বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কবির
২৮ নভে, ২০২৪
বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন
বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
১।
যশের জন্য
লিখিবেন না। তাহা হইলে যশও হইবে না, লেখাও ভালো হইবে না। লেখা ভালো হইলে যশ আপনি
আসিবে।
২। টাকার জন্য লিখিবেন না। ইউরোপে এখন অনেক লোক টাকার জন্যই লেখে এবং টাকাও পায়;
লেখাও ভালো হয়। কিন্তু আমাদের এখনও সে দিন হয় নাই। এখন অর্থের উদ্দেশ্যে লিখিতে
গেলে,
লোকরঞ্জন-প্রবৃত্তিপ্রবল হইয়া পড়ে।
এখন আমাদিগের দেশের সাধারণ পাঠকের রুচি ও শিক্ষা বিবেচনা করিয়া লোকরঞ্জন করিতে
গেলে রচনা বিকৃত ও
অনিষ্টকর হইয়া উঠে।
৩। যদি মনে এমন বুঝিতে পারেন যে, লিখিয়া দেশের বা মনুষ্যজাতির কিছু মঙ্গল সাধন
করিতে পারেন অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি করিতে পারেন, তবে অবশ্য লিখিবেন। যাঁহারা অন্য
উদ্দেশ্যে লেখেন, তাঁহাদিগকে যাত্রাওয়ালা প্রভৃতি
নীচ
ব্যবসায়ীদিগের সঙ্গে গণ্য করা যাইতে পারে।
৪। যাহা অসত্য,
ধর্মবিরুদ্ধ; পরনিন্দা বা
পরপীড়ন
বা স্বার্থসাধন যাহার উদ্দেশ্য, সে সকল প্রবন্ধ কখনও হিতকর হইতে পারে না, সুতরাং
তাহা একেবারে পরিহার্য। সত্য ও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য। অন্য উদ্দেশ্যে
লেখনী-ধারণ মহাপাপ।
৫। যাহা লিখিবেন, তাহা হঠাৎ ছাপাইবেন না। কিছু কাল ফেলিয়া রাখিবেন। কিছু কাল পরে
উহা সংশোধন করিবেন। তাহা হইলে দেখিবেন, প্রবন্ধে অনেক দোষ আছে। কাব্য নাটক
উপন্যাস দুই এক বৎসর ফেলিয়া রাখিয়া তারপর সংশোধন করিলে বিশেষ
উৎকর্ষ লাভ করে।
যাঁহারা সাময়িক সাহিত্যের কার্যে ব্রতী, তাঁহাদের পক্ষে এই নিয়ম রক্ষাটি ঘটিয়া
উঠে না। এজন্য সাময়িক সাহিত্য, লেখকের পক্ষে অবনতিকর।
৬। যে বিষয়ে যাহার অধিকার নাই, সে বিষয়ে তাহার হস্তক্ষেপ অকর্তব্য। এটি সোজা কথা
কিন্তু সাময়িক সাহিত্যতে এ নিয়মটি রক্ষিত হয় না।
৭। বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না। বিদ্যা থাকিলে, তাহা আপনিই প্রকাশ পায়,
চেষ্টা করিতে হয় না। বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা পাঠকের অতিশয় বিরক্তিকর এবং রচনার
পরিপাট্যের
বিশেষ হানিজনক। এখনকার প্রবন্ধে ইংরাজি, সংস্কৃত, ফরাসি, জার্মান
কোটেশন
বড় বেশি দেখিতে পাই। যে ভাষা আপনি জানেন না, পরের গ্রন্থের সাহায্যে সে ভাষা হইতে
কদাচ উদ্ধৃত করিবেন না।
৮।
অলংকার-প্রয়োগ বা রসিকতার জন্য চেষ্টিত হইবেন না। স্থানে স্থানে অলংকার বা ব্যঙ্গের
(পরিহাস, বিদ্রুপ) প্রয়োজন হয় বটে; লেখকের ভাণ্ডারে এ সামগ্রী থাকিলে, প্রয়োজন
মতে আপনিই আসিয়া পৌঁছিবে-
ভাণ্ডারে
না থাকিলে মাথা কুটিলেও আসিবে না। অসময়ে বা শূন্য ভাণ্ডারে অলংকার প্রয়োগের বা
রসিকতার চেষ্টার মতো
কদর্য আর
কিছুই নাই।
৯। যে স্থানে অলংকার বা ব্যঙ্গ বড় সুন্দর বলিয়া বোধ হইবে, সেই স্থানটি কাটিয়া
দিবে, এটি প্রাচীনবিধি। আমি সে
কথা বলি না। কিন্তু আমার পরামর্শ এই যে, সে স্থানটি বন্ধুবর্গকে পুনঃ পুনঃ পড়িয়া
শুনাইবে। যদি ভালো না হইয়া থাকে, তবে দুই চারি বার পড়িলে লেখকের নিজেরই আর উহা
ভালো লাগিবে না-বন্ধুবর্গের নিকট পড়িতে লজ্জা করিবে। তখন উহা কাটিয়া দিবে।
১০। সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার সরলতা। যিনি সোজা কথায় আপনার মনের ভাব সহজে
পাঠককে বুঝাইতে পারেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ লেখক। কেন না লেখার উদ্দেশ্য পাঠককে বুঝানো।
১১। কাহারও অনুকরণ করিও না। অনুকরণে দোষগুলি অনুকৃত হয়, গুণগুলি হয় না। অমুক
ইংরাজি বা সংস্কৃত বা বাঙ্গালা লেখক এইরূপ লিখিয়াছেন, আমিও এরূপ লিখিব, এ কথা
কদাপি মনে
স্থান দিও না।
১২। যে কথার
প্রমাণ দিতে
পারিবে না, তাহা লিখিও না। প্রমাণগুলি সংযুক্ত করা সকল সময়ে প্রয়োজন হয় না,
কিন্তু হাতে থাকা চাই।
বাঙ্গালা সাহিত্য,
বাঙ্গালার
ভরসা। এই নিয়মগুলি বাঙ্গালার লেখকদিগের দ্বারা রক্ষিত হইলে, বাঙ্গালা সাহিত্যের
উন্নতি বেগে হইতে থাকিবে।
উৎস নির্দেশ :
“বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন” রচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়
‘প্রচার’ পত্রিকায়, ১৮৮৫ সালে; পরে এটি তাঁর ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ (দ্বিতীয় ভাগ) নামক গ্রন্থের
অন্তর্ভুক্ত হয়।
শব্দার্থ ও টীকা :
➠ যশ- সুখ্যাতি, সুনাম, কীর্তি।
➠ লোকরঞ্জন- জনসাধারণের মনোরঞ্জন বা সন্তোষবিধান।
➠ ধর্মবিরুদ্ধ- নীতি-নৈতিকতার বিরোধী।
➠ কোটেশন- উদ্ধৃতি। অন্যের লেখা থেকে বক্তব্য উদ্ধার করে অপর লেখায়
ব্যবহার।
➠ অলংকার- ভূষণ, প্রসাধন, শোভা। ভাষার মাধুর্য ও উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে এমন
গুণ।
➠ ব্যঙ্গ- পরিহাস, বিদ্রুপ।
➠ কদাপি- কখনও, কোনোকালে।
➠ বাঙ্গালা- বাংলা। উনিশ শতকে বঙ্কিমচন্দ্রের কালে ‘বাংলা’কে ‘বাঙ্গালা’
বলে লেখা হতো। শব্দটির পরিবর্তন হয়েছে এভাবে:
বাঙ্গালা>বাঙলা>বাংলা।
পাঠ-পরিচিতি :
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উনিশ শতকীয় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে
পরিচিত। “বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন” রচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়
‘প্রচার’ পত্রিকায়, ১৮৮৫ সালে; পরে এটি তাঁর ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ নামক গ্রন্থের
অন্তর্ভুক্ত হয়। সাধু রীতিতে লেখা এই প্রবন্ধটি আকারে ছোট হলেও চিন্তার
মৌলিকত্বে অসাধারণ। বক্তব্যের তাৎপর্য বিচার করলে প্রবন্ধটির রয়েছে
সর্বকালীন বৈশ্বিক আবেদন। নতুন লেখকদের প্রতি তিনি যে পরামর্শ এখানে
উপস্থাপন করেছেন তার প্রতিটি বক্তব্যই পালনযোগ্য। খ্যাতি বা অর্থের
উদ্দেশ্যে লেখা নয়; লিখতে হবে মানুষের কল্যাণ সাধন কিংবা সৌন্দর্য সৃষ্টির
অভিপ্রায়ে। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, অসত্য, নীতি-নৈতিকতা বিরোধী কিংবা
পরনিন্দার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা স্বার্থতাড়িত লেখা পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।
তিনি বলতে চান, নতুন লেখকরা কিছু লিখে তাৎক্ষণিকভাবে না ছাপিয়ে কিছুদিন
অপেক্ষা করে পুনরায় পাঠ করলে লেখাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। যার যে বিষয়ে অধিকার
নেই সে বিষয়ে লেখার চেষ্টা করা যেমন অনুচিত তেমনি লেখায় বিদ্যা জাহির করার
প্রবণতাকেও তিনি নিন্দনীয় বলে মনে করেছেন। অনুকরণবৃত্তিকেও দূষণীয় বলেছেন।
অনাবশ্যকভাবে লেখার সৌষ্ঠব বৃদ্ধি বা পরিহাস করার চেষ্টাও তাঁর কাছে কাম্য
নয়। সারল্যকেই তিনি সকল অলংকারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অলংকার বলে মনে করেছেন।
সর্বোপরি বস্তুনিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এভাবে এই ছোট লেখাটিতে তিনি
লেখকের আদর্শ কী হওয়া উচিত তা অত্যাবশ্যকীয় শব্দ প্রয়োগে উপস্থাপন করেছেন।
নবীন লেখকরা বঙ্কিমচন্দ্রের পরামর্শ মান্য করলে লেখক ও পাঠক সমাজ
নিশ্চিতভাবে উপকৃত হবেন; আমাদের মননশীল ও সৃজনশীল জগৎ সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর
হবে।
লেখক পরিচিতি :
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জুন পশ্চিমবঙ্গের
চব্বিশ পরগনার কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষায় প্রথম
শিল্পসম্মত উপন্যাস রচনার কৃতিত্ব তাঁরই। তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ডেপুটি কালেক্টর। ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম স্নাতকদের মধ্যে তিনি
একজন। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। এ চাকরিসূত্রে খুলনার
ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করে তিনি নীলকরদের অত্যাচার দমন করেছিলেন।
দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান; যোগ্য বিচারক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল।
বাংলা সাহিত্যচর্চায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিলেন তিনি। উপন্যাস ও
প্রবন্ধ রচনার বাইরে ‘বঙ্গদর্শন’ (১৮৭২) পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ তাঁর
অন্যতম কীর্তি। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে ‘সম্বাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় কবিতা
প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরু। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থসংখ্যা
৩৪। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী(১৮৬৫)’।
তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো: ‘কপালকুণ্ডলা(১৮৬৬)’,
‘মৃণালিনী(১৮৬৯)’, ‘বিষবৃক্ষ(১৮৭৩)’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’(১৮৭৮),
‘চন্দ্রশেখর(১৮৭৫)’, ‘আনন্দমঠ(১৮৮২)’, ‘দেবী চৌধুরাণী(১৮৮৪)’,
‘রাজসিংহ(১৮৮২)’, ‘সীতারাম(১৮৮৭)’।
‘Rajmohons Wife’
নামে একটি ইংরেজি উপন্যাসও তিনি রচনা করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র ধর্ম, দর্শন,
সাহিত্য, ভাষা ও সমাজবিষয়ক অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। ‘লোকরহস্য(১৮৭৪)’,
‘বিজ্ঞানরহস্য(১৮৭৫)’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর(১৮৭৫)’, ‘সাম্য(১৮৭৯)’,
‘কৃষ্ণচরিত্র(১৮৮৬)’,‘বিবিধ প্রবন্ধ’
ইত্যাদি তাঁর
গদ্যগ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘সাহিত্যসম্রাট’ উপাধিতে
ভূষিত হন।
বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন
-এর মধ্যে!
যা
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১.‘সত্য ও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য’- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্যে মানবকল্যাণ ও সৌন্দর্য্য সৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রবন্ধকার প্রশ্নোক্ত বলেছেন।
সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য অত্যন্ত মহৎ। সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে লেখকের কেবল সৌন্দর্য্য সৃষ্টি অথবা মানবমঙ্গলের কথাই বিবেচনায় রাখা উচিত। মূলত এ দুটিই জীবনের প্রকৃত সত্য। ধর্মের মর্মমূলেও রয়েছে এ দুয়ের উপস্থিতি। সাহিত্যের উদ্দেশ্য এ কারণেই সত্য ও ধর্ম ব্যতীত অন্য কিছু নয়।
২. বঙ্কিমচন্দ্র যশের জন্য লিখতে বারণ করেছেন কেন?
উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, যশ বা খ্যাতি অর্জন একজন লেখকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
কেননা, কোনো কিছু পাওয়ার আশা করে সুসাহিত্য হয় না। সাহিত্যের সাধনা করতে হয় নিষ্কাম মন নিয়ে। এর ব্যত্যয় ঘটলে লেখার মানে প্রভাব পড়ে। আর লেখা ভালো না হলে যশ অর্জনের পথও বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে লেখার মান উৎকৃষ্ট হলে যশ আপনা থেকেই আসে। এ কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যশের জন্য লিখতে বারণ করেছেন।
৩. বঙ্কিমচন্দ্র নবীন লেখকদের টাকার জন্য লিখতে বারণ করেছেন কেন?
উত্তর: টাকার জন্য লিখতে গেলে লেখার মানের সাথে আপোষ করতে হয় বলে বঙ্কিমচন্দ্র নবীন লেখকদের টাকার জন্য লিখতে বারণ করেছেন।
লেখার সময় লেখকের মন হতে হয় স্বচ্ছ ও নির্মল। কিন্তু কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে লিখতে গেলে লেখার মানে বিচ্যুতি আসাটাই স্বাভাবিক। টাকার জন্য লিখতে গেলে লেখকের মাঝে লোকরঞ্জন-প্রবৃত্তি প্রবল হয়ে রচনা বিকৃত ও অনিষ্টকর হয়ে পড়ে। এদেশের সাধারণ পাঠক শিক্ষাদীক্ষা ও রুচিশীলতার প্রশ্নে অনেকটাই পশ্চাৎপদ। তাই রচনায় তাদের মনোরঞ্জন করতে গেলে রচনা বিকৃত ও অনিষ্টকর হয়ে পড়ে। একারণেই বঙ্কিমচন্দ্র নবীন লেখকদের টাকার জন্য লিখতে বারণ করেছেন।
৪. ‘সাময়িক সাহিত্য, লেখকের পক্ষে অবনতিকর।’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সাময়িক সাহিত্য লেখকের লেখার মানোন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ বলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
সাময়িক সাহিত্য স্বল্পকালীন চাহিদার জন্য সৃষ্টি। এ লেখাগুলো অল্প সময়ের মধ্যে লিখে খুব দ্রুতই প্রকাশ করতে হয়। এ কারণে লেখক লেখাগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়নের সুযোগ পান না। উৎকৃষ্ট মানের রচনা সৃষ্টির জন্য রচনা লেখার পর পর্যাপ্ত সময় নিয়ে তা সংশোধন করা প্রয়োজন। সাময়িক সাহিত্যে ব্রতী লেখকগণ এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এ কারণেই সাময়িক সাহিত্য লেখকদের পক্ষে অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৫. কাব্য, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি দু এক বছর ফেলে রেখে সংশোধন করা উচিত কেন?
উত্তর: কাব্য, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি দু এক বছর ফেলে রেখে সংশোধন করলে এগুলোর উৎকর্ষ বৃদ্ধি পায়।
কাব্য, নাটক ও উপন্যাসে লেখকের মনের অনুভূতি, জীবনের অভিজ্ঞতা, চারপাশের জীবন, প্রকৃতি ইত্যাদি নানা বিষয় স্থান পায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটে, অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়। তাই এ সকল সাহিত্য রচনার পর দীর্ঘসময় ফেলে রেখে সংশোধন করলে তা উন্নততর সৃষ্টিকর্মে পরিণত হয়। তাছাড়া লেখকের অনেক ভুলত্রুটিও এ সময়ের মধ্যে ধরা পড়ে। এ কারণেই কাব্য, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি দু এক বছর ফেলে রেখে সংশোধন করা উচিত।
৬. ‘ভাণ্ডারে না থাকিলে মাথা ফুটিলেও আসিবে না’- লেখক কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অলংকার ও ব্যঙ্গ প্রয়োগে লেখকের স্বাভাবিক দক্ষতার বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন।
রচনার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে লেখকগণ অলংকার, ব্যঙ্গ ইত্যাদি প্রয়োগ করে থাকেন। এ দুটির ব্যবহারে লেখকের মুনশিয়ানার প্রকাশ ঘটে। যার মাঝে এ সম্পর্কিত সূক্ষ্মা জ্ঞান আছে তার লেখায় স্বাভাবিকভাবেই এ দুটি বিষয় সুন্দরভাবে এসে যায়। অন্যদিকে অলংকার বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে অনেক ভেবেও এগুলোর সঠিক প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। আবার এগুলো ইচ্ছেম কা জোরপূর্বক যেখানে সেখানে বসালে রচনার শিল্পগুণ নষ্ট হয়। এ কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
৭. ‘অনুকরণে দোষগুলি অনুকৃত হয়, গুণগুলি হয় না।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অনুকরণপ্রিয়তার নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
অনেক নবীন লেখকই প্রতিষ্ঠিত লেখকদের অনুকরণে সাহিত্য রচনা করতে চায়। এর ফলে তারা প্রতিষ্ঠিত লেখকের রচনার দোষ-ত্রুটিগুলো সহজে আয়ত্ত করে। গুণগুলো উপেক্ষিতই রয়ে যায়। অনুকরণবৃত্তির এটিই বৈশিষ্ট্য। অনুকরণ করতে গেলে অন্যের ত্রুটিগুলোই বেশি আকর্ষণ করে। বঙ্কিমচন্দ্রে অনুকরণবৃত্তির এ সমস্যাটি নির্দেশ করেছেন প্রশ্নোক্ত কথাটির মাধ্যমে।
৮. বঙ্কিমচন্দ্র অনুকরণবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করেছেন কেন?
উত্তর: অন্যের লেখা অনুকরণ লেখকের উৎকর্ষ অর্জনের পথে বাধাস্বরূপ বলে বঙ্কিমচন্দ্র অনুকরণবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করেছেন অনেকেই নামকরা লেখকদের অনুকরণে সাহিত্য রচনায় আগ্রহ অনুভব করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এ ধরনের ঝোঁক ভালো লেখক হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ। প্রথমত, এর ফলে লেখকের নিজস্ব সত্তার সজীব বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয়ত, অনুকরণে সচরাচর। গুণ নয় বরং দোষগুলোই আয়ত্ত হয়। এ কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র অনুকরণবৃত্তি বর্জন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
৯. ‘বাঙ্গালা সাহিত্য, বাঙ্গালার ভরসা।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত কথাটির মধ্য দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালিরা জীবনে বাংলা ভাষার মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন।
ভাষার সাহায্যে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করে। মনের ভাব প্রকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে মাতৃভাষা। মায়ের মুখে শেখা বুলিতেই মানুষ নিজের অনুভূতি জানাতে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মাতৃভাষাতেই মানুষ কথা বলে সবচেয়ে তৃপ্তি লাভকরে। মাতৃভাষার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক আছে বলে মানুষের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-কল্পনার সাথে জড়িয়ে থাকে মাতৃভাষা। বাঙালির শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ সকল সৃজনশীল ও মননশীল কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে মাতৃভাষা বাংলা। এ বিবেচনা থেকে বঙ্কিমচন্দ্র আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
১০. ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ রচনাটির সর্বকালীন ও বৈশ্বিক আবেদন রয়েছে কেন?
উত্তর: ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ রচনাটি যেকোনো কালের, যেকোনো স্থানের লেখকের জন্য আদর্শস্বরূপ। আলোচ্য প্রবন্ধটি বঙ্কিমচন্দ্রে বাংলা ভাষার উন্নতিকল্পে নবীন লেখকদের উদ্দেশে নিবেদন করেছেন। উনিশ শতকের শেষভাগে রচিত হলেও রচনাটির প্রাসঙ্গিকতা আজও বিদ্যমান। রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং আদর্শ লেখকের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শগুলো যেকোনো দেশের, যেকোনো ভাষার লেখকের জন্যই প্রযোজ্য, কালজয়ী ও সর্বত্রগামী।
১১. অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী-ধারণ মহাপাপ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে লেখক বুঝিয়েছেন, ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা বা অন্যের অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে লেখনী ধারণ চরম গর্হিত কাজ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য মানবতার মঙ্গল সাধন অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি। লেখার মাধ্যমে যদি সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা হয়, তবে তা সার্থক হয়। অন্যদিকে যে লেখায় কেবল নিজের স্বার্থ প্রাধান্য পায়, যাতে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, যে লেখা মানুষের পীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাই সৎ মনোভাব ছাড়া লেখনী ধারণকে লেখক মহাপাপ বলে উল্লেখ করেছেন।
১২. ‘টাকার জন্য লিখিবেন না।’- বঙ্কিমচন্দ্র এ পরামর্শ কেন দিয়েছেন?
উত্তর: টাকার জন্য লিখলে লোকরঞ্জন-প্রবৃত্তি প্রবল হয়ে পড়ে বলে বঙ্কিমচন্দ্র টাকার জন্য লিখতে বারণ করেছেন।
সাধারণত অর্থ উপার্জনের আশায় লিখতে গেলে সেখানে মানুষের মন রক্ষার বিষয়টি এসে পড়ে। এদেশের সাধারণ পাঠক শিক্ষা ও রুচির বিবেচনায় উন্নতির শিখর থেকে অনেকটাই দূরে। তাদের অধিকাংশই উন্নত মননের অধিকারী নয়। তাই সাধারণ পাঠকের মনোরঞ্জন করতে গেলে লেখককে তাদের স্তরে নামতে হবে। এর ফলে লেখককে রচনার মানের সাথেও আপস করতে হবে। এ কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র টাকার কথা ভেবে লিখতে নিষেধ করেছেন।
১৩. সুতরাং তাহা একেবারে পরিহার্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অসৎ উদ্দেশ্যে লিখিত সাহিত্যকে বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
সত্য ও ধর্ম সাহিত্যের উদ্দেশ্য। এ কারণে সাহিত্য রচনার সময় লেখকের লক্ষ্য হওয়া উচিত সৌন্দর্য সৃষ্টি অথবা মানবকল্যাণ। যে সাহিত্য মিথ্যার ভিত্তিতে গড়া, যে রচনা নবপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের লেখার বিপক্ষে বঙ্কিমচন্দ্র নিজের অবস্থানের বিষয়টি আলোচ্য উদ্ভিতে স্পষ্ট করেছেন।
১৪. সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি ও মানবকল্যাণ।
বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন। কেউ অর্থ ও যশলাভ করতে চান। কেউ নিছক সৌন্দর্যের ভাবনা প্রকাশ করেন। কেউ আবার মানবকল্যাণে জীবন সঁপে দেন। তবে সাহিত্যের প্রকৃত লক্ষ্য হলো সত্য ও ধর্ম। সৌন্দর্য সৃষ্টি ও মানবকল্যাণ যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ কারণে সৌন্দর্য সৃষ্টি ও মানবমঙ্গলই সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত।
১৫. ‘যে কথার প্রমাণ দিতে পারিবে না, তাহা লিখিও না।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লেখার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের ওপর জোর দিতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টেপাধ্যায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
বস্তুনিষ্ঠতা একটি রচনার প্রাণ। আর তা নিশ্চিত করার জন্য লেখকের প্রয়োজন সত্যাশ্রয়ী হওয়া। লেখক নিজের রচনায় যে সমস্ত তথ্য পরিবেশন করছেন তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তাঁর হাতে থাকা আবশ্যক। অনেক সময় প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারলেও আবেগ বা চাপের বশে কেউ কেউ মনগড়া তথ্য সন্নিবেশ করতে চান। এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান রয়েছে প্রশ্নের উক্তিটিতে।
১৬. বঙ্কিমচন্দ্র সরলতাকে সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার বলেছেন কেন?
উত্তর: লেখায় সরলতা থাকলে তা সহজেই পাঠকের বোধগম্য হয় বলে বঙ্কিমচন্দ্র সরলতাকে সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার
বলেছেন।
সাহিত্যে রচনার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রূপক, অনুপ্রাস, শ্লেষসহ নানা ধরনের অলংকার ব্যবহার করা হয়। সরলতা সে অর্থে সাহিত্যের অলংকারের প্রকারভেদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সরলতার গুণে একটি রচনা সবচেয়ে সুন্দর হয়ে ওঠে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে লেখা পড়লে মানুষ সবচেয়ে সহজে লেখকের মনের ভাব বুঝতে পারে, সেটিই সুন্দরতম রচনা। এ বিবেচনা থেকেই তিনি সরলতাকে সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ বলে অভিহিত করেছেন।
১৬. ‘বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না’- বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: অনাবশ্যক বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা রচনার গুণগত মান নষ্ট করে বলে প্রাবন্ধিক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
রচনায় বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টাকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দূষণীয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার মতে, লেখকের মাঝে বিদ্যা থাকলে তা তাঁর লেখায় নিজে থেকেই প্রকাশ পায়। অনেকে নিজেকে পণ্ডিত প্রমাণের জন্য ভাবি ভারি তথ্য ও বিদেশি লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। এর ফলে রচনা জটিল হয়ে পড়ে এবং পাঠক বিরক্ত বোধ করে। রচনার পারিপাট্য নষ্ট হয় বলেই বঙ্কিমচন্দ্র লেখায় বিদ্যা পরিবেশনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রশ্নোক্ত উক্তিতে।
১৭. ‘সাময়িক সাহিত্য লেখকের পক্ষে অবনতিকর।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সাময়িক সাহিত্য লেখকের লেখার মানোন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ বলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছেন।
সাময়িক সাহিত্য স্বল্পকালীন চাহিদার জন্য সৃষ্টি। এ লেখাগুলো অল্প সময়ের মধ্যে লিখে খুব দ্রুতই প্রকাশ করতে হয়। এ কারণে লেখক লেখাগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়নের সুযোগ পান না। উৎকৃষ্ট মানের রচনা সৃষ্টির জন্য রচনা লেখার পর পর্যাপ্ত সময় নিয়ে তা সংশোধন করা প্রয়োজন। সাময়িক না। সাময়িক সাহিত্যে বর্তী লেখকগণ এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এ কারণেই সাময়িক সাহিত্য লেখকদের পক্ষে অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের অবক্ষয়, অর্থনৈতিক
বিপর্যয়, হতাশা ও হাহাকারে উপমহাদেশ ছিল নানা অভিঘাতে বিপর্যস্ত ও
রূপান্তরিত। এমনই এক পরিবেশে কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) তাঁর
ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতায় বিনির্মাণ করলেন শাশ্বত কল্যাণ ও সাম্যবাদের
মহাকাব্যিক এক আশাবাদী জগৎ। তিনি কলম তুলে নিলেন শোষণ-বঞ্চনাহীন,
শ্রেণিবৈষম্যহীন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক এক জগৎ সৃষ্টি
করতে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সাম্যের গান গাইলেন। এক সময়
তিনি হয়ে উঠলেন ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার
আদায়ের কলমসৈনিক। শোষণ, বঞ্চনা ও সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর
বিদ্রোহ আজও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।
ক. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে সাহিত্যের উদ্দেশ্য কী?
খ. অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী-ধারণ মহাপাপ-বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য সাধনা ‘বাঙ্গালার নব্য
লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ প্রবন্ধের কোন বৈশিষ্ট্যটির প্রতিফলন ঘটায় তা
ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলার নতুন লেখকদের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নিবেদন
উদ্দীপকে যথার্থভাবে প্রকাশিত হয়েছে কি? উদ্দীপক ও প্রবন্ধের আলোকে তোমার
মতামত দাও।
-----------
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
-------------
-----------
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
-------------
-----------
তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. বঙ্কিম রচনাবলী-২ (প্রবন্ধ): দে’জ পাবলিশিং ।। কলকাতা, অক্টোবর ২০১৮।
৩. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।