উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন : কাজী নজরুল ইসলাম

উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন
উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন

উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন
কাজী নজরুল ইসলাম

হে মোর দুর্ভাগা দেশ। যাদের করেছ অপমান
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।’ - রবীন্দ্রনাথ

আজ আমাদের এই নতুন করিয়া মহাজাগরণের দিনে আমাদের সেই শক্তিকে ভুলিলে চলিবে না- যাহাদের উপর আমাদের দশ আনা শক্তি নির্ভর করিতেছে, অথচ আমরা তাহাদিগকে উপেক্ষা করিয়া আসিতেছি। সে হইতেছে, আমাদের দেশের তথাকথিত ‘ছোটোলোক’ সম্প্রদায়। আমাদের আভিজাত্য-গর্বিত সম্প্রদায়ই এই হতভাগাদের এইরূপ নামকরণ করিয়াছেন। কিন্তু কোনো যন্ত্র দিয়া এই দুই শ্রেণির লোকের অন্তর যদি দেখিতে পারো, তাহা হইলে দেখিবে, ঐ তথাকথিত 'ছোটোলোক'-এর অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ, এই ‘ছোটোলোক’ এমন স্বাচ্ছ অন্তর, এমন সরল মুক্ত উদার প্রাণ লইয়াও যে কোনো কার্য করিতে পারিতেছে না, তাহার কারণ এই ভদ্র সম্প্রদায়ের অত্যাচার। সে বেচারা জন্ম হইতে এই ঘৃণা, উপেক্ষা পাইয়া নিজেকে এত ছোটো মনে করে, সঙ্কোচ জড়তা তাহার স্বভাবের সঙ্গে এমন ওতপ্রোতভাবে জড়াইয়া যায় যে, সেও-যে আমাদেরই মতো মানুষ সেও যে সেই এক আল্লাহ্-এর সৃষ্টি, তাহারও যে মানুষ হইবার সমান অধিকার আছে, তাহা সে একেবারে ভুলিয়া যায়। যদি কেউ এই উৎপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাচরণ করে, অমনি আমাদের ভদ্র সম্প্রদায় তাহার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করিয়া তাহাকে অজ্ঞান করিয়া ফেলে। এই হতভাগাদিগকে- আমাদের এই সত্যিকার মানুষদিগকে আমরা এই রকম অবহেলা করিয়া চলিয়াছি বলিয়াই আজ আমাদের এত অধঃপতন। তাই আমাদের দেশে জনশক্তি বা গণতন্ত্র গঠিত হইতে পারিতেছে না। হইবে কীরূপে? দেশের অধিবাসী লইয়াই তো দেশ এবং ব্যক্তির সমষ্টিই তো জাতি। আর সে-দেশকে, সে-জাতিকে যদি দেশের, জাতির সকলে বুঝিতে না পারে, তবে তাহার উন্নতির আশা করা আর আকাশে অট্টালিকা নির্মাণের চেষ্টা করা একই কথা। তোমরা ভদ্রসম্প্রদায়, মানি, দেশের দুর্দশা জাতির দুর্গতি বুঝো, লোককে বুঝাইতে পারো এবং ঐ দুর্ভাগ্যের কথা কহিয়া কাঁদাইতে পার, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে নামিয়া কার্য করিবার শক্তি তোমাদের আছে কি? না, নাই। এ-কথা যে নিরেট সত্য, তাহা তোমরাই বুঝো। কাজেই তোমাদের এই দেশকে, জাতিকে উন্নত করিবার আশা ঐ কথাতেই শেষ হইয়া যায়। কিন্তু যদি একবার আমাদের এই জনশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করিতে পারো, তাহাদিগকে মানুষ বলিয়া ভাই বলিয়া কোল দিবার তোমার উদারতা থাকে, তাহাদিগের শক্তির উন্মেষ করিতে পারো, তাহা হইলে দেখিবে তুমি শত বৎসর ধরিয়া প্রাণপণে চেষ্টা সত্ত্বেও যে-কাজ করিতে পারিতেছ না, একদিনে সেই কাজ সম্পন্ন হইবে। একথা হয়তো তোমার বিশ্বাস হইবে না, একবার মহাত্মা গান্ধীর কথা ভাবিয়া দেখো দেখি! তিনি ভারতে কি অসাধ্য সাধন করিতে পারিয়াছেন!

তিনি যদি এমনি করিয়া প্রাণ খুলিয়া ইহাদের সহিত না মিশিতেন, ইহাদের সুখ-দুঃখের এমন করিয়া ভাগী না হইতেন, ইহাদিগকে যদি নিজের বুকের রক্ত দিয়া, তাহারা খাইতে পাইল না বলিয়া নিজেও তাহাদের সঙ্গে উপবাস করিয়া ইহাদিগকে নিতান্ত আপনার করিয়া না তুলিতেন, তাহা হইলে আজ তাঁহাকে কে মানিত? কে তাঁহার কথায় কর্ণপাত করিত? কে তাঁহার একটি ইঙ্গিতে এমন করিয়া বুক বাড়াইয়া মরিতে পারিত? তাঁহার আভিজাত্য-গৌরব নাই, পদ-গৌরবের অহঙ্কার নাই, অনায়াসে প্রাণের মুক্ত উদারতা লইয়া তোমাদের ঘৃণ্য এই ‘ছোটলোক’কে বক্ষে ধরিয়া ভাই বলিয়া ডাকিয়াছেন,-সে-আহ্বানে জাতিভেদ নাই, ধর্মভেদ নাই, সমাজ-ভেদ নাই, সে যে ডাকার মতো ডাকা, তাই নিখিল ভারতবাসী, এই উপেক্ষিত হতভাগারা তাঁহার দিকে এত হা হা করিয়া ব্যগ্র বাহু মেলিয়া ছুটিয়াছে। হায়, তাহাদের যে আর কেহ কখনো এমন করিয়া এত বুকভরা স্নেহ দিয়া আহ্বান করেন নাই! এ মহা-আহ্বানে কি তাহারা সাড়া না দিয়া পারে? যদি পারো, এমনি করিয়া ডাকো, এমনি করিয়া এই উপেক্ষিত শক্তির বোধন করো দেখিবে ইহারাই দেশে যুগান্তর আনিবে, অসাধ্য সাধন করিবে। ইহাদিগকে উপেক্ষা করিবার, মানুষকে মানুষ হইয়া ঘৃণা করিবার, তোমার কি অধিকার আছে? ইহা তো আত্মার ধর্ম নয়। তাহার আত্মা তোমার আত্মার মতোই ভাস্বর, আর একই মহা-আত্মার অংশ। তোমার জন্মগত অধিকারটাই কি এত বড়? তুমি যদি এই চণ্ডাল বংশে জন্মগ্রহণ করিতে, তাহা হইলে তোমার মতো ভদ্রলোকদের দেওয়া এই সব হতাদর উপেক্ষার আঘাত, বেদনার নির্মমতা একবার কল্পনা করিয়া দেখো দেখি, ভাবিতে তোমার আত্মা কি শিহরিয়া উঠিবে না?

আমাদের এই পতিত, চণ্ডাল, ছোটোলোক ভাইদের বুকে করিয়া তাহাদিগকে আপন করিয়া লইতে, তাহাদেরই মতো দীন বসন পরিয়া, তাহাদের প্রাণে তোমারও প্রাণ সংযোগ করিয়া উচ্চশিরে তার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াও, দেখিবে বিশ্ব তোমাকে নমস্কার করিবে। এস, আমাদের উপেক্ষিত ভাইদের হাত ধরিয়া আজ বোধন-বাঁশিতে সুর দিই-

‘কীসের দুঃখ, কিসের দৈন্য,
কীসের লজ্জা, কীসের ক্লেশ!’

উৎস নির্দেশ :
‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ শীর্ষক প্রবন্ধটি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত নজরুল রচনাবলি (জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, প্রথম খণ্ড) থেকে সংকলন করা হয়েছে। অবিভক্ত ভারতবর্ষের পটভূমিতে লেখা প্রবন্ধটি সম্পাদনা করে পাঠ্যভুক্ত করা হয়েছে। এটি কাজী নজরুল ইসলামের যুগবাণী নামক প্রবন্ধ-গ্রন্থের একটি রচনা।

শব্দার্থ ও টীকা :
চণ্ডাল- চাড়াল, হিন্দু বর্ণব্যবস্থায় নিম্নবর্গের লোক।
পতিত- পড়ে গেছে এমন।
বোধন- জ্ঞান; অবগতি; জাগরণ; চৈতন্য।
বোধন-বাঁশি- বোধ জাগিয়ে তোলার বাঁশি।
দৈন্য- দারিদ্র্য, দীনতা।

পাঠ-পরিচিতি:
‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। একটি দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ছোটো-বড়ো, উঁচু-নিচু, ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ দূর করা আবশ্যক। বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান জাতি ও রাষ্ট্র গঠন করতে প্রতিটি দেশের মনীষীগণ আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁদের নির্দেশিত পথে যদি আমরা পরিভ্রমণ করতে পারি, তবে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে। প্রবন্ধটিতে জাতি, ধর্ম, সমাজভেদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। এ প্রবন্ধ শ্রেণি, ধর্ম, জাতি ও সমাজভেদমুক্ত বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয়।

লেখক পরিচিতি :
কাজী নজরুল ইসলাম ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ সালে (২৪শে মে ১৮৯৯) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় তিনি লেটো গানের দলে যোগ দেন। পরে বর্ধমান ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯১৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি যান। সেখানেই তাঁর সাহিত্য-জীবনের সূচনা ঘটে। তাঁর লেখায় তিনি সামাজিক অবিচার ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এজন্য তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ বলা হয়। বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁর আবির্ভাব এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখায় তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি গজল, খেয়াল ও রাগপ্রধান গান রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। আরবি-ফারসি শব্দের সার্থক ব্যবহার তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে কবি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অসুস্থ কবিকে ঢাকায় আনা হয় এবং পরে তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। তাঁকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। তাঁর রচিত কাব্যগুলোর মধ্যে অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, ছায়ানট, প্রলয়শিখা, চক্রবাক, সিন্ধুহিন্দোল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি তাঁর রচিত গল্প ও উপন্যাস। যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী ও রাজবন্দীর জবানবন্দী তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ।
২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ সালে কবি ঢাকার পি.জি. হাসপাতালে (বর্তমান নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদ-সংলগ্ন প্রাঙ্গণে তাঁকে পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।।

কর্ম-অনুশীলন:
১। মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কী কী করা উচিত, তা লেখো।
২। বাংলাদেশে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তোমার প্রস্তাবনাগুলো লেখো।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১। আজ আমাদের মহাজাগরণের দিনে কত আনা শক্তি উপেক্ষিত ব্যক্তিদের ওপর নির্ভর করছে?
ক. ছয় আনা
খ. আট আনা
গ. দশ আনা
ঘ. বারো আনা
২। আজ আমাদের এত অধঃপতনের কারণ কী?
ক. মেহনতি মানুষদের প্রতি অবহেলা
খ. গণজাগরণের অভাব
গ. স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ
ঘ. ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩-সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:
‘ভৃত্য চড়িল উটের পৃষ্ঠে উমর ধরিল রশি,
মানুষে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধুলায় নামিল শশী।’
৩। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিকের কোন মানসিকতার পরিচয় উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. অসাম্প্রদায়িকতার
খ. সত্যবাদিতার
গ. ভ্রাতৃত্ববোধের
ঘ. সাম্যবাদিতার

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
২. কাজী নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে কী হারান?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাক্শক্তি হারান।
৩. কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে কোন মর্যাদায় ভূষিত করা হয়?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়।
৪. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
৫. লেখকের মতে জাতি কিসের সমষ্টি?
উত্তর : লেখকের মতে জাতি হলো ব্যক্তির সমষ্টি।
৬. ছোটলোক সম্প্রদায়ের এরূপ নামকরণ করেছে কে?
উত্তর : ছোটলোক সম্প্রদায়ের এরূপ নামকরণ করেছে আমাদের আভিজাত্য গর্বিত সম্প্রদায়।
৭. লেখকের মতে কাদের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ?
উত্তর : লেখকের মতে ছোটলোক সম্প্রদায়ের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ।
৮. মসীময় শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : মসীময় শব্দের অর্থ অন্ধকারাচ্ছন্ন।
৯. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের রচনা?
উত্তর : ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধটি ‘যুগবাণী’ নামক প্রবন্ধ গ্রন্থের রচনা।
১০. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে লেখকের কোন মানসিকতা ফুটে উঠেছে?
উত্তর : ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে লেখকের সাম্যবাদী মানসিকতা ফুটে উঠেছে।
১১. কাদের নির্দেশিত পথে পরিশ্রম করতে পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে?
উত্তর : মনীষীগণের নির্দেশিত পথে পরিভ্রমণ করতে পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে।
১২. দেশের দুর্দশা ও জাতির দুর্গতির কথা বুঝতে পারে কারা?
উত্তর : দেশের দুর্দশা ও জাতির দুর্গতির কথা বুঝতে পারে ভদ্র সম্প্রদায়।
১৩. উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন করলে তারা দেশে কী আনবে?
উত্তর : উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন করলে তারা দেশে যুগান্তর আনবে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. দেশে যুগান্তর আসবে কীভাবে?
উত্তর : উপেক্ষিত শক্তির যথাযথ মূল্যায়ন করলেই দেশে যুগান্তর আসবে।
➠ উপেক্ষিত শক্তি উন্নতির দশ আনা কাজের ধারক। তারা একত্রিত হয়ে অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। ভদ্র সম্প্রদায় শত বছর ধরে যা পারে না, উপেক্ষিত শক্তি এক দিনে তা করতে পারে। এই উপেক্ষিত শক্তির যদি মূল্যায়ন করা হয় তাহলে তারাই অসাধ্যকে সাধন করবে। ফলে দেশে যুগান্তর আসবে।
২. ভদ্র সম্প্রদায় একক চেষ্টায় দেশকে উন্নত করতে পারে না কেন?
উত্তর : ভদ্র সম্প্রদায়ের কর্মক্ষেত্রে নেমে কাজ করার সামর্থ্য নেই বলে তারা একক চেষ্টায় দেশকে উন্নত করতে পারে না।
➠ ভদ্র সম্প্রদায় দেশের দুর্দশা ও জাতির দুর্গতি বোঝে। তারা সকলকে বোঝাতে পারে এই দুর্ভাগ্যের কথা। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নেমে তারা কাজ করতে পারে না। কেননা কাজ করার শক্তি তাদের নেই। দেশকে উন্নত করতে কাজ করার দশ আনা শক্তিই রয়েছে উপেক্ষিতদের। তাই ভদ্র সম্প্রদায় একক চেষ্টায় দেশকে উন্নত করতে পারে না।
৩. মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে উপেক্ষিতরা বাহু মেলে এগিয়ে যায় কেন?
উত্তর : মহাত্মা গান্ধী উপেক্ষিতদের অন্তর দিয়ে ভালোবেসেছিলেন বলে তাঁর আহ্বানে সকলে বাহু মেলে এগিয়ে যায়।
➠ মহাত্মা গান্ধী প্রাণ খুলে উপেক্ষিতদের সাথে মিশতেন। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগী হতেন সর্বদা। উপেক্ষিতদের তিনি কখনো ছোটলোক বলে অবহেলা করেননি। তাদেরকে নিতান্ত আপন করে তুলেছিলেন ভালোবাসা দিয়ে। তাই তাঁর আহ্বানে সকলে বাহু মেলে এগিয়ে যায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
‘তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!’
ক. ব্যক্তির সমষ্টিকে এক কথায় কী বলা যায়?
খ. আমাদের দেশে জনশক্তি গঠন হতে পারছে না কেন?
গ. উদ্দীপকের ‘মজুর, মুটে ও কুলি’ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্‌দ্বোধন’ প্রবন্ধের কাদের সমার্থক? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের মূলভাব ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশ মাত্র।” মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
ক. ব্যক্তির সমষ্টিকে এক কথায় জাতি বলা হয়।
খ. আমাদের দেশে জনশক্তি গঠন হতে পারছে না কারণ আমরা ‘দশ আনা’ জনশক্তিকে উপেক্ষা করে আসছি।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়কে উপেক্ষিত সম্প্রদায় বলা হয়েছে। লেখকের মতে সাম্যবাদী ও গণতান্ত্রিক চেতনার আলোকে এই উপেক্ষিত শ্রেণিকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। তাদের জাগিয়ে তুলতে হবে, তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। অভিজাত শ্রেণি সমাজের অধঃপতিত, দুর্বল শ্রেণিকে যুগের পর যুগ অবজ্ঞা অবহেলা করে আসছে। তাদের যথাযথ মর্যাদা না দেওয়ার কারণেই আমাদের দেশে জনশক্তি গঠিত হতে পারছে না।

গ. উদ্দীপক কবিতাংশে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে প্রতিফলিত উপেক্ষিত শক্তির জয়গান করা হয়েছে।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের একটি অসংগতির বিষয়ে আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। আমাদের সমাজের আভিজাত্য গঠিত কথিত ‘বড়লোক’ সম্প্রদায় খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষকে ‘ছোটলোক’ আখ্যায়িত করে। তাদের অহেতুক হেয় প্রতিপন্ন করে থাকে। তাদের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। অথচ এরাই দেশের উন্নয়নের চাকা। নজরুল এই শ্রেণিকে উপেক্ষার আঘাতে জর্জরিত না করে তাদের বুকে টেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
➠ উদ্দীপকে মজুর, মুটে ও কুলিদের অবদানের কথা বলা হয়েছে। কারণ তাদের রক্তে ও ঘামে গড়ে ওঠে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। তারা যদি তাদের কাজ না করত তবে কথিত ‘ভদ্রলোক’ বা ‘বড়লোক’ সম্প্রদায়ের জীবন স্থবির হয়ে পড়ত। তাদের গায়ে ধূলি লাগে বলেই আমরা কেতাদুরস্ত হয়ে চলাফেরা করি। অথচ তাদের কাজের ফলাফল অত্যন্ত মহৎ ও কল্যাণকর। যে কারণে কবি তাদেরই সত্যিকারের মানুষ বলেছেন, তাদেরই দেবতা জ্ঞান করেছেন। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধেও একই অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে মেহনতি মানুষদের মূল্যায়নের আহ্বান জানানোর পাশপাশি বর্ণিত হয়েছে তা করার গুরুত্ব। উদ্দীপকে এসেছে কেবল মূল্যায়নের দিকটি।
➠ কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহ ছিল অসাম্য ও অসংগতির বিরুদ্ধে। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধেও তাঁর সেই চেতনা আমরা লক্ষ করি। সমাজে একটি শ্রেণি অসহায় দরিদ্র মানুষকে ছোটলোক বলে গালি দেয়। তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। তাদের কোনো সামাজিক মর্যাদা দিতে চায় না। নজরুল সমাজে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশে নজরুল তাদের যথাযথ সম্মান ও মূল্যায়ন করতে বলেছেন।
➠ উদ্দীপকে অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় মুটে, মজুরদের কথা বলা হয়েছে। সমাজে উঁচুতলার মানুষগুলো এই শ্রমিক মেহনতি মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলেই সুখে অট্টালিকায় বাস করে। এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোই সত্যিকার মানুষ। তাদের অবদানেই দেশে উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত হয়। এই শ্রেণির মানুষদের যথাযথ মূল্যায়ন করার বিষয়টি আলোচ্য প্রবন্ধে আরো বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাম্যবাদী চেতনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি ছোট-বড়, উঁচু-নিচু, ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ দূর করার মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। মর্যাদাবান জাতি ও রাষ্ট্রগঠনে বিভিন্ন দেশের মনীষীগণ কীভাবে আমরণ সংগ্রাম করেছেন তা বাস্তবভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল মুটে, মজুর, কুলি শ্রেণি কীভাবে উন্নয়নে ও মানবতার সেবায় অবদান রাখে তা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রবন্ধে কাজী নজরুল যেমন নানা যুক্তিতে উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন তেমনটি নেই উদ্দীপক কবিতাংশে। তাই উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটি ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশ মাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী তথা কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। সে দেশের জনসংখ্যার অনুপাত কৃষ্ণাঙ্গ ৮৪%, শ্বেতাঙ্গ ১৬%। এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী শ্বেতাঙ্গরাই দেশটিকে তিন শতাধিক বছর শাসন করে। রাজশক্তির বিরুদ্ধে নেলসন ম্যান্ডেলা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে প্রায় ২৮ বছর জেল খাটতে হয়। দমে যাননি ম্যান্ডেলা, সার্থক তাঁর জীবন সংগ্রাম।
ক. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’-এ প্রবন্ধকারের কোন মানসিকতা ফুটে উঠেছে?
খ. আমাদের এত অধঃপতনের কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের ভদ্র সম্প্রদায়ের সাথে উদ্দীপকের শ্বেতাঙ্গদের মানসিকতার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. কৃষ্ণাঙ্গদের নেতা ম্যান্ডেলা এবং ছোটলোকদের নেতা মহাত্মা গান্ধী যেন এক ও অভিন্ন- মূল্যায়ন করো।
ক. ‘উপপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’- এ প্রবন্ধকারের সাম্যবাদী মানসিকতা ফুটে উঠেছে।
খ. লেখকের মতে তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতি অবহেলার কারণেই আজ আমাদের এত অধঃপতন।
➠ আমরা নিজেদের ভদ্র সম্প্রদায় দাবি করি। আত্মগৌরবের আভিজাত্যে নীচু শ্রেণির মানুষদের আমরা উপেক্ষা করি। অথচ তাদের হৃদয় কাচের মতো স্বচ্ছ। আমাদের উন্নতির দশ আনা শক্তিই নির্ভর করছে এসব উপেক্ষিত মানুষের ওপর। কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে চলেছি আমরা ভদ্র সম্প্রদায়। আর এ কারণেই আজ আমাদের এত অধঃপতন বলে লেখক মনে করেন।

গ. জাতিগত ভেদাভেদের বিষ ছড়ানোর দিক থেকে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বর্ণিত ভদ্র সম্প্রদায় এবং উদ্দীপকের উল্লিখিত শ্বেতাঙ্গরা সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে সমাজের আভিজাত্য-গর্বিত ভদ্র সম্প্রদায়ের মানসিকতার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। তথাকথিত ছোটলোকদের তারা ঘৃণার চোখে দেখে, অবহেলা করে। অথচ এই তথাকথিত ছোটলোকেরাই দেশের মূল প্রাণশক্তি।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা সময় শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে আসছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশকে তাদের এ উপেক্ষা এবং ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের ভদ্র সম্প্রদায় কর্তৃক তথাকথিত নীচু জাতের মানুষদের উপেক্ষা একই মানসিকতার প্রতিফলন।

ঘ. অবহেলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করার দিক থেকে উদ্দীপকের ম্যান্ডেলা ও ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ রচনার মহাত্মা গান্ধী এক ও অভিন্ন।
➠ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে মহাত্মা গান্ধীর মহৎ কর্মের কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ভারতবর্ষে তিনি অসাধ্য সাধন করেছিলেন। আভিজাত্য-গৌরবে তিনি নিজেকে কলুষিত করেননি। সব শ্রেণির মানুষের সাথে প্রাণ খুলে মিশেছেন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করার জন্য তিনি সকলকে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
➠ উদ্দীপকে উল্লিখিত নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গদের নেতা। দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও শ্বেতাঙ্গদের আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল তারা। কৃষ্ণাঙ্গদের যথাযোগ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরণ সংগ্রাম করেছেন ম্যান্ডেলা। নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার দিক থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা ও মহাত্মা গান্ধী এক বিন্দুতে গাঁথা।
➠ বিশ্বের বুকে নিজ জাতিকে মর্যাদাবান ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রতিটি দেশের মনীষীগণ আমরণ সংগ্রাম করেছেন। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে উল্লিখিত মহাত্মা গান্ধী এবং উদ্দীপকে উল্লিখিত নেলসন ম্যান্ডেলা তেমনই দুই মহামানব। দুজনই সংগ্রাম করেছেন অবহেলিতদের সমাজে ন্যায্য অধিকার প্রদানের জন্য। ভদ্র সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা যাদের তীব্রভাবে উপেক্ষা করেছে সেই তথাকথিত ছোটলোকদের তাঁরা বুকে টেনে নিয়েছেন। হয়েছেন গণমানুষের নেতা। ভেদাভেদ দূর করে সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উভয়ের অবদানই চিরস্মরণীয়। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
আবুল হোসেন মিঞা পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং জনদরদি নেতা। সমাজের উঁচুতলার মানুষের চেয়ে নিচু শ্রেণির মানুষের সঙ্গে তাঁর চলাফেরা বেশি। তাদের সুখ-দুঃখের তিনি সঙ্গী। তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তা সংস্কার এবং নর্দমা পরিষ্কারের কাজ করেন। তিনি বলেন, “এরাই আমার আসল শক্তি”।
ক. ‘দুর্দিনের যাত্রী’ কোন ধরনের গ্রন্থ?
খ. দেশের অধিবাসী লইয়াই তো দেশ এবং ব্যক্তির সমষ্টিই তো জাতি- বাক্যটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের মধ্যে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের যে দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “এরাই আমার আসল শক্তি”- উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের এই উক্তিটি ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘দুর্দিনের যাত্রী’ একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ।
খ. আলোচ্য বাক্যটিতে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন সকল মানুষের সমষ্টিতেই গণতন্ত্র গঠিত হয়।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে লেখকের সাম্যবাদী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। একটি দেশে ধনী-গরিব উঁচু-নীচু ভেদাভেদ থাকা ঠিক না। কেননা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিয়েই একটি দেশ গঠিত হয়। গণতন্ত্র সকলকে এক কাতারে দাঁড় করায় বিভেদের দেয়াল ভেঙে সকলকে একত্র করে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের এই মূল কথাই প্রশ্নোক্ত বাক্যে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন।

গ. উদ্দীপকের মধ্যে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের লেখকের আকাঙ্ক্ষার দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে লেখকের সাম্যবাদী মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ছোট-বড়, উঁচু-নীচু, ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ দূর করা আবশ্যক। প্রবন্ধে লেখক এই বিভেদ দূর করে সকলকে এক হয়ে দেশের অগ্রগতিতে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত আবুল হোসেন পৌরসভার চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও সমাজের নীচু শ্রেণির মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। এতে তাঁর মাঝে সাম্যবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। সাম্যবাদী চেতনা ধারণকারী মানুষের মাঝে ছোট-বড় ভেদাভেদ থাকে না। আবুল হোসেন সমাজের মেহনতি মানুষদের কাজের যথাযোগ্য মূল্যায়ন করেছেন। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের লেখক এমন প্রত্যাশাই করেছেন।

ঘ. মর্যাদাবান জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে উদ্দীপকের চেয়ারম্যান কর্তৃক উপেক্ষিত শক্তিকে মূল্যায়নসূচক বক্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল সমাজের অবহেলিত মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়ের মানুষেরই দেশের দশ আনা শক্তির ধারক। তাই তাদের উপেক্ষা করলে জাতির উন্নতি কখনোই সম্ভবপর হবে না। দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি আমাদের সব ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে অবস্থান নিতে বলেছেন। উপেক্ষিত মানুষদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান করে সমাজ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন।
➠ উদ্দীপকে পৌর চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের মাঝে উপেক্ষিত শক্তিকে গুরুত্ব প্রদানের মানসিকতা লক্ষণীয়। তিনি সমাজের নীচু শ্রেণির মানুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার মাধ্যমে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বর্ণিত লেখকের সাম্যবাদী চেতনার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। সমাজে ছোট-বড়, উঁচু-নীচু, সকলে মিলেই একটি জাতি। এই জাতি যদি উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের মতো মানসিকতাকে লালন করে তাহলে তারা সহজেই মর্যাদাবান জাতিতে পরিণত হবে।
➠ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য সাম্যবাদী চেতনার বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। কেননা সমাজে সাম্য না থাকলে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এতে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। তাছাড়া ছোট-বড়, ধনী-গরিব ভেদাভেদ থাকলে কখনো সে জাতি উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করতে পারে না। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে সমাজের নীচু-শ্রেণির লোকদের দেশ গঠনের কারিগর মনে করা হয়েছে। কেননা তাদের হাত ধরেই দুর্দশাগ্রস্ত জাতি জনশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উন্নতি লাভ করতে পারে। সমাজের উপেক্ষিত ব্যক্তিরাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এ সত্য উপলব্ধি করেই উদ্দীপকের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘এরাই আমার আসল শক্তি’।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
ভৃত্য চড়িল উটের পিঠে উমর ধরিল রশি,
মানুষে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধুলায় নামিল শশী।
আরাম সুখের মানুষ হইয়া নিতে মানুষের সেবা,
ইসলাম বলে সকলে সমান কে বড় ক্ষুদ্র কেবা?
ক. আমরা কত আনা শক্তিকে উপেক্ষা করে আসছি?
খ. বোধন বাঁশিতে সুর দেয়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের যে ভাবটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের মূলভাবের আংশিক রূপায়ণ মাত্র”- মূল্যায়ন করো।
ক. আমরা দশ আনা শক্তিকে উপেক্ষা করে আসছি।
খ. বোধন বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে মানুষের মাঝে সাম্যবাদী চেতনার বোধ জাগিয়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
➠ সমাজে ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র সকলেই মানুষ। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের সমাজের তথা কথিত ভদ্র সম্প্রদায়ের মাঝে এই ঔচিত্যবোধ নেই। তারা কথিত ছোটলোক সম্প্রদায়কে সব সময় উপেক্ষা করে। অথচ এই ছোটলোক সম্প্রদায়ের ওপরই নির্ভর করে দেশের উন্নয়নের দশ আনা শক্তি। কাজী নজরুল মানুষে মানুষে এমন দূরত্ব চান না। তিনি চান ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি। বোধন বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে লেখকের এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নকেই বোঝানো হয়েছে।

গ. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ রচনায় কাজী নজরুল ইসলামের যে সাম্যবাদী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে তা উদ্দীপক কবিতাংশেও লক্ষণীয়।
➠ আমাদের সমাজে নানা ধরনের শ্রেণি বিভেদের মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম এই বিভাজনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সমাজ গঠনে সকলেরই অবদান রয়েছে। সেটি স্বীকার করে নিয়ে তিনি সকলকে সমমর্যাদা প্রদানের প্রত্যাশী।
➠ উদ্দীপকে মানুষের সম-অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সামাজিক স্তরবিন্যাসের কারণে পৃথিবীতে কেউ মালিক, কেউ ভৃত্য হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উভয়ের মর্যাদাই সমান। ইসলাম ধর্মে সব মানুষকে সমানভাবে দেখার কথা বলা হয়েছে। অন্য ধর্মগুলোতেও একই কথা বলা আছে। উদ্দীপকে বর্ণিত মহান শাসক উমর (রা.) ভৃত্যকে উটে চড়িয়ে নিজে উটের রশি ধরার মাধ্যমে মানবতাবোধের সুমহান এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উদ্দীপকের এই চেতনা ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ রচনাতেও সমভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ব্যক্তিপর্যায়ে উপেক্ষিত মানষেরা মূল্যায়িত হলেও ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রপর্যায়ে মূল্যায়নের কথা। এ বিবেচনায় বলা যায়, উদ্দীপকটি আলোচ্য প্রবন্ধের আংশিক ভাবের প্রকাশক।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের রচয়িতা কাজী নজরুল ইসলাম সমাজে মানুষের মাঝে বিরাজমান ভেদাভেদের অবসান চান। সমাজের আভিজাত্য গর্বিত সম্প্রদায়ের লোকেরা তথাকথিত ছোটলোকদের যথাযোগ্য সম্মান দেয় না। ন্যায্য অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করে। কাজী নজরুলের স্বপ্ন এই অসাম্য দূর হয়ে সমাজ উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।
➠ উদ্দীপক কবিতাংশে মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্য দেওয়ার দৃষ্টান্তমূলক একটি ঘটনার উল্লেখ আছে। হযরত উমর (রা.) ভৃত্যকে উটের পিঠে চড়িয়ে নিজে উটের রশি ধরে সাম্যের অনুপম উদাহরণ সৃষ্টি দিয়েচেন। এমনিভাবে সকল ক্ষেত্রে বঞ্চিত মানুষদের বুকে টেনে নিলেই সত্যিকারের গণতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে।
➠ উদ্দীপক ও ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের মূলভাব এক ও অভিন্ন। তা হলো মানুষের মাঝে অসমতা দূরীকরণ। উদ্দীপকে রয়েছে শাসক হওয়ার পরও হযরত উমর (রা.) তার ভৃত্যকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছেন। উদ্দীপকে ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা বলা হলেও প্রবন্ধে বলা হয় সাম্যবাদের সামাজিক প্রতিষ্ঠার কথা। দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য এটিকে সবচেয়ে জরুরি হিসেবে বলা যায়। জাত-পাত, শ্রেণি-গোত্র ইত্যাদি বৈষম্য ভুলে উপেক্ষিত মানুষদের কাছে টেনে নিলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ সমৃদ্ধি বিরাজ করবে। উদ্দীপকে এই সম্ভাবনার আংশিক রূপায়ণ ঘটেছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
দেখিনু সে দিন রেলে,
কুলি বলে এক বাবু সাব তারে ঠেলে দিলে নিচে ফেলে-
চোখ ফেটে এলো জল,
এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
ক. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে কাদের কর্মক্ষেত্রে নেমে কাজ করার শক্তি নেই?
খ. উপেক্ষিত শক্তি সরল মুক্ত মন নিয়েও কোনো কাজ করতে পারছে না কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দুর্বলদের মাঝে কীভাবে শক্তির উন্মেষ ঘটানো যায়? উদ্দীপক ও উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন প্রবন্ধের আলোকে মতামত দাও।
ক. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে ভদ্র সম্প্রদায়ের কর্মক্ষেত্রে নেমে কাজ করার শক্তি নেই।
খ. ভদ্র সম্প্রদায়ের অত্যাচারের কারণে উপেক্ষিত শক্তি সরল মুক্ত মন নিয়েও কোনো কাজ করতে পারছে না।
➠ উপেক্ষিত শক্তির মানুষদের অন্তর কাচের মতো স্বচ্ছ। তবুও সমাজের ভদ্র সম্প্রদায় তাদের ছোটলোক বলে অত্যাচার করে। ফলে সংকোচ ও জড়তার কারণে তারা কোনো কাজ করতে পারে না।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দুর্বল শ্রেণি এবং ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বর্ণিত উপেক্ষিত শ্রেণির উপেক্ষিত হওয়ার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
➠ কবি নজরুল তাঁর প্রবন্ধ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’-এ কথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়কে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বারোপ করেছেন। কবি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ছোট-বড় উঁচু-নিচু, ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ দূর করার জন্য সমাজের অপেক্ষাকৃত উঁচু শ্রেণির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন সমাজের একটি শ্রেণিকে উপেক্ষা করে সুস্থ সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
➠ উদ্দীপকে অসহায়, দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণির তথাকথিত বড়লোক শ্রেণির উপেক্ষা, অবজ্ঞা ও ঘৃণার মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। কুলি, মুটে, মজুর সকলেই মানুষ। একটি জাতির আর্থ-সামাজিক কর্মকাÊে তাদের অবদান কম নয়। উদ্দীপকের বাবুসাব আভিজাত্যের অহংকারে কুলিকে নিচে ফেলে দিয়েছে। এই দৃশ্য অতি নির্মম। এটি মানবতার অপমান। এই দুর্বলের ওপর নির্মম আচরণ করার ক্ষেত্রে উদ্দীপক ও ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে সাদৃশ্যময় হয়ে উঠেছে।

ঘ. দুর্বলদের বুকভরা সেœহ নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণের মধ্য দিয়ে তাদের মাঝে শক্তির উন্মেষ ঘটানো সম্ভব। উদ্দীপক ও ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে সেই সত্যটি তুলে ধরা হয়েছে।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে সমাজে উঁচু-নীচু জাত-ভেদ ও তথাকথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়ের নামে একটি সম্ভাবনাময় শক্তিকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এই দুর্বলদের বুকভরা অপরিসীম মমতায় কাছে টানতে হবে। উপেক্ষার আঘাতে তাদের জর্জরিত না করে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই পতিত শ্রেণিকে আপন করে নিতে পারলে সমাজের ব্যাপক কল্যাণ সাধিত হবে।
➠ উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি তথাকথিত ‘বড়লোক’ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এক বাবু কথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়ের কুলিকে ট্রেনে উঠতে না দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে। এই কুলিটির অপরাধ সে দরিদ্র ও হীন বস্ত্রসম্পন্ন। কুলি যদি বাবুসাবের পাশাপাশি অবস্থান করে তবে বাবুসাবের সম্মান থাকে না। আভিজাত্যের অহংকারে ঘৃণাভরে কুলিটিকে সে তাড়িয়ে দিয়েছে। এ দৃশ্য দেখে উদ্দীপক কবিতাংশের কবি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। তিনি সকল বিবেকবান মানুষের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন দুর্বলরা কতদিন এমন করে মার খাবে?
➠ তাই উদ্দীপক ও প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে পাই, দুর্বল এই শ্রেণির মাঝে উদ্দীপনা সঞ্চার করে তাদের সুপ্ত শক্তির উন্মেষ ঘটানো সম্ভব। শত শত বছর ধরে প্রাণপণ চেষ্টা করে সমাজে ও রাষ্ট্রে যে পরিবর্তন ঘটানো যায় না, এই অধঃপতিত, দুর্বলদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও জাগরণ সৃষ্টি করে সে পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। কাউকে জোর করে দমিয়ে রেখে গণতান্ত্রিক চেতনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্বলদের মাঝে শক্তির উন্মেষ ঘটানো সম্ভব।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
এক শহুরে বাবু নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞেস করলেন, দিন-রাত্রি কীভাবে হয়, নদীতে কেন জোয়ার আসে ইত্যাদি। মাঝি উত্তর দিতে পারল না। বাবু মাঝিকে অবজ্ঞার সুরে বললেন তোর জীবনের বারো আনাই মিছে। এদিকে ঝড়ের পূর্বাভাস দেখে মাঝি জিজ্ঞেস করল, সাতার জানো বাবু? বাবু বললেন, নারে মাঝি, না। তখন মাঝি বলল, তোমার দেখি জীবনটা এখন ষোলো আনাই মিছে।
ক. লেখকের মতে কাদের ওপর আমাদের দশ আনা শক্তি নির্ভর করছে?
খ. উপেক্ষিতরা নিজেদের ছোট মনে করে কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের সাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপকের শহুরে বাবুর আচরণ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ক. লেখকের মতে তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়ের ওপর আমাদের দশ আনা শক্তি নির্ভর করছে।
খ. ভদ্র সম্প্রদায়ের অবহেলার কারণে উপেক্ষিতরা নিজেদের ছোট মনে করে।
➠ ভদ্র সম্প্রদায়ের লোকেরা সর্বদা ছোটলোকদের ওপর অত্যাচার করে। ছোটলোকেরা জন্ম থেকেই ঘৃণা, উপেক্ষা পেয়ে থাকে। ফলে সংকোচ জড়তা তাদের স্বভাবে গেঁথে যায়। জন্ম থেকে এই উপেক্ষার কারণে উপেক্ষিতরা নিজেদের ছোট মনে করে।

গ. উদ্দীপকের মাঝির সাথে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের তথাকথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়ের উপেক্ষার সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।
➠ কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে ছোট-বড়, উচু-নীচু, ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদের ভিত্তিতে সমাজে যে তথাকথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায় সৃষ্টি করা হয়েছে তার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষ হিসেবে সকলেরই সমমর্যদা ভোগ করার অধিকার রয়েছে। মানুষের প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা জাতির অধঃপতনের অন্যতম কারণ।
➠ উদ্দীপকের মাঝি তার কায়িক পরিশ্রম দিয়ে খেয়া পারাপার করে মানুষকে তার গন্তব্যে যেতে সহায়তা করে। শহুরে বাবুর প্রশ্নের জবাব দেওয়া তার অসাধ্য। কারণ লেখাপড়া করার তার সুযোগ ঘটেনি। শহুরে বাবু সেই সুযোগ নিয়ে মাঝিকে অবজ্ঞাসূচক প্রশ্ন করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। এ সমাজে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সমান গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরকে অবহেলা, অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। এটা করা হীনম্মন্যতারই পরিচায়ক। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধেও কথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়ের লোকদের উপেক্ষার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের শহুরে বাবু ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের ভদ্র সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। এরাই সমাজে নানা ধরনের ভেদাভেদকে জিইয়ে রেখেছে।
➠ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধ ভদ্র সম্প্রদায় সম্পর্কে লেখক বলেছেন তারা জাতির দুঃখ-দুর্দশা বোঝে, অন্যকে বোঝাতে পারে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে নেমে কোনো কাজ করতে উদ্যোগী হয় না। অধিকারবঞ্চিত মানুষ তাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হতে চেষ্টা করলে, উৎপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বললে ভদ্র সম্প্রদায় তার মাথায় প্রচÊ আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলে। তাদেরকে সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত না করে উপেক্ষার আঘাতে জর্জরিত করে।
➠ উদ্দীপকের শহুরে বাবু সমাজের নীচু শ্রেণির প্রতিনিধি মাঝির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন। তার জীবনকে মিথ্যে প্রমাণের জন্য উদ্যোগী হয়েছে। শহুরে বাবুর প্রশ্নের জবাব দিতে না পারলেও সে বিনয়ের সাথে অপারগতা প্রকাশ করেছে। আবার ঘটনাচক্রে দেখা গেল শহুরে বাবু আসল কাজটিতেই অনভিজ্ঞ। তখন তার জ্ঞানের অহংকার মিথ্যে প্রমাণিত হলো। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথাকর্থিত আভিজাত্য গঠিত সম্প্রদায়ের মাঝে এই মনোভাবের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
➠ আল্লাহর সৃষ্ট সকল মানুষ সমান। কিন্তু ভদ্র সমাজের কিছু মানুষেরা সমাজে নানা অনাচার সৃষ্টি করে থাকে। তাদের দ্বারাই এক শ্রেণির মানুষ সমাজে উপেক্ষিত হয়। তারা সমাজে আভিজাত্যের অহংকারে সমতা সৃষ্টি হতে দেয় না। মানুষের মাঝে বিভেদের দেয়াল তৈরি করে। তাদের দ্বারা যারা বঞ্চিত হয় তাদের আহাজারি আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শহুরে বাবুর মতো ভদ্র সম্পদ্রায়ের লোকেরাই সমাজে বিভেদের দেয়াল তোলার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে এ দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭
-------------
-----------

তথ্যসূত্র :
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।
৪. বাংলাপিডিয়া- বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ।

Next Post Previous Post