পরিচ্ছেদ ২১: ক্রিয়া
|
| ক্রিয়া |
ক্রিয়া
বাক্যে উদ্দেশ্য বা কর্তা কী করে বা কর্তার কী ঘটে বা হয়, তা নির্দেশ করা হয় যে পদ দিয়ে তাকে ক্রিয়া
বলে। যেমন:
রাজীব খেলছে।
বৃষ্টি হতে পারে।
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন:
পড়্ + ই = পড়ি,
পড়্ + এ = পড়ে,
পড়্ + ছে = পড়ছে,
পড়্ + বে = পড়বে।
পক্ষ (পুরুষ) এবং কাল ভেদে ক্রিয়ার রূপভেদ হয়। যেমন:
| পক্ষভেদ : | কালভেদ : |
|---|---|
| আমি পড়ি। | আমি পড়ি। |
| আমরা পড়ি। | আমি পড়ছি। |
| তুমি পড়ো। | আমি পড়েছি। |
| তোমরা পড়ো। | আমি পড়েছিলাম। |
| সে পড়ে। | আমি পড়ছিলাম। |
| তারা পড়ে। | আমি পড়ব। |
ক্রিয়ার প্রকারভেদ
ভাবপ্রকাশের দিক দিয়ে, বাক্যে কর্মের উপস্থিতির ভিত্তিতে এবং গঠন বিবেচনায় ক্রিয়াকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়।
ক. ভাবপ্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়া দুই প্রকার:
১. সমাপিকা ক্রিয়া:
যে ক্রিয়া দিয়ে ভাব সম্পূর্ণ হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।
যেমন:
ভালো করে পড়াশোনা করবে।
২. অসমাপিকা ক্রিয়া:
যে ক্রিয়া ভাব সম্পূর্ণ করতে পারে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
যেমন:
ভালো করে পড়াশোনা করলে ভালো ফল হবে।
অসমাপিকা ক্রিয়া তিন ধরনের:
১. ভূত অসমাপিকা, ২. ভাবী অসমাপিকা এবং ৩. শর্ত অসমাপিকা।
যথা:
ভূত অসমাপিকা: সে গান করে আনন্দ পায়।
ভাবী অসমাপিকা: সে গান শিখতে রাজশাহী যায়।
শর্ত অসমাপিকা: গান করলে তার মন ভালো হয়।
খ. বাক্যের মধ্যে কর্মের উপস্থিতির ভিত্তিতে ক্রিয়া তিন প্রকার:
১. অকর্মক ক্রিয়া:
বাক্যে ক্রিয়ার কোনো কর্ম না থাকলে সেই ক্রিয়াকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।
যেমন:
সে ঘুমায়।
এই বাক্যে কোনো কর্ম নেই।
২. সকর্মক ক্রিয়া:
বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার কর্ম থাকলে সেই ক্রিয়াকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।
যেমন:
সে বই পড়ছে।
এই বাক্যে ‘পড়ছে’ হলো সকর্মক ক্রিয়া। ‘বই’ হলো ‘পড়ছে’ ক্রিয়ার কর্ম।
৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া:
বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকলে সেই ক্রিয়াকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।
যেমন:
শিক্ষক ছাত্রকে বই দিলেন।
এই বাক্যে ‘দিলেন’ একটি দ্বিকর্মক ক্রিয়া। ‘কী দিলেন’ প্রশ্নের উত্তর দেয় মুখ্য কর্ম (‘বই’), আর ‘কাকে দিলেন’ প্রশ্নের উত্তর দেয় গৌণ কর্ম (‘ছাত্রকে’)।
গ. গঠন বিবেচনায় ক্রিয়া পাঁচ রকম:
১. সরল ক্রিয়া:
একটিমাত্র পদ দিয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয় এবং কর্তা এককভাবে ক্রিয়াটি সম্পন্ন করে, তাকে সরল ক্রিয়া বলে। যেমন:
সে লিখছে।
ছেলেরা মাঠে খেলছে।
এখানে লিখছে ও খেলছে এগুলো সরল ক্রিয়া।
২. প্রযোজক ক্রিয়া:
কর্তা অন্যকে দিয়ে কাজ করালে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। যেমন:
তিনি আমাকে অঙ্ক করাচ্ছেন।
রাখাল গরুকে ঘাস খাওয়ায়।
এখানে ‘করাচ্ছেন’ ও ‘খাওয়ায়’ প্রযোজক ক্রিয়া।
৩. নামক্রিয়া:
বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক শব্দের শেষে-আবা-আনো প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে নামক্রিয়া বলে। যেমন:
বিশেষ্য চমক শব্দের সঙ্গে-আনো যুক্ত হয়ে হয় চমকানো:
আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়।
বিশেষণ কম শব্দের সঙ্গে আ যুক্ত হয়ে হয় কমা:
বাজারে সবজির দাম কমছে না।
ধ্বন্যাত্মক ছটফট শব্দের সঙ্গে-আনো যুক্ত হয়ে হয় ছটফটানো:
জবাই করা মুরগি উঠানে ছটফটায়।
৪. সংযোগ ক্রিয়া:
বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাতাক শব্দের পরে করা, কাটা, হওয়া, দেওয়া, ধরা, পাওয়া, খাওয়া, মারা প্রভৃতি ক্রিয়া যুক্ত হয়ে সংযোগ ক্রিয়া গঠিত হয়।
| করা ক্রিয়া যোগে | : গান করা, গরম করা, ঠনঠন করা, ব্যাট করা; |
| কাটা ক্রিয়া যোগে | : সাঁতার কাটা, বিপদ কাটা; |
| হওয়া ক্রিয়া যোগে | : উদয় হওয়া, বড়ো হওয়া, রাজি হওয়া; |
| দেওয়া ক্রিয়া যোগে | : কথা দেওয়া, মন দেওয়া, দোষ দেওয়া; |
| ধরা ক্রিয়া যোগে | : ভাঙন ধরা, মরচে ধরা, ক্যাচ ধরা; |
| পাওয়া ক্রিয়া যোগে | : লজ্জা পাওয়া, কষ্ট পাওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া; |
| খাওয়া ক্রিয়া যোগে | : আছাড় খাওয়া, মার খাওয়া, ডিগবাজি খাওয়া; |
| মারা ক্রিয়া যোগে | : উঁকি মারা, পকেট মারা। |
৫. যৌগিক ক্রিয়া:
অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যখন একটি ক্রিয়া গঠন করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন:
| মরে যাওয়া | হেসে ওঠা | সরে দাঁড়ানো | বলে ফেলা |
| কমে আসা | উঠে পড়া | বেঁধে দেওয়া | করে তোলা |
| এগিয়ে চলা | পেয়ে বসা | বুঝে নেওয়া | চেপে রাখা |
| বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
|---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
| তথ্যসূত্র : |
|---|
|
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫। ২. প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ: বাংলা একাডেমি, প্রথম খণ্ড, ঢাকা, ২০১২। ৩. প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১৬। ৪. ভাষা শিক্ষা: দি অ্যাটলাস পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, অক্টোবর ২০২১-২২। ৫. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, এপ্রিল, ২০১৮। ৬.ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৮তম, ২০১৫। |
