‘নারী’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

নারী : কাজী নজরুল ইসলাম
নারী : কাজী নজরুল ইসলাম 
নারী 
কাজী নজরুল ইসলাম 
                             সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই। 
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। 
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী। 
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নি ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান। 
কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে। 
কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতিস্তম্ভর গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা? 
কোনো কালে একা হয় নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী। 

                           সে-যুগ হয়েছে বাসি, 
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না কো, নারীরা আছিল দাসী। 
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি।
নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পরযুগে
আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে। 
                             যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে-পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই। 
                                   [সংক্ষেপিত] 

উৎস নির্দেশ:
‘নারী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

শব্দার্থ ও টীকা:
➠ সাম্য- সমতা, সকলের জন্য সমান অধিকার।
➠ অশ্রুবারি- চোখের জল।
➠ ভগ্নি- বোন।
➠ মহীয়ান- সুমহান, এখানে মহিমান্বিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
➠ রণ- যুদ্ধ, লড়াই।
➠ কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর- অসংখ্য নারী স্বামীকে হারিয়েছে।
➠ কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি- হৃদয়ভরা মমতা দিয়ে উৎসাহিত করল নারী।
➠ স্মৃতিস্তম্ভ- স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি কাঠামো।
➠ বিজয়-লক্ষ্মী নারী- জয়ের নিয়ন্তা দেবী হিসেবে নারীকে কল্পনা করা হয়েছে।
➠ ডঙ্কা- জয়ঢাক।
➠ বাজি- ধ্বনিত হওয়া
➠ রচা- রচনা করা হয়েছে এমন, সৃষ্টি করা হয়েছে এমন।
➠ পীড়ন- অত্যাচার, নির্যাতন, শারীরিক কষ্ট প্রদান।
➠ পীড়া- যন্ত্রণা, কষ্ট, বেদনা।

পাঠের উদ্দেশ্য:
‘নারী’ কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। মানব সভ্যতায় নারীর অবদান যে পুরুষের চেয়ে কম নয় তা জেনে নারীর অধিকারের প্রতি সচেতন হবে।

পাঠ-পরিচিতি:
সাম্যবাদী কবি নর-নারী উভয়কেই মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি জগতে নর ও নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাবান। তাঁর মতে, পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। কিন্তু ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা লেখা হয়েছে নারীর অবদান ততটা লেখা হয় নি। কিন্তু এখন দিন এসেছে সম অধিকারের। তাই নারীর ওপর নির্যাতন চলবে না, তাঁর অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করা চলবে না। নারী-পুরুষ সবাইকে সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনা করতে হবে সম্মিলিতভাবে।

কবি-পরিচিতি:
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করতে পারেন নি। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্কুল ছেড়ে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন। যুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালি পল্টন ভেঙে দেওয়া হয়। নজরুল কলকাতায় ফিরে এসে সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর কবিতায় পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উচ্চারিত হয়েছে। অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি প্রবল প্রতিবাদ করেন। এজন্য তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তাঁর রচনাবলি অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কবিতা, সংগীত, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও গল্প- সাহিত্যের সকল শাখায় আমরা তাঁর প্রতিভার উজ্জ্বল পরিচয় পেয়ে থাকি। তিনি সাম্যবাদী চেতনাভিত্তিক কবিতা, শ্যামাসংগীত, ইসলামি গান ও গজল লিখে প্রশংসা পেয়েছেন। তিনি আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহারে কুশলতা দেখিয়েছেন। দুর্ভাগ্য যে, মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন এবং তার সাহিত্যসাধনায় ছেদ ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে কবিকে সপরিবার ঢাকায় আনা হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট, উপাধি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং একুশে পদক পান। তিনি আমাদের জাতীয় কবি। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে, কাব্যগ্রন্থ: ‘অগ্নি-বীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘সিন্ধু-হিন্দোল’, ‘চক্রবাক’; উপন্যাস: ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘কুহেলিকা’; গল্পগ্রন্থ: ‘ব্যথার দান’, ‘রিক্তের বেদন’ ‘শিউলিমালা’; প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘যুগবাণী’, ‘রুদ্র-মঙ্গল’; নাটক: ‘বিঝলিমিলি’, ‘আলেয়া’, ‘মধুমালা’ ইত্যাদি। কবি ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

কর্ম-অনুশীলন:
ক. তোমার পরিচিতজনদের মধ্যে এমন কোনো নারীর জীবনালেখ্য রচনা করো, যার কর্মজগৎ নিয়ে তুমি গর্ব করতে পার (একক কাজ)।
খ নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদের স্বরূপ চিহ্নিত করার জন্য তোমার সহপাঠীদের মধ্যে একটি গবেষণা চালাতে পার। এর জন্য শিক্ষকের সহযোগিতায় প্রথমেই প্রশ্নমালা তৈরি করতে হবে।
যেমন- ১. সংসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কে? উত্তর হতে পারে নারী, পুরুষ, অথবা উভয়ই।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
ক. ১৯১৯
খ. ১৯৭২
গ. ১৯৭৫
ঘ. ১৯৭৬ ✔
২. বীরের স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে কোনটি লেখা নেই?
ক. বোনের সেবা
খ. নারীর সিঁথির সিঁদুর ✔
গ. ভগ্নির আত্মত্যাগ
ঘ. বধূদের আত্মত্যাগ
৩. ‘পীড়ন করিলে সে-পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই’-চরণটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রবাদবাক্য-
i. ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়
ii. যেমন কর্ম তেমন ফল
iii. মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii ✔
খ iও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
উদ্দীপকটি পড় এবং ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
লোকশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া জীবিকার তাগিদে কোদাল-টুকরি নিয়ে পুরুষ শ্রমিকদের সাথে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটি কাটেন। দিন শেষে মজুরি নিতে গিয়ে দেখেন পুরুষ শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে দু শ টাকা আর তাকে দেওয়া হলো একশ টাকা। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে মালিক বলে- এটাই নিয়ম।
৪. প্রদত্ত উদ্দীপকটির সাথে 'নারী' কবিতার ভাবগত ঐক্যের দিকটি হলো-
i. বৈষম্য
ii. শোষণ
iii. সাম্য
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii ✔
খ iও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
৫. উদ্দীপকের ভাব নিচের কোন চরণে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর
খ. কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর লেখা নাই তার পাশে ✔
গ. বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি
ঘ. কোন কালে একা হয় নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
প্রশ্ন- ১: কবির দৃষ্টিতে কাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই?
উত্তর : কবির দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।
প্রশ্ন- ২: কীভাবে বিশ্বের কল্যাণকর বস্তু সৃষ্টি করেছে?
উত্তর : নারী আর পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসে বিশ্বের কল্যাণকর বস্তু সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন- ৩: পাপ-তাপ-বেদনা সৃষ্টিতে নারীর ভূমিকা কতটুকু?
উত্তর : পাপ-তাপ-বেদনা সৃষ্টিতে নারীর ভূমিকা অর্ধেক।
প্রশ্ন- ৪: জগতের বড় বড় অভিযান কাদের ত্যাগে মহীয়ান?
উত্তর : জগতের বড় বড় অভিযান মাতা, ভগ্নি ও বধূদের ত্যাগে মহীয়ান।
প্রশ্ন- ৫: নরের বীরত্বের কথা কোথায় লেখা আছে?
উত্তর : নরের বীরত্বের কথা ইতিহাসে লেখা আছে।
প্রশ্ন- ৬: নারীর সিঁথির সিঁদুর বিসর্জন কোথায় উল্লেখ নেই?
উত্তর : নারীর সিঁথির সিঁদুর বিসর্জন ইতিহাসে উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন- ৭: বড় বড় অভিযানে কারা সেবা দান করেছে?
উত্তর : বড় বড় অভিযানে বোনেরা সেবা দান করেছে।
প্রশ্ন- ৮: বীরের স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে কার কথা লেখা নেই?
উত্তর : বীরের স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে নারীর কথা লেখা নেই।
প্রশ্ন- ৯: জয়ী পুরুষদের কারা প্রেরণা দিয়েছে?
উত্তর : জয়ী পুরুষদের নারীরা প্রেরণা দিয়েছে।
প্রশ্ন- ১০: যে যুগে পুরুষরা দাস ছিল না, সে যুগে নারীরা কী ছিল?
উত্তর : যে যুগে পুরুষরা দাস ছিল না, সে যুগে নারীরা দাসী ছিল।
প্রশ্ন- ১১: আজ কীসের যুগ?
উত্তর : আজ সাম্যের যুগ।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
প্রশ্ন- ১: কবি নারী-পুরুষের মধ্যে প্রভেদ করতে চান না কেন?
উত্তর : সভ্যতায় নারী-পুরুষ উভয়ের অবদান সমান হওয়ায় সাম্যবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে কবি নারী-পুরুষের মধ্যে প্রভেদ করতে চান না।
➠ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্যবাদে বিশ্বাসী। তিনি মনে করতেন বিশ্ব সভ্যতায় নারী-পুরুষ উভয়ের অবদান সমান। পুরুষের বড় বড় অভিযানে সফলতার পেছনে রয়েছে নারীর অনুপ্রেরণা ও মহান ত্যাগের ইতিহাস। কবি মনে করেন, পৃথিবীতে মহান ও কল্যাণকর সকল সৃষ্টিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও সমান অবদান রয়েছে। তাই তিনি নারী-পুরুষের মধ্যে প্রভেদ করতে চান না।

প্রশ্ন- ২: ‘কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ‘কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর’-এ চরণটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে জগতের কল্যাণে নারীর সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করাকে।
➠ কোনো যুদ্ধই শান্তিপূর্ণ নয়। যুদ্ধ মানেই অসংখ্য প্রাণের ক্ষয়। অগণিত লোক যুদ্ধে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়। এসব বীরদের অবদান যে শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তা নয়। এ বীরত্বের ভাগীদার নারীরাও। নারীরা যদি তাদের স্বামীদের যুদ্ধে না পাঠাত, তবে কখনই জয় আসত না। আলোচ্য চরণে সিঁথির সিঁদুর বিসর্জন দ্বারা মূলত নারীদের স্বামী হারানোর অকৃত্রিম ত্যাগকে বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন- ৩: ‘সে-যুগ হয়েছে বাসি’-এ কথার মধ্য দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘সে যুগ হয়েছে বাসি’ এ কথার মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে নারীদের দাসত্বের অবসান ঘটেছে।
➠ একসময় যখন নারী পরাধীন ছিল তখন পুরুষদের কথামতো নারীকে সবকিছু করতে হতো। নারীদের ওপর তখন সীমাহীন নির্যাতন চালানো হতো। কিন্তু নারীরা আজ অধিকার সচেতন। তারা আজ আর কারো বন্দি নয়। আজ নারীদের দাসত্বের বেদনাময় যুগের অবসান হয়েছে। সে যুগ হয়েছে বাসি, কথাটি দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন- ৪: “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আলোচ্যাংশে বিশ্বের মহান ও কল্যাণকর সৃষ্টিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
➠ মানবসভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায় যে, বিশ্বের যেকোনো মহান কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বড় বড় সফল অভিযানে নারীই পুরুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। বিশ্বসভ্যতার কল্যাণকর সব কাজেই নারীর অবদান রয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো কল্যাণকর কাজের পেছনে রয়েছে নারীর মহিমাময় ত্যাগের ইতিহাস। এ কথা বোঝানোর জন্য আলোচ্য চরণদ্বয়ের অবতারণা করা হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নারীদের প্রেরণাদায়ক একটি নাম আনোয়ারা। একজন নারী হয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজ করেছেন। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ তিনি কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেছেন। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তিনি অন্য পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন। নারী বলে কোথাও তাকে সমস্যায় পড়তে হয় নি।

ক. ‘নারী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. কবি বর্তমান সময়কে ‘বেদনার যুগ’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. আনোয়ারার কার্যক্রমে ‘নারী’ কবিতার যে দিকটি উদ্ভাসিত হয়েছে তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটলেও ‘নারী’ কবিতায় কবি আরও বেশি বাত্ময় বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘নারী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
খ. বর্তমান সময়েও নারীকে যথাযথ মূল্যায়ন না করার জন্য বর্তমান সময়কে কবি বেদনার যুগ বলেছেন।
➠ এমন একটা সময় ছিল যখন নারীরা ছিলেন অবরোধবাসিনী এবং নারীদের সাথে দাসীর মতো আচরণ করা হতো। তাদের ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। তবে সে যুগ অনেকদিন আগে শেষ হলেও কর্তৃত্বহীন সংকীর্ণমনা পুরুষদের মানসিক অবস্থার কারণে শিক্ষা ও সচেতনতার এই যুগেও নারীসমাজের যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। তারা এখনো নির্যাতিত ও অবহেলিত। বর্তমান যুগেও নারীরা শত অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে অবদান রেখে চললেও আমাদের সংকীর্ণমনা পুরুষ সমাজের কাছে এটা খুবই বেদনাদায়ক। তাদের এই দুরবস্থা দেখেই কবি এ যুগকে বেদনার যুগ বলেছেন।

গ. আনোয়ারার কার্যক্রমে ‘নারী’ কবিতায় বর্ণিত নারী-পুরুষের পাশাপাশি অবস্থান ও অবদানের দিকটি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘নারী’ কবিতায় নারীর অধিকার ও সভ্যতার অগ্রগতিতে পুরুষের পাশাপাশি তাদের অবদানের কথা বলা হয়েছে। সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলাম নরনারী উভয়কেই একই স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। তার মতে, পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে।
➠ উদ্দীপকে আনোয়ারার কার্যক্রমেও ‘নারী’ কবিতার এ দিকটিই ফুটে উঠেছে। তিনি জাতিসংঘসহ বিশ্বের নানা দেশে নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কাজ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশেও এ কাজে সহযোগিতাও পেয়েছেন পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে আশানুরূপভাবে। নারী বলে ভয়ে তিনি দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে আসেননি। কোথাও তাকে সমস্যায়ও পড়তে হয়নি। ‘নারী’ কবিতায় কবি নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন।

ঘ. উদ্দীপকে কাজী নজরুল ইসলামের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটলেও ‘নারী’ কবিতায় নারীর অধিকার ও অবদানের কথা আরও গুরুত্বের সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে।
➠ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারীর অবদানের নানা দিক তুলে ধরে দেখিয়েছেন কোনো বিচারেই পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে ছিল না নারী, আজও পিছিয়ে নেই। তার মতে, পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। বিশ্বে মানুষের শাশ্বত কল্যাণে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তার অর্ধেক করেছে নারী আর অর্ধেক করেছে পুরুষ।
➠ উদ্দীপকে আনোয়ারা নামে একজন নারীর কৃতিত্বের মধ্যদিয়ে কবিতায় বর্ণিত কবির বক্তব্যের একটি অংশের ছায়া পড়েছে মাত্র। তিনি নারী হয়েও জাতিসংঘসহ বিশ্বের নানা দেশে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করেছেন। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে শেষ করেছেন। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তিনি অন্য পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন। নারী বলে কোথাও তাকে সমস্যায় পড়তে হয়নি। সকলের সহযোগিতায় আনোয়ারার দায়িত্ব পালনের দিকটি এখানে উল্লিখিত হলেও ‘নারী’ কবিতায় সভ্যতায় নারীর অবদান সম্পর্কে কবির বক্তব্য আরও বেশি বাঙ্ময়।
➠ সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটলেও ‘নারী’ কবিতায় কবি আরও বেশি বাঙ্ময়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনৈক সমালোচকের মতে- ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গীয় মুসলমান নারীসমাজ ছিল অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিধি-নিষেধের নিগড়ে আবদ্ধ। নিরক্ষরতা, অশিক্ষা ও সামাজিক ভেদ-বুদ্ধিও ছিল তাদের জন্য নিয়তির মতো সত্য। অবরুদ্ধ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এক অসহায় জীবে তারা পরিণত হয়েছিলেন। এদেরকে আলোর জগতে আনার জন্য রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর বক্তব্য-‘আমরা সমাজেরই অর্ধাঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীভাবে? কোনো এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে- একই।’

ক. ‘বিজয়-লক্ষ্মী নারী’ অর্থ কী?
খ. ‘সাম্যের গান’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. জনৈক সমালোচকের মতটি ‘নারী’ কবিতার কোন দিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ-ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বেগম রোকেয়ার বক্তব্য যেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতারই প্রতিধ্বনি-উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
ক. কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭২ সালে এদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়।
খ. ‘সাম্যের গান’ বলতে কবি নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বুঝিয়েছেন।
➠ ‘সাম্য’ অর্থ সমতা। অর্থাৎ সবার জন্য সমান অধিকার। কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যবাদী কবি। তার দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই- সবাই সমান। সাম্যবাদী কবি নর ও নারী উভয়কে মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি জগতে নর ও নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাবান। সাম্যের গান বলতে কবি তাই নারী ও পুরুষের এ সমান অধিকারের কথা বুঝিয়েছেন।

গ. জনৈক সমালোচকের মতটি ‘নারী’ কবিতায় বর্ণিত সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন সভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান হলেও নারীর অবদান সমাজে স্বীকৃত নয়। পুরুষের আত্মত্যাগ যেভাবে ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে নারীদের আত্মত্যাগের কথা সেভাবে বর্ণিত হয়নি। পুরুষরা নানা ভাবে নারীদের অত্যাচার করে। তাদের চোখে নারী মানে দাসী। তাই নারীকে তারা সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছে।
➠ উদ্দীপকে ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিধি-নিষেধের নিগড়ে আবদ্ধ ছিল তৎকালীন সমাজ। নিরক্ষরতা, অশিক্ষা ও সামাজিক ভেদবুদ্ধিও ছিল তাদের জন্য নিয়তির মতো সত্য। অবরুদ্ধ জীবনযাপনে নারীরা অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিল। ‘নারী’ কবিতায়ও নারীদের এ বন্দি নিগৃহীত জীবনযাপন চিত্রিত হয়েছে। ‘নারী’ কবিতার এই দিকটিই উদ্দীপকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. “বেগম রোকেয়ার বক্তব্য যেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতারই প্রতিধ্বনি।” উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘নারী’ কবিতায় সাম্যবাদী কবি নরনারী উভয়কেই মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি জগতে নর ও নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাবান। তার মতে, পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। নারীকে বাদ দিয়ে সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তাদেরকে অধিকার বঞ্চিত না করে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, নারী-পুরুষ সবাইকে সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনা করতে হবে সম্মিলিতভাবে।
➠ একইভাবে উদ্দীপকে দেখা যায়, বেগম রোকেয়া নারীদেরকে সমাজের অর্ধাঙ্গ বলেছেন। তিনি বলেছেন নারীকে পিছিয়ে রেখে সমাজ কখনো সামনে যেতে পারে না। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সমাজের উন্নতি সম্ভব। তাই তিনি সমাজের উন্নয়নে নারী ও পুরুষের অভিন্ন স্বার্থ সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন।
➠ কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার মতো বেগম রোকেয়ার বক্তব্যেও নারী ও পুরুষের সাম্য বা সমান অধিকারের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তাছাড়া উভয়ের বক্তব্যে, সামগ্রিক উন্নয়নে নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিষয়টি সম্পর্কে জোরালো যুক্তি উত্থাপিত হয়েছে। তাই বলা যায়, বেগম রোকেয়ার বক্তব্য কাজী নজরুল ইসলামের কথারই প্রতিধ্বনি।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ঠিকাদার মোশাররফ পুরুষ শ্রমিকদেরকে ১৫০ টাকা করে মজুরি দিলেও নারীশ্রমিক ৩ জনকে দিলেন ১২০ টাকা করে। এই বৈষম্য মেনে নিতে পারে না নারীশ্রমিক সুফিয়া। হতাশ কণ্ঠে সে বলে ওঠে, “এইডা আবার কোন বিচার”।

ক. ‘নারী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. ‘নর যদি রাখে নারী বন্দী, তবে এর পরযুগে
আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে’- বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “মূলভাব এক হলেও উদ্দীপকের চেয়ে ‘নারী’ কবিতার বিষয়বস্তু ব্যাপক”- মন্তব্যটি সঠিক কিনা বিচার করো।
ক. ‘নারী’ কবিতাটি ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
খ. নর যদি রাখে নারী বন্দি, তবে এর পর যুগে আপনারি রচিত ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে- কবিতাটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, এ যুগে যদি পুরুষরা নারীদের জন্য কারাগার রচনা করে, তবে পরবর্তীতে সেই কারাগারেই পুরুষরা ভুগবে।
➠ আলোচ্য লাইনে ‘কারাগার’ দ্বারা অধিকার হরণকে বোঝানো হয়েছে। বর্তমান যুগ সাম্যের যুগ। এ যুগে পূর্বের মতো যদি পুরুষরা আবারো নারীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে, তবে পরবর্তী যুগে পুরুষরাও অধিকার হারাবে। কারণ এটাই যুগের নিয়ম।

গ. উদ্দীপকের ‘নারী’ কবিতায় নারীদের অবমূল্যায়নের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ মানবসভ্যতার অগ্রগতি ও বিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সমান অবদান রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার বিভিন্ন পঙক্তিতেও এ বিষয়ে স্পষ্ট উচ্চারণ রয়েছে। কিন্তু যে সম্মান ও অধিকার নারীরা পাওয়ার যোগ্য সে সমম্মান ও অধিকার নারীরা এখন পর্যন্ত পায় না।
➠ উদ্দীপকে নারীদের বঞ্চনার একটি স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে নারীশ্রমিক সুফিয়া মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করেন। কিন্তু দিন শেষে পুরুষের সমান পারিশ্রমিক পান না। তাই সুফিয়াদের কণ্ঠ থেকেও নিঃসৃত হয়- “এইডা আবার কোন বিচার”। মানবসভ্যতার বিনির্মাণে নারী-পুরুষের সমান অবদান। ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা মোটা দাগে লেখা হয়েছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারীর ক্ষেত্রে ততটা নয়। তাই বলা যায়, নারীদের অবমূল্যায়নের দিকটি উদ্দীপক এবং ‘নারী’ কবিতায় সমানভাবে ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব নারীদের অবমূল্যায়নের বিষয়টি বিবেচনায় আনলেও ‘নারী’ কবিতার বিষয়বস্তু বিশাল ও বিস্তৃত।
➠ সমাজজীবনে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। এ যেন এক নিয়মিত চিত্র। পুরুষ প্রভুরা নারীদের সমাজের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে। ধর্মীয় শাসননীতি প্রয়োগ করে তাদের গৃহবন্দি করে রেখেছে। যার ফলাফল অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের সমাজ ও দেশ পিছিয়ে পড়েছে।
➠ ‘নারী’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে অধিকারবঞ্চিত নারীদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দীপকে দেখা যায় সুফিয়া পুরুষের সাথে সমান তালে কাজ করেও তাদের সমান পারিশ্রমিক পান না। ‘নারী’ কবিতায়ও নারীর এই বঞ্চনার দিকটি সমানভাবে উঠে এসেছে। তবে কবিতায় আরও বিভিন্ন দিকের সমাবেশ ঘটেছে।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি বলেছেন, পৃথিবীর মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী-পুরুষের সমান অবদান। ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা লেখা হয়েছে নারীদের অবদান ততটা লেখা হয়নি। এখন দিন এসেছে সমঅধিকারের। তাই নারীর উপর আর নির্যাতন চালানো চলবে না, তাঁর অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। কবিতার এই প্রতিবাদের দিকটি উদ্দীপকে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এসব দিক বিবেচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মনোয়ারা একজন নারী হয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করেছেন। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ তিনি কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেছেন। নারী হলেও তিনি কোনো সমস্যায় পড়েননি।

ক. ‘নারী’ কবিতাটি কে লিখেছেন?
খ. কবি বর্তমান সময়কে ‘বেদনার যুগ’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. মনোয়ারার কার্যক্রমে ‘নারী’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে কবির অনুভূতির প্রতিফলন ঘটলেও ‘নারী’ কবিতায় কবি আরও বেশি ব্যঞ্জনাময়।” বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘নারী’ কবিতাটির লেখক কাজী নজরুল ইসলাম।
খ. ১ নং অনুশীলনী প্রশ্নের ‘খ’ নং উত্তর দ্রষ্টব্য।
গ. ১ নং অনুশীলনী প্রশ্নের ‘গ’ নং উত্তর দ্রষ্টব্য। (শুধুমাত্র আনোয়ারার স্থলে মনোয়ারা নামটি পরিবর্তন করলেই হবে)
ঘ. ১ নং অনুশীলনী প্রশ্নের ‘ঘ’ নং দ্রষ্টব্য (শুধুমাত্র আনোয়ারার স্থলে মনোয়ারা বসালেই হবে) বোর্ড বই প্রশ্নের ‘ঘ’-এ বাঙ্ময় ও যশোর বোর্ড প্রশ্নের ‘ব্যঞ্জনাময়’ শব্দটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রিকশাচালক রমিজের একার আয়ে সংসার চলে না বলে স্ত্রী আকলিমা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসারে সহযোগিতা করে। তাদের বড় মেয়ে রেবেকার বিয়ের প্রস্তাব আসলে রমিজ বলে- ‘এ ব্যাপারে আমার স্ত্রীর মতামত নিতে হবে’।

ক. ‘নারী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. ‘সে যুগ হয়েছে বাসি’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের রমিজ যে কারণে স্ত্রীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছে তা ‘নারী’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের মূল বক্তব্যে কাজী নজরুল ইসলামের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি ফুটে উঠেছে”- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘নারী’ কবিতাটি ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
খ. নারীকে অবমাননা করার যুগ বাসি হয়েছে।
➠ আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা চিরকাল দুর্বল, অবহেলিত। নারীদেরকে সবসময় অবহেলা গঞ্জনার শিকার হতে হয়। নারী অবমাননার সেই যুগের অবসান হয়েছে। নারীরা আজ বুঝতে শিখেছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম আলোচ্য অংশে এই কথা বোঝাতে চেয়েছেন।

গ. সংসারে স্বামী-স্ত্রীর সমান অধিকার এই বিবেচনায় রমিজ তার স্ত্রীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছে।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম নর ও নারীর সাম্য ও সমান অধিকারের কথা বলেছেন। নারী-পুরুষের যৌথ অবদানে সভ্যতার বিকাশ সাধিত হয়েছে। নারীর অবদান বা নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া পুরষ কোনো কাজে উন্নতি করতে পারেনি। পৃথিবীর সকল কাজে নারীর পদচিহ্ন রয়েছে। বিশেষ করে সংসারজীবনে নারীর অবদান অপরিসীম।
➠ উদ্দীপকের রমিজ সাহেব রিকশাচালক। তার স্ত্রী আকলিমা অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করে সংসারে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করে। রেবেকা তাদের বড় মেয়ে। রেবেকার বিয়ের প্রস্তাব এলে রমিজ সাহেব একা কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। সে তার স্ত্রী আকলিমার মতামত নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। এখানে ‘নারী’ কবিতার মূল বিষয় সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

ঘ. ‘উদ্দীপকের মূল বক্তব্যে কাজী নজরুল ইসলামের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি ফুটে উঠেছে’- উক্তিটি সত্য।
➠ ‘নারী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। সাম্যবাদী কবি ‘নর-নারী’ উভয়কেই মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি জগতে নর ও নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাবান। তার মতে, পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণে সংসারজীবন সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে।
➠ উদ্দীপকে রিকশাচালক রমিজের স্ত্রী আকলিমা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে। বাসাবাড়িতে কাজ করে আকলিম যে অর্থ পায় তা দিয়ে সংসারের কাজে রমিজকে সাহায্য করে। বড় মেয়ে রেবেকার বিয়ের প্রস্তাব এলে রমিজ আকলিমার মতামত গ্রহণে আগ্রহী হয়। সংসারে স্বামী-স্ত্রীর সমান অধিকারের কথা ভেবে সে তার স্ত্রীর মতামত নিতে চায়।
➠ উদ্দীপকের মূলবক্তব্যে আমরা দেখি কাজী নজরুল ইসলামের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। রমিজের সংসারে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করে তার স্ত্রী। আবার রমিজ সংসারের সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্ত্রীর মতামত গ্রহণ করেন। কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার মূল বক্তব্যই হচ্ছে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার বাস্তবায়ন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
লোকগীতি শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া জীবিকার তাগিদে কোদাল-টুকরি নিয়ে পুরুষ শ্রমিকদের সাথে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটি কাটেন। দিন-শেষে মজুরি মেলে দুই শত টাকা, কিন্তু পুরুষ শ্রমিক পান তিন শত টাকা। হায়রে, এ কেমন আইন? মালিকপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পান এটাই নিয়ম, এটাই আইন।

ক. ‘নারী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা লেখা হয়েছে, নারীর অবদান ততটা লেখা হয়নি কেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবের সাথে কীভাবে ‘নারী’ কবিতার ভাবার্থ সাদৃশ্যপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নারী’ কবিতার একটি খণ্ডচিত্র মাত্র” মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
ক. ‘নারী’ কবিতাটি ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
খ. ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা লেখা হয়েছে, নারীর অবদান ততটা লেখা হয়নি পুরুষশাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিগত সীমাবদ্ধতার কারণে।
➠ মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। পুরুষদের মতো অতটা প্রত্যক্ষ সংগ্রামে নারীরা লিপ্ত হতে না পারলেও তারা নিভৃতে পুরুষদের সেবা ও সহযোগিতা করে এসেছেন। পুরুষের ন্যায় তারাও অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু কর্তৃত্বহীন সংকীর্ণমনা পুরুষদের মানসিক দাসত্বের কারণে নারীদের সেই ত্যাগ ইতিহাসে আশ্রয় পায়নি।

গ. উদ্দীপকের ভাবে প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি বর্ণিত হয়েছে যা ‘নারী’ কবিতার ভাবার্থের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতির স্বার্থে নারী তার যোগ্যতার প্রমাণ রাখলেও আমাদের পুরুষশাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নারীর যথার্থ মর্যাদা প্রদানে আজও দ্বিধান্বিত। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘নারী’ কবিতায় নানা উদাহরণের সাহায্যে নারীর অবদান তুলে ধরেছেন। সুযোগ পেলেই নারীরা তাদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন নানা ভাবে।
➠ উদ্দীপকেও নারীর কাজের প্রতি বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে। কাঙালিনী সুফিয়া কোদাল-টুকরি নিয়ে সারাদিন পুরুষ শ্রমিকদের সমান কাজ করলেও মজুরি পায় কম এবং মালিকপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে এটাই নিয়ম, এটাই আইন। পুরুষ সমাজ নারীর শ্রমকে অস্বীকার করে তাকে কম মজুরি দেয় এবং তাকে অমর্যাদা করে।
উদ্দীপকের এই ভাবের সাথেই ‘নারী’ কবিতার ভাবার্থ সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নারী’ কবিতার একটি খণ্ডচিত্র মাত্র” মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন নারী সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অবদান কোনো অংশেই কম নয়। কিন্তু নারীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা সমাজ কখনই দেয়নি। নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ করে তাকে তাই পুরুষের সমমর্যাদা দিতে হবে। সমাজ গঠনে নারীর গুরুত্ব অনুধাবন করে তাকে তার প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দেয়াটাই এখন সময়ের দাবি। নারী-পুরুষের সমঅধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের এই বলিষ্ঠ আহ্বান ‘নারী’ কবিতায় উচ্চারিত হলেও উদ্দীপকে তেমন কোনো ভাবনার প্রতিফলন নেই।
➠ উদ্দীপকে নারীর শ্রমকে অবহেলার চোখে দেখা হয়েছে। তাই কাঙালিনী সুফিয়া সারাদিন কোদাল-টুকরি নিয়ে পুরুষের সমান পরিশ্রম করলেও মজুরি পায় কম এবং মালিকপক্ষ জানায় এটাই নিয়ম। অর্থাৎ উদ্দীপকে শুধু নারীর শ্রমের অবমূল্যায়নের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে, কবিতার অন্যান্য বিষয় এখানে অনুপস্থিত।
➠ ‘নারী’ কবিতায় মানবসভ্যতার ইতিহাসে নারীর অবদানকে ছোট করে দেখার পাশাপাশি নারীর অধিকার সম্পর্কে কবির সজাগ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে। উদ্দীপকে শুধু পুরুষসমাজ কর্তৃক নারীর শ্রমের যথার্থ মূল্য না পাওয়ার দিকটি ব্যক্ত হলেও নারীর অধিকার রক্ষার ব্যাপারে কোনো আশাবাদ ব্যক্ত হয়নি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘নারী’ কবিতার একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পৃথিবীতে যে জীবন প্রবাহ চলছে, তা মূলত নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলাফল। নারী ছাড়া পুরুষ যেমন নিরর্থক, পুরুষ ছাড়াও নারী তেমনি মূল্যহীন। অর্থাৎ নারী-পুরুষ উভয়েই সমঅধিকারী। শারীরিক কাঠামো বা কার্যক্ষেত্রের পার্থক্যের কারণে পুর“ষরা যদি নারীদেরকে অবজ্ঞা করে বা অক্ষম ভাবে, তবে সেটা নিতান্তই মূর্খতার পরিচয়। কারণ, বিশ্বের সব সৃষ্টির মূলে পুরুষের পাশাপাশি নারীর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ অবদান রয়েছে।

ক. ‘কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর’ কথাটির অর্থ হলো- অসংখ্যা নারী স্বামীকে হারিয়েছে।
খ. কবির চোখে নারী-পুরুষে ভেদাভেদ না থাকার কারণ দেখাও।
গ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দেখাও যে, উদ্দীপকের ভাববস্তু ও ‘নারী’ কবিতার ভাববস্তুর আদর্শের অনুসারী।
ক. কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর কথাটির অর্থ হলো- অসংখ্যা নারী স্বামীকে হারিয়েছে।
খ. পৃথিবীতে কল্যাণকর যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তাতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার। এ কারণেই কবির চোখে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নেই।
➠ কবি বলেছেন যে, নারী আর পুরুষ মিলেই বিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করেছে। এই পৃথিবীতে কল্যাণকর অনেক কিছু সৃষ্টি হয়েছে, নারীরা এককভাবে তা সৃষ্টি করতে পারেনি এবং শুধু পুরুষের দ্বারাও তা সম্ভব হয়নি। মূলত নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসের দ্বারাই পৃথিবী এত সুন্দররূপে সজ্জিত হয়েছে। এ কারণেই কবির চোখে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নেই।

গ. ‘নারী’ কবিতায় কবি মানব সভ্যতার অগ্রগতি সাধনে নারী-পুরুষের সমান অবদানের কথা উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি সাম্যের গান গেয়েছেন, কবির চোখে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নাই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মানুষ। পৃথিবীতে সবার সমান অবদান ও অধিকার রয়েছে। কারণ, কল্যাণকর যতকিছু এ পর্যন্ত পৃথিবীতে হয়েছে তার অর্ধেক সৃষ্টি করেছে নারী এবং অর্ধেক নর। পৃথিবীতে বড় বড় যত অভিযান আজ পর্যন্ত হয়েছে তার মধ্যেও নারীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান রয়েছে। নারীর প্রেরণা ছাড়া পুরুষের তরবারি কখনই জয়ের সন্ধান পায়নি।
➠ উদ্দীপকেও সৃষ্টিশীলতার বিষয়ে আলোচনায় নারী-পুরুষের সাম্য প্রকাশ পেয়েছে। আজকের পৃথিবীতে যে ব্যস্ত জীবনের প্রবাহ চলছে, তা নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলাফল। পৃথিবীর বুকে নারী ছাড়া পুরুষের জীবন অপূর্ণ, আর পুরুষ ছাড়া নারীর জীবনও নিরর্থক। অর্থাৎ নারী-পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক। নারী-পুরুষ পৃথিবীতে সমান তাৎপর্যের অধিকারী। তাই বলা যায় যে, ‘নারী' কবিতায় নারীর যে অবদানের কথা বলা হয়েছে উদ্দীপকেও তা ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের লেখক ও ‘নারী’ কবিতার কবি একই আদর্শের অনুসারী।
➠ এই পৃথিবী এক বিরাট চারণ ক্ষেত্র এবং নরনারী নির্বিশেষে এই পৃথিবীর রক্ষক ও কালক্রমে উত্তরাধিকারী। এক্ষেত্রে নারী অথবা পুরুষ যদি কার্যক্ষেত্রে সক্রিয় না হয়, তবে কালক্রমে পৃথিবী নির্জীব হয়ে পড়বে। অর্থাৎ সংসার, সমাজে বা রাষ্ট্র সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য নারী-পুরুষ সবার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। উদ্দীপক ও নারী কবিতায় এ বিষয় প্রকাশ পেয়েছে।
➠ বর্তমান পৃথিবীর জীবনপ্রবাহ ও এতে নারীর সক্রিয় ভূমিকা উদ্দীপকে আলোচিত হয়েছে। মূলত পৃথিবীর জীবনধারা নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলাফল। নারী ছাড়া পৃথিবীর পুরুষ যেমন নিরর্থক, তেমনি পুরুষ ছাড়া নারীরাও অর্থহীন। কিন্তু নারীদের শারীরিক কাঠামো বা সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে কেউ যদি নারীকে অবহেলা করে তবে সেটা প্রকৃতই মূর্খতার পরিচয়। কারণ পৃথিবীতে পুরুষ-নারীর সমান অবদান রয়েছে। নারী কবিতায় এই ভাবেরই প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি সাম্যের বাণী রচনা করেছেন, কবির চোখে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নাই। কারণ এই বিশ্বে কল্যাণকর যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তার অর্ধেক পুরুষ এনেছে। আর বাকি অর্ধেক এনেছে নারী। পাশাপাশি পাপ-তাপ যা কিছু এসেছে, তার জন্যও নারী-পুরুষ সমান অপরাধী। ইতিহাসে অদ্যাবধি তত জয়ের পাতা রচিত হয়েছে, তা মূলত নারীদের ত্যাগে মহীয়ান। কখনই নারী ছাড়া পুরুষ একা জয়লাভ করেনি। সুতরাং সাম্যবাদের আলোচনার নিরিখে বলা যায় যে, উদ্দীপকের ভাববস্তু ও ‘নারী’ কবিতার ভাববস্তু একই আদর্শের অনুসারী।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আমিনা আদিলের সংসারে এসেছে দশ বছর আগে। আমিনা মনে করত সংসার মানে পূর্ণতার জীবন। কিন্তু আদিলের সংসারে এসে তার সব ধারণা পাল্টে গেছে। কারণ, আদিলের সংসারে আমিনা শুধু কষ্ট করেছে আর বিনিময়ে কষ্টই পেয়েছে। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। কিন্তু সে পরিশ্রমে সমবেদনার পরিবর্তে লাঞ্ছনা জোটে। সংসারে কখনই তার মতামত প্রাধান্য পায় না। ফলে জীবনের প্রতি আমিনার সৃষ্টি হয়েছে চরম তিক্ততা।

ক. নরের বীরত্বের কথা কোথায় লেখা আছে?
খ. কবি বর্তমান সময়কে মানুষের যুগ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ভাবার্থ ‘নারী’ কবিতার সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।
ক. নরের বীরত্বের কথা ইতিহাসে লেখা আছে।
খ. কবি বর্তমান সময়কে ‘মানুষের যুগ’ বলেছেন, কারণ এখন কোনো লিঙ্গভেদের সময় নয়, নারী-পুরুষ সবাই মানুষ।
➠ নারী ও পুরুষের যে পার্থক্য, তা প্রচাীন যুগ থেকেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নারীরা অবহেলিত, লাঞ্ছিত। তারা সঠিক মর্যাদা ও অধিকার পায় না। ‘নারী’ বলে তাদের অপবাদ দেয়া হয়। কবি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠে সোচ্চার। তিনি এই প্রাচীন ভেদাভেদ ঘোচাতে বর্তমানকে নারী বা পুরুষের সময় না বলে ‘মানুষের যুগ’ বলেছেন। কারণ নারী বা পুরুষ- সবাই সমান।

গ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতায় নারীদের প্রতি পুরুষের বৈষম্যমূলক আচরণের কথা প্রকাশ পেয়েছে।
➠ অদ্যাবধি পৃথিবীতে যত বড় বড় জয় সাধিত হয়েছে তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নারীর অবদান রয়েছে। কিন্তু নারীদের সে অবদান কোনো স্বীকৃতি লাভ করেনি। পৃথিবীতে অনেক নরের স্তম্ভ রয়েছে, কিন্তু তাতে কোনো নারীর নাম অঙ্কিত হয়নি। এর অন্যতম কারণ হলো, আমাদের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা নারীদের সৃজিত কল্যাণ ভোগ করতে প্রস্তুত কিন্তু তার প্রতিদান দিতে বিমুখ।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, আমিনা ও আদিলের বিয়ে হয়েছে প্রায় দশ বছর আগে। আমিনা মনে করত, সংসার জীবন পূর্ণতার পরিচায়ক। কিন্তু গত দশ বছরে তার সে ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমিনার কাছে সংসার মানে অসহ্য কোনো কিছু। কারণ, আমিনা সংসারে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে। কিন্তু সে পরিশ্রমের স্বীকৃতি দূরে থাক, আদিলের কাছে আমিনা ন্যূনতম সমবেদনা বা মর্যাদাও পায় না। বরং প্রহার আর উপহাস জোটে নিয়মিত। উদ্দীপকের এ বৈষম্যমূলক দিকটিই ‘নারী’ কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নারী’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না” মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি সাম্যের গান গেয়েছেন। কারণ, কবির মতে পৃথিবীতে নারী আর পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। অথচ এ কবিতায় কবি এমন এক সমাজের কথা বলেছেন যেখানে পুরুষরা নারীকে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখত। নারীদের দাসী ভেবে তাদের ওপর নানারকম অত্যাচার করত। পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের নামে গৌরবের ইতিহাস রচিত হলেও নারীর নাম কোথাও লেখা হয়নি। কবির মতে, সে যুগ বাসি হয়ে গেছে, যে যুগে নারীরা দাসী ছিল।
➠ উদ্দীপকে আদিলের সংসারে আমিনার নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। আমিনা দাম্পত্য জীবন তথা সংসারকে অনেক পবিত্র দৃষ্টিতে দেখত। কিন্তু আদিলের সংসারে এসে সংসার এখন আমিনার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। কারণ, আদিলের সংসারে সে অনেক পরিশ্রম করেও স্বীকৃতি, সম্মান বা সহানুভূতি কিছুই তার জীবনে জোটেনি। বরং অবহেলা, লাঞ্ছনা আর নির্যাতন নিয়মিত জুটেছে।
➠ ‘নারী’ কবিতায় মানবসভ্যতায় নারীর অবদান, নারীর প্রতি পুরুষের বৈষম্যমূলক মনোভাব পূর্বযুগের নারীদের অবস্থান ও বর্তমান তথা আধুনিক যুগে নারীদের জাগরণের কথা প্রকাশ পেয়েছে। আর উদ্দীপকে শুধু নারীর প্রতি পুরুষের বৈষম্যের দিকটি ফুটে উঠেছে, যা ‘নারী’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাত প্রায় একটা। চারদিকে ঝিঁঝিঁ ডাকা নীরব অন্ধকার। দূরে দু-একটা জোনাকির ঈষৎ ওড়াউড়ি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। পরিচিত পথের দিশা ঠিক রেখে অন্ধের মতো হাঁটছে সাবিনা। তার হাতে অনেক খাবারের থলে। দু’হাতে নিতে কষ্ট হয়। তবুও পা টেনে টেনে চলে সাবিনা। লক্ষ্য হলো সামনের পোড়াবাড়ি। গেরিলাদের হাইড আউট। পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে তারা এখানে লুকিয়ে থাকে। এভাবে এক মাস ধরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাবিনা গেরিলাদের খাদ্য সরবরাহ করেছিল। একসময় দেশ স্বাধীন হলো। যোদ্ধারা খেতাব আর বাহবা পেলেও কারো মুখেই সাবিনার নাম শোনা যায়নি।

ক. কবি কাদেরকে বিজয়-লক্ষ্মী বলেছেন?
খ. ‘কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি’- ব্যাখ্যা করো।
গ. গেরিলাদের খাদ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে সাবিনা ‘নারী’ কবিতার কোন ভাবটির প্রতিনিধিত্ব করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শেষের বাক্যটিতে ‘নারী’ কবিতায় প্রকাশিত বৈষম্যের দিকটি প্রকাশ পায় কি? মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
ক. কবি নারীদেরকে বিজয়-লক্ষ্মী বলেছেন।
খ. ‘কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি’- চরণটি দ্বারা বিজয় অর্জনে নারীদের ভূমিকাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
➠ পৃথিবীতে অদ্যাবধি অনেক বিজয় অর্জিত হয়েছে। সেসব বিজয়ে আত্মপ্রকাশ পেয়েছে অনেক দিগবিজয়ী বীরের। কিন্তু সে বীরত্বের অন্তরালে লুকিয়ে আছে নারীদের অবদান। মায়ের মমতা, বোনের সেবা আর স্ত্রীর প্রেরণা বলেই পুরুষের তরবারি জয়লাভ করেছে। আলোচ্য চরণ দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।

গ. গেরিলাদের খাদ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে সাবিনা ‘নারী’ কবিতায় উল্লিখিত কল্যাণকর কাজে নারীর অবদানের বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করছে।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি নারীদের মহান অবদানের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। পৃথিবীর বুকে যে বড় বড় অভিযান আজ পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে, তাতে নারীর অবদান কম নয়। অনেক নারী বিধবা হয়েছে, অনেক মা হয়েছেন সন্তানহারা। অনেক বোন হারিয়েছে তার ভাইকে। তবুও নারীরা থেমে যায়নি। সেবা দিয়ে, সাহস দিয়ে, অনুপ্রেরণা দিয়ে চিরকাল উদ্বুদ্ধ করেছে পুরুষদের। এসব সেবা, সাহস আর অনুপ্রেরণা না পেলে পুর“ষের একার দ্বারা কোনো বিজয় অর্জন সম্ভব হতো না।
➠ উদ্দীপকের সাবিনার মধ্যেও এই অবদানের বিষয়টির প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। সাবিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার নিয়ে যায় গ্রাম থেকে অনেক দূরে যেখানে মুক্তিবাহিনীরা লুকিয়ে থাকে। অনেক দূরে ঝুঁকি নিয়ে, কষ্ট সহ্য করে সাবিনা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়। এভাবে একমাস সে রাতের অন্ধকারে খাবার পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করে। অবশেষে দেশ স্বাধীন হয়। দেশের স্বাধীনতায় সাবিনার এ অবদানের মধ্য দিয়ে ‘নারী’ কবিতায় প্রকাশিত কল্যাণকর কাজে নারীর অবদানের বিষয়টিকে ধারণ করেছে।

ঘ. উদ্দীপকের শেষের বাক্যটিতে ‘নারী’ কবিতায় প্রকাশিত বৈষম্যের দিকটি প্রকাশ পায়।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি নারীদের অবদান ও সাহসের দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। বিশ্বের কল্যাণে নারীরা পুরুষের সমান অবদান রেখেছেন। অনেক অভিযানে অনেক নারী ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু ইতিহাসের পাতা শুধু পুরুষের বীরত্বই সাক্ষ্য দেয়। নারীর ত্যাগের স্বীকৃতি দেয় না। কারণ, পুরুষশাসিত সমাজ নারীদেরকে বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখে। তারা নারীদের থেকে গ্রহণ করে কিন্তু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
➠ উদ্দীপকের শেষের বাক্যটি হলো- যোদ্ধারা খেতাব আর বাহবা পেলেও কারো মুখে সাবিনার নাম শোনা যায়নি। সাবিনা একজন গ্রাম্য মেয়ে। কিন্তু তার পরিচয়ে যে সাহসের দিকটি ফুটে উঠেছে, তা বীরের বীরত্বের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। নিঝুম রাতে পরিবেশের সব প্রতিকূলতা স্বীকার করে সে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার পৌঁছে দিয়েছে। এখানে সাবিনা যদি এ সাহস না দেখাত, তবে অবশ্যই খাবারের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বের হতে হতো। এতে করে তাদের শত্রুর কাছে ধরা পড়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। মূলত সাবিনার কারণেই তারা এ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।
➠ তাই বলা চলে উদ্দীপকের সাবিনা বিশেষ স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা অনেক স্বীকৃতি লাভ করেছেন অথচ সাবিনার ত্যাগের কথা কোথাও প্রকাশ পায়নি। এতে ‘নারী’ কবিতায় উল্লিখিত পুরুষশাসিত সমাজের বৈষম্যমূলক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সচ্ছল পরিবারে জন্ম নিয়েও শায়লা শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিল। অথচ তার এক বছরের বড় ভাইকে কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি। বরং উৎসাহ পেয়েছে। নারীর পরম ধর্ম হলো স্বামীর সেবা করা ও সংসারের দায়িত্ব পালন করা- এরূপ মতবাদে বিশ্বাসী শায়লার বাবা তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়, তখন শায়লা অষ্টম শ্রেণি পাস করেছে। শত দুঃখে স্বামীর ঘরে এসেও শায়লা থেমে থাকেনি। কঠিন ব্রত নিয়ে পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। তারপর ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শায়লা এখন আইনের ছাত্রী। নিজের সাফল্যে সে বুঝতে পেরেছে- ছেলে হোক, মেয়ে হোক- মেধাকে অবহেলা করা পাপের শামিল।

ক. স্মৃতিস্তম্ভ কার জন্য রচিত হয়েছে?
খ. ‘বিজয়-লক্ষ্মী নারী’-চরণটি ব্যাখ্যা কর।
গ. শায়লার প্রতি তার পরিবারের আচরণে ‘নারী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শায়লার কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গি ‘নারী’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন কর।
ক. স্মৃতিস্তম্ভ বীরদের জন্য রচিত হয়েছে।
খ. ‘বিজয়-লক্ষ্মী নারী’- চরণটিতে জয়ের নিয়ন্তা দেবী হিসেবে নারীকে কল্পনা করা হয়েছে।
➠ পুরুষ যে অনুপ্রেরণা, সাহস ও শক্তির বলে বিজয় অর্জন করে তার মূলে রয়েছে নারী। দুঃসময়ে যে সাহস আর সেবা বিশেষ প্রয়োজন, তা আমরা নারীদের কাছেই পেয়ে থাকি। আমরা যারা বিভিন্ন কাজে মেধা ও সাফল্যের পরিচয় দিই, তা মূলত আমাদের মা, বোন আর স্ত্রীদের থেকে প্রাপ্ত সেবা, সাহস আর অনুপ্রেরণার কারণেই সম্ভব হয়।

গ. শায়লার প্রতি তার পরিবারের আচরণে ‘নারী’ কবিতায় নর কর্তৃক নারীর অবহেলার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি নারীদের প্রতি নরের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তুলেছেন। পুরুষ-নারীদের কখনো স্বীকৃতি দিতে চায় না। তারা নারীদেরকে অবজ্ঞা আর অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে। ইতিহাসে আজ পর্যন্ত যত বড় বড় অভিযান সংঘটিত হয়েছে, তার কোনোটাতেই নারীর অবদান কম নয়। মায়ের মমতা, বোনের সেবা আর বধূর অনুপ্রেরণার কারণে পুরুষের তরবারি জয়ী হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত নারীর বিজয় ইতিহাস কোথাও লেখা হয় নাই।
➠ উদ্দীপকের শায়লা অবস্থাপন্ন পরিবারের মেয়ে। পড়ালেখায় সে বেশ মেধাবী। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর তার জীবনে প্রতিবন্ধকতা নেমে আসে। শায়লার বাবা মনে করেন, মেয়েদের জন্ম হয়েছে স্বামীর সংসার সাজানোর জন্য। সেই নিমিত্তে শত আপত্তি সত্ত্বেও শায়লাকে বিয়ে করতে হয়। শায়লা শুধু আমাদের সমাজে বা আমাদের পৃথিবীতে নারী বলেই এ প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে। শায়লার এক বছরের বড় ভাই দিব্যি পড়াশোনা করছে। পরিবার থেকে তার উপর কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। মূলত শায়লার এ প্রতিবন্ধকতার জন্য আমাদের পুরুষ সমাজের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিই দায়ী। ‘নারী’ কবিতার এ দিকটি উদ্দীপকের শায়লার প্রতি তার পরিবারের আচরণে ফুটে উঠেছে।

ঘ. শায়লার কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গি যথার্থ ও প্রশংসার দাবিদার।
➠ ‘নারী’ কবিতায় কবি যুগের পরিবর্তনে নারীর জেগে ওঠা অবদানকে তুলে ধরেছেন। এক যুগে নারীরা ছিল পুরুষের কাছে শুধু দাসী। কিন্তু সে যুগ এখন অতীত, আজকের যুগ মানবতার যুগ, সাম্যের যুগ, জেগে ওঠার যুগ। যুগের এ আহ্বান নারীদের কানে পৌঁছেছে। তারা অবশ্যই রণভেরির মতো জেগে উঠবে। পৃথিবীতে প্রমাণ করবে নিজেদের মেধা আর সক্ষমতাকে। হাজার বছরের বৈষম্য মুছে যাবে সব জাগরণের কাছে।
➠ উদ্দীপকের শায়লা সচ্ছল পরিবারের মেয়ে। মেধাবী শায়লা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর পরিবারের হীনম্মন্য মানসিকতায় শিকার হয়ে অবশেষে স্বামীর সংসারে প্রবেশ করে। কিন্তু শায়লা থেমে থাকেনি। প্রকৃতপক্ষে জেগে ওঠার চেতনা তাকে থামতে দেয়নি। শত দুঃখ সহ্য করেও সে মেধার স্ফুরণ ঘটিয়েছে। কঠিন ব্রত নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি হয়েছে। শায়লা এখন নিজের অধিকার সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন। বাবার বাড়িতে সে যে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে, সে প্রতিবন্ধকতাকে শায়লা ঘৃণা করে। তার মতে, ছেলে হোক মেয়ে হোক- মেধাকে অবহেলা করা পাপের শামিল।
➠ উদ্দীপকেও দেখা যায় যে, পরিবার ও সমাজের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে শায়লা নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। সুতরাং বলা যায় যে, শায়লার কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গি ‘নারী’ কবিতার আলোকে যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নিলামওয়ালা : (হাত বাঁধা এক যুবতিকে নির্দেশ করে) আসুন ভাই, কাচের দামে হীরা কিনে নিন। এই সাঁওতাল তাগড়া তরুণী দুই মরদের সমান পরিশ্রম করবে, উদয়াস্ত পরিশ্রম করবে। দাম মাত্র এক হাজার...........এক হাজার...........এক হাজার।
১ম ক্রেতা : বলে কী! এত্তো দাম! ছয়শত টাকা।
২য় ক্রেতা : সাতশত টাকা (বাম হাতে যুবতির গায়ে সজোরে চিমটি কাটবে। যুবতি নির্বাক)
৩য় ক্রেতা : নয়শত টাকা। দেখে তাগড়া মনে হচ্ছে।
নিলামওয়ালা : নয়শত.....এক.....নয়শত দুই.....নয়শত.....
চতুর্থ ক্রেতা : এক হাজার একশত টাকা।
দ্বিতীয় অংশ : বর্তমান যুগ।
ম্যানেজার : আসুন ম্যাডাম, অফিসের প্রথম দিন কেমন লাগছে?
মহিলা : ভালোই তো, চারদিক বেশ ফিট্ফাট।
ম্যানেজার : ম্যাডাম, কাজের কথা বলি। আপাতত আপনার বেতন বিশ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। দুই মাস পর চল্লিশ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। আপনি কি সন্তুষ্ট? মহিলা : ধন্যবাদ।

ক. যে যুগে নারীরা দাসী ছিল, সে যুগ কী হয়েছে?
খ. “কেহ রহিবে না বন্দি কাহারও”- চরণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশের সঙ্গে ‘নারী’ কবিতার সাদৃশ্য নির্ণয় করো।
ঘ. “উদ্দীপকের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, ‘নারী’ কবিতায়ও তা প্রকাশ পেয়েছে।”- বিশ্লেষণ করো।
ক. যে যুগে নারীরা দাসী ছিল, সে যুগ বাসি হয়েছে।
খ. “কেহ রহিবে না বন্দি কাহারও”-চরণটি দ্বারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা প্রকাশ পেয়েছে।
➠ একসময় নারীরা পুরুষের হাতে নানাদিক থেকে বন্দি ছিল। তারা কখনই কোনো অধিকার আদায় করতে পারেনি, বরং পুরুষের দাসী হয়ে জীবন কাটিয়েছে। কিন্তু বর্তমান যুগ সমঅধিকারের যুগ। এ যুগে প্রত্যেক নারী তার অধিকার আদায় করতে পারবে। অন্য কারও মুখাপেক্ষী হবে না। আলোচ্য চরণ দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে বর্তমান যুগে নারী-স্বাধীনতার বিষয়টি ‘নারী’ কবিতায় উল্লিখিত বর্তমান যুগ যে সাম্যের যুগ কবির এ বক্তব্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে বর্তমান যুগের নারীদের স্বাধীনতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আর ‘নারী’ কবিতার কবিও বর্তমান যুগকে নারী-পুরুষের সাম্যের যুগ বলেছেন- এখানেই ‘নারী’ কবিতার সঙ্গে উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশের সাদৃশ্য রয়েছে।
➠ উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে আমরা দেখি, বর্তমান যুগের একজন নারীর সঙ্গে তার অফিসের ম্যানেজারের কথাবার্তা। সেখানে ম্যানেজার নারী সহকর্মীকে সসম্মানে সম্বোধন করে তার খোঁজখবর নেন এবং অফিসে তার বেতন বৃদ্ধির কথাও বলেন। এসব সংলাপে ভেদাভেদহীন সমাজের এবং নারী-পুরুষের পাশাপাশি কাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে বর্তমানের স্বাধীন নারীর যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, ‘নারী’ কবিতায়ও কবি বর্তমান যুগকে নারীর সমঅধিকার আদায়ের জন্য সাম্যের যুগ বলে অভিহিত করেছেন।

ঘ. উদ্দীপকের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের মধ্যে নারীদের পরাধীনতা ও মূল্যায়নের বিষয়টি ফুটে উঠেছে এবং ‘নারী’ কবিতায়ও কবি নারীদের দাসী অবস্থার কথা তুলে ধরে এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছেন।
➠ ‘নারী’ কবিতায় দেখানো হয়েছে পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। কিন্তু নারীদের সেই স্বীকৃতি দেওয়াই হয়নি; বরং তারা একটা যুগে দাসী হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু কবি বলেছেন, যে যুগে নারীরা দাসী ছিল আজ তা বাসি হয়েছে। বর্তমান যুগ হলো মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ। আজ আর কেউ কারও বন্দি বা অধীন থাকবে না।
➠ উদ্দীপকের প্রথম অংশে একজন সাঁওতাল তরুণীকে নিলামে তোলা হয়েছে এবং নিলাম ডাকার সময় ক্রেতাদের আচরণে হীন মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। তরুণীকে দাসী হিসেবে এক হাজার একশত টাকায় এক ক্রেতা কিনে নেয়। বর্বর যুগে নারীদের বেচাকেনার পণ্য হিসেবে গণ্য করা হতো। উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে দেখি, বর্তমান যুগের একজন নারীর স্বাধীন অবস্থা, পুরুষ সহকর্মীর সহযোগিতায় সে সসম্মানে অফিসে কাজ করছে।
➠ উদ্দীপকের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশে নারীর পরাধীন ও স্বাধীন অবস্থার পার্থক্য দেখা যায়। সেই একই চিত্র আমরা ‘নারী’ কবিতায়ও দেখি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, ‘নারী’ কবিতায়ও তা প্রকাশ পেয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নারী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তাই তিনি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। জনপ্রশাসনে নারীরাও যে হাল ধরতে পারে তার দৃষ্টান্ত সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি আজ নারীদের অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। বস্তুত দেশ গঠনে নারীরাও তাদের ভূমিকা রাখতে পারে।

ক. বিশ্বের কল্যাণকর জিনিসের অর্ধেক পুরুষ করেছে, বাকি অর্ধেক কে করেছে?
খ. কবি সাম্যের গান গেয়েছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের মূলভাবের সঙ্গে ‘নারী’ কবিতার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. ‘দেশ গঠনে নারীরাও তাদের ভূমিকা রাখতে পারে।’ উদ্দীপক ও ‘নারী’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মাওলানা দেলোয়ার হোসেন একজন নারীবিদ্বেষী মানুষ। তিনি নারী-পুরুষের সমান অধিকারকে মেনে নিতে পারেন না। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের সমান হতে পারে না। আল্লাহতাআলা নারীকে প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন। নারী সবসময় ঘরে বসে পুরুষের সেবা করবে, বাইরে বেরিয়ে পুরুষের মতো সবকিছুতে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা তাদের নেই এবং দেয়া উচিত নয়।

ক. বীরের স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে কোনটি লেখা নেই?
খ. “আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে।” চরণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নারী' কবিতার বৈসাদৃশ্য কোথায়? নিরূপণ করো।
ঘ. “উদ্দীপকের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ‘নারী’ কবিতায় কবির বিপরীত মানসিকতার অধিকারী।”- বিশ্লেষণ করো।
-----------

তথ্যসূত্র:
১. সাহিত্য কণিকা: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ,ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post