ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

লেখক-পরিচিতি

  1. জন্মসন ও স্থান :

    ১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনিশ শতকের বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও গদ্যকার।

  2. পরিচিতি ও নাম :

    উনিশ শতকের বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও গদ্যকার। প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে স্বাক্ষর করতেন ‘ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা’ নামে।

  3. পিতা-মাতা :

    পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভগবতী দেবী।

  4. অধ্যয়ন :

    ১৮২৯ সালে কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। (সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এর মাত্র পাঁচ বছর আগে ১৮২৪ সালে)। বার বছর সে কলেজে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তাঁর সহপাঠী ছিল মদনমোহন তর্কালঙ্কার।

  5. প্রধান পণ্ডিত হিসেবে যোগদান :

    ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর ২৯ ডিসেম্বর মাত্র ২১ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের সেরেস্তাদার বা প্রধান পণ্ডিত হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৮৪৬ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।

  6. অধ্যক্ষ পদ লাভ :

    ১৮৪৬ সালের ৬ই এপ্রিল সংস্কৃত কলেজে যোগদান করেন এবং ১৯৫১ সালে অধ্যক্ষ পদে উন্নীত হন।

  7. যতি বা বিরাম চিহ্নের প্রবর্তন :

    তিনি বাংলা সাহিত্যের যতি বা বিরাম চিহ্নের ব্যবহার করেন।

  8. বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠা :

    নারী শিক্ষার প্রসারে কলকাতায় বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অর্থায়নে মেট্টোপলিটন কলেজ (অধুনা বিদ্যাসাগর কলেজ) স্থাপিত হয়।

  9. পরোলকগমন :

    ২৯শে জুলাই ১৮৯১ সালে কলকাতায় মারা যান।

  10. বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ :

    ১৮৩৯ সালের ২২শে এপ্রিল হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৬ মেল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান তাতেই প্রথম তাঁর নামের সাথে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি ব্যবহার করা হয়।

    এছাড়া সংস্কৃত কলেজে বার বছর পাঁচ মাস অধ্যয়ন শেষে অপর একটি প্রশংসাপত্র লাভ করেন। ১৮৪১ সালের ১০ই ডিসেম্বরে প্রাপ্ত দেবনগরী হরফে লিখিত এই সংস্কৃত প্রশংসাপত্রে কলেজের অধ্যাপকগণ ঈশ্বরচন্দ্রকে 'বিদ্যাসাগর' নামে অভিহিত করেন। বদান্যতার জন্য জনগণ তাঁকে ‘দয়ার সাগর’ আখ্যা দেয়।

  11. বিদ্যাসাগর ও বিধবা বিবাহ :

    বিদ্যাসাগরের আগেও অনেকেই বিধবা বিবাহ প্রচলনের জন্য কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে মহারাজ রাজবল্লভ অন্যতম। কিন্তু সফল হন নি।

    বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালের ২৬শে জুলাই বিধবাবিবাহ আইন পাশ হয়। ওই বছর ৭ ডিসেম্বর প্রথম কলকাতায় বিধবা বিবাহ হয় শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সাথে কালীমতী দেবীর। এ বিয়ের যাবতীয় খরচ বহন করেন বিদ্যাসাগর।

    ১৮৭০ সালে পুত্র নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভবসুন্দরী দেবী নামে এক বিধবার সাথে বিয়ে দিয়ে নিজে এ আইনের বাস্তবায়ন করেন।

  12. বাংলা গদ্যের জনক ‘বিদ্যাসাগর’:

    তিনিই প্রথম বাংলা গদ্যের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কার করেন এবং গদ্য ভাষায় যতি চিহ্নাদি যথাযথভাবে প্রয়োগ করেন। ফলে তাঁর গদ্য হয়ে ওঠে শৈলীসম্পন্ন। এজন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘বাংলা গদ্যের জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

  13. অনুবাদগ্রন্থ :

    বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭)। বিদ্যাসাগরের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। হিন্দি বৈতাল পচ্চীসীর অনুবাদ। এ গ্রন্থেই প্রথম যতিচিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

    শকুন্তলা (১৮৫৪)। কবি কালিদাসের 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম' নাটকের উপাখ্যান ভাগের অনুবাদ

    সীতার বনবাস (১৮৬০)। বাল্মীকির রামায়ণের উত্তরাকাণ্ড অবলম্বনে রচিত।

    ভ্রান্তিবিলাস (১৮৬৯) [শেক্সপিয়ারের Comdey of Errors এর অনুবাদ]

    জীবনচরিত। চেম্বার্সের Biographics অনুসরনে রচিত।

    নীতিবোধ। রবার্ট ও উইলিয়াম চেম্বার্সের মরাল ক্লাস বুক অবলম্বনে রচিত।

    বাঙলার ইতিহাস। মার্শম্যানের History of Bengal গ্রন্থের অনুবাদ। বইটিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজত্বলাভের পর থেকে লর্ড বেন্টিং এর সময় পর্যন্ত ইতিহাস লিখিত আছে।

  14. মৌলিক গ্রন্থ :

    প্রভাবতী সম্ভাষণ (১৮৬৩) [বাংলা সাহিত্যের প্রথম মৌলিকগ্রন্থ ও শোকগাঁথা। বন্ধুর বালিকা কন্যা প্রভাবতীর মৃত্যুশোকে রচনা করেন।
    ব্যাকরণ কৌমুদী। (১৮৫৩)
    সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৩)।
    বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫)।
    শব্দ মঞ্জুরি (১৮৬৪)
    বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৭১)।
    নিষ্কৃতি লাভের প্রয়াস (১৮৮৮)
    জীবন-চরিত (১৮৯১, মরণোত্তর প্রকাশিত)

  15. বিতর্কমূলক গ্রন্থ :

    অতি অল্প হইল (১৮৭৩)। 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য' ছদ্মনামে লেখা।
    আবার অতি অল্প হইল (১৮৭৩)। এটিও 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য' ছদ্মনামে লেখা।
    ব্রজবিলাস (১৮৮৫)। 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য' ছদ্মনামে লিখেছেন। এতে তিনি তৎকালীন হিন্দু পণ্ডিত ব্রজনাথ বিদ্যারত্ব বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি দিয়েছিলেন সেগুলি খণ্ডন করেছেন।
    রত্নপরীক্ষা (১৮৮৬)। 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপো-সহচরস্য' ছদ্মনামে লিখেছেন। এতে তিনি বিধবা বিবাহের বিপক্ষে সংস্কৃত কলেজের তিন জন অধ্যাপক ভুবনমোহন বিদ্যারত্ন, প্রশান্তচন্দ্র ন্যায়রত্ন এবং মধুসূদন স্মৃতিরত্বের যুক্তি খণ্ডন করেন।
    আত্মজীবনী- আত্মচরিত।

  16. পাঠ্যবই :

    বর্ণপরিচয় (১৮৫৫)
    ঋজুপাঠ (৩খণ্ড, ১৮৫১-৫২)
    বোধোদয় (১৮৫১, চেম্বার্সের Rudiments of Knowledge অনুসরনে রচিত)
    কথামালা (১৮৫৬, ঈশপের কাহিনি অবলম্বনে)
    আখ্যানমঞ্জরি (১৮৬৮)। বিশ্বের নানা দেশের ইতিহাস প্রসিদ্ধ ব্যক্তির জীবনের গৌরবদীপ্ত ঘটনাই এ গ্রন্থের রচনাগুলোর উপজীব্য।

  17. সম্পাদিত পত্রিকা :

    ১৮৫০ সালে মদনমোহন তর্কালঙ্কার সহযোগে ‘সর্ব্বশুভকরী’ পত্রিকা প্রকাশ করেন।
    ১৮৫৮ সালে ‘সোমপ্রকাশ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশে অবদান রাখেন।

Next Post Previous Post