‘মিনু’ গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
মিনু : বনফুল |
মিনু
বনফুল
মা-মরা মেয়ে মিনু। বাবা জন্মের আগেই মারা গেছে। সে মানুষ হচ্ছে এক দূরসম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে। বয়স মাত্র দশ, কিন্তু এই বয়সেই সবরকম কাজ করতে পারে সে। সবরকম কাজই করতে হয়। লোকে অবশ্য বলে যোগেন বসাক মহৎ লোক বলেই অনাথা বোবা মেয়েটাকে আশ্রয় দিয়েছেন। মহৎ হয়ে সুবিধাই হয়েছে যোগেন বসাকের। পেটভাতায় এমন সর্বগুণান্বিতা চব্বিশ ঘণ্টার চাকরানী পাওয়া শক্ত হতো তাঁর পক্ষে। বোবা হওয়াতে আরো সুবিধা হয়েছে, নীরবে কাজ করে। মিনু শুধু বোবা নয়, ঈষৎ কালাও। অনেক চেঁচিয়ে বললে, তবে শুনতে পায়। সব কথা শোনার দরকারও হয় না তার। ঠোঁটনাড়া আর মুখের ভাব দেখেই সব বুঝতে পারে। এছাড়া তার আর একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে যার সাহায্যে সে এমন সব জিনিস বুঝতে পারে, এমন সব জিনিস মনে মনে সৃষ্টি করে, সাধারণ বুদ্ধিতে যার মানে হয় না। মিনুর জগৎ চোখের জগৎ, দৃষ্টির ভিতর দিয়েই সৃষ্টিকে গ্রহণ করেছে সে। শুধু গ্রহণ করে নি, নতুন রূপে নতুন রং আরোপ করেছে তাতে।
খুব ভোরে ওঠে সে। ভোর চারটের সময়। উঠেই দেখতে পায় পূর্ব আকাশে দপদপ করে জ্বলছে শুকতারা। পরিচিত বন্ধুকে দেখলে মুখে যেমন মৃদু হাসি ফুটে ওঠে, তেমনি হাসি ফুটে ওঠে মিনুর মুখেও। মিনু মনে মনে বলে-সই ঠিক সময়ে উঠেছ দেখছি। বৈজ্ঞানিকের চোখে শুকতারা বিরাট বিশাল বাষ্পমণ্ডিত প্রকাণ্ড গ্রহ , কবির চোখে নিশাবসানের আলোকদূত, কিন্তু মিনুর চোখে সে সই। মিনুর বিশ্বাস সে-ও তার মতো কয়লা ভাঙতে উঠেছে ভোর বেলায়, আকাশবাসী তার কোনো পিসেমশায়ের গৃহস্থালিতে উনুন ধরাবার জন্যে। আকাশের পিসেমশায়ও হয়তো ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করে তার নিজের পিসেমশায়ের মতো। শুকতারার আশেপাশে কালো মেঘের টুকরো যখন দেখতে পায়, তখন ভাবে ঐ যে কয়লা। কী বিচ্ছিরি করে ছড়িয়ে রেখেছে আজ। বলে আর মুচকি মুচকি হাসে। তারপর নিজে যায় সে কয়লা ভাঙতে। কয়লাগুলো ওর শত্রু। শত্রুর উপর হাতুড়ি চালিয়ে ভারি তৃপ্তি হয় ওর। হাতুড়িটার নাম রেখেছে গদাই, আর যে পাথরটার উপর রেখে কয়লা ভাঙে তার নাম দিয়েছে শানু। শানের সঙ্গে মিল আছে বলে বোধ হয়। কয়লা-গাদার কাছে গিয়ে রোজ সে ওদের মনে মনে ডাকে-ও গদাই ও শানু ওঠো এবার, রাত যে পুইয়ে গেছে। সই এসে কয়লা ভাঙছে। তোমরাও ওঠো, কয়লা ভেঙে তারপর যায় সে ঘুঁটের কাছে। ঘুঁটে তার কাছে খুঁটে নয়, তরকারি। উনুনের নাম রাক্ষসী। উনুন রাক্ষসী কেরোসিন তেল দেওয়া ঘুঁটের তরকারি দিয়ে শত্রুদের মানে কয়লাদের খাবে। আঁচটা যখন গনগন করে ধরে ওঠে তখন ভারি আনন্দ হয় মিনুর। জ্বলন্ত কয়লাগুলোকে তার মনে হয় রক্তাক্ত মাংস, আর আগুনের লাল আভাকে। মনে হয় রাক্ষসীর তৃপ্তি। বিস্ফারিত নয়নে সে চেয়ে থাকে। তারপর ছুটে চলে যায় উঠোনে; আকাশের দিকে চেয়ে দেখে সেখানে উষার লাল আভা ফুটছে কি না। উষার লাল আভা যেদিন ভালো করে ফোটে সেদিন সে ভাবে সইয়ের উনুনে চমৎকার আঁচ এসেছে। যেদিন আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে সেদিন ভাবে, ছাই পরিষ্কার করে নি, তাই আঁচ ওঠে নি আজ। এইভাবে নিজের একটা অভিনব জগৎ সৃষ্টি করেছে সে মনে মনে। সে জগতের সঙ্গে বাইরের জগতের মিল নেই। সে জগতে তার শত্রু-মিত্র সব আছে। আগেই বলেছি কয়লা তার শত্রু। রান্নাঘরের বাসনগুলি সব তার বন্ধু। তাদের নাম রেখেছে সে আলাদা আলাদা। ঘটিটার নাম পুটি। ঘটিটা একদিন হাত থেকে পড়ে গিয়ে তুবড়ে গেল। মিনুর সে কী কান্না! তোবড়ানো জায়গাটায় রোজ হাত বুলিয়ে দেয়। গেলাস চারটের নাম হারু, বাবু, তারু আর কাবু। চারটে গেলাসই একরকম। কিন্তু মিনুর চোখে তাদের পার্থক্য ধরা পড়ে। গেলাসগুলোকে যখন মাজে বা ধোয় তখন মনে হয় সে যেন ছোট ছেলেদের স্নান করাচ্ছে। মিটসেফটা ওর শত্রু। ওটার নাম দিয়েছে গপগপা। গপগপ করে সব জিনিস পেটে পুরে নেয়। মাঝে মাঝে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে মিটসেফের চকচকে তালাটার দিকে, আর মনে মনে বলে-আ মর, মুখপোড়া সব জিনিস পেটে পুরে বসে আছে। মিনুর আর একটি দৈনন্দিন কর্তব্য আছে। যখন অবসর পায় টুক করে চলে যায় ছাদে। ছাদ থেকে একটা বড় কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। কাঁঠাল গাছের মাথার দিক থেকে একটা সরু শুকনো ডাল বেরিয়ে আছে। সেই ডালটার দিকে সাগ্রহে চেয়ে থাকে মিনু। মনে হয় তার সমস্ত অন্তর যেন তার দৃষ্টিপথে বেরিয়ে গিয়ে আশ্রয় করেছে ওই ডালটাকে। এর কারণ আছে। তার জন্মের পূর্বেই তার বাবার মৃত্যু হয়েছিল। বাবাকে সে দেখে নি। অনেকদিন আগে তার মাসিমা তার কানের কাছে চিৎকার করে একটা বিস্ময়কর খবর বলেছিল। তার বাবা নাকি বিদেশ গেছে, অনেক দূর বিদেশ, মিনু বড় হলে তার কাছে ফিরে আসবে, হয়তো তার কোলেই আসবে। মিনু বুঝতে পারে নি ব্যাপারটা ভালো করে। একটা জিনিস কেবল তার মনে গাঁথা হয়ে ছিল, বাবা ফিরে আসবে। কবে আসবে? মিনু কত বড় হলে আসবে? কথাটা মাঝে মাঝে ভাবত সে।;
এমন সময় একদিন একটা ঘটনা ঘটল। সে সেদিনও ছাদে দাঁড়িয়েছিল। দেখতে পেল পাশের বাড়ির টুনুর বাবা এলো বিদেশ থেকে অনেক জিনিসপত্র নিয়ে, আর ঠিক সেই সময়ে তার নজরে পড়ল ঐ সরু ডালটায় একটা হলদে পাখিও এসে বসল। সেদিন থেকে তার বন্ধ ধারণা হয়ে গেছে ওই সরু ডালে যেদিন হলদে পাখি এসে আবার বসবে, সেদিনই তার বাবা আসবে বিদেশ থেকে। তাই ফাঁক পেলেই সে ছাদে ওঠে। কাঁঠাল গাছের ওই সরু ডালটার দিকে চেয়ে থাকে। হলদে পাখি কিন্তু আর এসে বসে না। তবু রোজ একবার ছাদে ওঠে মিনু। এটা তার দৈনন্দিন কর্তব্যের মধ্যে একটা। এর কয়েকদিন পর রাত্রে কম্প দিয়ে জ্বর এলো তার। কাউকে কিছু বললে না। মনে হলো জ্বর হওয়াটাও বুঝি অপরাধ একটা। ভোরে ঘুম ভেঙে গেল, রোজ যেমন কয়লা ভাঙতে যায় সেদিনও তেমনি গেল, সেদিনও চোখে পড়ল শুকতারাটা দপদপ করে জ্বলছে। মনে মনে বলল-সই এসেছিস। আমার শরীরটা আজ ভালো নেই ভাই। তুই ভালো আছিস তো? উনুনে আঁচ দিয়ে কিন্তু সে আর জল ভরতে পারল না সেদিন। শরীরটা বড্ড বেশি খারাপ হতে লাগল। আস্তে আস্তে গিয়ে শুয়ে পড়ল নিজের বিছানায়। কেমন যেন ঘোর-ঘোর মনে হতে লাগল। নিজের ছোট্ট ঘরটিতে মিনু জ্বরের ঘোরে শুয়ে রইল খানিকক্ষণ। জ্বরের ঘোরেই হঠাৎ তার মনে হয় একটা দরকারি কাজ করা হয় নি। আস্তে আস্তে উঠল সে বিছানা থেকে, তারপর খিড়কির দরজা দিয়ে গিয়ে দাঁড়াল ছাদের সিঁড়ির কাছে। সিঁড়ির কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে উঠে গেল ছাদে। কেউ দেখতে পেল না। পিসিমা পিসেমশাই তখনও ঘুমুচ্ছেন। ছাদে উঠেই চোখে পড়ল লালে লাল হয়ে গেছে পূর্বাকাশ। বাঃ চমৎকার আঁচ উঠেছে তো সইয়ের। একটু হাসল সে। তারপর চাইল সেই সরু ডালটার দিকে। সর্বাঙ্গ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল তার। একটা হলদে পাখি এসে বসেছে। তাহলে তো বাবা নিশ্চয় এসেছে। আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না ছাদে। যদিও পা টলছিল তবু সে প্রায় ছুটে বেরিয়ে এলো বাইরে।;
উৎস নির্দেশ : |
---|
-- |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ পেটভাতায়- পেটেভাতে; প্রয়োজনীয় খাদ্যের বিনিময়ে। ➠ কালা- বধির; কানে কম শোনে এমন। ➠ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়- চোখ, কান, নাক, জিভ, ত্বক-এই পাঁচ ইন্দ্রিয়ের বাইরে বিশেষ কিছু। অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি। ➠ শুকতারা- সূর্যোদয়ের আগে পুব আকাশে এবং সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে নক্ষত্রের মতো দীপ্তিমান শুক্রগ্রহ। ➠ গ্রহ- সূর্য প্রদক্ষিণকারী জ্যোতিষ্ক। ➠ সই- সখির কথ্য রূপ; বান্ধবী; সহচরী। ➠ আকাশবাসী- কল্পিত উর্ধ্বলোকে বসবাসকারী। ➠ ডেলিপ্যাসেঞ্জারি- প্রত্যহ যাতায়াতকারী। ➠ উনুন- চুলা। ➠ মিটসেফ- রান্নাঘরে খাদ্য রাখার তাকবিশিষ্ট বাক্স। ➠ খিড়কি- বাড়ির পেছনের ছোট দরজা। ➠ রোমাঞ্চিত- পুলকিত। আনন্দিত। |
পাঠের উদ্দেশ্য : |
---|
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত করা। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
বিচিত্র মানুষের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের এ সমাজ। কেউ সুস্থ, কেউবা পুরো সুস্থ নয়। বাষ্প্রতিবন্ধী মানুষও আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়। ছোট্ট মেয়ে মিনু বাক্ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তার মা-বাবা নেই। তাই বলে জীবনকে সে তুচ্ছ মনে করে না। দূর-সম্পর্কীয় এক আত্মীয়ের বাসায় তাকে থাকতে হয়। সেখানে গৃহকর্মে তার অখণ্ড মনোযোগ। শুধু তাই নয়, প্রকৃতির সঙ্গেঙ্গও সে মিতালি পাতিয়েছে। ভোরবেলাকার নতুন সূর্যকে নিজের জ্বালানো চুল্লির সঙ্গে তুলনা করতেই তার ভালো লাগে। হলদে পাখি দেখে তার মনে পুলক জাগে। পাশের বাসায় কোনো এক প্রবাসী পিতার আগমন লক্ষ করে সে মনে করে, একদিন তার বাবাও ফিরে আসবে। পিতার জন্য মনে মনে অপেক্ষা করে কিশোরী। হলদে পাখি আসে কিন্তু তার পিতা আসে না-এই কষ্ট তার একান্ত নিজস্ব। তবুও সে স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নই তাকে সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে সাহায্য করে। |
কবি পরিচিতি : |
---|
বনফুলের প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। তিনি ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের বিহারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চাকরি করলেও সাহিত্যের প্রতি, তাঁর আগ্রহ ছিল ব্যাপক। তিনি তাঁর গল্পকে আকারে ছোট, ব্যঙ্গ-রসিকতায় পূর্ণ ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনার মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। বাস্তবজীবন, মানুষের সংবেদনশীলতা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র উপাদানকে তিনি গল্পের বিষয় করেছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হলো: ‘বনফুলের গল্প’, ‘বাহুল্য’, ‘অদৃশ্যলোকে’, ‘বহুবর্ণ’, ‘অনুগামিনী’ ইত্যাদি। তিনি বেশ কিছু উপন্যাস, নাটক আর কাব্যও লিখেছেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’(ভারত) উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বনফুল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। |
কর্ম-অনুশীলন : |
---|
১. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একজন শিশুকে নিয়ে গল্প, কবিতা বা সংক্ষিপ্ত রচনা
লেখো। মনে রাখবে তুমি যা-ই লেখ না কেন শিশুটির প্রতি যেন মমত্ববোধ প্রকাশ
পায়। ২. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচারণার জন্য পোস্টার ও লিফলেট তৈরি করো। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
১. মিনুর সই কে? ক. চাঁদ খ. সূর্য গ. মঙ্গলগ্রহ ঘ. শুকতারা ২. ‘মিনুর বাবা অনেক দূর বিদেশ আছে।’- এখানে ‘দূর বিদেশে’ বলতে কোনটিকে বোঝানো হয়েছে? ক. গ্রহ খ. আমেরিকা গ. পরপার ঘ. আকাশ উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও: মায়ের ভালোবাসা পাবার প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা, মাকে না দেখার অব্যক্ত ব্যাকুলতা কলকাতায় থাকা ফটিকের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। শহরের অনাত্মীয় পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য মাঝে মধ্যে তার মন কেঁদে উঠে ‘মা’ ‘মা’ বলে। মায়ের কাছে ফিরে যাবার আশায় থেকে ফটিক একদিন সবার কাছ থেকে চিরদিনের ছুটি নিয়ে অসীমের পথে পাড়ি জমায়। ৩. উদ্দীপকটিতে ‘মিনু’ গল্পের যে বিষয়টি লক্ষ করা যায় তা হলো- ক. আত্মীয়ের অনাদর অবহেলা খ. প্রিয়জনের প্রতি মমত্ববোধ গ. প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণ ঘ. শারীরিক অক্ষমতা ৪. উদ্দীপকটিতে মিনু ও ফটিকের পরিণতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য- i. স্বাভাবিকতা জীবনে অপরিহার্য ii. প্রকৃতিই হলো শ্রেষ্ঠ আশ্রয় iii. পারস্পরিক সহমর্মিতা জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে নিচের কোনটি সঠিক? ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও ii ঘ. i, ii ও iii |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন- ১: মা মরা মেয়ে কে? উত্তর : মা মরা মেয়ে মিনু। প্রশ্ন- ২: মহৎ হয়ে কার সুবিধা হয়েছে? উত্তর : মহৎ হয়ে যোগেন বসাকের সুবিধা হয়েছে। প্রশ্ন- ৩:কী দেখে মিনু সব বুঝতে পারে? উত্তর : ঠোঁট নাড়া আর মুখের ভাব দেখে মিনু সব বুঝতে পারে। প্রশ্ন- ৪: কার চোখে শুকতারা বিরাট বিশাল বাষ্পমণ্ডিত প্রকাÊ গ্রহ? উত্তর : বৈজ্ঞানিকের চোখে শুকতারা বিরাট বিশাল বাষ্পমণ্ডিত প্রকাণ্ড গ্রহ। প্রশ্ন- ৫: জ্বলন্ত কয়লাগুলোকে মিনুর কী মনে হয়? উত্তর : জ্বলন্ত কয়লাগুলোকে মিনুর মনে হয় রক্তাক্ত মাংস। প্রশ্ন- ৬: কার ওপর হাতুড়ি চালিয়ে মিনুর ভারি তৃপ্তি হয়? উত্তর : কয়লার ওপর হাতুড়ি চালিয়ে মিনুর ভারি তৃপ্তি হয়। প্রশ্ন- ৭: বোলতা দেখলে মিনু কী করে? উত্তর : বোলতা দেখলে মিনু শোঁ করে গামছা ঘুরিয়ে মারে। প্রশ্ন- ৮: মিনুর মনে কী গাঁথা হয়ে আছে? উত্তর : মিনুর মনে গাঁথা হয়ে আছে যে, তার বাবা আসবে। প্রশ্ন- ৯: মিনুর ধারণা কবে তার বাবা আসবে? উত্তর : মিনুর ধারণা যেদিন কাঁঠাল গাছের সরু ডালটায় হলদে পাখি এসে বসবে, সেদিন তার বাবা আসবে। প্রশ্ন- ১০: মিনু উনুনকে কী বলে? উত্তর : মিনু উনুনকে রাক্ষসী বলে। প্রশ্ন- ১১: মিনুর পিসেমশায় কী করেন? উত্তর : মিনুর পিসেমশায় ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করেন। প্রশ্ন- ১২: শুকতারার আশপাশে কালো মেঘের টুকরোকে মিনু কী ভাবে? উত্তর : শুকতারার আশপাশে কালো মেঘের টুকরোকে মিনু ভাবে কয়লা। প্রশ্ন- ১৩: বোলতা-ভীমরুল মারার সময় মিনু কেমন শব্দ করে? উত্তর : বোলতা-ভীমরুল মারার সময় মিনু হিসহিস শব্দ করে। প্রশ্ন- ১৪: ঘুঁটেকে মিনুর কাছে কী মনে হয়? উত্তর : ঘুঁটেকে মিনুর কাছে মনে হয় তরকারি। প্রশ্ন- ১৫: মিনু কার জন্য অপেক্ষা করে? উত্তর : মিনু বাবার জন্য অপেক্ষা করে। প্রশ্ন- ১৬:মিনু মিটসেফটার কী নাম দিয়েছে? উত্তর : মিনু মিটসেফটার নাম দিয়েছে গপগপা। প্রশ্ন- ১৭: মিনু কখন ঘুম থেকে ওঠে? উত্তর : মিনু ভোর সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে ওঠে? প্রশ্ন- ১৮:অবসর সময়ে মিনু কোথায় যায়? উত্তর : অবসর সময়ে মিনু ছাদে যায়। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন- ১: যোগেন বসাকের সুবিধা হওয়ার কারণ কী- বুঝিয়ে লেখো। উত্তর : চব্বিশ ঘণ্টার জন্য একজন চাকরানি পাওয়াতে যোগেন বসাকের সুবিধা হয়েছে। ➠ মিনু অনাথ একটি মেয়ে। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। সে তার পিসিমার বাড়িতে থাকে। তার পিসেমশায়ের নাম যোগেন বসাক। মিনু বোবা এবং কানেও কম শোনে। তার বয়স দশ বছর হলেও সে সব কাজ করতে পারে। সে সর্ব গুণে গুণান্বিতা। শুধু পেটভাতায় এমন একজন চাকরানি পাওয়ায় যোগেন বসাকের সুবিধা হয়েছে। প্রশ্ন- ২: মিনু কয়লা ভাঙতে ভাঙতে অস্পষ্ট হিসহিস করে কেন? উত্তর : রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে মিনু অস্পষ্ট হিসহিস শব্দ করে। ➠ মিনু কথা বলতে পারে না। সে তার রাগ বা আনন্দের প্রকাশ ঘটায় অদ্ভুত শব্দ করে। মিনু কয়লাগুলোকে নিজের শত্রু এবং হাতুড়ি ও যে পাথরের উপর রেখে কয়লা ভাঙে সেই পাথরকে বন্ধু মনে করে। শত্রুর ওপর প্রতিশোধ নিতে পারলে মানুষ যেমন খুশি হয় তেমনি মিনু তার শত্রুরূপী কয়লা ভাঙার সময় আনন্দে অস্পষ্ট হিসহিস শব্দ করে। যেন সে ঝাল মিটিয়ে শত্রুর মাথা ভাঙছে। প্রশ্ন- ৩: মিনু ঘুঁটেকে তরকারি মনে করে কেন? উত্তর : মিনু ঘুঁটেকে তরকারি হিসেবে কল্পনা করে। ➠ মিনু কালা ও বোবা। সে স্বাভাবিক জগতের বাইরে নিজস্ব একটি জগৎ তৈরি করে নিয়েছে। এ জগতে ঘুঁটেকে সে তরকারি মনে করে। সে ভাবে উনুন কেরোসিন তেল দেয়া ঘুঁটের তরকারি দিয়ে শত্রুদের মানে কয়লাদের খাবে। উনুন বা চুলা যেহেতু ঘুঁটের সাহায্যে কয়লাগুলো পোড়াতে পারে, এজন্য মিনু ঘুঁটেকে তরকারি মনে করে। প্রশ্ন-৪: হলদে পাখির সঙ্গে মিনুর সম্পর্ক কী? বুঝিয়ে লেখো। উত্তর : মিনু ভাবে কাঁঠাল গাছে হলদে পাখি এসে বসলে তার বাবা বিদেশ থেকে ফিরে আসবে। ➠ মিনু একদিন ছাদে দাঁড়িয়েছিল। সে সময় সে দেখতে পেল পাশের বাড়ির টুনুর বাবা বিদেশ থেকে অনেক জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে এবং একই সময় কাঁঠাল গাছের সরু শুকনা ডালে একটি হলদে পাখি বসে আছে। এ থেকে তার মনে একটি বিশ্বাস জন্ম নেয় যে, আবার যেদিন কোনো হলদে পাখি কাঁঠাল গাছে এসে বসবে তার বাবা সেদিন ফিরে আসবে। এজন্য মিনু হলদে পাখির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। প্রশ্ন- ৫: মিনু ছাদ থেকে ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল কেন? উত্তর : নিশ্চয় তার বাবা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে এটা মনে করে, মিনু ছাদ থেকে ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল। ➠ ছাদের পাশে কাঁঠাল গাছের সরু ডালটায় যেদিন হলদে পাখি এসে বসেছিল সেদিন পাশের বাড়ির টুনুর বাবা বিদেশ থেকে এলো। এটা দেখে মিনুর মনে বিশ্বাস জান্মল যে, আবার যেদিন হলদে পাখিটা কাঁঠাল গাছে বসবে, সেদিন অবশ্যই তার বাবা ফিরে আসবে। এ কারণে একদিন ছাদে উঠে সে হলদে পাখি দেখতে পেয়ে মিনু দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। প্রশ্ন- ৬: ‘বিস্ফারিত নয়নে সে চেয়ে থাকে’-কে, কেন? উত্তর : মিনু বিস্ফারিত নয়নে চেয়ে থাকে। ➠ ‘মিনু’ গল্পে মিনু বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হলেও সে অনেক বিষয় সম্পর্কে যেসব ধারণা করে, তা সাধারণ বুদ্ধিতে সম্ভব নয়। ঘুঁটেকে তার কাছে মনে হয় তরকারি আর কয়লাকে শত্রু, তাই কেরোসিন দেওয়া ঘুঁটের তরকারি দিয়ে তার শত্রুকে উনুন রাক্ষসী খায় বলে তার ধারণা। চুলোয় আগুনের আঁচ উঠলে কয়লাগুলোকে তার রক্তাক্ত মাংস মনে হয় আর আগুনের লাল আভাকে মনে হয় রাক্ষসী তৃপ্তি। বিস্ফারিত নয়নে তখন সেদিকে তাকিয়ে থাকে সে। প্রশ্ন- ৭: ‘সে জগতে তার শত্রু-মিত্র সব আছে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? উত্তর : উদ্ধৃত বাক্যে মিনুর মনের অভিনব জগৎকে বোঝানো হয়েছে। ➠ ‘মিনু’ গল্পে শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী মিনু। প্রকৃতির সঙ্গে তার ভাব। প্রকৃতির যে বিষয়গুলো তার ভালো লাগে তা তার বন্ধু আর যা ভালো লাগে না তা যদি কোনোভাবে তাকে কষ্ট দেয়, সেটা তার শত্রু হয়ে যায়। এভাবে নিজের মনে মনে প্রকৃতির সঙ্গে চলে তার মনের সংসারের ভাঙাগড়া। তার মনের সে জগতে অনেক কিছু তার শত্রু হয়ে যায়, আবার অনেক কিছু তার সই হয়ে যায়। প্রশ্ন- ৮: পিঁপড়েদের সঙ্গে মিনুর কী রকম সম্পর্ক? উত্তর : পিঁপড়েদের সঙ্গে মিনুর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ➠ মিনু তার শত্রু বোলতা বা ভিমরুল মেরে পিঁপড়েদের খেতে দেয়। মরা বোলতা বা ভিমরুলকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শত শত পিঁপড়ে চলে আসে। যখন পিঁপড়েরা সেটা টানতে টানতে নিয়ে যায় তখন আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে মিনু কুঁই কুঁই কুঁই শব্দ করে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বন্যা সারা সকাল মিসেস সালমার বাসায় কাজ করে, তাকে খালাম্মা বলে ডাকে। সে মিসেস সালমার যাবতীয় কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করে। দিবা শাখার একটি স্কুলেও সে পড়ে। পড়ালেখায় সে পিছিয়ে নেই। শুধু প্রকৃতির কোনো কিছুর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে নিঃ সে সময়ই বা তার কোথায়? তার নিজের জীবন আর কাজ নিয়েই সে ব্যস্ত। প্রকৃতিতে নয়, নিজের কাজেই সে শান্তি খুঁজে পায়। বন্যা তার কাজ দিয়ে, কথা দিয়ে মিসেস সালমাকে এমন করে নিয়েছে যে মিসেস সালমাও বন্যাকে পরিবারের অন্য সদস্যের মতোই মনে করে। ক. মিনু কার বাড়িতে থাকত? খ. ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের বন্যা ও মিনুর মধ্যে যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়, তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘বন্যার শিক্ষা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক, আর প্রকৃতি হচ্ছে মিনুর পাঠশালা।’- কথাটি বিশ্লেষণ করো। |
ক. মিনু এক দূরসম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে থাকত। খ. ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরে বিশেষ অনুধাবন শক্তিকে বোঝানো হয়েছে। ➠ প্রত্যেক মানুষেরই পাঁচটি ইন্দ্রিয় আছে। সেগুলো হলো- চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক। কিন্তু মানুষের ভেতরে এক প্রকার অদৃশ্য অনুভূতির উৎস আছে। সে উৎস হলো মানুষের মন বা হৃদয়। এখানে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে পঞ্চইন্দ্রের বাইরের একটি একটি ইন্দ্রিয়কে বোঝানো হয়েছে। গ. অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের বন্যা ও মিনুর মধ্যে যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়। ➠ ভালো-মন্দ এই দুই ধরনের মানুষই রয়েছে আমাদের সমাজে। এদের সংস্পর্শে কিছু মানুষ জীবনে আলোর পথ দেখে আর কারো জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ➠ উদ্দীপকের বন্যা মিসেস সালমার বাসায় কাজ করে। বন্যা তার কাজ দিয়ে, কথা দিয়ে মিসেস সালমাকে এমনভাবে আপন করে নিয়েছে যে মিসেস সালমাও তাকে পরিবারের একজন সদস্য মনে করে। তাই স্কুলেও পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু গল্পের বাবা-মা মরা মিনু পিসিমার বাড়িতে আশ্রয় নিলেও পিসিমার সংসারের যাবতীয় কাজ তাকেই করতে হয়। বোবা-কালা হওয়ার কারণে কাজ আর আত্মভাবনায় ডুবে থাকে সে। বুকের মাঝে জমানো কষ্ট নিয়ে প্রতীক্ষা করতে থাকে বাবার জন্য। বন্যা কাজের মেয়ে হলেও মানুষ হিসেবে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পেরেছে কিন্তু মিনু আত্মীয়ের বাসায় থেকেও সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই বলা যায়, মিনু ও বন্যার মধ্যে অবস্থানগত পার্থক্য বিদ্যমান। ঘ. উদ্দীপকের বন্যা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলেও গল্পের মিনু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি। মিনুর পাঠশালা ছিল প্রকৃতি। ➠ জন্ম, পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে মানুষের আচরণে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু মিনু ও স্বাভাবিক সুস্থ শিশু বন্যার মাঝে তাই স্বভাবগত বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। ➠ উদ্দীপকের বন্যা স্বাভাবিক সুস্থ শিশু। সে মিসেস সালমার বাসায় কাজ করলেও লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। কথা আর কাজ দিয়ে আপন করে নিয়েছে মিসেস সালমাকে। কিন্তু গল্পের মিনু বোবা-কালা। এখানেই বন্যার সাথে তার বড় স্বভাবগত বৈসাদৃশ্য। মিনু পিসিমার বাড়িতে আশ্রয় নিলেও সংসারের যাবতীয় কাজ করে। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ সে পায়নি। কাজ আর আত্ম ভাবনায় ডুবে থাকে। সে নিজের মতো করে একটা জগৎ তৈরি করে নিয়েছে। সে জগতের বাসিন্দা সে একা। বাবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে সে। হলদে পাখি দেখলে তার মনে মনে পুলক জাগে। রান্নাঘর, শুকতারা, পিঁপড়া এবং বাইরের জগতের সঙ্গে সম্বন্ধ করেছে সে। বলা চলে প্রকৃতিই যেন মিনুর বিদ্যাশিক্ষা গ্রহণের প্রধান পাঠশালা। অপরদিকে উদ্দীপকের বন্যা কাজ ও কথা দিয়ে মিসেস সালমার মন জয় করলেও প্রকৃতির সাথে তার কোনো মিতালি দেখা যায় না। মিনুর মতো তৈরি করতে পারেনি নিজের কোনো আলাদা জগৎ। ➠ উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বন্যার শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক হলেও মিনুর শেখার পাঠশালা ছিল প্রকৃতি। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : পল্লি-প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা বিধবা মায়ের ডানপিটে সন্তান ফটিক। নতুনের আকর্ষণে সে চলে আসে কলকাতার মামা-বাড়িতে। কিন্তু মামি তাকে মোটেও আপন করে নিতে পারেনি; বরং অনাবশ্যক ঝামেলা মনে করে তাকে স্নেহ থেকে বঞ্চিত করে। একদিকে প্রকৃতির টান ও মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে মামির অবহেলা, অনাদর ও তিরস্কার তার মনকে পীড়িত করে। ফলে এ পৃথিবী থেকে তাকে অসময়ে বিদায় নিতে হয়। ক. মিনুর বয়স কত? খ. শুকতারাকে মিনু সই মনে করে কেন? ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকের ফটিক ও ‘মিনু’ গল্পের মিনুর মধ্যে বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘ফটিক ও মিনুর পরিণতি ভিন্ন হলেও উভয়ের বেড়ে ওঠার পরিবেশ ছিল প্রতিকূল।’ -উক্তিটির যথার্থতা যাচাই করো। |
ক. মিনুর বয়স দশ বছর। খ. মিনু বিশ্বাস করে শুকতারা তার সই। কারণ শুকতারাও তার মতো অনেক ভোরে ওঠে। ➠ মিনু খুব ভোরে কয়লা ভাঙতে ওঠে। তখন আকাশে মিটমিট করে জ্বলতে থাকে শুকতারারা। মিনুর সাথে সর্বপ্রথম সাক্ষাৎ ঘটে শুকতারাদেরই। তাই মিনুর দৃঢ় বিশ্বাস শুকতারারাও তার মতো ভোরে ওঠে। শুকতারার জীবনও তার জীবনের মতো কঠিন নিয়মে বাঁধা। এ কারণেই ভোর রাতের শুকতারাকে মিনু সই মনে করে। গ. উদ্দীপকের ডানপিটে ফটিকের সঙ্গে গল্পের শান্ত-স্বভাবের মিনুর অবস্থানগত ও স্বভাবগত বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। ➠ এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই জন্মের পর তার নিজ নিজ পরিবেশে বড় হয়। কিন্তু ভাগ্যের অমোঘ পরিণতিতে কেউ আশ্রয় প্রায় গৃহে, কেউবা অন্যত্র। ➠ পিতৃমাতৃহীন মেয়ে মিনু দূরসম্পর্কের এক পিসিমার বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছে। বোবা ও কালা হওয়ার জন্য সে নীরবে সংসারের যাবতীয় কাজ করে যায়। প্রকৃতিকে নিয়ে সে আপন জগৎ সৃষ্টি করে নিয়েছে। জীবনকে সে তুচ্ছ ভাবেনি। অন্যদিকে উদ্দীপকের ফটিক মিনুর মতো বোবা-কালা, আশ্রিতা নয়। পল্লি-প্রকৃতিতে মায়ের কোলে বেড়ে ওঠা ডানপিটে দুরন্ত এক বালক। নতুনের আহ্বানে ফটিক চলে আসে কলকাতা। কিন্তু এখানে এসে সে মামার বাড়িতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি। বারবার গ্রামে ফিরে যেতে চেয়েছে। মামির অবহেলা আর অনাদরে ব্যথিত মন নিয়ে ফটিক পৃথিবী থেকে অসময়ে বিদায় নিয়েছে। এসব দিক থেকে উভয়েরই মধ্যে নানা বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। ঘ. উদ্দীপকের ফটিক কথা বলতে পারলেও মামির অত্যাচারে ছিল নির্বাক আর গল্পের মিনু অসহনীয় পরিবেশে প্রকৃতিগতভাবে ছিল নির্বাক। ➠ পিতৃমাতৃহীন মেয়ে মিনু পিসিমার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। পিসিমার সংসারে সে অবিরাম খেটে চলেছে। কিন্তু আত্মীয়ের বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি সে। বোবা-কালা হওয়ায় নিজ কাজ আর আত্মভাবনায় ডুবে থাকত মিনু। পিঁপড়া, রান্নাঘর আর বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে সে মিতালি পেতেছে । বুকে জমানো কষ্ট নিয়ে বাবার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করেছে। নিজের অনুভূতি, জমানো কষ্ট প্রকৃতি ছাড়া কাউকে বলতে পারেনি সে। তারপরও জীবনকে তুচ্ছ ভাবেনি সে। বাবা আসবে এই স্বপ্নই তাকে সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে। ➠ উদ্দীপকের ফটিককে আমরা দেখি সে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কলকাতায় এসেছিল কিন্তু শহুরে পরিবেশ ও মামির অবহেলা তার মনকে দারুণভাবে ব্যথিত করে। শহুরে পরিবেশে সে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। ফলে মায়ের জন্য, গ্রামের জন্য তার মন কাঁদে। এমনি করে বেদনাতুর মন নিয়ে তাকে অসময়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়। ➠ মিনু বাবার জন্য প্রতীক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত পিসিমার সংসারে থেকে যায়। কিন্তু ফটিক মামির সংসারে টিকতে না পেরে মৃত্যুর কাছে পরাজয় মেনে নেয়। তাই বলা যায়, ফটিকের পরিণতি আর মিনুর পরিণতি ভিন্ন হলেও উভয়ের বেড়ে ওঠার পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ প্রতিকূল। যদি মিনু ও ফটিক উভয়ে অনুকূল পরিবেশে বেড়ে উঠত তাহলে তাদের পরিণতি ভিন্ন হতো। কাউকে অকালে মৃত্যুর হীমশীতল স্পর্শ গ্রহণ করতে হতো না। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : জয়া প্রীতির মতো গুছিয়ে কথা বলতে এবং দ্রুত কাজ করতে পারে না। তবে ভালো করে বুঝিয়ে বললে সময় নিয়ে সব কাজই মোটামুটি করতে পারে। জয়া প্রীতিদের বাসায় আশ্রিত হলেও প্রীতির মা জয়াকে খুব ভালোবাসেন। তিনি জয়াকে অক্ষরজ্ঞান থেকে শুরু করে রান্না, সেলাই প্রভৃতি কাজ শেখানোর চেষ্টা করেন। তিনি প্রীতিকে বললেন, ‘উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এরাও বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করতে পারবে। ক. মিনুর বয়স কত? খ. মিনু তার বাবাকে নিয়ে কী ভাবত- ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকে জয়ার সাথে ‘মিনু’ গল্পের মিনুর বৈসাদৃশ্যগুলো নিরূপণ করো। ঘ. মিনু ও জয়া সম্পর্কে প্রীতির মায়ের উক্তিটি ‘মিনু’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো। |
ক মিনুর বয়স দশ বছর। খ মিনু তার বাবাকে নিয়ে ভাবত যে তার বাবা একদিন ফিরে আসবে। ➠ মিনু বোবা-কালা। মাসিমা একদিন চিৎকার করে বলেছিল-তার বাবা বিদেশ থাকে। মিনু বড় হলে ফিরে আসবে। তাই সে বাবার প্রতীক্ষায় ছিল। হঠাৎ একদিন ছাদে থাকা অবস্থায় মিনু দেখতে পায় পাশের বাসার টুনুর বাবা এসেছে বিদেশ থেকে। আর ঐ সময়ে কাঁঠাল গাছের সরু ডালে হলদে পাখি বসা। তখন থেকে মিনু মনে মনে ভাবত, আবার যেদিন এ ডালে হলদে পাখি বসবে। সেদিন বাবা ফিরে আসবে। গ উদ্দীপকের জয়ার সাথে ‘মিনু’ গল্পের মিনুর যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য রয়েছে। ➠ ভালো মন্দ মিলেই আমাদের সমাজ গড়ে উঠেছে। ভালো মানুষের আশ্রয়ে জীবনে আলো ফোটে আর মন্দের সাহচর্যে জীবনে দুর্দশা নেমে আসে। উদ্দীপকের জয়া ও গল্পের মিনুর জীবনে বিষয়টি সুস্পষ্ট। গল্পের মিনু এতিম। দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় মিলেছে। দশ বছর বয়স হলেও পিসিমার সংসারের যাবতীয় কাজ তাকেই করতে হয়। সকল কাজের বিনিময়ে জোটে শুধু তিন বেলা খাবার। আদর-ভালোবাসা, লেখাপড়া সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ➠ অন্যদিকে উদ্দীপকের জয়াও মিনুর মতো অন্যের বাসায় আশ্রিত। কিন্তু মিনুর মতো অবহেলা-অযত্নে দিন কাটে না তার। প্রীতির মা তাকে খুব ভালোবাসেন। জয়াকে অক্ষরজ্ঞান থেকে শুরু করে রান্না, সেলাই প্রভৃতি কাজ শেখানোর চেষ্টা করেন। জয়ার জন্য তিনি ভেবেছেন, ভালো পরিবেশে সে ভালো থাকবে। অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু মিনুর জন্য ভাববার কেউ ছিল না। এসব ক্ষেত্রেই জয়ার সাথে মিনুর পার্থক্য। ঘ ‘উপযুক্ত পরিবেশ পেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করতে পারবে’- মিনু ও জয়া সম্পর্কে প্রীতির মায়ের এ উক্তিটি যথার্থ। ➠ বিচিত্র মানুষের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের এ সমাজ। কেউ সুস্থ, কেউবা পুরোপুরি সুস্থ নয়। যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু রয়েছে তাদের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত করলে অবশ্যই তারা সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে পারবে। গল্পের মিনু এতিম ও বাকপ্রতিবন্ধী। পিসিমার বাড়িতে আশ্রিত। দশ বছর বয়স হলেও সংসারের যাবতীয় কাজ করে বিনিময়ে পায় শুধু তিনবেলা খাবার। সেœহ-ভালোবাসা কাকে বলে সে জানে না। তারপরও সে জীবনকে তুচ্ছ ভাবে না। মনের কথা ব্যক্ত করে প্রকৃতির কাছে। স্বপ্ন দেখে একদিন বাবা আসবে। এই স্বপ্নই তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। ➠ উদ্দীপকের জয়া অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হলেও পায় ভালোবাসা। প্রীতির মা তাকে অক্ষরজ্ঞান থেকে শুরু করে রান্না, সেলাই প্রভৃতি কাজ শেখান। কীভাবে জয়া ভালো থাকবে, অসুস্থতা কাটিয়ে উঠবে সে চিন্তাও তিনি করেন। প্রীতির মায়ের মতো যদি গল্পের মিনু এবং সমাজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এমন চিন্তা ও কাজ করা যেত তাহলে তারাও সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বাঁচতে শিখত। সকল অসুস্থতা ও বাধা কাটিয়ে ভালো থাকতে পারত। ➠ উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সমাজের সবাই যদি প্রীতির মায়ের মতো ভাবত তাহলে মিনু ও জয়ার মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা সুস্থ হয়ে উঠত। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
নিচের চিত্রকল্পটি পর্যবেক্ষণ করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ক. মিনুর পিসেমশায়ের নাম কী? খ. ‘মিনুর জগৎ চোখের জগৎ’- ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকের চিত্রকর্মটির সঙ্গে ‘মিনু’ গল্পের কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? নির্ণয় করো। ঘ. চিত্রটি ‘মিনু’ গল্পের সামগ্রিক বিষয় ধারণ করে কী? মতের পক্ষে যুক্তি দাও। |
ক মিনুর পিসেমশায়ের নাম যোগেন বসাক। খ মিনুর জগৎ চোখের জগৎ। কারণ চোখ দিয়েই মিনু জগৎটাকে দেখে, অনুভব করে এবং সে অনুযায়ী সবকিছু করে। ➠ মিনু শুধু বোবা নয়, কালাও। ফলে কথা বলতে যেমন পারে না, তেমনি অনেক চেঁচিয়ে বললে তবে শুনতে পায়। অবশ্য সব কথা শোনার দরকারও হয় না। ঠোঁটনাড়া আর মুখের ভাব দেখেই সব বুঝতে পারে সে। চোখই তার প্রধান ইন্দ্রিয়। দৃষ্টির ভেতর দিয়েই সৃষ্টিকে গ্রহণ করেছে সে। দৃষ্টি দিয়েই সৃষ্টিকে নতুনরূপে, নতুন রঙে আবিষ্কার করেছে। তাই বলা যায়, মিনুর জগৎ মূলত চোখের জগৎ। গ. উদ্দীপকের চিত্রকর্মটির মধ্যে আলোচ্য ‘মিনু’ গল্পের মিনুর কঠোর পরিশ্রম করার দিকটি ফুটে উঠেছে। ➠ কঠোর পরিশ্রম শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। অমানবিক পরিশ্রম শিশুদের দিয়ে করানো উচিত নয়। মিনু তার বাবা-মাকে হারিয়ে দশ বছর বয়স থেকে তার দূরসম্পর্কের এক পিসিমার (ফুফুর) বাড়িতে থাকত। সেই অল্প বয়সেই মিনু তার পিসিমার সংসারের সব কাজ করে দিত। সে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে কয়লা ভাঙত। কয়লা ভাঙার পর সেগুলো উনুনে দিয়ে পোড়াত। পিসিমা ঘুম থেকে ওঠার আগেই মিনু বাড়ির সব কাজ শেষ করে ফেলত। পিসিমার ঘরের সব কাজ করে দিলেও বিনিময়ে মিনু কোনো আদর ও যত্ন পেত না। ➠ উদ্দীপকের মেয়েটিও মিনুর বয়সি। সে কম বয়সে অনেক হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করছে। ছবিতে কাজের প্রতি শিশুটির মনোযোগ মিনুকেই মনে করিয়ে দেয়। মিনুও এভাবে তার পিসিমার বাসায় কাজ করত। তাই উদ্দীপকের শিশুর সঙ্গে মিনুর অক্লান্ত পরিশ্রমের বিষয়টির সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। ঘ. চিত্রে ‘মিনু’ গল্পের কেবল একটি বিষয় (কাজ করার বিষয়) প্রকাশিত হওয়ায় চিত্রটি ‘মিনু’ গল্পের সামগ্রিক বিষয় ধারণ করে না। ➠ ‘মিনু’ গল্পে মিনু বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। তাই বলে, পিতৃ-মাতৃহীন মিনু নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে না। দূরসম্পর্কীয় এক আত্মীয়ের বাসায় তাকে থাকতে হয়। এখানে গৃহকর্মে তার অখণ্ড মনোযোগ। সে খুব পরিশ্রমীও বটে। এছাড়া প্রকৃতির সঙ্গে তার রয়েছে গভীর মিতালি। ➠ প্রকৃতির সবকিছুকে সে নিজস্ব ভাষায় নামকরণ করেছে। তার বাবার আগমনে প্রতীক্ষা করে। বাবা না আসায় তার কষ্ট হয়। এতকিছুর পরও সে স্বপ্ন দেখে। মিনু চরিত্রটির এসব বিষয় নিয়ে ‘মিনু’ গল্পটি রচিত। ➠ উদ্দীপকের চিত্রটিতে একটি শিশুকে পরিশ্রমের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। এতে মিনু গল্পের শুধু মিনুর কাজে মনোযোগ ও পরিশ্রমের বিষয়টিই প্রকাশ পায়। উপরে বর্ণিত ‘মিনু’ গল্পের অন্যান্য বিষয় এতে অনুপস্থিত। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : তপুর ছোট ভাই অপুর একটি পা ভাঙা। এতে সে ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। তাই তপু তাকে সাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যায়। তপু যখন গাছে চড়ে, পুকুরে মাছ ধরে কিংবা পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলে তখন অপু মনে মনে কষ্ট পায়। তপু মাঝে মাঝে যে খেলাগুলোতে দৌড়াতে হয় না, সেগুলো অপুর সঙ্গে খেলে। ক. মিনু হাতুড়িটার কী নাম রেখেছিল? খ. ‘দৃষ্টির ভিতর দিয়ে সৃষ্টিকে গ্রহণ করেছে সে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. উদ্দীপকের অপু ও মিনুর মধ্যে যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায় তা নির্ণয় করো। ঘ. “অপুর মনঃকষ্ট ও মিনুর মনঃকষ্ট ভিন্ন”-উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। |
ক. মিনু হাতুড়িটার নাম রেখেছিল গদাই। খ. দৃষ্টির ভিতর দিয়ে সৃষ্টিকে গ্রহণ করেছে বলতে বোবা মিনুর দেখার জগৎকে বোঝানো হয়েছে। ➠ বাকা ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী মিনু চারপাশের সবকিছু দেখে ও প্রকাশ করে দৃষ্টি দিয়ে। বলতে বা শুনতে না পারলেও সে আশপাশের সবকিছু দেখে তাকে অন্যরকমভাবে মনের মধ্যে সাজায়। তাই দৃষ্টিই তার সব বলেই উক্ত উক্তিটি করা হয়েছে। গ. নিজস্ব জগতে বিচরণ করে বোবা-কালা মেয়ে মিনু আর অপু তার জগতে বন্দি- এখানেই দুজনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য। ➠ বিচিত্র মানুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা আমাদের এ সমাজে কেউ সুস্থ, কেউবা পূর্ণ সুস্থ নয়। উদ্দীপকের অপু ও গল্পের মিনু দুজনেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হলেও তাদের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে। ➠ উদ্দীপকের অপুর জগৎ তার চোখের সামনে বিচরণ করে। সে ইচ্ছা করলেই তার জগতে বিচরণ করতে পারে না। অন্যের সহায়তা লাগে। সে ইচ্ছা করলেই যেখানে সেখানে যেতে পারে না। তপুর সহায়তায় সে স্কুলে যায়, খেলাধুলা করে। অপরদিকে, মিনু বোবা-কালা হলেও সংসারের যাবতীয় কাজ করে, ঠোঁট নাড়া আর মুখের ভাব দেখেই সব বুঝতে পারে সে। দৃষ্টির ভেতর দিয়েই সৃষ্টিকে গ্রহণ করেছে সে। নিজের মনের কথা অন্যকে বোঝাতে পারে না মিনু। নিজের সাথে নিজের নিয়ন্তর বোঝাপড়া চলে। কিন্তু জীবনকে তুচ্ছ মনে করে না। তাই বলা যায়, অবস্থানগত দিক থেকে দুজনেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হলেও তাদের অবস্থানে বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। মিনু সবখানেই বিচরণ করে মনের সুখে, অপু তা পারে না। ঘ. ‘অপুর মনঃকষ্ট ও মিনুর মনঃকষ্ট ভিন্ন’ উক্তিটি যথার্থ। ➠ বিচিত্র মানুষের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের এ সমাজ। কেউ সুস্থ, কেউবা পুরো সুস্থ নয়। উদ্দীপকের অপু ও গল্পের মিনু দুজনই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হলেও তাদের মনের কষ্ট ভিন্ন ভিন্ন। ➠ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু মিনু পিসিমার বাড়িতে থাকে। জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছে সে। পিতৃমাতৃহীন মিনু পিসিমার সংসারে যাবতীয় কাজ করলেও কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় না। বাইরের প্রকৃতির সাথে তার সম্বন্ধ। আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে শত কষ্টের মাঝেও সে জীবনকে তুচ্ছ মনে করে না। বাবার জন্য প্রতীক্ষা করে তাই অবসর সময়ে প্রতিদিন ছাদে যায় হলদে পাখির আগমনের আশায়। কিন্তু হলদে পাখি এসে ডালে বসলেও তার বাবা আর আসে না। আর এখানেই মিনুর মনঃকষ্ট। ➠ উদ্দীপকে অপুর মনঃকষ্ট অন্য ক্ষেত্রে। মিনুর মতো সে মনের সুখে বিচরণ করতে পারে না। এক পা ভাঙা হওয়ায় সে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে পারে না। অন্যরা যখন পুকুরে মাছ ধরে, গাছে চড়ে কিংবা ফুটবল খেলে তখন অপুর খুব কষ্ট হয়। তার মনের মধ্যে কষ্ট বাসা বাঁধে। ➠ অপুর কষ্ট শারীরিক অক্ষমতায় আর মিনুর কষ্ট বাবার আগমনের স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায়। তাই বলা যায় অপুর মনঃকষ্ট ও মিনুর মনঃকষ্ট ভিন্ন। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : সেঁজুতি খুব নিঃসঙ্গ। নিঃসঙ্গতার কারণ বাবা-মা দুজনই চাকরিজীবী। তাই বন্ধুহীন সেঁজুতি জানালার পাশে জারুল গাছ, গাছে উড়ে আসা পাখির সাথে নিজের মনে গহীনে লুকিয়ে থাকা কথাগুলো ব্যক্ত করে ওদের সাথে। মাঝে মাঝে আনমনে আকাশে তাকিয়ে থাকতে থাকত সে, স্বপ্ন দেখে পাখি হয়ে আকাশ পথে বিশ্ব ভ্রমণ করার। ক. মিনুর হাত থেকে একদিন কোন জিনিসটি পড়ে গিয়েছিল? খ. দুপুরে মিনু ঘুরে বেড়ায় কেন? গ. উদ্দীপকে সেঁজুতি ‘মিনু’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি- ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মিনু ও সেঁজুতি দুজনেরই আশ্রয় প্রকৃতি’ উক্তিটি উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে মূল্যায়ন করো। |
ক. মিনুর হাত থেকে একদিন ঘটিটা পড়ে গিয়েছিল। খ. বোলতা বা ভিমরুলকে মারার জন্য দুপুরে মিনু ঘুরে বেড়ায়। ➠ একবার বোলতা বা ভিমর“ল তাকে কামড়েছিল। তাই প্রতিশোধ নিতে মিনু দুপুরে যখন পিসিমা ঘুমোয় তখন কোমরে কাপড় জড়িয়ে গামছায় প্রকাণ্ড গেরো বেঁধে বাড়ি থেকে বের হয়। বোলতা বা ভিমরুল দেখতে পেলেই শোঁ করে গামছা ঘুরিয়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে বোলতা বা ভিমরুল পড়ে যায় মাটিতে। তারপর মরা বোলতা বা ভিমরুল মিনু খেতে দেয় পিঁপড়াদের। মূলত মিনু তার শত্রু বোলতা ও ভিমরুলের প্রতি প্রতিশোধ নিতেই দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঘুরে বেড়ায়। গ উদ্দীপকের সেঁজুতি ‘মিনু’ গল্পের মিনু চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। ➠ প্রত্যেক মানুষই চায় আপনজন বিশেষ করে বাবা-মার সান্নিধ্য, বাবা-মার ভালোবাসা বঞ্চিত শিশু বড়ই অভাগা। অবস্থানগত ভিন্নতা থাকলেও নিঃসঙ্গতার কারণে সেঁজুতি ও মিনু একই সূত্রে গাঁথা। ➠ উদ্দীপকের সেঁজুতি প্রতিবন্ধী নয়, তার মা-বাবাও আছে। কিন্তু মা-বাবা চাকরিজীবী হওয়ায় সে নিঃসঙ্গ। নিজের মনের কথাগুলো সে ব্যক্ত করে জারুল গাছ, গাছে উড়ে আসা পাখির কাছে। মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে পাখি হয়ে আকাশ ভ্রমণ করার। অন্যদিকে মিনু এতিম ও প্রতিবন্ধী। আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় পেলেও সংসারের যাবতীয় কাজ করে। নিজের কথা কাউকে বোঝাতে পারে না বলে তার নিঃসঙ্গতা দূর করতে প্রকৃতির সঙ্গে করেছে মিতালি। তাই বলা যায়, অবস্থানের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও নিঃসঙ্গতা ও প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব করার দিক দিয়ে সেঁজুতি মিনুর প্রতিচ্ছবি। ঘ ‘প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মিনু ও সেঁজুতি দুজনেরই আশ্রয় প্রকৃতি’- মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ মা-বাবা সন্তানের প্রধান আশ্রয়স্থল। মা-বাবার ভালোবাসা ছাড়া সন্তানের জীবনে নেমে আসে হতাশা। ➠ উদ্দীপকে সেঁজুতি ও ‘মিনু’ গল্পের মিনু তাদের নিঃসঙ্গতা দূর করতে প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি করেছে। সেঁজুতির মা-বাবা দুজনেই চাকরিজীবী হওয়ায় সেঁজুতি নিঃসঙ্গতায় ভোগে। বন্ধুহীন সেঁজুতি মনের কথা ব্যক্ত করে জারুল গাছ, গাছে উড়ে আসা পাখির সাথে। স্বপ্ন দেখে পাখি হয়ে আকাশে ওড়ার। আর মিনু মা-বাবা না থাকায় নিঃসঙ্গ। আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় পেলে কেউ তাকে আপন করে নেয়নি। বোবা-কালা বলে নিজের মনের কথা কাউকে বলতে পারে না। তাই ভোরবেলার সূর্য, শুকতারা, হলদে পাখি, পিঁপড়া, রান্নাঘর এদের কাছেই নিজেকে ব্যক্ত করেছে। ➠ মিনু ও সেঁজুতি দুজনেই প্রকৃতিকে তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলে প্রকৃতির উপাদানগুলোই যেন তাদের আশ্রয়ের প্রতীক। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘পোস্টমাস্টার’ গল্পে পোস্টমাস্টারের কাজের মেয়ে ‘রতন’। এই দুনিয়াতে পোস্টমাস্টার ছাড়া রতনের আর কেউ নেই। পোস্টমাস্টারও রতনকে কাজের মেয়ে মনে করে না। সে রতনের সাথে গল্প করে। তার কাজে সাহায্য করে। এমনকি পোস্টমাস্টার রতনকে পড়াশোনাও শেখায়। ক. বনফুলের প্রকৃত নাম কী? খ. গৃহপরিচারিকার কাজে মিনুর ভূমিকা কেমন ছিল- ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকের রতন ও ‘মিনু’ গল্পের মিনুর অবস্থানগত পার্থক্য ব্যাখ্যা করো। ঘ. “পোস্টমাস্টার ও ‘মিনু’ গল্পের পিসেমশাই দুজন বিপরীত প্রান্তের মানুষ” মন্তব্যটি যাচাই করো। |
ক বনফুলের প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। খ গৃহপরিচারিকার কাজে মিনু অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ➠ দশ বছরের বোবা-কালা মেয়ে মিনু পেটভাতায় সর্বগুণান্বিতা চাকরানির মতো খাটে পিসিমার বাড়িতে। সে ভোর চারটার সময় উঠে কয়লা ভাঙতে শুর“ করে। তারপর উনুন জ্বালিয়ে দেয়। রান্নাঘরের বাসনগুলো অনেক ভালোবাসে মিনু। তুবড়ে যাওয়া ঘটিটার জন্য তার মায়া হয়। গেলাসগুলো মাজা বা ধোয়ার সময় তার মনে হয় সে যেন ছোট ছেলেদের স্নান করাচ্ছে। গৃহের কাজে মিনুর একাগ্রতা দেখে মনে হয় সত্যিই এক দায়িত্বশীল গৃহপরিচারিকা সে। গ সুবিধাবঞ্চিত মিনুর সাথে রতনের অবস্থানগত ভিন্নতা তুলে ধরতে হবে। ঘ ‘পোস্টমাস্টার’ গল্পের পোস্টমাস্টার ও ‘মিনু’ গল্পের যোগেন বসাক উভয়ের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে হবে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ৫ বছর বয়সে নিতু মা-বাবা দুজনকেই হারায়। এরপর চাচা নিতুকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। নিতু পোলিও রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চলাচল ঠিকমতো করতে পারত না। বাসার সবাই তাকে ভালোবাসত। সে খুঁড়িয়ে বাগানে গিয়ে ফুল পাখি ও গাছের সাথে মনের কথা বলত। ক. সাহিত্যে কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে বনফুল কী উপাধিতে ভূষিত হন? খ. উনুনকে মিনু কেন রাক্ষসী মনে করে? গ. উদ্দীপকের নিতু ও ‘মিনু’ গল্পের মিনুর কী মিল খুঁজে পাওয়া যায়- ব্যাখ্যা করো। ঘ. নিতু ও মিনুর মধ্যে কে বেশি পরিশ্রমী? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দাও। |
ক সাহিত্য কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে বনফুল পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন। খ উনুনে যা দেওয়া হয় সেটাকেই উনুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এজন্য উনুনকে মিনু রাক্ষসী মনে করে। ➠ উনুনে ঘুঁটের ওপর কেরোসিন তেল ছড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলে অতি সহজেই ঘুঁটেগুলো জ্বলে ওঠে। এ সময় জ্বলন্ত কয়লাগুলোকে দেখে মিনুর মনে হয় রক্তাক্ত মাংস আর আগুনের লাল আভাকে মনে হয় রাক্ষসীর তৃপ্তি। সবকিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়ার কারণে উনুনকে মিনর কাছে রাক্ষসী মনে হয়। গ মিনু ও নিতু উভয়েই প্রকৃতির কাছে নিজের আবেগ-অনুভূতি ভাগাভাগি করেছেন।-এ বিষয়টি আলোচনা করতে হবে। ঘ নিতু ও সম্পর্কিত আলোচনার মধ্য দিয়ে মিনু যে অধিক পরিশ্রমী সে বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে হবে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : সুভা বাক্প্রতিবন্ধী। সুভার গুটি কয়েক বন্ধু ছিল। গোয়ালের দুটো গাইকে সুভা কখন আদর করছে, কখন ভর্ৎসনা করছে আর কখন মিনতি করছে তা আর কেউ না বুঝলেও গাই দুটো বুঝত। তার আরেকটি বন্ধু ছিল- বিড়ালছানা। সে প্রায়ই সুযোগ পেলেই সুভার স্নেহমাখা কোলখানা দখল করে সুখনিদ্রার আয়োজন করত। [রবীন্দ্রনাথের ‘সুভা’ গল্প অবলম্বনে] ক. ‘সই’ শব্দের অর্থ কী ? খ. মিনু তার বাবার ফিরে আসার স্বপ্ন দেখত কেন? গ. গল্পের মিনুর সাথে সুভা চরিত্রের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘মিনুর সাথে সুভার মিল আছে; তবে অমিলও কম নয়।’ বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : সকিনার বয়স পনেরো বছর। সে একটি বাসায় কাজ করে। কিন্তু কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারে না। মাঝে মাঝে বাসনকোসন ধুতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। এজন্য গৃহকর্তী সিদ্ধান্ত নেয় তাকে আর কাজে রাখবে না। ক. ‘অদৃশ্যলোক’ কোন ধরনের রচনা? খ. মিনু বোলতা ভিমরুল অপছন্দ করে কেন? গ. উদ্দীপকের সকিনার সাথে মিনু গল্পের মিনুর মিল কোথায়? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “মিনু প্রতিবন্ধী হলেও সকিনা থেকে এগিয়ে”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : মা-বাবার আদরের মেয়ে সুভা বাক্ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তাই তার খেলার সাথি ছিল না। তবে পোষা গাভী ও বিড়াল শাবক ছিল তার বন্ধু। কাজকর্মে অবসর পেলে সে নদী তীরে গিয়ে বসে থাকে। নির্বাক প্রকৃতির মধ্যে সে পায় মুক্তির আনন্দ। ক. বনফুলের প্রকৃত নাম কী? খ. ‘মহৎ হয়ে সুবিধাই হয়েছে যোগেন বসাকের’- কীভাবে? গ. উদ্দীপকের সুভা ও ‘মিনু’ গল্পের মিনু যেন একই বৃন্তের দুটি ফুল- ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের সুভাকে ‘মিনু’ গল্পের মিনুর সার্থক প্রতিনিধি বলা যায় কি? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : তুলসী তন্ময়ের মাকে গৃহকাজে সাহায্য করে। মেয়েটি বোবা। তন্ময়ের মা লক্ষ করেছেন, তন্ময় যখন ছবি আঁকে তুলসী মনোযোগ দিয়ে দেখে আর পরে পুরোনো খবরের কাগজে সেই ছবিগুলো খুব সুন্দর করে আঁকে। তিনি তুলসীকে ছবি আঁকা শেখাবেন বলে ঠিক করলেন। কারণ তিনি জানেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে প্রতিবন্ধীরাও অনেক বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। ক. মিনুর বয়স কত? খ. ‘মিনুর জগৎ চোখের জগৎ’- কথাটি ব্যাখ্যা করো। গ. তুলসীর সাথে ‘মিনু’ গল্পের মিনুর জীবনের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ করো। ঘ. তুলসী সম্পর্কে তন্ময়ের মায়ের উপলব্ধিটি ‘মিনু’ গল্পের আলোকে মূল্যায়ন করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : গ্রামের দুষ্ট ছেলে মনজু। সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ানোই তার কাজ। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারাদিন বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। এসব করতে মনজুর ভালোই লাগে। গাছে উঠতে ভালো লাগে। তাছাড়া নদীতে মাছ ধরা তার নিত্যদিনের কর্ম। তাই মনজুর মা তাকে ঢাকায় চাচার বাড়িতে পাঠালেন লেখাপড়া শেখাবেন বলে। কিন্তু চাচির অবহেলা, নিঃসঙ্গতা, প্রকৃতির কাছে যেতে না পারার বেদনায় মনজুর দু’চোখ ভরে জল আসে। সে লেখাপড়া করতে পারে না। ক. মিনু হাতুড়িটার কী নাম রেখেছে? খ. মিনুর দৃষ্টিতে গদাই আর শানুর পরিচয় দাও। গ. মিনু ও মনজুর মধ্যে কী ধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিলে শিশুরা মনঃকষ্টে ভোগে’- উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘মিনু’ গল্পের আলোকে বিচার করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : পিতৃ-মাতৃহীন জামিলা দাদির কাছে মানুষ হয়েছে। দুই বছর আগে দাদির মৃত্যু হলে রশিদ মাস্টারের কাছে সে আশ্রয় নেয়। সেখানে সে ঘর মোছে, কাপড় কাঁচে, বাসন মাজে। দুবেলা ভাত পেয়ে সে তাতেই খুশি। ক. মিনু মাঝে মাঝে কিসের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে? খ. মিনুকে কেন সব রকমের কাজ করতে হতো? গ. উদ্দীপকের জমিলা ও গল্পের মিনুর মধ্যে সাদৃশ্য নির্ণয় করো। ঘ. “উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি মিনু চরিত্রের আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে”- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ষোলো বছরের কিশোরী নাজিন মোস্তফা। একটি হুইল চেয়ারে চড়ে সে রওনা দিয়েছে সিরিয়া থেকে, গন্তব্য জার্মানি। সেখানে রয়েছে তার ভাই। দারুণ স্বপ্নবাজ এই কিশোরী। সে মহাকাশচারী হতে চায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড দেখতে চায়। এলিয়েন খুঁজে বের করতে চায়। আর চায় রাণির সাথে দেখা করতে। (তথ্য সূত্র: BBC বাংলা- ২০/০৯/২০১৫) ক. মিনুর পিসেমশায়ের নাম কী? খ. ফাঁক পেলেই মিনু ছাদে উঠে কেন? গ. উদ্দীপকের নাজিন মো¯ড়ফার সাথে ‘মিনু’ গল্পের মিনুর সাদৃশ্য তুলে ধরো। ঘ. ‘জীবন পরিণতিতে মিনু ও নাজিন মোস্তফা ভিন্ন’- মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৬ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : কুন্তি কথা বলতে পারে না। কুন্তির বাবা-মা প্রতিবন্ধীদের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। স্কুলের সকল কর্মকান্ড কুন্তি অংশগ্রহণ করে। স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ কুন্তিকে পছন্দ করে। কুন্তি লেখাপড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকতে পারে। বড়ো হয়ে কুন্তি চিত্রশিল্পী হতে চায়। কিন্তু তার মনে একটা কষ্ট- সবাই কথা বলে অথচ সে কথা বলতে পারেনা। ক. ‘বনফুল’ কার ছদ্মনাম? খ. মিনু কয়লা ভাঙতে ভাঙতে হিসহিস শব্দ করে কেন? গ. উদ্দীপকের কুন্তি ও মিনু চরিত্রের মিল কোথায়- ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের কুন্তি ও মিনু চরিত্রের দুঃখের ধরন কি এক- যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৭ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মিন্টু নামের ছেলেটির ডান হাত অবশ হয়ে গিয়েছে। তার বয়স মাত্র ছয় বছর। বাবা বুড়ো, অকর্মণ্য। অভাবের মধ্যেই সংসারে তার মা তাকে খুব কষ্ট করে লালন-পালন করছে। মা-বাবার কষ্ট দেখে মিন্টু বাধ্য হয়ে একটি কারখানায় কাজ করে। মাইনে যা পায় তা দিয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে। পাশাপাশি মিন্টু লেখাপড়াও চালিয়ে যায় অদম্য আগ্রহে। বাম হাত দিয়ে পরীক্ষা দিয়েই মিন্টু একসময় এসএসসি পরীক্ষা পাস করে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নেয়। ক. ‘রোমাঞ্চিত’ শব্দের অর্থ কী? খ. ‘মিনুর জগৎ চোখের জগৎ’- কীভাবে? গ. উদ্দীপকটি কোন দিক থেকে ‘মিনু’ গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘মিন্টু ও মিনু তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে নিয়েছে’- উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘মিনু’ গল্প অবলম্বনে বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৮ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : মারাত্মক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিতুর মা-বাবা উভয়েই মারা যান। এরপর দাদুর কাছেই বড় হতে থাকে নিতু। প্রতিদিন আকাশের তারাদের সঙ্গে কথা বলে সে। জানতে চায় কবে আসবে তার মা-বাবা। দাদু তাকে আকাশের সাতটি তারা দেখিয়ে বলেন, যেদিন ওই সাতটি তারা মাটিতে নেমে আসবে সেদিন তার মা-বাবাও ফিরে আসবে। ক. ‘সই’ শব্দের অর্থ কী? খ. মিনু কেন ভাবত তার বাবা ফিরে আসবে? গ. উদ্দীপকের নিতু ও ‘মিনু’ গল্পের মিনুর মধ্যে সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘নিতু নয়, মিনুই জীবনে বেশি কষ্ট পেয়েছে’- উদ্দীপক ও ‘মিনু’ গল্পের আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। |
----------- |
তথ্যসূত্র: |
---|
১. চারুপাঠ: ষষ্ঠ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ,
২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |