বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন
বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন

বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১। যশের জন্য লিখিবেন না। তাহা হইলে যশও হইবে না, লেখাও ভালো হইবে না। লেখা ভালো হইলে যশ আপনি আসিবে।

২। টাকার জন্য লিখিবেন না। ইউরোপে এখন অনেক লোক টাকার জন্যই লেখে এবং টাকাও পায়; লেখাও ভালো হয়। কিন্তু আমাদের এখনও সে দিন হয় নাই। এখন অর্থের উদ্দেশ্যে লিখিতে গেলে, লোকরঞ্জন-প্রবৃত্তি প্রবল হইয়া পড়ে। এখন আমাদিগের দেশের সাধারণ পাঠকের রুচি ও শিক্ষা বিবেচনা করিয়া লোকরঞ্জন করিতে গেলে রচনা বিকৃতঅনিষ্টকর হইয়া উঠে।

৩। যদি মনে এমন বুঝিতে পারেন যে, লিখিয়া দেশের বা মনুষ্যজাতির কিছু মঙ্গল সাধন করিতে পারেন অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি করিতে পারেন, তবে অবশ্য লিখিবেন। যাঁহারা অন্য উদ্দেশ্যে লেখেন, তাঁহাদিগকে যাত্রাওয়ালা প্রভৃতি নীচ ব্যবসায়ীদিগের সঙ্গে গণ্য করা যাইতে পারে।

৪। যাহা অসত্য, ধর্মবিরুদ্ধ; পরনিন্দা বা পরপীড়ন বা স্বার্থসাধন যাহার উদ্দেশ্য, সে সকল প্রবন্ধ কখনও হিতকর হইতে পারে না, সুতরাং তাহা একেবারে পরিহার্য। সত্য ও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য। অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী-ধারণ মহাপাপ।

৫। যাহা লিখিবেন, তাহা হঠাৎ ছাপাইবেন না। কিছু কাল ফেলিয়া রাখিবেন। কিছু কাল পরে উহা সংশোধন করিবেন। তাহা হইলে দেখিবেন, প্রবন্ধে অনেক দোষ আছে। কাব্য নাটক উপন্যাস দুই এক বৎসর ফেলিয়া রাখিয়া তারপর সংশোধন করিলে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করে। যাঁহারা সাময়িক সাহিত্যের কার্যে ব্রতী, তাঁহাদের পক্ষে এই নিয়ম রক্ষাটি ঘটিয়া উঠে না। এজন্য সাময়িক সাহিত্য, লেখকের পক্ষে অবনতিকর

৬। যে বিষয়ে যাহার অধিকার নাই, সে বিষয়ে তাহার হস্তক্ষেপ অকর্তব্য। এটি সোজা কথা কিন্তু সাময়িক সাহিত্যতে এ নিয়মটি রক্ষিত হয় না।

৭। বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না। বিদ্যা থাকিলে, তাহা আপনিই প্রকাশ পায়, চেষ্টা করিতে হয় না। বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা পাঠকের অতিশয় বিরক্তিকর এবং রচনার পরিপাট্যের বিশেষ হানিজনক। এখনকার প্রবন্ধে ইংরাজি, সংস্কৃত, ফরাসি, জার্মান কোটেশন বড় বেশি দেখিতে পাই। যে ভাষা আপনি জানেন না, পরের গ্রন্থের সাহায্যে সে ভাষা হইতে কদাচ উদ্ধৃত করিবেন না।

৮। অলংকার-প্রয়োগ বা রসিকতার জন্য চেষ্টিত হইবেন না। স্থানে স্থানে অলংকার বা ব্যঙ্গের (পরিহাস, বিদ্রুপ) প্রয়োজন হয় বটে; লেখকের ভাণ্ডারে এ সামগ্রী থাকিলে, প্রয়োজন মতে আপনিই আসিয়া পৌঁছিবে- ভাণ্ডারে না থাকিলে মাথা কুটিলেও আসিবে না। অসময়ে বা শূন্য ভাণ্ডারে অলংকার প্রয়োগের বা রসিকতার চেষ্টার মতো কদর্য আর কিছুই নাই।

৯। যে স্থানে অলংকার বা ব্যঙ্গ বড় সুন্দর বলিয়া বোধ হইবে, সেই স্থানটি কাটিয়া দিবে, এটি প্রাচীন বিধি। আমি সে কথা বলি না। কিন্তু আমার পরামর্শ এই যে, সে স্থানটি বন্ধুবর্গকে পুনঃ পুনঃ পড়িয়া শুনাইবে। যদি ভালো না হইয়া থাকে, তবে দুই চারি বার পড়িলে লেখকের নিজেরই আর উহা ভালো লাগিবে না-বন্ধুবর্গের নিকট পড়িতে লজ্জা করিবে। তখন উহা কাটিয়া দিবে।

১০। সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার সরলতা। যিনি সোজা কথায় আপনার মনের ভাব সহজে পাঠককে বুঝাইতে পারেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ লেখক। কেন না লেখার উদ্দেশ্য পাঠককে বুঝানো।

১১। কাহারও অনুকরণ করিও না। অনুকরণে দোষগুলি অনুকৃত হয়, গুণগুলি হয় না। অমুক ইংরাজি বা সংস্কৃত বা বাঙ্গালা লেখক এইরূপ লিখিয়াছেন, আমিও এরূপ লিখিব, এ কথা কদাপি মনে স্থান দিও না।

১২। যে কথার প্রমাণ দিতে পারিবে না, তাহা লিখিও না। প্রমাণগুলি সংযুক্ত করা সকল সময়ে প্রয়োজন হয় না, কিন্তু হাতে থাকা চাই।

বাঙ্গালা সাহিত্য, বাঙ্গালার ভরসা। এই নিয়মগুলি বাঙ্গালার লেখকদিগের দ্বারা রক্ষিত হইলে, বাঙ্গালা সাহিত্যের উন্নতি বেগে হইতে থাকিবে।

উৎস নির্দেশ :
“বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন” রচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘প্রচার’ পত্রিকায়, ১৮৮৫ সালে; পরে এটি তাঁর ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ (দ্বিতীয় ভাগ) নামক গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ যশ- সুখ্যাতি, সুনাম, কীর্তি।
➠ লোকরঞ্জন- জনসাধারণের মনোরঞ্জন বা সন্তোষবিধান।
➠ ধর্মবিরুদ্ধ- নীতি-নৈতিকতার বিরোধী।
➠ কোটেশন- উদ্ধৃতি। অন্যের লেখা থেকে বক্তব্য উদ্ধার করে অপর লেখায় ব্যবহার।
➠ অলংকার- ভূষণ, প্রসাধন, শোভা। ভাষার মাধুর্য ও উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে এমন গুণ।
➠ ব্যঙ্গ- পরিহাস, বিদ্রুপ।
➠ কদাপি- কখনও, কোনোকালে।
➠ বাঙ্গালা- বাংলা। উনিশ শতকে বঙ্কিমচন্দ্রের কালে ‘বাংলা’কে ‘বাঙ্গালা’ বলে লেখা হতো। শব্দটির পরিবর্তন হয়েছে এভাবে: বাঙ্গালা>বাঙলা>বাংলা।

পাঠ-পরিচিতি :
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উনিশ শতকীয় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে পরিচিত। “বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন” রচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘প্রচার’ পত্রিকায়, ১৮৮৫ সালে; পরে এটি তাঁর ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ নামক গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। সাধু রীতিতে লেখা এই প্রবন্ধটি আকারে ছোট হলেও চিন্তার মৌলিকত্বে অসাধারণ। বক্তব্যের তাৎপর্য বিচার করলে প্রবন্ধটির রয়েছে সর্বকালীন বৈশ্বিক আবেদন। নতুন লেখকদের প্রতি তিনি যে পরামর্শ এখানে উপস্থাপন করেছেন তার প্রতিটি বক্তব্যই পালনযোগ্য। খ্যাতি বা অর্থের উদ্দেশ্যে লেখা নয়; লিখতে হবে মানুষের কল্যাণ সাধন কিংবা সৌন্দর্য সৃষ্টির অভিপ্রায়ে। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, অসত্য, নীতি-নৈতিকতা বিরোধী কিংবা পরনিন্দার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা স্বার্থতাড়িত লেখা পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। তিনি বলতে চান, নতুন লেখকরা কিছু লিখে তাৎক্ষণিকভাবে না ছাপিয়ে কিছুদিন অপেক্ষা করে পুনরায় পাঠ করলে লেখাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। যার যে বিষয়ে অধিকার নেই সে বিষয়ে লেখার চেষ্টা করা যেমন অনুচিত তেমনি লেখায় বিদ্যা জাহির করার প্রবণতাকেও তিনি নিন্দনীয় বলে মনে করেছেন। অনুকরণবৃত্তিকেও দূষণীয় বলেছেন। অনাবশ্যকভাবে লেখার সৌষ্ঠব বৃদ্ধি বা পরিহাস করার চেষ্টাও তাঁর কাছে কাম্য নয়। সারল্যকেই তিনি সকল অলংকারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অলংকার বলে মনে করেছেন। সর্বোপরি বস্তুনিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এভাবে এই ছোট লেখাটিতে তিনি লেখকের আদর্শ কী হওয়া উচিত তা অত্যাবশ্যকীয় শব্দ প্রয়োগে উপস্থাপন করেছেন। নবীন লেখকরা বঙ্কিমচন্দ্রের পরামর্শ মান্য করলে লেখক ও পাঠক সমাজ নিশ্চিতভাবে উপকৃত হবেন; আমাদের মননশীল ও সৃজনশীল জগৎ সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হবে।

লেখক পরিচিতি :
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জুন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষায় প্রথম শিল্পসম্মত উপন্যাস রচনার কৃতিত্ব তাঁরই। তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ডেপুটি কালেক্টর। ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম স্নাতকদের মধ্যে তিনি একজন। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। এ চাকরিসূত্রে খুলনার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করে তিনি নীলকরদের অত্যাচার দমন করেছিলেন। দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান; যোগ্য বিচারক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। বাংলা সাহিত্যচর্চায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিলেন তিনি। উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনার বাইরে ‘বঙ্গদর্শন’ (১৮৭২) পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ তাঁর অন্যতম কীর্তি। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে ‘সম্বাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরু। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থসংখ্যা ৩৪। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী(১৮৬৫)’।
তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো: ‘কপালকুণ্ডলা(১৮৬৬)’, ‘মৃণালিনী(১৮৬৯)’, ‘বিষবৃক্ষ(১৮৭৩)’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’(১৮৭৮), ‘চন্দ্রশেখর(১৮৭৫)’, ‘আনন্দমঠ(১৮৮২)’, ‘দেবী চৌধুরাণী(১৮৮৪)’, ‘রাজসিংহ(১৮৮২)’, ‘সীতারাম(১৮৮৭)’। ‘Rajmohons Wife’ নামে একটি ইংরেজি উপন্যাসও তিনি রচনা করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, ভাষা ও সমাজবিষয়ক অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। ‘লোকরহস্য(১৮৭৪)’, ‘বিজ্ঞানরহস্য(১৮৭৫)’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর(১৮৭৫)’, ‘সাম্য(১৮৭৯)’, ‘কৃষ্ণচরিত্র(১৮৮৬)’,‘বিবিধ প্রবন্ধ’ ইত্যাদি তাঁর গদ্যগ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘সাহিত্যসম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত হন।
বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের অবক্ষয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, হতাশা ও হাহাকারে উপমহাদেশ ছিল নানা অভিঘাতে বিপর্যস্ত ও রূপান্তরিত। এমনই এক পরিবেশে কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) তাঁর ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতায় বিনির্মাণ করলেন শাশ্বত কল্যাণ ও সাম্যবাদের মহাকাব্যিক এক আশাবাদী জগৎ। তিনি কলম তুলে নিলেন শোষণ-বঞ্চনাহীন, শ্রেণিবৈষম্যহীন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক এক জগৎ সৃষ্টি করতে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সাম্যের গান গাইলেন। এক সময় তিনি হয়ে উঠলেন ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার আদায়ের কলমসৈনিক। শোষণ, বঞ্চনা ও সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহ আজও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।

ক. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে সাহিত্যের উদ্দেশ্য কী?
খ. অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী-ধারণ মহাপাপ-বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য সাধনা ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ প্রবন্ধের কোন বৈশিষ্ট্যটির প্রতিফলন ঘটায় তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলার নতুন লেখকদের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নিবেদন উদ্দীপকে যথার্থভাবে প্রকাশিত হয়েছে কি? উদ্দীপক ও প্রবন্ধের আলোকে তোমার মতামত দাও।

-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
-------------
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
-------------
-----------

তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. বঙ্কিম রচনাবলী-২ (প্রবন্ধ): দে’জ পাবলিশিং ।। কলকাতা, অক্টোবর ২০১৮।
৩. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url