এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল।
কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মতো বাহু দুখান সরু,
গা খানি তার শাওন মাসের যেমন তমাল তরু।
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলি মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল।
কচি ধানের তুলতে চারা হয়তো কোনো চাষি,
মুখে তাহার জড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।
কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দতের কালি দিয়েই কেতাব কোরান লেখি।
জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভুবনময়:
চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়।
সোনায় যে-জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার'
রং পেলে ভাই গড়তে পারি রামধনুকের হার।
কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারির পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন।
সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ,
কালো-বরন চাষির ছেলে জুড়ায় যেন বুক।
যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তার গাঁও!
সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও।
আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী,
খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি।
জারির গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
‘শাল-সুন্দি-বেত’ যেন ও, সকল কাজেই লাগে।
বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগাল লোহা যেন,
রূপাই যেমন বাপের বেটা কেউ দেখেছ হেন?
যদিও রূপা নয়কো রূপাই, বুপার চেয়ে দামি,
এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামি।
‘রূপাই’ কবিতার উৎস নির্দেশ :
কবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ নামক কাহিনিকাব্যের দ্বিতীয়
অংশটুকু ‘রূপাই’ কবিতা নামে সংকলিত হয়েছে। এটি তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ;
যা কলকাতায় গুরুদাস চ্যাটার্জী এন্ড সন্স থেকে ১৯২৯ সালে প্রথম প্রকাশিত
হয়। কাব্যটি ২৩টি ভাষায় অনূদিত হয়। মোট ১৪টি ছোটো ছোটো দৃশ্যপটে সম্পূর্ণ
দুইটি গ্রাম্য ছেলে-মেয়ের কাহিনি অবলম্বনে অঙ্কিত এটি একটি কাব্যচিত্র।
প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্তটির ভূমিকা লেখেন।
ভূমিকাতে বলেন: ‘এই লেখার মধ্যে দিয়ে বাংলার পল্লীজীবন আমার কাছে চমৎকার
একটি মাধুর্যময় ছবির মতো দেখা দিয়েছে।’
‘রূপাই’ কবিতার শব্দার্থ ও টীকা :
➠ ভ্রমর- ভোমরা, ভিমরুল।
➠ নবীন- তৃণ কচি ঘাস।
➠ জালি- কচি, সদ্য অঙ্কুরিত।
➠ শাওন- শ্রাবণ, বঙ্গাব্দের চতুর্থ মাসের নাম।
➠ কালো দত- লেখার কালি রাখার পাত্র বিশেষ, দোয়াত।
➠ গরব- গর্ব, অহংকার।
➠ রামধনুকের হার- অর্ধবৃত্তাকার রংধনুকে গলার হার হিসেবে কল্পনা করা
হয়েছে।
➠ পদ-রজ- পায়ের ধুলা, চরণধূলি।
➠ বৃন্দাবন- মথুরার নিকটবর্তী হিন্দুদের তীর্থস্থান।
➠ সিনান- স্নান, গোসল।
➠ উজ্জল- উজ্জ্বল, দীপ্তিমান।
➠ আখড়াতে- নৃত্যগীত শিক্ষা ও মল্লবিদ্যা অভ্যাসের স্থান।
➠ সুন্দি- সাদা পদ্ম; শ্বেতপদ্ম।
➠ শাল-সুন্দি-বেত- শাল অর্থ শালগাছ বা মূল্যবান কাঠ, সুন্দি এক প্রকারের
বেত। একত্রে বিবিধ কাজের প্রয়োজনীয় উপকরণ। কবিতায় রূপাইকে এমনই উপকারী
হিসেবে দেখানো হয়েছে।
➠ জারি গান- শোকগীতি; কারবালার শোকাবহ ঘটনামূলক গাথা।
➠ পাগাল- ইস্পাত।
➠ পাগাল লোহা- ইস্পাতসম কঠিন লোহা।
পাঠের উদ্দেশ্য :
রুপাই কবিতা পাঠ করে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের গ্রামীণ প্রকৃতিকে ভালোবাসতে
পারবে। তারা গ্রামীণ সৌন্দর্য সম্পর্কেও অবহিত হবে। সর্বোপরি শিক্ষার্থীরা
প্রকৃতির পটভূমিতে গ্রামীণ কৃষকের শৈল্পিক রূপ অনুধাবনও করতে পারবে।
‘রূপাই’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি :
‘রুপাই’ কবিতায় কবি গ্রামবাংলার প্রকৃতি, কৃষকের রূপ ও কর্মোদ্যোগ অসাধারণ
ভাষায় প্রকাশ করেছেন। গ্রামবাংলার প্রকৃতির মধ্যে কালো ভ্রমর, রঙিন ফুল,
কাঁচা ধানের পাতা এবং কচি মুখের মায়াবী কৃষককে প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়।
কৃষকের বাহু লাউয়ের কচি ডগার মতো বলে মনে হয়।
রোদে পুড়ে কৃষকের শরীরের রং কালো হয়ে যায়। কালো কালি দিয়েই পৃথিবীর সমস্ত
কেতাব বা গ্রন্থ লেখা হয়ে থাকে। অর্থাৎ কবির মতে, রাখাল ছেলের কালো রং
মোটেই খারাপ কিছু নয়। কালো কৃষকটি আখড়াতে বা জারির গানে যেমন দক্ষ তেমনি
সকল কাজে পারদর্শী। তাই কবির দৃষ্টিতে এ কৃষক সবার কাছে দামি বলে গণ্য
হয়েছে।
‘রূপাই’ কবিতার কবি পরিচিতি :
কবি জসীমউদ্দীন ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে
জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা
ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. পাশ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি পাঁচ বছর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি সরকারের তথ্য ও
প্রচার বিভাগে উচ্চপদে যোগ দেন। ছাত্রজীবনেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন।
তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন তাঁর লেখা ‘কবর’ কবিতাটি বিশেষভাবে
প্রশংসিত হয়। তাঁর কবিতায় পল্লির মানুষ ও প্রকৃতির সহজ-সুন্দর রূপটি দেখতে
পাওয়া যায়। পল্লির মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর কবিহৃদয় যেন এক হয়ে মিশে আছে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাহিনিকাব্য:
‘নক্সী কাঁথার মাঠ’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’;
কাব্যগ্রন্থ: ‘রাখালী’, ‘বালুচর’, ‘মাটির কান্না’; নাটক:
‘বেদের মেয়ে’;
উপন্যাস: ‘বোবা কাহিনী’ গানের সংকলন: ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’।
তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
‘হাসু’, ‘এক পয়সার বাঁশী’, ‘ডালিমকুমার’। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সম্মানসূচক ডি.লিট, ডিগ্রি এবং
বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক পেয়েছেন।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
‘রূপাই’ কবিতার কর্ম-অনুশীলন :
ক. ‘রুপাই’ কবিতা অবলম্বনে একজন গ্রামীণ কৃষকের চরিত্রে অভিনয় করে দেখাও
(একক কাজ)।
খ তোমাদের সংগৃহীত গ্রামীণ ছড়া বা লোকছড়া শ্রেণিতে প্রর্দশনের আয়োজন করো
(দলগত কাজ)।
‘রূপাই’ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন
-এর মধ্যে!
যা
‘রূপাই’ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন-১ চাষার ছেলের মাথার চুল কেমন?
উত্তর : চাষারা ছেলের মাথার চুল লম্বা।
প্রশ্ন-২ চাষার ছেলের মুখ কীসের মতো মায়াময়?
উত্তর : চাষার ছেলের মুখ কাঁচা ধানের পাতার মতো মায়াময়।
প্রশ্ন- ৩ চাষার ছেলের বাহু কেমন?
উত্তর : চাষার ছেলের বাহু বেশ সরু।
প্রশ্ন-৪ কী দিয়ে কেতাব লেখার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : কালো দেয়াতের কালি দিয়ে কেতাব লেখার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন- ৫ কে সব জয় করেছে?
উত্তর : চাষার ছেলে রুপাই সব জয় করেছে।
প্রশ্ন-৬ রং পেলে কী গড় যায়?
উত্তর : রং পেলে রামধনুকের হার গড়া যায়।
প্রশ্ন-৭ কে সবার মন ভুলায়?
উত্তর : যে কালোর আলো বানায়, সে সবার মন ভুলায়।
প্রশ্ন-৮ কে বুক জুড়িয়ে দেয়?
উত্তর : কালো বরণ চাষির ছেলে বুক জুড়িয়ে দেয়।
প্রশ্ন-৯ কোথায় চাষির ছেলেকে নিয়ে সবার টানা টানি হয়?
উত্তর : খেলার দলে চাষির ছেলেকে নিয়ে টানা টানি হয়।
প্রশ্ন-১০ চাষির ছেলে সম্পর্কে বুড়োরা কী বলে?
উত্তর : চাষির ছেলে সম্পর্কে বুড়োরা বলে, সে যেন পাগাল লোহা।
প্রশ্ন-১১ চাষার ছেলের শরীর কেমন?
উত্তর : চাষার ছেলের শরীর কালোতে উজ্জ্বল।
প্রশ্ন-১২ কবি জসীমউদদীন কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : কবি জসীমউদদীন ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
প্রশ্ন-১৩ কবি জসীমউদ্দীন কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন?
উত্তর : জসীমউদ্দীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন।
প্রশ্ন-১৪ কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবি জসীমউদ্দীন সম্মান সূচক ডি. লিট
ডিগ্রি লাভ করেন?
উত্তর : বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবি জসীমউদ্দীন সম্মানসূচক ডি. লিট
ডিগ্রি লাভ করেন।
প্রশ্ন-১৫ কবি জসীমউদ্দীন কত খ্রিষ্টাব্দে মৃতু্যবরণ করেন?
উত্তর : কবি জসীমউদ্দীন ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃতু্যবরণ করেন।
‘রূপাই’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন-১ ‘কালো মুখেই কালো ভ্রমর’- বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ‘কালো মুখেই কালো ভ্রমর’- কথাটি কবি জসীমউদ্দীনের রুপাই কবিতার
বিশেষ একটি লাইন।
➠ রুপাই কবিতায় চাষার ছেলে রুপাই এর রূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয়েছে।
রুপাইয়ের গায়ের রং কালো। তার মুখমণ্ডলও কালো কিন্তু সেটা ভ্রমরে মতো।
কালো ও গুঞ্জরনপূর্ণ সুন্দর। রুপাই ফুলের মতোই সুন্দর। রঙিন ফুল রং দিয়ে
মানুষকে আকৃষ্ট করলেও রুপাই তার ভ্রমর কালো চেহারা দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে
রাখে।
প্রশ্ন-২ ‘কালো চোখের তারা দিয়ে সকল ধরা দেখি’ - কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ‘কালো চোখের তারা দিয়ে সকল ধরা দেখি’- কথাটি কালোর মাহাত্ম্য
প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
➠ পল্লিকবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘রুপাই’ কবিতায় চাষার ছেলে রুপাইয়ের রূপ
বর্ণনা করেছেন। রুপাই খুবই কালো। ভ্রমরের মতো কালো। কিন্তু তবুও রুপাই
সুন্দর। তার দেহে ও মনে যেমন সজিবতা আছে তেমনি আছে জীবনের উম্মাদনা। কালো
সাধারণত অমঙ্গল বা খারাপ এর প্রতীক। কিন্তু আমাদের চোখের তারাও কালো। সেই
কালো চোখের তারা দিয়েই আমরা পুরো জগতের আলো দেখি। এখানেই কালোর
শ্রেষ্ঠত্ব।
প্রশ্ন-৩ ‘জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভুবনময়’- কথাটি দ্বারা কী বোঝানো
হয়েছে?
উত্তর : ‘জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভুবনময়’- কথাটিতে কালোর ব্যাপ্তি ও
মহিমা বর্ণিত হয়েছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় চাষার ছেলে রুপাইয়ের কালো রূপ যেমন বর্ণিত হয়েছে তেমনি
সেই কালো রূপের ব্যাপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। মানুষ যখন মায়ের পেট থেকে
পৃথিবীতে আসে তখন সে অন্ধকর থেকেই আসে। আবার যখন সে মৃতু্যর পরে কবরে যায়
তখন সেটা কালো। এজন্য জন্ম ও মৃতু্যকে কালো বলা হয়েছে। আর কালো ভুবনময়
হচ্ছে- পৃথিবীতে দিনের পরে রাত আসে। এই যে রাতদিন এটাকেই পৃথিবী জোড়া
কালো বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-৪ ‘সোনায় যে- জন সোনা বানায়, কীসের গরব তার’- কথাটি ব্যাখ্যা
করো।
উত্তর : ‘সোনায় যে জন সোনা বানায় কীসের গরব তার।’ - কথাটি দিয়ে সৃষ্টির
আনন্দ প্রকাশ করা হয়েছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় আমরা দেখি কবি জসীমউদ্দীন চাষার ছেলে রুপাইকে বিভিন্ন
বিশেষণে বিশেষিত করেছেন। রুপাই যেমন কমীর্ তেমনি সে বিনয়ী। এ লাইনটিতে
তার বিনয়ের প্রকাশ ঘটেছে। যে স্বর্ণকার সোনার গহনা বানায় বা যে সাধারণ
জিনিসকে নিজের হাতের স্পর্শে স্বর্ণে পরিণত করে সেতো নিজেই সোনার মানুষ।
এমন মানুষের অহংকারের কিছু নেই। এই সত্যই এখানে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন-৫ ‘যদিও রুপা নয়কো রুপাই, রুপার চেয়ে দামি’- কথাটি ব্যাখ্যা
করো।
উত্তর : ‘যদিও রুপা নয়কো রুপাই, রুপার চেয়ে দামি’ - এ কথাটি দিয়ে
জসীমউদ্দীন তঁার রুপাই কবিতার চাষার ছেলে রুপাই এর শ্রেষ্ঠত্বের কথা
বর্ণনা করেছেন।
➠ রুপাই সাধারণ চাষার ছেলে। দেখতে কালো কিন্তু সেই কালোতেই তার রূপ।
রুপার মতো উজ্জ্বল চকচকে না হলেও রুপাই নিজের কর্মগুণে শ্রেষ্ঠ। সে
পরিশ্রমী। নিজের পরিশ্রমে সে নিজেকে গ্রামের শ্রেষ্ঠ বানিয়েছে। তাই তাকে
রুপার চেয়েও দামি বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-৬ ‘এক কালোতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামি’- কথাটির মর্মার্থ
লেখো।
উত্তর : ‘এ কালোতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামি’- কথাটি দিয়ে গ্রামের
সামান্য চাষার ছেলের কর্মের মাহাত্ম্য কীর্তন করা হয়েছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় কবি জসীমউদ্দীন দেখিয়েছেন। চাষার ছেলে রুপাই নিজের
কর্মগুণে গ্রামের শ্রেষ্ঠ। খেলাধুলা কাজ সব ক্ষেত্রে রুপাই সেরা। সারা
গ্রামে তার সুনাম। গ্রামের মানুষও যে নিজের গুণে শ্রেষ্ঠ হতে পারে সেই
সত্য। কথাটি এই বাক্যে প্রকাশিত। রুপাইয়ের মতো সাধারণ চাষার ছেলে গ্রাম
বাংলার প্রকৃত সম্পদ এ কথাটিই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন-৭ ‘বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগাল লোহা যেন’- কথাটি ব্যাখ্যা
করো।
উত্তর : ‘বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগাল লোহা যেন’- কথাটি দিয়ে রুপাইয়ের
কর্মতৎপরতা ও নিপুণতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
➠ চাষার ছেলে রুপাই কালো। কিন্তু তার কর্ম তাৎপর্য তাকে গ্রামের শ্রেষ্ঠ
মানুষে পরিণত করেছে। ফলে গ্রামের সবাই তাকে সমীহ করে, ভালোবাসে। পাগাল
লোহা যেমন ধারাল, রুপাই তেমনি তীক্ষ্ম বুদ্ধিমান ও কর্মক্ষম। এই বাক্য
দিয়ে এই সত্যটিই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন-৮ ‘কালোয় যে জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন, তারির পদ রজের লাগি
লুটায় বৃন্দাবন।’- কথাটির মর্মার্থ লেখো।
উত্তর : ‘কালো যে জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন, তারির পদ-রজের লাগি লুটায়
বৃন্দাবন’- কথাটি দিয়ে কর্মে শ্রেষ্ঠ মানুষের কাজের মাহাত্ম্য প্রকাশ করা
হয়েছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় আমরা দেখি, চাষার ছেলে রুপাই কাজে ও কর্মে শ্রেষ্ঠ। তার
চেহারাও সুশ্রী না তবুও সেই কালো মানুষটা নিজের কর্ম দিয়ে সবার মাঝে আলো
ছড়ায়। আর তাই বলা হয়, যে মানুষ কর্মে শ্রেষ্ঠ তার পদধুলার জন্য বৃন্দাবন
তথা বড় ব্যক্তিরাও অপেক্ষা করে। অর্থাৎ কাজের মাধ্যমে বড় হওয়া মানুষকে
সবাই মাথা নোয়ায়।
‘রূপাই’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
পল্লিগ্রামের পিতৃহীন এক দুরস্ত বালক ছমির শেখ। ফসল বোনার ওস্তাদিতে
দশগ্রামে তার সুনাম আছে। বন্যা-খরা তথা গ্রামের শত বিপদে বৃক্ষের ছায়ার
মতো তাকে সবাই কাছে পায়। যাত্রাপালার অভিনয়ে তার জুড়ি মেলা ভার। গ্রামের
সবাই তাকে স্নেহ করে, যেমন প্রকৃতি করে গ্রামকে।
ক. চাষির ছেলের ‘গা-খানি’ দেখতে কেমন?
খ. “চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়”- চরণটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে
চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘রূপাই’ কবিতার আলোকে তোমার দেখা কোনো পল্লিগ্রামের বর্ণনা
দাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রূপাই’ কবিতার মূল ভাবের খণ্ডাংশ মাত্র” যুক্তিসহ
বিশ্লেষণ করো।
ক. চাষির ছেলের ‘গা-খানি’ শাওন মাসের তমাল তরুর মতো।
খ. “চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়”- চরণটিতে কবি চাষির ছেলের
কৃতিত্বকে তুলে ধরেছেন।
➠ আমাদের দেশের কৃষকের শরীরের রং রোদে পুড়ে কালো হয়ে যায়। এই কৃষকই কঠোর
শ্রমে ফসল ফলায়, মুখের অন্ন জোগায়। এই কালো কৃষকই পৃথিবীর সবকিছু জয়
করেছে। অর্থাৎ কবির মতে, কৃষকের শ্রমেই সভ্যতার ইতিহাস সৃষ্টি হয়।
গ. পল্লি গ্রামের বর্ণনার দিক দিয়ে উদ্দীপক, রুপাই কবিতা ও আমার দেখা
গ্রাম সমার্থক হয়ে উঠেছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় চাষার ছেলে রুপাইয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে কবি গ্রামের
বিভিন্ন উপাদান যেমন কচি ধানের চারা, জালি লাউয়ের ডগা, নবীন তৃণের ছায়া,
জারি গান, রঙিন ফুল ইত্যাদি প্রাসঙ্গিকভাবে তুলে ধরেছেন। রুপময়
সৌন্দর্যের আঁধার একটি গ্রামেই রুপাইয়ের বেড়ে ওঠা। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির
মধ্যে কালো ভ্রমর, কাঁচা ধানের পাতা এবং কচি মুখের মাায়াবী কৃষককে আমরা
বিশেষভাবে দেখতে পাই।
➠ উদ্দীপকে পল্লিগ্রামের দুরন্ত বালক ছমির শেখের ছেলের কথা বলা হয়েছে।
ফসল বোনায় সে ওস্তাদ। বন্যা-খরা কিংবা গ্রামের শত বিপদে বৃক্ষের ছায়ার
মতো সবাই তাকে কাছে পায়। যাত্রাপালার অভিনয়েও সে দক্ষ। প্রকৃতি গ্রামটিকে
যেমন স্নেহ করে গ্রামের সবাই তাকে তেমনি স্নেহ করে। উদ্দীপক ও কবিতায়
পল্লিগ্রামের বর্ণনার পাশাপাশি আমার গ্রামের দৃশ্যটিও চিত্তাকর্ষক।
সেখানে বিল-পুকুরে মাছ ধরার দৃশ্য, গরুর পাল নিয়ে কৃষকের মাঠে যাওয়া,
শীতের উঠানে বসে মুড়ি-মুড়কি খাওয়া, বিকেলে খেলার মাঠে উত্তেজনাকর ফুটবল
খেলা ইত্যাদি আমার গ্রামের চিরচেনা দৃশ্য। সবমিলিয়ে এ দেশটি আমাদের মায়ের
মতো।
ঘ. উদ্দীপকের দুরন্ত বালক ছমির শেখের সাথে চাষার ছেলে রুপাইয়ের মিল
থাকলেও উদ্দীপকটি রুপাই কবিতার খাংশ মাত্র।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় কবি গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি, কৃষকের রূপ ইত্যাদি বিষয়
তুলে ধরেছেন। গ্রাম বাংলার প্রকৃতির মধ্যে কালো ভ্রমর, রঙিন ফুল, কাঁচা
ধানের পাতা, লাউয়ের কচি ডগা ইত্যাদি বিষয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে বর্ণনা করেছেন।
একটি বাস্তব সত্য তিনি তার কবিতায় তুলে ধরেছেন সেটি হলো কৃষকের অবদান। যে
কৃষকের শ্রমেই সভ্যতার ইতিহাস সৃষ্টি হয়। এই পৃথিবীর সবকিছু জয় করেছে
কৃষক।
➠ উদ্দীপকে পল্লির দুরন্ত বালক ছমির শেখের কথা বলা হয়। ফসল বোনা,
বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দঁাড়ানো, যাত্রাপালার অভিনয়ে সে দক্ষ। প্রকৃতির
সন্তান হিসেবে সে সবার স্নেহ-ভালোবাসা নিয়ে বড় হচ্ছে।
➠ উদ্দীপকের আলোচনা ছমির শেখকে ঘিরেই। সেই সাথে প্রকাশিত হয়েছে তার
গুণাবলি কিন্তু রুপাই কবিতায় রুপাইয়ের কৃতিত্বই শুধু নয় কৃষকের অবদান,
পল্লি প্রকৃতি ইতিহাস-ঐতিহ্য ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। তাই উল্লিখিত
আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় উদ্দীপকটি রুপাই কবিতার খশ মাত্র।
‘রূপাই’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
সজল স্কুলের সেরা ছাত্র। সে যেমন পড়াশোনায় ভালো তেমনি খেলাধুলায়। সজল
ভালো ছবি আঁকতে পারে। কিন্তু তার চেহারা খুবই খারাপ। গায়ের রং যেমন কালো
তেমনি বিশাল তার দেহ। দুষ্ট ছেলেরা তাকে কসাই বলে ডাকে। স্যারেরা ডাকে
কালোমানিক নামে।
ক. রুপাইয়ের বাহু কীসের মতো সরু?
খ. ‘কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি মুখের মায়া।’ -বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘রুপাই’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কীসের রঙিন ফুল!’ কথাটি উদ্দীপক ও রুপাই
কবিতার মূল কথা- যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করো।
ক. রুপাইয়ের বাহু জালি লাউয়ের ডগার মতো সরু।
খ. ‘কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি মুখের মায়া’ কথাটি চাষার ছেলের প্রসঙ্গে
বলা হয়েছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় জসীমউদ্দীন গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি ও কৃষকের রূপ অসাধারণ
ভাষায় প্রকাশ করেছেন। তাঁর কাছে গাঁয়ের চাষার ছেলের কচি-মুখের মায়া কাঁচা
ধানের পাতার মতো মনে হয়েছে। কালো একটি ছেলের চেহারাও কবির কাছে মায়াবি
বলে মনে হয়েছে।
গ. চেহারা খারাপ হলেও গুণের কারণে মানুষের প্রিয় হওয়ার দিক দিয়ে উদ্দীপক
ও ‘রুপাই’ কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় চাষার ছেলে রুপাই। কবিতায় সে কৃষক সমাজের প্রতিনিধি।
রোদে পুড়ে কৃষকের শরীরের রং কালো হয়ে যায়। কালো রঙের এই রুপাই তার কাজে
এতটাই দক্ষ যে কবিতায় তাকে কালোর বেটা বলা হয়েছে। তার আচরণ সবার বুক
জুড়িয়ে যায়। খেলার সাথিরা খেলার সময় তাকে নিয়েই টানাটানি করে। তার জারি
গানের কণ্ঠ শুনে সবাই মাতোয়ারা। রুপাইয়ের জন্য একদিন পুরো গাঁ নামিদামি
হয়ে উঠবে।
➠ উদ্দীপকের সজলও সেরা ছাত্র। পড়াশোনা, খেলাধুলায় সে ভালো, ভালো ছবিও
আঁকতে পারে সে। তাঁর গায়ের রং ছিল কালো। স্যারেরা তাকে কালোমানিক নামে
ডাকেন। কবিতায় রুপাইয়ের মতো সে কালো হলেও সে ছিল মেধাবী। সজল কিংবা রুপাই
দুজনেই গুণবান। গুণের জন্য সবাই তাদের পছন্দ করে। শরীরের রং তাদের পথে
অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। তাই উদ্দীপক ও রুপাই কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. ‘কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!- কথাটি উদ্দীপক ও ‘রুপাই’
কবিতার মূলকথা- উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় গাঁয়ের চাষার ছেলে রুপাইয়ের দেহগত সৌন্দর্যের কথা বলা
হয়েছে। কবির মতে, রুপাই কালো হলেও সেই আমাদের বন্ধু, সেই আমাদের আপনজন।
রুপাইয়ের কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি-মুখের মায়ার কাছে রঙিন ফুলও হার
মানে। রঙিন ফুলও নিতান্ত তুচ্ছ। কালো বরণ রুপাইয়ের গুণের শেষ নেই। সে
সবার চোখ জুড়িয়েছে। তার নামেই পুরো গাঁ নামিদামি হয়ে উঠবে।
➠ উদ্দীপকের সজলও স্কুলের সেরা ছাত্র এবং পড়াশোনায় যেমন ভালো তেমনি
খেলাধুলায়। ভালো ছবিও আঁকতে পারে সে। যদিও তার চেহারা খুব খারাপ। গায়ের
রং কালো ও বিশালদেহি।
➠ ‘রুপাই’ কবিতার রুপাই ও উদ্দীপকের সজল উভয়ে কালো চেহারার অধিকারী।
কিন্তু তাদের মাঝে আছে বহুগুণ ও প্রতিভা। যে গুণের জন্য তারা সবার প্রিয়।
চেহারা তাদের খারাপ হলেও তা তাদের পথে অন্তরায় হয়ে ওঠেনি।
‘রূপাই’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
গ্রামে কবিগান হচ্ছে। প্রথম কবিয়াল কালোর পক্ষ নিয়েছে। দ্বিতীয় নিয়েছে
সাদার পক্ষ। দ্বিতীয় কবিয়াল কালোর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলল। বলল, কালো
মন্দের প্রতীক। কালো মানে সব খারাপ। কালোর পক্ষ নেওয়া প্রথম কবিয়াল কালো
সম্পর্কে বলল, চোখ কালো, বইয়ের লেখা, কেতাব, কোরআন, মৃতু্য-জন্ম সব কালো।
শেষে প্রথম কবিয়াল বলল, কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদো কেনে?
ক. জসীমউদ্দীনের গ্রামের নাম কী?
খ. ‘রং পেলে ভাই গড়তে পারি রামধনুকের হার।’ কথাটি দ্বারা কী বোঝানো
হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের প্রথম কবিয়াল কালোর যে বর্ণনা দিয়েছে তাতে ‘রুপাই’ কবিতার
রুপাইয়ের কোন বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “গায়ের রং নয়, মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় তার কর্মে।”-
কথাটি রুপাই কবিতা ও উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ক. জসীমউদ্দীনের গ্রামের নাম ‘তাম্বুলখানা’।
খ. ‘রং পেলে ভাই গড়তে পারি রামধনুকের হার’ কথাটির মধ্যদিয়ে চাষার ছেলে
রুপাইয়ের কৃতিত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
➠ রুপাই কবিতায় কবি বলেছেন, সোনা দিয়ে যে সোনার গহনা বানায় তার কীসের
গর্ব। কিন্তু সে রং পেলে রামধনুকের হার গড়ে দিতে পারে। রুপাই সম্পর্কে
কবির এই ধারণা রুপাইকে মহিমান্বিত করেছে।
গ. উদ্দীপকের প্রথম কবিয়াল কালোর যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে ‘রুপাই’ কবিতার
রুপাইয়ের গুণের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই এক চাষার ছেলে, দেখতে কালো। কিন্তু তার গুণ
বৈশিষ্ট্যের কারণে কবি তাকে আরো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে তুলে ধরেছেন। তিনি
বলেছেন, কালো-বরণ চাষির ছেলে সবার বুক জুড়ায়। সে সবার প্রিয় তাই খেলার
দলে তাকে পক্ষে নেওয়ার জন্য সবাই টানাটানি করে। তার জারি গানের সুর
সবাইকে মুগ্ধ করে। বুড়োরা তাকে পাগাল লোহা বলে। তার মতো বাপের বেটা কেউ
দেখেনি। তার কারণেই গ্রাম একদিন উজ্জ্বল হবে। সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
➠ উদ্দীপকেও দেখা যায়, কালোর পক্ষ নেওয়া প্রথম কবিয়াল কালো সম্পর্কে বলল,
চোখ কালো, বইয়ের লেখা, কেতাব, কোরআন, মৃতু্য-জন্ম সব কালো। শেষে বলল,
কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকলে কাঁদো কেন? অর্থাৎ উদ্দীপকের প্রথম কবিয়াল
কালের যে বর্ণনা দিয়েছেন- তা ‘রুপাই’ কবিতার রুপাইয়ের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে
ফুটে উঠেছে। রুপাই কালো হলেও সে কালো ভ্রমরের মতোই সবার প্রিয়। রুপাই
এতটাই করিৎকর্মা যে রং পেলে রামধনুকের হার গড়ে দিতে পারে। গ্রামের
সামান্য চাষির ছেলে কবির বর্ণনায় তাই অসামান্য হয়ে উঠেছে।
ঘ. “গায়ের রং নয়, মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় তার কর্মে।”
উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই এক অনবদ্য চরিত্র। চাষার ছেলে তার চেহারা কালো
হওয়ার পরও সবার অতিপ্রিয়। তার সুন্দর ব্যবহার। সুন্দর গানের সুর সবার মন
জয় করেছে। সে হয়ে উঠেছে বাপের ব্যাটা। এমন গুণবান ছেলে যেন কেউ কোথাও
দেখেনি। সে অচিরেই গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে এবং গ্রামটি হয়ে উঠবে
নামিদামি।
➠ উদ্দীপকে কবিগানের পালায় সাদা-কালো নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। সেখানে সাদার
পক্ষে যুক্তি থাকলেও কালোর পক্ষের যুক্তি বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে। কালো
যদি মন্দ হবে তবে কেশ পাকলে কাঁদো কেন? এই উক্তির মধ্য দিয়ে বোঝা যায়
কালোকে পরিহার করা সম্ভব নয়। বরং কালোই জগতের আলো।
➠ উদ্দীপকে কবিগানের বিতর্কে কালো যেমন জয়যুক্ত হয়েছে তেমনি কবিতার রুপাই
তার কালো মুখেই রঙিন ফুলকেও হার মানিয়েছে। কাজেই একথা সচেতনভাবেই বলা যায়
যে, গায়ের রং নয়, মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় তার কর্মে।
‘রূপাই’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
অফিসের পিয়ন কামাল খুব বুদ্ধিমান। সে সারাদিন কাজে ফাঁকি দেয়। সে দেখতে
সুন্দর কিন্তু খুবই হিংসুটে। অফিসের বড় সাহেব যা বলে তা খুব মনোযোগ দিয়ে
শোনে। কিন্তু অফিসের অন্য কারো কথা সে শোনে না। অফিসের সব গোপন কথা সে বড়
সাহেবের কাছে বলে। এজন্য সবাই তাকে অপছন্দ করলে ও বড় সাহেব তার প্রশংসা
করেন।
ক. ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ কী ধরনের কাব্য?
খ. ‘শাল-সুন্দি-বেত’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সাথে রুপাই কবিতার বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের কামাল রুপাইয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি চরিত্র”- কথাটির
সত্যতা যাচাই করো।
ক. ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ কাহিনিকাব্য।
খ. ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাইকে শাল-সুন্দি-বেতের মতো উপকারী বলা হয়েছে।
➠ শাল অর্থ শালগাছ বা মূল্যবান কাঠ। সুন্দি অর্থ শ্বেতপদ্ম। আর বেত দিয়ে
তৈরি হয় নানা উপকরণ। রুপাইকে শাল-সিুন্দ, বেতের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
তাই উক্ত চরণটি দ্বারা রুপাই কবিতায় রুপাইয়ের উপকারী হিসেবে দেখানো
হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘রূপাই’ কবিতার রুপাইয়ের জনপ্রিয়তা বিবেচনায় উদ্দীপকের
কামালের রৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাইকে সবাই ভালোবাসে। খেলার সাথিরা রুপাইকে নিয়ে
টানাটানি করে। জারির গানের গলায় সবাই মুগ্ধ। শাল-সুন্দি বেতের মতো সে
সবার কাজে লাগে। কালো হলেও সে সবার মন ভুলিয়েছে। মন জয় করেছে। রুপাইয়ের
মতো বাপের বেটা কেউ যেন কখনো দেখেনি।
➠ উদ্দীপকের কামাল কাজে ফাঁকি দেয়। দেখতে সে সুন্দর হলেও খুব হিংসুটে।
অফিসের বড় সাহেবের কথা শুনলেও সে আর কারো কথা শোনে না। অফিসের সব গোপন
কথা বড় সাহেবকে বলে তাই সে সবার অপ্রিয়। যদিও বড় সাহেব তার প্রশংসা করেন।
কিন্তু রুপাই, সবার কাছে খুব জনপ্রিয়। তাই জনপ্রিয়তা বিবেচনায় উদ্দীপকের
কামালের সাথে কবিতায় রুপাইয়ের বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. “উদ্দীপকের কামাল রুপাইয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি চরিত্র।”- কথাটি
যুক্তিযুক্ত।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই একজন চাষার ছেলে। তার গায়ের রং কালো। কিন্তু তার
গুণে মুগ্ধ পুরো এলাকাবাসী। গাঁয়ের মানুষ যেন এমন বাপের বেটা আর দেখেনি।
এই কালো ছেলেটিই সবার মন জয় করেছে। কারণ সে সকল কাজের কাজি। গাঁয়ের
লোকেরা মনে করে এই ছেলেটির কারণেই এই গাঁয়ের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে
পড়বে।
➠ উদ্দীপকের পিয়ন কামাল ধূর্ত প্রকৃতির। সে সবার স্নেহ-ভালোবাসা
প্রত্যাশা করে না। সে শুধু তার চাকরি দাতা বড় সাহেবের কথা মেনে চলে।
সকলের দোষত্রুটি বড় সাহেবের নিকট তুলে ধরে। সবাই তাকে অপছন্দ করে। তার
চেহারা সুন্দর হলেও তার ব্যবহার ভালো না হওয়ায় সে সবার অপ্রিয়।
➠ তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে উদ্দীপকের কামাল রুপাইয়ের সম্পূর্ণ
বিপরীত একটি চরিত্র।
‘রূপাই’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
শাহাদাত ভালো লাঠি খেলোয়াড়। এলাকায় তার সুনাম আছে। লাঠি খেলার পাশাপাশি
সে ভালো কুস্তিও খেলে। তার শরীরে যেমন শক্তি তেমনি তার ভয়ঙ্কর চেহারা।
তার চেহারা দেখেই প্রতিপক্ষ হতাশ হয়ে পড়ে। এমন কোনো কাজ নেই যা শাহাদাত
পারে না। ভালো খারাপ সব কাজই সে করে টাকার বিনিময়ে।
ক. জসীমউদদীন রচিত উপন্যাসের নাম কী?
খ. ‘আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী’ কথাটি দিয়ে কী বোঝানো
হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সাথে রুপাই কবিতার সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য যুক্তি দিয়ে
দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকের শাহাদাত রুপাই কবিতার রুপাইর মতো নামি-দামি হলেও রুপাই
কবিতার মূল বক্তব্য প্রতিফলিত হয়নি।” কথাটির যথার্থতা যাচাই করো।
ক. জসীমউদ্দীন রচিত উপন্যাসের নাম ‘বোবা কাহিনি’।
খ. “আখড়াতে তার, বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী”- কথাটির মধ্যদিয়ে রুপাইয়ের
বীরত্বের কথা বলা হয়েছে।
➠ লাঠিয়াল, পালায় রুপাই ছিল সবার সেরা। তাই আখড়ার সবাই তার লাঠিটাকে
সম্মান করে। সে সম্মানটি মূলত রুপাইর নিজেরই।
গ. লাঠি খেলায় পারদর্শিতা ও ন্যায়নীতির দিক দিয়ে উদ্দীপক ও রুপাই কবিতার
সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই আছে।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই লাঠি খেলায় ওস্তাদ। তার সাথে কেউ পেরে ওঠে না।
এজন্য আখড়ায় সবাই তাকে সম্মানের চোখে দেখে তার বীরত্ব ও কৃতিত্বের জন্য।
লেখক নিজেই বলেছেন- এমন বাপের বেটা কেউ কখনো দেখেনি।
➠ উদ্দীপকের শাহাদাত ভালো লাঠি খেলোয়ার। কুস্তিতেও সে ভালো। তার ভয়ঙ্কর
চেহারা দেখে প্রতিপক্ষ ভীত হয়ে পড়ে। কিন্তু তার ভেতর ন্যায় অন্যায়বোধ
নেই। সে টাকার জন্য সব করতে পারে। লাঠি খেলায় পারদর্শিতার দিক দিয়ে
রুপাইয়ের সাথে শাহাদাতের সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু রুপাই শাহাদাতের মতো লোভী
নয়। আবার রুপাইয়ের চেহারা মায়াবী কিন্তু শাহাদাতের চেহারা ভয়ঙ্কর যা দেখে
অন্যরা ভীত বা হতাশ হয়ে পড়ে। তাই উদ্দীপকের শাহাদাতের সাথে রুপাইয়ের
সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই আছে।
ঘ. “শাহাদাত ‘রুপাই’ কবিতার রুপাইয়ের মতো নামিদামি হলেও- ‘রুপাই’ কবিতার
মূল বক্তব্য উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি”- কথাটি যথার্থ।
➠ ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই তার সুন্দর ব্যবহার পরোপকার ও বীরত্বের জন্য সবার
প্রিয়। মুরব্বি লোকেরা বলে, ছেলে না, ও যেন পাগাল লোহা। যেকোনো কাজেই সে
দক্ষ। তার ন্যায়নীতিবোধের জন্য সে সকলের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
➠ উদ্দীপকের শাহাদাত লাঠি ও কুস্তি খেলায় পারদর্শী। এ ব্যাপারে তার সুনাম
রয়েছে। শাহাদাত সব কাজ করতে পারে। টাকায় বিনিময়ে সে ভালোকাজ খারাপকাজ সবই
করে। ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই শুধু একটি চাষা পরিবারের সন্তান না। সে দিন
দিন কৃষক সমাজের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির সন্তান হিসেবে সে বেড়ে
উঠেছে। কবিতায় গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি কৃষকের রূপ ও কর্মোভোগ প্রকাশিত
হয়েছে। প্রকৃতির মধ্যে কালো, ভ্রমর, রঙিন ফুল, কাঁচা ধানের পাতা, কচি
মুখের মায়াবি রূপ ইত্যাদি উপমা ও উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে। কবি অপরিসীম
দক্ষতায় নানা বিষয়ের অবতারণা করেছেন। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু শাহাদাত
প্রসঙ্গেই আলোচনা করা হয়েছে।
➠ তাই ‘রুপাই’ কবিতার মূল বক্তব্য উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি।
তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
ঢাকা, ২০২৫।
২. নক্সী কাঁথার মাঠ: জসীমউদ্দীন, পলাশ প্রকাশনী, ঢাকা, নভেম্বর ২০১৮।
৩. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।