কায়কোবাদ (১৮৫৭-১৯৫১)

কায়কোবাদ : কাজেম আল কোরেশী
কায়কোবাদ : কাজেম আল কোরেশী

কবি-পরিচিতি

  1. জন্মসন ও স্থান:

    মহাকবি কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

  2. প্রকৃত নাম:

    কাজেম আল কোরেশী

  3. পিতা:

    পিতা শাহামত উল্লাহ আল কোরেশী ছিলেন ঢাকা জজ কোর্টের উকিল।

  4. পড়াশোনা ও চাকরি :

    তিনি সেন্টগ্রেগরি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পরে ঢাকা মাদরাসাতে প্রবেশিকা শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরীক্ষা না দিয়েই পোস্টমাস্টারের চাকুরিতে প্রবেশ করেন।

  5. আরো কিছু তথ্য:

    ১. তিনি মূলত কবি ছিলেন।
    ২. বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম মহাকাব্য রচয়িতা।
    ৩. আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি।
    ৪. বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা।
    ৫. তিনি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেনের ধারায় মহাকাব্য রচনা করেন।
    ৬. ১৯৩২ সালে ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলন’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

  6. উপাধি:

    ১৯৩২ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ কর্তৃক কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ ও সাহিত্যরত্ন লাভ করেন।

  7. মহাকাব্য:

    মহাশ্মশান (১৯০৪, পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ অবলম্বনে রচিত।)

  8. অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ:

    ১. বিরহ বিলাপ (১৮৭০, প্রথম কাব্য। মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রকাশিত হয়।)
    ২. কুসুম কানন (১৮৭৩)
    ৩. অশ্রুমালা (১৮৯৬) গীতিকাব্য।
    ৪. শিব মন্দির (১৯২১)
    ৫. অমিয় ধারা (১৯২৩)
    ৬. শাশানভষ্ম (১৯২৪)
    ৭. মহররম শরীফ (১৯৩৩, মহাকাব্যোচিত বিপুল আয়তনের একটি কাহিনি কাব্য।)

  9. মৃত্যুর পর প্রকাশিত গ্রন্থ:

    ১. প্রেমের ফুল (১৯৭০)
    ২. প্রেমের বাণী (১৯৭০)
    ৩. প্রেম পারিজাত (১৯৭০)
    ৪. মন্দাকিনী-ধারা (১৯৭১)
    ৫. গওছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ (১৯৭৯)।
    (বি.দ্র: বাংলা একাডেমি ‘কায়কোবাদ রচনাবলি’ (৪ খণ্ড, ১৯৯৪-১৯৯৭) প্রকাশ করেছে।)

  10. মৃত্যু:

    তিনি ২১শে জুলাই ১৯৫১সালে মৃত্যুবরণ করেন।

  11. মহাশ্মশান:

    মহাকবি কায়কোবাদ এর মহাকাব্য 'মহাশ্মশান' বাংলা সাহিত্যের সর্ববৃহৎ মহকাব্য। ষাট সর্গে বিভক্ত ৮৭০ পৃষ্ঠাব্যাপী এ মহাকাব্য রচনায় দীর্ঘ দশ বছর সময় লেগেছিল। মোহাম্মদ রওশন আলী সম্পাদিত ‘কোহিনূর’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৭৬১ সালে আহমদ শাহ আবদালী ও মারাঠাদের মধ্যে সংঘটিত পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মহাকাব্যটি রচিত। মহাশ্মশান মহাকাব্যের কাহিনিবিন্যাস এরকম- পানিপথের প্রান্তর। একপাশে মুসলিম শিবির, অন্যপাশে মারাঠাদের কুঞ্জুরপুর দূর্গ। মুসলমানদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাবুলের অধিপতি আহমেদ শাহ আবদালী, মেহেদী বেগের কন্যা জোহরা বেগম। অন্যদিকে মারাঠাদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইব্রাহিম কার্দি। মুসলিম পক্ষের জোহরা বেগমের স্বামী হিন্দুদের পক্ষের সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দি। জোহরা বেগম বারবার ছদ্মবেশ ধারণ করে মারাঠা শিবিরে যায় স্বামী ইব্রাহিম কার্দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু ইব্রাহিম কার্দি স্ত্রীকে ভালবাসলেও আদর্শগত কারণেই ফিরে আসতে নারাজ। কারণ তাঁর যখন কোন কর্মসংস্থান ছিল না তখন হিন্দু মারাঠারাই তাকে চাকরি দিয়েছে এবং সেনাপতি পদে আসীন করেছে তাই। অতএব এ যুদ্ধদিনে তাদের ফেলে সে চলে আসতে পারে না। হঠাৎ করে অতর্কিত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যুদ্ধে মারাঠা বাহিনী পরাজিত হলে ইব্রাহিম কার্দি ধৃত হয়। যুদ্ধের সর্বাধিপতি আহমদ শাহ আবদালীর কাছে স্বামী মুক্তি দাবি করে মুক্তির ফরমান নিয়ে জোহরা বেগম কারাগারে ইব্রাহিম কার্দিকে মুক্ত করতে গিয়ে দেখে সে মারা গেছে। ইব্রাহিম কার্দি ক্ষুদ্র মুক্তিকে অস্বীকার করে বৃহৎ মুক্তিকে গ্রহণ করেন।
    বি.দ্র: মুনীর চৌধুরী ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকের কাহিনি এ মহাকাব্য থেকে নিয়েছেন।

Next Post Previous Post