৭. বিরামচিহ্ন

বিরামচিহ্ন
 বিরামচিহ্ন

৭. বিরামচিহ্ন

কথা বলার সময় বাক্যের শেষে আমরা থামি। কোনো বাক্যে আমরা কোনোকিছুর বিবরণ দিই। কোনো বাক্যে কিছু জানতে চাই। কোনো বাক্যে প্রকাশ করি বিস্ময়ের ভাব। আবার কোনো কথার অর্থ স্পষ্ট করার জন্য একই বাক্যের মাঝখানে মাঝে মাঝে থামতে হয়। বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝাবার জন্য বাক্যের মধ্যে বা বাক্যের শেষে যেভাবে বিরতি দিতে হয় এবং লেখার সময় বাক্যের মধ্যে তা দেখানোর জন্য যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই বিরামচিহ্ন বা যতিচিহ্ন বা ছেদচিহ্ন।

৭.১ বিরামচিহ্নের ধারণা

কয়েকটি বিরামচিহ্ন বাক্যের শেষে ব্যবহৃত হয় এবং কিছু বিরামচিহ্ন বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হয়। নিচে এগুলোর পরিচয় দেওয়া হলো।

ক. বাক্যের শেষে ব্যবহৃত বিরামচিহ্ন:

বাক্যের শেষে নিচের তিনটি বিরামচিহ্ন ব্যবহৃত হয়:

দাঁড়ি (।):

বাক্যের সমাপ্তি বা পূর্ণ-বিরতি বোঝাতে বাক্যের শেষে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহৃত হয়। যেমন
পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আমাদের রাস্তা।
রাস্তা হেয়ার-পিনের মতো এঁকে বেঁকে উপরের দিকে উঠেছে।
আবদুল লতিফ পাহাড়ের পথ দিয়ে মোটর চালাতে সিদ্ধহস্ত

প্রশ্নচিহ্ন বা জিজ্ঞাসাচিহ্ন (?):

প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা বোঝাতে প্রশ্নচিহ্ন বা জিজ্ঞাসাচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
তোমার নাম কী?
নতুনদাকে বাঘে নিল না তো রে?
এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ কোথায় অনুষ্ঠিত হবে?

বিস্ময় চিহ্ন (!):

হৃদয়াবেগ (ভয়, ঘৃণা, আনন্দ ও দুঃখ ইত্যাদি) প্রকাশ করতে এবং সম্বোধন পদের পরে বিস্ময়চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
ওরে বাবা! কত বড় সাপ!
আহা! কী চমৎকার দৃশ্য!
হায়! হায়! ছেলেটা এতিম হয়ে গেল!
মহারাজ! এ আশ্রমমৃগ, বধ করিবেন না।

খ) বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত বিরামচিহ্ন:

বাক্যের মধ্যে সাধারণত নিচের বিরামচিহ্নগুলো বসে:

কমা (,):

বাক্যের মধ্যে অল্প বিরতির জন্য কমা ব্যবহৃত হয়। বাক্যে অনেক ক্ষেত্রে কমা বসে-

ক. বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ-বিভাগ দেখানোর জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন:
সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।

খ. পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি পদগুলোর পর কমা বসে। যেমন:
সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য একই মালিকার পুষ্প।

গ. সম্বোধন পদের পরে কমা বসে। যেমন:
নিপা, এদিকে তাকাও।

ঘ. উদ্ধরণ চিহ্নের আগে কমা বসে। যেমন:
রনি বলল, “কাল স্কুল খুলবে।”

ঙ. মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর কমা বসে। যেমন:
৮ই মাঘ, বুধবার, ১৩৭৫ সাল।

চ. বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে কমা বসে। যেমন:
৯, ইকবাল রোড, ঢাকা ১২০৭।

ছ. সমজাতীয় একাধিক পদ পরপর থাকলে কমা বসে। যেমন:
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর ব্রহ্মপুত্র আমাদের বড় নদী।

জ. এক ধরনের পদ জোড়ায় জোড়ায় থাকলে প্রতি জোড়াকে আলাদা করতে কমা বসে। যেমন:
মামা-মামি, চাচা-চাচি, ফুফা-ফুফি আমাদের সঙ্গে বনভোজনে গিয়েছিলেন।

ঝ. এক ধরনের একাধিক বাক্যাংশকে আলাদা করতে কমা বসে। যেমন:
আমাদের আছে শহিদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, রবীন্দ্র-জয়ন্তী, নজরুল-জয়ন্তী।

সেমিকোলন (;):

কমার চেয়ে বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে সেমিকোলন বসে। যেমন:
সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; এ-মায়ার বন্ধন কি কখনো ছিন্ন করা যায়?

কোলন (:):

একটি পূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে হলে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
সভায় সিদ্ধান্ত হলো এক মাস পরে নতুন সভাপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ড্যাশ (-):

যৌগিক ও মিশ্রবাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা ততোধিক বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাশচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
তোমরা দরিদ্রের উপকার কর এতে তোমাদের সম্মান যাবে না-বাড়বে।

হাইফেন (-):

সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
এ আমাদের শ্রদ্ধা-অভিনন্দন, আমাদের প্রীতি-উপহার।

উদ্ধরণ চিহ্ন (“ ”):

বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে উদ্ধরণ চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন:
শিক্ষক বললেন, “গতকাল জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে।”

বন্ধনী-চিহ্ন (), {}, []:

বন্ধনী চিহ্ন গণিতশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন:
তিনি ত্রিপুরায় (বর্তমানে কুমিল্লা) জন্মগ্রহণ করেন।

বিন্দু চিহ্ন (.):

শব্দের সংক্ষিপ্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিন্দু চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
তিনি পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেছেন।
রাজু এবার এস.এস.সি. পাস করেছে।

৭.২ [হাঁ-বোধক, না-বোধক], প্রশ্ন, বিস্ময় ও অনুজ্ঞা বাক্যে বিরামচিহ্ন বিবৃতিমূলক বাক্য:

বিবৃতিমূলক :

ক. হাঁ-বোধক :

ছোটবেলা থেকে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
সমুদ্রে নানারকম প্রাণী বাস করে।
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ।

না-বোধক :

মনটা ভালো না।
না, শুধু শহর নয়, সমগ্র অঞ্চলটা সর্বত্র প্রসিদ্ধ ও চিরপরিচিত।
তুমি নিশ্চয়ই জানতে কোনোমতেই তাকে বিরত করা যাবে না।

প্রশ্নবোধক বাক্য :

কী করে তুমি এ-কাজ করলে?
সেই সন্ধ্যাটা আবার কবে আসবে?
বড় বড় কথার আমরা কী বুঝি?

বিস্ময়বোধক বাক্য :

এত নীচ তুমি!
আবার শ্রী-কান্ত!

অনুজ্ঞাবোধক বাক্য :

মন দিয়ে পড়ো।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো।
ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
কাজটি করে দাও না ভাই!

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
You Got out of answers correct!
That's


তথ্যসূত্র :
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: ষষ্ঠ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ: বাংলা একাডেমি, প্রথম খণ্ড, ঢাকা, ২০১২।
৩. প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১৬।
৪. ভাষা শিক্ষা, দি অ্যাটলাস পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, অক্টোবর ২০২১-২২।
৫. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, এপ্রিল, ২০১৮।
৬. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৮তম, ২০১৫।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url