২. ব্যাকরণ

ব্যাকরণ
ব্যাকরণ

ব্যাকরণ

ব্যাকরণ ভাষার বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণের শাস্ত্র। ভাষা বিভিন্ন উপাদানে গঠিত হয় এবং বিভিন্ন রীতিতে ব্যবহৃত হয়। গঠন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে। এ নিয়ম-শৃঙ্খলা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করতে হলে ভাষার বিভিন্ন উপাদান এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ প্রণালির স্বরূপ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। ভাষার এ স্বরূপ বিশ্লেষণই ‘ব্যাকরণ’ নামে অভিহিত।

ব্যাকরণ শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই- বি (বিশেষ) আ (সম্যক) + √কৃ+ অন = ব্যাকরণ। এ বিশ্লিষ্ট অর্থ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে ‘ব্যাকরণ' হচ্ছে 'শব্দ ব্যুৎপাদক ও ভাষা নিয়ামক শাস্ত্র।’ ব্যাপকভাবে বলা যায়, ব্যাকরণ হচ্ছে 'ভাষার উচ্ছৃঙ্খলা নিবারক, শব্দের ব্যুৎপত্তি ও ব্যুৎপত্তিগত অর্থ-নির্ধারক, পদ-সাধক এবং বাক্য রচনা প্রণালি নির্ধারক শাস্ত্র।' ব্যাকরণের কাজ ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কার করা। ভাষার গঠন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ভাষার নিজস্ব কিছু নিয়মরীতি আছে। এসব নিয়মরীতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভ করতে হলে ভাষাকে ভেঙে তার উপাদানসমূহের বিচার-বিশ্লেষণ এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ প্রণালি নির্ণয় করা প্রয়োজন। সুতরাং 'যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করে এর বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায়, তার নাম ব্যাকরণ।' এ পর্যায়ে ব্যাকরণ সম্পর্কে কয়েকজন খ্যাতনামা ভাষাপণ্ডিতের মন্তব্য নিচে উদ্ধৃত হলো:

ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে বিদ্যার দ্বারা কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপটি আলোচিত হয় এবং সেই ভাষার গঠনে ও লিখনে এবং তাহাতে কথোপকথনে শুদ্ধ-রূপে তাহার প্রয়োগ করা যায়, সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ বলে। ব্যাকরণ সম্পর্কে ডক্টর সুকুমার সেন: যে বইয়ে ভাষার বিচার ও বিশ্লেষণ আছে, তা-ই ব্যাকরণ। মুনীর চৌধুরী বলেছেন: যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।

বাংলা ব্যাকরণ

বাংলা ভাষা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। এ ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক বা গঠনগত নিয়মশৃঙ্খলা রয়েছে। সুতরাং ‘যে পুস্তকে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তা-ই বাংলা ভাষার ব্যাকরণ।’

ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা

ভাষাকে বিশ্লেষণ করে দেখানোর চেষ্টা থেকেই ব্যাকরণের উদ্ভব। লক্ষণীয় যে আগে ভাষার সৃষ্টি হয়েছে, পরে ভাষা বিশ্লেষণ করে ব্যাকরণের সৃষ্টি হয়েছে। ভাষার সঙ্গে ব্যাকরণের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভাষা বহতা নদীর মতো গতিশীল। নিজের খেয়াল-খুশিমতো আপন গতিতে ভাষা এগিয়ে চলে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভাষার মধ্যে নানা পরিবর্তন সাধিত হয়। ব্যাকরণের কাজ হচ্ছে ভাষার গতিবিধি লক্ষ করা এবং ভাষাকে বিশ্লেষণ করা। ভাষার মৌলিক উপাদান ধ্বনি, শব্দ, বাক্য-এগুলোর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কারের জন্য ব্যাকরণের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাকরণকে ভাষার সংবিধান বলা হয়। ব্যাকরণ ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করে না, তবু ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। ব্যাকরণ পাঠ এ জন্য প্রয়োজন যে-
১. ব্যাকরণ ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্যকে নিরূপণ করে।
২. ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি এবং সে সবের সুষ্ঠু ব্যবহার-বিধি সম্পর্কে জানা যায়।
৩. ব্যাকরণ পাঠ করে লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়োগে শুদ্ধতা রক্ষা করা যায়।
৪. ব্যাকরণ পাঠে ভাষার সৌন্দর্য অনুধাবন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৫. ব্যাকরণ সাহিত্যের রস আস্বাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৬. ব্যাকরণ পাঠের মাধ্যমে ছন্দ-অলংকার বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা যায়।
৭. ভাষার পরিবর্তনের ধারা, নিয়ম-শৃঙ্খলার বর্ণনা ও বিশ্লেষণ ব্যাকরণ পাঠে অবহিত হওয়া যায়।
সুতরাং ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ এবং ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়

ধ্বনি, শব্দ, বাক্য, অর্থ-ভাষার চারটি মৌলিক উপাদান। এই উপাদানগুলোর ওপর ভিত্তি করেই সব ভাষার ব্যাকরণে নিম্নলিখিত চারটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বাংলা ব্যাকরণও এর ব্যতিক্রম নয়।
১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonetics),
২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology),
৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) ও
৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics)।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


তথ্যসূত্র :
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: সপ্তম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url