আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে'-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এই কথাগুলিতে শিল্পকলার মূল
সত্যটি প্রকাশ পেয়েছে। সব মানুষই জীবনের এই আনন্দকে পাওয়ার জন্যে কত রকম চেষ্টা
করে যাচ্ছে। আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ। আনন্দকে আমরা বুঝি
রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ ইত্যাদির সাহায্যে, ইন্দ্রিয়সকলের সাহায্যে। মানুষ যখন
আনন্দ পায় তখন সে তার মনকে প্রকাশ করতে চায়-নানা রূপে। তাই সৃষ্টি হলো
চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক। পুরাকালের গুহামানুষ
থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে সুন্দরকে অন্য
মানুষের মধ্যে বিস্তার করতে চেয়েছে। তাই সৃষ্টি হয়েছে নানান আঙ্গিকের শিল্পকলা।
যেমন- চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নৃত্যকলা, সংগীতকলা, অভিনয়কলা, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য
ইত্যাদি কলাভঙ্গি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ তার নিত্য নতুন অবদান রেখে চলেছে
শিল্পকলার বিস্তীর্ণ অঙ্গনে। শিল্পকলার একটি অস্পষ্ট অর্থ আমরা বুঝতে পারি কিন্তু
শিল্পকলার সঠিক অর্থ কী আর শিল্পকলার গুণাগুণ কী, এই প্রশ্ন যদি কেউ করে, তাহলে
উত্তর দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন গান শুনে ভালো লাগে, ছবি দেখে ভালো লাগে, কিন্তু
ভালো লাগে কেন? এই প্রশ্ন নিয়ে মানুষের মন চিন্তা-ভাবনা করতে লাগল। দেখা গেল, সক
শিল্পকলায় রূপ আছে, ছন্দ আছে, সুর আছে, রং আছে, বিশেষ গড়ন আছে, সবকিছুকে সাজাবার
একটি সুবিন্যস্ত নিয়ম আছে। এই নিয়মটি লুকিয়ে থাকে, নিজেকে প্রকাশ করে না,
সুন্দরের মধ্যে মিলেমিশে একটা বন্ধন সৃষ্টি করে। নিয়মটি না জানলেও সুন্দরকে চেনা
যায়। একটি উপমা দেয়া যাক। পৃথিবীর সব ফুলই একই নিয়ম মেনে ফুল নাম পেয়েছে। আমরা
দেখে বলি সুন্দর। এর নিয়মটি হলো, একই বিন্দু থেকে সকল পাপড়ি বিন্দুর চারিদিকে
ছড়িয়ে থাকবে। কিন্তু এক নিয়ম মেনেই কত রকম ফুল। নিয়ম মেনেও ফুল স্বাধীনভাবে ফুটে
ওঠে। তোমাদের এখন সুন্দরের নিয়ম জানতে হবে না, সুন্দর লাগলেই সুন্দর বলবে। সুন্দর
দেখতে দেখতেই একদিন সুন্দরের বিশেষ বিশেষ নিয়মগুলি জানতে পারবে। শুধু এইটুকু জেনে
রাখো, সুন্দরকে জানার যে জ্ঞান তার নাম 'নন্দনতত্ত্ব'। নন্দনতত্ত্ব মানে সুন্দরকে
বিশ্লেষণ করা, সুন্দরকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা। সব সুন্দরের সৃষ্টির মধ্যেই
একটা রূপ আছে, তার নাম স্বাধীনতা-অপর নাম যা খুশি তাই করা। যে কাজ সকলকে আনন্দ
দেয় খুশি করে, তাই সুন্দর। স্বার্থপর বা অসংগত আমি-র খুশি নয়, অনেক মনে খুশির
বিস্তার করা আমি। অন্ধকার ঘর আলোকিত করবার জন্যে নিয়ম মেনে প্রদীপ জ্বালাতে হয়,
ঘরে অসংগত আগুন লাগিয়ে ঘর আলোকিত করা নয়।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে, কত রকম জিনিস প্রয়োজন হয়-ঘটি, বাটি থেকে বিছানাপত্র। শুধু
প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না-মানুষের মন বলে, প্রয়োজন মিটলেই হবে না তাকে
সুন্দর হতে হবে। যেমন নকশি কাঁথা, রাত্রে বিছানায় গায়ে দিয়ে শোওয়ার জন্য একটি
সামগ্রী-সেটা তো সুন্দর-অসুন্দর হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই প্রয়োজনের জিনিসকে
সুঁই আর রঙিন সুতা দিয়ে অপূর্ব নকশা করে সাজিয়েছে গাঁয়ের বধুরা। নকশিকাঁথা দেখলেই
সুন্দর লাগে, জিনিসটির প্রয়োজনের কথা মনেই পড়ে না। এ কারণেই সকল জ্ঞানী মানুষ বলেন,
সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে। প্রয়োজনের কাজ মিটল তো শরীরকে তৃপ্ত করল, আর
প্রয়োজনের বাইরে যে সুন্দর তা মনকে তৃপ্ত করল। অর্থাৎ প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলিয়েই
মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ হয়।
এবার বিভিন্ন শিল্পকলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত করে কিছু বলা যাক। ছবি আঁকা। বিশ্বের সকল
দেশেই শিশুরা ছবি আঁকে। বাংলাদেশের ছোটরাও খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পারে। ছবি আঁকা
মানে 'দেখা শেখা'। ছোটরা প্রকৃতিকে দেখে, মা-বাবা, ভাই-বোন মিলিয়ে একটা সমাজকে
দেখে। প্রতিদিনের দেখা বিষয়বস্তু, রং, গড়ন, আকৃতি শিশুমনের কল্পনার সঙ্গে
মিলেমিশে যায়। নানা রকম গল্প শুনে, দেশের কথা শুনে, কবিতা ছড়া শুনেও শিশু মনে ছবি
তৈরি হতে থাকে। এ সকল দেখা-অদেখা বস্তু নিয়ে শিশুরা ছবি আঁকে কল্পনা-বাস্তব
মিলিয়ে। নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতে শেখে। সকল শিল্পকলার মধ্যে কতকগুলি মূল
বস্তু থাকে যেমন-বিন্দু, রেখা, রং, আকার, গতি বা ছন্দ, আলোছায়া গাঢ়-হালকার
সম্পর্ক ইত্যাদি। এই সকলের মিলনেই হয় ছবি বা ভাস্কর্য। আর আছে মাধ্যম, অর্থাৎ কোন
মাধ্যমে শিল্পসৃষ্টি হয়েছে। চিত্রকলার মাধ্যম হলো কালি-কলম, জল রং, প্যাস্টেল রং,
তেল মিশ্রিত রং ইত্যাদি। ছোটদের জন্য প্যাস্টেল ও জল রং ব্যবহার করা সহজ হয়।
বাংলাদেশে পুরাকালে জল রং দিয়েই ছবি আঁকত শিল্পীরা। পুরাতন পুথিতে তালপাতায় আঁকা
ছবির বহু নিদর্শন আছে। বর্তমানেও জল রং অত্যন্ত প্রিয়, তবে এখন আর কেউ তালপাতায়
আঁকে না, কাগজে আঁকে।
ভাস্কর্য নরম মাটি দিয়ে কোনো কিছুর রূপ দেয়া বা শক্ত পাথর কেটে কোনো গড়ন বানানো।
বিশেষ এক ধরনের ছাঁচ বানিয়ে গলিত মেটাল ঢেলে গড়ন বানানো, এই ধরনের কাজকে বলে
ভাস্কর্য। আমাদের দেশে পোড়ামাটির ভাস্কর্য খুব প্রসিদ্ধ ছিল। আমাদের সংস্কৃতি বা
কালচার গড়ে উঠেছে নানান শিল্পকলার কারুকাজ দিয়ে। সকল শিল্পীর একটি দায়িত্ব
আছে-দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা। বাংলায় একটি কথা আছে-‘কালি কলম মন, লেখে তিন
জন’-কালি মানে দেশের ঐতিহ্যে হাজার বছর প্রবাহিত কালি, কলম হলো শিল্পসৃষ্টির
বর্তমান সরঞ্জাম, আর মন হলো বর্তমান যুগের সঙ্গে ঐতিহ্যের মিল করে নিজেকে প্রকাশ
করার মন। একটি দেশকে জানা যায় দেশের মানুষকে জানা যায় তার শিল্পকলা চর্চার ধারা
দেখে। শিল্পকলা চর্চা সকলের জন্য অপরিহার্য।
চিত্রকর: নাফিসা সেলিম, ৬ষ্ঠ শ্রেণি
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের উৎস নির্দেশ :
--
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের শব্দার্থ ও টীকা :
➠ ভুবন- পৃথিবী, জগৎ, ভূমণ্ডল।
➠ শিল্পকলা- সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নাচ, গান প্রভৃতি এর
অন্তর্ভুক্ত।
➠ রস- সাহিত্য পাঠ করে বা ছবি দেখে মনে যে অনুভূতি জাগে।
➠ পুরাকাল- প্রাচীনকাল, অনেক আগেকার সময়।
➠ গুহা- মানুষ প্রাচীনকালে গুহায় বসবাসকারী মানুষ।
➠ ভাস্কর্য- পাথর, ধাতু, কাঠ প্রভৃতি দিয়ে বানানো শিল্পকর্ম।
➠ স্থাপত্য- গৃহ বা ভবন নির্মাণের কাজ, নির্মাণশিল্প।
➠ প্রাত্যহিক- প্রতিদিনের।
➠ নকশিকাঁথা- সুই-সুতা দিয়ে নকশা করে বানানো কাঁথা।
➠ গড়ন- আকার, আকৃতি, রূপ।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের পাঠের উদ্দেশ্য :
‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীদের মনে সৌন্দর্যবোধ সৃষ্টি
হবে। চিত্রকলা, ভাস্কর্য প্রভৃতি সম্পর্কে তারা আগ্রহী হবে। তারা নতুন কিছু
সৃষ্টির ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হবে।
পাঠ-পরিচিতি :
‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনাটিতে লেখক সুন্দরের ধারণা ব্যক্ত করেছেন।
চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সংগীত, নৃত্য, কবিতা সবকিছুর মধ্য দিয়েই
সুন্দরকে প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতি জগতে সুন্দরের প্রকাশ ঘটে নানাভাবে। তা
দেখে মানুষ নতুন করে সুন্দরকে সৃষ্টি করে। বিভিন্ন মাধ্যমে চলে সৃষ্টির এই
প্রক্রিয়া। কখনো রেখার সাহায্যে, কখনো রঙের সাহায্যে, কখনো মাটি বা পাথরের
সাহায্যে সুন্দরকে সৃষ্টি করা হয়। সুন্দর বোধ মানুষের মনকে তৃপ্ত করে।
মানুষকে তা পরিশীলিত করে। সুন্দরের সৃষ্টিতে সকলেরই চেষ্টা করা উচিত।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের লেখক পরিচিতি :
মুস্তাফা মনোয়ার একজন চিত্রশিল্পী। তাঁর জন্ম ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে, ঝিনাইদহ
জেলার মনোহরপুর গ্রামে। কবি গোলাম মোস্তফা তাঁর পিতা। তিনি কলকাতা আর্ট
কলেজের কৃতী ছাত্র। ঢাকায় চারুকলা কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। পরবর্তীকালে
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশে পাপেট থিয়েটার ও অ্যানিমেশন শিল্পকলায় আধুনিকতা প্রচলনে তিনি
অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া ‘মনের কথা’ নামে বাংলাদেশ টেলিভিশনে
দীর্ঘকাল শিশুদের উপযোগী শিল্পকলাবিষয়ক একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান পরিচালনা
করেছেন। ১৯৭২ সাল থেকে প্রচারিত শিশু প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে বহুল জনপ্রিয়
‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানের রূপকার তিনি। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রযোজনায় তিনি
মৌলিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। মুস্তাফা মনোয়ার বিশিষ্ট নৃত্য পরিকল্পনাকারী ও
সংগীত পরিচালক। দ্বিতীয় ও যষ্ঠ সাফ গেমসের মাসকট নির্মাতা তিনি। তিনি একুশে
পদকসহ বহু পদক ও পুরস্কার লাভ করেছেন।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের কর্ম-অনুশীলন :
ক. সুনির্দিষ্ট বিষয় অবলম্বনে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করো (শ্রেণির
সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে)।
খ. শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে স্পষ্ট ও সুন্দর হস্তাক্ষর
প্রতিযোগিতার আয়োজন করো।
চিত্রকর: মোস্তফা সিদ্দিক অদ্রি, ৭ম শ্রেণি
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন
-এর মধ্যে!
যা
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. মুস্তাফা মনোয়ারের শিশুদের শিল্পকলা বিষয়ক অনুষ্ঠানটির নাম কী?
উত্তর : মুস্তাফা মনোয়ারের শিশুদের শিল্পকলা বিষয়ক অনুষ্ঠানটি ‘মনের
কথা’।
২. দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ সাফ গেমসের মাসকট নির্মাতা কে?
উত্তর : দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ সাফ গেমসের মাসকট নির্মাতা মুস্তাফা মনোয়ার।
৩. ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানের রূপকার কে?
উত্তর : ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানের রূপকার মুস্তাফা মনোয়ার।
৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত কোন গানে শিল্পকলার মূল সত্যটি প্রকাশ
পেয়েছে?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আনন্দধারা বহিছে ভুবনে গানে শিল্পকলার মূল
সত্যটি প্রকাশ পেয়েছে।
৫. জীবনীশক্তির প্রবলতার প্রকাশের মাধ্যম কী?
উত্তর : জীবনীশক্তির প্রবলতার প্রকাশের মাধ্যম আনন্দ প্রকাশ।
৬. ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।’কথাটি কারা বলেন?
উত্তর : ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।’ কথাটি বলেন জ্ঞানীরা।
৭. বিন্দু, রেখা, রং, আকার, গতি বা ছন্দ, আলোছায়া ইত্যাদি কী?
উত্তর : বিন্দু, রেখা, রং, আকার, গতি বা ছন্দ, আলোছায়া ইত্যাদি সকল
শিল্পকলার মূল বস্তু।
৮. কালি-কলম, জল রং, প্যাস্টেল রং, তেল মিশ্রিত রং ইত্যাদি কী?
উত্তর : কালি-কলম, জল রং, প্যাস্টেল রং, তেল মিশ্রিত রং ইত্যাদি চিত্রকলার
মাধ্যম।
৯. বাংলাদেশে পুরাকালে শিল্পীরা কী দিয়ে ছবি আঁকতেন?
উত্তর : বাংলাদেশে পুরাকালে শিল্পীরা জল রং দিয়ে ছবি আঁকতেন।
১০. তালপাতায় আঁকা ছবির বহু নিদর্শন পাওয়া যায় কোথায়?
উত্তর : তালপাতায় আঁকা ছবির বহু নিদর্শন পুরাতন পুঁথিতে পাওয়া যায়।
১১. নিয়ম মেনেও ফুল কীভাবে ফুটে ওঠে?
উত্তর : নিয়ম মেনেও ফুল স্বাধীনভাবে ফুটে ওঠে।
১২. প্রয়োজনের বাইরে সুন্দরের কাজ কী?
উত্তর : প্রয়োজনের বাইরে সুন্দরের কাজ মনকে তৃপ্ত করা।
১৩. কীসের সমন্বয়ে শিশুরা ছবি অঁাকে?
উত্তর : কল্পনা আর বাস্তবের সমন্বয়ে শিশুরা ছবি আঁকে।
১৪. পুরাকালে বাংলাদেশের শিল্পীরা কোন মাধ্যম ছবি আঁকত?
উত্তর : পুরাকালে বাংলাদেশের শিল্পীরা জল রং দিয়ে ছবি আঁকত।
১৫. সকল শিল্পীর দায়িত্ব কী?
উত্তর : সকল শিল্পীর দায়িত্ব হলো দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা।
১৬. কখন মানুষ মনকে নানা রূপে প্রকাশ করতে চায়?
উত্তর : আনন্দ পেলে মানুষ মনকে নানা রূপে প্রকাশ করতে চায়।
১৭. কীভাবে সুন্দরের বিশেষ নিয়মগুলো জানা যাবে?
উত্তর : সুন্দর দেখতে দেখতেই সুন্দরের বিশেষ নিয়মগুলো জানা যাবে।
১৮. শক্ত পাথর কেটে কোনো গড়ন বানানোকে কী বলে?
উত্তর : শক্ত পাথর কেটে কোনো গড়ন বানানোকে ভাস্কর্য বলে।
১৯. প্রাচীনকালে মানুষ কোথায় বাস করত?
উত্তর : প্রাচীনকালে মানুষ গুহায় বাস করত।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. ‘আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আনন্দের মধ্য দিয়েই মানুষের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় এবং সুপ্ত
প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে জীবনীশক্তি।
➠ আনন্দ মানুষের মনকে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। তাই আনন্দ লাভের জন্য
মানুষ নানারকম চেষ্টা করে। রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে
আনন্দকে অনুভব করা যায়। মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে তার মনকে নানা রূপে
প্রকাশ করতে চায়। এভাবে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন শিল্পকলা। তাই বলা যায়, আনন্দ
প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ।
২. ‘এই নিয়মটি লুকিয়ে থাকে, নিজেকে প্রকাশ করে না, সুন্দরের মধ্যে মিলেমিশে
একটা বন্ধন সৃষ্টি করে’। ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : শিল্পকলার রূপটি সৌন্দর্যকে আশ্রয় করে প্রকাশ পায়। এর সৃষ্টির
নিয়মটি আপনাআপনি প্রকাশ পায় না।
➠ মানুষের মনের আনন্দ থেকেই শিল্পকলার সৃষ্টি। সব শিল্পকলারই একটি রূপ আছে,
ছন্দ আছে, সুর আছে, রং আছে, বিশেষ গড়ন আছে- সবকিছুকে সাজাবার একটি
সুবিন্যস্ত নিয়ম আছে। কিন্তু এ নিয়মটি সচরাচর প্রকাশ পায় না। সুন্দরের মধ্য
দিয়েই এটি প্রকাশ পায়। তাই বলা হয়, এই নিয়মটি লুকিয়ে থাকে, নিজেকে প্রকাশ
করে না, সুন্দরের মধ্যে মিলেমিশে একটা বন্ধন সৃষ্টি করে।
৩. চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক সৃষ্টি হওয়ার
কারণ দর্শাও।
উত্তর : আনন্দ লাভ করার জন্যই চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি,
সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়েছে।
➠ শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্র মানুষকে অপার আনন্দ দান করে। মানুষ যখন আনন্দ
পায়, তখন মনকে প্রকাশ করে বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন রঙে। আনন্দের প্রকাশ
দ্বারা মূলত জীবনীশক্তিই প্রকাশিত হয়। এ জীবনীশক্তির প্রকাশ ঘটাতে গিয়েই
সৃষ্টি হয়েছে চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক যারা
আনন্দ দানের মাধ্যমে মানুষের মনের চাহিদা মেটায়।
৪. ‘কালি কলম মন, লেখে তিন জন।’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ‘কালি কলম মন, লেখে তিন জন।’ এটা বাংলার একটি প্রচলিত প্রবাদ। এর
দ্বারা ঐতিহ্য, শিল্প ও যুগের মাঝে সমন্বয় সৃষ্টি করা হয়েছে।
➠ আলোচ্য প্রবাদ বাক্যে কালি হলো নাম, যা দেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যে
প্রবাহিত। কলম হলো শিল্প সৃষ্টির সরঞ্জামসমূহ। আর মন দ্বারা বোঝায় বর্তমান
যুগের সঙ্গে ঐতিহ্যের সমন্বয় সাধন করা। আলোচ্য প্রবাদ দ্বারা এটাই বোঝানো
হয়েছে যে- ঐতিহ্যই দেশের পরিচায়ক।
৫. দেখা-অদেখা বস্তু কীভাবে শিশুদের ছবি আঁকতে সাহায্য করে?
উত্তর : নানারকম গল্প, দেশের কথা, কবিতা ও ছড়া শুনে এবং আশপাশের প্রকৃতি ও
পরিবেশের দৃশ্যাবলি শিশু মনে ছবির মতো ফুটে ওঠে। এগুলো শিশুদের ছবি আঁকতে
সাহায্য করে।
➠ শিশুরা দেখে দেখে শিখতে পারে। প্রতিদিনের দেখা বিষয়বস্তু রং, গড়ন, আকৃতি
ইত্যাদি শিশুমনের সঙ্গে মিশে যায়। এভাবে শিশুদের কল্পনার সাথে বাস্তবের
দেখা-অদেখা বস্তু মিলেমিশে তাদের ছবি আঁকতে সাহায্য করে।
৬. বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকলার পরিচয় দাও।
উত্তর : বাংলাদেশের পুরাকাল থেকে আজ পর্যন্ত যেসব শিল্পকলার নিদর্শন পাওয়া
যায়, তার মধ্যে পোড়ামাটির ভাস্কর্য এবং পুরাতন পুঁথিতে তালপাতায় আঁকা
ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য।
➠ বাংলাদেশে পুরাকালে জল রং দিয়ে ছবি আঁকত শিল্পীরা। পুরাতন পুঁথিতে
তালপাতায় আঁকা বহু ছবির নিদর্শন আছে। আবার বিশেষ এক ধরনের ছাঁচে গলিত মেটাল
ঢেলে বানানো পোড়ামাটির ভাস্কর্যও আমাদের দেশে খুব প্রসিদ্ধ ছিলো।
চিত্রকর: মোনাইফ উদ্দিন সুবাহ, ৭ম শ্রেণি
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মেহেরুন্নেসা এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি
হয়েছেন। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নাট্যাভিনয় দেখে তিনি বান্ধবীদের সাথে
ক্যাম্পাস ঘুরতে ঘুরতে এলেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে। সেখানে দেখেন-এক
হাতে বন্দুক ধরে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার এক ভাস্কর্য।
নাম-সংশপ্তক। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যে যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাকেই বলে
সংশপ্তক। ৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে এই ভাস্কর্যটি
বানানো হয়েছে। মনটা ভরে গেল মেহেরুন্নেসার।
ক. মুস্তাফা মনোয়ার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলেই মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ।’ কথাটি
বুঝিয়ে লেখো।
গ. নবীনবরণ অনুষ্ঠানে মেহেরুন্নেসা শিল্পকলার কোন দিকটি দেখেছেন? এর বর্ণনা
দাও।
ঘ. মেহেরুন্নেসার দেখা সংশপ্তকই ‘শিল্পকলার প্রধান দিক।’-মন্তব্যটির
যথার্থতা যাচাই করো।
ক. মুস্তাফা মনোয়ার ঝিনাইদহ জেলার মনোহরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসকে সুন্দর রূপ দিয়ে গড়ে মানুষ তার সৌন্দর্যের
চাহিদা পূরণ করে।
➠ মানুষ স্বভাবত সৌন্দর্য পিয়াসী। নিত্যদিনের প্রয়োজনে তাকে নানা জিনিস
ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনীয় জিনিসটির মাঝেও মন সুন্দর খোঁজে। তাই মানুষের
মন প্রয়োজনীয় জিনিসটিকে সুন্দররূপে সাজায়। ব্যবহারটি হলো প্রয়োজন এবং
সৌন্দর্য সৃষ্টি অপ্রয়োজন। এই দুই নিয়েই সৌন্দর্যের চাহিদা পূরণ হয়।
গ. ক্যাম্পাসে মেহেরুন্নেসা সংশপ্তক শিল্পকর্মটির নন্দনতাত্ত্বিক ও
তাৎপর্যগত দিকটি প্রত্যক্ষ করেছেন।
➠ উদ্দীপকের মেহেরুন্নেসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্যটি দেখে শিল্পকলার একটি
শাখার সাথে পরিচিত হলেন এবং এর গঠনগত ও তাৎপর্যগত দিক উপলব্ধি করলেন যা
প্রবন্ধে শিল্পকলার প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় দিক।
➠ ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনীয় শিল্পের কথা বলা হয়েছে।
লেখক মনে করেন শুধু প্রয়োজন মিটলেই হবে না তাকে সুন্দর হতে হবে। ক্যাম্পাসে
মেহেরুন্নেসা ‘সংশপ্তক’ ভাস্কর্যটির সৌন্দর্যের সমগ্র দিকটি দেখেছেন।
যেখানে প্রয়োজন ও অপ্রয়োজন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ক্যাম্পাসে সংশপ্তক
শিল্পকর্মটি দেখে মেহেরুন্নেসার মন ভরে যায়। ভাস্কর্যটি আকার, আয়তন,
গঠনকৌশল, ভঙ্গিমা ও এর সৌন্দর্য তাকে আকর্ষণ করে। তারপর যে দিকটি তাকে
মোহিত করে রাখে তা হচ্ছে ভাস্কর্যটির তাৎপর্যগত দিক। সংশপ্তক এক হাতে
বন্দুক ধরে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সংশপ্তক আমাদের মুক্তিযুদ্ধের
বীরযোদ্ধাদের প্রতীকায়িত। মেহেরুন্নেসা বাংলা বিভাগের একজন সংবেদনশীল
ছাত্রী হিসেবে সংশপ্তকের এই দিকটিই মন ভরে উপভোগ করেছেন।
ঘ. মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে মনকে তৃপ্ত করে। তাই
এটিই শিল্পকলার প্রধান দিক।
➠ কোনো শিল্পের সৌন্দর্য যখন প্রয়োজন মিটিয়ে মানসিকভাবে মানুষকে মোহিত করে,
তখন তা সার্থক শিল্প হয়ে ওঠে এবং এটিই শিল্পকলার অন্যতম প্রধান দিক হিসেবে
পরিচিত যা ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে।
➠ ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় সৌন্দর্যের স্বরূপ অঙ্কন করা হয়েছে।
চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সংগীত, নৃত্য, কবিতা সবকিছুর মধ্য দিয়েই
সুন্দরকে প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতিজগতে সুন্দরের প্রকাশ ঘটে নানা ভাবে। শুধু
প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না। মানুষের মন প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি
সৌন্দর্যও কামনা করে। কারণ সমগ্র সৌন্দর্য প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনের গণ্ডির
বাইরে। প্রয়োজনের কাজ শরীরকে তৃপ্ত করে আর প্রয়োজনের বাইরে যে সুন্দর তা
মানুষের মনকে তৃপ্ত করে। এজন্য এটিকে শিল্পের প্রধান দিক বলা যায়। উদ্দীপকে
দেখা যায়- মেহেরুন্নেসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। নবীনবরণ শেষে
তিনি বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আসেন।
সেখানে তিনি একটি ভাস্কর্য দেখতে পান। যার নাম ‘সংশপ্তক’। এটি শিল্পকলার
একটি অন্যতম শাখা। এটি দেখে মেহেরুন্নেসা মানসিকভাবে তৃপ্ত হয়েছেন।
➠ মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে মনকে তৃপ্ত করে। তাই
বলা যায়, মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি শিল্পকলার প্রধান দিক।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ২:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নন্দলাল বসু তাঁর ‘শিল্পকলা’ গ্রন্থে বলেছেন-‘যে সৃষ্টির মধ্যে মানুষের
প্রয়োজন সাধন অপেক্ষা অহেতুক আনন্দ বেশি, যাহাতে মানুষের জৈব অপেক্ষা
আত্মিক ও মানসিক আনন্দ সৃষ্টি বেশি, তাহাকে আমরা ললিতকলা বলিয়া আখ্যায়িত
করিতে পারি। আবার যাহাকে আমরা ললিতকলা বলি, তাহাও আরেক দিক হইতে কারুকলা
শ্রেণিভুক্ত হইতে পারে। স্থাপত্যবিদ্যাপ্রসূত সুরম্য প্রাসাদকে যখন
মানুষের বসবাস উপযোগী করিয়া দেখি তখন তাহা কারুশিল্প। আবার উহাকে যখন
রূপময় অসীম সৌন্দর্য সৃষ্টি হিসেবে দেখি তখন তাহা চারুকলা।’
ক. ‘পুরাকাল’ শব্দের অর্থ কী?
খ. শিল্পকলাচর্চা সকলের পক্ষে অপরিহার্য কেন?
গ. উদ্দীপকের ললিতকলা বলতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের যে বিষয়টিকে
নির্দেশ করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে উল্লেখিত চারুকলা ও কারুকলার সমন্বিত রূপই শিল্পকলা”-
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘পুরাকাল’ শব্দের অর্থ প্রাচীনকাল বা অনেক আগের সময়।
খ. সুন্দর আর আনন্দের জন্য সর্বোপরি ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার জন্য
শিল্পকলা চর্চা সবার পক্ষে অপরিহার্য।
➠ আমাদের সংস্কৃতি বা কালচার গড়ে উঠেছে নানান শিল্পকলার কারুকাজ দিয়ে। সব
শিল্পীর একটি দায়িত্ব আছে- তা হলো দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা।
শিল্পচর্চার ধারা দেখে একটি দেশকে ও দেশের মানুষকে চেনা যায়, জানা যায়।
এজন্য শিল্পকলার চর্চা সবার পক্ষে অপরিহার্য।
গ. উদ্দীপকে ললিতকলা বলতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে বর্ণিত সৌন্দর্য
চেতনা বা নন্দনতত্ত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। ‘শিল্পকলার নানা দিক’
প্রবন্ধে মানুষের সৌন্দর্য চেতনার প্রকাশকে শিল্পকলা বলা হয়েছে।
➠ ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে মানুষের সৌন্দর্য চেতনার প্রকাশকে
শিল্পকলা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না। যেমন
একটি কাঁথা রাত্রে গায়ে দিলে প্রয়োজন মেটে। তবুও গ্রামের মেয়েরা রঙিন
সুতা দিয়ে কাঁথায় সুন্দর নকশা ফুটিয়ে তোলে। অর্থাৎ প্রয়োজনের বাইরের
সৌন্দর্যও মনকে তৃপ্ত করে। এই মনের তৃপ্তিকেই প্রবন্ধে এবং উদ্দীপকে
ললিতকলা বলা হয়েছে। তেমনি উদ্দীপকে নন্দলাল বসু তার বক্তব্যে যে সৃষ্টির
মধ্যে মানুষের প্রয়োজন সাধন অপেক্ষা অহেতুক আনন্দ বেশি। যাতে মানুষের জৈব
অপেক্ষা আত্মিক ও মানসিক আনন্দ সৃষ্টি বেশি, তাকে ললিতকলা বলে আখ্যায়িত
করেছেন।
➠ সরাসরি প্রয়োজনের চেয়ে যেখানে মানসিক সৌন্দর্য পিপাসা মেটানোর তাগিদ
বেশি তাকেই নন্দলাল বসু ললিতকলা বলেছেন। কখনো কখনো নির্মিত জিনিসটির
সৌন্দর্যই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়, তার প্রয়োজনীয় দিকটির কথা মনেই জাগে না।
তেমন অবস্থাকেই নন্দলাল বসু বলেছেন ললিতকলা, যা আলোচ্য প্রবন্ধের
শিল্পকলার ধারণাকে নির্দেশ করে।
ঘ. চারুকলা ও কারুকলা মানুষের সৌন্দর্যচর্চার এ দুটি দিকের সমন্বয়েই গড়ে
ওঠে শিল্পকলার ভুবন।
➠ চারুকলা হচ্ছে মূলত সৌন্দর্যচর্চা। যার কোনো প্রত্যক্ষ উপযোগ নেই
অর্থাৎ শিল্পকলার প্রয়োজন অতীত রূপ। আর কারুকলা হচ্ছে শিল্পকলার সেই দিক
যাতে সৌন্দর্য চর্চাও হয়। আবার তাতে মানুষের জীবনধারণের নানা প্রয়োজনও
মেটে।
➠ ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে শিল্পকলার প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রয়োজনীয়তা এ
দুটি দিকেরই আলোচনা রয়েছে। যেমন প্রবন্ধে ভাস্কর্যকে একটি শিল্পকলা বলা
হয়েছে। এই ভাস্কর্যকে যখন শুধুই ভাস্কর্য হিসেবে দেখি তখন তা কারুশিল্প
আর সেটিকে যখন রূপময় অসীম সৌন্দর্য হিসেবে দেখি তখন তা চারুকলা। আর তাই
চারুকলা ও কারুকলার সমন্বয়েই শিল্পকলার চর্চা অব্যাহত রয়েছে। উদ্দীপকের
নন্দলাল বসুর বক্তব্যে চারুকলা ও কারুকলাকে ললিতকলা তথা শিল্পকলার দুটি
দিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
➠ তাই সার্বিক আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, বাহ্যিক সৌন্দর্য আর আকৃতি এ
দুটি মিলেই শিল্পকলা গড়ে ওঠে। এই শিল্পকলা হলো কারুকলা ও চারুকলার
সম্মিলিত রূপ।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মেহেরুন্নেসা এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি
হয়েছেন। নবীনবরণ শেষে তিনি বান্ধবীদের সঙ্গে ক্যাম্পাস ঘুরতে ঘুরতে এলেন
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে। সেখানে দেখেন- এক হাতে বন্দুক ধরে এক পায়ের
ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার এক ভাস্কর্য। নাম- সংশপ্তক। নিশ্চিত মৃত্যু
জেনেও যে সম্মুখ পানে এগিয়ে যায় তাকেই বলে সংশপ্তক। ’৭১-এর
মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে এই ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছে।
মনটা ভরে গেল মেহেরুন্নেসার।
ক. মুস্তাফা মনোয়ার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলিয়েই মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ হয়’-
কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. ক্যাম্পাসে মেহেরুন্নেসা শিল্পকলার কোন দিকটি দেখেছেন? এর বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটিই শিল্পকলার প্রধান দিক’- মন্তব্যটির
যথার্থতা যাচাই কর।
ক. মুস্তাফা মনোয়ার ঝিনাইদহ জেলার মনোহরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসকে সুন্দর রূপ দিয়ে গড়ে মানুষ তার
সৌন্দর্যের চাহিদা পূরণ করে।
মানুষ স্বভাবত সৌন্দর্য পিয়াসী। নিত্যদিনের প্রয়োজনে তাকে নানা জিনিস
ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনীয় জিনিসটির মাঝেও মন সুন্দর খোঁজে। তাই
মানুষের মন প্রয়োজনীয় জিনিসটিকে সুন্দররূপে সাজায়। ব্যবহারটি হলো প্রয়োজন
এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি অপ্রয়োজন। এই দুই নিয়েই সৌন্দর্যের চাহিদা পূরণ হয়।
গ. ক্যাম্পাসে মেহেরুন্নেসা সংশপ্তক শিল্পকর্মটির নন্দনতাত্ত্বিক ও
তাৎপর্যগত দিকটি প্রত্যক্ষ করেছেন।
উদ্দীপকের মেহেরুন্নেসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্যটি দেখে শিল্পকলার একটি
শাখার সাথে পরিচিত হলেন এবং এর গঠনগত ও তাৎপর্যগত দিক উপলব্ধি করলেন যা
প্রবন্ধে শিল্পকলার প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় দিক।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনীয় শিল্পের কথা বলা হয়েছে।
লেখক মনে করেন শুধু প্রয়োজন মিটলেই হবে না তাকে সুন্দর হতে হবে।
ক্যাম্পাসে মেহেরুন্নেসা ‘সংশপ্তক’ ভাস্কর্যটির সৌন্দর্যের সমগ্র দিকটি
দেখেছেন। যেখানে প্রয়োজন ও অপ্রয়োজন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ক্যাম্পাসে
সংশপ্তক শিল্পকর্মটি দেখে মেহেরুন্নেসার মন ভরে যায়। ভাস্কর্যটি আকার,
আয়তন, গঠনকৌশল, ভঙ্গিমা ও এর সৌন্দর্য তাকে আকর্ষণ করে। তারপর যে দিকটি
তাকে মোহিত করে রাখে তা হচ্ছে ভাস্কর্যটির তাৎপর্যগত দিক। সংশপ্তক এক
হাতে বন্দুক ধরে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সংশপ্তক আমাদের মুক্তিযুদ্ধের
বীরযোদ্ধাদের প্রতীকায়িত। মেহেরুন্নেসা বাংলা বিভাগের একজন সংবেদনশীল
ছাত্রী হিসেবে সংশপ্তকের এই দিকটিই মন ভরে উপভোগ করেছেন।
ঘ. মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে মনকে তৃপ্ত করে। তাই
এটিই শিল্পকলার প্রধান দিক।
কোনো শিল্পের সৌন্দর্য যখন প্রয়োজন মিটিয়ে মানসিকভাবে মানুষকে মোহিত করে,
তখন তা সার্থক শিল্প হয়ে ওঠে এবং এটিই শিল্পকলার অন্যতম প্রধান দিক
হিসেবে পরিচিত যা ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় সৌন্দর্যের স্বরূপ অঙ্কন করা হয়েছে।
চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সংগীত, নৃত্য, কবিতা সবকিছুর মধ্য দিয়েই
সুন্দরকে প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতিজগতে সুন্দরের প্রকাশ ঘটে নানা ভাবে।
শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না। মানুষের মন প্রয়োজন মেটানোর
পাশাপাশি সৌন্দর্যও কামনা করে। কারণ সমগ্র সৌন্দর্য প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনের
গণ্ডির বাইরে। প্রয়োজনের কাজ শরীরকে তৃপ্ত করে আর প্রয়োজনের বাইরে যে
সুন্দর তা মানুষের মনকে তৃপ্ত করে। এজন্য এটিকে শিল্পের প্রধান দিক বলা
যায়। উদ্দীপকে দেখা যায়- মেহেরুন্নেসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্রী। নবীনবরণ শেষে তিনি বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রীয়
লাইব্রেরির সামনে আসেন। সেখানে তিনি একটি ভাস্কর্য দেখতে পান। যার নাম
‘সংশপ্তক’। এটি শিল্পকলার একটি অন্যতম শাখা। এটি দেখে মেহেরুন্নেসা
মানসিকভাবে তৃপ্ত হয়েছেন।
মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে মনকে তৃপ্ত করে। তাই
বলা যায়, মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি শিল্পকলার প্রধান দিক।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নন্দলাল বসু তার ‘শিল্পকলা’ গ্রন্থে বলেছেন- ‘যে সৃষ্টির মধ্যে মানুষের
প্রয়োজন সাধন অপেক্ষা অহেতুক আনন্দ বেশি, যাহাতে মানুষের জৈব অপেক্ষা
আত্মিক ও মানসিক আনন্দ সৃষ্টি বেশি, তাহাকে আমরা ললিতকলা বলিয়া আখ্যায়িত
করিতে পারি। আবার যাহাকে আমরা ললিতকলা বলি, তাহাও আরেক দিক হইতে কারুকলা
শ্রেণিভুক্ত হইতে পারে। স্থাপত্যবিদ্যাপ্রসূত সুরম্য প্রাসাদকে যখন
মানুষের বসবাস উপযোগী করিয়া দেখি তখন তাহা কারুশিল্প। আবার উহাকে যখন
রূপময় অসীম সৌন্দর্য সৃষ্টি হিসেবে দেখি তখন তাহা চারুকলা’।
ক. ‘পুরাকাল’ শব্দের অর্থ কী?
খ. শিল্পকলা চর্চা সকলের পক্ষে অপরিহার্য কেন?
গ. উদ্দীপকের ললিতকলা বলতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের যে বিষয়টিকে
নির্দেশ করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘চারুকলা ও কারুকলার সমনি¦ত রূপ শিল্পকলা’ ‘শিল্পকলার নানা দিক’
প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ক. ‘পুরাকাল’ শব্দের অর্থ প্রাচীনকাল বা অনেক আগের সময়।
খ. সুন্দর আর আনন্দের জন্য সর্বোপরি ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার
জন্য শিল্পকলা চর্চা সবার পক্ষে অপরিহার্য।
আমাদের সংস্কৃতি বা কালচার গড়ে উঠেছে নানান শিল্পকলার কারুকাজ দিয়ে। সব
শিল্পীর একটি দায়িত্ব আছে- তা হলো দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা।
শিল্পচর্চার ধারা দেখে একটি দেশকে ও দেশের মানুষকে চেনা যায়, জানা যায়।
এজন্য শিল্পকলার চর্চা সবার পক্ষে অপরিহার্য।
গ. উদ্দীপকে ললিতকলা বলতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে বর্ণিত সৌন্দর্য
চেতনা বা নন্দনতত্ত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। ‘শিল্পকলার নানা দিক’
প্রবন্ধে মানুষের সৌন্দর্য চেতনার প্রকাশকে শিল্পকলা বলা হয়েছে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে মানুষের সৌন্দর্য চেতনার প্রকাশকে
শিল্পকলা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না। যেমন
একটি কাঁথা রাত্রে গায়ে দিলে প্রয়োজন মেটে। তবুও গ্রামের মেয়েরা রঙিন
সুতা দিয়ে কাঁথায় সুন্দর নকশা ফুটিয়ে তোলে। অর্থাৎ প্রয়োজনের বাইরের
সৌন্দর্যও মনকে তৃপ্ত করে। এই মনের তৃপ্তিকেই প্রবন্ধে এবং উদ্দীপকে
ললিতকলা বলা হয়েছে। তেমনি উদ্দীপকে নন্দলাল বসু তার বক্তব্যে যে সৃষ্টির
মধ্যে মানুষের প্রয়োজন সাধন অপেক্ষা অহেতুক আনন্দ বেশি। যাতে মানুষের জৈব
অপেক্ষা আত্মিক ও মানসিক আনন্দ সৃষ্টি বেশি, তাকে ললিতকলা বলে আখ্যায়িত
করেছেন।
সরাসরি প্রয়োজনের চেয়ে যেখানে মানসিক সৌন্দর্য পিপাসা মেটানোর তাগিদ বেশি
তাকেই নন্দলাল বসু ললিতকলা বলেছেন। কখনো কখনো নির্মিত জিনিসটির সৌন্দর্যই
প্রধান হয়ে দাঁড়ায়, তার প্রয়োজনীয় দিকটির কথা মনেই জাগে না। তেমন
অবস্থাকেই নন্দলাল বসু বলেছেন ললিতকলা, যা আলোচ্য প্রবন্ধের শিল্পকলার
ধারণাকে নির্দেশ করে।
ঘ. চারুকলা ও কারুকলা মানুষের সৌন্দর্যচর্চার এ দুটি দিকের সমন্বয়েই গড়ে
ওঠে শিল্পকলার ভুবন।
চারুকলা হচ্ছে মূলত সৌন্দর্যচর্চা। যার কোনো প্রত্যক্ষ উপযোগ নেই অর্থাৎ
শিল্পকলার প্রয়োজন অতীত রূপ। আর কারুকলা হচ্ছে শিল্পকলার সেই দিক যাতে
সৌন্দর্য চর্চাও হয়। আবার তাতে মানুষের জীবনধারণের নানা প্রয়োজনও
মেটে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে শিল্পকলার প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রয়োজনীয়তা এ
দুটি দিকেরই আলোচনা রয়েছে। যেমন প্রবন্ধে ভাস্কর্যকে একটি শিল্পকলা বলা
হয়েছে। এই ভাস্কর্যকে যখন শুধুই ভাস্কর্য হিসেবে দেখি তখন তা কারুশিল্প
আর সেটিকে যখন রূপময় অসীম সৌন্দর্য হিসেবে দেখি তখন তা চারুকলা। আর তাই
চারুকলা ও কারুকলার সমন্বয়েই শিল্পকলার চর্চা অব্যাহত রয়েছে। উদ্দীপকের
নন্দলাল বসুর বক্তব্যে চারুকলা ও কারুকলাকে ললিতকলা তথা শিল্পকলার দুটি
দিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাই সার্বিক আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, বাহ্যিক সৌন্দর্য আর আকৃতি এ দুটি
মিলেই শিল্পকলা গড়ে ওঠে। এই শিল্পকলা হলো কারুকলা ও চারুকলার সম্মিলিত
রূপ।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাবেয়া তার বান্ধবীদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে
বিশালাকার এক ভাস্কর্য দেখতে পায়, নাম- ‘অপরাজেয় বাংলা’। ’৭১-এর
মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণের এবং
বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এটি।
ক. সুন্দরকে জানার যে জ্ঞান তার নাম কী?
খ. ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের যে বিষয়টিকে নির্দেশ করা
হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকে উল্লিখিত দিকটিই শিল্পকলার একমাত্র দিক নয়’- মন্তব্যটির
যথার্থতা বিচার কর।
ক. সুন্দরকে জানার যে জ্ঞান তার নাম নন্দনতত্ত্ব।
খ. ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।’ কারণ প্রয়োজন মেটানোর জন্য
সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় না।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা নানা ধরনের বস্তু ব্যবহার করি। প্রয়োজন
মেটাবার পর বস্তুটির সৌন্দর্য আমাদের চোখে ধরা পড়ে। যখন আমরা বস্তুটিকে
ব্যবহার করি তখন তার সৌন্দর্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। এমনকি বস্তুটি
সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সঙ্গে এই সৌন্দর্যের সম্পর্ক নেই। তাই সব সুন্দরই
সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।
গ. উদ্দীপকে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের ‘ভাস্কর্য’ শিল্পের বিষয়টিকে
নির্দেশ করা হয়েছে।
মানুষ সৌন্দর্যপিয়াসী। আর ভাস্কর্য সৌন্দর্য প্রকাশ করে এবং ধারণ করে
ইতিহাসকে। তাই নানা আকার বা গড়নে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। যা
দর্শনার্থীর সৌন্দর্য পিপাসা ও কৌতূহল মেটায়।
উদ্দীপকের রাবেয়া ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য দেখে কৌতূহল নিয়ে। এ
ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একাত্তরের বিজয়গাথা। যে যুদ্ধে নারী-পুরুষ
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ছিনিয়ে এনেছে মুক্ত
স্বদেশ। ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধেও আমরা অনুরূপ ভাস্কর্য সম্পর্কে
জানতে পারি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের
ভাস্কর্য শিল্পটিকে নির্দেশ করেছে।
ঘ. ‘উদ্দীপকে উল্লিখিত দিকটিই শিল্পকলার একমাত্র দিক নয়’- মন্তব্যটি
যথার্থ।
সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের দুর্বলতা চিরন্তন। শিল্পকলাও সৌন্দর্যের
পাশাপাশি প্রকাশ করে অতীত ইতিহাসও। নানা মাধ্যমে চলে সৃষ্টির এ
প্রক্রিয়া। আর এই সৃষ্টির মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে পারে।
উদ্দীপকে ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্যের বর্ণনা রয়েছে, এর পাশাপাশি রয়েছে
সৃষ্টির ইতিহাস। যা বাঙালির বিজয়ের এক জীবিত দলিল। ভাস্কর্য শিল্পের
দিকটিই কেবল উদ্দীপকের আলোচ্য বিষয়। এছাড়াও শিল্পকলার অনেক দিক রয়েছে।
যেমন : চিত্রকলা, সংগীত, নৃত্য, কবিতা, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য প্রভৃতি। এসব
কিছুর মধ্য দিয়ে সুন্দকে প্রকাশ করা হয়। তা দেখে মানুষ নতুন করে সুন্দরকে
সৃষ্টি করে। নানা মাধ্যমে চলে সৃষ্টির এই প্রক্রিয়া। সুন্দরবোধ মানুষের
মনকে তৃপ্ত করে। মানুষকে পরিশীলিত করে।
উল্লিখিত আলোচনায় দেখা যায় উদ্দীপকের ভাস্কর্য ছাড়াও শিল্পকলার বিভিন্ন
দিক রয়েছে। রয়েছে সেসবের প্রতি মানুষের অন্তরের টান। তাই বলা যায়,
প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সাগর, নদী, পাহাড়, গাছপালা, ফুল-পাখির বিচিত্র সমারোহ, সৌন্দর্যপিপাসু
মানুষদের আকৃষ্ট করে। এই প্রকৃতিকে স্রষ্টা সুন্দর করে সাজিয়েছেন শুধুই
নিজের খেয়ালে। ব্যক্তিবিশেষ বা কোনো গোষ্ঠীকে আনন্দ দান নয়, সৌন্দর্যই
এখানে মুখ্য। সৌন্দর্য মানুষকে তৃপ্ত করে, পরিশীলিত করে।
ক. আমাদের দেশে কীসের ভাস্কর্য খুব প্রসিদ্ধ ছিল?
খ. শিল্পকলা চর্চা সকলের পক্ষে অপরিহার্য কেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের যে দিকটির পরিচয় মেলে তা
ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের অনেক দিকই ফুটে ওঠেনি।”-
মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।
ক. আমাদের দেশে পোড়ামাটির ভাস্কর্য খুব প্রসিদ্ধ ছিল।
খ. ২ নং অনুশীলনীর ‘খ’ নং উত্তর দ্রষ্টব্য।
গ. উদ্দীপকে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের প্রকৃতি জগতের সৌন্দর্যের
বর্ণনার দিকটির পরিচয় মেলে।
বাংলাদেশকে রূপের রানি বলে অভিহিত করা হয়েছে। এর চারদিক নিসর্গের আধার।
যেদিকে তাকানো যায় মন-প্রাণ সজীব ও সতেজ হয়ে ওঠে। এ প্রকৃতি জগতে
সুন্দরের প্রকাশ ঘটে নানা ভাবে। তা দেখে মানুষ নতুন করে সুন্দরকে প্রকাশ
করার অনুপ্রেরণা লাভ করে।
উদ্দীপকে প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধনে সাগর, নদী, পাহাড়, গাছপালা, ফুল-পাখির
বিচিত্র সমারোহের কথা বলা হয়েছে। যে সৌন্দর্য মানুষকে তৃপ্ত করে,
পরিশীলিত করে। এ সৌন্দর্যের দিকটিরই পরিচয় রয়েছে ‘শিল্পকলার নানা দিক’
প্রবন্ধে। যে সৌন্দর্য মানুষের মনে সৌন্দর্যবোধ সৃষ্টি করে। নতুন কিছু
সৃষ্টির ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি প্রবন্ধের
প্রকৃতি জগতের সৌন্দর্যের দিকটি তুলে ধরেছে।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের অনেক দিকই ফুটে ওঠেনি।”-
মন্তব্যটি যথার্থ।
শিল্পকলা মনে সৌন্দর্যবোধ সৃষ্টি করে। তা দেখে মানুষ নতুন করে সুন্দরকে
সৃষ্টি করে। নানা মাধ্যমে চলে সৃষ্টির এ প্রক্রিয়া। কারণ সুন্দরবোধ
মানুষের মনকে তৃপ্ত করে, পরিশীলিত করে।
উদ্দীপকে প্রকৃতি জগতের বর্ণনা রয়েছে। রয়েছে সৃষ্টির রহস্য।
সৌন্দর্যপিপাসুদের মনকে আকৃষ্ট করে সাগর, নদী, পাহাড়, গাছপালাসহ সৃষ্টির
নানা অনুষঙ্গ। এখানে সৌন্দর্যই মূলকথা। যা মানুষের অশান্ত মনকে তৃপ্ত
করে। প্রকৃতি জগতের এ সৌন্দর্যের বর্ণনা উদ্দীপকে পাওয়া গেলেও প্রবন্ধের
অনেক দিকই উদ্দীপকে ফুটে ওঠেনি। যেমন- চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নৃত্যকলা,
সংগীতকলা, অভিনয়কলা, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য এসবের সামগ্রিক পরিচয়
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে ফুটে উঠলেও উদ্দীপকের এ সকল বিষয়ের দেখা
মেলেনি। উদ্দীপকে কেবল প্রকৃতি জগৎ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও সৌন্দর্যের
গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
উদ্দীপক ও ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধ বিশ্লেষণে দেখা যায়, উদ্দীপকে
যেখানে একটি বিষয় আলোচিত হয়েছে সেখানে প্রবন্ধে বিভিন্ন বিষয়ের অবতারণা
করা হয়েছে। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি সঠিক।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
এবার ঈদে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নাজমা তার বাবার কাছে ‘পাখি ড্রেস’ নামক
জামা দাবি করলে বাবা তাকে জামাটি কিনে দেয়। ঈদের দিন জামাটি পরে নাজমা
বান্ধবীদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সবাই জামাটির সৌন্দর্যের প্রশংসা করে যা
তারও ভালো লাগে। বান্ধবীদের বাড়ি থেকে ফিরে নাজমা জামাটি শোকেসে তুলে
রাখে।
ক. বর্তমানে ছবি আঁকার অত্যন্ত প্রিয় রং কোনটি?
খ. শিল্পকলা সৃষ্টি হয়েছে কেন?
গ. যে কারণে নাজমার জামাটি সবার প্রশংসা পেয়েছে তা ‘শিল্পকলার নানা দিক’
প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নাজমার জামাটি শোকেসে তুলে রাখার মাধ্যমে ‘শিল্পকলার নানা দিক’
প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে কি?- তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি
দাও।
ক. বর্তমানে ছবি আঁকার অত্যন্ত প্রিয় রং হলো জল রং।
খ. মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে, সুন্দরকে অন্য মানুষের মধ্যে বিস্তার করতে
চেয়েছে। তাই সৃষ্টি হয়েছে শিল্পকলা।
মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে তার সেই আনন্দকে, প্রকাশ করতে চায় নানা রূপে।
তাই সৃষ্টি হয়েছে চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি,
সাহিত্যিক। পুরাকালের গুহা মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত
মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে, সুন্দরকে অন্য মানুষের মধ্যে বিস্তার করতে
চেয়েছে। নিজের মানসিকতাকে ভাগ করে নিতে চেয়েছে সকলের সাথে। তাই সৃষ্টি
হয়েছে নানা আঙ্গিকের শিল্পকলা। যেমন : চিত্রকলা, নৃত্যকলা, সংগীতকলা
ইত্যাদি কলা।
গ. সুন্দর জিনিসের একটি বিশেষ গড়ন থাকে, সবকিছুকে সাজাবার একটি
সুবিন্যস্ত নিয়ম থাকে। ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে বর্ণিত সুন্দরের এই
শর্ত পূরণ করার জন্য নাজমার জামাটি সবার প্রশংসা পেয়েছে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে সুন্দরকে জীবনের অপ্রয়োজনীয় দিক নামে
উল্লেখ করলেও সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।
যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয়, খুশি করে তাই সুন্দর। শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ
খুশি হয় না। তাকে সুন্দর হতে হয়। আর সুন্দর হলেই সে বস্তুটিতে মানুষের
সৃষ্টি শিল্পকলার নিজস্ব ধর্ম প্রতিভাত হয়ে ওঠে। কারণ সেখানে লুকিয়ে থাকে
নির্মল আনন্দ।
উদ্দীপকের নাজমা ঈদের দিন ‘পাখি ড্রেস’ নামক জামা পরে বান্ধবীদের বাড়ি
বেড়াতে গেলে সবাই জামাটির সৌন্দর্যের প্রশংসা করে। জামাটি তৈরিতে একটি
সুনিব্যস্ত নিয়ম মানা হয়েছে। পোশাকটিতে একটি বিশেষ গড়ন রয়েছে যা মানুষের
দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বস্তুত জামাটির শিল্পগুণ থাকায় সকলের প্রশংসা পেয়েছে,
প্রয়োজন উহ্য থেকেছে। যেমনটা উদ্দীপকের নাজমার ক্ষেত্রে ঘটেছে এবং
প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে।
ঘ. হ্যাঁ, নাজমার জামাটি শোকেসে তুলে রাখার মাধ্যমে ‘শিল্পকলার নানা দিক’
প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে।
আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ। মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে
তার আনন্দকে প্রকাশ করতে চায় নানা রূপে। আর যা কিছু সুন্দর তার থেকে
মানুষ আনন্দ লাভ করে। তাই সুন্দর সবকিছুর সার্থকতা তার প্রকাশের মধ্য
দিয়েই পূর্ণতা পায়।
উদ্দীপকের নাজমার ‘পাখি ড্রেস’ নামক জামাটি সকলের কাছ থেকে প্রশংসিত হয়।
যার জন্য নাজমাও আনন্দ পায়। কিন্তু নাজমা বান্ধবীদের বাড়ি থেকে ফিরে
জামাটি শোকেসে তুলে রাখে। কিন্তু নাজমার জামাটি তুলে রাখার মাধ্যমে
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে। প্রবন্ধে বলা
হয়েছে, মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে, সুন্দরকে অন্য মানুষের মধ্যে বিস্তার
করতে চেয়েছে। তাই সৃষ্টি হয়েছে নানা আঙ্গিকের শিল্পকলা। সব সুন্দরের
সৃষ্টির মধ্যে একটা রূপ আছে। যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয় তাই সুন্দর।
চিরকাল ধরে মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে অন্যের মধ্যে বিস্তার করতে চেয়েছে
বলেই তার আনন্দকে নানা মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। নাজমার সুন্দর জামাটি
শোকেসে তুলে রাখাতে সৌন্দর্যের প্রকাশ ব্যহত হয়েছে। তাই প্রশ্নের
মন্তব্যের সাথে আমি একমত।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শহরের অধিবাসী শামীম সাহেব গ্রামের নির্জন পরিবেশে ছায়ায় বসে ছবি আঁকেন।
শান্ত-সবুজ পরিবেশে গ্রামীণ প্রকৃতির ছবি আঁকতে তিনি ভালোবাসেন। গ্রামের
ছেলে তমাল তাঁর কাছে জানতে চায় যে, কেন তিনি ছবি আঁকেন? শামীম সাহেব মৃদু
হেসে জবাব দিলেন, ‘ছবি আঁকতে আমার ভালো লাগে তাই আঁকি।
ক. ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের লেখকের নাম কী?
খ. ‘নন্দনতত্ত্ব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের যে দিকটির পরিচয় মিলে তা
ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের শামীম সাহেবের জবাবটিতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের
মূল সত্যটি নিহিত।” বিশ্লেষণ কর।
ক. ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের লেখকের নাম মুস্তাফা মনোয়ার।
খ. সুন্দরকে জানার যে জ্ঞান তার নাম নন্দনতত্ত্ব।
যে কাজ মানুষকে আনন্দ দেয়, খুশি করে তাকে সুন্দর বলা হয়। আর এ সুন্দরকে
জানার জ্ঞানকে নন্দনতত্ত্ব বলে। নন্দনতত্ত্ব মানে সুন্দরকে বিশ্লেষণ করা।
সুন্দরকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা। শিল্পীর শিল্পকে সৌন্দর্যের
দৃষ্টিকোণ থেকে পরীক্ষা বা বিশ্লেষণ অথবা রচনা করার পদ্ধতিই হলো
নন্দনতত্ত্ব। শিল্প সাহিত্য ইত্যাদির সৌন্দর্য সংক্রান্ত মতবাদ বা জ্ঞানই
নন্দনতত্ত্ব।
গ. ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে শিল্পকলার প্রয়োজনাতীত রূপের সাথে
উদ্দীপকের ভালো লাগার স্বাধীনতার সাথে ছবি আঁকার দিকটির মিল রয়েছে।
সৌন্দর্যের প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় দিক রয়েছে যার সার্থক সম্মিলনের ফলে
সৌন্দর্যের আশা বা আকাক্সক্ষা পূর্ণ হয়। ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে
লেখক শিল্পকলার প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রয়োজনীয়তা এ দুটি দিকেরই আলোচনা করেছেন।
শিল্পকলার অপ্রয়োজনীয় রূপ, যেমন : ছবি আঁকা। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় জিনিসের
সুন্দর রূপ, যেমন নকশিকাঁথা। এতে মন ও তুষ্ট হয়।
প্রয়োজনও মেটে। তবে শিল্পকলা চর্চা হলো সুন্দরের চর্চা।
সৌন্দর্যবোধ মানুষের মনকে তৃপ্ত করে। তাই প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিললেই
মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ হয়। উদ্দীপকে শহরের অধিবাসী শামীম সাহেব
শান্ত সবুজ পরিবেশে গ্রামীণ প্রকৃতির ছবি আঁকতে ভালোবাসেন। তমালের
প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান। মনের আনন্দের জন্যই তিনি ছবি আঁকেন। উদ্দীপকে
শামীম সাহেবের এই মনের আনন্দের প্রকাশের কথাই প্রবন্ধে লেখক ব্যক্ত
করেছেন শিল্পকলার প্রয়োজনাতীত রূপের মধ্যদিয়ে।
ঘ. উদ্দীপকের শামীম সাহেবের জবাবটিতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের মূল
সত্যটি নিহিত।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে লেখক শিল্প সৃষ্টির অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য
উদ্ঘাটনের কথা বলেছেন। আত্মার সঙ্গে সৌন্দর্যের মিলনের মধ্যেই আত্মা
আনন্দিত হয়। শিল্পের মধ্য থেকে আনন্দকে খুঁজে পাওয়ার পদ্ধতির কথাই বলেছেন
প্রাবন্ধিক।
উদ্দীপকেও শহরে অধিবাসী শামীম সাহেবের গ্রামীণ প্রকৃতির ছবি আঁকতে
ভালোবাসেন এবং জানান ভালো লাগার কারণেই তিনি ছবি আঁকেন। অর্থাৎ মানসিক
তৃপ্তির কারণেই তিনি ছবি আঁকেন। সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষের যে মানসিক
তৃপ্তির কথা লেখক ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন উদ্দীপকের
শামীম সাহেবের জবাবটিতে সে বিষয়েরই ইঙ্গিত রয়েছে।
মানুষ যখন আনন্দ পায়, তখন সে তার মনকে নানা ভাবে প্রকাশ করতে চায়। নিজের
আনন্দকে অন্য সবার মাঝে বিস্তার করতেই সে সৃষ্টি করে নানাশিল্প। অর্থাৎ
আনন্দের বা ভালো লাগার বহিঃপ্রকাশ থেকে শিল্পের সৃষ্টি। যা উদ্দীপকে
শামীম সাহেবের জবাবে এবং প্রবন্ধে লেখকের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। তাই বলা
যায়, শামীম সাহেবের জবাবটিতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের মূল সত্যটি
নিহিত।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শিল্পী তার নিজের মনের আলোতে কোনো বিশেষ মানুষকে বা সৃষ্টিকে প্রত্যক্ষ
করে অন্যের মনের কথা চিন্তার মাধ্যমে পরিপূর্ণ করে প্রকাশ করে। বিশেষকে
তিনি নির্বিশেষরূপে, সর্বজন হৃদয়বেদ্য করে বস্তুরূপে মূর্ত করে তোলেন।
তার মনের ধারাটি একটি সূত্র বা চিহ্ন অবলম্বন করে তখন যেকোনো একটি রূপ
পরিগ্রহ করে। সেই চিহ্নই কোথাওবা মূর্তি, কোথাও বা মন্দির, কোথাও বা
তীর্থ, কোথাওবা রাজধানী।
ক. ‘ভুবন’ শব্দের অর্থ কী?
খ. শিল্পের সৃষ্টি হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকে শিল্প সৃষ্টির সঙ্গে শিল্পীর যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে তা
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘বিশেষকে তিনি নির্বিশেষরূপে, সর্বজন হৃদয়বেদ্য করে বস্তুরূপে মূর্ত
করে তোলেন’- উক্তিটি ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ক. ‘ভুবন’ শব্দের অর্থ পৃথিবী বা জগৎ।
খ. মানুষের নিজের আনন্দকে, সুন্দরকে অন্যের মাঝে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে
সৃষ্টি হয়েছে শিল্প।
সব মানুষই জীবনে আনন্দকে পাওয়ার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর
আমরা আনন্দ বুঝি রূপ-রস-স্পর্শ-গন্ধ ইত্যাদির সাহায্যে। মানুষ যখন আনন্দ
পায় তখন সে নানা ভাবে তার এ আনন্দকে প্রকাশ করতে চায়। তাই নানা রূপের
মাধ্যমে সে নিজেকে প্রকাশ করে। মানুষের এই আনন্দকে প্রকাশ করার ইচ্ছা
থেকেই শিল্পের সৃষ্টি হয়েছে।
গ. শিল্পীর মনের আনন্দ প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই শিল্পের সৃষ্টি আর এখানেই
শিল্পের সঙ্গে শিল্পীর সম্পর্ক।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক শিল্প সৃষ্টির অন্তর্নিহিত
সৌন্দর্য উদ্ঘাটনের কথা বলেছেন। আত্মার সঙ্গে সৌন্দর্যের মিলনের মধ্যেই
আত্মা আনন্দিত হয়। শিল্পের মধ্যে থেকে এ আনন্দকে খুঁজে পাওয়ার পদ্ধতির
কথাই উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে।
আনন্দ প্রকাশের ইচ্ছা এবং বিভিন্ন ভাবে এর প্রকাশ করার মধ্যেই শিল্পের
সঙ্গে শিল্পীর সম্পর্ক। সহৃদয় পাঠক মাত্রই যেন সে সৌন্দর্যকে উপলব্ধি
করতে পারে। উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে একজন শিল্পীর শিল্প সৃষ্টির কলাকৌশল।
শিল্পী যখন তার নিজের মনের আলোতে কোনো সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করেন তখন
অন্যের মনের কথা বা ভাবময়রূপে সেই সৌন্দর্য তিনি প্রকাশ করেন। বিশেষকে
তিনি নির্বিশেষরূপে সর্বজনবেদ্য করে শিল্পটিকে গড়ে তোলেন। তাঁর সেই মনের
বিশেষ ভাবটিই তিনি ফুটিয়ে তোলেন শিল্পের মধ্য দিয়ে।
ঘ. “বিশেষকে তিনি নির্বিশেষ রূপে, সর্বজন হৃদয়বেদ্য করে বস্তুরূপে মূর্ত
করে তোলেন”- আলোচ্য উক্তিটিতে শিল্পী কীভাবে শিল্প সৃষ্টি করেন সে বিষয়টি
ব্যক্ত হয়েছে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মূলত একটি সত্যকেই প্রকাশ করতে
চেয়েছেন যে, শিল্পী তার মনের সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় তার সৃষ্ট ও কল্পিত
বস্তুকে নানাভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। শিল্পীমন সৃষ্টিশীল, তিনি
বিশেষ বস্তুকে তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আরও সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেন। তাই
বিশেষ বস্তুকে তিনি নির্বিশেষরূপে, অর্থাৎ তা আর কোনো বিশেষ ব্যক্তির
জন্য সৃষ্টি করেন না, তা তিনি সৃষ্টি করেন সকল মানুষের জন্য।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে একজন শিল্পীর শিল্প সৃষ্টির যে দক্ষতা, তার মধ্য
দিয়ে সে চেষ্টা করে কোনো সাধারণ বস্তুর মধ্য দিয়ে সেটির অনন্তরূপে ফুটিয়ে
তোলার। শিল্পীর মনে কোনো সাধারণ বস্তুও যদি অন্যরূপে ধরা দেয়, শিল্পীর
মনে আনন্দ সৃষ্টি করে তবে সে তার আনন্দকে, তার পর্যবেক্ষণ শক্তিকে প্রকাশ
করতে চায় সবার মাঝে।
শিল্পীর মনের এ ধারাটিই বিশেষ চিহ্নরূপে বা সূত্ররূপে প্রকাশিত হয়। এ
চিহ্নটিই প্রকাশ হয় অসাধারণভাবে, নির্বিশেষরূপে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
“অন্তর হতে আহরি বচন
আনন্দলোকে করি বিরচন
গীতরসধারা করি সিঞ্চন
সংসার-ধূলি জালে”
ক. গড়ন শব্দের অর্থ কী?
খ. শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না কেন?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের মধ্য দিয়ে যে সত্যটি উন্মোচিত হয়েছে তা
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ক. ‘গড়ন’ শব্দের অর্থ আকার।
খ. প্রয়োজনের বাইরে মানুষের মনে রয়েছে স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধ। তাই
প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানারকম বস্তুর প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের
প্রয়োজনীয় এ বস্তুগুলোর প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী হলেই হয়। কিন্তু মানুষ এ
বস্তুগুলো শুধু প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী করেই সৃষ্টি করে না, এর সঙ্গে
থাকে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। কারণ, প্রয়োজন মেটাবার পর মানুষের মনের
স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধ থেকেই দৃষ্টি পড়ে বস্তুটির সৌন্দর্যের দিকে। আর
এজন্যই প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না।
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের মধ্য দিয়ে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের যে
সত্যটি উন্মোচিত হয়েছে, তাহলো আনন্দবোধ থেকেই সব শিল্পের সৃষ্টি।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক নানা শিল্প সৃষ্টির কারণ
হিসেবে বিমূর্ত ভাবনায় মূর্ত শিল্প সৃষ্টির আনন্দকেই উপস্থাপন করেছেন।
পৃথিবীর সবকিছুতেই আনন্দের উৎস লুকিয়ে আছে আর মানুষ এ আনন্দকে পাওয়ার
জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মনের ভাব, ভাষা, অনুভূতিকে শিল্পী
বিভিন্ন ব্যঞ্জনায় সবার মধ্যে উন্মোচিত করে। কল্পনা আর বাস্তবের মেলবন্ধন
ঘটিয়ে ফুটিয়ে তোলে ক্যানভাসে, যা আত্মার আনন্দেরই বহিঃপ্রকাশ।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির মনের অনুভূতিই প্রকাশিত হয়েছে। নিজের মনের
আনন্দের যে অনুভূতি তা কবি আপন ভাষায় প্রকাশ করেন সাহিত্যে। সাহিত্য
শিল্পে কবি নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে আনন্দালোকে বিরচণ করেন। মূলত কবি
মনের আনন্দ সৃষ্টির জন্যই সৃষ্টি করেন সাহিত্যশিল্প।
ঘ. ‘আনন্দালোকে করি বিরচন’- এ কথাটির মধ্য দিয়ে কবির আপন সৃষ্ট আনন্দের
ধারা বোঝানো হয়েছে।
কবিমানসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যঞ্জনা শিল্পের আকার পেয়ে
আনন্দলোকের সূচনা করে। ঠিক একই ভাব প্রাবন্ধিকের লেখনীতেও উঠে এসেছে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক নানান আঙ্গিকের শিল্পকলা
সৃষ্টির কথা বলেছেন। পুরাকালের গুহামানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ
পর্যন্ত মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে ও সুন্দরকে অন্য মানুষের মধ্যে
বিস্তার করতে চেয়েছেন। তাই কবি তার মনের বিমূর্ত ধারণাকে ভাষা দিয়ে মূর্ত
করে তোলেন কবিতায়। রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধের সাহায্যে মনের তৃষ্ণা মেটান
কবিতা সৃষ্টি করে। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি মনের অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি সংসারের দুঃখকষ্টপূর্ণ জীবন থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে আনন্দের সাগরে
ভাসিয়ে দিতে চান। তাই কবি নিজ মনের ব্যক্তিগত অনুভূতিকে ভাষার মাধ্যমে
প্রকাশ করেন সবার মাঝে, যা শুধু ব্যক্তি কবি নন, সবার জন্যই আনন্দের উৎস।
যা সংসারে শত দুঃখকষ্টের মধ্যে ক্ষণিকের জন্যও আনন্দের সৃষ্টি করে।
আনন্দ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই শিল্পের সৃষ্টি। ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে
শিল্প সৃষ্টির এ কারণ বর্ণিত হয়েছে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার অন্ত নেই। সে নিজেকে বাইরের জগতে প্রকাশ করতে
চায়। মানুষ অপরের মধ্যে নিজেকে পেতে চায়। এ জন্যই সে ভগবানের মতো নিজেকেই
প্রকাশ করতে চায়। একজন সাহিত্যিক যখন আত্মপ্রকাশ করেন তখন তিনি
বাহ্যজগতের রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দকে নিত্য অনুভূতি রসে সিক্ত করে
প্রকাশ করেন। নিজের কথা, পরের কথা, সাহিত্যিকের মনোবীণায় যে সুরে ঝঙ্কৃত
হয়, তার শিল্পসংগত প্রকাশই সাহিত্য।
ক. ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানের রূপকার কে?
খ. আনন্দকে আমরা কীভাবে বুঝি? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাহিত্যিকের আত্মপ্রকাশের কারণ ‘শিল্পকলার নানা
দিক’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘কালি কলম মন, লেখে তিন জন’- উদ্দীপক ও ‘শিল্পকলার নানা দিক’
প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
ক. ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানের রূপকার চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।
খ. আনন্দকে আমরা বুঝি রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ ইত্যাদির সাহায্যে ও
ইন্দ্রিয়সকলের সাহায্যে।
সব মানুষই জীবনের আনন্দ পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত নানাভাবে চেষ্টা করে
যাচ্ছে। আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ। আমরা আমাদের বিভিন্ন
ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আনন্দকে বুঝি। চোখের দেখা, মনের অনুভূতি, স্পর্শ,
গন্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা আনন্দকে বুঝি।
গ. একজন মানুষ নিজেকে দেখতে চায় অন্যের মধ্যে এরকম ইচ্ছা থেকেই আবির্ভাব
ঘটে একজন সাহিত্যিকের।
মানুষ তার চারপাশের অলক্ষ্যে রয়ে যাওয়া বিভিন্ন উপাদান লেখনীতে ধারণ করে
অপরের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে চায়। এর থেকেই উদ্ভব হয় সাহিত্য এবং
সাহিত্যিকের।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে
তার নিজের পাওয়া আনন্দকে ছড়িয়ে দিতে চায় চারপাশে। নিজের আনন্দকে সে
অন্যের মধ্যে দেখতে চায়। এ জন্যই সে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। আর এই
আত্মপ্রকাশের ইচ্ছা থেকেই সৃষ্টি হয় শিল্পকলার। সাহিত্য শিল্পকলার একটি
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে মানুষের
আশা-আকাক্সক্ষা অসীম। সে নিজেকে বাইরে প্রকাশ করতে চায়। নিজের প্রতিচ্ছবি
অন্যের মধ্যে দেখতে চায়। এভাবেই একজন সাহিত্যিক আত্মপ্রকাশ করে। সে নিজের
কথা, পরের কথা সাহিত্যিকের মনোবীণায় যে সুরে ঝঙ্কৃত হয় তার কারণেই
সাহিত্যের সৃষ্টি হয়। ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে
মনের আনন্দ থেকেই সাহিত্যের সৃষ্টি হয়। ঘ. সাহিত্যিক সাহিত্য সৃষ্টি করেন
কালি কলম মন এই তিনের সমন¦য়ে। তাই বলা যায়, ‘কালি কলম মন লেখে তিনজন’।
সাহিত্যিক জীবনের প্রতিচ্ছবি শিল্পের সাহায্যে ছাপার অক্ষরে রূপান্তর
করেন এই ক্ষেত্রে তার মন, মানসিকতার সাথে কাগজ এবং কালির রেখায় অঙ্কিত হয়
মানবকাব্য।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে লেখক নানান আঙ্গিকের শিল্পকলা সৃষ্টির কথা
বলেছেন। তার মধ্যে সাহিত্য শিল্পকলার একটি প্রসিদ্ধ শাখা। সাহিত্যিক তার
মনের কল্পনাকে কালি কলমের মাধ্যমে রূপদান করেন। মূলত সাহিত্যের মাধ্যমে
সাহিত্যিক নিজেকে প্রকাশ করতে চান। নিজের আনন্দকে তিনি অন্যের সঙ্গে
ভাগাভাগি করতে চান। তার এই নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম হলো মন, কালি আর কলম।
মন, কালি ও কলম দ্বারা ঐতিহ্য, শিল্প ও যুগের মাঝে সমন্বয় সৃষ্টি করা
হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার অন্ত নেই। সে
নিজেকে বাইরে দেখতে চায়। মানুষের মধ্যে, অন্যের মধ্যে সে নিজের ছায়া
দেখতে পায়। একজন সাহিত্যিক সৃষ্টিশীল ক্ষমতা নিয়ে বাহ্য জগতের অনুভূতি
রসে সিক্ত হয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেন। এখানে সমন¦য় ঘটে তার মনের, কল্পনার,
কলমের আর কালির।
সুতরাং বলা যায় যে, আলোচ্য মন্তব্যটি যথার্থ।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২:
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মাদাম তুসো মিউজিয়ামে বর্তমান ও অদূর অতীতের ঐতিহাসিক নায়ক-নায়িকাদের
মোমের মূর্তি তৈরি করে রাখা হয়েছে। বিস্মিত হতে হয় এসব মূর্তির
শিল্পীমনের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণশক্তি দেখে। দৈনন্দিন জীবনে যে ভঙ্গি যাঁর
সবচেয়ে স্বাভাবিক এবং বহুল পরিচিত, তাঁকে তাঁর বিশিষ্ট ভঙ্গিতে মোমের
মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে। মাথার চুল, চোখের চাউনি মুখের ভঙ্গি, পোশাকের
বিশিষ্টতা, সব নিয়ে বিশিষ্ট মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে শিল্পীর মনোজগতে ধরা
পড়ে এখানে বন্দি হয়ে আছে।
ক. মুস্তাফা মনোয়ার কোথায় অধ্যাপনা করেছেন?
খ. ‘যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয়, খুশি করে, তাই সুন্দর’।- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনাটির সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের মূলভাব প্রকাশ করে কি? মতের
পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।
ক. মুস্তাফা মনোয়ার ঢাকায় চারুকলা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন।
খ. ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় লেখক শিল্পের বৈশিষ্ট্য ও সুন্দরের ধারণা
ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয়, খুশি করে তাই
সুন্দর’।
শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে সুন্দরকে প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতি জগতে নানাভাবে
সুন্দরের প্রকাশ ঘটে। কখনো রেখার সাহায্যে, কখনো রঙের সাহায্যে, কখনো
মাটি বা পাথরের সাহায্যে সুন্দরকে সৃষ্টি করা হয়, যা মানুষকে আনন্দ দেয়।
এ প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে, যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয় খুশি করে, তাই সুন্দর।
গ. শিল্প সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও সৌন্দর্যবোধের দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে
‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনার সাদৃশ্য রয়েছে।
মুস্তাফা মনোয়ার শিল্পকলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন তাঁর ‘শিল্পকলার নানা
দিক’ রচনায়। চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নৃত্যকলা, সংগীতকলা, অভিনয় কলা,
চলচ্চিত্র, স্থাপত্য, নকশিকাঁথা ইত্যাদি শিল্পের পরিচয় এ রচনায় তুলে
ধরেছেন। শিল্প হচ্ছে সুন্দরের সৃষ্টি। যা প্রদত্ত উদ্দীপকেরও অন্তঃস্থ
ভাব।
উদ্দীপকে বর্ণিত লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়ামে তার ভাস্কর্য সৌন্দর্যের
মূর্তিরূপ ফুটে উঠেছে। এখানে বর্তমান ও অদূর অতীতের ঐতিহাসিক বিখ্যাত
ব্যক্তিদের মোমের মূর্তি তৈরি করে রাখা হয়েছে। মূর্তিগুলো যেন মূর্তি নয়,
একেবারে জীবন্ত মানুষ। মূর্তিগুলোতে বিশিষ্ট মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে
শিল্পীর মনোজগতে ধরা পড়ে বন্দি হয়ে আছে। মোমের মূর্তি তৈরিতে শিল্পী আপন
সৃজনশীলতা দিয়ে বর্তমান ও অতীতের ঐতিহাসিক নায়ক-নায়িকাদের মূর্তি করে
তুলেছেন। ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায়ও ভাস্কর্য শিল্পের কথা বলা হয়েছে।
প্রত্যেকটি শিল্পকর্মে শিল্পীসত্তার বোধের দিকটি ফুটে উঠেছে। নির্মাণ
কৌশলের দিক থেকে সামান্য পার্থক্য থাকলেও এখানেই উদ্দীপক ও ‘শিল্পকলার
নানা দিক’ রচনার সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের মূলভাব প্রকাশ করেছে।
আনন্দকে প্রকাশের প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় সকল দিকের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়
শিল্পকলার। বিভিন্ন মাধ্যমে শিল্পের সৃষ্টি হয় যা প্রবন্ধ এবং উদ্দীপকে
আলোচিত হয়েছে।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় শিল্পসৃষ্টির মধ্য দিয়ে শিল্পী মুস্তাফা
মনোয়ার আনন্দ ও সুন্দরকে প্রকাশের কথাই বলেছেন। প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন
মিলিয়েই মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ হয় শিল্পের মাধ্যমে। মানুষ লেখনীর
মাধ্যমে যেমন সুন্দরের সৃষ্টি করে তেমনি মাটি, পাথর, মোম দিয়েও তৈরি করে
নানা শিল্প সৌন্দর্য। তেমনি এক শিল্প সৌন্দর্যের পরিচয় পাওয়া যায়
উদ্দীপকে।
উদ্দীপকে বর্ণিত লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়ামেও ভাস্কর্যের আদলে মূর্তি
তৈরি করে রাখা হয়েছে। অতীত ও বর্তমানের অনেক বিখ্যাত ঐতিহাসিক
ব্যক্তিবর্গ মাদাম তুসোতে মোমের মূর্তিরূপে অবস্থান করছেন। মোমের তৈরি এ
মূর্তিগুলোতে শিল্পীমনের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
তাই উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপক ও ‘শিল্পকলার নানা
দিক’ রচনার মূলভাব অভিন্ন।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩:
রোমান, শম্পা ও রাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরতে এসেছে। তারা
প্রথমেই অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে যায় এবং বিশাল আকৃতির ভাস্কর্য দেখে
অভিভূত হয়। পরে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভেতর প্রবেশ করে নানা রকম ভাস্কর্য
দেখতে পায় এবং একদল লোকের দেখা পায় তারা বিভিন্ন রং দিয়ে ছবি আঁকছে।
শম্পার শখ হয় নিজের একটি ছবি আঁকিয়ে নিতে। তাই সে নিজের একটা ছবি আঁকিয়ে
নিয়ে বাড়ি ফেরে।
ক. মুস্তাফা মনোয়ার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. শিল্পকলা সৃষ্টি হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
নির্ণয় কর।
ঘ. উদ্দীপকে শিল্পকলার যেসব উপাদানের চিত্র পাওয়া যায় তাই উঠে এসেছে
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে বিশ্লেষণ কর। প্রশ্ন-১২ শাকিব ৫ম
শ্রেণির ছাত্র। শহর ছেড়ে গ্রামে ঘুরতে গিয়ে শাকিবের চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ
বৃক্ষরাজি, নদীতে পালতোলা নৌকা বয়ে চলা, গ্রামের বধূদের নদী থেকে কলসি
কাঁখে পানি নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্য তাকে হতবাক করে দেয়। শাকিব বাড়িতে ফিরে
তার দেখা গ্রামের দৃশ্য রংতুলির স্পর্শে জীবন্ত করে তোলে।
ক. ‘শিল্পকলা’ অর্থ কী?
খ. “নিয়মটি না জানলেও সুন্দরকে চেনা যায়”- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের শাকিব চরিত্রের শিল্পীমনের বিকাশ ‘শিল্পকলার নানা দিক’
রচনার কোন দিককে প্রকাশ করে?
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবের ধারক”
মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪:
প্রকৃতিতে সুন্দরের প্রকাশ ঘটে নানা আঙ্গিকে। তা অনুভব করে মানুষ নতুন
নতুন রূপে সুন্দরকে সাজায়। চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সংগীত, নৃত্য,
কবিতা সবকিছুর মাধ্যমেই চলে এই প্রক্রিয়া। সৌন্দর্যবোধ মানুষকে তৃপ্ত ও
পরিশীলিত করে।
ক. সুন্দরকে জানার যে জ্ঞান তার নাম কী?
খ. শিল্পকলা কেন মনকে মুগ্ধ করে?
গ. উদ্দীপকটির মূলভাব কেমন করে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের মূলভাবের
সাথে সম্পর্কযুক্ত, তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘সৌন্দর্যবোধ মানুষকে তৃপ্ত ও পরিশীলিত করে।’ এ বাক্যটি ‘শিল্পকলার
নানা দিক’ প্রবন্ধানুসারে বিশ্লেষণ কর।
তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।