আহ্বান- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

আহ্বান
আহ্বান

আহ্বান
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

দেশের ঘরবাড়ি নেই অনেকদিন থেকেই। পৈতৃক বাড়ি যা ছিল ভেঙেচুরে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে। এ অবস্থায় একদিন গিয়েছি দেশে কিসের একটা ছুটিতে।

গ্রামের চক্কোত্তি মশায় আমার বাবার পুরাতন বন্ধু। আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন। বললেন-কতকাল পরে বাবা মনে পড়ল দেশের কথা? প্রণাম করে পায়ের ধুলা নিলাম। বললেন-এসো, এসো, বেঁচে থাকো, দীর্ঘজীবী হও। বাড়িঘর করবে না?

-আজ্ঞে সামান্য মাইনে পাই-

-তাতে কী? গ্রামের ছেলে গ্রামে বাস করবে, এতে আর সামান্য মাইনে বেশি মাইনে কী? আমি খড় বাঁশ দিচ্ছি, চালাঘর তুলে ফেল, মাঝে মাঝে যাতায়াত করো।

আরও অনেকে এসে ধরল, অন্তত খড়ের ঘর ওঠাতে হবে। অনেক দিন পরে গ্রামে এসে লাগছে ভালোই। বড় আমবাগানের মধ্য দিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছি, আমগাছের ছায়ায় একটি বৃদ্ধার চেহারা, ডান হাতে নড়ি ঠকঠক

করতে করতে বোধহয় বাজারের দিকে চলেছে।

বুড়িকে দেখেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাবে?

-বাজারে বাবা।

বুড়ি আমায় ভালো না দেখতে পেয়ে কিংবা না চিনতে পেরে ডান হাত উঁচিয়ে তালু আড়ভাবে চোখের ওপর ধরল। বলল, কে বাবা তুমি? চেনলাম না তো?

-চিনবে না। আমি অনেক দিন গাঁয়ে আসি নি।

-তা হবে বাবা। আমি আগে তো এপাড়া-ওপাড়া যাতাম আসতাম না। তিনি থাকতি অভাব ছিল না কোনো জিনিসের। গোলাপোরা ধান, গোয়ালপোরা গরু।

-তোমাকে তো চিনতে পারলাম না, বুড়ি?

-আমার তো তেনার নাম করতে নেই বাবা। করাতের কাজ করতেন।

বললাম, তোমার ছেলে আছে?

-কেউ নেই বাবা, কেউ নেই। এক নাত-জামাই আছে তো সে মোরে ভাত দেয় না। আমার বড্ড কষ্ট। ভাত জোটে না সবদিন।

বুড়িকে পকেট থেকে কিছু পয়সা বার করে দিলাম।

-ব্যাপারটা এখানেই চুকে যাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু তা চুকল না।

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেছি, এমন সময় সেই বুড়ি লাঠি ঠকঠক করতে করতে হাজির উঠোনে। থাকি এক জ্ঞাতি খুড়োর বাড়ি। তিনি বললেন, ও হলো জমির করাতির স্ত্রী। অনেকদিন আগে মরে গিয়েছে জমির।

বুড়ি উঠোনে দাঁড়িয়ে ডাকল, ও বাবা।

বোধহয় চোখে একটু কম দেখে।

বললাম, এই যে আমি এখানে।

আমার খুড়োমশায় বুড়িকে বুঝিয়ে দিলেন আমি কে। সে উঠোনের কাঁঠালতলায় বসে আপন মনে খুব খানিকটা বকে গেল।

পরদিন কলকাতা চলে গেলাম, ছুটি ফুরিয়ে গেল।

কয়েক মাস পরে জ্যৈষ্ঠ মাসে গরমের ছুটিতে আমার নতুন তৈরি খড়ের ঘরখানাতে এসে উঠলাম। কলকাতাতে কর্মব্যস্ত এই ক'মাসের মধ্যে বুড়িকে একবারও মনে পড়েনি বা এখানে এসেও মনে হঠাৎ হয়ত হতো না, যদি সে তার পরের দিনই সকালে আমার ঘরের নিচু দাওয়ায় এসে না বসে পড়ত।

বললাম, কী বুড়ি, ভালো আছ?

ময়লা ছেঁড়া কাপড়ের প্রান্ত থেকে গোটাকতক আম খুলে আমার সামনে মাটিতে রেখে বলল, আমার কি মরণ আছে রে বাবা।

জিজ্ঞাসা করলাম, ও আম কীসের।

দন্তহীন মুখে একটু হাসবার চেষ্টা করে বললে, অ গোপাল আমার, তোর জন্যি নিয়ে আলাম। গাছের আম বেশ কড়া মিষ্টি, খেয়ে দেখ এখন।

বড়ো ভালো লাগল। গ্রামে অনেকদিন থেকে আপনার জন কেউ নেই। একটা ঘনিষ্ঠ আদরের সম্বোধন করার লোকের দেখা পাই নি বাল্যকালে মা-পিসিমা মারা যাওয়ার পর থেকে।

বুড়ি বললে, খাও কোথায় হ্যাঁ বাবা?

-খুড়ো মশায়ের বাড়ি।

-বেশ যত্ন করে তো ওনারা?

-তা করে।

-দুধ পাচ্চ ভালো?

-ঘুঁটি গোয়ালিনী দেয়, মন্দ না।

-ও বাবা, ওর দুধ! অর্ধেক জল- দুধ খেতি পাচ্চ না ভালো সে বুঝেচি।

পরদিন সকাল হয়েছে সবে, বুড়ি দেখি উঠোনে এসে ডাকছে, অ গোপাল।

বিছানা ছেড়ে উঠে বললাম, আরে এত সকালে কী মনে করে। হাতে কী?

বৃদ্ধা হাতের নড়ি আমার দাওয়ার গায়ে ঠেস দিয়ে রেখে বলল, এক ঘটি দুধ আনলাম তোর জন্যি।

-সে কী! দুধ পেলে কোথায় এত সকালে?

আমায় মা বলে ডাকে ওই হাজরা ব্যাটার বউ। তারও কেউ নেই। মোর চালাঘরের পাশে ওর চালাঘর। ওরে কাল রাত্তিরে বলে রেখে দিয়েছিলাম, বলি বউ আমার, গোপাল দুধ খেতি পায় না। তাই আজ ভোরে উঠে দেখি আমারে ডাকচে, মা ওঠো, তোমার গোপালের জন্যি দুধ নিয়ে যাও।

-আচ্ছা কেন বলতো তোমার এসব! এ রকম আর কখনও এনো না। কত পয়সা দাম দিতে হবে বল। কতটা দুধ?

বুড়ি একটু ঘাবড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে বলে, কেন বাবা, পয়সা কেন?

-পয়সা না তো তুমি দুধ পাবে কোথায়?

-ওই যে, বললাম বাবা, আমার মেয়ের বাড়ি থেকে।

-তা হোক, তুমি পয়সা নিয়ে যাও। সেও তো গরিব লোক।

বুড়ি পয়সা নিয়ে চলে গেল বটে কিন্তু সে যে দমে গিয়েছে তার কথাবার্তার ধরনে বেশ বুঝতে পারলাম। মনে একটু কষ্ট হলো বুড়ি চলে গেলে। পয়সা দিতে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি? বুড়ির কী রকম হয়ত মন পড়ে গিয়েছে আমার ওপর, স্নেহের দান- এমন করা ঠিক হয়নি। বুড়ি কিন্তু এ অবহেলা গায়ে মাখল না আদৌ। প্রতিদিন সকাল হতে না হতেই সে এসে জুটবে।

-অ গোপাল, এই দুটি কচি শসার জালি মোর গাছের, এই ন্যাও। নুন দিয়ে খাও দিকিন মোর সামনে?

-বুড়ি তোমার চলে কীসে?

-ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড্ড ভালো। লোকের ধান ভানে, তাই চাল পায়, আমায় দুটো না দিয়ে খায় না।

-একা থাক?

-তা একদিন মোর ঘরখানা না হয় দেখতি গেলে, অ মোর গোপাল! আমি নতুন খাজুর পাতার চেটাই বুনে রেখে দিয়েছিলাম তোমারে বসতি দেবার জন্যি।

সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না। নানাদিকে ব্যস্ত থাকি। অনেক দিন পরে গ্রামে এসেছি তো! যে কদিন গ্রামে থাকি বুড়ি রোজ সকালে আসতে ভুলবে না। কিছু না কিছু আনবেই। কখনো পাকা আম, কখনো পাতি লেবু, কখনো বা একছড়া কাঁচকলা কি এক-ফালি কুমড়ো। পুনরায় গ্রামে এলাম পাঁচ-ছয় মাস পরে, আশ্বিন মাসের শেষে। কয়েকদিন পরে ঘরে বসে আছি, বাইরের উঠোনে দাঁড়িয়ে কে যেন জিজ্ঞাসা করলে; বাবু ঘরে আছেন গা?

বাইরে এসে দেখি গত জ্যৈষ্ঠ মাসে যাকে বুড়ির সঙ্গে দেখেছিলাম সেই মধ্যবয়সী স্ত্রীলোকটি। আমায় দেখে সলজ্জভাবে মাথার কাপড়টা আর একটু টেনে দেবার চেষ্টা করে সে বললে, বাবু কবে এসেছেন?

-দিন পাঁচ-ছয় হলো। কেন?

-আমার সেই মা পেটিয়ে দিলে, বলে দেখে এসো গিয়ে।

-কে?

-ও বাবা, ওর দুধ! অর্ধেক জল- দুধ খেতি পাচ্চ না ভালো সে বুঝেচি।

পরদিন সকাল হয়েছে সবে, বুড়ি দেখি উঠোনে এসে ডাকছে, অ গোপাল।

বিছানা ছেড়ে উঠে বললাম, আরে এত সকালে কী মনে করে। হাতে কী?

বৃদ্ধা হাতের নড়ি আমার দাওয়ার গায়ে ঠেস দিয়ে রেখে বলল, এক ঘটি দুধ আনলাম তোর জন্যি।

-সে কী! দুধ পেলে কোথায় এত সকালে?

আমায় মা বলে ডাকে ওই হাজরা ব্যাটার বউ। তারও কেউ নেই। মোর চালাঘরের পাশে ওর চালাঘর। ওরে কাল রাত্তিরে বলে রেখে দিয়েছিলাম, বলি বউ আমার, গোপাল দুধ খেতি পায় না। তাই আজ ভোরে উঠে দেখি আমারে ডাকচে, মা ওঠো, তোমার গোপালের জন্যি দুধ নিয়ে যাও।

-আচ্ছা কেন বলতো তোমার এসব! এ রকম আর কখনও এনো না। কত পয়সা দাম দিতে হবে বল। কতটা দুধ?

বুড়ি একটু ঘাবড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে বলে, কেন বাবা, পয়সা কেন?

-পয়সা না তো তুমি দুধ পাবে কোথায়?

-ওই যে, বললাম বাবা, আমার মেয়ের বাড়ি থেকে।

-তা হোক, তুমি পয়সা নিয়ে যাও। সেও তো গরিব লোক।

বুড়ি পয়সা নিয়ে চলে গেল বটে কিন্তু সে যে দমে গিয়েছে তার কথাবার্তার ধরনে বেশ বুঝতে পারলাম। মনে একটু কষ্ট হলো বুড়ি চলে গেলে। পয়সা দিতে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি? বুড়ির কী রকম হয়ত মন পড়ে গিয়েছে আমার ওপর, স্নেহের দান- এমন করা ঠিক হয়নি। বুড়ি কিন্তু এ অবহেলা গায়ে মাখল না আদৌ। প্রতিদিন

সকাল হতে না হতেই সে এসে জুটবে।

-অ গোপাল, এই দুটি কচি শসার জালি মোর গাছের, এই ন্যাও। নুন দিয়ে খাও দিকিন মোর সামনে?

-বুড়ি তোমার চলে কীসে?

-ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড্ড ভালো। লোকের ধান ভানে, তাই চাল পায়, আমায় দুটো না দিয়ে খায় না।

-একা থাক?

-তা একদিন মোর ঘরখানা না হয় দেখতি গেলে, অ মোর গোপাল! আমি নতুন খাজুর পাতার চেটাই বুনে রেখে দিয়েছিলাম তোমারে বসতি দেবার জন্যি।

সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না। নানাদিকে ব্যস্ত থাকি। অনেক দিন পরে গ্রামে এসেছি তো! যে কদিন গ্রামে থাকি বুড়ি রোজ সকালে আসতে ভুলবে না। কিছু না কিছু আনবেই। কখনো পাকা আম, কখনো পাতি লেবু, কখনো বা একছড়া কাঁচকলা কি এক-ফালি কুমড়ো। পুনরায় গ্রামে এলাম পাঁচ-ছয় মাস পরে, আশ্বিন মাসের শেষে। কয়েকদিন পরে ঘরে বসে আছি, বাইরের উঠোনে দাঁড়িয়ে কে যেন জিজ্ঞাসা করলে; বাবু ঘরে আছেন গা?

বাইরে এসে দেখি গত জ্যৈষ্ঠ মাসে যাকে বুড়ির সঙ্গে দেখেছিলাম সেই মধ্যবয়সী স্ত্রীলোকটি। আমায় দেখে সলজ্জভাবে মাথার কাপড়টা আর একটু টেনে দেবার চেষ্টা করে সে বললে, বাবু কবে এসেছেন?

-দিন পাঁচ-ছয় হলো। কেন?

-আমার সেই মা পেটিয়ে দিলে, বলে দেখে এসো গিয়ে।

-কে?

-ওই সেই বুড়ি- এখানে যিনি আসত। তেনার বড্ড অসুখ। এবার বোধহয় বাঁচবে না। গোপাল কবে আসবে, গোপাল কবে আসবে- অস্থির, আমারে রোজ শুধায়। একবার দেখে আসুন গিয়ে, বড্ড খুশি হবে তাহলি। বিকেলের দিকে বেড়াতে যাবার পথে দেখতে গেলাম বুড়িকে। বুড়ি শুয়ে আছে একটা মাদুরের ওপর, মাথায় মলিন বালিশ। আমি গিয়ে কাছে দাঁড়াতেই বুড়ি চোখ মেলে আমার দিকে চাইল। পরে আমাকে চিনে ধড়মড় করে বিছানা ছেড়ে উঠবার চেষ্টা করতেই আমি বললাম, উঠো না, ও কী?

বুড়ি আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল, ভালো আছ অ মোর গোপাল? বসতে দে গোপালকে। বসতে দে।

-বসবার দরকার নেই, থাক।

-গোপালেরে ওই খাজুরের চটখানা পেতে দে।

পরে ঠিক যেন আপনার মা কি পিসিমার মতো অনুযোগের সুরে বলতে লাগল, তোর জন্যি খাজুরের চাটাইখানা কদ্দিন আগে বুনে রেখেলাম। ওখানা পুরনো হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তুই একদিনও এলি না গোপাল। অসুখ হয়েছে তাও দেখতে এলি না।

বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল বেয়ে পড়ছে গড়িয়ে। আমায় বলল, গোপাল, যদি মরি, আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস।

আসবার সময় বুড়ির পাতানো মেয়েটির হাতে কিছু দিয়ে এলাম পথ্য ও ফলের জন্য। হয়ত আর বেশি দিন বাঁচবে না, এই অসুখ থেকে উঠবে না।

বুড়ি কিন্তু সে যাত্রা সেরে উঠল।

বছরখানেক আর গ্রামে যাইনি। বোধহয় দেড় বছরও হতে পারে। একবার শরতের ছুটির পর তখনও দুইদিন ছুটি হাতে আছে। গ্রামেই গেলাম এই দুইদিন কাটাতে। গ্রামে ঢুকতেই প্রথমে দেখা পরশু সর্দারের বউ দিগম্বরীর সঙ্গে। দিগম্বরী অবাক হয়ে বলে, ওমা আজই তুমি এলে? সে বুড়ি যে কাল রাতে মারা গিয়েছে। তোমার নাম করলো বড্ড। ওর সেই পাতানো মেয়ে আজ সকালে বলছেল।

আমি এসেছি শুনে বুড়ির নাতজামাই দেখা করতে এল। আমার মনে পড়ল বুড়ি বলেছিল সেই একদিন- আমি মরে গেলে তুই কাফনের কাপড় কিনে দিস বাবা। ওর স্নেহাতুর আত্মা বহু দূর থেকে আমায় আহ্বান করে এনেছে। আমার মন হয়ত ওর ডাক এবার আর তাচ্ছিল্য করতে পারেনি। কাপড় কেনবার টাকা দিলাম। নাতজামাই বলে গেল, মাটি দেওয়ার সময় একবার যাবেন বাবু। বেলা বারোটা আন্দাজ যাবেন।

শরতের কটুতিক্ত গন্ধ ওঠা বনঝোপ ও মাকাল-লতা দোলানো একটা প্রাচীন তিত্তিরাজ গাছের তলায় বৃদ্ধাকে কবর দেওয়া হচ্ছে। আমি গিয়ে বসলাম। আবদুল, শুকুর মিয়া, নসর, আমাদের সঙ্গে পড়ত আবেদালি, তার ছেলে গনি। এরা সকলে গাছের ছায়ায় বসে।

প্রবীণ শুকুর মিয়া আমায় দেখে বলল, এই যে বাবা, এসো। বুড়ির মাটি দেওয়ার দিন তুমি কনে থেকে এলে, তুমি তো জানতে না? তোমায় যে বড্ড ভালোবাসত বুড়ি।

দুজন জোয়ান ছেলে কবর খুঁড়ছে। কবর দেওয়ার পর সকলে এক এক কোদাল মাটি দিল কবরের উপর। শুকুর মিয়া বলল, দ্যাও বাবা- তুমিও দ্যাও।

দিলাম এক কোদাল মাটি। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, ও বেঁচে থাকলে বলে উঠত, অ মোর গোপাল। [সংক্ষেপিত]

উৎস নির্দেশ :
--

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ চক্কোত্তী- ‘চক্রবর্তী’ উপাধির সংক্ষিপ্ত রূপ। পূজারী ব্রাহ্মণের উপাধিবিশেষ।
➠ নড়ি- লাঠি।
➠ অন্ধের নড়ি- অসহায়ের একমাত্র অবলম্বন।
➠ গেয়ালপোরা- গোয়ালভরা।
➠ করাতের কাজ- কাঠ চেরাই করার পেশা।
➠ করাতি- করাত দিয়ে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করে যে।
➠ দাওয়া- রোয়াক। বারান্দা।

পাঠের উদ্দেশ্য :

পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব :
‘আহ্বান’ গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলি থেকে সংকলিত হয়েছে। এটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধনসম্পদে নয়, হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। ধনী-দরিদ্রের শ্রেণিবিভাগ ও বৈষম্য, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব সংস্কার ও গোঁড়ামির ফলে গড়ে ওঠে তাও ঘুচে যেতে পারে- নিবিড় স্নেহ, উদার হৃদয়ের আন্তরিকতা ও মানবীয় দৃষ্টির ফলে। দারিদ্র্য-পীড়িত গ্রামের মানুষের সহজ-সরল জীবনধারার প্রতিফলনও এই গল্পের অন্যতম উপজীব্য। এ গল্পে লেখক দুটি ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও আর্থিক অবস্থানে বেড়ে-ওঠা চরিত্রের মধ্যে সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। গ্রামীণ লোকায়ত প্রান্তিক জীবনধারা শাস্ত্রীয় কঠোরতা থেকে যে অনেকটা মুক্ত সে-সত্যও এ গল্পে উন্মোচিত হয়েছে।

লেখক পরিচিতি :

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার মুরারিপুর গ্রামে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃনিবাস একই জেলার ব্যারাকপুর গ্রামে। বিভূতিভূষণের বাল্য ও কৈশোরকাল কাটে অত্যন্ত দারিদ্র্যে। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯১৬ সালে আইএ উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে এবং ১৯১৮ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাস করেন। তিনি দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন এবং এর পাশাপাশি শহর থেকে দূরে অবস্থান করে নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যসাধনা করেছেন। বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের জীবনকে তিনি তাঁর অসাধারণ শিল্পসুষমাময় ভাষায় সাহজিক সারল্যে প্রকাশ করেছেন। মানুষকে তিনি দেখেছেন গভীর মমত্ববোধ ও নিবিড় ভালোবাসা দিয়ে। তাঁর গদ্য কাব্যময় ও চিত্রাত্মক বর্ণনায় সমৃদ্ধ।

বিভূতিভূষণের কালজয়ী যুগল উপন্যাস পথের পাঁচালী, অপরাজিতা। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- উপন্যাস: দৃষ্টি প্রদীপ, আরণ্যক, দেবযান ও ইছামত; গল্পগ্রন্থ: মেঘমল্লার, মৌরিফুল, যাত্রাবদল ও কিন্নর দল। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন।


বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাট্রিক পাস করেন কত সালে?
উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন।
২. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কোন বিভাগে উত্তীর্ণ হন?
উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
৩. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন কোন জেলায়?
উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় চব্বিশ পরগনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
৪. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেশা কী ছিল?
উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেশা ছিল শিক্ষকতা।
৫. ‘পথের পাঁচালী' উপন্যাসের লেখক কে?
উত্তর : ‘পথের পাঁচালী' উপন্যাসের লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬. “আহ্বান” গল্পের গল্পকথকের পৈতৃক বাড়ির ভিটিতে কী গজিয়েছে?
উত্তর : “আহ্বান” গল্পের গল্পকথকের পৈতৃক বাড়ির ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে।
৭. ‘আহ্বান' গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর : ‘আহ্বান' গল্পটি ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের' রচনাবলি থেকে।
৮. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
৯. ঘর করবার জন্য গল্পকথকের বাবার বন্ধু কোন জিনিস দিয়েছিল?
উত্তর : ঘর করবার জন্য গল্পকথকের বাবার বন্ধু খড়, বাঁশ দিয়েছিল।
১০. গল্পলেখকের বাবার বন্ধু গল্পকথককে কেমন ঘর তুলতে বললেন?
উত্তর : গল্পলেখকের বাবার বন্ধু গল্পকথককে চালাঘর তুলতে বললেন।
১১. “আহ্বান” গল্পের গল্পকথক চক্কোত্তি মশাইকে দেখে কী করলেন?
উত্তর : “আহ্বান” গল্পের গল্পকথক চক্কোত্তি মশাইকে দেখে প্রণাম করলেন।
১২. চক্কোত্তি মশাই গল্পকথককে গ্রামে কোন জিনিস করার কথা বললেন?
উত্তর : চক্কোত্তি মশাই গল্পকথককে গ্রামে বাড়িঘর করার কথা বললেন।
১৩. গল্পলেখক কীসের বাগানের মধ্য দিয়ে বাজারে গেল?
উত্তর : গল্পলেখক আম বাগানের মধ্য দিয়ে বাজারে গেল।
১৪. বাজারে যাবার সময় গল্পকথক বৃদ্ধাকে কোথায় দেখতে পেলেন?
উত্তর : বাজারে যাবার সময় গল্পকথক বৃদ্ধাকে আমগাছের ছায়ায় দেখতে পেলেন।
১৫. কে থাকতে বুড়ির গোলাভরা ধান ও গোয়াল ভরা গরু ছিল?
উত্তর : স্বামী থাকতে বুড়ির গোলাভরা ধান ও গোয়াল ভরা গরু ছিল।
১৬. বৃদ্ধা নড়ি ঠকঠক করতে করতে কোথায় যাচ্ছিল?
উত্তর: বৃদ্ধা নড়ি ঠকঠক করতে করতে বাজারে যাচ্ছিল।
১৭. বৃদ্ধা বুড়িকে দেখা মাত্রই গল্পলেখক কী করলেন?
উত্তর: বৃদ্ধা বুড়িকে দেখামাত্রই গল্পলেখক দাঁড়িয়ে গেলেন।
১৮. ‘তিনি থাকতে অভাব ছিল না কোন জিনিসের'-“আহ্বান” গল্পে এ উক্তিটির ‘তিনি’ কে?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পে এই ‘তিনি’ হলেন বুড়ির স্বামী।
১৯. “আহ্বান” গল্পের বুড়ির স্বামী পেশায় কী ছিলেন?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়ির স্বামী পেশায় করাতি ছিলেন।
২০. স্বামী মারা যাবার পর আপন বলতে জগতে বুড়ির কে বর্তমান আছে?
উত্তর: স্বামী মারা যাবার পর আপন বলতে জগতে বুড়ির বর্তমান আছে এক নাতজামাই।
২১. বুড়ি কাকে উঠোনের কাঁঠালতলায় আপন মনে বকে গেল?
উত্তর: বুড়ি গল্পকথককে উঠোনের কাঁঠালতলায় আপন মনে বকে গেল।
২২. বুড়ি গল্পকথকের জন্য ময়লা ছেঁড়া কাপড়ের প্রান্তে বেঁধে কী নিয়ে এসেছিল?
উত্তর: বুড়ি গল্পকথকের জন্য ময়লা ছেঁড়া কাপড়ের প্রান্তে বেঁধে আম নিয়ে এসেছিল।
২৩. “আহ্বান” গল্পের গল্পকথকের সামনে কে দন্তহীন মুখে হাসবার চেষ্টা করল?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পের গল্পকথকের সামনে বুড়ি দন্তহীন মুখে হাসবার চেষ্টা করল।
২৪. গল্পকথক গ্রামে কার বাড়িতে থাকেন?
উত্তর: গল্পকথক গ্রামে এক জ্ঞাতি খুড়োর বাড়িতে থাকেন।
২৫. “আহ্বান” গল্পের বুড়ির স্বামীর নাম কী?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়ির স্বামীর নাম জমির।
২৬. কে গল্পকথককে বুড়ির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন?
উত্তর: গল্পকথকের খুড়ো মশায় গল্পকথককে বুড়ির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
২৭. বুড়ির আনা আমগুলোকে কী রকম বলে উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: বুড়ির আনা আমগুলোকে কড়া মিষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন।
২৮. “আহ্বান” গল্পের বুড়িকে কে দুধ দিয়েছিল?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়িকে হাজরার বউ দুধ দিয়েছিল।
২৯. “আহ্বান” গল্পের হাজরার বউ বুড়িকে কী বলে ডাকে?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পের হাজরার বউ বুড়িকে মা বলে ডাকে।
৩০. কে বুড়িকে খাবার না দিয়ে খায় না?
উত্তর: হাজরার বউ বুড়িকে খাবার না দিয়ে খায় না।
৩১. হাজরার বউয়ের পেশা কী ছিল?
উত্তর: হাজরার বউয়ের পেশা ছিল ধান ভানা।
৩২. বুড়ি কথিত গোপালকে কী দেখতে যেতে বলে?
উত্তর: বুড়ি কথিত গোপালকে ঘরখানা দেখতে যেতে বলে।
৩৩. বুড়ি গল্পকথকের বসবার জন্য ঘরে কী তৈরি করেছিল?
উত্তর: বুড়ি গল্পকথকের বসবার জন্য ঘরে খেজুর পাতার চাটাই তৈরি করেছিল।
৩৪. গল্পকথক গ্রামে থাকা অবস্থায় কে রোজ সকালে আসতে ভোলে না?
উত্তর: গল্পকথক গ্রামে থাকা অবস্থায় বুড়ি রোজ সকালে আসতে ভোলে না।
৩৫. গল্পকথকের খাবার দুধ কোথা থেকে আসে?
উত্তর: গল্পকথকের খাবার দুধ ঘুঁটি গোয়ালিনীর কাছ থেকে আসে।
৩৬. বুড়ির দৃষ্টিতে ঘুঁটি গোয়ালিনীর দুধে অর্ধেক কী?
উত্তর: বুড়ির দৃষ্টিতে ঘুঁটি গোয়ালিনীর দুধে অর্ধেক জল থাকে।
৩৭. “আহ্বান” গল্পের বুড়ি গল্পকথককে কী নামে ডাকে?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়ি গল্পকথককে ‘গোপাল’ নামে ডাকে।
৩৮. অসুস্থ বুড়িকে গল্পকথক কখন দেখতে গেলেন?
উত্তর: অসুস্থ বুড়িকে গল্পকথক বিকেলে দেখতে গেলেন।
৩৯. “আহ্বান” গল্পের বুড়ি কীসের উপর শুয়েছিল?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়ি মাদুরের উপর শুয়েছিল।
৪০. বুড়ি কাকে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল?
উত্তর: বুড়ি গোপালকে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল।
৪১. “আহ্বান” গল্পে কার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পে বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
৪২. শেষবারে গ্রামে ঢুকতেই গল্পলেখকের কার সাথে দেখা হয়?
উত্তর: শেষবারে গ্রামে ঢুকতেই গল্পলেখকের দিগম্বরীর সাথে দেখা হয়।
৪৩. দিগম্বরী কে?
উত্তর: দিগম্বরী পরশু সর্দারের বৌ।
৪৪. গল্পকথক কার কাছ থেকে প্রথমে বুড়ির মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পায়?
উত্তর: গল্পকথক দিগম্বরীর কাছে থেকে প্রথমে বুড়ির মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পায়।
৪৫. ‘ওর স্নেহাতুর আÍা বহু দূর থেকে আমায় আহ্বান করে এনেছে।’“আহ্বান” গল্পে কার আÍার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পে বুড়ির কথা বলা হয়েছে।
৪৬. “আহ্বান” গল্পে আবদুল, শুকুর, নসর-এরা লেখকের কী হতেন?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পে আবদুল, শুকুর, নসর-এরা লেখকের স্কুল জীবনের বন্ধু হতেন।
৪৭. কারা বুড়ির কবর খুঁড়েছে?
উত্তর: দুজন জোয়ান ছেলে বুড়ির কবর খুঁড়েছে।
৪৮. বুড়ি কার জন্য খেজুর পাতার চাটাই বুনে রেখেছিল?
উত্তর: বুড়ি গল্পকথকের জন্য খেজুর পাতার চাটাই বুনে রেখেছিল।
৪৯. বুড়ি কথিত গোপালের জন্য ঘটিতে কী এনেছিল?
উত্তর: বুড়ি কথিত গোপালের জন্য ঘটিতে দুধ এনেছিল।
৫০. “আহ্বান” গল্পের কার মন বুড়ির ডাক তাচ্ছিল্য করতে পারেনি?
উত্তর: “আহ্বান” গল্পের গল্পলেখকের মন বুড়ির ডাক তাচ্ছিল্য করতে পারেনি।
৫১. গল্পকথক কাপড় কিনতে কার কাছে টাকা দিল?
উত্তর: গল্পকথক কাপড় কিনতে বুড়ির নাতজামাইয়ের কাছে টাকা দিল।
৫২. বুড়িকে আনুমানিক কয়টায় দাফন করা হয়েছিল?
উত্তর: বুড়িকে আনুমানিক বেলা বারোটায় দাফন করা হয়েছিল।
৫৩. বুড়িকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছিল?
উত্তর: বুড়িকে একটা প্রাচীন গাছের তলায় কবর দেয়া হয়েছিল।
৫৪. গল্পকথক পকেট থেকে বুড়িকে কী বের করে দিয়েছিল?
উত্তর: গল্পকথক পকেট থেকে বুড়িকে পয়সা বের করে দিয়েছিল।
৫৫. বাল্যকালে কার মা-পিসি মারা গিয়েছে?
উত্তর: বাল্যকালে গল্পকথকের মা-পিসি মারা গিয়েছে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :

১. চক্রবর্তী মহাশয় গল্পলেখককে কেন চালাঘর তুলতে বললেন?
উত্তর : গ্রামের ছেলে গ্রামে বাস করবে-চক্রবর্তী মহাশয় এই অভিপ্রায়ে গল্পলেখককে চালাঘর তুলতে বললেন।
➠ গল্পলেখক ছিলেন চক্রবর্তী মহাশয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর একমাত্র ছেলে। বন্ধুটি মারা যাবার অনেকদিন পর তার একমাত্র ছেলেকে দেখে সে অত্যন্ত খুশি হয় এবং বন্ধুর ছেলেটিকে গ্রামে মাঝে-মধ্যে আসার জন্য বাবার ভিটায় অন্তত একটি চালাঘর তোলার পরামর্শ দেয়।

২. ‘সেও তো গরিব লোক।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: “আহ্বান” গল্পে গল্পকথক দারিদ্র্যপীড়িত এক অসহায় বৃদ্ধাকে আলোচ্য উক্তিটি করে।
➠ বুড়ি ভালোবেসে তার কথিত গোপালের জন্য তার পাতানো মেয়ের কাছ থেকে খাঁটি দুধ নিয়ে যায়। গোপাল দারিদ্র্যের কারণে বুড়িকে দুধের মূল্য দিতে গেলে বুড়ি ইতস্তত করে। গোপাল বোঝে বুড়ি অর্থের জন্য নয়, হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার জন্যই তার জন্য দুধ নিয়ে আসে। তাই গোপাল বুড়িকে টাকা দিয়ে বলে সেও তো গরিব লোক। বুড়িকে বোঝাতেই গোপাল প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।

৩. বুড়ি গোপালের জন্য কেন দুধ নিয়ে এসেছিল?
উত্তর: গোপাল যে দুধ খেত তার মধ্যে ভেজাল থাকার কারণে বুড়ি গোপালের জন্য এক ঘটি দুধ নিয়ে এসেছিল।
➠ বুড়ি লেখক তথা গোপালকে বড় বেশি ভালোবাসতো। তাই সে গোপালের খোঁজ খবর নিতে আসতো। গোপাল ঘুঁটি গোয়ালিনীর ভেজাল দুধ খাচ্ছে শুনে বুড়ি ব্যথিত হয়েছিল। তাই পাতানো মেয়ের কাছ থেকে চেয়ে দুধ নিয়ে এসেছিল গোপালের জন্য।

৪. বুড়ি ডানহাত উঁচিয়ে তালু আড়ভাবে চোখে ধরলেন কেন?
উত্তর: বুড়ি গল্পকথককে ভালোভাবে দেখতে ডানহাত উঁচিয়ে তালু আড়ভাবে চোখে ধরলেন।
➠ গল্পকথক বাজারে থাকার সময় আম গাছের ছায়ায় এক বৃদ্ধাকে দেখতে পায়। গল্পকথক বৃদ্ধার গ্রামেরই ছেলে। কিন্তু বৃদ্ধা তাকে ভালোভাবে চেনে না। কথোপকথনের এক পর্যায়ে বুড়ি নিজের ডানহাত উঁচিয়ে তালু আড়ভাবে চোখের ওপর ধরে গল্পকথককে চেনার চেষ্টা করে।

৫. গল্পকথককে বুড়ি চিনতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বয়সের কারণে চোখের দৃষ্টি কমে আসায় বুড়ি গল্পকথককে চিনতে পারে না।
অনেকদিন পর হঠাৎ গ্রামে এসে গল্পলেখক গ্রামের বাজারে যেতে আম গাছের ছায়ায় তারই গ্রামের এক বুড়ির সাথে সাক্ষাৎ হয়। বুড়িকে দেখে গল্পলেখক দাঁড়ালেও বুড়ির দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ায় এবং লেখক দীর্ঘদিন বাড়িতে না থাকায় তাকে চিনতে পারে না।

৬. ‘দুধ খেতে পাচ্ছ না ভালো, সে বুঝেছি।’-কথাটির ভাবার্থ লেখ।
উত্তর: বিভূতিভূষণের “আহ্বান” গল্পের বুড়ি দুধের বিশুদ্ধতা নিয়ে গল্পলেখককে এ কথাটি বলেছে।
➠ গ্রামে থাকাবস্থায় গল্পলেখককে ঘুঁটি গোয়ালিনী দুধ দেয়। কিন্তু গোয়ালিনী সম্পর্কে গল্পকথক ভালোভাবে জানে না যে, তার দুধে পানি মেশানো থাকে। গ্রামের বুড়ির সাথে গল্পকথকের বেশ ভাব হয়েছে। তাই বুড়ি দুধের ভেজালের কথা আলোচ্য বাক্যটির মাধ্যমে লেখককে বুঝিয়েছেন।

৭. হাজরার বউ বুড়িকে খেতে দেয় কেন?
উত্তর: হাজরার বউ আন্তরিকতার জন্য বুড়িকে খেতে দেয়।
➠ হাজরার বই ছা-পোষা একজন নারী। সে বুড়িকে ভালোবেসে মা ডেকেছে। তাই উদার মানবিকতার জন্যই সে তার সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের দুমুঠো চাল বুড়ির সাথে একসঙ্গে রান্না করে খায়। এতে হাজরার উদার দৃষ্টিভঙ্গিরই পরিচয় মেলে।

৮. ‘ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড় ভাল' কথাটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: হাজরার বৌ-এর প্রতি বুড়ির কৃতজ্ঞতাবোধের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে এখানে।
➠ বুড়ির আপনজন বলতে এই পৃথিবীতে তার এক নাতজামাই ছাড়া কেউ নেই। কিন্তু সেই নাতজামাই বুড়িকে দেখে না। পাতানো এক মেয়ে কষ্ট হলেও তাকে ভরণপোষণ দেয়। তাই গল্পকথক যখন বলে খাওয়া-দাওয়া কোথায় হয়, তখন বুড়ি হাজরার বৌ-এর কথা বলে তার কৃতজ্ঞতাবোধ স্বীকার করে।

৯. বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: অনেক প্রতীক্ষার পর গোপাল অসুস্থ বুড়িকে দেখতে আসে বলে বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
➠ বুড়ি গোপালকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। তাই তার বিশ্বাস তার এই দুর্দিনে তার øেহের গোপাল হৃদয়ে টানে তার কাছে আসবেই। বুড়ির টানেই শেষ পর্যন্ত গল্পকথক বুড়িকে দেখতে যায়। তাইতো আনন্দে বুড়ির চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।

১০. গল্পকথকের গ্রাম ছাড়ার পর বুড়িকে স্মরণ না থাকার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: গ্রাম থেকে ফিরে গল্পকথক আবারও কলকাতায় গিয়ে নিজ কাজে ব্যস্ত থাকায় বুড়িকে ভুলে যান।
➠ গল্পকথক গ্রামে আসার পর বুড়ি যেভাবে তাকে ভালোবেসে আপন করে কাছে টেনেছে, সেভাবে গল্পকথক বুড়িকে আপন ভাবতে পারেনি। তবে বুড়ির প্রতি তার যে মায়ামমতা ছিল না তা কিন্তু নয়। কর্মব্যস্ততার কারণেই বুড়িকে তার স্মরণে আসেনি।

১১. গল্পকথক বুড়িকে পকেট থেকে পয়সা বের করে দিলেন কেন?
উত্তর: বুড়ির অভাব-অভিযোগ আর কষ্টের কথা শুনে গল্পকথক বুড়িকে পকেট থেকে পয়সা বের করে দিলেন।
➠ স্বামী বেঁচে থাকতে বুড়ির কোনো অভাব না থাকলেও বর্তমানে বুড়ির এক নাতজামাই থাকা সত্ত্বেও তার খাবারের কষ্ট। বয়সের ভারে কাজ করার সামর্থ্য নেই। বুড়ির এই কষ্টের কথা শুনে গল্পলেখক নিজ পকেট থেকে মানবতার খাতিরে পয়সা বের করে দিলেন।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ১:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন দিন মজুর কেরামত। হঠাৎ দেখতে পান মৃতপ্রায় একটি শিশু পথের ধারে পড়ে আছে। পরম যতেœ তিনি শিশুটিকে ঘরে তুলে আনেন। নিজের ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাবের সংসারে স্ত্রী প্রথমে খানিকটা আপত্তি করলেও শিশুটির অবস্থা দেখে তিনিও বুকে জড়িয়ে ধরেনবড় করতে থাকেন নিজের সন্তান পরিচয়ে।

ক. বুড়িকে মা বলে ডাকত কে?
খ. ‘স্নেহের দান এমন করা ঠিক হয়নি’-কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. কেরামত দম্পতির মধ্য দিয়ে “আহ্বান” গল্পের কোন বিশেষ দিকটির ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে।’-উদ্দীপক ও “আহ্বান” গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

ক. বুড়িকে মা বলে ডাকত হাজরা ব্যাটার বউ।
খ. লেখক খাঁটি দুধ খেতে পায় না শুনে বৃদ্ধা তাঁর জন্য দুধ নিয়ে এলে লেখক তাকে রূঢ় স্বরে দুধের দাম জিজ্ঞাসা করে টাকা দিলে বুড়ি বিব্রত হয়ে টাকা নিয়ে চলে যায়। তখন অনুশোচনায় লেখক উক্ত উক্তিটি করেন।
➠ বুড়ি জানতে পারেন যে, ঘুঁটি গোয়ালিনীর জল মেশানো দুধ লেখক খান। তখন সন্তান স্নেহে লেখকের জন্য বুড়ি এক ঘটি দুধ হাজরা ব্যাটার বৌয়ের কাছ থেকে চেয়ে আনেন। লেখক তার দাম দিয়ে দিলে বুড়ি মনঃক্ষুণœ হয়ে চলে যান। লেখক তখন ভাবেন স্নেহের দানের আর্থিক প্রতিদান দেয়া ঠিক হয়নি। এটা ভেবে লেখক উক্ত উক্তিটি করেন।

গ. কেরামত দম্পতির মধ্যে ‘আহ্বান’ গল্পের সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং মানবিক চেতনার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।
➠ মানুষের মন অত্যন্ত সংবেদনশীল। সন্তানের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা মানুষের একটা সহজাত ধর্ম। কিন্তু সন্তানতুল্য অপরের সন্তানের প্রতি অপরিসীম স্নেহ-ভালোবাসা মানুষের এই সংবেদনশীল মনের পরিচায়ক।
➠ উদ্দীপকের কেরামত দম্পতির মধ্যে এমনই মনের পরিচয় পাওয়া যায়। যা ‘আহ্বান’ গল্পের স্নেহ-ভালোবাসা ও উদার মানবিকতার প্রতি ইঙ্গিত করে। কেরামত দম্পতি একটা পথে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুর প্রতি যে স্নেহ-ভালোবাসা প্রকাশ করেন তা সত্যিই বিরল। শিশুটির প্রতি তাঁদের এই মায়া বা স্নেহ-মমতা উদার মানবিকতার পরিচয় দেয়। যা ‘আহ্বান’ গল্পেও লক্ষ করা যায়। গল্পে দেখা যায়, লেখক ও দরিদ্র মুসলমান বৃদ্ধার মাঝে স্নেহ-ভালোবাসার উদার মানবিক সম্পর্ক। যেখানে শ্রেণি-বৈষম্য, জাতপাত বা ধর্মভেদ কোনো বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানবিকতাকে স্থান দেওয়া হয়েছে গল্পটিতে। সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত এই ভাবের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে উদ্দীপকটিতে।

ঘ. মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। উদ্দীপক এবং ‘আহ্বান’ গল্প অনুসারে মন্তব্যটি যথার্থ। মানুষ মানুষের জন্য সংবেদনশীলতার হাত বাড়িয়ে দেবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। অথচ এটা এখন শুধুই একটা মানবিক বুলিমাত্র। সর্বত্রই মানুষের মাঝে স্বার্থান্বেষী চিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়। সেখানে স্নেহ-মায়া-মমতা একটা বোকামিপূর্ণ আচরণ মনে হয়।
➠ উদ্দীপকে রহমান দম্পত্তির মাঝে যে মানবিক আচরণ লক্ষ করা যায় তা সত্যিই বিরল। রহমান দিনমজুর হলেও পথের এক মৃত-প্রায় শিশুকে বুকে তুলে নিয়ে আসে। সন্তানদের ভরণ-পোষণ না দিতে পারলেও তার স্ত্রী তাকে সন্তান স্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরে। এখানে যে স্নেহ-মমতা-প্রীতির বাঁধন তা কোনো ধন-সম্পদের নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে উঠেছে। ‘আহ্বান’ গল্পেও এমন ভাবের পরিচয় পাওয়া যায় লেখক এবং বৃদ্ধার স্নেহ-ভালোবাসা আদান-প্রদানের সাথে।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পে এক উদার মানবিক সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়। লেখক এবং বৃদ্ধার মাঝে যে মা-সন্তানের স্নেহের সম্পর্ক, তাতে কোনো ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, ধর্মের প্রভেদ কিংবা, জাতিভেদ বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। লেখকের প্রতি বুড়ির স্নেহের দাবি সকল বাধাকে অতিক্রম করে মানবতার জয় ঘোষণা করেছে। লেখকও তার হৃদয়ে মুসলমান বৃদ্ধার মাঝে মায়ের বা পিসিমার ছায়া দেখতে পেয়েছেন। তাঁকে মাতৃজ্ঞানে ভালোবেসেছেন। তাঁর শেষ আহ্বানে মনের অজান্তে তাঁর অন্তিম যাত্রায় উপস্থিত হয়েছেন। এই যে আত্মিক বন্ধন এটা স্নেহ-মায়ামমতা প্রীতির বাঁধন, এটা শুধু নিবিড় আন্তরিকতায় গড়ে ওঠে। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ২:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কাঙালির মা ছোটজাত, দুলের মেয়ে বলিয়া কাছে যাইতে সাহস পাইল না, তফাতে একটা উঁচু ঢিপির মধ্যে দাঁড়াইয়া সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত উৎসুক আগ্রহে চোখ মেলিয়া দেখিতে লাগিল। প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত চিতার পরে যখন শব স্থাপিত করা হইল তখন তাহার রাঙ্গা পা-দুখানি দেখিয়া তাহার দু’চক্ষু জুড়াইয়া গেল, ইচ্ছা হইল ছুটিয়া গিয়া একবিন্দু আলতা মুছাইয়া লইয়া মাথায় দেয়। বহুকণ্ঠের হরিধ্বনির সহিত পুত্রহস্তের মন্ত্রপুত অগ্নি যখন সংযোজিত হইল তখন তাহার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল, মনে মনে বারংবার বলিতে লাগিল, ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্চো-আমাকেও আশীর্বাদ করে যাও, আমিও যেন এমনি কাঙালির হাতের আগুনটুকু পাই। ছেলের হাতের আগুন! সে ত সোজা কথা নয়![সূত্র: অভাগীর স্বর্গ- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]

ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোন গ্রামে?
খ. বুড়ি কেন দমে গেলেন?
গ. উদ্দীপকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি অন্তিম শয়নের বিষয়ের বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের কাঙালির মা এবং ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার প্রত্যাশার ধরন এক।”- মন্তব্যটি যাচাই কর।

ক. বিভূতিভূষণের পৈতৃক নিবাস ব্যারাকপুর গ্রামে।
খ. লেখক রুক্ষ স্বরে দুধের দাম জিজ্ঞাসা করায় বুড়ি প্রথমে খুব দমে গেলেন।
➠ লেখকের দুধের জোগান দেয় ঘুঁটি গোয়ালিনী। একথা শুনে বুড়ি বলেন ‘এর তো অর্ধেক জল’। এজন্য তিনি তাঁর পাতানো মেয়ের কাছ থেকে খাঁটি দুধ চেয়ে লেখকের জন্য নিয়ে আসেন। তখন লেখক বুড়িকে দাম দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদায় করার জন্য বেশ রুক্ষ স্বরে তার দাম জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু স্নেহের দানের আর্থিক প্রতিদান দিতে গেলে বুড়ি অপ্রস্তুত হন এবং লেখকের রুক্ষ স্বরে তিনি দমে যান।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বা অন্তিম শয়ানের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
➠ এ পৃথিবী থেকে সকলেরই এক সময় বিদায় নিতে হয় । কারো আগে, কারো পরে। কেউ বা রাজকীয়ভাবে অন্তিম যাত্রা করে, কেউ বা দীনহীনভাবে অন্তিম শয়ানে শায়িত হয়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, কর্তা গিন্নি বা ভাগ্যিমানী মার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত চিতার পরে বা তার শব বা মৃতদেহ শায়িত। তার রাঙা দুখানি গায়ে আলতা মাখা। সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহিণী হওয়ায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও আড়ম্বরের সাথে সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু ‘আহ্বান’ গল্পে বুড়ির শব যাত্রা বা কবর দেওয়ার বিষয়টি নিতান্ত সাদামাটা। প্রাচীন একটা বৃক্ষের নিচে বৃদ্ধাকে কবর দেওয়া হবে। দুজন লোক তার কবর খুঁড়ছে। সেখানেই বৃদ্ধাকে চিরদিনের মতো শোয়ানো হবে। বিষয়ের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকের কাঙালির মা এবং ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার প্রত্যাশার ধরন এক।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষের কিছু অন্তিম ব্যবস্থা থাকে। তারা মনে করে সেটা পেলে মরেও শান্তি পাবে। যেমন কাঙালির মা মৃত্যুর পর তাঁর ছেলের হাতের মুখাগ্নির প্রত্যাশা করে স্বর্গে যাওয়ার জন্য এবং ‘আহ্বান’ গল্পে বৃদ্ধা লেখকের কাছে কাফনের কাপড় প্রত্যাশা করে।  উদ্দীপকে দেখা যায়, ছোট জাতের মেয়ে কাঙালির মা ও বাড়ির কর্তা গিন্নির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখে ভাবে তার মৃত্যুর পর যদি তার ছেলে কাঙালির হাতের আগুন পায় তবে তিনি স্বর্গে যেতে পারেন। কাঙালির মায়ের এই প্রত্যাশার চিত্র দেখা যায় ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার মাঝে। তিনিও লেখকের কাছে কাফনের কাপড় প্রত্যাশা করেছেন।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পে দেখা যায় বৃদ্ধ লেখককে সন্তানের মতো ভালোবাসেন। তিনি আম, শসা, দুধ ইত্যাদি দিয়ে তাঁর মাতৃস্নেহের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। লেখক প্রথমে সংকোচ বোধ করলেও পরে এটাকে স্বাভাবিকভাবে ও শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করেন। তখন নিঃসন্তান বৃদ্ধা লেখকের কাছে বলেন, ‘আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস বাবা।’ বুড়ির এই প্রত্যাশার মাঝে প্রকাশিত হয়েছে সন্তানের কাছে বৃদ্ধা মায়ের দাবি বা আবদার। যা কাঙালির মায়ের প্রত্যাশায় প্রকাশিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম, “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরে আসি-
“কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”

ক. বুড়ি কী কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল?
খ. বুড়ির আগে এ পাড়া ও পাড়া আসা-যাওয়া করতে হতো না কেন?
গ. উদ্দীপকের কবি ‘আহ্বান’ গল্পের কোন চরিত্রকে নির্দেশ করে?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।’ ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে চরণটির মর্মার্থ সম্পূর্ণভাবে যথার্থ নয়।- মন্তব্যটি বিচার কর।

ক. বুড়ি নুন কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল।
খ. বৃদ্ধার স্বামী বেঁচে থাকতে তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সচ্ছল ছিল তাই ভিক্ষা করার জন্য তাঁর এপাড়া ওপাড়া যাতায়াত করতে হতো না।
➠ বৃদ্ধার স্বামী জমির করাতির বেশ সচ্ছল অবস্থা ছিল। গোলাভরা ধান। আর গোয়ালভরা গরু নিয়ে ছিল বুড়ির সোনার সংসার। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সংসারের দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ ছিল না, তাই তিনি এখন পথের ভিখারিনি। এজন্য তাঁকে এপাড়া ওপাড়া করতে হয়, যা স্বামী বেঁচে থাকতে করতে হতো না।

গ. উদ্দীপকের কবি ‘আহ্বান’ গল্পের লেখক চরিত্রকে নির্দেশ করে।
➠ প্রিয় হারানোর বেদনায় সবাই আহত হয়। কেউ চায় না তার প্রিয় কেউ চিরদিনের মতো পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাক। কিন্তু নিয়তির বিধানে সবাইকেই চলে যেতে হয়। কেউ আগে যায়, কেউ বা পরে। যারা আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তাদের কাছের মানুষের কাছে সে শূন্যতার বেদনা অসহনীয়।
➠ উদ্দীপকে কবির অন্তরে দেখা যায় প্রিয় জনকে হারানোর বেদনা। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে কবি শোকে মুহ্যমান। তার প্রিয় যে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে হারিয়ে গেছে এ কথা তিনি কোনোমতেই ভুলতে পারছেন না। বার বার তাকে মনে পড়ছে। এমনই প্রিয় হারানোর বেদনা অনুভব করেছেন ‘আহ্বান’ গল্পের লেখক মাতৃস্থানীয়া বৃদ্ধার মৃত্যুতে। বৃদ্ধা তাঁকে মায়ের মতোই স্নেহ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর লেখক সেখানে উপস্থিত হন অজানা আহ্বানে সাড়া দিয়ে। লেখকের হৃদয়ও শোকে মুহ্যমান। এক্ষেত্রে উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।’ এ চরণটির ভাব ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে পুরোপুরি যথার্থ নয়।
➠ বিচ্ছেদ ব্যথায় সকলেই কাতর হন। উদ্দীপকের কবিও বিচ্ছেদ ব্যথায় কাতর। প্রিয়জন তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে বহুদূরে। সেই শোকে তিনি মুহ্যমান। তাইতো তিনি ঋতুরাজকেও উপেক্ষা করেন। কিন্তু সকলের বিচ্ছেদ-ব্যথা এই রকম গভীর নাও হতে পারে।
➠ উদ্দীপকের কবি প্রিয়জন হারানোর শোকে কাতর। পৃথিবীর কোনোকিছুই তার ভালো লাগে না। তাইতো এ পৃথিবীতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন তিনি টের পান না। যে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে চলে গেছে শূন্য হাতে, তাকে তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারেন না। উদ্দীপকের এই চরণটির মর্মার্থ ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে যথার্থ নয়।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের বিচ্ছেদ-ব্যথা বা প্রিয় হারানোর ব্যথা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গল্পে দেখি মাতৃস্থানীয়া এক বৃদ্ধা লেখককে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। স্নেহ করতেন। লেখককে তিনি নানারকম খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে শান্তি পেতেন। তাঁর আপত্য স্নেহে লেখক সিক্ত হয়েছিলেন এবং বৃদ্ধাকে মায়ের মতো ভালোও বেসেছিলেন। সেই বৃদ্ধার মৃত্যুতে তিনিও মর্মাহত। কিন্তু উদ্দীপকের কবির মতো তীব্র নয় তাঁর বেদনার রং। তাকে যে কোনো মতে ভুলতে পারেন না, এমনটি নয়। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মানুষের লোভ ও ধর্মান্ধতার যূপকাষ্ঠে সৌদামিনীর মাতৃহৃদয় বলিপ্রাপ্ত হলেও তার মাতৃহৃদয়ের হাহাকারের মধ্যেও ধ্বনিত হতে থাকে মানবতার জয়গান; তার মাতৃত্বের কাছে ধর্ম, অর্থ ও অপর সকলের পরাভব ঘটে। ক. লেখকের বাবার বন্ধু কে?
খ. লেখক বুড়িকে কেন পয়সা দিলেন?
গ. উদ্দীপকে সৌদামিনী ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির কোন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘আহ্বান’ গল্পে গাওয়া হয়েছে মানবতার জয়গান।”- ব্যাখ্যা কর।

ক. লেখকের বাবার বন্ধু হলেন চক্কোত্তি মশায়।
খ. বৃদ্ধার কষ্ট ও অসহায়ত্ব দেখে লেখকের মায়া হওয়ায় তিনি পয়সা দিলেন।
➠ গ্রামে ফিরে একদিন লেখকের সাথে এক বৃদ্ধার দেখা হয়। তিনি তখন বাজারে চলছিলেন তিন পয়সার লবণ কিনতে। তখন বৃদ্ধার মুখে তার অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যের কথা শুনে লেখকের মায়া হয়। তখন তিনি পকেট থেকে কিছু পয়সা বের করে বৃদ্ধাকে দেন।

গ. উদ্দীপকের সৌদামিনী ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির মাতৃস্নেহের বা মাতৃত্বের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে।
➠ প্রতিটি মায়ের কাছে স্নেহের ধন হলো তার সন্তান। নিজের চেয়েও তিনি সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা একেবারে অকৃত্রিম। সেখানে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ থাকতে পারে না।
➠ উদ্দীপকে সৌদামিনীর মাতৃহৃদয়ের কথা বলা হয়েছে। সন্তানের জন্য তাঁর মাতৃহৃদয়ের হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে। তবু তার ভিতরে লক্ষ করা যায় মানবিকতার জয়গান। তার মাতৃত্বের কাছে ধর্ম, অর্থ স্থান পায়নি। ‘আহ্বান’ গল্পেও এ ভাবটি লক্ষ করা যায় বৃদ্ধার মাঝে। তিনি মুসলমান হয়েও হিন্দুর ছেলে লেখকের প্রতি মাতৃস্নেহে বিগলিত হন। মায়ের মতো স্নেহের সম্বোধন, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে প্রশান্তি অনুভব-এ সবই মানবিকতার জয়গান ঘোষণা করে। উভয় চরিত্রে এখানেই সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘আহ্বান’ গল্পের গাওয়া হয়েছে মানবতার জয়গান।”মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ মানবিকতার কাছে সবকিছু হার মানে। শত বাধা-বিপত্তি প্রতিকূলতা ধুয়ে-মুছে যায় এর মহাশক্তির কাছে। ধর্ম-জাতি-শ্রেণি সকল ভেদ এখানে এসে একাকার হয়ে যায়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, মানবিকতার জয়গান গাওয়া হয়েছে। মানুষের লোভ ও ধর্মান্ধতার যূপকাষ্ঠে সৌদামিনীর মাতৃহৃদয় বলি প্রাপ্ত হয়েছে। তবু তা অকৃত্রিম অম্লান রয়েছে। তার মাতৃহৃদয়ের হাহাকারের মধ্যেও ধ্বনিত হয়েছে মানবতার জয়গান। তার মাতৃত্বের কাছে ধর্ম, অর্থ সকল কিছুর পরাভব ঘটেছে। এমনই মানবতার জয়গান গাওয়া হয়েছে ‘আহ্বান’ গল্পে।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। মানুষের স্নেহ-মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যা পাওয়া যায় তা ধন-সম্পদের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার মাধ্যমে সে বাঁধন পোক্ত হয়। ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-জাতি সবকিছুর ব্যবধান ঘুচে যায় উদার হৃদয়ের আন্তরিকতা ও মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গির ফলে। এ গল্পে লেখক দুটি ভিন্ন ধর্ম ও আর্থিক অবস্থানে থাকা চরিত্রের মধ্যে সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যা মানবিক, তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জরিনা যৌবনে বিধবা হয়। তার স্বামী আফজাল মিয়া মারা যায় এক দুর্ঘটনায়। তার সম্বল একমাত্র ছেলে রহিমকে অনেক কষ্ট করে লালন পালন করে সৌদি আরবে পাঠায় টাকা কামাইয়ের জন্য। ছয় মাসের মাথায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মরার সময় সে তার একমাত্র ছেলেকে দেখার আকুলতা প্রকাশ করে। মৃত্যুশয্যায় শায়িত হয়ে সে বলে আমার রহিমকে বলিও আমার কবরে পাশে যেন একটি মসজিদ বানায়।

ক. জরিনার স্বামীর নাম কী?
খ. ‘দুধ খেতি পাচ্ছ না ভালো সে বুঝেচি’-কে, কেন কথাটি বলেছেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের কোন বিষয়টি তুলে ধরেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের শেষের দুই বাক্যে ‘আহ্বান’ গল্পের মর্মার্থ লুকিয়ে আছে।”- মন্তব্যটি যাচাই কর।

ক. জরিনার স্বামীর নাম আফজাল মিয়া।
খ. ঘুঁটি গোয়ালিনী লেখককে দুধের জোগান দেয় শুনতে পেয়ে বুড়ি কথাটি বলেছেন।
➠ বুড়ি লেখককে জিজ্ঞাসা করেন কোথায় তার খাওয়া-দাওয়া হয়। লেখক বলেন, তার জ্ঞাতি খুড়োর বাড়ি। তখন বুড়ি জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে, ঘুঁটি গোয়ালিনীর কাছ থেকে দুধ রাখা হয়। তখন বুড়ি বলেন, ওর দুধ! অর্ধেক জল। তাই বুড়ি উক্ত কথাটি বলেন।  উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরেছে।
➠ দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর বৃদ্ধার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর আগে তিনি অনেকবার গোপালের কথা অর্থাৎ লেখকের কথা বলেছিলেন গোপালকে দেখতে চেয়েছিলেন মাতৃহৃদয়ের দাবি থেকে। অবশেষে বাসনাকে অপূর্ণ রেখে পরপারে পাড়ি জমালেন।
➠ উদ্দীপকে সেই খবরই লেখককে দেয় পরশু সরদারের স্ত্রী দিগম্বরী। সে লেখককে জানায় যে, বুড়ি কাল রাতে মারা গিয়েছে। মৃত্যুর আগে তার নাম করেছেন কিন্তু আল্লাহ বা ঈশ্বর তার ডাক শোনেনি। গোপালকে দেখার বাসনা নিয়েই তাঁর পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে। এটি ‘আহ্বান’ গল্পের শেষ দিকের চিত্র। সেখানে লেখক তার নাত-জামাইয়ের হাতে বুড়ির শেষ অনুরোধ অনুযায়ী কাফনের কাপড় কেনার জন্য টাকা তুলে দেন। উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি গল্পের বৃদ্ধার মৃত্যু ও তার পরবর্তী দৃশ্যগুলো আমাদের চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

গ. “উদ্দীপকের শেষ দুই বাক্যে ‘আহ্বান’ গল্পের মর্মার্থ লুকিয়ে আছে”-মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। এ কথাটিই গল্পের মাঝে বিশেষভাবে প্রতিধ্বনিত হয়।
➠ উদ্দীপকের শেষ দুই বাক্যে গল্পের মর্মার্থ লুকিয়ে আছে। এখানে বলা হয়েছে, “ওর স্নেহাতুর আত্মা বহুদূর থেকে আমায় আহ্বান করে এনেছে। আমার মন হয়তো ওর ডাক এবার তাচ্ছিল্য করতে পারেনি” উক্ত বাক্য দুটিতে ‘আহ্বান’ গল্পের মর্মার্থ পরিলক্ষিত হয়।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ঘুচিয়ে কুসংস্কার আর ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করে উদার হৃদয়ের আন্তরিকতা ও মানবীয় গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। গল্পের লেখক হিন্দু জেনেও মুসলমান বৃদ্ধার মাতৃøেহের প্রকাশ গল্পটিকে আরও মানবিক করে তুলেছে। লেখকও তাকে মায়ের আসনে বসিয়েছেন। শ্রদ্ধার সাথে তার সকল দান গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর ‘অ-মোর গোপাল আমার, কাফনের কাপড় তুই কিনে দিসি বাবা’ অনুরোধকে অনিবার্য আহ্বান হিসেবে উপলব্ধি করেছেন, যা সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত উদার হৃদয়ের পরিচায়ক। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আজিজ সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে দেখে তার পৈতৃক ভিটা জঙ্গলে ভরে গেছে। শেয়াল বাসা বেঁধেছে। সে অনেকক্ষণ উজাড় বাড়িটির দিকে চেয়ে রইল। মনের আয়নায় ভেসে উঠল মা-বাবার স্মৃতি- তার ছেলেবেলার অনেক কথা, অনেক ব্যথা। দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা তপ্ত অশ্রু। আজিজ সিদ্ধান্ত নেয়, সে এখন থেকে পিতার ভিটায় বাস করবে।

ক. লেখক কার কাছ থেকে দুধ রাখতেন?
খ. ‘অ-গোপাল আমার’ সম্বোধনটি লেখকের কেন ভালো লাগল?
গ. উদ্দীপকের আজিজের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পে কার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেনি”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক. লেখক ঘুঁটি গোয়ালিনীর কাছ থেকে দুধ রাখতেন।
খ. উক্ত সম্বোধনের মধ্যে মা-পিসিমার স্নেহের সম্বোধন প্রকাশ পাওয়ায় লেখকের ভালো লাগল।
➠ গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে লেখক গ্রামের এক বুড়ির সাথে পরিচিত হওয়ার পর লেখক তাকে কিছু টাকা দেন। পরদিন সকালে বুড়ি লেখকের খোঁজে আসেন। তখন বুড়ি লেখককে ‘গোপাল’ বলে সম্বোধন করে। লেখক প্রথমে অবাক হলেও পরে তাঁর ভালো লাগে। কারণ উক্ত সম্বোধনের মধ্যে তিনি অনুভব করেছিলেন মা-পিসিমার øেহের পরশ।

গ. উদ্দীপকের আজিজের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
➠ প্রত্যেকেই তাঁর জন্মভূমির মাটির প্রতি টান অনুভব করে। জন্মভূমির শীতলতায় এসে সবারই তৃপ্ত আত্মা শীতল হয়। উদ্দীপকের আজিজ এবং ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের মাঝে এমন প্রশান্তি লক্ষ করা যায়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, আজিজ অনেকদিন পর গ্রামে ফিরে আসে। এসে দেখে তার পৈতৃক বাড়িটা জঙ্গলে পরিপূর্ণ। তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর অনেকদিন গ্রামে না আসার জন্য এই অবস্থা। অনেকদিন পর গ্রামে এসে তার খুব ভালো লাগে। ফেলে আসা অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামে ঘর তুলে এখন থেকে মাঝে মাঝে এসে থাকবে। আজিজের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের সাথে। লেখকও অনেকদিন পর গ্রামে এসে দেখেন তার বাড়ি জঙ্গলে পরিপূর্ণ। কিন্তু তিনিও সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে ঘর তুলে মাঝে মাঝে এসে থাকবেন। উভয় চরিত্রে জন্মভূমির প্রতি মমতা ও ভালোবাসার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেনি।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ যে দেশের মাটিকে ভালোবাসে না, অবহেলা করে সে নরাধম। দেশকে ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। উদ্দীপকের আজিজ এবং ‘আহ্বান’ গল্পের লেখক দেশের মাটিকে ভালোবেসে সেখানে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে।
➠ উদ্দীপকের চিত্রে জন্মভূমির মাটিকে ভালোবাসা ও তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় পাই। কিন্তু এ বিষয়টি ‘আহ্বান’ গল্পের অনেক বিষয়ের মধ্যে একটি মাত্র বিষয়। তারেকের নিজ গ্রামে প্রত্যাবর্তন এবং সেখানে বসবাসের সিদ্ধান্ত ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের জন্মভূমির মাটিতে ফিরে আশার বিষয়টি তুলে ধরেছে। কিন্তু ‘আহ্বান’ গল্পে এর সাথে আরও বিভিন্ন ভাবের অবতারণা ঘটেছে।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। গ্রামে ফিরে এসে বসবাস করাটি এখানে একটি অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে। গল্পে প্রকাশিত দিকগুলোতে বলা হয়েছে, মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। শ্রেণি-বৈষম্য, জাতিভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি একসময় ঘুচে যেতে পারে নিবিড় স্নেহ ও উদার হৃদয়ের মানবীয় দৃষ্টির ফলে। লেখক যে সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থই হয়েছে।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বললাম-এসো বুধের মা, কি মনে করে? অনেকদিন পরে দেখলাম।
-আর বাবা! গাঁয়ে ঘরে থাক না, তা কি করে দেখবা? বাত হয়েছে বাবা। এখন একটু সামলেছি। তাই উঠে হেঁটে বেড়াচ্ছি।
-হাতে কি?
-গোটাকতক কাগজি লেবু। বলি, দিয়ে আসি যাই। তুমি আর আমার পঞ্চা দুমাসের ছোটবড়। তুমি হলে ভাদ্র মাসে, পঞ্চা হয়েছে আষাঢ় মাসে। তা আমায় ফেলে চলে গেল।
[সূত্র: বুধোর মায়ের মৃত্যু- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]

ক. কে লেখককে ঘর তোলার জন্য অনুরোধ করলেন?
খ. ‘নারী রূপের অপূর্ব পরিণতি’ বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকটির সাথে আহ্বান গল্পের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে?
ঘ. “উদ্দীপকের বুধোর মা ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি চরিত্রের প্রতিরূপ।”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

ক. চক্কোত্তি মশায় লেখককে ঘর তোলার জন্য অনুরোধ করলেন।
খ. উক্ত বাক্যটি দ্বারা লেখক শ্রদ্ধার সাথে নারীর মাতৃরূপের প্রশস্তি গেয়েছেন।
➠ কালের পরিক্রমায় মানুষের সবকিছু একটি পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এ রকম নারী রূপেরও ক্রমশ পরিণতি পায়। মা, বোন, স্ত্রী, সবাইকে এক সময় সময়ের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়। সেখানে তারা পূর্ণতার স্বাদ অনুভব করে। তাদের সেই পরিণতি অবস্থায় দেখলে আবহমান মাতৃরূপ বারবার মনে পড়ে। এমন ভাবেই প্রকাশ ঘটেছে উক্ত বাক্যে।

গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের মাতৃøেহের বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ প্রতিটি নারীর মাঝেই লুকিয়ে থাকে মাতৃহৃদয়। উপযুক্ত পরিবেশে তার এই হৃদয়ের আকুতি প্রকাশিত হয়। যার সন্তান নেই সেও অন্যের সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ প্রকাশ করতে চায়। ‘আহ্বান’ গল্পে এবং উদ্দীপকে এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায় বুধোর মার হৃদয়ে মাতৃøেহ জেগে উঠেছে। তাই তিনি বাতের ব্যথা নিয়েও লেখককে দেখতে এসেছেন। লেখকের জন্য তিনি গোটাকতক কাগজিলেবু এনেছেন। কারণ লেখকের মধ্যে তিনি তার মৃত ছেলে পঞ্চার ছায়া দেখতে পেয়েছেন। এ বিষয়টি লক্ষ করা যায় ‘আহ্বান’ গল্পে। এখানে দেখা যায় বুড়ির নিজের কোনো সন্তান নেই। লেখককে তিনি সন্তানের মতো স্নেহ করেন। তাইতো তিনি লেখকের জন্য আম, শসা, দুধ নিয়ে আসেন। বসতে দেয়ার জন্য খেজুরের চাটাই বুনে রাখেন। গল্পের এই ভাবটিই উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকের বুধোর মা ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধা চরিত্রের প্রতিরূপ।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা সেটি চিরন্তন ও স্বাভাবিক। আর এই ভালোবাসা আছে বলেই সমাজ এখনো টিকে আছে। আপনজনহীন মানুষও ভালোবাসার ছোঁয়া পেলে হাত বাড়িয়ে দিতে চায়।
➠ উদ্দীপকে বুধোর মা লেখকের প্রতি যে-ভালোবাসা ও মাতৃøেহের পরিচয় দিয়েছেন তাতে ঐ বিষয়টিই প্রমাণিত হয়। তিনি বাতের ব্যথাকে তুচ্ছ করে লেখকের জন্য গোটাকতক লেবু নিয়ে চলে আসেন। তার মনে হারানো ছেলের স্মৃতি জেগে ওঠে। মাতৃত্বের চরম নিদর্শন লক্ষ করা যায় এখানে। এই বুধোর মা যেন ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধা চরিত্রের প্রতিরূপ।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পে বুড়ি মাতৃøেহের বাস্তব নিদর্শন। সন্তানহীনা বৃদ্ধা লেখককে সন্তানের øেহে ভালোবেসেছেন। তার জন্য কখনো আম, কখনো গাছের দুটি কচি শসা, কখনো বা এক ঘটি দুধ এনে হাজির করে। যাতে মাতৃøেহের চরম নিদর্শন প্রকাশিত হয়। বৃদ্ধাকে বারণ করা সত্ত্বেও কোনো না কোনো সময় কিছু নিয়ে হাজির হবেই। লেখককে তিনি ‘গোপাল’ নামে সম্বোধন করে মাতৃস্নেহের চরম প্রকাশ ঘটান। এই বৃদ্ধা চরিত্রের প্রতিরূপই উদ্দীপকের বুধোর মা। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
নদীর চরে গর্ত খুঁড়িয়া অভাগীকে শোয়ান হইল। রাখালের মা কাঙালির হাতে একটা খড়ের আঁটি দিয়া তাহারই হাত ধরিয়া মায়ের মুখে স্পর্শ করাইয়া ফেলিয়া দিল। তারপরে সকলে মিলিয়া মাটি চাপা দিয়া কাঙালির মায়ের শেষ চিহ্ন বিলুপ্ত করিয়া দিল।
সবাই সকল কাজে ব্যস্ত, শুধু সেই পোড়া খড়ের আঁটি হইতে যে স্বল্প ধুঁয়াটুকু ঘুরিয়া ঘুরিয়া আকাশে উঠিতেছিল, তাহারই প্রতি পলকহীন চক্ষু পাতিয়া কাঙালি ঊর্ধ্বদৃষ্টে স্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল।
[সূত্র: অভাগীর স্বর্গ- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]

ক. কতজন লোক বুড়ির জন্য কবর খুঁড়ছিল?
খ. ‘দ্যাও বাবা-তুমি দ্যাও’-কে, কেন এ কথা বলেছে?
গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের কোন বিষয়টি তুলে ধরেছে?-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ঘটনার সাথে সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের কাঙালি আর ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের অনুভূতির ভিন্নতা রয়েছে।”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

ক. দুজন লোক বুড়ির জন্য কবর খুঁড়ছিল।
খ. শুকুর মিঞা বৃদ্ধার কবরে মাটি দেয়ার প্রসঙ্গে কথাটি বলেছে।
➠ প্রাচীন একটা গাছের নিচে বৃদ্ধাকে কবর দেওয়া হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত হয়েছেন লেখক বৃদ্ধার অনিবার্য আহ্বানে। সেখানে শুকুর মিঞাসহ আরও অনেকে উপস্থিত। একে একে সবার মাটি দেওয়া হলে শুকুর মিঞা বললেন, এই যে বাবা, এসো। তোমায় যে বড্ড ভালোবাসত বুড়ি। দ্যাও বাবা-তুমি দ্যাও। লেখক দিলেন এক কোদাল মাটি। এতে তিনি অনুভব করলেন, বৃদ্ধা বেঁচে থাকলে বলে উতো-অ-মোর গোপাল।

গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার মৃত্যু ও কবর দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে।
➠ সন্তানের প্রতি প্রতিটি মায়েরই অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকে। তাই মৃত্যুর মুহূর্তেও একজন মা তার সন্তানের স্পর্শ পেতে চায়। ‘আহ্বান’ গল্প ও উদ্দীপকে এ বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, নদীর চরে গর্ত খুঁড়ে অভাগীকে শোয়ান হলো। কাঙালির মা ছেলের হাতে একটা খড়ের আঁটি জ্বেলে মায়ের মুখাগ্নি করে। যা তার মা প্রত্যাশা করেছিল। তারপর কাঙালির মাকে শেষ সয্যায় শোয়ানো হলো। এমন একটি চিত্র দেখা যায় ‘আহ্বান’ গল্পে। সেখানে বৃদ্ধার মৃত্যুর পর তাঁকে কবর দেওয়ার জন্য প্রাচীন গাছের নিচে কবর দেওয়ার আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে উভয় জায়গায় সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. “ঘটনার সাথে সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের কাঙালি আর ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের অনুভূতির ভিন্নতা রয়েছে।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ সভ্যতা একদিকে যেমন ক্ষয়িষ্ণু। মরণশীল ব্যক্তিমানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালের ব্যস্ততা।
➠ উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই এক মায়ের মৃত্যুর পর তাকে অন্তিম শয়ানে শোয়ানোর জন্য কবর খোঁড়া হয়। তাকে শোয়ানো হয়। মায়ের শেষ ইচ্ছা ছেলে কাঙালি সাধ্যানুযায়ী সম্পন্ন করে। তার ভাবজগতের কোনো তল সে খুঁজে পায় না। কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ার সাথে তার শোকস্তব্ধ চিন্তাজগৎ ঘুরতে থাকে। তার এই চেতনার সাথে, অনুভূতির সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের অনুভূতির ভিন্নতা রয়েছে, যদিও উভয় ক্ষেত্রে মৃত্যুর কথা আলোচিত হয়েছে।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের অনুভূতি শুধু বৃদ্ধার শেষ দাবিটুকু এবং তার মাতৃস্নেহের স্মৃতিতে সীমাবদ্ধ। তার শোকের সাথে কাঙালীর শোকের তুলনা চলে না। মাকে হারিয়ে কাঙালি দিশেহারা। জগৎ মাঝে একমাত্র স্নেহের ভরসার আশ্রয় আজ অনন্তে হারিয়ে গেছে। অন্যদিকে লেখককে কিছুদিনের স্নেহের বাঁধনে বেঁধেছিলেন বৃদ্ধা। তাঁর মৃত্যুতে তিনিও শোকাহত কিন্তু কাঙালির মতো তিনি অসহায়ত্ব বোধ করেননি। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জাতের নামে বজ্জাতি সব
জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া,
ছুঁলেই তোদের জাত যাবে
জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া।
ক. ‘পথের পাঁচালী’ কোন ধরনের সাহিত্যকর্ম?
খ. বুড়ি কেন আহ্লাদে আটখানা হলেন?
গ. উদ্দীপকে ‘আহ্বান’ গল্পের কোন ভাবটি উঠে এসেছে?-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক. ‘পথের পাঁচালী’ বিভূতিভূষণের কালজয়ী উপন্যাস।
খ. বুড়ির অনুরোধে লেখক অসুস্থ বুড়িকে তার বাড়িতে দেখতে গেলে বুড়ি আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেলেন।
➠ বুড়ির পাতানো মেয়ের কাছে লেখক শুনলেন বুড়ি অসুস্থ। তখন লেখক একদিন বিকেলে গেলেন বুড়িকে দেখতে। গিয়ে দেখেন বুড়ি শুয়ে আছে মাদুরের উপর। তিনি কাছে দাঁড়াতেই বুড়ি চোখ মেলে চাইলেন। পরে লেখককে চিনে ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উটে আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল, ‘ভালো আছ অ মোর গোপাল?’

গ. উদ্দীপকে ‘আহ্বান’ গল্পের জাতি-ধর্মের বিভেদের অসারতার বিষয়টি উঠে এসেছে।
➠ এ পৃথিবীতে সকল মানুষই সমান। এ ধরণীর স্নেহ ছায়াতেই সকলে বেঁচে থাকে, বেড়ে ওঠে। অথচ মানুষ মিথ্যা জাতপাতের বড়াই করে একে-অন্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। এমনই জাতপাতের অসারতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে উদ্দীপকে ও ‘আহ্বান’ গল্পে।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ জাতের নামে জুয়া খেলতে বসেছে। তাদের কাছে জাত ধর্মই যেন সব। অন্য জাতের কেউ যদি ছুঁয়ে দেয় তখন যেন তাদের জাতি-ধর্ম সব ধুয়ে-মুছে যায়। এ যেন ছেলের হাতের মোয়া। কিন্তু কবি এ সবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। এমন ভাব পরিলক্ষিত হয় ‘আহ্বান’ গল্পে। এখানে লেখক কোনো জাতিভেদ মানেন না। এজন্য বৃদ্ধাকে তিনি মায়ের মতো ভালোবাসতেন। তার অপাত্য স্নেহের দান অকুণ্ঠচিত্তে গ্রহণ করেছেন। বৃদ্ধার শেষ চাওয়াটুকুও তিনি মিটিয়েছেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদির পার্থক্যকে ধুলায় মিশিয়ে মানব ধর্মের জয়গানে মুখর করে তুলেছেন।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ মানুষ আজ জাতিভেদ, গোত্রভেদ, বর্ণভেদের কৃত্রিম পরিচয়ে নিজের পরিচয়কে সংকীর্ণ করেছে। কিন্তু এ মহাবিশ্বের সকল কিছু একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। তাই মানুষের আসল পরিচয় মানুষ হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
➠ উদ্দীপকে বলা হয়েছে, এ সমাজ জাতের নামে বজ্জাতিই করে চলেছে। জাত ছেলের হাতের মোয়া নয় যে, কারো ছোঁয়ায় জাত যাবে। সকল মানুষের একটাই পরিচয় হওয়া উচিত, সেটা হলো মানুষ জাতি। এ বিষয়টি ‘আহ্বান’ গল্পের অন্যতম মুখ্য বিষয় হলেও একমাত্র বিষয় নয়।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। এখানে জাতপাতের বৈষম্যের অসারতার বিষয়টির সাথে সাথে আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে। মানুষের মধ্যে জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা গল্পের অন্যতম একটি বিষয়। আরও রয়েছে মানুষের স্নেহ-মায়া-মমতার যে বাঁধন সেটাকে কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। লেখক মুসলমান বৃদ্ধাকে মাতৃজ্ঞানে ভালোবেসে তাঁর মাতৃস্নেহকে অকপটে গ্রহণ করেছেন। মাতৃহৃদয়ের অতৃপ্ত অনুভূতি গল্পের অন্যতম প্রধান দিক, যা বৃদ্ধার মৃত্যুর মাঝে আরও মহিমাময় হয়ে উঠেছে। এসব বিষয় উদ্দীপকে আলোচিত হয়নি। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দেশ ছেড়ে চলে গেলাম ম্যাট্রিক পাস করে। পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে চাকরি করে বোমার তাড়ায় সেবার আবার এসে গ্রামে ঘর-বাড়ি সারিয়ে বাস করতে শুরু করলাম।
কাকে জিজ্ঞেস করলাম-বলি, সেই বুধোর মা বেঁচে আছে।
-খুব। কাল ঘাটে দেখলে না?
-না।
-আজ দেখো এখন। তার মাথায় চুল পেকে গিয়েছে বলে চিনতে পারনি।
দু-একদিনের মধ্যে বুধোর মাকে দেখলাম। চেহারা ঠিক তেমনই আছে, যেমন দেখেছিলা বাল্যে। মুখশ্রী বিশেষ বদলায়নি। শুধু মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গিয়েছে মাত্র। অনেকে হয়তো ভাববেন, সত্তর-বাহাত্তর বছর বয়সে মুখের চেহারা বদলায়নি তাঁরা বুধোর মাকে দেখেননি। নিজের চোখে না দেখলে আমিও বিশ্বাস করতাম না।
[সূত্র: বুধোর মায়ের মৃত্যু- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]

ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম কত সালে?
খ. ‘আজ্ঞে সামান্য মাইনে পাই’-লেখকের এই বক্তব্যে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের বুধোর মায়ের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির অমিল কোথায়?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের লেখকের এবং ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের গ্রামে ফেরার উদ্দেশ্য এক নয়।”- মন্তব্যটি আলোচনা কর।

ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৪ সালে।
খ. প্রশ্নোক্ত বক্তব্যে লেখকের আর্থিক দীনতা প্রকাশিত হয়েছে।
➠ অনেকদিন পরে লেখক গ্রামে এসেছেন পৈতৃক ভিটায়। এসে দেখেন ঘরবাড়ি যা ছিল ভেঙেচুড়ে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে। তাঁর সাথে দেখা হয় বাবার পুরাতন বন্ধু চক্কোত্তি মশায়ের। তিনি লেখককে দেখে খুশি হলেন এবং বললেন কতদিন পর গ্রামে আসলে এখন বাড়িঘর কর। জবাবে লেখক উক্ত উক্তিটি করেন। যাতে তাঁর আর্থিক দৈন্যকে প্রকাশ করে।

গ. উদ্দীপকের বুধোর মায়ের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার বয়সের ভারসাম্য এবং আর্থিক সচ্ছলতার সাথে অমিল রয়েছে।
➠ দারিদ্র্য সমাজের একটি অভিশাপ। এর কশাঘাতে অনেক সম্ভাবনাময় জীবন তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। এর তীব্র ছোবলে মানুষ মানসিক ক্ষতির পাশাপাশি নৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির মুখে পড়ে।
➠ উদ্দীপকের বুধোর মায়ের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির বয়সের সাথে স্বার্থগত ভারসাম্য এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতার অমিল রয়েছে। বুধোর মায়ের বয়স ৭০ বছর হলেও তার মুখের চেহারা বদলায়নি। কিন্তু ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার শরীর-মন সবই বিধ্বস্ত হয়েছে অভাব নামক দানবের ছোবলে। বৃদ্ধা চোখেও ঠিকমতো দেখতে পায় না। গল্পের বৃদ্ধার মতো বুধোর মায়ের স্বাস্থ্যগত ভাঙন অতটা ধরেনি। দুজনের মধ্যে অস্তিত্বের বিষয়ের মিল থাকলেও আলোকিত বিষয়ের অমিল রয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকের লেখকের এবং ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের গ্রামে ফেরার উদ্দেশ্য এক নয়।”মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ প্রতিটি মানুষই তার জন্মভূমিকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, জন্মভূমি প্রতি হৃদয়ের টান অনুভব করে। এজন্য যত দীনহীন পরিবেশই জন্মভূমি থাক না কেন তাকে কেউ ভালো না বেসে পারে না। এর প্রতি কেমন যেন নাড়ির টান অনুভূত হয়।
➠ উদ্দীপকের লেখককে ভূমিতে মাটিতে ফিরে আসতে দেখা যায়। কিন্তু তিনি যতটা না গ্রামকে ভালোবেসে ফিরে এসেছেন তার চেয়ে বাধ্য হয়েছেন বেশি। উদ্দীপকে লেখক বলেছেন, পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে চাকরি করতে গিয়েছিলেন। অবশেষে বোমার তাড়া খেয়ে তিনি গ্রামে এসে ঘরবাড়ি সারিয়ে বাস করতে শুরু করলেন। কিন্তু এই একই উদ্দেশ্যে ‘আহ্বান’ গল্পের লেখক গ্রামে প্রত্যাবর্তন করেননি।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পে দেখা যায়-লেখক একদিন একটা ছুটিতে গ্রামে প্রত্যাবর্তন করেন। গ্রামে এসে তাঁর বাবার পুরাতন বন্ধু চক্কোত্তি মশায়ের সাথে দেখা হলে তিনি অনুরোধ করেন বাবার ভিটায় বাড়িঘর তোলার জন্য। এক পর্যায়ে লেখক গ্রামে বাড়িঘর তুলে ছুটিতে এসে বসবাস শুরু করেন। গ্রামের লোকজনের সাথে হৃদ্যতা গড়ে তোলেন। পুরাতন বন্ধুদের খোঁজখবর নেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের লেখক যে, উদ্দেশ্যে গ্রামে প্রত্যাবর্তন করেন ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের গ্রামে প্রত্যাবর্তনের কারণ বা উদ্দেশ্য এক নয়। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সভ্যতা একদিকে যেমন ক্ষয়িষ্ণু অন্যদিকে চলে তার বিনির্মাণ। মরণশীল ব্যক্তিমানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালের ব্যস্ততা। মাঠে থাকে চঞ্চলতা, চালতাফুলে পড়ে শীতের শিশির, লক্ষ্মীপেঁচার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় মঙ্গলবার্তা, খেয়া নৌকা চলে নালানদীতে অর্থাৎ কোথাও থাকে না সেই মৃত্যুর রেশ। ফলে মৃত্যুতেই সব শেষ নয়, পৃথিবীর বহমানতা মানুষের সাধারণ মৃত্যু রহিত করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু এ জগৎ সৌন্দর্যের মৃত্যু নেই, মানুষের স্বপ্নেও মরণ নেই।

ক. বিভূতিভূষণ কত সালে বিএ পাস করেন?
খ. বুড়ি লেখককে বসার জন্য কেন খেজুরের চটখানা পেতে দিতে বললেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের কোন দিকটি তুলে ধরেছে?-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকলেও উদ্দীপকের ভাবটি ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করতে পারেনি।”মন্তব্যটি বিচার কর।

ক. বিভূতিভূষণ ১৯১৮ সালে বিএ পাস করেন।
খ. বৃদ্ধার গোপাল লেখক আসবে বলে বৃদ্ধা নিজের হাতে খেজুরের চাটাই বুনেছিলেন লেখকের বসতে দেয়ার জন্য।
➠ বৃদ্ধার অসুস্থতার খবর শুনে লেখক গেলেন তাকে দেখতে। গিয়ে দেখলেন বুড়ি শুয়ে আছে একটা মাদুরের উপর। বুড়ি লেখককে চিনতে পেরে আহ্লাদে আটখানা হয়ে তার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। বুড়ি বলেন, ভালো আছ অ-মোর গোপাল। বসতে দে গোপালকে বসতে দে। গোপালেরে ঐ খাজুরের চটখানা পেতে দে। বুড়ি অনুরোধের সুরে লেখককে বলেন, তোর জন্যি খাজুরের চাটাই বুনে রেখেছিলাম। ওখানা পুরনো হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। তুই একদিনও এলি না গোপাল?’ এখানে লেখকের প্রতি বৃদ্ধার মাতৃস্নেহের প্রকাশ ঘটেছে।

গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার মৃত্যুর দিকটি তুলে ধরেছে।
➠ মানুষ মরণশীল, কথাটি চিরন্তন সত্য। কিন্তু এ সত্যকে সহজে কেউ মেনে নিতে পারে না, এ পৃথিবী ছেড়ে কেউই বিদায় নিতে চায় না। তারপরও মরণশীল মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই অনিবার্য মৃত্যু থেকে কেউ রেহাই পায় না।
➠ উদ্দীপকে ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, মরণশীল ব্যক্তিমানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালের ব্যস্ততা। ফলে মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে যায় না। পৃথিবীর বহমানতা মানুষের সাধারণ মৃত্যু রহিত করতে পারে না। ‘আহ্বান’ গল্পও এই মৃত্যুর মাঝে শেষ হলেও সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। লেখকের অনুভূতিতে বেদনার আভাস থাকলেও তার স্বাভাবিক জীবন থেমে থাকেনি। তার বেদনাজড়িত স্মৃতির উল্লেখ করেছেন একটি কথায়- বেঁচে থাকলে হয়তো বলে উঠতো-অ মোর গোপাল। এতে আমাদের মনে বেদনাজড়িত স্মৃতি মনে পড়লেও জগৎ ঠিকই সামনে এগিয়ে চলে। উদ্দীপকটি গল্পের এ বিষটিকেই তুলে ধরেছে।

ঘ. “মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকলেও উদ্দীপকের ভাবটি ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করতে পারেনি।” মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ পৃথিবীতে জন্ম-মৃত্যুর খেলাটি চিরন্তন। জন্ম যেমন এখানে নতুন কিছু সৃষ্টি করে তেমনি মৃত্যু ঘটায় শূন্যতা। তারপরও পৃথিবী এগিয়ে চলে তার আপন নিয়মেই। প্রকৃতিতে থাকে চিরকালের ব্যস্ততা। উদ্দীপকে এই জন্ম-মৃত্যুর বিষয়টি অর্থাৎ পৃথিবীর ভাঙা-গড়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, সভ্যতার একদিকে যেমন ক্ষয় হচ্ছে অন্যদিকে চলছে তার বিনির্মাণ। মরণশীল ব্যক্তি-মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালের ব্যস্ততা, থাকে চঞ্চলতা। ফলে এখানে মৃত্যুই সব শেষ নয়। পৃথিবীর বহমানতা মানুষের সাধারণ মৃত্যু রহিত করতে পারে না। উদ্দীপকের এ ভাবটি ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করতে পারেনি।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পে বৃদ্ধার মৃত্যু নিতান্ত স্বাভাবিক একটা ঘটনা। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে উদ্দীপকের ভাবের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যাবে। কিন্তু বৃদ্ধার মৃত্যুতে লেখকের মনোজাগতিক যে পরিবর্তন ঘটেছে, সেটাকে সম্পূর্ণভাবে উদ্দীপকের ভাবটি তুলে ধরতে পারেনি। বৃদ্ধার সাথে লেখকের সম্পর্ক ছিল উদার মানবিক স্নেহের সম্পর্ক। বৃদ্ধাকে তিনি মায়ের মতো মনে করতেন। তার মৃত্যুতে লেখকের মনে মা-হারানোর বেদনা অনুভূত হয়েছে।
➠ একটা অসহায়, সহায়-সম্বলহীন মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেলে কারো কোনো ক্ষতি হবে না, এমনকি পৃথিবীর এতটুকু পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে না তবু বৃদ্ধার মৃত্যুতে লেখকের হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ, আবেগের গভীরতা, সেটা কোনো নীতি বা জ্ঞানের দ্বারা বিচার করা যাবে না। তাই বলা যায়, মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকলেও উদ্দীপকের ভাবটি লেখকের সম্পূর্ণ চেতনাকে ধারণ করতে পারেনি।



সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩:

উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
এ্যান্টনির আপনজনরা তাকে ত্যাগ করেছে। খানিকটা দুঃখ তার মনে থাকলেও সুবোধের আগমনে তার মুখে হাসি ফোটে। দাবা খেলায় সুবোধ মাতিয়ে রাখে এ্যান্টনিকে। প্রতিদিন সুবোধের জন্য প্রতীক্ষা করে এ্যান্টনি।

ক. গল্পলেখক বুড়িকে পকেট থেকে কী বের করে দিয়েছিলেন?
খ. বুড়ি রোজ সকালে গল্পলেখকের কাছে আসতে ভোলেন না কেন?
গ. ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির চরিত্র উদ্দীপকের কোন চরিত্রের প্রতিরূপ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটির মূলভাব ‘আহ্বান’ গল্পের বিন্যাসকে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করেছে। মতামত দাও।

ক. গল্পলেখক বুড়িকে পকেট থেকে পয়সা বের করে দিয়েছিলেন।
খ. বুড়ি গল্পলেখককে অন্তর থেকে ভালোবাসেন। সকাল হলেই গল্পলেখকের কাছে আসতে ভোলেন না।
➠ আত্মিক সম্পর্কই সবচেয়ে বড় সম্পর্ক ‘আহ্বান’ গল্পে লেখক ও বুড়ির সম্পর্কও সেরূপ। বুড়ি তাই ধর্মীয় বন্ধন, সামাজিক বর্ণভেদের দূরত্ব ও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের ব্যবধান ভুলে গিয়ে গল্পলেখককে হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়েছে। তাইতো লেখকের খোঁজ-খবর নিতে প্রতিদিন সকাল না হতেই লেখকের কাছে ছুটে আসতে ভোলেন না তিনি।

গ. ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির স্নেহশীল চরিত্র ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ‘আহ্বান’ গল্পের বর্ণিত লেখক ও বুড়ির মধ্যকার সম্পর্কের গভীরতা বিশ্লেষণ করো।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪:

উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।

ক. গল্পলেখক কোন মাসে ঘরে এসে উঠেছিলেন?
খ. গল্পলেখক বুড়িকে কেন দুধের দাম দিতে চেয়েছিলেন?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের তাৎপর্য ‘আহ্বান’ গল্পের ঘটনার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের তাৎপর্য ‘আহ্বান’ গল্পের সামগ্রিক চেতনাকে ধারণ করে কি? বিচার কর।

ক. গল্পলেখক জ্যৈষ্ঠ মাসে ঘরে এসে উঠেছিলেন।
খ. বুড়ির দরিদ্র্যতার কারণে গল্পলেখক তার আনা দুধের দাম দিতে চেয়েছিলেন।
➠ বুড়ি লেখককে প্রচণ্ড স্নেহ করতো। খুুঁটি গোয়ালিনীর ভেজাল দুধের পরিবর্তে খাঁটি দুধ খাওয়ানোর জন্য বুড়ি তার পাতানো মেয়ের কাছ থেকে দুধ নিয়ে আসে। কিন্তু গল্পলেখক বুড়ির কষ্ট ও দারিদ্র্যের কথা চিন্তা করে দুধের দাম দিতে চেয়েছিলেন।

গ. ‘আহ্বান’ গল্পে সাম্যের যে আহ্বান রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ‘আহ্বান’ গল্পে মানুষের প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্লেষণ করো।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৫:

উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নিচু জাতির হাতে জল খেলে পাপ হবে। এ কথা মানতে নারাজ সৈকত। তার মতে, জাত-পাত অপসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়।

ক. গল্পলেখককে বুড়ি কী দিয়ে কচি শর্সা খেতে বলেছে?
খ. গল্পলেখকের পৈতৃক বাড়ির ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবনার সঙ্গে ‘আহ্বান’ গল্পের ভাবনার সমন¦য় সাধন কর।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়ের আলোকে ‘আহ্বান’ গল্পের প্রতিনিধিত্বকারী চরিত্রগুলো কী সার্থক? বিচার কর।

ক. গল্পলেখককে বুড়ি নুন দিয়ে কচি শসা খেতে বলেছে।
খ. স্বজনহারা গল্পকথকের গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিচর্যা করার কেউ না থাকায় ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছিল।
➠ লেখাপড়া শেষ করার পর চাকরির কারণে পৈতৃক বাড়িতে গল্পলেখকের যাতায়াত তেমন ছিল না। আগেই তারা মা-বাবা, পিসিমা মারা গেছেন। লোক-জন কেউ বসবাস করে না বলেই পরিত্যক্ত ভিটিতে গাছপালায় আচ্ছাদিত হয়ে একটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল।

গ. ‘আহ্বান’ গল্পে প্রকাশিত অসাম্প্রদায়িকতার ভাবনার দিকটি ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি ও গোপালের চরিত্রের ধর্মীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মমতার বন্ধনে আবদ্ধ হবার বিষয়টি আলোচনা করো।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৬:

উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
দুস্থ মানুষকে সাহায্যের জন্য নিজের কিছুটা ক্ষতি স্বীকার করেও লিমন তাদের পাশে দাঁড়ায়। তার পরিচিত অনেকেই একে বাড়াবাড়ি বলে মনে করে।

ক. বুড়ি কার বাড়ি থেকে দুধ নিয়ে এসেছিলেন?
খ. বুড়ির বড্ড কষ্ট কেন?
গ. উদ্দীপকের লিমন ‘আহ্বান’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের লিমনের প্রতিনিধিত্বকারী চরিত্রটি “আহ্বান” গল্পের বিশেষ তাৎপর্যকে ধারণ করেছে-বিচার কর।

ক. বুড়ি মেয়ের বাড়ি থেকে দুধ নিয়ে এসেছিলেন।
খ. বুড়ির স্বামী মারা যাবার পর দেখার মতো আপন কেউ না থাকায় বুড়ির বড্ড কষ্ট।
➠ ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির স্বামী মারা যাবার পর এক নাতজামাই থাকলেও বুড়িকে সে ভাত-কাপড় দেয় না। পাতানো এক মেয়ে সারাদিন মানুষের বাড়িতে ধান ভানে এবং যা চাল পায় তাই বুড়ির সাথে ভাগ করে খায়। কোনোদিন বুড়ির এই ভাতটুকুও কপালে জোটে না। তাই বুড়ির এ বয়সে বড্ড কষ্ট।

গ. ‘আহ্বান’ গল্পের গল্পলেখকের চরিত্র ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ‘আহ্বান’ গল্পে গোপালের চরিত্রে যে মানবতা প্রকাশ পেয়েছে সে বিষয়টি আলোচনা করো।


তথ্যসূত্র :

১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url