যৌবনের গান- কাজী নজরুল ইসলাম

যৌবনের গান
যৌবনের গান

যৌবনের গান
কাজী নজরুল ইসলাম

আমার বলিতে দ্বিধা নাই যে, আমি আজ তাঁহাদেরই দলে, যাঁহারা কর্মী নন-ধ্যানী। যাঁহারা মানব জাতির কল্যাণ সাধন করেন সেবা দিয়া, কর্ম দিয়া, তাঁহারা মহৎ যদি না-ই হন, অন্তত ক্ষুদ্র নন। ইহারা থাকেন শক্তির পেছনে রুধির ধারার মতো গোপন, ফুলের মাঝে মাটির মমতা-রসের মতো অলক্ষ্যে

আমি কবি- বনের পাখির মতো স্বভাব আমার গান করার। কাহারও ভালো লাগিলেও গাই, ভালো না লাগিলেও গাহিয়া যাই। বায়স-ফিঙে যখন বেচারা গানের পাখিকে তাড়া করে, তীক্ষ্ণ চঞ্চু দ্বারা আঘাত করে, তখনও সে এক গাছ হইতে উড়িয়া আন গাছে গিয়া গান ধরে। তাহার হাসিতে গান, তাহার কান্নায় গান। সে গান করে আপন মনের আনন্দে- যদি তাহাতে কাহারও অলসতন্দ্রা, মোহনিন্দ্রা টুটিয়া যায়, তাহা একান্ত দৈব। যৌবনের সীমা পরিক্রমণ আজও আমার শেষ হয় নাই। কাজেই আমি যে গান গাই, তাহা যৌবনের গান। তারুণ্যের ভরা-ভাদরে যদি আমার গান জোয়ার আনিয়া থাকে, তাহা আমার অগোচরে; যে চাঁদ সাগরে জোয়ার জাগায়, সে হয়ত তাহার শক্তি সম্বন্ধে আজও না-ওয়াকিফ

আমি বক্তাও নহি। আমি কমবক্তার দলে। বক্তৃতায় যাঁহারা দিগ্বিজয়, বক্তিয়ার খিলজি, তাঁহাদের বাক্যের সৈন্য-সামন্ত অত দ্রুতবেগে কোথা হইতে কেমন করিয়া আসে বলিতে পারি না। তাহা দেখিয়া লক্ষ্মণ সেন অপেক্ষাও আমরা বেশি অভিভূত হইয়া পড়ি। তাঁহাদের বাণী আসে বৃষ্টিধারার মতো অবিরল ধারায়। আমাদের কবিদের বাণী বহে ক্ষীণ ভীরু ঝরনাধারার মতো। ছন্দের দুকুল প্রাণপণে আঁকড়িয়া ধরিয়া সে-সংগীত গুঞ্জন করিতে করিতে বহিয়া যায়। পদ্মা ভাগীরথীর মতো খরস্রোতা যাঁহাদের বাণী, আমি তাঁহাদের বহু পশ্চাতে।

আমার একমাত্র সম্বল- আপনাদের তরুণদের প্রতি আমার অপরিসীম ভালোবাসা, প্রাণের টান। তারুণ্যকে, যৌবনকে, আমি যেদিন হইতে গান গাহিতে শিখিয়াছি সেদিন হইতে বারে বারে সালাম করিয়াছি, সশ্রদ্ধ নমস্কার নিবেদন করিয়াছি, জবাকুসুমসঙ্কাশ তরুণ অরুণকে দেখিয়া প্রথম মানব যেমন করিয়া সশদ্ধ নমস্কার করিয়াছিলেন, আমার প্রথম জাগরণ-প্রভাতে তেমন সশ্রদ্ধ বিস্ময় লইয়া যৌবনকে অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়াছি, তাহার স্তবগান গাহিয়াছি। তরুণ অরুণের মতোই যে তারুণ্য তিমির-বিদারী, সে যে আলোর দেবতা। রঙের খেলা খেলিতে তাহার উদয়, রং ছড়াইতে ছড়াইতে তাহার অন্ত। যৌবন-সূর্য যথায় অস্তমিত, দুঃখের তিমির-কুন্তলা নিশীথিনীর সেই তো লীলাভূমি

আমি যৌবনের পূজারী কবি বলিয়াই যদি আমায় আপনারা আপনাদের মালার মধ্যমণি করিয়া থাকেন, তাহা হইলে আমার অভিযোগ করিবার কিছুই নাই। আপনাদের মহাদান আমি সানন্দে শির নত করিয়া গ্রহণ করিলাম। আপনাদের দলপতি হইয়া নয়, আপনাদের দলভুক্ত হইয়া, সহযাত্রী হইয়া। আমাদের দলে কেহ দলপতি নাই, আজ আমরা শত দিক হইতে শত শত তরুণ মিলিয়া তারুণ্যের শতদল ফুটাইয়া তুলিয়াছি। আমরা সকলে মিলিয়া এক সিদ্ধি, এক ধ্যানের মৃণাল ধরিয়া বিকশিত হইতে চাই।

বার্ধক্য তাহাই- যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে; বৃদ্ধ তাহারাই যাহারা মায়াচ্ছন্ন নব মানবের অভিনব জয় যাত্রার শুধু বোঝা নয়, বিঘ্ন; শতাব্দীর নব যাত্রীর চলার ছন্দ ছন্দ মিলাইয়া যাহারা কুচকাওয়াজ করিতে জানে না, পারে না; যাহারা জীব হইয়াও জড়; যাহারা অটল সংস্কারের পাষাণস্তূপ আঁকড়িয়া পড়িয়া আছে। বৃদ্ধ তাহারাই যাহারা নব অরুণোদয় দেখিয়া নিদ্রাভঙ্গের ভয়ে দ্বার রুদ্ধ করিয়া পড়িয়া থাকে। আলোক-পিয়াসী প্রাণচঞ্চল শিশুদের কল-কোলাহলে যাহারা বিরক্ত হইয়া অভিসম্পাত করিতে থকে, জীর্ণ পুঁথি চাপা পড়িয়া যাহাদের নাভিশ্বাস বহিতেছে, অতি জ্ঞানের অগ্নিমান্দ্য যাহারা আজ কঙ্কালসার- বৃদ্ধ তাহারাই। ইহাদের ধর্মই বার্ধক্য। বার্ধক্যকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি- যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন। তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহারই- যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নের মার্তণ্ডপ্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার ঔদার্য, অফুরন্ত যাহার প্রাণ, অটল যাহার সাধনা, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে। তারুণ্য দেখিয়াছি আরবের বেদুইনদের মাঝে, তারুণ্য দেখিয়াছি মহাসমরের সৈনিকের মুখে, কালাপাহাড়র অসিতে, কামাল-করিম-মুসোলিনি- সানইয়াৎ-লেনিনের শক্তিতে। যৌবন দেখিয়াছি তাহাদের মাঝে- যাহারা বৈমানিকরূপে অনন্ত আকাশের সীমা খুঁজিতে গিয়া প্রাণ হারায়, আবিষ্কারকরূপে নব-পৃথিবীর সন্ধানে গিয়া আর ফিরে না, গৌরীশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষদেশ অধিকার করিতে গিয়া যাহারা তুষার-ঢাকা পড়ে, অতল সমুদ্রের নীল মঞ্জুষার মণি আহরণ করিতে গিয়া সলিলসমাধি লাভ করে, মঙ্গলগ্রহে, চন্দ্রলোকে যাইবার পথ আবিষ্কার করিতে গিয়া নিরুদ্দেশ হইয়া যায়। পবন-গতিকে পশ্চাতে ফেলিয়া যাহারা উড়িয়া যাইতে চায়, নব নব গ্রহ-নক্ষত্রের সন্ধান করিতে করিতে যাহাদের নয়ন-মণি নিভিয়া যায়- যৌবন দেখিয়াছি সেই দুরন্তদের মাঝে। যৌবনের মাতৃরূপ দেখিয়াছি- শব বহন করিয়া যখন সে যায় শ্মশানঘাটে, গোরস্থানে, অনাহারে থাকিয়া যখন সে অন্ন পরিবেশন করে দুর্ভিক্ষ-বন্যা-পীড়িতদের মুখে, বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপার্শ্বে যখন সে রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া পরিচর্যা করে, যখন সে পথে পথে গান গাহিয়া ভিখারি সাজিয়া দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য ভিক্ষা করে, যখন দুর্বলের পাশে বল হইয়া দাঁড়ায়, হতাশের বুকে আশা জাগায়।

ইহাই যৌবন, এই ধর্ম যাহাদের তাহারাই তরুণ। তাহাদের দেশ নাই, জাতি নাই, অন্য ধর্ম নাই। দেশ-কাল- জাতি-ধর্মের সীমার ঊর্ধ্বে ইহাদের সেনানিবাস। আজ আমরা মুসলিম তরুণেরা যেন অকুণ্ঠিত চিত্তে মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারি- ধর্ম আমাদের ইসলাম, কিন্তু প্রাণের ধর্ম আমাদের তারুণ্য, যৌবন। আমরা সকল দেশের, সকল জাতির, সকল ধর্মের, সকল কালের। আমরা মুরিদ যৌবনের। এই জাতি-ধর্ম-কালকে অতিক্রম করিতে পারিয়াছে যাঁহাদের যৌবন, তাঁহারাই আজ মহামানব, মহাত্মা, মহাবীর। তাহাদিগকে সকল দেশের সকল ধর্মের সকল লোক সমান শ্রদ্ধা করে।

পথ-পার্শ্বের ধর্ম-অট্টালিকা আজ পড় পড় হইয়াছে, তাহাকে ভাঙিয়া ফেলিয়া দেওয়াই আমাদের ধর্ম, ঐ জীর্ণ অট্টালিকা চাপা পড়িয়া বহু মানবের মৃত্যুর কারণ হইতে পারে। যে-ঘর আমাদের আশ্রয় দান করিয়াছে, তাহা যদি সংস্কারাতীত হইয়া আমাদেরই মাথায় পড়িবার উপক্রম করে, তাহাকে ভাঙিয়া নূতন করিয়া গড়িবার দুঃসাহস আছে একা তরুণেরই। খোদার দেওয়া এই পৃথিবীর নিয়ামত হইতে যে নিজেকে বঞ্চিত রাখিল, সে যত মোনাজাতই করুক, খোদা তাহা কবুল করিবেন না। খোদা হাত দিয়াছেন বেহেশত ও বেহেশতি চিজ অর্জন করিয়া লইবার জন্য, ভিখারির মতো হাত তুলিয়া ভিক্ষা করিবার জন্য নয়। আমাদের পৃথিবী আমরা আমাদের মনের মতো করিয়া গড়িয়া লইব। ইহাই হউক তরুণের সাধনা

যৌবনের গান
যৌবনের গান
‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের উৎস নির্দেশ :
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজগঞ্জে মুসলিম যুব সমাজের অভিনন্দনের উত্তরে তাদের উদ্দেশ্যে কাজী নজরুল ইসলাম যে প্রাণোচ্ছল ভাষণ দিয়েছিলেন ‘যৌবনের গান’ রচনাটি তারই পরিমার্জিত লিখিত রূপ।

‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের শব্দার্থ ও টীকা :
➠ দ্বিধা- সংকোচ, সংশয়, কুণ্ঠা।
➠ ধ্যানী- ধ্যানকারী। গভীর চিন্তা করে এমন। কোনো বিষয়ে প্রগাঢ় ভাবনারত ব্যক্তি।
রুধির ধারা- রক্তপ্রবাহ।
➠ অলক্ষ্যে- দৃষ্টির অগোচরে।
➠ বায়স- কাক।
➠ ফিঙে- একপ্রকার কালো পাখি।
বেচারা গানের পাখিকে- কোকিলকে।
➠ চঞ্চু- ঠোঁট।
➠ অলসতন্দ্রা- আলস্য থেকে সৃষ্ট ঘুমের ভাব।
➠ মোহনিন্দ্রা- আসক্তি বা মোহরূপ নিদ্রা, অচেতনতা, জড়তা।
➠ দৈব- আকস্মিক।
➠ পরিক্রমণ- পরিভ্রমণ, প্রদক্ষিণ।
ভরা-ভাদরে- পরিপূর্ণ ভাদ্রে। পরিপূর্ণ অবস্থায়। ভাদ্র মাসে নদীনালা বর্ষার জলে যেমন কানায় কানায় ভরে ওঠে তেমনি।
➠ অগোচরে- অলক্ষে; দৃষ্টির বাইরে।
➠ না-ওয়াকিফ- অনভিজ্ঞ, অজ্ঞাত।
➠ কমবক্তা- অল্পভাষী, যিনি কম কথা বলেন।
বখতিয়ার খিলজি- মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি ছিলেন ইতিহাসখ্যাত আফগান সেনানায়ক। তিনি মাত্র সতেরো জন সৈন্য নিয়ে অতর্কিত আক্রমণে নদীয়া দখল করেন। রাজা লক্ষ্মণ সেন ভয়ে পলায়ন করলে বখতিয়ার খিলজি বাংলাদেশে প্রথম মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন (১২০৩/০৪)। এখানে কৌতুকভরে বক্তৃতা প্রদানকারীদেরকে ‘বখতিয়ার খিলজি’ বলা হয়েছে।
লক্ষ্মণ সেন- বাংলার সেন বংশের শেষ রাজা। বখতিয়ার খিলজি মাত্র সতেরো জন অশ্বারোহীসহ রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করলে তিনি পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এভাবে বাংলায় সেন বংশের পতন এবং মুসলিম শাসনের সূচনা হয়।
➠ অভিভূত- ভাবাবেগে বিহ্বল, ভাবাবিষ্ট।
➠ অবিরল ধারায়- অজস্র ধারা।
➠ ছন্দের দুকুল- ভাব ও ভাষা বোঝাতে ব্যবহৃত।
➠ খরস্রোতা- অত্যন্ত বেগবান প্রবাহ।
➠ সম্বল- অবলম্বন; উপায়।
➠ অপরিসীম- অসীম; অশেষ।
➠ তারুণ্য- তরুণ অবস্থা/বয়স।
➠ জবা- প্রধানত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জাত গুল্মজাতীয় মাঝারি আকৃতির উদ্ভিদ বা তার পাঁচটি পাপড়িযুক্ত উজ্জ্বল লাল গোলাপি হলুদ প্রভৃতি রঙের গন্ধহীন ফুল (আদিনিবাস: চীন); ওড়পুষ্প।
➠ কুসুম- ফুল; পুষ্প।
➠ সঙ্কাশ- সদৃশ; তুল্য।
জবাকুসুমসঙ্কাশ- জবাফুলের মতো।
➠ সশদ্ধ- ভক্তি ও শ্রদ্ধাপূরণ; শ্রদ্ধা সহকারে।
➠ নিবেদন- উৎসর্গ; বিনীত নিবেদন।
প্রথম জাগরণ-প্রভাতে- সচেতনতার সূচনালগ্নে।
➠ বিস্ময়- আশ্চর্য; চমৎকৃত ভাব বা অবস্থা।
➠ স্তবগান- প্রশংসা কীর্তন গান।
➠ অরুণ- সূর্য।
➠ অস্তমিত- অদৃশ্য হওয়া।
➠ তিমিরবিদারী- অন্ধকার বিদীর্ণ করে যা, সূর্য।
➠ আলোর দেবতা- সূর্য।
➠ উদয়- উন্নতি; প্রকাশ; আবির্ভাব।
➠ অন্ত- মৃত্যু; অবসান।
➠ অস্তমিত-অদৃশ্য হয়েছে এমন।
➠ তিমির- অন্ধকার।
➠ কুন্তলা- কেশবিশিষ্টা।
➠ তিমিরকুন্তলা- অন্ধকার যার চুল, রাত্রি।
➠ নিশীথিনী- গভীর রাত।
➠ লীলাভূমি- বিচরণস্থান, ক্রীড়াক্ষেত্র।
➠ পূজারী- উপাসক; পূজক।
➠ মধ্যমণি- প্রধান ব্যক্তি।
➠ শির- মাথা; উপরিভাগ।
➠ দলপতি- দলনেতা।
➠ শতদল- পদ্মফুল।
➠ সিদ্ধি- ঐশ্বর্য; দক্ষতা; সাফল্য।
➠ মৃণাল- সূক্ষ্ম আলযুক্ত পদ্মের নাল বা ডাঁটা। পদ্মের কন্দ।
➠ বিকশিত- প্রকাশি; প্রস্ফুটিত।
➠ আঁকড়িয়া- জড়িয়ে ধরে।
➠ মায়াচ্ছন্ন- ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে পড়ে থাকা।(মায়া+আচছন্ন)
➠ অভিনব- নব উদ্ভাসিত; নতুন; অপূর্ব।
➠ কুচকাওয়াজ- সৈনিকদের দলবদ্ধ ব্যায়াম ও রণকৌশলাদি অনুশীলন।
➠ জীর্ণ পুঁথি চাপা পড়িয়া- সংস্কার ও প্রথাবদ্ধতার চাপে পিষ্ট হয়ে।
➠ নাভিশ্বাস- মৃত্যুকালীন শ্বাসকষ্ট। মরণাপন্ন অবস্থা।
➠ অগ্নিমান্দ্য- খাদ্যদ্রব্য পাকস্থলীতে হজম না হওয়ার রোগ, অজীর্ণতা, ক্ষুধামন্দা।
➠ উর্দি- কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ পোশাক।
➠ জীর্ণাবরণ- জরাজীর্ণ আচ্ছাদন।
➠ মার্তণ্ডপ্রায়- সূর্যের মতো।
➠ কালাপাহাড়- ব্রাহ্মণ থেকে মুসলমানে ধর্মান্তরিত বিখ্যাত মুসলিম যোদ্ধা। সুলেমান ও দায়দ কররানির সেনাপতি, ওরফে রাজু। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর প্রচণ্ড হিন্দু বিদ্বেষী হন। ১৫৬৮ খ্রিষ্টাব্দে পুরী আক্রমণ করে বহু মন্দির ও দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করেন। ইতিহাসে তিনি বিকট, ভয়ংকর ও প্রলয়ংকর ধ্বংসের প্রতীক হয়ে আছেন।
কামাল- মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)। আধুনিক তুরস্কের জনক ও তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তাঁর পরিচালনা ও নেতৃত্বে তুরস্ক আসন্ন পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং সত্যিকার উন্নতির পথে অগ্রসর হয়। ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা সবক্ষেত্রেই তিনি আমূল ও বৈপ্লবিক সংস্কার সাধন করেন। আইন-কানুন সংস্কার, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন, নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা, পর্দা প্রথার উচ্ছেদ, স্বাধীন অর্থনৈতিক বিকাশ, নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি আধুনিক তুরস্কের ভিত্তি স্থাপন করেন। দেশবাসী কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে তাঁকে ‘আতাতুর্ক’ বা ‘তুরস্কের জনক’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
মুসোলিনী- সিনর বেনিতো মুসোলিনি (১৮৮৩-১৯৪৫) ইতালির একনায়ক এবং সেখানকার ফ্যাসিবাদী দলের নেতা ছিলেন। উগ্র জাত্যভিমান থেকে তিনি ইতালিকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী জাতিতে পরিণত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। সমগ্র জাতীয় জীবনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির অনুসারী মুসোলিনী ১৯৩৫ সালে আবিসিনিয়া আক্রমণ করেন। এই ঘটনার সূত্রে ফ্যাসিবাদী হিটলারের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। ১৯৪০ সালে জার্মানির মিত্র হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে ইতালি বৃটেন ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধে ইতালির পরাজয় হলে তিনি পদচ্যুত ও বন্দি হন। পরে মুক্তি পেলেও আততায়ীর হাতে নিহত হন।
সানইয়াত- সান-ইয়াত-সেন (১৮৬৭-১৯২৫) চীনের জননন্দিত বিপ্লবী রাজনীতিবিদ ও নব্য চীনের জন্মদাতা। উনিশ শতকের শেষ দিকে এবং বিশ শতকের গোড়ায় চীনের মাঞ্চু সম্রাটদের শাসন-শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিপ্লবী আন্দোলন হয়। সান-ইয়াত-সেন এগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯১২ সালের বিপ্লবে মাঞ্চু সাম্রাজ্যের পতন হলে তিনি নানকিং প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে নির্বাসনে যেতে হয়। পরে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি বিভক্ত চীনের দক্ষিণ চীন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হন। সাম্যবাদ ও বিপ্লবে সুগভীর আস্থা, চীনের জাতীয় কমূসূচি প্রণয়ন, মাঞ্চু রাজতন্ত্রের বিরোধিতা এবং সংস্কার নীতির জন্য চীনের ইতিহাসে তাঁর নাম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
➠ লেনিন- তাঁর নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সাফল্যে জারের রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আমৃত্যু তিনি ছিলেন সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভ্লাদিমির ইলিচ উইলিয়ানোফ (১৮৭০-১৯২৪) বিপ্লবী কাজে জড়িত থাকাকালে ‘লেনিন’ ছদ্মনাম নেন তিনি রুশ বিপ্লবের সংগঠক, পরিকল্পক ও নেতা। তাঁর রাষ্ট্রপ্রধান। ব্যাংক ও সম্পত্তি জাতীয়করণ, দরিদ্র জনগণের মধ্যে ভূমি বণ্টন, গণশিক্ষার প্রসার, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি রচনার মাধ্যমে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রূপকার হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ছিলেন প্রথম সফল মার্কসবাদী বিপ্লবী, মার্কসবাদী দর্শনের প্রথম কাতারের তাত্ত্বিক। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলি ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি ও সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর প্রগাঢ় জ্ঞান ও বিশ্লেষণ-শক্তির পরিচয়বহ হয়ে আছে।
নীল মঞ্জুষার মণি- সমুদ্রের এক রকম মূল্যবান রত্নপাথর।
যৌবনের মাতৃরূপ- যৌবনের কোমল সেবাপরায়ণ দিক।
➠ মুরিদ- শিষ্য।
➠ সংস্কারাতীত- সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব নয় এমন।
➠ নিয়ামত- ধন-সম্পদ; অনুগ্রহ।
➠ সাধনা- চেষ্টা; প্রয়াস।
যৌবনের গান
যৌবনের গান
‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের পাঠ-পরিচিতি :

১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজগঞ্জে মুসলিম যুব সমাজের অভিনন্দনের উত্তরে তাদের উদ্দেশ্যে কাজী নজরুল ইসলাম যে প্রাণোচ্ছল ভাষণ দিয়েছিলেন ‘যৌবনের গান’ রচনাটি তারই পরিমার্জিত লিখিত রূপ।

এই অভিভাষণে কবি দুরন্ত-দুর্বার যৌবনের প্রশন্তি উচ্চারণ করেছেন। কারণ যৌবন হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার। যৌবন মানুষের জীবনকে করে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। দুর্বার উদ্দীপনা, ক্লান্তিহীন উদ্যম, অপরিসীম ঔদার্য, অফুরন্ত প্রাণচঞ্চলতা ও অটল সাধনার প্রতীক যৌবন মৃত্যুকে তুচ্ছ করে সংস্কারের বেড়াজাল ছিন্নভিন্ন করে সকল বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যায় সমাজ-প্রগতি ও নতুন স্বপ্নময় মুক্তজীবনের পথে। আর বিপন্ন মানবতার পাশে সে দাঁড়ায় সেবাব্রতী ভূমিকা নিয়ে। পক্ষান্তরে রক্ষণশীলতা, জড়তা, সংস্কারাচ্ছন্নতা ও পশ্চাৎপদতাময় বার্ধক্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় জীবনের প্রাণবন্ত অগ্রগতির পথে। তাই স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে যে যৌবন দেশ-জাতি-কাল ও ধর্মের বাঁধন মানে না সেই যৌবন-শক্তিকে কবি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন সমন্ত জীর্ণ পুরানো সংস্কারকে ধ্বংস করে মনের মতো নতুন জগৎ রচনার সাধনায় অগ্রসর হতে।


‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের লেখক পরিচিতি :
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মে, ১৩০৬ সনের ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় তিনি লেটো গানের দলে যোগ দেন। পরে বর্ধমান ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯১৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি যান। সেখানেই তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা ঘটে। তাঁর লেখায় তিনি সামাজিক অবিচার ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এজন্য তাঁকে 'বিদ্রোহী কবি' বলা হয়। বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁর আবির্ভাব এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে কবি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অসুস্থ কবিকে ঢাকায় আনা হয় এবং পরে তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। তাঁকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। তাঁর রচিত কাব্যগুলোর মধ্যে অগ্নি-বীণা, বিষের বাঁশি, ছায়ানট, প্রলয়-শিখা, চক্রবাক, সিন্ধু-হিন্দোল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা, মৃত্যুক্ষুধা ইত্যাদি তাঁর রচিত গল্প ও উপন্যাস। যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্র-মঙ্গল ও রাজবন্দীর জবানবন্দী তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ।
১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট কবি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে পরিপূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন- ১: কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলার কারণ কী?
উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলার কারণ তিনি সামাজিক অবিচার ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলে।
প্রশ্ন- ২: কত খ্রিষ্টাব্দে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়?
উত্তর: ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।
প্রশ্ন- ৩: কাকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়।
প্রশ্ন- ৪: প্রবন্ধকার কাদের মাঝে যৌবনের মাতৃরূপ দেখেছেন?
উত্তর: প্রবন্ধকার তরুণদের মাঝে যৌবনের মাতরূপ দেখেছেন।
প্রশ্ন- ৫: ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে উল্লিখিত শক্তির পেছনে রুধির ধারার মতো গোপনে থাকেন কারা?
উত্তর : ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে উল্লিখিত শক্তির পেছনে রুধির ধারার মতো তাঁরা গোপনে থাকেন যাঁরা কর্মী নন ধ্যানী।
প্রশ্ন- ৬: ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের লেখকের মতে দেশ, জাতি ও ধর্ম নেই কাদের?
উত্তর: ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের লেখকের মতে দেশ, জাতি ও ধর্ম নেই তরুণদের।
প্রশ্ন- ৭: কার নতুন করে গড়ার দুঃসাহস আছে?
উত্তর: তরুণের নতুন করে গড়ার দুঃসাহস আছে।
প্রশ্ন- ৮: ‘অন্ধকার যার চুল’ তাকে এক কথায় কী বলে?
উত্তর: ‘অন্ধকার যার চুল’ তাকে এক কথায় তিমিরকুন্তলা বলে।
প্রশ্ন- ৯: ‘তিমিরকুন্তলা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘তিমিরকুন্তলা’ শব্দের অর্থ রাত্রি।
প্রশ্ন- ১০: কত খ্রিষ্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জে মুসলিম যুবসমাজের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন?
উত্তর: ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জে মুসলিম যুবসমাজের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন- ১১:‘অলক্ষ্যে’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: ‘অলক্ষ্যে’ শব্দটির দৃষ্টির অগোচরে।
প্রশ্ন- ১২: ‘না-ওয়াকিফ’ অর্থ কী?
উত্তর: ‘না-ওয়াকিফ’ অর্থ অনভিজ্ঞ।
প্রশ্ন- ১৩: ‘অগ্নিমান্দ্য’ কী?
উত্তর: ‘অগ্নিমান্দ্য’ হলো পাকস্থলীতে খাদ্যদ্রব্য হজম না হওয়ার রোগ।
প্রশ্ন- ১৪: দৈব অর্থ কী?
উত্তর: দৈব অর্থ আকস্মিক।
প্রশ্ন-১৫: ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সংগঠক কে?
উত্তর: ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সংগঠক লেনিন।
প্রশ্ন-১৬: যৌবনের পূজারি কে?
উত্তর: যৌবনের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
প্রশ্ন-১৭: কত খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়?
উত্তর: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়।
প্রশ্ন-১৮: কবির স্বভাব কী?
উত্তর: কবির স্বভাব বনের পাখির মতো গান করা।
প্রশ্ন-১৯: কবিদের বাণী কীভাবে বহে?
উত্তর: কবিদের বাণী বহে ক্ষীণ ভীরু ঝরনাধারার মতো।
প্রশ্ন-২০: কাদের প্রতি লেখক অপরিসীম টান অনুভব করেন?
উত্তর: তরুণদের প্রতি লেখক অপরিসীম টান অনুভব করেন।
প্রশ্ন-২১: অতিজ্ঞানের অগ্নিমান্দ্যে কারা কঙ্কালসার?
উত্তর: অতিজ্ঞানের অগ্নিমান্দ্যে বৃদ্ধরা কঙ্কালসার।
প্রশ্ন- ২২: কালাপাহাড় কে?
উত্তর: কালাপাহাড় ব্রাহ্মণ থেকে মুসলমানে ধর্মান্তরিত বিখ্যাত মুসলিম যোদ্ধা।
প্রশ্ন- ২৩: কবির মতে খোদা আমাদের হাত দিয়েছেন কেন?
উত্তর: কবির মতে খোদা আমাদের হাত দিয়েছেন বেহেশত ও বেহেশতি চিজ অর্জন করার জন্য।
প্রশ্ন- ২৪: ‘যৌবনের গান’ রচনাটি কোনটির পরিমার্জিত রূপ?
উত্তর: সিরাজগঞ্জে যুবসমাজের উদ্দেশ্যে দেওয়া কাজী নজরুল ইসলামের অভিভাষণের পরিমার্জিত রূপ।
প্রশ্ন- ২৫: কারা ধ্যানের মৃণাল ধরে বিকশিত হতে চায়?
উত্তর: তরুণরা ধ্যানের মৃণাল ধরে বিকশিত হতে চায়।
প্রশ্ন- ২৬: ‘ভরা-ভাদরে’-এর মানে কী?
উত্তর: ‘ভরা-ভাদরে’-এর মানে হচ্ছে পরিপূর্ণ ভাদ্রে (ভাদ্র মাসে)।
প্রশ্ন- ২৭: যৌবনের গান' প্রবন্ধে কে কমবক্তার দলে?
উত্তর: ‘যৌবনের গান' প্রবন্ধে লেখক কমবক্তার দলে।
প্রশ্ন- ২৮: ‘কমবক্তা’ কথাটির মানে কী?
উত্তর: ‘কমবক্তা’ কথাটির মানে হচ্ছে- যিনি কম কথা বলেন।
প্রশ্ন- ২৯: বাংলাদেশে প্রথম মুসলমান রাজত্ব বিস্তারকারীর নাম কী?
উত্তর: বাংলাদেশে প্রথম মুসলমান রাজত বিস্তারকারীর নাম মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি।
প্রশ্ন- ৩০: ‘বখতিয়ার খিলজি’-এর পুরো নাম কী?
উত্তর: ‘বখতিয়ার খিলজি’-এর পুরো নাম মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি।
প্রশ্ন- ৩১: বখতিয়ার খিলজি কে ছিলেন?
উত্তর: বখতিয়ার খিলজি ছিলেন ইতিহাসখ্যাত আফগান সেনানায়ক।
প্রশ্ন- ৩২: বখতিয়ার খিলজি কতজন সৈন্য নিয়ে নদীয়া আক্রমণ করে দখল করেন?
উত্তর: বখতিয়ার খিলজি মাত্র সতেরো জন সৈন্য নিয়ে নদীয়া আক্রমণ করে দখল করেন।
প্রশ্ন- ৩৩: বাংলার সেন বংশের শেষ রাজা কে?
উত্তর: বাংলার সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন।
প্রশ্ন- ৩৪: সিনর বেনিতো মুসোলিনি কত সালে আবিসিনিয়া আক্রমণ করেন?
উত্তর: সিনর বেনিতো মুসোলিনি ১৯৩৫ সালে আবিসিনিয়া আক্রমণ করেন।
প্রশ্ন- ৩৫: ১৯১২ সালে কে নানকিং প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন?
উত্তর: ১৯১২ সালে সান-ইয়াত-সেন নানকিং প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
প্রশ্ন- ৩৬: কে আমৃত্যু সোভিয়েত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন?
উত্তর: লেনিন আমৃত্যু সোভিয়েত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।
প্রশ্ন- ৩৭: ‘ভ্লাদিমির ইলিচ’ কখন ‘লেনিন’ ছদ্মনাম নেন?
উত্তর : বিপ্লবী কাজে জড়িত থাকাকালে ভ্লাদিমির ইলিচ ‘লেনিন’ ছদ্মনাম নেন।
প্রশ্ন- ৩৮: ১৯১৭ সালে কার নেতৃত্বে জারের রাজতন্ত্রের পতন ঘটে?
উত্তর : ১৯১৭ সালে লেনিনের নেতৃত্বে রুশ বিপ্লবের সাফল্যে জারের রাজতন্ত্রের পতন ঘটে।
প্রশ্ন- ৩৯: ‘লেনিন’ আমৃত্যু কোন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন?
উত্তর : ‘লেনিন’ আমৃত্যু সোভিয়েত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।
প্রশ্ন- ৪০: ‘তিমিরবিদারী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘তিমিরবিদারী’ শব্দের অর্থ সূর্য।
রশ্ন- ৪১: বাংলাদেশে প্রথম মুসলমান রাজত্ব বিস্তার হয় কত সালে?
উত্তর: বাংলাদেশে প্রথম মুসলমান রাজত্ব বিস্তার হয় ১২০৩/০৪ সালে।

‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :

১. ‘ফুলের মাঝে মাটির মমতা-রসের মতো অলক্ষ্যে।’-উক্তিটির মাধ্যমে প্রাবন্ধিক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: যৌবনের পূজারিরা মানবজাতির কল্যাণ সাধন করে তাদের কর্ম দিয়ে, কিন্তু তারা প্রকাশিত নয়-এ প্রসঙ্গেই প্রাবন্ধিক উক্তিটি করেছেন।
➠ ফুল ফোটার অন্তরালে যেমনি মাটির উপাদানের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে, তেমনি মানবজাতির যাবতীয় কল্যাণের পিছনে রয়েছে যুবকদের অপরিমেয় শ্রম, সাধনা। কিন্তু তারা কখনোই নিজেদের প্রকাশ করতে চায় না। প্রাবন্ধিক যুবকদের এই বৈশিষ্ট্যকে উপমায়িত করেছেন আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে।

২. কালাপাহাড় চরিত্রে যৌবনের কোন রূপটি ধরা পড়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কালাপাহাড় চরিত্রে যৌবনের তেজোদীপ্ত ধ্বংসাত্মক রূপটি ধরা পড়েছে।
➠ কালাপাহাড় চরিত্রটি ইতিহাসে বিকট, ভয়ংকর ও প্রলয়ংকর ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কারণ ব্রাহ্মণ থেকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত এই যোদ্ধা হিন্দুবিদ্বেষী হয়ে পুরী আক্রমণ করে বহু মন্দির ও মূর্তি ধ্বংস করেন। প্রাবন্ধিক 'যৌবনের গান' প্রবন্ধে যৌবন ও তারুণ্যের উদ্দামতা ও প্রচণ্ড তেজোদীপ্ততার উদাহরণ হিসেবে কালাপাহাড় চরিত্রটির উল্লেখ করেছেন। কারণ তাঁর কাজকর্মে যৌবনের এ দুটি দিক ফুটে উঠেছে।

৩. ‘আমাদের দলে কেহ দলপতি নাই।’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: তরুণসমাজ একটি আদর্শকে সামনে রেখে কল্যাণের পথে এগিয়ে যায়, নেতা হওয়া তাদের লক্ষ্য নয়; তাই তাদের কোনো দলপতি নেই।
➠ তরুণেরা অপরিমেয় প্রাণশক্তির অধিকারী, সৃষ্টির নেশায় আত্মপ্রত্যয়ী ও তেজোদীপ্ত। প্রাবন্ধিক দেশের তরুণসমাজকে কল্পনা করেছেন একটি শতদলের সঙ্গে- শতদল বা পদ্ম যেমন তার শত শত পাপড়ি নিয়ে একটি মাত্র মৃণালে বা বোঁটায় প্রস্ফুটিত হয়, তেমনই প্রাবন্ধিক তরুণদের সঙ্গে কাজ করতে চান তাদের নেতা হয়ে নন, সহযোগী হিসেবে।

৪. ‘রঙের খেলা খেলিতে তাহার উদয়, রং ছড়াইতে হড়াইতে তাহার অন্ত।’ কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যৌবনের ধর্মই নব সৃষ্টির খেলা-এটি বোঝাতেই আলোচ্য উক্তিটির অবতারণা।
➠ পৃথিবীতে যত জরা, অন্ধকার, বিভীষিকা রয়েছে তরুণ তার শক্তিশালী বাহু দ্বারা আমৃত্যু তা ভাঙতে চেষ্টা করে এবং সে জায়গায় সুন্দর, নতুন, কল্যাণকে গড়ার চেষ্টা করে। অর্থাৎ অন্ধকার বা কালো সরিয়ে সেখানে নব নব রং আনার চেষ্টা তার প্রতিনিয়ত। তাই কাজী নজরুল ইসলাম 'যৌবনের গান' শীর্ষক অভিভাষণটিতে যৌবনের চিরন্তন এই সৃষ্টিগুণটিকে উপস্থাপন করেছেন আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে।

৫. ‘আমরা সকলে মিলিয়া এক সিন্ধি, এক ধ্যানের মৃণাল ধরিয়া বিকশিত হইতে চাই।’ কথাটির মাধ্যমে প্রাবন্ধিক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: উৎসাহ, উদ্দীপনা ও মৃত্যুঞ্জয় অঙ্গীকারের মাধ্যমে জীর্ণতা ভেঙে নতুন কিছু গড়ার একই লক্ষ্য সমস্ত যুবকের, সেটি বোঝাতেই প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তির অবতারণা করেছেন।
➠ যৌবনের বৈশিষ্ট্য যাদের মধ্যে বিদ্যমান তারাই যুবক। এই যুবকরা কল্যাণের নিমিত্তে পুরাতনকে ভেঙে নতুনকে গড়ার মাঝেই নিয়োজিত থাকে। সকলের লক্ষ্য একই। এখানে কেউই দলপতি নয়, সকলেই একত্রে তাদের নিজেদের, লক্ষ্য পূরণের চেষ্টায় মগ্ন থাকে। প্রাবন্ধিক এই প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

৬. বার্ধক্য বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যারা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়ে পড়ে থাকে, তাকেই প্রাবন্ধিক বার্ধক্য বলে শনাক্ত করেছেন।
➠ ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে লেখক সুস্পষ্টভাবে বার্ধক্যের স্বরূপ চিহ্নিত করেছেন। যৌবনের চারিত্র্যধর্মের ঠিক বিপরীতে অবস্থান বার্ধক্যের। লেখকের মতে, বার্ধক্যের প্রধান লক্ষণ নৈরাশ্য ও নতুনের প্রতি সন্দেহ। যে কুসংস্কার ও প্রথাগত অভ্যাসকে আঁকড়ে ধরে, যে নতুনকে ভয় পায় সে-ই বৃদ্ধ। মনের এ জড়তাই বার্ধক্যের লক্ষণ।

৭. যৌবনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রাবন্ধিকের মতে, প্রবল প্রাণশক্তিই যৌবনের পরিচায়ক।
➠ ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে কবি কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের জয়গান গেয়েছেন। যৌবনের রূপকে তিনি উপস্থাপন করেছেন নানা মহিমায়। যৌবন হলো এমন একটি শক্তি যা মানবমনে আনে প্রাণচাঞ্চল্য। আবিষ্কারের নেশায় যৌবনশক্তি প্রাণ বিসর্জন দেয়, দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে।

৮. ‘আমার প্রথম জাগরণ প্রভাতে’- বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: যৌবনের শক্তি এবং কল্যাণকর রূপ প্রাবন্ধিক যে সময় বুঝতে পেরেছিলেন সে সময়টিতে তাঁর জাগরণের প্রথম প্রভাত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
➠ প্রাবন্ধিক যৌবনের শক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। কিন্তু তিনি যেদিন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন সেদিন থেকেই সশ্রদ্ধচিত্তে নমস্কার জানিয়েছেন। যৌবনকে নিজের মধ্যে ধারণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। প্রাবন্ধিক যে সময় থেকে যৌবনের এই শক্তি উপলব্ধি করতে পেরেছেন সেই সময়টিকেই জাগরণের প্রথম প্রভাত বলে উল্লেখ করেছেন।

৯. ‘যৌবন-সূর্য্য যথায় অস্তমিত, দুঃখের তিমির-কুণ্ডলা নিশীথিনীর পানিই। সেই তো লীলাভূমি।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যৌবনের বৈশিষ্ট্য যেখানে নেই তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না- উক্তিটি এ মর্মার্থকে ধারণ করছে।
➠ যেখানে যৌবনশক্তির সূর্য অস্তমিত সেখানে অন্ধকার ও কুসংস্কার দাপটের সঙ্গে বিরাজমান। যৌবনের বহুমাত্রিক শক্তির কথা বলতে করো। গিয়ে প্রাবন্ধিক যৌবনকে সূর্য-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। যৌবনবিহীন সবকিছু অন্ধকার এবং দুঃখময়। অনুরূপ যৌবনবিহীন পরিস্থিতিতে প্রাবন্ধিক দুঃখের রাত্রির লীলাভূমি হিসেবে দেখেছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

১০. লেনিনের মাঝে প্রাবন্ধিক যৌবনের কোন বৈশিষ্ট্য দেখতে পান? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লেনিন ছিলেন রুশ বিপ্লবের সংগঠক, পরিকল্পক ও নেতা। রাশিয়াতে শ্রমজীবীদের শত্রু, ধনাঢ্যদের প্রতিনিধিত্বকারী অত্যাচারী জার সাম্রাজ্যের অত্যাচারের মাত্রা যখন প্রবল হয়ে ওঠে তখন বিদ্রোহ করেন লেনিন।
➠ শ্রমজীবীদের সংগঠিত করে ১৯১৭ সালে রাজতন্ত্রের পতন এবং কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। জারদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ হলো যৌবনের বিপ্লবী চেতনার স্বরূপ এবং শ্রমজীবীদের প্রতি সমতা হলো যৌবনের মাতৃরূপ। যৌবনের এই দুটো বৈশিষ্ট্যই প্রাবন্ধিক লেনিনের মাঝে দেখতে পেয়েছেন।

১১. ‘ফুলের মাঝে মাটির মমতা-রসের মতো অলক্ষ্যে।’- উক্তিটির মাধ্যমে প্রাবন্ধিক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: যৌবনের পূজারিরা মানবজাতির কল্যাণ সাধন করে তাদের কর্ম দিয়ে, কিন্তু তারা প্রকাশিত নয়- এ প্রসঙ্গেই প্রাবন্ধিক উক্তিটি করেছেন।
➠ ফুল ফোটার অন্তরালে যেমনি মাটির উপাদানের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে তেমনি মানবজাতির যাবতীয় কল্যাণের পিছনে রয়েছে যুবকদের অপরিমেয় শ্রম, সাধনা। কিন্তু তারা কখনোই নিজেদের প্রকাশ করতে চায় না। প্রাবন্ধিক যুবকদের এই বৈশিষ্ট্যকে উপমায়িত করেছেন আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে।

১২. কালাপাহাড় চরিত্রে যৌবনের কোন রূপটি ধরা পড়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কালাপাহাড় চরিত্রে যৌবনের তেজোদীপ্ত ধ্বংসাত্মক রূপটি ধরা পড়েছে।
➠ কালাপাহাড় চরিত্রটি ইতিহাসে বিকট, ভয়ংকর ও প্রলয়ংকর ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কারণ ব্রাহ্মণ থেকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত এই যোদ্ধা হিন্দুবিদ্বেষী হয়ে পুরী আক্রমণ করে বহু মন্দির ও মূর্তি ধ্বংস করেন। প্রাবন্ধিক 'যৌবনের গান' প্রবন্ধে যৌবন ও তারুণ্যের উদ্দামতা ও প্রচণ্ড তেজোদীপ্ততার উদাহরণ হিসেবে কালাপাহাড় চরিত্রটির উল্লেখ করেছেন। কারণ তাঁর কাজকর্মে যৌবনের এ দুটি দিক ফুটে উঠেছে।

১৩. ‘আমাদের দলে কেহ দলপতি নাই।’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো
উত্তর: তরুণসমাজ একটি আদর্শকে সামনে রেখে কল্যাণের পথে এগিয়ে যায়, নেতা হওয়া তাদের লক্ষ্য নয়; তাই তাদের কোনো দলপতি নেই।
➠ তরুণেরা অপরিমেয় প্রাণশক্তির অধিকারী, সৃষ্টির নেশায় আত্মপ্রত্যয়ী ও তেজোদীপ্ত। শতদলের সঙ্গে-শতদল বা পদ্ম সমাজকের কল্পনা শত পাপড়ি নিয়ে একটি মাত্র মৃণালে বা বোঁটায় প্রস্ফুটিত হয়, তেমনই প্রাবন্ধিক তরুণদের সঙ্গে কাজ করতে চান তাদের নেতা হয়ে নন, সহযোগী হিসেবে।

১৪. বার্ধক্য বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যারা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়ে পড়ে থাকে, তাকেই প্রাবন্ধিক বার্ধক্য বলে শনাক্ত করেছেন।
➠ ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে লেখক সুস্পষ্টভাবে বার্ধক্যের স্বরূপ চিহ্নিত করেছেন। যৌবনের চার্যিধর্মের ঠিক বিপরীতে অবস্থান বার্ধক্যের। লেখকের মতে, বার্ধক্যের প্রধান লক্ষণ নৈরাশ্য ও নতুনের প্রতি সন্দেহ। যে কুসংস্কার ও প্রথাগত অভ্যাসকে আঁকড়ে ধরে, যে নতুনকে ভয় পায় সে-ই বৃদ্ধ। মনের এ জড়তাই বার্ধক্যের লক্ষ।

১৫. যৌবনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রাবন্ধিকের মতে, প্রবল প্রাণশক্তিই যৌবনের পরিচায়ক। ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে কবি কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের জয়গান গেয়েছেন।
➠ যৌবনের রূপকে তিনি উপস্থাপন করেছেন নানা মহিমায়। যৌবন হলো এমন একটি শক্তি যা মানবমনে আনে প্রাণচাঞ্চল্য। আবিষ্কারের নেশায় যৌবনশক্তি প্রাণ বিসর্জন দেয়, দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে।

১৬. ‘যৌবন-সূর্য যথায় অস্তমিত, দুঃখের তিমির-কুন্তলা নিশীথিনীর সেই তো লীলাভূমি।’-ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যৌবনের বৈশিষ্ট্য যেখানে নেই তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না- উক্তিটি এ মর্মার্থকে ধারণ করছে।
➠ যেখানে যৌবনশক্তির সূর্য অস্তমিত সেখানে অন্ধকার ও কুসংস্কার দাপটের সতো বিরাজমান। যৌবনের বহুমাত্রিক শক্তির কথা বলতে করো। গত প্রাবন্ধিক যৌবনকে সূর্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যৌবনবিহীন সঞ্চি অন্ধকার এবং দুঃখময়। অনুরূপ যৌবনবিহীন পরিস্থিতিতে হাধিক দুঃখের রাত্রির লীলাভূমি হিসেবে দেখেছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

১৭. ‘রঙের খেলা খেলিতে তাহার উদয়, রং ছড়াইতে ছড়াইতে তাহার অন্ত।’- কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যৌবনের ধর্মই নব সৃষ্টির খেলা- এটি বোঝাতেই আলোচ্য উক্তিটির অবতারণা।
➠ পৃথিবীতে যত জরা, অন্ধকার, বিভীষিকা রয়েছে তরুণ তার শক্তিশালী বাহু দ্বারা আমৃত্যু তা ভাঙতে চেষ্টা করে এবং সে জায়গায় সুন্দর, নতুন, কল্যাণকে গড়ার চেষ্টা করে। অর্থাৎ অন্ধকার বা কালো সরিয়ে সেখানে নব নব রং আনার চেষ্টা তার প্রতিনিয়ত। তাই কাজী নজরুল ইসলাম ‘যৌবনের গান’ শীর্ষক অভিভাষণটিতে যৌবনের চিরন্তন এই সৃষ্টিগুণটিকে উপস্থাপন করেছেন আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে।

১৮. ‘আমরা সকলে মিলিয়া এক সিদ্ধি, এক ধ্যানের মৃণাল ধরিয়া বিকশিত হইতে চাই।’ কথাটির মাধ্যমে প্রাবন্ধিক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: উৎসাহ, উদ্দীপনা ও মৃত্যুঞ্জয় অঙ্গীকারের মাধ্যমে জীর্ণতা ভেঙে নতুন কিছু গড়ার একই লক্ষ্য সমস্ত যুবকের, সেটি বোঝাতেই প্রাবন্ধিক আলোচ্য অবতারণা করেছেন।
➠ যৌবনের বৈশিষ্ট্য উক্তির অবতারণা করেছেনরাই যুবক। এই যুবকরা। কল্যাণের নিমিত্তে পুরাতনকে ভেঙে নতুনকে গড়ার মাঝেই নিয়োজিত থাকে। সকলের লক্ষ্য একই। এখানে কেউই দলপতি নয়, সকলেই একত্রে তাদের নিজেদের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টায় মগ্ন থাকে। প্রাবন্ধিক এই প্রসজ্যেই আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

১৯. ‘আমার প্রথম জাগরণ প্রভাতে’- বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: যৌবনের শক্তি এবং কল্যাণকর রূপ প্রাবন্ধিক যে সময় বুঝতে পেরেছিলেন সে সময়টিতে তাঁর জাগরণের প্রথম প্রভাত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
➠ প্রাবন্ধিক যৌবনের শক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। কিন্তু তিনি যেদিন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন সেদিন থেকেই সশ্রদ্ধচিত্তে নমস্কার জানিয়েছেন। যৌবনকে নিজের মধ্যে ধারণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। প্রাবন্ধিক যে সময় থেকে যৌবনের এই শক্তি উপলব্ধি করতে পেরেছেন সেই সময়টিকেই জাগরণের প্রথম প্রভাত বলে উল্লেখ করেছেন।

২০. লেনিনের মাঝে প্রাবন্ধিক যৌবনের কোন বৈশিষ্ট্য দেখতে পান। ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লেনিন ছিলেন রুশ বিপ্লবের সংগঠক, পরিকল্পক ও নেতা। রাশিয়াতে শ্রমজীবীদের শত্রু, ধনাঢ্যদের প্রতিনিধিত্বকারী অত্যাচারী জার সাম্রাজ্যের অত্যাচারের মাত্রা যখন প্রবল হয়ে ওঠে তখন বিদ্রোহ করেন লেনিন।
➠ শ্রমজীবীদের সংগঠিত করে ১৯১৭ সালে রাজতন্ত্রের পতন ঘটান এবং কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। জারদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ হলো যৌবনের বিপ্লবী চেতনার স্বরূপ এবং শ্রমজীবীদের প্রতি সমতা হলো যৌবনের মাতৃরূপ। যৌবনের এই দুটো বৈশিষ্ট্যই প্রাবন্ধিক লেনিনের মাঝে দেখতে পেয়েছেন।

২১. ‘তাহাদের দেশ নাই, জাতি নাই, অন্য ধর্ম নাই।’- উক্তিটি
উত্তর: ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক তরুণদের দেশ, কাল, জাতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন।
➠ তরুণরা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে অতিক্রম করে যায় বিপুল প্রাণশক্তিতে। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে তুলে দেয় অন্ন। তেমনই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ, দুর্বল, হতাশাগ্রস্ত, বন্ধুহীন রোগী সকলের পাশে একমাত্র সহায় হয়ে দাঁড়ায় তরুণরাই। উদ্ধৃত উক্তিটিতে কল্যাণকামী তারুণ্যের স্বরূপ চিত্রিত হয়েছে।


‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১

অবসরপ্রাপ্ত ফারুক সাহেবের কাঁচাপাকা চুল, মুখে বয়সের ছাপ। দেখলে মনে হয় তার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। কিন্তু রাস্তার দুই ধারে গাছ লাগানো, রাস্তার গর্ত ভরাট করা প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক কাজে নিরবচ্ছিন্ন পরামর্শ প্রদানে তার কোনো ক্লান্তি নেই। এছাড়া পাড়ার ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাল্যবিবাহ রোধ, স্কুলগামী মেয়েদের স্কুলে পাঠানো, অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো- এ সমস্ত মানবিক কাজে তিনি সহযোগিতা করে থাকেন। মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

ক. গানের পাখিকে তাড়া করে কে?
খ. আমি আজ তাঁহাদেরই দলে, যাহারা কর্মী নন- ধ্যানী, এখানে ‘ধ্যানী’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে এবং কেন?
গ. উদ্দীপকে ফারুক সাহেবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “বার্ধক্যকে সমসময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না”- উক্তিটি উদ্দীপকের ফারুক সাহেবের প্রসঙ্গে ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধ অনুসরণে আলোচনা করো।

---------------

‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ২

যুবকেরা পাগল, বারুদের মতো সহজেই তাদের মনে প্রতিবাদী চেতনার সৃষ্টি হয়। কারাগারে ফাঁসিতে কিছুতেই তাদের দর্পিত প্রাণ কাবু হয় না। এদের স্থিরতা, বীরত্ব, গাম্ভীর্য, ধর্মভয়, বিনয় জ্ঞান বলতে কিছু নেই। ওরা সত্যিই পাগল, বাষ্পীয় ইঞ্জিনে আবদ্ধ শক্তি বলা যায়।

ক. ‘বনের পাখির মতো গান করা স্বভাব’- কার?
খ. কবি তরুণদের দলভুক্ত হতে চেয়েছেন কেন?
গ. অনুচ্ছেদে ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে বর্ণিত যুবকের কোন রূপটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “অনুচ্ছেদে ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে আংশিক বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে”- মন্তব্যটির যৌক্তিক মূল্যায়ন করো।
-----------

‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সম্প্রতি জার্মানির হামবুর্গ শহরে বিশ্ব যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে আসা তরুণরা সকল ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে থেকে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ‘যুবকরাই নতুন বিশ্ব গড়বে’ এই মূলমন্ত্র কাজে লাগানোর জন্যে তরুণদের প্রয়াস ফলপ্রসূ হবে বলেই সকলের বিস্বাস।

ক. ফুলের মাঝে মাটির মমতারসের মতো অবস্থান কাদের?
খ. কালাপাহাড়ের পরিচয় কী?
গ. তরুণদের দেশ-জাতি-ধর্ম নেই বলে কাজী নজরুল ইসলাম যে মত ব্যক্ত করেছেন তা উদ্দীপকে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? যুক্তিপূর্ণ উত্তর দাও।
ঘ. উদ্দীপকে নতুন বিশ্ব গঠনের যে মূলমন্ত্রের কথা বলা হয়েছে ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

-----------

‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
২৬শে মার্চ ১৯৭১ সাল। সারাদেশে যুদ্ধের দামামা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তুহিন ও তার বন্ধুরা হানাদার বাহিনীর আক্রমণকে প্রতিহত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে দেশকে স্বাধীন করতে প্রাণ দেয় তুহিন। তুহিনের মতো লক্ষ তরুণের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় ‘বাংলাদেশ’। তুহিন মরেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের লাখো দামাল ছেলেরে মাঝে আজও বেঁচে আছে তুহিন।

ক. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন?
খ. ‘তরুণ-অরুণের মতোই যে তারুণ্য তিমির বিদারী, সে যে আলোর দেবতা’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তুহিনের সাথে 'যৌবনের গান' প্রবন্ধের তরুণদের মনোভাবের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘তুহিনের মত লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশ বাংলাদেশ’- উদ্দীপকের এই চরণটি ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

ক. কাজী নজরুল ইসলাম ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
খ. যৌবনই হচ্ছে মানব জীবনের চালিকা শক্তি। সমাজ, জাতি ও দেশের প্রগতির জন্য প্রয়োজন যৌবন শক্তি।
➠ প্রভাতে সূর্যোদয়-এর সঙ্গে সঙ্গে যেমন পৃথিবী আলোকিত হয়ে ওঠে, তেমনি একমাত্র যৌবন শক্তিই পারে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল জরাজীর্ণতাকে মুছে দিতে। প্রাবন্ধিক তাই যৌবন শক্তিকে সূর্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ জন্য যৌবন শক্তিকে তিনি আলোর দেবতা বলে অভিহিত করেছেন।

গ. কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের গান' প্রবন্ধে যৌবন তথা তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। উদ্দীপকে উল্লিখিত তুহিনের সাথে প্রবন্ধের তরুণদের কার্যোদ্দীপনার সাদৃশ্য লক্ষণীয়।
➠ মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে যৌবন বা তারুণ্য। লেখক মনে করেন দেশের প্রতিটি তরুণ যদি দেশসেবায় কিছু সময় ব্যয় করে তাহলে দেশের ব্যাপক কল্যাণ হতে পারে। তরুণরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তরুণরাই পারে তাদের মেধা ও মনন দিয়ে সমাজকে তাদের নিজের মত করে গড়ে তুলতে।
➠ উদ্দীপকের তুহিন তরুণ যুবক। যুদ্ধের দামামা তার অন্তরকে নাড়া দেয়। তাইতো সে ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনীদের পরাস্ত করতে যুদ্ধে প্রাণ হারায় তুহিন। তুহিনের মতো লক্ষ তরুণদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের তরুণদের মধ্যেও আমরা দেখেছি তারা নির্ভীক, সাহসী। তারা দুর্দশাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায় বল হয়ে। শব বহন করে নিয়ে যায় শ্মশান ঘাটে। বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপাশে রাত্রির পর রাত্রি জেগে সেবা করে।
উদ্দীপকের তুহিন যেমন দেশকে স্বাধীন করার মন্ত্রে নিজেকে উৎসর্গ করেছে তেমনি প্রবন্ধের তরুণরাও দেশের মঙ্গলে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছে।

ঘ. কাজী নজরুল ইসলাম ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে যৌবন তথা তারুণ্য শক্তির জয়গান করেছেন। উদ্দীপকে উল্লিখিত তুহিনের মধ্যেও সেই তারুণ্যের উদ্দামতা লক্ষ্য করা যায়। উদ্দীপকের তুহিন তারুণ্য শক্তির অধিকারী যুবক। তাইতো সে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ঝাপিয়ে পড়ে যুদ্ধে।
➠ কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে দুরন্ত-দুর্বার যৌবনের বন্দনা করেছেন। যৌবন হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণ শক্তির আধার। তা মানুষের জীবনকে করে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। দুর্বার উদ্দীপনা, ক্লান্তিহীন উদ্যম, অপরিসীম ঔদার্য, অফুরন্ত প্রাণচাঞ্চল্য ও অব্যর্থ সাধনার প্রতীক যৌবন মৃত্যুকে তুচ্ছ করে সংস্কারের বেড়াজাল ছিন্ন করে সকল বাধা ছিন্ন করে এগিয়ে যাবে সামনে।
➠ উদ্দীপকের তুহিনের মতো ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের তরুণরাও সমাজ তথা দেশের মঙ্গলে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছে সর্বদা। তারা শব বহন করে নিয়ে যায় শ্মশান ঘাটে। বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ করে। বন্ধুহীন রোগীকে সেবা করবে- এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য। তরুণদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমরা তুহিনের মধ্যে পাই। তুহিন এক তারুণ্যদীপ্ত যুবক। তারুণ্যের উন্মাদনায় উদ্দীপ্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে নিজের জীবনকে সে বাজী রেখেছে এবং প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সেই স্বাধীনতা। একমাত্র তারুণ্য শক্তির কারণেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে সক্ষম হয়েছি।


‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সত্তরের কাছাকাছি বয়স কলি মিয়ার। তার চিত্তচাঞ্চল্য নাতি সবুজ আলীকে চিন্তিত করে তোলে। দাদার কারণে এ সতেরো বছর বয়সে সে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। সে ভেবে পায় না যে একটু দেরিতে ঘুম থেকে জাগলে কী হয়? পত্রিকাপাঠে দেশের সংবাদ জেনে কে কতটা লাভবান হয়েছে? মানবজীবনে বিজ্ঞানের এত বাড়াবাড়ি কেন? ছোট ভাইয়ের চিৎকার-চেচামেচিতে তার প্রাণটাও যেন ওষ্ঠাগত। দাদাভাই সিডরে আক্রান্তদের স্বচক্ষে দেখতে যাবার প্রস্তাব করলে সবুজ আলী সকাল থেকেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ভান করে।

ক. বহু বৃদ্ধের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো কী থাকে?
খ. ‘বার্ধক্যকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের চরিত্র সবুজ আলীকে কী তারুণ্য শক্তির অধিকারী বলা যায়? ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধ অনুসারে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের আলোকে কলি মিয়া ও সবুজ আলীর তারুণ্য ও বার্ধক্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

ক. বহু বৃদ্ধের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন থাকে।
খ. কাজী নজরুল ইসলাম ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে তরুণদের জয়গান করতে গিয়ে বার্ধক্যের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।
➠ তাঁর মতে, তারুণ্য ও বার্ধক্য সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। তিনি বার্ধক্যকে কোনো বয়সের মাপকাঠিতে বিচার করেননি। তিনি মনে করেন, বৃদ্ধ তারাই যারা কুসংস্কারকে, মিথ্যাকে আঁকড়ে পড়ে থাকে এবং নবজীবনের আবির্ভাবকে স্বাগত জানাতে পারে না। যুগ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। এ কারণেই তিনি ‘বার্ধক্যকে সবসময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন।

গ. ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম দুরন্ত, দুর্বার ও দুঃসাহসী তারুণ্যের জয়গান করেছে।
➠ প্রাবন্ধিকের মতে, তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তার জন্যে যার শক্তি অপরিমেয়, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, বিপুল যার আশা, ক্লান্তিহীন যার উৎসাহ, বিরাট যার ঔদার্য, অফুরন্ত যার প্রাণ, অটল যার সাধনা এবং মৃত্যু যার মুঠিতলে।
➠ ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের আলোকে উদ্দীপকের সবুজ আলীকে তারুণ্যশক্তির অধিকারী বলা চলে না। বয়সে তরুণ হলেও নাতি সবুজ আলী উদ্দামহীন। দাদার কৌতূহল ও চিত্তচাঞ্চল্য তাকে অস্থির করে তোলে। দেশ ও বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় সংবাদে সে আগ্রহী নয়। শিশুর কোলাহলে সে বিরক্তিবোধ করে।
সূর্যোদয় দেখতেও সে প্রত্যাশী নয়। এভাবে বার্ধক্যের বৈশিষ্ট্যগুলো তার মাঝে দেখা যায়। ফলে ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের বিচারে উদ্দীপকের চরিত্র সবুজ আলীকে তারুণ্যশক্তির অধিকারী বলা যায় না।

ঘ. প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলাম ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে তারুণ্য ও বার্ধক্যের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
➠ তাঁর মতে, তারুণ্য ও বার্ধক্যের অবস্থান মানব দেহে নয়; মানুষের মনে। মানসিক চিত্ত চাঞ্চল্যের জন্যে, অগ্রসরবর্তী চিন্তার জন্যে, অনুসন্ধিৎসু মনের জন্যে, সাহসের কারণে ও দায়িত্বশীলতার পরিচয়ে বয়স্ক ব্যক্তিও তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য হতে পারেন।
➠ উদ্দীপকের চরিত্র সবুজ আলীর দাদা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি পশ্চাদপদ নন; বরং বর্তমান সমাজ-ব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত হয়ে দুঃস্থদের কষ্ট লাঘবে সহমর্মী হন এবং বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় আনন্দ লিঙ্গু হয়ে ওঠেন। তিনি জীবনকে উপভোগ করে নিজের মতো করে দেখতে চান। আবার বয়সে তরুণ হয়েও কেউ যদি বর্তমান সময়ের সঙ্গে একীভূত হতে না পারে, নতুনকে গ্রহণে অসমর্থ হয়, নিজেকে বিজ্ঞানের সহযাত্রী ভাবতে পিছিয়ে থাকে কিংবা নৈরাশ্যবাদী বা সংশয়পরায়ণ হয় তবে বয়সে তরুণ হলেও তাকে যৌবন শক্তির অধিকারী বলা যাবে না।
➠ উদ্দীপকের সবুজ আলীর মাঝে এ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। বয়সের দিক থেকে তরুণ হলেও চেতনার দিক থেকে তাকে যৌবন শক্তির অধিকারী বলা চলে না। কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের এ বিশ্বাসে উদ্দীপকের উপরিউক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে।


‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মুসা ইব্রাহীমের নামটি আমাদের সবার জানা। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন মুসা ইব্রাহীম। তারুণ্যদীপ্ত মুসার এ গৌরবে দেশবাসীও গৌরবান্বিত। অথচ এভারেস্টের পথে তাঁর অভিযাত্রা সহজ ছিল না। অনেকেই তাঁকে নিরুৎসাহিত করেছেন। অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতাও ছিল। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে পিছু হটাতে পারেনি। তিনি এখন বাংলাদেশের তরুণদের কাছে অদম্য তারুণ্যের প্রতীক।

ক. কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষদেশ অধিকার করতে গিয়ে যারা তুষার ঢাকা পড়ে তাদের মধ্যে নজরুল কী দেখেছেন?
খ. কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করেছেন কেন?
গ. কোনো কিছুই তাঁকে পিছু হটাতে পারেনি- উক্তিটি 'যৌবনের গান' প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মুসা ইব্রাহীম আগামী প্রজন্মের প্রেরণার উৎস- ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

ক. কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষদেশ অধিকার করতে গিয়ে যারা তুষার ঢাকা পড়ে নজরুল তাদের মধ্যে যৌবনদেখেছেন।
খ. প্রাণপ্রাচুর্যের অধিকারী কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করেছেন। কারণ যৌবন প্রগতির ধারক ও বাহক।
➠ যৌবনের বলে বলীয়ান হয়ে যৌবনের অধিকারীরা নব নব সৃষ্টি সম্ভারে পৃথিবীকে সজ্জিত করে এবং পুরাতন জীর্ণ সমাজকে ভেঙে নতুন করে গড়ে তোলে। সমাজ ও দেশের উন্নতির পেছনে যৌবনশক্তি অনুঘটকের কাজ করে। তাই কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

গ. উদ্দীপকের মুসা ইব্রাহীম অফুরন্ত প্রাণশক্তির কারণেই এভারেস্ট জয় করতে সক্ষম হয়েছে। এভারেস্টের পথ ছিল বন্ধুর।
➠ বর্ণনাতীত কষ্ট স্বীকার করে তাকে এভারেস্টের পথে পা বাড়াতে হয়েছে। এখানকার সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে তুষার ধস। একবার তুষার ধস শুরু হলে তার নিচে চাপা পড়ে অনেক পর্বতারোহীরই জীবনাবসান হয়। এ জন্য অনেকে তাকে নিরুৎসাহিত করেছে। কিন্তু কোনো কিছুর ভয় না করে মুসা ইব্রাহীম তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার পথ বেছে নিয়েছেন। পথের সকল বাধাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে লক্ষ্যে পৌছানোর টানে সামনে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি এবং প্রমাণ করেছেন যে, তারুণ্যের শক্তিতে বলীয়ান হলে মানুষ অবশ্যই অজেয়কে জয় করতে পারে।
➠ কাজী নজরুল ইসলামের মতে, যারা যৌবনের অধিকারী তারা কখনো বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ থাকতে চায় না, জগতটাকে তারা ভালো করে দেখতে চায়। যৌবন এক অফুরন্ত শক্তির আধার। তাই তো তরুণরা অকুতোভয়। তাদের শক্তি অপরিমেয়। তাদের গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ অমিত। তারা দুপায়ে পথের বাধা মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যায়। কোনো অপশক্তিই তাদের গতিরোধ করতে পারে না। সামনের দিকে এগিয়ে চলাই তাদের ধর্ম। তুষারচাপা পড়ার ভয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষদেশ অধিকার করার অভিযান থেকেও তারা পিছিয়ে থাকে না। নজরুলের এ অভিজ্ঞতাকেই বাস্তবে রূপদান করেছে বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম। যৌবন শক্তিতে বলীয়ান ছিল বলেই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্র থেকে কোনো কিছুই তাঁকে পিছু হটাতে পারেনি।

ঘ. কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'যৌবনের গান' প্রবন্ধে মানসিকতার মাপকাঠিতে তারুণ্য ও বার্ধ্যকের পার্থক্য নির্ণয় করেছেন।
➠ ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম তারুণ্য বলতে বুঝিয়েছেন মানুষের চেতনাবোধ ও প্রাণশক্তিকে। যৌবনের ধর্ম হলো নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় নিজেকে মত্ত রাখা। যার মধ্যে যৌবন আছে তার শক্তি অপরিমেয়; গতি ঝঞ্ঝার ন্যায়; তার আশা বিপুল; উৎসাহ ক্লান্তিহীন; ঔদার্য বিরাট; অফুরন্ত তার প্রাণশক্তি; মৃত্যু তার মুঠিতলে। এই ধর্ম যাদের তারাই যৌবনের অধিকারী।
➠ উদ্দীপকের মুসা ইব্রাহীমের মধ্যে তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তিনি প্রাণধর্মে বলীয়ান হয়ে কোটি কোটি আহ্বানের সাড়া নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্পৃহা থেকেই এভারেস্ট বিজয়ে সক্ষম হয়েছেন। ভীরু, কাপুরুষেরা তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি। শুধু মানুষের প্ররোচনাকেই তিনি উপেক্ষা করেন নি; দারিদ্র্যের কষাঘাতকেও উপেক্ষা করেছেন। সকল বাধা অতিক্রম করে তিনি তাঁর লক্ষ্যে পৌছেছেন। তাঁর এ সফলতা আগামী প্রজন্মের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
➠ মুসা ইব্রাহীম যে কষ্ট স্বীকার করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন আগামী প্রজন্ম তা অনুসরণ করলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। যৌবন শক্তি এভাবেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। জাতিকে দিতে পারে নতুন নতুন পথের ঠিকানা। তাই আমাদের সবারই উচিত যৌবনের পূজা করা।


‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মিতুল একাদশ শ্রেণির ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজেও সে জড়িত। অসহায় ও দুঃস্থ মানুষদের সে যেমন সাহায্য করে, তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়ও সে নিরলসভাবে কাজ করে। শুধু তাই নয় এলাকার আরও কিছু উদ্যমী যুবককে সাথে নিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পুরো গ্রামকেই সে সবুজ করে তোলে।

ক. যৌবনের সেবাপরায়ণ দিকটিকে নজরুল কী বলে আখ্যায়িত করেছেন?
খ. ‘যৌবনের মাতৃরূপ’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
গ. ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে লেখক যাদের জয়গান গেয়েছেন, মিতুলকে কি তাদের একজন হিসেবে ভাবা যায়? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
ঘ. মিতুলের মধ্য দিয়ে যৌবনের মাতৃরূপ বিকাশ লাভ করেছে- ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

ক. যৌবনের সেবাপরায়ণ দিকটিকে নজরুল 'যৌবনের মাতৃরূপ' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
খ. ‘যৌবনের মাতৃরূপ’ বলতে আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত তারুণ্যশক্তিকেই বুঝানো হয়েছে।
➠ তরুণরা যখন শব বহন করে শাশানঘাট বা গোরস্থানে যায়, অনাহারে থেকে তারা যখন দুর্ভিক্ষ ও বন্যাপীড়িতদের মুখে খাবার তুলে দেয়, তারা যখন বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপার্শ্বে বিনিদ্র রজনী যাপন করে, দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করে কিংবা দুর্বলের পাশে বল হয়ে দাঁড়ায় তখন তাদের মধ্যে যৌবনের মাতৃরূপ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ‘যৌবনের মাতৃরূপ’ বলতে মূলত যুবকদের এই সেবাপরায়ণ রূপটিই বুঝানো হয়েছে।

গ. ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে লেখক যাদের জয়গান গেয়েছেন মিতুলকে নিঃসন্দেহে তাদের একজন হিসেবে ভাবা যায়।
➠ কাজী নজরুল ইসলাম তাদেরকেই তরুণ হিসেবে অভিহিত করেছেন- যারা সব বাধা, কুসংস্কার, মিথ্যা, মৃত্যুকে ডিঙিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। যারা নিজের জীবনকে বিপন্ন করে অন্যকে সহায়তা করে।
➠ উদ্দীপকের মিতুলের মধ্যেও আমরা এই গুণগুলো লক্ষ করি। মিতুল পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজেও আত্মনিয়োগ করে।

ঘ. যৌবন মানবজীবনের এমন একটি উত্তাল সময়, যখন মানুষ শুভ ও অশুভ যে কোনো দিকেই ধাবিত হতে পারে।
➠ যৌবন মানুষকে দেয় শক্তি, সাহস ও অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রেরণা। ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে লেখক যৌবনের যে মাতৃরূপের কথা বলেছেন, তা আমরা মিতুলের মধ্যে লক্ষ করি। তরুণরা যখন শব বহন করে শ্মশানঘাট বা গোরস্থানে যায়, অনাহারে থেকে তারা যখন দুর্ভিক্ষ ও বন্যাপীড়িতদের মুখে খাবার তুলে দেয়, তারা যখন বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপার্শ্বে বিনিদ্র রজনী যাপন করে, দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করে কিংবা দুর্বলের পাশে বল হয়ে দাঁড়ায় তখন তাদের মধ্যে যৌবনের মাতৃরূপ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
➠ মিতুলও যৌবনের এই মাতৃরূপের ধারক। সেও সব সময় অসহায় ও দুঃস্থ মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়ও নিরলসভাবে কাজ করে সে। অন্যদিকে সমাজকে বদলে দেয়ার প্রত্যয়েও সে আত্মনিয়োগ করে। এলাকার বেশ কিছু উদ্যমী যুবককে সঙ্গে নিয়ে মিতুল যে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করে তাতেও যৌবনের মাতৃরূপ প্রকাশ পায়।
➠ ফলে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মিতুলের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণভাবেই যৌবনের মাতৃরূপ বিকাশ লাভ করেছে।


‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
‘আঠারো বছর বয়সের নাই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।’

ক. যে তারুণ্য তরুণ অরুণের মতোই তিমির বিদারী সে কে?
খ. ‘যৌবন-সূর্য যথায় অস্তমিত, দুঃখের তিমির-কুন্তলা নিশীথিনীর সেই তো লীলাভূমি’ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে?- আলোচনা করো।
ঘ. ‘এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়’- ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

ক. যে তারুণ্য তরুণ অরুণের মতোই তিমির বিদারী সে আলোর দেবতা।
খ. যৌবন বা তারুণ্যই হচ্ছে মানব সমাজের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
➠ একটি সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যায় যে শক্তি তাই যৌবন। যৌবন তরুণ অরুণের মতোই প্রদীপ্ত। যেখানে সূর্য নেই, সেখানে আলোও নেই। সেখানে শুধু রাত্রির সীমাহীন অন্ধকার। অনুরূপভাবে যে সমাজ থেকে যৌবনশক্তি লুপ্ত হয়ে যায়, সে সমাজে অন্ধকার রাতের মতোই দুঃখ-কষ্ট বিরাজ করে। সে সমাজের উন্নয়ন-অগ্রগতি বলতে কিছু থাকে না। আলোচ্য উক্তির মাধমে মানব সমাজের এই চিরন্তন বাস্তবতাটিই তুলে ধরা হয়েছে।

গ. আঠারো বছর বয়স মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়-পরিসর।
➠ এ সময়ে যৌবন বা তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রবলভাবে প্রকাশিত হয়। ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন- তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহারই, যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নের প্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার ঔদার্য, অফুরন্ত যাহার প্রাণ, অটল যাহার সাধনা, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে।
➠ উদ্দীপকেও প্রবন্ধের এ দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। যৌবন সব বাধাকে ভেঙে দিয়ে, সব প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়। এ বয়সে কারো কাছে মাথা নত করার বা পরাজিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

ঘ. যৌবন মানুষকে প্রেরণা দেয়, দেয় সীমাহীন উদ্দীপনা।
➠ যে কোনো বাধা অতিক্রম বা অসম্ভবকে সম্ভব করার মন্ত্রণা এই যৌবনই দেয়। ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের যে বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আত্মবোধ, অত্মচেতনা ও এক ধরনের ঔদ্ধত্য যা দুর্জেয়কে জয় করার প্রেরণা যোগায়।
➠ উদ্দীপকের পংক্তিটির মধ্য দিয়েও একই বোধ প্রকাশিত হয়েছে। যৌবন বা তারুণ্য কোনো বন্ধন মানে না, কারো কাছে মাথা নত করে না, এমনকি পরাজয়ও স্বীকার করে না। বার বার ব্যর্থ হলেও যৌবনশক্তির অধিকারীরা কখনো কাঁদতে বা ভেঙে পড়তে জানে না। ব্যর্থতার ভাঙা স্তূপের উপর দৃঢ় প্রত্যয়ে তারা সাফল্যের বিজয় পতাকা উড়ায়।
➠ তাই অচল প্রথা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান দিয়ে একমাত্র তরুণরাই পারে নষ্ট হয়ে যাওয়া পুরনো সমাজকে বদলে দিতে।


যৌবনের গান
যৌবনের গান

তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url