‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
পাছে লোকে কিছু বলে |
কামিনী রায়
করিতে পারি না কাজ,
সদা
ভয়, সদা লাজ,
সংশয়
সংকল্প
সদা টলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
আড়ালে আড়ালে থাকি,
নীরবে
আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ নাহি চলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
উঠে শুভ্র চিন্তা কত,
মিশে যায় হৃদয়ের তলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ যবে,
আঁখি
সযতনে শুষ্ক রাখি
পাছে লোকে কিছু বলে।
একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা
চলে যাই
উপেক্ষার ছলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্যে যবে
এক সাথে মিলে
সবে,
পারি না
মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
বিধাতা
দিছেন প্রাণ
থাকি সদা
ম্রিয়মাণ;
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
উৎস নির্দেশ: |
---|
‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটি ‘আলো ও ছায়া’ কাব্যগ্রন্থ নেওয়া হয়েছে। |
শব্দার্থ ও টীকা: |
---|
পাছে- পিছনে; পশ্চাতে; পরে। সদা- সবসময়। লাজ- লজ্জা; শরম সংশয়- সন্দেহ; দ্বিধা। সংশয়ে সংকল্প সদা টলে- মনের দৃঢ় ইচ্ছা পূরণ করায় বাধা তৈরি হয়। সংকল্প- মনের দৃঢ় ইচ্ছা। আড়ালে- অন্তরালে; আবরণ; পর্দা আপনা- নিজেকে নিজে। শুভ্র- সাদা, এখানে পরিষ্কার বা অমলিন অর্থে ব্যবহৃত। যবে- যখন। শুষ্ক- শুকনো; না ভেজা। প্রশমিতে- উপশম ঘটাতে; নিবারণ করতে। প্রশমিতে পারে ব্যথা- যন্ত্রণার উপশম ঘটাতে পারে। উপেক্ষা- গ্রাহ্য না করা, অবহেলা করা, গুরুত্ব না দেওয়া। ছল- ছুতা; ওজর। সবে- সবাই। ম্রিয়মাণ- কাতর; বিষাদগ্রস্ত। শক্তি- সামর্থ্য; ক্ষমতা। ভীতি- ভয়; শঙ্কা; আশঙ্কা। কবলে- গ্রাস; জবরদখল; বলে বা কৌশলে দখলে নেওয়া। |
পাঠের উদ্দেশ্য: |
---|
এ কবিতা পাঠ করে শিক্ষার্থীরা নিঃসংকোচ চিত্তে জীবনপথে পরিচালিত হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করবে। কে কী বলল তা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা থেকে তারা মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে। |
পাঠ-পরিচিতি: |
---|
কবিতাটি ‘আলো ও ছায়া’ কাব্যগ্রন্থ নেওয়া হয়েছে। কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ অনেক সময় দ্বিধাগ্রস্ত হয়। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে এই ভেবে তারা বসে থাকে। এর ফলে কাজ এগোয় না। যাঁরা সমাজে অবদান রাখতে চান তাঁদের দ্বিধা করলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে হবে। মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে হলে ভয়-ভীতি-সংকোচ উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। |
কবি-পরিচিতি: |
---|
কামিনী রায় বরিশালের বাসন্ডা গ্রামে ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৮৬ সালে কলকাতার
বেথুন কলেজ
থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ পাশ করে তিনি ওই কলেজেই অধ্যাপনায় নিযুক্ত
হন। আনন্দ ও বেদনার সহজ-সরল প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। মানবতাবোধ ও
নৈতিকতাকেও তিনি তাঁর কবিতার বিষয় করেছেন। তাঁর লেখা ছোটদের
কবিতাসংগ্রহের নাম ‘গুঞ্জন’। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’,
‘মাল্য ও নির্মাল্য’, ‘দীপ ও ধূপ’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁক
জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে
ভূষিত করে। ১৯৩৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
|
কর্ম-অনুশীলন: |
---|
ক. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ শীর্ষক কবিতার বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তোমার
কিংবা তোমার পরিচিত লোকজনের সমস্যা নিয়ে গল্প, নাটিকা বা প্রবন্ধ রচনা কর
(একক কাজ)। খ. তোমার ভিতরকার তিনটি সমস্যা খুঁজে বের করো এবং এই সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসার উপায় লেখ (একক কাজ)। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: |
---|
১. মহৎ কাজ সম্পাদনে কোনটিকে উপেক্ষা করা অনুচিত? ক. সংকোচ খ. সংশয় গ. সংকল্প ঘ. বাধা ২. আর্তের পাশে দাঁড়াতে গিয়েও কেউ কেউ কেন উপেক্ষা করে চলে যান? ক. রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়ে খ. সমালোচনার ভয়ে গ. সহযোগিতার ভয়ে ঘ. ছোট হওয়ার ভয়ে ৩. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটি পাঠকের মধ্যে কোন ধরনের অনুপ্রেরণা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ? ক. ভয়হীনতা খ. পরোপকারিতা গ. সাহসিকতা ঘ. সংকোচহীনতা উদ্দীপকটি পড় এবং ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও: মাসুদ গ্রামের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে। সে ভাবে এক সময় প্রচুর আয় হবে, বেকাররা স্বনির্ভর হবে। কিন্তু যদি সে এ কাজে সফল হতে না পারে, তাহলে লোকে তার সমালোচনা করবে। তাই সে তার পরিকল্পনা বাদ দেয়। ৪. উদ্দীপকের মাসুদের মাঝে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কোন বিশেষ দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? ক. ভীরুতা খ. সংশয় গ. হতাশা ঘ. দুর্বলতা ৫. কামিনী রায়ের দৃষ্টিতেই মাসুদের এ উদ্যোগ সফল করা যেতে পারে- i. দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলে ii. সকল সংশয় দূর করলে iii. সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে নিচের কোনটি সঠিক? ক. i ও ii গ. i ও iii খ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন: |
---|
প্রশ্ন- ১: ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটির কবি কে? উত্তর : ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটির কবি কামিনী রায়। প্রশ্ন- ২: আমাদের কীসের প্রবণতা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে? উত্তর : আমাদের নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রশ্ন- ৩: কামিনী রায় কোন কলেজ থেকে অনার্সসহ বি.এ পাস করেন? উত্তর : কামিনী রায় কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে অনার্সসহ বি.এ পাস করেন। প্রশ্ন- ৪: কামিনী রায় কত সালে জন্মগ্রহণ করেন? উত্তর : কামিনী রায় ১৮৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। প্রশ্ন- ৫: কামিনী রায় কী বিষয়ে অনার্স করেন? উত্তর : কামিনী রায় সংস্কৃতে অনার্স করেন। প্রশ্ন- ৬: কামিনী রায়ের কবিতায় কার প্রভাব রয়েছে? উত্তর : কামিনী রায়ের কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব রয়েছে। প্রশ্ন- ৭: কামিনী রায়ের লেখা ছোটদের কবিতা সংগ্রহের নাম কী? উত্তর : কামিনী রায়ের লেখা ছোটদের কবিতা সংগ্রহের নাম ‘গুঞ্জন’। প্রশ্ন- ৮: কোন বিশ্ববিদ্যালয় কামিনী রায়কে জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত করে? উত্তর : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কামিনী রায়কে জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। প্রশ্ন- ৯: কামিনী রায় কত সালে মৃত্যুবরণ করেন? উত্তর : কামিনী রায় ১৯৩৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রশ্ন- ১০: কোনটি যন্ত্রণার উপশম করতে পারে? উত্তর : একটি স্নেহের কথা যন্ত্রণার উপশম করতে পারে। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন: |
---|
প্রশ্ন- ১: কবি কেন কাজ করতে পারেন না? ব্যাখ্যা করো। উত্তর : সমালোচনার ভয়ে কবি কাজ করতে পারেন না। ➠ কবি কোনো কাজ করতে গিয়ে দ্বিধাবোধ করেন। কারণ কবির কাজ দেখে অনেকেই অনেক কিছু মনে করতে পারে। আবার অনেকে হয়তো সমালোচনা করতে পারে। তাই সমালোচনা ও লোকলজ্জার ভয়ে কবি কোনো কাজ করতে পারেন না। প্রশ্ন- ২: কবির প্রাণ কাঁদে কেন? ব্যাখ্যা করো। উত্তর : মানুষের দুঃখে কবির প্রাণ কাঁদে। ➠ আমাদের পৃথিবীতে অনেক অসহায় মানুষ আছে। এদের জীবন কাটে খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়ের অভাবে। জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া ও আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত। এদের দুঃখ-দুর্দশা কবি হৃদয়ে অনুভূত হয়। এজন্যই কবির প্রাণ কাঁদে। প্রশ্ন- ৩: ‘শুভ্র চিন্তা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? উত্তর : ‘শুভ্র চিন্তা’ বলতে সুন্দর চিন্তাকে বোঝানো হয়েছে। ➠ মানুষের মনে অনেক ভালো চিন্তার উদ্ভব ঘটে। অন্যের উপকার করার ইচ্ছা, কোনো ভালো কাজে নেতৃত্ব দেয়ার ইচ্ছা এরকম আরও অনেক রকম শুভ ইচ্ছা। দেশ ও দশের কল্যাণ করার ইচ্ছা আমাদের সবার মনেই জাগে। তাই দ্বিধা ত্যাগ করে এই শুভ চিন্তাগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে জীবন সার্থক হয়। এই কল্যাণ চিন্তা বা উদ্দেশ্যকেই কবি ‘শুভ্র চিন্তা’ বলেছেন। প্রশ্ন- ৪: ‘মহৎ উদ্দেশ্যে যবে/একসাথে মিলে সবে ‘পারি না মিলিতে সেই দলে’।- কে সেই দলে কেন মিশতে পারে না? ব্যাখ্যা করো। উত্তর : দ্বিধাগ্রস্ত মানুষেরা তাদের সংশয়ের কারণে মহৎ উদ্দেশ্যে যারা একসাথে মিশে তাদের দলে মিশতে পারে না। ➠ সমাজের দুর্বলচিত্তের মানুষেরা সমালোচনার ভয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে কোথাও নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না। তাদের মনে সদা সংশয় থাকে, এই বুঝি লোকে তাকে কিছু বলে। সে কারণে মহৎ উদ্দেশ্যে কতিপয় লোক একসাথে মিললেও তারা সে দলে মিশতে পারে না। প্রশ্ন- ৫: ‘সম্মুখে চরণ নাহি চলে’ কেন? উত্তর : পরের সমালোচনার ভয়ে মন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়লে মানুষ সামনে নেতৃত্ব দিতে পারে না। তাই সম্মুখে পা চলে না। ➠ যারা পরের সমালোচনায় ভীত তারা সামনে থেকে কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে নিজেদের নীরবে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যায়। তাই মনে শুভ কাজের সংকল্প থাকা সত্ত্বেও তারা সংশয়ের কারণে সম্মুখে চরণ ফেলতে পারে না। প্রশ্ন- ৬: ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটির প্রতিপাদ্য বিষয় কী? উত্তর : ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটির প্রতিপাদ্য বিষয় গণসচেতনতা সৃষ্টি ও চেতনাবোধ জাগ্রত করা । ➠ আমাদের সমাজে কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ অনেক সময় দ্বিধাগ্রস্ত থাকে সমালোচনার ভয়ে। কিন্তু যারা সমাজের কাজ করতে চান তাদের দ্বিধা করলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে হবে। মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে হলে ভয়ভীতি সংকোচ উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ১. ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনি পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’ ২. ‘নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো যুগ-জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলো। সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে। নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে, আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে।’ ক. ‘প্রশমিতে’ শব্দটির অর্থ কী? খ. ‘সংশয়ে সংকল্প সদা টলে’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশের বক্তব্য ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কোন স্তবকের বিপরীত ভাব ধারণ করেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশের নিন্দুক ও ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার নিন্দুকের তুলনামূলক আলোচনা করো। |
------------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : গ্রীষ্মের ছুটি হলে শফিক বাড়িতে আসে। কয়েকজন বেকার যুবক ও সহপাঠী বন্ধুকে নিয়ে পরিকল্পনা করে গ্রামে নৈশবিদ্যালয় খোলার। সবাই তার এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। এজন্য প্রয়োজনীয় বইপত্র, ঘর, শিক্ষক সবই নির্বাচন করে। এমন সময় গ্রামের এক লোক বলে, এর আগে কামাল মাস্টারের মতো মানুষ এ কাজে ফেল মেরেছে, সেখানে কচি শিশুরা খুলবে নৈশবিদ্যালয়? একথা শুনে তারা দমে যায়। ক. ‘সংকল্প’ শব্দটির অর্থ কী? খ. একটি স্নেহের কথায় কীভাবে আমাদের ব্যথা দূর হতে পারে? গ. শফিকের উদ্যোগ ব্যাহত হওয়ার কারণ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর। ঘ. শফিকের মাঝে কী ধরনের পরিবর্তন এলে সে তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হতো তা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে যুক্তিসহ লেখ। |
ক. ‘সংকল্প’ শব্দটির অর্থ মনের দৃঢ় ইচ্ছা। খ. একটি স্নেহের কথায় যে আদর থাকে তার ছোঁয়ায় আমাদের ব্যথা দূর হতে পারে। ➠ মানুষের মন সংবেদনশীল। এ মন কটু কথায় কষ্ট পায় আর স্নেহের কথায় সুখ অনুভব করে। ব্যথিত মানুষ স্বভাবতই মানসিকভাবে অন্যের সাহায্য প্রত্যাশা করে। মানুষের মনে যদি কোনো গভীর কষ্ট জমে থাকে, তাহলে যদি কেউ স্নেহের কথা বলে তার মন থেকে সেই কষ্ট অনেক লাঘব হয়ে যায়। অনেক কাজে আমরা সফল হতে পারি না, তখন আস্থা হারিয়ে ব্যথাতুর সময় অতিবাহিত করতে থাকি। এ সময় একটি স্নেহ পূর্ণ কথাই হৃদয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। গ. শফিকের উদ্যোগ ব্যাহত হওয়ার কারণ হিসেবে নিন্দুকের সমালোচনাকে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় ইঙ্গিত করা হয়েছে। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি সর্বদা লোকের কথায় ভিতু হয়ে পড়েন। কোনো কাজ করতে গেলে লোকে কী ভাববে, কী মনে করবে এ চিন্তায় অস্থির হন। লোকের কথায় সংকল্পে সংশয় দেখা দেয়। মহৎ কোনো কাজ কবি সম্পাদন করতে সাহসী হন না। লোকলজ্জার ভয়ে, সমালোচনার ভয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েন। ➠ উদ্দীপকের শফিকের ক্ষেত্রেও নিন্দুকদের সমালোচনার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। শফিক যখন উদ্যোগী হয়ে গ্রামের কয়েকজন বেকার যুবক ও সহপাঠী বন্ধুকে একত্রিত করে পরিকল্পনা করে গ্রামে একটি নৈশবিদ্যালয় খোলার। তখন এক লোক উপস্থিত হয়ে তাদের কাজকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। তার নেতিবাচক কথায় শফিকের সুন্দর উদ্যোগ ব্যাহত হয়। তাই বলা যায়, ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় ফুটে ওঠা নিন্দুকের সমালোচনার কারণেই শফিকের সুন্দর উদ্যোগ ব্যাহত হয়। ঘ. সমালোচনা উপেক্ষা করে দৃঢ় মনোবলে এগিয়ে গেলে শফিক পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হতো। ➠ কামিনী রায় তাঁর ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় লোকের কথায় মানুষের গুটিয়ে থাকার প্রবণতাকে তুলে ধরেছেন। কোনো কাজ করতে গেলে মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত হয়। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে এ ভেবে বসে থাকে মানুষ। এর ফলে কোনো কাজ এগোয় না। যারা সমাজে অবদান রাখতে চান তাদের দ্বিধা করলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে হবে। ➠ উদ্দীপকে শফিকের উদ্যোগ মহৎ। বেকার যুবক ও বন্ধুদের নিয়ে মানুষকে শিক্ষিত করতে তারা নৈশবিদ্যালয় স্থাপন করতে চায়। প্রয়োজনীয় বইপত্র, ঘর, শিক্ষক সবই নির্বাচন করে কিন্তু এক লোকের কথায় তারা সে উদ্যম হারিয়ে ফেলে। লোকের কথায় তারা দমে যায় মহৎ উদ্যোগ থেকে। কিন্তু ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কবির চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে তারা যদি দ্বিধাহীন চিত্তে এগিয়ে যেত তাহলে তাদের উদ্যোগ সফল হতো। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায় যে, উদ্দীপকের শফিক দ্বিধা, ভয়, সংশয় থেকে মুক্ত হতে পারলেই তার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হতো। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় পাস করা সোহেল চাকরি খুঁজে ব্যর্থ হয়ে নিজ গ্রামে সৌদি আরবের নানা জাতের খেজুরের বাগান শুরু করে। তখন পরিবার ও গ্রামের অনেকেই তার এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা রকম ব্যঙ্গাত্মক কথা বলত। কিন্তু সে থেমে থাকে না। অথচ ঐ বাগান থেকে সোহেল আজ লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক। ক. কবি কামিনী রায়ের কবিতায় কার প্রভাব স্পষ্ট? খ. ‘শক্তি মরে ভীতির কবলে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের সোহেলের কাজে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা কর। ঘ. “উদ্দীপকের সোহেলের মতো মানুষদের জন্য ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটি প্রেরণার উৎস”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। |
ক. কবি কামিনী রায়ের কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব স্পষ্ট। খ. ভীতি মনকে দুর্বল করে বলে ভীতির কবলে শক্তি মুখ থুবড়ে পড়ে। আলোচ্য অংশে এ কথাই বলা হয়েছে। ➠ মানুষের মনের মধ্যে ভালো কাজ করার শক্তি জাগে, সে সমাজ ও সংসারের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করতে চায়। কিন্তু পরক্ষণেই সেই শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। এর কারণ নিন্দুকের ভয়। ভালো কাজ করতে গিয়ে পাছে কিনা মানুষের কুৎসার সম্মুখীন হয়, লজ্জার মধ্যে পড়তে হয়। আলোচ্য চরণে নিন্দুকদের ভয় পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাদের ভয়েই মনের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। গ. উদ্দীপকের সোহেলের কাজে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার দ্বিধাগ্রস্ত-সংশয় কাটিয়ে ইতিবাচক দিকটি ফুটে উঠেছে। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মহৎ কাজের জন্য মানুষের মনে উদ্ভূত শুভ চিন্তার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ভালো কাজে ইচ্ছুক মানুষের মনে বুদবুদের মতো অসংখ্য শুভবুদ্ধির উদয় হয়। দ্বিধা ত্যাগ করে এ শুভ চিন্তাগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে জীবন সার্থক হয়। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, সোহেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পরে কোনো চাকরি না পেয়ে নিজ গ্রামে সৌদি আরবের বিভিন্ন জাতের খেজুরের বাগান শুরু করে। তখন তার পরিবার ও গ্রামের লোকজন তার কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা রকম ব্যঙ্গাত্মক কথা বলে। কিন্তু সোহেল লোকলজ্জা ও সমালোচনা উপেক্ষা করে আপন মনের জোর ও দৃঢ়তার কারণে আজ ঐ বাগান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক। অর্থাৎ উদ্দীপকের সোহেলের কাজে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার সংশয়গ্রস্ত মানসিকতা পরিহার করে দৃঢ়ভাবে নিজ লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার ইতিবাচক দিকটি ফুটে উঠেছে। ঘ. ‘উদ্দীপকের সোহেলের মতো মানুষদের জন্য ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটি প্রেরণার উৎস’- এ মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে গেলে অনেক সময় বিধিনিষেধের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এসব ভয়ভীতি ও সংকোচ উপেক্ষা না করলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় নিঃসংকোচিত হয়ে জীবনপথে পরিচালিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে বরং মুক্ত স্বাধীনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা ভালো কাজ করতে গেলে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করে চলতেই হবে। ➠ আমরা উদ্দীপকের সোহেলের মধ্যে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটির মর্মবাণী খুঁজে পাই। সোহেল মহৎ কাজের উদ্যোগ নিয়ে সংকোচবোধকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। দৃঢ় মনোবলের কারণে সোহেলের সিদ্ধান্ত থেকে কেউ তাকে টলাতে পারেনি। দ্বিধা এবং ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সোহেল নিজ শ্রমবলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায় যে, উদ্দীপকের সোহেলের মতো মানুষদের জন্য ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটি প্রেরণার উৎস। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : গ্রামের ছেলে মেহেদী গ্রামের বাজারে অনলাইন সেবা প্রদানের জন্য একটি কম্পিউটার দোকান দিয়েছে। দোকানে সেবা পেতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার দবির এ অবস্থা দেখে বলল, মেহেদীর কী রাজনৈতিক খায়েস আছে? এ কথা শুনে মেহেদী পিছু হটে যায়? ক. কামিনী রায়কে কোন স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়? খ. ‘একটি স্নেহের কথা প্রশমিতে পারে ব্যথা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. মেহেদীর উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর। ঘ. মেহেদীর মানসিক দৃঢ়তা থাকলেই সে সফল হতো ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন কর। |
ক. কামিনী রায়কে জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। খ. একটি স্নেহের কথায় যে আদর থাকে তার ছোঁয়ায় আমাদের ব্যথা দূর হতে পারে। ➠ মানুষের মন সংবেদনশীল। এ মন কটু কথায় কষ্ট পায় আর স্নেহের কথায় সুখ অনুভব করে। ব্যথিত মানুষ স্বভাবতই মানসিকভাবে অন্যের সাহায্য প্রত্যাশা করে। মানুষের মনে যদি কোনো গভীর কষ্ট জমে থাকে, তাহলে যদি কেউ স্নেহের কথা বলে তার মন থেকে সেই কষ্ট অনেক লাঘব হয়ে যায়। অনেক কাজে আমরা সফল হতে পারি না, তখন আস্থা হারিয়ে ব্যথাতুর সময় অতিবাহিত করতে থাকি। এ সময় একটি স্নেহ পূর্ণ কথাই হৃদয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। গ. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় বর্ণিত সমালোচকের সমালোচনার কারণে উদ্দীপকের মেহেদীর উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় সমালোচকের সমালোচনার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সমালোচকের কাজই সমালোচনা করা। এক্ষেত্রে ভালো আর মন্দ নেই। তারা সর্বদা সমালোচনা করে মানুষকে দমিয়ে দেয়। মানুষের মনের মধ্যে সৃষ্টি করে দ্বিধার পাহাড়। ➠ উদ্দীপকের মেহেদীও সমালোচনার কারণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সে মানুষের মাঝে আধুনিক সভ্যতার সুফল পৌঁছে দিতে কম্পিউটারের দোকান দেয়। তাই সাধারণ মানুষ তার দোকানে ভিড় জমায়। কিন্তু বিষয়টি মেনে নিতে পারে না ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। সে মেহেদীর ব্যবসাকে রাজনীতির সঙ্গে তুলনা করে তার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই বলা যায়, কবিতায় বর্ণিত সমালোচনার কারণে মেহেদীর উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ঘ. মেহেদীর মানসিক দৃঢ়তা থাকলেই সে সফল হতো ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় সমালোচনার বিষয়টি বিদ্যমান। সমালোচকের কাজই সমালোচনা করা। কিন্তু এতে আমাদের ভীত হওয়া বা মহৎ কাজ থেকে ফিরে আসা উচিত নয়, বরং মানসিকতাকে দৃঢ় করতে হয়। যাতে সকল সমালোচনাকে উপেক্ষা করে আমরা সফল হতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হয়। তবেই জীবনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। ➠ উদ্দীপকের মেহেদী মানুষের মাঝে অনলাইন সেবা পৌঁছে দিতে কম্পিউটারের দোকান দেয়। ফলে মানুষ তার দোকানে ভিড় জমায়। কিন্তু বিষয়টি ভালো চোখে দেখে না ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। তার কঠোর সমালোচনার কারণে মেহেদী তার মহৎ উদ্যোগ থেকে সরে আসে। যা মোটেও ঠিক নয়। ➠ সমালোচনার কারণে কখনই মহৎ উদ্যোগ থেকে ফিরে আসা উচিত নয়। বরং দৃঢ় মানসিকতা ধারণ করতে হয়। তবেই সফল হওয়া সম্ভব আর এই মানসিকতা মেহেদী ধারণ করলে সেও সফল হতো। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : নকুল তার বিদেশি বন্ধুকে নিয়ে রমনা পার্কে বেড়াতে গিয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে তারা গল্প করছে। এমন সময় নকুল দেখল, একটা শালিক পাখির পায়ে জালের মতো কী যেন আটকে আছে, তাই পাখিটা উড়তে পারছে না- এটা দেখে নকুলের মনে দয়া হলো পাখিটির জন্য। কিন্তু সে পাখিটিকে মুক্ত করতে পারল না, কারণ সামান্য পাখিকে মুক্ত করার মতো ক্ষুদ্র কাজ করলে বিদেশি বন্ধুর সামনে যদি সম্মান খোয়া যায়, এই ভয় নকুলের সদিচ্ছাকে সুপ্ত করে দিল। খানিক বাদে এক দুষ্টু ছেলে এসে পাখিটা ধরে নিয়ে গেল। ক. সংকল্প সর্বদা কীসে টলে? খ. ‘সদা ভয়, সদা লাজ’ - ব্যাখ্যা করো। গ. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার প্রথম স্তবকের সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য দেখাও। ঘ. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতা ও উদ্দীপক একই সত্য নির্দেশ করেমন্তব্যটি বিচার করো। |
ক. সংকল্প সর্বদা সংশয়ে টলে। খ. ‘সদা ভয়, সদা লাজ’-চরণটি দ্বারা মনের জড়তা বোঝানো হয়েছে। ➠ সমালোচনার জন্য ভালো কাজ করতেও মানুষ ভয় ও লজ্জা পায়। কারণ যদি কাজ শুরু করে শেষ না করা যায় তাহলে লোকমুখে সমালোচনার ঝড় উঠবে, সমাজে সে মুখ দেখাতে পারবে না। ফলে অন্তরের সংকল্প টলে। গ. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার প্রথম স্তবকের সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার প্রথম স্তবকে কবি বলেছেন- আমরা কাজ করতে পারি না, কারণ আমাদের মনে সর্বদাই রয়েছে ভয়ের আনাগোনা। লজ্জা আমাদের সর্বদাই তাড়া করে ফেরে। আমাদের মনে যদি কোনো সংকল্প আসে, তবে তার চেয়ে বেশি আসে সংশয়। কাজটা করা উচিত কী উচিত না- এটা ভাবতে ভাবতেই আমাদের সংকল্প স্তিমিত হয়ে পড়ে। ➠ উদ্দীপকের নকুলের চরিত্রে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, নকুলের খুব ইচ্ছা হচ্ছিল পাখিটাকে মুক্ত করে দিতে। কারণ দুষ্টু শিকারির চোখে পড়লে পাখিটার প্রাণনাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বিদেশি বন্ধু সঙ্গে থাকার কারণে নকুল পাখিটাকে মুক্ত করতে পারে না। পাখিটাকে মুক্ত করলে নতুন বন্ধুর কাছে যদি সম্মান নষ্ট হয়, এই ভয়ে নকুল পাখিটাকে বাঁচাতে পারে না। তাই বলা যায়, ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার প্রথম স্তবকের সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে। ঘ. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতা ও উদ্দীপক একই সত্য নির্দেশ করে মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি আমাদের মনের লজ্জাকে ফুটিয়ে তুলেছেন, আমাদের মনে যদি কোনো সংকল্প সৃষ্টি হয়, তার চেয়ে বেশি সৃষ্টি হয় সংশয়। ফলে মনের মাঝেই সংকল্পের বিলুপ্তি ঘটে। বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটে না। লোকলজ্জার ভয়ে আমরা সর্বদাই কর্তব্যকে আড়ালে রাখি। কখনো কখনো বিশেষ পরিস্থিতিতে আমাদের প্রাণ কাঁদে। কিন্তু লজ্জার কারণে সে কান্না চোখে প্রকাশ পায় না। এভাবে লোকলজ্জার কারণে আমরা মহৎ কাজ করা থেকেও বিরত থাকি। ➠ উদ্দীপকের নকুল একদিন বান্ধবীকে নিয়ে রমনা পার্কে বেড়াতে গেল। হঠাৎ দেখল একটা শালিক পাখি উড়তে পারছে না। পাখিটার পা কিছুর সঙ্গে আটকে রয়েছে। পাখিটাকে মুক্ত করার ইচ্ছা নকুলের মনে জাগল, কারণ যদি কোনো শিকারি অথবা দুষ্টু ছেলে পাখিটাকে দেখে- তবে ধরে নিয়ে যাবে। নকুলের এই ভালো সংকল্প বাস্তবে রূপ লাভ করল না। কারণ তার বিবেক লজ্জা দ্বারা আচ্ছন্ন। সে চিন্তা করল, তার সঙ্গে বিদেশি বন্ধু রয়েছে। পাখিটাকে মুক্ত করতে গেলে বন্ধুর কাছে সম্মানহানি হতে পারে। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় আমাদের মনের অহেতুক সংশয়ের দিকটি প্রকাশ করা হয়েছে, যা উদ্দীপকের নকুলের চরিত্রে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ ও উদ্দীপক একই সত্য নির্দেশ করে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ছোটবেলা থেকে গান গাওয়ার প্রতি দারুণ ঝোঁক রমার। অসাধারণ গানের কণ্ঠ তার। একসময় সহপাঠীরা ওর গান শুনে হাসাহাসি করেছে। অভিভাবকেরা বিদ্রুপ করে বলেছেন, “কণ্ঠশিল্পীরা ভাত পায় না। তার চেয়ে মন দিয়ে লেখাপড়া কর।” রমা তবু হাল ছাড়েনি। আজ সে দেশের খ্যাতনামা একজন কণ্ঠশিল্পী। ক. হৃদয়ে বুদবুদের মতো কী ওঠে? খ. ‘আড়ালে আড়ালে থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি’ ব্যাখ্যা করো। গ. রমার মনোভাব ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কোন দিকটির বিরোধিতা করে, ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকের রমা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলবক্তব্যের বিপরীত মেরুর মানুষ।” উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় করো। |
ক. হৃদয়ে বুদবুদের মতো শুভ্র চিন্তা ওঠে। খ. ‘আড়ালে আড়ালে থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি।’- চরণ দুটি দ্বারা কবি যা বুঝিয়েছেন তা হলো লোকলজ্জা ও সমালোচনার ভয়ে কবি আড়ালে আড়ালে থাকেন এবং নীরবে নিজেকে ঢেকে রাখেন। ➠ সমাজের দুর্বল মানুষেরা সর্বদাই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। কারণ, সমাজে নিন্দুক লোকের অভাব নেই, যারা কারো দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা করতে একটুও কুণ্ঠিত হয় না। দুর্বল চিত্তের মানুষেরা তাদের দুর্বলতার জন্য ঠিকমতো কোনো কাজ করতে পারে না। সেই কারণে লোকলজ্জা ও সমালোচনার ভয়ে নিজেদেরকে আড়ালে ঢেকে রাখে। গ. রমার মনোভাব ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলবক্তব্যের দ্বিধাগ্রস্ত মানসিকতার বিরোধিতা করে। ➠ কবি কামিনী রায় রচিত ‘পাচ্ছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার থেকে জানতে পারি যে, দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে কোনো মহঃকাজ সম্পন্ন করা যায় না। কবির অন্তরে বুদবুদের মতো অসংখ্য ভাবনার উদয় হলেও ভয় ও লজ্জায় তা অন্তরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ➠ উদ্দীপকের সহপাঠীদের ব্যঙ্গ, অভিভাবকদের বিদ্রুপ রমাকে গান গাওয়া থেকে টলাতে পারে নি। মনের জোর ও দৃঢ়তার জন্যে রমা একদিন দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার বিরুদ্ধে মনোভাবই প্রকাশিত হয়েছে। সহজভাবে বলা চলে রমার দৃঢ় মনোভাব ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার সংশয়গ্রস্ত মানসিকতার বিপরীতে অবস্থান করে। ঘ. “উদ্দীপকের রমা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলবক্তব্যের বিপরীত মেরুর মানুষ উক্তিটি যথার্থই। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় রমার বিপরীত মানসিকতার সন্ধান পাওয়া যায়। এ কবিতায় মানসিক জড়তাগ্রস্ত মানুষের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। আড়ালে আড়ালে লুকিয়ে থেকে যারা সম্মুখে পা বাড়াতে চায় না, তাদের দ্বারা কোনো মহৎকাজ হতে পারে না বলে কবি মনে করেন। ➠ উদ্দীপকটিতে রমার দৃঢ় মনোভাবের প্রকাশ পাওয়া যায়। মানসিক জোরের বদৌলতেই সে সহপাঠীদের ব্যঙ্গ, অভিভাবকের বিদ্রুপ হজম করে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অন্তরের শক্তি দুর্বল হলে রমা দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী হতে পারত না। ➠ উল্লিখিত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায় যে, রমা আলোচ্য ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলবক্তব্যের বিপরীত মেরুর মানুষ। উদ্দীপকে রমার দ্বিধাহীন মন এবং ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় কবির দ্বিধাগ্রস্ত মনের প্রকাশ ঘটেছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : নবনী আর মিতা দুই বান্ধবী। নবনীর বাবা একজন কাঠ ব্যবসায়ী। বাজারে তার ফার্নিচারের দোকান আছে। সমাজেও বেশ নামডাক। তবে নবনী তার বাবাকে খুব ভয় পায়। আর মিতার বাবা রিকশাচালক, দিনমজুরির পয়সায় কোনোমতে মিতাদের সংসার চলে। এবারের ঈদে নবনী চারটা জামা পেয়েছে। তার মন বেশ খুশি হয়ে ওঠে। কিন্তু মিতাকে কেউ কোনো জামা দেয়নি। তার বাবাও কিনে দিতে পারেনি। নবনীর খুব ইচ্ছা ছিল মিতাকে একটা জামা দেয়ার। কিন্তু বাবার ভয়ে মিতাকে নবনীর জামা দেয়া হয়ে ওঠে না। ক. শুভ্র চিন্তা কোথায় মিশে যায়? খ. ‘কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি সযতনে শুষ্ক রাখি’- ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. নবনীর মানসিকতাকে তুমি সমর্থন কর কি? ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করো। |
ক. শুভ্র চিন্তা হৃদয়ের তলে মিশে যায়। খ. কোনো বিষয়ে প্রাণ কাঁদলেও আপন আবেগকে সংযত রেখে চোখ শুকনো রাখার বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্নোক্ত উক্তিতে তুলে ধরা হয়েছে। ➠ প্রাণ কাঁদলেও তা গোপন করার জন্য চোখ শুকনো রাখা হয়। সমাজের দুর্বল চিত্তের মানুষেরা কাজ করতে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়; কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে, এই ভেবে তারা বসে থাকে। ফলে কাজ এগোয় না। তাদের প্রাণ কেঁদে ওঠে। কিন্তু তারা তাদের আঁখি সযতনে শুষ্ক রাখে কেননা এখানেও সংশয়, পাছে লোকে কিছু বলে! গ. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার ভয়ের কারণে শক্তি বা সংকল্প বিনাশ হওয়ার দিকটিই উদ্দীপকের নবনীর চরিত্রে প্রকাশ পেয়েছে। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, আমাদের মনে অনেক সময় শুভ্র চিন্তার জাগরণ ঘটে। ভালো কাজের জন্য সংকল্প সৃষ্টি হয়। কিন্তু যখনই মনে ভালো সংকল্প জাগরিত হয়, তখনই আবার ভীতির কারণে আমরা কাতর হয়ে পড়ি। সামনে একটা বাধার প্রাচীর সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি আর পারিপার্শ্বিকতার কারণে সেই বাধার প্রাচীর ভেঙে ভালো ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না। এসব কারণে আমরা বা আমাদের সমাজ অনেক ভালো কাজ থেকে বঞ্চিত হয়। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, নবনী আর মিতা দুই বান্ধবী, নবনীর পিতা অনেক টাকাপয়সার মালিক। কিন্তু নবনী তার পিতাকে ভয় পায়। আর মিতার বাবা খুব গরিব। ঈদে নবনী চারটা জামা পায়। অন্যদিকে মিতার বাবা তাকে একটা জামাও কিনে দেয়ার সাধ্য রাখে না। নবনীর খুব ইচ্ছা ছিল মিতাকে অন্তত একটা জামা দেয়ার। কিন্তু নবনী যেহেতু তার বাবাকে ভয় পায়, তাই মিতাকে তার জামা দেয়া হয়ে ওঠে না। তাই বলা যায়, ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার ভয়ের কারণে শক্তি-সামর্থ্য বিনাশ হওয়ার বিষয়টিই প্রকাশ করে। ঘ. উদ্দীপকের নবনীর মানসিকতাকে আমি সমর্থন করি না। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছেন, তা মূলত সংশয় থেকেই সৃষ্টি। লোকলজ্জা, ভয় ইত্যাদি মূলত সংশয় থেকেই নিঃসৃত। সংশয় মনে বাসা বাঁধার কারণে মানুষ অন্যের সঙ্গে মিশতে পারে না, ভালো ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না। প্রাণ কাঁদলেও চোখে জল আসতে দেয় না। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, নবনীর বান্ধবী মিতা, নবনীর বাবা সমাজের উঁচু ব্যক্তি, টাকা-পয়সাও পরিমাণে বেশি, আর মিতার বাবা গরিব রিকশাচালক। সামান্য অর্থ দিয়ে অতি কষ্টে তাকে সংসার চালাতে হয়। ঈদে নবনী চারটা জামা পায়। ফলে তার মন খুশি হয়ে ওঠে। অন্যদিকে গরিবের কন্যা মিতার ভাগ্যে একটা জামাও জোটে না, কোমল মনের অধিকারী নবনীর বেশ ইচ্ছা হয়, সে মিতাকে ঈদ উপলক্ষে একটা জামা উপহার দিবে। কিন্তু বাবাকে ভয় পাওয়ার কারণে সংশয়ে পড়ে মিতাকে নবনী কোনো জামা দিতে পারে না। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, সংশয় থেকে সৃষ্ট ভয় ব্যক্তিসত্তাকে অবদমিত করে রাখে। প্রাণকে কর্ম বা উদ্যমশূন্য করে ফেলে। এ ধরনের মানসিকতা কল্যাণময় কাজের অন্তরায়। তাই আমি নবনীর মানসিকতা সমর্থন করি না। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বাদশা বাবর দিল্লি রাজপথে হাঁটছিলেন। ছদ্মবেশী হওয়ায় তাকে কেউ চিনতে পারল না। দিল্লির মানুষের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করাই তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। এমন সময় চারদিকে হুলস্থূল পড়ে গেল। লোকজন প্রাণ ভয়ে পালাতে লাগল। কারণ একটা পাগলা হাতি কোথা থেকে ছুটে এলো। সবাই পালিয়ে গেল। শুধু শূন্য পথে পড়ে থাকল একটা অবোধ শিশু। মেথরের শিশু হওয়ায় কেউ তাকে বাঁচাতে এলো না। কিন্তু ছদ্মবেশী বাবর ছুটে এলেন এবং মত্ত হাতির সম্মুখ থেকে শিশুটির জীবন রক্ষা করলেন। ক. স্নেহের কথা কী প্রশমন করতে পারে? খ. আমাদের প্রাণ থাকা সত্ত্বেও আমরা ম্রিয়মাণ থাকি কেন? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার বৈসাদৃশ্য দেখাও। ঘ. “ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় যে সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে, উদ্দীপকের বাবরের চরিত্রে তার সমাধান রয়েছে” মন্তব্যটির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করো। |
ক. স্নেহের কথা ব্যথা প্রশমন করতে পারে। খ. আমাদের অন্তরে ভীতি জমাট থাকার কারণে প্রাণ থাকা সত্ত্বেও আমরা ম্রিয়মাণ থাকি। ➠ বিবেকের দরজায় যখন কোনো কর্তব্য কড়া নাড়ে, তখন আমরা তা সমাধান করি না। অথচ সে কর্তব্য সমাধানের মতো আমাদের শক্তি ও ক্ষমতা আছে। কিন্তু মনে যে ভীতির লালন চলে, তা আমাদেরকে ম্রিয়মাণ করে রাখে। গ. সংকোচ ও সমালোচনার গুরুত্ব বিবেচনার দিক দিয়ে উদ্দীপকে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন যে, আমরা সদা সংশয় আর লাজের মধ্যে মহৎ কাজ করতে দ্বিধা করি। কর্তব্য থেকে নিজেদেরকে সযতনে আলাদা করে রাখি। কারণ আমরা সর্বদা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তা করি। ➠ উদ্দীপকের বাদশা বাবর মানুষের সমস্যা স্বচক্ষে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে রাজপথে ছদ্মবেশে হাঁটছিলেন। এমন সময় দেখলেন একটা পাগলা হাতি ছুটে আসছে। মুহূর্তে রাজপথ শূন্য হয়ে গেল। শুধু পড়ে থাকল একটা মেথরের শিশু। বাবর মেথরের শিশু হওয়ায় অবজ্ঞা করলেন না, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মত্তহাতির সামনে থেকে শিশুটির প্রাণ বাঁচালেন। বাদশা বাবর তাঁর কাজে সংশয় ও লোক-লজ্জা ত্যাগ করেছেন। এই দিক দিয়ে উদ্দীপকের সাথে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। ঘ. “ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় যে সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে, উদ্দীপকের বাবরের চরিত্রে তার সমাধান রয়েছে” এ মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি আমাদের চরিত্রের সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। আমরা লোকলজ্জা ও ভয়ে ইচ্ছামতো কাজ করতে পারি না, মনের মধ্যে অনেক সময় অনেক ভালো কিছু উঁকি দেয়। কিন্তু সেসব ভালো কাজ মনেই মিলিয়ে যায়। সংশয় সেসব উন্নত চিন্তার প্রতিফলন ঘটতে দেয় না। তবে বাবরের মতো সংশয় ও শঙ্কামুক্ত, ভয়শূন্য মানসিকতা সকল বাধাকে অতিক্রম করে উন্নত চিন্তার বাস্তব প্রতিফলনে সহায়তা করবে। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, দিল্লির বাদশা বাবর ছদ্মবেশে প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশা ও সমস্যা দেখার জন্য দিল্লির রাস্তায় হাঁটছেন। এসময় হঠাৎ দেখা গেল একটা মত্ত হাতি ছুটে আসছিল। বাঁচার তাগিদে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেল, শুধু রাস্তায় পড়ে থাকল এক মেথরের শিশু। মেথরের শিশু হওয়ায় কেউ তাকে বাঁচানোর তাগিদ অনুভব করল না। কিন্তু বাদশা বাবর স্থির থাকলেন না, প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটে গেলেন মত্তহাতির সামনে। শিশুটিকে নিয়ে ফিরিয়ে দিলেন মায়ের কোলে। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, বাবরের চরিত্র সংশয় ও শঙ্কামুক্ত। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় যে সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে, উদ্দীপকের বাবরের চরিত্রে তার সমাধান রয়েছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বাদশা মিয়া সমাজের ভালো কাজ দেখতে পারে না। কেউ ভালো কাজে হাত দিলে সে বাধা প্রদান করে। সরাসরি বাধা দিতে না পারলে গোপনে গোপনে সেই ব্যক্তির সমালোচনা করে যাতে কাজ করা থেকে সে বিরত থাকে। এভাবে সে সমাজের বহু উদ্যোগী মানুষকে ভালো কাজ করা থেকে বিরত রেখেছে। তাই গ্রামের সবাই ভালো কাজ করার আগে বাদশা মিয়ার কথা স্মরণ করে ভয় পায়। ক. কামিনী রায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? খ. ‘সম্মুখে চরণ নাহি চলে’ কেন? গ. উদ্দীপকের বাদশা মিয়া ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কার প্রতীক? ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘উদ্দীপকের বাদশা মিয়াদের মতো মানুষ সমাজে ভালো কাজের অন্তরায়’।- ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটি বিচার করো। |
ক. কামিনী রায় বরিশালের বাসন্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খ. পরের সমালোচনার ভয়ে মন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়লে মানুষ সামনে নেতৃত্ব দিতে পারে না। তাই সম্মুখে চরণ চলে না। ➠ যারা পরের সমালোচনায় ভীত তারা সামনে থেকে কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে নিজেদের নীরব লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যায়। তাই মনে শুভ কাজের সংকল্প থাকা সত্ত্বেও তারা সংশয়ের কারণে সম্মুখে চরণ ফেলতে পারে না। গ. উদ্দীপকের বাদশা মিয়া ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার পাছের লোকের অর্থাৎ নিন্দুকের প্রতীক। ➠ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় নিন্দুকদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মানুষ কীভাবে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয় সেই বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে। নিন্দুকদের স্বভাব সমস্ত ভালো কাজের সমালোচনা করা, তাদেরকে ভালো কাজ করা থেকে বিরত রাখা। ➠ উদ্দীপকের বাদশা মিয়া ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার নিন্দুকেরই নামান্তর। বাদশা মিয়া সমাজের ভালো কাজ দেখতে পারে না। কেউ ভালো কাজে হাত দিলে সে বাধা প্রদান করে। সরাসরি না পারলে গোপনে সেই ব্যক্তির সমালোচনা করে। কারণ নিন্দুকেরা সমাজে ভালো কাজ দেখতে পারে না তারা সব কাজে সমালোচনা করে। তাদের কাছে ভালো বলে কোনো কাজ নেই সব কাজই মন্দ। তাদের এই সমালোচনার ভয়ে অনেকেই ভালো কাজে হাত দিতে চায় না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বাদশা মিয়া ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার নিন্দুকের প্রতীক। ঘ. ‘উদ্দীপকের বাদশা মিয়াদের মতো মানুষ সমাজে ভালো কাজের অন্তরায়’ মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ সমাজে বহু মানুষ আছে যারা ঈর্ষাপরায়ণ এবং অন্যের ভালো দেখতে পারে না। অন্যের ভালোতে তারা ঈর্ষান্বিত হয়, তাই যাতে কারো ভালো না হয় এবং সমাজের মঙ্গল না হয় সেই জন্য তারা সমালোচনায় লিপ্ত হয়। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি তাদের কথাই তুলে ধরেছেন। তাদের কাজ সমাজের উন্নয়নকে ব্যাহত করা। উদ্যোগী মানুষের মনোবল বিনষ্ট করে তাদেরকে সংশয়ের দিকে ঠেলে দেয়া। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কবি নিন্দুকশ্রেণির কথা বলেছেন, তারা সমাজ ও দেশের শত্রু। কারণ তাদের কারণে সমাজে উন্নয়নমূলক কাজ হয় না। উদ্যোগীরা তাদের সমালোচনায় দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে না। ➠উদ্দীপকেও দেখা যায় যে, বাদশা মিয়া সমাজের ভালো কাজ চায় না। তাই সে সমাজের ভালো কাজ করার আগ্রহী মানুষদের সমালোচনা করে। এভাবে সে সমাজের বহু উদ্যোগী মানুষকে ভালো কাজ করা থেকে বিরত রেখেছে। ➠উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকের বাদশা মিয়াদের মতো মানুষ সমাজে ভালো কাজের অন্তরায় মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : শানু গ্রামের একজন উদ্যমী ছেলে। ডিগ্রি পাস করার পর সে ঠিক করল দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করবে। তাই পাড়ার যুবক ছেলেদের সংগঠিত করে সে একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইল। ঠিক হলো সমিতির আয়ের একটি অংশ তারা গ্রামের দরিদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, দুস্থদের সেবা ও রাস্তাঘাট নির্মাণে ব্যয় করবে। কিন্তু সমিতি প্রতিষ্ঠার সংবাদে গ্রামের এক শ্রেণির মানুষ নানারকম সমালোচনা করতে থাকে। কিন্তু সমালোচনার তোয়াক্কা না করে তারা সমিতি প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে সমিতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে সফল হয়ে শানু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সমালোচনাকে উপেক্ষা করে শ্রম আর প্রচেষ্টা থাকলে সবই সম্ভব। ক. কবি কীসের ছলে চলে যান? খ. ‘মহৎ উদ্দেশ্যে যবে একসাথে মিলে সবে পারি না মিলিতে সেই দলে।’ কে এবং কেন সেই দলে মিশতে পারে না ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকের শানু ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কার বিপরীত? ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকটি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কবির ইচ্ছারই প্রতিফলন বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : i. বিধাতা দিছেন প্রাণ থাকি সদা ম্রিয়মাণ শক্তি মরে ভীতির কবলে পাছে লোকে কিছু বলে ii. বিশ্ব মাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথা আর? নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে, আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে। ক. ‘সংশয়’ শব্দটির অর্থ কী? খ. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটি শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন ধরনের অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে? গ. উদ্দীপকের দুটি স্তবকের অমিল কোথায়? নিরূপণ করো। ঘ. ‘একই ব্যক্তির ভিন্নরূপ প্রতিফলিত হয়েছে উদ্দীপকের দুটি স্তবকে’- বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বেগম রোকেয়া বাঙালি নারীশিক্ষার অগ্রদূত। সমাজের মানুষের কাছ থেকে নানা ধরনের নিন্দা সহ্য করে তিনি নারীশিক্ষার প্রসার করতে চেয়েছেন। তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের স্বরূপ উন্মোচন করতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেনি। সমস্ত লোকলজ্জা, কুৎসা প্রভৃতি উপেক্ষা করেছেন বলেই আজ তিনি নারী সমাজের আদর্শ। ক. কখন আমরা আঁখি সযতনে শুষ্ক রাখি? খ. কবি ভয়ভীতি ও সংকোচকে উপেক্ষা করতে বলেছেন কেন? গ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কোন বিষয়কে সমর্থন করে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. বেগম রোকেয়ার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতা অনুসারে আলোচনা করো। |
----------- |
তথ্যসূত্র: |
---|
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ। ৩. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫। |