তাহারেই পড়ে মনে- সুফিয়া কামাল
|
| তাহারেই পড়ে মনে |
তাহারেই পড়ে মনে
সুফিয়া কামাল
“হে কবি,
নীরব কেন
ফাগুন যে এসেছে
ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি
লবে না কি
তব বন্দনায়?”
কহিল সে
স্নিগ্ধ আঁখি
তুলি-
“দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”
“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম, “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি?
কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের
পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।”
কহিলাম, “ওগো কবি! রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি- এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধু-স্বরে-
“নাই হলো, না হোক এবারে-
আমারে গাহিতে গান, বসন্তেরে আনিতে বরিয়া-
রহেনি, সে ভুলেনি তো, এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া।”
কহিলাম: “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে
করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটেনি শাখে?
পুষ্পারতি?
মাধবী
কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নাই
অর্ঘ্য বিরচন?”
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম, “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরে আসি-
“কুহেলি
উত্তরী তলে
মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে
পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে!
তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”
![]() |
| চিত্রকর: নাজমা শাওয়াল ইলারাহ; ৪র্থ শ্রেণি |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার উৎস নির্দেশ : |
|---|
| সুফিয়া কামালের ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় [নবম বর্ষ, ষষ্ঠ সংখ্যা, ১৩৪২] প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এটি ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। অক্ষরবৃত্ত ছন্দের লয় বা গতি ধীর। মূলপর্ব ৮ ও ১০ মাত্রার। ৮ + ১০ = ১৮ মাত্রার। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার শব্দার্থ ও টীকা : |
|---|
|
➠ হে কবি- কবিভক্ত এখানে কবিকে সম্বোধন করেছেন। ➠ নীরব কেন- উদাসীন হয়ে আছেন কেন? কেন কাব্য ও গান রচনায় সক্রিয় হচ্ছেন না। ➠ ফাগুন- ফাল্গুন মাস। ➠ ফাগুন যে এসেছে ধরায়- পৃথিবীতে ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে। ➠ ধরায়- পৃথিবীতে। ➠ বরিয়া- বরণ করে। ➠ লবে না- নিবে না। ➠ তব- তোমার। ➠ বন্দনা- প্রার্থনা। ➠ তব বন্দনায়- তোমার রচিত বন্দনা-গানের সাহায্যে। অর্থাৎ বন্দনা-গান রচনা করে বসন্তকে কি তুমি বরণ করে নেবে না? ➠ স্নিগ্ধ আঁখি- স্নেহপূর্ণ মায়াজড়িত চোখ বা দৃষ্টি। ➠ দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?- কবির জিজ্ঞাসা- বসন্তের দখিনা (দক্ষিণের) বাতাস বইতে শুরু করেছে কি না। উদাসীন কবি যে তা লক্ষ করেননি তার এই জিজ্ঞাসা থেকে তা স্পষ্ট হয়। ➠ বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?- বসন্তের আগমনে বাতাবি লেবুর ফুল ও আমের মুকুলের গন্ধে দখিনা বাতাস দিগ্বিদিক সুগন্ধে ভরে তোলে। কিন্তু উন্মনা কবি এসব কিছুই লক্ষ করেননি। কবির জিজ্ঞাসা তাঁর উদাসীনতাকেই স্পষ্ট করে। ➠ দখিনা সমীর- দক্ষিণ দিকের বাতাস। ➠ সমীর- বাতাস। ➠ অধীর- ব্যাকুল; অস্থির; চঞ্চল। ➠ এখনো দেখনি তুমি?- কবিভক্তের এ কথায় আমরা নিশ্চিত হই প্রকৃতিতে বসন্তের সব লক্ষণ মূর্ত হয়ে উঠেছে। অথচ কবি তা লক্ষ করছেন না। ➠ উন্মনা- উদাসীন। ➠ কোথা তব নব পুষ্পসাজ- বসন্ত এসেছে অথচ কবি নতুন ফুলে ঘর সাজাননি। নিজেও ফুলের অলংকারে সাজেননি। ➠ পুষ্পসাজ- ফুল দিয়ে সাজানো। ➠ অলখ- অলক্ষ। দৃষ্টি অগোচরে। ➠ পাথার- সমুদ্র। ➠ বহিয়া- বেয়ে। ➠ সন্ধান- খোঁজখবর; হদিস। ➠ রচিয়া লহ- রচনা করে নাও। ➠ মিনতি- অনুরোধ। ➠ স্মরিয়া- স্মরণ করে। ➠ অভিমান- প্রিয়জনের ত্রুটিপূর্ণ আচরণ-জনিত মনোবেদনা বা ক্ষোভ। ➠ বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি- এ মোর মিনতি।- কবি বন্দনা-গান রচনা করে বসন্তকে বর্ণনা করলেও বসন্ত অপেক্ষা করেনি। ফাল্গুন আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। ➠ করিলে বৃথাই- ব্যর্থ করলে। অর্থাৎ কবি-ভক্তের অনুযোগ-বসন্তকে কবি বরণ না করায় বসন্তের আবেদন গুরুত্ব হারিয়েছে। ➠ হেলায়- অবহেলায়। ➠ শাখে- শাখায়; গাছের ডালে। ➠ পুষ্পারতি - ফুলেল বন্দনা বা নিবেদন। ➠ পুষ্পারতি লভেনি কি ঋতুর রাজন?- ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ ও বন্দনা করার জন্য গাছে গাছে ফুল ফোটেনি? অর্থাৎ বসন্তকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর জন্যেই যেন ফুল ফোটে। ➠ ঋতুর রাজন- ঋতুরাজ বসন্ত। ➠ কুঁড়ি- মুকুল; আফোটা ফুল। ➠ মাধবী- বাসন্তী লতা বা তার ফুল। ➠ অর্ঘ্য- পূজার উপকরণ। ➠ অর্ঘ্য বিরচন- অঞ্জলি বা উপহার রচনা। প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুল ও তার সৌরভ উপহার দিয়ে বসন্তকে বরণ করে। ➠ উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা- কবিভক্ত বুঝতে পারছেন না, কবি যথারীতি সানন্দে বসন্ত বন্দনা না করে তার দিকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন কেন। ➠ বিমুখতা- মুখ ফেরানো।। ➠ কুহেলি- কুয়াশা। ➠ উত্তরী- চাদর। উত্তরীয়। ➠ কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী- কবি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন। যে সন্ন্যাসী কুয়াশার চাদর পরিধান করে আছে। ➠ মাঘের সন্ন্যাসী- কবি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন। যে সন্ন্যাসী কুয়াশার চাদর পরিধান করে আছে। ➠ পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে- শীত প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততার রূপ। গাছের পাতা যায় ঝরে। গাছ হয় ফুলহীন। শীতের এ রূপকে বসন্তের বিপরীতে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতি বসন্তের আগমনে ফুলের সাজে সাজলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ততার ছবি। শীত যেন সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর গায়ে পত্রপুষ্পহীন দিগন্তের পথে চলে গেছে। ➠ রিক্ত হস্তে- শূন্য হাতে। ➠ তাহারেই পড়ে মনে- প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ত ও বিষণ্ণ ছবি। কবির মন দুঃখ ভারাক্রান্ত। তার কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্ত তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন, মনে কোনো আবেদন জানাতে পারছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর প্রথম স্বামী ও কাব্যসাধনার প্রেরণা-পুরুষের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে যে বিষণ্ণতা জাগে তারই সুস্পষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় ফুটে উঠেছে। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি : |
|---|
|
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি পেয়েছে। সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানবমনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। বসন্ত-প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যে কবিমনে আনন্দের শিহরণ জাগাবে এবং তিনি তাকে ভাবে ছন্দে সুরে ফুটিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবিমন যদি কোনো কারণে শোকাচ্ছন্ন কিংবা বেদনা-ভারাতুর থাকে তবে বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য সত্ত্বেও কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারবে না। এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে (১৯৩২) কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্যসাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণ্ণতা। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাকে আচ্ছন্ন করে আছে এই বিষাদময় রিক্ততার সুর। তাই বসন্ত এলেও উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে রিক্ত শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা। কবিতাটির আরেকটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর নাটকীয়তা। গঠনরীতির দিক থেকে এটি সংলাপনির্ভর রচনা। কবিতার আবেগময় ভাববস্তুর বেদনাঘন বিষণ্ণতার সুর এবং সুললিত ছন্দ এতই মাধুর্যমতি যে তা সহজেই পাঠকের অন্তর ছুঁয়ে যায়। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবি পরিচিতি : |
|---|
|
সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের বিশিষ্ট মহিলা কবি ও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তাঁর জন্ম ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন বরিশালে। তাঁর পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়। কবির পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মায়ের নাম সাবেরা বেগম। যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্ম তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের কাটাতে হতো গৃহবন্দি জীবন। স্কুল কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ তাদের ছিল না। ওই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। পারিবারিক নানা উত্থান পতনের মধ্যে তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। তারই মধ্যে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় আত্মনিয়োগ করেছেন। পরবর্তীকালে সাহিত্য সাধনা ও নারী আন্দোলনে ব্রতী হয়ে তিনি শুধু কবি হিসেবেই বরণীয় হননি, জননী সম্ভাষণে ভূষিত হয়েছেন।
সুফিয়া কামালের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে:
‘সাঁঝের মায়া(১৯৩৮)’, ‘উদাত্ত পৃথিবী(১৯৬৪)’, ‘মায়া কাজল(১৯৯১)
ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি গল্পগ্রন্থ (কেয়ার কাঁটা, ১৯৩৭),
ভ্রমণকাহিনি, প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা
(একাত্তরের ডায়েরি, ১৯৮৯) লিখেছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার
(১৯৬২), একুশে পদক (১৯৭৬), স্বাধীনতা পদক(১৯৭৬), নাসির উদ্দীন
স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
|---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
![]() |
| চিত্রকর: আফরিন আয়েশা; ৩য় শ্রেণি |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
|---|
|
১. কবি সুফিয়া কামাল কত সালে জন্মগ্রহণ করেন? উত্তর: কবি সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২. সুফিয়া কামালের জন্মের সময় কাদেরকে গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হতো? উত্তর: সুফিয়া কামালের জন্মের সময় বাঙালি মুসলমান নারীদেরকে গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হতো। ৩. সুফিয়া কামালের জন্মের সময় পরিবারে কোন ভাষার প্রবেশ একরকম বন্ধ ছিল? উত্তর: সুফিয়া কামালের জন্মের সময় পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম বন্ধ ছিল। ৪. সুফিয়া কামালের স্বামীর নাম কী ছিল? উত্তর: সুফিয়া কামালের স্বামীর নাম ছিল সৈয়দ নেহাল হোসেন। ৫. পারিবারিক নানা উত্থান-পতনের মধ্যে সুফিয়া কামাল কেমন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন? উত্তর: পারিবারিক নানা উত্থান-পতনের মধ্যে সুফিয়া কামাল স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন। ৬. সাহিত্য সাধনায় সুফিয়া কামালের প্রধান উৎসাহদাতা কে ছিলেন? উত্তর: সাহিত্য সাধনায় সুফিয়া কামালের প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন তাঁর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন। ৭. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার কততম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়? উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার ষষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ৮. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন কীসে আচ্ছন্ন হয়ে যায়? উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন রিক্ততার হাহাকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ৯. কবিকে বসন্ত-বন্দনা রচনা করতে বলেছে কে? উত্তর: কবি-ভক্তরা কবিকে বসন্ত-বন্দনা রচনা করতে বলেছে। ১০. ‘অলখ’ শব্দের অর্থ কী? উত্তর: ‘অলখ’ শব্দের অর্থৎ অলক্ষ বা দৃষ্টির অগোচর। ১১. ‘উন্মনা’ শব্দের অর্থ কী? উত্তর: ‘উন্মনা’ শব্দের অর্থৎ অন্যমনস্ক। ১২. কবি সুফিয়া কামালের যখন জন্ম হয় তখন বাঙালি রমণীরা কীভাবে দিন কাটাত? উত্তর : কবি সুফিয়া কামালের যখন জন্ম হয় তখন বাঙালি রমণীরা গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটাত। ১৩. কোন ঋতুর দিকে চেয়ে কবি রিক্ত ও বিষণ্ণ হয়ে আছেন? উত্তর: শীত ঋতুর দিকে চেয়ে কবি রিক্ত ও বিষণ্ণ হয়ে আছেন। ১৪. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কোন ফুলের উল্লেখ আছে? উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় মাধবী ফুলের উল্লেখ আছে। ১৫. ‘আঁখি’ শব্দের বুৎপত্তি নির্দেশ কর। উত্তর: আঁখি অক্ষি। ১৬. ‘সাজ’ শব্দের বুৎপত্তি নির্দেশ কর। উত্তর: সাজ সজ্জা। ১৭. সুফিয়া কামাল কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন? উত্তর : সুফিয়া কামাল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮. শীতের রিক্ততার সাথে কবি কিসের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন? উত্তর : শীতের রিক্ততার সাথে কবি নিজ জীবনের অনন্ত শূন্যতার সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। ১৯. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়? উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। ২০. সুফিয়া কামাল কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? উত্তর : সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ২১. ‘বরিয়া’ শব্দের অর্থ কী? উত্তর : বরিয়া শব্দের অর্থ বরণ করে। ২২. কবি সুফিয়া কামালের প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন কবে মৃতু্যবরণ করেন? উত্তর : কবির প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে। ২৩. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার গঠনরীতির দিক থেকে প্রধান বৈশিষ্ট্য কী? উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় গঠনরীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সংলাপ নির্ভরতা। ২৪. ‘সমীর’ শব্দের অর্থ কী? উত্তর : সমীর শব্দের অর্থ বাতাস। ২৫. কবি সুফিয়া কামালের পিতার নাম কি? উত্তর : কবি সুফিয়া কামালের পিতার নাম সৈয়দ আবদুল বারী। ২৬. সুফিয়া কামালের পেশাগত জীবনের শুরু হয়েছিল কীভাবে? উত্তর : শিক্ষকতা দিয়ে সুফিয়া কামালের পেশাগত জীবনের শুরু হয়েছিল। ২৭. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি কোন গান বাজার কথা জানতে চেয়েছেন? উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি আগমনী গান বাজার কথা জানতে চেয়েছেন। ২৮. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার কততম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়? উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার ষষ্ঠতম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ২৯. কবি সুফিয়া কামালের কাব্য সাধনার প্রেরণাপুরুষ কে ছিলেন? উত্তর : কবি সুফিয়া কামালের কাব্য সাধনার প্রেরণাপুর“ষ ছিলেন কবির প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন। ৩০. তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন কিসে আচ্ছন্ন হয়ে যায়? উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন রিক্ততার হাহাকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
|---|
|
১. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির যে বিষাদঘন একাকিত্বের বিষয়টি ফুটে
উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।
২. ‘অলখের পাথার বাহিয়া’- চিত্রকল্পটির মর্মার্থ ব্যাখ্যা করো।
৩. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ঋতুকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
ব্যাখ্যা করো।
৪. প্রিয়জন হারানোর বেদনা কীভাবে মানুষের মনে ছায়াপাত করে? ‘তাহারেই পড়ে
মনে’ কবিতাবলম্বনে তা বর্ণনা করো।
৫. ‘হে কবি নীরব কেন?’- কবি কোন কারণে নীরব?
৬. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি নাটকীয় গুণসম্পন্ন। সংক্ষেপে ব্যাখ্যা
করো।
৭. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্তের আগমনে কবি উদাসীন কেন?
৮. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও কবির মনের অবস্থার
মধ্যে কোনটি প্রধান হয়ে উঠেছে বলে তুমি মনে করো? কেন?
৯. “তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
১০. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা অবলম্বনে সংক্ষেপে বসন্ত ঋতুর বর্ণনা
দাও।
১১. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীতের রিক্ততার মধ্যে কবির অতীত জীবনের যে
সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় তা লেখ।
১২. “কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী- গিয়াছে চলিয়া ধীরে
পুষ্পশূন্য
১৩. “অলখের পাথার বাহিয়া |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. “তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়? |
|
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি প্রথম ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত
হয়।
গ. উদ্দীপকের প্রথম দুচরণে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বিষাদময় রিক্ততার
হাহাকার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকটি যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মর্মবাণীকেই ধারণ করেছে”
কথাটা যথার্থ ও যৌক্তিক। কেননা উদ্দীপক এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার
মর্মবাণী একই। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কোন ঋতুর কথা বলা হয়েছে? |
|
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্ত ঋতুর কথা বলা হয়েছে।
গ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্যময় রূপ প্রকাশিত হলেও সেটা
মুখ্য হয়ে ওঠে নি। বরং কবির আপনজন হারানোর ফলে তার মনোবেদনাই এখানে
প্রধান হয়ে উঠেছে।
ঘ. বাইরের অবস্থার সাথে মানুষের মনের সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রকৃতির
বিরূপ প্রভাবে মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘মিনতি’ শব্দটির অর্থ ও বুৎপত্তি নির্দেশ করো। |
|
ক. ‘মিনতি’ শব্দের অর্থ অনুরোধ। ‘মিনতি’ শব্দটি সংস্কৃত বিনতি এবং আরবি
মিনত শব্দযোগে তৈরি হয়েছে।
গ. স্বজন বিয়োগে কোনো কালই মানুষের মনে আনন্দ দিতে পারে না। তাই কবি
সুফিয়া কামাল ও অনিতা স্বজন বিয়োগে মনের আনন্দে কবিতা লিখতে পারছেন
না।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার উল্লিখিত পঙ্ক্তিতে কবি মনের বিষণœতা প্রকাশ
পেয়েছে। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘পুষ্পারতি’ শব্দটির অর্থ কী? |
|
ক. ‘পুষ্পারতি’ শব্দটির অর্থ হলো ফুলের বন্দনা বা নিবেদন।
গ. বসন্তে কবিমন বিষণ্ন। তাই সে কোনো কবিতা লিখে নি। কিন্তু প্রকৃতি তার
আপন গতিতে চলে। উদ্দীপকে উল্লিখিত লাইনে প্রকৃতির সে ধর্মের কথা বলা
হয়েছে।
ঘ.‘তাহাড়েই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মনের বিষণ্নতাই প্রধান হয়ে উঠেছে। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘উত্তরী’ শব্দের অর্থ কী? |
ক. ‘উত্তরী’ শব্দটি উত্তরীয় শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। ‘উত্তরীয়’ অর্থ চাদর।
গ. কবি জীবনের প্রাণপুরুষের বিয়োগের প্রেক্ষাপটে যেভাবে কবিতাটি লিখেছেন ঠিক সেভাবেই অনুচ্ছেদের সৃষ্টির জীবনের প্রথম স্বামী বিদায়ের বিরহ ফুটে উঠেছে।
ঘ. মানুষ একা বাস করতে পারে না। বেঁচে থাকতে হলে কাউকে না কাউকে সুখ-দুঃখের সাথী করে নিতে হয়। দীর্ঘদিন বসবাসে সেই সঙ্গীটি অনেক সময় মানুষের সত্তার সাথে মিশে যায়। তাই যখন সঙ্গীটি হারিয়ে যায় বা ছেড়ে চলে যায়, তখন মানুষ আপন সত্তাকে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুভব করে না তাই তার মধ্যে দেখা দেয় শূন্যতা। নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয় তার। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
|---|
নিচের ছবিটি দেখো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটির প্রকাশকাল কত? |
ক. সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
গ. কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকাশিত ভালোবাসার অনুভবের সাথে মিল আছে উদ্দীপকের চিত্রকল্পের।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার উল্লিখিত উক্তিতে প্রিয়জন হারানোর যে বেদনা ও শূন্যতাবোধ ফুটে উঠেছে তা-ই এ কবিতার মূলসুর। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কী কী ফুলের উল্লেখ আছে? |
|
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বাতাবি লেবুর ফুল, আমের মুকুল, মাধবী কুঁড়ির উল্লেখ রয়েছে, এর সবগুলোই বসন্তের ফুল।
কবি বেগম সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ‘ফাগুন যে এসেছে ধরায়’ কথাটির মধ্যে বসন্তের যে সৌন্দর্য সমৃদ্ধির আভাস রয়েছে তার সাথে ভাবগত মিল আছে অনুচ্ছেদের ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’-অংশটুকুর।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির প্রিয় হারানোর বেদনার সাথে অনুচ্ছেদের উল্লিখিত কবিতাংশের বেদনার সুরটি যেন একই ভাব থেকে উৎসারিত। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. “বসন্তরে আনিতে বরিয়া” এখানে ‘বরিয়া’ শব্দটির চলিত রূপ কী। |
|
ক. ‘বরিয়া’ শব্দটির চলিত রূপ হলো ‘বরণ করে’।
গ. কবি সুফিয়া কামাল বিরচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি তাঁর স্মৃতিচারণমূলক একটি শোকগাঁথা।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি কবি সুফিয়া কামালের ব্যক্তিজীবনের দুঃখ বেদনার একটি রূপালেখ্য। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। |
|
ক. ‘সমীর’ শব্দটির অর্থ হলো বাতাস।
গ. অনুচ্ছেদ তপুর বউ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়েছে। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ঋতুচক্রে শেষ ঋতুর নাম কী? |
|
ক. ঋতুচক্রে শেষ ঋতুর নাম বসন্ত। গ. প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মেনেই বসন্ত এলো। দখিনা সমীরের সাথে গলাগলি করে, আমের মুকুলের গন্ধ আর বাতাবি লেবুর গন্ধের সাথে হাত ধরাধরি করে ফাগুন এলো। প্রতি বছর একই মাহাত্ম্যে আর্দ্র হয়ে ফাগুন আসে। আনন্দ সঞ্চারে নৈর্ব্যক্তিক পক্ষপাত থাকে বলে তার অবদান ও আবেদন কোন কিছুর সাপেক্ষ নয়। কোন সুন্দর যদি ফাগুনকে বরণ করতে অসমর্থ হয় তাহলে তাকে কিছু বলতে পারে না বসন্ত। শুধু বসন্তোৎসবের গীতি ঝঙ্কার শুনিয়ে দিতে পারে। তাই আপাতদৃষ্টিতে, কারো অংশগ্রহণ না থাকায় বসন্ত উৎসব অসফল হল বা বসন্ত ব্যর্থ হল এরকম মনে হলেও, বসন্ত আসলে ব্যর্থ হয় না। বসন্তের যা কাজ তা সে যথাযথভাবে পালন করে। ডগায় ডগায় ফুল ফুটায় বসন্ত। এবং বসন্ত ধন্য হয় সে ফুলের আরতি পেয়ে। আমের জামের মুকুল উঁকি দেয়-। বাতাবি লেবুর ফুল ফোটে। গন্ধে গন্ধে বসন্ত হয় ব্যাকুল। মাধবী ফুলের কুঁড়ির বুকে গন্ধের লুকোচুরি। এ সবই বসন্তের উস্কানিতেই হয়। বসন্ত ব্যক্তিক নয়-নৈর্ব্যক্তিক আনন্দের গীতিকার।
ঘ. প্রদত্ত উদ্দীপকে নাটকীয় সংলাপের আদলে সুন্দরপিয়াসী দুটি সত্তার অন্তর্লোক উন্মোচিত হয়েছে। একটি সত্তা হল কবিভক্ত। অন্যটি হলো একজন কবি। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার কততম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়? |
|
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার ষষ্ঠতম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। গ. স্মামীর প্রতি নাসরিনের ভালোবাসা সুফিয়া কামালের ভালোবাসার সঙ্গে যথেষ্ট সাদৃশ্যপূর্ণ। কিশোরী বয়সের দুরন্তপনার দিনের শুরুত্বে নাসরিনের বিয়ে হয়ে যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও স্বামীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বুঝে ওঠতে পারে না সে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে যতই নাসরিনের স্বামীর কাছাকাছি যেতে থাকে ততই সে নিজের জীবনে স্বামীর গুরুত্বকে উপলদ্ধি করতে শেখে। ধীরে ধীরে সে স্বামীর প্রতি করণীয় সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং স্বামীকে একান্ত আপন করে নিয়ে ভালোবাসতে শুরু করে। স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা গভীর হতে হতে যখন মহীরূহ আকার ধারণ করে তখন এক সড়ক দুর্ঘটানায় আকস্মিকভাবে তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর মৃত্যু হয়। এতে সে এতটাই শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে, যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক সময় তাকে মুগ্ধ করত, এখন তা আর তাকে স্পর্শও করে না। তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি সুফিয়া কামালেরও স্বামীর প্রতি অনুরূপ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। কবির প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্বামীই ছিলেন তার কাব্য সাধনার প্রেরণার উৎস, উৎসাহদাতা, ভালোবাসার ধন। তাই স্বামীর মৃত্যুতে কবি শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন। নীরব, নিশ্চল, নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন তিনি। স্বামী হারানোর বেদনা তার হৃদয়ে এমনভাবে বিধেছে যে, মহাসমারোহে বসন্তের আগমন তার মনে কোনো আবেদনই সৃষ্টি করতে পারেনি। প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য সকল রূপসজ্জা একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়েছে তার বিরহী মনের রিক্ততার কাছে। স্বামীর প্রতি নাসরিনের ভালোবাসাও কবির অনুরূপ। আর তাই তাদের বেদনার স্বরূপও একইভাবে ফুটে ওঠেছে কবিতা ও উদ্দীপকে। ঘ. স্বামীকে হারানোর তীব্র শোক কবি সুফিয়া কামালের মতো উদ্দীপকের নাসরিনের বসন্ত উৎসবকে নিরুৎসব করে দিয়েছে। স্বামীকে ভালোবেসে নাসরিন যে সুখের সংসার পেতেছিল তা সারা বছর জুড়েই থাকত বসন্তময়। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা গেলে বসন্তেও তার হৃদয়ে বেজে ওঠে শীতের রিক্ততার করুণ হাহাকার। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির হৃদয়ও একই রকম হাহাকার বসন্তের আগমনকে অর্থহীন করে তুলেছে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটিতে অন্তর্লীন হয়ে আছে কবি সুফিয়া কামালের বিষাদময় রিক্ততার সুর। কবিতায় শীতের জরাজীর্ণ ও রিক্ততার মধ্যে উৎসারিত হয়েছে কবির জীবনের পুষ্পশূন্য হৃদয়ের ব্যথা-শতরূপে, শতধারায়। সুন্দরের পসরা সাজিয়ে প্রকৃতির উদার প্রান্তরে মহাসমারোহে বসন্ত এসেছে অপূর্ব রূপরাশি ও সৌন্দর্য সম্ভারে সুসজ্জিত হয়ে। কিন্তু মধুবসন্তের এমনতর শুচিস্নিগ্ধ, চিত্তাকর্ষক ও মাধুরীমন্ডিত আন্দনমুখর পরিবেশে কবি আজ উদাসীন, উন্মানা। লেখনী তার নীরব, নিস্তব্ধ, নিশ্চল। কবির সূক্ষ্ম হৃদয়তন্ত্রীতে বসন্তের সমুদয় আয়োজন, আবেদন যেন আজ ব্যর্থ। কবির সমগ্র চিত্ত দখল করে আছে শীতের রিক্ততা। কারণ কুয়াশা ঘেরা মলিন দিনে বিচ্ছেদের জ্বালা মিলনমালাকে ছিন্ন করে শূন্যতা নিয়ে বেজেছিল কবির হৃদয়ে। কবির মনে আজও সে বিষাদময় ক্ষণটিই ঝংকৃত হয় বেদনার গীতি হয়ে। বিকশিত যৌবনের মাধুর্য থেকে বঞ্চিত প্রথম স্বামীর বেদনাঘন ছায়া কবির হৃদয়ে ও অস্থিমজ্জায় আজও সঞ্চারিত। তাই বসন্তের প্রাণ মাতানো অবেলাভূমিতে দাঁড়ানো কবির হৃদয়ে সে অনন্ত পারাপারে চলে যাওয়া প্রাণপ্রিয় মানুষটি তার আবেগের সেতার বাজিয়ে চলছে। এজন্য কবি বসন্ত বন্দনায় নিবেদিতা না হয়ে প্রত্যাবর্তন করেন অতীত স্মৃতির ক্যানভাসে। কবির মতো উদ্দীপকের নাসরিনের হৃদয়েও বসন্তের অপার সৌন্দর্য কোনো সাড়া জাগাতে পারে না। প্রিয়জন হারানোর শোকেই কবির মতো তার অন্তর শোকাচ্ছন্ন। হারানো স্বামীকে কবির মতো সেও ভুলতে পারে না। তাই কবির অন্তরের মতো নাসরিনের অন্তরও বসন্তের সৌন্দর্যকে স্বাগত জানাতে পারে না। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. অর্ঘ্য অর্থ কী? |
|
ক. অর্ঘ্য অর্থ সম্মানিত ব্যক্তিকে সংবর্ধিত করার জন্য প্রদত্তমালা। গ. প্রকৃতি তার রূপ বদলায় সময়ে সময়ে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতেও লাগে পরিবর্তনের ছোঁয়া। ভৌত পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রকৃতির অন্য কিছু অনুষঙ্গেও পরিবর্তন সূচিত হয়। বৃক্ষ, ফুল, ফল, নদী, পাখি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যায়। বসন্ত ঋতুর আগমনেও সূচিত হয় পরিবর্তন। উদ্দীপকে এই পরিবর্তনের প্রতি কবি হৃদয়ের আবেগমাখা অভিমান আরোপিত হয়েছে। বসন্তের আগমনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। কবিরা তখন বলেন- আজি দখিনা দুয়ার খোলা। গাছে গাছে লাগে প্রাণের নাচন। পাতা ঝরানো শীত বিদায় নেওয়ার পর দখিনা হাওয়ার প্রসাদে গাছে গাছে জাগে নতুন পাতা। কোন কোন গাছে দেখা দেয় ফলের সূচনা। বাতাবী লেবুর ফুল এ সময়েই ফোটে। আমের মুকুল দেখা দেয়। আমের মুকুল থেকে উৎসারিত গন্ধে আমোদিত হয় বাতাস। দখিনা বাতাস সে গন্ধে আকুল হয়ে তাকে বয়ে নিয়ে যায় বহুদূর। যাঁরা কবি স্বভাবের তারা বসন্তের রঙে নিজেদেরকে রাঙিয়ে নেন। তাঁদের কাছে বসন্ত সুদূরের পথ বেয়ে অচিন দেশ থেকে আসা অতিথি। প্রকৃতিতে তার আগমনী গান বাজে আগে থেকেই। প্রকৃতি ফুলসাজে নববধূর বেশ ধারণ করে। এভাবে প্রকৃতিতে লাগে দোলা-সুন্দরের দোলো। সে দোলায় দোলে ফুল, পাখি, বৃক্ষ। দোলে জনচিত্তও।
ঘ. দার্শনিক, বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, কবি-সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন মানুষের মনের ওপর প্রকৃতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ঋতু বদল হয়, অন্য ঋতু আসে। বদলে যায় প্রকৃতির রং ও রূপ। বদলে যায় মানব মন, মানুষের বৃত্তি-আচরণ অনেক কিছু। প্রকৃতি মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে দুই ভাবে। প্রথমত বাহ্যিক জীবনাচরণে দ্বিতীয়ত মনের গতিধারায়। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটির প্রকাশ মাধ্যম লেখ। |
|
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় নবমবর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা (১৩৪২) প্রথম প্রকাশিত হয়। গ. শীত প্রকৃতিকে উপহার দেয় রিক্ততা। বৃক্ষ হয় পত্রহীন-ফুলহীন। প্রকৃতি থাকে নীরব নিস্তেজ, সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মত। শীতের এই রূপ, বসন্তের বিপরীতে স্থাপিত। প্রকৃতির আঙিনা বসন্তের বিচিত্রফুলে সাজলেও কবির মনজুড়ে থাকে শীতের রিক্ততা। শীত যেন গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে পত্রপুষ্পশূন্য দিগন্তের পানে চলে গেছে। শীতের বিদায় স্মৃতিতে কবিচিত্ত উদ্ভ্রান্ত ও বেদনাবিধূর। কবি হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত। বসন্তের আনন্দ অপেক্ষা শীতের বিয়োগজনিত ব্যথাই কবিকে বেশি পীড়া দিচ্ছে। কবির প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। শীত ঋতুর প্রতীকে তাঁকে কবি মাঘের সন্ন্যাসী বলেছেন। মাঘ মাসের কুয়াশার আড়াল দিয়ে সকলের অজান্তে শীত যেমন প্রকৃতির উঠোন থেকে বিদায় নেয়, কবির একান্ত প্রিয় মানুষটিও কবিকে নিঃস্ব করে দিয়ে রিক্ত হস্তে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কবি তাই তাকে ভুলতে পারেননি। ঘ. গীতিধর্মিতা ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার একটি বড় গুণ। আর গীতিধর্মিতার বড় গুণ হল কবির আত্মগত ভাবানুভূতির বহিঃপ্রকাশ। কবিভক্তের ব্যাকুল প্রশ্ন চারদিকে এত ফুল এত গন্ধ, এত সুর এত ছন্দ-তারপরও নীরব কেন কবি। তার উত্তরে কবি জানিয়েছেন- ‘মাঘের সন্ন্যাসী’ বিদায় নিয়েছে- তাহাকে ভুলতে পারিনা কোন মতে। এই একটি বাক্যে এতক্ষণে অনাবি®কৃত কবিকে আবিষ্কার করা গেল। কেন উন্মনা কবি, কেন বসন্তবন্দনায় অনীহ তিনি, কেন বসন্তবিমুখতা, তা জানা গেল। সাহিত্য বা আর্ট হতে হয় নৈর্ব্যক্তিক। কবিভক্ত চেয়েছেন কবি একটা বসন্তগীতি লিখুক। নৈর্ব্যক্তিক আবেগ দিয়ে লিখলে দ্বিধা বা ইতস্তততা থাকার কথা নয়। বারবার চবৎংড়হধষ জীবনসত্য এসে কবিকে বসন্তগীতি রচনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সেই ব্যক্তিগত জীবন সত্যের পেছনে অবস্থান করে আছেন তাঁর প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন-যাঁর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় তাঁর সাহিত্যের পথে আসা। স্বামীর মৃত্যু তার মনকে রিক্ত নিঃস্ব করে দিয়েছে। দুঃখ যদি মনকে আচ্ছন্ন করে। তাহলে কোন বিনোদনই উপাদেয় নয়। যার ফলে প্রাণ ভরিয়ে দিতে যে মধুর বসন্ত এসেছে, তার আহ্বানে সাড়া দিতে পারেন না কবি। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রথম থেকে বসন্ত বন্দনার ব্যাপারে কবির নিরুৎসাহের ফলে পাঠকচিত্তে যে কৌতূহল জাগে তার অবসান হয় শেষ স্তবকে। সেখানে তিনি তার ব্যক্তিগত বেদনার ঝাঁপিটি খুললেন। পাঠক জানলো চিরন্তনও অনেক সময় ব্যর্থ হয় ব্যক্তিগত দুঃখবোধ বা সুখবোধের অভিঘাতে। আমরা দাবি করতে পারি উদ্দীপক ও মূল কবিতায় কবি সুফিয়া কামালের ব্যক্তি জীবনের একটি অধ্যায় এবং তার প্রলম্বিত দুঃখবোধ আভাসিত হয়েছে। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘বরিয়া’ শব্দের অর্থ কী? |
|
ক. বরিয়া শব্দের অর্থ বরণ করে। গ. কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রিয়জন হারানোর যে বেদনানুভূতি কবি হৃদয়কে আনন্দহীন করেছে তা উদ্দীপকের মূলভাবেও প্রতিফলিত হয়েছে। প্রিয়জন হারানোর বেদনা সব সময়ই মানুষের হৃদয়কে শোকাচ্ছন্ন করে। কখনো কখনো এ শোক এতটাই তীব্র হয় যে, তা মানবমনের সৌন্দর্যের অনুভূতিতে জাগ্রত আনন্দকেও ম্লান করে দেয়। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামালের ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছে। এ কবিতায় কবির ব্যক্তি জীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে তাই বসন্ত এলেও উদাসীন কবি তাই বসন্তের বন্দনা না করে হারানো স্বামীর বেদনার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আন্মনা হয়ে থাকেন। কবি হৃদয়ের এ বসন্ত বিমুখতা তার স্বামী হারানোর শোককেই তুলে ধরে। অন্যদিকে উদ্দীপকে ও কবির অনুভুতিতে অনুরূপ অভিব্যক্তির সকরুণ সুর বিষাদময় হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, বসন্তের মতো প্রকৃতি পুষ্পসাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে এবং তারই মধ্যে দক্ষিণাবায়ু সৌরভ মাধুর্য চঞ্চলতায় মেতে উঠেছে। কিন্তু কবির হৃদয়কে তা স্পর্শ করতে পারছে না। কারণ কবি সুফিয়া কামালের মতো তার হৃদয়ও প্রিয়জন হারানোর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাই প্রকৃতির আনন্দোৎসবের মধ্যেও তিনি অবসন্ন মনে অন্ধকার ঘরে পড়ে আছেন। তার বন্ধুহারা হৃদয়ে সেতারের যে করুন সুরলহরী ঝংকৃত হচ্ছে তা কবি সুফিয়া কামালের মতো তাকেও সৌন্দর্য সুধা পান করা থেকে বিরত রেখেছে। এভাবে উদ্দীপকটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রিয়জন হারানো মর্মবেদনার বিষাদময় দিকটি ফুটে ওঠেছে। ঘ. উদ্দীপক ও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি পেয়েছে। এদিক বিবেচনায় উদ্দীপকটিকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রচ্ছন্ন রূপ বলা যায়। প্রচ্ছন্ন বলতে বুঝায়, সুপ্ত বা গুপ্ত। কবিতায় কবিমন শোকাচ্ছন্ন ও বেদনা-ভাবাতুর ছিল বিধায় বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্যের ডালি দিয়েও কবিকে বিমোহিত করতে পারেনি। অপরদিকে, উদ্দীপকেও এমনই এক দৃশ্যপটের অবতারণা হয়েছে। ‘পুষ্প ফুটে কোন কুঞ্চবনে’ চরণটি দ্বারা উল্লখিত অংশে প্রকাশ পেয়েছে প্রকৃতির প্রতি বক্তার উদাসীনতা যা ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূলভাবকেই প্রতিফলিত করছে। কবিতায় কবি শীতের করুণ বিদায়কে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। কেননা, রিক্ত হস্তে শীতের করুন বিদায় কবিকে মনে করিয়ে দেয় প্রিয় মানুষের চলে যাওয়ার মুহূর্ত। আর উদ্দীপকের বন্ধুহারা মম অন্ধ ঘরে, আছি বসে অবসন্ন মনে চরণটি যেন সে ইঙ্গিতই বহন করছে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন দুঃখবারাক্রান্ত। তার কণ্ঠ নীরব, নিঃস্পৃহ। বসন্তের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন। কেননা কবির হৃদয় আচ্ছন্ন রিক্ততার হাহাকারে। শীত ঋতু যেভাবে সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাঁদর গায়ে পত্রপু®পহীন দিগন্তের পথে চলে গেছে তেমনি প্রিয় মানুষের অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমানো কবিকে বিষাদময় রিক্ততার সুরে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মকে মেনে নিতে ব্যথিত কবিচিত্ত তাই প্রকৃতির সৌন্দর্যকে তাহারেই পড়ে মনে কবিতার কবির মতো উল্লেখিত অংশের কবির হৃদয়েও সাড়া জাগাতে পারছে না। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য যে কোনো মানুষেরই কাম। কিন্তু নিঃসঙ্গতা মানুষকে করে তোলে বিবাগী, বিষাদগ্রস্ত ও উদাসীন। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে। প্রিয়জনের অনুপস্থিতি মানবমনকে যে কীভাবে আন্দোলিত করে তা সহজেই অনুভূত হয় উক্ত দুইটি প্রেক্ষাটটে। প্রকৃতির মোহাঞ্জন আবেগ, নিরূপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঋতুবদলের পালায় পরিবর্তিত প্রকৃতির নবরূপ সবই যেন তখন অর্থহীন ও নি®প্রাণ মনে হয়। হৃদয়ের ভাবাবেগ মানুষকে প্রতিক্ষণে প্রিয় মানুষের স্মৃতি রোমন্থনে বাধ্য করে দেয়। তাইতো ‘ তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি বসন্তের উপস্থিতিতে ভাবলো শহীন। শীতের রিক্ততাই যেন কবির হৃদয়কে বারবার ক্ষত-বিক্ষত করছে। প্রিয় মানুষকে হারানোর আর্তি তাঁর হৃদয়ে জেগে আছে প্রকট রূপে। আর উদ্দীপকেও এমনি মনোভঙ্গিমার আভাস পাওয়া যায়। বিষণœ হৃদয়ে প্রিয় সৌন্দর্য উপলব্ধি ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বিষয়বস্তুর বিচারে উদ্দীপকটিকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রচ্ছন্ন রূপ বলা অত্যন্ত যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৫: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কবির কোন কাব্যে স্থান পেয়েছে? |
|
ক. তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কবির ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যে স্থান পেয়েছে।
গ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে কবির ব্যক্তি জীবনের বিষাদময় স্মৃতির করুণ কাহিনী বাগ্ময় হয়ে ফুটে উঠেছে।
ঘ. সাহিত্য বা শিল্পকে অ্যারিস্টটল বলেছেন অনুকরণ। শিল্পী মনের বাইরের কোন বস্তু বা ভাব যেভাবে শিল্পী চিত্তে প্রণোদনা সৃষ্টি করে, সেভাবে তার একটা অনুকরণ তৈরি হয় মনের মধ্যে। মন সেই বস্তু বা ভাবের প্রতীকে তৈরি করেন একটি সৌন্দর্য সত্তা যার নাম শিল্প। এজন্য অৎঃ কে বলা হয় জবভষবপঃরড়হ ড়ভ সরহফ. এক্ষেত্রে যে প্রণোদনাটি বাইরে থেকে আসে সেটি মনের ওপর প্রতিফলন ফেলে শুধু জোর খাটায় না। প্রাপ্ত প্রতিফলন মন যদি গ্রহণ করতে পারে-তাহলে গ্রহণের মুহূর্ত থেকে শুরু হয় অনুকরণের কাজ। তারপর একসময় সৃষ্টি কর্ম রূপে বেরিয়ে আসে শিল্পবস্তু। পুরো প্রক্রিয়াটা সংঘটিত হয় মনের স্বতঃপ্রণোদনায়। বাইরের কোন উদ্দীপক চাপ সৃষ্টি করলে বা অনুকরণীয় বস্তু বা ভাব শিল্পী মনের ধারণ ক্ষমতা বা বোধের বাইরের বিষয় হলে মন সেটাকে ফিরিয়ে দেয়। ফলে কিছুই সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ থাকে না। যদি কোন অনুরোধ (যেটাকে ফরমায়েশ বলা হয়) বা দর্শন (রংস) বাইরে থেকে প্রভাব বিস্তার করে এবং মন যদি গ্রহণ করার জন্য বাধ্য হয়, তাহলে যে অৎঃ উৎপন্ন হয় শিল্পবোদ্ধারা তার নাম দিয়েছেন ইধফ ধৎঃ. এড়ড়ফ ধৎঃ সব সময় শিল্পীর বা কবির মনের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সহজ কথায় মনের স্বতঃস্ফূর্ততাই শিল্পের বড় উৎপাদক। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৬: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘Our sweetest Songs are those that tell of saddest thought’ -এই উপলব্ধিটি কোন কবির। |
|
ক. Our Sweetest Songs are those that tell of Saddest thought -কথাটি PB. Shelly. (Percy bysshe shelley).
গ. কবিতার গীতিধর্মিতা একটি অনিন্দ্যসুন্দর অনুষঙ্গ। একসময় যখন সাহিত্যের মান বিচারে ‘Art for art shake’ -এই পরিমাপক বিদ্যমান ছিল তখন বলা হতো, সাহিত্যে নিজের কোন কথা বলা হবে না, কারণ শিল্প নৈর্ব্যক্তিক। কিন্তু পরে কবিরা মানেননি এই বিধি। নিজের হৃদয়ের ভাবোচ্ছ্বাসকে গীতিমূর্ছনার মাধ্যমে বিকাশ করার প্রয়াস পান অনেক কবি। এগুলোর সাধারণ নাম গীতিকবিতা। যে ধর্ম এই কবিতাগুলোকে বিশিষ্টতা দান করেছে তার নাম-গীতিধর্মিতা। কবি যখন তার একান্ত আত্মগত ভাবোচ্ছ্বাসকে আবেগ কম্পিত সুরে প্রকাশ করেন তখন তা হয় গীতিধর্মী। উদ্দীপকে সাধারণভাবে একজন কবির গীতিধর্মিতা বিষয়ে প্রাজ্ঞ মত প্রকাশিত হয়েছে। উদ্দীপকে প্রসঙ্গত সুফিয়া কামালের ‘তাহারেই পড়ে মনে’ এ কবিতাটির প্রসঙ্গ এসেছে। এ কবিতাটির মধ্যে গীতিধর্মিতা বিদ্যমান। এ কবিতার শেষ স্তবক থেকে জানা যায় তার এক প্রিয়জন (তাঁর প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন) তাকে রিক্ত নিঃস্ব করে দিয়ে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁকে নিয়ে কবিচিত্তে যে বেদনার বাষ্প তার অভিঘাতে তিনি বসন্তকে পর্যন্ত ফিরিয়ে দিয়েছেন। অন্তরে বহমান দুঃখের ইন্ধনে দ্বারে জাগ্রত বসন্তের বিষয়ে উদাসীন উন্মনা তিনি। নানাভাবে নিজের একান্ত বিষয় সর্বজনবেদ্য করে উপস্থাপন করেছেন কবি। নিতান্ত স্বল্প পরিসরে কবি তার পূর্ণ হৃদয়কে মেলে ধরেছেন পাঠকের সামনে। এগুলো গীতিধর্মিতার গুণ। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির যে কবিধর্ম তা গীতিধর্মিতার লক্ষণাক্রান্ত। ঘ. মানুষের মনের ভেতরে নিজেকে বিকাশ বা প্রকাশ করার একটা অদম্য ইচ্ছা কাজ করে। এর নাম সৃজন বেদনা। এ বেদনার বিকশিত রূপ যা মানুষের মননশীলতার ফসল-তার নাম শিল্প। শিল্পের পরিচিতি পর্ব শেষ হলে শিল্প বোদ্ধারা বললেন শিল্প হতে হবে শর্তযুক্ত। শিল্প পবিত্র বস্তু বিধায় তাতে মানুষের বা শিল্পীর একান্ত ব্যক্তিক ইচ্ছা থাকবে না। তাহলে শিল্প তার মহত্ত্ব হারাবে। এভাবে শিল্পের মহত্ত্ব রক্ষার জন্য তাকে শর্তযুক্ত করে দেয়া হল। কিন্তু শিল্প যে মনোগত বিষয় সেটা ভাবা হলনা। মনোগত বিষয় বলে ব্যক্তি মনের প্রতিফলন শিল্পে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক প্রাণ প্রবাহের ওপর শর্ত আরোপ করে দিলেন কলাকৈবল্যবাদিরা। কিন্তু কবি বা সাহিত্যিক সম্পর্কে বলা হয়-ÑPoets are the most unacknowledged Legislature of the world. কবিরা হলেন আইন ভঙ্গকারী আইন প্রণেতা। তাঁরা আইন করেন; সে আইন ভেঙে আনন্দ পান। এই প্রবণতার ফল হিসেবে একসময় ঘোষিত হল ‘Art for life shak’-জীবনের জন্য শিল্প। শিল্পের গোঁড়ালি থেকে শর্তের শেকল খুলে গেল। সাহিত্য হলো শর্তহীন। ভেবে দেখার বিষয় এই যে মনোজগতে যে সৃষ্টি সুখের ইন্ধন, তাকে কিন্তু শর্তের তর্জনী দিয়ে শাসন করা যায় না। তাহলে সৃষ্টিশীলতাই রুদ্ধ হয়ে যাবে। যখন ‘Art for life shak’-এর স্বৈরতন্ত্র বিদ্যমান ছিল তখনো কিন্তু শিল্পীরা তা মানেননি। এই না মানা এবং তাকে মেনে নেয়াটা অনুপ্ররণা হিসেবে নিলেন অন্য শিল্পীরা। ফলে শিল্প এক সময় হয়ে পড়লো শর্তহীন। সৃষ্ট হল বিপুল ব্যাপক শিল্প বস্তু। সাহিত্য শিল্পের একটা অনুষঙ্গ। সুতরাং শিল্পের যা প্রাণ ধর্ম তা সাহিত্যের প্রাণ ধর্ম। অতএব সাহিত্য শর্তাধীন নয়, শর্তহীন। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৭: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি কোন গান বাজার কথা জানতে চেয়েছেন? |
|
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি আগমনী গান বাজার কথা জানতে চেয়েছেন। গ. উদ্দীপকের প্রথম দু’চরণে কবি বেগম সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রিয়জন হারানোর বেদনার দিকটি ফুটে ওঠেছে। কবি সুফিয়া কামাল তার প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। তিনিই ছিলেন কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা। মনে-প্রাণে যাকে ভালোবেসেছিলেন, সেই ভালোবাসার ধনকে তিনি নিজের কাছে ধরে রাখতে পারেননি। আকস্মিকভাবেই মৃত্যুকে বরণ করেন তার স্বামী, আর কবি হয়ে পড়েন একাকী, নিঃস্ব। উদ্দীপকের কবিতাংশের প্রথম দু’টি চরণে এ বিষয়টিই ফুটে ওঠেছে। এ অংশের কবি নিজেও তাঁর প্রিয়জনকে খুব ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু নিয়তি তাকে দিল কবি সুফিয়া কামালের মতো বেদনার আঘাত। তাঁর প্রিয়জনও তাঁকে ছেড়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। এত ভালোবাসলেন, তবুও আটকানো গেলো না তাকে। মোটকথা যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি আবর্তিত হয়েছে, সেই ঘটনাটিই উদ্দীপকের প্রথম দু’চরণে উল্লেখ করা হয়েছে এ কথাটি নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেয়া যায়। ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কবি বেগম সুফিয়া কামালের ব্যক্তিজীবনের দুঃসময় ঘটনার রূপকধর্মী বহিঃপ্রকাশ। উদ্দীপকটিও যেন একই দুঃখবোধকে ধারণা করে আছে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি বসন্তের আগমনে, তার অপরূপ সৌন্দর্যে মোটেও আপ্লুত নন। কারণ তাঁর হৃদয় এখন শীতের মতোই রিক্ত, নিঃস্ব আর শূন্যতায় ভরপুর। বসন্তের আগমন তাঁর হৃদয়ে কোনোরকম আবেদন সৃষ্টি করতে ব্যর্থ। কেননা, কবি তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনকে হারিয়েছেন, যিনি ছিলেন কবির সাহিত্য-সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা। কিন্তু তাঁর আকস্মিক প্রয়াণকে কবি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। প্রিয়জন হারানোর বেদনা তাঁর হৃদয়ে এমন গভীরভাবে বেজেছে যে প্রকৃতির কোনো পরিবর্তনই তাঁর হৃদয়ের দুয়ার খুলতে পারছে না। পুরো কবিতা জুড়েই কবি তার মনোবেদনার স্বরূপকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যার স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই উদ্দীপকের কবিতাংশে। উদ্দীপকের কবিতার কবিও তার প্রিয় মানুষকে, ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে আজ রিক্ত। কেননা, এ মানুষটিই ছিল তার জীবনের ছায়াসঙ্গী এবং তাঁর অবর্তমানেও এখনো তার স্মৃতি কবিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে । আজ কবি এতটাই রিক্ত ও শূন্য যে, প্রকৃতির অপরূপ সাজও তাঁর কাছে কোনো আকর্ষণের বিষয় মনে হয় না। বরং তিনি তাঁর প্রিয় মানুষটির কথা’ স্মরণ করে একাকী নীরবে, নিভৃতে থাকেন। যে হাহাকার, যার স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের কবিতাংশের মূলভাবের মধ্য দিয়ে কবি সুফিয়া কামালো প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা ফুটে ওঠেছে। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৮: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. কবির প্রথম স্বামীর নাম কী? |
|
ক. কবির প্রথম স্বামীর নাম সৈয়দ নেহাল হোসেন।
গ. প্রকৃতির স্বাভাবিক ধর্মে বসন্ত একসময় এসে হাজির হয় পৃথিবীর আঙিনায়। ফুল ফুটাতে ফুটাতে তার আগমন। ➠ ফুল ছড়াতে ছড়াতে তার লীলা। সংবেদনশীল চিত্ত তার আগমনে পুলকিত হয়; তাকে নিয়ে গান রচনা করে।
ঘ. কবির কাজ অন্তর হতে বচন আহরণ করে, আনন্দলোক সৃষ্টি করা। তাঁর আত্মগত ভাবোচ্ছ্বাস যখন অন্যকে আপ্লুত করে তখন তা হয় মহৎ কবিতা। এই উচ্ছ্বাস সুখের হতে পারে, দুঃখেরও হতে পারে। প্রদত্ত উদ্দীপকে একজন কবির কথা ব্যক্ত হয়েছে আত্মকথনের ভঙ্গিতে। তিনি আনন্দলোকের বাসিন্দা। সৌন্দর্য পিপাসু মধুর বসন্ত এসেছে। সৃষ্টির বেদনা জেগেছে মনে। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ নেই। মন ভালো নেই। ইচ্ছে ছিল অন্তর হতে বচন আহরণ করে একটি মহৎ কবিতা রচনা করবেন। কিন্তু পারছেন না। কারণ কবিতা বা শিল্পের জন্য যে মন দরকার হয়, মনের সেই সুস্থতা নেই তার। তাই কবির সৃজন বেদনা ব্যর্থ হয়। |
| ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৯: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. বসন্ত বন্দনা অর্থ কী? |
|
ক. বসন্ত বন্দনা অর্থ-বসন্তের আগমনে তারই প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে রচিত কোন গান বা কবিতা।
গ. প্রদত্ত উদ্দীপকে এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানব মনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি পেয়েছে। তাঁর লেখনীতে বাঙ্নয় হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। দ্বারে জাগ্রত বসন্তকে মনের মাধুরী মিশিয়ে অপরূপ রূপে মূর্ত করে তুলেছেন কবি। প্রকৃতির রূপ রং মানব মনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। বাসন্তী প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কবিচিত্তে আনন্দের শিহরণ জাগাবে এবং তিনি তাকে শব্দ প্রকৌশল আর ছন্দমাধুর্যে ফুটিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবির ক্ষেত্রে বাস্তবতা হয়েছে ভিন্ন। বসন্ত এলেও উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে রিক্তশীতের বিদায়ের করুণ রাগিনী বেজে উঠেছে। তাই বসন্ত তাঁর মনে কোন সাড়া জাগাতে পারে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার শোকদগ্ধ হৃদয়ে কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। এ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্যের বর্ণনার আড়ালে একটা চাপা শোকের ক্ষীণ রাগিনী বেজে উঠেছে। দেখা যায়-কবিতাটিতে কবির বসন্ত প্রকৃতির সৌন্দর্যের চেয়ে কবি মনের শূন্যতাই প্রধান হয়ে উঠেছে।
ঘ. ভালোবাসা বিষয়টা পুরোটাই হৃদয়জ অনুভূতি। একটি মানবীয় সত্ত্বা আরেকটি মানবীয় সত্তাকে ভাববে-নিজের অন্তরের পূর্ণতার প্রতিপাদক হিসেবে। তার সান্নিধ্যে পুলক লাভ করবে, তার থেকে দূরে গেলে বিষাদাক্রান্ত হবে-একের প্রতি অন্যের-হার্দিক টান থাকবে। থাকবে কৃতজ্ঞতাবোধ, দায়বোধ, কর্তব্যবোধ, ত্যাগ, বোঝাপড়া, মেনে নেওয়া-মনে নেওয়া। এসব কিছুর সমষ্টি ভালোবাসা। এই ভালোবাসাবাসিতে পুরুষ নারী ভেদ নেই। মানবীয় অনুভূতিসম্পন্ন মানব মানবী, সবার জন্য সত্য এ বিধান। উদ্দীপকে মনের ওপর সঙ্গীতের প্রভাব সম্পর্কে এক পর্যায়ে বলা হয়েছে যা একান্ত মনোগত ব্যাপার, তা বাহ্যিক কোন উদ্দীপকের প্রভাবে খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না। মানুষের ভালোবাসার বিষয়টা গভীরতর মনোগত ব্যাপার। বাইরের কোন উদ্দীপক একে খুব বেশি বদলে দিতে পারে না যদি তা সত্যিকারের ভালোবাসা হয়। সত্যিকার ভালোবাসা বিশ্বাসের কষ্টিপাথরে পরীক্ষিত। তাই যথার্থ ভালোবাসার কোনো বিকৃতি নেই। বসন্তের আগমনে তাই কবিচিত্তে কোনো দোলা লাগেনা, কারণ কবিচিত্ত ভরে আছে প্রথম স্বামীর ভালোবাসায়। বসন্ত সেখানে অনুপ্রবেশ করতে চেয়ে পারেনি। |
| তথ্যসূত্র : |
|---|
|
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |



