সোনার তরী- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সোনার তরী
সোনার তরী

সোনার তরী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা-
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা॥

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা-
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা-
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু ধারে-
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে॥

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে॥

যত চাও তত লও তরণী-‘পরে
আর আছে? -আর নাই, দিয়েছি ভরে
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলই দিলাম তুলে
থরে বিথরে-
এখন আমারে লহো করুণা করে॥

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধারে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘে ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি-
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী॥
(শিলাইদহ। বোট। ফাল্গুন ১২৯৮)

কৃষক
কৃষক
‘সোনার তরী’ কবিতার পাঠ বিশ্লেষণ :

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা-
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা॥

কবি বলেছেন, ঘোর বর্ষায় আকাশে মেঘ গর্জন করছে এবং কৃষক ভরসাহীনভাবে কূলে একা বসে আছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে তার কোনো ভরসা নেই। তিনি আরো বলেন রাশি রাশি, ধান কোট স্তূপ আকারে রাখা হয়েছে এবং নদীর পানিটা বর্ষার মতো ধারালো এদিকে ধান কাটতে কাটতেই বৃষ্টি চলে আসলো।
আলোচ্য অংশে বর্ষা প্রকৃতির চিত্রকল্প ফুটে উঠেছে, যেখানে ভরা বর্ষায় আকাশে মেঘ ডাকছে। এমন পরিস্থিতিতে এক বিপন্ন কৃষক নদীর কূলে একা বসে আছে।ধান কাটা সম্পন্ন হওয়ার পর কৃষক ভারা (ধান রাখার পাত্র) ভর্তি করে ধান সাজিয়ে রেখেছেন। ঘোর বর্ষায় ভরা নদীর স্রোত যেন ধারালো বর্শার মতোই তীক্ষ্ণ হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কৃষক

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা-
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা-
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা॥

এখানে বলা হয়েছে, কৃষক তার ছোটো খেতে একলা বসে আছে। এখানে বাঁকা জল বলতে কালস্রোত অর্থাৎ বিপদকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কৃষক বলছে তার চারিদিক বিপদে ঘেরা। কবি আরো বলেছেন, তার বিপরীত পাড়ে যে গ্রাম আছে সেখানেও গাছপালা মসীমাখা অর্থাৎ কালচে ছায়ায় ঢাকা। অর্থাৎ কবি এখানে বুঝিয়েছেন তার যে ছোট পৃথিবী আছে যেখানে সে একলা বাস করে সেখানে তো বিপদ আছেই একইসাথে তার চারপাশের পরিবেশটাও বিপদে ঘেরা।

কৃষক

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু ধারে-
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে॥

এখানে কৃষক বলছে কে যেনো গান গেয়ে তরী বেয়ে আসছে এবং তাকে দেখে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। (এখানে মাঝিকে বোঝানো হয়েছে) আবার বলা হয়েছে ঢেউ এর স্রোত এত বেশি যে নদীর দুই বার ভেঙে যাচ্ছে। সবশেষে কৃষক বলেছেন এত বিপদের মধ্যেও কেউ একজন গান গেয়ে তরী বেয়ে আসছে থাকে তার চেনা চেনা মনে হচ্ছে।

সোনার তরী

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে॥

এখানে কৃষক মাঝিকে বলেছেন বা অনুরোধ করেছেন যে মাঝির যেখানে খুশি সে যেতে পারে, কৃষকের ধানগুলো সে যাকে ইচ্ছা হয় দিতে পারে। কিন্তু একবারের জন্য হলেও মাঝি যেন নিজের ইচ্ছায় সামান্য হেসে তার তরীটা কূলে ভিড়ায় এবং কৃষকের সোনার ধানগুলো নিয়ে যায়।

যত চাও তত লও তরণী-‘পরে।
আর আছে? -আর নাই, দিয়েছি ভরে
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলই দিলাম তুলে
থরে বিথরে-
এখন আমারে লহো করুণা করে॥

কৃষক মাঝিকে বলছে যে, আমার ধান তোমার যত খুশি তত নিতে পারো। আমার যতটুকু ছিল তার সবটুকু দিয়ে দিলাম। এতকাল নদীর তীরে ধান উৎপাদন করলাম তার সবই তোমাকে সুশৃঙ্খলভাবে দিয়ে দিলাম। এখন আমায় একটু করুণা করে তোমার সাথে নিয়ে নাও।

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধারে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘে ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি-
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী॥

ফসলরূপী কর্মফল পূর্ণ করে দেওয়ার পর কৃষকরূপী কবিও মাঝির নৌকা তথা মহাকালের পঙক্তিতে ঠাঁই অর্থাৎ আশ্রয় চান। কিন্তু কৃষকরূপী কবি অবাক হয়ে লক্ষ করেন, তাঁর ফসল তথা কর্মফলেই মাঝির নৌকা ভরে গিয়েছে। অর্থাৎ মহাকালের পঙক্তিতে কর্মফল স্থান পেলেও ব্যক্তিকবির সেখানে জায়গা হয় না। কৃষক আকাশের নিচে ফাঁকা বা শূন্য নদীর তীরে একা পড়ে রইলো। তার যা কিছু ছিল সবই সোনার তরী নিয়ে গেল।

সোনার তরী’

‘সোনার তরী’ কবিতার উৎস নির্দেশ :
‘সোনার তরী’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের নাম-কবিতা। ‘সোনার তরী’ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এর অধিকাংশ পঙক্তি ৮+৫ মাত্রার পূর্ণপর্বে বিন্যস্ত।

‘সোনার তরী’ কবিতার শব্দার্থ ও টীকা :
➠ গগনে- আকাশে।
➠ গরজে- গরজে>গর্জে অর্থ গর্জন করছে।
➠ ঘন- ঘোর।
➠ বরষা- বরষা>বর্ষা অর্থ আষাঢ় ও শ্রাবন এই দুই মাস বর্ষাকাল/ঋতু।
➠ কূলে- তীরে।
রাশি রাশি- অনেক, স্তুপীকৃত।
➠ ভারা- ধান রাখার পাত্র।
ভারা ভারা- ধান স্তূপ আকারে রাখা। এরকম পাত্রের সমষ্টি বোঝাতে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে।
➠ ক্ষুর- চুল কামানোর তীক্ষ্ণ ধারালো অস্ত্রবিশেষ।
➠ ক্ষুরধারা- ক্ষুরের মতো ধারালো যে প্রবাহ বা স্রোত।
➠ খর- ধারালো; প্রবল।
➠ খরপরশা- ধারালো বর্শা। এখানে ধারালো বর্শার মতো।
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা- ধানক্ষেতটি ছোট দ্বীপের আঙ্গিকে চিত্রিত। তার পাশে ঘূর্ণায়মান স্রোতের উদ্দামতা। নদীর ‘বাঁকা’ জলস্রোতে বেষ্টিত ছোটো ক্ষেতটুকুর আশু বিলীয়মান হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে এ অংশে। ‘বাঁকা জল’ এখানে অনন্ত কালস্রোতের প্রতীক।
➠ তরুছায়া- গাছের ছায়া।
মসী-মাখা- কালো রঙে মাখানো; কালচে ভাব।
তরুছায়ামসী-মাখা- ওপারের মেঘে ঢাকা গ্রামটি যেন গাছের ছায়ার কালো রঙে মাখানো।
➠ আমি- সাধারণ অর্থে কৃষক। প্রতীকী অর্থে শিল্পস্রষ্টা কবি।
আমি একেলা- কৃষক কিংবা শিল্পস্রষ্টা কবির নিঃসঙ্গ অবস্থা।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে- ক্ষুরের মতো ধারালো জলস্রোতে গান গাইতে গাইতে যে মাঝি পারের দিকে এগিয়ে আসছে, রবীন্দ্র-ভাবনায় সে নির্মোহ মহাকালের প্রতীক।
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে- এই আগন্তুক মাঝি কৃষক বা শিল্পস্রষ্টা কবির হয়ত চেনা। কেননা, চেনা মনে হলেও কৃষক বা শিল্পস্রষ্টা কবির সংশয় থেকেই যায়।
কোনো দিকে নাহি চায়- মহাকালের প্রতীক এই মাঝি নিরাসক্ত বলেই তার সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিপাত নেই।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?- নির্বিকার মাঝির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কৃষক বা কবির চেষ্টা। ‘বিদেশ’ এখানে চিরায়ত শিল্পলোকের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
➠ বারেক- একবার মাত্র।
➠ ভিড়াও- থামাও; তীরে লাগাও।
বারেক ভিড়াও- একবার থামাও।
➠ ক্ষণিক- অল্প সময়, একটু ক্ষণ।
➠ তরী- নৌকা।
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে- চিরায়ত শিল্পলোকে ঠাঁই পাওয়ার জন্যই কৃষকরূপী কবির ব্যাকুল অনুনয় এখানে প্রকাশিত।
আমার সোনার ধান- কৃষকের শ্রেষ্ঠ ফসল। ব্যঞ্জনার্থে শিল্পস্রষ্টা কবির সৃষ্টিসম্ভার।
➠ তরণী- নৌকা।
➠ ‘পরে- উপরে।
আর আছে আর নাই, দিয়েছি ভরে- ছোটো জমিতে উৎপন্ন ফসলের সবটাই অর্থাৎ কবির সমগ্র সৃষ্টি তুলে দেওয়া হয়েছে মহাকালের স্রোতে ভেসে আসা সোনার তরী-রূপী চিরায়ত শিল্পলোকে।
➠ লয়ে- নিয়ে।
➠ ছিনু- ছিলাম।
থরে বিথরে- স্তরে স্তরে, সুবিন্যস্ত করে।
➠ লহো- লও, নাও।
➠ করুণা- দয়া।
এখন আমারে লহো করুণা করে- ফসল বা সৃষ্টিসম্ভার তুলে দেওয়া হয়েছে নৌকায়। এখন ফসল বা সৃষ্টির স্রষ্টা স্থান পেতে চায় ওই মহাকালের নৌকায়।
➠ ঠাঁই- স্থান, জায়গা।
➠ রহিনু- রইলাম।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ছোট সে তরী- সোনার তরীতে মহৎ সৃষ্টিরই স্থান সংকুলান হয় কেবল। ব্যক্তিসত্তা ও তার শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার।
শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি- নিঃসঙ্গ অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে আসন্ন ও অনিবার্য মৃত্যুর প্রতীক্ষার ইঙ্গিত। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: “মহাকাল আমার সর্বস্ব লইয়া যায় বটে, কিন্তু আমাকে ফেলিয়া যায় বিস্মৃতি ও অবহেলার মধ্যে।... সোনার তরীর নেয়ে আমার সোনার ধান লইয়া যায় খেয়াপারে, কিন্তু আমাকে লয় না।”

‘সোনার তরী’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি :
শতাধিক বছর ধরে এ কবিতা বিপুল আলোচনা ও নানামুখী ব্যাখ্যায় নতুন নতুন তাৎপর্যে অভিষিক্ত। একই সঙ্গে, কবিতাটি গূঢ় রহস্য ও শ্রেষ্ঠত্বেরও স্মারক। মহৎ সাহিত্যের একটি বিশেষ গুণ হলো কালে কালে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেচনার আলোকে তার শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপিত হতে থাকে। বাংলা কবিতার ইতিহাসে ‘সোনার তরী’ তেমনি আশ্চর্যসুন্দর এক চিরায়ত আবেদনবাহী কবিতা।
কবিতাটিতে দেখা যায়, চারপাশের প্রবল স্রোতের মধ্যে জেগে থাকা দ্বীপের মতো ছোটো একটি ধানক্ষেতে উৎপন্ন সোনার ধানের সম্ভার নিয়ে অপেক্ষারত নিঃসঙ্গ এক কৃষক। আকাশের ঘন মেঘ আর ভারী বর্ষণে পাশের খরস্রোতা নদী হয়ে উঠেছে হিংস্র। চারদিকের ‘বাঁকা জল’ কৃষকের মনে সৃষ্টি করেছে ঘনঘোর আশঙ্কা। এরকম এক পরিস্থিতিতে ওই খরস্রোতা নদীতে একটি ভরাপাল সোনার নৌকা নিয়ে বেয়ে আসা এক মাঝিকে দেখা যায়। উৎকণ্ঠিত কৃষক নৌকা কূলে ভিড়িয়ে তার উৎপাদিত সোনার ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝিকে সকাতরে মিনতি জানালে ওই সোনার ধানের সম্ভার নৌকায় তুলে নিয়ে মাঝি চলে যায়। ছোট নৌকা বলে স্থান সংকুলান হয় না কৃষকের। শূন্য নদীর তীরে আশাহত কৃষকের বেদনা গুমড়ে মরে।
এ কবিতায় নিবিড়ভাবে মিশে আছে কবির জীবনদর্শন। মহাকালের স্রোতে জীবন-যৌবন ভেসে যায়, কিন্তু বেঁচে থাকে মানুষেরই সৃষ্ট সোনার ফসল। তার ব্যক্তিসত্তা ও শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার।
‘সোনার তরী’ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এর অধিকাংশ পঙক্তি ৮+৫ মাত্রার পূর্ণপর্বে বিন্যস্ত।

‘সোনার তরী’ কবিতার কবি পরিচিতি :
অসামান্য প্রতিভার অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষ। তিনি ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সাহিত্যসাধনার একটি বৃহৎকাল বাংলা সাহিত্যের ‘রবীন্দ্রযুগ’ নামে পরিচিত। মানবধর্মের জয় ও সৌন্দর্য-তৃষ্ণা রোমান্টিক এই কবির কবিতার মূল সুর। কবিতা ছাড়াও ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি ও সংগীত রচনায় রবীন্দ্রনাথ কালজয়ী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ছিলেন অনন্য চিত্রশিল্পী, অনুসন্ধিৎসু বিশ্বপরিব্রাজক, দক্ষ সম্পাদক এবং অসামান্য শিক্ষা-সংগঠক ও চিন্তক। নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণে নিরুৎসাহী হলেও 'বিশ্বভারতী' নামের বিশ্ববিদ্যালয়-এর তিনি স্বাপ্নিক ও প্রতিষ্ঠাতা। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্য ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়। ‘গীতাঞ্জলি’ এবং অন্যান্য কাব্যের কবিতার সমন্বয়ে স্ব-অনূদিত ‘Song Offerings’ গ্রন্থের জন্য ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম এশীয় হিসেবে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা ছোটগল্পের তিনি পথিকৃৎ ও শ্রেষ্ঠ শিল্পী। ‘মানসী’, ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘ক্ষণিকা’, ‘বলাকা’, ‘পুনশ্চ’, ‘জন্মদিনে’, ‘শেষ লেখা’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। কাব্যনাট্য ‘বিসর্জন’ ও ‘চিত্রাঙ্গদা’ এবং কাহিনি-কবিতার সংকলন ‘কথা’ ও ‘কাহিনি’ তাঁর ভিন্ন স্বাদের রচনা। ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

‘সোনার তরী’ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা



‘সোনার তরী’ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: ‘ক্ষুরধারা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘ক্ষুরধারা’ শব্দের অর্থ-ক্ষুরের মতো ধারাল যে প্রবাহ বা স্রোত।
প্রশ্ন- ২: '‘সোনার তরী’ কবিতার পূর্ণ ও অপূর্ণ পর্ব কত?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতার পূর্ণ ৮ ও অপূর্ণ পর্ব ৫।
প্রশ্ন- ৩: ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা কী?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা ‘সোনার তরী’।
প্রশ্ন- ৪: ‘শূন্য’ শব্দটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কত মাত্রা?
উত্তর: ‘শূন্য’ শব্দটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ৩ মাত্রা।
প্রশ্ন- ৫: রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্য ‘বনফুল’ কত বছর বয়সে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্য ‘বনফুল’ পনের বছর বয়সে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন- ৬: ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কী জাতীয় কবিতা?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতাটি রূপক কবিতা।
প্রশ্ন- ৭: ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতাটি ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
প্রশ্ন- ৮: ‘সোনার তরী’ কবিতায় 'নৌকা' এবং 'মাঝি' কীসের প্রতীক?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতায় 'নৌকা' এবং 'মাঝি' মহাকালের প্রতীক।
প্রশ্ন ৯। আপাতদৃষ্টিতে ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত বলে মনে হয়?
উত্তর: আপাতদৃষ্টিতে ‘সোনার তরী’ কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত বলে মনে হয়।
প্রশ্ন- ১০: ‘সোনার তরী’র নদীটির পরপারে কী দেখা যায়?
উত্তর: ‘সোনার তরী’র নদীটির পরপারে দেখা যায় তরুচ্ছায়া মসীমাখা গ্রামখানি।
প্রশ্ন- ১১: ‘সোনার তরী’ কবিতায় কয়টি চরিত্র পাওয়া যায়?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতায় দুটি চরিত্র পাওয়া যায়।
প্রশ্ন- ১২: ‘সোনার তরী’ কবিতায় 'সোনার ধান' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতায় 'সোনার ধান' বলতে জীবনের সৃষ্টিকর্মকে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন- ১৩: ‘সোনার তরী’ কবিতায় 'বাঁকা জল' কীসের প্রতীক?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতায় 'বাঁকা জল' কালস্রোতের প্রতীক।
প্রশ্ন- ১৪: ‘সোনার তরী’ কবিতায় গ্রামের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতায় গ্রামের অবস্থা মেঘে ঢাকা ছিল।
প্রশ্ন- ১৫: ‘সোনার তরী’ কবিতায় গান গেয়ে কে আসে?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতায় গান গেয়ে মাঝি আসে।
প্রশ্ন- ১৬: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
প্রশ্ন ১৭। ‘সোনার তরী’ কবিতায় ঢেউগুলো কী করে?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতায় ঢেউগুলো ভাঙে দু'ধারে।
প্রশ্ন ১৮। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রশ্ন ১৯। ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ২০। কখন ‘সোনার তরী’ কবিতটি প্রকাশত হয়?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতাটি ১৮৯৪ সালে সালে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন ২১। ‘সোনার তরী’ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: 'সোনার ধান' বলতে বস্তু জাগতিক মহৎ সৃষ্টিকর্মকে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন ২২। ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
প্রশ্ন ২৩। ‘খরপরশা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘খরপরশা’ শব্দের অর্থ-শানিত বা ধারাল বর্শা।
প্রশ্ন ২৪। ‘সোনার তরী’ কবিতায় কোন ঋতুর কথা আছে?
উত্তর: 'সোনার তরী' কবিতায় বর্ষা ঋতুর কথা আছে।
প্রশ্ন ২৫। 'ভরসা' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: 'ভরসা' শব্দের অর্থ- আশা।

‘সোনার তরী’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. সোনার তরীতে কৃষকের ঠাঁই হলো না কেন?
২. ‘বাঁকা জল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৩. কবিতায় ‘একখানি ছোটো খেত’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
৪. মাঝি চলে যাওয়ার সময় কোনো দিকে তাকায়নি কেন? ব্যাখ্যা করো।
৫. “যাহা লয়ে ছিনু ভুলে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
৬. ‘একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা’ ব্যাখ্যা করো।
৭. কবিতাটিতে ‘পরপার’ বলতে মূলত কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
৮. তরীটিকে কেন ‘সোনার তরী’ বলা হয়েছে?
৯. দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে- বুঝিয়ে লেখো।

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে চির তারুণ্যের প্রতীক। চিরায়ত বাঙালির সংস্কৃতি তাঁর কাব্যকর্মে স্ফূর্তি লাভ করেছে। বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতাবোধের কথা লিখে তিনি বাঙালি চিত্তে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন কাল থেকে কালান্তরে। তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে ১৯৭৬ সালে। অথচ তাঁর সৃষ্টিকর্ম এখনো বাঙালি জাতির চেতনার ফল্গুধারা। তাঁর কবিতা ও গান এখনও বাংলার মানুষের চেতনার অফুরান উৎস। তিনি তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মে আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন।
ক. ‘সোনার তরী’ কবিতায় কোন ঋতুর কথা বলা হয়েছে?
খ. ‘যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী’ কথাটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. ‘সোনার তরী’ কবিতার জীবনদর্শন উদ্দীপকে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? -আলোচনা করুন।
ঘ. “মহৎ কর্মই পৃথিবীতে মানুষকে অমরত্ব দান করে।” উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটি মূল্যায়ন করুন।

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতায় বর্ষা ঋতুর কথা বলা হয়েছে।
খ. মহাকাল মানুষকে নয়, বরং তার সৃষ্টিশীলতাকে ধারণ করে। আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে এ সত্যটিকেই তুলে ধরা হয়েছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উল্লিখিত চরণে রূপকের আড়ালে একটি গভীর জীবন দর্শনকে প্রকাশ করেছেন। কবিতায় দেখা যায়, সোনার তরীর মাঝি কৃষকের সব ফসল তরীতে তুলে নেয় কিন্তু তরীতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ধানক্ষেতে একাকী দাঁড়িয়ে থাকে কৃষক। এখানে সোনার তরী মহাকালের প্রতীক। এ তরীতে শুধু মানুষের সৃষ্টিকর্মের ঠাঁই হয়, কোনো ব্যক্তিসত্তা নয়। তাই ব্যক্তি মানুষ তথা কবিতায় বর্ণিত কৃষককে ধানক্ষেতে একাকী অপেক্ষমান রেখে তার সোনার ধান অর্থাৎ সৃষ্টিকর্মকে সোনার তরী বয়ে নিয়ে যায়।

গ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতায় অন্তর্লীন হয়ে রয়েছে একটি গভীর জীবন দর্শন।
➠ এটি উদ্দীপকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। 'সোনার তরী' কবিতাটিতে রূপকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে মানব জীবনের এক শ্বাশত দর্শন। কবিতার রূপকল্পে রয়েছে বর্ষার স্রোত পরিবেষ্টিত ধানক্ষেতে রাশি রাশি সোনার ধান নিয়ে অপেক্ষা করছে একজন কৃষক। অপেক্ষার একপর্যায়ে ভরা পালে তরী বেয়ে চলে যেতে থাকা এক মাঝিকে ধানগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে সে। কিন্তু মাঝি কেবল কৃষকের ধানগুলো তরীতে ভরে নেয়। সোনার তরীতে স্থানের অভাবে কৃষকের আর ওঠা হয় না।
➠ কবিতায় সোনার তরী হচ্ছে প্রবহমান সময়ের প্রতীক। মানুষ একদিন এই পৃথিবী থেকে চলে যাবে। কিন্তু এখানে টিকে থাকবে কেবল তার সোনার ধান তথা কর্মফল। 'সোনার তরী' কবিতার এ ভাবটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত কাজী নজরুল ইসলাম ব্যাক্তিমানুষ হিসাবে বেঁচে নেই কিন্তু টিকে আছে তাঁর সৃষ্টিকর্ম। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতাবোধের কথা লিখে তিনি আজও প্রেরণা যোগাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। তাঁর অবিনাশী গান, ধ্রুপদী কবিতা এখনও বাংলাভাষী পাঠকের চিরপ্রেরণার উৎস। যেকোন আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর সৃষ্টিকর্ম আমাদের চেতনার প্রদীপ্ত শিখা। তাই বলা যায়, কবিতাটির অন্তর্নিহিত জীবন দর্শন উদ্দীপকে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতা উভয়টিতে ফুটে উঠেছে যে, মহৎ কীর্তিই মানুষকে পৃথিবীতে অমরত্ব প্রদান করে।
➠ পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কর্মের মাধ্যমে। কেননা, মহাকালের চিরন্তন স্রোতে মানুষ তার অনিবার্যতাকে এড়াতে পারে না। অতৃপ্তির বেদনা নিয়ে তাকে অপেক্ষা করতে হয় কালস্রোতে বিলীন হওয়ার জন্য। মহাকালরূপী সোনার তরী শুধু মানুষের সৃষ্টিকেই ধারণ করে, ব্যক্তি-মানুষকে নয়।
➠ কবিতায় কৃষক তাঁর জমি থেকে সোনার ধান কেটে অপেক্ষায় আছে কখন তরী এসে সোনার ফসলসহ তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তরীতে সমস্ত ফসল তোলা হলে সেখানে কৃষকের জন্য আর এতটুকু জায়গাও অবশিষ্ট থাকে না। অর্থাৎ মহাকালের স্রোতে ব্যক্তি-মানুষ বা কবিতার কৃষক হারিয়ে যায় ঠিকই কিন্তু বেঁচে থাকে তার সোনার ধান বা কর্মফসল। কবিতায় বর্ণিত এ কর্মফসল উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্মের সমতুল্য। কালের স্রোতে ব্যক্তি নজরুল হারিয়ে গেলেও তাঁর কীর্তির মধ্য দিয়ে তিনি অমরত্ব পেয়েছেন।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাহিত্যে বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতাবোধের কথা বলেছেন। তাঁর সৃষ্টিকর্ম সমাজ পরিবর্তন ও জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে শ্রেণিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছে। তাঁর কবিতা ও গান বর্তমানেও বাঙালির প্রতিদিনকার চেতনার অফুরন্ত উৎস। তিনি তাঁর মহৎ সৃষ্টিকর্মের জন্যই এখনও বেঁচে আছেন বাঙালির হৃদয়ে। ‘সোনার তরী’ কবিতায়ও প্রকাশিত হয়েছে একই জীবন দর্শন। তাই উদ্দীপক এবং ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোকে বলা যায়, মহৎ কর্মই মানুষকে পৃথিবীতে অমরত্ব দান করে।

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ২

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
রবীন্দ্রনাথের ‘মৃত্যুভাবনা’ জীবনের আরেক নাম। জন্মজন্মান্তরের যাত্রাপথে পরমাত্মীয়ের মতো নতুন নতুন জীবনপর অনুসন্ধান দান করে সে। মরণ কখনো তাই মহাকালের মিলনদৃত। কবির মানস সরোবরে অনুভূতির বর্ণচ্ছটায় রহস্যময় আবরণ বিশেষকে ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে নির্বিশেষ। আবার পরক্ষণেই নির্বিশেষ থেকে বিশেষের স্তরে নেমে এসে ব্যক্তিসত্তা নিয়ে উপস্থিত হতে প্রণয়িনী রাধিকার শ্যামকৃষ্ণ হয়ে। পাশ্চাত্যের লেখকদের সঙ্গে ভাবনার মিল থাকা সত্ত্বেও অন্যসব ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি মৃত্যুভাবনার ক্ষেত্রেও বিশ্বকবির মৃত্যুচেতনা একান্তভাবে একক।

ক. শূন্য নদীর তীরে কে পড়ে রইল?
খ. কবিতাটিতে মেঘে ঢাকা গ্রামের চিত্রকল্পের ভেতর দিয়ে প্রকৃতির কোন রূপটি প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? তুলে ধরো।
ঘ. মৃত্যু নিয়ে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সোনার তরী’ কবিতার দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

ক. শূন্য নদীর তীরে কৃষক পড়ে রইল।
খ. কবিতাটিতে মেঘে ঢাকা গ্রামের চিত্রকল্পের ভেতর দিয়ে বর্ষা প্রকৃতির রূপটি প্রকাশিত হয়েছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় গ্রামীণ চিত্রকরে ভর করে কবিতাটির মূলবক্তব্য উপস্থাপন করেছেন কবি। এরই ধারাবাহিকতায় কবিতাটিতে তিনি দূরের মেঘাচ্ছন্ন গ্রামের চিত্রপট উপস্থাপন করেছেন। সাধারণত বর্ষাকালেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ মূলত ভারি বৃষ্টিপাতসহ দুর্যোগের ইঙ্গিতবাহী। এর মধ্য দিয়ে আলোচ্য কবিতায় বর্ষা-প্রকৃতির দুর্যোগময় রূপটিকেই উন্মোচন করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার মৃত্যুভাবনার দিকটি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি ব্যক্তিমানুষের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে মৃত্যুকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি মনে করেন, মহাকালের স্রোতে মানুষ হারিয়ে যায়। বেঁচে থাকে কেবল তাঁর সৃষ্টিকর্ম। আর তাই মহাকালের খেয়ায় মানুষের কর্মফল জায়গা পেলেও ব্যক্তিমানুষের স্থান সেখানে হয় না। ফলে একসময় তাঁকে অনিবার্যভাবেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়।
➠ উদ্দীপকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু সম্পর্কিত ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য লেখকের তুলনায় মৃত্যুভাবনার দিক থেকেও তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। বস্তুত, মৃত্যু তাঁর কাছে জীবনেরই আরেক রূপ। জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী কবির চোখে এক জন্ম থেকে অপর জন্মের যাত্রাপথই মৃত্যু। একইভাবে, ‘সোনার তরী’ কবিতাতেও কবি মৃত্যুকে দেখেছেন ব্যক্তিমানুষের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে। তিনি মনে করেন, সময়ের স্রোতধারায় মানুষের সৃষ্টিশীল ও সুকৃতিময় কর্ম টিকে গেলেও শিল্পস্রষ্টাকে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হয়। অর্থাৎ উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই মৃত্যুর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকে 'সোমার তরী' কবিতায় প্রকাশিত মৃত্যুভাবনার দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে মৃত্যুকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হলেও ‘সোনার তরী’ কবিতায় তা মানুষের চিরন্তন অসহায়ত্বের প্রতীক।
➠ ‘সোনার তরী’ একটি রূপকধর্মী কবিতা। এ কবিতায় কবি ব্যক্তিমানুষের চিরন্তন অসহায়ত্বের দিকটিকে উন্মোচন করেছেন। কাল সচেতন কবি লক্ষ করেছেন, সময়ের স্রোতধারায় ব্যক্তিমানুষ হারিয়ে যায়, টিকে থাকে কেবল তাঁর মহৎ অর্জন। মহাকাশের কাছে ব্যক্তিমানুষের এই অসহায়ত্বকেই তিনি রূপায়িত করেছেন আলোচ্য কবিতাটিতে।
➠ উদ্দীপকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুভাবনার বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। জন্মান্তরে বিশ্বাসী কবির কাছে মৃত্যু যেন নবজন্ম লাভের দ্বার। আর তাই মৃত্যু কখনো তাঁর কাছে শ্যামের মতোই প্রিয়, আবার কখনো বা পরমাত্মীয়ের মতো। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুকে তিনি মহাকালের সাথে তাঁর যোগসূত্র হিসেবেও কল্পনা করেছেন। বিশ্বের অন্যান্য লেখকের সাথে এখানেই তাঁর পার্থক্য। তবে আলোচ্য কবিতায় মৃত্যুর বিষয়টি এসেছে মানুষের চিরন্তন অসহায়ত্ব হিসেবে।
➠ ‘সোনার তরী' একটি রূপক কবিতা। এ কবিতায় বিরূপ পরিবেশে এক নিঃসঙ্গ কৃষকের বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে কবিতাটির ভাবসত্যকে উপস্থাপন করেছেন কবি। সেখানে বিপন্ন কৃষকের আদলে মূলত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমাণ শিল্পস্রষ্টার অসহায়ত্বকে তুলে ধরা হয়েছে। বস্তুত, মৃত্যু জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি, এর কবল থেকে কারও রেহাই নেই। পক্ষান্তরে, উদ্দীপকে রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে দেখেছেন ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে। আর তাই মৃত্যু তাঁর কাছে পরমাত্মীয়ের মতো কাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ আলোচ্য কবিতাটিতে মৃত্যুর কাছে ব্যক্তিমানুষের অসহায়ত্বের দিক উপস্থাপন করলেও উদ্দীপকে রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় মৃত্যু জীবনেরই অন্য নাম। উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সোনার তরী' কবিতার দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য এখানেই।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় ভারতীয় ভাববাদী দর্শন অবলীলায় জায়গা করে নিয়েছে। তিনি মৃত্যুচিন্তায় ডুবে যেতে যেতে কিছু একটা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে মানুষ বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে মৃত্যুর সামনে বাঁধ দেওয়ার শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে মৃত্যু অনিবার্য এবং অবশ্যম্ভাবী সত্য। মৃত্যুকে প্রতিরোধের কোনো উপায় নেই।

ক. মহাকালের চিরন্তন স্রোতে কী টিকে থাকে?
খ. কবিতায় ‘একখানি ছোটো খেত' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সোনার তরী’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত মৃত্যুচেতনার দিকটি ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো।

ক. মহাকালের চিরন্তন স্রোতে সৃষ্ট সোনার ফসল টিকে থাকে।
খ. কবিতায় 'একখানি ছোটো খেত' বলতে মানুষের কর্মক্ষেত্র হিসেবে পৃথিবীকে বোঝানো হয়েছে।
➠ আলোচ্য কবিতায় প্রতিটি অনুষঙ্গই রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে উল্লিখিত ছোটো ক্ষেতটি কৃষকের চাষাবাদের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হলেও এর গূঢ়ার্থ হলো পৃথিবী অর্থাৎ মানুষের কর্ম সম্পাদনের জায়গা। বস্তুত, প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করেই পৃথিবীতে মানুষকে কর্মসম্পাদন করতে হয়। আলোচ্য কবিতাটিতে কবিগুরু মানুষের কর্মক্ষেত্র হিসেবে ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ এই সীমাবদ্ধ পৃথিবীকেই ‘একখানি ছোটো খেত' বলে উপমিত করেছেন।

গ. মৃত্যু অনিবার্য তার দিকটি তুলে ধরার সূত্রে ‘সোনার তরী’ কবিতা ও উদ্দীপকের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
➠ সোনার তরী' কবিতায় নিবিড়ভাবে মিশে আছে কবির জীবনদর্শন। মহাকালের স্রোতে ব্যক্তি মানুষ হারিয়ে যায়। কিন্তু বেঁচে থাকে মানেেুষরই সৃষ্ট সোনার ফসল। তাঁর ব্যক্তিসত্তা ও শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার হতে হয়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় ভারতীয় ভাববাদী দর্শন অবলীলায় জায়গা করে নিয়েছে। আধুনিক বিশ্বে বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে মৃত্যুর সামনে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে মৃত্যু অনিবার্য। তিনি তার মৃত্যু চিন্তায় ডুবে যেতে যেতে কিছু একটা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান। আর এখানে তাঁর কর্মই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে। সোনার তরী' কবিতায়ও কবি বলেছেন, মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। আলোচ্য কবিতার এ দিকটির সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. মানুষের কর্মই পৃথিবীতে টিকে থাকে, ব্যক্তি মানুষ নয়— ‘সোনার তরী' কবিতা ও উদ্দীপকে এই অভিন্ন সত্যই প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ সোনার তরী' কবিতায় বর্ষায় বৈরী পরিবেশে বিপদাপন্ন এক কৃষককে কেন্দ্র করে কবিতাটির ভাব সত্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। সেখানে সোনার ধানরূপী কর্মফল নিয়ে অপেক্ষমান কৃষক মাঝিকে মিনতি করলে মাঝি তার সোনার ধান নিয়ে চলে যায়। কিন্তু কৃষককে নেয়নি। দেখা যাচ্ছে ব্যক্তির কর্মফল বড় কিন্তু ব্যক্তি নয়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় ভারতীয় ভাববাদী দর্শন অবলীলায় জায়গা করে নিয়েছে। তিনি মৃত্যু চিন্তায় ডুবে যেতে যেতে কিছু একটা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে মানুষ বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে মৃত্যুর সামনে বাঁধ দেওয়ার শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি ‘সোনার তরী’ কবিতায়ও কবি বোঝাতে চেয়েছেন মৃত্যু এক নির্মম সত্য, যা অতিক্রম করা যায় না।
➠ সোনার তরী' কবিতায় নিবিড়ভাবে মিশে আছে কবির জীবনদর্শন। মহাকালের স্রোতে ব্যক্তি মানুষ হারিয়ে যায়। কিন্তু বেঁচে থাকে মানুষের কর্মফল। তাঁর ব্যক্তি সত্ত্বা ও শারীরিক' অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার। এখানে কর্মের মধ্য দিয়ে যে মানুষ বাঁচতে পারে তা ফুটিয়ে তুলেছেন। আর উদ্দীপকের কবিও কিছু একটা আঁকড়ে বাঁচতে চান আর তা অসম্ভব। বস্তুত, ব্যক্তি মানুষকে কালের স্রোতে বিলীন হতেই হয়। মৃত্যুর অনিবার্যতার এ দিকটি তাই উদ্দীপকের ন্যায় ‘সোনার তরী’ কবিতায়ও তাৎপর্যপূর্ণভাবে ফুটে উঠেছে।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
লেভ তলস্তয়ের ‘সাড়ে তিন হাত জমি’ গল্পের নায়ক পাখোম লোভী প্রকৃতির। পাশের দেশে দিনপ্রতি জমির দাম ১০০ রুবল শুনে অধিক জমি পাওয়ার লোভে সে সেখানে ছুটে যায় এবং জমি কেনে। এক দিনে যতটুকু জমি সে ঘুরে আসতে পারবে, ততটুকু জমির মালিকানা পাবে সে। এমন আকর্ষণীয় প্রস্তাবে লালায়িত হয়ে শারীরিক ক্লান্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশি জমি পাওয়ার লোভে সারা দিন সে দৌড়ায়। পরিণতিতে মৃত্যু হয় তার।

ক. মহাকালের স্রোতে কী টিকে থাকে?
খ. মাঝি চলে যাওয়ার সময় কোনো দিকে তাকায়নি কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী’ কবিতার মূলভাবকে কতটা প্রতিফলিত করতে পেরেছে? বিশ্লেষণ করো।

ক. মহাকালের স্রোতে মানুষের সৃষ্ট সোনার ফসল টিকে থাকে।
খ. মহাকালরূপ মাঝি জাগতিক ঘটনা সম্পর্কে নিরাবেগ বলে চলে যাওয়ার সময় সে কোনোদিকে তাকায় না।
➠ আলোচ্য কবিতায় মূলত মহাকালের প্রতীক। আর মহাকাল কেবল মানুষের কর্মফলকেই গুরুত্ব দেয়। সেখানে ব্যক্তিমানুষ বা জাগতিক ঘটনাবলির স্থান নেই। অর্থাৎ জাগতিক ব্যস্ততা মহাকালকে স্পর্শ করতে পারে না। এ বিষয়ে মহাকাল সর্বদাই নিরাসক্ত ও নিরাবেগ। এ কারণেই মহাকালরূপ মাঝি চলে যাওয়ার সময় কোনো দিকে তাকায়নি।

গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতায় প্রকাশিত মৃত্যুর কাছে ব্যক্তি মানুষের অসহায়ত্বের দিকটি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি মহাকালের কাছে ব্যক্তিমানুষের অনিবার্য পরাজয়ের বিষয়টিকে মূর্ত করে তুলেছেন। তিনি মনে করেন, কালস্রোতে সবকিছুই ভেসে যায়, বেঁচে থাকে কেবল তার সুকীর্তিময় কর্ম। আর তাই কালের তরীতে ব্যক্তির কর্মফলের জায়গা হলেও ব্যক্তি মানুষকে অনিবার্যভাবে অপেক্ষা করতে হয় শূন্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য।
➠ উদ্দীপকে বিশ্বখ্যাত রুশ লেখক লেভ তলস্তয়ের একটি গল্প সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। গল্পটির মূল চরিত্র পাখোম লোভী প্রকৃতির। জমি পাওয়ার লোভ তাকে এতটাই পাগল করে তুলেছিল যে, শরীরের ক্লান্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে দিনভর সে দৌড়াতে থাকে। পরিণতিতে মৃত্যু হয় তার। এর মধ্যদিয়ে তার জমি লাভের বাসনারও সমাপ্তি ঘটে। একইভাবে, ‘সোনার তরী’ কবিতাতেও কবি মৃত্যুর কাছে মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। শতচেষ্টার পরও মানুষ মৃত্যুকে জয় করতে পারে না। উদ্দীপকটিতে আলোচ্য কবিতার এ দিকটিই ফুটে উঠেছে। ঘ. উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী' কবিতার মূলভাবকে আংশিক তুলে ধরতে পেরেছে বলে আমি মনে করি।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী' কবিতার মূলভাবকে আংশিক তুলে ধরতে পেরেছে বলে আমি মনে করি।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি মানবজীবনের এক গভীর সত্যকে তুলে ধরেছেন। সময় পরিক্রমার সাথে সাথে মানুষের কর্মের পরিধি বিস্তৃত হলেও আয়ুষ্কাল থাকে। ধীরে ধীরে একসময় মৃত্যু তাকে গ্রাস করে ফেলে। কেবল বেঁচে থাকে তার সকীর্তি। শতচেষ্টার পরও এই অনিবার্য পরিণতি থেকে ব্যক্তি মানুষের রেহাই নেই।
➠ উদ্দীপকে 'সাড়ে তিন হাত জমি' গল্পের মূলচরিত্র পাখোমের প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে। জমির প্রতি মোহাচ্ছা ছিল সে। আর তাই পাশের দেশে কম দামে জমি বিক্রি হয় শুনে সে সেখানে পাড়ি জমায়। একশ বুবলের বিনিময়ে একদিনে যতটুকু জমি সে ঘুরে আসবে, ততটুকু জমির মালিক হবে সে। এ কারণে অধিক জমি পাওয়ার লোভে শারীরিক ক্লান্তি ও সামর্থ্যের কথা বিবেচনা না করেই দিনভর সে দৌড়াতে থাকে। ফলে অধিক পরিশ্রমের কারণে মৃত্যু হয় তার।
➠ ‘সোনার তরী’ একটি রূপকধর্মী কবিতা। এ কবিতায় কবি এক গভীর জীবনদর্শন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। আর তা হলো- সময়ের চোরা স্রোতে ব্যক্তিমানুষ একসময় হারিয়ে যায়, বেঁচে থাকে কেবল তার সুকীর্তি। তাই মহাকালে খেয়ায় সৃষ্টিশীল কর্ম ঠাঁই পেলেও শিল্পস্রষ্টার জায়গা হয় না। বস্তুত, শতচেষ্টা করেও মানুষ তার অনিবার্য পরিণতি মৃত্যুকে এড়াতে পারে না। পক্ষান্তরে, উদ্দীপকটিতে এরূপ কোনো দর্শন নেই। সেখানে কেবল মৃত্যুর কাছে পাখোমের পরাজয়ের চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে, যা আলোচ্য কবিতারও অন্যতম বিষয়। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী’ কবিতার মূলভাবের আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মাদার তেরেসা অকৃত্রিম মাতৃস্নেহের আধার ছিলেন। আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত হয়েও তিনি তাঁর কাজের জন্য সারা পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতায় মিশনারিজ অব চ্যারিটি নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই চ্যারিটি হোম সমগ্র পৃথিবীর দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের জন্য কাজ করে। এই কাজের জন্য ১৯৭৯ সালে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেই পুরস্কারের সমস্ত অর্থ তিনি সেবার কাজে ব্যয় করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু পৃথিবীর মানুষ আজও তাঁর নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

ক. বাংলা কত তারিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্ম গ্রহণ করেন?
খ. ‘বাঁকা জল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. “সোনার তরী” কবিতার কোন বিষয়টি মাদার তেরেসার জীবনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘মাদার তেরেসার জীবন পরিণতিই “সোনার তরী” কবিতার মূল উপজীব্য’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

ক. ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন।
খ. ‘বাঁকা জল’ বলতে ভরা বর্ষায় নদীর জলের ভয়ংকর রূপ ধারণের বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে। কবিতায় এক নিঃসঙ্গ কৃষক সোনার ধান কেটে নদীতীরবর্তী খেতে অপেক্ষমাণ।
➠ আকাশে ঘন মেঘের গর্জন, বর্ষার ভরা নদীর ক্ষুরধারা স্রোতের সাথে এর জলও বাঁকা হয়ে খেলা করছে। ছোটো খেতটুকুকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে চলেছে তা। এভাবে ‘বাঁকা জল’ শব্দবন্ধের ভেতর দিয়ে কবিতাটিতে বৈরী প্রকৃতির রুদ্ররূপের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এছাড়া ‘বাঁকা জল’ কবিতাটিতে অনন্ত কালস্রোতের প্রতীক।

গ. ‘সোনার তরী’ কবিতায় উল্লিখিত ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুর বিপরীতে কর্মের অমরতার প্রসঙ্গটি উদ্দীপকের মাদার তেরেসার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি এক গভীর জীবনদর্শনকে উন্মোচন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, মহাকাল কেবল মানুষের সৃষ্টিশীল মহৎ কর্মকেই গ্রহণ করে; ব্যক্তিমানুষকে নয়। আর তাই কালপরিক্রমায় সৃষ্টিকর্ম টিকে গেলেও মানুষকে অনিবার্যভাবে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। আলোচ্য কবিতায় কৃষক চরিত্রটির আধারে কবি এ সত্যটিকেই উন্মোচন করেছেন।
➠ উদ্দীপকের মাদার তেরেসা অকৃত্রিম মানবসেবী ছিলেন। ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতায় ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি' নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীকালে সমগ্র পৃথিবীর দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের জন্য কাজ করে সুনাম অর্জন করে। এমন সেবাধর্মী কর্মযজ্ঞের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এর চেয়েও বড়ো যে পুরস্কার তিনি লাভ করেন তা হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা ও অমরত্ব। মানুষ আজও তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। আলোচ্য ‘সোনার তরী’ কবিতায়ও মানুষের সুকৃতিময় কর্মের অমরতার কথা বলা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, ব্যক্তিমানুষের মৃত্যু অনিবার্য হলেও তার সৃষ্টিকর্মের মৃত্যু নেই। উদ্দীপকের মাদার তেরেসার জীবন ও কর্ম এ বিষয়েরই ইঙ্গিতবাহী। সে বিবেচনায় আলোচ্য কবিতার ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুর বিপরীতে কর্মের অমরতার দিকটি উদ্দীপকের মাদার তেরেসার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. মাদার তেরেসার জীবন পরিণতি তথা মৃত্যু এবং তাঁর সুকৃতিময় কর্মের টিকে থাকার দিকটি ‘সোনার তরী’ কবিতার ভাবসত্যকেই প্রমাণ করে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি মানুষের জীবনের অনিবার্য পরিণতির দিকটির প্রতি আলোকপাত করেছেন। পাশাপাশি কবিতাটিতে তিনি মহৎ কর্মের গুরুত্বের দিকটিও তুলে ধরেছেন। কবি মনে করেন, মানুষ তার বয়সের মধ্যে বাঁচে না, বাঁচে অনন্য কর্মে। মানুষ শত বছর বেঁচে থাকলেও কেউ তাকে মনে রাখে না। পক্ষান্তরে, সুকৃতিময় কর্মের মাধ্যমে সে মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন লাভ করতে পারে।
➠ উদ্দীপকের মাদার তেরেসা বেঁচে আছেন তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে। সমগ্র জীবন তিনি মানবসেবায় ব্যয় করে গেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি' আর্ত-মানবতার সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সমগ্র পৃথিবীর দরিদ্র, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবায় কাজ করেছে এই প্রতিষ্ঠান। মানুষকে ভালোবেসে তিনি যেমন মানবসেবাঝে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন, তেমনি মানুষও তাঁকে রেখেছে হৃদয়ের মণিকোঠায়। আলোচ্য কবিতাতেও একইভাবে মহৎ কর্মের অমরতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘সোনার তরী’ একটি রূপকধর্মী কবিতা। এ কবিতায় ধান কেটে অপেক্ষমাণ এক কৃষকের বাস্তবতার অন্তরালে কবিতার ভাবসত্যকে উন্মোচন করেছেন। কবি মনে করেন, মৃত্যু মানুষের অনিবার্য পরিণতি। একে কেউ রোধ করতে পারে না। তবে ব্যক্তিমানুষের মৃত্যু হলেও মৃত্যু তার কর্মকে স্পর্শ করতে পারে না। বস্তুত, যেকোনো মানুষ কীর্তিমান কিংবা বরণীয় হয়ে ওঠে তাঁর কর্মের উৎকর্ষে। উদ্দীপকের মাদার তেরেসা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। দৈহিক মৃত্যু হলেও তিনি তাঁর সেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে স্থান পেয়েছেন। তাঁর জীবন ও কর্ম আজও মানুষ অনুসরণ করে। অর্থাৎ মাদার তেরেসার জীবন পরিণতি তথ্য মৃত্যু এবং সুকৃতিময় কর্মের মাধ্যমে মানুষের মনে বেঁচে থাকার এই দিকটি আলোচ্য কবিতার মূলভাবের সমান্তরাল। সে বিবেচনায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
i. মৃত্যু কী সহজ, কী নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়।- সমরেশ মজুমদার
ii. মৃত্যু নিয়ে আমি ভীত নই। কিন্তু মরার জন্য তাড়াও নেই আমার। তার আগে করার মতো অনেক কিছু আছে আমার।- স্টিফেন হকিং

ক. নিরুপায় ঢেউগুলি কোথায় ভাঙে?
খ. “যাহা লয়ে ছিনু ভুলে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপক (i)-এ ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটি উন্মোচিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপক (ii)-এ ‘সোনার তরী' কবিতার বিপরীত ভাব প্রকাশিত হয়েছে’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

ক. নিরুপায় ঢেউগুলি তরীর দু’ধারে ভাঙে।
খ. প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে কবির সৃষ্টিকর্ম নিয়ে জীবনভর মগ্ন থাকার দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।
➠ সৃষ্টিশীল কবির দৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্মই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান সবকিছু। শিল্পসাধনাতেই তিনি তাঁর সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেছেন। শিল্পকর্মে মগ্ন থাকার কারণে আর কিছু নিয়ে ভাবার তেমন সময় পাননি। অথচ শেষবেলায় মহাকালের খেয়ায় সেসব সৃষ্টিকর্মের স্থান হলেও তিনি নিজে সেখানে স্থান পাননি। সংগত কারণেই সারাজীবন সৃষ্টিকর্ম নিয়ে মগ্ন থাকার কথা তিনি আক্ষেপডরে প্রকাশ করেছেন। প্রশ্নোত্ত কথাটির মাধ্যমে এ বিষয়টিই প্রকাশিত হয়েছে।

গ. উদ্দীপক i-এ ‘সোনার তরী’ কবিতায় প্রকাশিত মৃত্যুর কাছে মানুষের অসহায়ত্বের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।
➠ মহাকালের গতিকে কেউ স্তব্ধ করতে পারে না। আর তাই মানুষ তার অনিবার্য পরিণতি মৃত্যুকেও এড়াতে পারে না। নির্দয়ের মতো ছুটে চলা কালস্রোত কেবল মানুষের সুকৃতিময় কর্মফলকেই গ্রহণ করে, ব্যক্তিমানুষকে নয়। সংগত কারণেই অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় মহাকালের স্রোতে বিলীন হওয়ার জন্য।
➠ উদ্দীপক i-এ প্রখ্যাত লেখক সমরেশ মজুমদারের একটি উদ্ভিকে উপজীব্য করা হয়েছে। উক্তিটিতে মৃত্যু নিয়ে তাঁর উপলব্ধির কথা প্রকাশিত হয়েছে। আশ্চর্য হয়ে তিনি মৃত্যুর সহজ ও আকস্মিক আগমনকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি আরও অবাক হয়েছেন নিশ্চিত পরিণতি হিসেবে মৃত্যুর কথা জেনেও মানুষ জীবন নিয়ে গর্ব করে যায় দেখে। এর মধ্যদিয়ে মৃত্যুর অনিবার্যভার পাশাপাশি এর কাছে মানুষের চিরন্তন অসহায়ত্বের দিকটিও ফুটে উঠেছে। আলোচ্য কবিতাটিতেও মহাকালের স্রোতে ব্যক্তিমানুষের বিলীন হওয়ার ইঙ্গিতে একই বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপক i-এ ‘সোনার তরী’ কবিতায় প্রকাশিত মৃত্যুর কাছে মানুষের অসহায়ত্বের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।

ঘ. ‘সোনার তরী’ কবিতায় মৃত্যুর কাছে মানুষের অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও উদ্দীপক ii-এ মৃত্যুভয়হীন মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি এক গভীর জীবনসত্য সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। আর তা হলো- সময়ের স্রোতে ব্যক্তিমানুষ একসময় হারিয়ে যান; বেঁচে থাকে কেবল তার সুকৃতি। আর তাই মহাকালের তরীতে সৃষ্টিশীল কর্ম ঠাঁই পেলেও শিল্পস্রষ্টার সেখানে জায়গা হয় না। বস্তুত, শতচেষ্টা করেও মানুষ তাঁর অনিবার্য পরিণতি মৃত্যুকে এড়াতে পারেন না।
➠ উদ্দীপক ii-এ বিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যু সম্পর্কিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বক্তব্যটির মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন ও মৃত্যু বিষয়ক ভাবনা ফুটে উঠেছে। জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে মৃত্যুর বিষয়টিকে তিনি সহজভাবেই গ্রহণ করেছেন। মৃত্যুভয়ে ভীত নন তিনি। আর তাই মৃত্যুর কথা না ভেবে তিনি বরং কর্মে মনোযোগী হতে আগ্রহী। তিনি মনে করেন, এখনো তাঁর হাতে করার মতো প্রচুর কাজ রয়ে গেছে। মৃত্যুর আগে সেগুলো সম্পন্ন করাই বেশি জরুরি।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় নিঃসঙ্গ কৃষকের জীবনের পরিণতির মধ্যদিয়ে ব্যক্তিমানুষের অনিবার্য পরিণতিকে নির্দেশ করেছেন কবি। মানুষ কোনোভাবেই মৃত্যুর এই অনিবার্যতাকে এড়াতে পারে না। এর মধ্যদিয়ে কালের নিয়মের কাছে ব্যক্তিমানুষের চিরায়ত অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। পক্ষান্তরে, উদ্দীপক রর-এ উল্লিখিত স্টিফেন হকিং মৃত্যুভয়হীন। মৃত্যুকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে আলোচ্য কবিতার মতো মৃত্যুর কাছে নিজেকে অসহায় মনে করেননি তিনি। উপরন্তু জীবনের মূল্যবান সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করতে তিনি সচেষ্ট। উদ্দীপক রর-এর এই বক্তব্য আলোচ্য কবিতার বিপরীত। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ অর্থবহ।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সেইদিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি-
এই নদী নক্ষত্রের তলে
সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন-
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
আমি চলে যাব বলে চালতাফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে?
লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!

ক. কাকে দেখে কবির পরিচিত মনে হয়েছে?
খ. ‘একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা’ - ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রকাশিত কবির আক্ষেপ ‘সোনার তরী’ কবিতার শিল্পস্রষ্টার অসহায়ত্বের দিকটিকে কীভাবে উন্মোচিত করে? বিচার করো।

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ক. সোনার তরীর মাঝিকে দেখে কবির পরিচিত মনে হয়েছে।
খ. প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্যদিয়ে কবি পৃথিবীতে মানুষের চিরন্তন একাকিত্বের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।
➠ আলোচ্য চরণটিতে ‘ছোটো খেত' বলতে মানুষের কর্মজগৎকে বোঝানো হয়েছে। বস্তুত, মানুষকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কাজ করে যেতে হয়; কাজ থেকে মানুষের নিষ্কৃতি নেই। আর এই কর্মক্ষেত্রে কর্মী ব্যক্তিমানুষ নিজেই। এক্ষেত্রে তার কোনো ভাগীদারও নেই। প্রশ্নোত্ত চরণটিতে ব্যক্তিমানুষের নিঃসঙ্গতার এই বিষয়টিই মূর্ত হয়ে উঠেছে।

গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী' কবিতায় প্রকাশিত মৃত্যুচেতনার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি মহাকালের কাছে ব্যক্তিমানুষের অনিবার্য পরাজয়ের বিষয়টিকে মূর্ত করে তুলেছেন। তিনি মনে করেন, কালস্রোতে সবকিছুই ভেসে যায়, বেঁচে থাকে কেবল তার সুকীর্তিময় কর্ম। আর তাই কালের তরীতে ব্যক্তির কর্মফলের জায়গা হলেও ব্যক্তিমানুষকে অনিবার্যভাবে অপেক্ষা করতে হয় শূন্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য। এর মধ্যদিয়ে কবিতাটিতে কবির মৃত্যুচেতনাই প্রকট হয়ে উঠেছে।
➠ উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির মৃত্যুচেতনার প্রকাশ ঘটেছে। কবি মনে করেন, সময়ের স্রোতে তিনি হয়তো একদিন হারিয়ে যাবেন। তবে সেদিনও চালতা ফুলে শিশির ঝরে পড়ার সৌন্দর্য ম্লান হবে না। এভাবেই প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধে মানুষের স্বপ্ন ও সাধকে পূর্ণ করে যাবে। অন্যদিকে ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি এক গভীর জীবনদর্শনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি মনে করেন, তাঁর সৃষ্ট শিল্পকর্ম হয়তো কালের খেয়ায় স্থান করে নেবে, কিন্তু ব্যক্তি কবি সন্দেহাতীতভাবে মহাকালের অতলেই হারিয়ে যাবেন। অর্থাৎ উদ্দীপকের কবিতাংশ এবং আলোচ্য কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই মৃত্যুভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সে বিবেচনায়, উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতায় ফুটে ওঠা মৃত্যুচেতনার দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রকাশিত কবির আক্ষেপ মৃত্যুচেতনা প্রকাশের ভেতর দিয়ে ‘সোনার তরী’ কবিতার শিল্পস্রষ্টার অসহায়ত্বের দিকটি উন্মোচিত করে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি মানবজীবনের এক গভীর সত্যকে তুলে ধরেছেন। সময় পরিক্রমার সাথে সাথে মানুষের কর্মের পরিধি বিস্তৃত হলেও আয়ুষ্কাল কমতে থাকে। ধীরে ধীরে একসময় মৃত্যু তাকে হাতছানি দিয়ে মহাকালের পথে নিয়ে যাবে। কেবল বেঁচে থাকে তার সুকৃতিময় কর্ম। শতচেষ্টার পরও এই অনিবার্য পরিণতি থেকে ব্যক্তিমানুষের রেহাই নেই।
➠ উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুর বিপরীতে প্রকৃতির চিরন্তন ব্যস্ততার দিকটি উন্মোচিত করেছেন। কালের স্রোতে মানুষ একসময় হারিয়ে গেলেও প্রকৃতির যে চিরকালীন ব্যস্ততা, তার ব্যত্যয় ঘটে না। নতুন পরিবেশে প্রকৃতি নতুনভাবে নিজেকে মেলে ধরে। শীতের প্রকৃতিতে চালতা ফুলের ওপর শিশির ঝরে পড়ার সৌন্দর্য বা লক্ষ্মীপেঁচার মঙ্গলবার্তা এ অমোঘ সত্যকেই ধারণ করে। তবে ব্যক্তিমানুষ প্রকৃতির এই খেয়ালের চিরকালীন সঙ্গী হতে পারে না। কবির আক্ষেপ মূলত এখানেই।
➠ ‘সোনার তরী’ একটি রূপকধর্মী কবিতা। এ কবিতায় ধান কেটে অপেক্ষমাণ এক কৃষকের বাস্তবতার অন্তরালে কবিতার ভাবসত্যকে উন্মোচন করেছেন কবি। তিনি মনে করেন, মৃত্যু মানুষের অনিবার্য পরিণতি। একে কেউ রোধ করতে পারে না। অন্যদিকে, উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি প্রকৃতির চিরন্তনতার সঙ্গে মানুষের স্বপ্ন ও সাধের অমরতার কথা বলেছেন। তবে তাঁর নিজের চলে যাওয়ার কথাটির মধ্যদিয়ে কবিতাংশটিতে মূলত কবির বেঁচে থাকার আক্ষেপ প্রকাশিত হয়েছে। আর কবিতাংশটিতে প্রকাশিত কবির এই আক্ষেপই আলোচ্য কবিতায় শিল্পষষ্টা কবির চিরন্তন অসহায়ত্বের মধ্যদিয়ে রূপায়িত হয়েছে।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
“আমায় নহে গো, ভালোবাসো শুধু ভালোবাসো মোর গান
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে গান হলে অবসান্ন!!
চাঁদেরে কে চায়, জোছনা সবাই যাচে,
গীত-শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলি-মাঝে।"

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতায় কৃষকের ছোটো খেতের চারদিকে কী খেলা করছে?
খ. সোনার তরীতে কৃষকের ঠাঁই হলো না কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার অন্তর্ভাবনা কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে? বিশ্লেষণ করো।

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ক. ‘সোনার তরী' কবিতায় কৃষকের ছোটো খেতের চারদিকে বাঁকা জল খেলা করছে।
খ. সোনার তরী কৃষকের উৎপাদিত ধানে ভরে গিয়েছিল বলে সেখানে কৃষকের ঠাঁই হয়নি।
➠ কর্মফলস্বরূপ রাশি রাশি সোনার ধান কেটে নিঃসঙ্গ কৃষক নদীতীরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। এ সময় ভরা পালে তরী বেয়ে একজন অচেনা মাঝির আগমন ঘটে। কৃষকের অনুরোধে মাঝি তাঁর সমস্ত ধান নৌকায় তুলে নিলে নৌকা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে সেখানে কৃষকের স্থান সংকুলান হয় না। প্রকৃতপক্ষে, মহাকাল-রূপ সোনার তরীতে কর্মফল জায়গা পেলেও সেখানে ব্যক্তিমানুষ স্থান পায় না। এই অমোঘ বাস্তবতার কারণেই ফসলে পরিপূর্ণ সোনার তরীতে কৃষক ঠাঁই পাননি।

গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতায় প্রকাশিত সৃষ্টিকর্মের মূল্যায়নের বিপরীতে শিল্পস্রষ্টা ব্যক্তির বিস্মৃত হওয়ার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় বর্ণিত সোনার ধান মূলত মানুষের সৃষ্টিকর্মের প্রতীক। কৃষক তাঁর জমি থেকে সোনার ধান কেটে অপেক্ষায় আছেন কখন তরী এসে ফসলসহ তাঁকে নিয়ে যাবে। অবশেষে কৃষকের কষ্টের ফসল সোনার ধান মহাকালের তরীতে স্থান পেলেও কৃষকের স্থান সেখানে হয়নি। বস্তুত, মানুষ শিল্পকর্মের কদর করলেও শিল্পস্রষ্টার কথা কেউ মনে রাখে না।
➠ উদ্দীপকের গীতিকবি নিজের সৃষ্ট গানের মাঝেই বেঁচে থাকতে চান। কেননা, বনে পাতার আড়ালে বসে গান করলেও আমরা গায়ক পাখির খোঁজ করি না, বরং তার মিষ্টি গানই আমাদের কানে বাজে। আবার যে বীণার সুরেলা ঝংকার-সহযোগে গান পরিবেশিত হয়, আসরের শেষে সে-ই বীণাই আবার ধূলিতে গড়াগড়ি খায়। মুগ্ধ শ্রোতারা কেবল মিষ্টি সুরের গীতটাকেই হৃদয়ে ধারণ করে, পাখি বা বীণার কদর তারা করে না। অনুরূপভাবে ‘সোনার তরী’ কবিতাতেও এই অমোঘ সত্যটিই উন্মোচিত হয়েছে। মহাকালের দারুণ স্রোতে মহৎ সৃষ্টিকর্ম টিকে থাকলেও শিল্পস্রষ্টাকে অবধারিতভাবেই কালের চোরাস্রোতে হারিয়ে যেতে হয়। তাকে কেউ মনে রাখে না। আলোচ্য কবিতার এই ভাবনাই উদ্দীপকের কবিতাংশে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে।

ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘সোনার তরী’ কবিতার অন্তর্ভাবনা আংশিক প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি একটি অত্যন্ত সাধারণ গ্রামীণ চিত্রপটকে অবলম্বন করে এক গভীর দর্শনের অবতারণা করেছেন। কালের করালগ্রাসে মানুষ তার শারীরিক অস্তিত্ব হারায়; কিন্তু তার কৃতকর্মকে মৃত্যু স্পর্শ করতে পারে না। ‘সোনার তরী’ কবিতায় চিত্রধর্মী রূপকের আড়ালে জীবনের এই অমোঘ সত্যটিই উপস্থাপিত হয়েছে।
➠ উদ্দীপকের কবিতাংশে নিজের সৃষ্টিকর্মকে ঘিরে কবির প্রত্যাশার দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। মহাকালের স্রোতে কবি হারিয়ে গেলেও তার সৃষ্ট গান যেন সবার মনে জেগে থাকে, এটাই কবির চাওয়া। তিনি লক্ষ করেছেন, জোছনার সৌন্দর্য সবাই উপভোগ করতে চাইলেও জোছনা বিকিরণকারী চাঁদকে তারা কামনা করে না। আবার গানের সুরে সবাই মোহিত হয়; কিন্তু বাদ্যযন্ত্রের দিকে তাদের নজর পড়ে না। আর তাই কবি নিজের পরিবর্তে তাঁর সৃষ্ট শিল্পকর্মের অমরতাই প্রার্থনা করেছেন।
➠ ‘সোনার তরী কবিতায় এক গভীর জীবনদর্শন প্রকাশিত হয়েছে। আর তা হলো মানুষের কর্মই পৃথিবীতে টিকে থাকে, ব্যক্তিমানুষ নয়। অর্থাৎ মহৎ সৃষ্টিকর্ম কালের খেয়াতে স্থান পেলেও স্রষ্টাকে অতৃপ্তির বেদনা নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় অনিবার্যভাবে মহাকালের শূন্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য। অন্যদিকে, উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি তাঁকে না বাসলেও তাঁর গান তথা সৃষ্টিকর্মকে ভালোবাসার অনুরোধ জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আলোচ্য কবিতাটিতে প্রকাশিত মহাকালের কালস্রোতে সৃষ্টিকর্মের টিকে থাকার প্রসঙ্গটি ফুটে উঠেছে। তবে কবিতাটিতে ব্যক্তিমানুষের অনিবার্য পরিণতি সম্পর্কে যে গভীর দর্শন প্রকাশিত হয়েছে, উদ্দীপকে তা প্রতিফলিত হয়নি। সে বিবেচনায় উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার অন্তর্ভাবনার আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
জনৈক দরিদ্র লোককবি হরিপ্রসন্ন জীবনে অনেক লেখালেখি করেছেন; কিন্তু তাঁর একটি বইও ছাপার অক্ষরে প্রকাশ পায়নি, যা মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা অশীতিপর হরিপ্রসন্নের সবচেয়ে বড়ো অতৃপ্তি আর দুঃখের কারণ। একদিন এ কষ্ট বুঝতে পেরে তাঁর অধ্যাপক ছেলে হরিপ্রসন্নের লেখা 'গীতিকবিতা'র একটি মুদ্রিত সংকলন গ্রন্থ বের করে পিতার হাতে দেয়। বইটি পেয়ে বৃদ্ধ হরিপ্রসন্নের আনন্দের সীমা থাকে না।

ক. ‘খরপরশা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. তরীটিকে কেন ‘সোনার তরী’ বলা হয়েছে?
গ. লোককবি হরিপ্রসন্নের ‘গীতিকবিতা’ গ্রন্থ আর কৃষকের ‘সোনার ধান’-এর মিল কোথায়?
ঘ. ‘বৃদ্ধ মারা যাবে, কিন্তু তার বইটি থেকে যাবে কালের তরীতে।’ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

ক. ‘খরপরশা’ শব্দের অর্থ হলো ধারালো বর্শা।
খ. তরীটি মহামূল্যবান মহাকালের প্রতীক বলেই এটিকে সোনার তরী বলা হয়েছে।
➠ ‘সোনার তরী’ একটি রূপক কবিতা। কবিতাটিতে প্রতিটি অনুষঙ্গই রূপায়িত। এর প্রতিটির আলাদা অর্থ রয়েছে। কবিতাটিতে তরী বলতে মহাকালকে বোঝানো হয়েছে। সময় অমূল্য, কোনো কিছু দিয়েই তার মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আর তাই কবিতাটিতে মহাকালরূপী তরীটিকে তাৎপর্যম-িত করে তুলতেই সেটিকে সোনার তরী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

গ. ‘সোনার তরী' কবিতায় উল্লেখ্য কৃষকের সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ সোনার ধান, যার অনুরূপ হলো উদ্দীপকের লোককবি হরিপ্রসন্নের ‘গীতিকবিতা’।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি একটি গ্রামীণ দৃশ্যপটে এক কৃষকের অসহায়ত্বকে কেন্দ্র করে এক গভীর জীবনদর্শনকে ব্যক্ত করেছেন। সেখানে কৃষকের একখানা ছোটো ধানখেতের চারপাশে প্রবল জলস্রোতের বিস্তার। এরই মাঝে সে তাঁর উৎপাদিত সোনার ধান নিয়ে নদীতীরে একাকী প্রতীক্ষমাণ। এই সোনার ধান প্রকৃতপক্ষে তাঁর সারা জীবনেরই কর্মফল, যা মহাকালের তরীতে ঠাঁই পেয়েছে।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত দরিদ্র লোককবি হরিপ্রসন্ন ঘোষ সারা জীবন ধরে অনেক কবিতা লিখেছেন, কিন্তু সেগুলো কাব্যাকারে সংরক্ষণ করতে পারেননি। আর তাই তাঁর অধ্যাপক ছেলে যখন তাঁর গীতিকবিতাগুলো গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করল, তখন হরিপ্রসন্ন গ্রন্থটি হাতে পেয়ে যেন মহা আনন্দ উপভোগ করলেন। ‘সোনার তরী’ কবিতায় কৃষকের উৎপাদিত সোনার ধান প্রতীক মাত্র, যা তার কর্মফলকেই ইঙ্গিত করে। এক্ষেত্রে এ কবিতায় কৃষকের পরিশ্রমে উৎপাদিত সোনার ধান যেমন তাঁর কর্মের ফসল, তেমনি প্রকাশিত গ্রন্থটিও হরিপ্রসন্নের সারা জীবনের কর্মের ফসল। এদিক থেকে উদ্দীপকের লোককবি হরিপ্রসন্নের ‘গীতিকবিতা' গ্রন্থ আর কৃষকের 'সোনার ধান’-এর মিল পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. ‘সোনার তরী’ কবিতায় মানুষের মহৎ সৃষ্টিকর্মের মহাকালের কালস্রোতে টিকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি জীবনের এক অমোঘ সত্যকে উন্মোচন করেছেন। তিনি মনে করেন, নশ্বর এ পৃথিবীতে কালপরিক্রমায় ব্যক্তিমানুষ একসময় হারিয়ে যায়; কিন্তু তার কীর্তিকে মৃত্যু স্পর্শ করতে পারে না। আর তাই ব্যক্তি কবির মৃত্যুতেও তাঁর সৃষ্টিকর্ম হারিয়ে যাবে না। মহাকালের কালস্রোতে তা টিকে থাকবে যুগ যুগ ধরে।
➠ উদ্দীপকে হরিপ্রসন্ন নামের এক লোককবির কথা বলা হয়েছে। সারা জীবন ধরে কবিতা লিখলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি এসব কবিতার সংকলন বের করতে পারেননি। এজন্য তাঁর মনে আক্ষেপের অন্ত ছিল না। অবশেষে তাঁর অধ্যাপক ছেলে বাবার এই মনঃকষ্ট লাঘব করতে কবিতাগুলি গ্রন্থাকারে বের করে। গ্রন্থ আকারে নিজ সৃষ্টিকর্মকে দেখে বৃদ্ধ হরিপ্রসন্নের যেন আনন্দের সীম থাকে না। এ গ্রন্থখানি থেকে যাবে, হরিপ্রসন্ন হয়তো কৃষকের মতোই একদিন হারিয়ে যাবেন কালের গর্ভে।
➠ আলোচ্য কবিতায় অন্তলীন হয়ে আছে গভীর এক জীবনদর্শন। আর তা হলো— মানুষ তার অনিবার্য মৃত্যুকে এড়াতে পারে না, কেবল বেঁচে থাকে তার কর্ম। এ কারণেই কবিতাটিতে দেখা যায়, মহাকালরূপী মাঝি কৃষকের কর্মফল সোনার ধান নৌকায় তুলে নেয় ঠিকই ব্যক্তি কৃষকের সেখানে স্থান হয় না। একইভাবে, মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা উদ্দীপকের হরিপ্রসন্ন একদিন মহাকালের কালগর্ভে হারিয়ে যাবেন, কিন্তু কর্মফল হিসেবে বেঁচে থাকবে তার গীতিকবিতা। বস্তুত কর্মই মানুষকে অমর করে তুলতে পারে, যেমনটি আলোচ্য কবিতায় পরিলক্ষিত হয়। সে বিবেচনায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথাযথ।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেম ও দ্রোহের কবি নজরুল তাঁর লেখনীর মাধ্যমে বাঙালিকে সত্য ও সুন্দরের পথে উদ্বুদ্ধ করেছেন চিরকাল। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯৭৬ সালে। অথচ এখনো তিনি বাঙালি জাতির কাছে বিদ্রোহের প্রতীক। তাঁর কবিতা ও গান এখনো বাঙালির প্রতিদিনের শক্তির উৎস। এভাবেই তিনি আজও অমর হয়ে আছেন আমাদের মাঝে।

ক. ‘শূন্য নদীর তীরে’- মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কত মাত্রা?
খ. দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’– উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য বিচার করো।

ক. ‘শূন্য নদীর তীরে’— মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ৮ মাত্রা।
খ. ধান কেটে অপেক্ষমাণ কৃষকের সামনে এক মাঝির আগমন হলে প্রথম দেখায় মাঝিকে তার পরিচিত বলে মনে হয়।
➠ আলোচ্য কবিতায় বর্ষার বৈরী পরিবেশে বিপদাপন্ন এক কৃষককে কেন্দ্র করে কবিতাটির ভাবসত্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। সেখানে সোনার ধানরূপী কর্মফল নিয়ে কৃষক অপেক্ষমাণ। চারদিকে বর্ষার ক্ষুরধারা পানি ঘুরে ঘুরে খেলা করছে, যেন মুহূর্তেই ভাসিয়ে নেবে তাঁর ছোটো খেতটিকে। এমনই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে হঠাৎ সেখানে এক মাঝির আগমন হয়। মহাকালের প্রতীক এই মাঝিকে ব্যক্তি কৃষকের পরিচিত বলে মনে হতে থাকে। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার কর্মফলের অমরতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় রূপকের আশ্রয়ে মানবজীবনের গূঢ় দর্শন প্রকাশিত হয়েছে। এ কবিতায় বাহ্যরূপে বর্ষার হিংস্র স্রোত পরিবেষ্টিত ধানখেতে রাশি রাশি সোনার ধান নিয়ে অপেক্ষা করেন এক কৃষক। একসময় ভরা পালে সোনার তরী বেয়ে চলে যেতে থাকা এক মাঝিকে ধানগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য কাতর অনুনয় করেন তিনি। মাঝি তাঁর ধানগুলো তরীতে তুলে নেয়; কিন্তু ব্যক্তিকৃষকের সেখানে স্থান হয় না।
➠ উদ্দীপকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রে‘কবি কাজী নজরুল ইসলামের বলা হয়েছে। নিজ লেখনীর বাঙালি জাতিকে সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা দিয়েছেন তিনি। অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে তিনি আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। সংগত কারণেই বাঙালির মনের মণিকোঠায় আসন লাভ করেছেন তিনি। আজও বাঙালিরা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। অর্থাৎ ব্যক্তি নজরুলের মৃত্যু হলেও তাঁর সৃষ্টিকর্মের বিনাশ হয়নি। আলোচ্য ‘সোনার তরী’ কবিতাতেও কবি ব্যক্তি মানুষের মৃত্যুর বিপরীতে মহাকালের কালস্রোতে কর্মফলের টিকে যাওয়ার কথা বলেছেন, যা উদ্দীপকে উল্লিখিত কবি নজরুলের জীবন ও কর্মের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে আলোচ্য কবিতায় বিধৃত কর্মফলের অমরতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। কবি নজরুল বেঁচে না থাকলেও বেঁচে আছে তাঁর কর্ম। বাংলা ভাষায় বিদ্রোহ, সাম্য ও অধিকারের কথা লিখে সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি আজও প্রেরণা জোগান সাধারণ মানুষের অন্তরে। তাঁর কবিতা ও গান এখনো আমাদের শক্তি দেয়, সাহস জোগায়। যেকোনো সংগ্রামে সমরে তাঁকে আমরা স্মরণ করি। উদ্দীপকে এ ভাবটি ব্যস্ত হওয়ায় বলা যায় যে, আলোচ্য কবিতার অন্তর্নিহিত জীবনদর্শন উদ্দীপকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে প্রবহমান নদী সময়ের প্রতীক। সময় পরিক্রমায় ব্যক্তিমানুষ একদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়: শুধু টিকে থাকে তার সোনার ধান বা কর্মফল।

ঘ. মহৎ কীর্তিই যে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতায় এ বিষয়টিই বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতার মূলকথা হলো, মানুষ টিকে থাকে তার কর্মের মাধ্যমে। তাছাড়া পৃথিবীতে মানুষ শুধু নিজের জন্য আসেনি। সমাজ ও উত্তর প্রজন্মের প্রতিও তার কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। মহান ব্যক্তিরা সে কর্তব্যবোধ থেকেই মানুষের জন্য রেখে গেছেন মহৎ কীর্তি। এসব কীর্তিই তাঁদের মানুষের মনে বাঁচিয়ে রেখেছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তেমনই একজন যুগোত্তীর্ণ কবি ও সাহিত্যিক।
➠ উদ্দীপকে উল্লেখ্য কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে মানুষকে অধিকারসচেতন করে তুলেছেন। জাতির মুক্তির লক্ষ্যে রচিত তাঁর দ্রোহের বাণী বাঙালিকে শ্রেণিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর কবিতা ও গান এখনো বাঙালির প্রেরণার উৎস। মহৎ কর্মের জন্যই আজও বাঙালি জাতি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। আলোচ্য কবিতায় রূপকের আড়ালে কবি মহৎ কর্মের অমরতার এ ফুটিয়ে তুলেছেন।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় বৈরী পরিবেশে এক কৃষকের প্রতীকে এক গভীর জীবনদর্শন ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। তিনি মনে করেন, মহাকালের স্রোতে ব্যক্তিমানুষ বা কবিতার কৃষক হারিয়ে যাবেন ঠিকই, কিন্তু বেঁচে থাকবে তাঁর সোনার ধান বা কর্মফল। কবিতায় নির্দেশিত এ কর্মফল প্রকৃতপক্ষে উদ্দীপকে বর্ণিত কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্মের ইঙ্গিতবাহী। মহাকালের স্রোতে বাক্তি নজরুল হারিয়ে গেছেন ঠিকই; কিন্তু তাঁর কীর্তির মৃত্যু হয়নি। সৃষ্টিকর্মের ভেতর দিয়েই অমরত্ব পেয়েছেন তিনি। আলোচ্য কবিতার অন্তরালেও সৃষ্টিকর্মের অমরতার এ দিকটিই প্রকাশিত হয়েছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথাযথ।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আমিন সাহেব ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর চাকরি করেছেন। এই দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি ঘর-বাড়িসহ বেশকিছু অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। অবসর গ্রহণের পর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন তিনি। তবে ছেলেমেয়েরা সুখী জীবনযাপন করছে— এতেই তার স্বস্তি।

ক. কাকে দেখে কবির পরিচিত মনে হয়েছে?
খ. কবিতাটিতে ‘পরপার’ বলতে মূলত কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আমিন সাহেবের কর্মকাণ্ডে মধ্য দিয়ে ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী’ কবিতার অন্তর্ভাবনাকে উপস্থাপন করতে পেরেছে কি? বিশ্লেষণ করো।

ক. মাঝিকে দেখে কবির পরিচিত মনে হয়েছে।
খ. কবিতাটিতে ‘পরপার’ বলতে মূলত পরকালের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
➠ সোনার তরী’ একটি রূপক কবিতা। এ কবিতার কৃষক হলেন শিল্পস্রষ্টা কবি নিজেই। নদীর জল কাল সলিলের প্রতীক আর নদীর অপর পাড় তথা পরপার হলো মৃত্যু-পরবর্তী জগৎ। এভাবে ‘পরপার' শব্দটির মধ্য দিয়ে কবিতাটিতে পরকালের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের আমিন সাহেবের কর্মকা-ের ভেতর দিয়ে ‘সোনার তরী’ কবিতার কৃষকের কর্মের দিকটি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতার অন্তরালে কবি মানবজীবনের এক গভীর দর্শনকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি মনে করেন, ক্ষণস্থায়ী জীবনকে অমরত্বের রশিতে বাঁধতে হলে সুকীর্তিময় কর্মের বিকল্প নেই। কেননা, শেষ বিচারে কেবল মানুষের কর্মই মূল্যায়িত হয়; ব্যক্তিমানুষ হারিয়ে যায় মহাকালের অতলে। এ কারণেই কবিতাটিতে কৃষকের সোনার ফসল টিকে গেলেও সোনার তরীতে ঠাঁই হয় না কৃষকের।
➠ উদ্দীপকের আমিন সাহেব তাঁর দীর্ঘ চাকরি জীবনে সাংসারিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। অনেক কষ্টে যে সংসার তিনি গড়ে তুলেছেন বর্তমানে তার ধারক-বাহক হচ্ছে তাঁর সন্তান। তারাই আমিন সাহেবের এ কর্মময় জীবনকে সার্থক করবে। একইভাবে, ‘সোনার তরী’ কবিতাতেও কবি মহৎকর্মের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। সেখানে কৃষকরূপী শিল্পস্রষ্টা সোনার তরীতে জায়গা না পেলেও মহাকালের পঙ্ক্তিতে তাঁর সৃষ্টিকর্ম ঠিকই স্থান পায়। অর্থাৎ আলোচ্য কবিতা এবং উদ্দীপক উভয় ক্ষেত্রে কর্মময়তার দিকটিই উঠে এসেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের আমিন সাহেবের কর্মকা-ে ‘সোনার তরী’ কবিতার কৃষকের কর্মের দিকটিই ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘সোনার তরী' কবিতায় অন্তর্ভাবনাকে তুলে ধরতে পারেনি বলেই আমি মনে করি।
➠ ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি এক গভীর জীবনদর্শনকে উন্মোচন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, মহাকাল কেবল মানুষের মহৎ সৃষ্টিশীল কর্মকেই গ্রহণ করে; ব্যক্তিমানুষকে নয়। আর তাই কালপরিক্রমায় সৃষ্টিকর্ম টিকে গেলেও মানুষকে অনিবার্যভাবে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। আলোচ্য কবিতায় কৃষক চরিত্রটির আধারে কবি এ সত্যটিকেই উন্মোচন করেছেন।
➠ উদ্দীপকের আমিন সাহেব একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি তাঁর সংসারকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি বাড়িসহ বেশকিছু অর্থ-সম্পদেরও মালিক হয়েছেন তিনি। অবসর গ্রহণের পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও আক্ষেপ নেই তার। ছেলেমেয়েরা সুখে আছে, এতেই তিনি খুশি। জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়ার পর আর কোনো চাওয়া নেই তার। আলোচ্য কবিতার বিষয়বস্তু এর থেকে অনেকটাই ভিন্ন।
➠ সোনার তরী' কবিতায় কবি বর্ষাকালীন গ্রামীণ প্রকৃতিতে এক বিপন্ন কৃষককে আশ্রয় করে কবিতার সারসত্যকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। সেখানে কৃষক সৃষ্টিশীল কবিসত্তা, তাঁর উৎপাদিত ফসল, কবির সৃষ্টিকর্ম আর মাঝি মহাকালের প্রতীক। মহাকাল কবির সৃষ্টিকর্মকে গ্রহণ করলেও তাঁকে গ্রহণ করে না। ফলে শূন্য নদীর তীরে তাঁকে পড়ে থাকতে হয় মহাকালের শূন্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য। পক্ষান্তরে, উদ্দীপকে এরূপ কোনো দর্শনের আভাস পাওয়া যায় না। সেখানে আমিন সাহেবের দীর্ঘ কর্মজীবন এবং সংসার নিয়ে তাঁর প্রাপ্তির কথা ফুটে উঠেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার অন্তর্ভাবনাকে তুলে ধরতে পারেনি।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ [দিনাজপুর বোর্ড-২০২৪]

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে,
সুন্দর এ পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে।
তোমার টাকা কড়ি সুন্দর বাড়ি সবই পড়ে রবে,
তোমার কর্মসাধন সৃজন পূজন তোমায় স্মরণ নেবে
তুমি আর থাকবে না এই জনাকীর্ণ ভবে।

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
খ. “চারদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।”- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে 'সোনার তরী' কবিতার কোন ভাবের প্রকাশ ঘটেছে? আলোচনা করো।
ঘ. “ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোট সে তরী”- ‘সোনার তরী’ কবিতার উক্ত চরণ ও উদ্দীপকের ভাবসত্য অভিন্ন।- বিশ্লেষণ করো।

-----------

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ [রাজশাহী বোর্ড-২০২৩]

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আমায় নহে গো ভালোবাস, শুধু ভালোবাস মোর গান।
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে গান হলে অবসান।
চাঁদেরে কে চায়, জোছনা সবাই যাচে গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলি মাঝে।

ক. চারিদিকে বাঁকা জল কী করছে?
খ. “যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী”- ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘সোনার তরী’ কবিতার কৃষকের সঙ্গে উদ্দীপকের বনের পাখির তুলনামূলক আলোচনা করো।
ঘ. “সোনার তরী’ কবিতার মূল বক্তব্য উদ্দীপকের শেষ চরণের মধ্যে নিহিত।”- তোমার মতামত দাও।

-----------

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩ [যশোর বোর্ড-২০২৩]

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
“আমায় নহে গো, ভালোবাস শুধু ভালোবাস মোর গান
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে গান হলে অবসান
চাঁদেরে কে চায়, জোছনা সবাই যাচে
গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলি-মাঝে।”

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
খ. “আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের গান ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘সোনার তরী’ কবিতার মূলভাব ফুটে উঠেছে – মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।

-----------

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪ [চট্টগ্রাম বোর্ড-২০২৩]

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন বাঙালি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও দানশীল ব্যক্তিত্ব। নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী হন। কিন্তু নিজে কৃচ্ছসাধন করে জনহিতকর কাজে লিপ্ত হন। তিনি শিক্ষা বিস্তারের জন্য টোল, পাঠশালা, গ্রন্থাগার, হোস্টেল, নারীশিক্ষার জন্য বিদ্যানিকেতন, ছাত্রীনিবাস এবং দরিদ্রের জন্য আশ্রম, ধর্মশালা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আজও সকলের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতায় কোন মাসের উল্লেখ রয়েছে?
খ. “চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা”- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ব্যক্তিজীবনের। আলোচনা কর। মধ্য দিয়ে ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
ঘ. “মানুষ বাঁচে কর্মের মধ্যে।”- উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।

-----------

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৫

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের খেত জলে ভরভর,
কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে।

ক. ‘গীতাঞ্জলি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন জাতীয় রচনা?
খ. ‘দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।’- উক্তিটির তাৎপর্য লিখুন।
গ. ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটির সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রযেছে? -ব্যাখ্যা করুন।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতায় বর্ষার অনিন্দ্য সুন্দর রূপটি উদ্ভাসিত হয়েছে।”- বিচার করুন।

-----------

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৬

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে চির তারুণ্যের প্রতীক। চিরায়ত বাঙালির সংস্কৃতি তার কাব্যকর্মে স্ফূর্তি লাভ করেছে। বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতাবোধের কথা লিখে তিনি বাঙালি চিত্তে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন কাল থেকে কালান্তরে। তার মহাপ্রয়াণ ঘটে ১৯৭৬ সালে। অথচ তার সৃষ্টিকর্ম এখনো বাঙালি জাতির চেতনার ফর্গুধারা। তার কবিতা ও গান এখনও বাংলার মানুষের চেতনার অফুরান উৎস। তিনি তীর সৃষ্টিশীল কর্মে আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন।

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতায় কোন ঋতুর কথা বলা হয়েছে?
খ. “যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী” কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. ‘সোনার তরী’ কবিতার জীবনদর্শন উদ্দীপকে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে?
ঘ. “মহৎ কর্মই পৃথিবীতে মানুষকে অমরত্ব দান করে।” উদ্দীপক ও ‘সোনার তরী’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।

-----------

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৭

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। কালের নিয়মে মানুষ আবর্তিত হয় রিক্তহস্তে নয়, আবার কালের প্রবাহে হারিয়ে যায় অনন্তে। কিন্তু কাল থেমে থাকে না। অনন্তকাল ধরে চলছে দিগন্তের পথে। একেবারে রিক্তহস্তে নয়, বহু কিছুর সাক্ষী হয়ে, বহু নিদর্শন নিয়ে। আর সে নিদর্শন সৃষ্টি করেছে কালের কিছু মানুষ। কাল তাঁদের ধরে রাখে নি। ধরে রেখেছে তাঁদের উজ্জ্বল কীর্তি। সে গৌরব কীর্তি নিয়ে কাল চলে মহাকালের পথে অনন্তকাল ধরে অবিরাম।

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতায় কয়খানি ছোট খেতের কথা বলা হয়েছে?
খ. “রাশি রাশি ভারা ভারা, ধান কাটা হল সারা”- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তুর সাথে ‘সোনার তরী’ কবিতার সাদৃশ্য নিরূপণ করো।

---------------

‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৮

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আবিষ্কার করলেন তাঁর বিখ্যাত মহাকর্ষ সূত্র। নিউটন মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭২৭খ্রিষ্টাব্দে, কিন্তু আজও তাঁর মহাকর্ষ সূত্র বিজ্ঞান সাধনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

ক. ‘তরুছায়ামসী-মাখা/গ্রামখানি মেঘে ঢাকা’ কখন?
খ. ‘ঢেউগুলো নিরূপায়’ কেন?
গ. উদ্দীপকের আপেল এবং ‘সোনার তরী’ কবিতার ধান-এর পারস্পরিকতা লেখো।
ঘ. “উদ্দীপকের মূলভাবটি ‘সোনার তরী’ কবিতায় কাব্যিক রূপ লাভ করেছে”-আলোচনা করো।


‘সোনার তরী’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৯

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অর্থনীতি বিষয়ে গবেষনার জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। তার গবেষনালব্ধ সূত্র হয়তো একদিন পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। সুদূর ভবিষ্যতে দারিদ্র ও দুর্ভিক্ষের মতো সংকট মোচনে এর প্রয়োগও হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি অমর্ত্য সেন শত বছর ধরে বেচেঁ থাকবেন না।

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতায় উল্লিখিত ‘থরে বিথরে’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি।’- কে, কেন পড়ে রইল?
গ. অমর্ত্য সেনের গবেষনালব্ধ ফল ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন বিষয়টিতে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের অমর্ত্য সেন ‘সোনার তরী’ কবিতার কৃষকেরই প্রতিচ্ছবি- মূল্যায়ন করো।


তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url