার’ কবিতায় রানার সম্পর্কে বলেন, অনেক কষ্টে রানার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, সুখ-ভালোবাসা, আর প্রয়োজন মেলানো চিঠি-পত্র বয়ে নিয়ে যায়। রানার অন্ধকার রাতে ছুটে চলে লন্ঠন হাতে। রানারের ক্লান্ত শ্বাস ছুঁয়েছে রাতের আকাশকে, রানারের ঘামে ভিজে গেছে মাটি। এত কষ্টের রাতের প্রতিদান পেয়েছে রানার অনেক অল্প। এখানে বড় হয়ে উঠেছে সেবার দিকটি। ➠ ‘রানার’ কবিতায় কবি বারবার বলেছেন রানারের কষ্টের কথা। উদ্দীপকেও প্রকাশ পেয়েছে শ্রমজীবী মানুষের বেদনার চিত্র। উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে মানবসেবার বিষয়টি। এ দিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ [চট্টগ্রাম বোর্ড- ২০২৩] |
---|
শফিক ঢাকায় একটি কোম্পানিতে নাইটগার্ডের চাকরি করে। সন্ধ্যা থেকে ভোর
পর্যন্ত তার ডিউটি। সারারাত কোম্পানির মালামালের পাহাড়াদারীর গুরুদায়িত্ব
সে বিশ্বস্ততার সাথে পালন করে। ছয় মাস পর পর সে ছুটিতে বাড়ি আসে। এ দিকে
তার স্ত্রী- সন্তানেরা তার পথ চেয়ে বসে থাকে। কবে সে ফিরবে। স্বামীর কথা
ভাবতে ভাবতে তার স্ত্রীর কতো নির্ঘুম রাত কাটে। (ক) অবাক রাতের তারারা কীভাবে চায়? (খ)“জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।” চরণটি ব্যাখ্যা করো। (গ) উদ্দীপকে শফিকের স্ত্রীর মধ্যে ‘রানার’ কবিতার যে দিকটি ফুটে ওঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। (ঘ) “উদ্দীপকের শফিক ‘রানার’ কবিতায় রানারের প্রতিচ্ছবি হয়ে বিশ্লেষণ করো। ওঠেনি”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
------------ |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ [ঢাকা বোর্ড- ২০২২] |
---|
উদ্দীপক-১: মুক্তিকামী মহাসাধক মুক্ত করে দেশ, সবারই সে অন্ন জোগায় নাইকো গর্ব লেশ। ব্রত তাহার পরের হিত সুখ নাহি চায় নিজে, রৌদ্রদাহে শুধায় তনু মেঘের জলে ভিজে। উদ্দীপক-২: সিক্ত যাদের সারা দেহমন মাটির মমতা রসে এই ধরণির তরণির হাল রবে তাহাদেরি বশে। তারি পদরজ অঞ্জলি করি মাথায় লইব তুলি, সকলের সাথে পথে চলি যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি। ক. রানারের কাঁধে কীসের বোঝা? খ. জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে- চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? গ. উদ্দীপক-১ এ ‘রানার’ কবিতার কোন দিকটির ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপক-২ ‘রানার’ কবিতার মর্মার্থের খণ্ডাংশ মাত্র।”- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। |
------------------ |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮ [রাজশাহী বোর্ড- ২০২২] |
---|
লাল আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে, কী হবে আর কুকুরের মতো বেঁচে থাকায়? কতদিন তুষ্ট থাকবে আর অপরের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট হাড়ে? মনের কথা ব্যক্ত করবে ক্ষীণ অস্পষ্ট কেঁউ- কেঁউ শব্দে? ক্ষুধিত পেটে ধুঁকে ধুঁকে চলবে কত দিন? ক. দস্যুর চেয়ে রানারের বেশি ভয় কীসে? খ. ‘এর দুঃখের চিঠি জানি কেউ পড়বে না কোনো দিনও’- বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? গ. উদ্দীপকের ‘কুকুরের মতো বেঁচে থাকা’-‘রানার’ কবিতায় রানারের জীবনের যে দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘রানার’ কবিতার আংশিক রূপ মাত্র”- উক্তিটি মূল্যায়ন করো। |
------------------ |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯ [সিলেট বোর্ড- ২০২২] |
---|
শাহেদ একজন হকার। প্রতিদিন সকাল হলেই সে খবরের কাগজ নিয়ে দ্বারে দ্বারে
যায়। এটাকে সে অনেক বড়ো দায়িত্ব মনে করে। সে ঝড়- বৃষ্টি উপেক্ষা করেও
দায়িত্ব পালন করে। এতে তার কোনো ক্লান্তি নেই। স্বল্প পারিশ্রমিকেও তার
অসন্তুষ্টি নেই। সে মনে করে, টাকার চেয়ে দায়িত্ব বড়ো। ক. কত বছর বয়সে সুকান্ত ভট্টাচার্য মারা যান? খ. রানার প্রতিদিন কেন ছুটে চলে? গ. উদ্দীপকে ‘রানার’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রানার’ কবিতার মূলভাবের আংশিক রূপ”- উক্তিটি মূল্যায়ন করো। |
------------ |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০ [ময়মনসিংহ বোর্ড ২০২০] |
---|
ফারুক সাহেব একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
তিনি বিদ্যালয়ে যথাসময়ের আগে আসেন এবং ছুটির পর পরবর্তী দিনের কিছু কাজ
গুছিয়ে বাড়ি ফিরেন। একদিন ভোরে আকস্মিকভাবে বাড়ি থেকে ছোটো ভাইয়ের মৃত্যু
সংবাদ পেয়ে তিনি বাড়ি যান। ভাইয়ের দাফন কাফন সম্পন্ন করে পরদিনই কর্মস্থলে
পুনরায় ফিরে আসেন। বিদ্যালয়ে কর্মরত অন্যরা বিবিধ অসুবিধার সম্মুখীন না হন,
এই ব্যাপারে তিনি খুবই দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব। ক. রানারের কাছে সহানুভূতির চিঠি পাঠাবে কে? খ. দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে- এই চরণ দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন? গ. উদ্দীপকের ফারুক সাহেবের মধ্যে ‘রানার’ কবিতার রানার চরিত্রের কোন দিকটি প্রতিফলিত? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকের ফারুক সাহেব এবং ‘রানার’ কবিতার রানার দায়িত্বশীলতার দিক হতে সহঅবস্থানে বিরাজমান”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো। |
-------------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১ [রাজশাহী বোর্ড- ২০২০] |
---|
বাড়ির সকলের প্রতি সমান দায়িত্ব তার। কে, কখন চা খাবে, কখন ঔষধ খাবে, কোনো
কিছুই তার বাদ পড়ে না। কারো কাপড় ময়লা হলে ধুয়ে ফেলা, খাওয়া-দাওয়ার খোজ
নেওয়া যেন তার প্রাত্যহিক রুটিন। গৃহিণীর কখন কী লাগবে তাও সে জানে।
হেলেনার এমন কর্তব্যপরায়ণতায় সবাই মুগ্ধ। এগারো বছরের এই মেয়েটির প্রতি
সবাই তাই খুব আন্তরিক। তার একটু সর্দি-জ্বর হলেও সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
গৃহের লোকদের এমন ব্যবহারে হেলেনা নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে। ক. রানার দস্যুর চেয়ে বেশি ভয় পায় কাকে? খ. রানারের কাছে পৃথিবীটা কালো ধোঁয়া মনে হয় কেন? বুঝিয়ে লেখো। গ. উদ্দীপকের হেলেনার সাথে ‘রানার’ কবিতার রানারের সাদৃশ্য বর্ণনা করো। ঘ. উদ্দীপকের বাড়ির লোকজনের আন্তরিকতা ‘রানার’ কবিতার কবির চেতনাকে ধারণ করে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। |
--------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ [বরিশাল বোর্ড ২০২৩] |
---|
হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের শেষ নেই। দিন নেই রাত নেই বৃষ্টি হোক রোদ হোক তবেই মিলে মজুরি কাজ করি সারাক্ষণ যার ফলে দু-মুঠো অন্ন খেতে পারি। এদেহে যত দিন আছে প্রাণ ততদিন করে যাব আমি সত্যের জয়গান। ক. রানার কাজ নিয়েছে কীসের? খ. রানারের কাছে পৃথিবীটাকে কেন ‘কালো ধোঁয়া’ মনে হয়? গ. উদ্দীপকের শেষ দুই চরণের সঙ্গে ‘রানার’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি কী? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকের প্রথমাংশের ভাবার্থ ‘রানার’ কবিতার মূলভাবের বহিঃপ্রকাশ” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
----- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ [দিনাজপুর বোর্ড- ২০২২] |
---|
বাবুল নাইট গার্ডের চাকরি করে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ডিউটি। দোকানের মালামাল, রাস্তার নির্মাণ সামগ্রী, জানমালের নিরাপত্তাবিধানসহ নানা গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সারারাত তাকে জেগে থাকতে হয়। বিনিময়ে যে বেতন পায়, তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। তার দুঃখের বোঝা যেন কখনোই শেষ হয় না। ক. ‘রানার’ কবিতায় রানারের সবচেয়ে বড়ো ভয় কীসে? খ. ‘জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।’-এ চরণ দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন? গ. উদ্দীপকের বাবুলের সাথে ‘রানার’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রানার’ কবিতার সমগ্রভাব বহন করে না।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
-------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ [বরিশাল বোর্ড- ২০২০] |
---|
প্রশ্ন ৯ দৃশ্যকল্প-i: শতাব্দীলাঞ্ছিত আর্তের কান্না প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা; মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না- দৃশ্যকল্প-ii: চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ, পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা। গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য জীবনকে চায় ভালোবাসতে। ক. রানার কী কাজ নিয়েছে? খ. ‘জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে’- উক্তিটির কারণ বর্ণনা করো। গ. দৃশ্যকল্প-i-এর ভাবধারার সাথে ‘রানার’ কবিতার ‘এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে?’- চরণটির সাদৃশ্যগত দিক ব্যাখ্যা করো। ঘ. “দৃশ্যকল্প-ii যেন ‘রানার’ কবিতার মূল ভাবনারই প্রতিফলন” উক্তিটি মূল্যায়ন মূল ভাব করো। |
-------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ [রাজশাহী বোর্ড- ২০২০] |
---|
------------ |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ [রাজশাহী বোর্ড- ২০২০] |
---|
----------------- |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা সাহিত্য : নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫। |