আঠারো বছর বয়স- সুকান্ত ভট্টাচার্য
|
| আঠারো বছর বয়স |
আঠারো বছর বয়স
সুকান্ত ভট্টাচার্য
আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।
আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।
এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।
আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।
আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।
আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে
অবিশ্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে
এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।
তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।
এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে ॥
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার উৎস নির্দেশ : |
|---|
| সুকান্ত ভট্টাচার্যের “আঠারো বছর বয়স” কবিতাটি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। |
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার শব্দার্থ ও টীকা : |
|---|
|
➠ আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ- এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়। কৈশোর
থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। এসময় থেকে তাকে এক কঠিন ও
দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। ➠ স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি- অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি এ বয়সেই মানুষ নিয়ে থাকে। ➠ বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি- নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ এ বয়সের তরুণদের মনকে ঘিরে ধরে। ➠ আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা- যৌবনে পদার্পণ করে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল এ বয়সের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য তাকে সচেতনভাবে মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়। ➠ এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য- দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানবার জন্য, দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। তাই এ বয়স সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে। ➠ সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে- তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেইসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে, নিত্য-নতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তরুণ-প্রাণ এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে। ➠ তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা- চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ➠ এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর- অনুভূতির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা এ বয়সেই মানুষের জীবনে বিশেষ তীব্র হয়ে দেখা দেয় এবং মনোজগতে তার প্রতিক্রিয়াও হয় গভীর। ➠ এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা- ভালো-মন্দ, ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা তত্ত্ব, মতবাদ, ভাবধারণার সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে এই বয়সের তরুণেরা। ➠ দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার- জীবনের এই সন্ধিক্ষণে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়। এই সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ➠ এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে- সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে জীবন পরিচালনা করতে না পারার অজস্র ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে এ বয়স নেতিবাচক কালো অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে। ➠ পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে- এ বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য। ➠ এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে- আঠারো বছর বয়স বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি- এসবই আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য। কবি প্রার্থনা করেন, এসব বৈশিষ্ট্য যেন জাতীয় জীবনে চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। |
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি : |
|---|
|
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসে জীবনের ঝুঁকি নেবার উপযোগী। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপদকে পেরিয়ে যাওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত। এদের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজজীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে হয়ে উঠতে পারে এরা ভয়ংকর। কিন্তু এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবিলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত- এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন নানা সমস্যাপীড়িত দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। |
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার কবি পরিচিতি : |
|---|
|
সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট। তাঁর পৈতৃক নিবাস
গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ায়। তাঁর পিতার নাম নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য,
মায়ের নাম সুনীতি দেবী। ছোটবেলা থেকেই সুকান্ত ছিলেন অত্যন্ত
রাজনীতি-সচেতন। তিনি ‘দৈনিক স্বাধীনতা’র কিশোরসভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন
এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সুকান্ত তাঁর
কাব্যে অন্যায়-অবিচার শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বিপ্লব ও মুক্তির
আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে তাঁর কবিতা
মুক্তিকামী বাঙালির মনে বিশেষ শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। ছাড়পত্র(১৯৪৭) তাঁর
বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: ঘুম নেই(১৯৫০), পূর্বাভাস(১৯৫০);
ছড়াগ্রন্থ: মিঠেকড়া; নাটিকা: অভিযান(১৯৫৩); ছোটগল্প:
হরতাল
ইত্যাদি। তিনি ফ্যাসিবিরোধী
লেখক শিল্পী সংঘের পক্ষে ‘আকাল’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই মে মাত্র একুশ বছর বয়সে প্রতিভাবান এ কবির অকালমৃত্যু হয়। |
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
|---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
|---|
|
১. আমরা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে কোন যুগের বিদ্রোহী কবি বলতে পারি? উত্তর: আমরা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে রবীন্দ্র-নজরুলোত্তর যুগের বিদ্রোহী কবি বলতে পারি। ২. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃত্যু হয় কত বছর বয়সে? উত্তর: কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃত্যু হয় ২১ বছর বয়সে। ৩. আঠারো বছর বয়স কী কারণে কালো? উত্তর: সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষে জীবন পরিচালনা করতে না পারার হাজারো ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে আঠারো বছর বয়স যেন এক কালো অধ্যায় রচনা করে। ৪. কবির মতে আঠারো বছর বয়স বেদনায় কেমন করে কাঁপে? উত্তর: কবির মতে আঠারো বছর বয়স বেদনায় থরথর করে কাঁপে। ৫. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সবকিছুর পরও কীসের জয়ধ্বনি শুনতে পান? উত্তর: ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সবকিছুর পরও আঠারোর জয়ধ্বনি শুনতে পান। ৬. কোন সময় বা বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে? উত্তর: আঠারো বছর বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ৭. শপথের কোলাহলে কারা আত্মাকে সমর্পণ করে? উত্তর: যারা আঠারো বছর বয়সী তরুণ, তারাই শপথের কোলাহলে আত্মাকে সমর্পণ করে। ৮. কোন সময় হাল ঠিকমতো রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে? উত্তর: দুর্যোগের সময় হাল ঠিকমতো রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। ৯. আঠারো বছরের তরুণেরা কীসের মতো চলে? উত্তর: আঠারো বছরের তরুণেরা বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে। ১০. ‘পূর্বাভাস’ কী ধরনের রচনা? উত্তর: ‘পূর্বাভাস’ একটি কাব্যগ্রন্থ। ১১. আঠারো বছর বয়সে কীসের ঝুলি শূন্য থাকে না? উত্তর: আঠারো বছর বয়সে প্রাণ দেয়া-নেয়ার ঝুলিটা শূন্য থাকে না। ১২. কোন বয়সে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে? উত্তর: আঠারো বছর বয়সে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে। ১৩. আঠারো বছর বয়স কী জানে না? উত্তর: আঠারো বছর বয়স কাঁদতে জানে না। |
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
|---|
|
১. কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য কেন আঠারো বছর বয়সকে
নির্ধারণ করেছেন? উত্তর: কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সকে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ➠ আঠারো বছর বয়স হচ্ছে কৈশোর থেকে তারুণ্যে পদার্পণের উপযুক্ত সময়। এই বয়সেই মানুষ নিজেকে বুঝতে শেখে, শাণিত করে তোলে নিজের অভিজ্ঞতাকে। এ বিষয়টি যেমন প্রবল উত্তেজনার, আবেগ ও উচ্ছ্বাসে ভরপুর, তেমনি এ সময়টি দুঃসাহসিক ঝুঁকি নেবার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত বয়স। তাই এই বয়সের অদম্য সাহসী তরুণ যখন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে, তখন দ্রুতগতিতে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। পুরনো ও জরাজীর্ণতাকে ভেঙে ফেলে একটি নতুন সমাজ, একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে তাই আঠারো বছর বয়সী তরুণের বিকল্প নেই। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য উল্লিখিত বিষয় বিবেচনা করেই আঠারো বছর বয়সকে কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ২. কোন বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন বয়স বলা হয় এবং কেন? উত্তর: ‘আঠারো বছর বয়স’ হচ্ছে কৈশোর থেকে যৌবনে রূপান্তরিত হওয়ার সময়। তাই আঠারো বছর বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়। ➠ শৈশব ও কৈশোরের ছেলেখেলা ভুলে মানুষ ক্রমান্বয়ে পরিণত হতে থাকে। ‘আঠারো বছর বয়স’ হচ্ছে মানুষের যৌবনে পদার্পণের সময়। এই সময়ে মানুষের দৈহিক ও মানসিক গঠনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষের মনোজাগতিক পৃথিবীতে এক ধরনের নীরব বিপ্লব সাধিত হয়। মানুষ হয়ে ওঠে সাহসী, আবেগী ও প্রবল উত্তেজনাসম্পন্ন। আর এই পুরো পরিবর্তনটির সূত্রপাত হয় আঠারো বছর বয়সে। এ সময়ে মানুষ ক্রমান্বয়ে অভিজ্ঞ ও মেধাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। শৈশব কৈশোরের কাঁচা-মন এই বয়সে এসে আবেগ ও সাহসে ভরপুর হয়ে ওঠে। ফলে এই সময়কে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়। ৩. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’-কারা? বুঝিয়ে লেখ। উত্তর: ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো’ চলে তরুণেরা। ➠ তরুণেরা হচ্ছে দুর্বার গতির প্রতীক। তারা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। দুঃসাহসিক প্রত্যয়ে জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একমাত্র তারুণ্যের পক্ষেই সম্ভব বিজয় ছিনিয়ে আনা। তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের দুর্বার গতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে বাষ্পের বেগ ও স্টিমার শব্দগুলোর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। তার মতে, তরুণরা যেন স্টিমারের গতিবেগের মতোই বাতাসের বেগে ছুটে চলে। জীবন ও জগতের কল্যাণ ও অকল্যাণকর উভয় ক্ষেত্রেই তরুণেরা তার এই গতিকে কাজে লাগাতে পারে। তবে কবির মতে, তরুণেরা এই গতিশক্তিকে শুধু কল্যাণকর কাজেই প্রয়োগ করবে। ৪. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ কেমন হওয়া উচিত? উত্তর: কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ হওয়া উচিত কল্যাণকর ও দেশসেবামূলক কাজে। ➠ তারুণ্য এক অসীম এবং দুর্নিবার প্রাণশক্তির প্রতীক। তরুণেরা তার এই প্রাণশক্তিকে যেমন ধ্বংসাত্মক কাজে লাগাতে পারে তেমনি কল্যাণকর কাজেও লাগাতে পারে। দুর্বার গতিসম্পন্ন দুঃসাহসিক তরুণ ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুই ক্ষেত্রেই তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতে, তরুণেরা কেবল দেশসেবামূলক ও কল্যাণকর কাজের ক্ষেত্রেই আত্মত্যাগ করবে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি এই শুভবোধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়েই তরুণেরা তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। তাই তারুণ্যের আত্মত্যাগ হবে কেবল শুভ ও সুন্দর কাজে। ৫. কীভাবে আঠারো বছর বয়স জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে? উত্তর: ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই ‘আঠারো বছর বয়স’ জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে। ➠ হাজারো ইতিবাচক গুণের সমষ্টি হয়ে ‘আঠারো বছর বয়স’ এক বিশাল শক্তির প্রতীক হয়ে মানবজীবনের চলার পথে ভূমিকা রাখে। জড়, নিশ্চল, ব্যর্থ, জীর্ণ, পুরনো ও প্রথাবদ্ধ জীবনকে পায়ে ঠেলে নতুন জীবনের পথে এগিয়ে চলে ‘আঠারো বছর বয়স’। নতুন স্বপ্নে উদ্দীপিত হয়ে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়ে আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তাদের উদ্দীপনা, সাহসিকতা ও চলার দুর্বার গতিকে যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগ করতে পারে। আর এভাবেই সে হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি। ‘আঠারো বছর বয়স’-এর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই জাতীয় জীবনকে সচল করে তোলা সম্ভব। |
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
|---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। খ. “বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে”- একথা দিয়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য কী বোঝাতে চেয়েছেন? গ. উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ঘ. উক্ত দিকটি কি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূলভাব- তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বিচার করো। |
|
ক. আঠারো বছর বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়। খ. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’ এ কথা দিয়ে আঠারো বছর বয়সের দুর্বার গতিশীলতাকেই কবি বোঝাতে চেয়েছেন। ➠ দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে আঠার বছর বয়সের যৌবনপ্রাপ্ত তরুণরাই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। কেননা, তাদের গতি দুর্বার, তারা লক্ষ্যে অবিচল, প্রতিজ্ঞায় অটল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটুও দ্বিধা করে না বিপদ মোকাবেলায়। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য বাষ্পের গতি নিয়ে স্টিমারের মতো এ বয়সীরা এগিয়ে যায়। জীবন উৎসর্গ করে হলেও তারা লক্ষে পৌঁছাতে সচেষ্ট হয়। দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সেই বৈশিষ্ট্য। গ. উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে/ এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো’র দিকটি ফুটে উঠেছে। ➠ বয়ঃসন্ধিকাল মানুষের জীবনের এক চরম পরীক্ষার অধ্যায়। এ শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মনোজগতেও তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এ প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুটোই হতে পারে। ভালো-মন্দ নানা ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে নানা তত্ত্ব, নানা মতবাদ, নানা পরামর্শে এ সময় বিভ্রাšিড় ঘটতে পারে যার ফল ভয়াবহ। ➠ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় যৌবনে পদার্পণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন কবি। সমাজ জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে ভয়ংকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতায় এ সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। উদ্দীপকেও আমরা যৌবনে পদার্পণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সুফল ও কুফল দেখতে পাই। সুজন ও সাধন দুজনেই লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কিন্তু স্কুলজীবন পার না হতেই সুজন মিশে যায় কিছু অসৎ বন্ধুর সাথে। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে সে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। তার নাম শুনলে মানুষ আঁতকে ওঠে। অন্যদিকে সাধন হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর মেধাবী ছাত্র। এভাবে আমরা দেখি, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার নেতিবাচক অর্থাৎ ক্ষতিকর দিকটি উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ফুটে উঠেছে। ঘ. ‘নানা সমস্যাপীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ‘যৌবনশক্তি’ যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়’ এ ইতিবাচক আশাবাদ দেশ ও জাতির জন্য অবশ্যই কল্যাণকর। ➠ দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে তারুণ্যদীপ্ত মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। পরনির্ভরতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেয়। নতুন জীবনের, নিত্য নতুন করণীয় সম্পাদনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের জন্য দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের স্বপ্ন সফল করার দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। ➠ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় দেশ ও জাতির প্রগতি ও অগ্রগতিকে নিশ্চিত করার জন্য তারুণ্যশক্তির প্রত্যাশা করা হয়েছে। আমাদের দেশ নানা সমস্যাপীড়িত। মৌলিক সমস্যাগুলো এখনও প্রবলভাবে রয়ে গেছে। এছাড়া বন্যা, নদীভাঙন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের কাছে এ দেশের মানুষ এখনও বিপন্ন। অথচ, আমাদের রয়েছে বিপুল তারুণ্যশক্তি। দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবেলার জন্য তাদের রয়েছে অদম্য প্রাণশক্তি। তারা তাদের শক্তি, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি ও কল্যাণব্রত দিয়ে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। আমাদের সমস্যাপীড়িত দেশে তারা হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি। ➠ উদ্দীপকের সাধনও ইতিবাচক তারুণ্যশক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সে তাতে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহপাঠীদের সংগঠিত করে, নেতৃত্ব দেয় এবং প্রতিজ্ঞা করে জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভাষার মান রক্ষা করবে। সাধন নিজের দেশ ও মানুষের সমস্যার গুরুত্ব দিয়ে এবং মিছিলের নেতৃত্ব গ্রহণ করে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রমাণ করেছে। সুতরাং উদ্বৃতিতে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে, আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তা সফল করবে। |
| ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। খ. “আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ” -কেন? গ. এত ভর্ৎসনার পরও তমাল কাঁদলো না কেন? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে আলোচনা করো। ঘ. “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মধ্যে আঠারো বছর বয়সের অশ্রুহীন প্রতিবাদশক্তির প্রকাশ ঘটেছে। - সত্যতা নিরূপণ করো। |
|
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। খ. আঠারো বছর বয়স জীবনের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। এ সময় আসে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি ও নানা ধরনের ঝুঁকি। তাই কবি এ বয়সকে দুঃসহ বলেছেন। ➠ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় মানবজীবনের আঠারো বছর বয়সটিকে দুঃসহ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এই বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে এই বয়সেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তরুণকে। আত্মনির্ভরশীলতার তাড়না তাকে এ সময় অস্থির করে তোলে। স্পর্ধিত সাহসে এই বয়সেই স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঝুঁকি নেয় সে । এদিক থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। জীবনকে আর আগের মতো ধরাবাধা ছকে বেঁধে রাখা যায় না। বরং উন্মাতাল আবেগে সবকিছু ছাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তাই বলা হয়েছে ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ’। গ. তমালের ছোটচাচা তাকে অনেক ভর্ৎসনা করল, কিন্তু তারপরও সে কাঁদল না, কেননা তার মনে হয়েছে সে যেটা করেছে সেটা সঠিক। ➠ এখানে চাচা শুধু ভুল বুঝে তাকে ভর্ৎসনা করেছে, গালমন্দ করেছে। এখানে অন্যায়টা চাচার, তার নয়। সুতরাং এ বিষয়ে তার কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। বরং এই কষ্টটুকু সহ্য করার সাহস ও প্রত্যয় নিয়েই সে প্রতিবাদ করেছিল। ➠ আঠারো বছর বয়সের ধর্মই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করা। এ বয়সে অন্যায় দেখলে অবশ্যই প্রতিবাদ করবে, তাতে যতোই অবমাননা জুটুক কপালে। তা ছাড়া তার মধ্যে যে আত্মসম্মানবোধ জেগেছে তাতে ছোট চাচার রাগ ও কটু কথায় সে কাঁদতে পারে না। আঠারো বছর বয়স কবিতায় কবিও আঠারোর তরুণদের এই বৈশিষ্ট্যের কথা ব্যক্ত করেছেন। কারো কাছে মাথা নত না করে নিজের দুরন্ত প্রকাশ আঠারোর বৈশিষ্ট্য। আর এ প্রকাশের পথে সকল কষ্টই হাসিমুখে সহ্য করে আঠারোর তরুণ। ঘ. “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, এ বয়সে মানুষ দুর্মর যৌবনের আলোকচ্ছটায় আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায়। ➠ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা” কথাটি এজন্য বলা হয়েছে যে শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল, এই বয়সের স্বভাব বৈশিষ্ট্য তা মুছে ফেলে সচেতনভাবে। এ বয়সে নিজের মর্যাদা ও শক্তি সম্বন্ধে সচেতনতা একজন তরুণকে জীবনের সকল কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করতে শেখায়। ➠ যৌবনের চির উন্মাদনায় এই বয়স কাঁদতে জানে না। শঙ্কাহীন উদ্দাম গতিতে নবসৃষ্টির আনন্দে সকল বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে চলে এ বয়সের তরুণ। জীবনের নানা কর্মে সংগ্রামে তার মন্ত্র হয়- Do or die. এমন অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হবার পর তার কাঁদার অবকাশ নেই। তাই কবি বলেছেন-“আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”। ➠ ‘আঠারো বছর বয়স’ সকল বাধাবিপত্তি অগ্রাহ্য করে ক্রমাগত এগিয়ে যায় সাফল্যের দিকে। কোনো ব্যর্থতাই এ বয়সকে দমিয়ে রাখতে পারে না। এ বয়স মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয় তারুণ্যখচিত যৌবনের মুখোমুখি, যা কোমল করুণ কান্নার নয়, চির বিদ্রোহের। সুতরাং, বলা যায়, “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মধ্যে আঠারো বছর বয়সের অশ্রুহীন প্রতিবাদশক্তির প্রকাশ ঘটেছে। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার রচয়িতার মৃত্যুসাল কত? |
|
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার রচয়িতা সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রয়াণ লাভ করেন।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রায়ান নামের এক তরুণ নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে একটি শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে। তার এই আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা তার মাঝে অপরের কল্যাণে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেবার উদার আকাক্সক্ষার প্রকাশ ঘটেছে।
আঠারো বছর বয়সে তরুণরা মানবতার কল্যাণ শপথে আত্মাকে সঁপে দেয়। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. কোন বয়স ভীরু আর কাপুরুষ নয়? |
|
আঠারো বছর বয়স ভীরু আর কাপুরুষ নয়।
অনিক পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে ব্যর্থ হলো, কারণ সে নিয়মিত পড়াশুনা করেনি।
আঠারো বছর বয়স মানুষের যৌবনের প্রারম্ভের কাল। এ সময় জীবনতরীর হাল শক্ত করে ধরতে হয় এবং সুচিন্তিত উপায়ে ভবনদীতে তরী বাইতে হয়। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. কবি বাংলাদেশের কল্যাণ কামনায় কোন বয়সের আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন? |
|
বাংলাদেশের কল্যাণ কামনায় কবি বাংলার বুকে আঠারো বছর বয়সের আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন।
শিক্ষকেরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর, জাতির বিবেক। আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ক্ষেত্রে এ কথাটি আরো সত্য। তাই তাঁর কাছে জাতির প্রত্যাশাও অনেক। জাতি তাঁর কাছে দেশ ও সমাজ পরিচালনার দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করে।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন এবং ইতিবাচক দিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম এবং মৃত্যু সাল লেখ। |
|
সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাত্র একুশ বছর বয়সে তাঁর অকালমৃত্যু হয়।
অনুচ্ছেদে ‘কঠোর গদ্য’ বলতে কঠিন তীব্র সংগ্রামকে নির্দেশ করা হয়েছে, যেখানে কবিতার কোমলতার কোনো স্থান নেই। কবি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পিছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা ও চলার দুর্বার গতিকে আহ্বান করেছেন। এদিক থেকে অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত কঠোর গদ্য ও আঠারো বছর বয়স কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। তিনি তারুণ্যের কঠোর, সাহসী, উদ্দীপ্ত, দুর্বার রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন কবিতায়। অনুচ্ছেদেও এই ভাবটি ব্যক্ত হয়েছে। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতায় ‘আঠারো’ শব্দটি কতবার ব্যবহৃত হয়েছে? |
|
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আঠারো শব্দটি নয় বার ব্যবহৃত হয়েছে।
অনুচ্ছেদে বাঙালি জাতিকে দুর্বল, ভীরু আর অলস বলা হয়েছে। কিন্তু ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘বিরাট দুঃসাহসেরা’ বলতে নির্ভিক, অকুতোভয়, সাহসী তরুণদের নির্দেশ করা হয়েছে।
বাঙালি জাতি যেমন দুর্বল ও নিরীহ, তেমনি তাদের ক্রিয়াকলাপও সহজসরল। অপরদিকে আঠারো বছর বয়সের তরুণেরা সকল জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটির প্রকাশকাল কত? |
|
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয়।
অনুচ্ছেদে ‘দুর্বিনীত’ অর্থ যে বিনীত নয় অর্থাৎ যে মাথা নোয়াবার নয়। আর কবিতার ‘দুঃসাহস’ বলতে তরুণদের অত্যধিক সাহস বা অন্যায় সাহসকে বোঝানো হয়েছে।
অনুচ্ছেদে কবি কোনো এক বীরের বীরত্বপূর্ণ পথ চলা নির্দেশ করেছেন। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি উদ্দামতা ঋদ্ধ তরুণদের দুঃসাহসের সাথে পথ চলাকে নির্দেশ করেছেন। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘ঝড়’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্দেশ কর। |
|
‘ঝড়’ শব্দটি এসেছে ‘ঝঞ্ঝা’ থেকে। ঝড় ঝঞ্ঝা।
কোনো কিছুর সৃষ্টির মূলে রয়েছে প্রেরণা। আর এই প্রেরণার উৎস হচ্ছে তারুণ্য। আঠারো বছর বয়সে মানুষ তারুণ্য শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে। ফলে এ সময়ই তারা নতুন নতুন আবিষ্কারে মেতে ওঠে।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি মনের যৌবন নয়, দেহের যৌবনের কথাই ব্যক্ত করেছেন। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। |
|
দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিনের পরনির্ভরশীলতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে আত্মনির্ভশীলতার আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে হিমেল দৃঢ় প্রত্যয়ী। কোনো তরুণই নিজেকে পরনির্ভরশীলতার বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে চায় না। এটি তার স্বাধীনচেতা মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় খুব সুন্দরভাবে তরুণদের দুর্বিনীত এ বৈশিষ্ট্যটি উপস্থাপন করেছেন। এ সময় তরুণেরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়। শৈশব কৈশোরের পরনির্ভরতার অসহায় ক্রন্দন মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়। যার নিশ্চিত প্রতিফলন আমরা উদ্দীপকের হিমেলের মধ্যে দেখতে পাই। অন্যান্য তরুণদের মতোই সে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অদম্য ইচ্ছা পোষণ করে। সে নিজে অর্থ উপার্জন করতে চায়। তারুণ্যের এ সময় হিমেল তার জীবনকে নিজের কষ্টের উপার্জন দিয়ে অতিবাহিত করার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী। তার মধ্যে যৌবনের প্রাণশক্তি ও সাহসিকতার প্রতিফলন দেখা যায়, সে মাথা উচু করে বাঁচার আগ্রহ প্রকাশ করে। আর এ আগ্রহ প্রকাশের মূলমন্ত্র সে পায় তার বয়স থেকে কেননা আঠারো বছর অত্যন্ত দুর্দান্ত সময়। শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত তরুণদের মধ্যে কর্মক্ষম হওয়ার যোগ্যতা, স্পৃহা, সুযোগ কোনোটাই থাকে না। কিন্তু যখন সে জীবনের কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে যৌবনের সিঁড়িতে আরোহণ করে তখন সে বিবেকের তাড়া অনুভব করে। তার মধ্যে কর্মক্ষম হওয়ার ইচ্ছা জাগে। অনুরূপ ইচ্ছা হিমেলের মধ্যেও জাগতে দেখা যায়। অন্যান্য তরুণদের মতো সেও তারুণ্যের স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য হৃদয়ে ধারণ করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠে। তাই সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। উদ্দীপকের হিমেলের আত্মনির্ভর হওয়ার যে ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হয় তা তার তারুণ্যের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য তথা আত্মা-প্রত্যয়ী হয়ে স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ানোর অভিপ্রায়েরই পরিণতি। কারণ সে আঠোরো বছর বয়সের কলেজ পড়–য়া এক দুরন্ত যুবক। সে সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী, দুর্বিনীত ও উদ্দম-উচ্ছ্বল এক তরুণ। সে তার নিজের জীবনকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলতে চায়। হিমেল কর্মক্ষম হতে চায় তার নিজের জন্য, তার পরিবারের জন্য। তাই হিমেলের মতো তুরুণমনের এ ব্যাকুলতাকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি’ চরণটি দ্বারা প্রকাশ করেছেন। এ বয়সেই তরুণরা অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ঝুঁকি গ্রহণ করে। তরুণেরা স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিত্য-নতুন কর্তব্য সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তারা এগিয়ে যায় সামনে। তেজোদীপ্ত দুঃসাহসে ভরা আঠারো বছর বয়সে হিমেলও দুর্বিনীত যৌবনে পর্দাপণ করে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠেছে। সে কারও উপর আত্মনির্ভরশীল হতে রাজি নয়। শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত সে কর্মক্ষম হওয়ার যোগ্যতা অর্জন না করলেও এখন সে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মতো যোগ্য মনে করে। সে আর তার বাবার আয় করা অর্থে নিজেকে পরিপুষ্ট করতে চায় না। সে জানে আত্মনির্ভরশীল হওয়া এত সহজ নয়। এজন্য তাকে নানা প্রতিকূলকতার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু তার মধ্যে এখন তারুণ্যের উদ্দীপনা, দেহ ও মনে দুরন্তপনা আছে। তাই সে সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সামনে অগ্রসর হতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার যে সুখ তা হিমেল আস্বাদন করতে চায়। তার বিবেক তাকে তাড়া দেয় সামনে এগিয়ে যেতে। বাধা-বিপত্তি থাকবেই কিন্তু তার জন্য হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হিমেল রাজি নয়। সে শত বিপর্যয় ডিঙিয়ে নিজেকে একজন কর্মক্ষম ব্যক্তিতে পরিণত করতে চায়। সে চায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে। এভাবে হিমেল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বর্ণিত তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যকে নিজের মধ্যে প্রতিফলন ঘটাতে চায়। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। ঝাঁকড়া চুলের নজরুল স্যারকে সবাই যৌবনের অনুপম অভিযাত্রী বলে অভিহিত করেন। শিক্ষক লাউঞ্জে বসে কথা হয় তার সাথে। দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন- যৌবন বা তারুণ্যের সময়টা জীবনের স্বর্ণসময়। ভীরুতা বা কাপুরুষতা এ সময়ে থাকে না মানুষের। উদ্দাম এর গতি-সত্য ও সুন্দরের পক্ষে। চলার পথে থেমে যায় না এর বিজয়পথ। তরুণেরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে থাকে নিঃসংশয়। অতঃপর নিশ্চুপ নজরুল স্যার। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-যৌবনের এই ধর্ম, তারুণ্যের এই গতি যদি থাকতো আমাদের এই দেশের সর্বত্র তাহলে বেশ হতো।
ক. আঠারো বছর বয়স বাঁচে কোন শক্তির সাথে মোকাবেলা করে? |
|
আঠারো বছর বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ের সাথে মোকাবেলা করে। প্রদত্ত উদ্দীপকে নজরুল স্যারের মিতভাষণে তরুণ বয়সের বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছে। কৈশোরের সীমা পার হলেই যে বয়সটা পায় মানুষ, সেটা তারুণ্য। কৈশোরে একজন মানুষ যে সম্পদ পায়-দেহ ও মনে, তার পবিত্র আমেজটুকু তরুণ বয়সেও বিদ্যমান থাকে। কৈশোরের নিয়ন্ত্রিত আবেগ তারুণ্যে এসে হয় বাধা বন্ধনহীন। প্রাণাবেগে তারুণ্য এগিয়ে যায় সামনের দিকে। প্রচণ্ড তার গতি, অপরিমেয় তার শক্তি। প্রখর তার দীপ্তি, প্রচণ্ড তার আবেগ। এ সময়টা জীবনের স্বর্গসময়। এ সময়ের সোনার ফসলের সুফল সারাজীবন ধরে ভোগ করে মানুষ। সারাজীবনের বাকি দিনগুলো পৌরুষ সহকারে চলতে গেলে যে প্রাণশক্তি প্রয়োজন হয় তার মূল নিহিত তারুণ্যে। এ বয়সে ভীরুতা বা কাপুরুষতা ভর করে না মন ও মননে, চেতনা ও চৈতন্যে। সাহসিকতার পুরস্কারস্বরূপ প্রশংসিত হয় বলে ভীরুতা ঠাঁই পায় না তাদের মনে। তারুণ্য কল্যাণকামী বলে তাদের পক্ষপাত সত্য ও সুন্দরের প্রতি। কোন প্রতিবন্ধকতা স্তব্ধ করে দিতে পারে না তরুণের চলার পথ। লক্ষ্য যেহেতু মহৎ, লক্ষ্য অর্জনের উপায়ও মহৎ; সুতরাং মলিনতা থাকে না চলার পথে। মহৎ কোনো উদ্দেশ্যের ফল কখনো অসুন্দর হতে পারে না। এত আত্মবিশ্বাস তাদের থাকে এজন্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে নিঃসংশয় তরুণেরা। এ রকম তারুণ্য জাতিসত্তার ভরসার স্থল-। দেশের জন্য এ রকম তারুণ্যই দরকার। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যখন ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি রচনা করেন তখন ভারতবর্ষ পরাধীন। এত বড় একটা উপমহাদেশ। অথচ তাকে শাসন, শোষণ করছে বিদেশি বেনিয়া কয়েকজন তস্কর। পরাধীনতার এই বেদনা সহ্য করতে পারেননি রাজনৈতিক কবি সুকান্ত। এজন্য প্রত্যাশা করতেন এমন কিছু সেনানীর যারা পারবে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করতে। রক্ত দানের পুণ্য প্রত্যাশী যে তরুণ, সে রকম ত্যাগী তরুণের প্রত্যাশা করেছেন কবি। যারা অসম সাহসিকতায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, প্রাণ প্রাচুর্যে যারা ধনী, যারা কোন মন্দশক্তির কাছে মাথা নোয়ায় না, পথের বাধা যারা অনায়াসে পার হয়ে যায়-দুঃসময়ে যারা চোখের জল ফেলে না- তারাই প্রত্যাশিত দেশের জন্য। তরুণ, প্রাণের স্বাভাবিক আবেগে শপথ দীপ্ত হয়, সত্য ও সুন্দরের জন্য আত্মবলি দেয়। এরকম তরুণ দেশের জন্য খুব বেশি দরকার। যারা অন্যতম এক সুন্দর-এক অনন্য সত্য। দেশের জন্য তরুণরাই পারে আত্মোৎসর্গের মহিমায় ঋদ্ধ হয়ে কিছু করতে। কিছু নেতিবাচক দিক আছে তারুণ্যের। তবু একথাটা তো ঠিক-তারুণ্য তবু নতুন কিছু করে। এই কিছু অন্তত করার জন্য দেশে এমন তরুণকে চায়। সুকান্তের সময় পার হয়েছে। অনেক তরুণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশ স্বাধীন। এখন আবার তরুণদের প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। চারদিকে অন্ধকার, অন্যায়, অসত্য, দুর্নীতির কালো থাবা। দেশের ভাবমূর্তি আজ বিপন্ন। দেশের চিরচেনা ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথ ধরেছে। নানাবিধ সঙ্কীর্ণতা আজো বাংলাদেশের অলিন্দ নিলয়ে। এইসব ক্ষত দূর করার জন্য-সত্য সুন্দরের প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার ত্যাগ, দরকার শ্রম। দরকার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। সবার উপরে দরকার দেশপ্রেম। এসবের জন্য তরুণের দরকার আজ সবচেয়ে বেশি। কিছু তরুণ বিপথগামী, পথভ্রষ্ট। তাদেরকেও স্বাভাবিক জগতে ফিরিয়ে এনে দেশের জন্য উপযুক্ত করে তোলা দরকার। এজন্য দরকার তারুণ্যের জোর। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতার উৎস কি? |
|
১৯৪৮ সালে প্রকাশিত ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা ‘আঠারো বছর বয়স।’ তারুণ্যের কাছে প্রত্যাশা অনেক। যাঁরা বৃদ্ধ, তারা সংস্কার আর শতাব্দী প্রাচীন ধ্যান-ধারণার কাছে দায়বদ্ধ। নতুনের আহ্বানে কল্যাণকর কোনো কিছুর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে না বৃদ্ধ বা প্রবীণেরা। তরুণদেরই প্রয়োজন পড়ে দুঃসাধ্যকে সহজসাধ্য করতে। তারাই সৃষ্টির মূল হাতিয়ার- অগ্রগতির মূল নিয়ামক। দেশ জাতির অগ্রসরতায় তাদেরকে এগিয়ে আসতে হয় নির্ভীক চিত্তে। সেক্ষেত্রে তাকে উঠতে হয় ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা বা হীনমন্যতার ঊর্ধ্বে। মানবতার এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক বাধা আসে। সমাজের দুর্বল অপোগণ্ড মানুষ যারা, তারা তাদের সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী শক্তিসমূহের মোকাবেলায় অক্ষম। সেক্ষেত্রে তারুণ্যের কাছে প্রত্যাশা মানবতার সামনে দণ্ডায়মান অপশক্তিগুলোকে যেন তারা প্রতিহত করে। যে পথের পাথর বাধা মানুষের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সে বাধা অপসারণে তরুণদের সাহস বড্ড বেশি প্রয়োজন। কখনো কোনো ভ্রান্ত মতাদর্শ, কোন অন্ধকার, ভুল দর্শন তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে। কোন জান্তব অপশক্তি তাদেরকে পদানত করে রাখতে চাইবে। আত্মসমর্পণ করতে বলবে অসত্যের কাছে। এভাবে সে শক্তি কায়েম করতে চাইবে অন্ধকারের রাজত্ব। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে দরকার অমিত শক্তি। সে শক্তি আছে তরুণের বাহুতে। এজন্য তাদের কাছে মানবতার প্রত্যাশা তারা যেন কোনো অন্ধকারের কাছে আত্মসমর্পণ না করে। তারা কাঁদবে না। কারণ কান্না মানে পরাজয়। তাদের পরাজয় চায় না মানুষ। তারা স্খলিত আদর্শের হোক, কোন সীমায় সীমাবদ্ধ হোক, মিথ্যার সাথে মন্দের সাথে আপোস করুক-এটা কখনো প্রত্যাশিত নয়। তারা সত্য ও সুন্দরের স্বপ্ন দেখাবে, প্রগতি ও প্রাণের উৎসব করবে, শক্তি ও সাহসের সদ্ব্যবহার করবে- আলোকিত মানুষ হবে- এ প্রত্যাশা সকলের। তারুণ্য মানে আলোয় স্নাত হওয়া, তারুণ্য মানে অনগ্রসরতার দেয়াল ডিঙোনো, তারুণ্য মানে দৃপ্ত পদক্ষেপ-তারুণ্য মানে সীমানা না মানা। প্রদত্ত উদ্দীপকে তারুণ্যের এই গুণাবলি অঙ্কিত হয়েছে। পথ চলতে তরুণের সামনে হাজার প্রলোভনের হাতছানি। অনেক আদর্শিক প্রলোভন তরুণদেরকে আটকে রাখতে চায় সীমাবদ্ধতার শামুকখোলে-মানা না মানার ঘেরা টোপের মধ্যে। তারুণ্যের অপরিমেয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কেউ হয়ত ব্যক্তিগত বা সীমাবদ্ধ গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইবে। তরুণ কোনো একক সংঘের হতে পারে না। তরুণরা সকল দেশের, সকল কালের, সকল মানুষের। মানুষ যেখানে বড়, সম্প্রদায় যেখানে তুচ্ছ, তারুণ্যের অবস্থান সেখানে। সেক্ষেত্রে নরনারীর ভেদ বিবেচনাও অনুচিত। তারুণ্যের গতি যেখানে দুর্বার সেখানে সঙ্কীর্ণ গোষ্ঠী বা বর্ণচিন্তার সময় কোথায়? বরং এসব জড় চেতনার পাথরকে-পথের ওপর থেকে-সরানোর দায়িত্ব তরুণের। কোন সীমাবদ্ধ মানসিকতা তরুণের কাছে প্রত্যাশিত নয়। তারুণ্য কখনো সীমিত থাকতে পারে না। একটা সর্বমানবিক অনুভূতি-সব সময় চনমনে করে রাখে তরুণের হৃদয়। মানবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন দর্শনের কাছে আত্মসমর্পণ করে না তারুণ্য। কোন সীমাবদ্ধ আদর্শের সাথে আপোস করে না বলে তারুণ্য ভাবাবেগ মুক্ত। কোন ব্যর্থতা নেই বিধায় হতোদ্যম হয় না তারুণ্য। এজন্য তারুণ্যের চোখে নেই নোনা জল। হৃদয় দৌর্বল্যকে অস্বীকার করে হৃদয় ধনে দরিদ্র না হয়ে মহৎ কোনো আদর্শে সামনে এগিয়ে চলে তারুণ্য। সীমায় সীমিত থাকা তারুণ্যের পক্ষে অসম্ভব। ধর্ম হোক, নীতি হোক, বর্ণ হোক, কোনো মন্দ প্রভাবকের কাছে দায়বদ্ধ নয় তারুণ্য। সহজ কথা তারুণ্য কোন সীমা মানে না- সীমিত হওয়া তারুণ্যের পক্ষে অসম্ভব। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের পক্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থের নাম কী? |
|
ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্প সংঘের পক্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘আকাল’। সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ তথা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুহুলের মতো প্রাণবন্ত তরুণদের হৃদয়ে ফুটে ওঠা ক্ষোভই তাদের প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তারুণ্যের ধর্ম। যে কোনো অন্যায়-অবিচার দেখলে তরুণরা ক্ষ্ব্ধু হয়ে ওঠে। সামাজিক বৈষম্য আর ভেদাভেদও তরুণদের প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। তারুণ্যের এ সকল বৈশিষ্ট্য উপস্থাপিত হয়েছে কবি সুকান্ত ভট্টচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়। আর তারুণ্যের অনুুরূপ বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিফলন আমরা রুহুলের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। রুহুল একদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় দেখতে পায় যে, রেস্টুরেন্ট-এর মালিক ছোট কাজের ছেলেটিকে প্রচণ্ড মারছে। রুহুল এগিয়ে গিয়ে জানতে পারল একটি সামান্য কাপ অসাবধানতাবশত: ভেঙ্গে ফেলার কারণে ছেলেটিকে এই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তখন রুহুলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, কারণ রেস্টুরেন্ট মালিক যা করছিলেন সেটি অমানবিক ব্যাপার। সামান্য একটি কাপের জন্য তিনি ছেলেটিকে যেভাবে মারছিলেন তা সামাজিক ভেদাভেদের আর বৈষম্যেরই প্রমাণ। তখন রুহুল শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের দায়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ভয় দেখালে মালিক ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়। এমনিভাবে রুহুলের মতো প্রাণবন্ত তরুণেরা সামাজিক বৈষম্যের আর ভেদাভেদের বিরুদ্ধে সব সময় রুখে দাঁড়ায়। অন্যায়কে মেনে নেয়াটা তারুণ্যের ধর্ম নয়। বরং অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে অদম্য সাহসে প্রতিরোধ গড়াটাই তরুণদের সহজাত স্বভাব। পুরাতনকে ভেঙ্গে নতুন কিছু সৃষ্টি করার ধৃষ্টতা তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। তাই এই তারুণ্য সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্তব্য কর্মে। এভাবে সকল অন্যায়-অবিচার, সামাজিক বৈষম্য আর ভেদাভেদ উদ্দীপকের রুহুলের মতো প্রাণবন্ত তরুণদের প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের রুহুল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূল আবেদনকে ফুটিয়ে তুলেছে। উদ্দীপকে অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী রুহুলের বয়সের যুবকরাই নিজেদের মুক্ত চিন্তা-চেতনার জগতকে উন্মোচিত করে সমাজ সচেতন হয়ে একটি সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থা উপহার দিতে পারে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তরুণদের তারুণ্যদীপ্ত এ বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। অফুরন্ত প্রাণশক্তি আর অদম্য দুঃসাহসে এই তরুণেরা রুখে দেয় সকল অন্যায় আর অবিচার। চারপাশের অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-পীড়ন, সামাজিক ভেদাভেদ আর বৈষম্য তাদের চিন্তা-চেতনাকে প্রভাবিত করে। তারা প্রাণে যন্ত্রণা উপশম করার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে এবং নতুন উদ্যমে উদ্ধত অভিমানে অন্যায়, অসত্য আর অসাম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এভাবে তরুণেরা সামাজিক ভেদাভেদ, বৈষম্য আর সকল শোষণ দূর করে ছিনিয়ে আনতে চায় ন্যায়ের বিজয়। তারুণ্যের এসব বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের রুহুলের জীবনেও। রুহুলকেও আমরা দেখতে পাই, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠতে। সামান্য কাপ ভাঙ্গার কারণে রেস্টুরেন্ট মালিক তার কাজের ছেলেটিকে যখন প্রচণ্ডভাবে মারছিল তখন রুহুল এগিয়ে যায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য। কারণ সে মনে করে এভাবে একটি ছোট শিশুকে নির্যাতন করা যেমন অমানবিক তেমনি অপরাধও বটে। আর এটি তার মুক্ত চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ। স্বভাবতই রুহুলের মতো তরুণের পক্ষে চোখের সামনে এ ধরনের অন্যায় দেখে নীরব থাকা সম্ভব নয়। তাই সে ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে হাত-বাড়ায় শিশুটির দিকে। অবশেষে সে শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে মালিকের হাত থেকে শিশুটিকে রক্ষা করে। সে সমাজ সচেতন না হলে এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে পারত না। কারণ সমাজে লোকদের মধ্যে সচেতনতা থাকলেই এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া করতে পারে। এভাবে রুহুলের বয়সের তরুণেরাই সমাজের ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়ে নিজের চিন্তার জগতকে জাগ্রত করে এগিয়ে যায় অন্যায়ের প্রতিবাদে। এটিই তারুণ্যের মূলকথা। তাই আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে রুহুলের এই ভূমিকা যেমন তারুণ্যের জয় তেমন অত্যন্ত প্রশংসনীয়ও বটে। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. আঠারো বছর বয়স কি জানে না? |
|
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা। প্রদত্ত উদ্দীপকে এদেশের তরুণ সমাজের আত্মত্যাগের জন্য উদ্বুদ্ধ ও শপথ দৃপ্ত হওয়ার ইংগিত বিদ্যমান। দেশে যখন কোন বিজয় দরকার হয়েছে তখন তরুণরাই এসে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর এমনকি ঊনিশশো নব্বই-এসবের দিকে মনোযোগ দিলে এ বক্তব্যের যথার্থতা পাওয়া যায়। ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে যেয়ে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বুলেটের সামনে নিজেকে মেলে ধরেছিল তরুণ যুবা মানুষগুলো। তাঁদের সেই ত্যাগের সুফল আজকের বাংলাভাষার ঋদ্ধি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছিলেন অনেক তাজা তরুণ। এ দেশের গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে, এ দেশের জননেতাদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির দাবিতে, স্বাধিকারের জন্য জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আহুত আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে তরুণ যুবারাই। এরপর একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মবলি দিয়েছিলেন অনেক তরুণ, অনেক যুবা। স্বাধীনতার লাল সূর্যকে তারা ছিনিয়ে এনেছে রক্তের বিনিময়ে। নব্বই-এর স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তরুণরাই বিলিয়ে দিয়েছে প্রাণ। দেশকে করেছিল অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনমুক্ত। এভাবে যখনই দেশে সঙ্কটজনক অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে তখনই জীবনের বিনিময়ে সে সঙ্কটকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে তরুণ। উদ্দীপকে যে দৃশ্যকল্প বর্ণিত হয়েছে, তার সাথে আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবময় সোনালি দিনগুলোর সাদৃশ্য বিদ্যমান। প্রদত্ত উদ্দীপকে একজন ত্যাগী নেতা ও একজন শিক্ষকের মিতভাষণের মধ্যদিয়ে আঠারো বছর বয়সী তরুণের প্রয়োগিকতা ও তাদের ত্যাগের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। আঠারো বছর বয়সে তারুণ্যের যে বিকাশ ঘটে তা উল্লেখযোগ্য নানা বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল, দীপ্তিমান। কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখার এই বয়সটি উত্তেজনায় প্রবল, আবেগ ও উচ্ছ্বাসে উন্নত। এ বয়সের তরুণেরা ঝুঁকি নেয় মনের দাবি মেটাতে গিয়ে। আঠারো বছর বয়স, অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যাওয়ার ও অন্যায় অসুন্দরের বিরুদ্ধে মাথা সমুন্নত করে দাঁড়াবার বয়স। তারুণ্য অকুতোভয়। সে প্রবল দুঃসাহসিকতার পরিচয় দেয়। দেশ, জাতি, মানবতার জন্য বিভিন্ন সময়ে তরুণরাই এগিয়ে গেছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মানবতার জন্য ক্ষতিকর অপশক্তিকে মোকাবেলা করেছে তারা। প্রাণ দিয়েছে দেশ জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য। এ বয়স জানে রক্ত দানের পুণ্য। দিয়েছে অকাতরে। ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। এ বয়সের গতি, বাষ্পের বেগে স্টিমার যেমন দ্রুত চলে, তেমন। তরুণ স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন নতুন জীবনের অগ্রগতি সাধনের। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দরকার সংগ্রামের। সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য দরকার শপথ। তারুণ্য বিনা দ্বিধায় কল্যাণের শপথ নিয়ে এগিয়ে চলে কর্মক্ষেত্রে। করণীয় নির্ধারণের পর নতুন শপথে বলীয়ান হয়ে সে এগিয়ে যায় দৃঢ়দীপ্ত পদক্ষেপে। শপথের মধ্যে সততা থাকায় সে শপথ ব্যর্থ হয় না বরং থাকে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। দেশ, জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য সব পিছুটান পেছনে ফেলে আত্মোৎসর্গের জন্য শপথ দীপ্ত হয় তরুণ। তারপর অর্জন করে কাক্সিক্ষত বিজয়। বৃহত্তর মানবতা ভোগ করে তরুণের ত্যাগের ফসল। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. তরুণের গতি সম্পর্কে আঠারো বছর বয়স কবিতার ভাষ্য কী? |
|
তরুণ ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে।’
আঠারো বছর বয়স কবিতায় যেখানে তারুণ্যের নেতিবাচক দিক উন্মোচিত হয়েছে তার সাথে উদ্দীপকটির সাযুজ্য রয়েছে। কবিতায় বলা হয়েছে- আন্তর বৈশিষ্ট্যে তরুণরা আবেগপ্রবণ। তারা আবার প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। আবেগ বহিঃপ্রকাশের দিক দিয়ে তারা প্রখর চেতনা সমৃদ্ধ। গতি তাদের তীব্র। সবকিছুতে গতি, প্রখরতা, প্রাচুর্য ইত্যাদি থাকলেও এখানে তারা কোমল। সেটা হল তাদের হৃদয়বৃত্তি। হৃদয়বৃত্তি কোমল বলে কোন একটি অনুভবে খুব সহজেই আবিষ্ট হয়ে পড়ে তারা। এর নাম আবেগপ্রবণতা। আবেগপ্রবণ থাকে বলে কোন সদর্থক অনুপ্রেরণায় যেমন অনুপ্রাণিত হয় তরুণ, কোন নেতিবাচক উদ্দীপকও অনুপ্রাণিত করে তাদের। ফলে খুব সহজেই ক্ষতিকর সড়কে পা ফেলে তারা। মন্দ মতবাদীরা তরুণের প্রাণশক্তির এই দুর্বল দিককে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে ভুল করতে অনুপ্রাণিত করে থাকে। কোনো বাহ্যিক স্বার্থকে বা ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থকে তরুণের স্বার্থের সাথে একীভূত করে তরুণকে তার উদ্দেশ্য সাধনে প্ররোচিত করে। ধর্ম, নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ, প্রলোভন, ভীতি-এসব অনুঘটকের বীজ তরুণের মনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করিয়ে স্বীয় স্বার্থ রক্ষা করে সুযোগ সন্ধানী অপশক্তি। আবেগের প্রাবল্যে, প্রাণের চাহিদার আত্যন্তিকতায় ভারসাম্য হারিয়েও ভুল করতে পারে তরুণ। তরুণের এটি সহজাত প্রাণধর্ম। এই সহজাত প্রাণধর্মকে অনুচিত উদ্দেশ্যে কাজে লাগিয়ে সহজেই নঞর্থক উদ্দেশ্য সাধন করে অন্য কেউ। আবেগ যুক্তি মানে না। আবেগের চূড়ান্তে পৌঁছে মানুষ আর যুক্তির ধার ধারে না। মূল্যবোধ, ঔচিত্যবোধ, মানবতাবোধ এসব বিষয় তখন ফিকে হয়ে যায় তার কাছে। তরুণদের ক্ষেত্রে এই কাজটা করা খুবই সহজ-তাদের মনের গঠনের জন্য। এভাবে নেতিবাচক শক্তি তরুণকে প্রভাবিত করে-তাদের মন্দ অভিপ্রায়ের বাস্তবায়ন ঘটায়। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কে? |
|
‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। উদ্দীপকে অর্নপের আচরণে তারুণ্যের কোনো স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠেনি বলে তার আচরণ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে উত্তীর্ণ হবার সময়ই হচ্ছে তারুণ্য। এসময় মানুষের মনে অপরিমেয় শক্তির উন্মেষ ঘটে। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল এ বয়সের স্বভাববৈশিষ্ট্য তাকে সচেতনভাবে মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সেই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। এ সময় মানুষের অসহ্য যন্ত্রণা অনুভূত হয় হৃদয়ে। চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ বেঁজে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। দেশ ও মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য তারা রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকে। কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি আঠারো বছর বয়সের তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে অর্নপ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্র। তাদের পাশের বস্তির রবিউল মিয়াকে কালোবাজারীর ছেলে অন্যায়ভাবে মারধর করছে। সে এটা দেখেও কোনো প্রতিবাদ না করে ভয়ে বাড়ি চলে আসে। সে অন্যায় শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। তার এ সমস্ত আচরণে তারুণ্যের কোনো স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়নি বরং তার আচরণে বার্ধক্যের ছাপ হয়ে ওঠে, যা তারুণ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বর্ণিত তরুণেরা সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠে প্রতিবাদ করে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন যুদ্ধে। তাই বলা যায়, অর্নপের আচরণ কবি বর্ণিত আঠার বছর বয়সের তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত। উদ্দীপকের অর্নপের মতো প্রতিবাদে অক্ষম তরুণদের দেশের কল্যাণে জেগে ওঠা একান্ত জরুরি। তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসের, জীবনের ঝুঁকি নেবার। এ বয়সে মানুষ সকল বাধা-বিপত্তিকে জয় করে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। সমাজের সকল অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা দেশ ও জাতির কল্যাণে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। প্রয়োজনে তারা দেশের জন্য রক্ত দিতেও প্রস্তুত থাকে। উদ্দীপকে অর্নপের চোখের সামনে কালোবাজারীর ছেলে রবিউল মিয়াকে অন্যায়ভাবে মারধর করলেও সে প্রতিবাদ করে না। নীরব দৃষ্টিতে অবলোকন করে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু এদেশের অগ্রগতি ও মঙ্গলের জন্য অর্নপের মতো তরুণদের জেগে ওঠা দরকার। কারণ তারাই আগামী দিনে জাতির কর্ণধার। তারাই পারে দেশ থেকে অন্যায়, অত্যাচার, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ দূর করে সুখী ও সমৃদ্ধ জাতি গড়তে। দেশের বিরুদ্ধে যেসব অপশক্তি রয়েছে তাদের প্রতিহত করার ক্ষমতা একমাত্র তাদেরই আছে। কারণ তারা অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর। দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে তারা ত্রাণ নিয়ে দাঁড়াতে পারে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে। দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দুর্নীতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তরুণেরাই এগিয়ে আসতে পারে। সমাজে যেসব সমস্যা বিদ্যমান তারা সেগুলো কমিয়ে আনতে পারে। যেমন অর্নপ যদি কালোবাজারীর ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত তাহলে সে আর অন্যায় করতে পারত না। এভাবে দেশের মঙ্গলের জন্য অর্নপের মতো তরুণদের জেগে ওঠাটা জরুরি। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতায় আঠারো শব্দটি কতবার উচ্চারিত হয়েছে? |
|
আঠারো বছর বয়স কবিতায় আঠারো শব্দটি ৯ বার উচ্চারিত হয়েছে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার সাথে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘যৌবনের গান’-এর সাযুজ্য বিদ্যমান। উভয় রচনার মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রসঙ্গ এসেছে। ‘যৌবনের গান’-এ তারুণ্যের পরিচালকের ভূমিকায় প্রবীণকে পাওয়া যায়। তারা থাকে শক্তির পেছনে রুধির ধারার মতো গোপনে, কুসুমের মাঝে মাটির মমতা রসের মতো অলক্ষ্যে। ‘যৌবনের গান’ -এ নজরুল তারুণ্য ও বার্ধক্যের রেখাচিত্র অঙ্কন করেছেন। যারা পুরনোকে, মৃত্যুকে, মিথ্যাকে আঁকড়ে থাকে-তারাই বৃদ্ধ, তাদের ধর্মই বার্ধক্য। যারা অলোকপিয়াসী, নিয়ত সম্মুখে অগ্রসরমান-তারাই তরুণ। তাদের ধর্ম তারুণ্য। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বার্ধক্য বা বৃদ্ধ সম্পর্কে কিছুই বলেননি কবি। এখানে শুধু তরুণের আলেখ্য রচিত হয়েছে। যারা নির্ভীক, নিঃসংশয়-শক্তি যাদের অমিত, সাহস যাদের আকাশছোঁয়া-গতি যাদের উদ্দাম তারাই তরুণ। নজরুল যেখানে বার্ধক্যের সাথে তারুণ্যের ব্যবধান দেখিয়েছেন-সুকান্ত সেখানে শুধু তারুণ্যের প্রত্যাশা করেছেন। নজরুল ধর্ম-অট্টালিকার কথা বলেছেন যা পড় পড়। ওর তলে চাপা পড়ে শেষ হতে পারে নিষ্পাপ প্রাণ। সুকান্ত ধর্মীয় আনুগত্যের দিকটা বলেননি; তবে প্রবল উদ্যমে পথের পাথর বাধা অতিক্রমণে তারুণ্যের শক্তির প্রশংসা করেছেন। যৌবনের গান এ নজরুল প্রবীণের প্রতিনিধি। বলেছেন- আমি কর্মী নই ধ্যানী। তবে তার পক্ষপাত তারুণ্যের দিকে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তরুণ। তাঁর পক্ষপাতও তরুণের দিকে। নজরুল দেশের জন্য তারুণ্যের বিজয় প্রত্যাশা করেছেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যও প্রত্যাশা করেছেন-‘এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।’ মনন ধর্মে উভয় কবিই তারুণ্যের শক্তিতে আস্থাশীল।
তারুণ্য যা আঠারো বছর বয়সের দান, জীবনের সোনালি সোপান। বয়সটি উত্তেজনার, আবেগের, উচ্ছ্বাসের। সমস্ত অন্যায় অনিয়মকে প্রতিহত করে অসত্যের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার বয়স এটি। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া। আঘাত সংঘাতের মধ্যে রক্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। সেই সঙ্গে দেশ-কাল সমাজে বিদ্যমান অসুস্থতা মোকাবেলায় এ বয়স হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর। বিপর্যয়ের অজস্র আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ও নিঃশেষ হতে পারে অনেক প্রাণ। এ বয়সের থাকে দুর্যোগ ও দুঃসময় জয় করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় অগ্রযাত্রার পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণব্রত ইত্যাদি নানা ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে আঠারো বছর বয়সটি শুভ্র, উজ্জ্বল এবং অম্লান জ্যোতিতে প্রোজ্জ্বল। কবি তাই এ বয়সের অধিকারীদের, নবজাগরণের তুর্যবাদকদেরকে আহ্বান করেছেন-পরিবর্তনের জন্য। তরুণেরা দেশব্যাপী অসত্য, অন্যায়, অত্যাচারকে দূর করে দিয়ে সকল দুঃখ-গ্লানি, হিংসা-দ্বেষ, বিভেদ-বৈষম্যকে মুছে দিয়ে দেশের বুকে শান্তিময় এক মিলনক্ষেত্র নির্মাণ করবে। স্বপ্নাতুর কবির স্বপ্ন ও সাধনা-এসব বৈশিষ্ট্য যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়। মানুষের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও মুক্তি কামনায় কবির সমস্ত অনুভূতিতে একটি সুরই ঝঙ্কৃত-সেটা হল যৌবন প্রত্যাশা। সমস্ত প্রত্যাশা একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। তার নাম আঠারো বছর বয়স। কর্মতৎপরতার ব্যাপারে যাদের মধ্যে আলস্য বিলাস নেই, শৈথিল্য নেই-উদ্যমের অভাব নেই, সেই তরুণকে কামনা করেছেন কবি। নিঃসংশয় অসন্দিগ্ধ যারা,-উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে নিষ্ঠাবান যত্নবান যারা কর্ম সম্পাদনে দেশ আজ তাদের চায়। এবং তরুণরা যে দেশের এই প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম সে ব্যাপারে কবি পরম আশাবাদী। পরম আশ্বাসে কবি তাই গেয়ে ওঠেন-এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়, এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতাটি মূলত কীসের জয়গান গায়? |
|
আঠারো বছর বয়স মূলত তারুণ্যের জয়গান করে। তারুণ্য বা যৌবন মানব জীবনের এক স্বর্ণসময়। বাল্যের অসহায় পরনির্ভরশীল অবস্থা কাটিয়ে এ সময় মানুষ আত্মমুকুরে নিজেকে দেখে। পরিমাপ করে নিজের শক্তি। শারীরিক উপচিতির ফলে শরীরে সঞ্চিত হয় শক্তি। আর আবেগের প্রাবল্যের কারণে অনেক সাহস জমা হয় বুকে। ঠিক নির্দেশনা পেলে ঠিক কাজটি করতে পারে তারা। এসময় তরুণের মনটা গ্রহণের জন্য ব্যাকুল থাকে। যে মূল্যবোধ তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হবে, সেইভাবে গড়ে উঠবে তাদের পরবর্তী জীবন। ভালো বা মন্দ যাকে পাবে তাকেই অবলম্বন করবে তরুণ। ভীরুতা শিক্ষা পেলে লজ্জাজনক আত্মগোপন করে তরুণ, কিন্তু বীরত্ব শিক্ষা পেলে সাহসে ঋদ্ধ হয় তরুণের চৈতন্য। সমাজে, সংসারে অনেক সময় সাহসিকতার সাথে সমাধান করতে হয় অনেক সমস্যা। বলা যায়-সংসারের অনেক কাজ সম্পন্ন করার জন্য দরকার হয় সাহস। তরুণ সেই সাহসের আধার। নির্ভীক চিত্তে তারা এগিয়ে যায় সামনে, লক্ষ্য স্থানে। নিজেকে ব্যাপৃত রাখে শুভ ও কল্যাণকর কাজে। আবার ভুলভাবে পরিচালিত হলে অকল্যাণ উপহার দেবে সে। তরুণ বয়সে তাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারলে সমাজ ও সংসারকে তারা দিতে পারবে অনেক কিছু। অপশক্তিকে অপনোদনের জন্য তারুণ্যের সাহসের বিকল্প নেই। মন্দকে ধ্বংস বা প্রতিহত করে, সত্যের আকাশে মাথা তোলার সৎসাহস আছে, থাকে-থাকা উচিত তরুণের। তারুণ্য একটি আশীর্বাদ প্রত্যেকের জীবনে। কৈশোরের নির্মল পরিশ্রুত হৃদয় তখনো তাদের বুকের গহীনে স্পন্দনমান। কোমল, শান্ত সংবেদনশীল চিত্তবৃত্তি নিয়ে কিশোর যখন তরুণ হয় তখন তার আত্মশক্তিতে যুক্ত হয় নতুন এক প্রকার-মানসিক ঋদ্ধি। মনটা তখন স্বাধীনভাবে কোন কিছুকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকে। এ সময়টা প্রবীণ বা অভিভাবকদের ভূমিকা থাকে তাদেরকে ঠিক পথে পরিচালনা করার। যে স্পর্ধার গর্বিত মালিক হয় তার সেটার যথাযথ ব্যবহার করা দরকার। ভুল পথে যেন ব্যয়িত না হয় স্পর্ধিত মনোবৃত্তি সে দিকটায় খেয়াল রাখতে হয়। এ বয়সে মানুষ মাথা তুলে দাঁড়ায়, গৌরব ঘোষণা করে ব্যক্তিত্বের। এ সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি পদক্ষেপে সাবধানতা, সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ভুল পদক্ষেপে ছন্দপতন ঘটতে পারে জীবনের, ঠিক পদক্ষেপে ঘটে থাকে উত্তরণ। পথ চলা অন্ধকার পথে হলে-আদর্শিক মৃত্যু, পরিণামে অশ্রদ্ধেয়। পথচলা আলো ঝলমল পথে হলে আত্মউদ্বোধন-পরিণামে শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রাপ্তি। স্মর্তব্য-তরুণদের মধ্যে এ সময় বিবেচনা শক্তি প্রত্যাশিত নয়। তাদের মধ্যে থাকে অমিত শক্তি ও সাহস, নৈতিক মনোবল। এই বলকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে পরিচালিত করা যায় সুপথে। পরিপার্শ্বের জঞ্জাল এড়িয়ে, অপশক্তিতে দুপায়ে মাড়িয়ে তরুণরা পারে সুন্দর আগামির পথে এগিয়ে যেতে। এটা একটা বহুমুখী মোড়। এ সময়ে সুন্দর অভিভাবকত্বে তরুণরা বেছে নিতে পারে অপেক্ষাকৃত ভালো পথটি। ক্রমোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে পারে পরবর্তী জীবনের আলোকোজ্জ্বল পথের দিকে। এজন্য তারুণ্য বা তরুণ বয়সকে বলা হয় জীবনের সোনালি সোপান। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. আঠারো বছর বয়সে প্রাণের প্রকৃতি লেখ। |
|
আঠারো বছর বয়সে তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা। তারুণ্য, সকল অসুন্দরের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত। এ সংগ্রামে তারুণ্যের গতি প্রচণ্ড। চলার পথে নানাবিধ বাধা এসে তরুণের গতিকে শ্লথ করে দিতে পারে। বিঘœ সৃষ্টি করতে পারে সৃষ্টিশীলতার পক্ষে। যারা মন্দ জগতের বাসিন্দা, যারা চায় না তরুণরা নতুন কিছু করুক, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তরুণের গতিকে মন্থর বা তার চলাকে স্তব্ধ করে দিতে পারে। আলো ঝলমল প্রলোভনের মাধ্যমে তাদেরকে টেনে নিয়ে যায় অন্ধকারের পথে। তাদের অমিত শক্তি, অফুরন্ত সম্ভাবনাকে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত হলে-তাতে তরুণের শক্তিকে অশ্রদ্ধা করা হয়। তরুণের উদ্দেশ্যই মহত্তে¦ ঋদ্ধ। সেই উদ্দেশ্য যদি ভিন্নপথগামী হয় তাহলে তা হয় তারুণ্যকে হত্যা করার শামিল। যারা মানবতার কল্যাণ চায় না সমাজ বা দেশের সমৃদ্ধি চায় না, যারা হীন ব্যক্তিস্বার্থ বা গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষায় তৎপর তারা তরুণের সর্বজনীন ভূমিকাকে বাধাগ্রস্ত, বিতর্কিত বা বিকলাঙ্গ করতে চায়। তারাই নানা সুমিষ্ট বচনে তরুণকে নিরুৎসাহিত করতে চায়। তাদের আবেগপ্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য সফল করে। প্রতি পদক্ষেপে তরুণদেরকে এসব জঞ্জাল অপসারণ করে পথ চলতে হয়। পথের পাথর বাধা সরাতে যেয়ে মুখোমুখি হতে হয় নানা সমস্যার। চূড়ান্ত লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত এভাবে প্রতিরোধের শিকার হতে হয় নানা অপশক্তির। প্রবীণ ও বৃদ্ধের রক্ষণশীলতা, প্রতিক্রিয়াশীলের অন্তর্ঘাত, লাভের লোভ, অন্ধকারের হাতছানি-এসব প্রতিনিয়ত বিঘœ সৃষ্টি করে, তরুণের চলার পথে। এজন্য উদ্দীপকে বলা হয়েছে-তরুণের পদে পদে বাধা। তরুণরা উচ্ছল, উজ্জ্বল প্রাণবন্ত। তরুণ আনন্দের প্রতিনিধিত্ব করে। উদ্দীপ্ত তার গতি, উদ্দাম তার আবেগ। নতুন সৃষ্টির আনন্দে পল্লবিত প্রফুল্ল তরুণ। সত্য ও সুন্দরের জন্য নিবেদিত প্রতিটি তরুণ। তারা উচ্চাভিলাসী, তারা উদ্যোগী, তারা শপথ দৃপ্ত। গৃহীত শপথ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা সফল। তারুণ্যের এই সাফল্যে কেউ হয় উজ্জীবিত, কেউ হয় ঈর্ষান্বিত, কেউ পীড়িত। যারা উজ্জীবিত হয় তারা তরুণকে সমর্থন, সহযোগিতা করে- সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। ভালো করলে প্রশংসা করে, মন্দ করলে সতর্ক করে, নিরুৎসাহ করে না। যারা তারুণ্যের কর্মকাণ্ডে উজ্জ¦ীবিত হয় তারা পেছন হতে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে তরুণকে। নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তরুণদেরকে সামনে ঠিক পথে পরিচালনা করে। কিন্তু যারা ঈর্ষান্বিত তারা তরুণদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করে। তাদের পবিত্র প্রাণশক্তিকে অন্ধকার পথে পরিচালিত করে। যে তারুণ্য কল্যাণের ধারাবাহী, তাকে অকল্যাণের জন্য উৎসর্গ করে। তারুণ্যের প্রাণপ্রাচুর্যকে তারা নিন্দায় নীল করে দেয়। তরুণের মানসিকতাকে দূষিত-কলুষিত করে দেয়। বিভিন্ন আদর্শিক আবর্তে ফেলে তরুণকে বিভ্রাš, বিপথগামী ও বিপদগামী করে ঈর্ষান্বিত মহল। যারা পীড়িত হয়, তারুণ্যের সাফল্যে তারাও বিবিধ উপায়ে তরুণকে বাধাগ্রস্ত করে। তাদের আবেগকে পুঁজি করে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করে। তরুণের পরিশ্রুত মননকে অবলম্বন করে নিজেদের নোংরা স্বার্থ চরিতার্থ করে। তরুণকে ঘিরে যে মন্দের মিছিল-তারা নিজেরাই ভালো কিছু করে না। একান্ত নিন্দিত তাদের দর্শন। তারুণ্যের শুভ শক্তিকে তাই তাদের ভয়। সেই ভয়কে জয় করতে তারা তরুণকে কাছে টানে নানা লাভের লোভ দেখিয়ে। তারা মানবতার শত্রু। তারা তারুণ্যের জন্য ক্ষতিকারক। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে কেমন ভাবে? |
|
আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে অবিশ্রান্ত। তারুণ্য, জীবনের সোনালি সোপান। জীবনে সফলতার জন্য দরকার কর্ম। কর্মের যে ফল তা থেকে আসে সমৃদ্ধি। যে বা যারা কর্মের সাথে এগিয়ে যায় সে বা তারা সাফল্যের ছোঁয়া পায়ই। কর্মের এই তাগিদ বা অনুপ্রেরণা অর্জন করতে হয় বাল্যকাল থেকেই। আর তা গতিপ্রাপ্ত হয় তারুণ্যে বা যৌবনে। যারা কাজের বেলায় খুব বেশি হিসেবী যারা লোকসানের ভয়ে কাজ করে না-যারা ফলের ব্যাপারে অনিশ্চিত হয়ে কর্মবিমুখ হয়, তরুণরা তাদের মধ্যে পড়ে না। ফল নিশ্চিত জেনে বা ফলের মান সম্পর্কে জেনে যেমন তারা কাজ করে, ফল সম্পর্কে অনিশ্চিত হয়েও তারা কাজ করে। একেবারে কর্মবিমুখতা তরুণদের পক্ষে অসম্ভব। ফল যাই হোক তারা নতুন কিছু করে-এটাই বড়কথা। শুধু আত্মস্বার্থ মগ্ন কাজ নয়, বৈশ্বিক কাজেও তরুণের চরণ ক্লান্তিতে অবসন্ন নয়। দেশে বা বিদেশে যখন দুঃসময় এসেছে, দুর্যোগ এসেছে তরুণেরা নিঃস্বার্থ চিত্তে এগিয়ে গেছে। মানবতার জন্য উৎসর্গ করেছে নিজেকে। যেখানে বৃদ্ধ বা প্রবীণেরা নীতি-নিয়ম মূল্যবোধ নিয়ে সীমার মধ্যে আবদ্ধ সেখানে তরুণেরা সব সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে সব মানুষের স্বজনরূপে আবির্ভূত। তরুণেরা কোন হীনমন্যতাকে প্রশ্রয় দেয় না। কাজ করে, সেবা দিয়ে নতুন কিছু করে তারা অন্যের অনুকরণীয়, অনুসরণীয়-ভালো লাগার পাত্র হয়ে ওঠে। কিশোর কবি হিসেবে সম্মানিত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাত্র একুশ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। অনেকে মনে করেন, তিনি যখন আঠারো বছর বয়সের তরুণ ছিলেন, তখন-আত্মমুকুরে দেখা আঠারো বছর বয়সকে কবিতায় রূপদান করেছিলেন। আঠারো বয়স বয়সটা অনেকের জন্য বয়ঃসন্ধিকাল। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের দোষগুণকে তিনি তুলে ধরেছেন এ কবিতায়। কৈশোরের নাজুক চিত্তবৃত্তি থেকে যৌবনে পা রাখার এ বয়সটি আবেগের, উত্তেজনার, উচ্ছ্বাসের। অসম সাহসে ঝুঁকি নেয়ার সময় এটাই। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপত্তিকে পেরিয়ে যাওয়া এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার বয়স। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া। আঘাত-সংঘাত মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। শপথ দীপ্ত হয়ে সাফল্যকে ধরার চেষ্টা করা। আবার পরিপার্শ্বের-সমাজ সংসারের নানা অবিচার, বৈষম্য, অনিয়ম, অমানবিকতা ইত্যাদির অভিঘাতে আবেগাশ্রয়ী এ বয়স হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর। বিকৃতি ও বিপর্যয়ের অজস্র আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ও নিঃশেষ হতে পারে উদ্দাম তারুণ্য। আবার এই বয়সেই থাকে সমস্ত দুর্যোগ আর দুঃসময় মোকাবেলা করার অদম্য শক্তি। এ সময় তারুণ্য ও যৌবনশক্তি সমন্বিত আবেগ নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় অগ্রযাত্রার পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, গতি, জীবন প্রত্যাশা ও কল্যাণকামী চিত্তবৃত্তি-এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবির ঐকান্তিক প্রত্যাশা সমস্যা পীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়। কবির এই প্রত্যাশা আঠারো বছর বয়স কবিতার দেহ ঘিরে। তরুণদের ঘিরে কবির যে প্রত্যাশা তা যেমন আছে, তেমনি আছে দেশপ্রেমিক কবির দেশাত্মবোধের পরিচয়। দেশের জন্য দরকার প্রাণশক্তি, তেজ, সাহস, ত্যাগ, আবেগ। এসব কিছু তরুণের মধ্যে আছে। তাই তারুণ্যশক্তির প্রতি কবির এই ঐকান্তিক পক্ষপাত। দেশ এই তারুণ্যে ভরে উঠুক এটাও কবির প্রত্যাশা। এজন্য উদ্দীপকে যে দাবি করা হয়েছে-যে এটি কবির নিজস্ব মানসিকতার প্রতিফলন-তা সর্বৈব সত্য। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ক. ‘আঠারো বছর বয়স' কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে? |
|
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ হতে নেয়া হয়েছে। গ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি আঠারো বছর বয়সের বন্দনা করেছেন, যা সিগমন্ড ফ্রয়েডের সাইকো এনালাইটিক তত্ত্বের বিপরীত ভাষ্য। ঘ. এরিক-এরিকসনের সাইকো-সোস্যাল তত্ত্বে বলা হয়েছে, আঠারো বছর বয়সে মানুষ সমাজের উন্নতির জন্য প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, আবার সামাজিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধাচরণও করে। অর্থাৎ এ বয়স ঝুঁকিপূর্ণ, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়ও কবি এ কথাই বলতে চেয়েছেন। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. আঠারো বছর বয়সে অহরহ কী উঁকি দেয়? গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে বর্ণিত নবীনদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তরুণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একটি তুলনামূলক ব্যাখ্যা দাও। ঘ. “আঠারো বছর বয়সটি উত্তেজনার, আবেগের এবং জীবনের ঝুঁকি গ্রহণ করার যথার্থ সময়”-উদ্দীপক ও ‘ আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। |
|
ক. আঠারো বছর বয়সে অহরহ বিরাট দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়। গ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে তরুণদের দিক-নির্দেশনাস্বরূপ আঠার বছর বয়সের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নানা দিক প্রস্ফুটিত হয়েছে। ঘ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার প্রশ্নোল্লিখিত উক্তিটিতে এবং উদ্দীপকের নবীনদের মাঝে তারুণ্যের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- : |
|---|
|
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. মাথা তোলার ঝুঁকি নেয়া হয় কোন বয়সে? |
|
ক. মাথা তোলার ঝুঁকি নেয়া হয় আঠার বছর বয়সে। গ. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর ‘আঠার বছর বয়স’ কবিতা ও এর আলোকে রচিত উদ্দীপকে তারুণ্য ও যৌবনের জয়গান গাওয়া হয়েছে। ঘ. নবসৃষ্টির প্রেরণায় ব্রত তারুণ্য ও যৌবনশক্তিকে লালন করা হয়েছে ‘আঠার বছর বয়স’ কবিতা ও উদ্ধৃত উদ্দীপকটিতে। |
| তথ্যসূত্র : |
|---|
|
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |
