‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
বাংলা নববর্ষ |
বাংলা নববর্ষ
শামসুজ্জামান খান
বাংলা সনের প্রথম মাসের নাম বৈশাখ। পয়লা বৈশাখে বাঙালির নববর্ষ উৎসব। নববর্ষ সকল দেশের, সকল জাতিরই আনন্দ উৎসবের দিন। শুধু আনন্দ উচ্ছ্বাসই না, সকল মানুষের জন্য কল্যাণ কামনারও দিন। আমরাও সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়েই মহা ধুমধামের সঙ্গে আমাদের নববর্ষ উৎসব উদ্যাপন করি। একে অন্যকে বলি, শুভ নববর্ষ।
বাংলা নববর্ষ আমাদের অন্যতম প্রধান জাতীয় উৎসব। প্রতি বছরই এ উৎসব বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে বিশাল থেকে বিশালতর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে যে এতটা প্রাণের আবেগে এবং গভীর ভালোবাসায় এ উৎসব উদযাপিত হয় তার কারণ পাকিস্তান আমলে পূর্ববাংলার বাঙালিকে এ উৎসব পালন করতে দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, এটা পাকিস্তানি আদর্শের পরিপন্থী। বাঙালি তার সংস্কৃতির ওপর এ আঘাত সহ্য করেনি। তারা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এ উৎসবকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু সে-দাবি অগ্রাহ্য হয়েছে। ফলে পূর্ববাংলার বাঙালি ফুঁসে উঠেছে। সোচ্চার হয়ে উঠেছে প্রতিবাদে।
১৯৫৪ সালের পূর্ববাংলার সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগ সরকারকে বিপুলভাবে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠিত হলে মুখ্যমন্ত্রী ও জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সরকার নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করেন এবং দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। সেটা ছিল বাঙালির এক তাৎপর্যপূর্ণ বিজয়ের দিন। কিন্তু সে-বিজয় স্থায়ী হয়নি। যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দিয়ে এবং সামরিক শাসন জারি করে তা সাময়িকভাবে রুখে দিয়েছে স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকার। তবু পূর্ববাংলার বাঙালি পিছু হটেনি। সরকারিভাবে আর নববর্ষ উদ্যাপিত হয়নি পাকিস্তান আমলে; কিন্তু বেসরকারিভাবে উদ্যাপিত হয়েছে প্রবল আগ্রহে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ গ্রহণ করে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট(১৯৬১)। ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার পাকুড়মূলে ছায়ানট নববর্ষের যে-উৎসব শুরু করে, স্বাধীন বাংলাদেশে তা আরো বিস্তৃতি লাভ করে।
এবার আমরা বাংলা সন ও নববর্ষ উদযাপনের কথা বলি। বাংলা সনের ইতিহাস এখনো সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতই মনে করেন মুগল সম্রাট আকবর চান্দ্র হিজরি সনের সঙ্গে ভারতবর্ষের সৌর সনের সমন্বয় সাধন করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু করেন। আধুনিক গবেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন মহামতি আকবর সর্বভারতীয় যে ইলাহি সন প্রবর্তন করেছিলেন তার ভিত্তিতেই বাংলায় আকবরের কোনো প্রতিনিধি বা মুসলমান সুলতান বা নবাব বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সেজন্যই একে ‘সন’ বা ‘সাল’ বলে উল্লেখ করা হয়। ‘সন’ কথাটি আরবি, আর ‘সাল’ হলো ফারসি। এখনো সন বা সালই ব্যাপকভাবে চালু। তবে বঙ্গাব্দও বলেন কেউ কেউ। বাংলা সন চালু হবার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়। নবাব এবং জমিদারেরা চালু করেন ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান। পয়লা বৈশাখে প্রজারা নবাব বা জমিদার বাড়িতে আমন্ত্রিত হতেন, তাদের মিষ্টিমুখও করানো হতো। পান-সুপারিরও আয়োজন থাকত। তবে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল খাজনা আদায়। মুর্শিদাবাদের নবাবেরা এ অনুষ্ঠান করতেন। বাংলার জমিদারেরাও করতেন এ অনুষ্ঠান। জমিদারি উঠে যাওয়ায় এ অনুষ্ঠান এখন লুপ্ত হয়েছে।
পয়লা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল ‘হালখাতা’। এ অনুষ্ঠানটি করতেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান। তাই ফসলের মৌসুমে ফসল বিক্রির টাকা হাতে না এলে কৃষকসহ প্রায় কেউই নগদ টাকার মুখ খুব একটা দেখতে পেত না। ফলে সারাবছর বাকিতে প্রয়োজনীয় জিনিস না কিনে তাদের উপায় ছিল না। পয়লা বৈশাখের হালখাতা অনুষ্ঠানে তারা দোকানিদের বাকির টাকা মিটিয়ে দিতেন। অন্তত আংশিক পরিশোধ করেও নতুন বছরের খাতা খুলতেন। হালখাতা উপলক্ষে দোকানিরা ঝালর কাটা লাল নীল সবুজ বেগুনি কাগজ দিয়ে দোকান সাজাতেন। ধূপধুনা জ্বালানো হতো। মিষ্টিমুখ করানো হতো গ্রাহক-খরিদ্দারদের। হাসি-ঠাট্টা, গল্পগুজবের মধ্যে বকেয়া আদায় এবং উৎসবের আনন্দ উপভোগ দুই-ই সম্পন্ন হতো। হালখাতাও এখন আর তেমন সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হয় না। এখন মানুষের হাতে নগদ পয়সা আছে। বাকিতে বিকিকিনি এখন আর আগের মতো ব্যাপক আকারে হয় না।
বাংলা নববর্ষের আর একটি প্রধান অনুষ্ঠান হলো বৈশাখী মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখের প্রথম দিনে বার্ষিক মেলা বসে। এইসব মেলার অনেকগুলোই বেশ পুরনো। এই মেলাগুলোর মধ্যে খুব প্রাচীন ঠাকুরগাঁ জেলার রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদের মেলা এবং চট্টগ্রামের মহামুনির বুদ্ধপূর্ণিমা মেলা। এক সময়ে এইসব মেলা খুব ধুমধামের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতো। সে-মেলা এখনো বসে, তবে আগের সে জৌলুস এখন আর নেই। আগে গ্রামবাংলার এই বার্ষিক মেলাগুলোর গুরুত্ব ছিল অসাধারণ। কারণ তখনো সারাদেশে বিস্তৃত যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে মানুষের জীবনযাত্রা ছিল স্থবির। এখন যেমন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে এক দিনের বেশি লাগে না। আগে তা সম্ভব ছিল না। নৌকা, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর-মোষের গাড়িতে মানুষ বা পণ্য পরিবহনে বহুসময় বা কয়েকদিন লেগে যেত। এখন নতুন নতুন পাকা রাস্তা ও দ্রুতগতির যানবাহন চালু হওয়ায় সে-সমস্যা আর নেই। আগে এইসব আঞ্চলিক মেলা থেকেই মানুষ সারা বছরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখত। তাছাড়া এইসব মেলা অঞ্চলবিশেষের মানুষের মিলন মেলায়ও পরিণত হতো। নানা সংবাদ আদান-প্রদান, নানা বিষয়ে মত বিনিময়েরও আদর্শ স্থান ছিল এই সব মেলা। আবার বাৎসরিক বিনোদনের জায়গাও ছিল মেলা। মেলায় থাকত কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, গম্ভীরা গান, পুতুল নাচ, নাগরদোলাসহ নানা আনন্দ-আয়োজন।
নববর্ষের ওই তিনটি প্রধান সর্বজনীন উৎসব ছাড়াও বহু আঞ্চলিক উৎসব আছে। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত বলীখেলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৯০৭ সাল থেকে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের নানাস্থানে এই খেলার প্রচলন আছে। এই বিখ্যাত কুস্তি খেলাকেই বলা হয় বলী খেলা। আবদুল জব্বার নামে এক ব্যক্তি এ খেলার প্রবর্তন করেন বলে একে ‘জব্বারের বলীখেলা’ বলা হয়।
আমানিও নববর্ষের একটি প্রাচীন আঞ্চলিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। এটি প্রধানত কৃষকের পারিবারিক অনুষ্ঠান। চৈত্র মাসের শেষদিনের সন্ধ্যারাতে গৃহকত্রী এক হাঁড়ি পানিতে স্বল্প পরিমাণ অপৰু চাল ছেড়ে দিয়ে সারারাত ভিজতে দেন এবং তার মধ্যে একটি কচি আমের পাতাযুক্ত ডাল বসিয়ে রাখেন। পয়লা বৈশাখের সূর্য ওঠার আগে ঘর ঝাড়ু দিয়ে গৃহকত্রী সেই হাঁড়ির পানি সারা ঘরে ছিটিয়ে দেন। পরে সেই ভেজা চাল সকলকে খেতে দিয়ে আমের ডালের কচি পাতা হাঁড়ির পানিতে ভিজিয়ে বাড়ির সকলের গায়ে ছিটিয়ে দেন। তাদের বিশ্বাস, এতে বাড়ির সকলের কল্যাণ হবে। নতুন বছর হবে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির। এ অনুষ্ঠান এখন খুব একটা দেখা যায় না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায়ও নববর্ষের উৎসব হয়। নানা আনন্দময় ক্রীড়া-কৌতুকের মধ্য দিয়ে এরা বৈসুব, সাংগ্রাই ও বিজু তিনটিকে একত্র করে 'বৈসাবী' নামে উৎসব করে। গ্রাম-বাংলায় নববর্ষে নানা খেলাধুলারও আয়োজন করা হতো। মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জে হতো গরুর দৌড়, হা-ডু-ডু খেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোরগের লড়াই, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, নড়াইলে ষাঁড়ের লড়াই প্রভৃতি।
আমাদের নববর্ষ উৎসব '৫২ সনের ভাষা আন্দোলনের পর নতুন গুরুত্ব ও তাৎপর্য লাভ করে। আগে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের আয়োজনের কথা বলেছি। এছাড়া বাংলা একাডেমিতে বৈশাখী ও কারুপণ্য মেলা এবং গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা এলাকা পয়লা বৈশাখের দিনে লক্ষ মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি পরে ছেলেরা এবং নানা রঙের শাড়ি পরে নারীরা এই অনুষ্ঠানকে বর্ণিল করে তোলে। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলের গান, লোকসংগীত এবং বাঁশির সুরে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে সমবেত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। আনন্দময় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ এই পরিবেশ আধুনিক বাঙালি জীবনের এক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা।
উৎস নির্দেশ : |
---|
-- |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ পাকিস্তান আমল- ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত সময়। ➠ ছায়ানট- সংস্কৃতি চর্চার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। ➠ আবহমান- যা আগে ছিল এবং এখনও আছে। ➠ পুণ্যাহ- প্রজার কাছ থেকে খাজনা আদায়ের প্রতীকী অনুষ্ঠান। ➠ হালখাতা- পয়লা বৈশাখে আয়োজিত অনুষ্ঠান-বিশেষ। ➠ কবিগান- বাংলা গানের বিশেষ ধারা। দুজন গায়ক পালা করে একে অন্যের যুক্তি খণ্ডন করেন গানে গানে। ➠ কীর্তন- গুণ-বর্ণনা, ভক্তিমূলক গান। ➠ যাত্রা- প্রাচীন বাংলার দৃশ্যকাব্য, মঞ্চে নাট্যাভিনয়। |
পাঠের উদ্দেশ্য : |
---|
এই পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাঙালির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবে। এছাড়া তারা পাহাড়িদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সম্পর্কেও জানবে। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
বাংলা নববর্ষ বাঙালির খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। আজকের বাংলাদেশ যে স্বাধীন হতে পেরেছে, তার পেছনে নববর্ষের প্রেরণাও সক্রিয় ছিল। কারণ পাকিস্তানিরা নববর্ষ উদ্যাপনে বাধা দিয়েছিল এবং এর প্রতিবাদে বুথে দাঁড়িয়েছিল বাঙালিরা। বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ইতিহাস, বিশেষ করে নববর্ষ উদ্যাপনের ইতিকথা মিশে আছে। বাংলা সন কে, কবে প্রচলন করেছিলেন এ নিয়ে মতান্তর থাকলেও ধরে নেওয়া হয় সম্রাট আকবরের সময় এ সনের গণনা আরম্ভ হয়। পরে জমিদার ও নবাবেরা নববর্ষে পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড়, বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করে সাধারণ মানুষ এ উৎসবকে প্রাণে ধারণ করেছে। বাঙালি গৃহিণীরাও আমানিসহ নানা ব্রত-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বছরের প্রথম দিনটি উদ্যাপন করে থাকে। পাহাড়ি অবাঙালি জনগোষ্ঠীও বৈসাবি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের মতো করে নববর্ষ উদ্যাপন করে। |
লেখক-পরিচিতি : |
---|
শামসুজ্জামান খান ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে মানিকগঞ্জ জেলার চারিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ছিলেন। শামসুজ্জামান খান লেখক, গবেষক ও ফোকলোরবিদ হিসেবে দেশে-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো-প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘নানা প্রসঙ্গ’, ‘গণসঙ্গীত’, ‘মাটি থেকে মহীরূহ’, ‘আধুনিক ফোকলোর চিন্তা’, ‘ফোকলোর চর্চা’ ইত্যাদি। রম্য-রচনা: ‘ঢাকাই রজারসিকতা’, ‘গ্রাম বাংলার রজারসিকতা’ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্য: ‘দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ’, ‘লোভী ব্রাহ্মণ ও তেনালীরাম’, ‘ছোটদের অভিধান’ (যৌথ)। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন। শামসুজ্জামান খান ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই এপ্রিল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। |
কর্ম-অনুশীলন : |
---|
ক. তোমার এলাকার লোকজ সংস্কৃতির পরিচয় দাও (একক কাজ)। খ. বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে তুমি তোমার বিদ্যালয়ে কী ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে সে সম্পর্কে একটি রূপরেখা তৈরি করো (একক কাজ)। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
১. বাংলা সন চালু করা হয় কোন খ্রিষ্টাব্দে? ক. ১৫৫৬ খ. ১৫৬১ গ. ১৯৫৪ ✔ ঘ. ১৯৬৭ ২. সাল কথাটি কোন ভাষা থেকে এসেছে? ক. আরবি খ. বাংলা গ. ফারসি ✔ ঘ. উর্দু ৩. বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে যুক্ত কারণ- i. এ উৎসব আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ii. এ সময় আমরা নতুন কাপড় পরে আনন্দ করি। iii. এটি প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মাধ্যমে অর্জিত। নিচের কোনটি সঠিক? ক. i খ. i ও ii গ. i ও iii ✔ ঘ. ii ও iii উদ্দীপকটি পড় এবং ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও: টুটুল টেলিভিশনে মধ্যযুগের নববর্ষের অনুষ্ঠানের কিছু অংশ দেখছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে ধনী-গরিব সবাই জামা কাপড় পরে জমিদার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাচ্ছে। সেখানে তারা খাওয়া-দাওয়া শেষে জমিদারকে জমির খাজনা পরিশোধ করে ফিরে আসছে। ৪. টুটুলের দেখা অনুষ্ঠানটিকে কী বলা হয়? ক. হালখাতা খ. পুণ্যাহ ✔ গ. বৈসাবি ঘ. নবান্ন ৫. এ ধরনের অনুষ্ঠানের পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল কোনটি? ক. অর্থনৈতিক ✔ খ. রাজনৈতিক গ. সামাজিক ঘ. ধর্মীয় |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. ‘আধুনিক ফোকলোর চিন্তা’ গ্রন্থটির লেখক কে? উত্তর : ‘আধুনিক ফোকলোর চিন্তা’ গ্রন্থটির লেখক শামসুজ্জামান খান। ২. শামসুজ্জামান খান কত সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে যোগদান করেন? উত্তর : শামসুজ্জামান খান ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে যোগদান করেন। ৩. শামসুজ্জামান খান কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন? উত্তর : শামসুজ্জামান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ৪. কার সরকার বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করে? উত্তর : শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সরকার বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করে। ৫. কোনটি আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব? উত্তর : বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব। ৬. পাকিস্তান আমলে কাদেরকে নববর্ষ উৎসব পালন করতে দেওয়া হয়নি? উত্তর : পাকিস্তান আমলে পূর্ববাংলার বাঙালিদেরকে নববর্ষ উৎসব পালন করতে দেওয়া হয়নি। ৭. রাজধানী ঢাকার নববর্ষ উৎসবের দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ কী? উত্তর : রাজধানী ঢাকার নববর্ষ উৎসবের দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্রছাত্রীদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। ৮. সম্রাট আকবর কোন কোন সনের সমন্বয় সাধন করে বাংলা সন চালু করেন? উত্তর : সম্রাট আকবর চান্দ্র হিজরি সনের সঙ্গে ভারতবর্ষের সৌর সনের সমন্বয় সাধন করে বাংলা সন চালু করেন। ৯. বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদ্যাপনের সাথে সাথে নবাব ও জমিদাররা আর কী অনুষ্ঠান চালু করেন? উত্তর : বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদ্যাপনের সঙ্গে সঙ্গে নবাব ও জমিদাররা পুণ্যাহ অনুষ্ঠান চালু করেন। ১০. পুণ্যাহ অনুষ্ঠান পালন করার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? উত্তর : পুণ্যাহ অনুষ্ঠান পালন করার মূল্য উদ্দেশ্য ছিল খাজনা আদায়। ১১. চট্টগ্রামে প্রচলিত বলী খেলার প্রবর্তন কে করেন? উত্তর : চট্টগ্রামে প্রচলিত বলী খেলার প্রবর্তন করেন আবদুল জব্বার নামের এক ব্যক্তি। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. ধুমধামের সঙ্গে আমরা নববর্ষ উৎসব উদ্যাপন করি কেন? উত্তর : আমাদের জাতীয় উৎসব হিসেবে ধুমধামের সঙ্গে আমরা নববর্ষ উৎসব উদ্যাপন করি। ➠ পয়লা বৈশাখ বা নববর্ষ বাঙালির উৎসব। নববর্ষ শুধু আনন্দ-উৎসবই নয় সবার জন্য কল্যাণ কামনারও দিন। সবার সুখ শান্তি, সমৃদ্ধি এবং কল্যাণের প্রত্যাশা দিয়ে ধুমধামের সঙ্গে আমরা নববর্ষ উৎসব উদ্যাপন করি। ২. “সে বক্তব্য ছিল বাঙালির সংস্কৃতির ওপর এক চরম আঘাত” কেন? উত্তর : বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনকে পাকিস্তানি আদর্শের পরিপন্থী-বক্তব্যটি বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আঘাতস্বরূপ ছিল। ➠ বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষকে পাকিস্তান আমলে পালন করতে দেওয়া হতো না তা বাঙালি সংস্কৃতির ওপর চরম আঘাতস্বরূপ ছিল। বাংলাদেশে গভীর ভালোবাসা ও প্রাণের আবেগে পালন করা হয় বাংলা নববর্ষ উৎসব। তবে পাকিস্তান আমলে এটি মুসলমানের উৎসব নয় বলে বাঙালিকে এ উৎসব পালন করতে দেওয়া হতো না। যা ছিল বাঙালি সংস্কৃতির ওপর চরম আঘাত। ৩. বৈসাবী উৎসব কাকে বলে? ব্যাখ্যা করো। উত্তর : নতুন বছরের আগমনে উপজাতিরা বৈসুব, সাংগ্রাই ও বিজু এ তিনটি উৎসবকে একত্র করে যে উৎসব করে তাকে বৈসাবী উৎসব বলে। ➠ পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত উপজাতিরাও নববর্ষের উৎসব পালন করে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় নববর্ষের উৎসব নানা আনন্দময় ক্রীড়া-কৌতুকের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। কেননা পাহাড়ি উপজাতিদের প্রধান তিনটি অনুষ্ঠান বৈসুব, সাংগ্রাই ও বিজু। এ তিনটি অনুষ্ঠানকে একত্রিত করে তারা একটি উৎসব করে যার নাম দিয়েছে বৈসাবী। বৈসুব, সাংগ্রাই, বিজু-এর প্রথম তিনটি বর্ণের সমাহার বৈসাবী। ৪. ছায়ানটের নববর্ষ উদ্যাপন দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে কীভাবে? উত্তর : ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতিবছর রমনার পাকুড়মূলে ‘ছায়ানট’ আয়োজন করে আসছে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উৎসব, যা এখন দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠান। ➠ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট সূচনালগ্ন থেকেই সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিরতিহীনভাবে নববর্ষ পালন করে আসছে। আর জনগণের বিপুল আগ্রহ, উদ্দীপনাময় অংশগ্রহণে দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ছায়ানটের এ নববর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠান। ৫. বাংলা বছরকে ‘সন’ বা ‘সাল’ বলে উল্লেখ করা হয় কেন? উত্তর : মুগল সম্রাট আকবর যে সর্বভারতীয় ইলাহি সন প্রবর্তন করেছিলেন, তার ভিত্তিতে বাংলায় তার কোনো প্রতিনিধি বা মুসলমান সুলতান বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সে কারণেই বাংলা বছরকে ‘সন’ বা ‘সাল’ বলা হয়। ➠ অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতের ধারণা মুগল সম্রাট আকবর চান্দ্র হিজরি সনের সঙ্গে ভারতবর্ষের সৌর সনের সমন্বয় সাধন করেন এবং ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু করেন। ‘সন’ কথাটি আরবি আর ‘সাল’ হলো ফারসি। বর্তমানে সন এবং সাল দুটোই প্রচলিত। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. হালখাতা বলতে কী বোঝায়? গ. চৈতির গানে বাংলা নববর্ষের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?- ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের মূল সুরটিই যেন ফুটে উঠেছে।- উক্তিটি মূল্যায়ন করো। |
ক. মুগল সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করেন। খ. হালখাতা বলতে বোঝায়, পয়লা বৈশাখের যে অনুষ্ঠানে বাকির টাকা মিটিয়ে দেয়া হয়। ➠ পয়লা বৈশাখের হালখাতা অনুষ্ঠানে দোকানিদের সারা বছরে বাকিতে কেনা জিনিসপত্রের টাকা পরিশোধ করা হয়। সম্পূর্ণ সম্ভব না হলেও অন্তত আংশিক পরিশোধ করেও নতুন বছরের খাতা খোলা হয়। হালখাতা উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সাজসজ্জা করেন। গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করান। আগের মতো সাড়ম্বরে না হলেও এখনো হালখাতা উদযাপিত হয়। গ. চৈতির গানে পুরনো সমস্ত দুঃখ-শোক-গ্লানি ভুলে বাংলা নববর্ষের মাধ্যমে নতুন আনন্দে জগৎকে আলোকময় করার আহ্বান ফুটে উঠেছে। ➠ মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করার পর থেকে পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ নববর্ষ উদ্যাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়। পুণ্যাহ, হালখাতা, আমানি প্রভৃতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটে। বিগত দিনের দুঃখকষ্ট-কালিমা মুছে দিয়ে সুখসমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশায় নব সূর্যের আলোকচ্ছটায় চারদিক উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। নববর্ষে মানুষের এই চিরাচরিত প্রত্যাশা ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে সুচারুরূপে চিত্রিত হতে দেখা যায়। ➠ উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই নববর্ষে চৈতি মনের আনন্দে গান গেয়ে ওঠে। পুরাতন বছরের সব দুঃখ-শোক-জরা-গ্লানি স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে সূর্যের আগুনরাঙা আলোয় এই পৃথিবী শুচিশুভ্র করে তোলার আহ্বান গানের মধ্যে ফুটে উঠেছে। ঘ. “উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের মূল সুরটিই যেন ফুটে উঠেছে।” উক্তিটি যথার্থ। ➠ ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে আমরা বাংলা সনের ইতিহাস ও নববর্ষ উদ্যাপন সম্পর্কে নানা তথ্যের সন্ধান পাই। পুরনো দিনের দুঃখ-দৈন্য-হতাশা ঘুচিয়ে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়ে মহা ধুমধামের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ পালন করা হয়। হালখাতা, ব্রত-অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা, ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয় ফুটে ওঠে। ➠ উদ্দীপকেও আমরা দেখি রমনার পাকুড়মূলে সীমার সঙ্গে খালাতো বোন তন্বীর দেখা হয়। সীমা কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি সবার খোঁজ নিয়ে উপহার দেয়। নববর্ষের আনন্দ-প্রত্যাশা চৈতি গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে। বিগত দিনের সকল দুঃখ গ্লানি মুছে দিয়ে মঙ্গল আলোকে এই জগৎ আলোকিত করার প্রয়াস ব্যক্ত হয়েছে গানে। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের মূল সুরটি যেন ফুটে উঠেছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. “কিন্তু সে-বিজয় স্থায়ী হয়নি।”-কেন বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকের মেলা ও ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের রমনার মেলা এক নয়।”- উক্তিটি মূল্যায়ন করো। |
ক. ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু হয়। খ. শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের যুক্তফ্রন্ট সরকার বাংলা নববর্ষের দিনকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করলে বাঙালির যে বিজয় অর্জিত হয় তা স্থায়ী হয়নি। ➠ বাঙালির দীর্ঘদিনের দাবিকে সম্মান করে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট সরকার। বাংলা নববর্ষের দিনকে ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু স্বৈরচারী পাকিস্তান সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দিয়ে সামরিক শাসন জারি করলে নববর্ষের সরকারি ছুটি আবার বাতিল হয়ে যায়। অবশ্য পাকিস্তানি আমলে আর সরকারিভাবে নববর্ষ উদ্যাপিত না হলেও বেসরকারিভাবে তা উদ্যাপিত হয়েছে প্রবল আগ্রহ ও গভীর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে। গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের নববর্ষ উৎসব উদ্যাপনের দিক ফুটে উটেছে। ➠ বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এ উৎসবকে বুকে ধারণ করে প্রতিটি বাঙালি মেতে ওঠে নানা আয়োজনে। বর্ণিল আয়োজনগুলো প্রাণে প্রাণে আনন্দের শিহরণ জাগায়। আনন্দের পসরা যেন সাজিয়ে বসে। ➠ উদ্দীপকের সুমী দাদার সাথে মেলায় যায়। নাগরদোলায় চড়ে, বায়স্কোপ দেখে সে অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠে। মেলায় আছে মুড়ি, মুড়কিসহ নানা ধরনের খাবার। যা দোকানিরা থরে থরে সাজিয়ে বসে আছে। মেলার এসব অনুষঙ্গের বর্ণনা আছে আলোচ্য প্রবন্ধে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে নববর্ষ উৎসব উদ্যাপনের দিকটি ফুটে উঠেছে। ঘ. ‘উদ্দীপকের মেলা ও ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের রমনার মেলা এক নয়।’ উক্তিটি যথার্থ। ➠ বাঙালিরা উৎসবপ্রিয় জাতি। এখানে বারো মাসে তেরো পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। নানা বর্ণিল আয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন আমেজে এ সকল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে যেমন অনুষ্ঠিত হয় নববর্ষ উৎসব তেমনি রমনার মেলাও। নামের মতো এ দুই মেলায় রয়েছে অনেক ভিন্নতা। ➠ উদ্দীপকের মেলার নাম নববর্ষ উৎসব। যা পয়লা বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ নাগরদোলা ও বায়স্কোপ। সেই সাথে মুড়ি, মুড়কিসহ হরেক রকম খাবারের আয়োজন। থাকে গ্রামের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র। কিন্তু রমনার মেলায় এসব কিছু থাকে না। থাকে রমনার পাকুড়মূলে নববর্ষের উৎসব। যার আয়োজন করে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ১৯৬১ সাল থেকে অত্যন্ত জনপ্রিয় এ মেলায় নববর্ষকে বরণ করা হয় ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরে গান-বাজনার মাধ্যমে। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকের মেলা ও ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের রমনায় মেলা একই দিনে অনুষ্ঠিত হলেও এক নয়। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. আমানিকে আঞ্চলিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান বলা হয় কেন? গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ রচনায় উল্লিখিত কোন সর্বজনীন উৎসবের পরিচয় রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. উল্লিখিত উৎসব ব্যতীত বাঙালির আরও উৎসবের পরিচয় পঠিত রচনায় রয়েছে- বক্তব্যের তাৎপর্য বিচার করো। |
ক. মুগল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন। খ. প্রাচীনকালে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে আমানি অনুষ্ঠান প্রচলিত হওয়ার কারণে আমানিকে আঞ্চলিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান বলা হয়। ➠ আমানি মূলত কৃষকের পারিবারিক অনুষ্ঠান। পরিবারের গৃহকর্ত্রী চৈত্র মাসের শেষদিনের সন্ধ্যারাতে এক হাঁড়ি পানিতে স্বল্প পরিমাণ অপক্ব চাল ছেড়ে দিয়ে সারারাত ভিজতে সে এবং তার মধ্যে একটি কচি আমের পাতাযুক্ত ডাল বসিযে রাখেন এবং পয়লা বৈশাখের সূর্য ওঠার আগে ঘর ঝাড়ু দিয়ে সেই হাঁড়ির পানি সারা ঘরে ও বাড়ির সকলের গায়ে ছিটিয়ে দেন। শুরুর দিকে আমানি অনুষ্ঠানটি নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে পালন করা হলেও এখন সিংহভাগ কৃষকের ঘরে আমানি অনুষ্ঠান বেশ গুরুত্বের সাথেই পালিত হয়। গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ রচনার যে সর্বজনীন উৎসবের উল্লেখ রয়েছে তার নাম বৈশাখী ➠ বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ উদ্যাপন। বৈশাখের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলা সব বয়সের মানুষের মনের খোরাক যেমন জোগায় তেমনি পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও। ➠ উদ্দীপকে বটতলায় মেলা বসেছে। মেলায় ছোটরা খেলনা কিনছে, নাগরদোলা চড়ছে। এ চিত্র দেখা যায়, বাংলা নববর্ষ রচনার সর্বজনীন বৈশাখী মেলার বর্ণনায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি বাংলা নববর্ষ রচনায় সর্বজনীন বৈশাখী মেলার পরিচয় বহন করে। ঘ. ‘উল্লিখিত উৎসব ব্যতীত বাঙালির আরও উৎসবের পরিচয় পঠিত রচনায় রয়েছে’- বক্তব্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ➠ বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ উদ্যাপন। নানা ভাবে নানা আয়োজনে দেশের প্রায় সর্বত্রই বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হয়। সব ধরনের শ্রেণিপেশার মানুষের আয়োজনে এসব মেলা অনেক উপভোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়। তবে স্থান ও বয়স ভেদে থাকে আয়োজনের ভিন্নতাও। ➠ উদ্দীপকের উৎসবে দেখা যায়, বটতলায় অনেক মানুষ জমেছে। ছোটরা কিনছে খেলনা, বড়রা কিনছে নিত্যপণ্য। রয়েছে নাগরদোলাসহ নানা আয়োজন। এ চিত্র বৈশাখী মেলাকে নির্দেশ করে। এ উৎসব ব্যতীত ‘বাংলা নববর্ষ’ রচনায় আরও উৎসবের পরিচয় রয়েছে। যেমন রমনার পাকুড়মূলে ছায়ানট আয়োজিত নববর্ষ উৎসব হালখাতা, পুণ্যাহ, জব্বারের বলী খেলা, মোরগ লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই প্রভৃতি। ➠ তাই উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকে কেবল বৈশাখী মেলার বর্ণনা রয়েছে। অধিকন্তু পঠিত রচনায় রয়েছে আরও নানা উৎসবের বর্ণনা। এ বিচারে প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠানটি এখন আর তেমন সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হয় না কেন? গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘সবকিছু মিলে দেশটা যেন হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।’- উদ্দীপক ও ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
ক.‘সাল’ কথাটি ফরসি ভাষা থেকে এসেছে। খ. বাকিতে বেচাকেনা এখন আর আগের মতো না হওয়ায় হালখাতাও আগের মতো সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হয় না। ➠ পয়লা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা। এ অনুষ্ঠানটি করতেন ব্যবসায়ীরা। এ দিন তারা নতুন খাতা খুলতেন। কৃষিপ্রধান দেশে ফসলের মৌসুমে ফসল বিক্রির টাকা না এলে কৃষকসহ প্রায় কেউই নগদ টাকার মুখ দেখতে পেত না। তাই কৃষকদের দোকানিদের কাছ থেকে সারাবছর বাকিতে জিনিসপত্র কিনতে হতো। হালখাতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা দোকানিদের বাকি মিটিয়ে দিত। গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের নববর্ষ উদ্যাপনের দিকটিই ফুটে উঠেছে। ➠ নববর্ষের উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব। প্রাণে প্রাণে অপূর্ব সম্মিলনে নানা আয়োজনে এ উৎসব পালিত হন। বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে দেশের অধিকাংশ এলাকায় শহর-বন্দর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জ পিছিয়ে থাকে না এদিন। অতীতের সবকিছু ভুলে নতুনের আবাহনে সরব হয়ে ওঠে সবাই। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, পুরাতনকে দূরে সরিয়ে নতুনকে গ্রহণ করার প্রস্তুতি। সবাই নতুন জামাকাপড় পরেছে। বটের তলায় জড়ো হয়ে গান গাইছে, হাততালি দিচ্ছে, নানা আয়োজনে অংশ নিচ্ছে। সবকিছুতে উৎসবমুখর পরিবেশ। অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বর্ষবরণের আয়োজনে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে নববর্ষ উদ্যাপনের দিকটি ফুটে উঠেছে। ঘ. ‘সবকিছু মিলে দেশটা যেন হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।’-মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ উদ্যাপন। এ উৎসব আয়োজনে থাকে প্রাণের ছেঁায়া, থাকে জীবনের জয়গান। প্রতিটি প্রাণ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেতে ওঠে বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে। এসবের মধ্য দিয়ে পুরো দেশ যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পয়লা বৈশাখে। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, নতুনের প্রাণের মহড়া। নববর্ষে সবাই পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য নতুন জামাকাপড় পরেছে। বটের তলায় সমবেত হয়ে গান গাইছে, হাততালি দিচ্ছে, নানা আয়োজনে অংশ নিচ্ছে। সকলে ভেসে যাচ্ছে প্রাণের বন্যায়। ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধেও একই চিত্র মূর্ত হয়ে উঠেছে। যদিও আলোচ্য প্রবন্ধে উৎসবের আধিক্য লক্ষণীয়। অর্থাৎ উদ্দীপকের উৎসব ছাড়াও রমনার পাকুড়মূলে ছায়ানটের নববর্ষের উৎসব, হালখাতা, পুণ্যাহ, জব্বারের বলী খেলাসহ অনেক উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। তবে সবকিছুতে উৎসবমুখর পরিবেশের চিত্রই ফুটে উঠেছে। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে উৎসব আয়োজনের মাত্রা কমবেশি থাকলেও সবকিছু মিলে দেশটা যেন হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. লেখকের মতে গ্রামবাংলায় বার্ষিক মেলাগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল? গ. মাহমুদ সাহেবের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে বাঙালি চেতনার যে দিকটি ফুটে উঠেছে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকে বাংলা সংস্কৃতির বিকাশের বিষয়টি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো। |
ক. বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ছায়ানট। খ. গ্রামবাংলার বার্ষিক মেলাগুলো মানুষের স্থবির জীবনযাত্রায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পরিণত হতো বলে মেলাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ➠ আগে সারা দেশে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। বিভিন্ন বার্ষিক মেলা থেকেই মানুষ সারা বছরের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে রাখত। নানা সংবাদ আদান-প্রদান নানা বিষয়ে মতবিনিময়েরও আদর্শ স্থান ছিল এইসব মেলা। বার্ষিক বিনোদনের জায়গাও ছিল এই মেলা। ফলে এই মেলাগুলোকে কেন্দ্র করে মানুষের স্থবির জীবন গতিশীল হয়ে উঠত। এ কারণেই লেখক গ্রামবাংলার বার্ষিক মেলাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন। গ. মাহমুদ সাহেবের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাঙালি চেতনার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা হলো দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। ➠ বাঙালির রয়েছে হাজার বছরের পুরনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বাংলা সন প্রবর্তিত হওয়ার পর পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন বাঙালি জীবনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। নববর্ষকে কেন্দ্র করে এ বাংলায় অনুষ্ঠিত হয় নানা লোকজ অনুষ্ঠান। হালখাতা, আমানি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। গত বছরের দুঃখ-শোক ভুলে সূর্যের নতুন আলো মেখে জগৎ পবিত্র করার প্রত্যয়ে উদ্ভাসিত হয় সবাই। সহস্র প্রাণের উজ্জীবিত শক্তি রূপান্তরিত হয়ে ওঠে মঙ্গলকারী অবিনাশী শক্তিতে। ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাঙালির এই সম্মিলিত প্রয়াসের জয়গান সূচিত হতে দেখি। ➠ উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই মাহমুদ সাহেব তার ছেলেকে বাঙালির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যের কথা জানাচ্ছেন। বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ইতিহাস, বিশেষ করে নববর্ষ উদ্যাপনের কথা মিশে আছে। আজকের বাংলাদেশ যে স্বাধীন হতে পেরেছে, তার পেছনে নববর্ষের প্রেরণাও সক্রিয় ছিল। ঘ. উদ্দীপকে বাংলা সংস্কৃতির বিকাশের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। ➠ ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাংলা সনের ইতিহাস ও নববর্ষ উদ্যাপনের উল্লেখ পাই। বিগত দিনের দুঃখ, দৈন্য-হতাশা ঘুচিয়ে পবিত্র, সুখী জীবনের প্রত্যাশায় নতুন সূর্যকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। হালখাতা, ব্রত অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা, ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙলা ও বাঙালি সংস্কৃতির সমন্বয়ে সূচিত হয় মঙ্গলশক্তি। ➠ উদ্দীপকে সংস্কৃতি সচেতন মাহমুদ সাহেব তার ছেলে মিতুলকে বাংলাদেশ ও বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। বাংলাদেশের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি, সারির মতো লোকসংগীতসহ মেলা ও বিবিধ লোকজ খেলা সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য ছেলেকে বিদেশি অনুষ্ঠানের পরিবর্তে বাংলা অনুষ্ঠান দেখার পরামর্শ দিয়েছেন। ➠ নববর্ষ উৎসব উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালি বাংলা সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালনের শক্তি খুঁজে পায়। আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটে নববর্ষের আয়োজনে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. পুণ্যাহ বলতে কী বোঝায়? গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত নববর্ষ উদ্যাপনের কোন অনুষ্ঠানের পরিচয় ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘নববর্ষের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান মানুষের জীবনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে’- উদ্দীপক ও ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো। |
ক. কুস্তি খেলাকেই বলা হয় বলী খেলা। খ. খাজনা আদায়ের অনুষ্ঠানকে বলা হয় পুণ্যাহ। ➠ বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উপলক্ষ্যে নবাব ও জমিদাররা চালু করেন ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান। পয়লা বৈশাখে প্রজারা নবাব বা জমিদার বাড়িতে আমন্ত্রিত হতেন। তাদের মিষ্টিমুখ করানো হতো, থাকত পান-সুপারির আয়োজন। তবে মূল উদ্দেশ্য ছিল খাজনা আদায়। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ায় এ অনুষ্ঠানও লুপ্ত হয়ে গেছে। গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত বাংলা নববর্ষের একটি প্রধান অনুষ্ঠান বৈশাখী মেলার পরিচয় ফুটে উঠেছে। ➠ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখের প্রথম দিনে বার্ষিক মেলা বসে। আগের দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় মানুষের বিনোদন ছিল খুব সামান্য। তাই এসব মেলা অনেক ধুমধামের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতো। দিনবদল হলেও মেলার আবেদন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। এখনো অনেক মেলা বসে যা বেশ পুরনো। মাটি, বাঁশ-বেত, কাঁসার তৈরি খেলনাসহ তৈজসপত্রের পসরা নিয়ে দোকান বসে। থাকে নানারকম মুখরোচক খাবার, কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, পুতুলনাচ, নাগরদোলাসহ নানা আনন্দ আয়োজন। ➠ উদ্দীপকে বকুলপুর গ্রামে পয়লা বৈশাখে বার্ষিক মেলাটি বাঁশি, মাটির পুতুল, বাঁশের ঝুড়ি ইত্যাদির পসরা বসেছে। পুতুলনাচ, নাগরদোলা ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রামের বৈশাখী মেলার পরিচয় ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ বার্ষিক মেলার পরিচয় উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। ঘ. ‘নববর্ষের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান মানুষের জীবনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে’ প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও উৎসব উদ্যাপনের পরিচয় মেলে। বিগত দিনের দুঃখ-দৈন্যদশা হতাশা ঘুচিয়ে সুখশান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশায় সাড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উৎসব পালিত হয়। হালখাতা, ব্রত অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা, ঐতিহ্যবাহী খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এত বিশাল আয়োজনে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন সূচিত হয়। ➠ উদ্দীপকেও আমরা লক্ষ করলে দেখতে পাব যে, মেলাকে কেন্দ্র করে ছোট একটা গ্রাম আনন্দমুখর হয়ে উঠেছে। একটি মাত্র অনুষ্ঠান ছোট-বড় সবার মনে আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। সবার মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। নববর্ষ উপলেক্ষ্য আয়োজিত অনুষ্ঠান শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। সব মানুষকে প্রাণের শক্তিতে বলীয়ান করে তুলেছে। বাংলা নববর্ষের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবোধ অনন্যতা পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনেও নববর্ষের প্রেরণা সক্রিয় ছিল। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, নববর্ষের ‘বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান মানুষের জীবনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে’। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. নববর্ষ উৎসব কীভাবে জাতীয় উৎসবে পরিণত হলো? গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের কোন সুরটি ধ্বনিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের খণ্ডংশের ইঙ্গিত বহন করে।” মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো। |
ক. ‘কীর্তন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে গুণ বর্ণনা। খ. ১৯৬৭ সালে রমনার পাকুড়মূলে ছায়ানট অনুষ্ঠান জনগণের বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনায় অংশগ্রহণে জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। ➠ পাকিস্তানি শাসনামলে এ সরকারের দমননীতির কারণে বারবার বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু জনগণ নিজেদের মতো করে ঠিকই প্রবল আগ্রহ ও গভীর উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে নববর্ষ পালন করে গেছে। এর ধারাবাহিকতায় রমনার পাকুড়মূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুর“ করে। পরে দেশের জনগণের অংশগ্রহণে ক্রমেই এ অনুষ্ঠান পরিণত হয় দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানে। গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের বাঙালি জাতিসত্তার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুর ধ্বনিত হয়েছে। ➠ ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, পাকিস্তান শাসনামলে মুসলিম সংস্কৃতির পরিপন্থি বলে নববর্ষ পালন করতে দেওয়া হয়নি। যা বাঙালি সংস্কৃতির ওপর ছিল চরম আঘাত। নববর্ষ উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে র“খে দাঁড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। একসময় বাঙালি জাতীয়তাবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। এ ঐক্যবদ্ধতার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে নববর্ষ। এখনো নববর্ষ উৎসব হিন্দু-মুসলমান, সাদা-কালো বিভেদ ভুলে দেশে ও বিদেশের সকল বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে উদ্যাপন করে। উদ্দীপকে মূলত ঐক্যবদ্ধতার সুরটিই ধ্বনিত হয়েছে। ➠ উদ্দীপকে বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষা নদীয়া জেলার গড়াইডুবির বৈশাখী মেলার কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে বাংলা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দু’দেশে পড়লেও বাঙালি হিসেবে তারা একই জাতিসত্তা। তাই নববর্ষের মেলায় সীমান্ত উন্মুক্ত করা হলে দুই বাংলার মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সীমান্ত, ধর্ম সব কিছু ছাপিয়ে এক বাঙালি পরিচয় বড় হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার যে সুর ধ্বনিত হয়েছে তা উদ্দীপকটিতে প্রতিফলিত হয়েছে। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশের ইঙ্গিত বহন করে” মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা ব্যক্ত করা হয়েছে। এ উৎসবের উৎপত্তি, প্রকৃতি এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচ্য প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে ধর্ম, বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষে সব মানুষের একই চেতনায় উদ্ভাসিত হওয়ার দিকটিও প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে। ➠ অপরপক্ষে, উদ্দীপকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের গড়াইডুবির বৈশাখী মেলার কথা বলা হয়েছে। দু’দেশের মাঝে সীমানা থাকা সত্ত্বেও দুই বাংলার মানুষ সব বিভেদ ভুলে নববর্ষের বৈশাখী মেলায় অংশগ্রহণ করে। ধর্ম বা সীমানা এখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। এর মধ্য দিয়ে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের ঐক্য চেতনার বিষয়টিরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। প্রবন্ধে উল্লিখিত অন্যান্য বিষয়ের ইঙ্গিত উদ্দীপকে অনুপস্থিত। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশের ইঙ্গিত বহন করে মাত্র। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বলতে কী বোঝ? গ. উদ্দীপকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বাঙালির ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টার সঙ্গে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের কোন বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ নিরূপণ করো। ঘ. ‘বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে নববর্ষ উদ্যাপনের ইতিকথা’- ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোক মন্তব্যটি যাচাই করো। |
ক. বাংলা প্রথম মাসের নাম বৈশাখ। খ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বাংলা নববর্ষের যে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় তা মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিত। ➠ নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় নববর্ষ। রাজধানী ঢাকার নববর্ষ উৎসবের দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আয়োজনে অনুষ্ঠিত মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা মুখোশ, কাটুর্ন এবং যেসব প্লাকার্ড বহন করে তাতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চিত্র, আবহমান বাঙালিত্বের পরিচয় এবং সমকালীন সমাজ রাজনীতির সমালোচনা ফুটে ওঠে। এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিত। গ. উদ্দীপকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বাঙালির ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টার সঙ্গে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের পাকিস্তান সরকারের নববর্ষ উদযাপন করতে না দেওয়ার বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ। ➠ ‘বাংলা নববর্ষ’ বাঙালির প্রধান জাতীয় উৎসব। কিন্তু পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার বাঙালিকে এ উৎসব পালন করতে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, এটা পাকিস্তানি আদর্শের পরিপন্থী। যা ছিল বাঙালির সংস্কৃতির ওপর এক চরম আঘাত। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল বাঙালি নববর্ষের দিন জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে, কিন্তু সে দাবিও অগ্রাহ্য হয়েছে। আর এর মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার অগ্রযাত্রাকেই থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ➠ উদ্দীপকে বর্ণিত বর্তমান স্বাধীন দেশে জাঁকজমক ও প্রবল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়। বাঙালিয়ানার ষোলোকলা প্রকাশ পায় এ দিন। কিন্তু প্রবন্ধের পাকিস্তানি শোষকদের মতো উদ্দীপকেও সক্রিয় তাদেরই মদদপুষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল একটি গোষ্ঠী। যারা নববর্ষের ফুলে ফুলে রঙিন অনুষ্ঠানে বোমা ফাটিয়ে মানুষ মেরে বন্ধ করে দিতে চায় বাঙালির অগ্রযাত্রার পথকে। তাই বলা যায়, প্রবন্ধের পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির প্রচেষ্টা সাদৃশ্যপূর্ণ। ঘ. বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে নববর্ষ উদ্যাপনের ইতিকথা মিশে আছে। ➠ স্বাধীনতাপূর্ব পাকিস্তানি শাসক কর্তৃক নববর্ষ উদ্যাপনে বাধা দেওয়া হয়। এটি ছিল বাঙালির সংস্কৃতির ওপর চরম এক আঘাত। বাঙালি নববর্ষকে ছুটির দিন ঘোষণার দাবি জানায়। সে দাবিও অগ্রাহ্য হয়। ফলে বাঙালি ফুঁসে ওঠে। সোচ্চার হয় প্রতিবাদে। আর এ আন্দোলনের পথ ধরেই আসে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তি। দেশ স্বাধীন হলেও পরাজিত শক্তির কিছু দোসর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চারদিকে। ➠ আর উদ্দীপকে সে চিত্রটিই ফুটে উঠেছে। প্রাণের উচ্ছ্বাসে নববর্ষে সবাই যখন মেতেছে বৈশাখী আনন্দে তখন তাদেরই কিছু দোসর বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে থামিয়ে দিতে চাইছে বাঙালির অগ্রযাত্রাকে। কিন্তু বীর বাঙালি তাদের চোখ রাঙানিকে ভয় পায়নি। তারপরও রমনা বটমূলে সমবেত হয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ➠ আগের ন্যায় বর্তমানেও নববর্ষের ওপর আঘাত আসছে প্রতিক্রিয়াশীলদের পক্ষ থেকে। আর সংগ্রামের ধারায় সে আঘাত পার হয়ে সামনে হাঁটছে বাঙালি। ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধ আর উদ্দীপকে সেই চিত্রটিই ফুটে উঠেছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো। গ. রামদাস ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত বাংলা নববর্ষের কোন অনুষ্ঠানটি পালন করেন? ব্যাখ্যা করো। ঘ. উক্ত অনুষ্ঠানটিই কি বাংলা নববর্ষে আয়োজিত একমাত্র অনুষ্ঠান? ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। |
ক. পয়লা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা। খ. পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল খাজনা আদায়। ➠ পয়লা বৈশাখে প্রজারা নবাব বা জমিদার বাড়িতে আমন্ত্রিত হতেন, তাদের মিষ্টিমুখও করানো হতো। পান-সুপারিরও আয়োজন থাকত। তবে তার মূল্য উদ্দেশ্য ছিল খাজনা আদায়। গ. রামদাস ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত বাংলা নববর্ষের হালখাতা অনুষ্ঠানটি পালন করেন। ➠ পয়লা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা। এই অনুষ্ঠানটি করতেন ব্যবসায়ীরা। পয়লা বৈশাখে এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ব্যবসায়ীরা তাদের পাওনা আদায় করে নিত। কৃষকরা সারাবছর বাকিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনত। পয়লা বৈশাখে হালখাতার দিনে কৃষকরা দোকানিদের বাকির টাকা মিটিয়ে দিতেন। উদ্দীপকে এ বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। ➠ উদ্দীপকে রামদাস বাকি আদায় করার জন্য সাত দিন পর্যন্ত হালখাতা চালু রাখেন। কারণ, ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা যারা তার দোকান থেকে মাল নিয়ে বিক্রি করে তারাও নিজস্ব দোকানে পয়লা বৈশাখে হালখাতার আয়োজন করে। তিনি হালখাতায় সংগৃহীত টাকা নিয়ে রামদাসের দোকানে হালখাতা করতে আসেন। আর যারা সরাসরি তার দোকান থেকে খুচরা কেনেন তারা যদি কোনো কারণে ঐ দিন পরিশোধ করতে না পারেন তার পরদিন করেন। তাই বলা যায়, রামদাস নববর্ষের হালখাতা অনুষ্ঠানটি পালন করেন। ঘ. হালখাতা অনুষ্ঠানটিই বাংলা নববর্ষে আয়োজিত একমাত্র অনুষ্ঠান নয়। ➠ ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, জমিদার ও নবাবেরা নববর্ষে পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড় এবং বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করা হয়। বাঙালির গৃহিণীরাও আমানিসহ নানা ব্রত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বছরের প্রথম দিনটি উদযাপন করে। ➠ উদ্দীপকে রামদাস পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু করে সাত দিন পর্যন্ত দোকানে একটি অনুষ্ঠান করেন। এ অনুষ্ঠানের সময় তিনি ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ করেন এবং রং-বেরঙের কাগজ দিয়ে দোকান সাজান। ক্রেতারা দোকানে উপস্থিত হয়ে বকেয়া পরিশোধ করেন এবং মিষ্টিমুখ করেন। এ অনুষ্ঠানটি বাংলা নববর্ষের হালখাতা অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এ অনুষ্ঠানটি ছাড়াও নববর্ষে আরও অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। ➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, হালখাতা অনুষ্ঠানটি বাংলা নববর্ষে আয়োজিত একমাত্র অনুষ্ঠান নয়। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের কোন অংশটির সাদৃশ্য রয়েছে? নির্ণয় করো। ঘ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটে উঠেছে- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. লোকজ সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ? গ. ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বর্ণিত বৈশাখী মেলার সঙ্গে কালামের দেখা মেলার সাদৃশ্য বর্ণনা করো। ঘ. মেলা যেন মানুষের মিলনমেলা, ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |