আমাদের নতুন গৌরবগাথা
![]() |
আমাদের নতুন গৌরবগাথা |
আমাদের নতুন গৌরবগাথা
আসছে ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হবো-বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে ছড়ানো অগুনতি গ্রাফিতি। কিন্তু এ কোনো ফাগুনের দিন ছিল না, ছিল না রৌদ্রদহনের কোনো কাল। ছিল বাংলার নিজস্ব ঋতু-বর্ষা। অবিরাম ঝরছিল, মাটি-প্রকৃতি সব শীতল করছিল। কিন্তু আঠারো কোটি মানুষের মনে জ্বলতে থাকা আগুন থামানোর সাধ্য তার ছিল না।
সেদিন ৫ই আগস্ট ২০২৪-৩৬শে জুলাই। বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইয়ে থেমে গেছে। এদেশের আন্দোলন-সংগ্রাম সংঘটনের চিরাচরিত কোনো সময় এটা নয়। তবু সমগ্র দেশ যেন এক অসহনীয় উৎকণ্ঠায় স্তব্ধ হয়ে আছে। শুধু দেশ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে-আকাঙ্ক্ষা আর উদ্বেগ নিয়ে। কী ঘটতে যাচ্ছে! এক চরম অনিশ্চয়তায় মানুষ এখানে-ওখানে বোঝার চেষ্টা করছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর টেলিভিশনে অস্থির সময় পার করছে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে। সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে। ঘেরাও করবে গণভবন। মূলোৎপাটন করবে শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ফ্যাসিবাদী এক শাসককে। নিপীড়ক সরকারও প্রস্তুত। তার আছে দলীয় বাহিনী। আছে সরকারি নানা বাহিনীকে অন্যায্যভাবে ব্যবহারের নিত্যদিনের অভ্যাস। কাজেই বড়ো ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সবাই একদিকে যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি অন্যদিকে আন্দোলন সফল হবে, মানুষ জীবনের মায়া ছেড়ে নেমে আসবে রাস্তায়-এমন এক আশাবাদেও তারা দুলছে।
অবশেষে মুহূর্তগুলো এসে হাজির হলো। কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার উত্তরার পথে মানুষের দেখা মিলল। যাত্রাবাড়ির দিকে মানুষ জড়ো হতে থাকল ধীরে ধীরে। সাভারে নামল মানুষের ঢল। সময় গড়ালে দেখা গেল, যতদূর চোখ যায়, কেবল মানুষ আর মানুষ। এগিয়ে আসছে শহরের কেন্দ্রের দিকে। কিছু প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিল সরকারি দলের দুর্বৃত্তবাহিনী। তাদের পাশে ছিল রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর বিপথগামী ক্ষুদ্র একটা অংশ। কিন্তু সবাই হাল ছেড়ে দেয় শীঘ্রই। দৃঢ়চেতা, স্থিরপ্রতিজ্ঞ আর মরতে-প্রস্তুত মানুষের সামনে কোনো প্রতিরোধই টেকে না। জনতা গণভবনে পৌঁছে যায় দুপুর নাগাদ। পতন অত্যাসন্ন টের পেয়ে স্বৈরাচারী সরকার-প্রধান পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে। অভাবনীয় এক গণঅভ্যুত্থান দেখে সারা দুনিয়ার মানুষ।
কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব হলো? আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল একটা ছোট্ট দাবি নিয়ে। সরকারি বেশিরভাগ চাকরি বরাদ্দ ছিল নানা গোষ্ঠীর জন্য। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পোষ্য কোটার ব্যাপক অপব্যবহার চলছিল। ফলে দেশের বৃহৎ তরুণসমাজ সহজে সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছিল না। তাই কোটাব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের দাবিতে তারা আন্দোলন করছিল দীর্ঘদিন ধরে। ২০১৮ সালে এ আন্দোলনে বড়ো সাফল্য অর্জিত হয়। সরকার কোটাব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অথচ আন্দোলনকারীরা এটাকে যৌক্তিকভাবে কমাতে বলেছিল। কারণ দেশে পশ্চাৎপদ বিভিন্ন গোষ্ঠী আছে, প্রতিবন্ধী মানুষ আছে-যাদের জন্য কিছু বাড়তি সুবিধা রাখতে হয়। কিন্তু গণবিরোধী সরকার আন্দোলনকারীদের কোনো যৌক্তিক দাবি না শুনে সম্পূর্ণ কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে দিয়েছিল।
এরপর ২০২৪ সালের শুরুতে প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করে সরকার আবার তার স্বমূর্তিতে ফিরে আসে। কৌশলে পুরোনো কোটা আবার চালু করে। তখন শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করে। এবার তারা আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাম দিয়ে। এ নামের মধ্যেই আন্দোলনের বৃহত্তর লক্ষ্যের দিশা ছিল। কেবল চাকরি নয়, দেশে বিদ্যমান হাজারো বৈষম্য নিরসনের একটা আকাঙ্ক্ষা এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছিল। প্রথম দিকে আন্দোলন সীমিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে। ক্রমশ আন্দোলনে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিতে থাকে। জনবিচ্ছিন্ন সরকার আন্দোলনকারীদের মনোভাব বুঝতে পারেনি, বুঝতে চায়ও নি। তারা নিজেদের ছাত্রসংগঠনকে দিয়ে বর্বর কৌশলে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়। আন্দোলন ধীরে ধীরে দেশবাসীর হৃদয় স্পর্শ করে।
জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের সীমানা ছাড়িয়ে গণআন্দোলনে রূপ নিতে শুরু করে। তবে শিক্ষার্থীরাই শেষ পর্যন্ত এর নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ছাত্রীদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ছিল এ আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ১৪ই জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে প্রায় সব ছাত্রী মিছিল করতে করতে বেরিয়ে এলে আন্দোলনের এক অভূতপূর্ব সর্বজনীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই রাতে এবং পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নিপীড়ন করেছে, বিশেষত নারী-শিক্ষার্থীদের-এই বর্বরতা ছিল আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দিক-নির্ণায়ক ঘটনা। এ প্রেক্ষাপটেই ১৬ই জুলাই আন্দোলন তার সবচেয়ে কার্যকর ও পরিচিত ছবিটি পেয়ে যায়। এটা হলো রংপুরে আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলির সামনে এগিয়ে যাওয়া।
এরপর সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ করে দেওয়ার পরে আন্দোলন-কর্মসূচি গতি হারাতে পারত, কিন্তু বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তখন ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসে। অসাধারণ জমায়েত, আগ্রাসী মনোভাব এবং অবিশ্বাস্য প্রাণদানের মধ্য দিয়ে তারা আন্দোলনকে অধিকতর বেগবান করে তোলে। সারা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ প্রায় সমগ্র জনগোষ্ঠী আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে ওঠে। আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
বস্তুত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে যুক্ত হতে সমাজের অপরাপর মানুষের কোনো অসুবিধা হয়নি। কারণ দীর্ঘ দুঃশাসনের ফলে সমাজে সে অবস্থা আগে থেকেই বিরাজ করছিল। সরকার নির্বাচন নিয়ে একের পর এক তামাশা করেছে। নাগরিকের জীবনযাপন ও বিশ্বাস নিয়ে প্রতিনিয়ত অপমানজনক কথা বলেছে। সামান্য দাবি আর মতপ্রকাশের কারণে তাদেরকে নির্বিচারে নির্যাতন আর গুম-খুন করেছে। চরম অপমান আর হতমানে বিপর্যন্ত মানুষ নজিরবিহীন লুটপাট আর অর্থপাচারের সংবাদের মধ্যে দেখছিল হু হু করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। বাজারের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনই সকল ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
বছরের পর বছর মানুষ ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট হতে দেখেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে সরকারের আজ্ঞাবহ দাস হিসেবে কাজ করতে দেখেছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ দুঃশাসনের অন্ধকারের নিচে বাংলাদেশের মানুষ নাগরিক হিসেবে ভয়াবহ অসম্মান এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।
এই দানবীয় শাসন চালানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের গল্প ছিল সরকারের প্রধান অবলম্বন। কিন্তু লোকে দেখল, হাজার হাজার সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে, কিংবা জাল সনদ সংগ্রহ করে চাকরির সুবিধা নিয়েছে অনেকে। দেশের গণমাধ্যমে এ ধরনের সংবাদ অনবরত প্রকাশ হলেও সরকার তার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না। সকল অনিয়ম আর অবৈধতাকেই সে ঢেকে দিতে চাইছে অবকাঠামোগত 'উন্নয়নের গল্প' দিয়ে। কিন্তু মানুষ জানতে পারছিল, এসব অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয় পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় অসম্ভব রকম বেশি।
বছরের পর বছর ধরে একের পর এক দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ হতে থাকে। হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিও যেন এক প্রাত্যহিক চিত্র হয়ে গরিব আর অসহায় মানুষকে উপহাস করতে থাকে। পরীক্ষায় পাশ-ফেলের ব্যবধান গৌণ হয়ে যায়, প্রশ্ন-ফাঁস হয়ে ওঠে নিত্যচিত্র। এমনকি প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকুরির পরীক্ষা এবং নিয়োগেও বছরের পর বছর অনিয়ম হয়েছে বলে জানা যায়। বিভিন্ন দেশে টাকা পাচারের কাহিনি প্রকাশ হতে থাকে। পুরো দেশ এক ধারাবাহিক প্রতারণার মধ্যে নিমজ্জিত হয়। অবৈধভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র দখলে রাখা একটি পরিবার ও তার অনুগত ক্ষুদ্র এক গোষ্ঠীর ঔদ্ধত্য, দুর্নীতি আর তামাশার মধ্যে পুরো জনগোষ্ঠী ভয়ানক অসম্মানবোধ আর অনিশ্চয়তার শিকার হতে থাকে। তাই আন্দোলনের গতি ত্বরান্বিত হলে প্রথম সুযোগেই সারা দেশের মানুষ এর সাথে ব্যাপক সক্রিয়তায় অংশগ্রহণ করে। অবশেষে ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত ক্ষণে ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
গণঅভ্যুত্থানের শুরু থেকেই মানুষ শুধুমাত্র স্বৈরাচারী সরকারের পতনকে চরম সাফল্য হিসেবে ভাবেনি। তারা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছে-জালিমের নয়, মজলুমের বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চেয়েছে; গণতান্ত্রিক আর জনবান্ধব রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছে, যা স্বাধীনতার পাঁচ দশক অতিবাহিত হলেও আমরা করতে পারিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান অভূতপূর্ব এক অভ্যুত্থান, যার নজির পৃথিবীতে নেই। এই অভ্যুত্থান আমাদের জন্য এক অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এটা কোনো দলের নেতৃত্বে হয়নি। কয়েকটি দলের জোটের মাধ্যমেও সংঘটিত হয়নি। মূলত শিক্ষার্থীদের ডাকে অংশ নিয়েছেন সবাই। সেখানে প্রধান-অপ্রধান প্রায় সকল বিরোধীদলীয় মানুষজন ছিলেন। ধনী-গরিব ও মধ্যবিত্তরা ছিলেন। শহর ও গ্রামের মানুষ ছিলেন। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষার্থী। সবাই নিজেদের অবস্থান ভুলে রাস্তায় একত্রে লড়াই করেছিল একটা উদ্দেশ্য সামনে রেখে। এভাবে আন্দোলনের সময় এমন এক ভাষা তৈরি হয়েছিল, যার মাধ্যমে সবাই সবাইকে বুঝতে পারছিল। সে ভাষার মূল কথা, পারস্পরিক ভিন্নমত নিয়েও দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়। অর্ধশত বছর উত্তীর্ণ বাংলাদেশে এ এক নতুন ভাষা। সেই ভাষা অনুযায়ী আজ আমাদের সকলকে নিয়ে সবার জন্য জনকল্যাণমূলক এক দেশ গড়তে কাজ করতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে অভ্যুত্থানে বিজয় একটা সুযোগ-সমস্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ, নতুনভাবে দেশ গড়ার সুযোগ। অতীতে এমন সুযোগ এদেশে আরও কয়েকবার এসেছে, কিন্তু আমরা তাকে ব্যবহার করতে পারিনি, ধরে রাখতে পারিনি। এবারের সুযোগকে তাই আমাদের রক্ষা করতে হবে। দেশে নানা মত ও বৈশিষ্ট্যের মানুষ আছে, নানা জাতি ও ধর্মের মানুষ আছে। সবাই যদি যার যার অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করে এবং সতর্কতার সাথে দেশ ও দশের দিকে নজর রাখে, তাহলেই কেবল এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, হাজারো শহিদের আত্মদানে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে। সেই প্রত্যয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ভিন্নমতের প্রতি, ভিন্ন বিশ্বাসের প্রতি, ভিন্ন রীতি ও সংস্কৃতির প্রতি সহিষ্ণুতা দেখানোই গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষা। আর সেই শিক্ষা গ্রহণ করলেই আমাদের নতুন বিজয় সত্যিকারের গৌরবগাথা হয়ে উঠবে।
উৎস নির্দেশ : |
---|
-- |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ গ্রাফিতি- দেয়ালে আঁকা বা কথা, যা সময়ের চিত্র তুলে ধরে। ➠ চিরাচরিত- অতি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে এমন। ➠ উৎকণ্ঠা- উদ্বেগ: আশঙ্কা: ব্যাকুলতা। ➠ গণভবন- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। ➠ মূলোৎপাটন- মূলোচ্ছেদ; সমূলে বিনাশ; শিকড় সমেত তুলে ফেলা। ➠ ফ্যাসিবাদ- -ইতালির স্বৈরশাসক মুসোলিনি প্রবর্তিত স্বৈর-শাসনপদ্ধতি; সর্বপ্রকার বিরোধিতার কণ্ঠ রুদ্ধ হয় এমন শাসনপদ্ধতি। ➠ কারফিউ- সান্ধ্যআইন: সন্ধ্যার সময় বা সন্ধ্যার পরে লোক চলাচলের নিয়ম-কানুন। [ইংরেজি curfew] ➠ গণঅভ্যুত্থান- গণজাগরণ। ➠ গণ আন্দোলন- যে আন্দোলনে জনসাধারণ স্বোচ্ছায় অংশগ্রহণ করে; গণবিক্ষোভ। ➠ প্রহসন- হাস্যরসপ্রধান নাটক; ব্যঙ্গ; বিদ্রূপ। ➠ অভূতপূর্- যা পূর্বে হয়নি বা ঘটেনি এমন। ➠ সর্বজনীন- সর্বসাধারণের জন্য অনুষ্ঠিত; বারোয়ারী; সকলের জন্য মঙ্গলকর বা কল্যাণকর। ➠ সহিষ্ণু- সহনশীল: বরদান্তকারী; ধৈর্যধারণকারী; ধৈর্যশীল। |
কর্ম-অনুশীলন : |
---|
১। ১৯৬৯, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের তুলনা করে একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ লেখ। (শ্রেণি-শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে) ২। মাগো, ভাবনা কেন আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি। তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। এই রকম উদ্দীপনামূলক ৫টি গানের প্রথম ৪টি করে লাইন লিখে শ্রেণি-শিক্ষকের নিকট জমা দাও। (শ্রেণি-শিক্ষক বাড়ির কাজ হিসেবে এটি মূল্যায়ন করবেন) |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই গণঅভ্যুত্থান ১৯৬৯ বা ১৯৯০ থেকে পৃথক। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়নি। তবু ফ্যাসিবাদী সরকারের বিপক্ষের সকল রাজনৈতিক দল এতে অংশগ্রহণ করেছিল। এর দাবিনামার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রাজনৈতিক কোনো দাবিও অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ছাত্রসমাজ তাদের শিক্ষাজীবন শেষে ন্যায্যতার ভিত্তিতে কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা নিরসনের জন্য কোটাব্যবস্থার সংস্কার চেয়েছিল। অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের পর এই দাবি মেনে নেওয়া হলেও কৌশলে তা আবার ফিরিয়ে আনা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকার চরম দমননীতি এবং হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। এতে গণঅভ্যুত্থান ঘটে এবং সরকার-প্রধান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য আবারও একটা সুন্দর দেশ নির্মাণের সুযোগ এনে দিয়েছে। একে আমাদের রক্ষা করতে হবে। |
লেখক পরিচিতি : |
---|
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
সময়টা ২০২২ সালের এপ্রিল মাস। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কবলে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী দাম, জ্বালানি-ওষুধ ও বিদ্যুৎ সরবরাহে তীব্র ঘাটতি এবং সরকারী দলের দমন-পীড়ন নীতির কারণে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নেমে আসে রাজপথে। তাদের সাথে যোগ দেয় রাষ্ট্রীয় সেবা, স্বাস্থ্য, বন্দর, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও ডাক থেকে শুরু করে প্রায় এক হাজার ট্রেড ইউনিয়ন। তারা দেশের ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পরিবারকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে। কিন্তু সরকার সেনা মোতায়েন করে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে এবং সরকারপন্থিরা বিক্ষোভকারীদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী আহত হন। ফলে আন্দোলন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে জনগণের আন্দোলনের চাপে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ১৩ই জুলাই ভোরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপ, তারপর সিঙ্গাপুরে যান। ক. কোটা সংস্কার আন্দোলনে বড়ো সাফল্য কত সালে অর্জিত হয়? |
----------- |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |