‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা |
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
শামসুর রাহমান
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে
রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে
খাণ্ডবদাহন?
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল,
সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মতো চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো।
রিকয়েললেস রাইফেল
আর
মেশিনগান
খই ফোটাল
যত্রতত্র।
তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে বলে
বিধ্বস্ত
পাড়ায় প্রভুর
বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তুপে
দাঁড়িয়ে একটানা
আর্তনাদ
করল একটা কুকুর।
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু
হামাগুড়ি
দিল পিতা-মাতার লাশের উপর।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
থুত্থুড়ে এক বুড়ো
উদাস
দাওয়ায়
বসে আছেন তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে
নড়বড়ে
খুঁটি
ধরে দগ্ধ ঘরের।
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী বলে যে নৌকা চালায় উদ্দাম ঝড়ে,
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুরে-বেড়ানো
সেই তেজি তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে।
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।
(সংক্ষেপিত)
উৎস নির্দেশ : |
---|
‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ শীর্ষক কবিতাটি শামসুর রাহমানের
‘বন্দী শিবির থেকে’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা মুক্তিযুদ্ধকালে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে এপ্রিল-ডিসেম্বর, ১৯৭১ সময়ে রচিত। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কলকাতা থেকে গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। কাব্যগ্রন্থটির শুরুতে ‘পূর্বলেখ’ শিরোনামে একটি ভূমিকা সংযোজন করে কবি তাঁর কাব্যরচনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছেন। ৩৮টি কবিতা এগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখযোগ্য কবিতা : তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা তুমি, মধুস্মৃতি, রক্তাক্ত প্রান্তরে ইত্যাদি। প্রতিটি কবিতায় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন আবেগ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ১৯৭১ সালের শহিদদের উদ্দেশে। |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ রক্তগঙ্গায়- সরাসরি হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে যাওয়া
নদী বলে এই নদী বেগবান ও বৃহৎ। স্বাধীনতার জন্য ‘অনেক রক্তদান’ বোঝাতে
এখানে রক্তগঙ্গা শব্দটি বোঝানো হয়েছে। ➠ খাণ্ডবদাহন- খাণ্ডব মূলত মহাভারতের একটি বিখ্যাত অরণ্য, যা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছিল অরণ্যের প্রায় সকল প্রাণীকে। এ কবিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞকে খাণ্ডবদাহন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ➠ সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর- মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন হরিদাসীর স্বামী। এ কারণে বিধবা হরিদাসীর সিঁথি থেকে সিঁদুর মুছে ফেলতে হয়েছে। সনাতন ধর্মের বিবাহকেন্দ্রিক সংস্কৃতিতে সধবারা সিঁদুর পরেন, স্বামীর মৃত্যু হলে সিঁদুর মুছে ফেলতে হয়। হরিদাসীকেও হতে হয়েছে সিঁদুরবিহীন। ➠ রিকয়েললেস রাইফেল-একে সংক্ষেপে বলা হয় আর আর (R.R.)। স্বল্পভারী মারণাস্ত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এর ব্যবহার হয়েছে প্রচুর। পাকিস্তানিরা এই আর আর নিয়ে নিরীহ বাঙালিদের ওপর আক্রমণ করে। ➠ মেশিনগান- অত্যাধুনিক যন্ত্রচালিত বন্দুক। জার্মানি আবিষ্কার করে। পরে এই অস্ত্রের নানা দেশে নানা পরিমার্জন হয়েছে। সে হিসেবে মেশিনগানের আগে লাইট, হেভি, নর্মাল, শর্ট ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার হয়। ➠ যত্রতত্র- যেখানে সেখানে, সব জায়গায়। ➠ তুমি আসবে বলে... ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো- নয় মাসব্যাপী সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে। ধ্বংস করেছে ছাত্রাবাস, বস্তি। কারণ ছাত্রজনতার প্রবল প্রতিবাদ আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ছাত্রাবাস ও বস্তি। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা চেয়েছিল প্রতিরোধের সংগ্রামকে স্তব্ধ করে দিতে। তাই তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল গ্রাম ও শহর। নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল বাঙালি জাতিকে। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে অপরিসীম আত্মত্যাগের মাধ্যমে। ➠ বিধ্বস্ত- যা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। ➠ বাস্তুভিটা- বসতবাড়ি। ➠ ভগ্নস্তুপ- স্তূপাকার ধ্বংসাবশেষ। ➠ আর্তনাদ- ব্যাকুল ও কাতর চিৎকার। ➠ হামাগুড়ি- দুই হাত ও দুই জানুর ওপর ভর দিয়ে চলন। ➠ থুত্থুড়ে এক বুড়ো- বয়সের ভারে বিধ্বস্ত লোক, যার বয়স অনেক হয়েছে এবং চলাচল করতে যার কষ্ট হয়। ➠ উদাস- বিষণ্ণ; ব্যাকুল। ➠ দাওয়ায়- বারান্দায়; রোয়াকে। ➠ খুঁটি- বাঁশ বা কাঠের গোঁজ। ➠ হাড্ডিসার- কঙ্কালসার; অতিশয় জীর্ণশীর্ণ। ➠ রুস্তম শেখ ... এখন পোকার দখলে- রুস্তম শেখ নামের এক রিকশাওয়ালা যিনি যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। মৃত অবস্থা বোঝানোর জন্য বলা হয়েছে ‘যার ফুসফুস এখন পোকার দখলে’। ➠ অধীর- ব্যাকুল; উৎকণ্ঠিত; কাতর। ➠ প্রতীক্ষা- অপেক্ষা; প্রত্যাশা। ➠ দামামা- ঢাকজাতীয় রণবাদ্যবিশেষ। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
স্বাধীনতা শুধু শব্দমাত্র নয়, এটি এমন এক অধিকার ও অনুভব যা মানুষের জন্মগত। কিন্তু এই অধিকার আদায়ের জন্য বাঙালি জাতিকে দীর্ঘ কাল যেমন সংগ্রাম করতে হয়েছে তেমনি করতে হয়েছে অপরিসীম আত্মত্মত্যাগ। ১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে আপামর বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুদ্ধচলাকালে বাঙালির রক্তে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয় পাকিস্তানি যুদ্ধবাজরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে সকিনা বিবির মতো গ্রামীণ নারীর সহায়-সম্বল-সম্ভ্রম বিসর্জিত হয়েছে, হরিদাসী হয়েছে স্বামীহারা, নবজাতক হারিয়েছে মা-বাবাকে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ছাত্রাবাস আক্রমণ করে ছাত্রদের হত্যা করে, শহরের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গণহত্যা চালায়, পুড়িয়ে দেয় গ্রাম ও শহরের লোকালয়। এর প্রাকৃতিক প্রতিবাদ ওঠে পশুর কণ্ঠেও। আর্তনাদ করে কুকুরও। মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিক, কৃষক, জেলে, রিকশাওয়ালা প্রমুখ সাধারণ মানুষ আত্মত্যাগ করে। দগ্ধ হওয়া লোকালয় প্রবীণ বাঙালির আলোকিত চোখে অগ্নি ঝরায়। সেইসঙ্গে নবীন রক্তে প্রাণস্পন্দন ও আশা জেগে থাকতে দেখে কবি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেন- এত আত্মত্যাগ যার উদ্দেশ্যে সেই স্বাধীনতাকে বাঙালি একদিন ছিনিয়ে আনবেই। কবিতাটি মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য সাহিত্যিক দলিল। |
কবি পরিচিতি : |
---|
শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩শে অক্টোবর ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর
পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রাম। তিনি ঢাকার পোগোজ
স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর পেশা ছিল
সাংবাদিকতা। তিনি একনিষ্ঠভাবে কাব্য সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন। বিশেষ করে
মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের প্রত্যাশা, হতাশা, বিচ্ছিন্নতা, বৈরাগ্য ও সংগ্রাম
তাঁর কবিতায় সার্থকভাবে বিধৃত। তাঁর প্রধান কাব্য:
প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, রৌদ্র করোটিতে, বিধ্বস্ত নীলিমা,
নিরালোকে দিব্যরথ, বন্দী শিবির থেকে, বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে, বুক তার
বাংলাদেশের হৃদয়
ইত্যাদি। এছাড়া তাঁর কিছু অনুবাদ-কবিতা ও শিশুতোষ কবিতা রয়েছে। শামসুর
রাহমান তাঁর অনন্যসাধারণ কবি-কীর্তির জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে
পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তিনি ১৭ই আগস্ট, ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। |
কর্ম-অনুশীলন : |
---|
১। কবিতাটিতে স্বাধীনতার জন্য যেসব শ্রেণি-পেশা ও সাধারণ মানুষের অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার তালিকা তৈরি করো। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
১। দানবের মতো চিৎকার করতে করতে কী এসেছিল? ক. পাকিস্তানিসেনা খ. ট্যাঙ্ক গ. মাঝি ঘ. রাইফেল ২। ‘তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা’ ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো- ‘ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো’- এ পঙ্ক্তিতে কিসের চিত্র আছে? ক. স্বাধীনতার সুর খ. ধ্বংসের চিত্র গ. গণ-আন্দোলনের রূপ ঘ. মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪-সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও: চিনতে নাকি সোনার ছেলে ক্ষুদিরামকে চিনতে? রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিল যে মুক্ত বাতাস কিনতে। ৩। উদ্দীপকের ক্ষুদিরাম ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় কাদের প্রতিনিধিত্ব করে i. মুক্তিযোদ্ধাদের ii.আপামর জনসাধারণের iii. আত্মত্যাগী মানুষদের নিচের কোনটি সঠিক। ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii ৪। এরূপ প্রতিনিধিত্বের কারণ কী? ক. ঐক্যচেতনা খ. স্বজাত্যবোধ গ. দেশপ্রেম ঘ. সাহসিকতা |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. শামসুর রাহমান কত সালে জন্মগ্রহণ করেন? উত্তর : শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২. শামসুর রাহমানের পেশা কী ছিল? উত্তর : শামসুর রাহমানের পেশা ছিল সাংবাদিকতা। ৩. শামসুর রাহমানের কবিতায় কোন কাব্যধারার বৈশিষ্ট্য সার্থকভাবে প্রকাশিত হয়েছে? উত্তর : শামসুর রাহমানের কবিতায় অতি আধুনিক কাব্যধারার বৈশিষ্ট্য সার্থকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ৪. উপমা ও চিত্রকল্প নির্মাণে শামসুর রাহমান কী নির্ভর? উত্তর : উপমা ও চিত্রকল্প নির্মাণে শামসুর রাহমান প্রকৃতিনির্ভর। ৫. শামসুর রাহমানের কবিতার বিষয় ও উপাদান কী কেন্দ্রিক? উত্তর : শামসুর রাহমানের কবিতার বিষয় ও উপাদান শহরকেন্দ্রিক। ৬. শামসুর রাহমান কত সালে মৃত্যুবরণ করেন? উত্তর : শামসুর রাহমান ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ৭. স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য কিসে ভাসার কথা বলা হয়েছে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায়? উত্তর : স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য রক্তগঙ্গায় ভাসার কথা বলা হয়েছে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায়। ৮. স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য বারবার কী দেখার কথা বলা হয়েছে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায়? উত্তর : স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য বারবার খাÊবদাহন দেখার কথা বলা হয়েছে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায়। ৯. স্বাধীনতা আসবে বলে কার কপাল ভাঙল? উত্তর : স্বাধীনতা আসবে বলে সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল। ১০. স্বাধীনতা আসবে বলে কার সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল? উত্তর : স্বাধীনতা আসবে বলে হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল। ১১. শহরের বুকে কোন রঙের ট্যাংক এলো? উত্তর : শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক এলো। ১২. কিসের মতো চিৎকার করতে করতে শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক এলো? উত্তর : দানবের মতো চিৎকার করতে করতে শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক এলো। ১৩. স্বাধীনতা আসবে বলে কে বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল? উত্তর : স্বাধীনতা আসবে বলে একটা কুকুর বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল। ১৪. স্বাধীনতার জন্য উদাস দাওয়ায় বসে আছেন কে? উত্তর : স্বাধীনতার জন্য উদাস দাওয়ায় বসে আছেন থুত্থুরে বুড়ো। ১৫. স্বাধীনতার জন্য অপেক্ষারত থুত্থুরে বুড়োর চোখের নিচে কিসের ঝিলিক? উত্তর : স্বাধীনতার জন্য অপেক্ষারত থুত্থুরে বুড়োর চোখের নিচে অপরাহ্ণের দুর্বল আলোর ঝিলিক। ১৬. স্বাধীনতার জন্য কে দগ্ধ ঘরের নড়বড়ে খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে? উত্তর : স্বাধীনতার জন্য মোল্লাবাড়ির বিধবা দগ্ধ ঘরের নড়বড়ে খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ১৭. হাড্ডিসার অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে কোথায় বসে আছে? উত্তর : হাড্ডিসার অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে পথের ধারে বসে আছে। ১৮. সগীর আলীর বাড়ি কোথায়? উত্তর : সগীর আলীর বাড়ি শাহবাজপুরে। ১৯. জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটার নাম কী? উত্তর : জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকাটার নাম কেষ্ট দাস। ২০. গাজী গাজী বলে উদ্দাম ঝড়ে নৌকা চালায় কে? উত্তর : গাজী গাজী বলে উদ্দাম ঝড়ে নৌকা চালায় মতলব মিয়া। ২১. রুস্তম শেখ কোথাকার রিকশাওয়ালা? উত্তর : রুস্তম শেখ ঢাকার রিকশাওয়ালা। ২২. রুস্তম শেখের ফুসফুস এখন কিসের দখলে? উত্তর : রুস্তম শেখের ফুসফুস এখন পোকার দখলে। ২৩. তেজি তরুণের পদভারে কিসের জন্ম হতে চলেছে? উত্তর : তেজি তরুণের পদভারে একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে। ২৪. সবাই কার জন্য অধীর প্রতীক্ষায় রয়েছে? উত্তর : সবাই স্বাধীনতার জন্য অধীর প্রতীক্ষায় রয়েছে। ২৫. কোন ধর্মের মেয়েদের বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়? উত্তর : সনাতন ধর্মের মেয়েদের বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. ‘আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়’ কথাটি বুঝিয়ে লেখো। উত্তর : স্বাধীনতার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে। ➠ স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। পাকিস্তানিরা বাঙালির সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাঙালি তাই বারবার প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তা মোকাবেলা করতে গিয়ে বারবার আঘাত করেছে। ফলে বাঙালিকে কেবলই বুকের রক্ত ঝরাতে হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে আর কত রক্ত বিসর্জন দিতে হবে- এই প্রশ্ন করেছেন কবি। ২. সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল কেন? উত্তর : হানাদারদের নির্যাতনের শিকার হয়ে সবকিছু হারানোর কারণে সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল। ➠ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলার শহর-গ্রামের সর্বত্র পাকিস্তানি হানাদাররা মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এর ফলে সহায়-সম্বল-সম্ভ্রম হারায় অনেক নারী। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় উল্লিখিত সাকিনা বিবি তেমনি এক নির্যাতনের শিকার গ্রামীণ নারীর প্রতিনিধিত্ব করছেন। স্বাধীনতার জন্য এমন অসংখ্য নারীকে দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়। ৩. হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল কেন? উত্তর : হরিদাসীর স্বামী শহিদ হওয়ায় তাঁর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল। ➠ সনাতন ধর্মের মেয়েদের বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়। স্বামী মারা গেলে তা মুছে ফেলা হয়। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় উল্লিখিত হরিদাসীর স্বামী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে জীবন দিয়েছেন। এ কারণেই তাঁর সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলা হয়েছে। চরণটির মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য বাংলার মানুষের মহান আত্মত্যাগের কথাই প্রকাশিত হয়েছে। ৪. বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর-কথাটি বুঝিয়ে লেখো। উত্তর : পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল পশুও-এমন চিত্রই প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণটিতে। ➠ ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলার মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বর অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই অত্যাচারের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল। নিচু শ্রেণির প্রাণী হিসেবে পরিচিত কুকুরও সেদিন হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ দেখে আর্তনাদ করে উঠেছিল। কবিতায় কুকুরের এই আর্তনাদকে পাকিস্তানিদের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিবাদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ৫. সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা- কেন? উত্তর : নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে ও হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে সবাই স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। ➠ স্বাধীনতা কেবল একটি বুলিমাত্র নয়। এটি মানুষের জন্মগত অধিকার পাকিস্তানিরা আমাদের এই অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, সারা দেশে বিপুল হত্যা ও ধ্বংসের নারকীয় উৎসবে মেতে ওঠে হানাদাররা। সব স্বপ্ন হারিয়ে মানুষের কাছে বেঁচে থাকার জন্য আর মাত্র একটা স্বপ্নই অবশিষ্ট থাকে। তা হলো স্বাধীন স্বদেশে মুক্তভাবে বিচরণ করা। স্বাধীনতার জন্য মানুষের সেই ব্যাকুলতার স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে। ৬. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি সগীর আলী, কেষ্ট দাস, মতলব মিয়া, রুস্তম শেখদের কথা বলেছেন কেন? উত্তর : মুক্তিযুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অবদানের প্রসঙ্গটি বোঝাতে শামসুর রাহমান ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বিভিন্ন পেশার মানুষের কথা বলেছেন। ➠ স্বাধীনতার জন্য মানুষের যে ব্যাকুলতা তার চিত্র প্রকাশিত হয়েছে শামসুর রাহমান রচিত ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায়। পরাধীনতার শেকল ভাঙতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল সর্বস্তরের মানুষ। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে বহু আরাধ্য স্বাধীনতা। কবিতায় বর্ণিত সগির আলী, কেষ্ট দাস, মতলব মিয়া, রুস্তম শেখদের কেউ কৃষক, কেউ জেলে, কেউ মাঝি, কেউ বা রিকশাচালক। আলোচ্য কবিতায় এরা বাংলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতিনিধি। ৭. ‘যার পদভারে একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো। উত্তর : চরণটির মাধ্যমে তরুণ মুক্তিযোদ্ধার সাফল্যের কথা বলা হয়েছে। ➠ পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতাকে রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে লাখো জনতা। তাদের প্রবল দৃঢ়তায় হানাদারদের পতন ঘনিয়ে আসে। স্বাধীনতার সূর্য আরও নিকটবর্তী হয়। একটি দেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির অর্থ হচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি ভূখÊের নামের অন্তর্ভুক্তি। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সাথে নতুন একটি পৃথিবীরই যেন জন্ম হবে। আর সেই নতুন দিনের কারিগর অর্থাৎ মুক্তিসেনাদের বীরত্বের কথাই ফুটে উঠেছে আলোচ্য চরণটিতে। ৮. তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা- কবির এই দৃঢ়তার কারণ ব্যাখ্যা করো। উত্তর : স্বাধীনতার জন্য সর্বস্তরের মানুষের আত্মত্যাগ ও আকুলতা দেখেই কবি এতটা দৃঢ়ভাবে স্বাধীনতার আগমনের সম্ভাবনার কথা বলতে পেরেছেন। ➠ স্বাধীনতার জন্য বাঙালি তাদের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছে। অসংখ্য মানুষ তার স্বজন ও সম্বল হারিয়েছে। অসংখ্য নারী তার সম্ভ্রম হারিয়েছে। হানাদারদের মোকাবেলা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে অগণিত মানুষ। হানাদারদের শত অত্যাচার নিপীড়নের মাঝেও মানুষ মুক্তির লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। তরুণ যুবক থেকে শুরু করে থুত্থুরে বৃদ্ধ পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে থেকেছে। মানুষের মাঝে স্বাধীনতার জন্য এমন মানসিকতা লক্ষ করেই কবি দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করেছেন- তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই শাসকগোষ্ঠী শুরু করে নানা বৈষম্যনীতি।
তারা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে
রাষ্ট্রভাষা করার হীন ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু এদেশের ছাত্র-শিক্ষকসহ আপামর
জনতা এর বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, বিসর্জন দেয় বুকের তাজা রক্ত।
ক. কার সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল? খ. জলপাই রঙের ট্যাঙ্ককে কবি দানব বলেছেন কেন? গ. উদ্দীপকের যে ভাবটি ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় পাওয়া যায় তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. “ ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বর্ণিত দিকগুলোর একটিমাত্র দিক উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। |
ক. হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল। খ. শহরে জলপাই রঙের ট্যাংক কামানের গোলার শব্দে চিৎকার করতে করতে এসেছিল বলে একে দানব বলা হয়েছে। ➠ ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তারা নির্বিচারে ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বহু মানুষকে হত্যা করে। রাস্তায় নামায় জলপাই রঙের ট্যাংক। ছাত্রাবাস, বস্তি ট্যাংকের কামানের গোলায় ধ্বংস করে দেয়। জলপাই রঙের ট্যাংকের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করে কবি তাই তাকে দানব বলেছেন। গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়টি ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় প্রতিফলিত। ➠ স্বাধীনতাকামী বাঙালি কখনও পরাজয় মানেনি। অন্যায় জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে তারা সব সময়ই সোচ্চার থেকেছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালি হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাঙালির সেই বীরত্বগাথাই ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় চিত্রিত হয়েছে। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে। ➠ উদ্দীপকে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। একদিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যনীতি অন্যদিকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ায় ষড়যন্ত্রে বাঙালি বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এই অন্যায়কে রুখে দেওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে তারা অংশগ্রহণ করে। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তারা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে উভয় ক্ষেত্রেই বাঙালি ঐক্যবদ্ধভাবে পাকবাহিনীকে মোকাবেলা করেছে। তারা জান দিয়েছে কিন্তু মান দেয়নি। এই ভাবটি তুলে ধরার দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার সাথে সম্পর্কিত। ঘ. উদ্দীপকে কেবল ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় উল্লিখিত হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথাই আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কবিতায় রয়েছে আমাদের স্বাধীনতা চেতনার স্বরূপ, যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। ➠ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির স্বাধীনতা হরণ করেছিল। গণতান্ত্রিক সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় এই স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিকামী মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের চিত্রই অঙ্কন করা হয়েছে। হরিদাসী-সাকিনা বিবির মতো অনেক নারী তাদের সর্বস্ব হারিয়েছে। হায়েনাদের রাইফেল, মেশিনগানের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ। বাঙালি স্বাধীনতার জন্য কীভাবে প্রত্যাশায় থেকেছে, আত্মত্যাগ করেছে ও চড়ামূল্য পরিশোধ করেছে তার এক করুণ চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে কবিতায়। দীর্ঘ নয় মাসের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে বাঙালি জয় লাভ করে ও স্বাধীনতার লাল সূর্যটি ছিনিয়ে আনে। ➠ উদ্দীপকে ভাষা আন্দোলনে বাঙালির সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানিরা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষক-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সে ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিয়েছিল। সে সংগ্রামেও জেল-জুলুমসহ বহু রক্ত ঝরেছিল। বেশ কয়েকজন সাহসী প্রাণকে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছিল। ➠ কবিতা ও উদ্দীপক বিবেচনা করলে আমরা দেখি, কবিতায় স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ লড়াইসহ ত্যাগ তিতিক্ষার করুণ চিত্র বিবৃত হয়েছে। তাছাড়া রয়েছে স্বাধীনতার জন্য মানুষের ব্যাকুল প্রতীক্ষার স্বরূপ। বাংলার জনতা দেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়েই হাসিমুখে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল। উদ্দীপকের ঘটনাটিতে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার বিশেষ অনুভূতি এখানে অনুপস্থিত। তাই বলা বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার খণ্ডিত ভাবের ধারক। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
অনেক যুদ্ধ গেল, অনেক রক্ত গেল শিমুল তুলোর মতো সোনারুপো ছড়াল বাতাস। ছোট ভাইটিকে আমি কোথাও দেখিনা, নরম নোলক পরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখিনা, কেবল পতাকা দেখি কেবল উৎসব দেখি স্বাধীনতা দেখি তবে কি আমার ভাই আজ ঐ স্বাধীন পতাকা? তবে কি আমার তিমিরের বেদিতে উৎসব? ক. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় সবচেয়ে সাহসী লোক কে? খ. যার ফুসফুস এখন ‘পোকার দখলে’ এখানে পোকার দখলে বলতে কোন বিষয়টি নির্দেশ করা হয়েছে? গ. উদ্দীপকটি তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা কবিতার সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব এবং তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা কবিতায় মূলভাব চেতনাগত দিক থেকে এক সূত্রে গাঁথা- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
ক. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় সবচেয়ে সাহসী লোক হচ্ছে,
কেষ্ট দাস। খ. আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেওয়া একজন দরিদ্র মানুষের দুর্ভাগ্যের স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। ➠ স্বাধীনতার সংগ্রামে আত্মত্যাগ করে বাংলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বর্ণিত রুস্তম শেখ তাঁদেরই একজন প্রতিনিধি। ঢাকার দরিদ্র রিকশাচালক রুস্তম শেখ মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদ হন। তার বর্তমান অবস্থা বোঝানোর জন্য বলা হয়েছে, তার ফুসফুস এখন পোকার দখলে। গ. উদ্দীপকটি ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বধীনতা’ কবিতায় উল্লিখিত মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ➠ মহান স্বাধীনতা আমাদের গৌরবের শ্রেষ্ঠ অর্জন। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও মহান স্বাধীনতা অর্জনের প্রত্যাশার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। এই যুদ্ধে বহু মানুষ তাদের স্বজন হারিয়েছে। স্বাধীনতার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অসংখ্য মানুষের অত্মত্যাগের বিনিময়ে তোমার আমার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভে সমর্থ হয়েছি। ➠ উদ্দীপকে সেই আত্মত্যাগের বিষয়টি উল্লিখিত রয়েছে। এখানে অনেক যুদ্ধ অনেক রক্ত ঝরার কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকের কবি তাঁর আদরের ছোট ভাই বোনকে আর দেখতে পাচ্ছেন না। কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি নিজে নিজেই তাই সাšড়¡না খুঁজে নিয়েছেন। স্বাধীন দেশের পতাকা অর্জনের জন্যই তাঁর স্বজনেরা প্রাণ দিয়েছে ঐ পতাকাই যেন তাঁর ভাই-বোন। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় ও এমন আত্মত্যাগের উল্লেখ রয়েছে। ঘ. চেতনাগত দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটির বিষয়বস্তু হচ্ছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। ➠ স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির স্বাধীনতা হরণ করেছিল। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাঙালি এক রক্তাক্ত সংগ্রামের অংশ নিয়েছিল এবং লাখো শহিদের প্রাণের বিনিময়ে দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছিল। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি শামসুর রহমান সেই সংগ্রামের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। ➠ উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে মহান মুক্তিযু্দ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট। এই যুদ্ধে অনেক রক্তক্ষয় হয়েছে। উদ্দীপকের ছোট ভাই-বোনকে হারিয়ে বেদনার্ত ব্যথা ভারাক্রান্ত। কারণ যুদ্ধে প্রিয় ভাই-বোন হারিয়েছেন। ঐ স্বাধীন পতাকা দেখে ভাই-বোন হারানোর ব্যথ্যা ভুলতে চান কবি। তিনি মনে করেন ঐ লাল-সবুজের পতাকাই তাঁর হারানো ভাই-বোন। ➠ ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতা ও আলোচ্য উদ্দীপক পর্যালোচনা করলে আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়টি লক্ষ করি। উভয়ই একই প্রেক্ষাপটে রচিত। কবিতায় মুুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর নরকীয় তাণ্ডবের কথা বলা হয়েছে। অসহায় বাঙালিরা প্রাণদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে বলা হয়েছে শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আক্রমণ চালানোর কথা। উদ্দীপকে প্রকট হয়ে উঠেছে স্বজন হারানোর বেদনার কথা। তবে কবিতায় যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ লাভ করেছে উদ্দীপকে আমরা তার পূর্ণতা দেখতে পাই। স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করেই ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতা রচিত। উদ্দীপক কবিতাংশের মূল অনুভূতি তাই। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
ভাষার দাবিকে ভূলুন্ঠিত করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৫২ সালের
২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে পূর্ববাংলায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু এদেশের
ছাত্রসমাজ প্রতিবাদমুখর হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন
চত্বর থেকে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ
এবং গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকে শহিদ হয়। অবশেষে সর্বস্তরের
জনগণ এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ক. কার ফুসফুস এখন পোকার দখলে? খ. শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো কেন? গ. উদ্দীপকে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে- ব্যাখ্যা করো। ঘ. ফুটে ওঠা দিকটি ছাড়াও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় আরও নানা দিক রয়েছে- মন্তব্যের যথার্থতা নিরূপণ করো। |
ক. রুস্তম শেখের ফুসফুস এখন পোকার দখলে। খ. স্বাধীনতাকামী বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক এসেছিল। ➠ এদেশের মানুষের ওপর হানাদার বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন চরম পর্যায়ে পেঁৗছে যায়। তারা বাঙালিদের দমন করতে নিরীহ মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অসংখ্য মানুষকে তারা নির্বিচারে হত্যা করে। তারা হত্যাযজ্ঞ চালানোর উদ্দেশ্যেই শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাংক নামায়। গ. উদ্দীপকে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের দিকটি ফুটে উঠেছে। ➠ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। তারা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে তাদের হাত রক্তে রঞ্জিত করেছিল। তাদের অত্যাচারে অনেক বাবা-মা হারিয়েছিল তাদের সন্তানকে, অনেক স্ত্রী হারিয়েছিল স্বামীকে। পাকিস্তানি যুদ্ধবাজরা বাঙালির রক্তে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিল বাংলার বুকে। ➠ উদ্দীপকে পাকিস্তানিদের অত্যাচারের দিকটি দৃশ্যমান। ভাষার জন্য আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে নিরীহ ছাত্রদের। উদ্দীপকের এই দিকটি ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায়ও লক্ষ করা যায়। সেখানে পাকিস্তানিদের অত্যাচারে ছাত্রাবাসের ছাত্ররা প্রাণ হারিয়েছে। উজাড় হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। পাক হানাদারদের অস্ত্রের গুলিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয় বাঙালিরা। কবিতায় বর্ণিত পাকিস্তানি বাহিনীর এই অত্যাচারের দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। ঘ. উদ্দীপকে শুধু পাকিস্তানিদের অত্যাচারের দিকটি প্রতিফলিত হলেও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাই প্রধান হয়ে উঠেছে। ➠ ‘স্বাধীনতা’ শুধু শব্দমাত্র নয়। এটি এমন এক অধিকার ও অনুভব, যা মানুষের জন্মগত। কিন্তু বাঙালির সেই অধিকার হরণ করেছিল পাকিস্তানিরা। তারা বাঙালিদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করতে থাকে। বাঙালিদের এই অত্যাচারের প্রতিবাদে যুদ্ধের ময়দানে নামতে হয়। স্বাধীনতা অর্জনের সেই বলিষ্ঠ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায়। ➠ উদ্দীপকে পাকিস্তানিদের অত্যাচারের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। যেখানে ছাত্রসমাজ ভাষার দাবিতে রাজপথে নেমে পাকিস্তানিদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। কিন্তু “তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা” কবিতায় বাঙালির দাবিটি ছিল চূড়ান্ত মুক্তির। তারা পাকিস্তানিদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল। ➠ স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর বীভৎস ও ভয়ংকর আক্রমণ চালায়। তারা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। এই ধ্বংসযজ্ঞে সাকিনা বিবির মতো গ্রামীণ নারীর সহায় সম্বল সম্ভ্রম বিসর্জিত হয়েছে, হরিদাসী হয়েছে স্বামীহারা, নবজাতক হারিয়েছে মা-বাবাকে। এত কিছুর পরও বাঙালি তার স্বাধীনতার জন্য ছিল দৃঢ়প্রত্যয়ী। উদ্দীপকে শুধু ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পাকিস্তানিদের অত্যাচারের দিকটি প্রস্ফুটিত হয়েছে। যেটি ছিল আমাদের স্বাধীকার চেতনার সূচনা। কিন্তু ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় ফুটে ওঠা বাঙালির স্বাধীন স্বদেশ পাওয়ার প্রবল আত্মবিশ্বাসের স্বরূপ উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ লক্ষ জনতার সামনে ভাষণ
দেন। এই ভাষণে তিনি বলেন- ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে
মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের
মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ক. অবুঝ শিশু কিসের ওপর হামাগুড়ি দিয়েছিল? খ. পাকিস্তানিরা কেন ছাত্রাবাস উজাড় করে দিয়েছিল? গ. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার কোন বিষয়টি উদ্দীপকে রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. কবিতায় উল্লিখিত ‘তোমাকে আসতেই হবে’ আর উদ্দীপকের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাক্য দুটির মূলসুর একই- মন্তব্যটির যথার্থ বিচার করো। |
ক. পিতা-মাতার লাশের ওপর অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিয়েছিল। খ. স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্ররা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তাই পাকহানাদার বাহিনী ছাত্রাবাস উজাড় করে দিয়েছিল। ➠ পাকিস্তানিদের স্বৈরশাসন বাঙালি মেনে নেয়নি। তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এ দেশের জনগণ রুখে দাঁড়ায়। সর্বপ্রথম ছাত্ররাই সোচ্চার এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের ধ্বংস করার জন্য তাই হানাদার বাহিনী ছাত্রাবাস আক্রমণ করে। গ. ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বর্ণিত কবির স্বাধীনতা লাভের বাসনার বিষয়টি উদ্দীপকে রয়েছে। ➠ স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতার বর্ণনায় জানা যায়, বাঙালিদের এই স্বাধীনতা হরণ করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। তারা বাংলার নিরীহ মানুষের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। বাঙালিরা এই অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করেনি। তারা এর প্রতিবাদ করে এবং স্বাধীনতা লাভের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালির এই দৃঢ়তা কবিকে আশান্বিত করেছিল। কবি মনে করেন যার জন্য বাঙালির এই আত্মত্যাগ সেই স্বাধীনতা তারা ছিনিয়ে আনবেই। ➠ উদ্দীপকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাঝেও বাঙালির প্রাণের দাবি স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনার আকাঙ্ক্ষা পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি আশা করেছেন যে স্বাধীনতার জন্য বাঙালি রক্ত দিচ্ছে, প্রয়োজনে আরো রক্ত দিয়ে হলেও সেই স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। স্বাধীনতার জন্য উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই আকাঙ্ক্ষা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার কবির আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। তাই বলা যায়, কবিতায় বর্ণিত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি উদ্দীপকেও প্রস্ফুটিত হয়েছে। ঘ. কবিতার ‘তোমাকে আসতেই হবে’ এবং উদ্দীপকের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ একই আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছে। সে আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতা লাভের। ➠ পাকিস্তানি হানা দার বাহিনী বাঙালির ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। তারা বাংলার নিরীহ মানুষের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তাদের অত্যাচারে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বর্ণিত হরিদাসীর মতো অনেকেই হয়েছে স্বামীহারা, সাকিনা বিবির মতো অনেকে হারিয়েছে তাদের সহায়-সম্ভ্রম। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যুদ্ধে বাঙালির এই আত্মত্যাগ এবং দৃঢ়তা দেখে কবির বিশ্বাস স্বাধীনতাকে একদিন তারা ছিনিয়ে আনবেই। ➠ উদ্দীপকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্বাধীনতাকে অর্জন করার দৃঢ় প্রত্যয় লক্ষ করা যায়। স্বাধীনতা যে বাঙালির প্রাণের দাবি তা বঙ্গবন্ধুর জনসভায় লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতেই প্রতীয়মান হয়। বঙ্গবন্ধু দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘোষণা করেছেন রক্ত দিয়ে হলেও তিনি বাংলার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবেন। তিনি লক্ষ জনতার সামনে ঘোষণা করেছেন ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তার এই ঘোষণার মাঝে স্বাধীনতা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ পেয়েছে। ➠ ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় বর্ণিত হয়েছে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির তীব্র আকাঙ্ক্ষার স্বরূপ। পাকিস্তানিরা বাঙালির স্বাধীনতা হরণ করেছিল তাদের ওপর নারকীয় নির্যাতন চালিয়েছিল। কিন্তু তাতে আপামর জনতার মনে মুক্তির চেতনা আরো উজ্জ্বলভাবে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছিল। সবার সাথে প্রাণস্পন্দন ও আশা জেগে থাকতে দেখেই কবি দৃপ্তকন্ঠে উচ্চারণ করেছেন ‘তোমাকে আসতেই হবে, ‘হে স্বাধীনতা’। উদ্দীপকে বঙ্গবন্ধুর মাঝেও স্বাধীনতার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় লক্ষ করা যায়। আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে তাই তিনি স্বাধীনতা অর্জনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং বলা যায়, ‘তোমাকে আসতেই হবে’ এবং উদ্দীপকের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাক্য দুটির মূলসুর একই। |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা: ড. সৌমিত্র শেখর। এপ্রিল ২০১৮। ৩. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |