আমার পথ: কাজী নজরুল ইসলাম

আমার পথ: কাজী নজরুল ইসলাম
 আমার পথ: কাজী নজরুল ইসলাম
মূলপাঠ : 
‘আমার এই যাত্রা হল শুরু
ওগো কর্ণধার, তোমারে করি নমস্কার।’

‘মাভৈঃ বাণীর ভরসা নিয়ে’ ‘জয় প্রলয়ঙ্কর’ বলে ‘ধূমকেতু’কে রথ করে আমার আজ নতুন পথে যাত্রা শুরু হল। আমার কর্ণধার আমি। আমায় পথ দেখাবে আমার সত্য। আমার যাত্রা-শুরুর আগে আমি সালাম জানাচ্ছি-নমস্কার করছি আমার সত্যকে। যে-পথ আমার সত্যের বিরোধী, সে পথ ছাড়া আর কোনো পথই আমার বিপথ নয়! রাজভয়-লোকভয় কোনো ভয়ই আমায় বিপথে নিয়ে যাবে না। আমি যদি সত্যি করে আমার সত্যকে চিনে থাকি, আমার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তা হলে বাইরের কোন ভয়ই আমার কিছু করতে পারবে না। যার ভিতরে ভয়, সে-ই বাইরে ভয় পায়। আমার বিশ্বাস, যে নিজেকে চেনে, তার আর কাউকে চিনতে বাকি থাকে না। অতএব যে মিথ্যাকে চেনে, সে মিছামিছি তাকে ভয়ও করে না। যার মনে মিথ্যা, সে-ই মিথ্যাকে ভয় করে। নিজকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি এত বড় একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারুক্খে কুর্নিশ করে না-অর্থাৎ -কেউ তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত রাখতে পারে না। এই যে নিজকে চেনা আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথ-প্রদর্শক কাণ্ডারি বলে জানা, এটা দম্ভ নয়, অহঙ্কার নয়। এটা আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি। আর যদিই এটাকে কেউ ভুল করে অহঙ্কার বলে মনে করেন, তবু এটা মন্দের ভালো-অর্থাৎ মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। অনেক সময় খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়। ওতে মানুষকে ক্রমেই ছোট করে ফেলে, মাথা নীচু করে আনে। ও রকম মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহঙ্কারের পৌরুষ অনেক-অনেক ভালো।
অতএব এই অভিশাপ-রথের সারথির স্পষ্ট কথা বলাটাকে কেউ যেন অহঙ্কার বা স্পর্ধা বলে ভুল না করেন।

স্পষ্ট কথা বলায় একটা অবিনয় নিশ্চয় থাকে; কিন্তু তাতে কষ্ট পাওয়াটা দুর্বলতা। নিজকে চিনলে, নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির উপর অটুট বিশ্বাস আসে। এই স্বাবলম্বন, এই নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস করতেই শিখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধীজী। কিন্তু আমরা তাঁর কথা বুঝলাম না, 'আমি আছি' এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম, 'গান্ধীজী আছেন।' এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে। একেই বলে সবচেয়ে বড় দাসত্ব। অন্তরে যাদের এত গোলামির ভাব, তারা বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পাবে কি করে? আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেই দিনই আমরা স্বাধীন হব, তার আগে কিছুতেই নয়। নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই যদি দেশ উদ্ধার হয়ে যেত, তা হলে এই তেত্রিশ কোটি দেবতার দেশ এতদিন পরাধীন থাকত না। আত্মকে চেনা নিজের সত্যকে নিজের ভগবান মনে করার দম্ভ-আর যাই হোক, ভণ্ডামি নয়। এ-দন্ততে শির উঁচু করে, পুরুষ করে, মনে একটা 'ডোন্ট কেয়ার'-ভাব আনে। আর যাদের এই তথাকথিত দম্ভ আছে, শুধু তারাই অসাধ্য সাধন করতে পারবে।

এ-‘ধূমকেতু’ ঝগড়া-বিবাদ আনবে না, তবে প্রলয় যদিই আনে, তা হলে সেটার জন্যে দায়ী ধূমকেতুর দেবতা, সারথি নয়। এ-দেশের নাড়িতে-নাড়িতে অস্থি-মজ্জায় যে পচন ধরেছে, তাতে এর একেবারে ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না। যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাড়া করা যাবে, ততবারই তা পড়ে যাবে। প্রলয় আনার যে দুর্দম অসম-সাহসিকতা, ‘ধূমকেতু’ যদি তা না আনতে পারে, তবে তাতে অমঙ্গলের চেয়ে মঙ্গলই আনবে বেশি।
দেশের যারা শত্রু, দেশের যা-কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে ‘ধূমকেতু’ হবে আগুনের সম্মার্জনা। ‘ধূমকেতু’র এমন গুরু বা এমন বিধাতা কেউ নেই, যার খাতিরে সে সত্যকে অস্বীকার করে কারুর মিথ্যা বা ভণ্ডামিকে প্রশ্রয় দেবে। ‘ধূমকেতু’ সে-দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। ‘ধূমকেতু’ কোনো দিনই কারুর বাণীকে বেদবাক্য বলে মেনে নেবে না, যদি তার সত্যতা প্রাণে তার সাড়া না দেয়। না বুঝে বোঝার ভণ্ডামি করে পাঁচ জনের শ্রদ্ধা আর প্রশংসা পাবার লোভ ‘ধূমকেতু’ কোন দিনই করবে না।

ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায়। কোন ভুল করছি বুঝতে পারলেই আমি প্রাণ খুলে তা স্বীকার করে নেবো। কিন্তু না বুঝেও নয়, ভয়েও নয়। ভুল করছি বা করেছি বুঝেও শুধু জেদের খাতিরে বা গোঁ বজায় রাখবার জন্যে ভুলটাকে ধরে থাকব না। তা হলে ‘ধূমকেতু’র আগুন সেই দিনই নিবে যাবে। একমাত্র মিথ্যার জলই ‘ধূমকেতু’-শিখাকে নিবাতে পারবে। তা ছাড়া ধূমকেতুকে কেউ নিবাতে পারবে না।

‘ধূমকেতু’ কোন সাম্প্রদায়িক কাগজ নয়। মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। হিন্দু- মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, আদত সত্যের মিল, সেখানে ধর্মের বৈষম্য, কোনো হিংসার দুশমনির ভাব আনে না। যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।

...দেশের পক্ষে যা মঙ্গলকর বা সত্য, শুধু তাই লক্ষ্য করে এই আগুনের ঝাণ্ডা দুলিয়ে পথে বাহির হলাম।

‘জয় প্রলয়ঙ্কর’

উৎস নির্দেশ :
‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের সুবিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ ‘রুদ্র-মঙ্গল’ থেকে সংকলিত হয়েছে। এখানে, মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করা হলো। লাল চিহ্নিত লাইনগুলো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের সংকলনের সময় বাদ দেওয়া হয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা :
কর্ণধার- নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তি।
কুর্নিশ- অভিবাদন; সম্মান প্রদর্শন।
অভিশাপ-রথের সারথি- সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। এ কথা জেনেও নজরুল তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। নিজেই বসেছেন রথচালক তথা সারথির আসনে।
মেকির- মিথ্যা; কপট।
সম্মার্জনা- ঘষে-মেজে পরিষ্কার করা।
আগুনের ঝান্ডা- অগ্নিপতাকা; আগুনে সব শুদ্ধ করে নিম্নে সত্যের পথে ওড়ানো নিশান।

পাঠের উদ্দেশ্য :

পাঠ-পরিচিতি :
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে নজরুল এমন এক ‘আমি’র আবাহন প্রত্যাশা করেছেন যার পথ সত্যের পথ; সত্য প্রকাশে তিনি নির্ভীক অসংকোচ। তাঁর এই 'আমি'-ভাবনা বিন্দুতে সিন্ধুর উচ্ছ্বাস জাগায়। নজরুল প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক 'আমি'র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন; একইসঙ্গে, এক মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে 'আমরা' হয়ে উঠতে চেয়েছেন। স্বনির্ধারিত এই জীবন-সংকল্পকে তিনি তাঁর মতো আরও যারা সত্যপথের পথিক হতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশে ছড়িয়ে দিতে চান। এই সত্যের উপলব্ধি কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু। তিনি তাই অনায়াসে বলতে পারেন, 'আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।' রুদ্র-তেজে মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে নজরুলের এই 'আমি' সত্তা। তাঁর পথনির্দেশক সত্য অবিনয়কে মেনে নিতে পারে কিন্তু অন্যায়কে সহ্য করে না। সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক দেখেছেন যে, সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা, আহত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব। নজরুলের কাছে এই ভগ্ন আত্মবিশ্বাসের গ্লানি গ্রহণযোগ্য নয়। এর পরিবর্তে তিনি প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান; কেননা তাঁর বিশ্বাস- সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
কাজী নজরুল ইসলাম এই প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে, তিনি ভুল করতে রাজি আছেন কিন্তু ভণ্ডামি করতে প্রস্তুত নন। ভুল জেনেও তাকে ঠিক বলে চালিয়ে দেবার কপটতা কিংবা জেদ তাঁর দৃষ্টিতে ভণ্ডামি। এই ভুল ব্যক্তির হতে পারে, সমাজের হতে পারে কিংবা হতে পারে কোনো প্রকার বিশ্বাসের। তবে তা যারই হোক আর যেমনই হোক এর থেকে বেরিয়ে আসাই নজরুলের একান্ত প্রত্যাশা। তিনি জানেন, এই বেরিয়ে আসা সম্ভব হলেই মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটানো সম্ভব হবে। মনুষ্যত্ববোধে জাগ্রত হতে পারলেই ধর্মের সত্য উন্মোচিত হবে, এক ধর্মের সঙ্গে অপর ধর্মের বিরোধ মিটে যাবে। সম্ভব হবে গোটা মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা; আর এই ঐক্যের মূল শক্তি হলো সম্প্রীতি। এই সম্প্রীতির বন্ধন শক্তিশালী হলে মানুষের মধ্যে সহনশীলতা বাড়ে। ভিন্ন ধর্ম-মত-পথের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগে। আর এই সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে উৎকৃষ্ট মানব সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

লেখক পরিচিতি :
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।
সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে নজরুল আমৃত্যু সকল অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার, প্রতিবাদী। এজন্য বাংলা সাহিত্যের ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। আবার একই সঙ্গে কোমল দরদি মন নিয়ে ব্যথিত বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকেছেন তিনি। এক হাতে বাঁশি আরেক হাতে রণতূর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন নজরুল; আর এসেই প্রচলিত শিল্পধারাসমূহকে পাল্টে দিয়ে নতুন বিষয় ও নতুন শব্দে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতকে করেছেন সমৃদ্ধতর। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নজরুলের কর্মজীবনও ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। মসজিদের ইমামতি, লেটোর দলে যোগদান, ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগদান, সাম্যবাদী ধারার রাজনীতি, পত্রিকা সম্পাদনা কিংবা চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়াসহ বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতায় তাঁর জীবন ছিল পূর্ণ। মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় এই ঋদ্ধ ও সম্ভাবনাময় জীবন আমৃত্যু নির্বাক হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে নজরুলকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে সসম্মানে এদেশে বরণ করে নেওয়া হয়। এর কিছুকাল পরে কবির মৃত্যু হলে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয়। কবি হলেও সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তিনি বিচরণ করেছেন। তাঁর রচিত উপন্যাসের মধ্যে- বাঁধনহারা, মৃত্যু-ক্ষুধা, কুহেলিকা এবং গল্পগ্রন্থের মধ্যে- ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যুগ-বাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্র-মঙ্গল, রাজবন্দির জবানবন্দি তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট (১২ই ভাদ্র ১৩৮৩) ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. কাজী নজরুল ইসলাম কোনটিকে নমস্কার জানিয়েছেন?
ক. তারুণ্যকে
খ. সত্যকে
গ. রাজভয়কে
ঘ. লোকভয়কে
২. ভুলের মধ্য দিয়ে কীভাবে সত্যকে পাওয়া যায়?
ক. বার বার ভুল করে
খ. ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে
গ. ভুল চেপে রেখে
ঘ. ভুল স্বীকার করে
নিচের কবিতাংশটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
৩. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের যে যে বাক্য কবিতাংশের বক্তব্যটির প্রতিনিধিত্ব করে তা হলো-
i. আমার পথ দেখাবে সত্য
ii. নমস্কার করছি সত্যকে
iii. এই আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে বাহির হলাম
নিচের কোনটি ঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii
৪. উক্ত প্রতিনিধিত্বের কারণ, সত্যই-
i. সুন্দরতম
ii. মুক্তির পথ
iii. আলোর দিশারী
নিচের কোনটি ঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
➠ লেখক পরিচিতি
১. কাজী নজরুল ইসলাম কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: বর্ধমান জেলায়।
২. কাজী নজরুল ইসলাম যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, তার নাম কী?
উত্তর: চুরুলিয়া।
৩. কাজী নজরুল ইসলাম কোন মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: আসানসোল।
৪. কাজী নজরুল ইসলাম কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে।
৫. কাজী নজরুল ইসলাম খ্রিষ্টীয় কোন মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: মে মাসের ২৫ তারিখ।
৬. কাজী নজরুল ইসলাম কত বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৩০৬ বঙ্গাব্দে
৭. কাজী নজরুল ইসলাম বঙ্গীয় কোন মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: জ্যৈষ্ঠ মাসের ১১ তারিখ।
৮. কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম কী?
উত্তর: কাজী ফকির আহমেদ।
৯. কাজী নজরুল ইসলামের মাতার নাম কী?
উত্তর: জাহেদা খাতুন।
১০. বাংলা সাহিত্যে নজরুল কী কবি হিসেবে পরিচিত?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত।
১১. কাজী নজরুল ইসলাম কিসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন?
উত্তর: অন্যায় ও শোষণের।
১২. বাংলা সাহিত্যের কোন কবি মসজিদের ইমামতি করেছেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম।
১৩. নজরুল কিসের দলে যোগ দেন?
উত্তর: লেটোর দলে। ১২ বছর বয়সে।
১৪. নজরুল কত খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন?
উত্তর: ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে।
১৫. নজরুল সেনাবাহিনীর কোন পল্টনে যোগদান করেন?
উত্তর: বাঙালি পল্টনে।
১৬. নজরুল কত বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন?
উত্তর: তেতাল্লিশ বছর বয়সে।
১৭. কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থগুলোর নাম লেখো।
উত্তর: অগ্নি-বীণা, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, সাম্যবাদী, ফণি-মনসা, জিঞ্জির, সন্ধ্যা, দোলনচাঁপা, ছায়ানট, চক্রবাক, পুবের হাওয়া, মরুভাস্কর, ঝিঙেফুল ইত্যাদি।
১৮. নজরুলের উপন্যাসগুলোর নাম লেখ।
উত্তর: বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা।
১৯. কাজী নজরুল ইসলামের পত্রোপন্যাস কোনটি?
উত্তর: বাঁধনহারা।
২০. বাংলা সাহিত্যে প্রথম পত্রোপন্যাস রচয়িতা কে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম।
২১. কাজী নজরুল ইসলামের গল্পগ্রন্থগুলোর নাম লেখো।
উত্তর: ব্যাথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলি মালা, পদ্মগোখরা, জিনের বাদশা।
২২. নজরুলের নাটকগুলোর নাম লেখ।
উত্তর: ঝিলিমিলি, আলেয়া, পুতুলের বিয়ে, মধুমালা।
২৩. নজরুলের প্রবন্ধগ্রন্থগুলোর নাম লেখো।
উত্তর: যুগ-বাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্র-মঙ্গল, রাজবন্দির জবানবন্দি।
২৪. কাজী নজরুল ইসলামের অনুবাদ কাব্যগুলোর নাম লেখ।
উত্তর: রুবাইয়াত-ই-হাফিজ ও রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম।
২৫. কাজী নজরুল ইসলামের গানের সংকলনগুলোর নাম লেখ।
উত্তর: চোখের চাতক, নজরুল গীতি, গানের মালা, নজরুল স্বরলিপি, গীতিশতদল, সুরমুকুর, চন্দ্রবিন্দু ইত্যাদি।
২৬. কাজী নজরুল ইসলামের বাজেয়াপ্ত হওয়া গানের বই?
উত্তর: চন্দ্রবিন্দু।
২৭. নজরুল সম্পাদিত পত্রিকাগুলোর নাম লেখ।
উত্তর: ধূমকেতু, লাঙ্গল, দৈনিক নবযুগ।
২৮. নজরুল কোন সাহিত্য সৃষ্টি রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন?
উত্তর: সঞ্চিতা।
২৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কোন সাহিত্যসৃষ্টি নজরুলের নামে উৎসর্গ করেন?
উত্তর: বসন্ত।
৩০. কোন রচনার জন্য নজরুলকে কারাভোগ করতে হয়?
উত্তর: ‘আনন্দময়ীর আগমনে’র জন্য। ‘ধূমকেতু’র পূজা সংখ্যায় (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২) কবিতাটি প্রকাশিত হলে নজরুলকে গ্রেফতার করা হয়।
৩১. কত তারিখে নজরুলকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়?
উত্তর: ১৮ই ফ্রেব্রুয়ারি, ১৯৭৬
৩২. কত সালে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়া হয়?
উত্তর: ১৯৭৪ সালে।
৩৩. কত সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় নজরুলকে ডি. লিট. ডিগ্রি প্রদান করে?
উত্তর: ১৯৭৪ সালে।
৩৪. নজরুলের প্রথম প্রকাশিত রচনা কোনটি?
উত্তর: প্রথম প্রকাশিত রচনা একটি গল্প। নাম: ‘বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’ (সওগাতে প্রকাশিত হয় ১৩২৬ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে)।
৩৫. নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর: ব্যথার দান (ফেব্রুয়ারি ১৯২২)
৩৬. নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম কী?
উত্তর: ‘মুক্তি’ (প্রকাশ: শ্রাবণ ১৩২৬, বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা।)
৩৭. নজরুলের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর: ‘অগ্নি-বীণা’ প্রকাশ ১৯২২ খ্রি.।
৩৮. কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: ‘অগ্নি-বীণা’।
৩৯. ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর: সাপ্তাহিক বিজলী।
৪০. নজরুলের ‘ধূমকেত’ পত্রিকায় কার বাণী ছাপা হয় এবং বাণীটি কী?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের এবং বাণীটি হলো: ‘আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু/আঁধারে বাধ অগ্নি- সেতু’।
৪১. নজরুলকে জাতীয়ভাবে প্রথম কোথায় এবং কত সালে সংবর্ধনা দেয়া হয়?
উত্তর: ১৯২৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে।

➠ মূলপাঠ
৪২. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রবন্ধিকের কর্ণধার কে?
উত্তর: প্রাবন্ধিক নিজেই নিজের কর্ণধার।
৪৩. প্রাবন্ধিককে কে পথ দেখাবে?
উত্তর: প্রাবন্ধিকের সত্যই প্রাবন্ধিককে পথ দেখাবে।
৪৪. প্রাবন্ধিক কাকে সালাম ও নমস্কার জানাচ্ছেন?
উত্তর: সত্যকে।
৪৫. প্রাবন্ধিক সত্যকে কী করছেন?
উত্তর: সালাম ও নমস্কার জানাচ্ছেন।
৪৬. প্রাবন্ধিকের কাছে কোন পথ বিপথ?
উত্তর: সত্যের বিরোধী পথ।
৪৭. কী প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যেতে পারবে না?
উত্তর: রাজভয়- লোকভয়।
৪৮. সত্যকে সত্যি করে চিনলে কী হয়?
উত্তর: বাইরের কোনো ভয় কিছু করতে পারে না।
৪৯. বাইরে কে ভয় পায়?
উত্তর: যার ভিতরে ভয়।
৫০. কে মিথ্যাকে মিছামিছি ভয় করে না?
উত্তর: যে মিথ্যাকে চিনেছে।
৫১. কে মিথ্যাকে ভয় করে?
উত্তর: যার মনে মিথ্যা।
৫২. নিজেকে চিনলে মানুষ আপন সত্য ছাড়া আর কাউকে কী করে না?
উত্তর: কুর্নিশ করে না।
৫৩. আপন সত্য ছাড়া মানুষ আর কাউকে কখন কুর্নিশ করে না?
উত্তর: নিজেকে চিনলে।
৫৪. মানুষের মনে কখন জোর আসে?
উত্তর: যখন সে নিজেকে চিনতে পারে।
৫৫. মানুষকে কখন ভয় দেখিয়ে পদানত করে রাখা যায় না?
উত্তর: যখন মানুষ নিজেকে চিনতে পারে।
৫৬. প্রাবন্ধিকের গুরু, পথপ্রদর্শক কাণ্ডারি কে?
উত্তর: নিজের সত্য।
৫৭. প্রাবন্ধিকের মতে কোনটা অহংকার নয়?
উত্তর: আপন সত্যকে গুরু, পথপ্রদর্শক কাণ্ডারি ভাবা।
৫৮. কবির মতে মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে কোনটি ভালো?
উত্তর: অহংকারের পৌরুষ ভালো।
৫৯. অনেক সময় মানুষ বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে কী করে ফেলে?
উত্তর: নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলে।
৬০. প্রাবন্ধিকের মতে কোনটি মানুষকে ছোট করে ফেলে?
উত্তর: অতিরিক্ত বিনয়।
৬১. প্রাবন্ধিক নিজেকে কিসের সারথি দাবি করেছেন?
উত্তর: অভিশাপ রথের সারথি।
৬২. কখন নিজের শক্তির উপর অটুট বিশ্বাস আসে?
উত্তর: নিজেকে চিনলে এবং নিজের সত্যকে কর্ণধার হিসেবে মানলে।
৬৩. স্বাবলম্বন বা নিজের উপর অটুট বিশ্বাস রাখতে কে শেখাচ্ছিলেন?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধী।
৬৪. গান্ধীজি আমাদের কী শেখাচ্ছিলেন?
উত্তর: স্বাবলম্বন বা নিজের উপর অটুট বিশ্বাস রাখতে।
৬৫. ‘আমি আছি’ না বলে আমরা কী বলতে লাগলাম? উত্তর: ‘গান্ধিজী আছেন’।
৬৬. প্রাবন্ধিকের মতে স্বাবলম্বন কী?
উত্তর: নিজের উপর অটুট বিশ্বাসই স্বাবলম্বন।
৬৭. কী আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে?
উত্তর: পরাবলম্বন।
৬৮. প্রাবন্ধিকের মতে সবচেয়ে বড় দাসত্ব কী?
উত্তর: পরাবলম্বন।
৬৯. বাইরের গোলমি থেকে কারা রেহাই পায় না?
উত্তর: অন্তরে যাদের গোলামির ভাব।
৭০. প্রাবন্ধিকের মতে আত্মনির্ভরতা কখন আসে?
উত্তর: আত্মাকে চিনলে।
৭১. প্রাবন্ধিকের মতে আমরা কখন স্বাধীন হবো?
উত্তর: যখন আত্মনির্ভরতা আসবে।
৭২. প্রাবন্ধিকের মতে কোনটি ভণ্ডামি নয়?
উত্তর: নিজের সত্যকে বড় মনে করা।
৭৩. প্রাবন্ধিকের মতে কারা অসাধ্য সাধন করতে পারে?
উত্তর: যাদের নিজের সত্যকে বড় মনে করার দম্ভ আছে।
৭৪. প্রাবন্ধিকের মতে কাকে উপড়ে ফেলতে হবে?
উত্তর: যার ভিত্তি পচে গেছে।
৭৫. কী জন্য আগুনের সম্মার্জনা প্রয়োজন?
উত্তর: দেশের শত্রু, মিথ্যা, ভণ্ডামি আর মেকি দূর করতে।
৭৬. দেশের শত্রু দূর করতে কী প্রয়োজন?
উত্তর: আগুনের সম্মার্জনা।
৭৭. কাজী নজরুল ইসলামের মতে দেশের শত্রু কারা?
উত্তর: যাদের মধ্যে মিথ্যার বেসাতি।
৭৮. প্রাবন্ধিক কখনো কাকে প্রশ্রয় দেবে না?
উত্তর: মিথ্যাকে।
৭৯. প্রাবন্ধিকের মতে সত্যকে কীভাবে পাওয়া যায়?
উত্তর: ভুলের মধ্য দিয়ে।
৮০. প্রাবন্ধিকের মতে আগুন কখন নিভে যাবে?
উত্তর: ভুলটাকে ধরে রাখলে।
৮১. প্রাবন্ধিকের মতে সবচেয়ে বড় ধর্ম কী?
উত্তর: মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।
৮২. প্রাবন্ধিকের পথের অন্যতম উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: হিন্দু-মুসলামানের মিলন।
৮৩. ধর্মের বৈষম্য কোথায় হিংসার দুশমনির ভাব আনতে পারে না?
উত্তর: মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল।
৮৪. কে অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না?
উত্তর: নিজের ধর্মের প্রতি যার বিশ্বাস আছে।
৮৫. প্রাবন্ধিক কী লক্ষ্য করে আগুনের ঝাণ্ডা দুলিয়ে পথে বাহির হয়েছেন?
উত্তর: দেশের জন্য যা মঙ্গলকর বা সত্য তা লক্ষ্য করে।
৮৬. কিসের মধ্য দিয়ে উৎকৃষ্ট মানব সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব?
উত্তর: সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে।
৮৭. ‘কর্ণধার’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তি।
৮৮. ‘কুর্নিশ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: অভিবাদন। সম্মান প্রদর্শন।
৮৯. ‘সম্মার্জনা’ শব্দে অর্থ কী?
উত্তর: মেজে ঘষে পরিষ্কার করা।
৯০. 'আমার পথ' প্রবন্ধের শেষ বাক্য কোনটি?
উত্তর: দেশের পক্ষে যা মঙ্গলকর বা সত্য, শুধু তাই লক্ষ্য করে এই আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে পথে বাহির হলাম।
৯১. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কোন ভাষারীতি ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: চলিত ভাষারীতি।
৯২. মেকি' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: মিথ্যা। কপট।
৯৩. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কোথা থেকে সংলিত হয়েছে?
উত্তর: ‘রুদ্র-মঙ্গল’ থেকে।
৯৪. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রথম বাক্য কোনটি?
উত্তর: আমার কর্ণধার আমি।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. ‘আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।’ কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের এ উক্তিতে প্রাবন্ধিক তার আত্মবিশ্বাসী মানসিকতাই যে তাকে তার কর্ণধার হয়ে পথ দেখাবে, সে প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন।
➠ কর্ণধার বলতে প্রাবন্ধিক মানুষের ভেতরের ঐশ্বরিক শক্তি বা অলৌকিক ক্ষমতাকে বুঝিয়েছেন; যা আত্মবিশ্বাস ও নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে আসে। মানুষের মগজ ও মন পরম স্রষ্টার পরম জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তিতে ভরপুর। প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। তাই প্রাবন্ধিকের সত্য বা সৎ শক্তি সব ধরনের আলস্য, কর্ম বিমুখতা, নৈরাজ্য, অবিশ্বাস ও জরাজীর্ণতাকে পেছনে ফেলে তাকে ন্যায় ও সত্যের পথ দেখাবে।
২. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধ অনুযায়ী ভারতের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ কী?
উত্তর: আত্মনির্ভরতা, আত্মমর্যাদার অভাবই কাজী নজরুল ইসলামের মতে দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ।
➠ প্রাবন্ধিক মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেদিনই আমরা স্বাধীন হব। নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের ওপর নির্ভর করায় আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টই বোঝা যায়, আত্মনির্ভরতার অভাবই পরাধীনতার কারণ হিসেবে বিবেচ্য। পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল।
প্রশ্ন: ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরে ‘মানুষ-ধমর্কেই সবচেয়ে বড় ধর্ম’ বলেছে।
➠ ভারতের স্বাধীনতা আর মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল হিন্দু-মুসলিমের বিরোধ। এ সাম্প্রদায়িক বিভেদ না থাকলে আরও আগে দেশ মুক্ত হতো। প্রত্যেকে যার যার ধর্মকে বড় ভেবেছে; কিন্তু অন্যকে সম্মান করতে শেখেনি। ফলে মানবিকচেতনাই যে সবচেয়ে বড় তার কেউ অনুভব করতে পারেনি। মানবিকচেতনাকে মূল্য দিতে পারলেই প্রকৃত ধার্মিক হওয়া যায়। এভাবেই ‘মানুষ-ধমর্কেই সবচেয়ে বড় ধর্ম’ মানতে পারলে জাতিগত ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
আবদুল মালেক সারাটি জীবন শিক্ষকতা করেছেন, গড়েছেন আলোকিত মানুষ। অবসর গ্রহণের পর তিনি গড়ে তুলেছেন তারুণ্য’নামে সেবা-সংগঠন। বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি পথশিশুদের শিক্ষাদান, দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করেন তিনি। অনেকে তাঁর কাজের প্রশংসা করেন আবার নিন্দা ও কটূক্তি করতেও ছাড়েন না কেউ কেউ। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন-
মনেরে আজ কহ যে
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
ক. কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়?
খ. কবি নিজেকে ‘ভিশাপ রথের সারথি’বলে অভিহিত করেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে আবদুল মালেকের মাধ্যমে ‘মার পথ’প্রবন্ধের যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
-----------

তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৩।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post