‘তৈল চিত্রের ভূত’ গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
তৈলচিত্রের ভূত |
তৈলচিত্রের ভূত
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
একদিন সকাল বেলা পরাশর ডাক্তার নিজের প্রকাণ্ড লাইব্রেরিতে বসে চিঠি লিখছিলেন।
চোরের মতো নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে নগেন ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে তার টেবিল ঘেঁষে
দাঁড়াল। পরাশর ডাক্তার মুখ না তুলেই বললেন, বোসো, নগেন। চিঠিখানা শেষ করে খামে
ভরে ঠিকানা লিখে চাকরকে ডেকে সেটি ডাকে পাঠিয়ে দিয়ে তবে আবার নগেনের দিকে
তাকালেন।
‘বসতে বললাম যে? এ রকম চেহারা হয়েছে কেন? অসুখ নাকি?’
নগেন ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। চোরকে যেন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে সে চুরি করে
কি না, এইরকম অতিমাত্রায় বিব্রত হয়ে সে বলল, ‘না না, অসুখ নয়, অসুখ আবার
কিসের।’
গুরুতর কিছু ঘটেছে সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হয়ে পরাশর ডাক্তার দুহাতের আঙুলের
ডগাগুলি একত্র করে নগেনকে দেখতে লাগলেন। মোটাসোটা হাসিখুশি ছেলেটার তেল চকচকে
চামড়া পর্যন্ত যেন শুকিয়ে গেছে, মুখে হাসির চিহ্নটুকুও নেই। চাউনি একটু
উদভ্রান্ত। কথা বলার ভঙ্গি পর্যন্ত কেমন খাপছাড়া হয়ে গেছে।
নগেন তার মামাবাড়িতে থেকে কলেজে পড়ে। মাস দুই আগে নগেনের মামার শ্রাদ্ধের
নিমন্ত্রণ রাখতে গিয়ে পরাশর ডাক্তার নগেনকে দেখেছিলেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে
এমন কী ঘটেছে যাতে ছেলেটা এরকম বদলে যেতে পারে? ছেলেবেলা থেকে মামাবাড়িতেই সে
মানুষ হয়েছে বটে কিন্তু মামার শোকে এরকম কাহিল হয়ে পড়ার মতো আকর্ষণ তো মামার
জন্য তার কোনো দিন ছিল না। বড়লোক কৃপণ মামার যে ধরনের আদর বেচারি চিরকাল পেয়ে
এসেছে তাতে মামার পরলোক যাত্রায় তার খুব বেশি দুঃখ হবার কথা নয়। বাইরে মামাকে
খুব শ্রদ্ধাভক্তি দেখালেও মনে মনে নগেন যে তাকে প্রায়ই যমের বাড়ি পাঠাত তাও
পরাশর ডাক্তার ভালো করেই জানতেন। পড়ার খরচের জন্য দুশ্চিন্তা হওয়ার কারণও
নগেনের নেই, কারণ শেষ সময়ে কী ভেবে তার মামা তার নামে মোটা টাকা উইল করে রেখে
গেছেন।
নগেন হঠাৎ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, ‘ডাক্তার কাকা, সত্যি করে একটা কথা বলবেন?
আমি কি পাগল হয়ে গেছি?’ পরাশর ডাক্তার একটু হেসে বললেন, ‘তোমার মাথা হয়ে গেছ।
পাগল হওয়া কি মুখের কথা রে বাবা! পাগল যে হয় অত সহজে সে টের পায় না সে পাগল
হয়ে গেছে।’
‘তবে’- দ্বিধা ভরে খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ নগেন যেন মরিয়া হয়ে জিজ্ঞাসা
করে বসল, ‘আচ্ছা ডাক্তার কাকা, প্রেতাত্মা আছে?’
‘প্রেতাত্মা মানে তো ভূত? নেই।’
‘নেই? তবে-’
অনেকক্ষণ ইতস্তত করে, অনেক ভূমিকা করে, অনেকবার শিউরে উঠে নগেন ধীরে ধীরে আসল
ব্যাপারটা খুলে বলল। চমকপ্রদ অবিশ্বাস্য কাহিনি। বিশ্বাস করা শক্ত হলেও পরাশর
ডাক্তার বিশ্বাস করলেন। মিথ্যা গল্প বানিয়ে তাকে শোনাবার ছেলে যে নগেন নয়,
তিনি তা জানতেন।
মামা তাকেও প্রায় নিজের ছেলেদের সমান টাকাকড়ি দিয়ে গেছেন জেনে প্রথমটা নগেন
একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। মামার এরকম উদারতা সে কোনোদিন কল্পনাও করতে
পারে নি। বাইরে যেমন ব্যবহারই করে থাকুন, মামা তাকে নিজের ছেলেদের মতোই
ভালোবাসতেন জেনে পরলোকগত মামার জন্য আন্তরিক শ্রদ্ধাভক্তিতে তার মন ভরে গেল।
আর সেই সঙ্গে জাগল এরকম দেবতার মতো মানুষকে সারা জীবন ভক্তি-ভালোবাসার ভান
করে ঠকিয়েছে ভেবে দারুণ লজ্জা আর অনুতাপ। শ্রাদ্ধের দিন অনেক রাত্রে বিছানায়
শুতে যাওয়ার পর অনুতাপটা যেন বেড়ে গেল-শুয়ে শুয়ে সে ছটফট করতে লাগল। হঠাৎ এক
সময় তার মনে হলো, সারা জীবন তো ভক্তি-শ্রদ্ধার ভান করে মামাকে সে ঠকিয়েছে,
এখন যদি সত্য সত্যই ভক্তি-শ্রদ্ধা জেগে থাকে লাইব্রেরি ঘরে মামার তৈলচিত্রের
পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে এলে হয়তো আত্মগ্লানি একটু কমবে, মনটা শান্ত
হবে।
রাত্রি তখন প্রায় তিনটে বেজে গেছে, সকলে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে, বাড়ি
অন্ধকার। এত রাত্রে ঘুমানোর বদলে মামার তৈলচিত্রের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম
করার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠে যাওয়াটা যে রীতিমতো খাপছাড়া ব্যাপার হবে সে জ্ঞান
নগেনের ছিল। তাই কাজটা সকালের জন্য স্থগিত রেখে সে ঘুমোবার চেষ্টা করল।
কিন্তু তখন তার মাথা গরম হয়ে গেছে। মন একটু শান্ত না হলে যে ঘুম আসবার কোনো
সম্ভাবনা নেই, কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করার পর সেটা ভালো করেই টের পেয়ে শেষকালে
মরিয়া হয়ে সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল।
লাইব্রেরিটি নগেনের দাদামশায়ের আমলের। লাইব্রেরি সম্পর্কে নগেনের মামার বিশেষ
কোনো মাথাব্যথা ছিল না। তার আমলে গত ত্রিশ বছরের মধ্যে লাইব্রেরির পিছনে একটি
পয়সাও খরচ করা হয়েছে কি না সন্দেহ। আলমারি কয়েকটি অল্প দামি আর অনেক দিনের
পুরোনো, ভেতরগুলি বেশির ভাগ অদরকারি বাজে বইয়ে ঠাসা এবং ওপরে বহুকালের ছেঁড়া
মাসিকপত্র আর নানা রকম ভাঙাচোরা ঘরোয়া জিনিস গাদা করা। টেবিলটি এবং চেয়ার
কয়েকটি খুব সম্ভব অন্য ঘর থেকে পেনশন পেয়ে এ ঘরে স্থান পেয়েছে। দেয়ালে তিনটি
বড় বড় তৈলচিত্র, সস্তা ফ্রেমে বাঁধানো কয়েকটা সাধারণ রঙিন ছবি ও ফটো টাঙানো।
তা ছাড়া কয়েকটা পুরানো ক্যালেন্ডারের ছবিও আছে-কোনোটাতে ডিসেম্বর, কোনোটাতে
চৈত্রমাসের বারো তারিখ লেখা কাগজের ফলক এখনো ঝুলছে।
তৈলচিত্রের একটি নগেনের দাদামশায়ের, একটি দিদিমার এবং অপরটি তার মামার।
দাদামশায় আর দিদিমার তৈলচিত্র দুটি একদিকের দেয়ালে পাশাপাশি টাঙানো আছে,
মামার তৈলচিত্রটি স্থান জুড়ে আছে পাশের দেয়ালের মাঝামাঝি।
কারো ঘুম ভেঙে যাবে ভয়ে নগেন আলো জ্বালে নি। কিন্তু তাতে তার কোনো অসুবিধা
ছিল না, ছেলেবেলা থেকে এ বাড়ির আনাচ-কানাচের সঙ্গে তার পরিচয়। লাইব্রেরিতে
ঢুকে অন্ধকারেই সে মামার তৈলচিত্রের কাছে এগিয়ে গেল। অস্ফুট স্বরে ‘আমায়
ক্ষমা করো মামা’ বলে যেই সে তৈলচিত্রের পায়ের কাছে আন্দাজে স্পর্শ
করেছে-বর্ণনার এখানে পৌঁছে নগেন শিউরে চুপ করে গেল। তার মুখ আরও বেশি
ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, দুচোখ বিস্ফারিত।
‘তারপর?’
নগেন ঢোক গিলে জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে বলল, ‘যেই ছবি ছুঁয়েছি ডাক্তার কাকা, কে
যেন আমাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিল। সমস্ত শরীর ঝনঝন করে উঠল, তারপর
আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান হতে দেখি, সকাল হয়ে গেছে, আমি মামার ছবির নিচে মেঝেতে
পড়ে আছি।’
পরাশর ডাক্তার গম্ভীর মুখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার আগে কোনো দিন ফিট হয়েছিল
নগেন?’
নগেন মাথা নেড়ে বলল ‘ফিট? না, কস্মিনকালেও আমার ফিট হয় নি। আপনি ভুল করেছেন
ডাক্তার কাকা, এ ফিট নয়; মরলে তো মানুষ সব জানতে পারে, মামাও জানতে পেরেছেন
টাকার লোভে আমি মিথ্যা ভক্তি দেখাতাম। তাই ছবি ছোঁয়ামাত্র রাগে ঘেন্নায় আমাকে
ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সবটা শুনুন আগে, তা হলে বুঝতে
পারবেন।’
সমস্ত সকাল নগেন মড়ার মতো বিছানায় পড়ে রইল। এই চিন্তাটাই কেবল তার মনে ঘুরপাক
খেতে লাগল, ভক্তি ভালোবাসার ছলনায় টাকা আদায় করে নিযেছে বলে পরলোকে গিয়েও তার
ওপর মামার এমন জোরালো বিতৃষ্ণা জেগেছে যে তার তৈলচিত্রটি পর্যন্ত তিনি তাকে
স্পর্শ করতে দিতে রাজি নন। যাই হোক, নগেন একালের ছেলে, প্রথম ধাক্কাটা কেটে
যাবার পর তার মনে নানারকম দ্বিধা-সন্দেহ জাগতে লাগল। কে জানে রাত্রে যা ঘটেছে
তা নিছক স্বপ্ন কিনা। ধৈর্য ধরতে না পেরে দুপুরবেলা সে আবার লাইব্রেরিতে গিয়ে
মামার তৈলচিত্র স্পর্শ করে প্রণাম করল। একবার যদি মামা রাগ দেখিয়ে থাকেন,
আবার দেখাবেন না কেন?
এবার কিছুই ঘটল না। শরীরটা অবশ্য খুব খারাপ হয়ে আছে, মেঝেতে ধাক্কা যেখানে
লেগেছিল মাথার সেখানটা ফুলে টনটন করছে এবং সকালে লাইব্রেরিতে মামার
তৈলচিত্রের নিচে মেঝেতেই তার জ্ঞান হয়েছিল। কিন্তু এতে বড়জোর প্রমাণ হয়,
রাত্রে ঘুমের মধ্যেই হোক আর জাগ্রত অবস্থাতেই হোক লাইব্রেরিতে গিয়ে সে একটা
আছাড় খেয়েছিল। নিজের তৈলচিত্রে ভর করে মামাই যে তাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন তার কী
প্রমাণ আছে?
নগেন যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাঁচল। কিন্তু বেশিক্ষণ তার মনের শাস্তি টিকল
না। রাত্রে আলো নিভিয়ে বিছানায় শুয়েই হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল, তার তো ভুল
হয়েছে। দিনের বেলা তাকে ধাক্কা দেয়ার ক্ষমতা তো তার মামার এখন নেই, রাত্রি
ছাড়া তার মামা তো এখন কিছুই করতে পারেন না! কী সর্বনাশ। তবে তো রাত্রে
আরেকবার মামার তৈলচিত্র না ছুঁয়ে কাল রাত্রের ব্যাপারকে স্বপ্ন বলা যায়
না।
এত রাত্রে আবার লাইব্রেরিতে যাওয়ার কথা ভেবেই নগেনের হৃৎকম্প হতে লাগল।
কিন্তু এমন একটা সন্দেহ না মিটিয়েই বা মানুষের চলে কী করে? খানিকটা পরে নগেন
আবার লাইব্রেরিতে হাজির। ভয়ে বুক কাঁপছে, ছুটে পালাতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু কী
এক অদম্য আকর্ষণ তাকে টেনে নিয়ে চলেছে মামার তৈলচিত্রের দিকে। ঘরে ঢুকেই সে
সুইচ টিপে আলো জ্বেলে দিল। মটকার পাঞ্জাবির ওপর দামি শাল গায়ে মামা দেয়ালে
দাঁড়িয়ে আছেন। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল, মুখে একজোড়া মোটা গোঁফ, চোখে ভর্ৎসনার
দৃষ্টি। নগেন এগিয়ে গিয়ে মামার পায়ের কাছে ছবি স্পর্শ করল। কেউ তাকে ঠেলে
সরিয়ে দিল না, কিন্তু সমস্ত শরীর হঠাৎ যেন কেমন অস্থির-অস্থির করতে লাগল।
তৈলচিত্র থেকে কী যেন তার মধ্যে প্রবেশ করে ভেতর থেকে তাকে কাঁপিয়ে
তুলছে।
তবু নগেন যেন বাঁচল। ভয়ের জন্য শরীর এরকম অস্থির অস্থির করতে পারে। সেটা
সামান্য ব্যাপার।
ফিরে যাওয়ার সময় আলোটা নিভিয়েই নগেন আবার থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। তার আরেকটা কথা
মনে এসেছে। কাল ঘর অন্ধকার ছিল, আজ আলোটা থাকার জন্য যদি মামা কিছু না করে
থাকেন? নগেনের ভয় অনেকটা কমে গিয়েছিল, অনেকটা নিশ্চিন্ত মনেই সে অন্ধকারে
তৈলচিত্রের কাছে ফিরে গেল। সে জানে অন্ধকারে তৈলচিত্র স্পর্শ করলেও কিছু হবে
না। ঘরে একটা আলো জ্বলছে কি জ্বলছে না তাতে বিশেষ কী আসে যায়? ইতস্তত না করেই
সে সোজা তৈলচিত্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। পরক্ষণে-
‘ঠিক প্রথম রাত্রের মতো জোরে ধাক্কা দিয়ে মামা আমায় ফেলে দিলেন ডাক্তার
কাকা।’
‘অজ্ঞান হয়ে গেলে?’
‘না, একেবারে অজ্ঞান হয়ে যাই নি। অবশ্য আচ্ছন্নের মতো অনেকক্ষণ মেঝেতে
পড়েছিলাম, কিন্তু জ্ঞান ছিল। তারপর থেকে আমি ঠিক পাগলের মতো হয়ে গেছি ডাক্তার
কাকা। দিনরাত কেবল এই কথাই ভাবি। রোজ কতবার ঠিক করি বাড়ি ছেড়ে কোথাও পালিয়ে
যাব, কিন্তু যেতে পারি না, কীসে যেন আমায় জোর করে আটকে রেখেছে।’
পরাশর ডাক্তার খানিক্ষণ ভেবে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তারপর আর কোনোদিন ছবিটা
ছুঁয়েছ?’
‘কতবার। দিনে ছুঁয়েছি, রাত্রে ছুঁয়েছি, আলো জ্বেলে ছুঁয়েছি, অন্ধকারে
ছুঁয়েছি। ঠিক ওইরকম ব্যাপার ঘটে। দিনে বা রাত্রে আলো জ্বেলে ছুঁলে কিছু হয়
না, অন্ধকারে ছোঁয়ামাত্র মামা আমাকে ঠেলে দেন। সমস্ত শরীর যেন ঝনঝনিয়ে
ঝাঁকানি দিয়ে ওঠে। কোনোদিন অজ্ঞান হয়ে যাই, কোনোদিন জ্ঞান থাকে।
বলতে বলতে নগেন যেন একেবারে ভেঙে পড়ল, 'আমি কী করব ডাক্তার কাকা? এমন করে
কদিন চলবে?’
পরাশর ডাক্তার বললেন, ‘তার দরকার হবে না। আমি সব ঠিক করে দেব। আজ সকলে ঘুমিয়ে
পড়লে রাত্রি ঠিক বারোটার সময় তুমি বাইরের ঘরে আমার জন্য অপেক্ষা কোরো, আমি
যাব।’
একটু থেমে আবার বললেন, ‘ভূত বলে কিছু নেই, নগেন।’
তবু মাঝরাত্রে অন্ধকার লাইব্রেরিতে পরাশর ডাক্তার মৃদু একটু অস্বস্তি বোধ
করতে লাগলেন। এ ঘরে বাড়ির লোক খুব কম আসে। ঘরের বাতাসে পুরোনো কাগজের একটা
ভাপসা গন্ধ পাওয়া যায়। নগেন শক্ত করে তার একটা হাত চেপে ধরে কাঁপছে। কীসের
ভয়? ভূতের? তৈলচিত্রের ভূতের? ভূতে যে একেবারে বিশ্বাস করে না, যার বদ্ধমূল
ধারণা এই যে যত সব অদ্ভুত অথচ সত্য ভূতের গল্প শোনা যায় তার প্রত্যেকটির
সাধারণ ও স্বাভাবিক কোনো ব্যাখ্যা আছেই আছে, ছবির ভূতের অসম্ভব আর অবিশ্বাস্য
ভূতের ঘরে পা দিয়ে তার কখনো কি ভয় হতে পারে? তবু অস্বস্তি যে বোধ হচ্ছে সেটা
অস্বীকার করার উপায় নেই। নগেন যে কাহিনি শুনিয়েছে, সারা দিন ভেবেও পরাশর
ডাক্তার তার কোনো সঙ্গত ব্যাখ্যা কল্পনা করতে পারেন নি। একদিন নয়, একবার নয়,
ব্যাপারটা ঘটেছে অনেকবার। দিনে তৈলচিত্র নিস্তেজ হয়ে থাকে, রাত্রে তার তেজ
বাড়ে। কেবল তাই নয়, অন্ধকার না হলে সে তেজ সম্পূর্ণ প্রকাশ পায় না। আরও একটা
কথা, রাত্রি বাড়ার সঙ্গে তৈলচিত্র যেন বেশি সজীব হয়ে উঠতে থাকে। প্রথম রাত্রে
নগেন অন্ধকারে স্পর্শ করলে ছবি নগেনের হাতটা শুধু ছিটকিয়ে সরিয়ে দিয়েছে,
মাঝরাত্রে স্পর্শ করলে এত জোরে তাকে ধাক্কা দিয়েছে যে মেঝেতে আছড়ে পড়ে নগেনের
জ্ঞান লোপ পেয়ে গেছে।
অশরীরী শক্তি কল্পনা করা ছাড়া এ সমস্তের আর কী মানে হয়?
হয়-নিশ্চয় হয়; মনে মনে নিজেকে ধমক দিয়ে পরাশর ডাক্তার নিজেকে এই কথা শুনিয়ে
দিলেন। তারপর চোখ তুলে তাকালেন দেয়ালের যেখানে নগেনের মামার তৈলচিত্রটি ছিল।
এ ঘরে তিনি আগেও কয়েকবার এসেছেন, তৈলচিত্রগুলির অবস্থান তার অজানা ছিল না। যা
চোখে পড়ল তাতে পরাশর ডাক্তারের বুকটাও ধড়াস করে উঠল। তৈলচিত্রের ওপরের দিকে
দুটি উজ্জ্বল চোখ তার দিকে জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটির মধ্যে ফাঁক
প্রায় দেড় হাত।
ঠিক এই সময় নগেন ফিসফিস করে বলল, ‘আলোটা জ্বালব ডাক্তার কাকা?’
পরাশর ডাক্তার তার গলার আওয়াজ শুনেই চমকে উঠলেন-‘না।’
রাস্তা অথবা পাশের কোনো বাড়ি থেকে সরু একটা আলোর রেখা ঘরের দেয়ালে এসে পড়েছে।
তাতে অন্ধকার কমে নি, মনে হচ্ছে যেন সেই আলোটুকুতে ঘরের অন্ধকারটাই স্পষ্ট
দেখতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র।
নগেন আবার ফিসফিস করে বলল, ‘একটা কথা আপনাকে বলতে ভুলে গেছি ডাক্তার কাকা।
দাদামশায় আর দিদিমার ছবি তাঁরা মরবার পর করা হয়েছিল, কিন্তু মামার ছবিটা
মরবার আগে মামা নিজে শখ করে আঁকিয়েছিলেন। হয়তো সেই জন্যেই-’
নগেনের শিহরণ স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। ‘ভয় পেয়ে গেছেন?’
দাঁতে দাঁত লাগিয়ে পরাশর ডাক্তার তৈলচিত্রের দিকে এগিয়ে গেলেন। কাছাকাছি যেতে
জ্বলজ্বলে চোখ দুটির জ্যোতি যেন অনেক কমে গেল। হাত বাড়িয়ে দিতে প্রথমে তার
হাত পড়ল দেয়ালে। যত সাহস করেই এগিয়ে এসে থাকুন, প্রথমেই একেবারে নগেনের মামার
গায়ে হাত দিতে তার কেমন দ্বিধা বোধ হচ্ছিল। পাশের দিকে হাত সরিয়ে তৈলচিত্রের
ফ্রেম স্পর্শ করা মাত্র বৈদ্যুতিক আঘাতে যেন তার শরীরটা ঝনঝন করে উঠল। অস্ফুট
গোঙানির আওয়াজ করে পেছন দিকে দু পা ছিটকে দিয়ে তিনি মেঝেতে বসে পড়লেন।
পরক্ষণে ভয়ে অর্ধমৃত নগেন আলোর সুইচ টিপে দিল।
মিনিট পাঁচেক পরাশর ডাক্তার চোখ বুজে বসে রইলেন, তারপর চোখ মেলে মিনিট পাঁচেক
একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন নগেনের মামার রূপার ফ্রেমে বাঁধানো তৈলচিত্রটির
দিকে।
তারপর তীব্র চাপা গলায় তিনি বললেন, ‘তুমি একটি আস্ত গর্দভ নগেন।’
রাগ একটু কমলে পরাশর ডাক্তার বলতে লাগলেন, ‘গাধাও তোমার চেয়ে বুদ্ধিমান। এত
কথা বলতে পারলে আমাকে আর এই কথাটা একবার বলতে পারলে না যে তোমার মামার ছবিটা
ইতিমধ্যে রূপার ফ্রেমে বাঁধানো হয়েছে আর ছবির সঙ্গে লাগিয়ে দুটো ইলেকট্রিক
বালু ফিট করা হয়েছে?’
‘আমি কি জানি! ছ মাস আগে যেমন দেখে গিয়েছিলাম, আমি ভেবেছিলাম ছবিটা এখানে
তেমনি অবস্থাতেই আছে।’
‘ইলেকট্রিক শক খেয়ে বুঝতে পারো না কীসে শক লাগল, তুমি কোনদেশি ছেলে? আমি তো
শক খাওয়া মাত্র টের পেয়ে গিয়েছিলাম তোমার মামার ছবিতে কোনো প্রেতাত্মা ভর
করেছেন।’
নগেন উদ্ভ্রান্তের মতো বলল, ‘রূপার ফ্রেমটা দাদামশায়ের ছবিতে ছিল, চুরি
যাবার ভয়ে মামা অনেক দিন আগে সিন্দুকে তুলে রেখেছিলেন। মামার শ্রাদ্ধের দিন
মামিমা ফ্রেমটা বার করে মামার ছবিটা বাঁধিয়েছিলেন। আলো দুটো লাগিয়েছে আমার
মামাতো ভাই পরেশ।
‘হ্যাঁ। সে এ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছে। তাই বলল, এই সামান্য কাজের
জন্য ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে পয়সা দেব কেন?’
পরাশর ডাক্তার একটু হেসে বললেন, ‘পরেশ তোমার মামার উপযুক্ত ছেলেই বটে। কিছু
পয়সা বাঁচানোর জন্য বাপের ছবিতে ভূত এনে ছেড়েছে। এ খবরটা যদি আগে দিতে
আমায়-’
নগেন সংশয়ভরে বলল, ‘কিন্তু ডাক্তার কাকা’-
পরাশর ডাক্তার রাগ করে বললেন, ‘কিন্তু কী? এখনো বুঝতে পারছ না। দিনের বেলা
মেন সুইচ অফ করা থাকে, তাই ছবি ছুঁলে কিছু হয় না, ছবি মানে ছবির রূপার
ফ্রেমটা। রূপার ফ্রেমটার নিচে কাঠফাট কিছু আছে, দেয়ালের সঙ্গে যোগ নেই, নইলে
তোমাদের ইলেকট্রিকের বিল এমন হুহু করে বেড়ে যেত যে আবার কোম্পানির লোককে এসে
লিকেজ খুঁজতে হতো। তুমিও আবার ভূতের আসল পরিচয়টা জানতে পারতে। সন্ধ্যার পর
বাড়ির সমস্ত আলো জ্বলে আর বিদ্যুৎ তামার তার দিয়ে যাতায়াত করতে বেশি ভালোবাসে
কিনা, তাই সে সময় ছবি ছুঁলে তোমার কিছু হয় না। এ ঘরের আলোটা জ্বাললেও তাই হয়।
মাঝরাত্রে বাড়ির সমস্ত আলো নিভে যায়, তখন ছবিটা ছুঁলে আর কোনো পথ খোলা নেই
দেখে বিদ্যুৎ অগত্যা তোমার মতো বোকা হাবার শরীরটা দিয়েই-’
পরাশর ডাক্তার চুপ করে গেলেন। তার হঠাৎ মনে পড়ে গেছে, সুযোগ পেলে তার শরীরটা
পথ হিসেবে ব্যবহার করতেও বিদ্যুৎ দ্বিধা করে না। তিনি হাঁফ ছাড়লেন। কপাল ভালো
তড়িতাহত হয়ে প্রাণে মরতে হয় নি।
উৎস নির্দেশ: |
---|
তৈলচিত্রের ভূত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি কিশোর-উপযোগী ছোটগল্প। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘মৌচাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এ গল্পটি। |
শব্দার্থ ও টীকা: |
---|
প্রকাণ্ড- অত্যন্ত বৃহৎ, অতিশয় বড়। বিব্রত- ব্যতিব্যস্ত, বিপন্ন, বিচলিত। উদ্ভ্রান্ত- বিহ্বল, দিশেহারা, হতজ্ঞান। খাপছাড়া- বেমানান, উদ্ভট, অসংলগ্ন, এলোমেলো। শ্রাদ্ধ- মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের হিন্দু আচার বা শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান। উইল- শেষ ইচ্ছেপত্র। মৃত্যুর পরে সম্পত্তি বণ্টন বিষয়ে মালিকের ইচ্ছানুসারে প্রস্তুত ব্যবস্থাপত্র বা দানপত্র, যা তার মৃত্যুর পরে বলবৎ হয়। প্রেতাত্মা- মৃতের আত্মা, ভূত। অনুতাপ- আফসোস, কৃতকর্ম বা আচরণের জন্য অনুশোচনা, পরিতাপ। তৈলচিত্র- তেলরঙে আঁকা ছবি। প্রণাম- হাত ও মাথা দ্বারা গুরুজনের চরণ স্পর্শ করে অভিবাদন। আত্মগ্লানি- নিজের ওপর ক্ষোভ ও ধিক্কার, অনুতাপ, অনুশোচনা। বিস্ফারিত- বিস্তারিত, প্রসারিত। কস্মিনকালে- কোনো কালে বা কোনো কালেই। ছলনা- কপটতা, শঠতা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, ধোঁকা। হৃৎকম্প- হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন, বুকের কাঁপুনি। মটকা- রেশমের মোটা কাপড়। ভর্ৎসনা- তিরস্কার, ধমক, নিন্দা। ইতস্তুত- দ্বিধা, সংকোচ, গড়িমসি। অশরীরী- দেহহীন, শরীরহীন, নিরাকার। |
পাঠের উদ্দেশ্য: |
---|
ভূতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যে কুসংস্কার বিরাজমান, তা ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অন্তঃসারশূন্য। বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে এই কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস সহজেই দূর করা সম্বব। গল্পটি পড়ে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ভয়মুক্ত, কুসংস্কারমুক্ত ও সচেতন হবে। |
পাঠ-পরিচিতি: |
---|
ভূতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরাজমান কুসংস্কার যে ভিত্তিহীন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এ গল্পে তা তুলে ধরেছেন। এ গল্পে তিনি দেখিয়েছেন বিজ্ঞানবুদ্ধির জয়। কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে মানুষ নানা অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষকে যদি বিজ্ঞানচেতনা দিয়ে ঘটনা-বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে ঐসব বিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতা ধরা পড়ে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এ গল্পে নগেন চরিত্রের মধ্যে ভূত-বিশ্বাসের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে পরাশর ডাক্তার বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলেছেন নগেনের বিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভিত্তিহীনতাকে। মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূতে পরিণত হয়-এরকম বিশ্বাস সমাজে প্রচলিত থাকায় নগেন বৈদ্যুতিক শককে ভূতের কাজ বলে সহজে বিশ্বাস করেছে। অন্যদিকে পরাশর ডাক্তার সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করেন বলে তার কাছে বৈদ্যুতিক শকের বিষয়টি সহজেই ধরা পড়েছে। |
লেখক-পরিচিতি: |
---|
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘মানিক’ তাঁর ডাকনাম। ১৯০৮ সালে সাঁওতাল পরগনার দুমকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯২৮ সালে তাঁর প্রথম গল্প ছাপা হয়। লেখালেখির কারণে বি. এসসি, পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন নি। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মানদীর মাঝি’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এছাড়া ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘অহিংসা’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। এছাড়া তিনি প্রচুর ছোটগল্পও রচনা করেছেন। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। তাঁর লেখার প্রবণতা ছিল মানুষের মন বিশ্লেষণ করা। ১৯৫৬ সালে তিনি কলকাতায় মারা যান। |
কর্ম-অনুশীলন: |
---|
ক. ৪০০ শব্দের মধ্যে মজা পাওয়ার মতো একটি ভূতের গল্প লেখো (একক কাজ)।
খ. আমাদের সমাজে ভূত ছাড়াও অন্য কী কী কুসংস্কার আছে-সেগুলোর তালিকা করে টীকা লেখো (একক কাজ)। (যাত্রার সময় হাঁচি, যাত্রার সময় পেছন থেকে ডাকা, এক শালিক দেখা, খালি কলস দেখা, কাক ডাকা ইত্যাদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন) |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: |
---|
১. নগেন কার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত? ক. মাসির খ. পিসির গ. মামার ঘ. দাদার ২. নগেনের সাথে পরাশর ডাক্তারের প্রথম দেখা হয় কখন? ক. ২ মাস আগে খ. ৩ মাস আগে গ. ৪ মাস আগে ঘ. ৫ মাস আগে ৩. মৃত মামার ছবি নগেনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল কেন? ক. জীবিত মামার প্রতি নগেনের ভক্তি ও শ্রদ্ধা ছিল না। খ. মামার মৃত্যুর আগেই ছবিটি আঁকা হয়েছিল। গ. ছবির রূপার ফ্রেমে বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিল। ঘ. নগেন ভূতকে খুব ভয় পেত। উদ্দীপকটি পড় এবং ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও: আদনান সন্ধ্যাবেলা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছিল। এক সময় মনে হলো তার পেছনে পেছনে কেউ হাঁটছে। সে পেছনে ফিরে তাকায় কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না। ফলে সে ভয়ে কাঁপছিল। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে সে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। তার মা বাতি নিয়ে ছুটে এসে দেখেন আদনানের পায়ের জুতার তলে পেরেক গাঁথা একটা কাঠি। এতক্ষণে আদনান ভয়ের কারণ খুঁজে পায়। 8. উদ্দীপকের আদনানের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্যের কারণ- ক. তাদের বয়স কম খ. তারা অন্ধকারকে ভয় করত গ. তারা ভীষণ ভীতু ছিল ঘ. তারা ভূত দেখেছিল ৫. এরূপ সাদৃশ্যের মূলে কোনটি বিদ্যমান? ক. বাস্তবজ্ঞানের অভাব খ. প্রকৃত শিক্ষা না পাওয়া গ. মানসিক বিকাশ না হওয়া ঘ, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন: |
---|
প্রশ্ন- ১: নগেনের মামা কী রকম লোক ছিলেন? উত্তর : নগেনের মামা কৃপণ লোক ছিলেন। প্রশ্ন- ২: নগেনের মামা শেষ সময়ে নগেনের জন্য কী করেছিলেন? উত্তর : নগেনের মামা শেষ সময়ে নগেনের নামে টাকা উইল করেছিলেন। প্রশ্ন- ৩: নগেন মরিয়া হয়ে ডাক্তারকে কী জিজ্ঞাসা করেছিল? উত্তর : নগেন মরিয়া হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, সত্যই প্রেতাত্মা আছে কিনা। প্রশ্ন- ৪: নগেন তার মামাকে কীভাবে ঠকিয়েছিল? উত্তর : নগেন তার মামাকে ভালোবাসার ভান করে ঠকিয়েছিল। প্রশ্ন- ৫: নগেন তার মৃত মামাকে কীভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে চেয়েছিল? উত্তর : নগেন তার মৃত মামার তৈলচিত্রের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে চেয়েছিল। প্রশ্ন- ৬: অন্ধকারে নগেন তার মামার তৈলচিত্রের সামনে গিয়ে কী বলল? উত্তর : অন্ধকারে নগেন তার মামার তৈলচিত্রের সামনে গিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল- ‘মামা, আমায় ক্ষমা কর।’ প্রশ্ন- ৭: নগেন তার মামার ছবি ছুঁতেই তার কী হলো? উত্তর : নগেন তার মামার ছবি ছুঁতেই তাকে কে যেন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। প্রশ্ন- ৮: নগেনের মতে, নগেনের মামা দেয়ালে কীভাবে দাঁড়িয়ে আছেন? উত্তর : নগেনের মতে, নগেনের মামা মটকার পাঞ্জাবির উপর দামি শাল গায়ে দিয়ে দেয়ালে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রশ্ন- ৯: নগেনের মামা তাকে দ্বিতীয় রাতে ধাক্কা দিলে নগেনের অবস্থা কী হলো? উত্তর : নগেনের মামা তাকে দ্বিতীয় রাতে ধাক্কা দিলে নগেন আচ্ছন্নের মতো হয়ে গেল। প্রশ্ন- ১০: কেন পরাশর ডাক্তারের বুক ধড়াস করে লাফিয়ে উঠল? উত্তর : তৈলচিত্রের উপর দুটি জ্বলন্ত চোখ পরাশর ডাক্তারের দিকে জ্বলজ্বল চোখে তাকিয়ে থাকার কারণে পরাশর ডাক্তারের বুক ধড়াস করে লাফিয়ে উঠল। প্রশ্ন- ১১: তীব্র চাপা গলায় পরাশর ডাক্তার নগেনকে কী বললেন? উত্তর : তীব্র চাপা গলায় পরাশর ডাক্তার নগেনকে বললেন, ‘তুমি একটি আস্ত গর্দভ, নগেন।’ প্রশ্ন- ১২: নগেনের মামার ছবি দিনের বেলা স্পর্শ করলে কিছু হয় না কেন? উত্তর : নগেনের মামার ছবি দিনের বেলা স্পর্শ করলে কিছু না হওয়ার কারণ হলো দিনের বেলা সব সুইচ বন্ধ থাকে। প্রশ্ন- ১৩: নগেন কীভাবে ঘরে ঢুকল? উত্তর : নগেন চোরের মতো নিঃশব্দে ঘরে ঢুকল। প্রশ্ন- ১৪: নগেনের মামা নগেনের নামে কী উইল করে রেখে গিয়েছিলেন? উত্তর : নগেনের মামা নগেনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা উইল করে রেখে গিয়েছিলেন। প্রশ্ন- ১৫: নগেনের মামার তৈলচিত্রটি দিনের বেলা কিরূপ থাকে? উত্তর : নগেনের মামার তৈলচিত্রটি দিনের বেলায় নিস্তেজ হয়ে থাকে। প্রশ্ন- ১৬: নগেনের মামাতো ভাই কোথায় ভর্তি হয়েছিল? উত্তর : নগেনের মামাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছিল। প্রশ্ন- ১৭: নগেনের মামার তৈলচিত্রটি কে আঁকিয়েছিলেন? উত্তর : নগেনের মামার তৈলচিত্রটি মামা নিজে আঁকিয়েছিলেন। প্রশ্ন- ১৮: ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়? উত্তর : ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পটি ‘মৌচাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রশ্ন- ১৯: ‘সূর্যবাবুর ভিটামিন সমস্যা’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কী ধরনের রচনা? উত্তর : ‘সূর্যবাবুর ভিটামিন সমস্যা’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কিশোর উপযোগী গল্প। প্রশ্ন- ২০: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সাঁওতাল পরগনার দুমকায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রশ্ন- ২১: ‘উইল’ বলতে কী বোঝায়? উত্তর : মৃত্যুর পরে সম্পত্তি বণ্টন বিষয়ে মালিকের ইচ্ছানুসারে প্রস্তুত ব্যবস্থাপত্রকে উইল বলে। প্রশ্ন- ২২: ‘মটকা’ কাকে বলে? উত্তর : রেশমের মোটা কাপড়কে মটকা বলে। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন: |
---|
প্রশ্ন- ১: নগেনের কথা পরাশর ডাক্তার বিশ্বাস করেছিলেন কেন? উত্তর : নগেন মিথ্যা গল্প বানিয়ে শোনাবার ছেলে নয়, তাই নগেনের কথা পরাশর ডাক্তার বিশ্বাস করেছিলেন। নগেন বিমর্ষভাব নিয়ে পরাশর ডাক্তারের লাইব্রেরিতে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন কথার পরিপ্রেক্ষিতে একসময় চমকপ্রদ অবিশ্বাস্য ভূতের কাহিনী বর্ণনা করে। কারণ নগেনের এ ভুতুড়ে কাহিনী বিশ্বাস করা কঠিন হলেও তিনি তা বিশ্বাস করলেন। নগেন কখনো মিথ্যা কথা বলে না। প্রশ্ন- ২: নগেনের কথা বলার ভঙ্গি খাপছাড়া হওয়ার কারণ দর্শাও। উত্তর : ভয়ের কারণে নগেনের কথা বলার ভঙ্গি খাপছাড়া হয়। নগেনের মামা ছিলেন কৃপণ স্বভাবের। কিন্তু তার মামা মারা যাওয়ার সময় তাকে অনেক টাকা উইল করে দিয়ে যায়। ফলে নগেন তার মামার প্রতি আগের খারাপ ধারণার কারণে আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকে। এই আত্মগ্লানি কমানোর জন্য সে তার মামার তৈলচিত্র ধরে ক্ষমা চাইতে গেলে কিসে যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ভয় পেয়ে নগেনের কথা বলার ভঙ্গি খাপছাড়া হয়েছিল। প্রশ্ন- ৩: ‘মামার তৈলচিত্রের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলে হয়তো আত্মগ্লানি একটু কমবে।’- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ। উত্তর : নগেন তার মামাকে জীবিত থাকতে ভালো না বাসার কারণে মামার তৈলচিত্রের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে চেয়েছিল। কারণ এতে তার আত্মগ্লানি কমবে বলে মনে হয়েছিল। নগেনের মামা ছিলেন বেজায় কৃপণ স্বভাবের। এ কারণে সে তার মামাকে মুখে মুখে ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখালেও মনে মনে ঘৃণা করত। কিন্তু তার মামা মারা যাওয়ার পর সে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল। প্রশ্ন- ৪: নগেনের মামা কেমন লোক ছিল? উত্তর : নগেনের মামা কৃপণ অথচ বিশেষ ক্ষেত্রে উদার লোক ছিলেন। নগেনের মামার অঢেল সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন কৃপণ। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে নগেনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা উইল করে রেখে যান তিনি। এতে তার উদারতার বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। আবার জীবিত অবস্থায় নগেনের প্রতি তার অনাদর আচরণের মাধ্যমে তার কৃপণতার পরিচয় পাওয়া যায়। |
সৃজনশীল প্রশ্ন-১ |
---|
রফিক সাহেব শীতের ছুটিতে ভাগ্নি সাহানাকে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে যান।
রাতের আকাশ দেখার জন্য তারা খোলা মাঠে যান। অদূরেই দেখতে পান মাঠের
মধ্যে হঠাৎ এক প্রকার আলো জ্বলে উঠে তা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ওটা কিসের
আলো তা জানতে চাইলে সাহানার মামা বলেন, ভূতের। সাহানা ভয় পেয়ে তার
মামাকে জড়িয়ে ধরে। মামা তখন তাকে বুঝিয়ে বলেন যে, খোলা মাঠের মাটিতে এক
প্রকার গ্যাস থাকে- যা বাতাসের সংস্পর্শে এলে জ্বলে ওঠে। সাহানা বিষয়টা
বুঝতে পেরে স্বাভাবিক হয়। ক. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ কোন জাতীয় রচনা? খ. পরাশর ডাক্তার নগেনকে ভর্ৎসনা করলেন কেন? গ. উদ্দীপকের সাহানা আর ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের বিশেষ মিল কোথায়? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “রফিক সাহেব আর ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার উভয়কে আধুনিক মানসিকতার অধিকারী বলা যায়?” উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো। |
ক. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ রচনাটি কিশোর উপযোগী ছোটগল্প। খ. মামাকে সারাজীবন মিথ্যে ভক্তি ও ভালোবাসার ভান করে ঠকানোর জন্য নগেনের মনে দারুণ লজ্জা আর অনুতাপ জেগেছিল। মামার বাড়িতে থেকে নগেন পড়ালেখা করত। মামা নগেনকে খুব বেশি আদর করতেন না। তবে মৃত্যুর পূর্বে নিজের ছেলেদের সমান সম্পত্তি নগেনকেও দিয়ে যায় তার মামা। নগেন মামার এ উদারতা কখনো কল্পনা করতে পারেনি। এ কারণে মামার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধায় তার মন ভরে ওঠে। নিজের আচরণের কথা ভেবে নগেন অনুতপ্ত হয়। গ. ভূত-বিশ্বাসের দিক দিয়ে উদ্দীপকের সাহানা আর ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের বিশেষ মিল রয়েছে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে পরলোকগত মামার প্রতি অনুশোচনা থেকে জেগে ওঠা শ্রদ্ধা ভক্তি প্রদর্শন করার জন্য মামার তৈলচিত্রের ফ্রেমে হাত রেখে প্রচণ্ড ঝাড়া খেয়ে নগেন ভয় পায়। তার কাছে মনে হয় তার মামার আত্মা তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নগেন বৈদ্যুতিক শকের বিষয়টিকে ভূত মনে করেছিল। উদ্দীপকে শীতের ছুটিতে মামা তার ভাগ্নি সাহানাকে গ্রামে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে তারা রাতের আকাশ দেখতে খোলা মাঠে যায়। তখন তারা মাঠে হঠাৎ এক প্রকার আলো জ্বলে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে। কীসের আলো? সাহানার এমন প্রশ্নের উত্তরে মামা তাকে ভয় দেখানোর জন্য বললেন, এটা ভূতের আলো। এতে সাহানা প্রচণ্ড ভয় পায়। তাই বলা যায়, অযথা ভূতের ভয়ে ভীত হওয়ার দিক দিয়ে সাহানা ও নগেনের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান। ঘ. বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধি দিয়ে কুসংস্কারকে জয় করার মানসিকতার দিক থেকে রফিক সাহেব এবং ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তারকে আধুনিক মানসিকতার অধিকারী বলা যায়। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে লেখক পরাশর ডাক্তারের বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলেছেন নগেনের ভূতে বিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভিত্তিহীনতাকে। মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূতে পরিণত হয়- এরূপ বিশ্বাস সমাজে প্রচলিত থাকায় নগেন বৈদ্যুতিক শককে ভূতের কাজ বলে সহজে বিশ্বাস করেছে। অন্যদিকে, পরাশর ডাক্তার সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করে বলে তার কাছে বৈদ্যুতিক শকের বিষয়টি সহজেই ধরা পড়েছে। উদ্দীপকে রফিক সাহেব তার ভাগ্নি সাহানাকে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে যান। খোলা মাঠে হঠাৎ এক প্রকার আলো জ্বলে উঠতে দেখে কৌতূহলবশত সাহানা জানতে চায় ওটি কীসের আলো। তার মামা ভূতের আলো বলে মজা করলে সাহানা ভয় পায়। পরে মামা বৈজ্ঞানিক যুক্তি দেখিয়ে বলেন, মিথেন নামক এক প্রকার গ্যাসের সঙ্গে বাতাসের সংস্পর্শে এরকম আলো জ্বলে বলে তার মামা সাহানাকে জানায়। এতে সাহানা স্বাভাবিক হয়। উদ্দীপকে রফিক সাহেবের মাঝে বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধি আছে বলেই খোলা মাঠের আলো জ্বলার কারণ তিনি জানতে পেরেছেন। আর গল্পে পরাশর ডাক্তার ছবির ফ্রেমে শক খাওয়ার কারণ নগেনকে বোঝাতে পেরেছেন। তাই তাদেরকে আধুনিক মানসিকতার অধিকারী বলা যায়। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : রিমন গোরস্তানের ধারে সবুজ ঘাসে গরুটিকে বেঁধে আসে। সে বিকালে গরুটি আনতে যেয়ে আর বাড়ি ফিরে আসে না। সন্ধ্যায় গোরস্তানের পাশে তার মৃতদেহটি পাওয়া যায়। গ্রামের সবাই বলল ভূতে রিমনকে মেরেছে। তারা রিমনের মৃতদেহটি ধরতেও ভয় পেল। ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা যায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিশোর উপযোগী গল্পের সংখ্যা কত? খ. নগেন অনুতপ্ত হয়েছিল কেন? গ. উদ্দীপকের গ্রামবাসীর মধ্যে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন চরিত্রের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকের কুসংস্কার এবং ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মৃত্যু যেন একই সূত্রে গাঁথা।” উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। |
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিশোর উপযোগী গল্পের সংখ্যা ২৭। খ. বোর্ড বই ১ নং অনুশীলনী প্রশ্নের ‘খ’ নং অংশ দ্রষ্টব্য। গ. উদ্দীপকের গ্রামবাসীর মধ্যে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের ভূতের ভয় পাওয়া এবং কুসংস্কারে বিশ্বাসের দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে দেখা যায় মামার তৈলচিত্র ছোঁয়ামাত্র নগেন টের পায় কেউ তাকে জোরে ধাক্কা দিয়েছে। তার বিশ্বাস মামা মৃত্যুর পর তার প্রতি নগেনের মিথ্যা ভক্তির কথা জানতে পেরে রেগে গেছেন। তাই তিনি নগেনকে নিজের ছবি স্পর্শ করতে দিতে রাজি নন। কুসংস্কার, বিবেচনাবোধের অভাব এবং অন্ধবিশ্বাসের কারণে নগেন অশরীরী আত্মার বিশ্বাস করে এবং ভয় পায়। উদ্দীপকের গ্রামবাসী গোরস্তানের পাশে মৃতদেহ পাওয়ায় তারা মনে করে গোরস্তানের প্রেতাত্মা রিমনকে মেরেছে। ভূতের হাতে রিমনের মৃত্যু হয়েছে ভেবে নিজেদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় গ্রামবাসীরা রিমনের মৃতদেহ স্পর্শ করতে ভয় পায়। গ্রামবাসীর মাঝে ভূতে বিশ্বাস, কুসংস্কারের মতো অন্ধবিশ্বাস থাকায় তারা সাপের কামড়ে মৃত্যুকেও একটি অপার্থিব ভয়ের আবরণে প্রত্যক্ষ করে। বিবেচনাবোধ, যৌক্তিকতার অনুপস্থিতিই গ্রামবাসীর চেতনায় এমন ধারণা সৃষ্টি করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের গ্রামবাসী এবং তৈলচিত্রের ভূত গল্পের নগেনের চরিত্রের মাঝে কুসংস্কারে বিশ্বাসের দিকটিই প্রতিফলিত হয়। ঘ. “উদ্দীপকের কুসংস্কার এবং ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূল মর্মবাণী একই সূত্রে গাঁথা’- উক্তিটি যথার্থ। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন তার মামার বাড়িতে আশ্রিত যিনি স্বভাবগতভাবে কৃপণ ছিলেন। মামার মৃত্যুর পর তার ছবিকে সম্মান জানাতে গেলে নগেন কিছুটা শারীরিক অস্বস্তি বোধ করে এবং প্রচণ্ড ধাক্কা খায়। তার ভাষ্যমতে ছবি থেকে মামা-ই তাকে ধাক্কা দিয়েছেন কারণ মৃত্যুর পর তিনি নগেনের মনোভাব জানতে পেরেছেন। কুসংস্কার, যৌক্তিক চিন্তাভাবনার অভাব ইত্যাদির উপস্থিতিই নগেনকে অশরীরী বস্তুতে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে। উদ্দীপকের গ্রামবাসী রিমনের মৃতদেহ গোরস্তানের পাশে পাওয়ার কারণে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানসিকতা জাগ্রত হয়। তারা মনে করে ভূতে রিমনকে মেরে ফেলেছে। ফলে ভূতের আছরের ভয়ে তারা মৃতদেহকে স্পর্শ পর্যন্ত করে না। গ্রামবাসী স্বল্পশিক্ষিত মানুষ, তদুপরি কুসংস্কার এবং গোঁড়ামির নাগপাশে আবদ্ধ থেকে এই মানুষগুলো যখনই যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব খুঁজে পায় না তখনই তাকে অপার্থিব আখ্যা দেয়। যা ঘটেছে উদ্দীপকের কুসংস্কার এবং ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে মূল পটভূমিতে। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় উদ্দীপকের কুসংস্কার এবং ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূল মর্মবাণী একই সূত্রে গাঁথা। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বৈশাখ মাসের খাঁ খাঁ দুপুরে গ্রামের বড় তেঁতুল গাছের নিচে পাতা কুড়াতে যায় আসমানি। প্রচÊ রোদের তাপে হঠাৎ সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ঐ পথে বাড়ি ফেরা হাটুরে আমজাদ মিয়ার মাধ্যমে পুরো গ্রামে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীর সাথে সাথে আসমানির বাবাও ভাবে তেঁতুল গাছের নিচে যাওয়ায় ভূতে আসমানির এই অবস্থা করেছে। তাই মেয়ের সুস্থতার জন্য কবিরাজ ডেকে আনেন আসমানীর বাবা। ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম কত সালে? খ. মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করার কথা নগেনের মনে হলো কেন? গ. উদ্দীপকের আসমানি ও ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূল বিষয় উপস্থাপনে উদ্দীপকটি সহায়ক হয়েছে কী? তোমার যৌক্তিক মতামত দাও। |
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। খ. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেন মামাকে সারাজীবন মিথ্যে শ্রদ্ধা-ভক্তির ভান করে ঠকিয়েছে বলে লজ্জায় অনুতপ্ত হয়ে মনকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য নগেন তৈলচিত্রে প্রণাম করার কথা ভেবেছে। নগেনের কৃপণ মামার আচরণ তার ভক্তি-শ্রদ্ধা লাভ করতে পারেনি। নগেন বাইরে থেকে মামার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখালেও অন্তরের টান অনুভব করত না। কিন্তু তার এই কৃপণ মামা মৃত্যুর পূর্বে তার পুত্রদের সমান টাকা নগেনের নামে উইল করে গেছেন। মামার এমন উদারতার কারণে তার মধ্যে অনুশোচনা জাগ্রত হলো। আত্মগ্লানি ও অনুশোচনা কমানোর জন্য তাই নগেন মামার তৈলচিত্রকে প্রণাম করার কথা ভাবে। গ. কুসংস্কারে বিশ্বাসের দিক থেকে উদ্দীপকের আসমানী ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্য বিদ্যমান। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন মামার মানবিকতা এবং ভালোবাসার দিকটি উপলব্ধি করে ছবিতে প্রণাম করতে গেলে ছবির স্পর্শে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা অনুভব করে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং অজ্ঞানতার কারণে সে একে মামার ভূত বলে বিশ্বাস করে নেয় কারণ এছাড়া অন্য কোনো ব্যাখ্যা তার ভেতরে কাজ করে না। একইভাবে উদ্দীপকের আসমানি প্রচণ্ড রোদে তেঁতুল গাছের নিচে পাতা কুড়াতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আমাদের সমাজে তেঁতুল গাছে ভূত থাকে এমন একটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে। ফলে আসমানি গাছের নিচে অজ্ঞান হয়ে গেলে গ্রামবাসীরা একে ভূতের কাজ বলে অভিহিত করে। মূলত বহুদিন ধরে চলে আসা লোকজ বিশ্বাস এবং রোদের প্রচণ্ডতায় আসমানি জ্ঞান হারানো দুটি মিলেই ভূতের আছর হওয়ার ধারণা পাকাপোক্ত হয়। যা ভিন্ন ঘটনা ও পটভূমিতে গল্পের নগেনেরই প্রতিচ্ছবি। তাই বলা যায় যে কুসংস্কারে বিশ্বাস এবং যৌক্তিক দিক বিবেচনা না করার দিক থেকে উদ্দীপকের আসমানি ও গল্পের নগেনের সাদৃশ্য বিদ্যমান। ঘ. “তৈলচিত্রের ভূত” গল্পের মূল বিষয় উপস্থাপনে উদ্দীপকটি সহায়ক বলে আমি মনে করি। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন লেখাপড়া জানা হলেও অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে সরে দাঁড়াতে পারে না। মামার ছবিকে স্পর্শ করে জোরে ধাক্কা খেলে এর কোনো যৌক্তিক উত্তর তার মাথায় আসে না। যার ফলশ্রুতিতে মামার ভূত রেগে গিয়ে তাকে আঘাত করেছে মতামতটি তার মস্তিষ্কে স্থান করে নেয়। তারপরও শেষ চেষ্টা হিসেবে সে পরাশর ডাক্তারের সহযোগিতা নেয় এবং মামার ভূতের একটি যুক্তিযুক্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য উত্তর খুঁজে পায়। অন্যদিকে উদ্দীপকের আসমানি প্রচণ্ড রোদে তেঁতুল গাছের নিচে পাতা কুড়াতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। হাটুরে আমজাদ মিয়ার মাধ্যমে গ্রামবাসী ধারণা করে তেঁতুল গাছের ভূতই আসমানির এই অবস্থার জন্য দায়ী। আসমানির বাবাও তা বিশ্বাস করেন এবং আসমানির অবস্থা উন্নত করার জন্য কবিরাজকে ডেকে আনেন। মূলত ভূতের কারণে নয় বরং প্রচণ্ড রোদের তাপে শারীরিক অবস্থার অবণতি ঘটায় আসমানি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যা আসমানীর বাবা কবিরাজ ডাকার মাধ্যমে জানা যায়। গল্পের নগেনও ভূত আছে এই বিশ্বাস নিয়েই পরাশর ডাক্তারের কাছে সাহায্য চাইতে যায় যা তাকে আসমানির ঘটনার সাথে একই সূত্রে সম্পর্কযুক্ত করে তোলে। উপরিউক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূল বিষয় উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : পিয়ারী কিছুতেই শ্রীকান্তকে শ্মশানে যেতে দেবে না। তার দৃঢ়বিশ্বাস, শ্মশানে ভূত-প্রেতের বাস। শনিবারের অমাবস্যায় শ্মশানে গেলে প্রাণ নিয়ে আর ফিরে আসা যাবে না। কিন্তু শ্রীকান্তের ভীষণ জেদ। পিয়ারীর শত অনুনয় উপেক্ষা করে বন্দুক হাতে সে ভূতের সন্ধানে শ্মশানের দিকে রওনা হয়। ক. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়? খ. নগেন তার মামার প্রতি মিথ্যে ভক্তি দেখাত কেন? গ. উদ্দীপকের পিয়ারী চরিত্রটি কোন দিক থেকে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের শ্রীকান্ত এবং পঠিত গল্পের পরাশর ডাক্তার একই চেতনার মানুষ- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। |
ক. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ সর্বপ্রথম ‘মৌচাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। খ. নিজের থাকা খাওয়ার অর্থ যথাযথভাবে পাওয়ার জন্য নগেন তার মামার প্রতি মিথ্যে ভক্তি দেখাত। নগেন মামার বাড়িতে থেকে কলেজে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই সে মামার বাড়িতে থেকে মানুষ হয়েছে। কিন্তু তার মামা টাকা-পয়সা খরচ করতে চাইত না। এ কারণে নগেনের চলাফেরার খুব সমস্যা হতো। ফলে নগেনও তার মামার প্রতি কৃত্রিম ভালোবাসার ভাব বজায় রাখলেও মনে মনে সে তার মামাকে ভালোবাসত না। গ. উদ্দীপকের পিয়ারী চরিত্রটি অন্ধবিশ্বাসের দিক থেকে নগেনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন মৃত মামার ছবিতে প্রণাম করার জন্য হাত দিলে প্রচণ্ড ধাক্কা অনুভব করে। এই ধাক্কা অনুভূত হওয়ার কোনো সদুত্তর নগেনের জানা নেই। আমরা যে বিষয়ে পরিষ্কার জবাব দিতে অক্ষম হই তাকে ভূতের উপর চাপিয়ে দিতে অভ্যস্ত। তাই ধাক্কা খাওয়ার কার্যকারণ পেতে অক্ষম হলে নগেন অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে একে মামার ভূত নামে অভিহিত করে। উদ্দীপকের পিয়ারী চরিত্রটি শ্রীকান্তকে শ্মশানে যেতে দিতে রাজি নয়, কারণ সে বিশ্বাস করে সেখানে মৃত মানুষের আত্মা ভূত হয়ে বিচরণ করে। শনিবার অমাবস্যায় শ্মশানে গেলে ভূতপ্রেত অবশ্যই ক্ষতি করবে এবং বেঁচে ফিরে আসার কোনো আশাই নেই। পিয়ারী ভূতপ্রেতের সাথে শনিবার এবং অমাবস্যায় এদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে মানুষের প্রাণ হরণ করতে পারে এমন বিশ্বাস ধারণ করে। এই বিশ্বাসের মাধ্যমে পিয়ারী অন্ধবিশ্বাস প্রকাশিত হয়েছে যা আমরা গল্পের নগেনের ক্ষেত্রে দেখতে পাই। তাই বলা যায় উদ্দীপকের পিয়ারী এবং গল্পের নগেনের চরিত্রের মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান। ঘ. “উদ্দীপকের শ্রীকান্ত এবং পরাশর ডাক্তার একই চেতনার মানুষ”- মন্তব্যটি যথাযথ। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার ভূতে বিশ্বাস না করে ঠান্ডা মাথায় নগেনের ঘটনাটি নিয়ে ভেবেছেন। তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে উদ্ঘাটন করেন যে বৈদ্যুতিক সংযোগের কারণেই রুপার ফ্রেম তথা ছবিটিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়েছে এবং এর কারণেই নগেন ধাক্কা অনুভব করেছে। বিজ্ঞানের সূত্র ধরে বিশ্লেষণ ও যুক্তি প্রয়োগ করে তিনি পুরো বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হন। উদ্দীপকের শ্রীকান্ত পিয়ারীর কথায় কান দেয় না। শত অনুনয় উপেক্ষা করে ভূতের সন্ধানে শ্মশানের দিকে রওনা হয়। প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে মানুষ তাকে অশরীরী আত্মার কাজ বা ভূতের উপস্থিতি বলে মনে করে। অথচ ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে সাধারণ অথচ যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ অবশ্যই থাকে। যা শ্রীকান্ত বিশ্বাস করে। ফলে সে জানে ভূত বলে কিছু নেই। এই কারণেই পিয়ারীর নিষেধ করা সত্ত্বেও শনিবার অমাবস্যার রাত ইত্যাদি নিয়ামকের প্রতি মনোযোগ দিতে আগ্রহী নয়। যা আমরা গল্পের পরাশর ডাক্তারের চরিত্রে দেখতে পাই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্দীপকের শ্রীকান্ত এবং গল্পের পরাশর ডাক্তারের চেতনা সমতালে প্রবাহিত হয় বলে প্রতীয়মান। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : সৃজনের মা মারা যাওয়ার পর থেকে সৃজন তার মামাবাড়ি থাকে। তার মামা অনেক বড়লোক অথচ কৃপণ। সৃজনকে আদর যত্ন করলেও টাকা পয়সা দিত না। সৃজন তার মামাকে মনে মনে গালি দিলেও উপরে উপরে শ্রদ্ধা দেখাত। মামা যেন তার কাছে যমের মতো। কিন্তু সেই মামাই মৃত্যুর সময় সৃজনের নামে এক বিঘা সম্পত্তি উইল করে রেখে যান। ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাঝির ছেলে’ কী ধরনের রচনা? খ. নগেন তার মামাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধাভক্তি করেনি কেন? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের কোন ঘটনার সাদৃশ্য আছে ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের শিক্ষণীয় দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে” বিশ্লেষণ কর। |
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাঝির ছেলে’ কিশোর উপন্যাস। খ. নগেনের প্রতি মামার আচার-আচরণ এবং অত্যন্ত কৃপণতার জন্যই নগেন তার মামাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা-ভক্তি করেনি। নগেন তার মামার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেছে এবং মানুষ হয়েছে। তার মামার সম্পদের অভাব ছিল না। তবু তিনি ছিলেন কৃপণ। তাছাড়া সারাক্ষণ তিনি নগেনকে বকাঝকার মধ্যেই রাখতেন। তাই সে সর্বদা মামার মৃত্যু কামনা করত এবং মন থেকে তার মামাকে শ্রদ্ধা-ভক্তি করত না। গ. উদ্দীপকের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মামার নগেনের নামে সম্পত্তি উইল করে দেওয়ার মতো দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেনের মামা ছিলেন অত্যন্ত কৃপণ। কখনো নগেনকে এক পয়সা দিতে চাইতেন না এবং বকাঝকা করতেন। তাই নগেন তার মামাকে তেমন শ্রদ্ধা-ভক্তি করত না। সর্বদাই মামার মৃত্যু কামনা করত। কিন্তু তার মামা তাকে ঠিকই ভালোবাসত। তাই মৃত্যুর পূর্বে তার নামে সম্পত্তি উইল করে যান। উদ্দীপকে সৃজনও মামার বাড়িতে থাকে। তার মামাও অত্যন্ত কৃপণ। কখনো তাকে সামান্য অর্থ দিতে চায় না। তাই সেও তার মামাকে মনে মনে গালি দিত কিন্তু উপরে শ্রদ্ধা দেখাত। তবে মৃত্যুর সময় তার মামা ঠিকই তাকে এক বিঘা জমি উইল করে যান। এ ঘটনাটিই গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ঘ. উদ্দীপকে সৃজনের মামার ভাগ্নের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে, যা ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের শিক্ষণীয় দিকের প্রতিনিধিত্ব করে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেনের মামার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। নগেনের মামা অত্যন্ত কৃপণ। তাই নগেন কখনই তার মামার ভালো চায়নি। উপরে উপরে শ্রদ্ধা করলেও নগেন তার মামার মৃত্যু কামনা করত। কিন্তু তার মামা ঠিকই তাকে ভালোবাসত। তাইতো মৃত্যুর পূর্বে তার নামে সম্পত্তি উইল করে দিয়ে দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছেন। উদ্দীপকেও সৃজনের মামার গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। সৃজন মামার বাড়িতে থাকে। কিন্তু তার মামা অত্যন্ত কৃপণ। তাই সে সর্বদা মামাকে মনে মনে গালি দিত। কিন্তু তার মামা তার প্রতি যথেষ্টই দায়িত্বশীল ছিলেন। যে কারণে মৃত্যুর সময় তার নামে সম্পত্তি উইল করে দিয়েছেন। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকটি গল্পের শিক্ষণীয় দিকের প্রতিনিধিত্ব করে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : কৃষক গনি মিয়ার বড় ছেলে ফটিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে কবিরাজের কাছ থেকে পানি পড়া এনে খাওয়ায় এবং তাবিজ দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। বাড়ির সবাইকে সাবধান করে বলে খোঁড়া কোনো প্রাণী দেখলে যেন তাড়িয়ে দেয়। তার ধারণা ডেঙ্গুজ্বর খোঁড়া প্রাণীর রূপ ধরে বাড়িতে আসে। কিন্তু গনি মিয়ার অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছোট ছেলে রবিন বাবার ধারণা ভুল প্রমাণ করতে তার বিজ্ঞান বইয়ের ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার উদাহরণ দেয়। ক. নগেনের মামার গায়ে কীসের পাঞ্জাবি ছিল? খ. নগেন মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গেল কেন? গ. উদ্দীপকের গনি মিয়ার ধারণাটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের যে দিকটি ফুটিয়ে তুলেছে তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. তুমি কি মনে কর রবিন পরাশর ডাক্তারের যথার্থ প্রতিনিধি? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। |
ক. নগেনের মামার গায়ে ছিল মটকার পাঞ্জাবি। খ. নগেন আত্মগ্লানি কমানোর জন্য মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গেল। নগেন তার মামার বাড়িতে থেকে কলেজে পড়ত। তার মামা ছিল বড্ড কৃপণ। এ জন্য মামাকে বাইরে থেকে শ্রদ্ধা-ভক্তি দেখালেও ভিতরে প্রায়ই নগেন যমের বাড়ি পাঠাত। কিন্তু মামার মৃত্যুর পর যখন দেখল মামা তার জন্যও মোটা অঙ্কের টাকা উইল করে গেছেন তখন মামার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিতে মন ভরে গেল। এমন মানুষকে সে ভক্তি ভালোবাসার ভান করে ঠকিয়েছে বলে অনুতপ্ত হতে লাগল। এই আত্মগ্লানি কমানোর জন্য মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গেল নগেন। গ. উদ্দীপকের গনি মিয়ার ধারণাটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের ভূতে বিশ্বাস নিয়ে যে কুসংস্কার সে দিকটি ফুটিয়ে তুলেছে। কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে মানুষ নানা অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষকে যদি বিজ্ঞানচেতনা দিয়ে ঘটনা-বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে ঐসব বিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতা ধরা পড়ে। উদ্দীপকের কৃষক গনি মিয়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন একজন মানুষ। ছেলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে কবিরাজের কাছ থেকে পানিপড়া এনে খাওয়ায় এবং দরজায় তাবিজ ঝুলিয়ে রাখে। তার ধারণা ডেঙ্গুজ্বর খোঁড়া প্রাণীর রূপ ধরে বাড়িতে আসে। এই বিষয়টি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের ভূতে বিশ্বাস নিয়ে কুসংস্কারের দিকটি ফুটিয়ে তুলেছে। নগেন আত্মগ্লানি কমাতে রাতে তার মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে যায় এবং ছবির ফ্রেমের সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ঘটায় সেটি ছুঁলে তার বৈদ্যুতিক শক লাগে। কিন্তু নগেন ভাবে এটা মামার আত্মার ভূত। তার এই ভূতে বিশ্বাসের কুসংস্কারকে ফুটিয়ে তুলেছে উদ্দীপকের গনি মিয়ার ধারণাটি। ঘ. “উদ্দীপকের রবিন ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তারের যথার্থ প্রতিনিধি” এই মন্তব্যের সাথে আমি একমত। আমাদের সমাজ তথা সমাজের মানুষ নানারকম কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। ভিত্তিহীন অন্ধ বিশ্বাসে তারা ডুবে আছে এবং এই বিশ্বাস নিয়েই তারা থাকতে পছন্দ করে। যারা এই বিষয়ে সচেতন তাদের উচিত বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে সেই সব কুসংস্কারের ভিত্তিহীনতাকে তাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলা। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার একজন বিজ্ঞানমনস্ক সচেতন মানুষ। তিনি ভূতের কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন না। তাইতো নগেন যখন এসে তার মামার তৈলচিত্রের ভূতের কথা শোনায় তিনি সেটা বিশ্বাস না করে ঘটনাস্থলে নিজে গিয়ে নগেনের ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করেন। এই পরাশর ডাক্তারের যথার্থ প্রতিনিধি উদ্দীপকের রবিন। রবিন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা গনি মিয়ার ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে। গনি মিয়ার ধারণা ডেঙ্গুজ্বর খোঁড়া প্রাণীর রূপ ধরে বাড়িতে আসে। তাই সে দরজায় তাবিজ ঝুলিয়ে রাখে। রবিন ডেঙ্গুজ্বরের সঠিক কারণটি বিজ্ঞান বই থেকে তার বাবাকে পড়ে শোনায়। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, রবিন পরাশর ডাক্তারের যথার্থ প্রতিনিধি। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : আলিফের বাবা মারা যাওয়ার পর তার এক মামা ও এক চাচা তার দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। আলিফের মামা আব্দুল আউয়াল স্বল্পশিক্ষিত ও পীরভক্ত মানুষ। অপরপক্ষে, তার চাচা আব্দুল মান্নান আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন শিক্ষক। একদিন আলিফ ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ায় এবং সন্ধ্যায় জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে। আলিফের মামা চায় পীরের পানিপড়া খাওয়াতে এবং চাচা চায় ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়াতে। শেষ পর্যন্ত ডাক্তার নির্দেশিত ওষুধের পাশাপাশি পীরের পানি পড়াও আলিফ খায়। এক সপ্তাহ পর আলিফ সুস্থ হয়। আব্দুল আউয়ালের বিশ্বাস, পীরের পানিপড়া খেয়েই আলিফ সেরে উঠেছে। ক. পরাশর ডাক্তার প্রকাণ্ড লাইব্রেরিতে বসে কী করছিলেন? খ. মামার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিতে নগেনের মন ভরে উঠল কেন? গ. আব্দুল আউয়ালের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. আব্দুল মান্নানকে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তারের প্রতিরূপ বলা যায় কি? মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর। |
ক. পরাশর ডাক্তার প্রকাণ্ড লাইব্রেরিতে বসে চিঠি লিখছিলেন। খ. মামা নিজের ছেলেদের মতোই নগেনকেও ভালোবাসতেন- এ কথা জানতে পেরে মামার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিতে নগেনের মন ভরে উঠল। নগেনের মামা মারা যাওয়ার আগে নিজের ছেলেদের সমপরিমাণ টাকা তার জন্যও উইল করে গেছেন। মামার এ রকম উদারতা নগেনের কাছে কল্পনাতীত ছিল। তাই নগেন সে যখন বুঝতে পারল মামা তাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতেন, তখন তার মন শ্রদ্ধা-ভক্তিতে ভরে উঠল। গ. মনের চেতনাগত দিক দিয়ে আব্দুল আউয়ালের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্য বিদ্যমান। ঘটনাগত অমিল থাকলেও নগেনের মধ্যে উপস্থিত কুসংস্কারের প্রতিফলন দেখা যায় উদ্দীপকের আব্দুল মান্নানের মধ্যে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে দেখা যায়, মামার তৈলচিত্র ছোঁয়ামাত্র নগেনের মনে হয়েছে কে যেন তাকে ধাক্কা দিয়েছে। তার বিশ্বাস মামার প্রতি মিথ্যা ভক্তির কথা মামা জানতে পেরেছেন। তাই তিনি তাকে ছবি স্পর্শ করতে দিতে রাজি নন। প্রকৃতপক্ষে কুসংস্কার, বিবেচনাবোধ ও অন্ধবিশ্বাসের কারণেই নগেন অশরীরী আত্মায় বিশ্বাস করে ভয় পায়। উদ্দীপকের আব্দুল আউয়াল স্বল্পশিক্ষিত মানুষ। ভুল বিশ্বাসের কারণে সে অন্ধভক্ত হয়ে পড়ে। সে কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বশে আলিফের অসুস্থতার সময় পীরের পানি পড়াকে আলিফের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট মনে করে। তাই বলা যায়, মনের চেতনাগত দিক দিয়ে আব্দুল আউয়াল ও নগেনের সাদৃশ্য রয়েছে। ঘ. আব্দুল মান্নানকে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তারের প্রতিরূপ বলা যায়। চেতনাগত ভূতে বিশ্বাসের বিপরীতেই বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির অবস্থান। বিজ্ঞান কোনো ভৌতিক ঘটনা বিশ্বাস করে না বরং ঐসব ঘটনার পেছনের বৈজ্ঞানিক কার্যকারণ উপস্থাপন করে। তাই বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি খুব সহজেই যেকোনো ভুল বিশ্বাসজনিত সমস্যা দূর করতে পারেন। এর বাস্তব প্রমাণ লক্ষ করা যায় ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার এবং উদ্দীপকের আব্দুল মান্নানের মধ্যে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যয়নকারী। তিনি যুক্তি দিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পছন্দ করেন। নগেন তার কাছে ভূতে ভয়জনিত ঘটনা খুলে বললে তিনি ভূত নেই বলে নগেনকে আশ্বস্ত করেন। পরে তৈলচিত্রটি পর্যবেক্ষণ করে এবং স্পর্শ করে ঘটনার প্রকৃত কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক সংযোগকে চিহ্নিত করেন। অন্যদিকে উদ্দীপকে আব্দুল মান্নান আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন শিক্ষক। তিনি আলিফের সুস্থতার জন্য পীরের পানিপড়াকে যথেষ্ট বা যৌক্তিক মনে করেননি। তিনি ডাক্তারের পরামর্শমতো আলিফকে ওষুধ খাওয়ান। এতে তার মধ্যে পরাশর ডাক্তারের বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির উপস্থিতি প্রকাশ পায়। উল্লিখিত আলোচনায় আব্দুল মান্নানকে পরাশর ডাক্তারের প্রতিরূপ বলা যায়। |
সৃজনশীল প্রশ্ন -৮ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : দীর্ঘদিন যাবৎ মিতুলদের বাড়ির পাশে একঘর হিন্দু পরিবারের বসতি ছিল। গত চৈত্র মাসে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে সবাই পরপারে চলে গেলে বাড়িটিতে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। এলাকার যে কেউ রাতের বেলা এ বাড়িটির পাশ দিয়ে গেলে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। সবার ধারণা মৃতদের আত্মা ভূত হয়ে কাঁদে- এ নিয়ে এলাকার সবার মধ্যে একটি অস্থির ও অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। ক. নগেনের মামা কত বছর লাইব্রেরির পেছনে একটি পয়সাও খরচ করেনি? খ. সমস্ত সকালটা নগেন মড়ার মতো পড়ে রইল কেন? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের বৈসাদৃশ্যগত দিকটি চিহ্নিত কর। ঘ. উদ্দীপকে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের সমগ্র বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে কি? মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর। |
ক. নগেনের মামা গত তিরিশ বছর লাইব্রেরির পেছনে একটি পয়সাও খরচ
করেনি। খ. তৈলচিত্রে প্রণাম করার সময় ধাক্কার রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় নগেন সমস্ত সকালটা মড়ার মতো পড়ে রইল। রাতের অন্ধকারে নগেন যখন তার মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করার জন্য হাত রাখে তখন কে যেন তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে দেয়। নগেন তার মামাকে মন থেকে ঘৃণা করত কিন্তু মামা মারা যাওয়ার পর সে বুঝতে পারে তার মামা তাকে ছেলের মতো ভালোবাসতেন। তাই সে তার ভুল বুঝতে পেরে রাতের অন্ধকারে মৃত মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গেলে কে যেন তাকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। এ রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে সমস্ত সকালটা নগেন মড়ার মতো পড়ে রইল। গ. উদ্দীপকের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের ঘটনাগত বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে মামার প্রতি অনুশোচনা থেকে জেগে ওঠা শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন করার জন্য মামার তৈলচিত্রের ফ্রেমে হাত রেখে প্রচণ্ড ঝাড়া খেয়ে নগেন ভয় পায়। তার কাছে মনে হয় তার মামার আত্মা তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নগেন বৈদ্যুতিক শকের বিষয়টিকে ভূত মনে করেছিল। উদ্দীপকে হিন্দু পরিবারের মৃত্যুতে হিন্দু বাড়িটিতে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এলাকার যে কেউ রাতের বেলা এ বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। এলাকার সবার ধারণা মৃতদের আত্মা ভূত হয়ে কাঁদে। প্রকৃতপক্ষে এলাকাবাসী একটি মানসিক অস্বস্তিকর অবস্থার কারণেই মৃতদের আত্মাকে ভূত বলে বিশ্বাস করেছে। তাই বলা যায়, ভূত-বিশ্বাসের দিক দিয়ে উদ্দীপক ও আলোচ্য গল্পের মিল থাকলেও এতে ঘটনাগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে। ঘ. উদ্দীপকে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের সমগ্র বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেনি। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে ভূতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরাজমান কুসংস্কার যে ভিত্তিহীন সে বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এ গল্পে নগেন চরিত্রের মধ্যে ভূতে বিশ্বাসের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে পরাশর ডাক্তারের মধ্যকার বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলেছেন নগেনের বিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভিত্তিহীনতা। উদ্দীপকে কলেরায় আক্রান্ত একটি পরিবারের মৃতের ঘটনায় এলাকাবাসী ভীত হয়ে পড়ে। এই ভয়ের সূত্র ধরেই বাড়িটির পাশে রাতে হাঁটার সময় কান্নার শব্দ শোনা যায়। এ ঘটনায় এলাকার সবাই মনে করে মৃতের আত্মা ভূত হয়ে কাঁদে। এখানে আলোচ্য গল্পে নগেন চরিত্রে প্রতিফলিত ভূত বিশ্বাসের বিষয়টির ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু গল্পে উল্লিখিত বিজ্ঞানচেতনা দিয়ে ভূতে বিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতার বিষয়টি উদ্ঘাটনের জন্য ঘটনা বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টি অনুপস্থিত। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের সমগ্র বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেনি। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : সমুদ্রসৈকতে সৌন্দর্যতৃষ্ণা মেটানোর পর সজিব ও পিয়াস যখন হোটেলে নিজেদের রুমে প্রবেশ করল তখন দুজনই ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় চিৎকার করে রুমের বাইরে এলো। কারণ তারা রুমে একজন মানুষের ছায়ার মতো কিছু একটা দেখল। সজিব এই ছায়াকে অলৌকিক কিছু একটা মনে করে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু পিয়াস দমে যাওয়ার পাত্র নয় সে বিভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা ও ঐ রাতে হোটেলে অবস্থানরত মানুষের কাছে খোঁজ নিয়ে প্রমাণ করল ছায়াটি অলৌকিক কিছু নয়। হোটেলের দারোয়ান রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তার ছায়াটিই সজিবদের রুমে পড়েছিল। ক. নগেনের মামার ছবি কীসের ফ্রেম দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল? খ. নগেন পরাশর ডাক্তারের সাথে দেখা করেছিল কেন? গ. পিয়াসের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের বৈসাদৃশ্য নির্ণয় করো। ঘ. বিজ্ঞানবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে সজিবের মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব কিনা ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের আলোকে এ ব্যাপারে তোমার মতামত উপস্থাপন করো। |
ক. নগেনের মামার ছবি রুপার ফ্রেম দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল। খ. ভুতুড়ে কাণ্ডের ঘটনাটি জানানোর জন্য নগেন পরাশর ডাক্তারের সাথে দেখা করেছিল। মামার উদারতার পরিচয় পেয়ে মৃত মামার প্রতি নগেনের শ্রদ্ধা-ভক্তি বেড়ে যায়। সে অনুতপ্ত হয়ে মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গেলে মামার প্রেতাত্মা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরদিনও একই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাটি জানানোর জন্যই নগেন পরাশর ডাক্তারের সাথে দেখা করেছিল। গ. বুদ্ধি, বিচক্ষণতা ও সাহসের দিক দিয়ে উদ্দীপকের পিয়াস ও ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক বিশ্বাস অবলম্বন করে মানুষ স্বাভাবিক ঘটনায়ও ভীত হয়। এর কারণ হলো বুদ্ধি, বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার অভাব। এই গুণগুলো বর্তমান থাকলে ভূত বা অলৌকিক, অশরীরী কোনো বস্তুর ওপর মানুষ বিশ্বাস করত না। মানব চরিত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ গুণগুলোর অভাব রয়েছে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মধ্যে। আবার এই গুণগুলোর প্রবলভাবে উপস্থিতি লক্ষণীয় উদ্দীপকের পিয়াসের মধ্যে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন রাতের অন্ধকারে তার মামার ছবির ফ্রেমে হাত দিলে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। এতে সে মনে করে মৃত মামার অশরীরী আত্মা ভূত হয়ে তাকে ধাক্কা দেয়। প্রকৃতপক্ষে ছবির ফ্রেমে সে বৈদ্যুতিক শক খেয়ে পড়ে গিয়েছিল। অপরপক্ষে, উদ্দীপকের সজিব ছায়াটিকে অলৌকিক কিছু মনে করে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পিয়াস চিন্তাভাবনা ও লোকের কাছে জিজ্ঞাসার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় ছায়াটি প্রকৃতপক্ষে হোটেলের দারোয়ানের। এর মধ্যদিয়ে তার বুদ্ধি, বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার প্রকাশ ঘটেছে, যা আলোচ্য গল্পের নগেনের মধ্যে অনুপস্থিত। এই দিক দিয়েই তাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য সূচিত হয়েছে। ঘ. বিজ্ঞানবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে সজিবের মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব। বিজ্ঞান সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের সকল প্রকার কুসংস্কারাচ্ছন্নতার অযৌক্তিকতা প্রমাণ করতে সক্ষম। কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে মানুষ নানা অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস করে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষকে যদি বিজ্ঞানচেতনা দিয়ে ঘটনা বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে ঐসব বিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতা ধরা পড়ে। যেমনটি আমরা উদ্দীপকের পিয়াস ও ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তারের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখতে পাই। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে পরাশর ডাক্তার নগেনের ভয় পাওয়ার ঘটনা শুনে ভয় পাননি বরং তিনি নগেনের ভয় পাওয়ার ঘটনার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা খুঁজতে চেষ্টা করেছেন এবং প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করেছেন। উদ্দীপকের পিয়াসও রুমে দেখতে পাওয়া ছায়াটির প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পরাশর ডাক্তারের মতোই বিচক্ষণতা ও বিজ্ঞানচেতনার মাধ্যমে ঘটনা বিশ্লেষণে প্রয়াসী হয়েছিল। অপরপক্ষে, উদ্দীপকের সজিব রুমের মধ্যে দেখতে পাওয়া ছায়াটিকে অলৌকিক কিছু মনে করে ভয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে তার মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার অভাব প্রকাশিত হয়। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে আলোচ্য গল্পের পরাশর ডাক্তার ও উদ্দীপকের পিয়াসের মতো বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে পারলে সজিবের মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : নাতাশা মায়ের মৃত্যুর পর সৎ মায়ের সংসারে বড় হয়। সৎ মায়ের সঙ্গে নাতাশার সম্পর্ক ছিল খুব দূরের। আপন মায়ের স্থানে সে সৎ মাকে বসাতে পারেনি। তাদের মধ্যে কথাবার্তাও খুব কম হতো। নাতাশাকে মা কোনো টাকা পয়সা দিত না। সৎ মায়ের মনে কোথায় যেন একটি স্নেহধারা তার জন্য ছিল, যা নাতাশা অনুভব করতে পারেনি। একদিন নাতাশার প্রচণ্ড জ্বর হলে ওই সৎমা নাতাশার পাশে সারারাত জেগে থেকে তার সেবাশুশ্রুষা করে। নাতাশা তখন মায়ের প্রতি অশ্রদ্ধার জন্য অনুতপ্ত হয়। ক. কে সমস্ত সকালটা মড়ার মতো বিছানায় পড়ে রইল? খ. নগেন কেন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে? গ. উদ্দীপকের নাতাশা চরিত্রটির সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন চরিত্রের কী সাদৃশ্য রয়েছে? নির্ণয় করো। ঘ. উদ্দীপকে নগেন চরিত্রের সবটুকু প্রকাশিত হয়েছে কি? মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করো। |
ক.নগেন সমস্ত সকালটা মড়ার মতো বিছানায় পড়ে রইল। খ. ভূতের ভয়ে তথা মামার প্রেতাত্মার ভয়ে নগেন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করে। মৃত্যুর পর নগেন তার মামার উদারতার পরিচয় পায়। সে মামার প্রতি মিথ্যা ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখিয়ে তাকে ঠকিয়েছে ভেবে অনুতপ্ত হয়। তাই মামার তৈলচিত্রের কাছে ক্ষমা চেয়ে আত্মগ্লানি কমাতে চায়। কিন্তু ছবি স্পর্শ করা মাত্র সে ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারায়। দিনরাত সে শুধু এ কথাই ভাবে। এ ভয়ের কারণে নগেন বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা চিন্তা করে। গ. উদ্দীপকের নাতাশা চরিত্রটির সঙ্গে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মানসিকতার দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন মামার সংসারে বড় হলেও মামার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব ভালো ছিল না। সে মামাকে উপরে উপরে শ্রদ্ধা করত। নগেনের প্রতি তার মামারও যে ভালোবাসা ছিল তা সে বুঝতে পারেনি। মামা নগেনকে নিজের সন্তানের মতোই দেখত। তাই মৃত্যুর পূর্বে নিজের সন্তানের সমান টাকা নগেনের নামে উইল করে দিয়েছেন। নগেন তার মামার ভালোবাসার পরিচয় পেয়ে অনুতপ্ত হয়। উদ্দীপকের নাতাশা মায়ের মৃত্যুর পর সৎ মায়ের সংসারে বড় হয়েছে। সৎ মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব ভালো ছিল না। সৎ মায়ের মনের কোণে নাতাশার জন্য যে ভালোবাসা জমা ছিল তা সে জানত না। নাতাশার অসুস্থ অবস্থায় সেবাশুশ্রুষার মাধ্যমে সৎ মায়ের সে ভালোবাসা প্রকাশ পায়। নাতাশা তখন অনুতপ্ত হয়ে মায়ের কাছে ক্ষমা চায়। তাই বলা যায়, উল্লিখিত চরিত্র দুটি সাদৃশ্যপূর্ণ। ঘ. উদ্দীপকে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন চরিত্রের সবটুকু প্রকাশিত হয়নি। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নগেন চরিত্রের মধ্য দিয়ে ভূত-বিশ্বাসের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে নগেন মামাকে ভুল বুঝে তার প্রতি মনে মনে অন্যায় মানসিকতা লালন করে। পরে ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা থেকে জেগে ওঠা শ্রদ্ধাভক্তি প্রদর্শনের জন্য মামার তৈলচিত্রের ফ্রেমে হাত রেখে ধাক্কা খেয়ে ভয় পায়। এখানে নগেন বৈদ্যুতিক শকের বিষয়টিকে না বুঝে ভূত মনে করে। এতে তার কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার প্রকাশ ঘটে। অন্যদিকে উদ্দীপকে নাতাশার জন্য সৎ মায়ের ভালোবাসার বিষয়টি। সে না জেনে তার প্রতি অন্যায় মানসিকতা লালন করে। এরপর নাতাশা তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়। এখানে নাতাশার মধ্যে নগেন চরিত্রের অন্যান্য বিষয়ের উপস্থিতি থাকলেও ভূতে বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রকাশিত কুসংস্কারাচ্ছন্নতার বিষয়টি অনুপস্থিত। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকে নগেন চরিত্রের সবটুকু প্রকাশিত হয়নি। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : গালিব এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে রাত জেগে পড়াশোনা করে। কয়েকদিন আগে তার দাদু মারা গেছেন। দাদু মারা যাওয়ার পর থেকে রাতে জেগে পড়তে তার ভয় লাগে। সন্ধ্যার পর জানালা দিয়ে তাকালেই মনে হয় পাশের কলাবাগান থেকে দাদু তাকে হাত ইশারা করে ডাকছে। রাতে হালকা বাতাস বইতে থাকলেই সে দাদুকে কলাবাগানে দাঁড়িয়ে ডাকতে দেখে। কিন্তু দিনের বেলায় বাতাস থাকলেও দাদুকে কলাবাগানে দাঁড়িয়ে ডাকতে দেখা যায় না। ক. রুপার ফ্রেমটা কে সিন্দুকে তুলে রেখেছিল? খ. নগেনের হৃৎকম্প হতে লাগল কেন? গ. উদ্দীপকে তোমার পাঠ্য কোন গল্পের বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. গালিবের ভয় দূর করতে করণীয় কী? ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের আলোকে মতামত দাও। |
----- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : মানিক প্রকৃতির ডাকে গভীর রাতে বেরিয়ে দেখতে পায় একটু দূরে সাদা মতো কী যেন দেখা যায় এবং তা হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে মনে হয়। মানিক একেই ভূত মনে করে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর মানিকের বাবা এসে মানিককে উদ্ধার করে এবং জানতে পারে ভূত দেখে সে ভয় পেয়েছিল। আসলে সেটা কোনো ভূত ছিল না। সেটা ছিল একটি ছোট গাছ, যা রাতের বেলায় হালকা জ্যোৎস্নার আলোতে সাদা দেখাচ্ছিল। ক. ‘অশরীরী’ মানে কী? খ. নগেনের মামা কেমন লোক ছিলেন? গ. উদ্দীপকের মানিকের ভূত দেখার সঙ্গে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের কোনো ঘটনার সাদৃশ্য আছে কি? নির্ণয় কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করে” মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর। |
----- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : তনিমার স্কুলে ‘বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধিই পারে ভ্রান্তধারণার অবসান ঘটাতে’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্যার নবী মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর। আর এ নিরক্ষরতার কারণেই তাদের মাঝে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস বাসা বেঁধে আছে। ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের ভৌতিক ও অশরীরী ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসী। যা ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অন্তঃসারশূন্য।’ তাই তিনি বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। ক. কে মামার ছবিটা ফ্রেমে বাঁধিয়েছিল? খ. পরাশর ডাক্তার চুপ হয়ে গেলেন কেন? গ. উদ্দীপকের নবী মাহমুদের সাথে ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের কার সাদৃশ্য রয়েছে? ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূলভাবের ধারক’ মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই কর। |
----- |
তথ্যসূত্র: |
---|
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫। ৪. |