‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

আঠারো বছর বয়স
আঠারো বছর বয়স

আঠারো বছর বয়স
সুকান্ত ভট্টাচার্য

আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।

আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।

এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।

আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।

আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।

আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে
অবিশ্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে
এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।

তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।

এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে ॥

উৎস নির্দেশ :
সুকান্ত ভট্টাচার্যের “আঠারো বছর বয়স” কবিতাটি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ- এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। এসময় থেকে তাকে এক কঠিন ও দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়।
➠ স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি- অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি এ বয়সেই মানুষ নিয়ে থাকে।
➠ বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি- নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ এ বয়সের তরুণদের মনকে ঘিরে ধরে।
➠ আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা- যৌবনে পদার্পণ করে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল এ বয়সের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য তাকে সচেতনভাবে মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়।
➠ এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য- দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানবার জন্য, দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। তাই এ বয়স সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে।
➠ সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে- তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেইসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে, নিত্য-নতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তরুণ-প্রাণ এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে।
➠ তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা- চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
➠ এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর- অনুভূতির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা এ বয়সেই মানুষের জীবনে বিশেষ তীব্র হয়ে দেখা দেয় এবং মনোজগতে তার প্রতিক্রিয়াও হয় গভীর।
➠ এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা- ভালো-মন্দ, ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা তত্ত্ব, মতবাদ, ভাবধারণার সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে এই বয়সের তরুণেরা।
➠ দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার- জীবনের এই সন্ধিক্ষণে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়। এই সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
➠ এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে- সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে জীবন পরিচালনা করতে না পারার অজস্র ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে এ বয়স নেতিবাচক কালো অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে।
➠ পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে-এ বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য।
➠ এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে- আঠারো বছর বয়স বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি- এসবই আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য। কবি প্রার্থনা করেন, এসব বৈশিষ্ট্য যেন জাতীয় জীবনে চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

পাঠ-পরিচিতি :

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসে জীবনের ঝুঁকি নেবার উপযোগী। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপদকে পেরিয়ে যাওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত। এদের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজজীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে হয়ে উঠতে পারে এরা ভয়ংকর।

কিন্তু এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবিলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত- এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন নানা সমস্যাপীড়িত দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।

কবি পরিচিতি :
সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট। তাঁর পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ায়। তাঁর পিতার নাম নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য, মায়ের নাম সুনীতি দেবী। ছোটবেলা থেকেই সুকান্ত ছিলেন অত্যন্ত রাজনীতি-সচেতন। তিনি ‘দৈনিক স্বাধীনতা’র কিশোরসভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সুকান্ত তাঁর কাব্যে অন্যায়-অবিচার শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বিপ্লব ও মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে তাঁর কবিতা মুক্তিকামী বাঙালির মনে বিশেষ শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। ‘ছাড়পত্র’ তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ:ঘুম নেই, পূর্বাভাস। অন্যান্য রচনা: মিঠেকড়া, অভিযান, হরতাল ইত্যাদি। তিনি ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের পক্ষে ‘আকাল’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই মে মাত্র একুশ বছর বয়সে প্রতিভাবান এ কবির অকালমৃত্যু হয়।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন?
ক. ১৯
খ. ২০
গ. ২১
ঘ. ২২
২. ‘এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।’ কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে কবি আঠারোর প্রত্যাশা করেছেন?
ক. ইতিবাচক
খ. দুঃসাহস
গ. বয়স
ঘ. তারুণ্য
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ভারতবাসী। ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে এগিয়ে আসেন তাঁর অনেক অনুসারী। এঁদেরই একজন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন কিন্তু আত্মসমর্পণ করেননি।
৩. প্রীতিলতার মাঝে “আঠার বছর বয়স” কবিতার কোন দিকগুলো ফুটে উঠেছে?-
i. তারুণ্য
ii. আত্মত্যাগ
iii. সর্বনাশের অভিঘাত
নিচের কোনটি ঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i. ii ও iii
৪. উক্ত দিক নিচের কোন চরণযুগলে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে
খ. আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা
গ. প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে
ঘ. এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. আমরা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে কোন যুগের বিদ্রোহী কবি বলতে পারি?
উত্তর: আমরা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে রবীন্দ্র-নজরুলোত্তর যুগের বিদ্রোহী কবি বলতে পারি।
২. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃত্যু হয় কত বছর বয়সে?
উত্তর: কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃত্যু হয় ২১ বছর বয়সে।
৩. আঠারো বছর বয়স কী কারণে কালো?
উত্তর: সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষে জীবন পরিচালনা করতে না পারার হাজারো ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে আঠারো বছর বয়স যেন এক কালো অধ্যায় রচনা করে।
৪. কবির মতে আঠারো বছর বয়স বেদনায় কেমন করে কাঁপে?
উত্তর: কবির মতে আঠারো বছর বয়স বেদনায় থরথর করে কাঁপে।
৫. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সবকিছুর পরও কীসের জয়ধ্বনি শুনতে পান?
উত্তর: ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সবকিছুর পরও আঠারোর জয়ধ্বনি শুনতে পান।
৬. কোন সময় বা বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে?
উত্তর: আঠারো বছর বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
৭. শপথের কোলাহলে কারা আত্মাকে সমর্পণ করে?
উত্তর: যারা আঠারো বছর বয়সী তরুণ, তারাই শপথের কোলাহলে আত্মাকে সমর্পণ করে।
৮. কোন সময় হাল ঠিকমতো রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে?
উত্তর: দুর্যোগের সময় হাল ঠিকমতো রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
৯. আঠারো বছরের তরুণেরা কীসের মতো চলে?
উত্তর: আঠারো বছরের তরুণেরা বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে।
১০. ‘পূর্বাভাস’ কী ধরনের রচনা?
উত্তর: ‘পূর্বাভাস’ একটি কাব্যগ্রন্থ।
১১. আঠারো বছর বয়সে কীসের ঝুলি শূন্য থাকে না?
উত্তর: আঠারো বছর বয়সে প্রাণ দেয়া-নেয়ার ঝুলিটা শূন্য থাকে না।
১২. কোন বয়সে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে?
উত্তর: আঠারো বছর বয়সে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে।
১৩. আঠারো বছর বয়স কী জানে না?
উত্তর: আঠারো বছর বয়স কাঁদতে জানে না।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য কেন আঠারো বছর বয়সকে নির্ধারণ করেছেন?
উত্তর: কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সকে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
➠ আঠারো বছর বয়স হচ্ছে কৈশোর থেকে তারুণ্যে পদার্পণের উপযুক্ত সময়। এই বয়সেই মানুষ নিজেকে বুঝতে শেখে, শাণিত করে তোলে নিজের অভিজ্ঞতাকে। এ বিষয়টি যেমন প্রবল উত্তেজনার, আবেগ ও উচ্ছ্বাসে ভরপুর, তেমনি এ সময়টি দুঃসাহসিক ঝুঁকি নেবার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত বয়স। তাই এই বয়সের অদম্য সাহসী তরুণ যখন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে, তখন দ্রুতগতিতে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। পুরনো ও জরাজীর্ণতাকে ভেঙে ফেলে একটি নতুন সমাজ, একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে তাই আঠারো বছর বয়সী তরুণের বিকল্প নেই। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য উল্লিখিত বিষয় বিবেচনা করেই আঠারো বছর বয়সকে কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
২. কোন বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন বয়স বলা হয় এবং কেন?
উত্তর: ‘আঠারো বছর বয়স’ হচ্ছে কৈশোর থেকে যৌবনে রূপান্তরিত হওয়ার সময়। তাই আঠারো বছর বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়।
➠ শৈশব ও কৈশোরের ছেলেখেলা ভুলে মানুষ ক্রমান্বয়ে পরিণত হতে থাকে। ‘আঠারো বছর বয়স’ হচ্ছে মানুষের যৌবনে পদার্পণের সময়। এই সময়ে মানুষের দৈহিক ও মানসিক গঠনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষের মনোজাগতিক পৃথিবীতে এক ধরনের নীরব বিপ্লব সাধিত হয়। মানুষ হয়ে ওঠে সাহসী, আবেগী ও প্রবল উত্তেজনাসম্পন্ন। আর এই পুরো পরিবর্তনটির সূত্রপাত হয় আঠারো বছর বয়সে। এ সময়ে মানুষ ক্রমান্বয়ে অভিজ্ঞ ও মেধাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। শৈশব কৈশোরের কাঁচা-মন এই বয়সে এসে আবেগ ও সাহসে ভরপুর হয়ে ওঠে। ফলে এই সময়কে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়।
৩. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’-কারা? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো’ চলে তরুণেরা।
➠ তরুণেরা হচ্ছে দুর্বার গতির প্রতীক। তারা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। দুঃসাহসিক প্রত্যয়ে জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একমাত্র তারুণ্যের পক্ষেই সম্ভব বিজয় ছিনিয়ে আনা। তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের দুর্বার গতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে বাষ্পের বেগ ও স্টিমার শব্দগুলোর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। তার মতে, তরুণরা যেন স্টিমারের গতিবেগের মতোই বাতাসের বেগে ছুটে চলে। জীবন ও জগতের কল্যাণ ও অকল্যাণকর উভয় ক্ষেত্রেই তরুণেরা তার এই গতিকে কাজে লাগাতে পারে। তবে কবির মতে, তরুণেরা এই গতিশক্তিকে শুধু কল্যাণকর কাজেই প্রয়োগ করবে।
৪. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর: কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ হওয়া উচিত কল্যাণকর ও দেশসেবামূলক কাজে।
➠ তারুণ্য এক অসীম এবং দুর্নিবার প্রাণশক্তির প্রতীক। তরুণেরা তার এই প্রাণশক্তিকে যেমন ধ্বংসাত্মক কাজে লাগাতে পারে তেমনি কল্যাণকর কাজেও লাগাতে পারে। দুর্বার গতিসম্পন্ন দুঃসাহসিক তরুণ ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুই ক্ষেত্রেই তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতে, তরুণেরা কেবল দেশসেবামূলক ও কল্যাণকর কাজের ক্ষেত্রেই আত্মত্যাগ করবে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি এই শুভবোধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়েই তর“ণেরা তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। তাই তারুণ্যের আত্মত্যাগ হবে কেবল শুভ ও সুন্দর কাজে।
৫. কীভাবে আঠারো বছর বয়স জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে?
উত্তর: ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই ‘আঠারো বছর বয়স’ জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।
➠ হাজারো ইতিবাচক গুণের সমষ্টি হয়ে ‘আঠারো বছর বয়স’ এক বিশাল শক্তির প্রতীক হয়ে মানবজীবনের চলার পথে ভূমিকা রাখে। জড়, নিশ্চল, ব্যর্থ, জীর্ণ, পুরনো ও প্রথাবদ্ধ জীবনকে পায়ে ঠেলে নতুন জীবনের পথে এগিয়ে চলে ‘আঠারো বছর বয়স’। নতুন স্বপ্নে উদ্দীপিত হয়ে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়ে আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তাদের উদ্দীপনা, সাহসিকতা ও চলার দুর্বার গতিকে যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগ করতে পারে। আর এভাবেই সে হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি। ‘আঠারো বছর বয়স’-এর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই জাতীয় জীবনকে সচল করে তোলা সম্ভব।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
সুজন ও সাধন সহপাঠী এবং লেখাপড়ায় বেশ ভালো। স্কুল জীবন পার হতে না হতেই সুজন মিশে যায় কিছু অসৎ বন্ধুর সাথে। লেখা-পড়ার পাঠ চুকে যায় ওখানেই। তার নাম শুনলে মানুষ আঁতকে উঠে। অপর দিকে সাধন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে- মিছিলে সে নেতৃত্ব দেয়। সংগঠিত করে সহপাঠীদের, আর প্রতিজ্ঞা করে জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভাষার মান রক্ষা করবেই।
ক. কোন বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়?
খ. “বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে”- একথা দিয়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
ঘ. উক্ত দিকটি কি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূলভাব- তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বিচার করো।
ক. আঠারো বছর বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়।
খ. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’ এ কথা দিয়ে আঠারো বছর বয়সের দুর্বার গতিশীলতাকেই কবি বোঝাতে চেয়েছেন।
➠ দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে আঠার বছর বয়সের যৌবনপ্রাপ্ত তরুণরাই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। কেননা, তাদের গতি দুর্বার, তারা লক্ষ্যে অবিচল, প্রতিজ্ঞায় অটল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটুও দ্বিধা করে না বিপদ মোকাবেলায়। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য বাষ্পের গতি নিয়ে স্টিমারের মতো এ বয়সীরা এগিয়ে যায়। জীবন উৎসর্গ করে হলেও তারা লক্ষে পৌঁছাতে সচেষ্ট হয়। দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সেই বৈশিষ্ট্য।

গ. উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে/ এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো’র দিকটি ফুটে উঠেছে।
➠ বয়ঃসন্ধিকাল মানুষের জীবনের এক চরম পরীক্ষার অধ্যায়। এ শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মনোজগতেও তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এ প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুটোই হতে পারে। ভালো-মন্দ নানা ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে নানা তত্ত্ব, নানা মতবাদ, নানা পরামর্শে এ সময় বিভ্রাšিড় ঘটতে পারে যার ফল ভয়াবহ।
➠ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় যৌবনে পদার্পণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন কবি। সমাজ জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে ভয়ংকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতায় এ সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। উদ্দীপকেও আমরা যৌবনে পদার্পণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সুফল ও কুফল দেখতে পাই। সুজন ও সাধন দুজনেই লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কিন্তু স্কুলজীবন পার না হতেই সুজন মিশে যায় কিছু অসৎ বন্ধুর সাথে। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে সে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। তার নাম শুনলে মানুষ আঁতকে ওঠে। অন্যদিকে সাধন হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর মেধাবী ছাত্র। এভাবে আমরা দেখি, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার নেতিবাচক অর্থাৎ ক্ষতিকর দিকটি উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ফুটে উঠেছে।

ঘ. ‘নানা সমস্যাপীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ‘যৌবনশক্তি’ যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়’ এ ইতিবাচক আশাবাদ দেশ ও জাতির জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।
➠ দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে তারুণ্যদীপ্ত মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। পরনির্ভরতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেয়। নতুন জীবনের, নিত্য নতুন করণীয় সম্পাদনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের জন্য দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের স্বপ্ন সফল করার দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যায়।
➠ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় দেশ ও জাতির প্রগতি ও অগ্রগতিকে নিশ্চিত করার জন্য তারুণ্যশক্তির প্রত্যাশা করা হয়েছে। আমাদের দেশ নানা সমস্যাপীড়িত। মৌলিক সমস্যাগুলো এখনও প্রবলভাবে রয়ে গেছে। এছাড়া বন্যা, নদীভাঙন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের কাছে এ দেশের মানুষ এখনও বিপন্ন। অথচ, আমাদের রয়েছে বিপুল তারুণ্যশক্তি। দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবেলার জন্য তাদের রয়েছে অদম্য প্রাণশক্তি। তারা তাদের শক্তি, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি ও কল্যাণব্রত দিয়ে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। আমাদের সমস্যাপীড়িত দেশে তারা হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি।
➠ উদ্দীপকের সাধনও ইতিবাচক তারুণ্যশক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সে তাতে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহপাঠীদের সংগঠিত করে, নেতৃত্ব দেয় এবং প্রতিজ্ঞা করে জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভাষার মান রক্ষা করবে। সাধন নিজের দেশ ও মানুষের সমস্যার গুরুত্ব দিয়ে এবং মিছিলের নেতৃত্ব গ্রহণ করে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রমাণ করেছে। সুতরাং উদ্বৃতিতে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে, আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তা সফল করবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
তমালের বয়স আঠারো। নিজেকে আজকাল একটু তার বড় বড় মনে হচ্ছে। আগে কেউ কিছু বললে চুপ করে শুনত; আজকাল যেন কথা বলতে শিখেছে, আত্মসম্মানবোধ জেগেছে। এই তো সেদিন ছোট চাচার সামনে যা করল, রীতিমতো সারা বাড়ি তোলপাড় হয়ে গেছে। তমাল একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে। ছোটচাচা প্রতিদিন সকালের নাস্তা সেরে খবরের কাগজ নিয়ে বসেন আজও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তমাল চাচার কাছে আন্তর্জাতিক পাতাটি চাইতে গেলে চাচা জোরে এক ধমক বসালেন, “আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিতে চায়, ভাগ এখান থেকে” বলে ছোটচাচা সিগারেটে আগুন ধরালেন। তমাল আর থাকতে পারল না, ‘‘চাচা, আপনিতো প্রথম পাতা পড়ছেন, তা হলে ভিতরের একটি পাতা দিতে আপত্তি করছেন কেন? আর এখানে ছোট বাচ্চারা খেলছে, আপনি সবার সামনে সিগারেট টানছেন কেন? জানেন, আপনার চেয়ে এতে ওদের ক্ষতি বেশি হবে?”
চাচা তো রেগে আগুন। যাচ্ছেতাই বলে ভর্ৎসনা করল তমালকে। কিন্তু আশ্চর্য! তমালের চোখ দিয়ে এক ফোটা জলও বের হলো না, বরং মনে হলো প্রতিবাদটাই শ্রেয়।
ক. কোন সময় বা বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে?
খ. “আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ” -কেন?
গ. এত ভর্ৎসনার পরও তমাল কাঁদলো না কেন? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে আলোচনা করো।
ঘ. “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মধ্যে আঠারো বছর বয়সের অশ্রুহীন প্রতিবাদশক্তির প্রকাশ ঘটেছে। - সত্যতা নিরূপণ করো।
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
খ. আঠারো বছর বয়স জীবনের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। এ সময় আসে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি ও নানা ধরনের ঝুঁকি। তাই কবি এ বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।
➠ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় মানবজীবনের আঠারো বছর বয়সটিকে দুঃসহ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এই বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে এই বয়সেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তরুণকে। আত্মনির্ভরশীলতার তাড়না তাকে এ সময় অস্থির করে তোলে। স্পর্ধিত সাহসে এই বয়সেই স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঝুঁকি নেয় সে । এদিক থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। জীবনকে আর আগের মতো ধরাবাধা ছকে বেঁধে রাখা যায় না। বরং উন্মাতাল আবেগে সবকিছু ছাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তাই বলা হয়েছে ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ’।

গ. তমালের ছোটচাচা তাকে অনেক ভর্ৎসনা করল, কিন্তু তারপরও সে কাঁদল না, কেননা তার মনে হয়েছে সে যেটা করেছে সেটা সঠিক।
➠ এখানে চাচা শুধু ভুল বুঝে তাকে ভর্ৎসনা করেছে, গালমন্দ করেছে। এখানে অন্যায়টা চাচার, তার নয়। সুতরাং এ বিষয়ে তার কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। বরং এই কষ্টটুকু সহ্য করার সাহস ও প্রত্যয় নিয়েই সে প্রতিবাদ করেছিল।
➠ আঠারো বছর বয়সের ধর্মই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করা। এ বয়সে অন্যায় দেখলে অবশ্যই প্রতিবাদ করবে, তাতে যতোই অবমাননা জুটুক কপালে। তা ছাড়া তার মধ্যে যে আত্মসম্মানবোধ জেগেছে তাতে ছোট চাচার রাগ ও কটু কথায় সে কাঁদতে পারে না। আঠারো বছর বয়স কবিতায় কবিও আঠারোর তরুণদের এই বৈশিষ্ট্যের কথা ব্যক্ত করেছেন। কারো কাছে মাথা নত না করে নিজের দুরন্ত প্রকাশ আঠারোর বৈশিষ্ট্য। আর এ প্রকাশের পথে সকল কষ্টই হাসিমুখে সহ্য করে আঠারোর তরুণ।

ঘ. “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, এ বয়সে মানুষ দুর্মর যৌবনের আলোকচ্ছটায় আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায়।
➠ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা” কথাটি এজন্য বলা হয়েছে যে শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল, এই বয়সের স্বভাব বৈশিষ্ট্য তা মুছে ফেলে সচেতনভাবে। এ বয়সে নিজের মর্যাদা ও শক্তি সম্বন্ধে সচেতনতা একজন তরুণকে জীবনের সকল কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করতে শেখায়।
➠ যৌবনের চির উন্মাদনায় এই বয়স কাঁদতে জানে না। শঙ্কাহীন উদ্দাম গতিতে নবসৃষ্টির আনন্দে সকল বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে চলে এ বয়সের তরুণ। জীবনের নানা কর্মে সংগ্রামে তার মন্ত্র হয়- Do or die. এমন অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হবার পর তার কাঁদার অবকাশ নেই। তাই কবি বলেছেন-“আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”।
➠ ‘আঠারো বছর বয়স’ সকল বাধাবিপত্তি অগ্রাহ্য করে ক্রমাগত এগিয়ে যায় সাফল্যের দিকে। কোনো ব্যর্থতাই এ বয়সকে দমিয়ে রাখতে পারে না। এ বয়স মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয় তারুণ্যখচিত যৌবনের মুখোমুখি, যা কোমল করুণ কান্নার নয়, চির বিদ্রোহের। সুতরাং, বলা যায়, “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মধ্যে আঠারো বছর বয়সের অশ্রুহীন প্রতিবাদশক্তির প্রকাশ ঘটেছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১
-------------
-----------

তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post