‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

জীবন ও বৃক্ষ : মোতাহের হোসেন চৌধুরী
জীবন ও বৃক্ষ : মোতাহের হোসেন চৌধুরী

জীবন ও বৃক্ষ
মোতাহের হোসেন চৌধুরী

সমাজের কাজ কেবল টিকে থাকার সুবিধা দেওয়া নয়, মানুষকে বড় করে তোলা, বিকশিত জীবনের জন্য মানুষের জীবনে আগ্রহ জাগিয়ে দেওয়া। স্বল্পপ্রাণ স্থূলবুদ্ধি (সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধিহীন; অগভীর জ্ঞানসম্পন্ন) ও জবরদস্তিপ্রিয় (গায়ের জোরে কাজ হাসিলে তৎপর; বিচার-বিবেচনাহীন) মানুষে সংসার পরিপূর্ণ। তাদের কাজ নিজের জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলা নয়, অপরের সার্থকতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা। প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ লাভ করেনি বলে এরা নিষ্ঠুর ও বিকৃতবুদ্ধি (বুদ্ধির বিকার ঘটেছে এমন; যথাযথ চিন্তাচেতনাহীন)। এদের একমাত্র দেবতা অহংকার। তারই চরণে তারা নিবেদিতপ্রাণ। ব্যক্তিগত অহংকার, পারিবারিক অহংকার, জাতিগত অহংকার- এ সবের নিশান ওড়ানোই এদের কাজ। মাঝে মাঝে মানবপ্রেমের কথাও তারা বলে। কিন্তু তাতে নেশা ধরে না, মনে হয় আন্তরিকতাশূন্য, উপলব্ধিহীন বুলি (এখানে গৎ-বাঁধা কথা হিসেবে ব্যবহৃত। যথাযথ অর্থ বহন করে না এমন কথা যা অভ্যাসের বশে বলা হয়ে থাকে)।

এদের স্থানে এনে দিতে হবে বড় মানুষ- সূক্ষ্মবুদ্ধি (তীক্ষ্ম বুদ্ধি) উদারহৃদয় গভীরচিত্ত ব্যক্তি, যাদের কাছে বড় হয়ে উঠবে জীবনের বিকাশ, কেবল টিকে থাকা নয়। তাদের কাছে জীবনাদর্শের প্রতীক হবে প্রাণহীন ছাঁচ বা কল নয়, সজীব বৃক্ষ- যার বৃদ্ধি আছে, গতি আছে, বিকাশ আছে, ফুলে ফলে পরিপূর্ণ হয়ে অপরের সেবার জন্য প্রস্তুত হওয়া যার কাজ। বৃক্ষের জীবনের গতি ও বিকাশকে উপলব্ধি করা দরকার, নইলে সার্থকতা ও পরিপূর্ণতার ছবি চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হবে না।

বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি (অনুভূতি) সহজ হয়। তাই, বারবার সেদিকে তাকানো প্রয়োজন। মাটির রস টেনে নিয়ে নিজেকে মোটাসোটা করে তোলাতেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি নয়। তাকে ফুল ফোটাতে হয়, ফল ধরাতে হয়। নইলে তার জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই বৃক্ষকে সার্থকতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা সজীবতা ও সার্থকতার এমন জীবন্ত দৃষ্টান্ত আর নেই।

অবশ্য রবীন্দ্রনাথ অন্য কথা বলেছেন। ফুলের ফোটা আর নদীর গতির সঙ্গে তুলনা করে তিনি নদীর গতির মধ্যেই মনুষ্যত্বের সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। তাঁর মনে মনুষ্যত্বের বেদনা নদীর গতিতেই উপলব্ধ হয়, ফুলের ফোটায় নয়। ফুলের ফোটা সহজ, নদীর গতি সহজ নয়- তাকে অনেক বাধা ডিঙানোর দুঃখ পেতে হয়। কিন্তু ফুলের ফোটার দিকে না তাকিয়ে বৃক্ষের ফুল ফোটানোর দিকে তাকালে বোধহয় রবীন্দ্রনাথ ভালো করতেন। তপোবনপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ (প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের মতো রবীন্দ্রনাথও ছিলেন অরণ্য ও বৃক্ষপ্রেমিক। তাঁর অনেক কবিতায় বৃক্ষের বন্দনা স্পষ্ট) কেন যে তা করলেন না বোঝা মুশকিল।

জানি, বলা হবে: নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের (মানব-উচিত ভালো গুণাবলি। মানুষের বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য) দুঃখ যতটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৃক্ষের ফুল ফোটানোয় তা তত স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। তাই কবি নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন।
উত্তরে বলব: চর্মচক্ষুকে বড় না করে কল্পনা ও অনুভূতির চক্ষুকে (মনের চোখ; ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভূতির বা উপলব্ধির ক্ষমতা, সংবেদনশীলতা) বড় করে তুললে বৃক্ষের বেদনাও সহজে উপলব্ধি করা যায়। আর বৃক্ষের সাধনায় যেমন একটা ধীরস্থির ভাব দেখতে পাওয়া যায়, মানুষের সাধনায়ও তেমনি একটা ধীরস্থির ভাব দেখতে পাওয়া যায়, আর এটাই হওয়া উচিত নয় কি? অনবরত ধেয়ে চলা মানুষের সাধনা হওয়া উচিত নয়। যাকে বলা হয় গোপন ও নীরব সাধনা তা বৃক্ষেই অভিব্যক্ত, নদীতে নয়। তাছাড়া বৃক্ষের সার্থকতার ছবি যত সহজে উপলব্ধি করতে পারি, নদীর সার্থকতার ছবি তত সহজে উপলব্ধি করা যায় না। নদী সাগরে পতিত হয় সত্য, কিন্তু তার ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না। বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানোর ছবি কিন্তু প্রত্যহ চোখে পড়ে। দোরের কাছে দাঁড়িয়ে থেকে সে অনবরত নতি (অবনত ভাব; বিনয়, নম্রতা), শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে।

সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি একটা বড় জিনিস। নদীর সাগরে পতিত হওয়ায় সেই প্রাপ্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। সে তো প্রাপ্তি নয়, আত্মবিসর্জন। অপরপক্ষে বৃক্ষের প্রাপ্তি চোখের সামনে ছবি হয়ে ফুটে ওঠে। ফুলে ফলে যখন সে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন আপনা থেকেই বলতে ইচ্ছা হয় এই তো সাধনার সার্থকতা। বৃক্ষে প্রাপ্তি ও দান। সৃজনশীল মানুষেরও প্রাপ্তি ও দানে পার্থক্য দেখা যায় না। যা তার প্রাপ্তি তা-ই তার দান।

বৃক্ষের পানে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই অন্তরের সৃষ্টিধর্ম (সৃষ্টি বা সৃজনের বৈশিষ্ট্য) উপলব্ধি করেছেন। বহু কবিতায় তার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু গদ্যে তিনি তা স্পষ্ট করে বলেননি। বললে ভালো হতো। তাহলে নিজের ঘরের কাছেই যে সার্থকতার প্রতীক রয়েছে, সে সম্বন্ধে আমরা সচেতন হতে পারতাম।

নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার গান গেয়ে শোনায়। অনুভূতির কান দিয়ে সে গান শুনতে হবে। তাহলে বুঝতে পারা যাবে জীবনের মানে বৃদ্ধি, ধর্মের মানেও তাই। প্রকৃতির যে ধর্ম মানুষের সে ধর্ম; পার্থক্য কেবল তরুলতা ও জীবজন্তুর বৃদ্ধির ওপর তাদের নিজেদের কোনো হাত নেই, মানুষের বৃদ্ধির ওপরে তার নিজের হাত রয়েছে। আর এখানেই মানুষের মর্যাদা। মানুষের বৃদ্ধি কেবল দৈহিক নয়, আত্মিকও(মনোজাগতিক; চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্র)। মানুষকে আত্মা সৃষ্টি করে নিতে হয়, তা তৈরি পাওয়া যায় না। সুখ-দুঃখ-বেদনা উপলব্ধির ফলে অন্তরের যে পরিপক্বতা, তাই তো আত্মা। এই আত্মারূপ ফল স্রষ্টার উপভোগ্য। তাই মহাকবির মুখে শুনতে পাওয়া যায়: ‘Ripeness is all’- পরিপক্বতাই (সুপরিণতিজাত; পরিপূর্ণ বিকাশসাধন) সব। আত্মাকে মধুর ও পুষ্ট করে গড়ে তুলতে হবে। নইলে তা স্রষ্টার উপভোগের উপযুক্ত হবে না। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, প্রচুর প্রেম ও গভীর অনুভূতির দ্বারা আত্মার পরিপুষ্টি ও মাধুর্য সম্পাদন সম্ভব। তাই তাদের সাধনাই মানুষের শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু। বস্তুজিজ্ঞাসা (বস্তুজগতের রহস্য উন্মোচন-অন্বেষা; বস্তুজগৎ সম্পর্কে জানার আগ্রহ) তথা বিজ্ঞান কখনো শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু হতে পারে না। কেননা, তাতে আত্মার উন্নতি হয় না- জীবনবোধ ও মূল্যবোধে অন্তর পরিপূর্ণ হয় না; তা হয় সাহিত্য-শিল্পকলার দ্বারা। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের এত মূল্য।

ওপরে যে বৃদ্ধির কথা বলা হলো বৃক্ষের জীবন তার চমৎকার নিদর্শন। বৃক্ষের অঙ্কুরিত হওয়া থেকে ফলবান হওয়া পর্যন্ত সেখানে কেবলই বৃদ্ধির ইতিহাস। বৃক্ষের পানে তাকিয়ে আমরা লাভবান হতে পারি- জীবনের গূঢ় অর্থ (প্রচ্ছন্ন গভীর তাৎপর্য) সম্বন্ধে সচেতন হতে পারি বলে।

বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা তা নয়- প্রশান্তিরও ইঙ্গিত। অতি শান্ত ও সহিষ্ণুতায় সে জীবনের গুরুভার (গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব) বহন করে।

উৎস নির্দেশ :
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি তাঁর ‘সংস্কৃতি কথা’ (১৯৫৮) গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ স্থূলবুদ্ধি - সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধিহীন। অগভীর জ্ঞানসম্পন্ন।
➠ জবরদস্তিপ্রিয়- গায়ের জোরে কাজ হাসিলে তৎপর। বিচার-বিবেচনাহীন।
➠ বিকৃতবুদ্ধি- বুদ্ধির বিকার ঘটেছে এমন। যথাযথ চিন্তাচেতনাহীন।
এদের প্রধান দেবতা অহংকার- যথাযথ বিচার-বিবেচনা ও চিন্তাচেতনাহীন লোকেরা এত গর্বোদ্ধত হয়ে থাকে যে মনে হয় যেন অহংকারই তাদের প্রধান উপাস্য বা দেবতা।
➠ বুলি- এখানে গৎ-বাঁধা কথা হিসেবে ব্যবহৃত। যথাযথ অর্থ বহন করে না এমন কথা যা অভ্যাসের বশে বলা হয়ে থাকে।
➠ মনুষ্যত্ব- মানবোচিত সদগুণাবলি। মানুষের বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য।
➠ তবোপন-প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ- প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের মতো রবীন্দ্রনাথও ছিলেন অরণ্য ও বৃক্ষপ্রেমিক। তাঁর অনেক কবিতায় বৃক্ষের বন্দনা স্পষ্ট।
➠ তপোবন- অরণ্যে ঋষির আশ্রম। মুনি ঋষিরা তপস্যা করেন এমন বন।
➠ অনুভূতির চক্ষু- মনের চোখ। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভূতির বা উপলব্ধির ক্ষমতা, সংবেদনশীলতা।
➠ নতি- অবনত ভাব। বিনয়, নম্রতা।
বৃক্ষের প্রাপ্তি ও দান- বৃক্ষের অর্জন হচ্ছে তার ফুল ও ফল। এগুলো সে অন্যের হাতে তুলে দেয়। ফলে বৃক্ষ যুগপৎ প্রাপ্তি ও দানের আদর্শ।
➠ সৃষ্টিধর্ম- সৃষ্টি বা সৃজনের বৈশিষ্ট্য।
➠ আত্মিক- মনোজাগতিক। চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্র।
➠ পরিপক্বতা- সুপরিণতিজাত। পরিপূর্ণ বিকাশসাধন।
➠ বস্তুজিজ্ঞাসা- বস্তুজগতের রহস্য উন্মোচন-অন্বেষা। বস্তুজগৎ সম্পর্কে জানার আগ্রহ।
➠ গূঢ় অর্থ- প্রচ্ছন্ন গভীর তাৎপর্য।

পাঠ-পরিচিতি :
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি পরার্থে আত্মনিবেদিত সুকৃতিময় সার্থক বিবেকবোধসম্পন্ন মানবজীবনের মহত্তম প্রত্যাশা থেকে লেখক মানুষের জীবনকাঠামোকে তুলনা করেছেন বৃক্ষের সঙ্গে। তিনি দেখিয়েছেন, বৃক্ষের বিকাশ, পরিপূর্ণতা ও সার্থকতার পেছনে রয়েছে তার নীরব সাধনা। বৃক্ষ যেমন করে ফুলে ফলে পরিপূর্ণতা পায়, আর সে সব অন্যকে দান করে সার্থকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে, মানব-জীবনের সার্থকতার জন্য তার নিজের সাধনাও তেমনি হওয়া উচিত। তাহলেই স্বার্থপর, অহংকারী, বিবেকহীন, নিষ্ঠুর জবরদস্তিপ্রবণ মানুষের জায়গায় দেখা দেবে প্রেমে, সৌন্দর্যে, সেবায় বিকশিত বিবেকবান পরিপূর্ণ ও সার্থক মানুষ।

লেখক পরিচিতি :
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুরে। তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ (১৯২৬) নামে পরিচিত বাঙালি মুসলমান সমাজের অগ্রগতির এক যুগান্তকারী আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে। সাহিত্যের অঙ্গনে ও বাস্তব জীবনে উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সৌন্দর্যবোধ, মুক্তবুদ্ধি-চেতনা ও মানবপ্রেমের আদর্শের অনুসারী। তিনি ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদির প্রমুখের সহযোগী। মননশীল, চিন্তা-উদ্দীপক ও পরিশীলিত গদ্যের রচয়িতা হিসেবে বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে তিনি বিশিষ্ট হয়ে আছেন। তাঁর গ্রন্থ ‘সংস্কৃতি কথা(১৯৫৮)’ বাংলাদেশের প্রবন্ধ-সাহিত্যে এক বিশিষ্ট সংযোজন। তাঁর প্রকাশিত অন্য দুটি গ্রন্থ হচ্ছে ক্লাইভ বেল-এর (১৮৮১ - ১৯৬৪) ‘Civilization’ (১৯২৮) গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত ‘সভ্যতা’(১৯৬৫) এবং বারট্রান্ড রাসেলের(১৮৭২ - ১৯৭০) ‘Conquest of Happiness’ (১৯৩০) গ্রন্থের অনুবাদ ‘সুখ’ (১৯৬৮)। বাংলা একাডেমি তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত সমস্ত রচনা রচনাবলি-আকারে প্রকাশ করেছে।
চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনাকালে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই সেপ্টেম্বর তিনি (ডায়াবেটিকস রোগ) মৃত্যুবরণ করেন।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. মোতাহের হোসেন চৌধুরী কাকে মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন?
ক. নদীকে
খ. বৃক্ষকে ✔
গ. ধর্মকে
ঘ. আত্মাকে
২. ‘প্রকৃতির যে ধর্ম মানুষের সে ধর্ম।’-উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
ক. পরোপকারিতা
খ. সহনশীলতা
গ. বৃদ্ধি ✔
ঘ. সংবেদনশীলতা
উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
তমাল মেধাবী। দেশের স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করে ফিরে যান নিজ গ্রামে। প্রতিষ্ঠা করেন দাতব্য চিকিৎসালয়। শহরে প্রাকটিস করে অনেক টাকা রোজগারের পরিবর্তে নিজ গ্রামের সাধারণ মানুষের সেবাকে তিনি ব্রত হিসেবে গ্রহণ করলেন।
৩. উদ্দীপকের তমালের সাথে “জীবন ও বৃক্ষ” প্রবন্ধের কার সাদৃশ্য আছে?
ক. বৃক্ষের ✔
খ. জীবনের
গ. লেখকের
ঘ. নদীর
৪. উদ্দীপকের ভাবার্থ নিচের কোন বাক্যে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. বৃদ্ধি কেবল দৈহিক নয়, আত্মিকও। ✔
খ. বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা তা নয়, প্রশান্তিরও ইঙ্গিত।
গ. যা তার প্রাপ্তি তাই তার দান।
ঘ. নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার গান শোনায়।

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি কে লিখেছেন?
উত্তর: ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরী লিখেছেন।
২. মোতাহের হোসেন চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন কোন জেলায়?
উত্তর: মোতাহের হোসেন চৌধুরী জন্মগ্রহণ নোয়াখালী জেলায় করেন।
৩. ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থটি কে লিখেছেন?
উত্তর: ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থটি মোতাহের হোসেন চৌধুরী লিখেছেন।
৪. মোতাহের হোসেন চৌধুরী মৃতু্যবরণ করেন কত সালে?
উত্তর: মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মৃতু্যবরণ করেন।
৫. স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা অপরের সার্থকতায় কী সৃষ্টি করে?
উত্তর: স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা অপরের সার্থকতায় অন্তরায় সৃষ্টি করে।
৬. স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা কোন দেবতার চরণে নিবেদিতপ্রাণ?
উত্তর: স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা অহংকার দেবতার চরণে নিবেদিতপ্রাণ।
৭. বড় মানুষের বুদ্ধি কেমন হয়?
উত্তর: বড় মানুষের বুদ্ধি সূক্ষ্ম হয়।
৮. বড় মানুষের কাছে কোনটি বড় হয়ে উঠবে?
উত্তর: কেবল জীবনের বিকাশই বড় হয়ে উঠবে।
৯. বৃক্ষকে কীসের জীবনের সার্থকতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত?
উত্তর: বৃক্ষকে মানুষের জীবনের সার্থকতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
১০. রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবনকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন।
১১. রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সাথে কে দ্বিমত পোষণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সাথে মোতাহের হোসেন চৌধুরী দ্বিমত পোষণ করেন।
১২. কার বেদনা সহজে উপলব্ধি করা যায়?
উত্তর: বৃক্ষের বেদনা সহজে উপলব্ধি করা যায়।
১৩. নদী কোথায় পতিত হয়?
উত্তর: নদী সাগরে পতিত হয়।
১৪. কীসের ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না?
উত্তর: নদীর ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না।
১৫. কীসের পরিবর্তনের ছবি আমাদের প্রত্যহ চোখে পড়ে?
উত্তর: বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি আমাদের প্রত্যহ চোখে পড়ে।
১৬. বৃক্ষ দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে নতি, শান্তি ও সেবার কী প্রচার করে?
উত্তর: বৃক্ষ দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে।
১৭. নদীর সাগরে পতিত হওয়া প্রাপ্তি নয়, তবে কী?
উত্তর: আত্মবিসর্জন।
১৮. বৃক্ষের পানে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ কী উপলব্ধি করেছেন?
উত্তর: অন্তরের সৃষ্টিধর্ম উপলব্ধি করেছেন।
১৯. নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের কীসের গান গেয়ে শোনায়?
উত্তর: নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার গান গেয়ে শোনায়।
২০. কারা নিজের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?
উত্তর: মানুষ নিজের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
২১. মানুষের সুখ-দুঃখ বেদনার ফলে আত্মা কেমন হয়?
উত্তর: মানুষের সুখ-দুঃখ বেদনার ফলে আত্মা পরিপক্ব হয়।
২২. পরিপক্বতা সম্পর্কে মহাকবি কী বলেছেন?
উত্তর: মহাকবি বলেছেন- ‘Ripeness is all’.
২৩. মানুষের শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু কোনটি?
উত্তর: মানুষের শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু সাধনা।
২৪. কীসের দ্বারা মানুষের অন্তর পরিপূর্ণ হয়?
উত্তর: সাহিত্য, শিল্পকলার দ্বারা মানুষের অন্তর পরিপূর্ণ হয়।
২৫. বৃক্ষের অঙ্কুরিত হওয়া থেকে ফলবান হওয়া কীসের ইতিহাস?
উত্তর: বৃদ্ধির ইতিহাস।
২৬. বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে জীবনের কোন অর্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়?
উত্তর: বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে জীবনের গূঢ় অর্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :
১. স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা কেন নিষ্ঠুর হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ লাভ করেনি বলে স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা নিষ্ঠুর হয়ে থাকে।
➠ স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা বিকশিত জীবনের স্বাদ পায়নি। এরা যে কোনো বিষয় অর্জনে জবরদস্তি করে। এরা নিজের জীবনকে সার্থক করে তোলার চেষ্টা করে না। অন্যের সার্থকতা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে। এরা কখনই প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ পায় না বলে নিষ্ঠুর ও বিকৃতিবুদ্ধিসম্পন্ন হয়। এদের একমাত্র দেবতা অহংকার।

২. মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না কেন? বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না, তাকে ফুল ফোটাতে হয়, ফল ধরাতে হয়।
➠ মাটির রস শোষণ করে বৃক্ষ নিজেকে বড়ো করে তোলে। এরপর বৃক্ষ পত্রপল্লবে সুশোভিত হয়। সমাজের কল্যাণের মধ্যদিয়েই বৃক্ষের কাজের শেষ নয়। এ কারণেই বলা হয়, শুধু মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না, তাকে আরও কিছু করতে হয়, যা মানুষের বিকশিত জীবনের ইঙ্গিত বহন করে।

৩. কেন রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর : নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ যতটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৃক্ষের ফুল ফোটানো ততটা স্পষ্ট নয়।
➠ তাই কবি নদীকে মানুষের জীবনের সাথে তুলনা করেছেন। কবি রবীন্দ্রনাথ নদীর গতির মধ্যেই মনুষ্যত্বের সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। তাঁর মতে, মনুষ্যত্বের বেদনা নদীর গতিতেই উপলব্ধি হয়। নদীর গতি সহজ নয়, তাকে অনেক বাধা ডিঙাতে হয়। যেমনটা মানুষকে নানা সমস্যার আবর্ত থেকে বেরিয়ে জীবন চালাতে হয়। এজন্য কবি মানুষের জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন।

৪. বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি কেন চোখে পড়ে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বৃক্ষ আমাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে, যার ফলে বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি প্রত্যহ আমাদের চোখে পড়ে।
➠ লেখক বলেছেন, নদী সাগরে পতিত হয়, কিন্তু তার ছবি আমরা প্রতিদিন দেখতে পাই না। বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানোর ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই। কেননা, বৃক্ষ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে অনবরত নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে। বৃক্ষের পরিবর্তনকে ঘরে বসেই মানুষ দেখতে পায়।

৫. মানুষের বৃদ্ধিতে নিজের মর্যাদা হয় কেন?
উত্তর : মানুষের বৃদ্ধিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে বলে সে মনের মতো বিকশিত হতে পারে, আর এখানেই মানুষের বৃদ্ধিতে মর্যাদাবোধ হয়।
➠ আমরা জানি, বৃক্ষ প্রকৃতির নিয়মেই বাড়ে, ফুল ফোটায়, ফসল ফলায়। তাদের বৃদ্ধির ওপর নিজেদের কোনো হাত নেই। কিন্তু মানুষের বৃদ্ধির ওপর নিজেদের হাত আছে। মানুষের বৃদ্ধি কেবল দৈহিক নয়, আত্মিকও বটে। মানুষকে আত্মা সৃষ্টি করে নিতে হয়, তা তৈরি পাওয়া যায় না। মানুষ তার শান্তি দিয়ে, বোধ শক্তি দিয়ে নিজেকে তৈরি করে ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
এই যে বিটপি শ্রেণি হেরি সারি সারি-
কি আশ্চর্য শোভাময় যাই বলিহারি।
কেহবা সরল সাধু হৃদয় যেমন,
ফলভারে নত কেহ গুণীর মতন।
এদের স্বভাব ভালো মানবের চেয়ে,
ইচ্ছা যার দেখ দেখ জ্ঞানচক্ষে চেয়ে।
যখন মানবকুল ধনবান হয়,
তখন তাদের শির সমুন্নত রয়।
কিন্তু ফলশালী হলে এই তরুগণ,
অহংকারে উচ্চ শির না করে কখন।
ফলশূন্য হলে সদা থাকে সমুন্নত,
নীচ প্রায় কার ঠাঁই নহে অবনত। [কবিতা: তরু : কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার]

ক. মোতাহের হোসের চৌধুরী কোন আন্দোলনের কাণ্ডারি ছিলেন?
খ. কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন কেন?
গ. ‘বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়’- প্রবন্ধের এ উক্তিটি উদ্দীপকে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ’ এবং “জীবন ও বৃক্ষ” প্রবন্ধের ‘বৃক্ষ’ কি একসূত্রে গাঁথা?’- তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
ক. মোতাহের হোসেন চৌধুর ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামে এক যুগান্তকারী আন্দোলনের কাণ্ডারি ছিলেন।
খ. নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলেই কবি নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন।
➠ কোনো মানুষ কেবল জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ হয় না; তাকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। এই মনুষ্যত্ব অর্জন মোটেই সহজ কোনো বিষয় নয়। নদীকে যেমন বাঁকে-বাঁকে বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে চলতে হয়, তেমনি অনেক বাধা ডিঙিয়ে মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। মনুষ্যত্ব অর্জনের সঙ্গে নদীর পথ পেরোনোর বিষয়টি অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ বলেই কবি নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন।

গ. ‘বৃক্ষ ফলবান হলে নতমস্তিষ্কে থাকে আর ফলশূন্য হলে থাকে সদা সমুন্নত; যা মানজীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য’ এভাবেই উদ্দীপকে আলোচ্য উক্তিটি প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ তার মনুষ্যত্বের জন্য সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে বিবেচ্য। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। বিত্তশালী হলেও অহংকার না করে সকলের সঙ্গে বৃক্ষের জীবনকে সাদৃশ্যময় করে তোলা হয়েছে উদ্দীপকে। সরল সাধু বা গুণীরা মূলত ফলভারে নত বৃক্ষের মতোই। ফলশালী বৃক্ষ যেমন অহংকার না করে নতশিরে থাকে মানুষের জীবনার্থও তাই হওয়া উচিত। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেও প্রাবন্ধিক একই ধরনের মন্তব্য করে বলেছেন বৃক্ষের দিকে তাকালেই মানবজীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়। কেননা, বৃক্ষ কেবল মাটি থেকে রস গ্রহণ করে নিজের প্রয়োজনই মেটায় না, তাকে অপরের জন্য ফুল আর ফলও ধরাতে হয়। এভাবে পরার্থে জীবনকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়েই জীবনের তাৎপর্য অনুভূত হয়। উদ্দীপকের কবিতাতেও একইভাবে বিত্তশালী হয়েও অহংকার না করে নত থাকায় জীবনের তাৎপর্যকে উপলব্ধির বিষয়টি এসেছে। এভাবেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ’ এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের ‘বৃক্ষ’ একই সূত্রে গাঁথা।
➠ মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যত্ব অর্জন করে পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। বৃক্ষও নিজেকে পরিপুষ্ট করে অন্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য। এ জন্যই ‘বৃক্ষ’ কবিতা এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মানুষকে বৃক্ষ থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
➠ পরার্থে আত্মনিবেদিত সুকৃতিময় সার্থক বিবেকবোধসম্পন্ন মানবজীবনের মহত্তম প্রত্যাশা থেকেই লেখক মানুষের জীবন কাঠামোকে বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন বৃক্ষের বিকাশ, পরিপূর্ণতা ও সার্থকতার পেছনে রয়েছে তার নীরব সাধনা। বৃক্ষ ফুলে-ফলে পরিপূর্ণতা পেয়ে সে সব কিছু অন্যকে দান করে সার্থকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। মানবজীবনের স্বার্থকতার জন্যও তার নিজের সাধনা তেমনই হওয়া উচিত বলে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকের কবিতাতেও একইভাবে মানবজীবনের উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত সরলমনা সাধু মানুষদের তুলনা করা হয়েছে ফলভারে নত বৃক্ষের সঙ্গে। বলা হয়েছে, বৃক্ষের যে, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সেই বৈশিষ্ট্যে মানুষকে গুণান্বিত হতে। আর এতেই রয়েছে জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।
➠ উদ্দীপকের কবিতায় যেমন প্রকৃত মানবজীবনের সঙ্গে বৃক্ষকে তুলনা করা হয়েছে, ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেও একই বিষয় এসেছে। মূলত ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় রচনাতেই মানবজীবনের সঙ্গে বৃক্ষের জীবন সাধনাকে সাদৃশ্যপূর্ণ করা হয়েছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ’ এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে ‘বৃক্ষ’ একই সূত্রে গাঁথা।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সিরাজের অল্প বয়সে মা মারা যায়। কেউ তাকে আদর-যত্ন করেনি। স্কুলেও তাকে কখনো পাঠায়নি। সে টোকাই ছেলেদের সাথে ঘুরে-ফিরে বড় হয়ে উঠেছে। সে টাকা পেলে বোমাবাজি, খুনখারাবি সবকিছুই করতে পারে। সে পেশিশক্তির পূজারি। সে ভালো মানুষের সংস্রববঞ্চিত, তার কাছে দয়া-মায়া মানসিক গুণাবলি অনর্থক বিষয়। প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত একটা দানব ছাড়া সে আর অন্য কিছু নয়।

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম কত সালে?
খ. মানুষের জন্য সমাজের কাজ কী? বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের কোন অংশের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. ‘প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও দানব প্রকৃতির হয়।’- মূল্যায়ন করো।
ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯০৩ সালে।
খ. মানুষের জন্য সমাজের কাজ হলো টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি বড় করে তোলা এবং বিকশিত জীবনের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা।
➠ মানুষ পৃথিবীতে আর দশটি প্রাণীর মতো নয়। তাকে বিকশিত জীবনে উত্তীর্ণ হতে হলে সমাজের অনেক রকম দায়বদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়। অনুকূল পরিবেশ ব্যতিরেকে মানুষ মানুষের মতো মার্জিত ও পরিশীলিত হয়ে উঠতে পারে না। মানুষকে বাইরে থেকে ও ভেতর থেকে মানুষ হওয়ার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা সমাজের বড় কাজ। তাহলে মানুষ সুন্দর সভ্য সহমমীর্ সমাজের সদস্য হয়ে গড়ে উঠবে। এ কাজটি মানুষের জন্য করে দিতে সমাজ অঙ্গীকারাবদ্ধ।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত মানুষের অমানবিক কদর্য চরিত্রের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
➠ মানুষকে মানুষ হওয়ার জন্য সমাজে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। প্রেম-প্রীতি-স্নেহ-মমতা ইত্যাদি মানবিক গুণ মানুষ সুষ্ঠু- সুস্থ সামাজিক পরিবেশ থেকে লাভ করে। প্রেম-স্নেহবঞ্চিত মানবশিশুকে আকারে মানুষের মতো দেখালেও কখনো কখনো তার ভেতর অন্যরকম হিংস্র পশু জন্ম নেয়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, শৈশবে মাতৃহারা, সমাজের আদর-স্নেহ-মমতাবঞ্চিত সিরাজ টাকার বিনিময়ে সব ধরনের অপকর্ম দ্বিধাহীনচিত্তে করে। সমাজ তার ওপর নজর দেয়নি। সমাজ তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রথমাংশে দেখা যায়, স্বপ্রাণ বুদ্ধি ও জবরদি¯—প্রিয় মানুষে সংসার তথা সমাজ ভরে ওঠে। তারা সমাজকে এবং সমাজের মানুষকে পদে পদে বিঘ্ন সৃষ্টি করে পেছনে ঠেলে দেয়। তারা অন্যের জীবনের সার্থকতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রেম ও সৌন্দর্যবঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও বিকৃতবুদ্ধির হয়। তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এ কথাই উদ্দীপকে একই সুরে ধ্বনিত হয়েছে।

ঘ. ‘প্রেম-সৌন্দর্যবঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও দানব প্রকৃতির হয়।’- উক্তিটি যথাযথ।
➠ মানুষকে মানুষে পরিণত হতে হলে সমাজের ভালো মানুষ থেকে তার দেহ-মনে প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ আরোপ করতে হয়। তা না হলে সমাজে আদরবঞ্চিত-অবহেলিত শিশুরা মানুষ নামের অমানুষরূপে বেড়ে ওঠে। উদ্দীপকেও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে সে কথারই বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।
➠ উদ্দীপকের সিরাজ প্রেম-সৌন্দর্যের স্পর্শবঞ্চিত শিশু। জন্মের পর তার মা মারা যায়। সে সমাজের কাছে উপেক্ষার শিকার হয়। টোকাই শিশুদের সাথে বেড়ে ওঠে। কোনোরকম ভালো শিক্ষা সে জীবনে পায়নি। সে টাকার জন্য বোমাবাজি, খুন-খারাবি সবকিছুই দ্বিধাহীনভাবে করতে পারে। সে পেশিশক্তির পূজারি। তার কাছে দয়া-মায়া অনর্থক বিষয়। সে একটি মানবরূপী দানবে পরিণত হয়েছে। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রথম অংশ বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে এই মানুষের অমানুষ হয়ে ওঠার দিকটি আলোকপাত করা হয়েছে।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বর্ণনায় মানুষের বেড়ে ওঠার প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতার কথা যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় বলা হয়েছে। প্রেম-সৌন্দর্যের স্পর্শবঞ্চিত মানুষরাই নিষ্ঠুর ও বিকৃতবুদ্ধির হয়ে থাকে। তারা দানবের মত আচরণ করে। উদ্দীপকেও এ কথা সাদৃশ্যপূর্ণভাবে ফুটে উঠেছে, তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। উদ্দীপকের সিরাজ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাই যথাযথ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

-----------

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আবু সালেহ মুসানগর গ্রামে বাস করে। তার মধ্যে সামান্য দয়ামায়া বলতে কিছুই নেই। ভালোবেসে কিছু দেয়ার চেয়ে মেরে-ধরে কোনোকিছু আদায় করে নিতে সে বেশি পছন্দ করে। নিজের অর্থ-প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্য সে প্রতিনিয়ত অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করে বেড়ায়। তার এ হীন কর্মকাণ্ডে মুসানগরবাসী অস্থির হয়ে ওঠে।

ক. কার দিকে তাকিয়ে আমরা লাভবান হতে পারি?
খ. স্বল্পপ্রাণ বুদ্ধির মানুষের উদ্দেশ্য কী ও কেন?
গ. উদ্দীপকের আবু সালেহ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের কোন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের একটি বিশেষ দিকের প্রতীকা। বিশ্লেষণ করো।
ক. গাছের দিকে।
খ. স্বল্পপ্রাণ ও বুদ্ধির মানুষের উদ্দেশ্য হলো সমাজে টিকে থাকা।
গ. উদ্দীপকটি ভালোভাবে পড়ে আবু সালেহ চরিত্রটির উদ্দেশ্য অনুধাবন কর। তারপর এর সঙ্গে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের শ্রেণিগত সাদৃশ্য নির্ণয় করে তা উপস্থাপন করো।
ঘ. উদ্দীপকটি মনোযোগ সহকারে পড়ে তা আয়ত্ত কর। এরপর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি পড়ে তার দিকগুলো নির্ণয় করো। দেখবে উভয়ের মধ্যে মিল-অমিল বিদ্যমান। এ বিষয়টিই বিশ্লেষণ করো।

তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url