‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

আবার আসিব ফিরে : জীবনানন্দ দাশ
আবার আসিব ফিরে : জীবনানন্দ দাশ 

আবার আসিব ফিরে
জীবনানন্দ দাশ 

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ির তীরে এই বাংলায়  ক
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;  খ
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে  খ
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;  ক
হয়তো বা হাঁস হবো- কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,  ক
সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে;  খ
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে  খ
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;   ক

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;  খ
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;  গ
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;  খ
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে  গ
ডিঙা বায়; রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে   ঘ
দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে-  ঘ

উৎস নির্দেশ :
‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘আবার আসিব ফিরে’ একটি সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা। কবিতাটি চৌদ্দ চরণ, ২২ মাত্রায় রচিত। এখানে গঠনবিন্যাস হলো: কখখক কখখক খগখগ ঘঘ।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ ধানসিঁড়ি- ঝালকাঠি জেলার একটি নদী। নদীটি এখন মরে গেছে।
➠ শঙ্খচিল- এক ধরনের সাদা চিল।
➠ নবান্ন- নতুন ধানকাটার পর আমাদের দেশে এ উৎসব হয়। এ উৎসবে দুধ, গুড়, নারকেলের সঙ্গে মিশিয়ে নতুন আতপ চালের ভাত খাওয়া হয়।
➠ কার্তিকের নবান্নের দেশে- কবি নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশকে নবান্নের দেশ বলেছেন। নবান্ন অর্থ নতুন ভাত। কার্তিক মাসে ঘরে নতুন ধান তুলে কৃষকেরা নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে।
➠ ঘুঙুর- নূপুর, পায়ের অলংকার।
➠ জলাঙ্গী- কবি এখানে নদীকে জলাঙ্গী (অর্থাৎ জল যার অঙ্গে) নামে অভিহিত করেছেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে কবি জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা বলেছেন।
➠ ডাঙা- জলাশয়ের নিকটবর্তী উঁচু স্থান।
➠ সুদর্শন- শকুনি; এক ধরনের পোকা যা উড়তে পারে।
➠ লক্ষ্মীপেঁচা- এক ধরনের পেঁচা।
➠ রূপসা- একটি নদীর নাম।
➠ ডিঙা- ছোট নৌকা।
➠ নীড়ে- পাখির বাসায়।
➠ ধবল- সাদা।

পাঠের উদ্দেশ্য :
কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা বাংলার প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবে। তাদের মনে নিজের দেশের প্রতি মমত্ববোধের জাগরণ ঘটবে।

পাঠ-পরিচিতি :
জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিস কবির দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পরেছে কবিতায়। কবি মনে করেন, যখন তাঁর মৃত্যু হবে তখন দেশের সঙ্গে তাঁর মমতার বাঁধন শেষ হবে না। তিনি বাংলার নদী, মাঠ, ফসলের খেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসবেন। আবার কখনও বা ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যাবেন। এমনও হতে পারে, তিনি হাঁস হয়ে সারাদিন কলমির গন্যে ভরা বিলের পানিতে ভেসে বেড়াবেন। এমনকি দিনের শেষে যে সাদা বকের দল মেঘের কোল ঘেঁষে নীড়ে ফিরে আসে তাদের মাঝেও কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এভাবে তিনি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাবেন।

কবি পরিচিতি :
কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু হয় এবং তিনি বিভিন্ন সময়ে কলকাতা সিটি কলেজ, দিল্লি রামযশ কলেজ, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ, খড়গপুর কলেজ, বরিষা কলেজ ও হাওড়া কলেজে অধ্যাপনা করেন। এক সময় তিনি সাংবাদিকতার পেশাও অবলম্বন করেছিলেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতির রং ও রূপের বৈচিত্র প্রকাশ ঘটেছে। অনেক অজানা গাছ, পশু-পাখি ও লতাপাতা তাঁর কবিতায় নতুন পরিচয়ে ধরা পড়েছে। প্রকৃতিপ্রেমিক এই কবি প্রকৃতি থেকেই তাঁর কবিতার রূপরস সংগ্রহ করেছেন। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি ১৯৫৪ সালে কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

কর্ম-অনুশীলন :
ক. কবিতাটির দৃশ্যচিত্র অবলম্বনে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করো (শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে)।
খ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি অবলম্বনে একক ও দলগত আবৃত্তির আয়োজন করো।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. ধানসিঁড়ি কিসের নাম?
ক. নদীর ✔
খ. শহরের
গ. ধানের
ঘ. গ্রামের
২. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে?
ক. ধূসর পাণ্ডুলিপি
খ. রূপসী বাংলা ✔
গ. ঝরাপালক
ঘ. বনলতা সেন
৩. ‘সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে’-এখানে সারাদিন কেটে যাবে কার?
ক. হাঁসের
খ. কিশোরীর
গ. কাকের
ঘ. কবির ✔
কবিতাংশটি পড় এবং ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
‘গোধূলি লগনে জগদীশে স্মরণে
বিদায় লইব জনমের তরে
লুকাইব আমি সন্ধ্যার আঁধারে বাংলা মায়ের ক্রোড়ে।’
৪. উদ্দীপকে 'আবার আসিব ফিরে' কবিতার কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে?
ক. স্বদেশচেতনা ✔
খ. মৃত্যুচেতনা
গ. প্রকৃতিচেতনা
ঘ. ধর্মচেতনা
৫. উক্ত সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ফুটে উঠেছে নিচের কোন চরণে?
i. আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়
ii. হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে
iii. আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক i ও ii
খ. i ও iii ✔
গ ii ও iii
ঘ i, ii ও iii

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন- ১:কবি জীবনানন্দ দাশ আবার কোথায় ফিরে আসতে চান?
উত্তর : কবি জীবনানন্দ দাশ আবার বাংলায় ফিরে আসতে চান।
প্রশ্ন- ২: কবি এদেশে কীসের বেশে আসবেন?
উত্তর : কবি এদেশে শঙ্খচিল শালিকের বেশে আসবেন।
প্রশ্ন- ৩: কবি নবান্নের দেশে কোন বেশে আসবেন?
উত্তর : কবি নবান্নের দেশে ভোরের কাক হয়ে আসবেন।
প্রশ্ন- ৪: কাঁঠাল-ছায়া দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : কাঁঠাল-ছায়া দ্বারা কবি এদেশকে বুঝিয়েছেন।
প্রশ্ন- ৫: কাঁঠাল-ছায়ায় কবি কীভাবে আসবেন?
উত্তর : কাঁঠাল-ছায়ায় এদেশে কবি কুয়াশার বুকে ভেসে আসবেন।
প্রশ্ন- ৬: কবি হাঁস হলে সারাদিন কীভাবে কাটাবেন?
উত্তর : কবি হাঁস হলে সারাদিন কলমির জলে ভেসে ভেসে কাটাবেন।
প্রশ্ন- ৭: কবি কী ভালোবেসে এদেশে আবার ফিরে আসবেন?
উত্তর : কবি বাংলার নদী-মাঠ-খেত ভালোবেসে আবার এদেশে ফিরে আসবেন।
প্রশ্ন- ৮: কবি এদেশকে কীসে ভেজা বলেছেন?
উত্তর : কবি এদেশকে জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বলেছেন।
প্রশ্ন- ৯: কবি শঙ্খচিল শালিকের বেশে কোথায় আসতে চান?
উত্তর : কবি শঙ্খচিল শালিকের বেশে বাংলায় আসতে চান।
প্রশ্ন- ১০: কবি কার্তিকের নবান্নের দেশে কী হয়ে ফিরে আসতে চান?
উত্তর : কবি কার্তিকের নবান্নের দেশে ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চান।
প্রশ্ন- ১১: ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কিশোরের ছেঁড়া পালটি কী রঙের।
উত্তর : ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কিশোরের ছেঁড়া পালটি সাদা রঙের।
প্রশ্ন- ১২: ধবল বক কীভাবে নীড়ে আসে?
উত্তর : ধবল বক রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে নীড়ে আসে।
প্রশ্ন- ১৩: জীবনানন্দ দাশ কোন বিষয়ে এমএ পাস করেন?
উত্তর : জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
প্রশ্ন- ১৪: ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কোন কাব্য থেকে নেয়া হয়েছে?
উত্তর : ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা’ কাব্য থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন- ১৫: জীবননান্দ দাশের কবিতার রূপ-রসের উৎস কী?
উত্তর : জীবননান্দ দাশের কবিতার রূপ-রসের উৎস হলো প্রকৃতি।
প্রশ্ন- ১৬: কবি কোন দেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ বলেছেন?
উত্তর : কবি বাংলাদেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ বলেছেন।
প্রশ্ন- ১৭: নবান্ন উৎসব কোন মাসে হয়?
উত্তর : নবান্ন উৎসব কার্তিক মাসে হয়।
প্রশ্ন- ১৮: ‘ডিঙা’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ‘ডিঙা’ বলতে বোঝায় ছোট নৌকা।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন- ১: কবি রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে চান কেন?
উত্তর : মাতৃভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধের কারণে এদেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে কবি মিশে যেতে চান।
➠ কবি জীবনানন্দ দাশ মাতৃভূমি বাংলাদেশকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। বাংলার অপরূপ বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যে তিনি বিমোহিত। কবি মনে করেন বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর আত্মার টান। তাই তিনি এদেশকে ছেড়ে দূরে থাকতে চান না। এমনকি মৃত্যুর পরেও আবার এদেশে ফিরে আসতে না পারলেও প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গে চান বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকতে।
প্রশ্ন- ২: কবি ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যেতে চান কেন?
উত্তর : দেশের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসায় কবি পরজন্মে ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে গিয়ে বাংলার রূপ-সৌন্দর্য অবলোকন করতে চান।
➠ কবি জীবনানন্দ দাশ নিজের দেশকে খুবই ভালোবাসেন। প্রিয় জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলোও তার দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। কবি মনে করেন, মৃত্যুর সাথে সাথে দেশের সঙ্গে তার মমতার বাঁধন শেষ হবে না। তিনি বাংলার নদী-মাঠ-ফসলের খেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসবেন। আবার কখনোবা ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যাবেন।
প্রশ্ন- ৩: মেঘের কোলে ঘেঁষে নীড়ে ফিরে আসা সাদা বকের দলের মধ্যে কবি মিশে থাকতে চান কেন?
উত্তর : বাংলার রূপবৈচিত্র্যে মুগ্ধ হয়ে কবি পরজন্মে মেঘের কোল ঘেঁষে নীড়ে ফিরে আসা সাদা বকের দলের মধ্যে মিশে থাকতে চান।
➠ কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশকে ভালোবাসেন তার হৃদয়ের গভীর থেকে। প্রিয় জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলোও তার দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। কবি মনে করেন, যখন তার মৃত্যু হবে তখন দেশের সঙ্গে তার মমতার বাঁধন শেষ হবে না। তিনি বাংলার নদী-মাঠ, ফসলের খেত ভালোবেসে বিভিন্ন বেশে বার বার ফিরে আসতে চান এদেশে। কবির অভিলাষ মানুষ হয়ে জন্ম নিতে না পারলেও যেন মেঘের কোল ঘেঁষে নীড়ে ফিরে আসা সাদা বকের দলের মধ্যে থাকতে পারেন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পল্লির সন্তান অমিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার্থে ফ্রান্স যায়। সেখানকার সুপ্রশস্ত রাজপথ, উদ্যান, নির্মল প্রকৃতি তার খুব ভালো লাগে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজ সব জায়গায় দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ফরাসিদের দেশপ্রেম দেখে সে বিস্মিত হয়। ওদের ক্যাফে, মিউজিয়াম সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করে। উচ্চশিক্ষা শেষ করে অমিত স্থায়ীভাবে সেখানে থেকে যায়। ফরাসি সৌন্দর্যের মোহে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায় তার অতীতস্মৃতি।
ক. উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায় কে?
খ. মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল, শালিকের বেশে জীবনানন্দ দাশ এদেশে ফিরতে চান কেন?
গ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় উদ্দীপকের ফরাসি জাতির কোন দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে? বর্ণনা করো।
ঘ. অমিতের অনুভূতি আর জীবনানন্দ দাশের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন- উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
ক. উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায় এক শিশু।
খ. মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার কারণে কবি মানুষ না হয়ে মৃত্যুর পর শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরতে চান।
➠ কবি জানেন, জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত। একদিন তাকে চিরদিনের মতো বিদায় নিতে হবে। কিন্তু কবি তার দেশকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। প্রিয় জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলো তার দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। তার বিশ্বাস, ভালোবাসা এ বন্ধন মৃত্যুর মধ্য দিয়েও ছিন্ন হবে না। মৃত্যুর পর মানুষের রূপ ধরে আসা সম্ভব না হলেও কবি শঙ্খচিল কিংবা শালিকের বেশে এদেশের বুকে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

গ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় প্রকাশিত দেশাত্মবোধের দিকটি উদ্দীপকের ফরাসি জাতির দেশাত্মবোধের দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের বক্তব্যে চিরচেনা বাংলার রূপবৈচিত্র্য প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলার সবুজ-শ্যামল মায়াময় রূপে তিনি মুগ্ধ। প্রিয় জন্মভূমির তুচ্ছ জিনিসগুলোও তার চোখে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। তাঁর মনে হয়েছে মৃত্যুর পরও এ মায়ার বাঁধন শেষ হবে না।
➠ উদ্দীপকেও ফ্রান্সের সুপ্রশস্ত রাজপথ, উদ্যান, নির্মল প্রকৃতির বর্ণনা রয়েছে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজ সব জায়গায় দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ফরাসিদের দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে, যা দেখে উচ্চ শিক্ষার্থে ফ্রান্সে গিয়ে পল্লির সন্তান অমিত দারুণভাবে মুগ্ধ হয়েছে। দেশের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার নিদর্শনই ফুটে উঠেছে ফ্রান্সের ক্যাফে ও মিউজিয়ামগুলোতে। তাই বলা যায়, নিজ নিজ দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সৌন্দর্যবোধই প্রকাশিত হয়েছে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় ও উদ্দীপকের ফরাসি জাতির মধ্যে।

ঘ. “অমিতের অনুভূতি আর জীবনানন্দ দাশের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন”- আলোচ্য উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ তার নিজের দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। প্রিয় জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলো তার দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। কবি মনে করেন, যখন তার মৃত্যু হবে তখনো দেশের সঙ্গে তার মমতার বাঁধন ছিন্ন হবে না। তিনি বাংলার নদী, মাঠ, ফসলের খেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসবেন।
➠ অপরদিকে, উদ্দীপকের অমিত পল্লির সন্তান হয়েও উচ্চ শিক্ষার্থে ফ্রান্সে গিয়ে, ফ্রান্সের সুপ্রশস্ত রাজপথ, বিচিত্র উদ্যান, নির্মল প্রকৃতি, রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজ সর্বত্রই দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ফরাসিদের দেশপ্রেম দেখে বিস্মিত হয়। তাই উচ্চশিক্ষা শেষ করে অমিত স্থায়ীভাবে ফ্রান্সে থেকে যায়। ফরাসি সভ্যতার সৌন্দর্যের মোহে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায় তার স্বদেশের অতীত স্মৃতি।
➠ রূপমুগ্ধ মানসিকতার দিক দিয়ে জীবনানন্দ দাশ ও উদ্দীপকের অমিতের মধ্যে মিল থাকলেও, কবি স্বদেশের প্রতি মমত্ববোধ ও সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে মৃত্যুর পরও স্বদেশে ফিরে আসতে চান আর অমিত বিদেশের মোহে আকৃষ্ট হয়ে স্বদেশ ও স্বদেশের প্রকৃতিকে মন থেকে মুছে ফেলে ওখানেই স্থায়ী হয়। এখানেই দুজনের অনুভূতি সম্পূর্ণ আলাদা।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
‘বাংলার হাওয়া বাংলার জল
হৃদয় আমার করে সুশীতল
এত সুখ শান্তি এত পরিমল
কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া।’
ক. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কোন কাব্য থেকে নেয়া হয়েছে?
খ. বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপক অবলম্বনে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দাও।
ঘ. কোথা পাব বাংলা ছাড়া- কথাটির সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের বাংলায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা কীভাবে সম্পর্কিত- আলোচনা করো।
ক. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।
খ. বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা বলতে সবুজে আবৃত বাংলাদেশের নদী তীরের দু’পাশের সিক্ত মাঠঘাট ও প্রান্তরকে বোঝানো হয়েছে।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটিতে কবি গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র অঙ্কন করেছেন। কবি আলোচ্য কবিতাটিতে ধানসিঁড়ি ও রূপসা এ দুটি নদীর নাম উল্লেখ করেছেন। নদী তীরের দু’পাশে যে মাঠঘাট-প্রান্তর থাকে, অধিকাংশ সময় সেখানে সবুজ ফসলের সমারোহ দেখা যায়।

গ. উদ্দীপকটিতে ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটিতে বাংলার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র ফুটে উঠেছে।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবির সুগভীর দেশপ্রেমের পরিচয় বিধৃত হয়েছে। কবি দেশকে এতই ভালোবাসেন যে, জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলোও তার দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়ে। বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকাশে তিনি নদী, মাঠ, খেত ভালোবেসে ধানসিঁড়ি নদীর তীরে, জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার সবুজ করুণ ডাঙায় ফিরে আসতে চান।
➠ উদ্দীপকেও জনৈক কবির কবিতার চরণে বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। সেখানে বাংলার হাওয়া ও জল কবির হৃদয়কে শুধু সুশীতলই করেনি বরং তাকে এতটাই তৃপ্তি দিয়েছে যে, তার মতে বাংলা ছাড়া অন্য কোথাও আর এমন হাওয়া ও জল পাওয়া সম্ভব নয়। উদ্দীপকের কবিও অল্প কথায় জীবনানন্দ দাশের মতো বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। সুতরাং, উদ্দীপকের কবিতার চরণগুলোর মাধ্যমেও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটিতে বাংলার মনোমুগ্ধকর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র ফুটে উঠেছে।

ঘ. ‘কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া’- কথাটির সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের বাংলায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষার কথাটি অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের দিক থেকে সম্পর্কিত।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মাধ্যমে কবি জীবনানন্দ দাশের সুগভীর দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। দেশকে তিনি এত ভালোবাসেন যে, প্রিয় জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিসগুলো তার দৃষ্টিতে অত্যন্ত সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। তাই তিনি মৃত্যুর পরও বাংলার মাঠঘাট, জল ভালোবেসে নানা বেশে বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন।
➠ উদ্দীপকেও দেখা যায় যে, কবির কবিতার চরণগুলোর মাধ্যমে বাংলার প্রতি তার সুগভীর দেশপ্রেম ও বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। বাংলার প্রকৃতির অতি তুচ্ছ জিনিস যেমন বাতাস, পানি তার দৃষ্টিতে মহামূল্যবান হয়ে ধরা পড়েছে। তাইতো তিনি এগুলোর গুণকীর্তন করতে গিয়ে বলেছেন, এগুলো তাকে এতটাই সুখ, শান্তি ও তৃপ্তি দেয় যে, পৃথিবীর আর কোথাও তা পাওয়া যাবে না।
➠ উদ্দীপকের কবির বক্তব্যের মধ্যে দেশানুরাগের যে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, বাংলার প্রতি জীবনানন্দ দাশেরও সে রকম সুগভীর টানের ইঙ্গিত প্রকাশ পেয়েছে। আর এ টানের কারণেই তিনি বলেছেন, কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া। সুতরাং ‘কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া’- কথাটির সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের বাংলায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের দিক থেকে সম্পর্কিত।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আজকে সকালে এই গ্রাম দেখে পলক পড়ে না চোখে
নদীর কিনারে, ঘন বনের ধারে অমাবস্যার দিঘির পাড়ে
আম, জাম, কাঁঠালের মিনারে মিনারে
ধান খেত ঘেরা সীমানাহীন মাঠে মাঠে
এই সব ছোট ছোট গ্রাম
আমার দেশের নাম খোদা তার সোনার ফলকে।
আমার সোনার দেশ,
সোনা হল এইসব গ্রামে গ্রামে।
ক. রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে কী নীড়ে ফিরছে?
খ. এ দেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটির মিল দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি আবার ‘আসিব ফিরে’ কবিতার মূল ভাবের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না।” -বিশ্নেষণ করো।
ক. রাঙা মেঘ সাঁতরে বক নীড়ে ফিরছে।
খ. কার্তিক মাসে নতুন ধান ঘরে তোলার সাথে সাথে প্রতিটি কৃষি পরিবারে নবান্ন উৎসব হয়। সে কারণে কবি বাংলাকে কার্তিক নবান্নের দেশ বলে অভিহিত করেছেন।
➠ কৃষিনির্ভর এদেশে কার্তিক মাসে ঘরে নতুন ধান তুলে কৃষকেরা নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে। নতুন ধান কাটার পরই আমাদের দেশে এ উৎসব হয়। এ উৎসবে দুধ, গুড় নারকেলের সঙ্গে মিশিয়ে নতুন আতপ চালের ভাত খাওয়া হয়। গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণিরা সকলেই এই নবান্ন উৎসবে অংশগ্রহণ করে।

গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনার দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি দেশকে ভালোবাসার সুবাদে। তাই প্রিয় জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলো তাঁর দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। এ বাংলার তাপ এরূপ প্রকৃতি এতই সৌন্দর্যময় যে, কবি এখানে মৃত্যুর পর শঙ্খচিল অথবা শালিকের বেশে পুনরায় ফিরে আসতে চান। বাংলার নদীজলে কবি হাঁস হয়ে ভেসে বেড়াতে চান।
➠ উদ্দীপকে বাংলা প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের নানা প্রকাশ দেখা যায়। সকালে নদীর পাড়ের শীতল হাওয়ায় এদেশের মানুষের হৃদয় সুশীতল হয় এবং বাংলার জলে তৃপ্ত হয় বাঙালির তৃষ্ণার্ত আত্মা। সবুজ গাছপালা অবারিত ফসলের মাঠ, আম-জাম-কাঁঠালের বাগান ছোট ছোট গ্রাম এসব কিছু বাংলাকে সোনালি রূপে সাজিয়েছেন বিধাতা। কাজেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনার দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘আবার অসিব ফিরে’ কবিতার সঙ্গে মিল রয়েছে।

ঘ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি মৃত্যুর পর বাংলার মাটিতে ফিরে আসার যে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন তা উদ্দীপকে প্রকাশ পায়নি। তাই উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি প্রিয় রূপসী বাংলার স্বরূপ অঙ্কন করেছেন। বাংলার ফসল খেত নদী জল কবিকে বিমোহিত করেছে। কলমির গন্ধভরা জলে হাঁসের অবাধ সাঁতার দেখে কবি মুগ্ধ হয়েছেন। বাংলার এরূপপ্রকৃতি কবির কাছে এতটাই প্রিয় যে, বাংলার প্রকৃতিকে ভালোবেসে কবি মৃত্যুর পর শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে ফিরে এসে এ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে চান।
➠ উদ্দীপকে বাংলার অপরূপ প্রকৃতির বর্ণনা আছে, পাশাপাশি গ্রামবাংলার অপরূপ সোনালি সৌন্দর্যের বর্ণনা আছে। নদী কিনার, অমাবস্যায় দিঘির পাড়ে আম, জাম, কাঁঠালের যে সৌন্দর্য। ধানখেতঘেরা সীমাহীন মাঠে মাঠে ছোট ছোট গ্রামের সৌন্দর্য যেন সোনালি আবেশ ছড়ায়। এমন সোনালি সৌন্দর্যের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ একমাত্র এই বাংলাতেই রয়েছে।
➠ উদ্দীপকে বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় প্রকৃতি ফুটে উঠেছে। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায়ও আমরা বাংলার সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিচয় পাই। তবে কবিতায় কবির মৃত্যুর পর মাতৃভূমিতে ফিরে আসার যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন তা উদ্দীপকে একেবারেই অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
এ কি অপরূপ সুষমায় আমার মন ভরেছো তুমি
আমার সোনার দেশ, প্রিয় জন্মভূমি।
রূপের রানি বাংলা মা তোর পল্লি সুখের ছায়
তোরে নিয়ে শান্তি পাইগো ঘাসের গালিচায়
শাপলা, শালুক, পদ্ম কুড়াই দিঘির জলে নামি
আমার সোনার দেশ, প্রিয় জন্মভূমি।
ক. ‘ধবল’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘কার্তিকের নবান্নের দেশ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় যে ভাবগত সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ভাবগত সাদৃশ্য থাকলেও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির প্রত্যাশা আরও ব্যাপক-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘ধবল’ শব্দের অর্থ সাদা।
খ. হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কথাটির মমার্থ হলো কবি এই নবান্নের দেশে মৃত্যুর পর ফিরে আসতে চান কাকের বেশে।
➠ এদেশ নবান্নের দেশ, নতুন ধানের আগমনে প্রকৃতি হয়ে ওঠে মধুময়। ধানের গন্ধে মুখরিত থাকে গ্রামবাংলার পথ-প্রান্তার। কবি প্রকৃতির এই রূপকে ভালোবেসেছেন হৃদয় দিয়ে। তাই মৃত্যুর পরে তিনি কাক হয়ে ফিরবেন এই নবান্নের দেশে।

গ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রকৃতিপ্রেমের দিকটি উদ্দীপকে চমৎকারভাবে লক্ষণীয়। এ ভাবগত দিক থেকেই কবিতা ও উদ্দীপক সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ কবি জীবনানন্দ দাশ এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এদেশকে ভালোবেসেছেন। প্রিয় জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলো তার দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। তিনি বাংলার নদী, মাঠ ফসলের খেতকে ভালোবেসেছেন। কখনো তিনি ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যেতে চান। কলমির গন্ধে ভরা বিলের পানিতে কবি হাঁস হয়ে মিশে যেতে চান। এদেশের নদী, পাখি-মাঠ-ঘাট সবকিছুর মধ্যেই কবি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।
➠ অপরূপ রূপের রানি বাংলার পল্লির ঘাঁসের গালিচায় নিবিড় সুখ খুঁজে পেয়েছেন কবি। এমন শান্তি কেবল বাংলাতেই পাওয়া যায়। জীবনানন্দ দাশের দৃষ্টিতে ভোরের কাক থেকে শুরু করে শালিক, শঙ্খচিল, এমনকি সন্ধ্যার আকাশে উড়ন্ত সুদর্শন কোনোকিছুই এড়ায়নি। উদ্দীপকের কবিতাংশেও পল্লি বাংলার ঘাঁসের গালিচা কবিকে শান্তির ছোঁয়া এনে দিয়েছে। বাংলার ঘাস, শাপলা, শালুক, পদ্ম, কড়ুই, দিঘির জল অন্যরূপে হাজির হয়েছে। আর তা যেন জীবনানন্দের কবিতার বাংলার প্রকৃতির মতোই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

ঘ. ভাবগত সাদৃশ্য থাকলেও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবির প্রত্যাশা আরও ব্যাপক মন্তব্যটি যথার্থ।
➠বাংলার অপরূপ রূপসৌন্দর্য কবিকে মুগ্ধ করেছে। কবি তার দৃষ্টিকে সব সময় বাংলার প্রকৃতিতে নিবদ্ধ রেখেছেন। কলমির গন্ধভরা জল কিংবা বাংলার সবুজ করুণ ডাঙায় তিনি শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন।
➠উদ্দীপকের কবিতাংশে কবিকে বাংলার অপরূপ সুষমা মন ভরিয়েছে। পল্লির অপরূপ, সুখের ছায়ায় ঘাসের গালিচায় কবি শান্তির অমৃত স্বাদ পেয়েছেন। শাপলা, শালুক, পদ্ম, কলমি দিঘির জলে কবি বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করেছেন। এ উপলব্ধির পাশাপাশি কবি জীবনানন্দ দাশ শুধু মৃত্যুর পরও আবার ফিরে আসতে চেয়েছেন ভেজা বাংলায়।
➠রূপের রানি পল্লির ঘাঁসের গালিচায় নিবিড় সুখ-শান্তি, শাপলা, শালুক দিঘির জলে সে নিবিড় শান্তির অনুভূতি এমন সুখ বাংলা ছাড়া আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয় বলেই উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু কবির আকাঙ্ক্ষা আরও ব্যাপক। কবি শুধু বাংলাকে ভালোবেসে তৃপ্ত নন। তিনি মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও বাংলার বুকে ফিরতে চান। সুতরাং বলা যায়, ভাবগত সাদৃশ্য থাকলেও মৃত্যুচেতনার দিক থেকে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবির প্রত্যাশা আরও ব্যাপক।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আজকে সকালে এই গ্রাম দেখে পলক পড়ে না চোখে
নদীর কিনারে, ঘন বনের ধারে অমাবস্যার দিঘির পাড়ে,
আম জাম কাঁঠালের মিনারে মিনারে,
ধান ক্ষেত ঘেরা সীমানাহীন মাঠে মাঠে
এই সব ছোট ছোট গ্রাম,
আমার দেশের নাম খোদা তার সোনার ফলকে
আমার সোনার দেশ
সোনা হল এই সব গ্রামে গ্রামে।
ক. লক্ষ্মীপেঁচা কোথায় ডাকছে?
খ. ‘খইয়ের ধান’ শিশু উঠানে ছড়ায় কেন?
গ. কবিতাংশে বর্ণিত ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার আলোকিত দিকটি চিহ্নিত করো।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটির মুখ্য বিষয় প্রকাশ পেয়েছে।” বিশ্লেষণ করো।
ক. লক্ষ্মীপেঁচা শিমুলের ডালে ডাকছে।
খ. খেলার ছলে শিশু খইয়ের ধান উঠানে ছড়ায়।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি বাংলার রূপ বৈচিত্র্যকে প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। কবিতায় গ্রামের শিশুরা খেলার ছলে খইয়ের ধান উঠানে ছড়ায়। কারণ নতুন ধান কাটার সময় গ্রামে নবান্ন উৎসব হয়। সেই উৎসবে নানারকমের পিঠা, পুলি খই ভাজা হয়। গৃহকর্তা কর্মীরা কাজে ব্যস্ত থাকায় শিশুরা খেলার ছলে খইয়ের ধান উঠানে ছড়ায়।

গ. উদ্দীপকের কবিতাংশ এবং ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র ফুটে উঠেছে।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় জীবনানন্দ দাশ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে জীবন্ত করে রূপ দিয়েছেন। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কবি মুগ্ধ। তার দৃষ্টিতে ভোরের কাক থেকে শুরু করে শালিক, শঙ্খচিল এমন কি সন্ধ্যার আকাশে উড়ন্ত সুদর্শন কোনোকিছুই এড়ায়নি। তাইতো মৃত্যুর পরেও কবি কখনো বা শঙ্খচিল, কখনোবা শালিকের বেশে এ রূপসী বাংলায় ফিরে আসতে চান। নদী, মাঠ, ফসল, খেতকে ভালোবেসে কবি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মৃত্যুর পরেও মিশে থাকতে চান।
➠ কবিতার মতো উদ্দীপকের কবিতাংশেও বাংলার রূপময় প্রকৃতির প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধ পরিলক্ষিত হয়েছে। গ্রামের নদী, বৃক্ষরাজি, জলাঙ্গী, মাঠ ভরা ফসল দেখে কবির চিত্ত সদা মুখরিত। কবি যেন বাংলার মোহনীয় রূপ থেকে চোখ ফেরাতে পারেন না মুহূর্তের তরে। তাই উদ্দীপকে যেমন গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য ভাস্বর হয়ে উঠেছে, তেমনি কবিতায়ও কবি গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
ঘ. উদ্দীপকে এবং আলোচ্য কবিতায় মুখ্য বিষয় হিসেবে বাংলার রূপবৈচিত্র্য সম্পর্কে কবির অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে।
➠ কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার প্রকৃতিকে ভালোবেসে আজীবন কাটিয়েছেন, এমনকি মৃত্যুর পরেও তিনি শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এ বাংলার বুকে ফিরে এসে বাংলাকে ভালোবাসতে চান। বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবলোকন করে কবির চিত্ত মুখরিত। এদেশের নদী, মাঠ, ঘাট, ফসল, ফুল, পাখিকে কবি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। তাইতো মৃত্যুর পরেও তিনি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতে চান।
➠ কবিতার মতো উদ্দীপকেও বাংলার প্রকৃতির প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। গ্রামবাংলার নদী, মাঠ, ঘাট, বৃক্ষরাজি, অবারিত ফসলের খেত দেখে কবি চোখের পলক ফেলতে পারেন না। এদেশের রূপময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কবির চিত্ত সদা মুখরিত। ছোট ছোট গ্রাম, ঘন বনের ধারে অমাবস্যার দিঘিরপাড় প্রভৃতি কবির চিত্তকে ব্যাকুল করে তোলে। তাই কবি এ দেশকে সোনার দেশ বলে অভিহিত করেছেন।
➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে কবিতার মুখ্য বিষয় বাংলার অপরূপ রূপের বর্ণনা প্রকাশ পেয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আমি বাংলায় গান গাই
আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন
এই বাংলায় খুঁজে পাই।
বাংলা আমার জীবনানন্দ
বাংলা প্রাণের সুর।
আমি একবার দেখি, বারবার দেখি
দেখি বাংলার মুখ।
ক. ধানসিঁড়ি নদীর তীরে কে ফিরে আসবেন?
খ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় বর্ণিত সন্ধ্যার চিত্রটি কেমন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার ভাবগত সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবের ধারক মন্তব্যটি বিচার করো”।
ক. ধানসিঁড়ি নদীর তীরে কবি জীবনানন্দ দাশ ফিরে আসবেন।
খ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে সন্ধ্যার চিত্র।
➠ কবি বাংলার প্রকৃতির সন্ধ্যার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে ফুটে উঠেছে বাতাসে সুদর্শন উড়ে যাওয়ার এক অপূর্ব দৃশ্য। শিমুলের ডালে লক্ষ্মীপেঁচার ডাক আর রাঙা মেঘের ভেতর দিয়ে ধবল বকের নীড়ে ফেরার চিত্রও দেখা যায় এ কবিতায়। কিশোরদের ডিঙি নৌকায় ছেঁড়া পাল তুলে নদী পারাপারের বর্ণনা সন্ধ্যার দৃশ্যকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।

গ. উদ্দীপকের কবি বাংলার সন্তান হয়ে বাংলার প্রতি আকুলতা প্রকাশ করেছেন, যা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার ভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় বাংলার রূপ সৌন্দর্যের প্রতি কবির প্রবল আবেগ প্রকাশ পেয়েছে। এই জীবনে কবি বাংলার সৌন্দর্যে তৃপ্ত নন। তাই পরবর্তী জীবনেও কবি বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান। পান করতে চান বাংলার রূপ সুধা।
➠ উদ্দীপকের কবিও বাংলার গর্বিত সন্তান। তিনি বাংলা ভাষায় বাংলাদেশের গান করেন। জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি নিজেকে বাংলার বুকে খুঁজে পান, বাংলার অস্তিত্বে আপন অস্তিত্ব অনুভব করেন। কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার রূপের প্রশংসা করেছেন। উদ্দীপকের কবির কাছেও সমগ্র বাংলাদেশটাই একটা মূর্ত জীবনানন্দ। এসব কারণে কবি বিস্মিত। বারবার তিনি মুগ্ধ হয়ে বাংলার মুখ দেখেন। তাই বলা যায়, প্রকৃতিপ্রেমের দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে কবিতার ভাবগত সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবের ধারক মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে নিজের আত্মাকে একসূত্রে মেলানোর দুর্বার ইচ্ছাই ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাব। আজন্ম বাংলার রূপ দেখেও বাংলার প্রকৃতির প্রতি কবির মোহ কাটে না, এক জীবন নিয়েও তিনি তৃপ্ত নন। মৃত্যুর পর আবার কবি বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান।
➠ উদ্দীপকের কবি বাংলায় জন্মে, বাংলা ভাষায় গান করে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পেরে গর্বিত। বাংলার চিরচেনা প্রকৃতিতে কবি আজন্ম নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। জীবনানন্দ দাশ রূপসী বাংলার কবি, আর উদ্দীপকের কবির চোখে সমগ্র বাংলার প্রকৃতিটাই জীবনানন্দ দাশের প্রতিরূপ। সবুজ প্রকৃতির বুকে কবি গানের সুর খুঁজে পান। তারপরও কবি অভিভূত। বারবার তিনি প্রাণ ভরে বাংলার রূপ দেখেন। অর্থাৎ উদ্দীপকে বাংলার প্রকৃতির মহিমার মধ্যেই কবি নিজেকে খুঁজে পান।
➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, প্রশ্নোল্লিখিত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
হাজার বছরের ধুলোমাখা পথ
নবান্নের ধান ছড়ানো সোনালী প্রভাত
ডাহুকের সুরেলা বিকেল
এসব আমার সত্তায় মাখামাখি।
পৌষের বেলা শেষে দূরের আলপথ
যেখানের ঘাসে গড়াগড়ি খায় সন্ধ্যা
কাকতাড়ুয়ার মাথায় সুর তোলে ফিঙ্গে মেয়ে
এসব আমার দু’চোখে জুড়ে।
বাংলার পথে ঘাটে মাঠে
আমি হাজার বছর থাকবো
বাতাসের নিঃশ্বাস হয়ে।
ক. কিশোরীর ঘুঙুর কোথায় রবে?
খ. ‘সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে’- চরণটি ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি মূলত কবির বাংলার রূপ সৌন্দর্যের প্রতি অসীম আবেগের বহিঃপ্রকাশ” মন্তব্যটি বিচার কর।
ক. কিশোরীর ঘুঙুর রবে লাল পায়।
খ. ‘সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে’ চরণটি দ্বারা বুঝিয়েছেন কবি মৃত্যুর পরে হাঁস হয়ে সারাদিন শ্যামল কলমির বিলে ভেসে বেড়াবেন।
➠ বাংলার সবুজ প্রকৃতিকে ভালোবাসতে পেরে কবি বাংলার জন্য হৃদয়ে প্রবল টান অনুভব করেন। এ কারণেই কবি মরেও আবার ফিরে আসতে চান বাংলার প্রকৃতির বুকে। পরবর্তী জনমে তিনি যদি হাঁস হন, তবে কলমির গন্ধভরা বিলে সারাদিন ভেসে থাকবেন। দুচোখ ভরে দেখবেন সবুজের সৌন্দর্য।

গ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি মৃত্যুর পর আবার বিভিন্ন বেশে ফিরে এসে বাংলার রূপ দেখতে চান, যা উদ্দীপকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবিও বাংলার প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ। মানুষ হয়ে তিনি বাংলার অপরূপ রূপ দেখেছেন। কিন্তু সীমিত এ জীবন কবির মনের সৌন্দর্য তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি। তাই মৃত্যুর পর কবি আবারো বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান অন্য কোনো সত্তায়।
➠ উদ্দীপকের কবিও বাংলার অপরূপ রূপে সিক্ত। বাংলাকে ভালোবাসেন হৃদয়ের সমস্ত আবেগ দিয়ে, বাংলা থেকে নিজের সত্তাকে তিনি কখনই বিলুপ্ত হতে দেবেন না, কারণ তার সত্তায় মিশে আছে হাজার বছরের ধুলোমাখা পথ। ডাহুকের সুরেলা বিকেল কবির হৃদয়ের আবেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। নবান্নের ধান ছড়ানো সোনালি প্রভাতে কবির মন উদাস হয়ে যায়। কবির দুচোখে মিশে গিয়েছে পৌষের সন্ধ্যা। এসব কারণে কবি বাংলার পথেঘাটে থাকবেন বাতাসের সঙ্গে মিশে। তাই বলা যায় উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি মূলত কবির বাংলার রূপ-সৌন্দর্যের প্রতি অসীম আবেগের বহিঃপ্রকাশ” এ মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ বাংলার প্রকৃতির প্রেমে মত্ত ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি এই বাংলায় পুনবার ফিরে আসতে অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন; কারণ এক জীবনে বাংলার প্রকৃতির যতটুকু সৌন্দর্য তিনি উপভোগ করেছেন, ততটুকুতে তার মন তৃপ্ত নয়। পুনর্জন্মে কবি সে বাসনা পূর্ণ করতে চান। তাই আবার তাকে বাংলায় দেখা যাবে অন্য কোনো আকৃতিতে অন্য কোনো সত্তায়।
➠ উদ্দীপকের কবি বাংলার সন্তান, বাংলার প্রকৃতিতে তার সত্তা মিশে গিয়েছে। হাজার বছরের ধুলোমাখা পথ এবং নবান্নের ধান ছড়ানো সোনালি প্রভাত কবির হৃদয়ে মিশে গিয়েছে। শেষ বিকেলের ডাহুকের ডাক কবিকে করেছে আরও উদাস। পৌষের শিশিরভেজা সন্ধ্যা কবির দু’চোখ আনন্দে ভরিয়ে দেয়। কাকতাড়ুয়ার মাথায় ফিঙে পাখির বসা দেখে কবির হৃদয় রোমাঞ্চিত হয়। এসব কারণে কবি তার সত্তাকে বাংলার প্রকৃতি থেকে বিচ্যুত করতে চান না, হাজার বছর ধরে তিনি বাংলার বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকবেন।
➠ উল্লিখিত আলোচনার শেষে বলা যায়, উভয় প্রকৃতি মুগ্ধ কবিই মৃত্যুর পরও বাংলার প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতে চেয়েছেন এবং পঙক্তি রচনার মধ্য দিয়ে নিজেদের মুগ্ধতাকে সকলের কাছে প্রকাশ করেছেন, তাই বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জন্মগতভাবে কৌশিক ফ্রান্সের নাগরিক হলেও ওর বাবা-মা দুজনই বাংলাদেশি। কৌশিকের বয়স এখন একুশ বছর। কখনো সে বাংলাদেশে আসেনি। ফলে বাংলার প্রকৃতি সম্পর্কে তার বিশেষ ধারণা নেই। ফ্রান্সের পরিবেশগত অবস্থা বেশ পরিপাটি। কৌশিকের কাছে ফ্রান্সের পরিবেশ খারাপ লাগে না। কিন্তু সর্বদাই সে কেমন শূন্যতা বোধ করত, বাংলাদেশে আসার পর বাংলার প্রকৃতি সেটা পূরণ করে দিয়েছে তার অপার সবুজ দিয়ে। কৌশিক সিদ্ধান্ত নিল- সে আর ফ্রান্সে ফিরে যাবে না।
ক. বাংলা কীসের ঢেউয়ে ভেজা?
খ. ‘আবার আসিব আমি বাংলার নদী-মাঠ-খেত ভালোবেসে’- চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের কৌশিকের চরিত্রের সঙ্গে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকের কৌশিক ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি বাংলার প্রকৃতি দ্বারা সমানভাবে প্রভাবিত হয়েছে মন্তব্যটি বিচার করো।
ক. বাংলা জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা।
খ. ‘আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে’- আলোচ্য চরণটি দ্বারা কবির বাংলার প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।
➠ বাংলার প্রকৃতি কবির অন্তরে মিশে গেছে। এক জীবনে কবি বাংলার প্রকৃতির যতটুকু রূপ দেখেছেন ততটুকুতে কবির মন তৃপ্ত নয়। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আকণ্ঠ পান করতেই কবি আবার ফিরে আসবেন বাংলার প্রকৃতির মাঝে। আলোচ্য চরণটি দ্বারা একথাই বোঝানো হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের কৌশিকের প্রকৃতিপ্রেমের সঙ্গে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
➠ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি বাংলার প্রকৃতির প্রতি অসীম অনুরাগী। বাংলার প্রকৃতিকে কবি ভালোবেসেছেন হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে। তাই এক জন্মে কবির মন তৃপ্ত নয়। মৃত্যুর পর কবি আবারো বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান।
➠ উদ্দীপকের কৌশিকের জন্ম ফ্রান্সে কিন্তু বাবা-মা বাংলাদেশি। জন্মের একুশ বছর পর কৌশিক বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে। বাংলার পরিবেশ সম্পর্কে কৌশিকের কোনো ধারণা ছিল না। ফ্রান্সে কৌশিক যে পরিবেশ দেখে এসেছে, তা থেকে বাংলার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। চারদিকে সবুজ গাছগাছালি। নদী-পাহাড় আর সবুজের এমন অপরূপ সমন্বয় কৌশিক কোথাও দেখেনি। ফ্রান্সে সে এক ধরনের অজানা শূন্যতা বোধ করত, কিন্তু বাংলার অপরূপ প্রকৃতি তার মন থেকে সকল শূন্যতা ঘুচিয়ে দিয়েছে। তাই কৌশিক স্বদেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হতে চাইল। তাই বলা যায় যে, প্রকৃতিপ্রেমের দিক থেকে উদ্দীপকের কৌশিকের সঙ্গে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের কৌশিক ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি বাংলার প্রকৃতি দ্বারা সমানভাবে প্রভাবিত হয়েছেন এ মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ উদ্দীপকের কৌশিক জন্মগতভাবে ফ্রান্সের নাগরিক। কিন্তু তার বাবা-মা বাংলাদেশি। কিন্তু কৌশিক কোনোদিন বাংলাদেশে আসেনি। ফ্রান্সের পরিবেশ তার কাছে বিশেষ খারাপ লাগত না, তবে কেমন যেন অজানা শূন্যতা কৌশিক হৃদয়ে বোধ করত। একুশ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো কৌশিক বাংলাদেশে এলো, এসেই সে পরিবেশের শূন্যতার মূল কারণ বুঝতে পারল। বাংলার সবুজ প্রকৃতি আর সুবিন্যস্ত পরিবেশ কৌশিকের মনে প্রকৃতিগত পূর্ণতা দান করল।
➠ চোখ জুড়ানো বাংলার রূপে মত্ত হয়ে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবিও পর জন্মে আবার বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন, প্রকৃতির রহস্যঘেরা সৌন্দর্য কবি এক জীবনে যতটুকু দেখেছেন তাতে তার হৃদয় তৃপ্ত নয়। হৃদয়ের সৌন্দর্য পিপাসা মেটাতে কবি আবার বাংলায় আসবেন। যে কোনো আকৃতিতেই কবির সত্তা ঘুরে বেড়াবে বাংলার প্রকৃতির বুকে।
➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায় যে, উদ্দীপকের কৌশিক ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি বাংলার রূপ সৌন্দর্য দ্বারা সমানভাবে প্রভাবিত।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গাঁয়ের ধারে বিলের পারে পদ্মভরা জলে
শাপলা শালুক কলমি কমল সবুজ থরে ফলে।
সেথায় চরে হাজার পাখি নিতুই দিবস ভর
সাঁঝের মায়ায় কল্পপুরীর নামে তেপান্তর।
ক. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া?
খ. কার্তিকের নবান্নের দেশ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
গ. ‘পাখি প্রকৃতির এক বিশেষ অনুষঙ্গ’ উদ্দীপক ও পঠিত কবিতার আলোকে আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি যেন একই সুরে বাঁধা। বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা;
তাহার মাঝে আছে দেশ এক-সকল দেশের সেরা;
ওসে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।
ক. ধানসিঁড়ি নদীটি কোন জেলায় অবস্থিত?
খ. আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে’ ব্যাখ্যা করো?
গ. উদ্দীপকে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় প্রকাশিত যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা কর।
ঘ. “ভাবে এক হলেও উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সমগ্র বিষয়বস্তু থেকে বেশ দূরের।”- বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১
i. আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেস
জলাঙ্গীর টেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়।
ii. অমর করিয়া বর, দেহ দাসে, সুবরদে
ফুটি যেন স্মৃতি জলে
মানসে, মা যথা ফলে
ক. জীবনানন্দ দাশ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. কবি কীভাবে বাংলায় ফিরে আসতে চান?
গ. উদ্দীপকের দুটি স্তবকের বৈসাদৃশ্য চিহ্নিত করো।
ঘ. “বৈসাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের দুটি স্তবকের মূলভাব একই ধারায় উৎসারিত।”- বিশ্লেষণ করো।
-----------

তথ্যসূত্র:
১. সাহিত্য পাঠ: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post