প্রতিদান : জসীমউদদীন
![]() |
প্রতিদান : জসীমউদ্দীন |
প্রতিদান
জসীমউদ্দীন
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিরাগী-
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি,
দীঘল রজনী তার তরে জাগি’ ঘুম যে হরেছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।
আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি,
যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি।
যে মোরে দিয়েছে বিষে-ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুকভরা গান;
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর,-
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি’
রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি।
যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বাণী,
আমি লয়ে করে তারি মুখখানি,
কত ঠাঁই হতে কত কী যে আনি' সাজাই নিরন্তর-
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
উৎস নির্দেশ : |
---|
‘প্রতিদান’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ যেবা- যে। যিনি। ➠ বিরাগী- নিস্পৃহ, উদাসীন। ➠ দীঘল রজনী- দীর্ঘ রাত। ➠ ঘুম যে হরেছে- নির্ঘুম রাত কাটানোর কথা বলা হয়েছে। ➠ বিষে-ভরা বাণ- কটু কথা। হিংসাত্মক ভাষা। ➠ সোহাগ- আদর। ভালবাসা। ➠ মালঞ্চ- ফুলের বাগান। ➠ নিঠুরিয়া- নিষ্ঠুর। নির্দয়। ➠ ঠাঁই- স্থান। আশ্রয়। ➠ নিরন্তর- নিয়ত। অবিরাম। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই যে ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা। কেননা ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী। কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর, বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন। |
কবি পরিচিতি : |
---|
জসীমউদ্দীন ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আনসারউদ্দীন মোল্লা এবং মায়ের নাম আমিনা খাতুন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করার পর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে “কবর” কবিতা রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন এবং ছাত্রাবস্থায়ই কবিতাটি স্কুল পাঠ্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়। জসীমউদ্দীন ‘পল্লি-কবি’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। পরে সরকারের প্রচার ও জনসংযোগ বিভাগে উচ্চপদে আসীন হন। পল্লিজীবন তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য। বাংলার গ্রামীণ জীবনের আবহ, সহজ-সরল প্রাকৃতিক রূপ উপযুক্ত শব্দ উপমা ও চিত্রের মাধ্যমে তাঁর কাব্যে এক অনন্য সাধারণ মাত্রায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর বিখ্যাত ‘নকসী কাঁথার মাঠ (১৯২৯)’ কাব্যটি বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর অন্যান্য জনপ্রিয় ও সমাদৃত গ্রন্থ হচ্ছে: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪)’, ‘বালুচর (১৯৩০)’, ‘ধানখেত (১৯৩৩)’, ‘রঙিলা নায়ের মাঝি (১৯৩৫)’। সাহিত্যকৃতির স্বীকৃতি হিসেবে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রদান করে। জসীমউদ্দীন ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
১। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি কাঁটা পেয়ে কী দান করেছেন? ক. ফুল ✔ খ. ঘৃণা গ. বাণ ঘ. ঘর ২। ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।’- এ পঙক্তিতে কী বোঝানো হয়েছে? ক. পরোপকার খ. আত্মগ্লানি গ. সর্বংসহা মনোভাব ✔ ঘ. কৃতজ্ঞতাবোধ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও। ইমাম হাসান (রাঃ) তাঁকে বিষপ্রয়োগে হত্যাকারী জাএদাকে ক্ষমা করে দিলেন এবং বললেন, পরকালে তাকে বেহেশত প্রদানের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। ৩। উদ্দীপকের হাসান (রাঃ) এর সাথে 'প্রতিদান' কবিতার কোন পঙক্তির মিল আছে? ক. কত ঠাঁই হতে কত কী যে আমি সাজাই নিরন্তর খ. দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর গ. রঙিন ফুলের সোহাগ জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি ঘ. যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি ✔ ৪। উপর্যুক্ত মিলের কারণ- i. ক্ষমাশীলতা ii. আত্মপ্রশংসা iii. পারস্পরিক সৌহার্দ্য নিচের কোনটি ঠিক? ক. i ও ii খ. i ও iii ✔ গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. কবি কাকে বুকভরা গান দেন? |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০ |
---|
------------- |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১ |
---|
------------- |
----------- |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |