‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

সেইদিন এই মাঠ : জীবনানন্দ দাশ
সেইদিন এই মাঠ : জীবনানন্দ দাশ

সেইদিন এই মাঠ
জীবনানন্দ দাশ

সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি-
এই নদী নক্ষত্রের তলে
সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন-
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
আমি চলে যাব বলে
চালতাফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে?
লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
চারিদিকে শান্ত বাতি ভিজে - গন্ধ - মৃদু কলরব;
খেয়ানৌকোগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে;
পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল
এশিরিয়া ধুলো আজ বেবিলন ছাই হয়ে আছে। 

উৎস নির্দেশ:
‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা:
সেইদিন এই মাঠ... কবে আর ঝরে- জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির কবি। প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্য তাঁর কবিতার মৌলিক প্রেরণা। তিনি জানেন বিচিত্র বিবর্তনের মধ্যেও প্রকৃতি তাঁর রূপ-রস-গন্ধ কখনই হারিয়ে ফেলবে না। তিনি যখন থাকবেন না তখনও প্রকৃতি তার অফুরন্ত ঐশ্বর্য নিয়ে মানুষের স্বপ্ন-সাধ ও কল্পনাকে তৃপ্ত করে যাবে। আলোচ্য অংশে কবি প্রকৃতির এই মাহাত্ম্যকে গভীর তৃপ্তি ও মমত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন।
আমি চলে যাব বলে..... লক্ষ্মীটির তরে- পৃথিবীতে কেউই চিরস্থায়ী নয়। প্রত্যেক মানুষকেই এক সময় চলে যেতে হয়। কিন্তু শিশিরের জলে চালতা ফুল ভিজে যে রহস্যময় সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় যুগ-যুগান্তে তার কোনো শেষ নেই। আর সেই শিশিরের জলে ভেজা চালতা ফুলের গন্ধের ঢেউ প্রবাহিত হতে থাকবে অনন্তকালব্যাপী। কবির এই বোধের মধ্যে প্রকৃতির এক শাশ্বতরূপ মূর্ত হয়ে উঠেছে, যেখানে লক্ষ্মীপেঁচাটির মমত্বের অনুভাবনাও ধরা দিয়েছে অসাধারণ এক তাৎপর্যে।
এশিরিয়া ধুলো আজ......- মানুষের গড়া পৃথিবীর অনেক সভ্যতা বিলীন হয়ে গেছে। এশিরিয় ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতা এখন ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে চিরকাল প্রাণময় থাকে। প্রকৃতির মধ্যে বিচিত্র গন্ধের আস্বাদ মৃদুমন্দ কোলাহলের আনন্দ, তার অন্তর্গত অফুরন্ত সৌন্দর্য কখনই শেষ হয় না। কবিতাটিতে জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির এই চিরকালীন সৌন্দর্যকে বিস্ময়কর নিপুণতায় উপস্থাপন করেছেন।

পাঠ-পরিচিতি:
সভ্যতা একদিকে যেমন ক্ষয়িষ্ণু অন্যদিকে চলে তার বিনির্মাণ। মরণশীল ব্যক্তিমানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালের ব্যস্ততা। মাঠে থাকে চঞ্চলতা, চালতাফুলে পড়ে শীতের শিশির, লক্ষ্মীপেঁচকের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় মঙ্গলবার্তা, খেয়া নৌকা চলে নদীনালাতে-অর্থাৎ কোথাও থাকে না সেই মৃত্যুর রেশ। ফলে মৃত্যুতেই সব শেষ নয়, পৃথিবীর বহমানতা মানুষের সাধারণ মৃত্যু রহিত করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু এ জগতে সৌন্দর্যের মৃত্যু নেই, মানুষের স্বপ্নেরও মরণ নেই। গভীর জীবনতৃষ্ণা নিয়ে এই সত্যই কবিতাটিতে অনুভূত হয়েছে। অনুশীলনী

কবি পরিচিতি:
জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালে বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সত্যানন্দ দাশ, মাতা কুসুমকুমারী দাশ। কুসুমকুমারী দাশও ছিলেন একজন স্বভাবকবি। জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল, ব্রজমোহন কলেজ ও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষালাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি লাভের পর তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন এবং সুদীর্ঘকাল তিনি অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। জীবনানন্দ দাশ প্রধানত আধুনিক জীবনচেতনার কবি হিসেবে পরিচিত। বাংলার প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যে কবি নিমগ্নচিত্ত। কবির দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এক অনন্য রূপসী। এ দেশের গাছপালা, লতাগুল্ম, ফুল-পাখি তাঁর আজন্ম প্রিয়। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ: ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, রূপসী বাংলা; প্রবন্ধগ্রন্থ: কবিতার কথা; উপন্যাস: মাল্যবান, সতীর্থ ইত্যাদি। ১৯৫৪ সালের ১৪ই অক্টোবর জীবনানন্দ দাশ কলকাতায় এক ট্রাম-দুর্ঘটনায় আহত হন এবং ২২শে অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।।

কর্ম-অনুশীলন:
১। খেয়া নৌকায় পারাপারের বিবরণ দাও।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১। ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় বর্ণিত ফুলের নাম কী?
ক. গোলাপ
খ. শিউলি
গ. চালতা
ঘ. কদম
২। ‘আমি চলে যাব’-কবি কোথায় চলে যাওয়ার কথা বলেছেন?
ক. গ্রামে
খ. শহরে
গ. পরপারে
ঘ. বিদেশে
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩-সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
তখন আমায় নাই বা তুমি ডাকলে
তারার পানে চেয়ে চেয়ে
নাই বা মনে রাখলে।
৩। উদ্দীপকে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. সৌন্দর্য
খ. ঐতিহ্য
গ. ঐশ্বর্য
ঘ. আনন্দ

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কোন জীবনচেতনার কবি হিসেবে পরিচিত?
উত্তর : জীবনানন্দ দাশ প্রধানত আধুনিক জীবনচেতনার কবি হিসেবে পরিচিত।
২. জীবনানন্দ দাশ কী দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : জীবনানন্দ দাশ ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
৩. জীবনানন্দ দাশ কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
৪. সেই দিন কী স্তব্ধ হবে না বলে কবি জানেন?
উত্তর : সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে না বলে কবি জানেন।
৫. নদী কিসের তলে স্বপ্ন দেখবে?
উত্তর : নদী নক্ষত্রের তলে স্বপ্ন দেখবে।
৬. লক্ষ্মীপেঁচা কার তরে গান গাইবে?
উত্তর : লক্ষ্মীপেঁচা তার লক্ষ্মীটির তরে গান গাইবে।
৭. খেয়া নৌকাগুলো কোথায় এসে লেগেছে?
উত্তর : খেয়া নৌকাগুলো চরের খুব কাছে এসে লেগেছে।
৮. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কী ধুলো হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় এশিরিয়া ধুলো হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৯. জীবনানন্দ দাশের কবিতার মৌলিক প্রেরণা কী?
উত্তর : জীবনানন্দ দাশের কবিতার মৌলিক প্রেরণা প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্য।
১০. কবি না থাকলেও প্রকৃতি তার কী নিয়ে মানুষের স্বপ্ন-সাধ-কল্পনাকে তৃপ্ত করে যাবে?
উত্তর : কবি না থাকলেও প্রকৃতি তার অফুরন্ত ঐশ্বর্য নিয়ে মানুষের স্বপ্ন-সাধ-কল্পনাকে তৃপ্ত করে যাবে।
১১. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কোন ফুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর : ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় চালতা ফুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. সেইদিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি- চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : বিচিত্র বিবর্তনের মাঝেও প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ হারিয়ে যাবে না-এ ভাবটিই প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।
➠ জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির কবি। প্রকৃতির সাথে তাঁর রয়েছে নিবিড় সখ্য। তিনি জানেন প্রকৃতির ঐশ্বর্যের বিনাশ নেই। তিনি হয়তো এ পৃথিবী থেকে একদিন বিদায় নেবেন। কিন্তু প্রকৃতির অনুষঙ্গগুলো একইভাবে পৃথিবীর শোভা হিসেবে রয়ে যাবে। প্রকৃতির এই অবিনাশী সত্তার অনুভূতিই প্রকাশ পেয়েছে উপরিউক্ত চরণটিতে।
২. ‘সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে’-চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : মানুষের দেহের মৃত্যু ঘটলেও কল্পনা ও স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে না- এই অনুভূতিই প্রকাশিত হয়েছে চরণটিতে।
➠ মানুষ মরণশীল। তাই ব্যক্তিমানুষকে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। কিন্তু পৃথিবীতে থেকে যায় তার স্বপ্ন-সাধ-কল্পনা। সেগুলোর ধারাবাহিকতা জীবিতদের মাধ্যমে যুগ-যুগান্তরে বয়ে চলে। প্রকৃতি তার অবিনাশী ঐশ্বর্যের দ্বারা মানুষের সেই স্বপ্ন-সাধ-কল্পনাকে তৃপ্ত করে। আলোচন্য চরণে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
৩. এশিরিয়া ধুলো আজ বেবিলন ছাই হয়ে আছে- কবি এ কথা বলেছেন কেন?
উত্তর : প্রকৃতি ও মানব নির্মিত সভ্যতার স্থায়ীত্বের মাঝে পার্থক্য বোঝাতে কবি জীবনানন্দ দাশ আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
➠ এশিরিয়া ও বেবিলন মানুষের গড়া দুটি সভ্যতা। কালের বিবর্তনে এগুলো আজ ধ্বংসস্তূপে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির ঐশ্বর্য অফুরন্ত। যুগ-যুগান্তর ধরে এর প্রাণ চঞ্চলতা বহমান আছে এবং অনন্তকাল এমনই থাকবে। আলোচ্য চরণে এ বিষয়টিই বোঝাতে চেয়েছেন কবি।
৪. লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?- চরণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রকৃতিতে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসার ধারা অনন্তকাল ধরে বহমান থাকবে- আলোচ্য চরণে এই বিষয়টিই প্রকাশিত হয়েছে।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় বলা হয়েছে, মানুষের মৃত্যু ঘটলেও প্রকৃতির চিরবহমানতায় কোনো ছন্দপতন হয় না। এক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির নানা চিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। লক্ষ্মীপেঁচার মমত্বের অনুভাবনাও তিনি তুলে ধরেছেন অসাধারণ এক তাৎপর্যে। লক্ষ্মীপেঁচা এখানে প্রকৃতিরই এক প্রতিনিধি। ব্যক্তিমানুষের অস্তিত্ব হারিয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে লক্ষ্মীপেঁচার কণ্ঠে চিরকাল ধ্বনিত হবে মঙ্গলবার্তা।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কথাসাহিত্যে প্রকৃতিকে একটি জীবন্ত চরিত্র হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। বিশেষ করে ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে প্রকৃতি চিরকালের নবীনরূপে আবির্ভূত হয়েছে। অপু, দুর্গা এবং আরও অনেকে সেই চিরন্তন প্রকৃতির সন্তান। এরা যায়-আসে-থাকে না। কিন্তু প্রকৃতি চিরকালই নানা রূপ-রস-গন্ধ-বর্ণে বিরাজমান থাকে।
ক. কী ছাই হয়ে গেছে?
খ. ‘পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের প্রকৃতি জানার সঙ্গে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কবিতায় উল্লিখিত সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ক. এশিরীয় ও বেবিলনীয় সভ্যতা ছাই হয়ে গেছে।
খ. ‘পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে থাকবে চিরকাল’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন প্রকৃতির বহমানতা চিরকাল বেঁচে থাকবে ।
পৃথিবীর প্রবহমানতা চিরন্তন। ব্যক্তিমানুষ একসময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু চালতাফুল আগের মতোই ভিজে শিশিরের জলে, লক্ষ্মীপেঁচা গান গায়। খেয়া নৌকার যাতায়াত, পৃথিবীর কলরব সবই চলতে থাকে প্রকৃতির নিয়মে। তাই কবি বলেছেন, ‘পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল’। অর্থাৎ পৃথিবীর এই বহমানতা কালক্রমে চলতেই থাকে।

গ. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার সাথে উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রকৃতির প্রবহমানতার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় বলা হয়েছে, প্রকৃতির চলমানতা অবিনশ্বর। মানুষ এক সময় পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালের ব্যস্ততা। মাঠে ঘাটে চঞ্চলতা, চালতা ফুলে পড়ে শীতের শিশির, লক্ষ্মীপেঁচার ডাক, খেয়া নৌকার ছুটে চলা থেমে যায় না। কোথাও থাকে না ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুর রেশ। সত্য হয়ে ওঠে কেবল পৃথিবীর বহমানতা।
➠ উদ্দীপকের অপু, দুর্গাসহ আরো অনেকে প্রকৃতির লালিত সন্তান। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে এরা প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃতি চিরকালই নানা রূপে-রসে-গন্ধে-বর্ণে বিরাজমান থাকে। সুন্দর নির্মল প্রকৃতি প্রাণবন্ত থাকে। তাই উদ্দীপক ও ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতা পর্যালোচনা করলে আমরা প্রকৃতির বহমানতার সাদৃশ্য খুঁজে পাই।

ঘ. প্রকৃতির সাথে মানুষের অস্থায়ী সম্পর্কের মাধ্যমে সভ্যতার বিবর্তন ঘটেছে। এই ধারণা ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে উদ্দীপকে।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ তুলে ধরেছেন প্রকৃতির অবিনশ্বরতার কথা। মানুষ প্রকৃতিরই সন্তান। প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে সে গড়ে তোলে নতুন সভ্যতা। মানুষ একসময় মারা যায়। তাদের নির্মিত সভ্যতাও ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃতি থাকে অটল, অবিচল।
➠ আলোচ্য উদ্দীপকে প্রকৃতিকে জীবন্ত চরিত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ প্রকৃতির মাঝে একটা গতিময়তা বিদ্যমান। ফুল ফোটে ঝরে আবার ফোটে। অপু, দুর্গাসহ অনেকেই প্রকৃতির সন্তান হিসেবে জন্ম নেয়। আবার তারা চলেও যায়। আরেক প্রজন্ম এসে তাদের স্থান দখল করে। প্রকৃতিতে যেন ভাঙা-গড়ার খেলা চলতে থাকে। মানুষ মরে যায় কিন্তু প্রকৃতি তার স্বরূপে বিরাজমান থাকে। সকল ভাঙা-গড়া, জন্ম-মৃত্যু সবকিছুকেই প্রকৃতি ধারণ করে।
➠ সভ্যতার বিবর্তনের সাথে তাই প্রকৃতির সম্পর্ক বিদ্যমান। সকল পরিবর্তন বিবর্তনের মধ্যেও প্রকৃতি তার সৌন্দর্যকে ধরে রাখে। মানুষের গড়া বিভিন্ন সভ্যতার নিদর্শনও যেন প্রকৃতির উপাদান হয়ে ওঠে। মানুষের জীবন নতুন নতুন সভ্যতার উন্মেষ ঘটায়। সেগুলোও এ সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তবু প্রকৃতি থাকে নির্বিকার। আলোচ্য কবিতা ও উদ্দীপক আমাদের সে ইঙ্গিতই দেয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘রাজপথের কথা’ গল্পে বলেছেন, কী প্রখর রৌদ্র। উহু-হু-হু। এক-একবার নিশ্বাস ফেলিতেছি, আর তপ্ত ধুলা সুনীল আকাশ ধূসর করিয়া উড়িয়া যাইতেছে। ধনী দরিদ্র, সুখী দুঃখী, জরা যৌবন, হাসি কান্না, জন্ম মৃত্যু, সমস্তই আমার উপর দিয়া একই নিশ্বাসে ধূলির স্রোতের মতো উড়িয়া চলিয়াছে। আমি কিছুই পড়িয়া থাকিতে দেই না-হাসিও না কান্নাও না। আমিই কেবল পড়িয়া আছি।
ক. চালতাফুল কিসের জলে ভিজবে?
খ. এই নদী নক্ষত্রের তলে সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন- কেন?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার কোন বিশেষ দিকটি ফুটে উঠেছে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার মূলভাবের পূর্ণরূপ- বিশ্লেষণ করো।
ক. চালতাফুল শিশিরের জলে ভিজবে।
খ. প্রকৃতির রূপ-ঐশ্বর্য চির বহমান বলে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কবি উপরিউক্ত কথাটি বলেছেন।
➠ প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্য জীবনানন্দ দাশের কবিতার প্রাণ। কবির চোখে নদী যেন নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে বসে বসে স্বপ্ন দেখে। আর এই স্বপ্ন দেখার কোনো শেষ নেই। কেননা প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে চিরকাল প্রাণময় হয়ে থাকবে।

গ. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় উল্লিখিত প্রকৃতির বহমানতার দিকটি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
➠ কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় জীবনের এক চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরেছেন। আবহমানকাল ধরে প্রকৃতিতে চলছে ব্যস্ততা। মাঠে থাকে চঞ্চলতা, নদী-নালাতে চলে নৌকা, শীতের শিশির পড়ে চালতা ফুলে- এভাবে প্রকৃতির সবকিছুই রয়েছে চলমান। পৃথিবীতে মানুষ মরে যায়, নতুন মানুষের আগমন ঘটে। কিন্তু প্রকৃতি থেমে থাকে না। মানুষের মৃত্যুতে প্রকৃতির বহমানতা কখনও থমকে যায় না।
➠ আলোচ্য উদ্দীপকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজপথের জবানিতে পৃথিবীর চলমানতা বা বহমানতাই তুলে ধরেছেন। রাজপথের ওপর দিয়ে ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনা বহমান মানবজীবনের কথাই মনে করিয়ে দেয়। তার ওপর দিয়ে ঘটে যাওয়া সব কিছুই অবলোকন করে। সকল ঘটনার সাক্ষী হিসেবে রাজপথ একই জায়গায় থেকে একই। তাই বলতে পারি, উদ্দীপকে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় উল্লিখিত প্রবহমানতার দিক ফুটে উঠেছে।

ঘ. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার মূলভাবে মানবজীবনের নশ্বরতার বিপরীতে প্রকৃতির অবিনশ্বর রূপ ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকেও একই ভাব ফুটে উঠেছে।
➠ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ গভীরভাবে আস্বাদন করেছেন। নদীর ভাঙা গড়ারমতো সভ্যতা একদিকে ক্ষয়িষ্ণু হলে অন্যদিকে চলে তার বিনির্মাণ। মানুষ একসময় মরে যায় কিন্তু প্রকৃতিতে চলে চিরকালের প্রবহমানতা। মানুষের মৃত্যুর ফলে কোনো কিছুই থেমে থাকে না। ফসলের খেত, নদীনালা, গাছপালা, ফুল, পাখি সবকিছুতেই থাকে জীবনের স্পন্দন। মৃত্যুর রেশ থাকে না কোথাও।
➠ জীবনের গতিময়তা ও প্রবহমানতা উদ্দীপকেও যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুখ, জরা-যৌবন, জন্ম-মৃত্যু সবকিছুই রাজপথের ওপর দিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। সবকিছুরই শুরু ও শেষ রয়েছে। কিন্তু রাজপথটি একই জায়গায় স্থির পড়ে আছে। উদ্দীপকের রাজপথ জীবনের গতিময়তা তার জবানিতে তুলে ধরেছে। ‘সেই এই মাঠ’ কবিতার বর্ণনার মতোই মানব জীবন একসময় থমকে যায়। কিন্তু রাজপথ অর্থাৎ, প্রকৃতি থাকে চলমান।
➠ উদ্দীপক ও ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার বিশ্লেষণে আমরা জীবনের এক গভীর অনুধাবন করি। আর তা হলো মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও প্রকৃতি চিরকালীন। প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ অফুরন্ত। তা চিরকালই মানুষের মনকে মুগ্ধ করে যাবে। উদ্দীপক ও কবিতার রচিয়তাগণ প্রকৃতির চিরভাস্বর সৌন্দর্যের সেই বোধকেই নিজনিজ রচনার উপজীব্য করেছেন। কাজেই এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আলোচ্য উদ্দীপকটি ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার পূর্ণ প্রতিরূপ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
বাতাসের মাঝে বাস করে আমরা যেমন ভুলে যাই বাতাসের কথা। প্রকৃতির মাঝে বাস করেও আমরা ভুলে যাই প্রকৃতির কথা। অথচ সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা প্রকৃতি অকৃপণভাবে তার সৌন্দর্য বিতরণ করছে। নয়নাভিরাম গাছপালা, ফুল-ফল, পাখির কলরব, বয়ে চলা নদী, ঢেউ খেলানো ফসলের মাঠ জীবনে এনে দেয় প্রাণের ছোঁয়া। প্রকৃতির নিয়মেই প্রতিটি ঋতু আপন বৈশিষ্ট্যে রূপে, রসে, গন্ধে অনন্য হয়ে ওঠে।
ক. লক্ষ্মীপেঁচকের কণ্ঠে কী ধ্বনিত হয়?
খ. কবি চলে গেলেও চালতাফুল শিশিরের জলে ভিজবে কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন মাত্র- ব্যাখ্যা করো।
ক. লক্ষ্মীপেঁচকের কণ্ঠে মঙ্গলবার্তা ধ্বনিত হয়।
খ. পৃথিবীতে মানুষের অবস্থানকাল ক্ষণস্থায়ী হলেও প্রকৃতি চিরবহমান বলেই কবি না থাকলেও চালতাফুল শিশিরের জলে ভিজবে।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের মাধ্যমে কবি জীবনানন্দ দাশের সৌন্দর্য চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মরণশীল বলে কবিকে একদিন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে। ফলে শিশিরে ভেজা চালতাফুলে সৃষ্টি হওয়া সৌন্দর্য অবলোকন করার সুযোগ তাঁর আর ঘটবে না। কিন্তু চালতাফুল একইভাবে ফুটবে। আগের মতোই ভোরের শিশিরে গা ভেজাবে। আর তা জীবিত কোনো মানুষের সৌন্দর্যবোধকে ঠিকই পরিতৃপ্ত করবে।

গ. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় উল্লিখিত প্রকৃতির শাশ্বতরূপটি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
➠ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার প্রকৃতির অফুরন্ত ঐশ্বর্য নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। প্রকৃতির কোনো কিছুই যেন তাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি। শিশিরের জলে চালতাফুল ভিজে কি রহস্যময় সৌন্দর্য সৃষ্টি করে, খেয়া নৌকা, লক্ষ্মীপেঁচার গান প্রকৃতিতে যে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে তা লক্ষ করেছেন গভীরভাবে। প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে এভাবেই চিরকাল ভাস্বর হয়ে আছে।
➠ উদ্দীপকেও ফুটে উঠেছে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য। প্রকৃতির দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। ঢেউ খেলানো ফসলের মাঠ,, গাছপালা, ফল, ফুল, পালতোলা নৌকা, পাখির কলরব এগুলো সবার মন জুড়িয়ে দেয়। এই প্রকৃতি আমাদের জীবনকে করেছে বৈচিত্র্যময়। ঋতুবৈচিত্র্য আমাদের জীবনে এনে দেয় প্রাণচাঞ্চল্য। তাই উদ্দীপক ও ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতা পর্যালোচনা করে বলা যায়, উভয় ক্ষেত্রেই প্রকৃতির, আবহমান রূপটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় প্রকৃতির অবিনশ্বর রূপ তুলে ধরার পাশাপাশি কবি মানবজীবনের এক চরম সত্য-মৃত্যুর কথাও বলেছেন। কিন্তু উদ্দীপকের দ্বিতীয় দিকটি অনুপস্থিত।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতা কবি জীবনানন্দ দাশের এক অনবদ্য সৃষ্টি। প্রকৃতিকে কবি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। প্রকৃতি তার রূপ সৌন্দর্য নিয়ে বেঁচে থাকে। কবি এও ভেবেছেন যে তিনি চলে গেলে কী হবে? তিনি জানেন তিনি বিদায় নিলেও চালতাফুলের ওপর শিশির জল ঠিকই সৌন্দর্য ছড়াবে। পাখি গাইবে। নদীতে নৌকা ছুটে চলবে, পাখি তার গন্তব্যে ফিরে যাবে।
➠  উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে কেবল প্রকৃতির রূপ সৌন্দর্য। প্রকৃতি কীভাবে আমাদের মাঝে তার সৌন্দর্য বিলায় তার চিত্র। গাছপালা, ফুল-ফল, নদী, পাখি, সবকিছুর সৌন্দর্য আমরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখি। সত্যিই প্রকৃতির মাঝে বাস করে আমরা প্রকৃতিকে যেন ভুলেও যাই।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কবি বলেছেন মানুষের মৃত্যু পৃথিবীর বহমানতাকে স্তব্ধ করতে পারে না। প্রকৃতি তার আপন গতিতেই চলমান থাকবে। অর্থাৎ ব্যক্তিমানুষের মৃত্যু থাকলেও প্রকৃতির সৌন্দর্য মৃত্যুহীন। এই দার্শনিক সত্যের উল্লেখ উদ্দীপকে নেই। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা। আলোচ্য কবিতায় কবি কবিতায় যে নিসর্গের রূপ তুলে ধরেছেন সেটিকেই শুধু উদ্দীপকটি মনে করিয়ে দেয়। তাই উদ্দীপকটি ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন মাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়
ক. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কী ছাই হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে?
খ. ব্যক্তিমানুষের মৃত্যু ঘটলেও সব শেষ হয়ে যায় না কেন?
গ. ‘সেই দিন এই মাঠ’ কবিতার কোন দিকটি উদ্দীপক কবিতাংশে লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করেছে কি? বিশ্লেষণী মতামত দাও।
ক. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় বেবিলন ছাই হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
খ. মানুষের মৃত্যু ঘটলেও পৃথিবীর বহমানতা বজায় থাকে বলে ব্যক্তি মানুষের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে যায় না।
➠ মানুষ মরণশীল বলে একসময় তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালীন ব্যস্ততা। নদীর স্রোতধারা বহমান থাকে, মাঠে থাকে চঞ্চলতা, চালতাফুলে জমে শীতের শিশির। ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুর রেশ কোথাও লেগে থাকে না। সবকিছু আপন গতিতেই চলে। মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু জগতের সৌন্দর্যের মৃত্যু নেই, মানুষের স্বপ্নেরও মরণ নেই। এ কারণেই ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে যায় না।

গ. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় উল্লিখিত প্রকৃতির চলমানতার দিকটি উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে।
➠ পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শে লালিত মানুষকে একদিন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হয়। কিন্তু পৃথিবী চির প্রবহমান। মাঠে ঘাটে থাকে চিরকালীন ব্যস্ততা। চালতা ফুলে আগের মতোই পড়ে শীতের শিশির। লক্ষ্মীপেঁচার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় মঙ্গলবার্তা। নদ-নদীতে চলে খেয়া নৌকা। মৃত্যুর রেশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু প্রকৃতির সৌন্দর্যের কোনো মৃত্যু নেই। জীবনানন্দ দাশ সেইদিন এই মাঠ কবিতায় এই বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছেন।
➠ উদ্দীপক কবিতাংশে আমরা লক্ষ করি কবি মৃত্যুর পরও এই বাংলায় ফিরতে চান। বাংলার প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে চান। তিনি পৃথিবীতে না থাকলেও বাংলার প্রকৃতির ঐশ্বর্য অটুট থাকবে। কবি এ কথা জানেন বলেই প্রকৃতির মাঝে আশ্রয় খুঁজছেন। ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় ও প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাস একইভাবে এই চলমান পৃথিবীর চিত্র তাঁর কবিতায় অঙ্কন করেছেন।

ঘ. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় মূলত প্রকাশিত হয়েছে প্রকৃতির প্রবহমানতার দিক আর উদ্দীপকের মূলভাব হলো স্বদেশপ্রেম। তাই উদ্দীপকটি ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে না।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কবি বলেছেন, তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও এই নদী মাঠ স্তব্ধ হবে না বা থেমে যাবে না। আগের মতোই চালতাফুল ভিজবে শিশিরের জলে, লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে। পৃথিবীতে চলবে তার কলরব। নদ-নদীতে চলবে খেয়ানৌকা। এরই মাঝে বেঁচে থাকবে পৃথিবীর গল্প। এশিরীয়া আর বেবিলনীয় সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সেখানে নতুন সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়েছে। ব্যক্তিমানবের মৃত্যুতে প্রবহমানতার দিক থেকে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি।
➠ উদ্দীপকে, কবি তাঁরা মাটির মমতায় জড়িয়ে আছেন। বাংলার রূপে মুগ্ধ কবি চান না এই সৌন্দর্যের লীলাভূমি ছেড়ে চলে যেতে। যদি ছেড়ে যানও তবে শঙ্খচিল শালিকের রূপ ধরে আবার তিনি ফিরে আসবেন বলে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। কবি কার্তিকের নবান্নের দেশে ভোরের কাক হয়ে আসতে চান। কবি এই বাংলাকে, বাংলার প্রকৃতিকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন। তাই বারবার এই মাটিতেই ফিরে আসতে চান। উদ্দীপকে কবির এই দেশপ্রেমের মনোভাব ফুটে উঠেছে।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার মূলভাব হচ্ছে পৃথিবীর প্রবহমানতা কিংবা চলমানতা, যা কবিতার প্রতিটি চরণে প্রকাশিত। জন্ম-মৃত্যু চিরন্তন। মানুষ একসময় মারা যায়। কারো জীবন থেমে গেলেও পৃথিবীর মধ্যকার প্রাণচাঞ্চল্য টিকে থাকে। প্রকৃতি তার রূপ বদলালেও তার মাঝে জীবনের আনন্দ সবসময় প্রত্যক্ষ করা যায়। অন্যদিকে উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে মূলত কবির দেশপ্রেম। তার চিরপরিচিত পরিবেশে তিনি মৃত্যুর পরও ফিরে আসতে চান। ফিরে এসে এই বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য ভোগ করতে চান। তাই ভাববস্তুর বিচারে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার মূলভাব উদ্দীপক ধারণ করে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
শিলাইদহে পদ্মার উচ্ছল কল্লোল শুনে মনটা উদ্যমী হয়ে গেল। এই সেই পদ্মা যার মোহন রূপে তৈরি হয়েছিল সৃষ্টির মায়াজাল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যের অধিকাংশ কবিতা রচনা করেছিলেন পদ্মার বুকে। পদ্মার অপূর্ব সান্নিধ্য, তার বিস্তৃত কল্লোল কবিমনকে জাগিয়ে তুলেছিল। আর প্রকৃতির এইঅপূর্ব সান্নিধ্যেই কবি সৃষ্টি করেছেন তার অপূর্ব কবিতাবলি।
ক. লক্ষ্মীপেঁচা কার জন্য গান গাইবে?
খ. ‘আমি চলে যাব বলে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকে বর্ণিত পদ্মার অপূর্ব সৌন্দর্য কবিকে দিয়েছেন। কাব্য রচনার অনুপ্রেরণা।’ উক্তিটি ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন করো।
ক. লক্ষ্মীপেঁচা তার লক্ষ্মীটির জন্য গান গাইবে।
খ. ‘আমি চলে যাব বলে’ বলতে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে।
➠ পৃথিবীতে কেউই চিরস্থায়ী নয়। প্রত্যেক মানুষকেই একসময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। তবে কবি জানেন যে তিনি একা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও প্রকৃতির বহমানতা শেষ হবে না। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবকিছুই চলমান থাকবে। বিষয়টি বোঝাতে কবি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

গ. উদ্দীপকে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় উল্লিখিত প্রকৃতির বহমানতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় জীবনানন্দদাশ জীবনের এক নিগূঢ় সত্য উন্মোচন করেছেন। কবি গভীরভাবে ভেবেছেন তিনি এ পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যাবেন। কিন্তু তাতে প্রকৃতির চলমানতা থামবে না। তাই তিনি প্রশ্ন করেছেন, তিনি চলে গেলে চালতাফুল কি আর আগের মতো বৃষ্টির জলে ভিজবে না? লক্ষ্মীপেঁচা কি গান গাইবে না? তিনি জানেন সবকিছুই চলমান থাকবে। অর্থাৎ ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুতে পৃথিবীর কোনো কিছু থেমে যায় না।
➠ উদ্দীপকে বলা হয়েছে, পদ্মার রূপসৌন্দর্য আর প্রবহমানতায় রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন। নদীর কল্লোল ধ্বনি কবির মনকে জাগিয়ে তুলেছিল। কবি এখন আর বর্তমানে নেই। তাই বলে পদ্মার বহমানতা থেমে যায়নি। পদ্মা এখনও তার বুকে অসীম জলরাশি নিয়ে বয়ে চলেছে। উদ্দীপকের পদ্মা নদীর কল্লোল ধ্বনিতে বহমানতা ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার উল্লিখিত প্রকৃতির বহমানতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রূপে মুগ্ধ হয়ে সাহিত্য রচনা করেছেন। একইভাবে পদ্মা নদীর অপূর্ব সৌন্দর্য রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিল কাব্য রচনার অনুপ্রেরণা।
➠ জীবনানন্দ দাশ ছিলেন প্রকৃতির কবি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাকে তিনি মন ভরে উপভোগ করেছিলেন। ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় আমরা লক্ষ করি, তিনি শিশিরের জলে চালতাফুলের ভেজা দেখেছেন। লক্ষ্মীপেঁচার গান শুনেছেন, চরের অদূরে খেয়া নৌকা। সবই তার দৃষ্টিনন্দন মনে হয়েছে। প্রকৃতির এই নিবিড়তার মাঝে ডুব দিয়ে কবি সংগ্রহ করেছেন তাঁর কবিতার নির্যাস।
➠ উদ্দীপকের বর্ণনায় আমরা দেখি, শিলাইদহের উচ্ছল পদ্মা কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। পদ্মার কল্লোল ধ্বনিতে তিনি যেন নতুন করে গেয়ে উঠেছিলেন। প্রকৃতির এই মোহনীয় রূপ কবিকে কাব্য রচনায় অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। সে অনুপ্রেরণাতেই তিনি গীতাঞ্জলির অধিকাংশ কবিতা লিখেছিলেন এই পদ্মার পাড়েই। প্রকৃতির অপূর্ব সান্নিধ্যই কবির মনে ব্যাপক রসবোধ সৃষ্টি করেছিল। কাব্য রচনার জন্য কবি তাই বারবার প্রকৃতির মাঝে ছুটে এসেছেন।
➠ ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় জীবনানন্দ দাশকে দেখি আকণ্ঠ নিয়োজিত হয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যের অবগাহন করতে। শিশিরের জলে চালতাফুেেলর সৌন্দর্য কীভাবে মোহনীয় হয়ে ওঠে তা এই কবির পক্ষেই পুরোপুরি বোঝা সম্ভব। অন্যদিকে পদ্মা নদীর সৌন্দর্য আর বিশালতা রবীন্দ্রনাথকে আচ্ছন্ন করেছিলে একই সৌন্দর্য চেতনায়। তাই তিনি পদ্মা নদীর সাথে এক ধরনের সখ্য গড়ে তুলেছিলেন। পদ্মা তাঁর কাব্য সাধনায় প্রধান উপজীব্য হয়ে উঠেছিল। প্রকৃতি উভয় কবির মনেই সৌন্দর্যপিপাসা নিবারণ করেছে। সেই তৃপ্তি তাঁরা প্রকাশ করেছেন সাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে।

তথ্যসূত্র:
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫।

Next Post Previous Post