‘মাসি-পিসি' গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

মাসি-পিসি
মাসি-পিসি

মাসি-পিসি
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষবেলায় খালে এখন পুরো ভাটা (চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণে প্রতি চান্দ্রদিবসে দুবার করে সমুদ্র ও নদীর জলের পৃষ্ঠতলের অবনতি)। জল নেমে গিয়ে কাদা আর ভাঙা ইটপাটকেল ও ওজনে ভারি আবর্জনা বেরিয়ে পড়েছে। কংক্রিটের (নির্দিষ্ট অনুপাতে সিমেন্ট বালি পাথরকুচি ও জলের সংমিশ্রণে তৈরি ঢালাই যা শুকানোর পরে শক্ত হয়ে যায়) পুলের (সাঁকো; সেতু) কাছে খালের ধারে লাগানো সালতি থেকে খড় (ধানগাছের অতিরিক্ত শুকনো অংশ) তোলা হচ্ছে পাড়ে( নদীর তীর/কূল)। পাশাপাশি জোড়া লাগানো দুটো বড় সালতি বোঝাই আঁটিবাঁধা খড় তিনজনের মাথায় চড়ে গিয়ে জমা হচ্ছে ওপরের মস্ত গাদায় (স্তূপ, রাশি)। ওঠানামার পথে ওরা খড় ফেলে নিয়েছে কাদায়। সালতি থেকে ওদের মাথায় খড় তুলে দিচ্ছে দুজন। একজনের বয়স হয়েছে, আধপাকা চুল, রোগা শরীর। অন্যজন মাঝবয়সী, বেঁটে, জোয়ান, মাথায় ঠাসা (ঘন/গাদানো) কদমছাঁটা রুক্ষ চুল (তেলহীন চুল)

পুলের তলা দিয়ে ভাটার টান ঠেলে এগিয়ে এল সরু লম্বা আরেকটা সালতি, দু-হাত চওড়া হয়নি না হয়। দু-মাথায় দাঁড়িয়ে দুজন প্রৌঢ়া (যৌবন ও বার্ধক্যের মধ্যবর্তী বয়ঃপ্রাপ্ত মহিলা। পুরুষবাচক: প্রৌঢ়) বিধবা লগি (নৌকা চালানোর জন্য ব্যবহৃত বাঁশের দণ্ড) ঠেলছে, ময়লা মোটা থানের আঁচল দুজনেরই কোমরে বাঁধা। মাঝখানে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে অল্পবয়সী একটি বৌ। গায়ে জামা আছে, নকশা পাড়ের সস্তা সাদা শাড়ি। আঁটসাঁট থমথমে গড়ন, গোলগাল মুখ।

“মাসি-পিসি ফিরছে কৈলেশ”, বুড়ো লোকটি বলল।

কৈলাশ বাহকের (যে বোঝা বহন করছে।) মাথায় খড় চাপাতে ব্যস্ত ছিল। চটপট শেষ আঁটিটা চাপিয়ে দিয়ে সে যখন ফিরল, মাসি-পিসির সালতি (শালকাঠ নির্মিত বা তালকাঠের সরু নৌকা।) দু-হাতের মধ্যে এসে গেছে।

“ও মাসি (মায়ের বোন; খালা), ওগো পিসি (বাপের বোন; ফুপু), রাখো রাখো। খপর (‘খবর’ শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ।) আছে শুনে যাও।”

সামনের দিকে লগি পুঁতে মাসি-পিসি সালতির গতি ঠেকায়, আহ্লাদি সিঁথির সিঁদুর পর্যন্ত ঘোমটা টেনে দেয়। সামনে থেকে মাসি বলে বিরক্তির সঙ্গে, “বেলা আর নেই কৈলেশ।” পেছনে থেকে পিসি বলে, “অনেকটা পথ যেতে হবে কৈলেশ।”

মাসি-পিসির গলা ঝরঝরে, আওয়াজ একটু মোটা, একটু ঝংকার আছে। কৈলাশের খবরটা গোপন, দুজনে লম্বা লম্বা সালতির দু-মাথায় থাকলে সম্ভব নয় চুপে চুপে বলা। মাসি বড় সালতির খড় ঠেকানো বাঁশটা চেপে ধরে থাকে, পিসি লগি হাতে নিয়েই পিছন থেকে এগিয়ে আসে সামনের দিকে। আহ্লাদি যেখানে ছিল সেখানে বসেই কান পেতে রাখে। কথাবার্তা সে সব শুনতে পায় সহজেই। কারণ, সে যাতে শুনতে পায় এমনি করেই বলে কৈলাশ।

“বলি মাসি, তোমাকেও বলি পিসি”, কৈলাশ শুরু করে, “মেয়াকে (মেয়ে’ শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ।) একদম শ্বশুরঘর পাঠাবে না মনে করেছ যদি, সে কেমন ধারা কথা হয়? এত বড় সোমত্ত মেয়া (সমর্থ মেয়ে; যৌবনপ্রাপ্ত মেয়ে), তোমরা দুটি মেয়েলোক বাদে ঘরে একটা পুরুষমানুষ নেই, বিপদ-আপদ ঘটে যদি তো-”

মাসি বলে, “খুনশুটি (হাসি-তামাশাযুক্ত বিবাদ-বিসম্বাদ বা ঝগড়া।) রাখো দিকি কৈলেশ তোমার, মোদ্দাকথাটা কী তাই কও (বলো), বললে না যে খপর আছে, কী?" পিসি বলে, “খপরটা কী তাই কও (বলো)। বেলা বেশি নেই কৈলেশ।”

মাসি-পিসির সাথে পারা যাবে না জানে কৈলাশ। অগত্যা (বাধ্য হয়ে; কাজেই) ফেনিয়ে রসিয়ে বলবার বদলে সে সোজা কথায় আসে, “জগুর সাথে দেখা হলো কাল। খড় তুলে দিতে সাঁঝ হয়ে গেল, তা দোকানে এটটু-মানে আর কি চা খেতে গেছি চায়ের দোকানে, জগুর সাথে দেখা।”

মাসি বলে, “চায়ের দোকান না কিসের দোকান তা বুঝিছি কৈলেশ, তা কথাটা কী?”

পিসি বলে, “সেথা ছাড়া আর ওকে কোথা দেখবে। হাতে দুটো পয়সা এলে তোমারও স্বভাব বিগড়ে যায় কৈলেশ। তা, কী বললে জগু?”

কৈলাশ ফাঁপরে (বিপদে; হতবুদ্ধি অবস্থা) পড়ে আড়চোখে (বাঁকা চোখে; চোরাচাহনি) চায় আহ্লাদির দিকে, হঠাৎ বেমক্কা (স্থান-বহির্ভূত; অসংগত।) জোরের সঙ্গে প্রতিবাদ করে যে, তা নয়, পুলের কাছেই চায়ের দোকান, মাসি-পিসি গিয়ে জিজ্ঞাসা করুক না সেখানে। তারপরেই জোর হারিয়ে বলে, “ওসব একরকম ছেড়ে দিয়েছে জণ্ড। লোকটা কেমন বদলে গেছে মাসি, সত্যি কথা পিসি, জগু (আহ্লাদির স্বামী) আর সেই জণ্ড নেই। বৌকে নিতে চায় এখন। তোমরা নাকি পণ (অঙ্গীকার; দৃঢ় সংকল্প) করেছ মেয়া পাঠাবে না, তাতেই চটে (খেপে) আছে। সম্মান তো আছে একটা মানুষের, কবার (কতবার) নিতে এল তা মেয়া দিলে না, তাই তো নিতে আসে না আর। আমি বলি কী, নিজেরা যেচে (নিজ থেকে; স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে অন্যের কাজ করে দেয় এমন।) এবার পাঠিয়ে দেও মেয়াকে।”

মাসি বলে, “পেট শুকিয়ে লাথি ঝাঁটা খেতে? কলকেপোড়া ছ্যাঁকা (তামাকসেবনে ব্যবহৃত হুকার উপরে কলকেতে যে আগুন থাকে তা দিয়ে দগ্ধ করা।) খেতে? খুঁটির সাথে দড়িবাঁধা হয়ে থাকতে দিনভর রাতভর?”

পিসি-বলে, “মেয়া না পাঠাই, জামাই এলে রাখিনি জামাই-আদরে তাকে? ছাগলটা বেচে দিয়ে খাওয়াইনি ভালোমন্দ দশটা জিনিস?”

মাসি বলে, “ফের আসুক, আদরে রাখব যদ্দিন (যতদিন) থাকে। বজ্জাত (দুর্জন, অন্যের ক্ষতি করার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি) হোক, খুনে হোক, জামাই তো। ঘরে এলে খাতির না করব কেন? তবে মেয়া মোরা পাঠাব না।”

পিসি বলে, “নে কৈলেশ, মরতে মোরা মেয়াকে পাঠাব না।”

বুড়ো রহমান একা খড় চাপিয়ে যায় বাহকদের মাথায়, চুপচাপ শুনে যায় এদের কথা। ছলছল চোখে একবার তাকায় আহ্লাদির দিকে। তার মেয়েটা শ্বশুরবাড়িতে মরেছে অল্পদিন আগে। কিছুতে যেতে চায়নি মেয়েটা, দাপাদাপি (হইচই) করে কেঁদেছে যাওয়া ঠেকাতে, ছোট অবুঝ মেয়ে। তার ভালোর জন্যেই তাকে জোর-জবরদস্তি (বলপ্রয়োগ; জোরাজুরি; পীড়াপীড়ি।) করে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আহ্লাদির সঙ্গে তার চেহারায় কোনো মিল নাই। বয়সে সে ছিল অনেক ছোট, চেহারা ছিল অনেক বেশি রোগা। তবু আহাদির ফ্যাকাশে মুখে তারই মুখের ছাপ রহমান দেখতে পায়, খড়ের আঁটি তুলে দেবার ফাঁকে ফাঁকে যখনই সে তাকায় আহ্লাদির দিকে।

কৈলাশ বলে, “তবে আসল কথাটা বলি। জগু মোকে (আমাকে) বললে, এবার সে মামলা করবে বৌ নেবার জন্য। তার বিয়ে করা বৌকে তোমরা আটকে রেখেছ বদ মতলবে (খারাপ উদ্দশ্যে)। মামলা করলে বিপদে পড়বে। সোয়ামি (স্বামী) নিতে চাইলে বৌকে আটকে রাখার আইন নেই। জেল হয়ে যাবে তোমাদের। আর যেমন বুঝলাম, মামলা জগু করবেই আজকালের মধ্যে। মরবে তোমরা জান মাসি, জান পিসি, মারা পড়বে তোমরা একেবারে।”

আহ্লাদি একটা শব্দ করে, অস্ফুট (অস্পষ্ট; অপ্রকাশিত) আর্তনাদের (ব্যাকুল ও কাতর চিৎকার) মতো। মাসি ও পিসি মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে কয়েক বার। মনে হয়, মনে তাদের একই কথা উদয় হয়েছে, চোখে চোখে চেয়ে সেটা শুধু জানাজানি করে নিল তারা।

মাসি বলল, “জেলে নয় গেলাম কৈলেশ, কিন্তু মেয়া যদি সোয়ামির কাছে না যেতে চায় খুন হবার ভয়ে?”

বলে মাসি বড় সালতির খড় ঠেকানো বাঁশ ছেড়ে দিয়ে লগি গুঁজে দেয় কাদায়, পিসি তরতর করে পিছনে গিয়ে লগি কাদায় গুঁজে হেলে পড়ে, শরীরের ভারে সরু লম্বা সালতিটাকে এগিয়ে দেয় ভাটার টানের বিপক্ষে। বেলা একরকম নেই। ছায়া নামছে চারদিকে।

শকুনরা উড়ে এসে বসছে পাতাশূন্য শুকনো গাছটায়। একটা শকুন উড়ে গেল এ আশ্রয় ছেড়ে অল্প দূরে আরেকটা গাছের দিকে। ডাল ছেড়ে উড়তে আর নতুন ডালে গিয়ে বসতে কী তার পাখা ঝাপটানি!

উপরের পাঠে -
১. কৈলাশ ও মাসিপিসির কথোপকথন আলোচনা।
২. আহ্লাদির নির্যাতনকারী স্বামী জণ্ডর সংসার ছেড়ে চলে আসার কারণ বর্ণনা।

মায়ের বোন মাসি আর বাপের বোন পিসি ছাড়া বাপের ঘরের কেউ নেই আহাদির। দুর্ভিক্ষ (প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে এমন খাদ্যাভাব যাতে ভিক্ষা পাওয়াও কষ্টসাধ্য) কোনোমতে ঠেকিয়েছিল তার বাপ। হামারীর (বহু প্রাণীর মৃত্যু হয় এমন সংক্রামক রোগ।) একটা রোগে, কলেরায়, সে, তার বৌ আর ছেলেটা শেষ হয়ে গেল। মাসি-পিসি তার আশ্রয়ে মাথা গুঁজে আছে অনেক দিন, দূর ছাই সয়ে আর কুড়িয়ে পেতে খেয়ে নিরাশ্রয় বিধবারা যেমন থাকে। নিজেদের ভরণপোষণের কিছু তারা রোজগার করত ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি (চালকুমড়া ও ডাল পিষে ছোট ছোট আকারে তৈরি করা খাদ্যবস্তু যা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয় এবং সবজি-মাছ-মাংসের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া হয়।) বেঁচে, হোগলা (বাংলাদেশসহ আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে জাত বীরুৎশ্রেণির উদ্ভিদ যার চ্যাপটা ও দীর্ঘ পাতা মাদুর বেড়া প্রভৃতি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।) গেঁথে (তৈরি করে)শাকপাতা ফলমূল ডাঁটা কুড়িয়ে, এটা ওটা জোগাড় করে। শাকপাতা খুদকুঁড়ো (চালের ভাঙা অংশ) ভোজন, বছরে দুজোড়া থান পরন- খরচ তো এই। বছরের পর বছর ধরে কিছু পুঁজি পর্যন্ত হয়েছিল দুজনের, রূপোর টাকা আধুলি (১ টাকার অর্ধেক বা ৫০ পয়সা) সিকি (১ টাকার ৪ ভাগরে একভাগ বা ২৫ পয়সা)। দুর্ভিক্ষের সময়টা বাঁচবার জন্য তাদের লড়তে হয়েছে সাংঘাতিকভাবে, আহাদির বাপ তাদের থাকাটা শুধু বরাদ্দ রেখে খাওয়া ছাঁটাই করে দিয়েছিল একেবারে পুরোপুরি। তারও তখন বিষম অবস্থা। নিজেরা বাঁচে কি বাঁচে না, তার ওপর জগুর লাখির চোটে মরমর (মরোমরো অর্থ মরণাপন্ন অবস্থা) মেয়ে এসে হাজির। সে কোনদিক সামলাবে? মাসি-পিসির সেবা-যত্নেই আহ্লাদি অবশ্য সেবার বেঁচে গিয়েছিল, তার বাপ-মাও সেটা স্বীকার করেছে। কিন্তু কী করবে, গলা কেটে রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি-বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে। পাল্লা দিয়ে মাসি-পিসি আহ্লাদির জীবনের জন্য লড়েছিল, পেল যদি তো খেয়ে, না-পেল যদি তো না-খেয়েই। অবস্থা যখন তাদের অতি কাহিল (খুব দুর্বল), চারদিকে না-খেয়ে মরা শুরু করেছে মানুষ, মরণ ঠেকাতেই ফুরিয়ে আসছে তাদের জীবনীশক্তি; একদিন মাসি বলে পিসিকে, “একটা কাজ করবি বেয়াইন? তাতেও তোরও দুটো পয়সা আসে, মোরও দুটো পয়সা আসে।”

শহরের বাজারে তরিতরকারি ফলমূলের দাম চড়া। গাঁ থেকে কিনে যদি বাজারে গিয়ে বেচে আসে তারা, কিছু রোজগার (আয়; উপার্জন) হবে। একা মাসির ভরসা হয় না সালতি বেয়ে অতদূর যেতে, যাওয়া-আসাও একার দ্বারা হবে না তার। পিসি রাজি হয়েছিল। এতে কিছু হবে কি না হবে ভগবান জানে, কিন্তু যদি হয় তবে রোজগারের একটা নতুন উপায় মাসি পেয়ে যাবে আর সে পাবে না, তাকে না পেলে অন্য কারো সাথে হয়ত মাসি বন্দোবস্ত (আয়োজন) করবে, তা কি পারে পিসি ঘটতে দিতে।

সেই থেকে শুরু হয় গেরস্তের (গৃহস্থ- সাধারণ মধ্যবিত্ত) বাড়তি (উদ্বৃত্ত; অতিরিক্ত) শাকসবজি ফলমূল নিয়ে মাসি-পিসির সালতি বেয়ে শহরের বাজারে গিয়ে বেঁচে আসা। গাঁয়ের বাবু বাসিন্দারাও নগদ পয়সার জন্য বাগানের জিনিস বেচতে দেয়।

মাসি-পিসির ভাব ছিল আগেও। অবস্থা এক, বয়স সমান, একঘরে বাস, পরস্পরের কাছে ছাড়া সুখ-দুঃখের কথা তারা কাকেই-বা বলবে, কেই-বা শুনবে। তবে হিংসা দ্বেষ (ঈর্ষা; হিংসা) রেষারেষিও (পরস্পর হিংসা বা বিদ্বেষ) ছিল যথেষ্ট, কোন্দলও বেধে যেত কারণে অকারণে। পিসি এ বাড়ির মেয়ে, এ তার বাপের বাড়ি। মাসি উড়ে এসে জুড়ে বসেছে এখানে। তাই মাসির উপর পিসির একটা অবজ্ঞা অবহেলার ভাব ছিল। এই নিয়ে পিসির অহংকার আর খোঁচাই সবচেয়ে অসহ্য লাগত মাসির। ধীর শান্ত দুঃখী মানুষ মনে হতো এমনি তাদের, কিন্তু ঝগড়া বাধলে অবাক হয়ে যেতে হতো তাদের দেখে। সে কী রাগ, সে কী তেজ, সে কী গোঁ (জিদ; একরোখামি)! মনে হতো এই বুঝি কামড়ে দেয় একে অপরকে, এই বুঝি কাটে বঁটি দিয়ে।

শাকসবজি বেঁচে বাঁচবার চেষ্টায় একসঙ্গে কোমর বেঁধে নেমে পড়ামাত্র সব বিরোধ সব পার্থক্য উড়ে গিয়ে দুজনের হয়ে গেল একমন, একপ্রাণ। সে মিল জমজমাট (সরগরম ও উপভোগ্য) হয়ে উঠল আহ্লাদির ভার ঘাড়ে পড়ায়। নিজের পেট ভরানো শুধু নয়, নিজেদের বেঁচে থাকা শুধু নয়, তাদের দুজনেরই এখন আহ্লাদি আছে। খাইয়ে পরিয়ে যত্নে রাখতে হবে তাকে, শ্বশুরঘরের কবল (গ্রাস; কৌশল) থেকে বাঁচাতে হবে তাকে, গাঁয়ের বজ্জাতদের (বদমায়েশদের; দুর্বৃত্তের আচরণ) নজর থেকে সামলে রাখতে হবে, কত দায়িত্ব তাদের, কত কাজ, কত ভাবনা।

বাপ মা বেঁচে থাকলে আহ্লাদিকে হয়ত শ্বশুরবাড়ি যেতে হতো, মাসি-পিসিও বিশেষ কিছু বলতো কি না সন্দেহ। কিন্তু তারা তো নেই, এখন মাসি-পিসিরই সব দায়িত্ব। বিনা পরামর্শে আপনা থেকেই তাদের ঠিক হয়েছিল, আহ্লাদিকে পাঠানো হবে না। আহ্লাদিকে কোথাও পাঠানোর কথা তারা ভাবতেও পারে না। বিশেষ করে ওই খুনেদের কাছে কখনো মেয়ে তারা পাঠাতে পারে, যাবার কথা ভাবলেই মেয়ে যখন আতঙ্কে পাঁশুটে (ছাইবর্ণবিশিষ্ট; পাংশুবর্ণ; ফ্যাকাশে) মেরে যায়?

বাপের ঘরদুয়ার জমিজমাটুকু আহ্লাদিকে বর্তেছে (উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে), জগুর বৌ নেবার আগ্রহও খুবই স্পষ্ট। সামান্যই ছিল তার বাপের, তারও সিকিমতো আছে মোটে, বাকি গেছে গোকুলের কবলে। তবু মুফতে (বিনামূল্যে; মাগনা) যা পাওয়া যায় তাতেই জগুর প্রবল (প্রচণ্ড) লোভ।

খালি ঘরে আহ্লাদিকে রেখে কোথাও যাবার সাহস তাদের হয় না। দুজনে মিলে যদি যেতে হয় কোথাও আহ্লাদিকে তারা সঙ্গে নিয়ে যায়।

মাসি বলে, ‘ডরাসনি (ভয় পাসনি) আহ্লাদি। ভাঁওতা (ফাকি; প্রতারণা) দিয়ে আমাদের দমাবার (থামাবার) ফিকির (কৌশল; ফন্দি) সব। নয় তো কৈলেশকে দিয়ে ওসব কথা বলায় মোদের?’

পিসি বলে, ‘দুদিন বাদে ফের আসবে দেখিস জামাই। তখন শুধোলে (জিজ্ঞাস করলে) বলবে, কই না, আমি তো ওসব কিছু বলি নি কৈলেশকে।’

মাসি বলে, ‘চার মাসে পড়লি, আর কটা দিন বা। মা-মাসির কাছেই রইতে হয় এ সময়টা, জামাই এলে বুঝিয়ে বলব।’ পিসি বলে, ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়, জানিস আহ্লাদি। তোর পিসে ছিল জগুর মতো। খোকাটা কোলে আসতে কী হয়ে গেল সেই মানুষ। চুপি চুপি এসে এটা ওটা খাওয়ায়, উঠতে বলি তো ওঠে, বসতে বলি তো বসে’।

মাসি বলে, ‘তোর মেসো (মাসির স্বামী; খালু) ঠিক ছিল, শাউড়ি(শাশুরি)  ননদ (স্বামীর বোন) ছিল বাঘ। উঠতে বসতে কী ছ্যাঁচা খেয়েছি ভাবলে বুক কাঁপে। কিন্তু জানিস আহ্লাদি, মেয়েটা যেই কোলে এল শাউড়ি ননদ যেন মোকে মাথায় করে রাখলে বাঁচে।’

পিসি বলে, ‘তুইও যাবি, সোয়ামির ঘর করবি। ডরাসনি, ডর (ভয়) কিসের?’

বাড়ি ফিরে দীপ জ্বেলে মাসি-পিসি রান্নাবান্না সারতে লেগে যায়। বাইরে দিন কাটলেও আহ্লাদির পরিশ্রম কিছু হয়নি, শুয়ে বসেই দিন কেটেছে। তবু মাসি-পিসির কথায় সে একটু শোয়। শরীর নয়, মনটা তার কেমন করছে। নিজেকে তার ছ্যাঁচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে। মাসি-পিসির আড়ালে থেকেও সে টের পায় কীভাবে মানুষের পর মানুষ তাকাচ্ছে তার দিকে, কতজন কতভাবে মাসি-পিসির সঙ্গে আলাপ জমাচ্ছে তরিতরকারির মতো তাকেও কেনা যায় কি না যাচাই করবার জন্য। গাঁয়েরও কতজন তার কত রকমের দর দিয়েছে মাসি-পিসির কাছে। মাসি-পিসিকে চিনে তারা অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে আজকাল, কিন্তু গোকুল হাল ছাড়েনি। মাসি-পিসিকে পাগল করে তুলেছে গোকুল। মায়ের বাড়া (মায়ের থেকে বেশি) তার এই মাসি-পিসি, কী দুর্ভোগ (অব্যবস্থাজনিত দুঃখকষ্ট) তাদের তার জন্য। মাসি-পিসিকে এত যন্ত্রণা দেওয়ার চেয়ে সে নয় শ্বশুরঘরের লাঞ্ছনা সইত, জগুর লাথি খেত। ঈষৎ (সামান্য) তন্দ্রার (ঘুমঘুম ভাব) ঘোরে শিউরে ওঠে আহ্লাদি। একপাশে মাসি আর একপাশে পিসিকে না নিয়ে শুলে কি চলবে তার কোনোদিন?

রান্না সেরে খাওয়ার আয়োজন করছে মাসি-পিসি, একেবারে ভাতটাত বেড়ে আহ্লাদিকে ডাকবে। ভাগাভাগি কাজ তাদের এমন সহজ হয়ে গেছে যে বলাবলির দরকার তাদের হয় না, দুজনে মিলে কাজ করে যেন একজনে করছে। এবার ব্যঞ্জনে (রান্না-করা তরকারি) নুন দেবে এ কথা বলতে হয় না পিসিকে, ঠিক সময়ে নুনের পাত্র সে এগিয়ে দেয় মাসির কাছে। বলাবলি করছে তারা আহ্লাদির কথা, আহাদির সুখদুঃখ, আহ্লাদির সমস্যা, আহ্লাদির ভবিষ্যৎ। জামাই যদি আসে, একটি কড়া কথা তাকে বলা হবে না, এতটুকু খোঁচা দেওয়া হবে না। উপদেশ দিতে গেলে চটবে জামাই, পুরুষমানুষ তো যতই হোক, এটা করা তার উচিত নয়, এসব কিছু বলা হবে না তাকে। জামাই এসেছে তাই আনন্দ রাখবার যেন ঠাঁই নেই এই ভাব দেখাবে মাসি-পিসি- আহ্লাদিকে শিখিয়ে দিতে হবে সোয়ামি এসেছে বলে যেন আহ্লাদে গদগদ হবার ভাব দেখায়। যে কদিন থাকে জামাই, সে যেন অনুভব করে, সে-ই এখানকার কর্তা, সে-ই সর্বেসর্বা।

বাইরে থেকে হাঁক (উচ্চৈঃস্বরে ডাক; হুংকার) আসে কানাই চৌকিদারের (প্রহরী)। মাসি-পিসি পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়, জোরে নিঃশ্বাস পড়ে দুজনের। সারাটা দিন গেছে লড়ে আর লড়ে। সরকারবাবুর সঙ্গে বাজারের তোলা (বাজারে বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায়করা খাজনা) নিয়ে ঝগড়া করতে অর্ধেক জীবন বেরিয়ে গেছে দু-জনের। এখন এল চৌকিদার কানাই। হাঙ্গামা না আসে রাত্রে, গাঁয়ে লোক যখন ঘুমোচ্ছে।

রসুই চালায় (যে চালার নিচে রান্না করা হয়; রান্নাঘর) ঝাঁপ এঁটে মাসি-পিসি বাইরে যায়। শুক্লপক্ষের (পূর্ণিমা তিথিতে যে পক্ষের অবসান হয়।) একাদশীর উপোস করেছে তারা দুজনে গতকাল। আজ দ্বাদশী, জ্যোৎস্না বেশ উজ্জ্বল। কানাইয়ের সাথে গোকুলের যে তিনজন পেয়াদা (চাপরাশি; আদেশ পালনকারী) এসেছে তাদের মাসি-পিসি চিনতে পারে, মাথায় লাল পাগড়ি-আঁটা লোকটা তাদের অচেনা।

কানাই বলে, ‘কাছারিবাড়ি যেতে হবে একবার।’

মাসি বলে, ‘এত রাতে?’

পিসি বলে, ‘মরণ নেই?’

কানাই বলে, ‘দারোগাবাবু এসে বসে আছেন বাবুর সাথে। যেতে একবার হবেগো দিদিঠাকরুনরা। বেঁধে নিয়ে যাবার হুকুম আছে।’

মাসি-পিসি মুখে মুখে তাকায়। পথের পাশে ডোবার ধারে কাঁঠাল গাছের ছায়ায় তিন-চারজন ঘুপটি মেরে আছে স্পষ্টই দেখতে পেয়েছে মাসি-পিসি। ওরা যে গাঁয়ের গুন্ডা সাধু বৈদ্য ওসমানেরা তাতে সন্দেহ নেই, বৈদ্যের ফেটি-বাঁধা বাবরি চুলওয়ালা মাথাটায় পাতার ফাঁকে জ্যোৎস্না পড়েছে। তারা যাবে কাছারিতে কানাই আর পেয়াদা কনস্টেবলের সঙ্গে। ওরা এসে আহ্লাদিকে নিয়ে যাবে।

মাসি বলে, ‘মোদের একজন গেলে হবে না কানাই?’

পিসি বলে, ‘আমি যাই চলো?’

কর্তা ডেকেছেন দুজনকে।

মাসি-পিসি দুজনেই আবার তাকায় মুখে মুখে।

মাসি বলে, ‘কাপড়টা ছেড়ে আসি কানাই।’

পিসি বলে, ‘হাত ধুয়ে আসি, একদণ্ড লাগবে না।’

তাড়াতাড়িই ফিরে আসে তারা। মাসি নিয়ে আসে বঁটিটা (মাছ তরকারি প্রভৃতি কোটার অস্ত্রবিশেষ) হাতে করে, পিসির হাতে দেখা যায় রামদার মতো মস্ত একটা কাটারি।

মাসি বলে, ‘কানাই, কত্তাকে (কর্তাকে) বোলো, মেয়েনোকের (মেয়েলোক) এত রাতে কাছারিবাড়ি যেতে নজ্জা (লজ্জা) করে। কাল সকালে যাব।’ পিসি বলে, ‘এত রাতে মেয়েনোককে কাছারিবাড়ি ডাকতে কত্তার (কর্তা) নজ্জা করে না কানাই?’

কানাই ফুঁসে ওঠে, ‘না যদি যাও ঠাকরুনরা ভালোয় ভালোয়, ধরে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবার হুকুম আছে কিন্তু বলে রাখলাম।’

মাসি বঁটিটা বাগিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে, 'বটে? ধরে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবে? এসো। কে এগিয়ে আসবে এসো। বঁটির এক কোপে গলা ফাঁক করে দেব।'

পিসি বলে, ‘আয় না বজ্জাত হারামজাদারা, এগিয়ে আয় না? কাটারির (কাটবার অস্ত্র) কোপে গলা কাটি দু-একটার।’

দু-পা এগোয় তারা দ্বিধাভরে। মাসি-পিসির মধ্যে ভয়ের লেশটুকু না দেখে সত্যিই তারা খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা (হতবুদ্ধি অবস্থা) খেয়ে গিয়েছে। মারাত্মক ভঙ্গিতে বঁটি আর দা উঁচু হয় মাসি-পিসির।

মাসি বলে, ‘শোনো কানাই, এ কিন্তু এর্কি (ইয়ার্কি’ শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ; হাস্য-পরিহাস বা রসিকতা) নয় মোটে। তোমাদের সাথে মোরা মেয়েনোক পারব না জানি কিন্তু দুটো-একটাকে মারব জখম করব ঠিক।’

পিসি বলে, ‘মোরা নয় মরব।’

তারপর বিনা পরামর্শেই মাসি-পিসি হঠাৎ গলা ছেড়ে দেয়। প্রথমে শুরু করে মাসি, তারপর যোগ দেয় পিসি। আশপাশে যত বাসিন্দা আছে সকলের নাম ধরে গলা ফাটিয়ে তারা হাঁক দেয়, ও বাবাঠাকুর! ও ঘোষ মশায়! ও জনাদ্দন! ওগো কানুর মা! বিপিন! বংশী ...’

কানাই অদৃশ্য হয়ে যায় দলবল নিয়ে। হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি শুরু হয়ে যায় পাড়ায়, অনেকে ছুটে আসে, কেউ কেউ ব্যাপার অনুমান করে ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দেয় বাইরে না বেরিয়ে।

এই হট্টগোলের পর আরও নিঝুম আরও থমথমে মনে হয় রাত্রিটা। আহ্লাদিকে মাঝখানে নিয়ে শুয়ে ঘুম আসে না মাসি-পিসির চোখে। বিপদে পড়ে হাঁক দিলে পাড়ার এত লোক ছুটে আসে, এমনভাবে প্রাণ খুলে এতখানি জ্বালার সঙ্গে নিজেদের মধ্যে খোলাখুলিভাবে গোকুল আর দারোগা ব্যাটার চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে সাহস পায়, জানা ছিল না মাসি-পিসির। তারা হাঁকডাক শুরু করেছিল খানিকটা কানাইদের ভড়কে দেবার জন্যে, এত লোক এসে পড়বে আশা করেনি। তাদের জন্য যতটা নয়, গোকুল আর দারোগার ওপর রাগের জ্বালাই যেন ওদের ঘর থেকে টেনে বার করে এনেছে মনে হলো সকলের কথাবার্তা শুনে। কেমন একটা স্বস্তি বোধ করে মাসি-পিসি। বুকে নতুন জোর পায়।

মাসি বলে, ‘জানো বেয়াইন, ওরা ফের ঘুরে আসবে মন বলছে। এত সহজে ছাড়বে কি।’

পিসি বলে, ‘তাই ভাবছিলাম। মেয়েটাকে কুটুমবাড়ি সরিয়ে দেওয়ায় সোনাদের ঘরে মাঝরাতে আগুন ধরিয়েছিল সেবার।’

খানিক চুপচাপ ভাবে দুজনে।

মাসি বলে, ‘সজাগ রইতে হবে রাতটা।’

পিসি বলে, ‘তাই ভালো। কাঁথা কম্বলটা চুবিয়ে রাখি জলে, কী জানি কী হয়।’

আস্তে চুপি চুপি তারা কথা কয়, আহ্লাদির ঘুম না ভাঙে। অতি সন্তর্পণে তারা বিছানা ছেড়ে ওঠে। আহ্লাদির বাপের আমলের গোরুটা নেই, গামলাটা আছে। ঘড়া থেকে জল ঢেলে মোটা কাঁথা আর পুরনো ছেঁড়া একটা কম্বল চুবিয়ে রাখে, চালায় আগুন ধরে উঠতে উঠতে গোড়ায় চাপা দিয়ে নেভানো যাতে সহজ হয়। ঘড়ায় আর হাঁড়ি কলসিতে আরও জল এনে রাখে তারা ডোবা থেকে। বঁটি আর দা রাখে হাতের কাছেই। যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি।      [সংক্ষেপিত]

উপরের পাঠে -
১. আহাদিকে নিয়ে মাসিপিসির সংগ্রামী জীবনের চিত্র বর্ণনা ।
২. মাসি-পিসির বিরোধ অবসানের কারণ ।
৩. দারোগাবাবুর প্রতিনিধি কানাইকে মাসি-পিসি কীভাবে মোকাবেলা চিত্র বর্ণনা ।

উৎস নির্দেশ:
‘মাসি-পিসি’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতার ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ১৩৫২ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় (মার্চ-এপ্রিল ১৯৪৬)। পরে এটি সংকলিত হয় ‘পরিস্থিতি’ (অক্টোবর ১৯৪৬) নামক গল্পগ্রন্থে। বর্তমান পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে ‘ঐতিহ্য’ প্রকাশিত মানিক-রচনাবলি পঞ্চম খণ্ড থেকে।

শব্দার্থ ও টীকা:
➠ সালতি- শালকাঠ নির্মিত বা তালকাঠের সরু ডোঙা বা নৌকা।
➠ কদমছাঁট- মাথার চুল এমনভাবে ছাঁটা যে তা কদমফুলের আকার ধারণ করে।
➠ লগি- হাত ছয়েক লম্বা সরু বাঁশ। নৌকা চালানোর জন্য ব্যবহৃত বাঁশের দণ্ড।
➠ খপর- ‘খবর’ শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ।
➠ মেয়া- ‘মেয়ে’ শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ।
➠ সোমত্ত- সমর্থ (সংসারধর্ম পালনে), যৌবনপ্রাপ্ত।
➠ খুনসুটি- হাসি-তামাশাযুক্ত বিবাদ-বিসম্বাদ বা ঝগড়া।
➠ বেমক্কা- স্থান-বহির্ভূত। অসংগত।
➠ পেটে শুকিয়ে লাথি ঝাঁটা- পর্যাপ্ত খাবার না-জুগিয়ে কষ্ট দেওয়ার পাশাপাশি লাথি ঝাঁটার মাধ্যমে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা।
➠ কলকেপোড়া ছ্যাঁকা- তামাকসেবনে ব্যবহৃত হুকার উপরে কলকেতে যে আগুন থাকে তা দিয়ে দগ্ধ করা।
➠ ডালের বড়ি- চালকুমড়া ও ডাল পিষে ছোট ছোট আকারে তৈরি করা খাদ্যবস্তু যা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয় এবং সবজি-মাছ-মাংসের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া হয়।
➠ পাঁশুটে- ছাইবর্ণবিশিষ্ট। পাংশুবর্ণ। পাণ্ডুর। ফ্যাকাশে।
➠ ব্যঞ্জন- রান্না-করা তরকারি।
➠ বাজারের তোলা- বাজারে বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায়করা খাজনা।
➠ রসুই চালা- যে চালার নিচে রান্না করা হয়। রান্নাঘর।
➠ কাটারি- কাটবার অস্ত্র।
➠ এর্কি- ‘ইয়ার্কি’ শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ। হাস্য-পরিহাস বা রসিকতা।

পাঠ-পরিচিতি:
স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে “মাসি-পিসি” গল্প। আহ্লাদি নামক ওই তরুণীর মাসি ও পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। তারা তাদের অস্তিত্বরক্ষার পাশাপাশি বিরূপ বিশ্ব থেকে আহ্লাদিকে রক্ষার জন্য যে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী সংগ্রাম পরিচালনা করে সেটাই গল্পটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। অত্যাচারী স্বামী এবং লালসা-উন্মত্ত জোতদার (জমিদারের কাছ থেকে রায়তি স্বত্বে পাওয়া চাষের জমির মালিক), দারোগা ও গুন্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে আহ্লাদিকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে অসহায় দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবনযুদ্ধ খুবই প্রশংসনীয়। দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী (হৃদয়বিদারক; করুণ) স্মৃতি, জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম, নারী হয়ে নৌকাচালনা ও সবজির ব্যবসায় পরিচালনা প্রভৃতি এ গল্পের বৈচিত্র্যময় দিক।

লেখক পরিচিতি:
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকায় ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম নীরদাসুন্দরী দেবী। তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাকনাম মানিক । তিনি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন। মাত্র আটচল্লিশ (৪৮) বছর তিনি বেঁচেছিলেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএসসি পড়ার সময়ে মাত্র বিশ (২০) বছর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে তিনি প্রথম গল্প “অতসীমামী” লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। তারপর জীবনের বাকি আটাশ (২৮) বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে গেছেন। মাঝে বছর তিনেক মাত্র তিনি চাকরি ও ব্যবসায়িক কাজে নিজেকে জড়ালেও বাকি পুরো সময়টাই তিনি সার্বক্ষণিকভাবে সাহিত্যসেবায় নিয়োজিত ছিলেন। উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক হিসেবে মানিক বাংলা সাহিত্যে খ্যাতিমান। অল্প সময়েই প্রচুর গল্প-উপন্যাস সৃষ্টি করেন। সেই সঙ্গে লিখেছেন কিছু কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ ও ডায়েরি। বিজ্ঞানমনস্ক এই লেখক মানুষের মনোজগৎ তথা অন্তর্জীবনের রূপকার হিসেবে সার্থকতা দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে সমাজবাস্তবতার শিল্পী হিসেবেও স্বাক্ষর রেখেছেন। ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘চিহ্ন’ প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস। তাঁর বিখ্যাত ছোটগল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘সরীসৃপ’, ‘সমুদ্রের স্বাদ’, ‘কুষ্ঠরোগীর বৌ’, ‘টিকটিকি’, ‘হলুদ পোড়া’, ‘আজ কাল পরশুর গল্প’, ‘হারানের নাতজামাই’, ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’ প্রভৃতি। কলকাতায় ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১. কানাইয়ের সাথে গোকুলের কতজন পেয়াদা এসেছিলেন?
ক. দুই
খ. তিন
গ. চার
ঘ. পাঁচ
২. মাসি-পিসি আহ্লাদিকে জগুর কাছে পাঠাতে চায়নি কেন?
ক. নির্যাতনের ভয়ে
খ. স্নেহের আতিশয্যে
গ. দারিদ্র্যের কারণে
ঘ. আহ্লাদি যেতে চায়নি বলে
উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
দেখি নাই যারে, চিনি নাই যারে
শুনি নাই নাম কভু
তিনিই আজিকে দেবতা আমার
তিনিই আমার প্রভু।
৩. উদ্দীপকের প্রভু ‘মাসি-পিসি’ রচনার কার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ক. লেখকের
খ. জগুর
গ. কৈলেশের
ঘ. গোকুলের
৪. উভয়ের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে তা হলো:
ক. আধিপত্য
খ. পাণ্ডিত্য
গ. স্বৈরাচারিতা
ঘ. অহংবোধ
৫. আহ্লাদির স্বামীর নাম কী?
ক. জণ্ড
খ. কৈলাশ
গ. কানাই
ঘ. গোকুল
৬. ‘বজ্জাত হোক, খুনে হোক, জামাই তো।’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ক. মেয়ের প্রতি ভালবাসা
খ. মেয়ে জামাইয়ের প্রতি ভালবাসা
গ. মেয়ে জামাইয়ের প্রতি ঘৃণা
ঘ. নাত জামাইয়ের প্রতি ভালবাসা
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
বন্যা পরবর্তী সময়ে গ্রামটিতে আকাল পড়েছে। লতিফা তার দুধের সন্তানকে বলতে গেলে একরকম অনাহারেই রেখেছে। খাদ্য যোগাড় করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।
৭. উদ্দীপকের লতিফার সঙ্গে ‘মাসিপিসি’ গল্পে কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. মসি-পিসি
খ. আহ্লাদি
গ. কৈলাশ
ঘ. জণ্ড
৮. এরূপ সাদৃশ্যের কারণ-
i. জীবনসংগ্রাম
ii. অস্তিত্ব-সংকট
iii. বন্যা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. iii
গ. iii
ঘ. i, ii ও iii
৯. আহ্লাদিকে পাওয়ার জন্য মাসিপিসিকে কে পাগল করে তুলেছে?
ক. কানাই
খ. গোকুল
গ. কৈলেশ
ঘ. দারোগা বাবু
১০. ‘বাজারের তোলা’ বলতে বোঝায়-
ক. বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা কর
গ. বিক্রেতাদের লাভের অংশ
খ. ক্রেতাদের দেয়া ক্ষতিপূরণ
ঘ. ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগকৃত অর্থ
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ১১ ও ১২ নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
আহারে। এরে মাইয়াডারে মাইরা ফালাইস না। ওরে ও পাষাইণ্যা, দরজা খোল, মারিস না, আর মারিস না, জাহান্নামে যাইবি, মারিস না। বাইরে থেকে দু'হাতে ঝাঁপিটাকে ঠেলছে ফকিরের মা। আবুল একবার তাকাল সেদিকে, কিন্তু ঝাঁপি খুলল না।
১১. উদ্দীপকের সঙ্গে 'মাসিপিসি' গল্পে কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. কৈলেশ
গ. কানাই
খ. জণ্ড
ঘ. গোকুল
১২. এরূপ সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হল-
i. নারী নির্যাতনে
ii. সমাজে পুরুষতন্ত্রে
iii. নারীর অসহায়তায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. i, ii ও iii
১৩. ‘সোমত্ত’ শব্দের অর্থ কী?
ক. ষণ্ডা
খ. যৌবনপ্রাপ্ত
গ. সোমবার
ঘ. শাস্তি
১৪. মাসিপিসির সমস্ত মন জুড়ে কোন ভাবনা কাজ করে?
ক. নতুন সংসার রচনা
খ. পালিয়ে যাবার চিন্তা
গ. আহ্লাদিকে রক্ষা করা
ঘ. ব্যবসায়ে উন্নতি
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ১৫ ও ১৬ নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
পৃথিবীতে সাহসীরাই টিকে থাকে। কেননা সাহস মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। ভীরু কাপুরুষেরাই কেবল মরে। বার বার মরে।
১৫. উদ্দীপকের মূলভাব প্রকাশ পেয়েছে যে চরিত্রে-
ক. পিসি-আহ্লাদি
খ. মাসি-পিসি
গ. জঞ্জ-কৈলাশ
ঘ. কানাই-দারোগা বাবু
১৬. উদ্দীপক ও 'মাসিপিসি' গল্পে ফুটে উঠেছে-
i. সাহসের বিকল্প নেই
ii. ভয় বিপদ বাড়ায়
iii. ভয় পুরুষতন্ত্রের সহায়ক
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. ii ও iii

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. আহ্লাদি কোন পর্যন্ত ঘোমটা টেনে দেয়?
উত্তর : আহ্লাদি সিঁথির সিঁদুর পর্যন্ত ঘোমটা টেনে দেয়।
২. কী উপলক্ষে মাসি-পিসি উপোস ছিল?
উত্তর : শুক্লপক্ষের একাদশী উপলক্ষে মাসি-পিসি উপোস ছিল।
৩. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রথম গল্পের নাম কী?
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রথম গল্পের নাম ‘অতসীমামী’।
৪. ‘মাসি-পিসি' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
৫. মাসি-পিসি কী পণ করেছে?
উত্তর : মাসি-পিসি আহ্লাদিকে জগুর ঘরে ফেরত না পাঠানোর পণ করেছে।
৬. কার শ্বাশুড়ি-ননদ বাঘের মতো ছিল?
উত্তর : আহ্লাদির মাসির শ্বাশুড়ি-ননদ বাঘের মতো ছিল।
৭. আহ্লাদির জমিজমার সিকিভাগ ছাড়া বাকিটা কার দখলে গেছে?
উত্তর : আহ্লাদির জমিজমার সিকিভাগ ছাড়া বাকিটা গোকুলের দখলে গেছে।
৮. আহ্লদিকে পাওয়ার জন্য কে হাল ছাড়েনি?
উত্তর : আহ্লাদিকে পাওয়ার জন্য গোকুল হাল ছাড়েনি।
৯. কীভাবে আহ্লাদির বাবা, মা, ভাই মারা গিয়েছিল?
উত্তর : কলেরায় আক্রান্ত হয়ে আহ্লাদির বাবা, মা ও ভাই মারা গিয়েছিল।
১০. আহ্লাদির পিসির স্বভাব বদলেছিল কখন?
উত্তর : ছেলে হওয়ার পর আহ্লাদির পিসির স্বভাব বদলেছিল।
১১. কখন কৈলেশের স্বভাব বিগড়ে যায়?
উত্তর : হাতে দুটো পয়সা এলে কৈলেশের স্বভাব বিগড়ে যায়।
১২. মাসি-পিসির চিৎকারে কে দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়?
উত্তর : মাসি-পিসির চিৎকারে কানাই চৌকিদার দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়।
১৩. কৈলেশের কাছে কোন ব্যাপারটি প্যাঁচালো মনে হয়েছিল?
উত্তর : কৈলেশের কাছে আহ্লাদির গর্ভবতী হওয়ার ব্যাপারটি প্যাঁচালো মনে হয়েছিল।
১৪. ‘সোমত্ত মেয়া’ বলে কাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর : ‘সোমত্ত মেয়া’ বলে আহ্লাদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১৫. ভালোয় ভালোয় না গেলে কানাই মাসি-পিসিকে কীভাবে কাছারিবাড়ি নিয়ে যাবার হুকুমের কথা বলে?
উত্তর : ভালোয় ভালোয় না গেলে কানাই মাসি-পিসিকে ধরে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবার হুকুমের কথা বলে।
১৬. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে কেন?
উত্তর : মেয়ের কথা মনে হওয়ায় বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে।
আহ্লাদির চেয়ে বয়সে ছোট মেয়েটাকে রহমান বিয়ে দিয়েছিল। অবুঝ মেয়েটা শ্বশুরবাড়ি না যাওয়ার জন্য খুব কেঁদেছিল। কিন্তু তার ভালোর জন্যই তাকে জোর জবরদস্তি করে শ্বশুরবাড়ি পাঠায় রহমান। সেখানে গিয়ে অল্পদিন পরেই মেয়েটা মারা যায়। একই সমস্যার শিকার আহ্লাদিকে দেখে মেয়ের কথা মনে হওয়ায় রহমানের চোখ ছলছল করে।
২. জগু মাসি-পিসির বিরুদ্ধে মামলা করবে কেন?
উত্তর : আহ্লাদিকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জগু মাসি-পিসির বিরুদ্ধে মামলা করবে।
পাষণ্ড স্বামীর অত্যাচার থেকে আহ্লাদিকে রক্ষা করার জন্য মাসি-পিসি তাকে নিজেদের কাছে রাখে। আহ্লাদির স্বামী জগু বার বার তাকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে চাইলেও মাসি-পিসি যেতে দেয় না। এতে জগুর মনে হয় যে, তার বিয়ে করা বউকে মাসি-পিসি বদ মতলবে আটকে রেখেছে এবং তাকে দিয়ে পয়সা-কামাচ্ছে। এজন্যই সে মাসি-পিসির বিরুদ্ধে মামলা করবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফাতেমা বেগম। নিঃসন্তান এ বৃদ্ধার আপন বলতে কেউ নেই। একদিন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে হঠাৎ তিনি একটি মেয়েকে রাস্তায় কাঁদতে দেখেন। বৃত্তান্ত শুনে তিনি মেয়েটিকে নিয়ে আসেন এবং স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মেয়েটিকে মাতৃস্নেহে আশ্রয় দেন স্বামীপক্ষ খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যেতে চান। মেয়েটি কোনোভাবেই যেতে ইচ্ছুক নন। বৃদ্ধাও মেয়েটিকে যেতে দেননি। এতে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মৃত্যুর পূর্বে বৃদ্ধা মেয়েটিকে সমুদয় সম্পত্তি দান করে যান।
ক. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয় ’ -উক্তিটি কার?
খ. ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মেয়েটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির সাথে কীভাবে সঙ্গতিপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বৃদ্ধা কি একসূত্রে গাঁথা- মন্তব্যটি যাচাই করো।
ক. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয় ’ -উক্তিটি উক্তিটি পিসির।
খ. ষড়যন্ত্র করে আহ্লাদিকে গোকুল তুলে নিতে আসলে মাসি-পিসি তাদের কৌশলে প্রতিহত করে পরবর্তী আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত থাকার বিষয়টিকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের লেখক প্রদত্ত উক্তি দ্বারা বুঝিয়েছেন।
গোকুল আহ্লাদিকে অনৈতিকভাবে পেতে চায়। মাসি-পিসিকে সে ছলে-বলে-কৌশলে বশীভূত করতে না পেরে কানাই চৌকিদারের মাধ্যমে মাসি-পিসিকে কাছারি বাড়ি পাঠিয়ে তার গুণ্ডা-বাহিনী দিয়ে তুলে নেওয়ার ফাঁদ পাতলে সংসার-অভিজ্ঞ মাসি-পিসি তা বুঝতে পারে এবং বঁটি ও রামদার ভয় দেখিয়ে এবং প্রতিবেশীদের ডেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়। গুণ্ডা-বাহিনী তাদের ঘরে আগুন দিতে পারে ভেবে জল ও ভেজা কাঁথার ব্যবস্থা করে রাখে, হাতের কাছে রাখে বঁটি আর দা। এভাবেই মাসি গুণ্ডা-বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

গ. অত্যাচারী স্বামীর সংসার না করার ব্যাপারে অটল সিদ্ধান্ত থাকার বিষয়ে উদ্দীপকের মেয়েটির সাথে মাসি-পিসি গল্পের আহ্লাদির সাদৃশ্য রয়েছে।
 প্রদত্ত উদ্দীপকের মেয়েটি স্বামীর অত্যাচারের শিকার নিঃসন্তান বৃদ্ধার আশ্রয়ে মাতৃস্নেহ থাকতে পেয়ে শত ঝামেলা সত্ত্বেও স্বামীর বাড়িতে যায়নি।, তেমনি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদিকে তার স্বামী খেতে দিত না, ঝাঁটা দিয়ে পেটাতো, কলকে পোড়া দিয়ে ছ্যাঁকা দিত, সোজা কথায় অত্যাচারীর মত ব্যবহার করত। সে মাসি-পিসির আশ্রয়ে আসতে পেরে তাদের পরম স্নেহে থেকে স্বামীর মামলার এবং গোকুল বাহিনীর ভয়ে ভীত হয়ে স্বামীর ঘরে যায়নি।
 দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ আর পিছু সরতে পারে না, মানুষ সবসময় শান্তিতে বাস করতে চায়। উদ্দীপকের মেয়েটি ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদিও অত্যাচারীর নির্মম হাত থেকে বাঁচার জন্য স্বামীর ঘরে না গিয়ে ভয়শূন্য স্থান বেছে নিয়েছে। তাই বলা যায়, উভয় চরিত্র এই ক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘মাসি-পিসি’ গল্পের বিধবা মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বিধবা বৃদ্ধা একই সূত্রে গাঁথা।’-মন্তব্যটি যথার্থ।
 আহ্লাদির বাবার অভাবের সংসারে মাসি-পিসি বোঝাস্বরূপ। আহ্লাদি স্বামীর ঘরে অত্যাচারিত হয়ে কোনোরকমে ফিরে এলে মাসি-পিসির সেবা-যত্নেই আহ্লাদি বেঁচে যায়। লোভী স্বামী জগু মামলার ভয় দেখায়। এতে মাসি-পিসি না দমে কৈলেশকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেন। বদচরিত্রের গোকুল আহ্লাদির সভ্রম কৌশলে ছিনিয়ে নিতে চাইলে মাসি-পিসি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার সাথে প্রতিহত করেন এবং আহ্লাদির নির্ঝঞ্ঝাট জীবন নিশ্চিত করেন।
 মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। অত্যাচারিত, অবহেলিত মানুষকে বাঁচানো মানুষের সাধারণ ধর্ম। উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম এবং আমার পঠিত ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি নারীজাতির ত্রাণকর্তারূপে কাজ করে অত্যাচারিত নারীদের চোখ খুলে দিয়েছেন। মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতে গেলে অনেক কষ্ট সইতে হয়। তারপরেও মানুষ এগিয়ে আসে। মাসি-পিসির সঙ্গে মাসি-পিসি এবং উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম জনকল্যাণের দিক থেকে একই সূত্রে গাঁথা-একথা সুনিশ্চিত করে বলা যায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে হাসু ও মায়মুনাকে নিয়ে অথৈ পাথারে ভেসে চলছিল জয়গুন। একসময় সমাজ ও লোকলজ্জা বিসর্জন দিয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজে। এভাবে জয়গুন অকূল পাথারে কূল খুঁজে পায়। কেননা তাকে নিজে বাঁচতে হবে। ছেলেমেয়েদেরকে বাঁচাতে হবে। নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে। এমনও হতে পারে তার এই জীবনসংগ্রাম অনেককাল ধরে চলবে।
ক. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়।’-উক্তিটি কার?
খ. মাসিপিসি কীভাবে কানাইকে প্রতিহত করেছিল?
গ. উদ্দীপকের জয়গুন 'মাসিপিসি' গল্পে কোন চরিত্রের সঙ্গে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ঘ. উদ্দীপকে জীবন সংগ্রামের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা 'মাসিপিসি' গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করুন।
ক. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়।’-উক্তিটি পিসি করেছিল।
খ. মাসিপিসি বঁটি ও কাটারি হাতে প্রতিবেশীদের ডেকে এনে কানাইকে প্রতিহত করেছিল।
কানাই বেশ রাত করে মাসিপিসিকে কাছারিতে ডেকে নিতে আসে। এতে তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। তাছাড়া মাসিপিসি ঝোঁপের আড়ালে লুকানো সাধু বৈদ্য ও ওসমানকে দেখে ফেলে। তাই তারা ঘরে গিয়ে বঁটি আর কাটারি নিয়ে আসে। তারপর প্রতিবেশিদের জোরে জোরে ডাকতে থাকে। প্রতিবেশীরা ছুটে এলে অবস্থা বেগতিক দেখে কানাই তার দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। বস্তুত মাসিপিসির অদম্য সাহস আর আহ্লাদির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই কানাইকে প্রতিহত করতে মাসিপিসিকে অনুপ্রেরণা যোগায়।

গ. উদ্দীপকের জয়গুনের সঙ্গে 'মাসিপিসি' গল্পের মাসিপিসির সাদৃশ্য রয়েছে।
পৃথিবীতে মানুষকে নিজের অস্তিত্ব নিজেই টিকিয়ে রাখতে হয়। এটা করতে গিয়ে সে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। তবুও মানুষ চলার পথে সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, সংস্কার, বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যায়।
উদ্দীপকে জয়গুন নামের এক অসহায় নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে সে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। অন্যদিকে 'মাসিপিসি' গল্পেও দেখা যায়, আহ্লাদির পিতা মারা যাওয়ায় মাসিপিসি অস্তিত্বের সংকটে উপনীত হয়। জয়গুন ও মাসিপিসির জীবনের সংকট তাদেরকে এক কাতারে এনে দাঁড় করায়। তারা পতিত হয় সমাজের পঙ্কিল ঘূর্ণাবর্তে। গল্পে মাসিপিসি যেমন আহ্লাদিকে আগলে রাখে তেমনি জয়গুনও তার দুই সন্তান হাসু ও মায়মুনাকে সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করে। এভাবে উদ্দীপকের জয়গুনের সঙ্গে 'মাসিপিসি' গল্পে মাসিপিসির সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে জয়গুনের জীবনসংগ্রামের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা 'মাসিপিসি' গল্পে মাসিপিসির জীবনসংগ্রামকে প্রতিফলিত করে।
মানুষকে জীবনে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। অন্যথায় সে বিস্মৃতির অতল তলে হারিয়ে যায়। জীবন কখনো অলসদের পক্ষ অবলম্বন করে না। সক্ষমতার শেষ বিন্দু দিয়ে লড়াই করে মানুষকে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হয়।
উদ্দীপকে জয়গুনের জীবনসংগ্রামের চিত্র বর্ণিত হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাকে জীবনসংগ্রামে নামতে হয়। সে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জয়গুন জীবন যুদ্ধে নিজে বাঁচতে চায় এবং নিজের সন্তান হাসু ও মায়মুনাকে আগলে রাখে। এই যুদ্ধে সে জয়ী হয়। এভাবে একই চিত্র ফুটে উঠেছে 'মাসিপিসি' গল্পের মাসিপিসির জীবনচিত্রে। মাসিপিসি গ্রাম থেকে নানা রকম পণ্য সংগ্রহ করে শহরে বিক্রি করে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি তারা তাদের সন্তানতুল্য আহ্লাদিকেও সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করে।
উদ্দীপকে জয়গুন স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে জীবন যুদ্ধে নেমেছে। আর নিজ সন্তান হাসু ও মায়মুনাকে সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে আগলে রেখেছে। ঠিক তেমনি দুর্ভিক্ষের কারণে মাসিপিসিও সমাজের সকল বিধিনিষেধ ও সংস্কার উপেক্ষা করে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়ে। এভাবে দেখা যায়, উদ্দীপকের জয়গুনের জীবন সংগ্রাম 'মাসিপিসি' গল্পে মাসিপিসির জীবন সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
হাসু ও মায়মুনকে নিয়ে ভেসেই চলছিল জয়গুন। কিন্তু নিজের চেষ্টায় অকূল পাথারে সে কূল পায়। লজ্জাশরম বিসর্জন দিয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজে। তাকে বাঁচতে হবে। ছেলেমেয়েকে বাঁচাতে হবে। এই সংকল্প নিয়ে আকালের পাঁচ বছর সে লড়াই করে আসছে।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
খ. আহ্লাদিকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের জয়গুনের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে?
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও জয়গুন গল্পের মাসি-পিসির সমগ্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারেনি। মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস ঢাকার বিক্রমপুরে।
খ. স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদিকে স্বামীর ঘর ছেড়ে যেতে হয়।
 আহ্লাদির বিয়ে হয় নেশাখোর পাষণ্ড জগুর সাথে। জগু কারণে-অকারণে আহ্লাদিকে মারধর করে। নেশার টাকা জোগাড় না হলে আহ্লাদিকে ঘরের খুঁটির সাথে বেঁধে অত্যাচার করে। লাথি, চড়, বাড়ি এমন কোনো মাধ্যম নেই যার দ্বারা জগু আহ্লাদির উপর অত্যাচার করেনি। যার জন্য তাকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসতে হয়।

গ. উদ্দীপকের জয়গুনের সাথে মাসি-পিসির জীবন-সংগ্রামের সাদৃশ্য রয়েছে।
 যে পরিশ্রম করাকে ভয় পায় না, সে যে-কোনোভাবে বিপদ থেকে পরিত্রাণ পায়। কর্মবিমুখ লোক জীবন-চলার পথে পদে পদে বিপদে পড়ে। আর যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে যে-কোনো কাজ করতে প্রস্তুত থাকে তারা যে-কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার পায়। উদ্দীপকের জয়গুণের মাঝে দেখি জীবন-সংগ্রামে জয়ী হওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর প্রবণতা। দারিদ্র্যের নাগপাশে আটকা পড়ে সন্তান নিয়ে ভেসে যাচ্ছিল, সেখান থেকে নিজের চেষ্টায় লজ্জাশরম বিসর্জন দিয়ে কাজে নেমে পড়ে। মাসি-পিসির মাঝেও দেখি জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার প্রবণতা। তাইতো তারা মন্বšড়রের সময় হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে না থেকে লাজলজ্জা পরিত্যাগ করে সবজির ব্যবসায় নামে। উভয়ক্ষেত্রে এখানেই সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

ঘ. কিছু সাদৃশ্য থাকলে উদ্দীপকে জয়গুন মাসি-পিসির সম্পূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করেনি।
 সংসার সমুদ্র বিপদসংকুল। এর কোণে কোণে যেমন বৈচিত্র্য-রোমান্স লুকানো আছে তেমনি আছে বিপদ। সেখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে চেষ্টার পাশাপাশি থাকতে হবে বুদ্ধিমত্তা ও সঠিক সিদ্ধাšড় নেয়ার ক্ষমতা।
 উদ্দীপকের জয়গুণকে জীবন-সংগ্রামে যুদ্ধরত অবস্থায় আমরা দেখতে পাই। তার মাঝে রয়েছে মাতৃত্বের স্নেহময়ী রূপ এবং জীবন-সংগ্রামে টিকে থাকার মানসিকতা। কিন্তু এটিই মাসি-পিসির সমগ্র রূপ নয়। এছাড়াও মাসি-পিসিকে আমরা অন্যভাবেও দেখতে পাই গল্পের জমিনে।
 মাসি-পিসি বিধবা, অসহায়, আশ্রয়হীনা। তবু তারা বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে জীবন-সংগ্রামে নেমে পড়ে। নিজেদের অস্তিত্বে টেকানোই শুধু নয়, স্বামী-পরিত্যক্তা আহ্লাদিকে তারা ভালো রাখতে চায়। সম¯ড় বিপদ থেকে উদ্ধার করতে চায়। এজন্য তারা প্রতিবাদী হয় সমাজের মুখোশধারী জানোয়ারদের বিরুদ্ধে। পুর“ষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে সšড়ানতুল্য আহ্লাদিকে বাঁচাতে, তারা এই পুর“ষশাসিত সমাজের বির“দ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মাসি-পিসির এ রূপটি উদ্দীপকের জয়গুণের মাঝে প্রকাশিত হয়নি। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মšড়ব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মা তাকে জেরা করলেন। দেখলাম সে ভারি চাপা। মার প্রশ্নের ছাঁকা জবাব দিল, নিজে থেকে একটি কথা বেশি কইল না। সে বলল, তার নাম মমতা। আমাদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে জীবনময়ের গলি, গলির ভেতরে সাতাশ নম্বর বাড়ির একতলায় সে থাকে। তার স্বামী আছে আর একটি ছেলে। স্বামীর চাকরি নেই চারমাস, সংসার আর চলে না, সে তাই পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছে। এই তার প্রথম চাকরি। মাইনে? সে তা জানে না। দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাবে কিন্তু খাবে না।
ক. মাসি-পিসি কীভাবে শহরে যেতেন?
খ. মাসি-পিসির জমানো টাকা কেন খরচ হয়ে গিয়েছিল?
গ. উদ্দীপকের মমতা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির কোন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
ক. ‘মাসি-পিসি’ সালতি বেয়ে শহরে যেতেন।
খ. দুর্ভিক্ষের সময় খাবার কিনতে মাসি-পিসিদের জমানো রুপোর টাকা আধুলি সিকি খরচ হয়ে গিয়েছিল।
 মাসি-পিসিরা আহ্লাদির বাবার বাড়িতে আশ্রিতা। ওদিকে দেশে মন্বন্তর। কোথাও কোনো কাজ নেই, খাবার নেই, সামর্থ্যও নেই। তাই তারা তাদের জমানো টাকা দিয়ে কোনোরকমে খাবার কিনে খেয়ে বেঁচেছে। এজন্য তাদের জমানো র“পোর টাকা আধুলি সিকি খরচ হয়ে গিয়েছিল।

গ. আর্থিক দীনতায় পড়ে স্বজনদের ও নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রচেষ্টার দিক দিয়ে মমতাদির বৈশিষ্ট্যের সাথে মাসি-পিসির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য রয়েছে।
 দারিদ্র্যের কষাঘাত যখন আসে তখন মানুষের কোনো দিকের ঠিক থাকে না। সম¯ড় লজ্জা, ভয়, আত্মসম্মান তখন মেকি, ফাঁকি মনে হয়। যে-কোনো উপায়ে অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন তখন বড় হয়ে ওঠে।
 উদ্দীপকের মমতাদি ভদ্র ঘরের সšড়ান বা বৌ হয়েও দারিদ্র্যের চাপে পড়ে পরের বাড়ি কাজ করতে আসে। লজ্জা বা আত্মসম্মান তখন তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। স্বামী-সšড়ান নিয়ে উপার্জনহীন সংসারে টিকতে না পেরে চাকরানির কাজ শুর“ করেছে। গল্পে মাসি-পিসি চরিত্রের মমতাদির এই বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন দেখি। মন্বয়šেড়র সময় নিজেদের অ¯িড়ত্ব রক্ষা এবং আহ্লাদির জীবন বাঁচাতে তারা লজ্জাশরম ত্যাগ করে শহরে গিয়ে সবজির ব্যবসা করে। যা উভয় ক্ষেত্রে সাদৃশ্য রচনা করেছে।

ঘ. না, উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না।
 ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি নির্যাতনের শিকার একটি অসহায় মেয়ের জীবনকাহিনি। গল্পের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে নানা বৈচিত্র্যময় ঘটনা। উদ্দীপকে যার মাত্র একটি বিষয় প্রকাশিত করতে দেখা যায়।
 উদ্দীপকে দেখা যায়, জীবন-সংগ্রামে লিপ্ত এক নারীকে যে উপার্জনহীন সংসারে স্বামী-সšড়ান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সমস্ত লজ্জাশরম পরিত্যাগ করে ভদ্র ঘরের মেয়ে হয়েও পরের বাড়ি চাকরানির কাজ নেয়। এটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের একটি মাত্র দিক। যা মাসি-পিসির জীবনধারণের প্রচেষ্টার মাঝে লক্ষ করা যায়।
 উপরিউক্ত বিষয় ছাড়া ‘মাসি-পিসি’ গল্পে অন্যান্য ভাবেরও অবতারণা ঘটেছে। আহ্লাদি নামক স্বামীর নির্যাতনের শিকার এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনি বর্ণিত হয়েছে গল্পে। যেখানে একে-একে উঠে এসেছে এই পুরুষশাসিত ঘুনেধরা সমাজের নানারকম অসঙ্গতির দিক। এ সমাজে নারীর অবস্থান তাদের প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি, দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী চিত্র, অত্যাচারী স্বামী, লালসায় উন্মত্ত জোতদার, গুণ্ডা-বদমাশদের আচরণ, দু’জন বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবন-যুদ্ধ অন্যায়ের প্রতিবাদ ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণভাব ধারণ করেনি।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পিসি বলে, ‘এত রাতে মেয়েনোককে কাছারিবাড়ি ডাকতে কত্তার নজ্জা করে না কানাই?
কানই ফুঁসে ওঠে, ‘না যদি যাও ঠাকরুনারা ভালোয় ভালোয়, ধরে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবার হুকুম আছে কিন্তু বলে রাখলাম।
মাসি বঁটিটা বাগিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে, বটে? ধরে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবে? এসো। কে এগিয়ে আসবে এসো। বঁটির এক কোপে গলা ফাঁক করে দেব।
পিসি বলে, আয় না বজ্জাত হারামজাদারা, এগিয়ে আয় না? কাটারির কোপে গলা কাটি দু-একটার।
মাসি বলে, শোনো কানাই, এ কিন্তু এর্কি নয় মোটে। তোমাদের সাথে মেরা মেয়েনোক পারব না জানি কিন্তু দুটো-একটাকে মারব জখম করব ঠিক।
পিসি বলে, মোরা নয় মরব। ’
ক. মাসি পিসিকে ডাকতে কে আসে?
খ. মাসি-পিসি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘মাসি-পিসি’ চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমগ্র ভাবটি ধারণ করেছে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
ক. মাসি-পিসিকে ডাকতে আসে কানাই।
খ. অন্যের বাড়িতে কাজ করে, শহরে শাকপাতা-ফলমূল বিক্রি করে মাসি পিসি কোনোমতে জীবন ধারণ করে।
 মাসি-পিসি আহ্লাদির পিতার আশ্রায় আছে বহুদিন থেকেই। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তারা নিতাšড় অসহায় হয়ে পড়ে। নিজেদের ভরণ-পোষণের জন্য এবং স্বামী পরিত্যাক্ত আহ্লাদির জন্য তারা ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বেচে, হোগলা গেঁথে গ্রাম থেকে শাকসবজি ফলমুল শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

গ. উদ্দীপকে মাসি-পিসি চরিত্রের প্রতিবাদী ও আত্মরক্ষার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
 এ সংসারে প্রত্যেকে জিততে চায়। এজন্য একে-অন্যকে ঠকানোর জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। যে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারে না, তারা কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলে অন্যায়কারী কখনো কাউকে নিস্তার দেয় না।
 উদ্দীপকে মাসি-পিসির প্রতিবাদী মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। সমাজের শোষক জমিদারের হুকুমে কানাই মাসি-পিসিকে অন্যায়ভাবে তুলে নিতে আসে। তাদের এই কু-মতলবকে মাসি-পিসি প্রতিহত করতে বন্ধপরিকর হয়। তারা কানাইকে চ্যালেঞ্জ করে। কাটারি বঁটি নিয়ে তারা যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়। তাদের এই আচরণ এই জুলুমবাজ সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কু-মতলব চরিতার্থ করতে চায় যে সব মানুষরূপী জানোয়ারেরা তাদের রিরুদ্ধে মাসি-পিসি তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তাদের মাঝে প্রতিবাদী চেতনার পরিচয় মেলে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করেনি।
 স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি অন্যদিকে উদ্দীপকে শুধু মাসি-পিসির প্রতিবাদী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে।
 উদ্দীপকটিতে দেখা যায়, মাসি-পিসিকে জমিদারের হুকুমে তুলে নিতে আসে কানাই। তখন মাসি-পিসি কানাইয়ের কু-মতলব বুঝতে পেরে কাছারিতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। কানাই জবরদস্তি করলে তারা এর প্রতিবাদ করে এবং কানাইকে মারার জন্য দা, বঁটি উঁচিয়ে শাসায়। অবস্থা বেগতিক দেখে কানাই সরে পড়ে। মাসি-পিসির এ আচরণে এই ঘুণেধরা সমাজের বিরুদ্ধে অসহায় নারীর প্রতিবাদী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এ বিষয়টিই ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব নয়।
 ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি স্বামীর নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক অসহায় তর“ণীর জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে। আহ্লাদি নামক ঐ তরুণীর মাসি-পিসি দুজনেই বিধবা। তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিরূপ সমাজ থেকে আহ্লাদিকে রক্ষার যে বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী সংগ্রাম পরিচালনা করেছে তা সত্যিই বিরল। দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী স্মৃতি, জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম, নারী হয়ে যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করার মানসিকতা এ গল্পের বৈচিত্র্যময় দিক। এসব দিক উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণভাব ধারন করেনি

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আহারে। এরে মাইয়াডারে মাইরা ফালইস না। ওরে ও পাষাইণ্যা, দরজা খোল, মারিস না আর মারিস না, জাহান্নামে যাইবি, মারিস না। বাইরে থেকে দু’হাতে ঝাঁপিটাকে ঠেলছে ফকিরের মা। আবুল একবার তাকাল সেদিকে, কিন্তু ঝাঁপি খুলল না।
বউ মারায় একটা পৈশাচিক আনন্দ পায় আবুল। মেরে মেরে এর আগে দু’-দুটো বউকে প্রাণে শেষ করে দিয়েছে সে। প্রথম বউটা ছিল এ গাঁয়েরই মেয়ে। আয়েশা। একটু বেঁটে, একটু মোটা আর রঙের দিক থেকে শ্যামলা। অপূর্ব সংযম ছিল মেয়িটির। আশ্চর্য শান্ত স্বভাব। কত মেরেছে ওকে আবুল। কোনোদিন একটু শব্দও করেনি। একটা সামান্য প্রতিবাদ নেই।
[তথ্যসূত্র : হাজার বছর ধরে -জহির রায়হান]
ক. মস্ত কাটারিটা দেখতে কীসের মতো ছিল?
খ. আহ্লাদিকে জগু কেন মারধর করে?
গ. উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? - ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের আয়েশা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পরিস্থিতির শিকার।” মন্তব্যটি যাচাই করো।
ক. মস্ত কাটারিটা দেখতে রামদা’র মতো ছিল।
খ. নেশার টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে টাকা জোগাড় করার লোভে জগু আহ্লাদিকে মারধর করতো।
 পাষণ্ড জগু নেশা করে। কিন্তু সব-সময় নেশার জিনিস কেনার টাকা তার কাছে থাকে না। সে সংসার এবং স্ত্রীর প্রতিও উদাসীন। নেশার ঘোরে থেকে সে তার স্ত্রী আহ্লাদির ওপর নির্যাতন চালায়। বউয়ের ওপর চড়াও হয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় বউকে খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে মারধর করে।

গ. উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের জগু চরিত্রের প্রতিনিধি।
 আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজে স্ত্রীরা বা নারীরা চরমভাবে নিগৃহীত, নির্যাতিত হয়। তাদের কোনো মুল্যায়ন করে না পাষণ্ড পুরুষেরা। তারা কারণে-অকারণে নারীর ওপর অত্যাচার চালিয়ে পুর“ষত্বের মর্যাদা রক্ষা করতে চায়।
 উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, আবুল নামের এক পাষণ্ডকে, যে তার স্ত্রীকে অমানুষের মতো নির্যাতন করে। ঘরের দরজা বন্ধ করে বৌকে মারে এবং পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে। আবুলের মতো এক পাষণ্ড কে আমরা দেখতে পাই ‘মাসি-পিসি’ গল্পের জগুর চরিত্রের মাঝে। জগুও তার বউকে কারণে অকারণে মারপিট করে। নেশার টাকা জোগাড় করতে না পেরে বৌকে বেঁধে রেখে পেটায়। এই জগু চরিত্রের প্রতিনিধি উদ্দীপকের আবুল।

ঘ. “উদ্দীপকের আয়েশা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পরিস্থিতির শিকার।” মন্তব্যটি যথার্থ।
 আমাদের সমাজব্যবস্থায় নানা অসংগতির মাঝে নারী-নির্যাতন অন্যতম একটা ঘৃণিত বিষয়। এই পুরুষশাসিত সমাজে এ বিষয়টি অহরহ ঘটে চলেছে। এর প্রতিকার করার যেন কেউ নেই।
 উদ্দীপকেও দেখি এমনই একটা চিত্র-যা ‘মাসি-পিসি’ গল্পেও পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকে আয়েশা নামের মেয়েটি স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে পারে না। তবু সে মুখ ফুটে কিছু বলে না। এটাকে যেন তার ভাগ্য বলে মেনে নেয়। সমাজের ঘৃণিত পরিস্থিতির শিকার এই আয়েশার মতো ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি।
 আহ্লাদি পিতৃমাতৃহীন অসহায় এক তরুণী। তার বিয়ে হয় নেশাখোর জগুর সাথে। জগু সংসারের প্রতি উদাসীন এবং কারণে-অকারণে বউকে অত্যাচার করে। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদি বাবার বাড়ি চলে আসে। সমাজ এর কোনো বিহিত করে না। এ সমাজে নারীরা এভাবেই অবমূল্যায়িত হয়ে আসছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আয়েশা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পারিস্থিতির শিকার।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কাজের শেষে বাড়িতে ফিরে আসে লায়লা। ভাঙা খাটে ক্লান্ত দেহখানি এলিয়ে দেয়। দেহের চাইতে তার মনটা বেশি ক্লান্ত। মনটা আজ তার কেমন কেমন করছে। রহিমা খালা রান্না-বান্না করছে। অন্যদিন এ কাজটা সেই নিজেই করে। আজ কেন জানি এতে মন বসছে না। হঠাৎ মনের আয়নায় ফেলে আসা অতীত ছায়া ফেলে। তার একটা সংসার ছিল ছোট একটি সাজানো ঘর ছিল। হঠাৎ একদিন কালবৈশাখীর ঝড় এলো। বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য স্বামী আমজাদ লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দেয়। তারপর রহিমা খালার হাত ধরে শহরে আসে। গার্মেন্ট চাকরি নেয়। তারা অঙ্গভরা যৌবন তার শত্রু। বাইরে পা রাখলে বেহায়া পুরুষগুলো তাকিয়ে থাকে। মাঝে-মাঝে আবার ঘর বাঁধতে সাধ জাগে।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত গল্পের সংখ্যা কত?
খ. মাসি-পিসি রোজগারের জন্য কী উপায় খোঁজে?
গ. উদ্দীপকে মাসি-পিসি চরিত্রে কোন ভাবের প্রকাশ ঘটেছে?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের আহ্লাদি আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজের নির্যাতিত নারীদের প্রতিনিধি।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত গল্পের সংখ্যা প্রায় তিন’শ।
খ. মাসি-পিসি জীবন চালাতে হিমশিম খায়। দুর্ভিক্ষের জন্য কোথাও রোজগার নেই। তাই তারা বেঁচে থাকার জন্য ভিন্ন উপায়ে রোজগারের চিন্তা-ভাবনা করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় গ্রাম থেকে তরিতরকারি ফলমূল কিনে নিয়ে শহরে গিয়ে বিক্রি করে কিছু রোজগার করবে এবং এটা ভেবেই তারা এ কাজে হাত দেয়।

গ. উদ্দীপকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির মাঝে মাতৃস্নেহের প্রকাশ লক্ষণীয়।
 নারীর চরম সার্থকতা তার মাতৃত্বে। নিঃসন্তান হলেও সন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সহজাত ইচ্ছা তাদের মাঝে থেকেই যায়। মাসি-পিসির আচরণে সেই মাতৃস্নেহের ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে।
 উদ্দীপকে দেখা যায়, সারাদিন খাটুনির পর বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না সারতে লেগে যায়। সন্তানের মতো আহ্লাদিকে তারা কোনো কষ্ট করতে দিতে নারাজ। উপরন্তু এই কদর্য সমাজের নানা প্রকার কুৎসিত লোকের কু-দৃষ্টি থেকে আহ্লাদিকে রক্ষা করার চেতনা তাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। মা সন্তানকে যেমন আগলে রাখে, মাসি-পিসিও আহ্লাদিকে সেভাবে আগলে রাখতে চায়, স্নেহ ভালোবাসায় সিক্ত করতে চায়।

ঘ. উদ্দীপকের আহ্লাদি এই পুরুষশাসিত সমাজের নির্যাতিত নারীদের প্রতিনিধি।
 নারীপুরুষ উভয়ের অবদানে সমাজ টিকে থাকে। অথচ নারীরা এই সমাজে কোনো মূল্যায়ন পায় না। পুরুষেরা তাদের নিজেদের ভোগের সামগ্রী ভাবে। এজন্যই আমাদের সমাজ বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে পারছে না।
 উদ্দীপকে দেখা যায় সমাজের পুরুষের দ্বারা নিমর্মভাবে নির্যাতিতা নারীর প্রতিচ্ছবি। যে স্বামীর অত্যাচারে টিকতে না পেরে অসহায়ের মতো বাপের বাড়ি চলে আসে। কিন্তু এখানেও এসে সে শান্তিতে থাকতে পারে না। সমাজের কুরুচিপূর্ণ কিছু পুরুষ তাকে নোংরা চোখে দেখে। তাকে অন্যায়ভাবে পেতে চায়।
 আহ্লাদির এই অবস্থা আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজের এক চরমতম লজ্জাজনক দিক। আহ্লাদি এ সমাজে নির্যাতিত এক অসহায় নারী। সে অবস্থার শিকার হয়ে চরম হীনম্মন্যতায় ভোগে। নিজেকে নর্দমার নোংরা কীট মনে করে। ব্যভিচারী পুরুষের চোখ তাকে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না। একে তো স্বামী দ্বারা নির্যাতিতা উপরন্ত মাসি-পিসির কাছে এসেও তার নি¯ড়ার নেই। তাই সে মনে করে, মাসি-পিসিকে গঞ্জনা দেওয়ার চেয়ে অত্যাচারী স্বামীর কাছে ফিরে গিয়ে লাথি ঝাঁটা খাওয়া ভালো। মূলত তার এই মনোভাব সমাজের অন্যান্য নারীদের চেতনাকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মšড়ব্য যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ইউরোপের জ্ঞানগুরু প্লেটো মিসর ভ্রমণকালে মাথায় করে তেল বেচে খরচ জোগাড় করতেন। যে কুড়ে, আলসে, ঘুষখোর ও চোর, সেই হীন। ব্যবসা বা ছোট স্বাধীন কাজে মানুষ হীন হয় না- হীন হয় মিথ্যা চতুরতা ও প্রবঞ্চনায়। পাছে জাত যায়, সম্মান নষ্ট হয়- এই ভয়ে পরের গলগ্রহ হয়ে মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছ? সম্মান কোথায়, তা তুমি টের পাওনি।
[তথ্যসূত্র :উদ্যম ও পরিশ্রম- মোহাম্মদ লুৎফর রহমান।
ক. শকুনরা উড়ে এসে কোথায় বসেছে?
খ. জগু কেন মামলা করতে চাইল?
গ. উদ্দীপকের প্লেটোর মাঝে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মিল থাকলেও প্লেটোর তেল বিক্রি এবং মাসি-পিসির শাকসবজি বিক্রির উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা রয়েছে।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
ক. শকুনরা উড়ে এসে পাতাশূন্য শুকনো গাছটার উপরে বসেছে।
খ. জগু তার বৌ আহ্লাদিকে ফিরিয়ে আনার জন্য মামলা করতে চাইল।
 জগুর অত্যাচারে ঘর ছেড়ে চলে আসে আহ্লাদি। তারপর জগু তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে এসেছে তার শ্বশুরের রেখে যাওয়া সম্পত্তির লোভে। কিন্তু মাসি-পিসি আহ্লাদিকে পাঠাতে নারাজ। তা ছাড়া আহ্লাদিও যেতে রাজি নয়। আহ্লাদিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য জগু মামলা করতে চায়।

গ. উদ্দীপকের প্লেটোর সাথে মাসি-পিসির জীবনধারণের জন্য যেকোনো কাজ করে টিকে থাকার বিষয়টির সাদৃশ্য রয়েছে।
 জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে মানুষ যেকোনো কাজ করতে বাধ্য হয়। তখন যদি আত্মসম্মানের ভয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকে, তবে সে টিকে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ সবকিছুই করতে পারে।
 উদ্দীপকের প্লেটো মাঝে দেখি এই চেতনার প্রতিফলন। তিনি মিশরে ভ্রমণকালে মাথায় করে তেল বিক্রয় করে খরচ জোগাড় করতেন। তিনি কোনো কাজকে ছোট ভাবেননি, লজ্জা করেননি। এই একই চেতনার প্রতিফলন দেখি ‘মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি-পিসির মধ্যে। তারা বেঁচে থাকার তাগিদে লাজ-সরমের তোয়াক্কা না করে সবজি ব্যবসায় নেমে পড়ে এবং জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। লোকচক্ষুর ভয়ে বসে থাকে না। উভয় ক্ষেত্রে এখানেই সাদৃশ্য দৃশ্যমান।

ঘ. প্লেটোর তেল বিক্রি এবং মাসি-পিসির সবজি বিক্রির মাঝে মিল থাকলেও উদ্দেশ্যগত পার্থক্য বা ভিন্নতা রয়েছে। মন্তব্যটি যথার্থ।
 সংসারে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ নানারকম কাজ করে। কোনো কাজ ছোট বা হীন ভেবে যদি তা করা থেকে বিরত থাকা হয়, তবে নিজের প্রয়োজন মিটবে না এবং জীবনটা হুমকির মুখে পড়বে।
 উদ্দীপকের প্লেটো এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি-পিসির কাজের মাঝে সাদৃশ্য থাকলেও কাজের উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা রয়েছে। প্লেটো মিশর ভ্রমণকালে রা¯ড়ার খরচ জোগাড়ের জন্য মাথায় করে তেল বিক্রি করতেন। তিনি সচ্ছন্দে চলাফেরার জন্য একাজ করেছিলেন। এই কাজের উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা রয়েছে মাসি-পিসির সবজি বিক্রি করার ক্ষেত্রে।
 মাসি-পিসি নিঃসম্বল, অসহায়। বেঁচে থাকার অন্য কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য তারা ঘরের বাইরে যেতে বাধ্য হন। নিজেদের ভরণপোষণ এবং আশ্রিত আহ্লাদিকে বাঁচিয়ে রাখতে তারা গাঁ থেকে শাকসবজি ফলমূল কিনে শহরে গিয়ে বিক্রির সিদ্ধাšড় গ্রহণ করেন। তাদের এ ব্যবসা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রামে তারা এ পথে নামেন। এটা যদি তারা না করতেন, তবে না খেয়ে মরতে হতো। কিন্তু উদ্দীপকের প্লেটোকে তেলের ব্যবসা না করলে আর যাই হোক না খেয়ে মরতে হতো না। তাই বলা যায়, উভয় কাজে উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা রয়েছে, যা প্রশ্নের মšড়ব্যকে যথার্থ প্রতিপন্ন করেছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯
জামাল : আবে চাষা আবু, তোর ভাত খাওয়া শেষ হলো। জলদি কর, না হয় ঘরে ঢুকে তোর গলার মধ্যে লাঠি ঢুকিয়ে দেব।
আবু : বললাম যে চারটে খেয়ে নিই। যেখানে যেতে বলবে, যাব। এত গলাবাজি কর কেন পেয়াদাজী।
জামাল : নখরামি রাখ। চল। ...
আবু : ছাড়। গায়ে হাত দিও না। আমি কি চুরি করেছি, আমি কি জমিদারের ঘরে আগুন দিয়েছি?
জামাল : খরবদার আর একটাও ফালতু কথা বলবি না। ছোট মালিকের হুকুম তোকে তুরন্ত হাজির হতে হবে। ...
আবু : কি, এতখানি কথা। জমিদারের কুত্তা- (আবি দাওয়া থেকে দা তুলে নিল।)
[তথ্যসূত্র : জমিদার দর্পণ- মীর মশারফ হোসেন
ক. কানাইয়ের সাথে কতজন পেয়াদা এসেছিল?
খ. ঈষৎ তন্দ্রার ঘোরে আহ্লাদি শিউরে ওঠে কেন?
গ. উদ্দীপকের জামাল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি?- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
ক. কানাইয়ের সাথে তিন জন পেয়াদা এসেছিল।
খ. সংসারে নিজের অবস্থান, অত্যাচারী স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে সে শিউরে উঠেছিল।
 আহ্লাদি যদিও সবকিছু মেনে নিয়ে আবারও অত্যাচারী স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধন্ত নিয়েছিল, কিন্তু যখন সে ভাবে স্বামীর অত্যাচারের কথা এবং মাসি-পিসিকে ছেড়ে থাকার কথা, তখন সে ভয়ে শিউরে ওঠে। তার দুই পাশে মাসি-পিসিকে না নিয়ে শুলে ঘুম আসে না। তাই এই পরিস্থিতির ব্যতিক্রম চিšড়ায় সে ভয়ে শিউরে ওঠে।
গ. উদ্দীপকের জামাল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কানাই চরিত্রের প্রতিনিধি।
 এ সমাজে অনেক লোক আছে যারা নিজ স্বার্থের জন্য ক্ষমতাধরদের পা-চাটা কুকুরে পরিণত হয়। নিজেদের ব্যক্তিত্ব বলে এদের কিছু থাকে না। প্রভুর কথায় এরা সাধারণ মানুষের উপর জুলুম করে।
 উদ্দীপকের জামাল এ ধরনের একজন মানুষ। সে জমিদারের হুকুমে চাষি আবুকে ডাকতে আসে এবং অমানবিক আচরণ করে। প্রভুর মনোরঞ্জনের জন্য সমস্ত মানবিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে দুর্বলের উপর নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করে। এমনই একটা চরিত্র ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কানাই। সেও তার প্রভুর হুকুমে অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা করে না। রাতের বেলায় মাসি-পিসিকে বাড়ির বার করে আহ্লাদিকে গোকুলের হাতে তুলে দেয়ার কুৎসিত উদ্দেশ্যে মাসি-পিসির উপর জুলুম করে।

ঘ. না, উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে না।
 ‘মাসি-পিসি’ গল্পটিতে স্বামী দ্বারা অত্যাচারিত পিতৃমাতৃহীন এক অসহায় তরুণীর জীবনকাহিনি বর্ণিত হয়েছে গভীর মমতায়। লেখক এ গল্পে সমাজের নানা অসংগতির দিক তুলে ধরেছেন অসামান্য শিল্প-কুশলতায়। উদ্দীপকের বিষয়টি এর একটি মাত্র ভাবকে ধারণ করেছে।
 উদ্দীপক দেখা যায়, এক মানুষরূপী প্রভুভক্ত কুকুরের কুৎসিত আচরণ জামাল পেয়াদার মাঝে। যে কিনা জমিদারের হুকুমে সাধারণ চাষিদের উপর জুলুম, নির্যাতন করে। ‘মাসি-পিসি’ গল্পে এ দৃশ্য দেখতে পাই কানাই যখন ‘মাসি-পিসিকে’ জোর করে তুলে নিতে চায় তার মালিকের হুকুমে। তবে এ বিষয়টি গল্পের একটি মাত্র দিক। এর পাশাপাশি গল্পে অন্যান্য বিষয়ও উঠে এসেছে।
 গল্পটিতে একে একে তুলে ধরা হয়েছে দুন নিঃস্ব বিধবার জীবন যুদ্ধের চিত্র। মাসি-পিসি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় আহ্লাদিকে এ সমাজের বিরূপ পরিস্থিতিতে বাঁচিয়ে রাখতে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছে। এ বিষয়টিই গল্পটিকে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। এই পুরুষ শাসিত সমাজের অত্যাচারী স্বামী, কুরুপূর্ণ মানুষ, লোলুপ জোতদার, দারোগা, গুণ্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে সন্তানতূল্য আহ্লাদিকে বাঁচাতে অসহায় দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবন যুদ্ধের চিত্র লেখকের অসামান্য শিল্প দক্ষতার জন্য বা¯ড়ব রূপে আমাদের সামনে উঠে এসেছে। এসব বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেনি।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০
মা তাকে জেরা করলেন। দেখলাম সে ভারি চাপা। মার প্রশ্নের ছাঁকা জবাব দিল, নিজে থেকে একটি কথা বেশি কইল না। সে বলল, তার নাম মমতা। আমাদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে জীবনময়ের গলি, গলির ভেতরে সাতাশ নম্বর বাড়ির একতলায় সে থাকে। তার স্বামী আছে আর একটি ছেলে। স্বামীর চাকরি নেই চারমাস, সংসার আর চলে না, সে তাই পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছে। এই তার প্রথম চাকরি। মাইনে? সে তা জানে না। দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাবে কিন্তু খাবে না।
ক. কোথায় ফলমূলের দাম চড়া?
খ. মাসিপিসি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করে?
গ. মাসিপিসির কোন কোন বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের মমতা চরিত্রটিতে ফুটে উঠেছে? -আলোচনা করুন।
ঘ. উদ্দীপকটি 'মাসিপিসি' গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে কি? আপনার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরুন।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১
“হে, বেবাক মাইনষেরেই এমবায় ঠকাইছে।” করিম গাজী বলে, “আরে মিয়া এমুন কারবারডা অইল আর তুমি ফির‍্যা চলছো?” “কী করমু তয়?” বলে ওসমান। “কী করবা।” খেঁকিয়ে ওঠে করিম গাজী, “চল আমাগ লগে, দেখি কী করতে পারি।” করিম গাজী তাড়া দেয়, “কী মিয়া চাইয়া রইছ ক্যান? আরে এমনেও মরছি অমনেও মরছি। একটা কিছু না কইর‍্যা ছাইড়্যা দিমু?” ওসমান তোতাকে ঠেলে দিয়ে বলে, “তুই বাড়ী যা গা।” তার ঝিমিয়ে পড়া রক্ত জেগে ওঠে। গা ঝাড়া দিয়ে সে বলে- “হ, চল। রক্ত চুইষ্যা খাইছে। অজম করতে দিমু না, যা থাকে কপালে।”
ক. শকুনরা উড়ে এসে কোথায় বসেছে?
খ. আহ্লাদি কেন স্বামীর ঘরে যেতে চায় না?
গ. উদ্দীপকের কোন দিকটি 'মাসিপিসি' গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? -আলোচনা করুন।
ঘ. “মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসেই অন্যায় প্রতিহত হয়।” -উদ্দীপক ও 'মাসিপিসি' গল্প অনুসরণে মন্তব্যটি বিচার করুন।
-----------

তথ্যসূত্র:
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫।

Next Post Previous Post