‘রেইনকোট' গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

রেইনকোট : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
রেইনকোট : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

রেইনকোট
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

ভোররাত থেকে বৃষ্টি। আহা! বৃষ্টির ঝমঝম বোল। এই বৃষ্টির মেয়াদ আল্লা দিলে পুরো তিন দিন। কারণ শনিতে সাত মঙ্গলে তিন, আর সব দিন দিন। এটা জেনারেল স্টেটমেন্ট। স্পেসিফিক ক্ল্যাসিফিকেশনও আছে। যেমন, মঙ্গলে ভোররাতে হইল শুরু, তিন দিন মেঘের গুরুগুরু। তারপর, বুধের সকালে নামল জল, বিকালে মেঘ কয় এবার চল। বৃহস্পতি শুক্র কিছু বাদ নাই। কিন্তু এখন ভুলে গেছে। যেটুকু মনে আছে, পুরু বেড-কভারের নিচে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আর-একপশলা ঘুমিয়ে নেওয়ার জন্যে তাই যথেষ্ট। অন্তত তিন দিন ফুটফাট বন্ধ। বাদলায় বন্দুক-বারুদ কি একটু জিরিয়ে নেবে না? এই কটা দিন নিশ্চিন্তে আরাম করো।

তা আর হলো কই? ম্যান প্রোপোজেস--। এমন চমৎকার বাদলার সকালে দরজায় প্রবল কড়া নাড়া শেষ হেমন্তের শীত শীত পর্দা ছিঁড়ে ফালাফালা করে ফেলল। সব ভেস্তে দিল। মিলিটারি! মিলিটারি আজ তার ঘরে। আল্লা গো। আল্লাহুম্মা আন্তা সুবহানকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন। পড়তে পড়তে সে দরজার দিকে এগোয়। এই কয়েক মাসে কত সুরাই সে মুখস্থ করেছে। রাস্তায় বেরুলে পাঁচ কালেমা সব সময় রেডি রাখে ঠোঁটের ওপর। কোনদিক থেকে কখন মিলিটারি ধরে। তবু একটা না একটা ভুল হয়েই যায়। দোয়া মনে হলো ঠিকই কিন্তু টুপিটা মাথায় দিতে ভুলে গেল।

দুটো ছিটকিনি, একটা খিল এবং কাঠের ডাশা খুলে দরজার কপাট ফাঁক করতেই বাতাস আর বৃষ্টির ঝাপ্টার সঙ্গে ঘরে ঢোকে প্রিনসিপ্যালের পিওন। আলহামদুলিল্লাহ! মিলিটারি নয়। পিওনকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু লোকটার চিনচিনে গলা গম্ভীর স্বরে হাঁকে, “স্যার নে সালাম দিয়া।” বলেই ভাঙাচোরা গালের খোঁচাখোঁচা দাড়িতে লোকটা নিজের বাক্যের কোমল শাঁসটুকু শুষে নেয় এবং হুকুম ছাড়ে, “তলব কিয়া। আভি যানে হোগা।”

কী ব্যাপার?
বেশি কথা বলার সময় নাই-কলেজের দেওয়াল ঘেঁষে কারা বোমা ফাটিয়ে গেছে গত রাতে।
মানে?

“মিসকিরিয়ান লোগ ইলেকটিরি টেরানসফার্মার তোড় দিয়া। অওর অয়াপস যানেকা টাইম পিরিনসিপাল সাহাবকা কোঠিমে গেরেনড ফেকা। গেট তোড় গিয়া।”

ভয়াবহ কাণ্ড। ইলেকট্রিক ট্র্যান্সফর্মার তো কলেজের সামনের দেওয়াল ঘেঁষে। দেওয়ালের পর বাগান, টেনিস লন। তারপর কলেজ দালান। মস্ত দালান পার হয়ে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মাঠ। মাঠ পেরিয়ে একটু বাঁ দিকে প্রিনসিপ্যালের কোয়ার্টার। এর সঙ্গে মিলিটারি ক্যাম্প। কলেজের জিমন্যাশিয়ামে এখন মিলিটারি ক্যাম্প। প্রিনসিপ্যালের বাড়ির গেটে বোমা ফেলা মানে মিলিটারি ক্যাম্প অ্যাটাক করা। সামনের দেওয়ালে বোমা মেরে এতটা পথ ক্রস করে গেল কী করে? সে জানতে চায়, “ক্যায়সে?”

প্রিনসিপ্যালের পিওন জানবে কী করে? “উও আপ হি কহ সকতা।”

মানে? সে-ই বা বলবে কী করে? পিওন কি তাকে মিসক্রিয়ান্টদের লোক ভাবে নাকি? তার মাথাটা আপনাআপনি নিচু হলে মুখ দিয়ে পানির মতো গড়িয়ে পড়ে, “ইসহাক মিয়া, বৈঠিয়ে। চা টা খাইয়ে। আমার এই পাঁচ সাত মিনিট লাগেগা।”

‘নেহি।’ নাশতার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়ে ইসহাক বলে, “আব্দুস সাত্তার মিরধাকা ঘর যানে হোগা। আপ আভি আইয়ে। এক কর্নেল সাহাব পঁওছ গিয়া। সব পরফসরকো এত্তেলা দিয়া। ফওরন আইয়ে।”

কর্নেলের নেতৃত্বে মিলিটারির হাতে কলেজটা এবং তাকেও ন্যস্ত করে ইসহাক বেরিয়ে যায়, রাস্তায় ঘড়ঘড় করতে থাকা বেবি ট্যাকসির গর্জন তুলে সে রওয়ানা হলো জিওগ্রাফির প্রফেসরের বাড়ির দিকে। ইসহাক নিজেই এখন মিলিটারির কর্নেল বললেও চলে। তবে ভোরবেলা কলেজের ভেতরে কর্নেল খোদ চলে আসায় সে হয়ত ডেমোটেড হয়েছে লেফটেন্যান্ট কর্নেলে। আরও নিচেও নামাতে পারে। কিন্তু ক্যাপ্টেনের এদিকে তাকে ঠেলা মুশকিল। মিলিটারি প্রাদুর্ভাবের পর থেকে তাকে দেখে কলেজের সবাই তটস্থ। এপ্রিলের শুরু থেকে সে বাংলা বলা ছেড়েছে। কোনকালে দাদা না পরদাদার ভায়রার মামু না কে যেন দিল্লিওয়ালা কোন সাহেবের খাস খানসামা ছিল, সেই সুবাদে দিনরাত এখন উর্দু বলে।

“যেতেই হবে? অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে তোমার হাঁপানির টানটা আবার।” বৌয়ের এসব সোয়াগের কথা শুনলে কি তার চলবে? বৌ কি প্রিনসিপ্যালের ধমকের ভাগ নেবে? এর ওপর কলেজে কর্নেল এসেছে। কপালে আজ কী আছে আল্লাই জানে! ফায়ারিং স্কোয়াডে যদি দাঁড় করিয়েই দেয় তো কর্নেল সাহেবের হাতে পায়ে ধরে ঠিক কপালে গুলি করার হুকুম জারি করানো যায় না? প্রিনসিপ্যাল কি তার জন্যে কর্নেলের কাছে এই তদবিরটুকু করবে না? পাকিস্তানের জন্যে প্রিনসিপ্যাল দিনরাত দোয়া-দরুদ পড়ছে। সময় নাই অসময় নাই আল্লার দরবারে কান্নাকাটি করে এবং সময় করে কলিগদের গালাগালিও করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি প্রিনসিপ্যাল মিলিটারির বড়ো কর্তাদের কাছে সবিনয়ে নিবেদন করেছিল, পাকিস্তান যদি বাঁচাতে হয় তো সব স্কুলকলেজ থেকে শহিদ মিনার হটাও। এগুলো হলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা। পাকিস্তানের পাক সাফ শরীরটাকে নীরোগ করতে হলে এসব কাঁটা ওপড়াতে হবে। তা মিলিটারি ডক্টর আফাজ আহমদের পরামর্শ শুনেছে, গ্রামে-গঞ্জে যেখানেই গেছে, প্রথমেই কামান তাক করছে শহিদ মিনারের দিকে। দেশে একটা কলেজে শহিদ মিনার আর অক্ষত নাই। তা প্রিনসিপ্যাল তাদের এত বড়ো একটা পরামর্শ দিল, আর সামান্য এক লেকচারারকে গুলি করার সময় শরীরের আলতুফালতু জায়গা বাদ দিয়ে কপালটা টার্গেট করার অনুরোধটা তার মানবে না? আবার প্রিনসিপ্যালকে সে এত সার্ভিস দিচ্ছে, তার কলিগের, তওবা, সাব-অর্ডিনেটের জন্যে এতটুকু করবে না? প্যান্টের ভেতর পা গলিয়ে দিতে দিতে সে শোনে রান্নাঘর থেকে বৌ বলছে, “তাড়াতাড়ি চলে এসো। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে মিরপুর ব্রিজের দিক থেকে গুলির আওয়াজ আসছিল। কখন কী হয়।”

এসব কথা এখন বলার দরকারটা কী?-রেডিও টেলিভিশনে হরদম বলছে, সিচুয়েশন নর্ম্যাল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দুশমনকে সম্পূর্ণ কব্জা করা গেছে। মিসক্রিয়েন্টরা সব খতম। প্রেসিডেন্ট দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। কিছুদিন বাদে বাদে তার ভাষণ শোনা যায়, আওয়ার আলটিমেট এইম রিমেইনস দ্য সেম, দ্যাট ইজ টু হ্যান্ডওভার পাওয়ার টু দি ইলেকটেড রিপ্রেজেনটেটি অব দ্য পিপল। সবই তো নর্ম্যাল হয়ে আসছে। বাঙালি, আই মিন, ইস্ট পাকিস্তানি গভর্নর, মন্ত্রীরা ইস্ট পাকিস্তানি। সবই তো স্বাভাবিক। এখন বৌ তার এসব বাজে কথা বলে কেন? ইস! আসমাকে নিয়ে আর পারা যায় না।

“এই বৃষ্টিতে শুধু ছাতায় কুলাবে না গো।” বৌয়ের আরেক দফা সোয়াগ শোনা গেল, “তুমি বরং মিন্টুর রেইনকোটটা নিয়ে যাও।”

ইস! আবার মিন্টু। বৌয়ের এই ভাইটার জন্যেই তাকে এক্সট্রা তটস্থ হয়ে থাকতে হয়। বাড়ি থেকে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তার মগবাজারের দুই কামরার ফ্ল্যাট থেকেই তো মিন্টু চলে গেল জুন মাসে, জুনের ২৩ তারিখে। জুলাইয়ের পয়লা তারিখে সে বাড়ি শিফট করল। বলা যায় না, ওখানে যদি কেউ কিছু আঁচ করে থাকে। ও চলে যাবার তিনদিন পরেই পাশের ফ্ল্যাটের গোলগাল মুখের মহিলা তার বৌকে জিগ্যেস করেছিল, “ভাবি, আপনার ভাইকে দেখছি না।” ব্যস, এই শুনেই সে বাড়ি বদলাবার জন্যে লেগে গেল হন্যে হয়ে। মিলিটারি লাগার পর থেকে এই নিয়ে চারবার বাড়ি পাল্টানো হলো। এখানে আসার পর নিচের তলার ভদ্রলোক একদিন বলছিল, “আমার ভাইটাকে আর ঢাকায় রাখলাম না। যে গোলমাল, বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম।” শুনে বুকটা তার ঢিপঢিপ করছিল, এবার যদি তার শালার প্রসঙ্গ তোলে? নিরাপত্তার জন্যেই সে এখানে এসেছে। কলেজ থেকে দূরে, আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে। শহর থেকেও দূরেই বলা যায়। ভেবেছিল নতুন এলাকা, পুবদিকে জানলা ধরে দাঁড়ালে চোখে পড়ে বিল আর ধানক্ষেত। তা কী বিপদ! এদিকে নাকি নৌকা করে চলে আসে স্টেনগানওয়ালা ছোকরার দল। এদিককার মানুষ চোখে খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র। এর ওপর বৌ যদি মিন্টুর কথা তোলে তো অস্ত্র ঢুকে পড়ে তার ঘরের মধ্যিখানে। মিন্টু যে কোথায় গেছে তা সে-ও জানে তার বৌ-ও জানে। কিসিনজার সাহেব বলেছে, এসব হলো পাকিস্তানের ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার। -মানুষ মেরে সাফ করে দেয়, বাড়িঘর, গ্রাম, বাজারহাট জ্বালিয়ে দিচ্ছে,-কারো কোনো মাথাব্যথা নাই। এসব হলো ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার। -না, না, এ ধরনের ভাবনা ধারে কাছে ঘেঁষতে দেওয়াও ঠিক নয়। নিচের ফ্ল্যাটে থাকে ওয়েলডিং ওয়ার্কশপের মালিক, তার শ্বশুর নিশ্চয়ই সর্দার গোছের রাজাকার। সপ্তাহে দুইদিন-তিনদিন মেয়ের বাড়িতে রেফ্রিজারেটর, টেপ রেকর্ডার, দামি দামি সোফাসেট, ফ্যান, খাট-পালং সব চালান পাঠায়।

“দেখি তো, ফিট করে কিনা।” আসমা এগিয়ে এসে তার গায়ে রেইনকোট চড়িয়ে দিতে দিতে বলে, "মিন্টু তো আমার অনেক লম্বা। তোমার গায়ে হবে তো?” দেখো, ফের মিন্টুর দৈর্ঘ্যের তুলনা করে তার সঙ্গে। এই ভাইকে নিয়ে এরকম বাড়াবাড়ি করাটা কি আসমার ঠিক হচ্ছে?

“ভালোই হলো। তোমার গোড়ালি পর্যন্ত ঢাকা পড়েছে। পায়েও বৃষ্টি লাগবে না।” এখানেই আসমার শেষ নয়। রেইনকোটের সঙ্গেকার টুপি এনে চড়িয়ে দেয় তার মাথায়।

“আব্বু ছোটোমামা হয়েছে। আব্বু ছোটোমামা হয়েছে।” আড়াই বছরের মেয়ের সদ্য-ঘুম-ভাঙা গলায় ভাঙা ভাঙা বুলি শুনে সে চমকে ওঠে, মিন্টু কি ঢুকে পড়লো অস্ত্রশস্ত্র হাতে? এর মানে পিছে পিছে ঢুকছে মিলিটারি। তার মানে-। না, দরজার ছিটকিনি ও খিল সব বন্ধ।

তাকে কি মিন্টুর মতো দেখাচ্ছে? মিলিটারি আবার ভুল করে বসবে না তো? এর মধ্যে তার পাঁচ বছরের ছেলেটা গম্ভীর চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করে রায় দেয়, “আব্বুকে ছোটোমামার মতো দেখাচ্ছে। আব্বু তা হলে মুক্তিবাহিনী। তাই না?” এ তো ভাবনার কথা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুনরূপে সে ভ্যাবাচ্যাকা খায়। না-! খামাখা ভয় পাচ্ছে। বৃষ্টির দিনে রেইনকোট গায়ে দেওয়াটা অপরাধ হবে কেন? মিলিটারির কি আর বিবেচনাবোধ নাই? প্রিনসিপ্যাল ড. আফাজ আহমদ ঠিকই বলে, "শোনেন, মিলিটারি যাদের ধরে, মিছেমিছি ধরে না। সাবভার্সিভ অ্যাকটিভিটিজের সঙ্গে তারা সামহাউ অর আদার ইন্ডলড্ড।" তা সে তো বাপু এসব থেকে শতহাত দূরে। শালা তার বর্ডার ক্রস করল, ফিরে এসে দেশের ভেতরে দমাদম মিলিটারি মারে। তাতে আর দুলাভাইয়ের দোষটা কোথায়? এই যে মিলিটারি প্রত্যেকদিন এই ঢাকা শহরের বাজার পোড়ায়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে টপাটপ মানুষ মারে, মেয়েদের ধরে নিয়ে যায়, সে কখনো এসব নিয়ে টু শব্দটি করেছে? কলেজের দেওয়াল ঘেঁষে প্রিনসিপ্যালের কোয়ার্টারের পাশে মিলিটারি ক্যাম্প, ক্লাসট্রাস সব বন্ধ। ছেলেরা কেউ আসে না। মাস্টারদের হাজিরা দিতে হয়, তাও বহু টিচার গা ঢাকা দিয়েছে কবে থেকে। সে তো রোজ টাইফ্লি যায়। স্টাফ রুমে কলিগরা ফিসফিস করে, কোথায় কোন ব্রিজ উড়ে গেল, কোথায় সাত মিলিটারির লাশ পড়েছে ছেলেদের গুলিতে, এই কলেজের কোন কোন ছেলে ফ্রন্টে গেছে, কই, সে তো এসব আলাপের মধ্যে কখনো থাকে না। এসব কথা শুরু হলেই আলগোছে উঠে সে চলে যায় প্রিনসিপ্যালের কামরায়। ড. আফাজ আহমদের খ্যাসখ্যাস গলায় হিন্দুস্তান ও মিসক্রিয়েন্টদের আশু ও অবশ্যম্ভাবী পতন সম্বন্ধে নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী শোনে। ওই ঘরে আজকাল সহজে কেউ ঘেঁষে না। উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদকে প্রিনসিপ্যাল আজকাল তোয়াজ করে।

মিন্টুর ফেলে-যাওয়া নাকি রেখে-যাওয়া রেইনকোটে ঢোকার পর থেকে তার পা শিরশির করছে, আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। প্রিনসিপ্যাল তাকে ডেকে পাঠিয়েছে সেই কখন!

রাস্তায় একটা রিকশা নাই। তা রিকশার পরোয়াও সে এখন করছে না। রেইনকোটের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে বাসস্ট্যান্ড যেতে তার কোনো অসুবিধে হবে না। রেইনকোটের ওপর বৃষ্টি পড়ছে অবিরাম। কী মজা, তার গায়ে লাগে না একটি ফোঁটা। টুপির বারান্দা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লে কয়েক ফোঁটা সে চেটে দেখে। ঠিক পানসে স্বাদ নয়, টুপির তেজ কি পানিতেও লাগল নাকি? তাকে কি মিলিটারির মতো দেখাচ্ছে? পাঞ্জাব আর্টিলারি, না বালুচ রেজিমেন্ট, না কম্যান্ডো ফোর্স, নাকি প্যারা মিলিটারি, না মিলিটারি পুলিশ, ওদের তো একেক গুষ্টির একেক নাম, একেক সুরত। তার রেইনকোটে তাকে কি নতুন কোনো বাহিনীর লোক বলে মনে হচ্ছে? হোক। সে বেশ হনহন করে হাঁটে। শেষ-হেমন্তের বৃষ্টিতে বেশ শীত-শীত ভাব। কিন্তু রেইনকোটের ভেতরে কী সুন্দর ওম। মিন্টুটা এই রেইনকোট রেখে গিয়ে কী ভালোই যে করেছে।

বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে বাসের জন্য তাকে তাকাতে হয় উত্তরেই। মিলিটারি লরির ল্যাজটাও দেখা যাচ্ছে না। আবার তার বাসেরও তো নামগন্ধ নেই। বাসস্ট্যান্ডে জনপ্রাণী বলতে সে একেবারে একলা। রাস্তার পাশে পান-বিড়ি-সিগ্রেটের ছোট দোকানটার ঝাঁপ একটুখানি তুলে দোকানদারও তাকিয়ে রয়েছে উত্তরেই, ওদিকে কি কোনো গোলমাল হলো নাকি? দোকানদার ছেলেটা একটু বাচাল টাইপের। বাসস্ট্যান্ডে তাকে দেখলেই ছোঁড়াটা বিড়বিড় করে, কাল শোনেন নাই? মিরপুরের বিল দিয়া দুই নৌকা বোঝাই কইরা আইছিল। একটা জিপ উড়াইয়া দিছে, কমপক্ষে পাঁচটা খানসেনা খতম। বিবিসি কইছে, রংপুর-দিনাজপুরের হাফের বেশি জায়গা স্বাধীন। এর মধ্যেই ছিপছিপে বৃষ্টিতে লালচে আভা তুলে এসে পড়ল লাল রঙের স্টেট বাস।

বাসে যাত্রী কম। না, না, কন্ডাক্টররা সবসময় যেমন-খালি-গাড়ি বলে চ্যাঁচায়, সেরকম নয়। সত্যি সত্যি অর্ধেকের বেশি সিট খালি। সে বাসে উঠলে তার রেইনকোটের পানি পড়তে লাগল বাসের ভিজে মাটিতে। এ জন্যে তার একটু খারাপ কথা, অন্তত টিটকারি শোনার কথা। কিন্তু তাকে কেউ কিছু বলে না।

ঠোঁটে তার একটু হাসি বিছানো থাকে। এই নীরব কিন্তু স্পষ্ট হাসির কারণ কি এই যে, তার রেইনকোটের পানিতে বাসে সয়লাব হয়ে গেলেও কেউ টু শব্দটি করছে না? তার পোশাক কি সবাইকে ঘাবড়ে দিল নাকি?

খালি রাস্তা পেয়ে বাস চলে খুব জোরে। কিন্তু তার আসনটি সে নির্বাচন করতে পারছে না। টলতে টলতে একবার এই সিট দেখে, পছন্দ হয় না বলে ফের ওই সিটের দিকে যায়। এমন সময় পেছনের দিক থেকে দুজন যাত্রী উঠে পড়ে তাড়াহুড়া করে, “রাখো রাখো”, বলতে বলতে ঝুঁকি নিয়ে তারা নেমে পড়ে চলন্ত বাস থেকে। সে তাদের দিকে তাকায় এবং বুঝতে পারে, এরা পালাল ঠিক তাকে দেখেই। লোক দুটো নিশ্চয়ই ক্রিমিনাল। একটা চোর, আরেকটা পকেটমার। কিংবা দুটোই চোর অথবা দুটোই পকেটমার। নামবার মুহূর্তে দুটোর মধ্যে সর্দার টাইপেরটা তার দিকে পেছন ফিরে তাকাল। সেই চোখ ভরা ভয়, কেবল ভয়।

জুৎসই সিট বেছে নিয়ে সে ধপাস করে বসতেই ফোমে ফস করে আওয়াজ হয় এবং তাইতে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় সামনের সিটে বসা তিনজন যাত্রী। হুঁ। এদেরও সে ঠিক চোর অথবা পকেটমার বলে ঠিক শনাক্ত করে ফেলে। ডাকাতও হতে পারে। কিংবা মিলিটারি কোনো বস্তিতে আগুন লাগিয়ে চলে এলে এরা ছোটে সেখানে লুটপাট করতে। অথবা মিলিটারি কোথাও লুটপাট করলে এরা গিয়ে উচ্ছিষ্ট কুড়ায়। তিনটেই পরের স্টপেজে নামার জন্যে অনেক আগেই ধরফর করে উঠে দাঁড়ায় এবং বাস থামার সঙ্গে-সঙ্গে নেমে পড়ে ঝটপট পায়। তিনটে ক্রিমিনালের একটাও তার দিকে আর ফিরেও তাকায় না। তার মানে তাকে বেশ ভয় পেয়েছে বলেই তার সঙ্গে চোখাচোখি এড়াতে এদের এত কসরত।

যাক, মিন্টুর রেইনকোটে তার কাজ হচ্ছে। চোর ছ্যাঁচোর পকেটমার সব কেটে পড়ছে। ভালো মানুষেরা থাক। সে বেশ সৎসঙ্গে চলে যাবে একেবারে কলেজ পর্যন্ত।

আসাদ গেট বাসস্টপেজে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল বেশ কয়েকজন মানুষ। ছাতা হাতে কেউ কেউ নিজ-নিজ ছাতার নিচে এবং ছাতা ছাড়া অনেকেই অন্যের ছাতার নিচে মাথার অন্তত খানিকটা পেতে দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট থেকে আত্মরক্ষা করতে শরীরগুলোকে আঁকাবাঁকা করছিল। বাস থামালে সে দেখল, একে একে নয়জন প্যাসেঞ্জার বাসে উঠল। সে বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবাইকে দেখে। তো তার দিকে তাকিয়ে নয়জনের তিনজন 'আরে রাখো রাখো' এবং একজন ‘রোখো-রোখো’ বলতে বলতে নেমে পড়ল ধড়ফড় করে। শেষের জন বোধ হয় এমনি অর্ডিনারি চোর, ছিঁচকে চোর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর প্রথম তিনটে কোথাও সুন্দরী মেয়ে মানুষ দেখলে মিলিটারিকে খবর দেয় কিংবা মিলিটারির কাছ থেকে বন্দুক নিয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে মহল্লায়-মহল্লায় ঘোরে আর সুন্দরী মেয়েদের ধরে এনে পৌঁছে দেয় মিলিটারি ক্যাম্পে। এগুলো হলো রাজাকার। ফের নতুন করে অপরাধীমুক্ত বাসে যেতে এখন ভালো লাগছে। জানালার বাইরে বৃষ্টির আঁশ উড়ছে; ঠাণ্ডা হাওয়ায় গাছপালা, লোকজন, দোকানপাট ও বাড়িঘরের ওপর ট্রান্সপারেন্ট আবরণ দেখে তার এক্সট্রা ভালো লাগে। সমস্ত ভালো-লাগাটা চিড় খায়, বাস হঠাৎ করে ব্রেক কষলো। তখন তাকে তাকাতে হয় বাঁয়ে, চোখ পড়ে নির্মীয়মাণ মসজিদের ছাদের দিকে। দরজা থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে লাগে তার মুখে এবং নাকের ভেতর দিয়ে সেই হাওয়া ঢুকে পড়ে বুকে, সেখানে ধাক্কা লাগে; ক্রাক-ডাউনের রাত কেটে ভোর হলে মিলিটারির গুলিতে এই মসজিদের ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল মুয়াজ্জিন সাহেব। ঠাণ্ডা হওয়ার ধাক্কা রেইনকোটের তাপে এতটাই গরম হয়ে ওঠে যে, মনে হয় ভিতরে বুঝি আগুন ধরে গেল। মসজিদের উল্টোদিকের বাড়িতে তিনতলায় থাকত তখন তারা। রাতভর ট্যাঙ্কের হুঙ্কার আর মেশিনগান আর স্টেনগানের ঘেউঘেউ আর মানুষের কাতরানিতে তাদের কারও ঘুম হয়নি সে রাতে। ছেলেমেয়ে নিয়ে ছেলেমেয়ের মায়ের সঙ্গে সে শুয়েছিল খাটের নিচে। ভোরবেলা মিলিটারি মানুষ মারায় একটু বিরতি দিলে ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়ে এবং বন্ধ জানালার পর্দা একটু তুলে সে রাস্তা দেখতে থাকে। রাস্তার ওপরে মসজিদের ছাদে মুয়াজ্জিন সাহেব দাঁড়িয়েছিল আজান দিতে। সাধারণত জুমার নামাজটা সে নিয়মিত পড়ে। তবে সেই ভোরে তার আজান শুনতে ইচ্ছা করছিল খুব। মুয়াজ্জিনের আজান দেওয়াটা সম্পূর্ণ দেখবে বলে সে জানালার ধার থেকে সরে না। সারা এলাকায় ইলেকট্রিসিটি নষ্ট, মসজিদের মাইক্রোফোন অকেজো। মুয়াজ্জিন সাহেব গমগমে গলায় যতটা পারে জোর দিয়ে বলে উঠল 'আল্লাহু আকবার'। দ্বিতীয়বার আল্লাহর মহত্ত ঘোষণা করার সুযোগ তার আর মেলেনি, এর আগেই সম্পূর্ণ অন্যরকম ধ্বনি করে লোকটা পড়ে যায় রাস্তার ওপর। সেদিন সকালে বৃষ্টি ছিল না। আজ বৃষ্টির সকালে মিলিটারি কি ওই দৃশ্যের পুনর্ঘটনের পাঁয়তারা করছে? এখন তো কোনো নামাজের ওয়াক্ত নেই, তবে আজান দেওয়াবে কি করে? এরা বোধ হয় যে কোনো সময়কেই নামাজের ওয়াক্ত ঘোষণা করে নতুন হুকুম জারি করেছে।

মিলিটারি এখন যাবতীয় গাড়ি থামাচ্ছে। গাড়ির প্যাসেঞ্জারদের নামিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় রাস্তার ধারে। আরেক দল মিলিটারি স্টেনগান তাক করিয়ে রেখেছে এই মানুষের সারির ওপর। অন্য একটি দল ফের ওই সব লোকের জামাকাপড় ও শরীরের গোপন জায়গাগুলো তল্লাসি করে। মিলিটারি যাদের পছন্দ করছে তাদের ঠেলে দিচ্ছে পেছনে দাঁড়ানো একটা লরির দিকে। তাদের বাসটিতে এসে উঠল লম্বা ও খুব ফর্সা এক মিলিটারি।

এখন বাসের ভিতর কোনো আওয়াজ নাই। যাত্রীদের বুকের টিপটিপ শব্দ এই নীরবতার সুযোগে বাড়ে এবং এটাই তার মাথায় বাজে দ্রাম-দ্রাম করে। বারান্দাওয়ালা টুপির নিচে শব্দের ঘষায় ঘষায় আগুন জ্বলে এবং তার হল্কা বেরোয় তার চোখ দিয়ে। তবে একটু নড়ে বসলে মাথার ও বুকের ধ্বনি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং এসবকে পরোয়া না করে সে সরাসরি তাকাল মিলিটারির মুখের দিকে। মিলিটারির চোখ ছুঁচালো হয়ে আসে এবং ছুঁচালো চোখের মণি কাঁটার মতো বিঁধে যায় তার মুখে। সেও তার চোখের ভোঁতা কিন্তু গরম চাউনিটাকে স্থির করে আলগোছে বিছিয়ে দেয় মিলিটারির খাড়া নাকে, ছুঁচালো চোখে, গোঁফের নিচে ও নাক, গোঁফ ও চোখের আশপাশের ও নিচের লালচে চামড়ায়। এতে কাজ হলো। মিলিটারির চোখা চোখ সরে যায় তার মুখ থেকে, নেমে পড়ে তার রেইনকোটের ওপর। মনে হয় রেইনকোটের পানির ফোঁটাগুলো লোকটা গুণে গুণে দেখছে। ভেতরের তাপে এইসব পানির ফোঁটা দেখে মিলিটারির এত থ মেরে যাবার কী হলো? লোকটা কি এগুলোতে রক্তের চিহ্ন দেখে? রেইনকোটের বৃষ্টির ফোঁটা গোণাগুনতি সেরে মিলিটারি হঠাৎ বলে, 'আগে বাড়ো'। বাস হঠাৎ স্টার্ট দিয়ে কয়েক পা লাফিয়ে আগে বাড়ে এবং যাত্রীদের স্বস্তির নিঃশ্বাসের ধাক্কায় অতিরিক্ত বেগে ছুটে পার হয়ে যায় ঢাকা কলেজের গেট। নিউ মার্কেটের সামনে এসে পড়লে সে উঠে দাঁড়ায় এবং হুকুম করে, ‘রাখেন নামবো’। বাস একটু স্লো হলে তার রেইনকোটের জমানো পানি গড়িয়ে পড়তে দিয়ে অপরাধীমুক্ত বাস থেকে নামতে নামতে সহযাত্রীদের দিকে তাকিয়ে সে ঠোঁট বাঁকায়, এতে তার সামনের সারির দাঁতও বেরিয়ে পড়ে। যারা দেখেছে তারা তার সেই ভঙ্গিটিকে ঠিক হাসি বলে শনাক্ত করতে পেরেছিল বলে তার ধারণা হয়।

প্রিনসিপালের কামরায় প্রিনসিপালের সিংহাসন মার্কা চেয়ারে বসে রয়েছে জাঁদরেল টাইপের এক মিলিটারি পান্ডা। তার ভারিক্কি মুখ থেকে অনুমান করা যায়, পান্ডাটি কর্নেল কিংবা মেজর জেনারেল, অথবা মেজর বা ব্রিগেডিয়ার। তাকে দেখে প্রিনসিপালের কালো মুখ বেগুনি হয়, ড. আফাজ আহমদ এমএসসি, পিএইচডি, ই পি এস ই এস হওয়ার চেষ্টা করতে করতে স্যার বলে, ‘হি ইজ প্রফেসর হুদা।

কিন্তু ড. আফাজ আহমদ এমএসসি, পিএইচডি নিজের ভুল সংশোধন না করে পারে না, 'সরি হি ইজ নট এ প্রফেসর। এ লেকচারার ইন কেমিস্ট্রি।
“শাট আপ।”
এবার প্রিনসিপ্যাল থামে।

তাকে এবং আবদুস সাত্তার মৃধাকে নিয়ে মিলিটারি জিপে তোলার আগে জাঁদরেল কর্নেল না ব্রিগেডিয়ার প্রিনসিপ্যালকে কড়া গলায় বলে, সেনাবাহিনীকে নিয়ে মজা করে শায়েরি করা খুব বড়ো অপরাধ। এবার তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো, তবে কড়া ওয়াচে রাখা হবে। উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদের দোহাই পেড়ে প্রিন্সিপ্যালের সুবিধা হয় না। নুরুল উদ্বিগ্ন হয়, সাজিদ সাহেব যদি পালিয়ে না থাকে তো তার কপালে যে কী আছে তা জানে এক আল্লা আর জানে এই মিলিটারি।

তাদের দুজনের চোখ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, জিপ চলছিল এঁকেবেঁকে। মস্ত উঁচু একটা ঘরে তাদের এনে ফেলা হলো। চোখ খুলে দিলে সে আবদুস সাত্তার মৃধাকে দেখতে পায় না। জায়গাটাও একেবারে অচেনা। একটা ডেক-চেয়ারে সে যে কতক্ষণ বসে থাকল তার কোনো হিসাব নেই। তার সামনে একটা চেয়ারে এসে বসল এক মিলিটারি। তাকে ইংরেজিতে নানান প্রশ্ন করে, সে জবাব দেয়। লোকটা চলে গেলে তাকে অন্য ঘরে নিয়ে ফের অন্য একটা লোক এসে তাকে প্রশ্ন করে এবং সে জবাব দেয়। প্রশ্নগুলো প্রায় একইরকম এবং তার উত্তরেরও হেরফের হয় না। যেমন, কিছুদিন আগে তাদের কলেজে কয়েকটা লোহার আলমারি কেনা হয়েছে। ওগুলো বয়ে নিয়ে এসেছিল কারা?

সে জবাব দেয়, ঠিক। অফিসের জন্যে তিনটে, বোটানি হিস্ট্রি জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের জন্যে দুটো করে এবং ইংরেজির জন্যে একটা, সর্বমোট দশটি আলমারি কলেজে নিয়ে আসা হয়েছে।

এত কথা বলার দরকার নাই তার। ওই আলমারিগুলো নিয়ে আসা হয় কয়েকটা ঠেলাগাড়ি করে। ঠেলাগাড়িওয়ালাদের তো সে ভালো করেই চেনে।

নুরুল হুদা জবাব দেয়, তাদের সে চিনবে কোত্থেকে? তারা হলো কুলি, সে একজন লেকচারার।
তাহলে সে তাদের সঙ্গে এত কথা বলছিল কেন?

প্রিনসিপালের আদেশে সে আলমারিগুলোর স্টিলের পাতের ঘনত্ব, দেরাজের সংখ্যা ও আকার, তালাচাবির মান, রঙের মান প্রভৃতি পরীক্ষা করে দেখছিল, তার দায়িত্ব ছিল-।

মিলিটারি শান্ত গলায় তথ্য সরবরাহ করার ভঙ্গিতে বলে, মিসক্রিয়েন্টরা কলেজে ঢুকেছিল কুলির বেশে। এটা তার চেয়ে আর ভালো জানে কে? তারা আজ ধরা পড়ে নুরুল হুদার নাম বলেছে। তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ নিয়মিত, সে গ্যাঙের একজন সক্রিয় সদস্য।

“আমার নাম? সত্যি বলেছে? আমার নাম বলেছে?” নুরুল হুদার হঠাৎ চিৎকারে মিলিটারি বিরক্ত হয় না, বরং উৎসাহ পায়। উৎসাহিত মিলিটারি ফের বলে, কুলিরা ছিল ছদ্মবেশী মিসক্রিয়েন্ট। তারা কলেজের টিচারদের মধ্যে নুরুল হুদার নামই বলেছে।

নুরুল হুদা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারা কি তাকে চেনে? কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে আলমারি সাজিয়ে রাখার সময় এক কুলি দাঁড়িয়েছিল তার গা ঘেঁষে! তখন তো ঘোরতর বর্ষাকাল, ঢাকায় এবার বৃষ্টিও হয়েছে খুব। রাতদিন এই বৃষ্টি নিয়ে সে কি যেন বলেছিল, তাতে কুলিটা বিড়বিড় করে ওঠে, 'বর্ষাকালেই তো জুৎ'। কথাটা দুবার বলেছিল। এর মানে কী? স্টাফরুমে কে একজন একদিন না দুদিন ফিসফিস করছিল, বাংলার বর্ষা তো শালারা জানে না। রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইনটার, আমাদের জেনারেল মনসুন। ওই ছদ্মবেশী ছেলেটা কি এই কথাই বুঝিয়েছিল? তার ওপর তাদের এত আস্থা? -উৎসাহে নুরুল হুদা এদিক-ওদিক তাকায়। তার মৌনতা মিলিটারিকে আরেকটু নিশ্চিত করে।

কিছুক্ষণ পর, কতক্ষণ পর সে বুঝতে পারে না, মিলিটারি তাকে ফের একই প্রশ্ন করে জবাব না পেয়ে প্রবল বেগে দুটো ঘুষি লাগায় তার মুখে। প্রথম ঘুষিতে সে কাত হয়, দ্বিতীয় ঘুষিতে পড়ে যায় মেঝেতে। মেঝে থেকে তুলে তাকে মিলিটারি ফের জিজ্ঞেস করে, ওদের আস্তানা কোথায় সে খবর তার তো ভালোভাবেই জানা আছে। সে জবাব দেয়, ‘হ্যাঁ’!

ওই ঠিকানাটা বলে দিলেই তো তাকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হবে এই নিশ্চয়তা দিয়ে তাকে পাউরুটি ও দুধ খাওয়ানো হয়। তাকে ভাবতে সময় দিয়ে মিলিটারি চলে যায়। কিছুক্ষণ পর, কতক্ষণ সে জানে না, মিলিটারি ফিরে এসে ফের বলে, মিসক্রিয়েন্টদের ঠিকানা তো তার জানা আছে। সে ফের জবাব দেয়, হ্যাঁ'। কিন্তু পরের প্রশ্নের জবাব না পেয়ে মিলিটারি তাকে নিয়ে যায় অন্য একটি ঘরে। তার বেঁটেখাটো শরীরটাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো ছাদে-লাগানো একটা আংটার সঙ্গে। তার পাছায় চাবুকের বাড়ি পড়ে সপাৎ সপাৎ করে। তবে বাড়িগুলো বিরতিহীন পড়তে থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যে সেগুলো নুরুল হুদার কাছে মনে হয় স্রেফ উৎপাত বলে। মনে হচ্ছে যেন বৃষ্টি পড়ছে মিন্টুর রেইনকোটের ওপর। রেইনকোটটা এরা খুলে ফেলেছে, কোথায় রাখল কে জানে। কিন্তু তার ওম তার শরীরে এখনো লেগেই রয়েছে। বৃষ্টির মতো চাবুকের বাড়ি পড়ে তার রেইনকোটের মতো চামড়ায় আর সে অবিরাম বলেই চলে, মিসক্রিয়েন্টদের ঠিকানা তার জানা আছে। শুধু তার শালার নয়, তার ঠিকানা জানার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নাই, সে ছদ্মবেশী কুলিদের আস্তানাও চেনে। তারাও তাকে চেনে এবং তার ওপর তাদের আস্থাও কম নয়। তাদের সঙ্গে তার আঁতাতের অভিযোগ ও তাদের সঙ্গে তার আঁতাত রাখার উত্তেজনায় নুরুল হুদার ঝুলন্ত শরীর এতটাই কাঁপে যে চাবুকের বাড়ির দিকে তার আর মনোযোগ দেওয়া হয়ে ওঠে না।

উৎস নির্দেশ :
‘রেইনকোট’ গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। পরে এটি লেখকের সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’ (১৯৯৭) গ্রন্থে সংকলিত হয়। এ গল্পের পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র ১ থেকে।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ জেনারেল স্টেটমেন্ট- সাধারণ বিবৃতি।
➠ স্পেসিফিক ক্লাসিফিকেশন- সুনির্দিষ্ট শ্রেণিকরণ।
➠ ‘তলব কিয়া। আভি যানা হোগা’- ‘তলব করেছেন। এখনই যেতে হবে।’
➠ ‘মিসকিরিয়ান লোগ ইলেকটিরি টেরানসফার্মার তোড় দিয়া। অওর ওয়াপস যানে কা টাইম পিরিনসিপাল সাহাবকা কোঠিমে গেরেনড ফেকা। গেট তোড় গিয়া।’- ‘মিসক্রিয়েন্টরা ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দিয়েছে। আবার ফিরে যাওয়ার সময় প্রিনসিপাল সাহেবের বাড়িতে গ্রেনেড ছুড়েছে। গেট ভেঙে গেছে।’
➠ ‘ক্যায়সে?’- কীভাবে?
➠ ‘উও আপ হি কহ সকতা’- ‘সেটি আপনিই বলতে পারেন।’
➠ মিসক্রিয়ান্ট- দুষ্কৃতকারী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার ও তার সেনাবাহিনী এই শব্দটি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ব্যবহার করেছে।
➠ ‘আব্দুস সাত্তার মিরধাকা ঘর যানে হোগা। আপ আভি আইয়ে। এক কর্নেল সাহাব পঁওছ গিয়া। সব পরফসরকো এত্তেলা দিয়া। ফওরন আইয়ে।’- ‘আবদুস সাত্তার মৃধার বাসায় যেতে হবে। আপনি এখনই আসুন। এক কর্নেল সাহেব এর মধ্যেই চলে এসেছেন। সব প্রফেসরকে ডেকেছেন। তাড়াতাড়ি আসুন।’
➠ ওয়েলডিং ওয়ার্কশপ- ঝালাই কারখানা।
➠ সাবভার্সিভ অ্যাকটিভিটিজ- রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড। মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতাকে পাকিস্তান সরকার ও তাদের সমর্থকরা ১৯৭১ সালে এভাবে অভিহিত করত।
➠ ক্রাক-ডাউনের রাত- ১৯৭১ সালের ২৫এ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা পরিচালনা করে সেই রাতের কথা বলা হয়েছে।
➠ রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইন্টার আমাদের জেনারেল মনসুন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচণ্ড শীতের কবলে পড়ে হিটলারের বাহিনী রুশ বাহিনীর হাতে পর্যুদস্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রবল বর্ষায় তেমনি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়েছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। এখানে সেই বিষয়টিরই তুলনা করা হয়েছে।

পাঠ-পরিচিতি :
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে গল্পটি রচিত। মুক্তিযুদ্ধের তখন শেষ পর্যায়। ঢাকায় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ শুরু হয়েছে। তারই একটি ঘটনা এ গল্পের বিষয়; যেখানে ঢাকা কলেজের সামনে গেরিলা আক্রমণের ফলে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলেজের শিক্ষকদের তলব করে এবং তাদের মধ্য থেকে নুরুল হুদা ও আবদুস সাত্তার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। নুরুল হুদার জবানিতে গল্পের অধিকাংশ ঘটনা বিবৃত হয়েছে। বিবৃত হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ঢাকা শহরের আতঙ্কগ্রস্ত জীবনের চিত্র। গেরিলা আক্রমণের ঘটনা ঘটে যে রাতে, তার পরদিন সকালে ছিল বৃষ্টি। তলব পেয়ে সেই বৃষ্টির মধ্যে নুরুল হুদাকে কলেজে যেতে যে রেইনকোটটি পরতে হয় সেটি ছিল তার শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর। গল্পে এই রেইনকোটের প্রতীকী তাৎপর্য অসাধারণ। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মধ্যে সঞ্চারিত হয় যে উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম- তারই ব্যঞ্জনাময় প্রকাশ ঘটেছে এ গল্পে।

কবি পরিচিতি :
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলা কথাসাহিত্যে এক অনন্যসাধারণ প্রতিভার নাম। ১৯৪৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি তিনি গাইবান্ধার গোটিয়া গ্রামে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃনিবাস বগুড়া শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত নারুলি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম বি.এম. ইলিয়াস এবং মাতার নাম মরিয়ম ইলিয়াস। তাঁর পিতৃদত্ত নাম আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস। প্রথমে বগুড়ায় ও পরে ঢাকায় তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের অধ্যাপক।
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি লেখার সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর কখনো জোর দেননি। বরং গুরুত্ব দিয়েছেন লেখার গুণগত মানের ওপর। জীবন ও জগৎকে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহযোগে। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা প্রভৃতি বিষয়কে করেছেন সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের জীবনকে সামগ্রিকভাবে অনুধাবন করতে চেয়েছেন এই সবকিছুর পরিপ্রেক্ষিতেই। মানুষের পরম সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক প্রান্তসমূহ উন্মোচনেও তাঁর রয়েছে গভীর দক্ষতা। তাঁর পাঁচটি ছোটগল্প গ্রন্থে সংকলিত আছে মাত্র ২৮টি গল্প। এছাড়া রয়েছে ২টি উপন্যাস ও ১টি প্রবন্ধসংকলন। তাঁর গল্পগ্রন্থের নাম: ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’, ‘খোয়ারি’, ‘দুধভাতে উৎপাত’, ‘দোজখের ওম’, ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’। উপন্যাস দুটি হলো : ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ও 'খোয়াবনামা'।
১৯৯৭ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. কার জবানিতে “রেইনকোট” গল্পের অধিকাংশ ঘটনা বিবৃত হয়েছে?
ক. আবদুস সাত্তার মৃধা
খ. ড. আফাজ আহমদ
গ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
ঘ. নুরুল হুদা
২. নুরুল হুদাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তলব করার কারণ-
ক. কমান্ডারের নির্দেশে
খ. প্রিন্সিপালের অভিযোগে
গ. মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী ভেবে
ঘ. তাকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে
অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
মুক্তিফৌজ! কথাটা এত ভারী যে এই রকম অত্যাচারী সৈন্য দিয়ে ঘেরা অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে বসে মুক্তিফৌজ শব্দটা শুনলেও কেমন যেন অবিশ্বাস্য মনে হয়। আবার ওই অবিশ্বাসের ভেতর থেকে একটা আশা, একটা ভরসার ভাব ধীরে ধীরে মনের কোণে জেগে উঠতে থাকে।
৩. অনুচ্ছেদে “রেইনকোট” গল্পের কোন ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে?
ক. পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা
খ. মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য শক্তি-সাহস
গ. মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর আস্থা
ঘ. যুদ্ধকালীন অবরুদ্ধ মানুষের উৎকণ্ঠা
৪. উক্ত ভাবটি যে বাক্যে প্রকাশ পেয়েছে তা হলো-
ক. মিসক্রিয়ান লোগ ইলেকটিরি টেরানসফার্মার তোড় দিয়া
খ. একটা জিপ উড়াইয়া দিছে, কমপক্ষে পাঁচটা খানসেনা খতম
গ. নুরুল হুদার ঝুলন্ত শরীর এতটাই কাঁপে যে চাবুকের বাড়ির দিকে আর মনোযোগ দেওয়া হয়ে ওঠে না।
ঘ. বউয়ের এই ভাইটার জন্যই তাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়।
৫. ‘রেইনকোট’ গল্পে বৃষ্টি কখন থেকে শুরু হয়েছে?
ক. সকাল
খ. ভোর
গ. বিকাল
ঘ. সন্ধ্যা
৬. ‘মিসকিরিয়ান লোগ’ বলতে বোঝানো হয়েছে-
ক. মুক্তিযোদ্ধাদের
খ. বাংলাভাষীদের
গ. মিলিটারিদের
ঘ. উর্দুভাষীদের
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৭ ও ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
ছোট শিশু মেনন। বয়স কতইবা, তিন অথবা চার। একা একা বাইরে বের হতে পারে না। সে ঘরের জানালার শিক ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে স্লোগান দেয়- 'ইয়াহিয়ার গোষ্ঠী কিলাই, রাজাকারের গোষ্ঠী কিলাই, পাকিস্তানির গোষ্ঠী কিলাই।' শত্রুপক্ষের ভয়ে মা মেননকে জানালা থেকে সরিয়ে আনেন।
৭. উদ্দীপকের মেনন ‘রেইনকোট’ গল্পে কার কথা মনে করিয়ে দেয়?
ক. মিন্টু
খ. কর্নেল
গ. আকবর সাজিদ
ঘ. ড. আফাজ আহমদ
৮. উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্পে ফুটে উঠেছে-
i. দেশদ্রোহিতা
ii. দেশপ্রেম
iii. বিশ্বাসঘাতকতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. ii ও iii
৯. অফিসের জন্য কয়টি আলমারি কেনা হয়েছিল?
ক. দুইটি
খ. তিনটি
গ. চারটি
ঘ. পাঁচটি
১০. পিয়নকে দেখে সবাই তটস্থ থাকেন কেন?
ক. আচরণের জন্য
খ. মিলিটারির কারণে
গ. রাজাকার বলে
ঘ. মিলিটারির সঙ্গে সুসম্পর্কে
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ১১ ও ১২ নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।
১১. উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের কার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ক. নুরুল হুদা
খ. সাজিদ আকবর
গ. আবদুস সাত্তার মৃধা
ঘ. ইসহাক
১২. উদ্দীপকে ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন দিকটি উপস্থাপিত হয়েছে?
i. দেশপ্রেম
ii. মানবিকতা
iii. নৃশংসতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. ii ও iii
১৩. ‘রেইনকোট’ গল্পে কোথায় বোমা ফেলা হয়েছিল?
ক. কলেজের জিমনেশিয়ামে
খ. বাগানে
গ. প্রিন্সিপালের বাড়ির গেটে
ঘ. গেমস রুমে
১৪. মসজিদের মাইক্রোফোন অকেজো হয়েছে যে কারণে?
ক. প্রিন্সিপালের ভয়ে
খ. কর্নেলের হুকুমে
গ. মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে
ঘ. বিদ্যুৎ না থাকায়
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ১৫ ও ১৬ নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে দেখা দিয়েছিল ভয় আর উৎকণ্ঠা। সে সময়ে অনেক তরুণই দেশের জন্য পালিয়ে গিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তারা ভয়কে জয় করেছে।
১৫. উদ্দীপকের তরুণদের সঙ্গে ‘রেইনকোট’ গল্পে কার সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. মিন্টু
খ. ড. আফাজ আহমেদ
গ. নুরুল হুদা
ঘ. ইসহাক
১৬. উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্পের যে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে-
i. নিষ্ঠুরতা
ii. সাহসিকতা
iii. স্বজনপ্রীতি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. i ও ii

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. ‘রেইনকোট’ গল্পটির রচয়িতা কে?
উত্তর : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
২. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : গোটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
৪. ইসহাক কোন বিষয়ের প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো?
উত্তর : জিওগ্রাফির প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো।
৫. কাকে দেখে কলেজের সবাই তটস্থ?
উত্তর : ইসহাক মিয়াকে দেখে।
৬. কোন মাসের শুরু থেকে ইসহাক বাংলা বলা ছেড়ে দিয়েছে?
উত্তর : এপ্রিল মাসের শুরু।
৭. কে দিনরাত উর্দু বলে?
উত্তর : ইসহাক মিয়া।
৮. কে পাকিস্তানিদের জন্য দিনরাত দোয়া-দরুদ পড়ছে?
উত্তর : কলেজের প্রিন্সিপাল।
৯. আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পিতৃপ্রদত্ত নাম কী?
উত্তর : আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস।
১০. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
১১. কাকে জড়িয়ে ধরে নুরুল হুদার চুমু খেতে ইচ্ছা করছে?
উত্তর : পিওনকে।
১২. রেডিও, টেলিভিশনে হরদম কী বলছে?
উত্তর : হরদম বলছে সিচ্যুয়েশন নর্মাল।
১৩. নুরুল হুদার স্ত্রীর নাম কী?
উত্তর : আসমা।
১৪. ‘মিন্টু কার ভাই?
উত্তর : আসমার ভাই।
১৫. কার জন্য নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়?
উত্তর : মিন্টুর জন্য।
১৬. নুরুল হুদা কতবার বাড়ি পাল্টায়?
উত্তর : চারবার বাড়ি পাল্টায়।
১৭. নুরুল হুদার মেয়ের বয়স কত?
উত্তর : আড়াই বছর।
১৮. নুরুল হুদার ছেলের বয়স কত?
উত্তর : পাঁচ বছর।
১৯. কোথাকার হাফের বেশি জায়গা স্বাধীন?
উত্তর : রংপুর-দিনাজপুরের হাফের বেশি জায়গা স্বাধীন।
২০. মসজিদের ছাদ থেকে কে পড়ে গিয়েছিল?
উত্তর : মুয়াজ্জিন সাহেব পড়ে গিয়েছিল।
২১. কে জুমার নামাজটা নিয়মিত পড়ে?
উত্তর : নুরুল হুদা।
২২. নুরুল হুদা কোন বিষয়ের লেকচারার?
উত্তর : নুরুল হুদা কেমিস্ট্রির লেকচারার।
২৩. উর্দুর প্রফেসরের নাম কী?
উত্তর : উর্দুর প্রফেসরের নাম আকবর সাজিদ।
২৪. কাদের ঠিকানা নুরুল হুদার জানা আছে?
উত্তর : মিসক্রিয়ান্টদের।
২৫. ‘মিসক্রিয়ান্ট’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : দুষ্কৃতিকারী।
২৬. আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর : ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’।
২৭. ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসটির রচয়িতা কে?
উত্তর : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
২৮. ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক কে?
উত্তর : নুরুল হুদা।
২৯. ‘রেইনকোট’ গল্পের রেইনকোটটি কার?
উত্তর : রেইনকোটটি মিন্টুর।
৩০. নুরুল হুদাকে কে ডেকে পাঠিয়েছে?
উত্তর : প্রিন্সিপাল ডেকে পাঠিয়েছে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. ‘ক্যাপ্টেনের এদিকে তাকে ঠেলা মুশকিল’- কেন?
উত্তর : ‘ক্যাপ্টেনের এদিকে তাকে ঠেলা মুশকিল’- মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসহাক মিয়ার দাপট খুব বেশি বেড়ে যাওয়ায় এ কথা বলা হয়েছে।
➠ মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসহাক মিয়া পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করায় তার দাপট খুব বেড়ে গিয়েছিল। সে নিজেকে কর্নেলের মতো ক্ষমতাবান ভাবতে শুরু করে। তাই তাকে কর্নেল বা লেফটেন্যান্ট কর্নেল বা ক্যাপ্টেন ভাবা যায়। কিন্তু ক্যাপ্টেনের নিচের পদে তাকে ভাবা যায় না।
২. নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয় কেন?
উত্তর : মিন্টু মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে বলে নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়।
➠  নুরুল হুদা অত্যন্ত ভীরু প্রকৃতির মানুষ। সে দেশকে খুব ভালোবাসে কিন্তু ভয়ে প্রকাশ করতে পারে না। তাই তার শালা মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধাএকথা ‘হানাদার’ বাহিনী জানতে পারলে তাকে খুব বিপদে পড়তে হবে, এই ভয়ে সে সবসময় তটস্থ থাকে।
৩. ‘রেইনকোট’ গল্পে ‘মিসক্রিয়ান্ট’ শব্দটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তর : ‘রেইনকোট’ গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের বোঝাতে ‘মিসক্রিয়ান্ট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
➠  ‘মিসক্রিয়ান্ট’ শব্দের আভিধানিক অর্থ দুষ্কৃতিকারী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকি¯ড়ান সরকার ও তার সেনাবাহিনী এ শব্দটি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ব্যবহার করেছে। আর এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে ‘রেইনকোট’ গল্পে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৪. নুরুল হুদা কেন চারবার বাড়ি পাল্টায়?
উত্তর : নুরুল হুদার সাথে মুক্তিবাহিনীর আঁতাত রয়েছে একথা গোপন রাখার জন্য নুরুল হুদা চারবার বাড়ি পাল্টায়।
➠  নুরুল হুদার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ খবরটি কেউ যদি হানাদার বাহিনীকে জানিয়ে দেয় এ ভয়ে সে চারবার বাড়ি পাল্টায়। যাতে আশপাশের কেউ তাকে চিনতে না পারে।
৫. ইসহাক মিয়ার দাপট বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করায় ইসহাক মিয়ার দাপট বেড়ে গিয়েছিল।
➠  ইসহাক মিয়া ছিল পাকিস্তানিদের দোসর। সে অবাধে চলাফেরা করত এবং সব সময় উর্দুতে কথা বলত। আর পাকিস্তানিদের দোসর হওয়ায় সবাই তাকে খুব ভয় পেত।
৬. প্রিন্সিপাল কেন দিন-রাত দোয়া-দরুদ পড়তো?
উত্তর : প্রিন্সিপাল পাকিস্তানিদের জন্য দিনরাত দোয়া দরুদ পড়ত।
➠ পাকিস্তানিদের জন্য প্রিন্সিপাল পাাকিস্তানিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সে সবসময় তাদের মঙ্গল কামনা করত। আর তাদের জয়ের জন্য দিনরাত দোয়া-দরুদ পড়ত।
৭. নুরুল হুদা কেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের নিচে শুয়েছিলেন?
উত্তর : মিলিটারিদের ভয়ে নুরুল হুদা পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের নিচে শুয়েছিলেন।
➠ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশবাসীর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। প্রাণ বাঁচাতে নির“পায় মানুষগুলো নানা কৌশল অবলম্বন করেছিল। আর তাই নুরু হুদা রাতভর ট্যাংকের হুঙ্কার, মেশিনগান আর স্টেনগানের প্রচ শব্দে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের নিচে শুয়েছিলেন। আতঙ্কিত হয়ে, জীবন রক্ষার জন্য।
৮. ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নুরুল হুদা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান কেন?
উত্তর : ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নুরু হুদা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান, কারণ তাকে দেখতে অনেকটা মিন্টুর মতো লাগছিল।
➠ মিন্টু ছিল মুক্তিযোদ্ধা। তাই নুর“ল হুদাকে যদি দেখতে তার মতো লাগে তাহলে সে খুব বিপদে পড়বে। তাই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে যখন সে দেখে তাকে নিজেকে মিন্টুর মতো দেখতে লাগে, তখনই নূরু হুদা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
মুক্তিযুদ্ধ
উপরের ছবিটি দেখো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘রেইনকোট’ গল্পে মিলিটারি ক্যাম্প কোথায় স্থাপন করা হয়?
খ. দেশে একটা কলেজেও শহিদ মিনার অক্ষত নেই।
গ. চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের যেদিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “চিত্রিত দিকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র।”- বিশ্লেষণ করো।
ক. কলেজের জিমন্যাশিয়ামে।
খ. শহিদ মিনার বাঙালি জাতির স্বাধিকার চেতনার উৎস এবং পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী বলেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের সব কলেজ থেকে শহিদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে।
➠ ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে শহিদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছিল শহিদ মিনার, যা চিরকালই বাঙালির স্বাধিকার চেতনার উৎস। এছাড়া পাক-সরকার শহিদ মিনারকে পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী মনে করত। তাই পাকিস্তানকে বাঁচাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সব কলেজ থেকে শহিদ মিনার ভেঙ্গে দিয়েছিল ।

গ. চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের পাকিস্তানিদের বর্বরতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
➠ শোষকশ্রেণির মানুষেরা চিরকালই অসহায়-দুর্বলের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে নির্মম নির্যাতন চালায়। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সামান্যতম মানবতার ছোঁয়ামাত্র দেখা যায় না। বরং মধ্যযুগীয় কায়দায় তারা দুর্বলের ওপর চালায় নির্মম নির্যাতন, যা সহ্য করা ছাড়া দুর্বলের আর কিছুই করার থাকে না।
➠ চিত্রে পাকিস্তান সেনাদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা পাঁচজন মিলে একজন নিরীহ মানুষের ওপর চালিয়েছে নির্মম নির্যাতন। শুধু তাই নয়, তারা তাকে শেয়াল-কুকুরের মতো টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ‘রেইনকোট’ গল্পেও নুরুল হুদার জবানিতে পাকিস্তানিদের বর্বরতার কথা বর্ণিত হয়েছে। মিলিটারিদের নির্যাতনের ভয়ে সে নিজেই নানা সময় পালিয়ে বেড়িয়েছে নানা স্থানে। এছাড়া তার মতো হাজারো অসহায় বাঙালির ওপর পাকিস্তানিবাহিনী চালিয়েছিল অত্যাচারের স্টিম রোলার। সুতরাং বলা যায়, চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের পাকিস্তানিদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী উপস্থাপন বর্তমান। উদ্দীপকে বর্ণিত মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্র রয়েছে তা গল্পটির খণ্ডাংশ।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে লেখক নুরুল হুদার চিন্তারাজি এবং অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক চিত্র উন্মোচনের প্রয়াস চালিয়েছেন। যদিও লেখকের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত রেইনকোট কীভাবে ভীরু, দুর্বলচিত্ত, পলায়নপর রসায়নের শিক্ষক নুরুল হুদাকে একজন মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করে-সেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক। অন্যদিকে উদ্দীপকের বর্ণনায় আমাদের যুদ্ধের একটি খণ্ড চিত্র রয়েছে।
➠ উদ্দীপকে পশ্চিম, থেকে আসা পাকিস্তানি নরঘাতকদের অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। পাকিস্তানি-বাহিনী এদেশের গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিল। মার কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে চালিয়েছিল গণহত্যা, এমনকি পিতার সামনে মেয়েকে কেটে রক্তস্নান করেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের মূল লক্ষ্য অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যার বিষয়টিতে নিবিষ্ট, যা ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে মুক্তিযুদ্ধের যে বহু বিচিত্র চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তা মেলে না। উদ্দীপকে আছে কেবল গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর নরহত্যার বিষয়টি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির খণ্ডাংশ সম্পূর্ণ নয়।”

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ছোট্ট শুভ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ক্রিকেট খেলায় হাত ধরে মাঠে ঢোকার সুযোগ পায়। জাতীয় সঙ্গীত পর্ব সমাপ্ত হলে শচীন অটোগ্রাফসহ নিজের ক্যাপটি শুভকে উপহার দেন। উপহারটি পেয়ে শুভ বিস্মিত হয়ে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হবে।
ক. নুরুল হুদাকে রেইনকোটটি কে পরতে বলে?
খ. রেইনকোট খুলে ফেললেও নুরুল হুদার শরীরে তার ওম লেগে থাকার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের শুভ এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার ভাবনার মাঝে বৈসাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকের শুভর কাছে ক্যাপ এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার কাছে রেইনকোট জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছে।”- উক্তিটির স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করো।
ক. নুরুল হুদাকে রেইনকোটটি আসমা পরতে বলে।
খ. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয় বলে রেইনকোট খুলে ফেললেও নুরুল হুদার শরীরে তার ওম লেগে থাকে।
➠‘রেইনকোট’ গল্পে বৃষ্টির দিনে নুরুল হুদা কলেজের উদ্দেশে যাওয়ার সময় স্ত্রী আসমা তাকে মিন্টুর রেইনকোটটি পরে যেতে বলেন। মিন্টু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার রেইনকোট নুরুল হুদাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করে। তাইতো পাকসেনাদের অত্যাচারের একপর্যায়ে যখন তার শরীর থেকে রেইনকোটটি খুলে ফেলে তখনও তার মনে হয়, রেইনকোটের ওম তার শরীরে লেগে আছে।

গ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদা মিন্টুর রেইনকোটের সংস্পর্শে এসে চিন্তা-চেতনায় একজন মানসিক মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হয়েছেন। উদ্দীপকের শুভও শচীনের ক্যাপ পেয়ে নির্ধারণ করেছে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টুর রেইনকোট পরার পর নানারকমের ভাবনা আসে নুরুল হুদার মনে। হানাদারবাহিনীর নির্যাতন এবং রাজাকারদের বর্বরতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ পায় তার সেই ভাবনার আড়ালে। এভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণা এবং মিন্টুর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহানুভূতি তাকে ক্রমান্বয়ে মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করে। তাই পাকিস্তানিদের নির্যাতন সহ্য করেও তিনি বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে।
➠ উদ্দীপকের শুভ এবং গল্পের নুরুল হুদা উভয়ই একটি বিশেষ বস্তুকে কেন্দ্র করে নতুন চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছে। কিন্তু নুরুল হুদা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা সংগ্রামী চেতনায় জেগে উঠেছে, যেখানে শুভর জাগরণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক, সে বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছে।

ঘ.‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার পরিহিত রেইনকোট যেমন জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক। তেমনি উদ্দীপকে শচীনের ক্যাপটিও শুভর চেতনার পালাবদল ঘটিয়েছে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টুর রেইনকোট নুরুল হুদাকে একজন ভীরু দুর্বলচিত্ত মানুষ থেকে সাহসী মানুষে পরিণত করেছে। তিনি পরিণত হয়েছেন মানসিক যোদ্ধায়। স্বীকার করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট তার ভাবনায় এনেছে নতুন চেতনা। শচীনের ক্যাপও এমন পালাবদল এনেছে শুভর ভাবনায়।
➠ উদ্দীপকের ছোট্ট শুভ সুযোগ পায় টেন্ডুলকারের হাত ধরে মাঠে প্রবেশের। জাতীয় সঙ্গীত পর্বের পর শচীন তাকে ক্যাপ উপহার দিলে শুভর চেতনায় পালাবদল ঘটে। সে সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে ক্রিকেটার হবে। অর্থাৎ, এতদিন শুভ যা ভেবেছিল নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে, ক্যাপটি সেই ভাবনাকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে। উদ্দীপকের শুভর কাছে শচীনের ক্যাপ যেমন, গল্পের নুরুল হুদার কাছে মিন্টুর রেইনকোট টিও তেমন।
➠ দুটি জিনিস নুরুল হুদা ও শুভর জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পরিবর্তন এনেছে তাদের জীবনে। একজন হয়েছে মানসিক যোদ্ধা, আর একজন হবে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার। অর্থাৎ, এই দুটি জিনিস তাদের জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কীসে কী হইল, পশ্চিম হতে নরঘাতকেরা আসি
সারা গাঁও ভরি আগুন জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি।
মার কোল হতে শিশুরে কাড়িয়া কাটিল সে খান খান
পিতার সামনে মেয়েরে কাটিয়া করিল রক্তস্নান।
ক. কারা ঢাকা শহরে বাজার পোড়ায়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে মানুষ মারে?
খ. ‘এসব হলো ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার।’- কথাটি কী নির্দেশ করে?
গ. উদ্দীপকে এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর নির্যাতনের একটি তুলনামূলক বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে, সম্পূর্ণ নয়।”- উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
ক. মিলিটারি প্রত্যেকদিন ঢাকা শহরে বাজার পোড়ায়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে মানুষ মারে।
খ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ‘রেইনকোট’ গল্পের ‘এসব হলো ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার’ কথাটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে হেনরি কিসিঞ্জার তথা মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে।
➠ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মার্কিনিদের পক্ষপাতিত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি। যখন পাকিস্তানি বাহিনী বর্বরতম অত্যাচার শুরু করে, মানুষ মেরে সাফ করে দেয়, বাড়িঘর, গ্রাম, বাজারহাট জ্বালিয়ে দেয়- তখন মার্কিনিদের তেমন কোনো মাথাব্যথা দেখা যায়নি। বরং কিসিঞ্জার সাহেব পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘এসব হলো পাকিস্তানের ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার।’

গ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত্রি থেকে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত পাকিস্তানিবাহিনী এদেশীয় মানুষদের ওপর ইতিহাসের ঘৃণ্য ও বর্বরতম অত্যাচার চালায়। ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপকে এই নির্যাতনের পরিচয় মেলে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার চিন্তার মধ্য দিয়ে পাকবাহিনীর বহুমুখী নির্যাতনের পরিচয় মেলে। পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের শহিদ মিনার ভেঙেছে, চালিয়েছে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, গুলি করে মানুষ হত্যা, বাড়িঘর, গ্রাম, বাজারহাট জ্বালিয়ে দেওয়া, লুট করা এবং নারীদের ধর্ষণ করা ছিল তাদের বর্বরতম অত্যাচারের বিভিন্ন দিক। কিন্তু উদ্দীপকে মূলত পাকবাহিনীর অগ্নিসংযোগ এবং মানুষ হত্যার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।
➠ উদ্দীপকে পাকবাহিনীকে নরঘাতকরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই নরঘাতকরা সারা গ্রাম ভরে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। অন্যদিকে তারা মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে খান খান করেছে, আর পিতার সামনে মেয়েকে কেটে করেছে রক্তস্নান। অর্থাৎ, গল্পে পাকবাহিনীর নির্যাতনের যে বহুমুখী চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তার দুটি দিক অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ঘ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী উপস্থাপন বর্তমান। উদ্দীপকে বর্ণিত কবিতাংশে মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্র রয়েছে তা গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে লেখক নুরুল হুদার চিন্তারাজি এবং অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক চিত্র উন্মোচনের প্রয়াস চালিয়েছেন। যদিও লেখকের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত রেইনকোট কীভাবে ভীরু, দুর্বলচিত্ত, পলায়নপর রসায়নের শিক্ষক নুরুল হুদাকে একজন মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করে-সেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক। অন্যদিকে উদ্দীপকের বর্ণনায় আমাদের যুদ্ধের একটি খণ্ডচিত্র রয়েছে।
➠ উদ্দীপকে পশ্চিম, থেকে আসা পাকিস্তানি নরঘাতকদের অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। পাকিস্তানি- বাহিনী এদেশের গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিল। মার কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে চালিয়েছিল গণহত্যা, এমনকি পিতার সামনে মেয়েকে কেটে রক্তস্নান করেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের মূল লক্ষ্য অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যার বিষয়টিতে নিবিষ্ট, যা ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে মুক্তিযুদ্ধের যে বহু বিচিত্র চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তা মেলে না। উদ্দীপকে আছে কেবল গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে সম্পূর্ণ নয়।”

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মালেক মেম্বার একজন রাজাকার। যুদ্ধের সময় সে নিজের গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করিয়েছে। এছাড়া মিলিটারিকে সন্তুষ্ট রাখতে আশপাশের গ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে ক্যাম্পে।
ক. প্রিন্সিপালের পিওনের নাম কী?
খ. মিলিটারি প্রাদুর্ভাবের পর পিওনকে দেখে সবাই তটস্থ থাকত কেন?
গ. যুদ্ধের সময় মালেক মেম্বারের কর্মকাণ্ড এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের কর্মকাণ্ডের তুলনা করো।
ঘ. মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, মিলিটারিকে সহযোগিতা করে রাজাকাররা দেশদ্রোহী ও নরঘাতকের পরিচয় দিয়েছে।” ‘রেইনকোট’ গল্প এবং উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার করো।
ক. প্রিন্সিপালের পিওনের নাম ইসহাক মিয়া।
খ.যুদ্ধ শুরুর পর প্রিন্সিপালের পিওন ইসহাক-এর ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে তাকে দেখে সবাই তটস্থ থাকত।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে পিওন ইসহাক মিয়া উর্দু বলা শুরু করে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। লেখকের ব্যঙ্গাত্মক বর্ণনায় ‘ইসহাক নিজেই এখন মিলিটারির কর্নেল বললেও চলে।’ খোদ কর্নেল উপস্থিত থাকলে তার ক্ষমতা কমে আসে সত্য কিন্তু ক্যাপ্টেনের নিচে নামানো যাবে না এবং ইসহাক মিয়ার এই ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে মিলিটারি প্রাদুর্ভাবের পর তাকে দেখলে সবাই তটস্থ থাকত।

গ. আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা দেশদ্রোহী এবং পাক-মিলিটারির সহযোগীরূপে দেখা দিয়েছিল। ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত রাজাকাররা এবং উদ্দীপকের মালেক মেম্বার সেই রাজাকারদেরই প্রতিনিধি।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারার পশ্চিম পাকিস্তানিদের দালালরূপে দেখা দিয়েছে। তারা মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে সুন্দরী মেয়েদের ধরে সেনা ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছে। প্রিন্সিপাল ও ইসহাকও রাজাকারে পরিণত হয়ে উর্দু ভাষায় কথা বলেছে। পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করেছে।
➠ নুরুল হুদার চেতনাস্রোত থেকে জানতে পারি, এক সর্দার গোছের রাজাকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। সে কি না ট্রাক ট্রাক মাল লুট করে নিজের মেয়ের বাড়িতে পাঠায়। উদ্দীপকে মালেক মেম্বারও যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়াও গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের মতো সে আশেপাশের গ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, ‘রেইনকোট’ গল্পের সমষ্টিগতভাবে রাজাকাররা যেসব কর্মকাণ্ড করেছে এক মালেক মেম্বার রাজাকারের কর্মে তার বিশাল অংশ প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের দেশদ্রোহী, লুটতরাজ এবং দালাল চরিত্রের পরিচয় মেলে। উদ্দীপকেও আছে তাদের নরঘাতী ও দেশদ্রোহী রূপের পরিচয়।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের বহুমুখী কর্মকাণ্ডের পরিচয় মেলে। তারা উর্দু ভাষায় কথা বলে ক্ষমতা অর্জন করে। যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে গ্রামবাসীর ওপর নির্যাতন চালায়। মিলিটারির কাছ থেকে বন্দুক নিয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ -স্লোগান দিয়ে দেশদ্রোহীর পরিচয় দেয়। এমনকি মহল্লায় ঘুরে পাকবাহিনীর জন্য সুন্দরী মেয়েদের ধরে মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়।
➠ উদ্দীপকের মালেক মেম্বার যেন গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের প্রতিনিধি। সে যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়া পাকিস্তানি-মিলিটারিকে সন্তুষ্ট করতে আশেপাশের গ্রামের মেয়েদের ধরে পৌঁছে দিয়েছে ক্যাম্পে। মালেক মেম্বার একাধারে দেশদ্রোহী ও নরঘাতক। ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের যে পরিচয় আমরা পেয়েছি তাতে তারা যে মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন এবং পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। উদ্দীপকের রাজাকার মালেক মেম্বার এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।
➠ সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে, মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, মিলিটারিকে সহযোগিতা করে রাজাকাররা দেশদ্রোহী ও নরঘাতকের পরিচয় দিয়েছে। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির যৌক্তিকতা রয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সেলিনা হোসেন-এর ‘যুদ্ধ’ উপন্যাসে নিখিল ও সরলা অত্যাচারিত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। যুদ্ধের সময় হিন্দুদের বেছে বেছে নির্যাতন করা হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য নিখিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হয়। টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ পড়ে সে। মনে অসহনীয় বেদনা থাকলেও কালেমা সবসময় মুখস্থ রাখে।
ক. রাস্তায় বেরুলে নুরুল হুদা সবসময় ঠোঁটের ওপর কী রেডি রাখে?
খ. নুরুল হুদা অনেক সুরা মুখস্থ করেছে কেন?
গ. উদ্দীপকের নিখিল ও ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার জীবন বাস্তবতার তুলনা করো।
ঘ. “জীবন বাস্তবতার সাদৃশ্য থাকলেও উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রবণতা নিখিলের জীবনকে বেশি বিপন্ন করেছে।”- উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অনুযায়ী উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় করো।
ক. রাস্তায় বেরুলে নুরুল হুদা সবসময় ঠোঁটের ওপর পাঁচ কালেমা রেডি রাখে।
খ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নুরুল হুদা যুদ্ধের সময় নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রমাণ করতে অনেক সুরা মুখস্থ করে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে পরিচালনা করার নীলনকশা ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসররা সেদিন বেছে বেছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যা করেছিল। এমনকি মিলিটারি চেকপোস্টে যাত্রীদের গোপন জায়গা তল্লাসি করে হিন্দুদের হত্যা করা হতো। মুসলিমদেরও কালেমা, সুরা পাঠ করিয়ে রেহাই দিত। নুরুল হুদা পাকবাহিনীর এই সাম্প্রদায়িক ইস্যু থেকে বাঁচতে অনেক সুরা মুখস্থ করে।

গ. ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা পাকি¯ড়ানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার, কিন্তু এই নির্যাতন সাম্প্রদায়িকতার জন্য নয়। অন্যদিকে উদ্দীপকে নিখিলের ওপর যে নির্যাতন চলেছে তা সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা; তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগে অভিযুক্ত। ফলে তাকে সেনা ক্যাম্পে তলব করে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু নুরুল হুদা মানসিক শক্তি হারায়নি, কারণ তিনি সাম্প্রদায়িকতার শিকার নন। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিল সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়।
➠ নিখিল অত্যাচারিত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। ফলে তার ওপর ছিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতির খড়্গ। যুদ্ধের সময় হিন্দুদের বেছে বেছে নির্যাতন করা শুরু হলে নিখিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হয়। বুকে ধর্মত্যাগের অসহ্য বেদনা নিয়ে টুপি মাথায় কলেমা মুখস্থ রাখার মতো প্রহসনের শিকার হয়। গল্পের নুরুল হুদাকে নির্যাতনের শিকার হতে হলেও এমন সাম্প্রদায়িকতার শিকার হতে হয়নি। এ কারণে শারীরিক নির্যাতনের সময়ও তিনি নিজেকে মানসিক যোদ্ধা ভেবে তৃপ্ত থাকেন। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিলের বাস্তবতা ভিন্ন।

ঘ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হলেও উদ্দীপকের নিখিলের জীবনের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার বিষয় যুক্ত হওয়ায় সে হয়ে পড়েছে আরও বিপন্ন।
➠ শ্যালক স্বয়ং বীর-মুক্তিযোদ্ধা এবং কলেজে কুলির ছদ্মবেশে যে মুক্তিবাহিনী প্রবেশ করেছিল তাদের সঙ্গেও নুরুল হুদার সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগ রয়েছে। তাই নুরুল হুদার ওপর মানসিক নির্যাতন নেমে আসে। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিল এমন শারীরিক নির্যাতন সহ্য না করলেও সাম্প্রদায়িক নির্যাতন তাকে আরও বেশি অসহায় করে তুলেছে।
➠ নুরুল হুদা মানসিকভাবে বিপন্ন না হয়ে এবং নিজেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ভেবে গর্ববোধ করেছেন। কিন্তু নিখিল, যে-কিনা অত্যাচারিত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি- জীবন বাঁচানোর তাগিদে ধর্ম ত্যাগ করেছে। আপন ধর্মত্যাগ সকল মানুষের জন্যই বেদনার। নিখিল এই বেদনায় হয়েছে পর্যুদস্তু। বুকে অসহ্য বেদনা নিয়ে সে নামাজ পড়ে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সবসময় কলেমা মুখস্থ রাখে। বস্তুত যুদ্ধকালীন সাম্প্রদায়িক হামলা তাকে বিপন্ন করেছে।
➠ নুরুল হুদা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলেও মানসিকভাবে বিপন্ন হয়নি। নিখিলও যুদ্ধকালীন নির্যাতনের শিকার তবে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা তাকে মানসিকভাবে বিপন্ন করেছে, ধর্মান্তড়রিত করেছে। সে নুরুল হুদার থেকেও বেশি বিপন্ন বেশি অসহায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
তারামন বিবি ১১ নম্বর সেক্টরের একজন নারী-মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুহিব হাবিলদারের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। আজিজ মাস্টারের ক্যাম্পে তিনি মুক্তিবাহিনীর জন্য রান্নার দায়িত্ব পালন করেন। এর সঙ্গে পুরুষ যোদ্ধাদের পাশাপাশি সরাসরি যুদ্ধেও অংশ নেন।
ক. স্টেনগানওয়ালা ছোকরার দল নৌকা ভরে কী নিয়ে আসে?
খ. ‘এদিককার মানুষ চোখে খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।’- উক্তিটিতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের তারামন বিবির সঙ্গে ‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুর চরিত্র তুলনা করো।
ঘ. ‘নারী ও পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে।’- উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে উক্তিটি যাচাই করো।
ক. অস্ত্র নিয়ে আসে।
খ.আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে ‘এদিককার মানুষ চোখে খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।’- উক্তিটিতে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতাকে বোঝানো হয়েছে।
➠ মিলিটারি লাগার পর নুর“ল হুদা চারবার বাসা পরিবর্তন করে। সবশেষ বাসাটি শহর থেকেও দূরে বলা যায়। বাসার পূর্বদিকে চোখে পড়ে বিল আর ধানক্ষেত। এই বিল দিয়ে নৌকায় করে মুক্তিবাহিনী অস্ত্র নিয়ে আসে, যে অস্ত্র শহরের যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। মুক্তিবাহিনী বার বার এমনভাবে অস্ত্র নিয়ে এলে তা সাধারণ মানুষের চোখও এড়ায় না। এদিককার মানুষ তাই খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।

গ. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টু একজন সম্মুখ-যুদ্ধের যোদ্ধা। মিন্টুর মতো উদ্দীপকের তারামন বিবিও নারী হয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।
➠ নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু জুন মাসের ২৩ তারিখে যুদ্ধের উদ্দেশে রওনা দেয়। নুরুল হুদার চিন্তাস্রোতে ধরা পড়ে মিন্টুর সাহসিকতা। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে তিনি হয়তো কোথাও কোনো নদীর তীরে ওঁৎ পেতে বসে থাকেন। উদ্দীপকের তারামন বিবিও এমন সাহসিক এক নারীযোদ্ধা।
➠ পাকিস্তানি বাহিনী হয়তো গ্রাম জ্বালিয়ে কয়েকশ মানুষ মেরে লাশগুলো গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। মিন্টু স্টেনগান তাক করে থাকে ঐ মিলিটারিগুলোর দিকে। এ থেকে বোঝা যায়, মিন্টু একজন সাহসী ও সম্মুখযুদ্ধের যোদ্ধা। উদ্দীপকের তারামন বিবিও ১১ নম্বর সেক্টরের একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। নারী হয়েও তিনি ক্যাম্পে রান্না করার পাশাপাশি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মিন্টু ও তারামন দুজনই যোদ্ধা এবং অকুতোভয়। কিন্তু তারামন বিবিকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়ার আগে নিজের পরিস্থিতির সঙ্গে কম যুদ্ধ করতে হয়নি।

ঘ. ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পুরুষের বিজয় গাথা নয়, এদেশের নারীর ত্যাগ ও বীরত্বও স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল। এমন বক্তব্যের সমর্থন মেলে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপকে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে স্বাধীনতার জন্য পুরুষের বীরত্ব এবং নারীর ত্যাগকে দেখানো হয়েছে। মিন্টু ও তার সহযোদ্ধাদের বীরত্বও গল্পের একটি প্রান্ত। এছাড়াও পাকবাহিনীর এবং রাজাকারদের দ্বারা এদেশের নারীদের নির্যাতন করার ইঙ্গিতও রয়েছে এ গল্পে, যা চিহ্নিত করে স্বাধীনতার জন্যে নারীর ত্যাগ। অন্যদিকে উদ্দীপকে নারীর ত্যাগ নয়, বীরত্ব প্রদর্শিত হয়েছে।
➠ উদ্দীপকে তারামন বিবি যুদ্ধের সময়ের ‘বীরাঙ্গনা’ নন, বরং তিনি বীর নারী-মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একদিকে যেমন সেনা ক্যাম্পে রান্না করে মুক্তিবাহিনীকে সেবা করেছেন, অন্যদিকে পুরুষদের সঙ্গে একযোগে যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের পরিচয দিয়েছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে কেবল পুরুষরাই যুদ্ধ করেননি, নারীদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তারামন বিবিই তার প্রমাণ।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে নারীর ত্যাগ, পুরুষের বীরত্ব এবং উদ্দীপকে তারামন বিবির বীরত্ব প্রমাণ করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে নারী-পুরুষ সকলের অংশগ্রহণ ছিল। তাই বলা যায়, ‘নারী ও পুর“ষ মুক্তিযোদ্ধার সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে।’- উক্তিটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ব্রিটিশরা ভারতের শাসনভার গ্রহণ করলে অনেক বাঙালি বাংলা ছেড়ে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। ভাষা শিক্ষার জন্য তারা এমনটি করেছিল তা নয়। মূলত বেশিরভাগ লোকই ইংরেজি শিখেছিল রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য।
ক. আকবর সাজিদ কোন বিষয়ের অধ্যাপক?
খ. প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ আজকাল আকবর সাজিদকে তোয়াজ করেন কেন?
গ. বিদেশি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “স্বার্থের কারণে মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পাারে।”- উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় করো।
ক. আকবর সাজিদ উর্দুর অধ্যাপক।
খ. আখতারুজ্জামন ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ উর্দু শিখে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে তোয়াজ করতে শুরু করেন।
➠ উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদ জাতিতে পশ্চিম পাকিস্তানি এবং উর্দুভাষী বলে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ যুদ্ধের শুরুতে আকবর সাজিদকে তোষামোদি শুরু করেন। সাজিদের কাছ থেকে বিভিন্ন শব্দের উর্দু অর্থ জানতে তার প্রবল আগ্রহ। অর্থাৎ, আকবর সাজিদকে করা প্রিন্সিপালের এই তোয়াজে স্পষ্টতই স্বার্থচিন্তা জড়িত। বস্তুত উর্দু ভাষা জানার মাধ্যমে নিজের স্বার্থরক্ষার লক্ষে প্রিন্সিপাল উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে তোয়াজ করেন।

গ. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী বিদেশি ভাষা উর্দু শিখতে চেয়েছিলেন কেবলমাত্র স্বার্থরক্ষার তাগিদে। ‘রেইনকোট’ গল্পের আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের মধ্যেও এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল উর্দু শিখতে চেয়েছিল অন্য একটি ভাষা শিক্ষার আগ্রহ থেকে নয়, বরং তার উর্দু শিক্ষার উদ্দেশ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য। এ কারণে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি উর্দুচর্চায় মনোযোগ দেন এবং উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে বিশেষভাবে তোয়াজ করা শুরু করেন। উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের দৃষ্টিভঙ্গি এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।
➠ উদ্দীপকে ব্রিটিশদের ভারত শাসনভার গ্রহণ করার সময় থেকে এদেশের অনেক বাঙালির বাংলা ছেড়ে ইংরেজিতে কথোপকথনের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। এটি সত্যি যে, তখন অনেকেই একটি বিদেশি ভাষা জানার আগ্রহে ইংরেজি চর্চা শুরু করেছিল, কিন্তু এমন অনেকে ছিল যারা ভাষা শিক্ষার জন্য নয়, বরং ইংরেজি শিখে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার ক্ষেত্রে একই রকম স্বার্থকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে।

ঘ. “মানুষ স্বভাবতই মাতৃভাষাকে ভালোবাসলেও এমন অনেক মানুষ আছে, যারা স্বার্থের কারণে মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পারে।” এমন কথার প্রমাণ মেলে আলোচ্য উদ্দীপক এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ এবং তার পিওন ইসহাক মিয়ার মাতৃভাষা বাংলা। তারা সাধারণ অবস্থায় বাংলায় কথা বলে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুর“ হলে ইসহাক মিয়া মাতৃভাষা বাংলা ছেড়ে দিয়ে উর্দু বলা শুরু করেন। তিনি কলেজে স্থাপিত ক্যাম্পের মিলিটারিদের সঙ্গে উর্দুতে কথা বলেন, নিজের স্বার্থ সন্ধান করেন। অন্যদিকে প্রিন্সিপালও উর্দুতে সঠিকভাবে কথা বলার নানা চেষ্টায় লিপ্ত হন। উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদের কাছ থেকে জেনে নিতে চান বিভিন্ন বাংলা শব্দের উর্দু অর্থ।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পের মতো উদ্দীপকেও দেখা যায়, ব্রিটিশ আমলে অনেক বাঙালি বাংলা ছেড়ে শুধু রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগের আকাঙ্ক্ষায় ইংরেজি বলা শুরু করে। তাদের এই ইংরেজি চর্চার পিছনে ভাষা শিক্ষার কোনো আগ্রহ ছিল না। বস্তুত স্বার্থের কারণে সেদিন তারা মাতৃভাষাকে ত্যাগ করেছিল। ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই দেখা যায়,মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করে অন্য ভাষা চর্চা শুরু করেছে কোনো শুভ-চিন্তা থেকে নয়। বরং এর পিছনে ক্রিয়াশীল ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থ।
➠ পরিশেষে উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে ‘স্বার্থের কারণে মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পারে।’- উক্তিটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
একেবারে দিনে-দুপুরে এমন একটি কাণ্ড নিজের চোখের সামনে সংঘটিত হওয়ার পরেও তা বিশ্বাস হতে চায় না। রাজধানীরও রাজধানী যে পল্টন-রমনা, সেই পল্টনে চারদিকে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের কড়া নজরদারি এড়িয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বিচ্ছুগুলো কয়েকটি হ্যান্ডগ্রেনেড ছুঁড়ে গেল। আর্মি অফিসার ও তাদের পরিবার-পরিজন এখানকার মার্কেটে নিয়মিত কেনাকাটা করে। এ ধরনের নিরাপত্তা জোনে গেরিলা বিচ্ছুগুলো অবিশ্বাস্যভাবে বোমা হামলা চালিয়ে গেল। গত রাতের শেষের দিকে তারা সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা, গাবতলীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও পাওয়ার স্টেশনগুলোয় তুমুল হামলা চালায়। এরা কীভাবে এসব অবিশ্বাস্য দুঃসাহসী অপারেশন চালায়?
ক. নুরুল হুদার মেয়ের বয়স কত?
খ. কথক কেন বললেন, “এই বৃষ্টির মেয়াদ আল্লা দিলে পুরো তিন দিন।”
গ. উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে?
ঘ. ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।- মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।
ক. নুরুল হুদার মেয়ের বয়স আড়াই বছর।
খ. মঙ্গলবার ভোরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় প্রচলিত প্রবাদে আস্থা জ্ঞাপন করে লেখক উপর্যুক্ত কথা বললেন।
➠ বৃষ্টির স্থায়িত্ব সম্পর্কে প্রচলিত একটি প্রবাদে বলা হয়েছে, “শনিতে সাত মঙ্গলে তিন, আর সব দিন দিন। এটা হলো জেনারেল স্টেটমেন্ট। স্পেসিফিক ক্ল্যাসিফিকশনে বলা হয়েছে, “মঙ্গলে ভোর রাতে হইল শুরু, তিন দিন মেঘের গুরুগুরু।” সুতরাং মঙ্গলের ভোর রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কথক বললেন, “এই বৃষ্টির মেয়াদ আল্লা দিলে পুরো তিন দিন।”

গ. উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের মুক্তিযোদ্ধা গেরিলাদের কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পসংলগ্ন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও প্রিন্সিপালের কোয়ার্টারে হামলার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
➠ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী বাংলাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার লক্ষ্যে লুণ্ঠনে মেতে ওঠে এবং হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে এদেশে রক্তের নদী বইয়ে দেয়। কিন্তু এদেশের নানা শ্রেণি-পেশার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা পাকিস্তানি হায়েনাদের এ আক্রমণের সমুচিত জবাব দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গেরিলা দল হানাদার বাহিনীকে আক্রমণে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজধানীরও রাজধানী যে পল্টন-রমনা সেই পল্টনের চারদিকে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের কড়া নজরদারি এড়িয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা সশস্ত্র হামলা চালায়। এ রকম একটি নিরাপত্তা জোনে হামলা করে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যাওয়া একটি অবিশ্বাস্য ঘটনার মতো মনে হয়। এমনই একটি অবিশ্বাস্য অপারেশন পরিচালনা ‘রেইনকোট’ গল্পেও দেখা যায়। শহরের মাঝখানে অবস্থিত কলেজের সামনের দেয়াল ঘেঁষে ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে অনেকখানি পথ ও নানা স্থাপনা এড়িয়ে আর্মি ক্যাম্পের কোল ঘেঁষে প্রিন্সিপাল সাহেবের কোয়ার্টারে সফলভাবে গ্রেনেড হামলাকে কথক বলেছেন ভয়াবহ কাণ্ড ও অবিশ্বাস্য।

ঘ. ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।”- প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসলীলায় পরিণত হয় বাংলার মাটি। ওরা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসাথে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, গড়ে তোলে মুক্তিযোদ্ধা দল ও গেরিলা বাহিনী।
➠ উদ্দীপকে আমরা দেখি, রাজধানী শহরের প্রাণকেন্দ্র পল্টনস্থ বায়তুল মোকাররম মার্কেটে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের নজরদারি এড়িয়ে গেরিলারা সফল বোমা হামলা চালিয়ে নিরাপদে চলে যায়। দিনেদুপুরে এমনই নিরাপত্তা জোনে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বিচ্ছুদের চলে যাওয়াটা নিজ চোখে দেখার পরেও লেখকের অবিশ্বাস্য মনে হয়। উদ্দীপকের অনুরূপ ‘রেইনকোট’ গল্পেও দেখা যায়, শহরের মাঝখানে অবস্থিত কলেজ সংলগ্ন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার এবং নানা স্থাপত্য পাড়ি দিয়ে আর্মি ক্যাম্পসংলগ্ন প্রিন্সিপালের গেটে গ্রেনেড ছুঁড়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। গেরিলাদের এ অপারেশন সংবাদটি কথকের কাছে অবাক কাণ্ড ও অবিশ্বাস্য ঠেকে। উদ্দীপকের সাথে ‘রেইনকোট’ গল্পের এ সাদৃশ্য ছাড়াও গল্পে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে নানাভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পটি একটি মুক্তিযুদ্ধনির্ভর গল্প। এ গল্পে কথক নিজে মুক্তিযুদ্ধে শরিক হতে না পারলেও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা মুক্তিযোদ্ধাদের নানা অপারেশন সংবাদে মনে মনে উৎফুল্ল হয়েছেন, গর্বিত হয়েছেন। ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুদের কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আজগরের মা দু’মাস আগেও মহল্লার এর-ওর বাসায় ঝিয়ের কাজ করে চলেছে আর আজগর সরকার মঞ্জিলের বিড়ির কারখানায় বিড়ি বাঁধার কাজ করেছে। পঁচিশে মার্চের কালরাতের পর শহরে আর্মি নামায় সবকিছু পাল্টে গেছে। বিহারি আজগর এখন মোগলটুলির ইজারাদার না হলেও ফৌজদার বনে গেছে। এদেশের মাটিতে জন্ম হলেও তার মুখে এখন বাংলা কথা শোনাই যায় না। তার উর্দুর তোড়ে কুমিল্লা হাইস্কুলের উর্দু শিক্ষক সরফরাজ আলী পর্যন্ত হিমশিম খান। এ মাটির কুলাঙ্গার আজগর মুক্তিদের খুঁজে বের করে সার্কিট হাউসের আর্মি ক্যাম্পে পৌঁছে দিতে বড় তৎপর ছিল।
ক. কার জন্য নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়?
খ. পিয়নকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের আজগররাই ’৭১-এ এদেশের লাখো জনতা হত্যায় ইন্ধন যুগিয়েছিল।”- বক্তব্য বিষয়ের যথার্থতা নিরূপণ করো।
ক. মিন্টুর জন্য নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়।
খ. পিয়নের মুখ দর্শনে পাকিস্তানি মিলিটারির ভয় কেটে যাওয়ায় তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল।
➠ দরজায় প্রবল কড়া নাড়ার শব্দে কথক হানাদার ঘাতক পাকিস্তানি মিলিটারির হানা দেয়ার আতঙ্কে শিউরে উঠলেন। মুসলমান রীতি অনুসারে চরম বিপদের সমযে পড়া “আল্লাহুম্মা ইন্না আস্তা সুবহানাকা ইন্তি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন” ও পড়ে ফেলেনে। দুরু দুরু বুকে দরজা খুলে কথক দেখতে পান হানাদার ঘাতক নয়, প্রিন্সিপালের পিয়ন। এমন পরিস্থিতিতে কথকের পিয়নকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল।

গ. উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়ার চরিত্রের প্রতীক।
➠ ’৭১-এর পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আবহমান গ্রামবাংলার শান্তসংহত জীবনকে তছনছ করে দেয়। তাদের এ ঘৃণ্য কাজে এদেশে জন্মগ্রহণকারী, এদেশের আলো-হাওয়া-জল-অন্নে প্রতিপালিত কিছু দুরাচার, গাদ্দার পশু সৈন্যদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
➠ উদ্দীপকের আজগর এমনই এক দুরাচারী গাদ্দারের জীবন্ত প্রতিমূর্তি। এদেশে বাস করে এদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মহল্লার কাজের ঝি’র ছেলে মহল্লার ফৌজদার বনে যায়। বাংলায় জন্ম নেয়া তার মুখে পঁচিশে মার্চের পর থেকে উর্দুর তোড়ে স্কুল-কলেজের উর্দুর শিক্ষকরাও হিমশিম খান। এ কুলাঙ্গার এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে পাকি¯ড়ানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। উদ্দীপকের আজগরের অনুরূপ ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়াও পঁচিশে মার্চের পর থেকে বাংলা জবান একেবারে ভুলে গেছে। তার উর্দুর তোড়ে স্বয়ং প্রিন্সিপালও গলদঘর্ম হয়ে পড়েন। সুতরাং উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়া চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।

ঘ. “উদ্দীপকের আজগররাই ’৭১-এ দেশের লাখো জনতা হত্যার ইন্ধন জুগিয়েছিল।” প্রশ্নোক্ত এ মšড়ব্যটি ঐতিহাসিকভাবে যথার্থ।
➠ ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলায় প্রবেশ করে শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র মানুষের ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের এ ঘৃণ্য কাজের দোসর ছিল এদেশেরই কতিপয় কুলাঙ্গার।
➠ উদ্দীপকে আজগর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের পর এলাকায় কাজের ঝির ছেলে থেকে ফৌজদার বনে যায়। বাংলায় জন্ম নিয়েও সে বাংলা জবান ভুলে অবিরাম উর্দু বোলচাল ছাড়তে থাকে। এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিতে সে সদাসচেষ্ট। এমনই আরেকটি চরিত্র হলো ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়া। মিলিটারি আসার পর থেকে সে নিজেই একজন কর্নেল বনে গেছে। উর্দু বোলচাল ছাড়া বাংলা জবানে সে এখন আর কথা বলে না। মিলিটারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে তাকে দেখে কলেজের সবাই তটস্থ। উদ্দীপকের আজগর এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের ইসহাক মিয়ারা এ জাতির কুলাঙ্গার ।
➠ এ দেশ, এ জনপদ সম্পূর্ণ অচেনা পাকিস্তানি পশুদের কাছে, তাদের পথ-ঘাট চিনিয়ে দিয়ে বাংলার কিছু কুলাঙ্গার দুরাচারাই বাংলার, বাঙালির সমূহ সর্বনাশ করেছিল। উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের ইসহাক মিয়াদের মতো গাদ্দারদের কারণেই প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধার মতো শত সহস্র দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাই যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ’৭১-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঁচিশে মার্চের কালরাতে যে ক্র্যাকডাউন হয়েছিল, তার জন্য পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের তিনি কখনো ক্ষমা করেননি। পাকিস্তানি রাষ্ট্রের মৃত্যুর জন্য এর সামরিক বাহিনীই যে দায়ী তা খোলাখুলি বলতেন। দু-একজন হিতাকাঙ্ক্ষী প্রাণটা বাঁচাতে মুখ বুজে থাকতে বললেও পাকিস্তানি জুলুম ও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসাও করতেন। ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাাকিস্তানি হানাদারদের এদেশীয় দোসররা তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাঁর ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিল।
ক. ইসহাক কোন বিষয়ের প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো?
খ. মিলিটারি আক্রমণের পর থেকে ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক চারবার বাড়ি পাল্টালেন কেন?
গ. উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যকার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্পের শহিদ বুদ্ধিজীবীর মতো শত-সহস্র শহিদ বুদ্ধিজীবীর ত্যাগে আমরা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ বিষয়ে তোমার মতামত দাও।
ক. ইসহাক জিওগ্রাফির প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো।
খ. প্রতিবেশী ও মিলিটারির কাছে শ্যালক মিন্টুর মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কথা আড়াল করতেই মিলিটারি আক্রমণের পর থেকে ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক চারবার বাড়ি পাল্টালেন।
➠ মিন্টু কথকের বাড়িতে থেকেই মানুষ। যুদ্ধের শুরুতেই সে সীমান্ত পার হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। বিষয়টি অবরুদ্ধ ঢাকায় আটকাপড়া কথকের জন্য হয়েছে ভয়াবহ বিপদের। হানাদার বাহিনী ব্যাপারটি জানলেই কথককে তথ্য বের করার নামে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করবে। এ কারণে হানদার মিলিটারি ও প্রতিবেশীর কাছে শ্যালকের যুদ্ধে গমনের তথ্য আড়াল করতে কথক চারবার বাসা পাল্টালেন।

গ. উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যে বিস্তরর বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
➠ বাংলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের গৌরব বলে বিবেচিত বুদ্ধিজীবীরাও পাকি¯ড়ানি হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি। কিন্তু বাঙালি জাতি একসময় রুখে দাঁড়ায়, যদিও কিছু দুর্বলচিত্তের লোক হানাদারদের তোয়াজ করে বেঁচে থাকার পথ বেছে নেয়।
➠ উদ্দীপকে শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক পঁচিশে মার্চের কালরাতে ক্র্যাকডাউনের জন্য পাকি¯ড়ানি হানাদার বাহিনীকে কখনো ক্ষমা করেননি। পাকিস্তানি জুলুম ও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসা করতেন। উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাইয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের হলো ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেব। এ প্রিন্সিপাল সাহেব পাকি¯ড়ানের জন্য দিনরাত দোয়া-দরুদ পড়ে, সময় নেই অসময় নেই আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে এবং সময় করে কলিগদের গালাগালিও করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি এ প্রিন্সিপাল মিলিটারির বড়কর্তাদের কাছে সবিনয়ে নিবেদন করেছিল পাকিস্তানকে যদি বাঁচাতে হয় তো সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটাও। এসব ব্যাপারে উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা লক্ষ প্রাণের দান। এই লক্ষ প্রাণের মধ্যে শহিদ-বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগ ছিল অতি মূল্যবান এক মহৎকর্ম।
➠ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী আতর্কিতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শান্ত-স্নিগ্ধ বাংলায় অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা ও বাঙালির জনজীবন তছনছ করে দেয়। দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীরাও তাদের নির্মম হত্যাকাÊ থেকে রেহাই পায়নি।
➠ উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ছিলেন সোচ্চার। দু-একজন হিতাকাঙ্ক্ষী প্রাণটা বাঁচাতে মুখ বুজে থাকতে বললেও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি যেমন সোচ্চার ছিলেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে তাদের ভূয়সী প্রশংসাও করতেন। ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাইয়ের, মতো এমনই সৎ-সাহসী-নির্র্ভীক-দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী আমরা ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধার মাঝে দেখতে পাই।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রফেসর নুরুল হুদার মধ্যে সত্যিকার দেশপ্রেম, নির্ভীকতা ও দুঃসাহস ফুটে ওঠে পাকিস্তানি হানাদারদের শত নির্যাতনের মুখেও মুক্তিযোদ্ধাদের আ¯ড়ানার তথ্য না দেওয়ায়। তেমনি উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধাদের মতো শত-সহস্র বুদ্ধিজীবীর আত্মত্যাগে আমরা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মেলাঘর কতদূর! মা কী কল্পনা করতে পারেন? কিন্তু সেখানেই গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয় মায়ের ছেলে নাফি। নাফির চোখে স্বাধীন বাংলার স্বপ্নছবি লালসবুজের পতাকা। মেলাঘরে প্রশিক্ষণ শেষে নাফি মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা ইউনিটে কমান্ডো হিসাবে কাজ করে। হৃদয়ের টানে তার নিকট মা আর মাতৃভূমি একাকার বলে মনে হয়।
ক. রেইনকোট পরার পর নুরুল হুদাকে কার মতো দেখাচ্ছিল?
খ. ‘রাশিয়ার ছিল জেনারেল উইন্টার, আমাদের জেনারেল মনসুন’ কথাটির তাৎপর্য কী?
গ. উদ্দীপকের নাফি ‘রেইনকোট’ গল্পে কোন চরিত্রটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়? -আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে কী? মন্তব্যটি বিচার করো।
ক. রেইনকোট পরার পর নুরুল হুদাকে মিন্টুর মত দেখাচ্ছিল।
খ. উক্তিটিতে বাংলাদেশে বর্ষার সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীকে বিপর্যস্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে।
➠ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির হিটলার বাহিনী রাশিয়া আক্রমণ করতে গিয়ে বৈরি পরিবেশের মুখোমুখী হয়। রাশিয়ার প্রচণ্ড শীতে জার্মান বাহিনী বিধ্বস্ত হয়। সেখানে শীতের ভূমিকা অনেকটাই প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেনারেলের মত হয়েছিল। আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলেও বাংলাদেশের মৌসুমি আবহাওয়া সম্পর্কে অবহিত ছিল না। ফলে তারা বাংলাদেশে বর্ষাকালে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। মোটকথা বর্ষা ঋতু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য শাপে বর হয়েছে। তাই বর্ষাকালকে জেনারেল মনসুন বলা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের নাফি চরিত্রটি ‘রেইনকোট’ গল্পে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ মুক্তিযুদ্ধ হাজার বছরের বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। মাতৃভূমি বাংলাকে শত্রুমুক্ত করতে এদেশের দামাল ছেলেরা ১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মৃত্যুকে অজেয় করে তারা শত্রু হননের শপথ নেয়। তাদের বুকের রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার সবুজ শ্যামল প্রান্তর।
➠ উদ্দীপকে নাফি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে মেলাঘরে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেয়। অতঃপর সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মেলাঘর কতদূর তা তার মা কল্পনা করতে পারেন না। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নাফি শত্রুসেনাদের নিশ্চিহ্ন করে। উদ্দীপকের নাফি চরিত্রটির মিল রয়েছে 'রেইনকোট' গল্পের মিন্টুর সঙ্গে। মিন্টুও বাসা থেকে পালিয়ে গেরিলা যুদ্ধে দেয়। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সেও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের সমগ্র চেতনাকে ধারণ করে না।
➠ স্বাধীনতা যে কোন জাতির স্বপ্নিল প্রত্যাশা। বাঙালি জাতি এ প্রত্যাশা পূরণ করেছে ১৯৭১ সালে। লাখো বাঙালির রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে এ প্রত্যাশা। বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল এ যুদ্ধে। উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে একজন তরুণের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কথা। নাফি নামের এই তরুণটি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। অথচ এটা তার মা কল্পনা করতে পারেন না।
➠ উদ্দীপকের এ বিষয়টিতে ‘রেইনকোট’ গল্পের একটি দিকমাত্র ফুটে উঠেছে। এটা দেখা যায় মিন্টুর মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের ঘটনার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ‘রেইনকোট’ গল্পে উক্ত বিষয়টি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ও উঠে এসেছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ঢাকার আবহে রচিত। গল্পটিতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ, বর্বরতা, রাজাকারদের অত্যাচার, নুরুল হুদার ভীরুতা, প্রাণভয়ে ভীত মানুষের আহাজারি, সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে।
➠ ‘রেইনকোট’ গল্পটিকে এককথায় বলা যায় সমকালীন সময়ের সাহিত্যিক দলিল। উদ্দীপকে আলোচ্য গল্পটির উক্ত বিষয়গুলো ফুটে ওঠেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্লিজ, মেজর সাহেব, আই বেগ ইউ, প্লিজ, রহম কিজিয়ে, আমার বিবিকে ছেড়ে দিন। ওকে নিয়ে যাবেন না। আপনারা ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? দেন, কিল মি, প্লিজ, ফিনিশ মি, আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে চললেন? আউট সাইড? আমি শুনেছি, আপনারা আমাদের দিয়ে আগে গোর খুঁড়িষে নেন, তারপর গুলি করেন। প্লিজ, ব্রিং মাই ওয়াইফ ব্যাক: আমরা দুজনেই গোর খুঁড়ব।
ক. আকবর সাজিদ কোন বিষয়ের অধ্যাপক?
খ. নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন দিক দিয়ে মিল বা অমিল রয়েছে? যুক্তিসহ উপস্থাপন করো।
ঘ. “মুক্তিযুদ্ধে চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।” -উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘কলিমদ্দি দফাদার’ গল্পে বর্ণিত হয়েছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুর বর্বরতার ছবি। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম এলাকার আনসার, চৌকিদার-দফাদাররাও যে কখনো কখনো পরোক্ষ কৌশলে অত্যন্ত গোপনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করেছিল, সেই বাস্তবতাই শিল্প-সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে এ গল্পে। গ্রামবাংলার একজন সাধারণ দফাদারের দেশপ্রেম ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় গল্পটির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ক. প্রিন্সিপালের উর্দুচর্চা নিয়ে ঠাট্টা করে কে?
খ. ‘আব্বু তাহলে মুক্তিবাহিনী’ কথাটি কে, কোন প্রসঙ্গে বলেছিল?
গ. উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের কার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? -আলোচনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘রেইনকোট’ গল্পের সামগ্রিক চিত্র প্রকাশিত হয়নি।” -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
-----------

তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।
Next Post Previous Post