‘নেকলেস’ গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

নেকলেস
নেকলেস

সে ছিল চমৎকার এক সুন্দরী তরুণী। নিয়তির ভুলেই যেন এক কেরানির পরিবারে তার জন্ম হয়েছে। তার ছিল না কোনো আনন্দ, কোনো আশা। পরিচিত হবার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেমলাভ করার এবং কোনো ধনী অথবা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে বিবাহিত হওয়ার কোনো উপায় তার ছিল না। তাই শিক্ষা পরিষদ আপিসের সামান্য এক কেরানির সঙ্গে বিবাহ সে স্বীকার করে নিয়েছিল।

নিজেকে সজ্জিত করার অক্ষমতার জন্য সে সাধারণভাবেই থাকত। কিন্তু তার শ্রেণির অন্যতম হিসেবে সে ছিল অসুখী। তাদের কোনো জাতিবর্ণ নেই। কারণ জন্মের পরে পরিবার থেকেই তারা শ্রী, সৌন্দর্য ও মাধুর্য সম্পর্কে সজাগ হয়ে ওঠে। সহজাত চাতুর্য, প্রকৃতিগত সুরুচি আর বুদ্ধির নমনীয়তাই হলো তাদের আভিজাত্য, যার ফলে অনেক সাধারণ পরিবারের মেয়েকেও বিশিষ্ট মহিলার সমকক্ষ করে তোলে।

সর্বদা তার মনে দুঃখ। তার ধারণা, যত সব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে, সেগুলির জন্যই তার জন্ম হয়েছে। তার বাসকক্ষের দারিদ্র্য, হতশ্রী দেওয়াল, জীর্ণ চেয়ার এবং বিবর্ণ জিনিসপত্রের জন্য সে ব্যথিত হতো। তার মতো অবস্থার অন্য কোনো মেয়ে এসব জিনিস যদিও লক্ষ করত না, সে এতে দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হতো। যে খর্বকায় ব্রেটন এই সাধারণ ঘরটি তৈরি করেছিল তাকে দেখলেই তার মনে বেদনাভরা দুঃখ আর বেপরোয়া সব স্বপ্ন জেগে উঠত। সে ভাবত, তার থাকবে প্রাচ্য-চিত্র-শোভিত, উচ্চ ব্রোঞ্জ-এর আলোকমণ্ডিত পার্শ্বকক্ষ। আর থাকবে দুজন বেশ মোটাসোটা গৃহ-ভৃত্য। তারা খাটো পায়জামা পরে যেই বড় আরামকেদারা দুটি গরম করার যন্ত্র থেকে বিক্ষিপ্ত ভারি হাওয়ায় নিদ্রালু হয়ে উঠেছে, তাতে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। সে কামনা করে একটি বৈঠকখানা, পুরনো রেশমি পর্দা সেখানে ঝুলবে। থাকবে তাতে বিভিন্ন চমৎকার আসবাব, যার ওপর শোভা পাবে অমূল্য সব প্রাচীন কৌতূহল-উদ্দীপক সামগ্রী। যেসব পরিচিত ও আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ সব মেয়েদের কাম্য, সেসব অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে বিকাল পাঁচটায় গল্পগুজব করবার জন্য ছোট সুরভিত একটি কক্ষ সেখানে থাকবে।

তিনদিন ধরে ব্যবহৃত একখানা টেবিলক্লথ ঢাকা গোল একটি টেবিলে তার স্বামীর বিপরীত দিকে সে যখন সান্ধ্যভোজে বসে এবং খুশির আমেজে তার স্বামী বড় সুরুয়ার পাত্রটির ঢাকনা তুলতে তুলতে বলে: 'ও। কী ভালো মানুষ। এর চেয়ে ভালো কিছু আমি চাই না' তখন তার মনে পড়বে আড়ম্বরপূর্ণ সান্ধ্যভোজের কথা, উজ্জ্বল রৌপ্যপাত্রাদি, মায়াময় বনভূমির মধ্যে প্রাচীন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিরল পাখির চিত্রশোভিত কারুকার্যপূর্ণ পর্দা দিয়ে ঢাকা দেওয়াল-এর কামনা। সে ভাবে, অপরূপ পাত্রে পরিবেশিত হবে অপূর্ব খাদ্য আর গোলাপি রং-এর রোহিত মাছের টুকরা অথবা মুরগির পাখনা খেতে খেতে মুখে সিংহ-মানবীর হাসি নিয়ে কান পেতে শুনবে চুপি-চুপি-বলা প্রণয়লীলার কাহিনি।

তার কাছে ফ্রক বা জড়োয়া গহনা নেই-নেই বলতে কিছু নেই। অথচ ঐ সব বস্তুই তার প্রিয়। তার ধারণা ঐসবের জন্যই তার সৃষ্টি। সুখী করার, কাম্য হওয়ার, চালাক ও প্রণয়যাচিকা হবার কতই না তার ইচ্ছা।
তার ‘কনভেন্ট’-এর সহপাঠিনী এক ধনী বান্ধবী ছিল। তার সঙ্গে দেখা করতে তার ভালো লাগত না। কারণ দেখা করে ফিরে এসে তার খুব কষ্ট লাগত। বিরক্তি, দুঃখ, হতাশা ও নৈরাশ্যে সমস্ত দিন ধরে সে কাঁদত।
এক সন্ধ্যায় হাতে একটি বড় খাম নিয়ে বেশ উল্লসিত হয়ে তার স্বামী ঘরে ফিরল।
সে বলল, ‘এই যে, তোমার জন্য এক জিনিস এনেছি।’

মেয়েটি তাড়াতাড়ি খামটি ছিঁড়ে তার ভিতর থেকে একখানা ছাপানো কার্ড বের করল। তাতে নিচের কথাগুলি মুদ্রিত ছিল-
‘জনশিক্ষা মন্ত্রী ও মাদাম জর্জ রেমপননু আগামী ১৮ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাঁহাদের নিজ বাসগৃহে মসিঁয়ে ও মাদাম লোইসেলের উপস্থিতি কামনা করেন।’
তার স্বামী যেমন আশা করেছিল তেমনভাবে খুশি হওয়ার পরিবর্তে মেয়েটি বিদ্বেষের ভাব নিয়ে আমন্ত্রণ-লিপিখানা টেবিলের উপর নিক্ষেপ করে, বিড়বিড় করে বলে-
‘ওখানা নিয়ে তুমি আমায় কী করতে বল?’
‘কিন্তু লক্ষ্মীটি, আমি ভেবেছিলাম, এতে তুমি খুশি হবে। তুমি বাইরে কখনো যাও না, তাই এই এক সুযোগ, চমৎকার এক সুযোগ!

এটা জোগাড় করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সবাই একখানা চায়, কিন্তু খুব বেছে বেছে দেওয়া হচ্ছে। কর্মচারীদের বেশি দেওয়া হয়নি। সেখানে তুমি গোটা সরকারি মহলকে দেখতে পাবে।’
বিরক্তির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি অধীরভাবে বলে উঠল-
‘ঐ ঘটনার মতো একটি ব্যাপার কী পরে আমি যাব বলে তুমি মনে কর?’
সে ঐ সম্পর্কে কিছু ভাবেনি। তাই সে বিব্রতভাবে বল-

‘কেন আমরা থিয়েটারে যাবার সময় তুমি যেই পোশাকটা পর সেটা পরবে। ওটা আমার কাছে খুব সুন্দর লাগে-’
তার স্ত্রীকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে সে আতঙ্কে নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল। তার চোখের পাশ থেকে বড় বড় দুফোঁটা অশ্রু তার গালের উপর গড়িয়ে পড়ল। সে থতমতভাবে বলল-
‘কী হলো? কী হলো তোমার?’

প্রবল চেষ্টায় মেয়েটি নিজের বিরক্তি দমন করে, তার সিক্ত গণ্ড মুছে ফেলে শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়:
‘কিছুই না। শুধু আমার কোনো পোশাক নেই বলে আমি ঐ ব্যাপারে যেতে পারব না। তোমার যে কোনো সহকর্মীর স্ত্রীর পোশাক আমার চেয়ে যদি ভালো থাকে, কার্ডখানা নিয়ে তাকে দাও।’

সে মনে মনে দুঃখ পায়। তারপর সে জবাব দেয়-
‘মাতিলদা, বেশ তো চল আলাপ করি আমরা। এমন কোনো পোশাক, অন্য কোনো উপলক্ষেও যা দিয়ে কাজ চলবে অথচ বেশ সাদাসিধা, তার দাম কত আর হবে?’
কয়েক সেকেন্ড মেয়েটি চিন্তা করে দেখে এমন একটি সংখ্যার বিষয় স্থির করল যা চেয়ে বসলে হিসাবি কেরানির কাছ থেকে সঙ্গে সঙ্গে এক আতঙ্কিত প্রত্যাখ্যান যেন না আসে।
শেষপর্যন্ত ইতস্তত করে মেয়েটি বলল-
‘আমি ঠিক বলতে পারছি না, তবে আমার মনে হয় চারশ ফ্রাঁ হলে তা কেনা যাবে।’
শুনে তার মুখ ম্লান হয়ে গেল। কারণ, তার যেসব বন্ধু গত রবিবারে নানতিয়ারের সমভূমিতে ভরতপাখি শিকারে গিয়েছিল, আগামী গ্রীষ্মে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছায় একটি বন্দুক কিনবার জন্য ঠিক ততটা অর্থই সে সঞ্চয় করেছিল। তা সত্ত্বেও জবাব দিল-

‘বেশ ত। আমি তোমায় চারশত ফ্রাঁ দেব। বেশ সুন্দর একটি পোশাক কিনে নিও।’
‘বল’-নাচের দিন যতই এগিয়ে আসতে থাকে ততই মাদাম লোইসেলকে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন মনে হয়। অবশ্য তার পোশাক প্রায় তৈরি হয়ে এসেছে। একদিন সন্ধ্যায় তার স্বামী তাকে বলল-
‘তোমার হয়েছে কী? গত দুই-তিন দিন ধরে তোমার কাজকর্ম কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকছে।’
শুনে মেয়েটি জবাব দেয়, ‘আমার কোনো মণিমুক্তা, একটি দামি পাথর কিছুই নেই যা দিয়ে আমি নিজেকে সাজাতে পারি। আমায় দেখলে কেমন গরিব গরিব মনে হবে। তাই এই অনুষ্ঠানে আমার না যাওয়াই ভালো হবে।’
স্বামী বলল, ‘কিছু আসল ফুল দিয়ে তুমি সাজতে পার। এই ঋতুতে তাতে বেশ সুরুচিপূর্ণ দেখায়। দশ ফ্রাঁ দিলে তুমি দুটি কি তিনটি অত্যন্ত চমৎকার গোলাপফুল পাবে।’

মেয়েটি ঐ কথায় আশ্বস্ত হলো না। সে জবাবে বলল, ‘না, ধনী মেয়েদের মাঝখানে পোশাকে-পরিচ্ছদে ঐ রকম খেলো দেখানোর মতো আর বেশি কিছু অপমানজনক নেই।’
তখন তার স্বামী চেঁচিয়ে উঠল- ‘আচ্ছা, কী বোকা দেখত আমরা! যাও, তোমার বান্ধবী মাদার ফোরসটিয়ারের সঙ্গে দেখা করে তাকে বল, তার জড়োয়া গহনা যেন তোমায় ধার দেয়। এটুকু আদায় করার তো তার সঙ্গে তোমার পরিচয় যথেষ্ট।’
সে আনন্দধ্বনি করে উঠল। তারপর সে বলল-
‘সত্যিই তো! এটা আমি ভাবিনি।’

পরদিন সে তার বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে তার দুঃখের কাহিনি তাকে বলল। মাদাম ফোরসটিয়ার তার কাচের দরজা লাগানো গোপনকক্ষে গিয়ে বড় একটি জড়োয়া গহনার বাক্স বের করে এনে তা খুলে বলল-
‘ভাই, যা ইচ্ছা এখান থেকে নাও।’
সে প্রথমে দেখল কয়েকটি কঙ্কন, তারপর একটি মুক্তার মালা ও মণিমুক্তা-খচিত চমৎকার কারুকার্য-ভরা একটি সোনার ভিনিশাঁর ‘ক্রুশ’। আয়নার সামনে গিয়ে সে জড়োয়া গহনাগুলি পরে পরে দেখে আর ইতস্তত করে, কিন্তু ওগুলি নেওয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারে না, ছেড়ে যেতেও পারে না। তারপর সে জিজ্ঞাসা করে:
‘আর কিছু তোমার নেই?’
‘কেন? আছে, তোমার যা পছন্দ তুমি তা বেছে নাও।’

হঠাৎ সে কালো স্যাটিনের একটি বাক্সে দেখল অপরূপ একখানা হীরার হার। অদম্য কামনায় তার বুক দুর দুর করে। সেটা তুলে নিতে গিয়ে তার হাত কাঁপে। সে তার পোশাকের উপর দিয়ে সেটা গলায় তুলে নেয় এবং সেগুলো দেখে আনন্দে বিহ্বল হয়ে যায়।
তারপর উদ্বেগভরা, ইতস্ততভাবে সে জিজ্ঞাসা করল-
‘তুমি ঐখানা আমায় ধার দেবে? শুধু এটা?’
‘কেন দেব না? নিশ্চয়ই দেব।’
সে সবেগে তার বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরে, পরম আবেগে তাকে বুকে চেপে ধরে। তারপর তার সম্পদ নিয়ে সে চলে আসে।

‘বল’ নাচের দিন এসে গেল। মাদাম লোইসেলের জয়জয়কার। সে ছিল সবচেয়ে সুন্দরী, সুরুচিময়ী, সুদর্শনা, হাস্যময়ী ও আনন্দপূর্ণ। সব পুরুষ তাকে লক্ষ করছিল, তার নাম জিজ্ঞাসা করে তার সঙ্গে আলাপের আগ্রহ প্রকাশ করছিল। মন্ত্রিসভার সব সদস্যের তার সঙ্গে ‘ওয়ালটজ’ নৃত্য করতে ইচ্ছা হচ্ছিল। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী তার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন।

আনন্দে মত্ত হয়ে আবেগ ও উৎসাহ নিয়ে সে নৃত্য করছিল। তার রূপের বিজয়গর্বে, সাফল্যের গৌরবে সে আর কিছুই ভাবে না। এক আনন্দের মেঘের ওপর দিয়ে যেন ভেসে আসছিল এই সব আহুতি ও মুগ্ধতা আর জাগ্রত সব কামনা। যে কোনো মেয়ের অন্তরে এই পরিপূর্ণ বিজয় কত মধুর।
ভোর চারটার দিকে সে বাড়ি ফিরে গেল। অন্য সেই তিনজন ভদ্রলোকের স্ত্রী খুব বেশি ফুর্তিতে মত্ত ছিল, তাদের সঙ্গে তার স্বামী ছোট একটি বিশ্রামকক্ষে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত আধঘুমে বসেছিল।

বাড়ি ফিরবার পথে গায়ে জড়াবার জন্য তারা যে আটপৌরে সাধারণ চাদর নিয়ে এসেছিল সে তার কাঁধের ওপর সেটি ছড়িয়ে দেয়। ‘বল’ নাচের পোশাকে অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐটির দারিদ্র্য সুপরিস্ফুট হয়ে উঠছিল। মেয়েটি তা অনুভব করতে পারে তাই অন্য যেসব ধনী মেয়ে দামি পশমি চাদর দিয়ে গা ঢেকেছিল তাদের চোখে না পড়বার জন্য সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে লাগল।

লোইসেল তাকে টেনে ধরে বলল- ‘থামো, তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে ওখানে। আমি একখানা গাড়ি ডেকে আনি।’
কিন্তু মেয়েটি কোনো কথায় কান না দিয়ে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। রাস্তায় যখন তারা পৌঁছে গেল, সেখানে কোনো গাড়ি পাওয়া গেল না। তারা গাড়ির খোঁজ করতে করতে দূরে কোনো একখানাকে দেখে তার গাড়োয়ানকে ডাকতে থাকে।

হতাশ হয়ে কাঁপতে কাঁপতে তারা সিন নদীর দিকে হাঁটতে থাকে। শেষ পর্যন্ত যে পুরাতন একখানা তারা পায়, তাহলো সেই নিশাচর দুই-যাত্রীর গাড়ি যা প্যারিতে সন্ধ্যার পর লোকের চোখে পড়ে, তার একখানা, দিনে এইগুলি নিজের দুর্দশা দেখাতে লজ্জা পায়।
ঐখানি তাদের মার্টার স্ট্রিটে ঘরের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেল। তারা ক্লান্তভাবে তাদের কক্ষে গেল। মেয়েটির সব কাজ শেষ। কিন্তু স্বামীর ব্যাপারে, তার মনে পড়ল যে, দশটায় তাকে আপিসে গিয়ে পৌঁছাতে হবে।
নিজেকে গৌরবমণ্ডিত রূপে শেষ একবার দেখার জন্য সে আয়নার সামনে গিয়ে তার গলার চাদরখানা খোলে। হঠাৎ সে আর্তনাদ করে উঠল। তার হারখানা গলায় জড়ানো নেই।
তার স্বামীর পোশাক তখন অর্ধেক মাত্র খোলা হয়েছে। সে জিজ্ঞাসা করল ‘কী হয়েছে?’
উত্তেজিতভাবে মেয়েটি তার দিকে ফিরে বলল-
‘আমার-আমার কাছে-মাদাম ফোরস্টিয়ারের হারখানা নেই।’
আতঙ্কিতভাবে সে উঠে দাঁড়াল- ‘কী বললে! তা কী করে হবে? এটা সম্ভব নয়।’

পোশাকের ও বহির্বাসের ভাঁজের মধ্যে, পকেটে, সব জায়গায় তারা খোঁজ করে। কিন্তু তা পাওয়া গেল না।
স্বামী জিজ্ঞাসা করল: ‘ঐ বাড়ি থেকে চলে আসবার সময় তা যে তোমার গলায় ছিল, তোমার ঠিক মনে আছে?’
‘হ্যাঁ, আমরা যখন বিশ্রামকক্ষ দিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম, তখনও তা ছিল আমার খেয়াল আছে।’
‘কিন্তু তুমি যদি ওটা রাস্তায় হারাতে, ওটা পড়বার শব্দ আমাদের শোনা উচিত ছিল। গাড়ির মধ্যেই নিশ্চয়ই পড়েছে মনে হয়।’
‘হ্যাঁ, সম্ভবত তাই। তুমি গাড়ির নম্বরটি টুকে নিয়েছিলে?’
‘না। আর তুমি কি তা লক্ষ করেছিলে?’
‘না।’

হতাশভাবে তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত লোইসেল আবার পোশাক পরে নিল।
সে বলল, ‘আমি যাচ্ছি। দেখি যতটা রাস্তা আমরা হেঁটেছিলাম, সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় কিনা।’
তারপর সে গেল। মেয়েটি তার সান্ধ্য গাউন পরেই রয়ে গেল। বিছানায় শুতে যাবার শক্তি তার নেই। কোনো উচ্চাশা বা ভাবনা ছাড়াই সে একখানা চেয়ারে গা এলিয়ে পড়ে রইল।
সকাল সাতটার দিকে তার স্বামী ফিরে এল। কিছুই সে খুঁজে পায়নি।
সে পুলিশের কাছে ও গাড়ির আপিসে গিয়েছিল এবং পুরস্কার ঘোষণা করে একটা বিজ্ঞাপনও দিয়ে এসেছে। সে যথাসাধ্য করে এসেছে বলে তাদের মনে কিছুটা আশা হলো।
ঐ ভয়ানক বিপর্যয়ে মেয়েটি সারাদিন এক বিভ্রান্ত অবস্থায় কাটাল। সন্ধ্যাবেলা যখন লোইসেল ফিরে এল তখন তার মুখে যন্ত্রণার মলিন ছাপ, কিছুই সে খুঁজে পায়নি।
সে বলল, ‘তোমার বান্ধবীকে লিখে দিতে হবে যে হারখানার আংটা তুমি ভেঙে ফেলেছ, তাই তা তুমি মেরামত করতে দিয়েছ। তাতে আমরা ভেবে দেখবার সময় পাব।’

তার নির্দেশমত মেয়েটি লিখে দিল।
এক সপ্তাহ শেষ হওয়ায় তারা সব আশা ত্যাগ করল। বয়সে পাঁচ বছরের বড় লোইসেল ঘোষণা করল
‘ঐ জড়োয়া গহনা ফেরত দেবার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।’
পরদিন যেই বাক্সে ওটা ছিল, তার ভিতরে যেই স্বর্ণকারের নাম ছিল, তার কাছে তারা সেটা নিয়ে গেল। সে তার খাতাপত্র ঘেঁটে বলল- ‘মাদাম, ঐ হারখানা আমি বিক্রি করিনি, আমি শুধু বাক্সটা দিয়েছিলাম।’
তারপর তারা সেই হারটির মত হার খোঁজ করার জন্য, তাদের স্মৃতির উপর নির্ভর করে এক স্বর্ণকার থেকে অন্য স্বর্ণকারের কাছে যেতে থাকে। দু'জনেরই শরীর বিরক্তি ও উদ্বেগে খারাপ হয়ে গেছে।
প্যালেস রয়েলে তারা এমন এক হীরার কণ্ঠহার দেখল সেটা ঠিক তাদের হারানো হারের মতো। তার দাম চল্লিশ হাজার ফ্রাঁ। ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁতে তারা তা পেতে পারে।

তিন দিন যেন ওটা বিক্রি না করে সে জন্য তারা স্বর্ণকারকে বিশেষভাবে অনুরোধ করল। তারা আরও ব্যবস্থা করল যে, যদি ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হওয়ার আগে ঐ হারটি খুঁজে পাওয়া যায়, তারা এটা ফেরত দিলে চৌত্রিশ হাজার ফ্রাঁ ফেরত নিতে পারবে।
লোইসেলের কাছে তার বাবার মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত আঠারো হাজার ফ্রাঁ ছিল। বাকিটা সে ধার করল।
মাদাম লোইসেল যখন জড়োয়া গহনা মাদাম ফোরস্টিয়ারকে ফেরত দিতে গেল তখন শেষোক্ত মেয়েটি নির্জীবকণ্ঠে বলল-
‘ওটা আরও আগে তোমায় ফেরত দেওয়া উচিত ছিল; কারণ, তা আমারও দরকার হতে পারত।’
তার বান্ধবী সেই ভয় করেছিল, তেমনভাবে সে গহনার বাক্সটি খুলল না। যদি বদলে দেওয়া হয়েছে সে টের পেত, সে কী মনে করত?
সে কী বলত? সে কি তাকে অপহারক ভাবত?

এবার মাদাম লোইসেল দরিদ্র জীবনের ভয়াবহতা বুঝতে পারে। সে তার নিজের কাজ সম্পূর্ণ সাহসের সঙ্গেই করে যায়। ঐ দুঃখজনক দেনা শোধ করা প্রয়োজন। সে তা দেবে। দাসীকে তারা বিদায় করে দিল। তারা তাদের বাসা পরিবর্তন করল। নিচু ছাদের কয়েকটি কামরা তারা ভাড়া করল।

ঘরকন্নার কঠিন সব কাজ ও রান্নাঘরের বিরক্তিকর কাজকর্ম সে শিখে নিল। তার গোলাপি নখ দিয়ে সে বাসন ধোয়, তৈলাক্ত পাত্র ও ঝোল রাঁধার কড়াই মাজে। ময়লা কাপড়-চোপড়, শেমিজ, বাসন মোছার গামছা সে পরিষ্কার করে দড়িতে শুকাতে দেয়। রোজ সকালে সে আবর্জনা নিয়ে রাস্তায় ফেলে। সিঁড়ির প্রত্যেক ধাপে শ্বাস নেবার জন্য থেমে থেমে সে জল তোলে। সাধারণ পরিবারের মেয়ের মতো পোশাক পরে সে হাতে ঝুড়ি নিয়ে মুদি, কসাই ও ফলের দোকানে যায় এবং তার দুঃখের পয়সার একটির জন্য পর্যন্ত দর কষাকষি করে।
প্রত্যেক মাসেই সময় চেয়ে কিছু দলিল বদল করতে হয়, কাউকে কিছু শোধ দিতে হয়।

তার স্বামীও সন্ধ্যাবেলা কাজ করে। সে কয়েকজন ব্যবসায়ীর হিসাবের খাতা ঠিক করে। রাত্রে এক পাতা পাঁচ ‘সাও’ হিসেবে সে প্রায়ই লেখা নকল করে।
এরকম জীবন দশ বছর ধরে চলল।
দশ বছরের শেষে তারা সব কিছু মহাজনের সুদসহ প্রাপ্য নিয়ে সব ক্ষতিপুরণ করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কিছু তাদের সঞ্চয়ও হলো।

মাদাম লোইসেলকে দেখলে এখন বয়স্কা বলে মনে হয়। সে এখন গরিব গৃহস্থঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতো হয়ে গেছে। তার চুল অবিন্যস্ত, ঘাঘরা একপাশে মোচড়ানো, হাতগুলো লাল। সে চড়াগলায় কথা বলে এবং বড় বড় কলসিতে জল এনে মেঝে ধোয়। কিন্তু কখনও, তার স্বামী যখন আপিসে থাকে, জানালার ধারে বসে বিগত দিনের সেই সান্ধ্য অনুষ্ঠান ও সেই ‘বল’ নাচে তাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল ও এমন অতিরিক্ত প্রশংসা পেয়েছিল, তার কথা সে ভাবে।

যদি সে গলার সেই হারখানা না হারাত তাহলে কেমন হতো? কে জানে কে বলতে পারে? কী অনন্যসাধারণ এই জীবন আর তার মধ্যে কত বৈচিত্র্য! সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে আবার বাঁচতেও পারে। এক রবিবারে সারা সপ্তাহের নানা দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর করার জন্য সে যখন চামপস্-এলিসিস-এ ঘুরে বেড়াচ্ছিল, হঠাৎ একটি শিশু নিয়ে ভ্রমণরতা একজন মেয়ে তার চোখে পড়ল। সে হলো মাদাম ফোরস্টিয়ার। সে এখনও যুবতী, সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া। দেখে মাদাম লোইসেলের মন খারাপ হয়ে গেল। সে কি ঐ মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবে? হ্যাঁ, অবশ্যই বলবে। তাকে যখন সব শোধ করা হয়েছে তখন সব কিছু খুলে সে বলবে। কেন বলবে না?

সে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল: ‘সুপ্রভাত, জেনি।’
তার বন্ধু তাকে চিনতে পারল না। এক সাধারণ মানুষ তাকে এমন অন্তরঙ্গভাবে সম্বোধন করায় সে অবাক হলো। সে বিব্রতভাবে বলল- ‘কিন্তু মাদাম- আপনাকে তো চিনলাম না- বোধহয় আপনার ভুল হয়েছে-’
‘না, আমি মাতিলদা লোইসেল।’
তার বান্ধবী বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল- ‘হায়, আমার বেচারী মাতিলদা। এমনভাবে কী করে তুমি বদলে গেলে-’
‘হ্যাঁ, তোমার সঙ্গে দেখা হবার পর থেকে আমার দুর্দিন যাচ্ছে- বেশ কিছু দুঃখের দিন গেছে- আর সেটা হয়েছে শুধু তোমার জন্য-’ ‘আমার জন্য? তা কী করে হলো?’
‘সেই যে কমিশনারের ‘বল’ নাচের দিন তুমি আমাকে তোমার হীরার হার পরতে দিয়েছিলে, মনে পড়ে?’
‘হ্যাঁ, বেশ মনে আছে।’

‘কথা হচ্ছে, সেখানা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
‘কী বলছ তুমি? কী করে তা আমায় তুমি ফেরত দিয়েছিলে?’
‘ঠিক সেখানার মতো একটি তোমাকে আমি ফেরত দিয়েছিলাম। তার দাম দিতে দশ বছর লেগেছে। তুমি বুঝতেই পার, আমাদের মতো লোক যাদের কিছুই ছিল না, তাদের পক্ষে তা সহজ ছিল না। কিন্তু তা শেষ হয়েছে এবং সেজন্য আমি এখন ভালোভাবেই নিশ্চিন্ত হয়েছি।’
মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে কথার মাঝপথে থামিয়ে বলল:
‘তুমি বলছ যে, আমারটা ফিরিয়ে দেবার জন্য তুমি একখানা হীরার হার কিনেছিলে?’
‘হ্যাঁ। তা তুমি খেয়াল করনি? ঐ দুটি এক রকম ছিল।’
বলে সে গর্বের ভাবে ও সরল আনন্দে একটু হাসল। দেখে মাদাম ফোরস্টিয়ার-এর মনে খুব লাগল। সে তার দুটি হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল:
‘হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! আমারটি ছিল নকল। তার দাম পাঁচশত ফ্রাঁর বেশি হবে না।’

উৎস নির্দেশ :
বিশ্ববিখ্যাত গল্পকার গী দ্য মোপাসাঁর শ্রেষ্ঠ গল্পগুলোর মধ্যে ‘নেকলেস’ অন্যতম। ফরাসি ভাষায় গল্পটির নাম ‘La Parure’। ১৮৮৪ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ফরাসি পত্রিকা ‘La Gaulois’-এ গল্পটি প্রকাশিত হয় এবং সে বছরই ইংরেজিতে অনূদিত হয়। একই সালে প্রকাশিত ‘নেকলেস’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থের মধ্যে গল্পটি স্থান পায়।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ বিশিষ্ট- মর্যাদাপূর্ণ; প্রসিদ্ধ।
➠ নমনীয়তাই- বিনীত করতে হবে এমন।
➠ আভিজাত্য- বংশমর্যাদা।
➠ হতশ্রী- সৌন্দর্যহীন।
➠ খর্বকায়- খাটো, বামন।
➠ বিক্ষিপ্ত- অস্থির; ইতস্তত ছড়ানো।
➠ কনভেন্ট- খ্রিষ্টান নারী মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত স্কুল। মিশনারিদের আবাস।
➠ মসিয়ে- সৌজন্য প্রদর্শন ও সম্মান জানানোর জন্য ফ্রান্সে পুরুষদের মসিয়ে সম্বোধন করা হয়।
➠ মাদাম- সৌজন্য প্রদর্শন ও সম্মান জানানোর জন্য ফ্রান্সে মহিলাদের মাদাম সম্বোধন করা হয়।
➠ ফ্রাঁ- ফরাসি মুদ্রার নাম। ২০০২ সাল পর্যন্ত এই মুদ্রা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় ফ্রান্স ইউরো ব্যবহার করে।
➠ ‘বল’ নাচ- বিনোদনমূলক সামাজিক নৃত্যানুষ্ঠান। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর বহু দেশে এই নৃত্য প্রচলিত।
➠ ক্রুশ- খ্রিষ্টান ধর্মীয় প্রতীক।
➠ স্যাটিন- মসৃণ ও চকচকে রেশমি বস্ত্র (Satin)।
➠ প্যারী- প্যারিসের ফরাসি নাম।
➠ প্যালেস- রয়েল রাজকীয় প্রাসাদ।

পাঠ-পরিচিতি :
‘নেকলেস’ শীর্ষক গল্পটি অপ্রত্যাশিত ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় সমাপ্তির জন্য গল্পটির বিপুল ‘নেকলেস’ গল্পের নায়িকা মাতিলদা চমৎকার এক সুন্দরী তরুণী। তার মনোভাবে শ্রেষ্ঠম্মন্যতা, আভিজাত্য ও কল্পনাবিলাসের আচ্ছন্নতা ছিল। যে কারণে তাঁর এটা নেই, ওটা নেই, এটা থাকা উচিত ছিল, ওটা থাকা প্রয়োজন ছিল- এসব মনে করে দুঃখ, ক্রোধ ও কান্না পেত। বস্তুত ধনী ও অভিজাতদের সাথে নিজেকে তুলনা করে সে হতাশা ও অসহায়ত্বে ভুগত। নিজেকে অপরূপভাবে সজ্জিত করে অন্যের প্রশংসা লাভ ও দৃষ্টি আকর্ষণের ইচ্ছা যেমন তার প্রবল ছিল, তেমনি ঘরদোর দামি জিনিসপত্রে সাজিয়ে রাখারও প্রবল ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ইচ্ছা পূরণ হওয়ার উপায় ছিল না। কারণ নিয়তির ভুলে যেমন গরিব কেরানি পরিবারে তার জন্ম হয়েছে, তেমনি তার বিয়েও হয়েছে মিতব্যয়ী কেরানির সাথে। তবে পরিবার থেকে শ্রী, সৌন্দর্য, মাধুর্য, প্রকৃতিগত সুরুচি ও বুদ্ধির নমনীয়তার শিক্ষা পেয়েছিল। যে কারণে নিজের মতো কিছু না পেয়েও সংসারের বা¯ড়বতার সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছিল। তবে আকস্মিকভাবে জনশিক্ষা মন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছে তার মনে হয়েছিল, এমন অনুষ্ঠানে যাওয়ার মতো পোশাক বা অলংকার তার নেই এবং তার যাওয়া উচিত নয়। যদিও মঁসিয়ে লোইসেল তার পোশাক কেনার টাকা দিয়েছিল আর অলংকার ধার করার জন্য তার বান্ধবীর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। সুতরাং যোগ দিতে আর কোনো বাধাই রইল না। যথাসময়ে অনুষ্ঠানে এসে মাদাম লোইসেল আনন্দে মত্ত হয়ে ও উৎসাহ নিয়ে নৃত্যে মেতে উঠল। সব পুরুষ তাকে লক্ষ করছিল ও তার নাম জিজ্ঞেস করে তার সঙ্গে আলাপের আগ্রহ প্রকাশ করছিল। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীও তার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন। রূপের বিজয়গর্বে ও সাফল্যের গৌরবে মুহূর্তগুলো মধুর হয়ে ওঠেছিল। কিন্তু হীনমন্যতায় ভুগছিল তার আটপৌরে চাঁদরটির জন্য যা ছিল নৃত্যের পোশাকের সাথে বেমানান। প্রায় লুকিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। মঁসিয়ে লোইসেল গাড়ি যোগাড় করে বাসায় এলো। মাদাম লোইসেল নিজেকে গৌরবমণ্ডিতরূপে শেষ একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার চাঁদর খুলতেই আর্তনাদ করে উঠল। কেননা, হারখানা তার গলায় জড়ানো নেই। শুরু হলো খোঁজাখুঁজি, কিন্তু পাওয়া গেল না। বান্ধবী মাদাম ফোরস্টিয়ার তা ফেরত দেয়ার জন্য তারা স্বর্ণের দোকানগুলো খুঁজে একই রকম হার পেল, যার দাম ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁ। এ টাকা পরিশোধ করার জন্য নিচু ছাদের কামরা ভাড়া নিল, দাসীকে বিদায় করে দিয়ে মাদাম লোইসেল নিজেই ঘরকন্না ও রান্নাঘরের যাবতীয় কাজ করার দায়িত্ব নিয়ে নিল। দশ বছর লাগল দোকানের টাকা পরিশোধ করতে। তার শিক্ষা হলো সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে আবার বাঁচতেও পারে। এর জন্য থাকতে হয় প্রবল দায়িত্ববোধ, পরিশ্রম ও ত্যাগ। এক রবিবারে সারা সপ্তাহের দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর করার জন্য চামপস এলিসিস্-এ ঘুরতে গেল। এখানেই দেখা হয়ে গেল মাদাম ফোরস্টিয়ারের সাথে। সে অšড়রঙ্গভাবে তার কাছে দুর্দিন ও দুঃখের দিনের কথা খোলামেলাভাবে জানিয়ে দিল। মাদাম ফোরস্টিয়ারের কথাটা খুব লাগল। কেননা, হারটা ছিল নকল, যার দাম ছিল পাঁচশ ফ্রাঁ। অথচ বান্ধবী মাতিলদা খাঁটি হীরার হার ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁ দিয়ে কিনে তাকে ফেরত দিয়ে এবং অনেক দুঃখ-কষ্ট সয়েছে।

লেখক পরিচিতি:
গী দ্য মোপাসাঁ ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই আগস্ট ফ্রান্সের নর্মান্ডি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম Henri-Renri-Albert-Guy de Maupassant। তাঁর পিতার নাম গুস্তাভ দ্য মোপাসাঁ ও মায়ের নাম লরা লি পয়টিভিন (Laure Le Poittevin)। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে মোপাসাঁ একটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক গুস্তাভ ফ্লবেরার-এর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। পারিবারিক বন্ধু গুস্তাভ ফ্লবেয়ার মোপাসাঁর সাহিত্য-জীবনে অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এই মহান লেখকের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় তিনি সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেন। ফ্লবেয়ারের বাসায় মোপাসাঁর পরিচয় ঘটে এমিল জোলা ও ইভান তুর্গনেভসহ অনেক বিশ্ববিখ্যাত লেখকের সঙ্গে। কাব্যচর্চা দিয়ে তাঁর সাহিত্য-জীবন শুরু হলেও মূলত গল্পকার হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আদর্শগত কোনো বিশ্বাসে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত না হয়ে তিনি তাঁর সাহিত্য-চর্চার জগৎ তৈরি করেন। তাঁর বস্তুনিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার তুলনা বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে খুব বেশি লক্ষ করা যায় না। অসাধারণ সংযম ও বিস্ময়কর জীবনবোধ তাঁর রচনাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
গী দ্য মোপাসাঁ ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

অনুবাদক পরিচিতি :
পূর্ণেন্দু দস্তিদার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক ও রাজনীতিবিদ। তাঁর পিতা চন্দ্রকুমার দস্তিদার ও মাতা কুমুদিনী দস্তিদার। তিনি মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে অংশ নেওয়ায় কারাবরণ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন আইনজীবী: সমাজভাবুক লেখক হিসেবেও খ্যাতি ছিল তাঁর। প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কবিয়াল রমেশ শীল, স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম, বীরকন্যা প্রীতিলতা। তাঁর অনুবাদগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, শেখভের গল্প ও মোপাসাঁর গল্প।
তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. এক সন্ধ্যায় মাদাম লোইসেলের স্বামী মঁসিয়ে কী হাতে ঘরে ফিরলেন?
ক সুন্দর গয়নার বাক্স
খ. একটি বড় খাম
গ উজ্জ্বল রৌপ্য পাত্র
ঘ কারুকার্যপূর্ণ পর্দা
২. মাদাম লোইসেলের সর্বদা দু:খ কারণ, সে-
ক নেকলেস হারিয়ে ফেলেছে
খ. কাঙ্খিত জীবন পায়নি
গ. রান্নাঘরে কাজ করে
ঘ দামি পোশাক পরতে পারে না
অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও :
তন্বী সাধারণ পরিবারের একটি মেয়ে। সাজগোজের বড় শখ তার। কিন্তু প্রসাধনী ক্রয়ের সামর্থ্য তার বাবা-মায়ের নেই। তবে বড়লোকের ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামী প্রায়ই গরিবের মেয়ে বলে ধিক্কার দিয়ে তন্বীকে শারীরিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে বাবা-মায়ের ভাঙা কুটিরেই তিনি ফিরে আসেন। তন্বী উপলব্ধি করেন, বিত্ত-বৈভবই মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়।
৩. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের যে ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে তা হলো-
i. উচ্চাশা
ii. পরশ্রীকাতরতা
iii. লোভ-লালসা
নিচের কোনটি ঠিক?
ক i ও ii
খ i ও iii
গ ii ও ii
ঘ i, ii ও iii
৪. ৩নং প্রশ্নে উল্লিখিত ভাবের প্রতিফলন যে বাক্যে প্রকাশ পেয়েছে তা হলো
ক. যত সব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে, সেগুলির জন্যই তার জন্ম হয়েছে।
খ. মুরগির পাখনা খেতে খেতে মুখে সিংহ-মানবীর হাসি নিয়ে কান পেতে শুনবে চুপি চুপি বলা প্রণয়লীলার কাহিনী।
গ. সুখী করার, কাম্য হওয়ার, চালাক ও প্রণয়যাচিকা হবার কতই না তার ইচ্ছা।
ঘ. আমার কোনো মণিমুক্তা, একটি দামি পাথর কিছুই নেই যা দিয়ে নিজেকে সাজাতে পারি।

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. মাদাম লোইসেলের কয়জন ভৃত্য থাকবে বলে তিনি কল্পনা করেন?
উত্তর : দুইজন ভৃত্য থাকবে বলে তিনি কল্পনা করেন।
২. মাদাম লোইসেলের ভৃত্যগুলো দেখতে কেমন থাকবে?
উত্তর : ভৃত্যগুলো দেখতে মোটাসোটা থাকবে।
৩. লোইসেলের সন্ধ্যাভোজের টেবিলটা কোন আকৃতির ছিল?
উত্তর : গোল আকৃতির ছিল।
৪. সন্ধ্যাভোজে মাদাম লোইসেল তাঁর স্বামীর কোন দিকে বসেন?
উত্তর : তাঁর স্বামীর বিপরীত দিকে বসেন।
৫. খামটি ছিঁড়ে মাদাম লোইসেল কী বের করেন?
উত্তর : একখানা ছাপানো কার্ড বের করেন।
৬. পোশাক কেনার জন্য মাদাম লোইসেল কত ফ্রাঁ চেয়েছিলেন?
উত্তর : চারশত ফ্রাঁ চেয়েছিলেন।
৭. লোইসেলের বন্ধুরা কী শিকার করতে গিয়েছিল?
উত্তর : ভরতপক্ষী শিকার করতে গিয়েছিল?
৮. লোইসেলের কার সাথে শিকারে যোগ দেয়ার ইচ্ছা?
উত্তর : তাঁর বন্ধুদের সাথে।
৯. লোইসেল মাদাম লোইসেলকে কী ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন?
উত্তর : গোলাপ ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন।
১০. দু তিনটি গোলাপের দাম কত ছিল?
উত্তর : দশ ফ্রাঁ।
১১. মাদাম লোইসেলের বান্ধবীর নাম কী?
উত্তর : মাদাম ফোরস্টিয়ার।
১২. বাক্সটি খুলে মাদাম লোইসেল প্রথমে কী দেখলেন?
উত্তর : কয়েকটি কঙ্কন দেখলেন।
১৩. বল-নাচের অনুষ্ঠানে সবাই কাকে লক্ষ করেছিল?
উত্তর : মাদাম লোইসেলকে লক্ষ করছিল।
১৪. মাদাম ফোরস্টিয়ার গোপন কক্ষ থেকে কী বের করলেন?
উত্তর : জড়োয়া গহনার বাক্স বের করলেন।
১৫. শিক্ষামন্ত্রী কার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন?
উত্তর : লোইসেলের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন।
১৬. হতাশ হয়ে লোইসেল দম্পতি কোন দিকে হাঁটে?
উত্তর : বিন নদীর দিকে হাঁটে।
১৭. কতদিন পর লোইসেল দম্পতি হারের আশা ত্যাগ করলেন?
উত্তর : এক সপ্তাহ পর।
১৮. হীরার হারটি বিক্রি না করার জন্য লোইসেল কাকে অনুরোধ করেন?
উত্তর : স্বর্ণকারকে অনুরোধ করেন।
১৯. চুক্তিমতো হারটি ফেরত দিলে লোইসেল কত ফ্রাঁ পাবে?
উত্তর : চৌত্রিশ হাজার ফ্রাঁ ফেরত পাবে।
২০. অতিরিক্ত আয়ের জন্য মি. লোইসেল কী করতেন?
উত্তর : ব্যবসায়ীর খাতা ঠিক করতেন।
২১. মাদাম লোইসেলকে গল্পে অন্য কী নামে ডাকা হয়েছে?
উত্তর : মাতিলদা নামে ডাকা হয়েছে।
২২. নকল হারটির দাম কত?
উত্তর : পাঁচশত ফ্রাঁর কাছাকাছি।
২৩. চামপস এলিসিস এ মাদাম লোইসেল কোন দিন ঘুরছিলেন?
উত্তর : রবিবার দিন ঘুরছিলেন?
২৪. সন্ধ্যাভোজে মাদাম লোইসেল কীসের পাখনা খাবেন বলে কল্পনা করেন?
উত্তর : মুরগির পাখনা খাবেন বলে কল্পনা করেন।
২৫. মাদাম লোইসেলের সন্ধ্যাভোজে কী মাছ থাকবে?
উত্তর : গোলাপী রং এর রোহিত মাছ থাকবে।
২৬. ‘নেকলেস’ গল্পটির লেখক কে?
উত্তর : গী দ্য মোপাসাঁ।
২৭. মাদাম লোইসেলের বৈঠকখানায় কী পর্দা ঝুলবে?
উত্তর : পুরানো রেশমি পর্দা ঝুলবে।
২৮. কার গৃহে লোইসেল দম্পতি নিমন্ত্রণ পায়?
উত্তর : শিক্ষামন্ত্রীর গৃহে।
২৯. বল-নাচের অনুষ্ঠানে কার জয়জয়কার ছিল?
উত্তর : মাদাম লোইসেলের জয়জয়কার ছিল।
৩০. কাকে দেখলে এখন বয়স্কা মনে হয়?
উত্তর : মাদাম লোইসেলকে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. অতিরিক্ত পরিশ্রম মাদাম লোইসেলের শরীরে কেমন প্রভাব ফেলে?
উত্তর : অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে মাদাম লোইসেলকে বয়স্কা মনে হতো।
➠ মাদাম লোইসেল গরিব দুঃস্থ ঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতো হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চুল অবিন্যস্ত ও ঘাঘড়া একপাশে মোচড়ানো থাকতো। দশ বছর পর মাদাম ফোরস্টিয়ারের সঙ্গে তাঁর দেখা হলে ফোরস্টিয়ার তাকে চিনতেই পারেননি।
২. মাদাম লোইসেল দুর্দশার জন্য ফোরস্টিয়ারকে দায়ী করলেন কেন?
উত্তর : ফোরস্টিয়ারের কাছ থেকে ধার নেয়া হারটি হারিয়েই মাদাম লোইসেল দুর্দশায় পড়েন। তাই তিনি ফোরস্টিয়ারকে দুর্দশার জন্য দায়ী করেছিলেন।
➠ মাদাম লোইসেল বল নাচের অনুষ্ঠানে যাবার জন্য ফোরস্টিয়ারের কাছ থেকে একটি হীরার হার ধার নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে তিনি হারটি হারিয়ে ফেলেন। হারটির মূল্য পরিশোধ করতে তিনি দাসীকে বিদায় করে দিয়েছিলেন এবং বাসা পরিবর্তন করে নিচু ছাদের কামরা ভাড়া নিয়ে ছিলেন।
৩. মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : লোইসেলের কাছে মণিমুক্তা বা দামি পাথর কিনে দেয়ার টাকা ছিল না বলে তিনি মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন।
➠ লোইসেল ছিলেন শিক্ষা পরিষদ অফিসের সামান্য কেরানি। তাঁর পক্ষে মাদাম লোইসেলকে দামি অলঙ্কার কিনে দেয়া সম্ভব ছিল না। তাই বল-নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য মাদাম লোইসেলকে তিনি ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন।
৪. মাদাম লোইসেলের কী জন্য জন্ম হয়েছে বলে তিনি মনে করতেন?
উত্তর : মাদাম লোইসেলের ধারণা বিলাসী জীবনযাপন ও মণিমুক্তার আতিশয্যের জন্যই তাঁর জন্ম হয়েছিল।
➠ সাধারণ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। অলঙ্কারের প্রতি তাঁর মোহ ছিল। কিন্তু তাঁর কাছে দামি ফ্রক বা জড়োয়া গহনা বলতে কিছুই ছিল না। অথচ সে সব ছিল তাঁর প্রিয় বস্তু। তিনি কল্পনায় সে গুলোর ছবি আঁকতেন।
৫. লোইসেল দম্পতি নদীর দিকে হাঁটছিলেন কেন?
উত্তর : বাড়ি যাওয়ার গাড়ি না পেয়ে লোইসেল দম্পতি বিন নদীর দিকে হাঁটছিলেন।
➠ অনুষ্ঠান শেষ করে রাস্তায় পৌঁছে তাঁরা কোনো গাড়ি পেলেন না। রাস্তায় অনেক দূর খোঁজ করেও কোনো সুফল হয়নি। হতাশ হয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাঁরা বিন নদীর দিকে হাঁটতে থাকেন।
৬. লোইসেলের মুখ ম্লান হয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর : পোশাক কেনার জন্য মাদাম লোইসেল চারশত ফ্রাঁ চাওয়ায় লোইসেলের মুখ ম্লান হয়ে গিয়েছিল।
➠ বল-নাচে যোগ দেয়ার জন্য মাদাম লোইসেল নতুন পোশাক কিনতে চেয়েছিলেন। লোইসেল চারশত ফ্রাঁ সঞ্চয় করেছিলেন বন্দুক কেনার জন্য। মাদাম লোইসেলের পোশাক কিনলে তাঁর বন্দুক কেনা হবে না। লোইসেলের আশা ভঙ্গ হয়েছিল।
৭. প্যালেস রয়েলে হারটি লোইসেল চুক্তিতে কেনেন কেন?
উত্তর : হারানো হারটি ফেরত পেলে ক্রয়কৃত হারটি ফেরত দেয়ার উদ্দেশ্যে লোইসেল চুক্তিতে হারটি ক্রয় করেন।
➠ প্যালেস রয়েল থেকে কেনা হরটির দাম ছিল ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁ। বাবার মৃত্যুর পর প্রাপ্ত আঠারো হাজার ফ্রাঁ আর বাকি টাকা ধার করে লোইসেল হারটি কেনেন। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে হারানো হারটি পেলে ক্রয়কৃত হারটি ফেরত দিয়ে তাঁরা চৌত্রিশ হাজার ফ্রাঁ ফেরত পেতে পারতো।
৮. হীরার হারটি ধার পেয়ে মাদাম লোইসেল কেমন আবেগ দেখালেন?
উত্তর : হীরার হারটি ধার পেয়ে মাদাম লোইসেল সবেগে তাঁর বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরলো। পরম আবেগে তাকে বুকে ধরলেন।
➠ মাদাম লোইসেলের অলঙ্কারের প্রতি মোহ ছিল। অর্থ সঙ্কটের কারণে তিনি তাঁর আশা পূর্ণ করতে পারছিলেন না। পরম আরাধ্য বস্তুকে হাতে পেয়ে তিনি তাঁর সবটুকু আবেগকে যেন প্রকাশ করেছিলেন।
৯. লোইসেলের নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাদাম লোইসেলকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে লোইসেল নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন।
➠ মাদাম লোইসেল থিয়েটার দেখতে যাওয়ার জন্য একটা পোশাক ব্যবহার করতেন। বল-নাচের অনুষ্ঠানে মাদাম লোইসেলকে লোইসেল সে পোশাক পরে যেতে বলেছিল। এতে মাদাম লোইসেরের দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে।
১০. মাদাম লোইসেল অসুখী ছিলেন কেন?
উত্তর : মাদাম লোইসেলের কল্পনার জগৎ ও বাস্তবতার জগৎ বৈসামাঞ্জস্যপূর্ণ ছিল বলে তিনি অসুখী ছিলেন।
➠ লোইসেলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাকে অসুখী করে তুলেছিল। তিনি তাঁর ধনী বান্ধবীর সাথে নিজের তুলনা করতেন। ধনী বান্ধবীর সঙ্গে তিনি দেখা করতে চাইতেন না। তিনি নিজেকে গরিব মনে করতেন। অথচ তাঁর কল্পনার রাজ্যটি ছিল বিশাল।
১১. মাদাম লোইসেলের কল্পনার রাজ্যটি কেমন ছিল?
উত্তর : মাদাম লোইসেলের কল্পনার রাজ্যটি ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ।
➠ তিনি কল্পনা করতেন তাঁর বৈঠকখানায় থাকবে রেশমি পর্দা, আসবাবপত্রগুলো থাকবে চমৎকার চিত্র শোভিত। ঘরে থাকবে আরাম কেদারা। সন্ধ্যাভোজনে অপূর্ব খাদ্য হিসেবে থাকবে গোলাপী রং এর রোহিত মাছ অথবা মুরগির পাখনা। বিকেলে বন্ধুদের সাথে গল্পগুজবের জন্য থাকবে আলাদা একটি কক্ষ। মোটাসোটা দুজন ভৃত্য থাকবে তাঁর বাড়িতে।
১২. হীরার হারটি দেখে মাদাম লোইসেলের অভিব্যক্তি কেমন ছিল?
উত্তর : হীরার হারটি দেখে অদম্য কামনায় মাদাম লোইসেলের বুক দুরু দুরু করে।
➠ হারটি তুলে নিতে গিয়ে তাঁর হাত কাঁপে। তিনি তাঁর পোশাকের উপর দিয়ে সেটা গলায় তুলে নেন। আনন্দে বিহ্বল হয়ে যান। তিনি তারপর উদ্বেগ ভরা কণ্ঠে মাদাম ফোরস্টিয়ারকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি ঐ খানা আমায় ধার দেবে? শুধু এটা?”

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মেধাবী রুবিনার বাবা খুব সামান্য বেতনে চাকরি করেন। তার সহপাঠীরা সকলেই অবস্থাপন্ন পরিবারের। সহপাঠীদের পোশাক, জীবনাচরণের সঙ্গে রুবিনার কিছুতেই খাপ খায় না। তবু তা নিয়ে সে মোটেই হীনমন্যতায় ভোগে না। তার ধনী সহপাঠীরাও রুবিনার বাহ্যিক চাকচিক্যের চেয়ে তার মেধাকেই বেশি গুর“ত্ব দেয়। নিজের কঠোর পরিশ্রমে রুবিনা পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করে। আজ তিনি একজন বড় কর্মকর্তা।
ক. বন্দুক কিনতে মসিঁয়ে কত ফ্রাঁ সঞ্চয় করেছিল?
খ. মাদাম লোইসেল আমন্ত্রণ-লিপিখানা টেবিলের উপর নিক্ষেপ করেন কেন?
গ. রুবিনার সঙ্গে মাদাম লোইসেলের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি বর্ণনা করো।
ঘ. পারস্পরিক সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও জীবন পরিণতিতে দুজনের জীবন ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত।- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
ক. চারশ ফ্রাঁ সঞ্চয় করেছিল।
খ. শিক্ষামন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার মতো কোনো ভালো পোশাক বা জড়োয়া গহনা মাদাম লোইসেলের ছিল না বলে আমন্ত্রণ লিপিখানা টেবিলের উপর নিক্ষেপ করে।

গ. রুবিনার সঙ্গে মাদাম লোইসেলের সাদৃশ্যপূর্ণ দিক হলো কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা।
➠ পরিশ্রমই মানুষের জীবনে সাফল্য বয়ে আনে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজ শক্তি সম্পর্কে মানুষ সজাগ হয়। এর মধ্যদিয়ে মানুষ দুঃখ, যন্ত্রণাকে জয় করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পে প্রথম জীবনে মাদাম লোইসেল একজন উচ্চাভিলাষী নারী ছিল। কিন্তু ভাগ্য তাকে এই উচ্চাভিলাষী জীবনের আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত করেছে। সংসারে যখন প্রবল দারিদ্র্য উপস্থিত, তখন সে তাকে জয় করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। শেষ পর্যন্ত সে সফল হয়েছে। উদ্দীপকের রুবিনাও কঠোর পরিশ্রমী। নিজের দারিদ্র্য নিয়ে সে কখনো হীন্যুতায় ভোগে না; বরং কঠোর পরিশ্রম করে সফলতার দিকে ধাবিত হয়।

ঘ. কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতায় সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের রুবিনার সাফল্য ও মাদাম লোইসেলের সাফল্য ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত।
➠ দুঃখ, দারিদ্র্য ব্যর্থতাকে জয় করার একমাত্র উপায় হলো পরিশ্রম। আলস্য জীবনের করুণ পরিণতিকেই ডেকে আনে। পক্ষান্তরে পরিশ্রম বয়ে আনে সৌভাগ্য ও সফলতা।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল দারিদ্র্য ও দেনার দায় থেকে মুক্তির জন্য কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। তারা বাসা বদল করে, দাসীকে বিদায় করে, ঘরের সবকাজ সে একে করে। এভাবে দশ বছর পর তারা তাদের দেনা পরিশোধ করে এবং কিছু সঞ্চয়ও করতে সমর্থ হয়। উদ্দীপকের রুবিনাও কঠোর পরিশ্রমী। নিজের মেধা ও পরিশ্রমই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ দিয়েই শেষ পর্যন্তা সে সফল হয়।
➠ উদ্দীপকের রুবিনা ও ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল উভয়েই পরিশ্রমী। রুবিনা নিজ পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয় আর মাদাম লোইসেল দেনার দায় থেকে মুক্তি পায় এই পরিশ্রমের বিনিময়ে। তার সাদৃশ্য থাকলেও তাদের জীবন পরিণতি ভিন্ন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মিরাজ সাহেব ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে হারিয়ে ফেললেন সমস্ত বিষয় সম্পত্তি। এমনকি তাদের রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িও উঠল নিলামে। কিন্তু সাহস ও মনোবল দিয়ে তিনি টিকে রইলেন কঠোর পরিশ্রম করে। শুরু করলেন নতুন ব্যবসা। শোধ করতে লাগলেন ব্যাংক ঋণ। এত বড় বিপদে একমাত্র মনোবল ও সাহসই তাঁকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
ক. লোইসেল ও তার স্ত্রী ঋণ শোধের জন্য কত বছর কষ্ট করেছিল?
খ. ‘সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আবার বাঁচতেও পারে।’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সিরাজ সাহেবের মনোভাব কীভাবে ‘নেকলেস’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে? -ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ‘নেকলেস’ গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উদ্দীপকে উপস্থিত।”- বিশ্লেষণ করো।
ক. লোইসেল ও তার স্ত্রী ঋণ শোধের জন্য দশ বছর কষ্ট করেছিল।
খ. সামান্য একটি বিষয় মানুষের জীবনের উত্থান-পতনের কারণ হতে পারে।
➠ লোভ-লালসা, প্রভৃতি খারাপ রিপু দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষ নিজের ধ্বংসের পথ সুগম করে। এসব খারাপ পথ পরিহার করে সততা, ন্যায়, নিষ্ঠা, দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হলে মানুষের যেকোনো কাজে বিজয় সুনিশ্চিত। এজন্যই বলা হয়েছে যে, সামান্য একটি বস্তুতে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আবার বাঁচতেও পারে। কেননা, অন্যায়ের পথ মানুষের ধ্বংস সাধন করে আর ন্যায়ের পথ মানুষের উন্নতি ঘটায়।

গ. মি. লোইসেলের গহনাটি ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে উদ্দীপকের মিরাজ সাহেবের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ মানুষের জীবনে বড়ো হওয়া এবং পৃথিবীতে ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য মনোবল ও সাহস থাকা খুব জরুরি। এ দুটি থাকলে মানুষ যেকোনোভাবে জীবনের সমস্ত দুর্দশা কাটিয়ে উঠে উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারে।
➠ উদ্দীপকের মিরাজ সাহেবের দুর্দিনে মনোবল অটুট রেখে সব কিছু নতুন করে শুরু করার মতো উদ্যম দেখানো হয়েছে। তিনি তার এই মনোবলের জন্যই বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তা ছাড়াও সমস্ত সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়ার মতো সাহসও পেয়েছিলেন। তেমনি মাদাম লোইসেলের বান্ধবীর হারটি নতুন করে কিনে দিয়ে মি. লোইসেল বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। সে সময় যদি তিনি মনোবল ও সাহসের মাধ্যমে পথ না চলতেন তাহলে সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারতেন না। দেরি হলেও সমস্ত দুঃখ কষ্টকে পেছনে ফেলে মি. লোইসেলের সামনে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে উদ্দীপকের মিরাজ সাহেবের মনোভাব তুলে ধরা হয়েছে।

ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নতুন করে সব কিছু শুরু করার বিষয়টি উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্প দু’জায়গাতেই উপস্থিত, আর এখানেই উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্পের মিল রয়েছে।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পে বান্ধবীর হারিয়ে যাওয়া হারটি ফেরত দেয়ার পরিস্থিতি না থাকলেও লোইসেল পরিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। নিজেদের যা ছিল তা ছাড়া কিছু ঋণও করে। কিন্তু কোনোক্রমেই নিজেদের আত্মমর্যাদা তারা ভূলুণ্ঠিত হতে দেন নি। এই ঘটনার পর ঋণ পরিশোধের জন্য লোইসেল পরিবারকে অনেক কষ্ট করতে হয়। জীবনের বিলাসিতা বর্জন করে তারা নিজেকে শুধু কাজে মনোনিবেশ করে। আর এভাবে এক সময় তারা তাদের সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে, কিছু সঞ্চয় করতেও সমর্থ হয়। শুধু অটুট মনোবলের কারণেই তারা এ অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিল।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, অনেক ধনী থাকা সত্ত্বেও মিরাজ সাহেব ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি হারিয়ে ফেলেন। তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি হারিয়েও অসম্ভব মনের শক্তিতে নতুন করে আবার ব্যবসা শুরু করলেন। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করলে যে অসাধ্যকেও সাধন করা সম্ভব, সেটি উদ্দীপকের মিরাজ সাহেব এবং ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলকে দেখলে বোঝা যায়।
➠ দৃঢ় মনোবল, সততা, সাহস এবং কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতার মতো ভালো গুণগুলোর সন্নিবেশ ঘটেছে উদ্দীপকের মিরাজ সাহেব ও ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলের মধ্যে। এ গুণগুলোর কারণেই তারা প্রচণ্ড বিপদের মুখোমুখি হয়েও সেখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে সফল হয়। মনের দৃঢ়তার মাধ্যমে দুঃসময়গুলোর মুখোমুখি হওয়ার দৃঢ়তা উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্পে দেখা যায়। এজন্যই বলা হয়েছে যে, “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ‘নেকলেস’ গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উদ্দীপকে উপস্থিত।”

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দৈন্য যদি আসে আসুক লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উঁচু রাখিস
সুখের সাথী মুখের পানে যদি না চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস।
ক. “নিয়তির ভুলেই যেন এক কেরানির পরিবারে তার জন্ম হয়েছে।”- কার?
খ. মাদাম লোইসেল কেন তার ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করতে চাইত না?
গ. উদ্দীপকের ভাবনার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. ‘নেকলেস’ গল্পের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকুর যৌক্তিকতা তুলে করো।
ক. এখানে ‘তার’ বলতে মাদাম লোইসেলকে বোঝানো হয়েছে।
খ. মাদাম লোইসেল গরিব হওয়ায় তার ধনী বান্ধবীর সাথে সে দেখা করতে চাইতেন না।
➠ মাদাম লোইসেল ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানসিকতার অধিকারী। কিন্তু তার ভালো জামা-কাপড় বা গহনা ছিল না। অথচ এগুলোই ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা হলে তার সাথে নিজের তুলনা করলে মাদাম লোইসেলের কাছে নিজের গরিবি হাল আরও বেশি করে মূর্ত হয়ে উঠত। বান্ধবীর সাথে দেখা হওয়ার পর বিরক্তি, দুঃখ, হতাশা ও নৈরাশ্যে সমস্ত দিন ধরে তিনি কাঁদতেন। এ কারণেই মাদাম তার ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করতে চাইতেন না।

গ. উদ্দীপকের ভাবনার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের ভাবনার যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
➠ দরিদ্রতা মানুষের লজ্জার কোনো বিষয় নয়। বরং কেউ যদি এ অবস্থায়ও তার মাথা উঁচু রেখে চলে তবে তার সফলতা অনিবার্য। সুখ সবার কাম্য হলেও কখনো কখনো এটা মানুষের সঙ্গী না হয়ে অধরা থেকে যায়। যদি সুখের দেখা কেউ সহজে না পায় তবে তার উচিত ধৈর্য ধরে থাকা, কারণ ধৈর্যের ফল সুমিষ্ট হয়।
➠ উদ্দীপকে দীনতাকে লজ্জার বিষয় না ভেবে মাথা উঁচু করে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল তার নিজের দীনতায় লজ্জিত। এছাড়াও উদ্দীপকে সুখ না আসলে ধৈর্য ধরার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু মাদাম লোইসেল ধৈর্য ধরতেও আগ্রহী নন। তার ধারণা সুখ, শান্তি, আভিজাত্য এসব কিছু তার কাছে এসে ধরা দেয়ার কথা ছিল। আর এ কারণে তিনি মিথ্যা আভিজাত্য দেখাতে গিয়ে নিজের জীবনে বিপদ ডেকে আনেন। এ বিষয়গুলোই উদ্দীপকের ভাবনার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ করে।

ঘ. ‘নেকলেস’ গল্পের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকু অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
➠ মানুষ যদি তার সঠিক অবস্থা থেকে লজ্জিত হয় তবে তার পতন নিশ্চিত। বরং লজ্জিত না হয়ে যদি নিজের অভাবগ্রস্ত অবস্থাতেও মাথা উঁচু করে বাঁচা যায় তবে সেটি হয় খাঁটি মানুষের মতো বেঁচে থাকা। আর এ সময় যে ধৈর্য ধারণ করে সঠিকভাবে কাজ করতে সমর্থ হয় সে-ই সুখের স্পর্শ লাভ করে।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পে দেখা যায় যে, মাদাম লোইসেল তার দরিদ্র জীবনের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত এবং হতাশ, এ জীবন তার কাছে একেবারেই কাম্য নয়। সে চায় ধনীদের মতো বিলাসিতা। এছাড়াও সে ভাবত যে, তার জন্ম হয়েছে ধনীদের মতো জীবনযাপন করার জন্য। এ সকল হঠকারী চিন্তায় সর্বদা নিমগ্ন থেকে মাদাম লোইসেল নিজের পরিবারের বিপদ ডেকে আনে এবং এর জন্য তাদের প্রায় দশ বছর এ বিপদের বোঝা বহন করে চলতে হয়।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল যদি তার নিজের পরিস্থিতিতে লজ্জিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করতেন তবে তার জীবনে এত বড়ো বিপর্যয় ঘটতো না। এজন্যই ‘নেকলেস’ গল্পের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকু অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের কখান হাড়
সাক্ষী দেছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ রাশি
থাপরেতে নিবিয়ে গেছে দারুণ অভাব আসি
পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস
সোনালি তার গার বরণের করছে উপহাস।
ক. দীর্ঘদিন পর মাদাম ফোরস্টিয়ারের সাথে মাদাম লোইসেলের কোথায় দেখা হয়েছিল?
খ. মাদাম ফোরস্টিয়ার কেন মাদাম লোইসেলকে চিনতে পারলেন না?
গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের একটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটলেও সমগ্রতা ধারণ করেনি।” উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
ক. চামপস্ -এলিমিস এ দেখা হয়েছিল।
খ. দশ বছর পর দেখা হওয়ার পর মাদাম লোইসেলকে খুব সাধারণ দেখাচ্ছিল বলে মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে চিনতে পারলেন না।
➠ মাদাম ফোরস্টিয়ারের হারিয়ে যাওয়া জড়োয়া গহনা ফেরত দিতে গিয়ে মাদাম লোইসেলকে ভয়াবহ দারিদ্র্য জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। তাদের অবস্থা ঠিক হতে প্রায় দশ বছর লেগে যায়। আর এ দিনগুলো মাদাম লোইসেল কোনো কাজের লোক ছাড়াই সংসারের সমস্ত কাজ করেছেন। গরিব গৃহস্থ ঘরের অমার্জিত মেয়ের মতো অপরিপাটি চালচলনে মাদাম লোইসেলকে অনেক বয়স্কা লাগে। দশ বছরে মাদাম লোইসেলের এ ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে চিনতে পারেন নি।

গ. বান্ধবীর নেকলেস ফিরিয়ে দেয়ার পর মাদাম লোইসেলের সামনে যে পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছিল সে দিকটিই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ মানুষের জীবনে যখন অভাবের আগমন ঘটে, তখন তার সমস্ত অবস্থার পরিবর্তন একত্রে সংঘটিত হয়। ঠিকতো খেতে না পাওয়ায় শরীরের হাড় দেখা যায়, মুখের হাসিও মলিন দেখায়। তা ছাড়া পরিধানের জন্য ভালো পোশাক না পাওয়াকে অভাবের দিকটিই নির্দেশ করে। তেমনি বান্ধবীর গহনা ফেরত দিতে গিয়ে মাদাম লোইসেলের পরিবার অভাবের মধ্যে পড়ে। সমস্ত কাজের লোককে বিদায় দিয়ে নিজে সংসারের সমস্ত কাজ করায়, সাধারণ পোশাক, অবিন্যস্ত চুলে মাদাম লোইসেলকে দেখে গৃহস্থ ঘরের মেয়ে বলে মনে হয় এবং বয়সের তুলনায় তাকে অনেক বেশি বয়স্কা লাগে।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পে গরিব হয়ে যাওয়ার পর মাদাম লোইসেলের সার্বিক যে অবস্থা হয়েছিল সেটির সাথে উদ্দীপকের মিল রয়েছে। তাই বলা যায় যে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল যে দীনহীন অবস্থার মধ্যদিয়ে কালাতিপাত করেছিলেন সে দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের একটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটলেও সমগ্রতা ধারণ করেনি- কথাটি সঠিক।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেলের হঠকারী চিন্তা-ভাবনার জন্য তাকে এবং তার স্বামীকে সমস্যায় পড়তে হয় এবং এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের জীবনের দশ বছর অতি পরিশ্রমে ব্যয় হয়ে যায়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায় যে, পেট ভরে খেতে না পাওয়া এবং অনাহারের কারণে মানুষের বুকের হাড় বেরিয়ে যায়। মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেছে এবং শতছিন্ন বস্ত্র তার গায়ের রঙকে উপহাস করছে। এ বিষয়টি ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের অবস্থার সাথে দারুণভাবে মিলে যায়। বান্ধবীর হারানো হার ফিরিয়ে দিতে গিয়ে যে ঋণ নিয়েছিল সেটা পরিশোধ করতে গিয়ে মাদাম লোইসেলেরও একই অবস্থা হয়েছিল। অভাবগ্রস্ত হলে মানুষের কী অবস্থা হয় সেটি উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, আর এটির সাথে মাদাম লোইসেলের কষ্টকর জীবনের মিল পাওয়া যায়। কিন্তু এ উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পে সমগ্রতা ফুটে ওঠেনি। কেননা, এটি শুধু ফলাফলের বর্ণনা দিয়েছে কিন্তু এর মধ্যে কর্মের বর্ণনা অনুপস্থিত।
➠ মাদাম লোইসেলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং নিজেকে ধনী হিসেবে উপস্থাপিত করার যে চেষ্টা ছিল সেটির প্রতিফলন এ উদ্দীপকে অনুপস্থিত। উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের একটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটলেও সমগ্রতা ধারণ করে নি।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চুরির দায়ে চাকরি হারানোর পর দুবছর পেরিয়েছে। তবুও কাজের অভাব হয় নি সাকিবের। মিথ্যে সাক্ষ্যের কারণে দুবছরে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করার রায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভাবের সংসার হলেও রাতদিন পরিশ্রম করে সাকিব ও তার স্ত্রী উভয়ে মিলে এ অসাধ্যকে সাধন করেছে।
ক. হারটি খুঁজতে গিয়ে পরদিন সকাল কয়টার দিকে লোইসেল বাড়ি ফিরে এলো?
খ. “ঐ জড়োয়া গহনা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা আমার করতে হবে।”- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের সাকিবের সঙ্গে ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলের সাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের পাত্র-পাত্রী যেন মাদাম ও তার স্বামী লোইসেলের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি।”- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
ক. হারটি খুঁজতে গিয়ে পরদিন সকাল সাতটার দিকে লোইসেল বাড়ি ফিরে এলো।
খ. “ঐ জড়োয়া গহনা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে”- মি. লোইসেল, তার স্ত্রীর হারটি হারিয়ে ফেলা প্রসঙ্গে এ কথাটি বলেছিল।
➠ বল-নাচের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বান্ধবীর জড়োয়া গহনা হারিয়ে ফেলে মাদাম লোইসেল। সমস্ত পথ খোঁজার পর না পেয়ে লোইসেল পুলিশের কাছে এবং গাড়ির অফিসে গিয়েছিল। এছাড়াও পুরস্কার ঘোষণা করে একটা বিজ্ঞাপনও দিয়ে এসেছিল। এরপরও এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ায় কোনো সাড়া না পেয়ে সমস্ত আশা ত্যাগ করে লোইসেল বলেছিল যে, ওই জড়োয়া গহনা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।

গ. উদ্দীপকের সাকিবের সঙ্গে ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায় যে, সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী সাকিবের চুরির দায়ে চাকরি চলে যায়। তা ছাড়া মিথ্যা মামলায় দুই বছরের মধ্যে তাকে পাঁচ লাখ টাকা শোধও করতে হয়। সামান্য আয়ের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও দিনরাত পরিশ্রম করে সে এবং তার স্ত্রী মিলে টাকা পরিশোধ করেছে। অত্যন্ত সৎ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের পক্ষেই এটা সম্ভব।
➠ উদ্দীপকে নিজের দোষ না থাকলেও শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে সমস্ত টাকা পরিশোধ করেছে সাকিব ও তার স্ত্রী। ‘নেকলেস’ গল্পেও জড়োয়া গহনাটি মাদাম লোইসেলের গলা থেকে হারিয়ে যাওয়ায় সেটি খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় মি. লোইসেল। কিন্তু যখন তার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তখন তিনি তার পুরো জমানো টাকা এবং বেশকিছু টাকা ঋণ নিয়ে দেখতে একই রকম আর একটি হার কিনে তার স্ত্রীর বান্ধবীকে ফেরত দেয়ার কথা বলে। উদ্দীপকের সাকিবের এবং ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলের চরিত্রে যে সততা বিদ্যমান সেটিই তাদের কর্মকাণ্ডে ফুটে উঠেছে এবং তাঁদের দুজনার মধ্যে এ সাদৃশ্যটিই প্রতীয়মান হয়।

ঘ. ‘প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের পাত্র-পাত্রী যেন মাদাম ও তার স্বামী লোইসেলের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি”- উক্তিটি যথার্থ।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল বান্ধবীর হারটি কোনো ক্রমেই খুঁজে পাচ্ছে না। তখন তিনি বলেন যে, হারটি বানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হারটি বানাতে গিয়ে তারা তাদের জমানো সমস্ত টাকা শেষ করে ফেলে এবং কিছু টাকা অতিরিক্ত সুদে ঋণও নেয়। সে সুদ এবং ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান বহু নিচে নেমে যায়। কিন্তু তবুও মি. লোইসেল এবং তার স্ত্রী কষ্টের কাছে পরাস্ত হয়। সততার কারণে মাদাম লোইসেল ও মি. লোইসেল বহু কষ্ট সহ্য করে। এত টাকার একটা জিনিস ফেরত দিতে গিয়ে তাদের জীবনে কষ্টের শেষ থাকে না।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায় যে, সাকিব সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী হলেও তার মধ্যে সততার কোনোরূপ অভাব নেই। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় তাকে শুধু শুধু পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এমনিতেই অভাবগ্রস্ত পরিবার তার উপর এতগুলো টাকা দুবছরের মধ্যে পরিশোধ করতে গিয়ে সাকিব এবং তার স্ত্রীকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অসম্ভব সততা এবং মনের জোর থাকায় কাজটি করতে পেরেছে সাকিব এবং তার স্ত্রী।
➠ সৎ ও দৃঢ় মানসিকতার কারণে অসাধ্যকে সাধন করায় এ কথা বলা হয়েছে যে, “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের পাত্র-পাত্রী যেন মাদাম ও তার স্বামী লোইসেলের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি”।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘নেকলেস’ গল্পটি পড়ানো শেষে বাংলা বিভাগের শিক্ষক অনিন্দ্য চৌধুরী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন- “প্রয়োজনীয়তা যেমন উদ্ভাবনের জনক
তেমনি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিলাসিতা ধ্বংসের জননী।”
ক. বল-নাচে যাওয়ার জন্য মাদাম লোইসেল কার কাছ থেকে হারটি ধার নিয়েছিল?
খ. হারটি হারিয়ে গেলে সেটি কেনার পর মাদাম লোইসেল ও তার স্বামী কীভাবে ঋণ পরিশোধ করেছিল?
গ. উদ্দীপকটি কীভাবে ‘নেকলেস’ গল্পের সাথে সম্পর্কিত?- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিলাসিতা ধ্বংসের জননী”-উক্তিটি ‘নেকলেস’ গল্পের পরিণতির সাথে যেন একসূত্রে গাঁথা।- মস্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
ক. বল-নাচে যাওয়ার জন্য মাদাম লোইসেল মাদাম ফোরস্টিয়ার-এর কাছ থেকে হারটি ধার নিয়েছিল।
খ. হারটি হারিয়ে গেলে সেটি কেনার পর মাদাম লোইসেল ও তার স্বামী অনেক কষ্ট করে ঋণ পরিশোধ করেছিল।
➠ পাওনাদারের ঋণ পরিশোধের জন্য তারা কম টাকায় একটা বাসা ভাড়া করেছিল এবং দাসীদেরকে বিদায় করে দিয়েছিল। সাধারণ পরিবারের মেয়েদের মতো সংসারের সমস্ত কাজ করতে লাগলো মাদাম লোইসেল। অপরদিকে মাদাম লোইসেলের স্বামীও অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য সন্ধ্যাবেলাতেও কাজ করতো। এভাবে দশ বছর অমানুষিক পরিশ্রম করে মাদাম লোইসেল ও তার স্বামী ঋণ পরিশোধ করেছিল।

গ. উদ্দীপক এবং ‘নেকলেস’ গল্পের মূল বক্তব্য প্রায় একই হওয়ায় উদ্দীপক এবং গল্পটি পরস্পর সম্পর্কিত।
➠ মানুষের আকাঙ্ক্ষার কোনো শেষ নেই। কিন্তু নিজের ক্ষমতার কথা চিন্তা করে মানুষকে কোনো কিছু পাওয়ার আশা করা উচিত। সেক্ষেত্রে নিজেকে কিছুটা হলেও পতন হতে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
➠ উদ্দীপকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিলাসিতাকে ধ্বংসের জননী বলা হয়েছে। ‘নেকলেস’ গল্পেও এ বিষয়টিই উপস্থাপিত হয়েছে। মাদাম লোইসেল তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করতে গিয়ে তার স্বামীর জমানো টাকা শেষ করে ফেলে। পরবর্তীতে যখন নেকলেসটা হারিয়ে যায় তারা তাদের সমন্ত সম্পদ শেষ করে দিয়ে বান্ধবীকে নেকলেসটা ফেরত দেয় এবং তাদের কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। নিজের বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে অধিক করতে গিয়ে তারা যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে সে কথাটিই উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়েছে। নিজের প্রয়োজনের অধিক কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়ার বিষয়টি উদ্দীপকের সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের সম্পর্ক নির্দেশ করে।

ঘ. উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিলাসিতা ধ্বংসের জননী’- উক্তিটি ‘নেকলেস’ গল্পের পরিণতির সাথে যেন একসূত্রে গাঁথা- মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তিনি চাইতেন সুন্দর ঘরে থাকবেন, ভালো জামা-কাপড় পরবেন, ভালো ভালো খাবার-দাবার খাবেন। তার মধ্যে বিলাসিতা করার ইচ্ছা ছিল প্রবল। প্রয়োজনীয়তা বিষয় পূরণ হওয়ার পরও এ উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বিলাসী মনোভাবের জন্য তার নিজেকে সর্বদা অসুখী মনে হতো।
➠ উদ্দীপকে বলা হয়েছে যে, প্রয়োজন মানুষকে অনেক কিছু আবিষ্কার করতে শেখায়। যেমন- প্রয়োজনেই মানুষ আগুন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসের উদ্ভাবন করেছে। তেমনি উদ্দীপকে আরো বলা হয়েছে যে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিলাসিতা ধ্বংসের জননী। আর এর যথার্থ প্রমাণ পাওয়া যায় ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল ছিলেন অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তিনি ভাবতেন যে, তার জন্ম হয়েছে ধনীদের মতো অর্থাৎ বিলাসিতার মধ্যদিয়ে জীবনযাপন করার জন্য। এসব কথা চিন্তা করে তিনি সর্বদা দুঃখী ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকতেন। নিজেকে ধনী প্রমাণিত করতে নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য অন্যের কাছে থেকে গহনা চেয়ে নিয়ে এসে পরেন। অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে গহনাটি মাদাম লোইসেল হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে বান্ধবীকে হারটি ফেরত দিতে গিয়ে তাদের সমস্ত জমানো টাকা খরচ হয়ে উল্টো তারা আরো ঋণী হয়ে যায় এবং অবস্থার উন্নতি করার জন্য প্রায় দশ বছর মাদাম লোইসেল ও তার স্বামীকে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হয়। ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল যদি নিজেকে বড় প্রমাণিত করতে না চাইতেন তাহলে তারা এ সমস্যায় পতিত হতেন না।
➠ সুতরাং বলা যায়, “উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিলাসিতা ধ্বংসের জননী”- উক্তিটি ‘নেকলেস’ গল্পের পরিণতির সাথে যেন এক সূত্রে গাঁথা- মন্তব্যটি এ কারণেই যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আনন্দময়ী বিদ্যানিকেতনের প্রবীণ শিক্ষক ‘কর্মদোষে ফল লাভ’ গল্পটি পড়ানো শেষে ছাত্রদের দুটি উপদেশ দেন।
উপদেশ-১. উচ্চাকাঙ্ক্ষা বশবর্তী হয়ে এমন কাজ করো না, যা তোমাদের বিপদে ফেলতে পারে।
উপদেশ-২. সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারলেই নিজেকে সুখী ভাবা যায়।
ক. ‘নেকলেস’ গল্পে নিয়তির ভুলে কার জন্ম হয়েছিল কেরানির পরিবারে?
খ. মাদাম লোইসেলের মনে সর্বদা দুঃখ বিরাজ করতো কেন?
গ. উদ্দীপকের ২ নম্বর উপদেশ ‘নেকলেস’ গল্পের কোন দিকটির ইঙ্গিত বহন করে?-ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের উপদেশ দুটি ‘নেকলেস’ গল্পের চেতনাকেই ধারণ করে।”- উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
ক. মাদাম লোইসেলের জন্ম হয়েছিল কেরানির পরিবারে।
খ. দরিদ্রের মতো জীবনযাপন করতে হচ্ছে বলে মাদাম লোইসেলের মনে সর্বদা দুঃখ বিরাজ করতো।
➠ মাদাম লোইসেল সুন্দরী তরুণী হওয়া সত্ত্বেও তার বিয়ে হয়েছে এক দরিদ্র কেরানির সাথে। ধারণা ছিল যতসব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে সেগুলোর জন্যই তার জন্ম। নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফল বাস্তবায়ন হচ্ছে না দেখে মাদাম লোইসেলের মনে সর্বদা দুঃখ বিরাজ করতো।

গ. উদ্দীপকের ২ নম্বর উপদেশটি মাদাম লোইসেলের পরিবারের দুরবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে।
➠ মানুষের জীবনে আকাঙ্ক্ষা বা সাধের শেষ নেই। একটার পর একটা আকাঙ্ক্ষা এসে হাজির হয়। কিন্তু যে সকল ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করা নিজের পক্ষে সম্ভব নয়। সেসব আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলাই অবশ্য কর্তব্য। কেননা, কোনো কিছু পাওয়ার আগ্রহ থাকলেও নিজের সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে সে অনুযায়ী চললে তাতে কল্যাণ হয়। তেমনি মাদাম লোইসেল যদি নিজের অবস্থার কথা বিবেচনা করে পথ চলতো তবে তাকে এতটা খারাপ পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করতে হতো না এবং এতটা কষ্টকর জীবনযাপনও করতে হতো না।
➠ উদ্দীপকের মানুষের অবস্থা এবং আকাঙ্ক্ষাকে সমন্বয় সাধন করে চলার কথা বলা হয়েছে। ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল অধিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে এ দুটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন না করায় যে বিপদে পতিত হয়েছে উদ্দীপকের ২ নম্বর উপদেশ সে দিকটির প্রতিই ইঙ্গিত করে।

ঘ. উদ্দীপকের উপদেশ দুটি ‘নেকলেস’ গল্পের চেতনাকেই ধারণ করে।- উক্তিটি যথাযথ।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পে উচ্চাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে মাদাম লোইসেল নিজেও পরিবারকে বিপদে ফেলেন। তিনি যদি তার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চলতে পারতেন, তবে তাকে এত বড় সমস্যার মধ্যে পড়তে হতো না।
➠ উচ্চাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে মানুষ তার স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে অস্বাভাবিক আচরণও করে থাকে। যেমন- তিনি যে একজন দরিদ্র কেরানির স্ত্রী এ কথা জেনেও একমাত্র প্রবল উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে তিনি নিজেকে অসুখী ভাবতে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি তার আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করেই বল-নাচ অনুষ্ঠানের জন্য একটা ড্রেস তৈরি করে। এরপরও তার আকাঙ্ক্ষার সমাপ্তি ঘটে না। সে তার স্বামীকে গহনার কথা বললে তার স্বামী তাকে গহনা হিসেবে ফুলের কথা বলে। কিন্তু মাদাম লোইসেল যুক্তি দেখায় যে এতে তাকে অপমানজনক লাগবে। অবশেষে সে অনুষ্ঠানে পরার জন্য বান্ধবীর কাছ থেকে গহনা ধার করে নিয়ে আসে। আর এ গহনাটি হারানোর মধ্যদিয়ে তার জীবনে করুণ অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল যদি নিজের রিপুকে বশ করে নিজের বর্তমান পরিস্থিতিতে খুশি থাকতেন তাহলে তাকে কঠিন বিপদের মধ্যদিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হতো না। মূলত মাদাম লোইসেল উচ্চাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হওয়ায় এবং সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় না ঘটিয়ে চলার জন্যই কষ্টের জীবনে পদার্পণ করতে বাধ্য হয়। অতএব “উদ্দীপকের উপদেশ দুটি ‘নেকলেস’ গল্পের চেতনাকেই ধারণ করে।”- উক্তিটি যথাযথ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
“হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীস্টের সম্মান।”
ক. ‘নেকলেস’ গল্পটিতে কে দরিদ্র জীবনের ভয়াবহতা বুঝতে পারে?
খ. দারিদ্র্যের মধ্যে দীর্ঘদিন দিনাতিপাত করায় মাদামের অবস্থা কেমন হয়েছিল?
গ. কবিতাংশে কবির ভাবনার সঙ্গে মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. “উদ্দীপকের চেতনার বিষয়টি মাদাম লোইসেলের মধ্যে থাকলে তার পরিণতি হতো ভিন্ন”-মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।
ক. নেকলেস গল্পটিতে মাদাম লোইসেল দরিদ্র জীবনের ভয়াবহতা বুঝতে পারে।
খ. দারিদ্র্যের মধ্যে দীর্ঘদিন দিনাতিপাত করায় মাদামের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়েছিল।
➠ বান্ধবীর জড়োয়া গহনা হারিয়ে ফেলার পর সেটা ফেরত দেয়ার জন্য মাদাম লোইসেল এবং তার স্বামী ঋণ নেয়। ঋণ পরিশোধের জন্য তার স্বামী সন্ধ্যাতেও কাজ করত আর মাদাম তার বাসার সব কাজের লোককে বিদায় দিয়ে সংসারের যাবতীয় কাজ নিজেই করা শুরু করে। ময়লা কাপড়-চোপড় পরা আর অবিন্যস্ত চুলে তাকে বয়স্কা লাগে। কাজ করতে করতে তার হাতগুলো লাল, শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতো হয়ে গেছে। দশ বছর দারিদ্র্যের মধ্যে দিনাতিপাত করায় মাদাম লোইসেলকে দেখে বিশ্বাস করা কঠিন যে তিনি এক সময় চমৎকার সুন্দরী ছিলেন।

গ. উদ্দীপকের কবির ভাবনার সঙ্গে মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
➠ কবির মতে, দারিদ্র্য মানুষকে মহান করে তোলে। সোনা যেমন আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করা হয়, তেমনি দরিদ্রতার কষ্ট মানুষকে সঠিকপথে পরিচালিত এবং খাঁটি মানুষ হতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে মানুষ সর্বোচ্চ সম্মানিত আসনে উপবিষ্ট হতে পারে।
➠ উদ্দীপকে দারিদ্র্যকে অনেক বড় করে দেখানো হলেও ‘নেকলেস’ গল্পে দেখা যায় যে, মাদাম লোইসেল তার দারিদ্র্য অবস্থাকে ঘৃণা করে। মাদাম লোইসেল সুন্দরী হওয়ায় তিনি ভাবতেন যে সমস্ত বিলাসিতা করার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। কিন্তু তার বিয়ে হয়েছে এক দরিদ্র কেরানির সাথে, যার ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, চলাফেরা, এমনকি পোশাক-আশাকও নিতান্ত গরিব মানুষের মতো। এ বিবর্ণ জীবনকে মাদাম লোইসেল ঘৃণা করত। ধনীদের মতো চলাফেরা করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল তার। আর এখানেই উদ্দীপকের কবির ভাবনার সাথে মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকের চেতনার বিষয়টি মাদাম লোইসেলের মধ্যে থাকলে তার পরিণতি এতটা খারাপ হতো না।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়ায় তিনি সুখী ছিলেন না। দরিদ্র কেরানির ঘরে স্ত্রী হিসেবে এসে তার জীবনকে মনে হতো বিবর্ণ। সর্বদা তিনি মনে মনে ধনী লোকের মতো জীবনযাপন করার স্বপ্ন দেখতেন।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায় যে, অভাবের স্বরূপ এবং এটা হতে উত্তরণের পথ আর এটা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত হতে সাহায্য করে। কিন্তু ‘নেকলেস’ গল্পে দেখা যায় যে মাদাম লোইসেল দরিদ্র কেরানির সাথে বিয়ে হওয়ায় সুখী নয়। তিনি এ দরিদ্র অবস্থার কারণে ব্যথিত। তার ধারণা ছিল যে, এ গরিবি হালে জীবন কাটানোর জন্য তার জন্ম নয়। সর্বদা তিনি স্বপ্ন দেখতেন অনেক ধনী হওয়ার। কিন্তু তার কাছে বিলাসী কোনো ফ্রক বা জড়োয়া গহনা ছিল না। এ সব বিষয় তাকে সর্বদা বিরক্তি, দুঃখ এবং হতাশার মধ্যে ডুবিয়ে রাখতো। এরপর বল-নৃত্যের আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে সেজেগুজে যাওয়ার জন্য বান্ধবীর কাছ থেকে গহনা ধার করে নিয়ে আসে এবং সেটি হারিয়ে ফেলে। তারপর সে গহনাটি কিনে দিতে গিয়ে তাদের ঋণ নিতে হয়েছিল। সেটা থেকে মুক্ত হতে তার পরিবারের দশ বছর লেগে যায়।
➠ নিজের অবস্থার প্রতি মাদাম লোইসেলের যদি সম্মানবোধ থাকতো তাহলে সে অন্যের বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হতো না। এজন্যই বলা হয়েছে যে, “উদ্দীপকের চেতনার বিষয়টি যদি মাদাম লোইসেলের মধ্যে থাকতো তাহলে তার পরিণতি ভিন্ন হতো।”

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সাকী, শিখি, সাথী খুব ভালো বন্ধু। সাথীর বিয়েতে সাকী ও শিখিকে নিমন্ত্রণ করেছে সাথী। বিয়ের দিন সাকী ও শিখি যে যার সাধ্যমতো উপহার সামগ্রী নিয়ে সাথীদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। সাথীর মা-বাবা বিয়েতে মেয়েকে হীরার অলংকার দিয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়ি আরও অনেক গহনা দিয়েছে। সাথীকে একেবারে পরীর মতো লাগছিল। বিয়ে বাড়ি থেকে বাসায় গিয়ে শিখির সে কী কান্না, কারণ সে জানে এরকম চাইলেও সে কোনোদিনই পাবে না।
ক. মাদার লোইসেলের ‘কনভেন্ট’-এর সহপাঠিনী কেমন ছিল?
খ. লোইসেল কেন তার সহপাঠিনীর সাথে দেখা করতে অনীহা প্রকাশ করত?
গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘শিখি ও লোইসেলের মধ্যে নিয়তিকে মানতে না পারার ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে।”-উক্তিটি ‘নেকলেস’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ক. মাদার লোইসেলের কনভেন্ট-এর সহপাঠিনী ধনী ছিল।
খ. লোইসেলের সহপাঠিনী ধনী ছিল তাই সে দেখা করতে অনীহা প্রকাশ করত।
➠ পৃথিবীতে শ্রেণিভেদ রয়েছে। লোইসেল এক দরিদ্র কেরানি পরিবারে জন্ম নেয়। দরিদ্র পরিবারের জন্ম হলেও সে দারিদ্র্যকে মেনে নিতে পারেনি। ধনী সহপাঠিনীর সাথে দেখা করতে গেলে নিজের অবস্থান আরও বেশি প্রকাশ হয়ে পড়ত, আর তাই লোইসেল কনভেন্ট-এর সহপাঠিনীর সাথে দেখা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করত।

গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের অন্যের অবস্থান নিজের থেকে ভালো হওয়াতে যে মনোবেদনা সেটি প্রকাশ পেয়েছে।
➠ পৃথিবীতে উঁচু-নীচুর সহাবস্থান রয়েছে। নিয়তির কারণেই কেউ উঁচু ঘরে জন্ম নেয় আবার কারও আশ্রয় হয় নীচু পরিবারে। কিন্তু শুধু জন্মগত অবস্থানের কারণে মানুষ তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না এটা অনেকেই সহজে মেনে নিতে পারে না।
➠ উদ্দীপকে তিনজন বান্ধবীর মধ্যে সাথীর বিয়েতে অপর দুই বান্ধবী সাকী ও শিখিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু সাকী ও শিখি খুশি মনে বিয়েতে উপস্থিত হলেও ধনী পরিবারের মেয়ে হওয়ার কারণে সাথীর বিয়ের আয়োজন দেখে শিখির খুব কষ্ট হয়। কারণ শুধু দরিদ্র হওয়ার কারণে সে এরকম পাবে না। এ বিষয়টি মেনে নিতে না পেরেই বাসায় এসে কান্না করেছে। ‘নেকলেস’ গল্পে লোইসেলও নিজের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারে নি, আর তাই ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করে বাসায় ফিরে কাঁদতে শুরু করেছে।

ঘ. শিখি ও লোইসেলের মধ্যে নিয়তিকে মানতে না পারার ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে- উক্তিটি যথার্থ।
➠ নিয়তির কারণে ইচ্ছা না থাকলেও অনেক কিছুই ঘটে যায়। পৃথিবীতে শ্রেণিভেদের প্রথা বিদ্যমান। আর নিয়তির কারণেই কারও জন্ম ধনীর ঘরে কেউ বা দরিদ্রের ঘরে। নিয়তির ব্যাপারটা অনেকেই সহজে মেনে নিতে পারে না।
➠ উদ্দীপকে শিখি, সাকী ও সাথী তিনজন খুব ভালো বন্ধু। সাথীর বিয়ে উপলক্ষে সাকী ও শিখি নিমন্ত্রণ পেয়েছে। দুজনেই নিজেদের সাধ্যমতো বিয়েতে উপস্থিত হলেও সাথীর জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে দরিদ্র শিখির কষ্টের কারণ হয়েছে। ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেল নিয়তির কারণে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছে। আর তাই রূপ, গুণ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও সে অনেক কিছু পায় না। ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গিয়ে শুধু জন্মগত পার্থক্যের কারণে এ রকম বঞ্চনা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেল নিজের অবস্থান ধনী বান্ধবীর সাথে মেলাতে না পেরে কষ্ট পেয়েছে। কারণ সে জানে শুধু দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে সে এসব কিছুই পাবে না। আর লোইসেলের এ কষ্টটা আমরা উদ্দীপকের শিখির মধ্যেও প্রত্যক্ষ করি। তাই বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সায়মা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তার সখীদের সাথে নদীর ঘাটে বাসন মাজতে, জল আনতে যায়। মাহবুব চৌধুরীর বাংলোতে ফুল আনতে যায়। প্রতিদিনের মতো ফুল আনতে গিয়ে মাহবুব চৌধুরীর সুদর্শন, শিক্ষিত ছেলে দেখে তার মনে প্রণয় আকাঙ্ক্ষা জাগে কিন্তু কাউকে কিছু না বলে বাবার পছন্দ করা দরিদ্র এক পাত্রকেই বিয়ে করে নেয়। কারণ সে জানে তার স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়।
ক. লোইসেলের কেমন পরিবারে জন্ম হয়েছে?
খ. লোইসেল কেরানির সঙ্গে বিবাহ স্বীকার করেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “আশা থাকলেও মানুষ সবকিছু পায় না।” এ চিরন্তন সত্যটি উদ্দীপকের সায়মা ও ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেলের জীবনে প্রতীকায়িত হয়েছে- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
ক. লোইসেলের এক কেরানি পরিবারে জন্ম হয়েছে।
খ. কেরানির পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে ধনী বা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কোনো উপায় না থাকাতে কেরানির সঙ্গে বিবাহ স্বীকার করে নিয়েছিল।
➠ নিয়তির কারণে মানুষের অনেক স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে যায়। লোইসেল সুন্দরী তর“ণী হলেও কেরানি পরিবারে জন্ম নেয়াটা পরিচিত হওয়ার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেম লাভ বা ধনী লোকের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। তাই শিক্ষা পরিষদ অফিসের সামান্য এক কেরানির সঙ্গে বিবাহ সে স্বীকার করে নেয়।

গ. নিজের অবস্থানের কারণে অনেকেই তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে না। উদ্দীপকের এ বিষয়টি ‘নেকলেস’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও শুধু নিয়তির কারণে মানুষের অনেক স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে যায়। আর তা মেনে নেয়া সবার জন্যই সহজসাধ্য হয়ে ওঠে না। আর এখান থেকে মানুষের মনে কষ্টের জন্ম হয়।
➠ উদ্দীপকের সায়মা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় সবকিছু স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে। কিন্তু ধনীর পুত্রকে নিয়ে তার যে প্রণয় আকাঙ্ক্ষা জেগেছে শুধু গরিব হওয়ার কারণে যে তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না তা সে বুঝতে পেরেই নীরব থেকেছে। ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেল সুন্দরী হওয়া সত্ত্বেও আনন্দ বা আশা ছিল না। কারণ, প্রশংসা, প্রেম লাভ বা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে বিয়ে করার উপায় না থাকাতে বাবার পছন্দের দরিদ্র পাত্রকেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।

ঘ. ‘আশা থাকলেও মানুষ সবকিছু পায় না’-বাক্যটি সঠিক ও যথার্থ।
➠ প্রত্যেক মানুষই স্বপ্ন দেখে। প্রতিনিয়ত নানা কারণে মানুষের স্বপ্ন ভেঙে যায়। আর এ স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া। নিয়তির কাছে মানুষ যেন পুতুল মাত্র।
➠ উদ্দীপকের সায়মা সখীদের সাথে মিলেমিশে ভালোই ছিল। কিন্তু ধনীর পুত্রকে নিয়ে তার যখন স্বপ্ন শুরু হয়, তার পরক্ষণেই সে বুঝতে পারে এ স্বপ্ন কখনো পূরণ হওয়ার নয়। এজন্য নিজের পছন্দের কথা কাউকে বলার প্রয়োজনই মনে করেনি। ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেলের অনেক স্বপ্ন ছিল পরিচিত হওয়ার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেমলাভ করার কিন্তু শুধু নিয়তির কারণে কেরানি পরিবারে জন্ম নিয়ে তার সকল আশা পূর্ণ হয়নি।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেলের মনে অনেক আশা ছিল, কিন্তু দরিদ্র হওয়ার কারণে তার আশা অপূর্ণ থেকেছে। নিয়তির কারণে সুন্দরী তরুণী হওয়া সত্ত্বেও সে তার যোগ্য, পছন্দমতো পাত্র বেছে নেয়ার সুযোগ পায়নি। উদ্দীপকের সায়মাও একজনকে পছন্দ করেছে কিন্তু নিষ্ফল প্রণয় নিবেদন হবে জেনে কাউকে কিছু না বলেই বাবার পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করেছে। আশাহতের এ ব্যাপারটি উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্পে বিদ্যমান। এসব আলোচনায় প্রমাণ হয় মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
নাদিয়া ও মিলি একই ক্লাসে পড়ে। মিলিকে দেখে নাদিয়ার শৈশবে ফেলে আসা নূপুরের কথা মনে হয়। এজন্য মিলি দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও ধনীর কন্যা নাদিয়া মিলিকে বন্ধু করে নেয়। নাদিয়া জন্মদিনে মিলিকে নিমন্ত্রণ জানালে মিলি নাদিয়াদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। নাদিয়াদের বাড়িতে গিয়ে মিলি অবাক হয়ে যায়, সে যেমন স্বপ্ন দেখে নাদিয়াদের বাড়ির অবস্থা ঠিক তেমনি।
ক. লোইসেলের ধারণা কী?
খ. লোইসেলের দুঃখ হতো কেন?
গ. উদ্দীপকের মিলি ‘নেকলেস’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল ও উদ্দীপকের মিলি নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি।- উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।
ক. লোইসেলের ধারণা যত সব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে, সেগুলোর জন্যই তার জন্ম হয়েছে।
খ. লোইসেল আশা করত সব ভালোকিছু সে পাবে, আর এ আশার সাথে যখন না পাওয়ার দ্বন্দ্ব হতো এ ব্যাপারটাই তখন তাকে দুঃখ দিত।
➠ চাওয়ার সাথে পাওয়ার ইচ্ছা মানুষের সহজাত। লোইসেল কেরানি পরিবারে জন্ম নিলেও তার বিলাসি জীবনের স্বপ্ন ছিল আর এসব যখন পূর্ণ হতো না, তখন লোইসেল দুঃখ পেত।

গ. উদ্দীপকের মিলি ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে।
➠ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সাথে দ্বন্দ্বে যখন আশা পূর্ণ হয় না, তখন মানুষের কষ্ট হয়। আর এ পাওয়ার পথে যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় নিয়তি, সেটা মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর।
➠ উদ্দীপকের মিলির সাথে নাদিয়ার বন্ধুত্ব হয়। নাদিয়ার জন্মদিনে মিলি নিমন্ত্রণ পেয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে। ধনী নাদিয়াদের বাড়ি গিয়ে মিলি অবাক হয়ে যায়। কারণ, মিলি স্বপ্ন দেখে নাদিয়াদের বাড়ির সবকিছুর মতো তারও হবে। ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল ভাবতো তার থাকবে প্রাচ্য-চিত্র-শোভিত, উচ্চ ব্রোঞ্জ-এর আলোকমণ্ডিত পার্শ্বকক্ষ। আরও ধনীদের বাড়ির নানান সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

ঘ. ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল ও উদ্দীপকের মিলি নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি- উক্তিটি যথার্থ হয়েছে।
➠ আশা মানুষকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। সংসারের শত প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে। আর এই স্বপ্ন পূরণের ব্যর্থতাই মানুষকে আবার নানারকম কষ্ট দেয়।
➠ উদ্দীপকে ধনী নাদিয়ার সুবাদে মিলি তার বন্ধুত্ব লাভের সুযোগ পেয়েছে। মিলি দরিদ্র হলেও বন্ধুত্বের সুবাদে নাদিয়ার জন্মদিনে নিমন্ত্রণ পেয়েছে। সবার মতো মিলিরও স্বপ্ন ছিল। তার সে স্বপ্ন পূরণ বান্ধবী নাদিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছে। তার নিজের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল নিয়তির কারণে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছে। কিন্তু সেও অন্যদের মতো নিজের মাঝে স্বপ্নকে লালন করেছে। আর তার সে স্বপ্ন বরাবরই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল স্বপ্ন দেখে ধনীদের মতো বেঁচে থাকার, স্বপ্ন পুরুষকে বিয়ে করার, সুন্দর ঐশ্বর্যময় বাড়ি তার ভেতরের আসবাবপত্র। কিন্তু তার স্বপ্ন কখনও পূরণ হয়নি। তেমনি উদ্দীপকের মিলিও স্বপ্ন দেখে নাদিয়াদের বাড়ির অবস্থার মতো তাদের বাড়ির অবস্থা হবে। সেটাও অপূর্ণ থেকে গেছে মিলির কাছে। স্বপ্নকে ছুঁতে পারেনি লোইসেল ও মিলি। এসব আলোচনায় বলা যায়, উক্তিটি যথার্থ হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কাসেমের বস মশিউর রহমান তাঁর বাড়িতে পার্টির আয়োজন করেছেন মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে। অফিসের সবাইকে তিনি নিমন্ত্রণ কার্ড পাঠিয়েছেন। কার্ড পেয়ে কাসেম মহাখুশি এত বড় অনুষ্ঠানে সপরিবারে নিমন্ত্রণ পেয়ে। কিন্তু কাসেমের স্ত্রী কিছুতেই খুশি হতে পারল না। কারণ, বড় পার্টিতে যাওয়ার জন্য সে নিজের যা আছে তা পরে যেতে রাজি নয়। অনেক চেষ্টা করেও কাসেম রাজি করাতে পারল না। তাই কাসেমের ইচ্ছা সত্ত্বেও তার স্ত্রীর জন্য সেখানে যাওয়া হলো না।
ক. নিজ বাসগৃহে মসিঁয়ে ও মাদাম লোইসেলের উপস্থিতি কামনা করেন কেন?
খ. মঁসিয়ে লোইসেল নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘নেকলেস’ গল্পের কোনদিককে ইঙ্গিত করে? বুঝিয়ে লেখো।
ঘ. আংশিক মিল থাকলেও উদ্দীপকের সাথে ‘নেকলেস’ গল্পে যথেষ্ট বৈসাদৃশ্যও রয়েছে- মূল্যায়ন করো।
ক. জনশিক্ষামন্ত্রী ও মাদাম জর্জ রেমপাননু নিজ বাসগৃহে মসিঁয়ে ও মাদাম লোইসেলের উপস্থিতি কামনা করেন।
খ. মঁসিয়ে লোইসেল স্ত্রীকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে সে আতঙ্কে নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল।
➠ মসিঁয়ে লোইসেল আনন্দিত হয়ে জনশিক্ষামন্ত্রী ও মাদাম জর্জের কার্ডটি লোইসেলকে দিয়েছিল। ভেবেছিল এত বড় অনুষ্ঠানে যাওয়ার নিমন্ত্রণ কার্ড পেয়ে তার স্ত্রী খুব খুশি হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে কার্ডটি পেয়ে সে তার স্ত্রীকে কাঁদতে দেখেছে। তাই সে নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল।

গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের বিলাসী ভাবনার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
➠ স্বপ্নবিলাসী মানুষ বাস্তবতার সম্মুখীন হতে ভয় পায়। নিজের অবস্থান থেকে সুখী হওয়ার চেষ্টা না করে অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টায় থাকে। এসব মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
➠ উদ্দীপকে কাসেম বসের বাড়িতে পার্টির নিমন্ত্রণ পেয়ে খুশি হয়ে খবরটি স্ত্রীকে দিতে এসেছিল। কিন্তু কাসেমের স্ত্রী খুশি হতে পারেনি। সে নিজের অবস্থানে খুশি নয়, অন্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়। সে তাই পার্টিতে যাওয়ার জন্য নিজের যা আছে তা পরেই সন্তুষ্ট হতে পারবে না। ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেলের স্বামী খুশি মনে কার্ড দিলেও সে খুশি হতে পারেনি। বিলাসী মনের মাদাম লোইসেল পার্টিতে আর দশজন ধনীর দুলালীদের মতো সাজগোজ করে যাওয়ার আশা পোষণ করে।

ঘ. আংশিক মিল থাকলেও উদ্দীপকের সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য রয়েছে- উক্তিটি সঠিক হয়েছে।
➠ স্বপ্নের পথ বেয়ে মানুষের এগিয়ে চলা আর সেখানেই বাস্তবতার মুখোমুখি, তখন অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও উপায় সবসময় হয়ে ওঠে না। তারপরও মানুষ সাধ্যমতো চেষ্টা করে।
➠ উদ্দীপকের কাসেম তার বসের কাছ থেকে পার্টির নিমন্ত্রণ পেয়েছিল। আর তাতেই কাসেম খুশি হয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে পার্টিতে যাওয়ার আশা পোষণ করেছিল। কিন্তু তার স্ত্রী ভালো সাজ-পোশাক নেই বলে কাসেমের সাথে যেতে রাজি হয় নি। অন্যদিকে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল স্বামীর হাত থেকে কার্ডটি পড়ে খুব হতাশ হয়েছে। কারণ সে তার কমমূল্যের সাজ-পোশাক পরে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে পারবে না। মাদাম লোইসেলের ইচ্ছা ধনী মেয়েদের মতো সাজ-পোশাক পরে অনুষ্ঠানে যাওয়া। তাই অনেক কষ্ট করে সবকিছু জোগাড় করে তবেই বল-নাচের দিন উপস্থিত হয়েছে।
➠ ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেলের প্রথমে নিজের সাজ-পোশাক পরে যাওয়ার অনিচ্ছা থাকলেও স্বামীর সহায়তায় ধনীদের মতো করে যেতে পেরেছে বল-নাচের দিন। কিন্তু উদ্দীপকের কাসেমের স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে কোনোরকম সহায়তা পায়নি, তাই নিজের সাজ-পোশাক পরে অনুষ্ঠানে যেতেও রাজি হয়নি। এসব আলোচনা প্রেক্ষিতে বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ফয়সাল অল্পকিছু অর্থ-সম্পদ নিয়ে লন্ডনের মতো শহরে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন, অথচ তিনি কারো কাছে কোনো হাত পাতেন নি। এক বন্ধু তাঁকে এক সময় এক জোড়া জুতা দিয়েছিল। অপমানবোধ করে তিনি সে জুতা পথে ফেলে দিয়েছিলেন। উদ্যাম, পরিশ্রম ও চেষ্টার সামনে সব বাধাই দূরীভূত হয়ে যায়। এ গুণ যার মধ্যে আছে, সে ব্যক্তি পরিশ্রমী তার দুঃখ নেই। ফয়সালকে অনেক সময় রাত্রিতে না খেয়ে শুয়ে থাকতে হতো, তাতে তিনি কোনোদিন ব্যথিত বা হতাশ হন নি।
ক. মাদাম লোইসেল এখন কাদের মতো হয়ে গেছে?
খ. “কী অনন্যসাধারণ এ জীবন আর তার মধ্যে কতো বৈচিত্র্য”-বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের কোন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি “নেকলেস’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করেছে, সামগ্রিক ভাব নয়।”- মূল্যায়ন করো।
ক. মাদাম লোইসেল এখন গরিব গৃহস্থ ঘরের শক্ত, কর্মঠ, মার্জিত মেয়েদের মতো হয়ে গেছে।
খ. মানুষের জীবনের বৈচিত্র্য সম্পর্কে এ কথাটির বলা হয়েছে।
মানুষের জীবন সবসময় একই ধারায় প্রবাহিত হয় না। সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ প্রভৃতি বিপরীত প্রক্রিয়া মানুষের জীবনে সর্বদাই চলমান। জীবন একঘেঁয়ে নয়। জীবন বৈচিত্র্যময় অনন্যসাধারণ।
গ. প্রথমে উদ্দীপকটি ভালোভাবে পাঠ কর। পরে ‘নেকলেস’ গল্পের কোন বিষয়টি এতে প্রতিফলিত হয়েছে তা চিহ্নিত করো এবং ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রথমে উদ্দীপকটি পড়ে এতে প্রতিফলিত বিষয়টি চিহ্নিত কর। তারপর ‘নেকলেস’ গল্পের সাথে এর তুলনা করো। শেষে মূল্যায়ন অংশে গিয়ে তোমার মতামত প্রতিষ্ঠা করো।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
বাল্যকাল থেকেই আনোয়ার বাবার অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা দেখে আসছে। সংসারটাকে চালাতে বাবা কতকিছুই না করেছে! তাই সে কোনোদিন কোনো সাধ-আহ্লাদকে মনে স্থান দেয়নি। সে জানে যদি তার বাবাকে বলে একটা নতুন জামা দরকার তাহলে বাবা হয়ত কিনে দেবে। কিন্তু তাতে তার অনেক কষ্ট হবে।
ক. মাদাম লোইসেলের কেমন পরিবারে জন্ম হয়েছে?
খ. ‘হঠাৎ সে আর্তনাদ করে উঠল।’-কে, কেন আর্তনাদ করে উঠল?
গ. উদ্দীপকের আনোয়ারের সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নেকলেস’ গল্পের মূলভাবের প্রতিফলক।”- মূল্যায়ন করো।
ক. মাদাম লোইসেলের এক কেরানি পরিবারে জন্ম হয়েছে।
খ. মাদাম লোইসেল হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠল।
মাদাম লোইসেল ‘বল’ নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য একটি জড়োয়া হার ধার করে নিয়ে এসেছিল। অনুষ্ঠান শেষে ঘরে এসে সে শেষবারের মতো একবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিতে চাইল। জামার উপর থেকে চাদর সরাতেই সে দেখে তার গলায় হারটি নেই। তাই সে আর্তনাদ করে উঠল।
গ. প্রথমে উদ্দীপকটি মনোযোগসহকারে পাঠ কর। তারপর উদ্দীপকের চরিত্রের সাথে মাদাম লোইসেলের বৈসাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধরে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘নেকলেস’ গল্পের মূলভাব চিহ্নিত করো। তারপর উদ্দীপকের মূলভাব চিহ্নিত করো। এরপর উভয়ের তুলনা কর। সবশেষে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যের আলোকে তোমার মত প্রতিষ্ঠা করো।

তথ্যসূত্র:
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post