‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

মংডুর পথে
মংডুর পথে
মংডুর পথে
বিপ্রদাশ বড়ুয়া

সন্ধ্যের আলো-আঁধারিতে, ২৪শে মে, ২০০১, মিয়ানমারের (বার্মার) সীমান্ত শহর মংডুর পথে নেমে আমার মুখ, চোখ, কান ও হৃদয় অচেনা আবেগে উপচে পড়ল।
মংডু আমাদের টেকনাফের ওপারে। মাঝখানে নাফ নদী। মংডু বার্মার পশ্চিম সীমান্তের শহর। ব্রিটিশ যুগের বহু আগে থেকেই চট্টগ্রামের সঙ্গে তার যোগাযোগ। কখনও ছিন্ন, কখনও নিরবচ্ছিন্নপাদরি মেস্ট্রো সেবাস্টিন মানরিক সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই পথে আসেন। তারও একশ বছর আগে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করে। তারা নিজেদের বসতির জায়গাকে ব্যান্ডেল বলত। চট্টগ্রামে এখন ব্যান্ডেল রোড তাদের স্মৃতি বহন করছে।

সন্ধ্যের আঁধার ঘনিয়ে আসার পর আমরা অভিবাসনশুল্ক দফতর থেকে ছাড়া পেয়ে খাঁচা-ছাড়া পাখির মতো উড়াল দিলাম। এই পথে আসতে পেরে খুশি হয়েছি, পথে আরাকান পড়বে, আরাকান রাজ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন রাজধানী ম্রাউক-উ দেখতে পাব। এক সময় আরাকান বার্মা থেকে আলাদা স্বাধীন রাজ্য ছিল। তার পরিধি ছিল উত্তরে ফেনী নদী থেকে আন্দামান সাগরের কাছাকাছি পুরো বঙ্গোপসাগর উপকূল। সেখানে এসে পড়েছি এখন। আরাকান রাজ্যের রাজসভায় দৌলত কাজী, আলাওল সাহিত্যচর্চা করেছেন।

ছেলেবেলা থেকে চট্টগ্রামের পাশে অপরূপ মিয়ানমারের কথা শুনে এসেছি রূপকথার গল্পের মতো, আজ তা বাস্তবে ভেসে উঠল সন্ধ্যের আলোছায়ায়। অন্ধকার প্রায় গাঢ় হয়ে এসেছে। আকাশে মেঘের কোলে শুক্লপক্ষের চাঁদ। আমার হাতে ও কাঁধে ঝোলাঝুলি। শুষ্ক অফিসের চৌহদ্দি পেরিয়ে পঞ্চাশ কদম না যেতেই বাঁ দিকে বড় বড় রেস্তোরাঁ, প্রায় জনমানবহীন। ডান দিকে মোড় ঘুরতেই দেখি এক মিয়ানমার কুমারী পানীয়ের পসরা নিয়ে বসেছে। একেবারেই ঝুপড়ি দোকান। কুমারীর দোকানের পাশেই আর একটি সে রকম দোকান। তারপর সামনেই শুরু হয়েছে বাড়িঘর ও দোকান। পথে নেমে পড়েছে তরুণ-তরুণী, মেয়ে-পুরুষ। পথে পথে মিয়ানমারের যুবতি-তরুণী। কলহাস্যে মুখর। বাড়ির সামনে, দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কেউ কেউ যুবক, যুবতি, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ। মিয়ানমারের সবাই লুঙ্গি পরে। মেয়েদের পরনে লুঙ্গি ও ঝলমলে ব্লাউজ জাতীয় জামা বা গেঞ্জি। চুলে ফুল গোঁজা, চিরুনি ও রিবন-ফিতে।

পাশ দিয়ে একটা পাইক্যা চলে যাচ্ছে। তিন চাকার রিকশা, যেমন মোটর বাইকের পাশে আর একটা চাকা লাগিয়ে ক্যারিয়ারে বউ বাচ্চা বসতে পারে, এও প্রায় তেমনি। সারা মিয়ানমারে আমাদের রিকশার বদলে পাইক্যা। স্থানীয় মুসলমানরা এর একচেটিয়া চালক। মংডুর ব্যবসাও প্রায় ওদের দখলে, আর হিন্দুরাও আছে।

ইউনাইটেড হোটেলে পৌঁছলাম, কিন্তু জায়গা হলো না। আগে-ভাগে যারা গেছে তারা জায়গা দখল করে নিয়েছে। প্রায় অনাথের মতো বোঁচকা-কুঁচকি নিয়ে নতুন হোটেলের উদ্দেশে চললাম। আমরা খুঁজে পেতে যে হোটেল পেলাম তার অবস্থা শোচনীয় বললে কম বলা হয়। বেড়ার ঘরের দোতলার মাঝবারান্দায় বসেই টের পেলাম এটা চতুর্থ শ্রেণির হোটেল হতেও পারে। কাঠের মেঝে। কাঠের যেমন-তেমন দেয়াল। বিছানায় গিয়ে পরখ করে দেখি উঁচু-নিচু চষা জমির মতো তোশক। মশারিতে বিচিত্র ও বিপরীতধর্মী নানা রকম উৎকট দুর্গন্ধ। মাথার উপরে পাখা আছে। কিন্তু রাত নয়টার পর তো বিজলি থাকবে না। তখন গ্লাভস পরে হাত ধোয়ার অবস্থা হবে। নিলাম ফ্যান ছাড়া একটি কক্ষ। পরে মনে পড়ল ফ্যান থাকলেই বা কী! আমার তো রাতে ফ্যান সহ্য হয় না। বাতিও থাকবে না রাতে।

মাঝবয়সী এক নারী আমাদের প্রায় টেনে নিয়ে গেল তার রয়েল রেস্তোরাঁয়, রাতের খাওয়ার জন্য। ইউনাইটেড হোটেলে যারা উঠেছে তারা নাকি ওদিকে এক মুসলিম রেস্তোরাঁয়, খেয়ে নিচ্ছে। রয়েল রেস্তোরা, মন্দ নয়। সুন্দর ঝকঝকে টেবিল-টুল। বাসন-কোসন ভদ্র। ভাতের দোকান বলেই উঁচু টেবিল ও প্লাস্টিকের টুল। সম্ভবত চীন থেকে আমদানি ওই টুল। সাধারণ বর্মি রেস্তোরাঁয় নিচু টেবিল ও টুল থাকে।

রেস্তোরাঁর রাখাইন মালকিনের বয়স প্রথমে বুঝতে পারিনি। বলে কী! ওর বড় ছেলে কলেজে পড়ে। কক্সবাজার ও পটুয়াখালীতে রাখাইন আছে। এখন বুঝতে পারলাম আমার দেশের রাখাইনদের কত কম জানি। তাদের খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণ, ভাষা, সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানি না। তাহলে কী করে দেশের সব মানুষের সঙ্গে আমার সখ্য নিবিড় হবে।

রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো একটি মেয়ে। লুঙ্গি এবং কোমর-ঢাকা ব্লাউজ পরেছে। ওর নাম ঝরনা। চেহারা ও স্বাস্থ্য গরিব ঘরের রোগা-পটকা নারীর মতো।

পোড়া লঙ্কা কচলে নুন-তেল দিয়ে ভর্তা করল। একটা প্লেটে তার সঙ্গে দিল কচি লেবুপাতা। বাহ! খাস চট্টগ্রামের খাবার। আসলে এদের থেকে চট্টগ্রামের বড়ুয়ারা এই খাবার নিয়েছে। চাকমা মারমারা ধানি লঙ্কা পুড়ে নুন ও পেঁয়াজ দিয়ে ভর্তা করে। পোড়া বা সেদ্ধ ধানি লঙ্কা কুইজ্যায় বা মাটির হামানদিস্তায় পিষে নেয়। একটা রাত কেটে গেল অখ্যাত বা কুশ্রী হোটেলে।

২৫শে মে, দ্বিতীয় দিন। মহাথেরোর সঙ্গে মংডুর প্রধান সড়ক ধরে চলেছি। বাজার। দুইপাশে বাড়ি, বাড়ির নিচে দোকান। ভেতরের বাড়িগুলো সেগুন কাঠের থাম বা পাকা থামের ওপর। গত রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। ভেজা পথ। গাছপালার পাতা চকচক করছে ধাতব নতুন টাকার মতো। বৃষ্টি শিরীষ, আম, কাঁঠাল, কৃষ্ণচূড়া সবই আমাদের মতো। পদাউকের পাতা লকলক করছে। পদাউকের সোনারঙ ফুল ফোটার এটিই সময়।

মিয়ানমারে ওদের নাম সেন্না। মংডুর কিছু গাছ ব্রিটিশ আমলের। ওদের বয়স শতাব্দী বা তারও বেশি। বৃষ্টি শিরীষ, তেঁতুল এবং একটু কম বয়সী নারকেল গাছ। আছে কাঠগোলাপ ও সোনালু। নারকেল সর্বত্র। বাড়ির সামনের নারকেল গাছটির গোড়ার দিকে মাথা সমান উঁচুতে অর্কিড করেছে। তাতে রঙিন ও সাদা ফুল।

পাইক্যায় বোরকা পরা মহিলা। তার ওপর মাথায় ছাতা। ছবি তুলতে যেতেই ছাতা দিয়ে আড়াল তুলে দিল। হাঁটতে হাঁটতে শহরের পূর্ব দিকে শেউইজার সেতু পার হয়ে গেলাম। নদীর নাম সুধার ডিয়ার। এপারে মংডু, ওপারে সুধার পাড়া। মুসলিম গ্রাম।

সেতুর কাছেই পাঁচ-সাতজন মাছ নিয়ে বসেছে। তরিতরকারি নিয়ে বসেছে কয়েকজন। গ্রামের ছোট্ট বাজার। পাঁচ-ছয়টা বেড়ার দোকান। বুড়ো আঙুলের সমান চিংড়ির কিলো ৪ থেকে ৫শ চ্যা। আমাদের তুলনায় পানির দাম। টাকার হিসাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। নদীর উজান দিকে বিলে দেখা যাচ্ছে চিংড়ির ঘের। অঢেল মাছ পাওয়া যায় ওখানে। চায়ের দোকান থেকে লোকজন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মংডুতে এখনো প্যান্ট দেখিনি। শুধু আমাদের পরনে প্যান্ট। মহাথেরো চীবর পরেছেন। বর্মিরা সবাই লুঙ্গি পরেছে। অফিস কাছারিতেও লুঙ্গি। গতকাল শুদ্ধ অফিসের দুজনের প্যান্ট দেখেছি। ওরা পুলিশ। অন্যদের লুঙ্গি। লুঙ্গি, ফুঙ্গি ও প্যাগোডা এই তিন নিয়ে মিয়ানমার। ফুঙ্গি হলো বৌদ্ধ ভিক্ষু। গম (ভালো), ছাম্মান বা সাম্পান, ছা (শাবক), থামি (বর্মি রমণীদের সেলাইবিহীন লুঙ্গি) ইত্যাদি অনেক শব্দ বার্মা ও আরাকান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বাংলা ভাষায় ঢুকেছে।

বাসের চালে যাত্রীদের সঙ্গে ফুঙ্গি। পথে ঘাটে ফুঙ্গি। সকালে তারা খালি পায়ে ভিক্ষে করতে বের হন। ভিক্ষে ছাড়া ভিক্ষু বা ফুঙ্গিদের চলবে না। ভিক্ষাই তাদের জীবিকা। ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো। গায়ে আলাদা অন্য এক টুকরো চীবর থাকে। হাত কাটা ও এক কাঁধ কাটা একটা গেঞ্জি থাকে, কোমরে বেস্ট জাতীয় অর্থাৎ সেলাই করা কাপড়ের কোমর বন্ধনী থাকে। এসব মিলে ত্রিচীবর। আর হাতে থাকে ছাবাইক বা ভিক্ষাপাত্র। আদিতে এটি কাঠ বা লোহার হতো। এখন লাক্ষা দিয়ে তৈরি হয়। ভিক্ষুদের চীবর বিশেষ মাপে এবং অনেক জোড়া দিয়ে সেলাই করা হয়। এটি নিয়ম। সাধারণ লাল ও লালের কাছাকাছি রঙে চীবরে রঙ করা হয়। বার্মায় ফুঙ্গিদের অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখা হয়।

ছেলে-বুড়ো যুবক-যুবতি সবার পরিধানে লুঙ্গি। স্কুলের পোশাকও লুঙ্গি ও জামা বা শার্ট। বর্মি মুসলমান-হিন্দু-বড়ুয়া-খ্রিষ্টান সবার লুঙ্গি। বর্মিরা শার্টটি লুঙ্গির নিচে গুঁজে দেয়। মংডুর মুসলিমরা শার্ট পরে লুঙ্গির বাইরে। বার্মা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বাংলাদেশে লুঙ্গি প্রবেশ করে। মাত্র একশ বছরের মধ্যে সারা বাংলা হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত লুঙ্গি চলে গেছে। লুঙ্গি, শার্ট ও বর্মি কোট, মাথায় বর্মি টুপি, পায়ে দুই ফিতের মজবুত স্যান্ডেল বর্মিদের জাতীয় পোশাক।

লোকজন আমাদের দেখছে। আমাদের পোশাক ও চাল-চলন ওদের থেকে ভিন্ন। সব দেশের লোক বিদেশিদের চিনতে পারে। সেতু পেরিয়ে ফিরে আসছি। কিছুদূর এসে মূল রাস্তা থেকে ডান দিকে বর্মি পাড়ায় ঢুকে পড়লাম। রাস্তার মোড়ে খালি জায়গায় বড় শিরীষ গাছের নিচে মিয়ানমারের তরুণী নুডলস বিক্রি করছে। ভাসমান দোকান। সকালের টিফিন এ রকম এক দোকানে পুলকসহ খেয়েছি। নুডলস, পোড়া লঙ্কাগুঁড়ো, তেঁতুলের টক, কলার থোড় ইত্যাদি সবজি দিয়ে স্যুপ, ডিমসেদ্ধ মিশিয়ে খেয়েছি। ডিমের খোসা ফেলে কাঁচি দিয়ে টুকরো টুকরো করে ক্ষিপ্র গতিতে। আমার মোটামুটি ভালোই লেগেছে। সকালের জন্য আদর্শ খাবার বলা যায়। সঙ্গে বিনি পয়সায় দুধ চিনি ছাড়া চা দিয়েছে। দোকানি মাঝবয়সী মহিলা। ইঙ্গিতে, ইংরেজিতে কোনোমতে এক রকম করে কথা হলো। বুঝতে পারছি সারা ভ্রমণ এভাবে অপূর্ণ কথাবার্তা বলতে হবে।

দোকানটির দিকে এগিয়ে গেলাম। মাথার উপর ছত্রাকার শিরীষ গাছের নিচে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছে। লম্বা বেঞ্চিতে খাবারের বড় বড় ডেকচি। টুল আছে বসার। তরুণী বলল, বিকিকিনি শেষ। নুডলস আছে, কিন্তু মশলাপাতি ও তেঁতুলের ঝোল ফুরিয়ে গেছে। ওখান থেকে একটু এগিয়ে চায়ের দোকানে ঢুকলাম। মালকিন বসে আছে চেয়ারে। রোয়াইংগা মুসলিম বয় আছে দুজন। কিন্তু বিস্কুট বা সে রকম কোনো খাবার নেই। দুধ চিনির চা ও বিনি পয়সার চা আছে। দোকানের ভেতরে আরেক মহিলা চুরুট সিগারেট ও পান বেচতে বসেছে। অন্য মহিলারা আছে রান্নাঘরে। চা বানিয়ে দিচ্ছে। মহিলারা চিরস্বাধীন। দোকানের মালিক তারা। সবই খুব সাধারণ মানের। চা খেয়ে বেরিয়ে এলাম।

উৎস নির্দেশ :
‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনিটি বিপ্রদাশ বড়ুয়া রচিত ‘অপরূপ মিয়ানমার’(২০০৩) নামক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ নিরবচ্ছিন্ন- একটানা; অবিরাম; নিরন্তর।
➠ পাদরি- খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক।
➠ অভিবাসন- স্বদেশ ছেড়ে অন্য দেশে বসবাস।
➠ শুল্ক দফতর- পণ্যদ্রব্যের আমদানি রপ্তানির ওপর কর ধার্য করে এমন অফিস।
➠ দৌলত কাজী- সতেরো শতকের কবি, আরাকান রাজসভায় সাহিত্যচর্চা করেন।
➠ আলাওল- সতেরো শতকের কবি, আরাকান রাজসভায় সাহিত্যচর্চা করেন। ‘পদ্মাবতী’ তাঁর শ্রেষ্ঠকাব্য।
➠ শুক্লপক্ষ- অমাবস্যার পর থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চন্দ্রকলার বাড়ার সময়।
➠ ক্যারিয়ার- গাড়ির পেছনে থাকা মালপত্র বা জন পরিবহনের জায়গা।
➠ গ্লাভস- দস্তানা; হাতমোজা।
➠ মালকিন- মহিলা মালিক; মালিকের স্ত্রী।
➠ হামানদিস্তা- দ্রব্যসামগ্রী গুঁড়ো করার জন্য ব্যবহৃত পাত্র ও দণ্ড।
➠ মহাথেরো- বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রধান গুরু।
➠ চ্যা- মিয়ানমারের মুদ্রার নাম।
➠ চীবর- বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গৈরিক পোশাক।
➠ ফুঙ্গি- মায়ানমার অঞ্চলের বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা পুরোহিত।
➠ প্যাগোডা- বৌদ্ধমন্দির।
➠ লাক্ষা- গালা, লাল রঙের বৃক্ষনির্যাস।

পাঠের উদ্দেশ্য :
‘মংডুর পথ’ রচনাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা প্রতিবেশী একটি দেশের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির রূপ সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে। ওই দেশ সম্পর্কে তাদের মনে আগ্রহ ও ভালোবাসা সঞ্চারিত হবে।

পাঠ-পরিচিতি :
আমাদের পূর্ব দিকের দেশ মিয়ানমার। সেই দেশ ভ্রমণের ফলে লেখক যেসব অভিজ্ঞতা লাভকরেন তার কিছু বিবরণ এই রচনায় পরিবেশিত হয়েছে। মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তের শহর মংডু দিয়ে লেখকের ওই দেশ সফর শুরু হয়েছিল। মংডুর মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, ব্যাবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে একটি ধারণা এই রচনা থেকে পাওয়া যায়। মংডুতে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মের লোক সম্পর্কেও পরিচয় আছে এতে। সেখানকার মেয়েরা অনেকটা স্বাধীনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে। মিয়ানমারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাধান্য থাকলেও মংডুতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানের বসবাস লক্ষ করেছেন লেখক।

লেখক পরিচিতি :
বিপ্রদাশ বড়ুয়ার জন্য ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামের ইছামতী গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি শিশু একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন; লিখেছেন শিশুতোষ গল্প-উপন্যাস। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ছোটগল্প: ‘যুদ্ধজয়ের গল্প’, ‘গাঙচিল’; উপন্যাস: ‘মুক্তিযোদ্ধারা’; প্রবন্ধ ‘কবিতায় বাকপ্রতিমা’; নাটক: ‘কুমড়োলতা ও পাখি’; জীবনী: ‘বিদ্যাসাগর’, ‘পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন’; শিশুতোষ গল্প ‘সূর্য লুঠের গান’, শিশুতোষ উপন্যাস: ‘রোবট ও ফুল ফোটানোর রহস্য’। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং দুবার অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

কর্ম-অনুশীলন :
ক. ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনিটির কোন কোন বিষয় তোমাকে আনন্দদান এবং অনুপ্রাণিত করেছে তার বিবরণ দাও।
খ. তোমার ব্যক্তিগত ভ্রমণের বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করো (একক কাজ, ছবি, ভৌগোলিক চিত্র ইত্যাদি সংযোজন করা যাবে)।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. মিয়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কী বলা হয়?
ক. পুরোহিত
খ. ফুঙ্গি ✔
গ. ব্রাহ্মণ
ঘ. মহাথেরো
২. ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর দেখতে কেমন?
ক. কাঁধ কাটা গেঞ্জির মতো
খ. সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো ✔
গ. সেলাই করা লুঙ্গির মতো
ঘ. কোমরের বেল্টের মতো
৩. সবদেশের লোক বিদেশিদের চিনতে পারে-
i. পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে
ii. চালচলন দেখে
iii. খাবার-দাবার দেখে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. iও ii ✔
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
উদ্দীপকটি পড় এবং ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
অন্নদাশঙ্কর রায় ফ্রান্সের প্যারিস নিয়ে লেখা ‘পারী’ প্রবন্ধে বলেছেন- পারীর যারা আসল অধিবাসী, খুব খাটতে পারে বলে তাদের সুনাম আছে। মেয়েরা গল্প করার সময়ও জামা সেলাই করে। জামা-কাপড়ের শখটা ফরাসিদের অসম্ভব রকম বেশি, বিশেষ করে ফরাসি মেয়েদের ও শিশুদের।
৪. উদ্দীপকে ‘মংডুর পথে’ প্রবন্ধের মিয়ানমারবাসীর সংস্কৃতির যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা হলো-
i. ভোজন বিলাসিতা
ii. ভূষণ বিলাসিতা
iii. শ্রমনিষ্ঠা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. iও ii
গ. ii iii ✔
ঘ. i, ii ও iii

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. মংডু কোন দেশের সীমান্ত শহর?
উত্তর : মংডু মিয়ানমারের সীমান্ত শহর।
২. কখন থেকে মংডুর সাথে চট্টগ্রামের যোগাযোগ?
উত্তর : ব্রিটিশ যুগের বহু আগ থেকে মংডুর সাথে চট্টগ্রামের যোগাযোগ।
৩. মিয়ানমারে রিকশার বদলে কী আছে?
উত্তর : মিয়ানমারে রিকশার বদলে পাইক্যা আছে।
৪. রেস্তরাঁর রাখাইন মালকিনের ছেলে কোথায় পড়ে?
উত্তর : রেস্তরাঁর রাখাইন মালকিনের ছেলে কলেজে পড়ে।
৫. লেখক প্রথম রাতে কোথায় খেয়েছেন?
উত্তর : লেখক প্রথম রাতে রয়েল রেস্তরাঁয় খেয়েছেন।
৬. কী ধরনের হোটেলে লেখকের প্রথম রাত কেটে গেল?
উত্তর : অখ্যাত বা কুশ্রী হোটেলে লেখকের প্রথম রাত কেটে গেল।
৭. সুধার ডিয়ার কী?
উত্তর : সুধার ডিয়ার মিয়ানমারের একটি নদী।
৮. বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করে?
উত্তর : বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে।
৯. ফুঙ্গি কাদের বলা হয়?
উত্তর : বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ফুঙ্গি বলা হয়।
১০. কাদেরকে পাদরি বলা হয়?
উত্তর : খ্রিষ্ট ধর্মপ্রচারকদের পাদরি বলা হয়।
১১. ‘মালকিন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : মালকিন শব্দের অর্থ মহিলা মালিক।
১২. বাংলাদেশের কোথায় রাখাইন সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে?
উত্তর : বাংলাদেশের পটুয়াখালী ও কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে।
১৩. আরাকান রাজ্য কাদের শাসনে ছিল?
উত্তর : আরাকান রাজ্য মুসলমানদের শাসনে ছিল।
১৪. দৌলত কাজী কোথায় সাহিত্যচর্চা করতেন?
উত্তর : দৌলত কাজী আরাকান রাজ্যের রাজসভায় সাহিত্যচর্চা করতেন।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. লেখক বোঁচকা-বুঁচকি নিয়ে নতুন হোটেলের উদ্দেশ্যে চললেন কেন?
উত্তর : ইউনাইটেড হোটেলে জায়গা না পেয়ে লেখক বোঁচকা-বুঁচকি নিয়ে নতুন হোটেলের উদ্দেশ্যে যান।
➠ মংড়ুতে গিয়ে লেখক থাকার উদ্দেশ্যে ইউনাইটেড হোটেলে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে লেখক থাকার জায়গা পান না। আগে যারা এখানে এসেছে তারা জায়গা দখল করে নিয়েছে। তাই লেখক নতুন হোটেলের উদ্দেশে চললেন।

২. ‘এটা চতুর্থ শ্রেণির হোটেল হতেও পারে।’ লেখকের এরূপ অভিমতের কারণ দর্শাও।
উত্তর : ‘এটা চতুর্থ শ্রেণির হোটেল হতেও পারে।’ লেখকের এরূপ অভিমতের কারণ হলো হোটেলের শোচনীয় অবস্থা।
➠ ইউনাইটেড হোটেলে থাকার স্থান না পেয়ে লেখক আরেক স্থানে একটা হোটেল খুঁজে পান। হোটেলের মেঝে আর দেয়াল কাষ্ঠনির্মিত। বিছানায় চষা জমির মতো তোশক। মশারি থেকে বিচিত্র ও বিপরীতধমীর নানারকম উৎকট দুর্গন্ধ বেরিয়ে আসছে। তাছাড়া, সেখানে রাত ন’টার পর বিদ্যুৎ থাকে না। এসব কারণেই লেখক হোটেল সম্পর্কে আলোচ্য অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

৩. ‘লুঙ্গি, ফুঙ্গি ও প্যাগোডা- এই তিন নিয়ে মিয়ানমার’- বাক্যটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : ‘লুঙ্গি, ফুঙ্গি ও প্যাগোডা এই তিন নিয়ে মিয়ানমার’ বাক্যটি দ্বারা লেখক বুঝিয়েছেন যে, মিয়ানমারের সর্বত্রই লুঙ্গি, ফুঙ্গি ও প্যাগোডা দেখা যায়।
➠ মিয়ানমারের নারী-পুরুষ সবাই লুঙ্গি পরে। মেয়েরা লুঙ্গির সাথে ব্লাউজ পরে, আর পুরুষরা লুঙ্গির সাথে জামা পরে। ফুঙ্গি হলো বৌদ্ধ ভিক্ষু। তাদের পেশা হলো ভিক্ষা করা এবং ধর্ম প্রচার করা। আর প্যাগোডা হলো বৌদ্ধদের প্রার্থনার স্থান। আলোচ্য বাক্য দ্বারা সার্বিক অবস্থার কথা বোঝানো হয়েছে।

৪. আরাকান রাজ্য সম্পর্কে অল্প কথায় লেখ।
উত্তর : আরাকান হলো বর্তমান মিয়ানমারের অংশবিশেষ। পূর্বে এটি মিয়ানমার থেকে আলাদা ও স্বাধীন রাজ্য ছিল, যার রাজধানীর নাম ছিল ম্রাউক-উ।
➠ আরাকান যখন স্বাধীন রাজ্য ছিল, তখন তার পরিধি ছিল উত্তরে ফেনী নদী থেকে আন্দামান সাগরের কাছাকাছি পুরো বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যন্ত। স্বাধীন আরাকান রাজ্যের রাজদরবারে সাহিত্যের কদর ছিল। সতেরো শতকে আরাকানের রাজসভায় দৌলত কাজী, মাগন ঠাকুর ও আলাওল সাহিত্যচর্চা করতেন। কালের আবর্তনে আরাকান বার্মার সাথে মিশে গেছে।

৫. মংডুতে সবাই কী রকম পোশাক পরে?
উত্তর : মংডুর অধিবাসীরা চীবর, লুঙ্গি ইত্যাদি পরে। নারী-পুরুষ সবাই লুঙ্গি পরে।
➠ মংডুতে প্যান্ট পরার প্রচলন খুব কম। ছেলে-বুড়ো-যুবক-যুবতী সবাই লুঙ্গি পরে। স্কুল, অফিস, কাছারি প্রভৃতি সব জায়গায় লুঙ্গি ও জামা বা শার্ট পরা হয়। বর্মিরা শার্টটি লুঙ্গির নিচে গুঁজে দেয়। মুসিলমরা শার্ট পরে লুঙ্গির বাইরে।

৬. মংডুর ফুঙ্গিদের পোশাক কীরূপ?
উত্তর : মংডুর ফুঙ্গিদের প্রধান পরিধেয় চীবর।
➠ ফুঙ্গিদের চীবর বিশেষ মাপে এবং অনেক জোড়া দিয়ে সেলাই করা হয়। হাত কাটা ও এক কাঁধ কাটা একটা গেঞ্জি থাকে। কোমরে বেল্ট জাতীয় এক ধরনের সেলাই করা কাপড়ের কোমর বন্ধনী থাকে। এসব মিলে ত্রিচীবর থাকে। আর হাতে ছাবাইক বা ভিক্ষাপাত্র থাকে।

৭. লুঙ্গি কীভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে?
উত্তর : বার্মা বা মিয়ানমার থেকে লুঙ্গি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
➠ বার্মার সবার প্রধান পরিধেয় লুঙ্গি। বর্মি-মুসলমান-হিন্দু-বড়ুয়া-খ্রিষ্টান সবার পরিধেয় বস্ত্র লুঙ্গি। একসময় চট্টগ্রামে বর্মিরা বসবাস করত। এভাবে বার্মা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বাংলাদেশে লুঙ্গি প্রবেশ করে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১

i. নারকেল শ্রীলংকানদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। নারকেল তেল ছাড়া তারা কোনো খাবার রান্না করে না। কারিতে নারকেল তেল ছাড়াও গুঁড়া শুঁটকি মাছ ব্যবহার করা হয়। এই গুঁড়া শুঁটকিকে তারা মসলার অংশ হিসেবে দেখে। এরা রান্নায় প্রচুর মসলা এবং লাল মরিচ ব্যবহার করে।

ii. শ্রীলংকার রাস্তায় যেসব তরুণী চলাচল করে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ অতি সাধারণ। দামি পোশাক ও সাজগোজের দিকে তাদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। স্পষ্টতই মনে হয়, এরা জীবন-যাপনে সহজ-সুন্দর এবং এতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

ক. সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো বস্তুটির নাম কী?
খ. ‘বান্ডেল রোড তাদের স্মৃতি বহন করছে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপক i-এ 'মংডুর পথে' ভ্রমণ কাহিনীর যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তার বর্ণনা দাও।
ঘ. মিয়ানমারবাসীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির পুরো দিকটিই উদ্দীপক ii-এ প্রকাশ পেয়েছে-‘মংডুর পথে’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো।
ক. সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো বস্ত্রটির নাম চীবর।
খ. ‘ব্যান্ডেল রোড তাদের স্মৃতি বহন করেছে’- বলতে বোঝানো হয়েছে- ব্যান্ডেল রোড পতুর্গিজদের স্মৃতি বহন করছে।
➠ ব্রিটিশ যুগ শুরু হওয়ারও প্রায় একশ বছর আগে পতুর্গিজরা চট্টগ্রামে এসে বসতি স্থাপন করে। তারা নিজেদের বসতির জায়গাকে ব্যান্ডেল বলত। সেই সূত্র ধরে চট্টগ্রামে এখনো ব্যান্ডেল রোড তাদের স্মৃতি বহন করছে। এতে প্রমাণিত হয় যে সেখানে পতুর্গিজরা ছিল।

গ. উদ্দীপক-i এ ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির অন্যতম বিষয় মিয়ানমারের খাদ্যাভ্যাসের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
➠ ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনীতে দেখা যায়, মিয়ানমারের লোকজন পোড়া লঙ্কা কচলে লবণ ও তেল দিয়ে ভর্তা করে। এর সঙ্গে তারা লেবুর কচি পাতা দেয়। এছাড়া ওখানকার চাকমা মারমারা ধানি লঙ্কা পুড়িয়ে লবণ ও পিঁয়াজ দিয়ে ভর্তা করে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নারকেল গাছের সারি দেখে বোঝা যায় যে এরা নারকেলপ্রিয়। মিয়ানমারের লোকজন নুডলস, পোড়া লঙ্কা গুঁড়ো, তেঁতুলের টক, কলার থোড় ইত্যাদি দিয়ে সু্যপ তৈরি করে খায়। এতে তাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের পরিচয় পাওয়া যায়।
➠ উদ্দীপকে শ্রীলংকার অধিবাসীদের খাবারদাবারের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। নারকেল শ্রীলংকানদের প্রিয় খাবার। প্রায় সবরকম খাবার তারা নারকেল তেলের মিশ্রণে তৈরি করে। এছাড়া শুঁটকি মাছের গুঁড়ো তারা মসলার মতো ব্যবহার করে। রান্নায় এরা প্রচুর গরম মশলা এবং লাল মরিচ ব্যবহার করে। শ্রীলংকানদের সম্পর্কিত এ বক্তব্যে তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিচয় পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও ভ্রমণকাহিনিতে বর্ণিত মিয়ানমারের বাসিন্দাদের খাদ্যাভ্যাসের দারুণ মিলের পরিচয় পাওয়া যায়।

ঘ. উদ্দীপক-i এবং উদ্দীপক-ii মিলে মিয়ানমারবাসীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির পুরো দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনীতে লেখক মিয়ানমারবাসীর সমগ্র জীবনচিত্র, খাদ্যাভ্যাস, চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদ এমনকি উক্ত দেশের গোটা সংস্কৃতিকেই উপস্থাপন করেছেন। মিয়ানমারবাসীর খাদ্যাভ্যাসে রয়েছে বৈচিত্র্য। এছাড়া সেখানে বার্মিজ মেয়েরা বেশ সুশ্রী। তারা সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো থামি পরে। বক্ষবন্ধনে তারা ঝলমলে ব্লাউজ জাতীয় জামা বা গেঞ্জি পরিধান করে। এছাড়া সাজগোজের জন্য তারা চুলে ফুল গোঁজে, চিরুনি ও রিবন ফিতে ব্যবহার করে।
➠ উদ্দীপক-i এবং উদ্দীপক-ii-এ শ্রীলংকানদের সংস্কৃতির প্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপক-i-এ দেখা যায় তাদের খাদ্যাভ্যাস রীতির প্রকাশ। নারকেল খুব পছন্দ শ্রীলংকানদের। প্রায় সব রান্নায় তারা নারকেল তেল ব্যবহার করে। এছাড়া তারা শুঁটকির গুঁড়া মসলার মতো ব্যবহার করে। রান্নায় তারা গরম মসলা ও লাল মরিচ অধিক পরিমাণে ব্যবহার করে। উদ্দীপক-ii-এ তাদের পোশাক-পরিচ্ছদের পরিচয় পাওয়া যায়। শ্রীলংকার রাস্তাঘাটে যেসব তর“ণী চলাচল করে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ অতি সাধারণ। সাজগোজের দিকে তাদের তেমন আকর্ষণ নেই। এতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপক-i এবং উদ্দীপক-ii-এ শ্রীলংকার খাদ্যাভ্যাস ও পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কিত সংস্কৃতির প্রকাশ ঘটেছে যা ‘মংড়ুর পথে’ ভ্রমণকাহিনিতে বর্ণিত মিয়ানমারবাসীর খাদ্যাভ্যাস ও পোশাক-পরিচ্ছদরীতি প্রকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জাবিদ পেশায় প্রকৌশলী। দাপ্তরিক কাজে তিনি জাপান যান। সেখানকার পরিকল্পিত রাস্তাঘাট দেখে, অত্যাধুনিক আরামদায়ক গাড়িতে চড়ে তিনি অভিভূত হন। সেখানে একটি বিলাসবহুল সুসজ্জিত হোটেলে তঁার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। হোটেলে ব্যায়ামগার, সুইমিংপুল, বলরুমসহ যাবতীয় সুবিধাদি পেয়ে তিনি মুগ্ধ হয়।

ক. আরাকান রাজ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন রাজধানীর নাম কী?
খ. ‘মংডুর মহিলারা চির স্বাধীন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের হোটেলে জাবিদের অবস্থা এবং ‘মংডুর পথে’ রচনায় লেখকের অবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মংডুর পথে’ রচনার সমগ্র ভাব প্রকাশ করেনি। মূল্যায়ন করো।
ক. আরাকান রাজ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন রাজধানীর নাম ম্রাউক-উ।
খ. মংডুর মহিলারা চির স্বাধীন বলতে তাদের ইচ্ছেমতো পেশা বেছে নেওয়া এবং চলাফেরার স্বাধীনতাকে বেঝানো হয়েছে।
➠ মংডুর পুরুষদের মতো নারীরাও সব কাজ করছে, ব্যবসায় করছে অর্থাৎ তারা চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ নয়। মংডুর নারীরা ঘরে বন্দি হয়ে থাকে না। দোকানও করে নারীরা। তাদের চলাফেরায় কোনো বাধা নেই। সমাজে এ নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নারীদের অবাধ স্বাধীনতা বোঝাতে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

গ. উদ্দীপকের হোটেলে জাবিদের অবস্থা এবং ‘মংডুর পথে’ রচনার লেখকের অবস্থার মধ্যে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
➠ ‘মংডুর পথে’ রচনার লেখক মায়ানমারে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। যেখানে তিনি একটি চতুর্থ শ্রেণির হোটেলে ওঠেন। হোটেলটির অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। মেঝে এবং দেয়াল দুটোই কাঠের। এছাড়া রাত নটার পর বিদু্যৎ থাকে না। তাই রাতে ফ্যান বা লাইট কোনোটাই জ্বালানোর উপায় নেই।
➠ উদ্দীপকে জাবিদ দাপ্তরিক কাজে জাপান যায়। সেখানে তিনি একটি বিলাসবহুল হোটেলে ওঠেন। হোটেলে আরাম-আয়েশের সব ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাকে মুগ্ধ করে। এ বিষয়গুলোতেই উদ্দীপকের হোটেলে জাবিদের অবস্থা এবং ‘মংডুর পথে’ রচনার লেখকের অবস্থার মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘মংডুর পথে’ রচনার সমগ্রভাব প্রকাশ করেনি- মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘মংডুর পথে’ রচনাটি একটি ভ্রমণকাহিনী। এ রচনায় লেখক তার মিয়ানমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। এখানে প্রথমেই মিয়ানমারের প্রতি লেখকের মুগ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি মায়ানমারে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। জানতে পেরেছেন, মিয়ানমারের স্থানীয় মানুষ ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে। যা তাকে মুগ্ধ করেছে। এছাড়া মায়ানমারের নারীদের স্বাধীনতার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে এখানে।
➠ উদ্দীপকে জাবিদ একজন প্রকৌশলী। তিনি দাপ্তরিক কাজে জাপান যান। সেখানকার পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করে। এছাড়া বিলাসবহুল হোটেলের কথাও বর্ণিত হয়েছে। যেখানে আধুনিক জীবনের সমস্ত সুবিধা রয়েছে।
➠ উদ্দীপকে শুধু জাপানের পরিকল্পিত ও অত্যাধুনিক জীবনব্যবস্থার বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু রচনায় মিয়ানমারের মানুষের সমগ্র জীবনব্যবস্থার বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পরীক্ষা শেষে মাওসুল তার বাবা-মা’র সাথে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছে। সে শুনেছে সমুদ্র সৈকতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোকজন বেড়াতে আসে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে, বিশেষ করে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য সেখানে অনেক মানুষের ভিড় হয়। আজ বাস্তবে সৈকতে এসে সে দেখতে পেল রাবার বাগান, ডুলাহাজারীর সাফারি পার্ক, বৌদ্ধমন্দির, রাখাইনদের বার্মিজ মার্কেট, বাজার ঘাটায় প্রচুর গলদা চিংড়ি।

ক. ‘মংডুর পথে’ গল্পের লেখকের নাম কী?
খ. ‘ব্যান্ডেল’ বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকে মাওসুলের ভ্রমণকাহিনির সাথে ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির যে দিক প্রকাশ পেয়েছে- তা তোমার নিজের ভাষায় লেখো।
ঘ. ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনীতে লেখকের অনুভূতির সঙ্গে উদ্দীপকের অনুভূতি এক নয়- প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘মংডুর পথে’ গল্পের লেখকের নাম বিপ্রদাশ বড়ুয়া।
খ. ‘ব্যান্ডেল’ বলতে পতুর্গিজদের বসতির স্থানকে বোঝায়।
➠ পতুর্গিজরা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে চট্টগ্রামে এসেছিল। তারা চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেছিল। এ বসতি স্থানকে তারা ব্যান্ডেল বলত। চট্টগ্রামের ব্যান্ডেল রোড এখন তাদের স্মৃতিই বহন করে।

গ. উদ্দীপকের মাওসুলের ভ্রমণকাহিনীর সাথে ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির ভ্রমণের মাধ্যমে বিচিত্র অভিজ্ঞতার অর্জনের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
➠ ‘মংডুর পথে’ একটি ভ্রমণকাহিনী। ভ্রমণ মানুষকে বিচিত্র অভিজ্ঞতা দেয়। অজানাকে জানতে, অচেনাকে চিনতে সাহায্য করে। যা আলোচ্য রচনাতেও আমরা প্রত্যক্ষ করি। লেখক আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, ব্যবসা-বাণিজ্য ধর্ম সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
➠ উদ্দীপকে মাওসুল ভ্রমণ করতে গিয়েছে কক্সবাজারে। আগে সে লোকমুখে কক্সবাজার সম্বন্ধে সামান্য শুনেছে। কিন্তু কক্সবাজারে যখন গিয়েছে, তখনই বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছে। যা তার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে করেছে সমৃদ্ধ। তাই বলা যায়, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনীর বিষয়বস্তু একই।

ঘ. ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনীতে লেখকের অনুভূতি ছিল অচেনা আবেগে উপচে পড়ার মতো, যা উদ্দীপকের অনুভূতির সঙ্গে এক নয়।
➠ ‘মংডুর পথে’ রচনাটি লেখকের মিয়ানমার ভ্রমণের ওপর ভিত্তি করে রচিত। মিয়ানমারে লেখক গিয়েছিলেন মূলত ভ্রমণে। কিন্তু ভ্রমণের শুরুতেই মুগ্ধতা প্রকাশের দিক থেকে লেখকের অচেনা আবেগ যেন উপচে পড়ল। তিনি বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বটে, তবে তার প্রতি মুগ্ধতাও প্রকাশ করেছেন। জানতে পেরেছেন মিয়ানমারের মানুষের বিচিত্র জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, খাবার, পোশাক। যার সবকিছুই লেখকের হৃদয় জয় করে নিয়েছে।
➠ উদ্দীপকের মাওসুলের অনুভূতিতে তেমন কোনো মুগ্ধতা প্রকাশের বিষয়টি নেই। এখানে মাওসুল কক্সবাজারে ভ্রমণে গেছে। যদিও কক্সবাজার সম্বন্ধে সে পূর্বে জেনেছে। কিন্তু তার চেয়ে দ্বিগুণ জিনিস সে দেখতে পেয়েছে। বাস্তবতাও যেন তার কাছে ছবির মতো সুন্দর হয়ে উঠেছে। কিন্তু এতে তার মধ্যে মুগ্ধতা প্রকাশের সামান্য ছাপও নেই। তাছাড়া কক্সবাজারের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালির বর্ণনাও অনুপস্থিত।
➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির লেখকের অনুভূতির আরও উদ্দীপকের মাওসুলের অনুভূতি এক নয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নামটাই মায়া জাগানিয়া ভালোরিয়া। ইতালিয়ান ভূমধ্যসাগরের পশ্চিম সৈকতের তীরে গড়ে ওঠা নির্জন এ শহর যৌবন পেরিয়ে চলে গিয়েছিল বার্ধক্যে। শহরেরও জীবন আছে। আমাদের অলেক্ষ শহরের বয়স বাড়ে। ঠিকমতো যত্ন না নিলে মরেও যায়। মানবসভ্যতায় অনেক বড়ো বড়ো শহর মরে গেছে এভাবে। ভালোরিয়াও মরে যাচ্ছিল প্রায়। আর সব শহরের মতো এখানেও ছিল একই সমস্যা। কাজের সন্ধানে সব তরুণ পাড়ি জমাচ্ছিল মিলান, রোমের মতো বড়ো শহরে। একটি সময় এলো, যখন শহরের বাসিন্দা মাত্র ৩০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

ক. পূর্বে স্বাধীন আরাকান রাজ্য কোন সাগরের কাছাকাছি ছিল?
খ. মিয়ানমারের মেয়েরা রাস্তার পাশে দোকান নিয়ে বসে কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ভালোরিয়া শহরের সাথে ‘মংডুর পথে’ রচনায় বর্ণিত মিয়ানমারের তুলনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘মংডুর পথে’ রচনার সামগ্রিকভাব ধারণ করে না।” মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
ক. পূর্বে স্বাধীন আরাকান রাজ্য আন্দামান সাগরের কাছাকাছি ছিলো।
খ. মিয়ানমারের মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য রাস্তার পাশে দোকান নিয়ে বসে।
➠ মিয়ানমারের মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি স্বাধীন। মিয়ানমারের খাবারের দোকানগুলোর মালিক মহিলারা। একেবারেই ঝুপড়ি দোকানে বসে মহিলারা বেচাকেনা করে। সেখানে যেসব রেস্তরাঁ রয়েছে সেগুলোর মালিকও মহিলা। সেখানে মহিলারা নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতেই অর্থোপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

গ. অবস্থানগত দিক থেকে মিয়ানমার ও ভালোরিয়ার মধ্যে মিল থাকলেও অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
➠ মিয়ানমার ও ভালোরিয়া উভয়ই নদী তীরবর্তী শহর হলেও অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ভ্রমণকাহিনিটিতে দেখা যায়, নাফ নদীর তীরে গড়ে ওঠা আরাকান রাজ্যের সাবেক রাজধানী ম্রাউক-উ ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও নতুন উদ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে মিয়ানমারের ব্যবসায়-বাণিজ্য, নতুন রূপে গড়ে উঠেছে মিয়ানমার শহর। এ শহরের মেয়েরা নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে রাস্তার পাশে ঝুপড়ি দোকান সাজিয়ে বসেছে। রেস্তরাঁর মালিকও মেয়েরা। স্থানীয় মুসলমানরা প্যাইকা চালক, হিন্দুরাও স্বাধীন ব্যবসায় করছে। তরিকারি, মাছের দোকান দিয়েছে। এ শহরের মানুষকে জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র যেতে হয়নি।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, ইটালিয়ান ভূমধ্যসাগরের পশ্চিম সৈকতের তীরে গড়ে ওঠা ছোট শহর ভালোরিয়া। শহরটি ছিল মৃতপ্রায়। সেখানে লোকসংখ্যা মাত্র তিরিশ জন। কারণ সেই শহরে কোনো কাজ ছিল না। কাজের সন্ধানে সবাই মিলান, রোম প্রভৃতি শহরে চলে যাচ্ছিল। এসব বিষয় বিবেচনা করে বলা যায়, ভালোরিয়া শহরের তুলনায় মিয়ানমারের অথনৈতিক অবস্থা বেশ সচ্ছল ছিল।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘মংডুর পথে’ রচনাটির সামগ্রিক ভাব ধারণ করে না।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘মংডুর পথে’ রচনায় লেখকের নদী তীরবর্তী মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তের শহর মংডু ভ্রমণের সামগ্রিক অভিজ্ঞতার প্রকাশ লক্ষণীয়। এ রচনায় মংডুর মানুষের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য অর্থাৎ উক্ত দেশের গোটা সংস্কৃতিই ফুটে উঠেছে। অর্থনৈতিকভাবে এদেশের মেয়েরা অনেক বেশি স্বাধীন সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে।
➠ উদ্দীপকে শুধু মৃতপ্রায় ভালোরিয়া শহরের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে এ শহরের সব তরুণ কাজের জন্য অন্যত্র পাড়ি জমায়। ফলে শহরের জনসংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৩০ জনে। এই বিষয়টি ‘মংডুর পথে’ রচনায় বর্ণিত শুধু অর্থনৈতিক অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। কিন্তু এ রচনায় বর্ণিত অন্যান্য বিষয় এখানে অনুপস্থিত।
➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকটি আলোচ্য রচনার সামগ্রিক ভাব ধারণ করে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ব্রিয়াংকা জার্মানি থেকে বাংলাদেশে এসেছে একটি গবেষণামূলক কাজে। নদী ভাঙা অঞ্চলের মানুষের সামাজিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। সিরাজগঞ্জের একটি গ্রামে এসে উঠেছে সে, এখানকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট কাঁচা। গ্রামের আশপাশে, ভেতরে আম, জাম, কাঁঠালের অনেক গাছ। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ কৃষিকাজ করে আর মহিলারা ঘরে কাজ করে। এখানকার বাড়িগুলো টিনের তৈরি। বেশিরভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

ক. বিপ্রদাশ বড়ুয়ার উপন্যাসের নাম কী?
খ. ‘তাহলে কী করে দেশের সব মানুষের সঙ্গে আমার সখ্য নিবিড় হবে’ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত বাংলাদেশের গাছপালার সঙ্গে ‘মংডুর পথের’ ভ্রমণকাহিনির গাছপালার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. ‘প্রতিবেশী দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশের অনেক গ্রামের অবকাঠামোগত দিক মংডুর চেয়ে আলাদা’ উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
ক. বিপ্রদাশ বড়ুয়ার উপন্যাসের নাম ‘মুক্তিযোদ্ধারা’।
খ. চট্টগ্রামের রাখাইনদের সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভেবে লেখক বলেছেন, ‘তাহলে কী করে দেশের সব মানুষের সঙ্গে আমার সখ্য নিবিড় হবে।’
➠ লেখক মংডুতে গিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের যেসব ক্ষুদ্র জাতিসত্তা আছে তাদের সম্পর্কে লেখক কিছুই জানেন না। তাদের খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণ, ভাষা-সংস্কৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এসব সংস্কৃতি তৈরি করে একটি দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। আর এগুলো সম্পর্কে না জানলে যে নিজের দেশের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না, লেখক এখানে তাই বোঝাতে চেয়েছেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশের গাছপালার সঙ্গে ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির গাছপালার সাদৃশ্য রয়েছে।
➠ মংডু মিয়ানমারের একটি শহর। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও চোখে পড়ার মতো। মংডুতে রয়েছে নানান প্রজাতির গাছ। বৃষ্টি শিরীষ, আম, কাঁঠাল, কৃষ্ণচূড়া সবই আছে। পদাউকের সোনার ফুলও ফুটেছে। মংডুতে ব্রিটিশ আমলের কিছু গাছও রয়েছে, আছে তেঁতুল এবং কমবয়সি নারকেল গাছ। কাঠগোলাপ ও সোনালু গাছও আছে। তবে নারকেল গাছ সর্বত্র।
➠ উদ্দীপকে বাংলাদেশের একটি গ্রামের বর্ণনা রয়েছে। আম, জাম, কাঁঠাল গাছ সেই গ্রামের শোভাবর্ধন করেছে। বাংলাদেশের একটি গ্রামে যেমন এ গাছগুলো রয়েছে তেমনি আছে মিয়ানমারের মংডুতেও। তাই বলা যায়, উভয় স্থানের পথের চারপাশের গাছপালার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. “প্রতিবেশী দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশের অনেক গ্রামের অবকাঠামোগত দিক মিয়ানমারের শহর মংডুর চেয়ে আলাদা”- উক্তিটি যথার্থ।
➠ মিয়ানমারের নদী তীরবর্তী শহর মংডু। নদীকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়-বাণিজ্য আবর্তিত হয়েছে। এখানকার বাড়িগুলো রাস্তার দু’পাশে এবং বাড়ির নিচে দোকান। ভেতরের বাড়িগুলো সেগুন কাঠের থাম বা পাকা থামের ওপর। বেশিরভাগ দোকানের এবং রেস্তরাঁয় মালিক মহিলারা। মহিলারা স্বাধীনভাবে ব্যবসায় করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানের বাস থাকলেও ধর্মযাজক হিসেবে বৌদ্ধভিক্ষুদের আলাদা সম্মান রয়েছে।
➠ উদ্দীপকে বাংলাদেশের নদীভাঙা একটি গ্রামের (সিরাজগঞ্জ) মানুষের কথা বলা হয়েছে। কারণ ব্রিয়াংকা এসেছে নদীভাঙা মানুষের সামাজিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। যে গ্রামের রাস্তা মাটির তৈরি। বন্যার কারণে এখানকার বেশিরভাগ মানুষ টিনের তৈরি বাড়িতে থাকে।
➠ তাই উল্লিখিত আলোচনার শেষে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, মিয়ানমার বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ হওয়ার পরেও অবকাঠামোগত দিক থেকে মিয়ানমার বাংলাদেশ থেকে অনেকটাই ভিন্ন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান। মুসলমানদের উপাসনালয়ের নাম মসজিদ। মসজিদে নামাজ পড়ান ইমাম সাহেব। ইমাম সাহেব লম্বা জোব্বা পরেন, পায়জামাও পরেন। অবশ্য সেই পায়জামা পায়ের গিরার ওপর পর্যন্ত পরতে হয়। এটি ইসলামি নিয়ম। ইমাম সাহেবের মাথায় থাকে টুপি এবং মুখে দাঁড়ি। যেকোনো মুসলিম দেশে ইমাম সাহেবদের সম্মানের চোখে দেখা হয়।

ক. ‘চীবর’ কী?
খ. লেখক মংডুতে বোরকা পরা মহিলার ছবি তুলতে গেলে ছাতা দিয়ে সে আড়াল তুলে দিল কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ইমাম সাহেবের পোশাকের সঙ্গে ফুঙ্গিদের পোশাকের বৈসাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. ‘প্রত্যেক ধর্মের মানুষের কাছে ধর্মযাজকরা সম্মানের পাত্র।’ উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘মংডুর পথে’ রচনার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘চীবর’ হলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গৈরিক পোশাকবিশেষ।
খ. বোরকা পরা মহিলা পর্দা রক্ষা করার জন্য ছাতা দিয়ে আড়াল তুলে দিল।
➠ লেখক হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পান বোরকা পরা মহিলা। মহিলাটি পাইক্যায় যাচ্ছে। তার মাথায় ছাতা। লেখক তার ছবি তুলতে চাচ্ছেন বুঝতে পেরে সে ছাতা দিয়ে মুখ আড়াল করে ফেলে। কারণ ইসলাম ধর্মের বিধান লঙ্ঘন করতে সে চায়নি। চায়নি বলেই সে সাধারণ পোশাকের বদলে বোরকা পরেছে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ইমাম সাহেবের পোশাকের সঙ্গে ফুঙ্গিদের পোশাকের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
➠ প্রত্যেক ধর্মের রয়েছে নিজস্ব ধর্মযাজক। তাই ধর্মগুরু হিসেবে তাদের পোশাকেও ভিন্নতা দেখা যায়। ‘মংডুর পথে’ রচনাটিতে দেখা যায়, মিয়ানমার বৌদ্ধপ্রধান দেশ। বৌদ্ধধর্মের যাজকদের বলা হয় ফুঙ্গি বা ভিক্ষু। ভিক্ষুদের রয়েছে ভিন্ন ধরনের পোশাক। ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো। গায়ে আলাদা আরেক টুকরো চীবর থাকে। হাত ঢাকা ও এক কাঁধ কাটা একটি গেঞ্জি থাকে, কোমরে বেল্ট জাতীয় অর্থাৎ সেলাই করা কাপড়ের কোমর বন্ধনী থাকে। এসব মিলে হয় ত্রিচীবর। ভিক্ষুদের চীবর নিয়মানুযায়ী অনেক জোড়া দিয়ে সেলাই করা হয়।
➠ উদ্দীপকে মসজিদের ইমাম সাহেব সম্পর্কে বলা হয়েছে। ইমাম সাহেবের পোশাক ফুঙ্গিদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। তারা লম্বা জোব্বা এবং পায়জামা পরেন। তাদের মাথায় বিশেষ ধরনের টুপি থাকে। ইমাম সাহেব নিয়মানুসারে পায়জামা পরেন পায়ের গিরার ওপর পর্যন্ত, তাদের মুখে দাঁড়ি রাখা আবশ্যক। অতএব দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে বর্ণিত ইমাম সাহেবের সঙ্গে ফুঙ্গিদের পোশাকের বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়।

ঘ. প্রতিটি ধর্মের মানুষের কাছে ধর্মযাজকরা অনেক সম্মানের পাত্র হয়ে থাকেন।
➠ ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনীতে দেখা যায়, বৌদ্ধ ধর্মপ্রধান দেশ মংডু। বৌদ্ধ ধর্মের যাজকদের বলা হয় ফুঙ্গি। মিয়ানমারের পথঘাটে, বাসের ছাদে সব জায়গাতে ফুঙ্গিদের দেখতে পাওয়া যায়। সকালে তারা খালি পায়ে ভিক্ষা করতে বের হন। ভিক্ষাই তাদের জীবিকা। ফুঙ্গিরা বিশেষ ধরনের পোশাক পরেন। বার্মার মানুষের কাছে তারা খুব সম্মানের।
➠ উদ্দীপকে বাংলাদেশের ইমাম সাহেবদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। ইমাম সাহেব মসজিদে নামাজ পড়ান। পোশাক থেকে শুরু করে সব ব্যাপারে ধর্মের নিয়মনীতি তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। তিনি ভালো গুণাবলির দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেন।
➠ ইমাম সাহেবের মতো মিয়ানমারের ফুঙ্গিরাও ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করার জন্য সবার কাছে সম্মান পেয়ে থাকেন। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, প্রত্যেক ধর্মের মানুষের কাছে ধর্মযাজকরা সম্মানের পাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭

সাদিয়ারা সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে বার্মিজ মার্কেটে কেনাকাটা করতে যায়। সে দেখল সেখানকার বেশিরভাগ দোকানেই রাখাইন মেয়েরা নানা রকম জিনিস বিক্রি করছে। কসমেটিকস, পোশাক, এমনকি খাবারের দোকানেও তাদের একচেটিয়া অধিকার। তাদের পরনে থামি (মেয়েদের সেলাইবিহীন লুঙ্গি)। সাদিয়ার মনে হলো, রাখাইন মেয়েরা বেশ স্বাধীনভাবে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।

ক. মিয়ানমারের সবাই কী পরে?
খ. পাইক্যা যানবাহনটি কেমন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘মংডুর পথে’ রচনার কোন দিকটির সম্পর্ক রয়েছে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকে যেন মিয়ানমারের স্বাধীন নারীদের চিত্রটিই প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।’- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
ক. মিয়ানমারের সবাই লুঙ্গি পরে।
খ. পাইক্যা হলো এক ধরনের তিন চাকার রিকশা, যা মিয়ানমারসহ মংডুর সর্বত্র দেখা যায়।
➠ পাইক্যা তিন চাকার রিকশা হলেও এটি অনেকটা মোটরবাইকের মতো। মোটরবাইকের পাশে আরেকটি চাকা লাগিয়ে ক্যারিয়ারে বউ বাচ্চা নেয়ার মতো যেমন জায়গা থাকে, পাইক্যাও তেমনি এক ধরনের যানবাহন।

গ. রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ণনার দিক দিয়ে উদ্দীপক ও ‘মংডুর পথে’ রচনার সম্পর্ক রয়েছে।
➠ ‘মংডুর পথে’ রচনায় লেখক রাখাইন সম্প্রদায়ের নারীদের কথা লিখেছেন। সেখানকার রাখাইন নারীরা স্বাধীনভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্য করে। তারাই দোকানের মালিক। সেখানকার মহিলারা থামি পরে। আবার এই রাখাইন সম্প্রদায়ের লোক যেমন মংডুতে আছে, তেমনি বাংলাদেশের কক্সবাজার ও পটুয়াখালীতেও আছে। বাংলাদেশের সেই রাখাইন সম্প্রদায়ের কথাই উদ্দীপকে বলা হয়েছে।
➠ উদ্দীপকেও কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে। সেখানকার বার্মিজ মার্কেটে রাখাইন নারীরা কেনাবেচা করে। কসমেটিকস, কাপড় এবং খাবারের দোকানেও তারাই বিক্রেতা। তাদের পরনে থামি। তারা বেশ স্বাধীনভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে। এ বিষয়টি ‘মংডুর পথে’ রচনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

ঘ. “উদ্দীপকে যেন মিয়ানমারের স্বাধীন নারীদের চিত্রটিই প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।”- উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘মংডুর পথে’ রচনায় লেখক রাখাইন নারীদের স্বাধীন জীবনযাপনের কথা তুলে ধরেছেন। মিয়ানমার ভ্রমণকালীন লেখকের অভিজ্ঞতা তিনি এ রচনায় লিখেছেন। সেখানকার নারীদের তিনি স্বাধীনভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্য করতে দেখেছেন। মেয়েরাও ঝুপড়ি দোকান কিংবা ভাসমান খাবার দোকানের ও রেস্তরাঁর মালিক। লেখক তাই বলেছেন, ‘মহিলারা চির স্বাধীন। দোকানের মালিক তারা। অর্থনৈতিকভাবে তারা অনেক বেশি স্বাধীন।’ এখানেও আমরা মেয়েদেরকে বার্মার নারীদের মতোই স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য করতে দেখি।
➠ উদ্দীপকটিতে বাংলাদেশের রাখাইন নারীদের কথা বলা হয়েছে। সাদিয়ারা কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেটে কেনাকাটার জন্য গিয়ে দেখল, সেখানকার বেশিরভাগ দোকানেই রাখাইন মেয়েরা জিনিস বিক্রি করছে। কসমেটিকস, পোশাক এবং খাবারের দোকানদারও তারাই। সাদিয়ার মনে হলো এরা বেশ স্বাধীনভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছে।
➠ উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকের রাখাইন নারীদের মধ্যে মিয়ানমারের স্বাধীন নারীদের চিত্রই প্রতিভাত হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮

সিজান তার মামার সাথে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিল। কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করেছে। সেখানকার রাস্তাঘাট অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। কাশ্মীরি খাবারের স্বাদ কখনো ভুলতে পারবে না সিজান। কাশ্মীরি শাল বহির্বিশ্বে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। সিজানের স্মৃতিপটে খোদাই হয়ে আছে কাশ্মীরের স্মৃতি।

ক. আলাওল কোন শতকের কবি?
খ. ‘সারা ভ্রমণ এভাবে অপূর্ণ কথাবার্তা বলতে হবে’ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির কোন দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ একটি দেশের নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে’ উদ্দীপক ও ‘মংডুর পথে’ রচনার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯

মাসুদ সাহেব থাইল্যান্ড যান বেড়ানোর জন্য। সেখানে তিনি মানুষের জীবনাচরণের নানা দিক সম্পর্কে জানতে পারেন। থাইল্যান্ডের ছেলেমেয়ে সবাই প্যান্ট ও টিশার্ট পরে। তবে ঝলমলে ব্লাউজ জাতীয় জামা পরতেও তাদের দেখা যায়। আর থাইল্যান্ডের রাস্তায় রিকশা খুব একটা নজরে পড়ে না। সেখানে রিকশার বদলে পাইক্যা চলে। এসব যানবাহন দিয়েই মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বেড়াতে যায়।

ক. মিয়ানমারের পূর্ব নাম কী?
খ. ইউনাইটেড হোটেলে লেখকদের জায়গা হলো না কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত থাইল্যান্ডের জীবনাচরণের সঙ্গে মিয়ানমারের মংডুর বৈসাদৃশ্য কোথায়? নিরূপণ করো।
ঘ. ‘কিছু বৈসাদৃশ্য থাকলেও থাইল্যান্ডের সঙ্গে মংডুর সাদৃশ্য রয়েছে’ মন্তব্যের যথার্থতা নিরূপণ করো।
-----------

তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য-কণিকা: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post