আহ্বান- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
|
| আহ্বান |
আহ্বান
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
দেশের ঘরবাড়ি নেই অনেকদিন থেকেই। পৈতৃক বাড়ি যা ছিল ভেঙেচুরে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে। এ অবস্থায় একদিন গিয়েছি দেশে কিসের একটা ছুটিতে।
গ্রামের চক্কোত্তি মশায় আমার বাবার পুরাতন বন্ধু। আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন। বললেন-কতকাল পরে বাবা মনে পড়ল দেশের কথা? প্রণাম করে পায়ের ধুলা নিলাম। বললেন-এসো, এসো, বেঁচে থাকো, দীর্ঘজীবী হও। বাড়িঘর করবে না?
-আজ্ঞে সামান্য মাইনে পাই-
-তাতে কী? গ্রামের ছেলে গ্রামে বাস করবে, এতে আর সামান্য মাইনে বেশি মাইনে কী? আমি খড় বাঁশ দিচ্ছি, চালাঘর তুলে ফেল, মাঝে মাঝে যাতায়াত করো।
আরও অনেকে এসে ধরল, অন্তত খড়ের ঘর ওঠাতে হবে। অনেক দিন পরে গ্রামে এসে লাগছে ভালোই। বড় আমবাগানের মধ্য দিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছি, আমগাছের ছায়ায় একটি বৃদ্ধার চেহারা, ডান হাতে নড়ি ঠকঠক
করতে করতে বোধহয় বাজারের দিকে চলেছে।
বুড়িকে দেখেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাবে?
-বাজারে বাবা।
বুড়ি আমায় ভালো না দেখতে পেয়ে কিংবা না চিনতে পেরে ডান হাত উঁচিয়ে তালু আড়ভাবে চোখের ওপর ধরল। বলল, কে বাবা তুমি? চেনলাম না তো?
-চিনবে না। আমি অনেক দিন গাঁয়ে আসি নি।
-তা হবে বাবা। আমি আগে তো এপাড়া-ওপাড়া যাতাম আসতাম না। তিনি থাকতি অভাব ছিল না কোনো জিনিসের। গোলাপোরা ধান, গোয়ালপোরা গরু।
-তোমাকে তো চিনতে পারলাম না, বুড়ি?
-আমার তো তেনার নাম করতে নেই বাবা। করাতের কাজ করতেন।
বললাম, তোমার ছেলে আছে?
-কেউ নেই বাবা, কেউ নেই। এক নাত-জামাই আছে তো সে মোরে ভাত দেয় না। আমার বড্ড কষ্ট। ভাত জোটে না সবদিন।
বুড়িকে পকেট থেকে কিছু পয়সা বার করে দিলাম।
-ব্যাপারটা এখানেই চুকে যাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু তা চুকল না।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেছি, এমন সময় সেই বুড়ি লাঠি ঠকঠক করতে করতে হাজির উঠোনে। থাকি এক জ্ঞাতি খুড়োর বাড়ি। তিনি বললেন, ও হলো জমির করাতির স্ত্রী। অনেকদিন আগে মরে গিয়েছে জমির।
বুড়ি উঠোনে দাঁড়িয়ে ডাকল, ও বাবা।
বোধহয় চোখে একটু কম দেখে।
বললাম, এই যে আমি এখানে।
আমার খুড়োমশায় বুড়িকে বুঝিয়ে দিলেন আমি কে। সে উঠোনের কাঁঠালতলায় বসে আপন মনে খুব খানিকটা বকে গেল।
পরদিন কলকাতা চলে গেলাম, ছুটি ফুরিয়ে গেল।
কয়েক মাস পরে জ্যৈষ্ঠ মাসে গরমের ছুটিতে আমার নতুন তৈরি খড়ের ঘরখানাতে এসে উঠলাম। কলকাতাতে কর্মব্যস্ত এই ক'মাসের মধ্যে বুড়িকে একবারও মনে পড়েনি বা এখানে এসেও মনে হঠাৎ হয়ত হতো না, যদি সে তার পরের দিনই সকালে আমার ঘরের নিচু দাওয়ায় এসে না বসে পড়ত।
বললাম, কী বুড়ি, ভালো আছ?
ময়লা ছেঁড়া কাপড়ের প্রান্ত থেকে গোটাকতক আম খুলে আমার সামনে মাটিতে রেখে বলল, আমার কি মরণ আছে রে বাবা।
জিজ্ঞাসা করলাম, ও আম কীসের।
দন্তহীন মুখে একটু হাসবার চেষ্টা করে বললে, অ গোপাল আমার, তোর জন্যি নিয়ে আলাম। গাছের আম বেশ কড়া মিষ্টি, খেয়ে দেখ এখন।
বড়ো ভালো লাগল। গ্রামে অনেকদিন থেকে আপনার জন কেউ নেই। একটা ঘনিষ্ঠ আদরের সম্বোধন করার লোকের দেখা পাই নি বাল্যকালে মা-পিসিমা মারা যাওয়ার পর থেকে।
বুড়ি বললে, খাও কোথায় হ্যাঁ বাবা?
-খুড়ো মশায়ের বাড়ি।
-বেশ যত্ন করে তো ওনারা?
-তা করে।
-দুধ পাচ্চ ভালো?
-ঘুঁটি গোয়ালিনী দেয়, মন্দ না।
-ও বাবা, ওর দুধ! অর্ধেক জল- দুধ খেতি পাচ্চ না ভালো সে বুঝেচি।
পরদিন সকাল হয়েছে সবে, বুড়ি দেখি উঠোনে এসে ডাকছে, অ গোপাল।
বিছানা ছেড়ে উঠে বললাম, আরে এত সকালে কী মনে করে। হাতে কী?
বৃদ্ধা হাতের নড়ি আমার দাওয়ার গায়ে ঠেস দিয়ে রেখে বলল, এক ঘটি দুধ আনলাম তোর জন্যি।
-সে কী! দুধ পেলে কোথায় এত সকালে?
আমায় মা বলে ডাকে ওই হাজরা ব্যাটার বউ। তারও কেউ নেই। মোর চালাঘরের পাশে ওর চালাঘর। ওরে কাল রাত্তিরে বলে রেখে দিয়েছিলাম, বলি বউ আমার, গোপাল দুধ খেতি পায় না। তাই আজ ভোরে উঠে দেখি আমারে ডাকচে, মা ওঠো, তোমার গোপালের জন্যি দুধ নিয়ে যাও।
-আচ্ছা কেন বলতো তোমার এসব! এ রকম আর কখনও এনো না। কত পয়সা দাম দিতে হবে বল। কতটা দুধ?
বুড়ি একটু ঘাবড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে বলে, কেন বাবা, পয়সা কেন?
-পয়সা না তো তুমি দুধ পাবে কোথায়?
-ওই যে, বললাম বাবা, আমার মেয়ের বাড়ি থেকে।
-তা হোক, তুমি পয়সা নিয়ে যাও। সেও তো গরিব লোক।
বুড়ি পয়সা নিয়ে চলে গেল বটে কিন্তু সে যে দমে গিয়েছে তার কথাবার্তার ধরনে বেশ বুঝতে পারলাম। মনে একটু কষ্ট হলো বুড়ি চলে গেলে। পয়সা দিতে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি? বুড়ির কী রকম হয়ত মন পড়ে গিয়েছে আমার ওপর, স্নেহের দান- এমন করা ঠিক হয়নি। বুড়ি কিন্তু এ অবহেলা গায়ে মাখল না আদৌ। প্রতিদিন সকাল হতে না হতেই সে এসে জুটবে।
-অ গোপাল, এই দুটি কচি শসার জালি মোর গাছের, এই ন্যাও। নুন দিয়ে খাও দিকিন মোর সামনে?
-বুড়ি তোমার চলে কীসে?
-ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড্ড ভালো। লোকের ধান ভানে, তাই চাল পায়, আমায় দুটো না দিয়ে খায় না।
-একা থাক?
-তা একদিন মোর ঘরখানা না হয় দেখতি গেলে, অ মোর গোপাল! আমি নতুন খাজুর পাতার চেটাই বুনে রেখে দিয়েছিলাম তোমারে বসতি দেবার জন্যি।
সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না। নানাদিকে ব্যস্ত থাকি। অনেক দিন পরে গ্রামে এসেছি তো! যে কদিন গ্রামে থাকি বুড়ি রোজ সকালে আসতে ভুলবে না। কিছু না কিছু আনবেই। কখনো পাকা আম, কখনো পাতি লেবু, কখনো বা একছড়া কাঁচকলা কি এক-ফালি কুমড়ো। পুনরায় গ্রামে এলাম পাঁচ-ছয় মাস পরে, আশ্বিন মাসের শেষে। কয়েকদিন পরে ঘরে বসে আছি, বাইরের উঠোনে দাঁড়িয়ে কে যেন জিজ্ঞাসা করলে; বাবু ঘরে আছেন গা?
বাইরে এসে দেখি গত জ্যৈষ্ঠ মাসে যাকে বুড়ির সঙ্গে দেখেছিলাম সেই মধ্যবয়সী স্ত্রীলোকটি। আমায় দেখে সলজ্জভাবে মাথার কাপড়টা আর একটু টেনে দেবার চেষ্টা করে সে বললে, বাবু কবে এসেছেন?
-দিন পাঁচ-ছয় হলো। কেন?
-আমার সেই মা পেটিয়ে দিলে, বলে দেখে এসো গিয়ে।
-কে?
-ও বাবা, ওর দুধ! অর্ধেক জল- দুধ খেতি পাচ্চ না ভালো সে বুঝেচি।
পরদিন সকাল হয়েছে সবে, বুড়ি দেখি উঠোনে এসে ডাকছে, অ গোপাল।
বিছানা ছেড়ে উঠে বললাম, আরে এত সকালে কী মনে করে। হাতে কী?
বৃদ্ধা হাতের নড়ি আমার দাওয়ার গায়ে ঠেস দিয়ে রেখে বলল, এক ঘটি দুধ আনলাম তোর জন্যি।
-সে কী! দুধ পেলে কোথায় এত সকালে?
আমায় মা বলে ডাকে ওই হাজরা ব্যাটার বউ। তারও কেউ নেই। মোর চালাঘরের পাশে ওর চালাঘর। ওরে কাল রাত্তিরে বলে রেখে দিয়েছিলাম, বলি বউ আমার, গোপাল দুধ খেতি পায় না। তাই আজ ভোরে উঠে দেখি আমারে ডাকচে, মা ওঠো, তোমার গোপালের জন্যি দুধ নিয়ে যাও।
-আচ্ছা কেন বলতো তোমার এসব! এ রকম আর কখনও এনো না। কত পয়সা দাম দিতে হবে বল। কতটা দুধ?
বুড়ি একটু ঘাবড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে বলে, কেন বাবা, পয়সা কেন?
-পয়সা না তো তুমি দুধ পাবে কোথায়?
-ওই যে, বললাম বাবা, আমার মেয়ের বাড়ি থেকে।
-তা হোক, তুমি পয়সা নিয়ে যাও। সেও তো গরিব লোক।
বুড়ি পয়সা নিয়ে চলে গেল বটে কিন্তু সে যে দমে গিয়েছে তার কথাবার্তার ধরনে বেশ বুঝতে পারলাম। মনে একটু কষ্ট হলো বুড়ি চলে গেলে। পয়সা দিতে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি? বুড়ির কী রকম হয়ত মন পড়ে গিয়েছে আমার ওপর, স্নেহের দান- এমন করা ঠিক হয়নি। বুড়ি কিন্তু এ অবহেলা গায়ে মাখল না আদৌ। প্রতিদিন
সকাল হতে না হতেই সে এসে জুটবে।
-অ গোপাল, এই দুটি কচি শসার জালি মোর গাছের, এই ন্যাও। নুন দিয়ে খাও দিকিন মোর সামনে?
-বুড়ি তোমার চলে কীসে?
-ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড্ড ভালো। লোকের ধান ভানে, তাই চাল পায়, আমায় দুটো না দিয়ে খায় না।
-একা থাক?
-তা একদিন মোর ঘরখানা না হয় দেখতি গেলে, অ মোর গোপাল! আমি নতুন খাজুর পাতার চেটাই বুনে রেখে দিয়েছিলাম তোমারে বসতি দেবার জন্যি।
সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না। নানাদিকে ব্যস্ত থাকি। অনেক দিন পরে গ্রামে এসেছি তো! যে কদিন গ্রামে থাকি বুড়ি রোজ সকালে আসতে ভুলবে না। কিছু না কিছু আনবেই। কখনো পাকা আম, কখনো পাতি লেবু, কখনো বা একছড়া কাঁচকলা কি এক-ফালি কুমড়ো। পুনরায় গ্রামে এলাম পাঁচ-ছয় মাস পরে, আশ্বিন মাসের শেষে। কয়েকদিন পরে ঘরে বসে আছি, বাইরের উঠোনে দাঁড়িয়ে কে যেন জিজ্ঞাসা করলে; বাবু ঘরে আছেন গা?
বাইরে এসে দেখি গত জ্যৈষ্ঠ মাসে যাকে বুড়ির সঙ্গে দেখেছিলাম সেই মধ্যবয়সী স্ত্রীলোকটি। আমায় দেখে সলজ্জভাবে মাথার কাপড়টা আর একটু টেনে দেবার চেষ্টা করে সে বললে, বাবু কবে এসেছেন?
-দিন পাঁচ-ছয় হলো। কেন?
-আমার সেই মা পেটিয়ে দিলে, বলে দেখে এসো গিয়ে।
-কে?
-ওই সেই বুড়ি- এখানে যিনি আসত। তেনার বড্ড অসুখ। এবার বোধহয় বাঁচবে না। গোপাল কবে আসবে, গোপাল কবে আসবে- অস্থির, আমারে রোজ শুধায়। একবার দেখে আসুন গিয়ে, বড্ড খুশি হবে তাহলি। বিকেলের দিকে বেড়াতে যাবার পথে দেখতে গেলাম বুড়িকে। বুড়ি শুয়ে আছে একটা মাদুরের ওপর, মাথায় মলিন বালিশ। আমি গিয়ে কাছে দাঁড়াতেই বুড়ি চোখ মেলে আমার দিকে চাইল। পরে আমাকে চিনে ধড়মড় করে বিছানা ছেড়ে উঠবার চেষ্টা করতেই আমি বললাম, উঠো না, ও কী?
বুড়ি আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল, ভালো আছ অ মোর গোপাল? বসতে দে গোপালকে। বসতে দে।
-বসবার দরকার নেই, থাক।
-গোপালেরে ওই খাজুরের চটখানা পেতে দে।
পরে ঠিক যেন আপনার মা কি পিসিমার মতো অনুযোগের সুরে বলতে লাগল, তোর জন্যি খাজুরের চাটাইখানা কদ্দিন আগে বুনে রেখেলাম। ওখানা পুরনো হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তুই একদিনও এলি না গোপাল। অসুখ হয়েছে তাও দেখতে এলি না।
বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল বেয়ে পড়ছে গড়িয়ে। আমায় বলল, গোপাল, যদি মরি, আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস।
আসবার সময় বুড়ির পাতানো মেয়েটির হাতে কিছু দিয়ে এলাম পথ্য ও ফলের জন্য। হয়ত আর বেশি দিন বাঁচবে না, এই অসুখ থেকে উঠবে না।
বুড়ি কিন্তু সে যাত্রা সেরে উঠল।
বছরখানেক আর গ্রামে যাইনি। বোধহয় দেড় বছরও হতে পারে। একবার শরতের ছুটির পর তখনও দুইদিন ছুটি হাতে আছে। গ্রামেই গেলাম এই দুইদিন কাটাতে। গ্রামে ঢুকতেই প্রথমে দেখা পরশু সর্দারের বউ দিগম্বরীর সঙ্গে। দিগম্বরী অবাক হয়ে বলে, ওমা আজই তুমি এলে? সে বুড়ি যে কাল রাতে মারা গিয়েছে। তোমার নাম করলো বড্ড। ওর সেই পাতানো মেয়ে আজ সকালে বলছেল।
আমি এসেছি শুনে বুড়ির নাতজামাই দেখা করতে এল। আমার মনে পড়ল বুড়ি বলেছিল সেই একদিন- আমি মরে গেলে তুই কাফনের কাপড় কিনে দিস বাবা। ওর স্নেহাতুর আত্মা বহু দূর থেকে আমায় আহ্বান করে এনেছে। আমার মন হয়ত ওর ডাক এবার আর তাচ্ছিল্য করতে পারেনি। কাপড় কেনবার টাকা দিলাম। নাতজামাই বলে গেল, মাটি দেওয়ার সময় একবার যাবেন বাবু। বেলা বারোটা আন্দাজ যাবেন।
শরতের কটুতিক্ত গন্ধ ওঠা বনঝোপ ও মাকাল-লতা দোলানো একটা প্রাচীন তিত্তিরাজ গাছের তলায় বৃদ্ধাকে কবর দেওয়া হচ্ছে। আমি গিয়ে বসলাম। আবদুল, শুকুর মিয়া, নসর, আমাদের সঙ্গে পড়ত আবেদালি, তার ছেলে গনি। এরা সকলে গাছের ছায়ায় বসে।
প্রবীণ শুকুর মিয়া আমায় দেখে বলল, এই যে বাবা, এসো। বুড়ির মাটি দেওয়ার দিন তুমি কনে থেকে এলে, তুমি তো জানতে না? তোমায় যে বড্ড ভালোবাসত বুড়ি।
দুজন জোয়ান ছেলে কবর খুঁড়ছে। কবর দেওয়ার পর সকলে এক এক কোদাল মাটি দিল কবরের উপর। শুকুর মিয়া বলল, দ্যাও বাবা- তুমিও দ্যাও।
দিলাম এক কোদাল মাটি। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, ও বেঁচে থাকলে বলে উঠত, অ মোর গোপাল। [সংক্ষেপিত]
| উৎস নির্দেশ : |
|---|
| -- |
| শব্দার্থ ও টীকা : |
|---|
|
➠ চক্কোত্তী- ‘চক্রবর্তী’ উপাধির সংক্ষিপ্ত রূপ। পূজারী ব্রাহ্মণের উপাধিবিশেষ। ➠ নড়ি- লাঠি। ➠ অন্ধের নড়ি- অসহায়ের একমাত্র অবলম্বন। ➠ গেয়ালপোরা- গোয়ালভরা। ➠ করাতের কাজ- কাঠ চেরাই করার পেশা। ➠ করাতি- করাত দিয়ে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করে যে। ➠ দাওয়া- রোয়াক। বারান্দা। |
| পাঠের উদ্দেশ্য : |
|---|
| পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব : |
|---|
| ‘আহ্বান’ গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলি থেকে সংকলিত হয়েছে। এটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধনসম্পদে নয়, হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। ধনী-দরিদ্রের শ্রেণিবিভাগ ও বৈষম্য, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব সংস্কার ও গোঁড়ামির ফলে গড়ে ওঠে তাও ঘুচে যেতে পারে- নিবিড় স্নেহ, উদার হৃদয়ের আন্তরিকতা ও মানবীয় দৃষ্টির ফলে। দারিদ্র্য-পীড়িত গ্রামের মানুষের সহজ-সরল জীবনধারার প্রতিফলনও এই গল্পের অন্যতম উপজীব্য। এ গল্পে লেখক দুটি ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও আর্থিক অবস্থানে বেড়ে-ওঠা চরিত্রের মধ্যে সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। গ্রামীণ লোকায়ত প্রান্তিক জীবনধারা শাস্ত্রীয় কঠোরতা থেকে যে অনেকটা মুক্ত সে-সত্যও এ গল্পে উন্মোচিত হয়েছে। |
| লেখক পরিচিতি : |
|---|
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার মুরারিপুর গ্রামে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃনিবাস একই জেলার ব্যারাকপুর গ্রামে। বিভূতিভূষণের বাল্য ও কৈশোরকাল কাটে অত্যন্ত দারিদ্র্যে। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯১৬ সালে আইএ উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে এবং ১৯১৮ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাস করেন। তিনি দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন এবং এর পাশাপাশি শহর থেকে দূরে অবস্থান করে নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যসাধনা করেছেন। বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের জীবনকে তিনি তাঁর অসাধারণ শিল্পসুষমাময় ভাষায় সাহজিক সারল্যে প্রকাশ করেছেন। মানুষকে তিনি দেখেছেন গভীর মমত্ববোধ ও নিবিড় ভালোবাসা দিয়ে। তাঁর গদ্য কাব্যময় ও চিত্রাত্মক বর্ণনায় সমৃদ্ধ। বিভূতিভূষণের কালজয়ী যুগল উপন্যাস পথের পাঁচালী, অপরাজিতা। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- উপন্যাস: দৃষ্টি প্রদীপ, আরণ্যক, দেবযান ও ইছামত; গল্পগ্রন্থ: মেঘমল্লার, মৌরিফুল, যাত্রাবদল ও কিন্নর দল। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। |
| বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
|---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
| জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
|---|
| ১. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাট্রিক পাস করেন কত সালে? উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ২. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কোন বিভাগে উত্তীর্ণ হন? উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ৩. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন কোন জেলায়? উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় চব্বিশ পরগনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ৪. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেশা কী ছিল? উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেশা ছিল শিক্ষকতা। ৫. ‘পথের পাঁচালী' উপন্যাসের লেখক কে? উত্তর : ‘পথের পাঁচালী' উপন্যাসের লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬. “আহ্বান” গল্পের গল্পকথকের পৈতৃক বাড়ির ভিটিতে কী গজিয়েছে? উত্তর : “আহ্বান” গল্পের গল্পকথকের পৈতৃক বাড়ির ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে। ৭. ‘আহ্বান' গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত? উত্তর : ‘আহ্বান' গল্পটি ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের' রচনাবলি থেকে। ৮. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কত সালে মৃত্যুবরণ করেন? উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ৯. ঘর করবার জন্য গল্পকথকের বাবার বন্ধু কোন জিনিস দিয়েছিল? উত্তর : ঘর করবার জন্য গল্পকথকের বাবার বন্ধু খড়, বাঁশ দিয়েছিল। ১০. গল্পলেখকের বাবার বন্ধু গল্পকথককে কেমন ঘর তুলতে বললেন? উত্তর : গল্পলেখকের বাবার বন্ধু গল্পকথককে চালাঘর তুলতে বললেন। ১১. “আহ্বান” গল্পের গল্পকথক চক্কোত্তি মশাইকে দেখে কী করলেন? উত্তর : “আহ্বান” গল্পের গল্পকথক চক্কোত্তি মশাইকে দেখে প্রণাম করলেন। ১২. চক্কোত্তি মশাই গল্পকথককে গ্রামে কোন জিনিস করার কথা বললেন? উত্তর : চক্কোত্তি মশাই গল্পকথককে গ্রামে বাড়িঘর করার কথা বললেন। ১৩. গল্পলেখক কীসের বাগানের মধ্য দিয়ে বাজারে গেল? উত্তর : গল্পলেখক আম বাগানের মধ্য দিয়ে বাজারে গেল। ১৪. বাজারে যাবার সময় গল্পকথক বৃদ্ধাকে কোথায় দেখতে পেলেন? উত্তর : বাজারে যাবার সময় গল্পকথক বৃদ্ধাকে আমগাছের ছায়ায় দেখতে পেলেন। ১৫. কে থাকতে বুড়ির গোলাভরা ধান ও গোয়াল ভরা গরু ছিল? উত্তর : স্বামী থাকতে বুড়ির গোলাভরা ধান ও গোয়াল ভরা গরু ছিল। ১৬. বৃদ্ধা নড়ি ঠকঠক করতে করতে কোথায় যাচ্ছিল? উত্তর: বৃদ্ধা নড়ি ঠকঠক করতে করতে বাজারে যাচ্ছিল। ১৭. বৃদ্ধা বুড়িকে দেখা মাত্রই গল্পলেখক কী করলেন? উত্তর: বৃদ্ধা বুড়িকে দেখামাত্রই গল্পলেখক দাঁড়িয়ে গেলেন। ১৮. ‘তিনি থাকতে অভাব ছিল না কোন জিনিসের'-“আহ্বান” গল্পে এ উক্তিটির ‘তিনি’ কে? উত্তর: “আহ্বান” গল্পে এই ‘তিনি’ হলেন বুড়ির স্বামী। ১৯. “আহ্বান” গল্পের বুড়ির স্বামী পেশায় কী ছিলেন? উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়ির স্বামী পেশায় করাতি ছিলেন। ২০. স্বামী মারা যাবার পর আপন বলতে জগতে বুড়ির কে বর্তমান আছে? উত্তর: স্বামী মারা যাবার পর আপন বলতে জগতে বুড়ির বর্তমান আছে এক নাতজামাই। ২১. বুড়ি কাকে উঠোনের কাঁঠালতলায় আপন মনে বকে গেল? উত্তর: বুড়ি গল্পকথককে উঠোনের কাঁঠালতলায় আপন মনে বকে গেল। ২২. বুড়ি গল্পকথকের জন্য ময়লা ছেঁড়া কাপড়ের প্রান্তে বেঁধে কী নিয়ে এসেছিল? উত্তর: বুড়ি গল্পকথকের জন্য ময়লা ছেঁড়া কাপড়ের প্রান্তে বেঁধে আম নিয়ে এসেছিল। ২৩. “আহ্বান” গল্পের গল্পকথকের সামনে কে দন্তহীন মুখে হাসবার চেষ্টা করল? উত্তর: “আহ্বান” গল্পের গল্পকথকের সামনে বুড়ি দন্তহীন মুখে হাসবার চেষ্টা করল। ২৪. গল্পকথক গ্রামে কার বাড়িতে থাকেন? উত্তর: গল্পকথক গ্রামে এক জ্ঞাতি খুড়োর বাড়িতে থাকেন। ২৫. “আহ্বান” গল্পের বুড়ির স্বামীর নাম কী? উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়ির স্বামীর নাম জমির। ২৬. কে গল্পকথককে বুড়ির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন? উত্তর: গল্পকথকের খুড়ো মশায় গল্পকথককে বুড়ির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ২৭. বুড়ির আনা আমগুলোকে কী রকম বলে উল্লেখ করেছেন? উত্তর: বুড়ির আনা আমগুলোকে কড়া মিষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন। ২৮. “আহ্বান” গল্পের বুড়িকে কে দুধ দিয়েছিল? উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়িকে হাজরার বউ দুধ দিয়েছিল। ২৯. “আহ্বান” গল্পের হাজরার বউ বুড়িকে কী বলে ডাকে? উত্তর: “আহ্বান” গল্পের হাজরার বউ বুড়িকে মা বলে ডাকে। ৩০. কে বুড়িকে খাবার না দিয়ে খায় না? উত্তর: হাজরার বউ বুড়িকে খাবার না দিয়ে খায় না। ৩১. হাজরার বউয়ের পেশা কী ছিল? উত্তর: হাজরার বউয়ের পেশা ছিল ধান ভানা। ৩২. বুড়ি কথিত গোপালকে কী দেখতে যেতে বলে? উত্তর: বুড়ি কথিত গোপালকে ঘরখানা দেখতে যেতে বলে। ৩৩. বুড়ি গল্পকথকের বসবার জন্য ঘরে কী তৈরি করেছিল? উত্তর: বুড়ি গল্পকথকের বসবার জন্য ঘরে খেজুর পাতার চাটাই তৈরি করেছিল। ৩৪. গল্পকথক গ্রামে থাকা অবস্থায় কে রোজ সকালে আসতে ভোলে না? উত্তর: গল্পকথক গ্রামে থাকা অবস্থায় বুড়ি রোজ সকালে আসতে ভোলে না। ৩৫. গল্পকথকের খাবার দুধ কোথা থেকে আসে? উত্তর: গল্পকথকের খাবার দুধ ঘুঁটি গোয়ালিনীর কাছ থেকে আসে। ৩৬. বুড়ির দৃষ্টিতে ঘুঁটি গোয়ালিনীর দুধে অর্ধেক কী? উত্তর: বুড়ির দৃষ্টিতে ঘুঁটি গোয়ালিনীর দুধে অর্ধেক জল থাকে। ৩৭. “আহ্বান” গল্পের বুড়ি গল্পকথককে কী নামে ডাকে? উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়ি গল্পকথককে ‘গোপাল’ নামে ডাকে। ৩৮. অসুস্থ বুড়িকে গল্পকথক কখন দেখতে গেলেন? উত্তর: অসুস্থ বুড়িকে গল্পকথক বিকেলে দেখতে গেলেন। ৩৯. “আহ্বান” গল্পের বুড়ি কীসের উপর শুয়েছিল? উত্তর: “আহ্বান” গল্পের বুড়ি মাদুরের উপর শুয়েছিল। ৪০. বুড়ি কাকে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল? উত্তর: বুড়ি গোপালকে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল। ৪১. “আহ্বান” গল্পে কার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে? উত্তর: “আহ্বান” গল্পে বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ৪২. শেষবারে গ্রামে ঢুকতেই গল্পলেখকের কার সাথে দেখা হয়? উত্তর: শেষবারে গ্রামে ঢুকতেই গল্পলেখকের দিগম্বরীর সাথে দেখা হয়। ৪৩. দিগম্বরী কে? উত্তর: দিগম্বরী পরশু সর্দারের বৌ। ৪৪. গল্পকথক কার কাছ থেকে প্রথমে বুড়ির মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পায়? উত্তর: গল্পকথক দিগম্বরীর কাছে থেকে প্রথমে বুড়ির মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পায়। ৪৫. ‘ওর স্নেহাতুর আÍা বহু দূর থেকে আমায় আহ্বান করে এনেছে।’“আহ্বান” গল্পে কার আÍার কথা বলা হয়েছে? উত্তর: “আহ্বান” গল্পে বুড়ির কথা বলা হয়েছে। ৪৬. “আহ্বান” গল্পে আবদুল, শুকুর, নসর-এরা লেখকের কী হতেন? উত্তর: “আহ্বান” গল্পে আবদুল, শুকুর, নসর-এরা লেখকের স্কুল জীবনের বন্ধু হতেন। ৪৭. কারা বুড়ির কবর খুঁড়েছে? উত্তর: দুজন জোয়ান ছেলে বুড়ির কবর খুঁড়েছে। ৪৮. বুড়ি কার জন্য খেজুর পাতার চাটাই বুনে রেখেছিল? উত্তর: বুড়ি গল্পকথকের জন্য খেজুর পাতার চাটাই বুনে রেখেছিল। ৪৯. বুড়ি কথিত গোপালের জন্য ঘটিতে কী এনেছিল? উত্তর: বুড়ি কথিত গোপালের জন্য ঘটিতে দুধ এনেছিল। ৫০. “আহ্বান” গল্পের কার মন বুড়ির ডাক তাচ্ছিল্য করতে পারেনি? উত্তর: “আহ্বান” গল্পের গল্পলেখকের মন বুড়ির ডাক তাচ্ছিল্য করতে পারেনি। ৫১. গল্পকথক কাপড় কিনতে কার কাছে টাকা দিল? উত্তর: গল্পকথক কাপড় কিনতে বুড়ির নাতজামাইয়ের কাছে টাকা দিল। ৫২. বুড়িকে আনুমানিক কয়টায় দাফন করা হয়েছিল? উত্তর: বুড়িকে আনুমানিক বেলা বারোটায় দাফন করা হয়েছিল। ৫৩. বুড়িকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছিল? উত্তর: বুড়িকে একটা প্রাচীন গাছের তলায় কবর দেয়া হয়েছিল। ৫৪. গল্পকথক পকেট থেকে বুড়িকে কী বের করে দিয়েছিল? উত্তর: গল্পকথক পকেট থেকে বুড়িকে পয়সা বের করে দিয়েছিল। ৫৫. বাল্যকালে কার মা-পিসি মারা গিয়েছে? উত্তর: বাল্যকালে গল্পকথকের মা-পিসি মারা গিয়েছে। |
| অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
|---|
|
১. চক্রবর্তী মহাশয় গল্পলেখককে কেন চালাঘর তুলতে বললেন?
২. ‘সেও তো গরিব লোক।’-ব্যাখ্যা কর।
৩. বুড়ি গোপালের জন্য কেন দুধ নিয়ে এসেছিল?
৪. বুড়ি ডানহাত উঁচিয়ে তালু আড়ভাবে চোখে ধরলেন কেন?
৫. গল্পকথককে বুড়ি চিনতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা কর।
৬. ‘দুধ খেতে পাচ্ছ না ভালো, সে বুঝেছি।’-কথাটির ভাবার্থ লেখ।
৭. হাজরার বউ বুড়িকে খেতে দেয় কেন?
৮. ‘ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড় ভাল' কথাটি বুঝিয়ে দাও।
৯. বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
১০. গল্পকথকের গ্রাম ছাড়ার পর বুড়িকে স্মরণ না থাকার কারণ ব্যাখ্যা কর।
১১. গল্পকথক বুড়িকে পকেট থেকে পয়সা বের করে দিলেন কেন? |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ১: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. বুড়িকে মা বলে ডাকত কে? |
|
ক. বুড়িকে মা বলে ডাকত হাজরা ব্যাটার বউ।
গ. কেরামত দম্পতির মধ্যে ‘আহ্বান’ গল্পের সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং মানবিক
চেতনার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।
ঘ. মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, নিবিড়
আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। উদ্দীপক এবং ‘আহ্বান’ গল্প অনুসারে
মন্তব্যটি যথার্থ। মানুষ মানুষের জন্য সংবেদনশীলতার হাত বাড়িয়ে দেবে এটা
খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। অথচ এটা এখন শুধুই একটা মানবিক বুলিমাত্র।
সর্বত্রই মানুষের মাঝে স্বার্থান্বেষী চিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়। সেখানে
স্নেহ-মায়া-মমতা একটা বোকামিপূর্ণ আচরণ মনে হয়। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ২: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. বিভূতিভূষণ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোন গ্রামে? |
|
ক. বিভূতিভূষণের পৈতৃক নিবাস ব্যারাকপুর গ্রামে।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বা অন্তিম শয়ানের
বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের কাঙালির মা এবং ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার প্রত্যাশার ধরন
এক।”- মন্তব্যটি যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. বুড়ি কী কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল? |
|
ক. বুড়ি নুন কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল।
গ. উদ্দীপকের কবি ‘আহ্বান’ গল্পের লেখক চরিত্রকে নির্দেশ করে।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।’ এ চরণটির ভাব ‘আহ্বান’
গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে পুরোপুরি যথার্থ নয়। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। |
|
ক. লেখকের বাবার বন্ধু হলেন চক্কোত্তি মশায়।
গ. উদ্দীপকের সৌদামিনী ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির মাতৃস্নেহের বা মাতৃত্বের
বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে।
ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘আহ্বান’ গল্পের গাওয়া হয়েছে মানবতার জয়গান।”মন্তব্যটি
যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. জরিনার স্বামীর নাম কী? |
|
ক. জরিনার স্বামীর নাম আফজাল মিয়া।
গ. “উদ্দীপকের শেষ দুই বাক্যে ‘আহ্বান’ গল্পের মর্মার্থ লুকিয়ে
আছে”-মন্তব্যটি যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. লেখক কার কাছ থেকে দুধ রাখতেন? |
|
ক. লেখক ঘুঁটি গোয়ালিনীর কাছ থেকে দুধ রাখতেন।
গ. উদ্দীপকের আজিজের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া
যায়।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেনি।”- মন্তব্যটি
যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. কে লেখককে ঘর তোলার জন্য অনুরোধ করলেন? |
|
ক. চক্কোত্তি মশায় লেখককে ঘর তোলার জন্য অনুরোধ করলেন।
গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের মাতৃøেহের বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. “উদ্দীপকের বুধোর মা ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধা চরিত্রের
প্রতিরূপ।”- মন্তব্যটি যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. কতজন লোক বুড়ির জন্য কবর খুঁড়ছিল? |
|
ক. দুজন লোক বুড়ির জন্য কবর খুঁড়ছিল।
গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার মৃত্যু ও কবর দেয়ার বিষয়টি তুলে
ধরেছে।
ঘ. “ঘটনার সাথে সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের কাঙালি আর ‘আহ্বান’ গল্পের
লেখকের অনুভূতির ভিন্নতা রয়েছে।”- মন্তব্যটি যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। |
|
ক. ‘পথের পাঁচালী’ বিভূতিভূষণের কালজয়ী উপন্যাস।
গ. উদ্দীপকে ‘আহ্বান’ গল্পের জাতি-ধর্মের বিভেদের অসারতার বিষয়টি উঠে
এসেছে।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করতে ব্যর্থ
হয়েছে।”মন্তব্যটি যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম কত সালে? |
|
ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৪ সালে।
গ. উদ্দীপকের বুধোর মায়ের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার বয়সের ভারসাম্য
এবং আর্থিক সচ্ছলতার সাথে অমিল রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের লেখকের এবং ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের গ্রামে ফেরার উদ্দেশ্য
এক নয়।”মন্তব্যটি যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২: |
|---|
|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. বিভূতিভূষণ কত সালে বিএ পাস করেন? |
|
ক. বিভূতিভূষণ ১৯১৮ সালে বিএ পাস করেন।
গ. উদ্দীপকটি ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার মৃত্যুর দিকটি তুলে ধরেছে।
ঘ. “মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকলেও উদ্দীপকের ভাবটি ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের
চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করতে পারেনি।” মন্তব্যটি যথার্থ। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩: |
|---|
|
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. গল্পলেখক বুড়িকে পকেট থেকে কী বের করে দিয়েছিলেন? |
|
ক. গল্পলেখক বুড়িকে পকেট থেকে পয়সা বের করে দিয়েছিলেন। গ. ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির স্নেহশীল চরিত্র ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘আহ্বান’ গল্পের বর্ণিত লেখক ও বুড়ির মধ্যকার সম্পর্কের গভীরতা বিশ্লেষণ করো। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪: |
|---|
|
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. গল্পলেখক কোন মাসে ঘরে এসে উঠেছিলেন? |
|
ক. গল্পলেখক জ্যৈষ্ঠ মাসে ঘরে এসে উঠেছিলেন। গ. ‘আহ্বান’ গল্পে সাম্যের যে আহ্বান রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘আহ্বান’ গল্পে মানুষের প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্লেষণ করো। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৫: |
|---|
|
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. গল্পলেখককে বুড়ি কী দিয়ে কচি শর্সা খেতে বলেছে? |
|
ক. গল্পলেখককে বুড়ি নুন দিয়ে কচি শসা খেতে বলেছে। গ. ‘আহ্বান’ গল্পে প্রকাশিত অসাম্প্রদায়িকতার ভাবনার দিকটি ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি ও গোপালের চরিত্রের ধর্মীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মমতার বন্ধনে আবদ্ধ হবার বিষয়টি আলোচনা করো। |
| সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৬: |
|---|
|
উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. বুড়ি কার বাড়ি থেকে দুধ নিয়ে এসেছিলেন? |
|
ক. বুড়ি মেয়ের বাড়ি থেকে দুধ নিয়ে এসেছিলেন। গ. ‘আহ্বান’ গল্পের গল্পলেখকের চরিত্র ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘আহ্বান’ গল্পে গোপালের চরিত্রে যে মানবতা প্রকাশ পেয়েছে সে বিষয়টি আলোচনা করো। |
তথ্যসূত্র : |
|---|
|
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |
