অনুচ্ছেদ: অষ্টম শ্রেণি

পঞ্চম পরিচ্ছেদ:  শব্দগঠন
পঞ্চম পরিচ্ছেদ:  শব্দগঠন
৫. অনুচ্ছেদ রচনা
বাক্য মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। কিন্তু সব সময় একটি বাক্যের মাধ্যমে মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। প্রয়োজন হয় একাধিক বাক্যের। মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত বাক্যের সমষ্টিই অনুচ্ছেদ।
অনুচ্ছেদ এবং প্রবন্ধ এক বিষয় নয়। কোনো বিষয়ের সকল দিক আলোচনা করতে হয় প্রবন্ধে। কোনো বিষয়ের একটি দিকের আলোচনা করা হয় এবং একটিমাত্র ভাব প্রকাশ পায় অনুচ্ছেদে। অনুচ্ছেদ রচনার কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। যেমন-
ক) একটি অনুচ্ছেদের মধ্যে একটিমাত্র ভাব প্রকাশ করতে হবে। অতিরিক্ত কোনো কথা লেখা যাবে না।
খ) সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো বাক্যের মাধ্যমে বিষয় ও ভাব প্রকাশ করতে হবে।
গ) অনুচ্ছেদটি খুব বেশি বড় করা যাবে না।
ঘ) একই কথার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঙ) যে বিষয়ে অনুচ্ছেদটি রচনা করা হবে, তার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি সহজ-সরল ভাষায় সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে।

১. স্কুল ম্যাগাজিন

⇒ স্কুল ম্যাগাজিন কী;
⇒ স্কুল ম্যাগাজিনের লেখার বিষয়বস্তু;
⇒ কাদের লেখা স্কুল ম্যাগাজিনের স্থান পায়;
⇒ স্কুল ম্যাগাজিনের সম্পাদকমণ্ডলী ও তাদের কাজ;
⇒ মেধাবিকাশে স্কুল ম্যাগাজিন গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা;

স্কুল ম্যাগাজিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, আত্মপ্রকাশ ও ভাষা চর্চার এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম। এটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, জীবনচরিত/জীবনী (কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনচিত্র), চিত্রাঙ্কন (শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি), ছবি, স্কুলের বার্ষিক প্রতিবেদন (বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল) ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজকে সংকলিত করে প্রকাশ করে। এটি লেখালেখির প্রতি আগ্রহ বাড়ায় এবং ভবিষ্যতের লেখক, সাংবাদিক বা গবেষক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। ম্যাগাজিনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের লেখার পাশাপাশি স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিবরণও স্থান পায়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লেখালেখির প্রতি আগ্রহী হয়, নিজ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায় এবং অন্যদের কাজ থেকেও অনুপ্রাণিত হয়। স্কুল ম্যাগাজিন শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও ভাষা দক্ষতা বাড়ায় এবং বিদ্যালয়ের ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড সংরক্ষণের একটি দলিল হয়ে ওঠে। কখনো কখনো অতিথি লেখক বা অভিভাবকের লেখা স্থান পায়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ স্কুল ম্যাগাজিনের সম্পাদনার কাজ করেন। অভিভাষণ অংশে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বাণী এবং সম্পাদকের সম্পাদকীয় লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়। একটি ভালো মানের স্কুল ম্যাগাজিন একটি বিদ্যালয়ের সম্মান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচায়ক।

বিজ্ঞানমেলা

⇒ বিজ্ঞানমেলা কী?
⇒ কোথায় বিজ্ঞান মেলা আয়োজিত হয়?
⇒ মেলায় কী ধরনের প্রজেক্ট উপস্থাপিত হয়?
⇒ মেলার প্রজেক্টগুলো কে/কারা মূল্যায়ন করেন?
⇒ প্রজেক্ট বিচারের মানদণ্ড?
⇒ বিজ্ঞানমনস্ক জাতি তৈরিতে মেলার গুরুত্ব?

বিজ্ঞান মেলা একটি শিক্ষামূলক ও সৃজনশীল আয়োজন, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, আবিষ্কার ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে উপস্থাপন করার সুযোগ পায়। বিজ্ঞান মেলা সাধারণত বিভিন্ন  জায়গা আয়োজিত হয়। যেমন:  স্কুল বা কলেজ ক্যাম্পাসের শ্রেণিকক্ষে, হলরুম বা মাঠে;  উপজেলা পরিষদের হলরুমে; জেলা শিল্পকলা একাডেমি বা সরকারি মিলনায়তনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, ঢাকায় বড় পরিসরে বিভাগভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা আয়োজিত  হয়। জাতীয় পর্যায়ে রাজধানীতে এক্সিবিশন সেন্টার বা কনভেনশন সেন্টারে অথবা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত হয়। বিজ্ঞান মেলার স্থান নির্ধারণ হয় অংশগ্রহণকারী সংখ্যা, মেলার পরিসর ও আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অনুযায়ী। বিজ্ঞান মেলায় শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের উদ্ভাবনী ও প্রজেক্ট প্রদর্শন করে, যেগুলো তাদের চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতাকে তুলে ধরে। বিজ্ঞান মেলায় সাধারণত যেসব উদ্ভাবনী ও প্রজেক্ট উপস্থাপিত হয়: সৌরচালিত যন্ত্র; রোবট; অগ্নিনির্বাপক মডেল; স্বয়ংক্রিয় আলো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা; স্মার্ট হোম মডেল; জল পরিশোধন যন্ত্র; বৃষ্টিমাপ যন্ত্র; ভূমিকম্প পূর্বাভাস মডেল; বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প উপায়; পরিবেশ দূষণ রোধের প্রযুক্তি; স্বয়ংক্রিয় কৃষি সেচ ব্যবস্থা; স্মার্ট ডাস্টবিন; ফায়ার অ্যালার্ম ও স্মোক ডিটেক্টর; রক্তচাপ ও হার্টরেট মাপার মডেল; ইকো-ফ্রেন্ডলি বাড়ির নকশা। এই সব উদ্ভাবন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক কৌতূহল ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। বিজ্ঞানের শিক্ষক/প্রভাষক; বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক; প্রকৌশলী বা প্রযুক্তিবিদ; অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ; কোনো বিজ্ঞান সংগঠনের প্রতিনিধি হলেন বিজ্ঞান মেলায় বিচারক। তারা অংশগ্রহণকারীদের প্রতিটি মডেল বা প্রকল্পের উদ্ভাবনী চিন্তা, কার্যকারিতা, প্রয়োগযোগ্যতা, উপস্থাপনা দক্ষতা এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অনুযায়ী নম্বর প্রদান করেন ও মূল্যায়ন করেন। প্রতিটি দলের প্রজেক্ট পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্ন করে, তথ্য যাচাই ও প্রয়োগযোগ্যতা মূল্যায়ন করে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নম্বর প্রদান করে সেরা উদ্ভাবন বেছে নেন। এবং শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান ও গঠনমূলক মতামত দেন। বিচারকের ভূমিকা একটি বিজ্ঞান মেলার সাফল্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের সুচিন্তিত মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের আগামীর পথচলায় প্রেরণা জোগায়। বিজ্ঞান মেলা শিক্ষার্থীদের মেধা, কল্পনা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে বাস্তব জীবনের প্রয়োগে রূপ দেওয়ার একটি চমৎকার সুযোগ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তবভিত্তিক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয় ও বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হয়। দল হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সহযোগিতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি হয়। শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব প্রজেক্ট বানানোর মাধ্যমে শেখা হয়।বিজ্ঞান মেলা কেবল একটি প্রদর্শনী নয়—এটি শিক্ষার একটি প্রগতিশীল ধাপ, যা একজন শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের গঠনমূলক নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত করে।

নদী দূষণ

⇒ নদী দূষণ কী;
⇒ দূষিত নদীর উল্লেখযোগ্য নাম;
⇒ কী কী কারণে নদী দূষিত হয়;
⇒ নদী দূষণে প্রকৃতি উপর প্রভাব;
⇒ নদী দূষণে মানবজীবনে বিরূপ উপর প্রভাব;
⇒ নদী দূষণ অর্থনৈতিক ক্ষতি;
⇒ নদী দূষণ রোধে আমাদের করণীয় কাজ;

নদী দূষণ হলো নদীর পানি বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ, প্লাস্টিক ও জীবাণুর মাধ্যমে এমনভাবে দূষিত হওয়া, যা মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। দূষণের মূল কারণ হলো শিল্প-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য; পলিথিন, প্লাস্টিক ও আবর্জনা ফেলা; ড্রেনের নোংরা পানি সরাসরি নদীতে যাওয়া; কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার; নদীর পাশে পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি। নদী দূষণের ফলে পানির জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়; মাছ ও জলজ প্রাণী মরে যায়; কৃষি ও খাদ্যশস্যে প্রভাব পড়ে; মানুষ পানি থেকে রোগে আক্রান্ত হয় (যেমন: ডায়রিয়া, চর্মরোগ)। নদী দূষণ পরিবেশের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি। একে রোধ করতে আমাদের সচেতনতা, আইন প্রয়োগ এবং পরিশোধন ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। নদীকে রক্ষা করা মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা।

তথ্যসূত্র :
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ২৩.১১.২৫

    Valoo

Add Comment
comment url