আমার ভাইয়ের
রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের
অশ্রু-গড়া
এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি॥
জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখিরা
শিশুহত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক
বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবি
দিন বদলের
ক্রান্তিলগনে
তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না, খুন-রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি॥
সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনিগন্ধা
অলকানন্দা
যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক, ঝড় এলো ক্ষ্যাপা বুনো॥
সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা ওরা গুলি ছোড়ে
এদেশের প্রাণে দেশের দাবিকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি॥
তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর-ছেলে বীর-নারী
আমার শহিদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাঁকে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালব ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি॥
শহিদ মিনার; চিত্রকর: মো. আমানুজ্জামান আমান, প্রথম শ্রেণি
‘একুশের গান’ কবিতার উৎস নির্দেশ :
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে
‘একুশের গান’ প্রথম ছাপা হয়।
‘একুশের গান’ কবিতার শব্দার্থ ও টীকা :
➠ রক্তে রাঙানো- বহু মানুষের আত্মোৎসর্গে সিক্ত বা উজ্জ্বল।
➠ অশ্রু-গড়া- চোখের পানিতে নির্মিত।
➠ বসুন্ধরা- পৃথিবী।
➠ ক্রান্তি- পরিবর্তন।
➠ খুন-রাঙা- রক্তে রাঙা/লাল।
➠ লগন-লগ্ন, উপযুক্ত বা শুভ সময়।
➠ অলকানন্দা- একটি ফুলের নাম।
➠ ওরা গুলি ছোড়ে- এখানে পাকিস্তানি পুলিশকে বোঝানো হয়েছে। বাংলাকে
রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর তারা গুলি ছুঁড়েছিল।
‘একুশের গান’ কবিতার পাঠের উদ্দেশ্য :
এই কবিতা পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভাষা-আন্দোলনে বাঙালির আত্মত্যাগ নিয়ে
একদিকে গর্ব করতে শিখবে, অন্যদিকে তারা শহিদের রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য সব
ধরনের অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে।
‘একুশের গান’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব :
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে
‘একুশের গান’ প্রথম ছাপা হয়। এখানে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত ভাষা-আন্দোলনে
বাঙালি ছাত্র-জনতার আত্মোৎসর্গকে স্মরণ করা হয়েছে। ভাষা-আন্দোলনের রক্তদান
কিছুতেই বিস্মৃত হওয়া যায় না। এখানে অন্যায়ভাবে গুলিবর্ষণকারী তৎকালীন
পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির জাগ্রত প্রতিরোধ গড়ে তোলার
প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে।
‘একুশের গান’ কবিতার কবি পরিচিতি :
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কথাশিল্পী, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট হিসেবে
খ্যাতিমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে
তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সমাজমনস্ক লেখক হিসেবে
ভাষা-আন্দোলন (১৯৫২) ও মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১) চলাকালে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থ হলো
‘ডানপিটে শওকত’, ‘আঁধার কুঠির ছেলেটি’ ইত্যাদি। তিনি বাংলা একাডেমি
পুরস্কার, একুশে পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কারসহ বিভিন্ন পদক
ও পুরস্কারে ভূষিত হন।
তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের
১৯শে মে লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
‘একুশের গান’ কবিতার কর্ম-অনুশীলন :
ক. একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন উপলক্ষে একটি দাওয়াতপত্র তৈরি করো (একক
কাজ)।
খ. একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করে তোমাদের লেখা কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে
একটি দেওয়াল পত্রিকা তৈরি করো (দলগত কাজ)।
‘একুশের গান’ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন
-এর মধ্যে!
যা
‘একুশের গান’ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: কার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি?
উত্তর : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।
প্রশ্ন- ২: কাকে ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া বলা হয়েছে?
উত্তর : ফেব্রুয়ারিকে ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রুগড়া বলা হয়েছে।
প্রশ্ন- ৩: কেমন দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি?
উত্তর : সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি।
প্রশ্ন- ৪: কী হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা।
উত্তর : শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা।
প্রশ্ন- ৫: নীল গগনের বসনে কখন চাঁদ চুমো খেয়েছিল?
উত্তর : নীলগগনের বসনে শীতের শেষে চাঁদ চুমো খেয়েছিল।
প্রশ্ন- ৬: কবি হাটে-মাঠে, ঘাটে-বাঁকে মানুষের কোন শক্তিকে কাজে লাগাতে চান?
উত্তর : কবি হাটে-মাঠে, ঘাটে-বাঁকে মানুষের সুপ্ত শক্তিকে কাজে লাগাতে চান।
‘একুশের গান’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: ‘শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা’- চরণটি ব্যাখ্যা
করো।
উত্তর : ‘বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করার আন্দোলনে যাদেরকে হত্যা করা
হয়েছে তাদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে বাঙালিরা এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ুক যেন
সমস্ত বসুন্ধরা কেঁপে ওঠে।
➠ বাংলা ভাষার দাবিতে বাংলার দামাল ছেলেরা রাজপথে মিছিল বের করলে
পাকিস্তানি হায়েনারা মিছিলের ওপরে গুলি ছুঁড়ে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করে।
যারা শহিদ হয়েছিল তারা সকলেই কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। আর মায়ের কাছে
সন্তান সকল সময় শিশু। তাই এই শিশু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য লেখক
সমগ্র বাঙালি জাতিকে এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন যাতে সমস্ত বসুন্ধরা
কেঁপে ওঠে।
প্রশ্ন- ২:‘ওরা গুলি ছোড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবিকে রোখে’- কারা, কেন
গুলি ছোড়ে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : এখানে পাকিস্তানি হায়েনাদের ভাষা আন্দোলনকে রুখতে জনতার প্রতি
গুলি ছোড়ার কথা বলা হয়েছে।
➠ পশ্চিমা শাসকদের খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে বাংলার জনগণ তুমুল প্রতিরোধ
গড়ে তোলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। কেননা পাকিস্তানি পশুরা
বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিয়ে উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল।
বাংলার দামাল ছেলেরা তা মানতে না পেরে তীব্র প্রতিবাদ করে এবং
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা দাবি করে রাজপথে মিছিল বের করে, যা দেখে
পাকিস্তানি জালিমরা গুলি ছোড়ে এদেশের প্রাণের দাবিকে রুখতে।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
i. ‘ঝড়ের রাত্রে, বৈশাখী দিনে, বরষার দুর্দিনে
অভিযাত্রিক, নির্ভীক তারা পথ লয় ঠিক চিনে।
হয়তো বা ভুল, তবু ভয় নাই, তরুণের তাজা প্রাণ
পথ হারালেও হার মানে নাকো, করে চলে সন্ধান
অন্য পথের, মুক্ত পথের, সন্ধানী আলো জ্বলে
বিনিদ্র আঁখি তারকার সম, পথে পথে তারা চলে।’
ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি কোন শহিদের স্মরণে লেখা হয়েছে?
খ. ‘সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা’- চরণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. দ্বিতীয় উদ্দীপকের আলোকে ‘একুশের গান’ কবিতায় বর্ণিত ‘ওরা এদেশের নয়’
চরণটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রথম উদ্দীপকের যিনি অভিযাত্রিক তিনিই ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা-শহিদ
বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ভাষা শহিদদের স্মরণে
লেখা হয়েছে।
খ. ‘সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা’- চরণটিতে তৎকালীন পাকিস্তানি শোষকদের
পশু বলা হয়েছে।
➠ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তান
সবসময় শোষণমূলক আচরণ করতে থাকে। একসময় তারা বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে
চাইলে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন
বাংলার ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলে। তারা এদিন তৎকালীন
পাকিস্তানি শোষকের জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে মিছিল বের করে। মিছিলে
পুলিশ গুলি চালালে রফিক, শফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে নিহত ও আহত হয়। তাদের
এই বর্বরোচিত আচরণের কারণে কবি তৎকালীন এই পাকিস্তানি শোষকদের পশু বলছেন।
গ. প্রথম উদ্দীপকের অভিযাত্রিকদের চেতনা, নীতিবোধ ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে
দ্বিতীয় উদ্দীপকের ‘ওদের’ অর্থাৎ পাকিস্তানিদের চেতনা, নীতিবোধ ও
কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ অভিযাত্রীকরা কঠিন পথেও হাসি মুখে এগিয়ে যেতে পারে। তাদের মনে সেই পথে
চলার মত সাহস আছে। যা দ্বিতীয় উদ্দীপকের ‘ওদের’ সাথে বৈসাদৃশ্য প্রকাশ
করছে কারণ ‘ওরা’ নীতি বিসর্জন দিয়ে যুদ্ধে জয় লাভ করতে প্রত্যাশী।
➠ প্রথম উদ্দীপকের কবিতার চরণগুলোর ভাবার্থ বিশ্লেষণে আমরা পাই, উল্লিখিত
অভিযাত্রিকরা (নির্ভীক তরুণ) চলার পথে কোনো বাধাবিবিঘ্নকেই তোয়াক্কা করে না।
তারা মুক্তিকামী, সত্যসন্ধানী। তারা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না।
শত বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও সবার কল্যাণার্থে, জীবনের বন্ধুর পথ তারা অকুতোভয়ে
হেঁটে চলে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় উদ্দীপকের চরণগুলোর ভাবার্থ বিশ্লেষণে
আমরা পাই, উল্লিখিত ভীরু কাপুরুষ তথা তদানীন্তন পাকিস্তানি শোষকরা
ক্ষমতার লোভে যেকোনো অন্যায় কাজ করতে তোয়াক্কা করে না। তারা নীতিবোধ
বিবর্জিত ভীরু-কাপুরুষ। মানুষের প্রাণের দাবিকে তারা বুলেটের মাধ্যমে
স্তব্ধ করে দিতে চায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর তদানীন্তন
পাকিস্তানি এই শোষকদের গুলিবর্ষণ যার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। সুতরাং
সামগ্রিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, প্রথম উদ্দীপকের অভিযাত্রিকদের
সঙ্গে দ্বিতীয় উদ্দীপকের তদানীন্তন পাকিস্তানি শোষকদের চেতনা, নীতিবোধ ও
কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. নির্ভীকতা ও মুক্তির তীব্র আকাক্সক্ষা পোষণের দিক বিবেচনায় বলা যায়,
প্রথম উদ্দীপকের অভিযাত্রিকরা ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা শহিদদেরই
প্রতিরূপ।
➠ যারা বিপদকে তুচ্ছ করে এগিয়ে যায় তারাই তরুণ অকুততোভয় প্রাণ, যা আমরা
‘একুশের গান’ কবিতা এবং প্রথম উদ্দীপকে দেখতে পাই।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে মিছিলে
নিহত ভাষা শহিদদের স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে
তৎকালীন পাকিস্তানি শোষকদের জারি করা ১৪৪ ধারার প্রতিবন্ধকতা ভেঙে বাংলার
আপামর ছাত্র-জনতা মিছিল বের করে। বাঙালির প্রাণের দাবিকে স্তব্ধ করতে
পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে অনেকে নিহত ও আহত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের
আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের কাছে মাথা নত করে শোষকের দল রাষ্ট্রভাষা বাংলার
দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। প্রথম উদ্দীপকেও আমরা এমন এক দল অভিযাত্রিকের
সন্ধান পাই যারা ভাষা শহিদদের মতোই অকুতোভয়। তারা ভাষা শহিদদের মতোই
সত্যের সন্ধানে চলার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতার কাছেই হার মানে না। তারা
নির্ভয়ে সমস্ত বাধাবিঘ্ন পদদলিত করে হেঁটে চলে। সে বিবেচনায় ভাষা শহিদ ও
অভিযাত্রিকদের আদর্শ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এক ও অভিন্ন।
➠ সুতরাং বলা যায় যে, প্রথম উদ্দীপকের যিনি অভিযাত্রিক তিনিই ‘একুশের
গান’ কবিতার ভাষা শহিদ।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ২:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
এবার লোকের ঘরে ঘরে যাবে
সোনালী নয়কো, রক্ত রঙিন ধান
দেখবে সকলে সেখানে জ্বলছে
দাউ দাউ করে বাংলাদেশের প্রাণ।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
খ. কবি কেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে জেগে উঠতে আহ্বান করেছেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার মধ্যে যে দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে তা
ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতার বিষয়বস্তুর আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে-
উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয়।
খ. এদেশে এখনো যে অন্যায় ও বৈষম্য বিরাজ করছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে
কবি পুনরায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
➠ পাকিস্তানি শাসনামলে অন্যায়ভাবে মানুষের অধিকার হরণ করার বিরুদ্ধে এদেশের
জনগণ বিভিন্ন সময়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তারই উল্লেখযোগ্য ১৯৫২-এর ভাষা
আন্দোলন। কিন্তু এ অন্যায়, অত্যাচার আজও চলছে বলে কবি একুশে ফেব্রুয়ারিকে
আবার জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
গ. উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার মধ্যে প্রতিবাদী মানসিকতার সাদৃশ্য
রয়েছে।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় বাংলার দামাল ছেলেদের প্রতিবাদী চেতনার দিকটি ফুটে
উঠেছে। শাসকের কঠিন বিধি-নিষেধের বেড়াজাল ডিঙিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে
ভাষার জন্য ভাষা শহিদরা প্রাণ উৎসর্গ করেছে বলে রক্তরাঙা এদিনটিকে বাঙালি
কখনো ভুলতে পারে না। একুশের শহিদের আত্মার ডাকে জেগে ওঠে আমাদের
স্বাধীনতার আন্দোলন। সন্তানহারা মায়ের চোখের জল মানুষের প্রাণে
প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠেছিল আপামর
বাঙালি ফাল্গুনের সেই রক্তিম দিনে।
➠ উদ্দীপকেও সমানভাবে বাঙালির প্রতিবাদী মানস ও চেতনার প্রতিচ্ছবি ফুটে
উঠেছে। কবি বাংলাদেশকে বাহবা দিয়েছেন, কারণ বাংলাদেশকে শাসকরূপী শত্রুরা
নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বারবার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেওয়ার
চেষ্টা করেছে। তারপরও বাংলা, বাঙালি মাথা নোয়ায়নি, যা পৃথিবীর মানুষের
কাছে বিস্ময়কর। তিনি মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ক্রোধকে জাগিয়ে তুলে
শক্তিতে পরিণত করতে চান। উদ্দীপকে কবি এতই প্রবলভাবে জেগে উঠেছেন তিনি
সামান্যতম ছাড়ও দিতে রাজি নন। তার ভাষায় দাবি না মানলে সকলেই রক্ত দিতে
প্রস্তুত। তাই বলা যায়, প্রতিবাদী মানসিকতার দিক থেকে উদ্দীপক এবং
‘একুশের গান’ কবিতার সাদৃশ্য বর্তমান।
ঘ. উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতার বিষয়বস্তুর আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে-
উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে বাঙালির আত্মত্যাগ ও গণজাগরণের
কাহিনী চিত্রায়িত করেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাংলাকে
রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না দেবার চক্রান্তে গর্জে ওঠে আপামর জনতা। কবির
ভাষায় বিষাক্ত নাগিনী, আঁধারের পশুসম সেই সব শাসকরা যারা সন্তানের মুখ
থেকে মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা ক্ষোভের আগুন
জ্বেলে সে চক্রান্তকে প্রতিহত করে।
➠ আলোচ্য উদ্দীপকে শোষিত মানুষের জেগে ওঠার গল্প বলেছেন কবি। দেশের মানুষকে
তিনি বাহবা জানিয়েছেন। কারণ এসব মানুষেরা বহুদিন আগে থেকেই অত্যাচারে
জর্জরিত। অত্যাচারের আগুনে শাসকগোষ্ঠী এদেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে
দিলেও তারা বর্তমান। তাদের এই সহ্য ক্ষমতা দেখে পৃথিবীও অবাক। এসব মানুষ
জ্বলে পুড়ে গেলেও তারা মাথা নোয়ায় না। তারা কষ্ট সহ্য করলেও আত্মসম্মানের
সাথে আপস করে না। কবি বলেছেন, এসব নিপীড়িত মানুষ আজ জেগে উঠবে। মানুষের
ঘরে ঘরে বাজে প্রতিবাদীর বুকের রক্তে রঙিন ধান। এতেই প্রকাশিত হয়
বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে কতখানি প্রাণচঞ্চল।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
হয় ধান নয় প্রাণ-এ শব্দে
সারা দেশ দিশাহারা,
একবার মরে ভুলে গেছে আজ
মৃত্যুর ভয় তারা।
শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা কী নিয়ে গর্ব করতে শিখবে?
খ. কবিতায় পশু বলা হয়েছে কাদের এবং কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার কোন দিকটি ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ‘তারা’ ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা শহিদের
প্রতিরূপ।-যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কর।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে গর্ব
করতে শিখবে।
খ. অন্যায়ভাবে গুলিবর্ষণকারীদেরকে ‘একুশের গান’ কবিতায় পশু বলা হয়েছে।
➠ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবিতে বাঙালিরা সোচ্চার হয়।
ভাষাপ্রেমিরা সর্বাত্মক আন্দোলনে মুখর করে তোলে বাংলার পথঘাট, রাজপথ।
প্রাণের দাবি আদায়ের এ সংগ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি করে। শহিদ হয়
অনেকেই। খালি হয় মায়ের, বোনের ভাইয়ের বুক। জঘন্য এ হত্যা যজ্ঞের জন্য
তাদেরকে পশু বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার প্রতিবাদী দিকটি ইঙ্গিত করে।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় কবি ১৯৫২ সালে সংঘটিত ভাষা আন্দোলনে বাঙালি
ছাত্র-জনতার আত্মোৎসর্গের স্মৃতিচারণ করেছেন। কবিতায় বাংলা ভাষাকে
রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালি
জাতির জাগ্রত চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। বর্বর শাসকরা সেদিন বাঙালির প্রাণের
দাবিকে রুখে দিতে গুলি চালিয়েছিল। শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলার
রাজপথ। কবিতায় যারা শহিদ হয়েছেন তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
➠ আলোচ্য উদ্দীপকটিতে প্রতিবাদী রূপে বাঙালির প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। এমন
বাঙালি যারা নিজের অধিকার ফিরে পেতে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
তারা ধানের অধিকার পাবার জন্য প্রাণও দিতে প্রস্তুত। তাদের প্রতি
অত্যাচারের মাত্রা এত বেশি ছিল যে আজ তারা মৃত্যুকেও ভয় করে না। কবি
এজন্য বাংলাদেশকে বাহবা জানিয়েছেন কারণ এই অদম্য শক্তি দেখে পৃথিবী অবাক
হয়ে তাকিয়ে থাকে। তাই বলা যায় যে, আলোচ্য উদ্দীপক এবং ‘একুশের গান’
কবিতাটির প্রতিবাদী দিকটি এদের মাঝে সাদৃশ্য বিধান করেছে।
ঘ. উদ্দীপকের ‘তারা’ ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা শহিদদের প্রতিরূপ- উক্তিটি
যথার্থ।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে
মাতৃভাষা বাংলাকে তার যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামের পটভূমি
আলোচিত হয়েছে। মাতৃভাষার জন্য বাঙালি জাতি যে রক্ত দিয়েছে তার তুলনা
পৃথিবীতে নেই। ভাষা শহিদরা আমাদের দেশের সাহসী সন্তান।
➠ উদ্দীপকে কবি ‘ওরা’ সম্বোধন করে প্রতিবাদী জনতাকে বুঝিয়েছেন। তারা
নিজেরা বহুদিন ধরে নিপীড়িত হওয়ার পর জেগে উঠেছে। এখানে কবি ধানের রূপকে
স্বাধীনতা, স্বকীয়তাকে বোঝাতে চেয়েছেন। সংগ্রামী মানুষেরা আর পড়ে পড়ে মার
খেতে চায় না। তারা নিজের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামী চেতনাকে অবলম্বন
করেছে। এই কারণে সমগ্র দেশ দিশেহারা হয়ে উঠেছে। এসব মানুষ বারবার
মৃত্যুসম আঘাত পেতে পেতে এখন মৃত্যুর ভয় ভুলে গেছে। তাদের সাহস দেখে
সমগ্র পৃথিবী অবাক হয়ে গেছে। পৃথিবী দেখেছে এসব মানুষ জ্বলে পুড়ে ছারখার
হলেও নিজেরা আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিতে রাজি নন। এসব সংগ্রামী মানুষের
আচরণ বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদী মন মানসিকতা আমরা ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা
সৈনিকদের মাঝে দেখতে পাই।
➠ প্রতিবাদী মনমানসিকতাই উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার মাঝে সামঞ্জস্য
সাধন করেছে। তাই বলা যায় উদ্দীপকের ‘তাঁরা’ ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা
শহিদদের প্রতিরূপ।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
i. মায়ের ভাষায় কথা বলাতে
স্বাধীন আশায় পথ চলাতে
হাসিমুখে যারা দিয়ে গেল প্রাণ
সেই স্মৃতি নিয়ে গেয়ে যাই গান।
ii. ভাইয়ের বুকে রক্তে আজিকে
রক্ত মশাল জ্বলে দিকে দিকে।
সংগ্রামী আজ মহাজনতা
কণ্ঠে তাদের নব বারতা,
শহীদ ভাইয়ের স্মরণে।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতার রচয়িতা কে?
খ. ‘জাগো নাগিনীরা, জাগো কালবোশেখীরা’ বলতে কবি কী বঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপক-i ‘একুশের গান’ কবিতার কোন ভাবের সংগে সংগতিপূর্ণ ব্যাখ্যা
কর।
ঘ. উদ্দীপক-i ও ii এ প্রকাশিত চেতনা ‘একুশের গান’ কবিতার মূল চেতনার
সমান্তরাল নয়।- এ কথার সঙ্গে তুমি কি একমত? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতার রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
খ. “জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা”- বলে কবি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে
সমগ্র বাঙালিকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জেগে উঠতে বলেছেন।
➠ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে বাংলার দামাল ছেলেরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে
রাজপথে মিছিল বের করলে পাকিস্তানি হায়েনারা মিছিলে গুলি করলে বুকের রক্তে
রঞ্জিত হয় রাজপথ। শহিদ হয় সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা
আরও অনেকে। অনেক মায়ের বুক হয়ে যায় শূন্য। তাই এ বর্বর হত্যার বিরুদ্ধে
বিক্ষোভ করার জন্য, কবি বাংলার সন্তান হারানো মা, নারী-পুরুষদের
কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো প্রতিবাদ গড়ে তুলতে বলেছেন।
গ. উদ্দীপক-i ‘একুশের গান’ কবিতার ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে প্রেরণা নেওয়ার
বিষয়টির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় ২১শে ফেব্রুয়ারির কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে তারা
অদম্য সাহস নিয়ে বুক পেতে দিয়েছিল ঘাতকের বন্দুকের মুখে। তাদের এ অদম্য
সাহসই আমাদের প্রেরণা। যার মাধ্যমে আমরা সকল শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
গড়ে তুলতে পারি।
➠ উদ্দীপক-i এ শহিদদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যারা দেশের স্বার্থে হাসিমুখে
মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে। তাঁদের এ দেশপ্রেম ও অদম্য চেতনাই আমাদের
প্রেরণা ও শক্তির উৎস। যা আমাদেরকে সকল শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে
শেখায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপক-i ও কবিতায় শহিদদের অবদান থেকে অনুপ্রেরণা
নেওয়ার বিষয়টি সংগতিপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপক-i ও ii-এ প্রকাশিত চেতনা ‘একুশের গান’ কবিতার মূল চেতনার
সমান্তরাল নয় এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতাটি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত। পাকিস্তানি
শাসকগোষ্ঠী বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, যা বাঙালি মেনে নিতে
পারেনি। তারা সংগ্রাম করেছিল মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার্থে যার চূড়ান্তরূপে
বুকের রক্ত রাজপথে বিসর্জন দিয়ে তারা রক্ষা করেছিল মাতৃভাষার মর্যাদা। এই
শহিদদের অবদান আমাদের নিকট প্রেরণাস্বরূপ। যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
➠ উদ্দীপক i ও ii-এ শহিদদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যাঁরা আমাদের
স্বাধীনতা ও মাতৃভাষা রক্ষার্থে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। তারা তাদের
বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়ে রক্ষা করেছিলেন আমাদের ভাষা, স্বকীয়তাকে।
তারাই আমাদের প্রেরণা। তাদের এই প্রেরণা আমাদের আজও শক্তি ও সাহস
জোগায়।
➠ উদ্দীপক i ও ii-এ শহিদদের অবদান থেকে প্রেরণা নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ
পেয়েছে; যা ‘একুশের গান’ কবিতার মূলভাব তাই আমি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির
সঙ্গে একমত নই।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতার পটভূমি কী?
খ. “দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার মূলসুর একই।”- উক্তিটির যথার্থতা
নিরূপণ কর।
ক. ‘একুশের গান’ কবিতার পটভূমি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।
খ. ‘দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়’- বলতে পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠী কর্তৃক
এদেশের ধনসম্পদ লুণ্ঠন, অন্যায়-অত্যাচারকে রূপক হিসেবে উক্তিটি করা
হয়েছে।
➠ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তান
সবসময় দমন-নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এদেশের ধনসম্পদ, অন্ন বস্ত্র
প্রভৃতি কেড়ে নিয়ে পাকিস্তানিরা এদেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছে।
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে আমাদের নিজস্ব
সম্পদকে দেশের ভাগ্য বলেছেন কবি। আর এ ভাগ্যকেই জোরপূর্বক পাকিস্তানিরা
বিক্রি করে নিজেদের উন্নতি করেছে।
গ. উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমা শোষকগোষ্ঠীর অন্যায়-নির্যাতন এবং
তাদের বিরুদ্ধে বাঙালির অপ্রতিরোধ্য সংগ্রামী মনোভাবের দিক, যা ‘একুশের
গান’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতাটি ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত। ভাষার
দাবিতে হানাদার শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ সর্বস্ব দিয়ে যেভাবে
রুখে দাঁড়িয়ে অধিকার আদায় করেছে তার বর্ণনা রয়েছে এ কবিতায়। মায়ের ভাষার
মান বাঁচাতে নিজের জীবন তুচ্ছ করে তাঁরা রাস্তায় নামে এবং মিছিলে পুলিশ
গুলি চালালে তারা শহিদ হয়। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার জনতাকে আবার
একুশের চেতনায় জাগ্রত হওয়ার আহ্বান কবি করেছেন।
➠ উদ্দীপকেও পাকিস্তানি শোষকদের অন্যায়-আচরণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যার
ফলে অকালে ঝরে পড়েছিল হাজারো ভাইয়ের প্রাণ, হৃদয়ের ভালোবাসা। তাই
উদ্দীপকের কবি বাংলার দামাল ছেলেদের নব উদ্যমে দ্রোহের আগুনে পশুদের
পুড়িয়ে বিজয়ের গান গেয়ে উঠতে বলেছেন। সুতরাং বলা যায়, বাংলার মানুষের
অধিকার আদায়ের জাগ্রত শক্তির চিত্রিত প্রতিরূপ হিসেবে কবিতার ভাববস্তুর
সাথে উদ্দীপকে সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. ‘উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার মূলসুর একই- উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘একুশের গান’ আপাত একটি গান হলেও মূলত এর কবিতার পটভূমি হলো বাঙালি
জাতির অস্তিত্বের প্রথম সোপান। নরপশুরা আমাদের বাংলা মায়ের ভাষাকে
বুলেটের আঘাতে কেড়ে নিতে চেয়েছিল, ওইসব ঘৃণ্য নরপশুদের জ্বালিয়ে মারার
জন্যে প্রতি মুহূর্তে ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণা। আজো জালিমের
কারাগারে বন্দি আছে বাংলার বীর নর-নারী। এসব শত্রুদের ধ্বংস করতে প্রয়োজন
একুশের চেতনার পুনর্জাগরণ। তাই শহিদদের আত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে একুশের
চেতনা বুকে ধারণ করে কবি বাংলার জনতাকে জেগে ওঠার আহ্বান করেছেন।
➠ উদ্দীপকেও পাকিস্তানি নরঘাতক পিশাচদের অত্যাচারের পাশাপাশি বাংলার
মানুষের প্রতিবাদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর
মনুষ্যত্বহীন শাসকরা বাঙালির বুকের রক্ত ঝরিয়ে মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে
নিতে চেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে বাংলার সাহসী যুবকদের দ্রোহের আগুন
জ্বালিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলেছেন।
➠ ভাষার দাবিতে বাঙালির আন্দোলন এবং
আন্দোলনে শোষকগোষ্ঠীর পাশবিক হামলা, হামলার বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিরোধ
গড়ে তোলার দিকটি উদ্দীপক ও কবিতায় একই আবেগে উচ্চারিত হয়েছে। তাই বলা
যায়, উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার মূলসুর একই।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে আসে। দূরের আকাশে সূর্য মুছে যায় ধীরে ধীরে। কিন্তু
জাহেদা বানু তখনো দিগন্তের দূর রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এক সময় আঁধার
নামে, চোখে আলো-আঁধার মিলেমিশে ঝাপসা হয়ে যায়, তখন হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে
জাহেদা বানু। জাহেদা বানুর এ প্রতীক্ষা অনেক বছরের, সেই কবে তার ছেলে
শহিদ হয়েছে ভাষা আন্দোলনে। জাহেদা বানু ছেলের লাশ দেখে পাগল হয়ে গিয়েছেন,
তার বিশ্বাস, তার ছেলে নিশ্চয় একদিন ফিরে আসবে। আসলে তার ছেলে আর কোনো
দিন ফিরে আসবে না। কিন্তু বাংলার মানুষের মুখে মুখে তার অস্তিত্ব মিশে
আছে।
ক. কার রক্তে একুশে ফেব্রুয়ারি রাঙানো?
খ. ফেব্রুয়ারিকে ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘একুশের গান’ কবিতা একই ভাবের ধারক”- তুমি কি বিষয়টির
সাথে একমত যুক্তিসহ মতামত দাও।
ক. একুশে ফেব্রুয়ারি ভাইয়ের রক্তে রাঙানো।
খ. ফেব্রুয়ারিকে ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া বলার কারণ- বাংলার মায়েরা
তাদের সন্তানদের হারিয়ে চোখের জলে একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্বাগত
জানিয়েছিলেন।
➠ একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার অনেক দামাল ছেলে শহিদ হয়েছে। তারা সবাই
মায়ের আদরমাখা সন্তান ছিল, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে
তারা তাদের মায়ের কোল খালি করে শহিদ হয়েছেন। একুশে ফেব্রুয়ারির যে বিশাল
অর্জন তাতে মিশে আছে মাতৃত্বের করুণ হাহাকার। ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু।
গ. উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতায় ছেলেহারা প্রতীক্ষারত শত মায়ের
অশ্রুবিসর্জন করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় মায়ের ত্যাগের কথা পাওয়া যায়। ভাষা আন্দোলনে সমগ্র
বাংলার দামাল ছেলেরা শত্রু সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুকে সাদরে বরণ করেছিল।
তারা সবাই মায়ের আদরের সন্তান ছিল। ভাষার দাবিতে শহিদ সন্তানের মৃত্যু
মাতৃত্বের সেই আবেদনকে অগ্রাহ্য করেছে। বস্তুত ভাষা আন্দোলনে শহিদের রক্ত
যতটুকু ঝরেছে, তার চেয়েও বেশি ঝরেছে মায়ের চোখের জল।
➠ উদ্দীপকে জাহেদা বানুর ছেলে ভাষা আন্দোলনে শহিদ। ভাষা সৈনিক জাহেদা
বানু নিজে তার ছেলের লাশ দেখেছেন। কিন্তু মাতৃত্বের করুণ আবদার তা মেনে
নিতে পারেনি। জাহেদা বানু এখনো বিশ্বাস করেন না যে, তার ছেলে মারা গেছে,
ফলে রোজ তিনি দূর পথে তাকিয়ে অপেক্ষা করেন। উদ্দীপকে মায়ের এ করুণ
আহাজারি ‘একুশের গান’ কবিতার ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়ার দিকটিই
প্রতিফলিত করে।
ঘ. উদ্দীপক এবং ‘একুশের গান’ কবিতাটি একই ভাবের ধারক-এ বিষয়টির সাথে আমি
একমত।
➠ একুশের গান’ কবিতায় ত্যাগের কথা প্রকাশ পেয়েছে। ভাষার সম্মান রাখতে
সহস্র অকুতোভয় সন্তান প্রাণ দিয়েছে। ফলে বোনেরা হয়েছে ভাইহারা, মায়েরা
হয়েছে ছেলেহারা, যারা শহিদ হয়েছে তাদের রক্ত ভাষার মহিমায় ভাস্বর। কিন্তু
যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের রোদনে আজও হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। মূলত
একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন শহিদের রক্তে রাঙানো, তেমনি মা-বোনের
আহাজারিতেপূর্ণ।
➠ উদ্দীপকে একজন মায়ের ত্যাগের পরিচয় পাওয়া যায়। জাহেদা বানুর সন্তান
ভাষা আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন। কিন্তু সন্তানের মৃত্যুতে মাকে আরো বড় ত্যাগ
স্বীকার করতে হয়। শূন্য মাতৃত্বের চরম যন্ত্রণা জাহেদা বানুকে আজও ভোগ
করতে হয়। চোখের পাতা ঝাপসা হয়ে যখন দৃষ্টির সীমানা সংকীর্ণ হয়, তখন
জাহেদা বানু ক্ষান্ত হন। কিন্তু এ প্রতীক্ষার কোনো শেষ নেই।
➠ সুতরাং বলা যায় যে, ‘একুশের গান’ কবিতায় যে ত্যাগের ভাব পাওয়া যায়,
উদ্দীপকও সেই একই ত্যাগের ধারক।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কথা বলছো, হাসছো, গল্প করছো বাংলায়
ইতিহাস শুনেছো?
গান শুনছো, কবিতা লিখছো, ছড়া পড়ছো বাংলায়
ইতিহাস পড়েছো?
তর্ক করছো, বক্তৃতা দিচ্ছো, উত্তর লিখছো বাংলায়
ইতিহাস দেখেছো?
বাদ দাও ইতিহাস!
প্রতিটা বর্ণচিরে দেখ তপ্ত হাতে
দেখবে তাজা রক্ত এখনও গড়িয়ে পড়ছে।
ক. আজ কাকে জাগতে বলা হয়েছে?
খ. ‘আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর-ছেলে বীর-নারী’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘একুশের গান’ কবিতার তাৎপর্যগত সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতা একই আবেগে রচিত।”- বিশ্লেষণ কর।
ক. আজ একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাগতে বলা হয়েছে।
খ. ‘আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর-ছেলে বীর-নারী’- লাইনটি দ্বারা বোঝানো
হয়েছে। বর্তমানেও বীর সন্তানদের প্রতি জালিমের অত্যাচার অব্যাহত
রয়েছে।
➠ ভাষা আন্দোলনে রক্তের বিনিময়ে এ দেশের সন্তানরা বাংলাভাষাকে প্রতিষ্ঠা
করেছিল। কিন্তু সে স্পৃহা আজ আমাদের মধ্যে বিলুপ্ত হতে চলেছে। জালিমের দল
আবার জেগে উঠেছে। তারা দেশের বীর সন্তানদের বিনা কারণে হত্যা করছে।
আলোচ্য চরণ দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘একুশের গান’ কবিতার তাৎপর্যগত সাদৃশ্যের দিকটি হলো
বাংলার শত্রু তথা দেশদ্রোহীদের ফণার মতো বিস্তার করা।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় দেশদ্রোহীদের কথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির
মহান অর্জনের পর আবারও দেশে বেশধারী জালিমরা এদেশের মঙ্গলের পথে বাধা
প্রদান করে। ওরা দেশের ভাগ্য বিক্রয়ে লিপ্ত। মানুষের খাবার, বস্ত্র, আর
বসতবাড়ি কেড়ে নিয়ে ওরা সুখের সাম্রাজ্য রচনা করে। এদেশের মানুষ ওদের ঘৃণা
করে। মায়ের আর বোনের চোখে ওদের জন্য চরম ঘৃণা সঞ্চিত রয়েছে। যারা এদেশে
এসে জালিমের মতো ফণা বিস্তার করছে।
➠ উদ্দীপকে তাদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা বাংলায়
বক্তৃতা দেয়, তর্ক করে, কিন্তু বাংলায় ইতিহাসের মর্ম অনুধাবন করে না।
বাংলায় গান শোনে, কবিতা লেখে, কিন্তু বাংলার ইতিহাসকে সম্মান করে না।
উদ্দীপকের কবি রোষভরে তাদের বলেছেন বাংলার বর্ণমালা চিরে দেখতে। কারণ
প্রতিটি বর্ণমালার মধ্যে এখনো তপ্ত রুধির জমা হয়ে আছে। একুশের অর্জনের
পরও এদেশে কিছু দেশদ্রোহী জালিম শত্রুদের হাতে বাংলার বীর নারী-পুরুষ
বন্দি হয়ে আছে। তাই উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতায় তাৎপর্যগত সাদৃশ্য
তৈরি হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতা একই আবেগে রচিত।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় কবি জালিমের কথা উচ্চারণ করেছেন। আজও বাংলায়
জালিমের রচিত কারাগারে বীর সন্তানের করুণ মৃত্যু হয়, বীর নারী লাঞ্ছিত
হয়। এতে করে শহিদের আত্মা চিৎকার করে ওঠে। কবি এই জালিমদের রুখতে আবারও
একুশে ফেব্রুয়ারির জাগরণ কামনা করেছেন।
➠ উদ্দীপকে দেশদ্রোহীদের প্রতি প্রশ্নবাণ প্রদর্শিত হয়েছে। কারণ তারা
বাংলায় কথা বলে, হাসে, গল্প করে, কিন্তু বাংলার ইতিহাস স্মরণ করে না।
বাংলায় গান শোনে, কবিতা পড়ে, কিন্তু বাংলার ইতিহাসকে বক্ষে ধারণ করে না।
বাংলায় বক্তৃতা দেয়, তর্ক করে, কিন্তু বাংলার ইতিহাসকে সম্মান করে না।
উদ্দীপকের কবি তাদের বলেছেন, ইতিহাস জানতে চাইলে যেন প্রতিটা বর্ণমালার
বুক চিরে দেখে, কারণ বাংলা বর্ণমালার বুকে এখনো শহিদের তাজা রক্ত লুকিয়ে
রয়েছে।
➠ একুশে ফেব্রুয়ারি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হলেও ত্যাগের সে স্পৃহা
জালিমের থাবায় আজ বিলুপ্তির পথে। দেশের এই শত্রুদের প্রতি উদ্দীপক ও
‘একুশের গান’ কবিতায় যে ঘৃণা প্রদর্শন করা হয়েছে, তা একই আবেগের
বহিঃপ্রকাশ।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
চারদিকে বসন্তের আনাগোনা। গাছের মগডালে কোকিলের একটানা সুর। ডালে ডালে
ফুলের মেলা, মৌমাছির গুঞ্জনে বাতাস মুখরিত। সন্ধ্যার বাতাস বয়ে আনে বুনো
ফুলের ঘ্রাণ। এমন আনন্দঘন দিনে বাংলার বুকে হঠাৎ আঁধার নেমে এলো। বন্য
ষাঁড়ের মতো ছুটতে ছুটতে এলো শত্রুরা। বাংলাভাষাকে মুছে দিতে চাইল বাংলার
ইতিহাস থেকে, কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা বসন্তের খুশিতে মেতে থাকল না।
শত্রুর বিরুদ্ধে জেগে উঠল। বুকের রক্তে প্রতিষ্ঠা করল বাংলাভাষার সম্মান।
ক. নীল গগনের বসনে কে চুমু খেয়েছিল?
খ. “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”-
চরণটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. নীল গগনের বসনে রাত জাগা চাঁদ চুমু খেয়েছিল।
খ. “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে
পারি”-চরণটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে যেসব
ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে ফিরে পেয়েছে তাদের
অবদান ভোলা যায় না।
➠ পাকিস্তানিরা বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে ঘোষণা করলে বাংলার দামাল ছেলেরা তুমুল বিরোধিতা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ
করে বাংলা ভাষার দাবিতে রাজপথে মিছিল বের করে। তখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী
সেই মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে অনেকে শহিদ হন। বাংলার দামাল ছেলেরা
তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষার বাংলার
সম্মান অক্ষুণœ রাখে। ভাষা শহিদদের এ আত্মত্যাগ বোঝাতে গিয়ে কবি উক্ত
উক্তিটি করেছেন।
গ. উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতায় আলোচিত বর্ণিল প্রকৃতিতে শত্রুর আনাগোনা
এবং তাদের প্রতিরোধের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় কবি একুশে ফেব্রুয়ারির প্রকৃতির রূপ কল্পনা
করেছেন। নীল আকাশে বাঁকা চাঁদ হেসে উঠেছিল, মনে হয়েছিল রাতজাগা চাঁদ গভীর
আবেশে নীল আকাশে চুমু খাচ্ছে। পথে পথে ছিল রজনীগন্ধার সুবাস। এমন সুন্দর
সময়ে শত্রু বাংলার বুকে আঘাত হানল। আঁধারে অনুপ্রবেশকারী সেসব শত্রুদের
মুখ চেনা। এদেশের মানুষের প্রাণের দাবি তারা কালো অস্ত্রের জোরে দাবিয়ে
রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু বাংলার সাহসী সন্তানরা শত্রুর রক্তে নিজেদের রক্ত
মিশিয়ে রচনা করল একুশে ফেব্রুয়ারি।
➠ উদ্দীপকেও প্রকাশ পেয়েছে বসন্তলগ্নে শত্রুর অত্যাচার। তখন বাংলার বুকে
বসন্তের পূর্ণ আমেজ। ডালে ডালে ফুলের মেলা, বাতাসে কোকিলের মিষ্টি সুরের
খেলা। এমন আনন্দের মুহূর্তে বাংলার মাটিতে শত্রুর অনুপ্রবেশ ঘটল। বুনো
ষাঁড়ের মতো শত্রু তেড়ে এলো খোলা বেয়োনেট হাতে। তারা বাংলার মাটিতে বাংলা
ভাষাকে কবর দিতে চাইল। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা চুপ করে থাকল না। তারা
বুকের তাজা রক্তে প্রতিষ্ঠা করল বাংলা ভাষার সম্মান। ‘একুশের গান’ কবিতার
উপরিউক্ত দিকটি উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, শোষকদের অত্যাচার, পরবর্তী
সময়ে দেশদ্রোহীদের জেগে ওঠা সম্পর্কে চিত্রকল্প অঙ্কিত হয়েছে যার সমগ্র
ভাব উদ্দীপকে অনুপস্থিত। উদ্দীপকে শুধু ভাষা শহিদদের বীরত্বকে ফুটিয়ে
তোলা হয়েছে। চিহ্নিত করা হয়েছে মায়েদের আর বোনদের মহান ত্যাগকে। শত্রুর
প্রতি দেখানো হয়েছে প্রবল ঘৃণা। কারণ তারা বাংলার মানুষের ভাগ্য বিক্রয়
করতে চেয়েছে। পাশাপাশি আজকের শত্রুদের কথাও প্রকাশ পেয়েছে। কারণ এখনো
জালিমের কারাগারে বীর সন্তানরা শহিদ হচ্ছে। এসব শত্রুদের ধ্বংস করতে আবার
প্রয়োজন একুশের চেতনার পুনর্জাগরণ।
➠ উদ্দীপকে একুশে ফেব্রুয়ারির সমসাময়িক প্রকৃতির কথা প্রকাশ করা হয়েছে।
তখন ছিল বাংলার বুকে বসন্তের ঘনঘটা। বাংলার এই কুসুমিত সময়ে রাতের আঁধার
ফুঁড়ে বুনো ষাঁড়ের মতো শত্রু ছুটে এসেছিল। তারা চেয়েছিল বাংলার মাটিতে
বাংলাভাষার কবর রচনা করতে, কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা বাসন্তি সাজ ছেড়ে
পরেছিল যুদ্ধের সাজ। শত্রুর সঙ্গে মরণপণ লড়াই করে রচনা করেছিল বাংলা
ভাষার মহীয়ান স্বরলিপি।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য, ভাষা শহিদদের বীরত্ব আর
বর্তমান সময়ের জালিমদের অত্যাচারের দিক ফুটে উঠেছে। আর উদ্দীপকে শুধু
ভাষা শহিদদের বীরত্ব প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং আলোচনা দ্বারা দেখা যায় যে,
উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশ পায়নি।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ভাষাসৈনিক ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আসাদ সাহেব এক সেমিনারে ২১শে
ফেব্রুয়ারির ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী
বাঙালি জাতির ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল। দেশের সোনার
ছেলেদের খুন করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল।
পাকিস্তানি নরপশুদের বুলেটের গুলিতে সেদিন ঢাকার রাজপথ বাংলার সোনার
ছেলেদের বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। আমি ভাগ্যক্রমে তাদের গুলির মুখ থেকে
বেঁচে গিয়েছিলাম। আজও সেই লোমহর্ষক স্মৃতি আমাকে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়।
সেদিনের স্মৃতি কোনো দিনও আমি ভুলতে পারব না।
ক. পথে পথে কী ফোটে?
খ. ‘তাহাদের তরে মায়ের বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা’- এখানে তাহাদের বলতে কবি
কাদের বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে?- নির্ণয় কর।
ঘ. উদ্দীপকের ভাষাসৈনিক আসাদের বর্ণনায় ‘একুশের গান’ কবিতার মূলবক্তব্য
ফুটে উঠেছে।- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
ক. পথে পথে রজনীগন্ধা ফোটে।
খ. ‘তাহাদের তরে মায়ের বোনের ভায়ের চরম ঘৃণা।’- ‘তাহাদের’ বলতে কবি
পাকিস্তানি নরপশুদের কথা বুঝিয়েছেন যারা গুলি চালিয়ে ভাষার দাবিতে
আন্দোলনরত জনতার রক্ত ঝরিয়ে ছিল।
➠ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর চরম অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষায় জন্য যে মিছিলটি সংগঠিত হয়েছিল
তাতে এলোপাতাড়ি গুলি চালানোয় অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছিল, অনেক বোন
হারিয়েছিল প্রিয় ভাইকে। তাই পাকিস্তানি নরপশুদের প্রতি মায়ের, বোনের,
ভাইয়ের চরম ঘৃণা।
গ. উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের অত্যাচার
ও নির্যাতনের এবং বাংলার সোনার ছেলেদের খুন করার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
➠ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তানিরা
পূর্ব পাকিস্তানিদের মায়ের ভাষা বাংলাকে চিরতরে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল।
কিন্তু বাংলার জনগণ তা মেনে নেয়নি। তাই তাদের ওপর চালানো হয় নির্মম
নির্যাতন। উদ্দীপকের ভাষাসৈনিক আসাদ বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দেশের
সোনার ছেলেদের খুন করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল।
➠ উদ্দীপকের এ বক্তব্যে ‘একুশের গান’ কবিতায় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের
অত্যাচার-নির্যাতনের স্বরূপ ফুটে উঠেছে। সুতরাং সার্বিক আলোচনার
প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতায় বাঙালির ওপর
পাকিস্তানিদের অত্যাচার ও নির্যাতন এবং বাংলার সোনার ছেলেদের খুন করার
দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
ঘ. ‘উদ্দীপকের ভাষাসৈনিক আসাদের বর্ণনায় ‘একুশের গান’ কবিতার মূলবক্তব্য
ফুটে উঠেছে।’
➠ ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত ভাষা আন্দোলনে বাঙালি ছাত্র-জনতার
আত্মোৎসর্গের স্মৃতিতর্পণ করা হয়েছে ‘একুশের গান’ কবিতায়। তাদের
স্মৃতিচারণ করার পাশাপাশি বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের অত্যাচার
নির্যাতনের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন আলোচ্য কবিতায়। কারণ পাকিস্তানিরা ছিল
নরপশু, বাঙালিদের যৌক্তিক দাবি প্রতিহত করার জন্য এদেশের নিষ্পাপ ছেলেদের
ওপর গুলিবর্ষণ করে ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত করেছিল।
➠ উদ্দীপকের ভাষাসৈনিক আসাদ বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতির
ওপর অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছিল। দেশের সোনার ছেলেদের হত্যা করে
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। পাকিস্তানি নরপশুদের
বুলেটের গুলিতে সেদিন ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে। ‘একুশের গান’
কবিতায় কবির বক্তব্যেও সেই একই কথা উঠে এসেছে। কবি ভাষা আন্দোলনে
বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের জুলুমের চিত্রই আলোচ্য কবিতাটিতে উপস্থাপন
করেছেন।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় ভাষা সৈনিকদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের নির্মমতা
বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং সার্বিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,
প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি যথার্থ।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০:
নিচের চিত্রটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. ‘বসুন্ধরা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘ওরা গুলি ছোড়ে’ এখানে ‘ওরা’ বলতে কবি কাদেরকে বুঝিয়েছেন?
গ. উপরের চিত্রটি কীসের প্রতীক? ‘একুশের গান’ কবিতার আলোকে বর্ণনা কর।
ঘ. “ ‘একুশের গান’ কবিতাটি যাঁদের স্মৃতিকে ধারণ করেছে উপরের চিত্রটি সেই
স্মৃতিরই ধারক”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
ক. ‘বসুন্ধরা’ শব্দের অর্থ পৃথিবী।
খ. ‘ওরা গুলি ছোড়ে’ এখানে ‘ওরা’ বলতে কবি পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে
বুঝিয়েছেন।
➠ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি ভাষার অধিকারকে নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছিল।
কিন্তু সচেতন বাঙালি তা মেনে নেয়নি। তাই তারা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৪৮
সাল থেকে আন্দোলন শুরু হলেও ১৯৫২ সালে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। ১৯৫২ সালের
২১শে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার দামাল ছেলেরা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে
মিছিল বের করে। পাকিস্তানি পুলিশ সে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ
করে। আলোচ্য চরণে সে কথাই বলা হয়েছে।
গ. উপরের চিত্রটি শহিদমিনারের। ভাষাশহিদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার
জন্যই এ শহিদমিনার নির্মাণ করা হয়।
➠ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বপ্রথম বাঙালি জনগণ আন্দোলন শুরু করে
১৯৪৮ সালে। এরপর ধাপে ধাপে আন্দোলন বেগবান হয়েছে। ১৯৫২ সালের একুশে
ফেব্রুয়ারিতে সেই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। ঐ দিন এদেশের দামাল
ছেলেরা বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মিছিল বের করে। কিন্তু
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেই মিছিলে গুলিবর্ষণ করে এদেশের অসংখ্য
ছাত্রজনতাকে শহিদ করে। সেই চিত্রই ‘একুশের গান’ কবিতায় উঠে এসেছে।
ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহিদ মিনার ভাষাশহিদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার
জন্যই নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালি জাতি ফুল দিয়ে
শ্রদ্ধা নিবেদন করে এ শহিদ মিনারে। শহিদ মিনারে ফুল দেওয়ার কারণ
ভাষাশহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা। তাই বলা যায়, উপরের চিত্রটি ভাষা
আন্দোলনের প্রতীক।
ঘ. ‘একুশের গান’ কবিতাটি যাঁদের স্মৃতিকে ধারণ করেছে উপরের চিত্রটি সে
স্মৃতিরই ধারক।
➠ শহিদ মিনার ভাষা শহিদদের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধার প্রকাশ। যাদের
কারণে মায়ের ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রয়েছে, শহিদ মিনার তাদেরই স্মৃতিকে
ধারণ করে সগর্বে দণ্ডায়মান।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শহিদদের কথা বর্ণনা
করা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কী নির্মমভাবে গুলি করে বাংলার দামাল
ছেলেদের শহিদ করেছিল সে ঘটনাই বর্ণিত হয়েছে আলোচ্য কবিতায়। আর উপরের
চিত্রের শহিদ মিনার তাঁদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য নির্মিত
হয়েছে।
➠ ‘একুশের গান’ কবিতায় তাঁদের স্মৃতিকেই রোমন্থন করা হয়েছে আর এই
স্মৃতিকে ধারণ করছে শহিদ মিনার। সুতরাং উদ্দীপকের মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা
যায়।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১:
নিচের চিত্রটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
যাঁদের হারালাম তাঁরা আমাদের বিস্তৃত করে দিয়ে গেল
দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত,
কণা কণা করে ছড়িয়ে দিয়ে গেল দেশের প্রাণের দীপ্তির ভেতর
মৃত্যুর অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে,
আবুল বরকত, সালাম, রফিক উদ্দিন, জব্বার
কী আশ্চর্য কি বিষণ্ন নাম, একসার জ্বলন্ত নাম।
ক. ‘অলকনন্দা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. একুশে ফেব্রুয়ারি কেন ভোলার নয়?
গ. ‘একুশের গান’ কবিতায় উদ্দীপকের বক্তব্য কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে?
ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে যাঁদের নাম করা হয়েছে ‘একুশের গান’ কবিতাটি তাদের নিয়েই রচিত
হয়েছে- মূল্যায়ন কর।
‘একুশের গান’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২:
নিচের চিত্রটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. একুশে ফেব্রুয়ারি কার অশ্রুতে গড়া?
খ. ‘আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি।’এ চরণে কবি কী প্রকাশ
করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ছবিতে ‘একুশের গান’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? বর্ণনা
কর।
ঘ. উপরের ছবিতে প্রকাশিত ভাবই ‘একুশের গান’ কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা
জুগিয়েছে-বিশ্লেষণ কর।
তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।