‘আম আঁটির ভেঁপু’ গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
আম আঁটির ভেঁপু |
সকাল বেলা। আটটা কি নয়টা। হরিহরের পুত্র আপন মনে রোয়াককে বসিয়া খেলা করিতেছে, তাহার একটা ছোটো টিনের বাক্স আছে, সেটার ডালা ভাঙা। বাক্সের সমুদয় সম্পত্তি সে উপুড় করিয়া মেঝেতে ঢালিয়াছে। একটা রং-ওঠা কাঠের ঘোড়া, চার পয়সা দামের একটা টোল্-খাওয়া টিনের ভেঁপু-বাঁশি, গোটাকতক কড়ি। এগুলি সে মায়ের অজ্ঞাতসারে লক্ষ্মীপূজার কড়ির চুপড়ি হইতে খুলিয়া লইয়াছিল ও পাছে কেহ টের পায় এই ভয়ে সর্বদা লুকাইয়া রাখে- একটা দু'পয়সা দামের পিস্তল, কতকগুলো শুকনো নাটা ফল। দেখিতে ভালো বলিয়া তাহার দিদি কোথা হইতে অনেকগুলি কুড়াইয়া আনিয়াছিল, কিছু তাহাকে দিয়াছে, কিছু নিজের পুতুলের বাক্সে রাখিয়া দিয়াছে। খানকতক খাপরার কুচি। গঙ্গা-যমুনা খেলিতে এই খাপরাগুলির লক্ষ্য অব্যর্থ বলিয়া বিশ্বাস হওয়ায় সে এগুলি সযত্নে বাক্সে রাখিয়া দিয়াছে, এগুলি তাহার মহামূল্যবান সম্পত্তি এতগুলি জিনিসের মধ্যে সবে সে টিনের বাঁশিটা কয়েকবার বাজাইয়া সেটির সম্বন্ধে বিগত কৌতূহল হইয়া তাহাকে একপাশে রাখিয়া দিয়াছে। কাঠের ঘোড়া নাড়াচাড়া করা হইয়া গিয়াছে। সেটিও একপাশে পিঁজরাপোলের আসামির ন্যায় পড়িয়া আছে। বর্তমানে সে গঙ্গা-যমুনা খেলিবার খাপরাগুলিকে হাতে লইয়া মনে মনে দাওয়ার উপর গঙ্গা-যমুনার ঘর আঁকা কল্পনা করিয়া চোখ বুজিয়া খাপরা ছুঁইয়া দেখিতেছে তাক ঠিক হইতেছে কি না!
এমন সময়ে তাহার দিদি দুর্গা উঠানের কাঁঠালতলা হইতে ডাকিল-অপু- ও অপু। সে এতক্ষণ
বাড়ি ছিল না, কোথা হইতে এইমাত্র আসিল। তাহার স্বর একটু সতর্কতা মিশ্রিত। মানুষের
গলার আওয়াজ পাইয়া অপু কলের পুতুলের মতো লক্ষ্মীর চুপড়ির কড়িগুলি তাড়াতাড়ি লুকাইয়া
ফেলিল। পরে বলিল- কি রে দিদি?
দুর্গা হাত নাড়িয়া ডাকিল- আয় এদিকে- শোন-
দুর্গার বয়স দশ-এগারো বৎসর হইল। গড়ন পাতলা পাতলা, রং অপুর মতো অতটা ফর্সা নয়, একটু চাপা। হাতে কাচের চুড়ি, পরনে ময়লা কাপড়, মাথার চুল রুক্ষ- বাতাসে উড়িতেছে, মুখের গড়ন মন্দ নয়, অপুর মতো চোখগুলি বেশ ডাগর ডাগর। অপু রোয়াক হইতে নামিয়া কাছে গেল, বলিল,- কে রে?
দুর্গার হাতে একটা নারিকেলের মালা। সেটা সে নিচু করিয়া দেখাইল, কতকগুলি কচি আম
কাটা। সুর নিচু করিয়া বলিল- মা ঘাট থেকে আসে নি তো?
অপু ঘাড় নাড়িয়া বলিল- উঁহু-
দুর্গা চুপিচুপি বলিল একটু তেল আর একটু নুন নিয়ে আসতে পারিস?
আমের কুসি
জারাবো অপু আহ্লাদের সহিত বলিয়া উঠিল কোথায় পেলি রে দিদি?
দুর্গা বলিল-পটলিদের বাগানে সিঁদুরকৌটোর তলায় পড়ে ছিল আন্ দিকি একটু নুন আর তেল!
অপু দিদির দিকে চাহিয়া বলিল তেলের ভাঁড় ছুঁলে মা মারবে যে? আমার কাপড় যে বাসি?
- তুই যা না শিগগিরি করে, মা’র আসতে এখন ঢের দেরি-ক্ষার কাচতে গিয়েচে শিগগির
যা-
অপু বলিল- নারকোলের মালাটা আমায় দে। ওতে ঢেলে নিয়ে আসবো তুই খিড়কি দোরে গিয়ে
দ্যাখ মা আসচে কিনা।
দুর্গা নিম্নস্বরে বলিল- তেলটেল যেন মেঝেতে ঢালিসনে, সাবধানে নিবি, নইলে মা টের
পাবে-তুই তো একটা হাবা ছেলে-
অপু বাড়ি মধ্য হইতে বাহির হইয়া আসিলে দুর্গা তাহার হাত হইতে মালা লইয়া আমগুলি বেশ
করিয়া মাখিল, বলিল, নে হাত পাত। তুই অতগুলো খাবি দিদি?
অতগুলি বুঝি হলো? এই তো- ভারি বেশি- যা, আচ্ছা নে আর দু'খানা- বাঃ, দেখতে বেশ
হয়েচে রে, একটা লঙ্কা আনতে পারিস? আর একখানা দেবো তা হলে-
লঙ্কা কী করে পাড়বো দিদি? মা যে তক্তার ওপর রেখে দ্যায়, আমি যে নাগাল পাই নে?
তবে থাকগে যাক্ আবার ওবেলা আনবো এখন-পটলিদের ডোবার ধারের আমগাছটায় গুটি যা ধরেচে
দুপুরের রোদে তলায় ঝরে পড়ে-
দুর্গাদের বাড়ির চারিদিকেই জঙ্গল। হরিহর রায়ের জ্ঞাতি-ভ্রাতা নীলমণি রায় সম্প্রতি গত বৎসর মারা গিয়াছেন, তাঁহার স্ত্রী পুত্রকন্যা লইয়া নিজ পিত্রালয়ে বাস করিতেছেন। কাজেই পাশের এ ভিটাও জঙ্গলাবৃত হইয়া পড়িয়া আছে। নিকটে আর কোনো লোকের বাড়ি নাই। পাঁচ মিনিটের পথ গেলে তবে ভুবন মুখুয্যের বাড়ি।
হরিহরের বাড়িটাও অনেকদিন হইয়া গেল মেরামত হয় নাই, সামনের দিকের রোয়াক ভাঙা, ফাটলে বন-বিছুটির ও কালমেঘ গাছের বন গজাইয়াছে- ঘরের দোর-জানালার কপাট সব ভাঙা, নারিকেলের দড়ি দিয়া গরাদের সঙ্গে বাঁধা আছে।
খিড়কি
দোর ঝনাৎ
করিয়া খুলিবার শব্দ হইল এবং একটু পরেই সর্বজয়ার গলা শুনা গেল-দুগ্গা, ও
দুগ্গা-
দুর্গা বলিল-মা ডাকছে, যা দেখে আয়- ওখানা খেয়ে যা- মুখে যে নুনের গুঁড়ো লেগে আছে,
মুছে ফ্যাল্-
মায়ের ডাক আর একবার কানে গেলেও দুর্গার এখন উত্তর দিবার সুযোগ নাই, মুখ ভর্তি। সে
তাড়াতাড়ি জারানো আমের চাকলাগুলি খাইতে লাগিল। পরে এখনো অনেক অবশিষ্ট আছে দেখিয়া
কাঁঠালগাছটার কাছে সরিয়া গিয়া গুঁড়ির আড়ালে দাঁড়াইয়া সেগুলি গোগ্রাসে গিলিতে
লাগিল। অপু তাহার পাশে দাঁড়াইয়া নিজের অংশ প্রাণপণে গিলিতেছিল, কারণ চিবাইয়া
খাওয়ার আর সময় নাই। খাইতে খাইতে দিদির দিকে চাহিয়া সে দোষ সম্বন্ধে সচেতনতাসূচক
হাসি হাসিল। দুর্গা খালি মালাটা এক টান মারিয়া
ভেরেণ্ডাকচার বেড়া
পার করিয়া নীলমণি রায়ের ভিটার দিকে জঙ্গলের মধ্যে ছুঁড়িয়া দিল। ভাইয়ের দিকে
চাহিয়া বলিল- মুখটা মুছে ফ্যাল্ না বাঁদর, নুন লেগে রয়েছে যে...
পরে দুর্গা নিরীহমুখে বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়া বলিল- কী মা?
-কোথায় বেরুনো হয়েছিল শুনি? একলা নিজে কতদিকে যাবো? সকাল থেকে ক্ষার কেচে গা-গতর
ব্যথা হয়ে গেল, একটুখানি
কুটোগাছটা ভেঙে দু
খানা করা নেই, কেবল পাড়ায় পাড়ায় টোটো টোকলা সেধে বেড়াচ্ছেন- সে বাঁদর কোথায়?
অপু আসিয়া বলিল, মা, খিদে পেয়েছে!
-রোসো রোসো,
একটুখানি দাঁড়াও বাপু... একটুখানি হাঁপ জিরোতে দ্যাও! তোমাদের রাতদিন খিদে আর
রাতদিন ফাই-ফরমাজ! ও দুগ্গা, দ্যাখ তো বাছুরটা হাঁক পাড়ছে কেন?
খানিকটা পরে সর্বজয়া রান্নাঘরের দাওয়ায় বঁটি পাতিয়া শসা কাটিতে বসিল। অপু কাছে
বসিয়া পড়িয়া বলিল-আর এটু আটা বের করো না মা, মুকে বড্ড লাগে!
দুর্গা নিজের ভাগ হাত পাতিয়া লইয়া সঙ্কুচিত সুরে বলিল- চালভাজা আর নেই মা?
অপু খাইতে খাইতে বলিল- উঃ, চিবনো যায় না। আম খেয়ে দাঁত টকে-
দুর্গার ভ্রুকুটিমিশ্রিত চোখটেপায় বাধা পাইয়া তাহার কথা অর্ধপথেই বন্ধ হইয়া গেল।
তাহার মা জিজ্ঞাসা করিল, আম কোথায় পেলি? সত্য কথা প্রকাশ করিতে সাহসী না হইয়া অপু
দিদির দিকে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে চাহিল। সর্বজয়া মেয়ের দিকে চাহিয়া বলিল- তুই
ফের এখন বেরিয়েছিলি বুঝি?
দুর্গা বিপন্নমুখে বলিল- ওকে জিজ্ঞেস করো না? আমি- এই তো এখন কাঁঠালতলায়
দাঁড়িয়ে-তুমি যখন ডালে তখন তো-
স্বর্ণ গোয়ালিনী গাই দুহিতে আসায় কথাটা চাপা পড়িয়া গেল। তাহার মা বলিল- যা,
বাছুরটা ধরগে যা- ডেকে সারা হোলো কমলে বাছুর, ও সন্ন, এত বেলা করে এলে কি বাঁচে?
একটু সকাল করে না এলে এই
তেতপ্পর পজ্জন্ত
বাছুর বাঁধা-
দিদির পিছনে পিছনে অপুও দুধ দোয়া দেখিতে গেল। সে বাহির উঠানে পা দিতেই দুর্গা হাতার পিঠে দুম্ করিয়া নির্ঘাত এক কিল বসাইয়া দিয়া কহিল- লক্ষ্মীছাড়া বাঁদর! পরে মুখ ভ্যাঙাইয়া কহিল-আম খেয়ে দাঁত টকে গিয়েছে- আবার কোনোদিন আম দেবো খেও-ছাই দেবো-এই ওবেলাই পটলিদের কাঁকুড়তলির আম কুড়িয়ে এনে জারাবো, এত বড় বড় গুটি হয়েচে, মিষ্টি যেন গুড়- দেবো তোমায়? খেও এখন? হাবা একটা কোথাকার- যদি এতটুকু বুদ্ধি থাকে!
দুপুরের কিছু পরে হরিহর কাজ সারিয়া বাড়ি ফিরিল। সে আজকাল গ্রামের অন্নদা রায়ের
বাটীতে গোমস্তার কাজ করে। জিজ্ঞাসা করিল অপুকে দেখচি নে?
সর্বজয়া বলিল- অপু তো ঘরে ঘুমুচ্ছে।
-দুগ্গা বুঝি-
-সে সেই খেয়ে বেরিয়েছে- সে বাড়ি থাকে কখন? দুটো খাওয়ার সঙ্গে যা সম্পর্ক! আবার সেই খিদে পেলে তবে আসবে- কোথায় কার বাগানে কার আমতলায় জামতলায় ঘুরছে- এই চত্তির মাসের রোদ্দুরে, ফের দ্যাখো না এই জ্বরে পড়লো বলে- অত বড় মেয়ে, বলে বোঝাবো কত? কথা শোনে, না কানে নেয়?
একটু পরে হরিহর খাইতে বসিয়া বলিল- আজ দশঘরায় তাগাদার জন্যে গেছলাম, বুঝলে? একজন লোক, খুব মাতবর, পাঁচটা-ছয়টা গোলা বাড়িতে, বেশ পয়সাওয়ালা লোক- আমায় দেখে দণ্ডবৎ করে বল্লে-
দাদাঠাকুর, আমায় চিনতে পাচ্ছেন? আমি বল্লাম না বাপু, আমি তো কৈ?- বল্লে- আপনার কর্তা থাকতে তখন তখন পূজা-আচ্চায় সবসময়ই তিনি আসতেন, পায়ের ধুলো দিতেন। আপনারা আমাদের গুরুতুল্য লোক, এবার আমরা বাড়িসুদ্ধ মন্তর নেবো ভাবচি- তা আপনি যদি আজ্ঞে করেন, তবে ভরসা করে বলি- আপনিই কেন মন্তরটা দেন না? তা আমি তাদের বলেচি আজ আর কোনো কথা বলবো না, ঘুরে এসে দু- এক-দিনে- বুঝলে?
সর্বজয়া ডালের বাটি হাতে দাঁড়াইয়া ছিল, বাটি মেজেতে নামাইয়া সামনে বসিয়া পড়িল। বলিল-হ্যাঁগো, তা মন্দ কী? দাও না ওদের মন্তর? কী জাত? হরিহর সুর নামাইয়া বলিল- বলো না কাউকে! সঙ্গোপ। তোমার তো আবার গল্প করে বেড়ানো স্বভাব-
-আমি আবার কাকে বলতে যাবো, তা হোক গে সঙ্গোপ, দাও গিয়ে দিয়ে, এই কষ্ট যাচ্ছে- ঐ রায়বাড়ির আটটা টাকা ভরসা, তাও দু'তিন মাস অন্তর তবে দ্যায়- আর এদিকে রাজ্যের দেনা। কাল ঘাটের পথে সেজ ঠাক্রন বল্লে- বৌমা, আমি বন্দক ছাড়া টাকা ধার দিই নে- তবে তুমি অনেক করে বল্লে বলে দিলাম- আজ পাঁচ পাঁচ মাস হয়ে গেল, টাকা আর রাখতে পারবো না। এদিকে রাধা বোষ্টমের বৌ তো ছিঁড়ে খাচ্ছে, দু'বেলা তাগাদা আরম্ভ করেচে। ছেলেটার কাপড় নেই-দু'তিন জায়গায় সেলাই, বাছা আমার তাই পরে হাসিমুখে নেচে নেচে বেড়ায়- আমার এমন হয়েচে যে ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে যাই-
-আর একটা কথা ওরা বলছিল, বুঝলে? বলছিল গাঁয়ে তো বামুন নেই, আপনি যদি এই গাঁয়ে উঠে আসেন, তবে জায়গা জমি দিয়ে বাস করাই গাঁয়ে একঘর বামুন বাস করানো আমাদের বড্ড ইচ্ছে। তা কিছু ধানের জমিটমি দিতেও রাজি- পয়সার তো অভাব নেই! আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা- ভদ্দর লোকেরই হয়ে পড়েচে হা ভাত যো ভাত-
আগ্রহে সর্বজয়ার কথা বন্ধ হইবার উপক্রম হইল- এখুনি। তা তুমি রাজি হলে না কেন? বল্লেই হতো যে আচ্ছা আমরা আসবো! ও রকম একটা বড় মানুষের আশ্রয়- এ গাঁয়ে তোমার আছে কী? শুধু ভিটে কামড়ে পড়ে থাকা-
হরিহর হাসিয়া বলিল- পাগল! তখুনি কি রাজি হতে আছে? ছোটলোক, ভাববে ঠাকুরের হাঁড়ি দেখচি শিকেয় উঠেচে- উঁহু, ওতে খেলো হয়ে যেতে হয় তা নয়, দেখি একবার চুপি চুপি মজুমদার মহাশয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে আর এখন ওঠ বল্লেই কী ওঠা চলে? সব ব্যাটা এসে বলবে টাকা দাও, নৈলে যেতে দেবো না- দেখি পরামর্শ করে কি রকম দাঁড়ায়-
এই সময়ে মেয়ে দুর্গা কোথা হইতে পা টিপিয়া টিপিয়া আসিয়া বাহিরের দুয়ারের আড়াল হইতে সতর্কতার সহিত একবার উঁকি মারিল এবং অপর পক্ষ সম্পূর্ণ সজাগ দেখিয়া ওধারে পাঁচিলের পাশ বাহিয়া বাহির বাটীর রোয়াকে উঠিল। দালানের দুয়ার আস্তে আস্তে ঠেলিয়া দেখিল উহা বন্ধ আছে। এদিকে রোয়াকে দাঁড়ানো অসম্ভব, রৌদ্রের তাপে পা পুড়িয়া যায়, কাজেই সে স্থান হইতে নামিয়া গিয়া উঠানের কাঁঠালতলায় দাঁড়াইল। রৌদ্রে বেড়াইয়া তাহার মুখ রাঙা হইয়া উঠিয়াছে, আঁচলের খুঁটে কী কতকগুলো যত্ন করিয়া বাঁধা। সে আসিয়াছিল এইজন্য যে, যদি বাহিরের দুয়ার খোলা পায় এবং মা ঘুমাইয়া থাকে, তবে ঘরের মধ্যে চুপি চুপি ঢুকিয়া একটু শুইয়া লইবে। কিন্তু বাবার, বিশেষত মার সামনে সম্মুখ দুয়ার দিয়া বাড়ি ঢুকিতে তাহার সাহস হইল না।
উঠানে নামিয়া সে কাঁঠালতলায় দাঁড়াইয়া কী করিবে ঠিক করিতে না পারিয়া নিরুৎসাহভাবে এদিক ওদিক চাহিতে লাগিল। পরে সেখানেই বসিয়া পড়িয়া আঁচলের খুঁট খুলিয়া কতকগুলি শুকনো রড়া ফলের বিচি বাহির করিল। খানিকক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া সে আপন মনে সেগুলি গুনিতে আরম্ভ করিল, এক-দুই-তিন-চার... ছাব্বিশটা হইল। পরে সে দুই তিনটা করিয়া বিচি হাতের উল্টা পিঠে বসাইয়া উঁচু করিয়া ছুঁড়িয়া দিয়া পরে হাতের সোজা পিঠ পাতিয়া ধরিতে লাগিল। মনে মনে বলিতে লাগিল-অপুকে এইগুলো দেবো আর এইগুলো পুতুলের বাক্সে রেখে দেবো-
কেমন বিচিগুলি তেল চুকচুক কচ্ছে- আজই গাছ থেকে পড়েচে, ভাগ্যিস আগে গেলাম, নৈলে সব গোরুতে খেয়ে ফেলে দিতো, ওদের রাঙি গাইটা একেবারে রাক্কস, সব জায়গায় যাবে, সেবার কতকগুলো এনেছিলাম আর এইগুলো নিয়ে অনেকগুলো হলো।
সে খেলা বন্ধ করিয়া সমস্ত বিচি আবার সযত্নে আঁচলের খুঁটে বাঁধিল। পরে হঠাৎ কী ভাবিয়া রুক্ষ চুলগুলি বাতাসে উড়াইতে উড়াইতে মহা খুশির সহিত পুনরায় সোজা বাটীর বাহির হইয়া গেল।
উৎস নির্দেশ : |
---|
‘আম আঁটির ভেঁপু’ শীর্ষক রচনাটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের
পাঁচালী’ উপন্যাস অষ্টম পরিচ্ছেদ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটি তিনটি খণ্ডে ও ৩৫টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। তিনটি খণ্ড হলো: বল্লালী বালাই (১ থেকে ৬ পরিচ্ছেদ); আম আঁটির ভেঁপু (৭ থেকে ২৯ পরিচ্ছেদ); অক্রূর সংবাদ (৩০ থেকে ৩৫ পরিচ্ছেদ)। |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ রোয়াক- ঘরের সামনের খোলা জায়গা বা বারান্দা। ➠ ডালা- বাক্সের ডাকনি। ➠ সমুদয়- সমস্ত, সকল। ➠ উপুড়- উল্টোমুখী, ভূমির দিকে মুখ করা এমন। ➠ টোল্ খাওয়া- তুবড়ে যাওয়া; গালে খাঁজ পড়া। ➠ ভেঁপু-বাঁশি- একধরনের বাঁশিবিশেষ। ➠ গোটাকতক- সামান্য কয়েকটি, অল্প কয়েকটি। ➠ অজ্ঞাতসারে- গোপনে, কাউকে না জানিয়ে। ➠ চুপড়ি- ছোটো ঝুড়ি, ক্ষুদ্র ধামা। ➠ পাছে- পেছনে ➠ নাটাফল- করঞ্জা ফল। ➠ খানকতক- কয়েকখানা, কয়েকটি। ➠ খাপরার কুচি- কলসি-হাঁড়ি প্রভৃতির ভাঙা অংশ বা টুকরা। ➠ লক্ষ্য- উদ্দেশ্য, নিশানা। ➠ অব্যর্থ- কখনো বিফল হয় না এমন। ➠ বিশ্বাস- সত্য বলে বিবেচনা, আস্থা, ভরসা। ➠ সযত্ন- যত্নযুক্ত, আদরযুক্ত, সাদর। ➠ মহামূল্যবান- খুব দামি, দুর্মূল্য, অতি উচ্চ শ্রেণির। ➠ কৌতূহল- নতুন বা অজ্ঞাত বিষয় জানার আগ্রহ, ঔৎসুক্য। ➠ পিঁজরাপোলের আসামি- খাঁচায় পড়ে থাকা অবহেলিত আসামির মতো অর্থে। ➠ কল্পনা- জাগ্রত স্বপ্ন, আন্দাজ, অনুমান। ➠ দাওয়া- বারান্দা। ➠ সতর্কতা- সাবধানতা, হুঁশিয়ার। ➠ মিশ্রিত- মিশানো হয়েছে এমন। ➠ আওয়াজ- কণ্ঠস্বর। ➠ ডাগর ডাগর- বড়ো বড়ো। ➠ আমের কুসি- কচি আম। ➠ জারা- কুচি কুচি করা অর্থে। ➠ আহ্লাদ- আনন্দ, হর্ষ। ➠ খিড়কি- জানালা, বাতায়ন। ➠ দোর- দুয়ার, দরজা। ➠ হাবা- গোবেচারা, অতিশয় নির্বোধ। ➠ নাগাল- সংস্পর্শ, কাছে পাওয়া। ➠ গুটি- কুশি আম। আম প্রভৃতির খুব কচিফল। ➠ জ্ঞাতি- একই বংশে জাত ব্যক্তি, সগোত্র। ➠ পিত্রালয়- বাবার বাড়ি, পিতৃগৃহ। ➠ ভিটা- পৈতৃক বাস্তুভূমি, জমিন থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু করে প্রস্তুত যে ভূমিতে বাসগৃহ নির্মিত হয়। ➠ জঙ্গলাবৃত- আগাছায় ঢাকা। ➠ মেরামত- জীর্ণ বস্তুর সংস্কার সাধন। ➠ বন-বিছুটি- এক প্রকার বুনোগাছ। ➠ কালমেঘ- যকৃতের রোগে উপকারী একপ্রকার তিক্ত স্বাদের গাছ। ➠ কপাট- দরজার পাল্লা, দরজার দুই পাট। ➠ নারিকেলের দড়ি- নারিকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি রশি বা দড়ি। ➠ গরাদ- জানালার শিক। ➠ ঝনাৎ- দরজা/ জানালা খোলার সময় ঝনঝন অপেক্ষা তীক্ষ্ণ ও ক্ষণস্থায়ী শব্দ। ➠ আমের চাকলাগুলি- আমের টুকরোগুলি। ➠ অবশিষ্ট- বাকি, অতিরিক্ত। ➠ গোগ্রাসে- গরুর মতো বড় গ্রাসে দ্রুত গলাধঃকরণ। ➠ ভেরেণ্ডাকচার বেড়া- এরন্ড বা রেড়ি গাছের বেড়া। ➠ নিরীহমুখে- শান্তমুখে। ➠ কুটোগাছ- তৃণ। ➠ টো টো- ক্রমাগত ঘোরাঘুরি করা; লক্ষ্যহীনভাবে টহল দিয়ে ফেরা। ➠ রোসো রোসো- থাম থাম। ➠ ফাই-ফরমাজ- ছোটখাটো হুকুম তামিল ➠ বঁটি- মাছ তরকারি প্রভৃতি কোটার অস্ত্রবিশেষ। ➠ মুকে- মুখে। ➠ সঙ্কুচিত- জড়সড়, অপ্রসারিত। ➠ ভ্রুকুটিমিশ্রিত- ক্রোধ বিরক্তি ইত্যাদি প্রকাশের জন্য ভুকুঞ্চন মেশানো ভাব। ➠ বিপন্নমুখে- সংকটাপন্নমুখে, বিপদগ্রস্ত মুখ করে। ➠ গাই- গাভি। ➠ তেতপ্পর পজ্জন্ত- দুপুর পর্যন্ত। ➠ লক্ষ্মীছাড়া- দুর্ভাগ্যযুক্ত, হতভাগ্য, দুষ্ট। ➠ গোমস্তা- যে কর্মচারী খাজনা আদায় করে, খাজনা আদায়কারী। ➠ তাগাদা- প্রাপ্য বস্তু দেওয়ার বারবার দাবি বা অনুরোধ। ➠ মাতবর- গ্রামের মোড়ল বা প্রধান। ➠ দণ্ডবৎ- দণ্ডের মতো ভূমিতে লুটিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম। ➠ মন্তর- মন্ত্র। ➠ সদগোপ-হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ। ➠ স্বভাব- স্বপ্রকৃতি, চরিত্র। ➠ দেনা- ধার, কর্জ, ঋণ। ➠ বন্দক- বন্ধক, ঋণের জামিনস্বরূপ কোনো জিনিস জমা রাখা। ➠ বামুন- ব্রাহ্মণ; পুরোহিত। ➠ আশ্রয়- সহায়, অবলম্বন, আধার। ➠ রাজি- সম্মত, মেনে নেওয়া হয়েছে এমন। ➠ পরামর্শ- যুক্তি, উপদেশ। ➠ আড়াল- অন্তরাল, পর্দা, আবরণ। ➠ সতর্কতা- সাবধানতা, হুঁশিয়ার। ➠ নিরুৎসাহ- উৎসাহহীন, হতাশ। ➠ রাক্কস- রাক্ষস, পেটুক। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
গ্রামীণ জীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাই-বোনের আনন্দিত জীবনের আখ্যান নিয়ে কাহিনিটি রচিত হয়েছে। অপু ও দুর্গা হতদরিদ্র পরিবারের শিশু। কিন্তু তাদের শৈশবে দারিদ্র্যের সেই কষ্ট প্রধান হয়ে ওঠেনি। গ্রামীণ ফলফলাদি খাওয়ার আনন্দ এবং বিচিত্র বিষয় নিয়ে তাদের বিস্ময় ও কৌতূহল মানুষের চিরায়ত শৈশবকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়। সর্বজয়া পল্লি-মায়ের শাশ্বত চরিত্র হয়ে উঠেছে। এখানে শিশুর আনন্দপূর্ণ শৈশব এবং প্রকৃতির সম্পর্ক দেখিয়েছেন বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। রচনাটি শিশু-কিশোরকে প্রকৃতিমুখী হওয়ার প্রেরণা জোগায়। |
লেখক পরিচিতি: |
---|
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালে ২৪ পরগনার মুরারিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় বনগ্রাম স্কুল থেকে ১৯১৪ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আই.এ. এবং বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি হুগলী, কলকাতা ও ব্যারাকপুরের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সহজ-সরল জীবন-যাপনের অসাধারণ এক আলেখ্য নির্মাণ করে তিনি বাংলা কথাসাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনের অভিন্ন সম্পর্কের চিরায়ত তাৎপর্যে তাঁর কথাসাহিত্য মহিমামণ্ডিত। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, ইছামতি, দৃষ্টিপ্রদীপ। গল্পগ্রন্থ: মেঘমল্লার, মৌরীফুল, যাত্রাবদল। ১৯৫০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।। |
কর্ম-অনুশীলন: |
---|
১. ‘আমআঁটির ভেঁপু’ রচনায় যে সকল গ্রামীণ উপাদান ও শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তার
একটি তালিকা তৈরি করো। ২. তোমার পঠিত ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ অনুরূপ গ্রামীণ জীবনের বর্ণনা সংবলিত অন্য একটি গল্পের আলোচনা লিখে শ্রেণিশিক্ষকের নিকট জমা দাও। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: |
---|
১। উঠানের কোন জায়গা থেকে দুর্গা অপুকে ডাকছিল? ক. আমতলা খ. বটতলা গ. কাঁঠালতলা ঘ. জামতলা ২। তেলের ভাঁড় ছুঁলে দুর্গাকে মারার কারণ হচ্ছে- i. কুসংস্কার ii. অপচয় iii. না জানানো নিচের কোনটি সঠিক? ক. i খ. ii গ. iii ঘ. ii ও iii উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪-সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও: রিপন ও রুমা দুই ভাই-বোন। তাদের বয়সের পার্থক্য চার বছর। একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হলেও বিভিন্ন জিনিস একে অন্যকে তারা দেখাতে চায় না। রুমার খেলার সামগ্রী রিপন লুকিয়ে রাখে। রুমার বিভিন্ন আদেশ, আবদার রিপন মানতে চায় না। এই নিয়ে ওদের মাকে নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। ৩। উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের কোন দিককে প্রতিফলিত করেছে? ক. ভাই-বোনের সম্পর্ক খ. ভাই-বোনের বিরোধ গ. ভাই-বোনের আবদার ঘ. মায়ের চিন্তা ৪। উদ্দীপকের ভাবনা ‘আম-আঁটির ভেঁপু’র কোন উদ্ধৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ক. নারকেলের মালাটা আমায় দে। খ. তাহার স্বর একটু সতর্কতা মিশ্রিত। গ. দুর্গার হাতে একটি নারিকেলের মালা। ঘ. একটু তেল আর একটু নুন নিয়ে আসতে পারিস? আমের কুশি জারাবো। |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় চব্বিশ পরগণার মুরারিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২. শরৎচন্দ্রের পরে কে বেশি জনপ্রিয় কথাশিল্পী? উত্তর : শরৎচন্দ্রের পরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশি জনপ্রিয় কথাশিল্পী। ৩. ‘পথের পাঁচালী’ কার লেখা উপন্যাস? উত্তর : ‘পথের পাঁচালী’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস। ৪. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কত সালে মৃত্যুবরণ করেন? উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ৫. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের দুর্গার বয়স কত? উত্তর : ‘আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের দুর্গার বয়স দশ-এগারো বছর। ৬. তেল আর নুন দিয়ে দুর্গা কী করবে? উত্তর : তেল আর নুন দিয়ে দুর্গা আমের কুসি জারাবে। ৭. দুর্গাদের বাড়ির চারপাশেই কী? উত্তর : দুর্গাদের বাড়ির চারপাশেই জঙ্গল। ৮. হরিহর রায়ের জ্ঞাতি- ভ্রাতা কে? উত্তর : হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতা নীলমণি রায়। ৯. দুর্গার মায়ের নাম কী? উত্তর : দুর্গার মায়ের নাম সর্বজয়া। ১০. দুর্গা অপুকে মুখ মুছে ফেলতে বলল কেন? উত্তর : দুর্গা অপুকে মুখ মুছে ফেলতে বলল কারণ তার মুখে নুন লেগে ছিল। ১১. সকাল থেকে ক্ষার কেচে গা-গতর ব্যথা হয়েছিল কার? উত্তর : সকাল থেকে ক্ষার কেচে গা-গতর ব্যথা হয়েছিল সর্বজয়ার। ১২. হরিহর কখন বাড়ি ফিরল? উত্তর : হরিহর দুপুরের কিছু পরে বাড়ি ফিরল। ১৩. হরিহরের মতে আজকাল চাষাদের ঘরে কী বাঁধা? উত্তর : হরিহরের মতে আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা। ১৪. দুর্গা পা টিপে টিপে এসে কোথায় দাঁড়াল? উত্তর : দুর্গা পা টিপে টিপে এসে কাঁঠালতলায় দাঁড়াল। ১৫. কালমেঘ কী? উত্তর : কালমেঘ যকৃতের রোগে উপকারী এক প্রকার তিক্ত স্বাদের গাছ। ১৬. কে দু’বেলা সর্বজয়াকে পাওনার জন্য তাগাদা দেয়? উত্তর : রাধা বোষ্টমের বৌ দু’বেলা সর্বজয়াকে পাওনার জন্য তাগাদা দেয়। ১৭. ‘আম-আঁটির ভেঁপু গল্পে কে নিরীহ মুখে বাড়িতে ঢুকল? উত্তর : ‘আম-আঁটির ভেঁপু গল্পে দুর্গা নিরীহ মুখে বাড়িতে ঢুকল। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. সব ব্যাটা এসে বলবে টাকা দাও, নৈলে যেতে দেবো না- হরিহর কেন বলেছিল? উত্তর : ঋণের দায়ে জর্জরিত হরিহর পাওনাদারদের বিষয়ে এ কথা বলেছিল। ➠ হরিহরের কাছে বামুন হিসেবে মন্তর নেওয়ার প্রস্তাব দেয় ভিন গাঁয়ের এক লোক। গাঁয়ে একঘর বামুন বসবাস করানোর জন্য তারা জায়গা জমি দিতেও প্রস্তুত। এই প্রস্তাব নিয়ে হরিহর ও সর্বজয়ার মধ্যে কথা হচ্ছিল। সর্বজয়া এই সুযোগ হাতছাড়া না করার জন্য হরিহরকে তাগাদা দিচ্ছিল। কিন্তু ঋণগ্রস্ত হরিহরের দায় শোধ না করে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জো ছিল না। তখন সর্বজয়াকে হরিহর প্রশ্নোক্ত কথাটি বলছিল। ২. “আগ্রহে সর্বজয়ার কথা বন্ধ হইবার উপক্রম হইল-” কেন? উত্তর : অভাব-অনটনহীন জীবনের সম্ভাবনার কথা শুনে আগ্রহে সর্বজয়ার কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। ➠ সর্বজয়ার পরিবার হতদরিদ্র। দু-বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতেই তাদের প্রাণপণ কষ্ট করতে হয়। এর ওপর রয়েছে পাওনাদারদের তাগাদা। এমন সঙ্গীন অবস্থায় ভিন গাঁয়ে জায়গা-জমি পাওয়ার সম্ভাবনার কথা সর্বজয়াকে শোনায় তার স্বামী। সর্বজয়া স্বপ্ন দেখে তার দুঃখের দিন এর মাধ্যমে শেষ হবে। তাই আনন্দে, উত্তেজনায় ভাষা হারিয়ে ফেলে সে। ৩. দুর্গা অপুর পিঠে এক কিল বসিয়ে দিল কেন? উত্তর : আম খাওয়ার কথা ভুলক্রমে মাকে বলে দেওয়ায় দুর্গা অপুর পিঠে এক কিল বসিয়ে দিল। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের বর্ণিত দুর্গা কুড়িয়ে পাওয়া কাঁচা আম তার ভাই অপুকে সাথে নিয়ে খেয়েছে। কিন্তু এই আম খাওয়ার ঘটনা সে মাকে জানতে দিতে চায়নি। কেননা মা যদি জানতে পারে যে দুর্গা জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে আম কুড়িয়ে এনেছে তাহলে বকাবকি করবে। কিন্তু অপু অসাবধানতাবশত আম খাওয়ার কথা মাকে বলে ফেলে। তাই পরবর্তীতে দুর্গা মৃদু শাসনের ছলে ভাইয়ের পিঠে একটা কিল বসিয়ে দেয়। ৪. দশঘরার লোকটি হরিহরকে জায়গা-জমি দেওয়ার প্রস্তাব করে কেন? উত্তর : গ্রামে একঘর বামুন বাস করানোর আকাঙ্ক্ষায় দশঘরার লোকটি হরিহরকে জায়গা-জামি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ➠ দশঘরার লোকটি জাতে সদগোপ, তাদের গাঁয়ে কোনো ব্রাহ্মণের বাস নেই। তার ইচ্ছা জায়গা-জমি দিয়ে গাঁয়ে অন্তত একঘর ব্রাহ্মণকে স্থান দেবে। এতে গাঁয়ের মান মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া হরিহর ব্রাহ্মণ পুরোহিত হওয়ায় তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে নিজেরাও জাতে উঠতে পারবে। এ সকল কারণেই লোকটি হরিহরকে এমন লোভনীয় প্রস্তাব দেয়। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : একই পরিবারের মকবুল, আবুল, সুরত সবাই বেশ পরিশ্রমী। নিজেদের জমি না থাকায় অন্যের জমি বর্গাচাষ করে, লাকড়ি কাটে, মাঝিগিরি করে, কখনো কখনো অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের স্ত্রীরাও বসে নেই। ভাগ্যের উন্নতির জন্য পাতা দিয়ে পাটি বোনে, বাড়ির আঙিনায় মরিচ, লাউ, কুমড়া ফলায়, বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে। কোনো রকমে জীবন চলে যাচ্ছে তাদের। ক. দুর্গার বয়স কত? খ. বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর রাজি হলো না কেন? গ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপুর’ কোন দিক ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের মূলভাবকে কতটুকু ধারণ করে?”- যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখো। |
ক. দুর্গার বয়স দশ-এগারো বছর। খ. বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর রাজি হতে পারল না আত্মসম্মানবোধ ও পাওনাদারদের ভয়ে এসে বলত টাকা দাও, নৈলে যেতে দেব না। ➠ মাসিক ৮ টাকা মাইনের গোমস্তার কাজ করে হরিহর। সামান্য ভিটে বাড়িটি ছাড়া আর কিছুই নেই হরিহরের। দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়েছে সে। ধার শোধ দিতে পারছে না। তাই বামুন হয়ে বসবাসের প্রস্তাবটি তার জন্য সোনায় সোহাগা হলেও সে তা তখনই গ্রহণ করতে পারেনি পাওনাদারদের ভয়ে। তার ভয় পাওনাদাররা খবর পেলে হট্টগোল বাধিয়ে দেবে। তাছাড়া সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলে তার মর্যাদারও হানি ঘটত বলে সে মনে করেছে। গ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার চিত্রটি ফুটে উঠেছে। ➠ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে মূলত গ্রামীণজীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাই-বোনের আনন্দিত জীবনের ঘটনাবলি বর্ণিত হয়েছে। অপু ও দুর্গা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও গল্পে দারিদ্র্যের সেই কষ্ট প্রধান হয়ে ওঠেনি। গ্রামের ফলমূল আহারের আনন্দ, শিশুর দুরন্তপনা, বিস্ময় ও কৌতূহল আমাদের চিরায়ত গ্রামীণ শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। দরিদ্র গৃহিণী সর্বজয়ার সংসার নিয়ে ব্যতিব্যস্ততা, হাড়ভাঙা খাটুনি, দুগ্ধ দোহন, সন্তানদের সাথে চেঁচামেচি ইত্যাদি একেবারেই গ্রামীণজীবনের প্রতিচ্ছবি। ➠ উদ্দীপকেও বর্ণিত হয়েছে গ্রামের নিম্নবিত্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি। মকবুল, আবুল, সুরত আলী পরিশ্রমী মানুষ। সবাই জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত। তাদের নিজের জমি নেই, অন্যের জমি বর্গা চাষ করে। লাকড়ি কেটে, মাঝিগিরি করে, কখনো কামলা খেটে তারা অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে। বসে নেই তাদের স্ত্রীরাও। পাটি বোনে, বাড়ির আঙিনায় মরিচ, লাউ, কুমড়া ফলায়, বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে কোনোমতে দিন পার করে। উদ্দীপকে তাই ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে উল্লিখিত হরিহর ও সর্বজয়ার জীবনযাপনের চিত্রই যেন ফুটে উঠেছে। উভয় স্থানেই নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনসংগ্রাম আমরা লক্ষ করি। ঘ. উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের মূলভাবকে আংশিকভাবে ধারণ করে। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর অপরাপর সাহিত্যকর্মের মতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সহজ-সরল জীবন-যাপনের অসাধারণ আলেখ্য নির্মাণ করেছেন। গল্পের অধিকাংশ জুড়ে আছে ছোট দুটি ভাই-বোনের দুরন্তপনা আর তাদের মধ্যকার খুনসুঁটি। আমের কুসি খাওয়াসহ নানা প্রকার দুষ্টুমি করে মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়েই। অন্যদিকে গৃহিণী সর্বজয়া সংসারের নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করে। সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টায় থাকে হরিহর। ➠ উদ্দীপকে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে কর্মব্যস্ত নর-নারীর জীবনচিত্র বর্ণনা করা হয়েছে। মকবুল, আবুল, সুরত সকলেই পরিশ্রমী। নানা কাজ করে জীবন ধারণ করে। তাদের স্ত্রীরাও একটু উন্নতির আশায় পাটি বোনে, বাড়ির আঙিনায় সবজি ফলায়, শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে। উদ্দীপকে তাই বর্ণিত হয়েছে এদের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম, যা ‘আমা-আঁটির ভেঁপু’ গল্পেও লক্ষণীয়। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের মূল বিষয়ই হলো প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাইবোনের কাহিনি। তাদের দুরন্তপনার বর্ণনা তুলে ধরতে গিয়ে গ্রামীনজীবনের চিত্রও উঠে এসেছে। কিন্তু উদ্দীপকে মূলত গ্রামীণ সমাজের জীবনচিত্রটিই তুলে ধরা হয়েছে, যা কেবল ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের একটি দিককে ধারণ করে। শৈশবের উদ্দামতার বিষয়টি উদ্দীপকে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। তাই উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সম্পূর্ণ মূলভাবকে ধারণ করতে পারে নি। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : প্রকাণ্ড একটা ঢাউস ঘুড়ি লইয়া বোঁ বোঁ শব্দে উড়াইয়া বেড়াইবার সেই মাঠ, ‘তাইরে নাইরে নাইরে না’ করিয়া উচ্চঃস্বরে স্বরচিত রাগিনী আলাপ করিয়া অকর্মণ্যভাবে ঘুরিয়া বেড়াইবার সেই নদী তীর, দিনের মধ্যে যখন-তখন ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া সাঁতার কাটিবার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বীনী চিত্তকে চঞ্চল করিত। ক. হরিহর কাজ সেরে কখন বাড়ি ফিরল? খ. দিদির কথায় নুন ও তেল আনতে অপু দ্বিধা করছিল কেন? গ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের কোন দিকের ইঙ্গিত লক্ষণীয়? ঘ. উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সমগ্রতা স্পর্শ করেছে কি? তোমার মতামত যাচাই করো। |
ক. হরিহর কাজ সেরে দুপুরের কিছু পরে বাড়ি ফিরল। খ. মায়ের ভয়ে অপু দিদির কথায় নুন ও তেল আনতে দ্বিধা করছিল। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে অপু ও দুর্গা পল্লির প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাই-বোনের এক অপরূপ দৃষ্টান্ত। তারা মাকে ভয় করে। কোনো দোষ-ত্রুটি করলে মা শাসন করবে- এই ভয় দুর্গার পাশাপাশি অপুর মনেও ছিল। তাছাড়া গোসল না করে নুন, তেলের ভাঁড় ছুলে অমঙ্গল হবে বলে বাসি কাপড়ে তা ছোঁয়া নিষেধ ছিল। অপু বাসি কাপড় পরে থাকায় মায়ের ভয়ে নুন তেল আনতে দ্বিধা করছিল। গ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে বর্ণিত দুর্গা ও অপুর শৈশবের চঞ্চলতার ইঙ্গিত লক্ষণীয়। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাইবোনের আখ্যান রচিত হয়েছে। গল্পে দুর্গা ও অপু মানুষের শাশ্বত শৈশবের প্রতিনিধি। তাদের শিশুসুলভ কৌতূহল ও বিস্ময়, গ্রামীণজীবনের প্রকৃতি সান্নিধ্যতা পাঠকের মনে শৈশব স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়। ➠ উদ্দীপকে মানুষের শৈশব চঞ্চলতার দিকটি লক্ষণীয়। শৈশবকালে গ্রামীণজীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠতা মানুষকে চঞ্চল করে তোলে। মাঠে ঘুড়ি ওড়ানো, নদীর তীরে ছুটে বেড়ানো, নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোসল করা এসব চঞ্চলতার প্রকাশ ঘটে মানুষের শৈশবেই। উদ্দীপকে এমনই এক চমৎকার সময়ের উল্লেখ রয়েছে, যা ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের অপু ও দুর্গার শৈশবের আনন্দমুখরতাকেই ইঙ্গিত করে। ঘ. উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের খণ্ডিত ভাবের ধারক। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে গ্রামীণজীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাইবোনের আনন্দঘন জীবনের আখ্যান রচিত হয়েছে। তাদের আনন্দের মাঝে পরিবারের দারিদ্র্য কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই দিকটির পাশাপাশি গল্পে সর্বজয়ার মাঝে শাশ্বত পল্লিমায়ের চরিত্র এবং গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের অভাবের দিকটি চিত্রিত হয়েছে। ➠ উদ্দীপকে গ্রামীণ প্রকৃতিঘনিষ্ঠ আনন্দঘন দিনগুলোর স্মৃতি স্মরণ করা হয়েছে। গ্রামের প্রকৃতি যেমন মানুষকে আকর্ষণ করে তেমনি তা মানুষের মনকে চঞ্চলতায় ভরিয়ে দেয়। তাই গ্রামীণজীবনের মাঠ-ঘাট, নদী-নালার সান্নিধ্যে থাকলে মানুষ বিমোহিত হয়। উদ্দীপকে গ্রামীণজীবনের এই প্রকৃতিঘনিষ্ঠতার দিকটি বোঝানো হয়েছে। গ্রামের মাঠে ঘুড়ি ওড়ানো, নদীতে সাঁতার কাটা, বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো সবই গ্রামীণজীবনের প্রতিচ্ছবি। ➠ উদ্দীপকে শুধু ‘আম-আঁটির ভেপু’ গল্পে বর্ণিত প্রকৃতিঘনিষ্ঠ জীবনের দিকটির ইঙ্গিত রয়েছে। গ্রামীণজীবনের মাঠ-ঘাট, বনবাদাড় সবকিছুই মানুষের মনে চঞ্চলতার সৃষ্টি করে। তাই প্রতিটি মানুষ এই প্রকৃতি থেকে পেতে চায় আনন্দ। যা গল্পে ও উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু গল্পে উল্লিখিত এই প্রকৃতিঘনিষ্ঠতা ছাড়া অন্য দিকগুলোর কোনো ইঙ্গিত উদ্দীপকে নেই। গল্পের চরিত্রগুলো দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে। সন্তানের জন্য মমতাময়ী মায়ের ভালোবাসার চিত্রও পাওয়া যায় এখানে। কিন্তু উদ্দীপকে এ ধরনের কোনো দিক উপস্থাপিত হয়নি। তাই উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সমগ্রতাকেও স্পর্শ করতে পারেনি। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : মমতার অভাবের সংসার। সে চৌধুরীবাড়িতে রান্নার কাজ করে। মমতার সংসারের অভাবের কথা জেনে গৃহকর্ত্রী মমতাকে সপরিবারে তাদের বাড়িতে থাকার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এতে ঐ বাড়িতে মর্যাদা কমে যাবে ভেবে মমতা এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। ক. গরুর দুধ দোহন করতে এসেছিল কে? খ. অপু দাঁত টকে যাওয়ার কথা বললে দুর্গা ইশারায় তাকে থামিয়ে দেয় কেন? গ. উদ্দীপকের মমতার সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহরের সাদৃশ্য রয়েছে কীভাবে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের মূলভাবকে ধারণ করে না।”- উক্তিটি যাচাই করো। |
ক. গরুর দুধ দোহন করতে এসেছিল স্বর্ণ গোয়ালিনী। খ. মায়ের বকুনি খাওয়ার ভয়ে দাঁত টকে যাওয়ার কথা বলার সময় দুর্গা ইশারায় অপুকে থামিয়ে দেয়। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে সর্বজয়া একটি শাশ্বত পল্লিমায়ের চরিত্র। তাকে অপু ও দুর্গা ভয় করে। কেননা তিনি ছেলেমেয়েকে শাসন করেন। দুর্গা ও অপু আম কুড়িয়ে এনে খেয়েছে এ কথা জানলে সর্বজয়া তাদের বকবেন। এই ভয়ে আম খেয়ে দাঁত টকে যাওয়ার কথা বলার সময় দুর্গা অপুকে ইশারায় নিষেধ করে থামিয়ে দেয়। গ. আত্মসম্মানবোধ ধারণের দিক থেকে উদ্দীপকের মমতার সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহরের সাদৃশ্য বিদ্যমান। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহর একজন আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষ। দরিদ্র হলেও নিজের সম্মানহানি যেন না হয় সে ব্যাপারে তিনি সচেতন। তাঁর সেই পরিচয় পাওয়া যায় দশঘরার মাতবরের প্রস্তাবের ব্যাপারে স্ত্রীর সাথে আলোচনার সময়। মাতবর ছোটলোক ভাববে মনে করে সপরিবারে দশঘরায় যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েও সাথে সাথে তিনি রাজি হননি। হরিহরের এ ধরনের আচরণে আত্মমর্যাদাবোধের প্রকাশ লক্ষণীয়। ➠ উদ্দীপকের মমতার কর্মকাণ্ডেও আত্মমর্যাদাবোধের প্রকাশ ঘটেছে। সে দরিদ্র হলেও তার আত্মসম্মান বিকিয়ে দেয়নি। তাই গৃহকর্ত্রীর উদার প্রস্তাবে সে রাজি হতে পারে না। গৃহকর্ত্রীর অধীনে সপরিবারে বসবাস করলে তার মর্যদা যে নিচে নেমে যেতে পারে সেই ভাবনা তাকে উঁচু চিন্তা-চেতনার অধিকারী করে তুলেছে। মমতার এই আত্মসম্মানবোধের দিকটিই ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহরের সাথে তাকে সাদৃশ্যময় করে তুলেছে। ঘ. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের মূলকথা গ্রামীণজীবনে চিরায়ত শৈশবের বর্ণনা হলেও উদ্দীপকে মমতার আত্মসম্মানচেতনা বর্ণনাই উদ্দেশ্য। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে গ্রামীণজীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাইবোনের আনন্দিত জীবনের আখ্যান রচিত হয়েছে। গল্পে অপু ও দুর্গা হতদরিদ্র পরিবারের শিশু হয়েও তাদের স্বভাবসুলভ আনন্দ উদ্যাপন করেছে। গ্রামীণ ফলফলাদি আহারের আনন্দ এবং বিচিত্র বিষয় নিয়ে কৌতূহল অপু ও দুর্গা চরিত্রের মাঝে মানুষের চিরায়ত শৈশবেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে। গল্পে আনুষঙ্গিক অন্যান্য বর্ণনা থাকলেও মূলত এ দিকটিই গল্পের মূলকথা। ➠ উদ্দীপকে মমতার আত্মসম্মানবোধের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। মমতা গৃহকর্মীর কাজ করলেও তার নিজের আত্মমর্যাদা ঠিক রেখেছে। এ কারণে গৃহকর্ত্রীর লোভনীয় প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছে। দারিদ্র্যের মাঝে বেঁচে থাকলেও নিজের মর্যাদার হানি ঘটে এমন প্রস্তাবে সে রাজি হয় না। আর মমতার চরিত্রের এই গুণের বর্ণনা প্রদানই উদ্দীপকের মূল উদ্দেশ্য। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পটি এবং উদ্দীপকটি উদ্দেশ্যগত দিক থেকে ভিন্ন। কেননা গল্পটি যে ভাবধারা প্রকাশ করেছে, উদ্দীপকটি তা করেনি। ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে গ্রামীণ পরিবেশে চিরায়ত শৈশবকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্দীপকে একজন গৃহকর্মীর মর্যাদাবোধের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে বর্ণিত হরিহরের সাথে কিছুটা গুণগত মিল ছাড়া উদ্দীপকের সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের কোনো মিল নেই। উদ্দীপকটি তাই গল্পের মূলভাবকে ধারণ করতে পারে না। কেবল খণ্ডিত একটি ভাবকে ধারণ করে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : দুঃখিনী রাহেলার দিন কাটে খুব কষ্টে। দুধের ছেলেটিকে মানুষ করার জন্য পরের বাড়িতে কাজ করতে হয়। তার বেকার স্বামী তার জমানো টাকা চুরি করে নেশা করে। রাহেলার কষ্টে ব্যথিত হয়ে গৃহকর্ত্রী তাকে স্বামীসহ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আগ্রহের অভাব না থাকলেও রাহেলা কারও দয়ার বশবর্তী হয়ে বাঁচতে চায় না বলে জানিয়ে দেয়। স্বামীর স্বভাব খুব ভালো ভাবেই জানা আছে তার। রাহেলা জানে এ বাড়িতে এলে চোর, নেশাখোর স্বামীর কারণে তাকে অনেক অপদস্থ হতে হবে। ক. আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের রচয়িতা কে? খ. মায়ের ডাকে দুর্গা উত্তর দিতে পারল না কেন? গ. উদ্দীপকের রাহেলার সিদ্ধান্তের সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহরের গৃহিত সিদ্ধান্তের অমিল দেখাও। ঘ. উদ্দীপকের রাহেলা ও ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহর দুজনেই দরিদ্র হলেও আত্মসম্মান ও বিবেচনাবোধ বিসর্জন দেয়নি- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। |
ক. আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের রচয়িতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। খ. মায়ের ডাকে দুর্গার উত্তর দিতে না পারার কারণ হলো- তখন তার মুখভর্তি ছিল জারানো আমের চাকলা। ➠ দুর্গা পটলিদের বাগানের আম কুড়িয়ে এনে ছোট ভাই অপুকে সাথে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছিল মা দেখে ফেললে বকবেন এই ভয়ে। হঠাৎ মায়ের ডাক পড়ায় বাকি আমগুলো দুর্গা মুখে পুরে ফেলল। তখন মুখভর্তি আম থাকায় দুর্গার মায়ের ডাকের উত্তর দিতে পারল না। গ. উদ্দীপকের রাহেলা সপরিবারে আশ্রয় লাভের সুযোগ ফিরিয়ে দিলেও ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহর তা না করায় রাহেলা ও হরিহরের মাঝে অমিল ফুটে ওঠে। ➠ ‘আম-আঁটির ভেপুঁ’ গল্পে হরিহর একজন দরিদ্র মানুষ। সে অন্নদা রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে। সংসারের টানাপড়েনের কারণে দশঘরায় তাকে সপরিবারে চলে যাওয়ার অনুরোধে সে যাওয়ার জন্য মনস্থ করে। এজন্য স্ত্রীর সাথে আলোচনাও করে। সে মনে করে সেখানে গেলে সংসারটা যদি একটু ভালো চলে। ➠ উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহরের এই মানসিকতার বিপরীত চিত্র ফুটে উঠেছে। সেখানে রাহেলা সপরিবারে আশ্রয় লাভের প্রস্তাব পেয়েও তা গ্রহণ করে না। নেশাগ্রস্ত স্বামী আর অন্যের বশবর্তী হয়ে না থাকার বাসনা তাকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করে। রাহেলা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও গল্পে হরিহর দশঘরায় প্রস্তাব বিবেচনায় রাখে। সে পরে তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবে বলেছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় উদ্দীপকের রাহেলা এবং ‘আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের হরিহরের মানসিকতার অমিল রয়েছে। ঘ. উদ্দীপকের রাহেলা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে এবং গল্পের হরিহর সরাসরি সিদ্ধান্ত না জানিয়ে আত্মসম্মান ও বিবেচনাবোধের পরিচয় দিয়েছে। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহরকে আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেখা যায়। কেননা হরিহর অভাব-অনটনের মধ্যে থাকলেও নিজের আত্মসম্মান ঠিক রেখে কাজ করেছে। সে দশঘরায় পাওয়া প্রস্তাবে তখনি রাজি হলে প্রস্তাবকারী তাকে ছোটলোক ভাববে মনে করেছে। আবার এলাকার পাওনাদারদের কথাও সে বিবেচনা করেছে। এতে হরিহরের মাঝে আত্মসম্মান ও বিবেচনাবোধ প্রবল বলে প্রতীয়মান হয়। ➠ উদ্দীপকের রাহেলার মাঝেও প্রবল আত্মসম্মানবোধ প্রকাশ পেয়েছে। সে অন্যের বশবর্তী হয়ে বাঁচাকে নিজের আত্মসম্মানের পরিপন্থী মনে করেছে। তাই গৃহকর্ত্রীর প্রস্তাব সসম্মানে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আশ্রয় নিলে স্বামীর কর্মকাণ্ডের কারণে নিজেকে অপদস্থ হতে হবে বলে সে মনে করেছে। রাহেলার এ ধরনের চিন্তা-চেতনা তার প্রবল আত্মমর্যাদাবোধ এবং বিবেচনাবোধের পরিচায়ক। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহর এবং উদ্দীপকের রাহেলার চরিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায় তারা সমাজে নিজের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য চেষ্টা করেছে। হরিহর যেমন দশঘরায় নিজের আত্মসম্মানের কারণে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি, তেমনি উদ্দীপকের রাহেলাও আত্মসম্মানের কারণেই গৃহকর্ত্রীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা সম্পদের লোভের কাছে নিজেদের বিলিয়ে দেয় নি, নিজের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছে। এ ধরনের মানসিকতা তাদের সুবিবেচক এবং আত্মসম্মানবোধের অধিকারী হিসেবে পরিচিত করেছে। এক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : শহরের বুকে বিশাল এক বাড়িতে রানু ও রানাদের বসবাস। সারা দিন এঘর ওঘর আর বাড়ির সামনের বাগানে ছোটাছুটি করে তারা। রানু ও রানার মা আফরোজা বানু ওদের সব আবদার পূরণের জন্য সচেষ্ট থাকেন। মাঝে মাঝে ওদের দুষ্টুমি দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। দুষ্টুমি করতে গিয়ে ওরা না আবার হাত-পা ভেঙে বসে। ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কত সালে জন্মগ্রহণ করেন? খ. “ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে যাই”- সর্বজয়া কেন এ কথা বলেছে? গ. উদ্দীপকের আফরোজা বানু কোন দিক থেকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের চিত্রটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সমগ্রভাব ধারণ করে কি? বিশ্লেষণী মতামত দাও। |
ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। খ. দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হওয়ায় ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়া এ উক্তিটি করেছে। ➠ গল্পের হরিহর অন্নদা রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে মাসে আট টাকা মাইনে পায়। তাতে তার সংসার চলে না। ধার-দেনা হয়েছে প্রচুর। সেজ ঠাকরুণ, রাধা বোষ্টমের বৌ পাওনা আদায়ের জন্য যেন ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটার কাপড়ে দু-তিন জায়গায় সেলাই। মনের দুঃখে সর্বজয়া তাই বলেছিল- আমার এমন হয়েছে যে ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে যাই’। গ. উদ্দীপকের আফরোজা বানু আপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণের দিক থেকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ➠ সন্তানের প্রতি ভালোবাসা সব মায়ের মাঝেই একটি আলাদা ভাব ধারণ করে। সন্তানের সুখে হাসা, সন্তানের কষ্টে কাঁদা, সর্বদা সন্তানের চিন্তায় উদ্বিগ্ন থাকা বাংলার মায়েদের একটি শাশ্বত বৈশিষ্ট্য। ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে সর্বজয়ার মাঝে সন্তানবাৎসল্যের এই চিরাচরিত রূপটিই ফুটে উঠেছে। ➠ উদ্দীপকের আফরোজা বানুর মাঝে গল্পের সর্বজয়ার মতো শাশ্বত মায়ের রূপটিই প্রতীয়মান। আফরোজা বানু নিজের সন্তানদের নিয়ে সকল সময় চিন্তিত থাকেন। এর মাধ্যমে সন্তানদের প্রতি তার ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার মাঝে আফরোজা বানুর মতো সন্তানবাৎসাল্য প্রকাশ পেয়েছে। সে সন্তানদের চঞ্চলতায় উদ্বিগ্ন হয়েছে, সন্তানদের চাহিদা পূরণে ব্যাকুল হয়েছে। তাই বলা যায়, আফরোজা বানু সন্তানবাৎসল্যের দিক থেকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ঘ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের মতো প্রকৃতিঘনিষ্ট দারিদ্র্যক্লিষ্ট শিশুর দিকটি প্রকাশ না পাওয়া তা গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হতদরিদ্র পরিবারে দুটি শিশুর আনন্দিত জীবনের আখ্যান রচিত হয়েছে। গল্পে দুর্গা ও অপুর শৈশব জীবনে দারিদ্র্যের কষ্ট প্রধান হয়ে ওঠেনি। তাদের ফলফলাদি আহারের আনন্দ এবং বিচিত্র বিষয় নিয়ে কৌতূহল গল্পটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। সর্বোপরি গল্পটি মানুষের চিরাচরিত শৈশবকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। ➠ উদ্দীপকে দুটি শিশুর শৈশবের চাঞ্চল্য এবং তাদের জন্য মায়ের ভালোবাসার দিকটি বর্ণিত হয়েছে। কিছুটা মিল থাকলেও এটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সামগ্রিক আবেদনকে ধারণ করে না। কেননা উদ্দীপকে শহুরে জীবনের বিলাসিতার মাঝে বেড়ে ওঠা শিশুর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু গল্পে তা নেই। ফলে এক্ষেত্রে গল্পের সাথে উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্য ফুটে ওঠে। ➠ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে গ্রামীণ প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুটি শিশুর কথা বর্ণিত হলেও উদ্দীপকে শহুরে বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত শিশুদের কথা বলা হয়েছে। গল্পে দুর্গা ও অপু গ্রামীণ ফলফলাদি আহারের আনন্দ উপভোগ করলেও উদ্দীপকে তা অনুপস্থিত। তাছাড়া উদ্দীপকে আফরোজা বানু সন্তানদের সব চাহিদা পূরণ করতে পারলেও গল্পের সর্বজয়া তা পারেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
---|
------------- |
----------- |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আম আঁটির ভেঁপু, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অবসর প্রকাশনী, ঢাকা। ৩. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। ৫. বানান আন্দোলন, বানান অ্যাপস। |