‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
শিল্পকলার নানা দিক |
শিল্পকলার নানা দিক
মুস্তাফা মনোয়ার
আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে'-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এই কথাগুলিতে শিল্পকলার মূল সত্যটি প্রকাশ পেয়েছে। সব মানুষই জীবনের এই আনন্দকে পাওয়ার জন্যে কত রকম চেষ্টা করে যাচ্ছে। আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ। আনন্দকে আমরা বুঝি রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ ইত্যাদির সাহায্যে, ইন্দ্রিয়সকলের সাহায্যে। মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে তার মনকে প্রকাশ করতে চায়-নানা রূপে। তাই সৃষ্টি হলো চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক। পুরাকালের গুহামানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে সুন্দরকে অন্য মানুষের মধ্যে বিস্তার করতে চেয়েছে। তাই সৃষ্টি হয়েছে নানান আঙ্গিকের শিল্পকলা। যেমন- চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নৃত্যকলা, সংগীতকলা, অভিনয়কলা, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য ইত্যাদি কলাভঙ্গি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ তার নিত্য নতুন অবদান রেখে চলেছে শিল্পকলার বিস্তীর্ণ অঙ্গনে। শিল্পকলার একটি অস্পষ্ট অর্থ আমরা বুঝতে পারি কিন্তু শিল্পকলার সঠিক অর্থ কী আর শিল্পকলার গুণাগুণ কী, এই প্রশ্ন যদি কেউ করে, তাহলে উত্তর দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন গান শুনে ভালো লাগে, ছবি দেখে ভালো লাগে, কিন্তু ভালো লাগে কেন? এই প্রশ্ন নিয়ে মানুষের মন চিন্তা-ভাবনা করতে লাগল। দেখা গেল, সক শিল্পকলায় রূপ আছে, ছন্দ আছে, সুর আছে, রং আছে, বিশেষ গড়ন আছে, সবকিছুকে সাজাবার একটি সুবিন্যস্ত নিয়ম আছে। এই নিয়মটি লুকিয়ে থাকে, নিজেকে প্রকাশ করে না, সুন্দরের মধ্যে মিলেমিশে একটা বন্ধন সৃষ্টি করে। নিয়মটি না জানলেও সুন্দরকে চেনা যায়। একটি উপমা দেয়া যাক। পৃথিবীর সব ফুলই একই নিয়ম মেনে ফুল নাম পেয়েছে। আমরা দেখে বলি সুন্দর। এর নিয়মটি হলো, একই বিন্দু থেকে সকল পাপড়ি বিন্দুর চারিদিকে ছড়িয়ে থাকবে। কিন্তু এক নিয়ম মেনেই কত রকম ফুল। নিয়ম মেনেও ফুল স্বাধীনভাবে ফুটে ওঠে। তোমাদের এখন সুন্দরের নিয়ম জানতে হবে না, সুন্দর লাগলেই সুন্দর বলবে। সুন্দর দেখতে দেখতেই একদিন সুন্দরের বিশেষ বিশেষ নিয়মগুলি জানতে পারবে। শুধু এইটুকু জেনে রাখো, সুন্দরকে জানার যে জ্ঞান তার নাম 'নন্দনতত্ত্ব'। নন্দনতত্ত্ব মানে সুন্দরকে বিশ্লেষণ করা, সুন্দরকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা। সব সুন্দরের সৃষ্টির মধ্যেই একটা রূপ আছে, তার নাম স্বাধীনতা-অপর নাম যা খুশি তাই করা। যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয় খুশি করে, তাই সুন্দর। স্বার্থপর বা অসংগত আমি-র খুশি নয়, অনেক মনে খুশির বিস্তার করা আমি। অন্ধকার ঘর আলোকিত করবার জন্যে নিয়ম মেনে প্রদীপ জ্বালাতে হয়, ঘরে অসংগত আগুন লাগিয়ে ঘর আলোকিত করা নয়।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে, কত রকম জিনিস প্রয়োজন হয়-ঘটি, বাটি থেকে বিছানাপত্র। শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না-মানুষের মন বলে, প্রয়োজন মিটলেই হবে না তাকে সুন্দর হতে হবে। যেমন নকশি কাঁথা, রাত্রে বিছানায় গায়ে দিয়ে শোওয়ার জন্য একটি সামগ্রী-সেটা তো সুন্দর-অসুন্দর হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই প্রয়োজনের জিনিসকে সুঁই আর রঙিন সুতা দিয়ে অপূর্ব নকশা করে সাজিয়েছে গাঁয়ের বধুরা। নকশিকাঁথা দেখলেই সুন্দর লাগে, জিনিসটির প্রয়োজনের কথা মনেই পড়ে না। এ কারণেই সকল জ্ঞানী মানুষ বলেন, সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে। প্রয়োজনের কাজ মিটল তো শরীরকে তৃপ্ত করল, আর প্রয়োজনের বাইরে যে সুন্দর তা মনকে তৃপ্ত করল। অর্থাৎ প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলিয়েই মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ হয়।এবার বিভিন্ন শিল্পকলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত করে কিছু বলা যাক। ছবি আঁকা। বিশ্বের সকল দেশেই শিশুরা ছবি আঁকে। বাংলাদেশের ছোটরাও খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পারে। ছবি আঁকা মানে 'দেখা শেখা'। ছোটরা প্রকৃতিকে দেখে, মা-বাবা, ভাই-বোন মিলিয়ে একটা সমাজকে দেখে। প্রতিদিনের দেখা বিষয়বস্তু, রং, গড়ন, আকৃতি শিশুমনের কল্পনার সঙ্গে মিলেমিশে যায়। নানা রকম গল্প শুনে, দেশের কথা শুনে, কবিতা ছড়া শুনেও শিশু মনে ছবি তৈরি হতে থাকে। এ সকল দেখা-অদেখা বস্তু নিয়ে শিশুরা ছবি আঁকে কল্পনা-বাস্তব মিলিয়ে। নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতে শেখে। সকল শিল্পকলার মধ্যে কতকগুলি মূল বস্তু থাকে যেমন-বিন্দু, রেখা, রং, আকার, গতি বা ছন্দ, আলোছায়া গাঢ়-হালকার সম্পর্ক ইত্যাদি। এই সকলের মিলনেই হয় ছবি বা ভাস্কর্য। আর আছে মাধ্যম, অর্থাৎ কোন মাধ্যমে শিল্পসৃষ্টি হয়েছে। চিত্রকলার মাধ্যম হলো কালি-কলম, জল রং, প্যাস্টেল রং, তেল মিশ্রিত রং ইত্যাদি। ছোটদের জন্য প্যাস্টেল ও জল রং ব্যবহার করা সহজ হয়। বাংলাদেশে পুরাকালে জল রং দিয়েই ছবি আঁকত শিল্পীরা। পুরাতন পুথিতে তালপাতায় আঁকা ছবির বহু নিদর্শন আছে। বর্তমানেও জল রং অত্যন্ত প্রিয়, তবে এখন আর কেউ তালপাতায় আঁকে না, কাগজে আঁকে।
ভাস্কর্য। নরম মাটি দিয়ে কোনো কিছুর রূপ দেয়া বা শক্ত পাথর কেটে কোনো গড়ন বানানো। বিশেষ এক ধরনের ছাঁচ বানিয়ে গলিত মেটাল ঢেলে গড়ন বানানো, এই ধরনের কাজকে বলে ভাস্কর্য। আমাদের দেশে পোড়ামাটির ভাস্কর্য খুব প্রসিদ্ধ ছিল। আমাদের সংস্কৃতি বা কালচার গড়ে উঠেছে নানান শিল্পকলার কারুকাজ দিয়ে। সকল শিল্পীর একটি দায়িত্ব আছে-দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা। বাংলায় একটি কথা আছে-‘কালি কলম মন, লেখে তিন জন’-কালি মানে দেশের ঐতিহ্যে হাজার বছর প্রবাহিত কালি, কলম হলো শিল্পসৃষ্টির বর্তমান সরঞ্জাম, আর মন হলো বর্তমান যুগের সঙ্গে ঐতিহ্যের মিল করে নিজেকে প্রকাশ করার মন। একটি দেশকে জানা যায় দেশের মানুষকে জানা যায় তার শিল্পকলা চর্চার ধারা দেখে। শিল্পকলা চর্চা সকলের জন্য অপরিহার্য।
উৎস নির্দেশ : |
---|
-- |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ ভুবন- পৃথিবী, জগৎ, ভূমণ্ডল। ➠ শিল্পকলা- সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নাচ, গান প্রভৃতি এর অন্তর্ভুক্ত। ➠ রস- সাহিত্য পাঠ করে বা ছবি দেখে মনে যে অনুভূতি জাগে। ➠ পুরাকাল- প্রাচীনকাল, অনেক আগেকার সময়। ➠ গুহা- মানুষ প্রাচীনকালে গুহায় বসবাসকারী মানুষ। ➠ ভাস্কর্য- পাথর, ধাতু, কাঠ প্রভৃতি দিয়ে বানানো শিল্পকর্ম। ➠ স্থাপত্য- গৃহ বা ভবন নির্মাণের কাজ, নির্মাণশিল্প। ➠ প্রাত্যহিক- প্রতিদিনের। ➠ নকশিকাঁথা- সুই-সুতা দিয়ে নকশা করে বানানো কাঁথা। ➠ গড়ন- আকার, আকৃতি, রূপ। |
পাঠের উদ্দেশ্য : |
---|
‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীদের মনে সৌন্দর্যবোধ সৃষ্টি হবে। চিত্রকলা, ভাস্কর্য প্রভৃতি সম্পর্কে তারা আগ্রহী হবে। তারা নতুন কিছু সৃষ্টির ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হবে। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনাটিতে লেখক সুন্দরের ধারণা ব্যক্ত করেছেন। চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সংগীত, নৃত্য, কবিতা সবকিছুর মধ্য দিয়েই সুন্দরকে প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতি জগতে সুন্দরের প্রকাশ ঘটে নানাভাবে। তা দেখে মানুষ নতুন করে সুন্দরকে সৃষ্টি করে। বিভিন্ন মাধ্যমে চলে সৃষ্টির এই প্রক্রিয়া। কখনো রেখার সাহায্যে, কখনো রঙের সাহায্যে, কখনো মাটি বা পাথরের সাহায্যে সুন্দরকে সৃষ্টি করা হয়। সুন্দর বোধ মানুষের মনকে তৃপ্ত করে। মানুষকে তা পরিশীলিত করে। সুন্দরের সৃষ্টিতে সকলেরই চেষ্টা করা উচিত। |
লেখক পরিচিতি : |
---|
মুস্তাফা মনোয়ার একজন চিত্রশিল্পী। তাঁর জন্ম ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে, ঝিনাইদহ জেলার মনোহরপুর গ্রামে। কবি গোলাম মোস্তফা তাঁর পিতা। তিনি কলকাতা আর্ট কলেজের কৃতী ছাত্র। ঢাকায় চারুকলা কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে পাপেট থিয়েটার ও অ্যানিমেশন শিল্পকলায় আধুনিকতা প্রচলনে তিনি অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া 'মনের কথা' নামে বাংলাদেশ টেলিভিশনে দীর্ঘকাল শিশুদের উপযোগী শিল্পকলাবিষয়ক একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। ১৯৭২ সাল থেকে প্রচারিত শিশু প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে বহুল জনপ্রিয় 'নতুন কুঁড়ি' অনুষ্ঠানের রূপকার তিনি। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রযোজনায় তিনি মৌলিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। মুস্তাফা মনোয়ার বিশিষ্ট নৃত্য পরিকল্পনাকারী ও সংগীত পরিচালক। দ্বিতীয় ও যষ্ঠ সাফ গেমসের মাসকট নির্মাতা তিনি। তিনি একুশে পদকসহ বহু পদক ও পুরস্কার লাভ করেছেন। |
কর্ম-অনুশীলন : |
---|
ক. সুনির্দিষ্ট বিষয় অবলম্বনে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করো (শ্রেণির
সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে)। খ. শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে স্পষ্ট ও সুন্দর হস্তাক্ষর প্রতিযোগিতার আয়োজন করো। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
১. মুস্তাফা মনোয়ার হলেন একজন- ক. চিত্রশিল্পী খ. ভাস্কর্যশিল্পী গ. স্থাপত্যশিল্পী ঘ. কারুশিল্পী ২. কোনটির মধ্য দিয়ে একটি দেশ এবং দেশের মানুষকে জানা যায়? ক. শিল্পকলাচর্চা খ. সাহিত্যচর্চা গ. বিজ্ঞানচর্চা ঘ. চিত্রকলাচর্চা ৩। ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে’ বলতে বোঝানো হয়েছে- i. প্রয়োজনের মধ্যে সৌন্দর্য প্রকাশ পায় না ii. অপ্রয়োজনীয় অংশই কেবল মানব-মনকে তৃপ্ত করে iii. প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলে সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে নিচের কোনটি সঠিক? ক. i গ. ii ও iii খ. iii ঘ. i, ii ও iii উদ্দীপকটি পড় এবং ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও: তকিব হাসান কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স পড়ছেন, সারাক্ষণ তার রুমের দরজা-জানালা বন্ধ করে কম্পিউটার নিয়ে তিনি বসে থাকেন। ছোট বোন মোহনা পূর্ণিমার রাতে ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখতে বললে সে বলে-ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখার কী আছে, জানালা দিয়েই তো চাঁদ দেখা যায়। সে সব সময় মুখটা কেমন গম্ভীর করে বসে থাকে। সবার সাথে মেশেও না। ৪. শিল্পকলার বিচারে তকিব হাসানের মনে কীসের অভাব আছে? ক. আনন্দ ও আকাঙ্ক্ষা খ. ভাব ও অনুসন্ধিৎসা গ. আনন্দ ও অনুভূতি ঘ. আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ ৫. ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের আলোকে তকিব হাসানের উক্ত অভাববোধ থাকার কারণ- ক. শিল্পচর্চার অভাব খ. শিল্পকলার প্রতি অনাসক্তি গ. সাহিত্যচর্চার অভাব ঘ. প্রকৃতির প্রতি অনাসক্তি |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. মুস্তাফা মনোয়ারের শিশুদের শিল্পকলা বিষয়ক অনুষ্ঠানটির নাম কী? উত্তর : মুস্তাফা মনোয়ারের শিশুদের শিল্পকলা বিষয়ক অনুষ্ঠানটি ‘মনের কথা’। ২. দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ সাফ গেমসের মাসকট নির্মাতা কে? উত্তর : দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ সাফ গেমসের মাসকট নির্মাতা মুস্তাফা মনোয়ার। ৩. ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানের রূপকার কে? উত্তর : ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানের রূপকার মুস্তাফা মনোয়ার। ৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত কোন গানে শিল্পকলার মূল সত্যটি প্রকাশ পেয়েছে? উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আনন্দধারা বহিছে ভুবনে গানে শিল্পকলার মূল সত্যটি প্রকাশ পেয়েছে। ৫. জীবনীশক্তির প্রবলতার প্রকাশের মাধ্যম কী? উত্তর : জীবনীশক্তির প্রবলতার প্রকাশের মাধ্যম আনন্দ প্রকাশ। ৬. ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।’কথাটি কারা বলেন? উত্তর : ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।’ কথাটি বলেন জ্ঞানীরা। ৭. বিন্দু, রেখা, রং, আকার, গতি বা ছন্দ, আলোছায়া ইত্যাদি কী? উত্তর : বিন্দু, রেখা, রং, আকার, গতি বা ছন্দ, আলোছায়া ইত্যাদি সকল শিল্পকলার মূল বস্তু। ৮. কালি-কলম, জল রং, প্যাস্টেল রং, তেল মিশ্রিত রং ইত্যাদি কী? উত্তর : কালি-কলম, জল রং, প্যাস্টেল রং, তেল মিশ্রিত রং ইত্যাদি চিত্রকলার মাধ্যম। ৯. বাংলাদেশে পুরাকালে শিল্পীরা কী দিয়ে ছবি আঁকতেন? উত্তর : বাংলাদেশে পুরাকালে শিল্পীরা জল রং দিয়ে ছবি আঁকতেন। ১০. তালপাতায় আঁকা ছবির বহু নিদর্শন পাওয়া যায় কোথায়? উত্তর : তালপাতায় আঁকা ছবির বহু নিদর্শন পুরাতন পুঁথিতে পাওয়া যায়। ১১. নিয়ম মেনেও ফুল কীভাবে ফুটে ওঠে? উত্তর : নিয়ম মেনেও ফুল স্বাধীনভাবে ফুটে ওঠে। ১২. প্রয়োজনের বাইরে সুন্দরের কাজ কী? উত্তর : প্রয়োজনের বাইরে সুন্দরের কাজ মনকে তৃপ্ত করা। ১৩. কীসের সমন্বয়ে শিশুরা ছবি অঁাকে? উত্তর : কল্পনা আর বাস্তবের সমন্বয়ে শিশুরা ছবি আঁকে। ১৪. পুরাকালে বাংলাদেশের শিল্পীরা কোন মাধ্যম ছবি আঁকত? উত্তর : পুরাকালে বাংলাদেশের শিল্পীরা জল রং দিয়ে ছবি আঁকত। ১৫. সকল শিল্পীর দায়িত্ব কী? উত্তর : সকল শিল্পীর দায়িত্ব হলো দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা। ১৬. কখন মানুষ মনকে নানা রূপে প্রকাশ করতে চায়? উত্তর : আনন্দ পেলে মানুষ মনকে নানা রূপে প্রকাশ করতে চায়। ১৭. কীভাবে সুন্দরের বিশেষ নিয়মগুলো জানা যাবে? উত্তর : সুন্দর দেখতে দেখতেই সুন্দরের বিশেষ নিয়মগুলো জানা যাবে। ১৮. শক্ত পাথর কেটে কোনো গড়ন বানানোকে কী বলে? উত্তর : শক্ত পাথর কেটে কোনো গড়ন বানানোকে ভাস্কর্য বলে। ১৯. প্রাচীনকালে মানুষ কোথায় বাস করত? উত্তর : প্রাচীনকালে মানুষ গুহায় বাস করত। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. ‘আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ’- ব্যাখ্যা করো। উত্তর : আনন্দের মধ্য দিয়েই মানুষের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় এবং সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে জীবনীশক্তি। ➠ আনন্দ মানুষের মনকে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। তাই আনন্দ লাভের জন্য মানুষ নানারকম চেষ্টা করে। রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে আনন্দকে অনুভব করা যায়। মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে তার মনকে নানা রূপে প্রকাশ করতে চায়। এভাবে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন শিল্পকলা। তাই বলা যায়, আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ। ২. ‘এই নিয়মটি লুকিয়ে থাকে, নিজেকে প্রকাশ করে না, সুন্দরের মধ্যে মিলেমিশে একটা বন্ধন সৃষ্টি করে’। ব্যাখ্যা করো। উত্তর : শিল্পকলার রূপটি সৌন্দর্যকে আশ্রয় করে প্রকাশ পায়। এর সৃষ্টির নিয়মটি আপনাআপনি প্রকাশ পায় না। ➠ মানুষের মনের আনন্দ থেকেই শিল্পকলার সৃষ্টি। সব শিল্পকলারই একটি রূপ আছে, ছন্দ আছে, সুর আছে, রং আছে, বিশেষ গড়ন আছে- সবকিছুকে সাজাবার একটি সুবিন্যস্ত নিয়ম আছে। কিন্তু এ নিয়মটি সচরাচর প্রকাশ পায় না। সুন্দরের মধ্য দিয়েই এটি প্রকাশ পায়। তাই বলা হয়, এই নিয়মটি লুকিয়ে থাকে, নিজেকে প্রকাশ করে না, সুন্দরের মধ্যে মিলেমিশে একটা বন্ধন সৃষ্টি করে। ৩. চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক সৃষ্টি হওয়ার কারণ দর্শাও। উত্তর : আনন্দ লাভ করার জন্যই চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়েছে। ➠ শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্র মানুষকে অপার আনন্দ দান করে। মানুষ যখন আনন্দ পায়, তখন মনকে প্রকাশ করে বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন রঙে। আনন্দের প্রকাশ দ্বারা মূলত জীবনীশক্তিই প্রকাশিত হয়। এ জীবনীশক্তির প্রকাশ ঘটাতে গিয়েই সৃষ্টি হয়েছে চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক যারা আনন্দ দানের মাধ্যমে মানুষের মনের চাহিদা মেটায়। ৪. ‘কালি কলম মন, লেখে তিন জন।’ ব্যাখ্যা করো। উত্তর : ‘কালি কলম মন, লেখে তিন জন।’ এটা বাংলার একটি প্রচলিত প্রবাদ। এর দ্বারা ঐতিহ্য, শিল্প ও যুগের মাঝে সমন্বয় সৃষ্টি করা হয়েছে। ➠ আলোচ্য প্রবাদ বাক্যে কালি হলো নাম, যা দেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যে প্রবাহিত। কলম হলো শিল্প সৃষ্টির সরঞ্জামসমূহ। আর মন দ্বারা বোঝায় বর্তমান যুগের সঙ্গে ঐতিহ্যের সমন্বয় সাধন করা। আলোচ্য প্রবাদ দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে যে- ঐতিহ্যই দেশের পরিচায়ক। ৫. দেখা-অদেখা বস্তু কীভাবে শিশুদের ছবি আঁকতে সাহায্য করে? উত্তর : নানারকম গল্প, দেশের কথা, কবিতা ও ছড়া শুনে এবং আশপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশের দৃশ্যাবলি শিশু মনে ছবির মতো ফুটে ওঠে। এগুলো শিশুদের ছবি আঁকতে সাহায্য করে। ➠ শিশুরা দেখে দেখে শিখতে পারে। প্রতিদিনের দেখা বিষয়বস্তু রং, গড়ন, আকৃতি ইত্যাদি শিশুমনের সঙ্গে মিশে যায়। এভাবে শিশুদের কল্পনার সাথে বাস্তবের দেখা-অদেখা বস্তু মিলেমিশে তাদের ছবি আঁকতে সাহায্য করে। ৬. বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকলার পরিচয় দাও। উত্তর : বাংলাদেশের পুরাকাল থেকে আজ পর্যন্ত যেসব শিল্পকলার নিদর্শন পাওয়া যায়, তার মধ্যে পোড়ামাটির ভাস্কর্য এবং পুরাতন পুঁথিতে তালপাতায় আঁকা ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। ➠ বাংলাদেশে পুরাকালে জল রং দিয়ে ছবি আঁকত শিল্পীরা। পুরাতন পুঁথিতে তালপাতায় আঁকা বহু ছবির নিদর্শন আছে। আবার বিশেষ এক ধরনের ছাঁচে গলিত মেটাল ঢেলে বানানো পোড়ামাটির ভাস্কর্যও আমাদের দেশে খুব প্রসিদ্ধ ছিলো। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. ‘প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলেই মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ।’ কথাটি বুঝিয়ে লেখো। গ. নবীনবরণ অনুষ্ঠানে মেহেরুন্নেসা শিল্পকলার কোন দিকটি দেখেছেন? এর বর্ণনা দাও। ঘ. মেহেরুন্নেসার দেখা সংশপ্তকই ‘শিল্পকলার প্রধান দিক।’-মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো। |
ক. মুস্তাফা মনোয়ার ঝিনাইদহ জেলার মনোহরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খ. প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসকে সুন্দর রূপ দিয়ে গড়ে মানুষ তার সৌন্দর্যের চাহিদা পূরণ করে। ➠ মানুষ স্বভাবত সৌন্দর্য পিয়াসী। নিত্যদিনের প্রয়োজনে তাকে নানা জিনিস ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনীয় জিনিসটির মাঝেও মন সুন্দর খোঁজে। তাই মানুষের মন প্রয়োজনীয় জিনিসটিকে সুন্দররূপে সাজায়। ব্যবহারটি হলো প্রয়োজন এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি অপ্রয়োজন। এই দুই নিয়েই সৌন্দর্যের চাহিদা পূরণ হয়। গ. ক্যাম্পাসে মেহেরুন্নেসা সংশপ্তক শিল্পকর্মটির নন্দনতাত্ত্বিক ও তাৎপর্যগত দিকটি প্রত্যক্ষ করেছেন। ➠ উদ্দীপকের মেহেরুন্নেসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্যটি দেখে শিল্পকলার একটি শাখার সাথে পরিচিত হলেন এবং এর গঠনগত ও তাৎপর্যগত দিক উপলব্ধি করলেন যা প্রবন্ধে শিল্পকলার প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় দিক। ➠ ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনীয় শিল্পের কথা বলা হয়েছে। লেখক মনে করেন শুধু প্রয়োজন মিটলেই হবে না তাকে সুন্দর হতে হবে। ক্যাম্পাসে মেহেরুন্নেসা ‘সংশপ্তক’ ভাস্কর্যটির সৌন্দর্যের সমগ্র দিকটি দেখেছেন। যেখানে প্রয়োজন ও অপ্রয়োজন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ক্যাম্পাসে সংশপ্তক শিল্পকর্মটি দেখে মেহেরুন্নেসার মন ভরে যায়। ভাস্কর্যটি আকার, আয়তন, গঠনকৌশল, ভঙ্গিমা ও এর সৌন্দর্য তাকে আকর্ষণ করে। তারপর যে দিকটি তাকে মোহিত করে রাখে তা হচ্ছে ভাস্কর্যটির তাৎপর্যগত দিক। সংশপ্তক এক হাতে বন্দুক ধরে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সংশপ্তক আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরযোদ্ধাদের প্রতীকায়িত। মেহেরুন্নেসা বাংলা বিভাগের একজন সংবেদনশীল ছাত্রী হিসেবে সংশপ্তকের এই দিকটিই মন ভরে উপভোগ করেছেন। ঘ. মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে মনকে তৃপ্ত করে। তাই এটিই শিল্পকলার প্রধান দিক। ➠ কোনো শিল্পের সৌন্দর্য যখন প্রয়োজন মিটিয়ে মানসিকভাবে মানুষকে মোহিত করে, তখন তা সার্থক শিল্প হয়ে ওঠে এবং এটিই শিল্পকলার অন্যতম প্রধান দিক হিসেবে পরিচিত যা ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে। ➠ ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় সৌন্দর্যের স্বরূপ অঙ্কন করা হয়েছে। চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সংগীত, নৃত্য, কবিতা সবকিছুর মধ্য দিয়েই সুন্দরকে প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতিজগতে সুন্দরের প্রকাশ ঘটে নানা ভাবে। শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না। মানুষের মন প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি সৌন্দর্যও কামনা করে। কারণ সমগ্র সৌন্দর্য প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনের গণ্ডির বাইরে। প্রয়োজনের কাজ শরীরকে তৃপ্ত করে আর প্রয়োজনের বাইরে যে সুন্দর তা মানুষের মনকে তৃপ্ত করে। এজন্য এটিকে শিল্পের প্রধান দিক বলা যায়। উদ্দীপকে দেখা যায়- মেহেরুন্নেসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। নবীনবরণ শেষে তিনি বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আসেন। সেখানে তিনি একটি ভাস্কর্য দেখতে পান। যার নাম ‘সংশপ্তক’। এটি শিল্পকলার একটি অন্যতম শাখা। এটি দেখে মেহেরুন্নেসা মানসিকভাবে তৃপ্ত হয়েছেন। ➠ মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে মনকে তৃপ্ত করে। তাই বলা যায়, মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটি শিল্পকলার প্রধান দিক। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : খ. শিল্পকলাচর্চা সকলের পক্ষে অপরিহার্য কেন? গ. উদ্দীপকের ললিতকলা বলতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের যে বিষয়টিকে নির্দেশ করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকে উল্লেখিত চারুকলা ও কারুকলার সমন্বিত রূপই শিল্পকলা”- ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো। |
ক. ‘পুরাকাল’ শব্দের অর্থ প্রাচীনকাল বা অনেক আগের সময়। খ. সুন্দর আর আনন্দের জন্য সর্বোপরি ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার জন্য শিল্পকলা চর্চা সবার পক্ষে অপরিহার্য। ➠ আমাদের সংস্কৃতি বা কালচার গড়ে উঠেছে নানান শিল্পকলার কারুকাজ দিয়ে। সব শিল্পীর একটি দায়িত্ব আছে- তা হলো দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা। শিল্পচর্চার ধারা দেখে একটি দেশকে ও দেশের মানুষকে চেনা যায়, জানা যায়। এজন্য শিল্পকলার চর্চা সবার পক্ষে অপরিহার্য। গ. উদ্দীপকে ললিতকলা বলতে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে বর্ণিত সৌন্দর্য চেতনা বা নন্দনতত্ত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে মানুষের সৌন্দর্য চেতনার প্রকাশকে শিল্পকলা বলা হয়েছে। ➠ ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে মানুষের সৌন্দর্য চেতনার প্রকাশকে শিল্পকলা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না। যেমন একটি কাঁথা রাত্রে গায়ে দিলে প্রয়োজন মেটে। তবুও গ্রামের মেয়েরা রঙিন সুতা দিয়ে কাঁথায় সুন্দর নকশা ফুটিয়ে তোলে। অর্থাৎ প্রয়োজনের বাইরের সৌন্দর্যও মনকে তৃপ্ত করে। এই মনের তৃপ্তিকেই প্রবন্ধে এবং উদ্দীপকে ললিতকলা বলা হয়েছে। তেমনি উদ্দীপকে নন্দলাল বসু তার বক্তব্যে যে সৃষ্টির মধ্যে মানুষের প্রয়োজন সাধন অপেক্ষা অহেতুক আনন্দ বেশি। যাতে মানুষের জৈব অপেক্ষা আত্মিক ও মানসিক আনন্দ সৃষ্টি বেশি, তাকে ললিতকলা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ➠ সরাসরি প্রয়োজনের চেয়ে যেখানে মানসিক সৌন্দর্য পিপাসা মেটানোর তাগিদ বেশি তাকেই নন্দলাল বসু ললিতকলা বলেছেন। কখনো কখনো নির্মিত জিনিসটির সৌন্দর্যই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়, তার প্রয়োজনীয় দিকটির কথা মনেই জাগে না। তেমন অবস্থাকেই নন্দলাল বসু বলেছেন ললিতকলা, যা আলোচ্য প্রবন্ধের শিল্পকলার ধারণাকে নির্দেশ করে। ঘ. চারুকলা ও কারুকলা মানুষের সৌন্দর্যচর্চার এ দুটি দিকের সমন্বয়েই গড়ে ওঠে শিল্পকলার ভুবন। ➠ চারুকলা হচ্ছে মূলত সৌন্দর্যচর্চা। যার কোনো প্রত্যক্ষ উপযোগ নেই অর্থাৎ শিল্পকলার প্রয়োজন অতীত রূপ। আর কারুকলা হচ্ছে শিল্পকলার সেই দিক যাতে সৌন্দর্য চর্চাও হয়। আবার তাতে মানুষের জীবনধারণের নানা প্রয়োজনও মেটে। ➠ ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে শিল্পকলার প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রয়োজনীয়তা এ দুটি দিকেরই আলোচনা রয়েছে। যেমন প্রবন্ধে ভাস্কর্যকে একটি শিল্পকলা বলা হয়েছে। এই ভাস্কর্যকে যখন শুধুই ভাস্কর্য হিসেবে দেখি তখন তা কারুশিল্প আর সেটিকে যখন রূপময় অসীম সৌন্দর্য হিসেবে দেখি তখন তা চারুকলা। আর তাই চারুকলা ও কারুকলার সমন্বয়েই শিল্পকলার চর্চা অব্যাহত রয়েছে। উদ্দীপকের নন্দলাল বসুর বক্তব্যে চারুকলা ও কারুকলাকে ললিতকলা তথা শিল্পকলার দুটি দিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ➠ তাই সার্বিক আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, বাহ্যিক সৌন্দর্য আর আকৃতি এ দুটি মিলেই শিল্পকলা গড়ে ওঠে। এই শিল্পকলা হলো কারুকলা ও চারুকলার সম্মিলিত রূপ। |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |