ঋতু বর্ণন : আলাওল
![]() |
ঋতু বর্ণন |
ঋতু বর্ণন
আলাওল
দুই পক্ষ আগে পাছে মধ্যে সুমাধব॥
মলয়া সমীর হৈলা কামের পদাতি।
মুকুলিত কৈল তবে বৃক্ষ বনস্পতি॥
কুসুমিত কিংশুক সঘন বন লাল।
পুষ্পিত সুরঙ্গ মল্লি লবঙ্গ গুলাল॥
ভ্রমরের ঝঙ্কার কোকিল কলরব।
শুনিতে যুবক মনে জাগে অনুভব॥
নানা পুষ্প মালা গলে বড় হরষিত।
বিচিত্র বসন অঙ্গে চন্দন চর্চিত॥
রৌদ্র ত্রাসে রহে ছায়া চরণে সরণ॥
চন্দন চম্পক মাল্য মলয়া পবন।
সতত দম্পতি সঙ্গে ব্যাপিত মদন॥
নির্ভয়ে বরিষে জল চৌদিকে পূরিত॥
ঘোর শব্দে কৈলাসে মল্লার রাগ গাএ।
দাদুরী শিখিনী রব অতি মন ভাএ॥
কীটকুল রব পুনি ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে।
শুনিতে যুবক চিত্ত হরষিত ডরে॥
আইল শারদ ঋতু নির্মল আকাশে।
দোলাএ চামর কেশ কুসুম বিকাশে॥
নবীন খঞ্জন দেখি বড়হি কৌতুক।
উপজিত যামিনী দম্পতি মনে সুখ॥
প্রবেশে হেমন্ত ঋতু শীত অতি যায়।
পুষ্প তুল্য তাম্বুল অধিক সুখ হয়॥
শীতের তরাসে রবি তুরিতে লুকাএ।
অতি দীর্ঘ সুখ নিশি পলকে পোহাএ॥
পুষ্প শয্যা ভেদ ভুলি বিচিত্র বসন।
উরে উরে এক হৈলে শীত নিবারণ॥
কাফুর কস্তুরী চুয়া যাবক সৌরভ।
দম্পতির চিত্তেত চেতন অনুভব॥
উৎস নির্দেশ : |
---|
আলাওলের ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতাটি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘পদ্মাবতী’র ঋতু বর্ণন খণ্ড থেকে সংক্ষেপিত আকারে সংকলিত। |
কবিতার পাঠ বিশ্লেষণ : |
---|
প্রথমে বসন্ত ঋতু নবীন পল্লব। কবি প্রথমে বসন্ত ঋতুর বর্ণনা দিয়েছেন। বসন্ত ঋতুতে গাছে নতুন পাতার আগমন ঘটে।গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মাঝে উত্তম বসন্তকাল। রয়েছে। |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ নবীন- নতুন।
➠ নিদাঘ- গ্রীষ্মকাল। উত্তাপ।
➠ গরজিত- গম্ভীর শব্দে/ধ্বনিতে ধ্বনিত। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
প্রকৃতির বিচিত্র রূপ অভিব্যক্ত হয় আবহাওয়া ও ষড়ঋতুর প্রভাবে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে মানুষ হয়েছে মুগ্ধ। মুগ্ধ হয়েছেন সংবেদনশীল কবিগণও। ঋতু বর্ণনা মধ্যযুগের কাব্যের এক স্বাভাবিক রীতি। কবি আলাওল এই ঋতু বর্ণনায় প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের সাথে মানব মনের সম্পর্ক ও প্রভাব তুলে ধরেছেন। বসন্তের নবীন পত্রপুষ্প, মলয় সমীর, ভ্রমর-গুঞ্জন ও কোকিলের কুহুতান; গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তপনের রৌদ্র ত্রাস ও ছায়ার গুরুত্ব; বর্ষার মেঘ গর্জন, অবিরল বৃষ্টিজলে স্নাত প্রকৃতি, একটানা দাদুরী শিখীনি রব; শরতের নির্মল আকাশ, ফুলের চামর দোলা, খঞ্জনার নাচ; শরৎ বিদায়ে হেমন্তে পুষ্পতুল্য তাম্বুলের সুখ এবং শীতের ত্রাসে ত্বরিত সূর্য ডুবে যাওয়া, রজনীতে সুখী দম্পতির চিত্তসুখ ইত্যাদি চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে কবিতাটিতে। ষড়ঋতুর বর্ণনার ভেতর দিয়ে কবি বাংলার প্রকৃতির রূপ-মাধুরী তুলে ধরেছেন। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য বাংলার নিসর্গ-রূপকে যে সমৃদ্ধ করেছে তা এ কাব্যাংশ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। |
কবি পরিচিতি : |
---|
আলাওল সতেরো শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। আনুমানিক ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে
ফতেহাবাদ পরগনার
জালালপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়সে জলপথে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময়ে
তাঁর পিতা ও তিনি পর্তুগিজ জলদস্যুদের কবলে পড়েন। এই আক্রমণে তাঁর পিতা
নিহত হন। তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে আরাকানে উপস্থিত হন। সেখানে প্রথমে আরাকান
রাজের সেনাদলে কাজ পান তিনি; ক্রমে রাজদরবারের প্রধান অমাত্য মাগন ঠাকুরের
কৃপাদৃষ্টি লাভ করেন এবং ভুক্ত হন। তাঁরই পৃষ্ঠপোষকয় এবং
কাব্যপ্রতিভা ও বিদ্যাবুদ্ধির গুণে আলাওল ‘পদ্মাবতী’ কাব্য রচনা করেন।
রাজসভার শিক্ষিত ও পদস্থ ব্যক্তিদের সাহচর্যে থেকে তিনি কাব্যচর্চা করেছেন।
তাঁর রচনায় নাগরিক চেতনা ও রুচির ছাপ সুস্পষ্ট। সংস্কৃত, আরবি, ফারসিসহ
বিভিন্ন ভাষায় ব্যুৎপন্ন আলাওল অসামান্য পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।
শিল্পকুশলী এই কবির অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে- কাব্য:
‘সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামাল’, ‘হপ্ত পয়কর’, ‘সিকান্দরনামা’; নীতিকবিতা
‘তোহফা’; সঙ্গীতবিষয়ক কাব্য: ‘রাগতালনামা’। আলাওল ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে
ক. মল্লার কী? |
----------- |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |