‘প্রাণ’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর


প্রাণ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রাণ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রাণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই!
ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত,
বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রুময়-
মানবের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত
যদি গো রচিতে পারি অমর আলয়!

তা যদি না পারি, তবে বাঁচি যত কাল
তোমাদেরি মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই,
তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল
নব নব সংগীতের কুসুম ফুটাই।
হাসি মুখে নিয়ো ফুল, তার পরে হায়
ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়।

উৎস নির্দেশ:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রাণ’ কবিতাটি ‘কড়ি ও কোমল’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
এই কবিতায় স্বীয় সৃষ্টিকর্মের মধ্যে দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগের মাধ্যমেই অমরত্ব লাভ করা সম্ভব। আর মানুষের মাঝে চিরস্মরণীয় থাকার জন্য প্রয়োজন মহৎ সৃষ্টির দৃঢ় সংকল্প।

শব্দার্থ ও টীকা :
ভুবনে- পৃথিবীতে; ধরায়।
কাননে- বাগানে।
সূর্য করে- সূর্যের কিরণে।
চিরতরঙ্গিত- সর্বদা কল্লোলিত; বহমান।
লভি- লাভ করি।
ঠাঁই- ঠিকানা; স্থান।
জীবন্ত হৃদয় মাঝে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রচনায় মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। আলোচ্য অংশে তাঁর এই আকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
বিরহমিলন... অশ্রুময়- মানুষের জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা নিয়ে তাঁর জীবন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানব জীবনের এই বৈচিত্র্যের মধ্যে স্থান করে নিতে চেয়েছেন। আর তার সৃষ্টির মধ্যে ফলিয়ে তুলতে চেয়েছেন যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার বিপুল এক আখ্যান।
অমর আলয়- অমর সৃষ্টি অর্থে।
নব নব সঙ্গীতের কুসুম ফুটাই- রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির জগৎ বিপুল। মানুষের জীবনের বিচিত্র অনুভব-অনুভূতি, ভাব-ভাবনা ও কর্মের জগৎকে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে প্রাণময় করে তুলতে চেয়েছেন। তাঁর সেই সৃষ্টির মধ্য থেকে রূপ-রস-গন্ধ যেন মানুষ অনুভব করতে পারে, তার জন্য তিনি প্রতিনিয়ত ফুটিয়ে তুলছেন সৃষ্টির কুসুম।

পাঠের উদ্দেশ্য :
ক. জীবনের সার্থকতা সম্পর্কে কবির ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
খ. কবি ও কবিতার কাজ বর্ণনা করতে পারবে।

পাঠ-পরিচিতি :
এই জগৎ সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ-ভালোবাসায় পৃথিবী পরিপূর্ণ। জগতের মায়া ত্যাগ করে অন্য কিছুর আহ্বানে প্রলুব্ধ হয়ে কবি তাই মৃত্যুবরণ করতে চান না। তিনি অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন, মানুষের মনজয়ী রচনা সৃজনের মাধ্যমে সবার কাছে আদৃত হওয়ার। পৃথিবীর নরনারীর সুখ-দুঃখ-বিরহ যদি ঠিকভাবে তাঁর সৃষ্টিতে ঠাঁই পায়, তবেই তিনি অমর হবেন। তা-না হলে তাঁর রচনা শুকনো ফুলের মতোই সবার কাছে অনাদৃত হয়ে পড়বে। সৎ ও শুভকর্ম করে জগতে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য দৃঢ় সংকল্প প্রয়োজন। কবিতাটিতে এ প্রত্যয়ই প্রতিফলিত হয়েছে। জীবন তো একবারই। জীবনে নেতিবাচকতা পরিহারপূর্বক মহামানবের পদচিহ্ন অনুসরণ করে জীবনপাঠের দীক্ষা কবিতাটিতে উচ্চকিত হয়েছে।

কবি পরিচিতি :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ সালে (৭ই মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। বাল্যকালেই তাঁর কবিপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তাঁর বনফুল কাব্য প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজি Gitanjali: Song Offerings সংকলনের জন্য এশীয়দের মধ্যে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বস্তুত তাঁর সাধনায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সকল শাখায় দ্রুত উন্নতি লাভ করে এবং বিশ্বদরবারে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুরকার, নাট্য প্রযোজক ও অভিনেতা। কাব্য, ছোটোগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখাই তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে। তাঁর অজস্র রচনার মধ্যে মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, কল্পনা, ক্ষণিকা, বলাকা, পুনশ্চ, চোখের বালি, গোরা, ঘরে বাইরে, যোগাযোগ, শেষের কবিতা, বিসর্জন, ডাকঘর, রক্তকরবী, গল্পগুচ্ছ, বিচিত্র প্রবন্ধ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ সালে (৭ই আগস্ট ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।।

কর্ম-অনুশীলন :
১। ‘প্রতিটি জীব শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চায়’- উদাহরণের সাহায্যে কথাটি বিশ্লেষণ করো।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১। কবি কোথায় অমর আলয় রচনা করতে চেয়েছেন?
ক. স্বর্গে
খ. পৃথিবীতে
গ. পুষ্পিত কাননে
ঘ. মানুষের মাঝে
২। কবি মানব-হৃদয়ে কীভাবে ঠাঁই পেতে চেয়েছেন?
ক. ভালোবেসে
খ. সৃষ্টির মাধ্যমে
গ. ফুল ফুটিয়ে
ঘ. সংগীতের সাহায্যে
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩-সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়;
৩। উদ্দীপকের বক্তব্যের সঙ্গে 'প্রাণ' কবিতার ভাবগত সাদৃশ্য রয়েছে যে বাক্যে, তা হলো-
i. মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই
ii. মানবের সুখে-দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত যদি গো রচিতে পারি অমর আলয়!
iii. হাসি মুখে নিয়ে ফুল, তার পরে হায় ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. iii
গ. ii ও iii
ঘ. i ও iii

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. ‘প্রাণ’ কবিতার কবি কে?
উত্তর : ‘প্রাণ’ কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২. রবীন্দ্রনাথ বাংলা কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ বাংলা ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ সনে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যারিস্টারি পড়ানোর জন্য কোথায় পাঠানো হয়েছিল?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যারিস্টারি পড়ানোর জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়েছিল।
৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বনফুল’।
৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কত বছর বয়সে ‘বনফুল’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫ বছর বয়সে ‘বনফুল’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়?
৬. ‘কোন কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর : ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে নোবেল পুরস্কার পান?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
৯. ধরায় কিসের খেলা চিরতরঙ্গিত?
উত্তর : ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত।
১০. ‘প্রাণ’ কবিতার কবি মানবের সুখ-দুঃখের সমন্বয়ে কী গাঁথতে চান?
উত্তর : ‘প্রাণ’ কবিতার কবি মানবের সুখ-দুঃখের সমন্বয়ে সংগীত গাঁথতে চান।
১১. ‘চিরতরঙ্গিত’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : চিরতরঙ্গিত বলতে বোঝায় চির কল্লোলিত।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রুময়- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : পৃথিবীতে মানবজীবনের বৈচিত্র্য তুলে ধরতেই আলোচ্য কথাটি বলেছেন প্রাণ কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
➠ পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানে নেই নিরবচ্ছিন্ন সুখ বা দুঃখ। বরং সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিরহ-মিলনের মিশেলেই জীবন বয়ে চলে। মানবজীবনের এই উত্থান-পতনের বিশেষ দিকটিই প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।
২. ‘তোমাদেরি মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই’- কবি এ কথা বলেছেন কেন?
উত্তর : মানুষের মনে অমরত্বের আসন লাভের আকাঙ্ক্ষা থেকে কবি আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
➠ ধরার আকর্ষণীয় জীবন ছেড়ে কবি মৃত্যুর স্বাদ নিতে চান না। কিন্তু বাস্তবতাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কবি জানেন, পৃথিবীতে কেউ চিরকাল বেঁচে থাকে না। তাই দেহের মৃত্যু ঘটলেও কবি চান তাঁর স্মৃতি বেঁচে থাকুক মানুষের মাঝে। ভালোবেসে মানুষ তাঁকে তাদের মনের কোন ঠাঁই দিক।
৩. ‘মানুষের সুখে দুঃখে গাাঁথিয়া সংগীত’ - চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : মানুষের আনন্দ-বিরহ নিয়ে রচিত সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে কবি ধরার বুকে অমর হতে চান-আলোচ্য চরণে এটিই প্রকাশ পেয়েছে।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতার কবির লক্ষ্য পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ। আর সেটি সম্ভব সৎ ও শুভকর্মের মাধ্যমেই। কবি জানেন এই পৃথিবীর জীবন মূলত মানুষের নিত্যদিনের হাসি-কান্না, অনন্দ-বেদনার সমষ্টি। তাই তাঁর সৃষ্টিকর্মে সেগুুলো যথাযথভাবে ঠাঁই পেলেই তা মানুষের মনজয়ী হয়ে উঠবে। এ কারণেই কবি মানবের অনুভূতিগুলোকে তাঁর রচনার উপজীব্য করার কথা বলেছেন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ :
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর, অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েল পাখি- চারদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশ্বত্থের করে আছে চুপ।
ক. কবি কাদের মাঝে বাঁচতে চান?
খ. এ পৃথিবীতে কবি অমর আলয় রচনা করতে চান কেন?
গ. উদ্দীপকে প্রত্যাশিত বিষয়টি ‘প্রাণ’ কবিতার ভাবের সাথে কীভাবে মিশে আছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার আংশিকভাব মাত্র, পূর্ণরূপ নয়”- যুক্তিসহকারে বুঝিয়ে লিখো।
ক. কবি মানবের মাঝে বাঁচতে চান।
খ. পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য কবি অমর আলয় রচনা করতে চান।
➠ নরনারীর সুখ-দুঃখ-বিরহ কবি তাঁর রচনায় সঠিকভাবে চিত্রিত করতে চান। আর এই রচনা যদি মানুষের মনজয়ী হয় তবে এই অমর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কবি পৃথিবীর মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এভাবেই কবি তাঁর অমর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি গোটা পৃথিবীকে অমর আলয় হিসেবে গড়ে তুলতে চান।

গ. জগতের সৌন্দর্য বিমোহিত হওয়ার দিকটি উদ্দীপকে প্রকাশ পাওয়ায় উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, এই পৃথিবী সুন্দর ও আকর্ষণীয়। মানুষের হাসি-কান্না, প্রেম-ভালোবাসা, মান-অভিমানে পূর্ণ। কবি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চান না। সৃষ্টিশীল কাজ করে তিনি পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে থাকার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
➠ উদ্দীপকের কবিতাংশে বর্ণিত হয়েছে গ্রামবাংলার এক অনুপম চিত্র। উদ্দীপকের কবি বাংলার রূপে মুগ্ধ। বাংলার রূপ দেখার পর তাঁর আর পৃথিবীর রূপ দেখার সাধ নেই। ভোরের দোয়েল পাখি কীভাবে ছাতার মতো ডুমুরের পাতার নিচে বসে আছে, কবি তা মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়েছেন। সেখানে জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশ্বত্থের পত্র-পল্লবের স্তূপ যেন স্থির হয়ে আছে। প্রাণ কবিতায়ও অনুরূপভাবে রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে চিরকাল বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

ঘ. ‘প্রাণ’ কবিতার মাত্র একটি দিক-পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্র্যে মুগ্ধতার বিষয়টি উদ্দীপকে উল্লিখিত। তাই উদ্দীপকটিতে ‘প্রাণ’ কবিতার আংশিক ভাব প্রকাশিত হয়েছে।
➠ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনবদ্য সৃষ্টি প্রাণ কবিতায় তিনি বলেছেন, পুষ্পিত কাননরূপী এই সুন্দর পৃথিবী তাঁকে মুগ্ধ, বিমোহিত করেছে। হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ-ভালোবাসায় পূর্ণ এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কবি যেতে চান না। তিনি মানুষের মনজয়ী রচনা সৃষ্টি করে স্মরণীয় ও বরণীয় হতে চান। তাঁর এই অমর সৃষ্টিতে নর-নারীর হৃদয় রহস্য- সুখ-দুঃখ-বিরহ যেন সঠিকভাবে স্থান পায়, সেই প্রত্যাশা করেছেন।
➠ উদ্দীপকে প্রকৃতির এক অপরূপ চিত্রের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন কোনো কিছুই যেন কবির চোখ এড়ায়নি। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তিনি দেখেছেন ডুমুরের পাতার নিচে দোয়েলটিকে। দোয়েলের মতোই যেন চুপ করে আছে বিভিন্ন গাছের পত্রপল্লবের স্তূপ। বাংলার এমন সৌন্দর্য দেখে তিনি আর পৃথিবীর রূপ খুঁজতে চান না। কবি যেন পরিপূর্ণভাবে পরিতৃপ্ত।
➠ আলোচ্য ‘প্রাণ’ কবিতা ও উদ্দীপক পর্যালোচনা করলে আমরা লক্ষ করি উদ্দীপকে পৃথিবীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার যে বর্ণনা করা হয়েছে তা প্রাণ কবিতায় একটি খণ্ডিত ভাবমাত্র। কবিতায় এছাড়াও রয়েছে কবি মনের অমরত্ব লাভের বাসনার স্বরুপ। কবি অমর হতে চান মানুষের হাসি-কান্না, বিরহ বেদনা তাঁর রচনায় প্রকাশ করার মাধ্যমে। অমর আলয় সৃষ্টি করে তিনি বরণীয় হতে চেয়েছেন। কিন্তু উদ্দীপক কবিতাংশে তেমন কোনো চেতনার উল্লেখ নেই। সেদিক থেকে উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার আংশিকভাব মাত্র, পূর্ণরূপ নয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ :
নিখিলের এত শোভা, এত রূপ, এত হাসি-গান,
ছাড়িয়া মরিতে মোর কভু নাহি চাহে মন-প্রাণ।
এ বিশ্বের সবি আমি প্রাণ দিয়ে বাসিয়াছি ভাল-
আকাশ বাতাস জল, রবি-শশী, তারকার আলো।
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিসের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান?
খ. ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে’- চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে বিষয়টি ‘প্রাণ’ কবিতার ভাবের সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন মাত্র। যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।
খ. ‘প্রাণ’ কবিতায় আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে কবি মনের অমরত্ব লাভের প্রত্যাশা প্রকাশিত হয়েছে।
➠ এই পৃথিবী সুন্দর ও আকর্ষণীয়। মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ ভালোবাসায় এটি পরিপূর্ণ। এই সবকিছুর প্রতি কবি গভীর টান অনুভব করেন। তিনি জগতের মায়া ত্যাগ করে অন্য কিছুর আহ্বানে সাড়া দিতে চান না। পৃথিবীর বুকে তিনি অমর হতে চান। চরণটির মাধ্যমে কবির মর্ত্যপ্রীতির বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।

গ. উদ্দীপকে ‘প্রাণ’ কবিতায় বর্ণিত এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার গভীর আর্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেদিক দিয়ে ‘প্রাণ’ কবিতায় ভাবের সাথে উদ্দীপকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতায় বলা হয়েছে, এ জগৎ বড়ই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এ পৃথিবী মানুষের মায়া-মমতা, হাসি-কান্না, মান-অভিমানে পরিপূর্ণ। এই জগতের মায়া-মমতা ত্যাগ করে কবি মরে যেতে চান না। পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শে কবি আপ্লুত। প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ কবি চান তাঁর রচনায় পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে।
➠ উদ্দীপকে বলা হয়েছে, পৃথিবীর নান্দনিক রূপ-সৌন্দর্যের কথা। এই পৃথিবীর আকাশ বাতাস জল, চাঁদ, সূর্য তারার আলো সবকিছুকে কবি হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছেন। হাসি-গানে ভরা এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কবি মরে যেতে চান না। এই বিশ্ব-প্রকৃতির মাঝে কবি বেঁচে থাকতে চান। ‘প্রাণ’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একই বাসনা ব্যক্ত করেছেন।

ঘ. উদ্দীপকে ‘প্রাণ’ কবিতার কেবল একটি দিক-পৃথিবীকে ভালোবাসা এবং পৃথিবীকে ছেড়ে না যাওয়ার কামনা ব্যক্ত হয়েছে। তাই উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন মাত্র।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মায়া-মমতা, হাসি-কান্নায় ভরপুর এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চান না। বরং জীবিত থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য নতুন নতুন গান কবিতা লিখতে চান। পৃথিবীকে ভালোবেসে এক মহতী প্রেরণায় তিনি অসামান্য অবদান রাখতে চান। আর এভাবেই তিনি স্মরণীয়-বরণীয় হতে চান।
➠ উদ্দীপকের কবি পৃথিবীর রূপ-শোভা দেখে আপ্লুত। পৃথিবীর হাসি-গান, আকাশ-বাতাস, নদ-নদী, জল, চাঁদ-সুরুজ, তারার আলো এসব কিছু ছেড়ে কিছুতেই তিনি চলে যেতে চান না। উদ্দীপক কবিতাংশের কবির এমন মর্ত্যপ্রীতির প্রকাশ ঘটেছে ‘প্রাণ’ কবিতায়ও। কিন্তু কবিতার ভাবটি আরো বিস্তৃত।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতার কবি ও উদ্দীপকের কবি উভয়েই এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে চান না। কিন্তু ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি আরো অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি নরনারীর হাসি-কান্না বিরহ-মিলনকে আশ্রয় করে বহু গান-কবিতা লিখে যেতে চান। মরণজয়ী রচনা সৃজনের মাধ্যমে স্মরণীয়-বরণীয় হতে চান। আর প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ উদ্দীপক কবিতাংশের কবি কেবল এই পৃথিবী ছেড়ে না যাওয়ার গভীর কামনা ব্যক্ত করেছেন। নিজের সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানবমনে চিরকালের জন্য ঠাঁই পাওয়ার বাসনা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ নেই, যেটি ‘প্রাণ’ কবিতার মূল ভাবনা। ‘প্রাণ’ কবিতার বিষয় বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন মাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ :
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন আমাদের সৃষ্টিশীলতা ও ঐতিহ্যের অহংকার। মানবজীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ তুলির আঁচড়ে তিনি যেভাবে জীবন্ত করে তুলেছেন, তা অবিশ্বাস্য। দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। কাদায় আটকে যাওয়া গরুর গাড়ির ছবিসহ নানামাত্রিক চিত্রকর্ম তাঁকে বিরাট খ্যাতি এনে দিয়েছে।
ক. ‘প্রাণ’ কবিতার কবি কী রচনা করতে চান?
খ. ‘প্রাণ’ কবিতার কবি মানুষের মনজয়ী রচনা সৃজন করতে চান কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘প্রাণ’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার আংশিক চিত্র মাত্র- প্রমাণ করো।
ক. ‘প্রাণ’ কবিতার কবি অমর আলয় রচনা করতে চান।
খ. মানুষের মনে স্থায়ী আসন লাভ করার জন্য প্রাণ কবিতার কবি মানুষের মনজয়ী রচনা সৃজন করতে চান।
➠ প্রাণ কবিতার কবির সৃষ্টিকর্মের প্রেরণা মানুষের আবেগ-অনুভূতি। তাঁর সমস্ত সৃষ্টির মূল লক্ষ্যও মানুষ। তাঁর মতে ও পৃথিবীর নরনারীর সুখ-দুঃখ-বিরহের আখ্যান তাঁর সৃষ্টিতে ঠিকভাবে ঠাঁই পেলে তবেই তিনি মানুষের মাঝে অমর হতে পারবেন। এ কারণেই তিনি এমন রচনা সৃজন করতে চান, যা সকলের কাছে সমাদৃত হবে।

গ. উদ্দীপকে ‘প্রাণ’ কবিতায় বর্ণিত অমর-আলয় বা অমর সৃষ্টি রচনার মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হওয়ার দিকটি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আকাঙ্ক্ষা অনন্তকাল বেঁচে থাকার ও জীবনকে উপভোগ করার । মানুষের বিরহ-মিলন, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ নিয়ে তিনি রচনা করতে চান অসংখ্য সংগীত। কবির প্রত্যাশা তাঁকে ভালোবেসে মানুষ সে গানগুলো কণ্ঠে ধারণ করবে। এভাবেই তিনি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান, স্মরণীয় বরণীয় হতে চান।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন অপরিসীম দক্ষতায় একের পর এক ছবি এঁকেছেন। তুলির আঁচড়ে মানুষের জীবনচিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় ক্ষুধাপীড়িত কঙ্কালসার মানুষের ছবি এঁকেছেন। কতই না আবেদন সৃষ্টি করেছে তাঁর আঁকা কাদায় আটকে যাওয়া গরুর গাড়ির ছবি। এই অসামান্য প্রতিভার কারণে তিনি অমর হয়ে আছেন। ‘প্রাণ’ কবিতায়ও একইভাবে কবি মানুষের জীবনের হাসি-কান্না রূপায়িত করে অমর সংগীত রচনায় মধ্য দিয়ে অমর হতে চেয়েছেন।

ঘ. উদ্দীপকে শুধু অমর সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে জগতে স্মরণীয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘প্রাণ’ কবিতায় বর্ণিত মর্ত্যপ্রীতি এখানে অনুপস্থিত।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৃথিবীর মানুষ, প্রকৃতি সবকিছুকেই অন্তর দিয়ে ভালোবেসেছেন। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে তিনি মরে যেতে চান না। মানুষের বিরহ-মিলন, হাসি-কান্না রূপায়িত করে অসংখ্য সংগীত রচনার মধ্য দিয়ে তিনি অমরত্ব লাভ করতে চান। মানুষের কণ্ঠে তার গান অনুরণিত হবে বলে তিনি নতুন নতুন গান রচনা করতে চান। ভালোবাসা মায়া মমতায় পরিপূর্ণ এ পৃথিবীতে তিনি সৎ ও শুভকর্ম করে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।
➠ উদ্দীপকের অমর চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন দুর্ভিক্ষের ক্ষুধাপীড়িত মানুষের ছবিসহ বিভিন্ন জীবনঘনিষ্ঠ ছবি এঁকে খ্যাতিমান ও স্মরণীয় হয়েছেন। তাঁর চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। মহৎ কর্মের মাধ্যমে অমর হওয়ার এ বিষয়টি ‘প্রাণ কবিতায়ও এসেছে। কিন্তু পৃথিবীর রূপ সৌন্দর্যের প্রতি কবিতার কবির মুগ্ধতার বিষয়টি উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
➠ উদ্দীপকে জয়নুল আবেদীন তাঁর শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকার কথাটি বলা হয়েছে। এখানে আর কোনো বিষয় আলোচিত হয়নি। ‘প্রাণ’ কবিতায় কবির অমরত্ব লাভের বাসনার পাশাপাশি জগতের প্রতি গভীর টান প্রকাশ পেয়েছে। পৃথিবীর মায়াময় কোল ছেড়ে তিনি চলে যেতে চান না। সে ভাবনা থেকেই তিনি সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে অমর হওয়ার প্রসঙ্গটি এনেছেন। কিন্তু উদ্দীপকে এমন ভাবনার পরিচয় মেলে না। সেদিক থেকে উদ্দীপকটি প্রাণ কবিতার আংশিক প্রতিফলন মাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ :
বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর-
পুত্র তাঁহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর!
চারিধারে তাঁর ঘনায়ে আসিছে মরণ-অন্ধকার।
* * * * * * * * * * * *
কহিল কাঁদিয়া- ‘হে দয়াল খোদা, হে রহিম রহমান,
মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আমারি আপন প্রাণ,
তাই নিয়ে প্রভু পুত্রের প্রাণ কর মোরে প্রতিদান।’
* * * * * * * * * * * *
সেইদিন হতে রোগ-লক্ষণ দেখা দিল বাবরের,
হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করিল শয্যা সে মরণের,
নতুন জীবনে হুমায়ুন ধীরে বাঁচিয়া উঠিল ফের।
* * * * * * * * * * * *
মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোনো ক্ষয়,
পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়।
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিসের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান?
খ. ‘ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়।’- চরণটির মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘প্রাণ’ কবিতার কবির আকাঙ্ক্ষার সাথে উদ্দীপকের বাবরের আকাঙ্ক্ষার বৈসাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘প্রাণ’ কবিতায় উল্লিখিত চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণের বিবেচনায় উদ্দীপকের বাদশা বাবর সফল- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।
খ. কবির তাঁর সৃষ্টিকর্মের প্রতি যথার্থ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতার কবির লক্ষ্য মানুষের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে ঠাঁই লাভ করা। তাই মানুষের জন্য তিনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সৃষ্টির অবতারণা করেন। কবিতায় তাঁর সৃষ্টিকর্মের সাধনাকে তিনি তুলনা করেছেন সংগীতের ফুল ফোটানোর সঙ্গে। সে ফুলগুলোকে সবাই যেন ভালোবেসে গ্রহণ করে-এটিই কবির প্রার্থনা। আর যদি ফুল শুকিয়ে যায়, অর্থাৎ সকলের মন জয় করার উপযোগী না হয় তবে সে ফুল তথা সৃষ্টিকর্মকে বর্জনের কথা বলেছেন কবি।

গ. ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। আর উদ্দীপকে বাদাশাহ বাবর নিজের জীবনের বিনিময়ে সন্তানকে বাঁচাবার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, এই পৃথিবী সুন্দর ও আকর্ষণীয়। হাসি-কান্না, মায়া-মমতা আবেগ-ভালোবাসায় পরিপূর্ণ এ পৃথিবী ছেড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করতে চান না। কবি তাঁর অমর সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের মন জয় করতে চান। অর্থাৎ, শুভকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি অমর হতে চান।
➠ উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি বাদশাহ বাবরের পুত্র হুমায়ুন রোগশয্যায় মৃত্যুর প্রহর গুনছিল। পুত্রকে হারানোর চিন্তায় ব্যাকুল বাবরের চোখে ঘুম ছিল না। এমনি অবস্থায় বাবর খোদার কাছে প্রার্থনা জানান তাঁর জীবনের বিনিময়ে খোদা যেন পুত্রকে সুস্থ করে দেন। ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি নিজে বেঁচে থেকে পৃথিবীর রূপ-সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান আর উদ্দীপকে বাদশাহ বাবর নিজের জীবনের বিনিময়ে পুত্রকে সুস্থ করে তুলতে চান। তাই আকাঙ্ক্ষার দিক থেকে দুজনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. ‘প্রাণ’ কবিতার কবির চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে শুভকর্মের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে অমর হওয়া। উদ্দীপকের বাদশাহ বাবরও পিতৃস্নেহের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অমর হয়েছেন ।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি এই সুন্দর মায়াময় পৃথিবীতে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। কবি সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা, বিরহ-মিলন, চিত্রায়িত করে অমর সংগীত রচনা করে স্মরণীয় ও বরণীয় হতে চান। মরণজয়ী রচনা সৃজনের মাধ্যমে তিনি মানুষের কাছে আদৃত হতে চান। অর্থাৎ, কবির চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে শুভকর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে ঠাঁই পাওয়া। ক্ষ উদ্দীপকে বাদশাহ বাবর পিতৃস্নেহের যে দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন তা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। সন্তানকে তিনি এতটাই ভালোবাসতেন যে নিজের জীবনের বিনিময়ে তাকে সুস্থ করে তুলতে চেয়েছেন। সন্তানবাৎসল্যের এমন দৃষ্টান্ত বিরল। তিনি স্রষ্টার কাছে নিজের জীবনের বিনিময়ে হুমায়ুনকে বাঁচানোর আকুতি প্রকাশ করলে অলৌকিকভাবে হুমায়ুন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর বাদশাহ বাবর প্রাণত্যাগ করে পান অমরত্ব।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি তার অমর সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীতে স্মরণীয় ও বরণীয় হতে চান। আর উদ্দীপকে বর্ণিত বাদশাহ বাবর যে পিতৃস্নেহের পরিচয় তুলে ধরলেন তাতে তিনি মরেও অমর হয়ে রইলেন। বাবরের পিতৃস্নেহের কাছেও যেন মরণের পরাজয় ঘটল। ‘প্রাণ’ কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন তাঁর বিপুল সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে। চিরকাল এভাবেই তাঁর কালজয়ী রচনাগুলো মানুষকে আনন্দ দিয়ে যাবে। উদ্দীপক কবিতাংশে বর্ণিত বাদশাহ বাবরও একইভাবে অমরত্ব লাভে সফল। পুত্রের জীবনরক্ষায় তিনি অনুপম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সেই কীর্তিই তাঁর স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে রেখেছে মানুষের মনে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ :
দুষ্টু ছেলেরা পাখি, ফড়িং অথবা প্রজাপতির ডানা ভেঙে দিলে তাদের করুণ অবস্থা সহজেই চোখে পড়ে। তারা উড়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করতে থাকে। গরু, ছাগল অথবা হাঁস-মুরগি জবাই করার সময় দেখা যায় সর্বশক্তি দিয়ে বাঁচার কী নিদারুণ চেষ্টা! পানিতে পড়ে গেেল খড় বা ভাসমান কিছু পেলে তাতে আশ্রয় নিয়ে বাঁচার প্রাণান্তকর চেষ্টা দেখা যায় পিঁপড়ার মধ্যে। প্রকৃতপক্ষে প্রাণিজগতের সব প্রাণীর কাছে তাদের প্রাণই সবচেয়ে মূল্যবান। তাই প্রতিটি জীব শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চায়।
ক. ‘প্রাণ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
খ. কবি নব নব সংগীতের কুসুম ফোটান কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার কোন দিকটিকে তুলে ধরেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার কবির মনের ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরতে সফল হয়েছে কী? মতামত দাও।
ক. প্রাণ কবিতাটি ‘কড়ি ও কোমল’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
খ. নিজের সৃষ্টিকর্মের রূপ-রস-গন্ধ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কবি নব নব সংগীতের কুসুম ফোটান।
➠ কবি মানুষের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কীর্তি গড়ে চলেন। তাঁর সৃষ্টিকর্মের মূলভিত্তি হলো মানুষের বিচিত্র অনুভব-অনুভূতি, ভাব-ভাবনা ও কর্মকাণ্ড। কবি চান মানুষ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর সৃষ্টিকর্মের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। ‘প্রাণ’ কবিতায় কবির সৃষ্টিকর্মকেই ‘সংগীতের কুসুম বলে’ অভিহিত করা হয়েছে। মানুষের কাছে নিজের সৃষ্টিকে প্রাণময় করে তোলার জন্য কবি নব নব সংগীতের কুসুম ফোটান।

গ. উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতায় বর্ণিত কবির মর্ত্যপ্রীতির দিকটি তুলে ধরেছে।
➠ এই জগৎ সুন্দর ও আকর্ষণীয়। হাসি, কান্না, আবেগ-ভালোবাসা, মান-অভিমান প্রভৃতিতে পরিপূর্ণ। এই জগতের মায়া ত্যাগ করে ‘প্রাণ’ কবিতার কবি মরতে চান না। এই জগতের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি বেঁচে থাকতে চান। পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্যে কবি মুগ্ধ হয়েছেন। কবির এই মুগ্ধতা তাঁর নিজের জীবনের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করেছে। তাই তিনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে চান না।
➠ উদ্দীপকে ‘প্রাণ’ কবিতার কবির মতো মর্ত্যপ্রীতির বেশ কিছু নিদর্শনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সকল প্রাণীর কাছে নিজের প্রাণ অনেক মূল্যবান। কোনো প্রাণীই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মরতে চায় না। বেঁচে থাকার জন্য সকলেই শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে। উদ্দীপকে ফড়িং, প্রজাপতি, হাঁস-মুরগি সকলের ক্ষেত্রেই তা সহজেই প্রতীয়মান হয়। আর উদ্দীপকের প্রাণীগুলোর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষার সাথে ‘প্রাণ’ কবিতার কবির বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা তুলনীয়।

ঘ. ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি সৎ ও শুভকর্ম করে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার অভিলাষ ব্যক্ত করলেও উদ্দীপকে তার ইঙ্গিত না থাকায় সেটি কবির মনের ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরতে পারেনি।
➠ এই পৃথিবী অপরূপ সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমÊিত। মানুষের হাসি, কান্না, আবেগ, ভালোবাসা পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করে রেখেছে। এই সুন্দর পৃথিবীতে ‘প্রাণ’ কবিতার কবি অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চান। কিন্তু বাস্তবে অনন্তকাল বেঁচে থাকা সম্ভব নয় বলে তিনি নিজের কর্মের দ্বারা মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান। মানুষের মনজয়ী রচনা সৃষ্টির মাধ্যমে সকলের কাছে আদৃত হতে চান।
➠ উদ্দীপকে বিভিন্ন প্রাণীর বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি জীবই যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চায়, তা উদ্দীপকে তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য এই আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি জীবের স্বভাবজাত বিষয়। উদ্দীপকের এসব প্রাণীর মতো ‘প্রাণ’ কবিতার কবিও বেঁচে থাকতে চান। তবে সেটা মানুষের জন্য সৎ ও শুভকাজের মাধ্যমে।
➠ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য ‘প্রাণ’ কবিতার কবির ভাবনা আর উদ্দীপকে বর্ণিত প্রাণীগুলোর চেষ্টা এক নয়। কবি পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে। সৃষ্টিশীল রচনার মাধ্যমে তিনি ঠাঁই করে নিতে চেয়েছেন মানুষের মনে। এভাবে মানুষের মাঝে অমর হয়ে তিনি বেঁচে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু উদ্দীপকে কবির এসকল আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার কবির মনের ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরতে সফল হয়নি।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ :
এ কথা জানিতে তুমি ভারত ঈশ্বর শাজাহান
কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধনমান।
শুধু তব অন্তর বেদনা
চিরন্তন হয়ে থাক,
শুধু থাক
সম্রাটের ছিল এ সাধনা
যায় যদি লুপ্ত হয়ে যাক
কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল, এ তাজমহল।
ক. ‘বনফুল’ কাব্যগ্রন্থটি কত সালে প্রথম প্রকাশিত হয়?
খ. ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’ -কবি একথা বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার কোন বিষয়টিকে প্রকাশ করে? -ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের শাজাহান এবং ‘প্রাণ’ কবিতায় কবির অনুভূতি একই সূত্রে গাঁথা।” -মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বনফুল’ কাব্যগ্রন্থটি ১৮৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।
খ. হাসি, আনন্দ, সুখ-দুঃখে ঘেরা এই সুন্দর আকর্ষণীয় পৃথিবী ছেড়ে কবি কিছুতেই চলে যেতে চান না।
➠ পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা চিরন্তন। যদিও এটা সকলেই জানেন মানুষ মরণশীল। এই সুন্দর আকর্ষণীয় পৃথিবীতে মানুষ আসেই পুনরায় চলে যাওয়ার জন্য। তবুও মানুষ এ ধরণীতে বাঁচতে চায়, কিছুতেই হারিয়ে যেতে চায় না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও চান না এ পৃথিবীর মাঝ থেকে হারিয়ে যেতে, চান না মরে যেতে। তিনি পৃথিবীর মানুষের হৃদয় ও প্রকৃতির অপরূপ রূপ-লাবণ্য দিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করতে চান। এভাবে তিনি মহৎ কর্ম সৃষ্টি করে মানবের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকতে চান। বস্তুত ‘প্রাণ’ কবিতায় একথাই তিনি উক্ত চরণটি দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন।

গ. উদ্দীপকে নিজের সৃষ্টির মাধ্যমে বেঁচে থাকার প্রত্যাশাই ‘প্রাণ’ কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে।
➠ রূপ-রস-আনন্দে ভরপুর এই জগত সুন্দর ও আকর্ষণীয়। মানুষ এখানে নিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে ও টিকে থাকতে। আবেগ ও ভালোবাসায়, মান ও অভিমানে, হাসি ও কান্নায় পূর্ণ এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই যেন আনন্দের। কেউই চায় না এই মায়াবী পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব চিরকালের জন্য বিলীন করে দিতে।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতাটিতে কবিমনের এক সুন্দর আকাঙ্ক্ষা অভিব্যক্ত হয়েছে। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে কবি অন্য কিছুর আহ্বানে প্রলুব্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে চান না। তাই তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, কালজয়ী রচনা সৃষ্টির মাধ্যমে জগতের নিকট আদৃত হওয়ার। উদ্দীপকের কবিতাংশটুকুতে সম্রাট শাহজাহানের মনের যে বাসনা ব্যক্ত হয়েছে তা ‘প্রাণ’ কবিতায় প্রকাশিত কবির মনোভাবেরই একটু ভিন্নরূপ। সম্রাট শাহজাহান জানেন সময়ের কালস্রোতে জীবন- যৌবন-ধন-মান একদিন সবই লুপ্ত হয়ে যাবে। তাই তিনি চেয়েছেন নিজের আপনজন হারানোর বেদনাটি যেন জগতের মানুষ সহজে ভুলে না যায় সেজন্য কিছু সৃষ্টি করতে। আর এর প্রত্যক্ষ ফসল আগ্রায় সৃষ্ট অমর তাজমহল। উদ্দীপকে বর্ণিত সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে নিজের অমরত্বের আকাঙক্ষা ‘প্রাণ’ কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের শাহজাহান এবং ‘প্রাণ’ কবিতার কবির অনুভূতি একসূত্রে গাঁথা।
➠ মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। জন্মগ্রহণ করলে তাকে একসময় মৃত্যুবরণ করতে হবে। জীবনের এই ধ্রুব সত্যটি সকলের জানা। তবুও মানব মনের বাসনা যে, সে পৃথিবীতে মানুষের মাঝে অমর হয়ে থাকবে। যেহেতু দৈহিকভাবে মানুষের অবিনশ্বর হওয়া সম্ভব নয়, তাই আপন সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষের মনে জাগরূক হয়ে থাকতে পারাটাই হচ্ছে এ অমরতা।
➠ ‘প্রাণ’ কবিতাটিতে কবি রবীন্দ্রনাথ নিজ সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি মানব জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের মাঝে নিজের স্থান করে নিতে চেয়েছেন। তাই কবি মানব জীবনের বিচিত্র অনুভব-অনুভূতি, ভাব-ভাবনা ও কর্মের জগতকে আপন সৃষ্টির মধ্যে প্রাণময় করে তোলার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।
➠ কবির অবর্তমানে মানুষ যেন জীবনের রূপ-রস-গন্ধ অনুভব করতে পারে সেজন্যই তিনি রচনা করেছেন তার নব নব সৃষ্টির ডালি। উদ্দীপকে সম্রাট শাহজাহানের জীবনের আকাঙ্ক্ষাও তাই। তিনি জানেন সময়ের কালপ্রবাহে তার পায়ে চলার স্মৃতিটুকুও মুছে যাবে। তাই তিনি সৃষ্টি করেছেন অমর তাজমহল। সম্রাট শাহজাহান যেদিন পৃথিবীতে থাকবেন না, সেদিন তার তাজমহল পৃথিবীর বুকে টিকে থাকবে। তিনিও পৃথিবীর মানুষের মনে জাগরূক থাকবেন, পৃথিবীর অনাগত কালের মানুষ জানবে তার অব্যক্ত হৃদয়ের গোপন কথা।
➠অতএব, দেখা যাচ্ছে ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি যেমন আপন সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন ঠিক তেমনি উদ্দীপকেও সম্রাট শাহজাহান আপন সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে নিজের মনোবেদনাকে আবহমান কালের পৃথিবীতে বর্তমান করে যেতে চেয়েছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শাহজাহান এবং ‘প্রাণ’ কবিতায় কবির অনুভূতি একইসূত্রে গাঁথা।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ :
প্রাণিমাত্রই মরণশীল। জন্ম মানেই মৃত্যুকে স্বীকার করে নেওয়া। তবু মানুষ এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে বেঁচে থাকতে চায়। সে সূর্যের আলোতে, ফুলের সমারোহে ও সৌন্দর্যে পৃথিবীতে নিজের স্থান করে নেয়। পৃথিবীর সমস্ত সুন্দরকে ছেড়ে সে অন্ধকারে হারাতে চায় না। তার প্রজ্ঞা, মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে জীবনকে সার্থক করে তুলতে চায়। অন্য কথায় বলা যায়, মানবের অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা চিরকালীন।
ক. ‘চিরতরঙ্গিত’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই।’ -কথাটির মানে কী?
গ. উদ্দীপকটি ‘প্রাণ’ কবিতার সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? -ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘প্রাণ’ কবিতার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে।’ -বিশ্লেষণ করো।

তথ্যসূত্র :
১. বাংলা সাহিত্য: নবমশ-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫।

Next Post Previous Post