জীবন ও বৃক্ষ- মোতাহের হোসেন চৌধুরী

জীবন ও বৃক্ষ : মোতাহের হোসেন চৌধুরী
জীবন ও বৃক্ষ : মোতাহের হোসেন চৌধুরী

জীবন ও বৃক্ষ
মোতাহের হোসেন চৌধুরী

সমাজের কাজ কেবল টিকে থাকার সুবিধা দেওয়া নয়, মানুষকে বড় করে তোলা, বিকশিত জীবনের জন্য মানুষের জীবনে আগ্রহ জাগিয়ে দেওয়া। স্বল্পপ্রাণ স্থূলবুদ্ধিজবরদস্তিপ্রিয় মানুষে সংসার পরিপূর্ণ। তাদের কাজ নিজের জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলা নয়, অপরের সার্থকতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা। প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ লাভ করেনি বলে এরা নিষ্ঠুর ও বিকৃতবুদ্ধিএদের প্রধান দেবতা অহংকার। তারই চরণে তারা নিবেদিতপ্রাণ। ব্যক্তিগত অহংকার, পারিবারিক অহংকার, জাতিগত অহংকার- এ সবের নিশান ওড়ানোই এদের কাজ। মাঝে মাঝে মানবপ্রেমের কথাও তারা বলে। কিন্তু তাতে নেশা ধরে না, মনে হয় আন্তরিকতাশূন্য, উপলব্ধিহীন বুলি

এদের স্থানে এনে দিতে হবে বড় মানুষ-সূক্ষ্মবুদ্ধি উদারহৃদয় গভীরচিত্ত ব্যক্তি, যাদের কাছে বড় হয়ে উঠবে জীবনের বিকাশ, কেবল টিকে থাকা নয়। তাদের কাছে জীবনাদর্শের প্রতীক হবে প্রাণহীন ছাঁচ বা কল নয়, সজীব বৃক্ষ- যার বৃদ্ধি আছে, গতি আছে, বিকাশ আছে, ফুলে ফলে পরিপূর্ণ হয়ে অপরের সেবার জন্য প্রস্তুত হওয়া যার কাজ। বৃক্ষের জীবনের গতি ও বিকাশকে উপলব্ধি করা দরকার, নইলে সার্থকতা ও পরিপূর্ণতার ছবি চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হবে না।

বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য সূক্ষ্মবুদ্ধি সহজ হয়। তাই, বারবার সেদিকে তাকানো প্রয়োজন। মাটির রস টেনে নিয়ে নিজেকে মোটাসোটা করে তোলাতেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি নয়। তাকে ফুল ফোটাতে হয়, ফল ধরাতে হয়। নইলে তার জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই বৃক্ষকে সার্থকতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা সজীবতা ও সার্থকতার এমন জীবন্ত দৃষ্টান্ত আর নেই।

অবশ্য রবীন্দ্রনাথ অন্য কথা বলেছেন। ফুলের ফোটা আর নদীর গতির সঙ্গে তুলনা করে তিনি নদীর গতির মধ্যেই মনুষ্যত্বের সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। তাঁর মনে মনুষ্যত্বের বেদনা নদীর গতিতেই উপলব্ধ হয়, ফুলের ফোটায় নয়। ফুলের ফোটা সহজ, নদীর গতি সহজ নয়- তাকে অনেক বাধা ডিঙানোর দুঃখ পেতে হয়। কিন্তু ফুলের ফোটার দিকে না তাকিয়ে বৃক্ষের ফুল ফোটানোর দিকে তাকালে বোধহয় রবীন্দ্রনাথ ভালো করতেন। তবোপন-প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ কেন যে তা করলেন না বোঝা মুশকিল।

জানি, বলা হবে: নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ যতটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৃক্ষের ফুল ফোটানোয় তা তত স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। তাই কবি নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন।
উত্তরে বলব: চর্মচক্ষুকে বড় না করে কল্পনা ও অনুভূতির চক্ষু বড় করে তুললে বৃক্ষের বেদনাও সহজে উপলব্ধি করা যায়। আর বৃক্ষের সাধনায় যেমন একটা ধীরস্থির ভাব দেখতে পাওয়া যায়, মানুষের সাধনায়ও তেমনি একটা ধীরস্থির ভাব দেখতে পাওয়া যায়, আর এটাই হওয়া উচিত নয় কি? অনবরত ধেয়ে চলা মানুষের সাধনা হওয়া উচিত নয়। যাকে বলা হয় গোপন ও নীরব সাধনা তা বৃক্ষেই অভিব্যক্ত, নদীতে নয়। তাছাড়া বৃক্ষের সার্থকতার ছবি যত সহজে উপলব্ধি করতে পারি, নদীর সার্থকতার ছবি তত সহজে উপলব্ধি করা যায় না। নদী সাগরে পতিত হয় সত্য, কিন্তু তার ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না। বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানোর ছবি কিন্তু প্রত্যহ চোখে পড়ে। দোরের কাছে দাঁড়িয়ে থেকে সে অনবরত নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে।

সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি একটা বড় জিনিস। নদীর সাগরে পতিত হওয়ায় সেই প্রাপ্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। সে তো প্রাপ্তি নয়, আত্মবিসর্জন। অপরপক্ষে বৃক্ষের প্রাপ্তি চোখের সামনে ছবি হয়ে ফুটে ওঠে। ফুলে ফলে যখন সে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন আপনা থেকেই বলতে ইচ্ছা হয় এই তো সাধনার সার্থকতা। বৃক্ষে প্রাপ্তি ও দান। সৃজনশীল মানুষেরও প্রাপ্তি ও দানে পার্থক্য দেখা যায় না। যা তার প্রাপ্তি তা-ই তার দান।

বৃক্ষের পানে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই অন্তরের সৃষ্টিধর্ম উপলব্ধি করেছেন। বহু কবিতায় তার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু গদ্যে তিনি তা স্পষ্ট করে বলেননি। বললে ভালো হতো। তাহলে নিজের ঘরের কাছেই যে সার্থকতার প্রতীক রয়েছে, সে সম্বন্ধে আমরা সচেতন হতে পারতাম।

নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার গান গেয়ে শোনায়। অনুভূতির কান দিয়ে সে গান শুনতে হবে। তাহলে বুঝতে পারা যাবে জীবনের মানে বৃদ্ধি, ধর্মের মানেও তাই। প্রকৃতির যে ধর্ম মানুষের সে ধর্ম; পার্থক্য কেবল তরুলতা ও জীবজন্তুর বৃদ্ধির ওপর তাদের নিজেদের কোনো হাত নেই, মানুষের বৃদ্ধির ওপরে তার নিজের হাত রয়েছে। আর এখানেই মানুষের মর্যাদা। মানুষের বৃদ্ধি কেবল দৈহিক নয়, আত্মিকও। মানুষকে আত্মা সৃষ্টি করে নিতে হয়, তা তৈরি পাওয়া যায় না। সুখ-দুঃখ-বেদনা উপলব্ধির ফলে অন্তরের যে পরিপক্বতা, তাই তো আত্মা। এই আত্মারূপ ফল স্রষ্টার উপভোগ্য। তাই মহাকবির মুখে শুনতে পাওয়া যায়: ‘Ripeness is all’- পরিপক্বতাই সব। আত্মাকে মধুর ও পুষ্ট করে গড়ে তুলতে হবে। নইলে তা স্রষ্টার উপভোগের উপযুক্ত হবে না। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, প্রচুর প্রেম ও গভীর অনুভূতির দ্বারা আত্মার পরিপুষ্টি ও মাধুর্য সম্পাদন সম্ভব। তাই তাদের সাধনাই মানুষের শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু। বস্তুজিজ্ঞাসা তথা বিজ্ঞান কখনো শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু হতে পারে না। কেননা, তাতে আত্মার উন্নতি হয় না- জীবনবোধ ও মূল্যবোধে অন্তর পরিপূর্ণ হয় না; তা হয় সাহিত্য-শিল্পকলার দ্বারা। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের এত মূল্য।

ওপরে যে বৃদ্ধির কথা বলা হলো বৃক্ষের জীবন তার চমৎকার নিদর্শন। বৃক্ষের অঙ্কুরিত হওয়া থেকে ফলবান হওয়া পর্যন্ত সেখানে কেবলই বৃদ্ধির ইতিহাস। বৃক্ষের পানে তাকিয়ে আমরা লাভবান হতে পারি- জীবনের গূঢ় অর্থ সম্বন্ধে সচেতন হতে পারি বলে।

বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা তা নয়- প্রশান্তিরও ইঙ্গিত। অতি শান্ত ও সহিষ্ণুতায় সে জীবনের গুরুভার বহন করে।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের উৎস নির্দেশ :
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি তাঁর ‘সংস্কৃতি কথা’ (১৯৫৮) গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের শব্দার্থ ও টীকা :
➠ স্থূলবুদ্ধি - সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধিহীন। অগভীর জ্ঞানসম্পন্ন।
জবরদস্তিপ্রিয়- গায়ের জোরে কাজ হাসিলে তৎপর। বিচার-বিবেচনাহীন।
➠ বিকৃতবুদ্ধি- বুদ্ধির বিকার ঘটেছে এমন। যথাযথ চিন্তাচেতনাহীন।
এদের প্রধান দেবতা অহংকার- যথাযথ বিচার-বিবেচনা ও চিন্তাচেতনাহীন লোকেরা এত গর্বোদ্ধত হয়ে থাকে যে মনে হয় যেন অহংকারই তাদের প্রধান উপাস্য বা দেবতা।
➠ বুলি- এখানে গৎ-বাঁধা কথা হিসেবে ব্যবহৃত। যথাযথ অর্থ বহন করে না এমন কথা যা অভ্যাসের বশে বলা হয়ে থাকে।
➠ মনুষ্যত্ব- মানবোচিত সদগুণাবলি। মানুষের বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য।
তবোপন-প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ- প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের মতো রবীন্দ্রনাথও ছিলেন অরণ্য ও বৃক্ষপ্রেমিক। তাঁর অনেক কবিতায় বৃক্ষের বন্দনা স্পষ্ট।
➠ তপোবন- অরণ্যে ঋষির আশ্রম। মুনি ঋষিরা তপস্যা করেন এমন বন।
অনুভূতির চক্ষু- মনের চোখ। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভূতির বা উপলব্ধির ক্ষমতা, সংবেদনশীলতা।
➠ নতি- অবনত ভাব। বিনয়, নম্রতা।
বৃক্ষের প্রাপ্তি ও দান- বৃক্ষের অর্জন হচ্ছে তার ফুল ও ফল। এগুলো সে অন্যের হাতে তুলে দেয়। ফলে বৃক্ষ যুগপৎ প্রাপ্তি ও দানের আদর্শ।
➠ সৃষ্টিধর্ম- সৃষ্টি বা সৃজনের বৈশিষ্ট্য।
➠ আত্মিক- মনোজাগতিক। চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্র।
➠ পরিপক্বতা- সুপরিণতিজাত। পরিপূর্ণ বিকাশসাধন।
➠ বস্তুজিজ্ঞাসা- বস্তুজগতের রহস্য উন্মোচন-অন্বেষা। বস্তুজগৎ সম্পর্কে জানার আগ্রহ।
➠ গূঢ় অর্থ- প্রচ্ছন্ন গভীর তাৎপর্য।
➠ গুরুভার- গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের পাঠ-পরিচিতি :
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি পরার্থে আত্মনিবেদিত সুকৃতিময় সার্থক বিবেকবোধসম্পন্ন মানবজীবনের মহত্তম প্রত্যাশা থেকে লেখক মানুষের জীবনকাঠামোকে তুলনা করেছেন বৃক্ষের সঙ্গে। তিনি দেখিয়েছেন, বৃক্ষের বিকাশ, পরিপূর্ণতা ও সার্থকতার পেছনে রয়েছে তার নীরব সাধনা। বৃক্ষ যেমন করে ফুলে ফলে পরিপূর্ণতা পায়, আর সে সব অন্যকে দান করে সার্থকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে, মানব-জীবনের সার্থকতার জন্য তার নিজের সাধনাও তেমনি হওয়া উচিত। তাহলেই স্বার্থপর, অহংকারী, বিবেকহীন, নিষ্ঠুর জবরদস্তিপ্রবণ মানুষের জায়গায় দেখা দেবে প্রেমে, সৌন্দর্যে, সেবায় বিকশিত বিবেকবান পরিপূর্ণ ও সার্থক মানুষ।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখক পরিচিতি :
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুরে। তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ (১৯২৬) নামে পরিচিত বাঙালি মুসলমান সমাজের অগ্রগতির এক যুগান্তকারী আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে। সাহিত্যের অঙ্গনে ও বাস্তব জীবনে উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সৌন্দর্যবোধ, মুক্তবুদ্ধি-চেতনা ও মানবপ্রেমের আদর্শের অনুসারী। তিনি ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদির প্রমুখের সহযোগী। মননশীল, চিন্তা-উদ্দীপক ও পরিশীলিত গদ্যের রচয়িতা হিসেবে বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে তিনি বিশিষ্ট হয়ে আছেন। তাঁর গ্রন্থ ‘সংস্কৃতি কথা(১৯৫৮)’ বাংলাদেশের প্রবন্ধ-সাহিত্যে এক বিশিষ্ট সংযোজন। তাঁর প্রকাশিত অন্য দুটি গ্রন্থ হচ্ছে ক্লাইভ বেল-এর (১৮৮১ - ১৯৬৪) ‘Civilization’ (১৯২৮) গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত ‘সভ্যতা’(১৯৬৫) এবং বারট্রান্ড রাসেলের(১৮৭২ - ১৯৭০) ‘Conquest of Happiness’ (১৯৩০) গ্রন্থের অনুবাদ ‘সুখ’ (১৯৬৮)। বাংলা একাডেমি তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত সমস্ত রচনা রচনাবলি-আকারে প্রকাশ করেছে।
চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনাকালে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই সেপ্টেম্বর তিনি (ডায়াবেটিকস রোগ) মৃত্যুবরণ করেন।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি কে লিখেছেন?
উত্তর: ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরী লিখেছেন।
২. মোতাহের হোসেন চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন কোন জেলায়?
উত্তর: মোতাহের হোসেন চৌধুরী জন্মগ্রহণ নোয়াখালী জেলায় করেন।
৩. ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থটি কে লিখেছেন?
উত্তর: ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থটি মোতাহের হোসেন চৌধুরী লিখেছেন।
৪. মোতাহের হোসেন চৌধুরী মৃতু্যবরণ করেন কত সালে?
উত্তর: মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মৃতু্যবরণ করেন।
৫. স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা অপরের সার্থকতায় কী সৃষ্টি করে?
উত্তর: স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা অপরের সার্থকতায় অন্তরায় সৃষ্টি করে।
৬. স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা কোন দেবতার চরণে নিবেদিতপ্রাণ?
উত্তর: স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা অহংকার দেবতার চরণে নিবেদিতপ্রাণ।
৭. বড় মানুষের বুদ্ধি কেমন হয়?
উত্তর: বড় মানুষের বুদ্ধি সূক্ষ্ম হয়।
৮. বড় মানুষের কাছে কোনটি বড় হয়ে উঠবে?
উত্তর: কেবল জীবনের বিকাশই বড় হয়ে উঠবে।
৯. বৃক্ষকে কীসের জীবনের সার্থকতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত?
উত্তর: বৃক্ষকে মানুষের জীবনের সার্থকতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
১০. রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবনকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন।
১১. রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সাথে কে দ্বিমত পোষণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সাথে মোতাহের হোসেন চৌধুরী দ্বিমত পোষণ করেন।
১২. কার বেদনা সহজে উপলব্ধি করা যায়?
উত্তর: বৃক্ষের বেদনা সহজে উপলব্ধি করা যায়।
১৩. নদী কোথায় পতিত হয়?
উত্তর: নদী সাগরে পতিত হয়।
১৪. কীসের ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না?
উত্তর: নদীর ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না।
১৫. কীসের পরিবর্তনের ছবি আমাদের প্রত্যহ চোখে পড়ে?
উত্তর: বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি আমাদের প্রত্যহ চোখে পড়ে।
১৬. বৃক্ষ দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে নতি, শান্তি ও সেবার কী প্রচার করে?
উত্তর: বৃক্ষ দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে।
১৭. নদীর সাগরে পতিত হওয়া প্রাপ্তি নয়, তবে কী?
উত্তর: আত্মবিসর্জন।
১৮. বৃক্ষের পানে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ কী উপলব্ধি করেছেন?
উত্তর: অন্তরের সৃষ্টিধর্ম উপলব্ধি করেছেন।
১৯. নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের কীসের গান গেয়ে শোনায়?
উত্তর: নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার গান গেয়ে শোনায়।
২০. কারা নিজের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?
উত্তর: মানুষ নিজের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
২১. মানুষের সুখ-দুঃখ বেদনার ফলে আত্মা কেমন হয়?
উত্তর: মানুষের সুখ-দুঃখ বেদনার ফলে আত্মা পরিপক্ব হয়।
২২. পরিপক্বতা সম্পর্কে মহাকবি কী বলেছেন?
উত্তর: মহাকবি বলেছেন- ‘Ripeness is all’.
২৩. মানুষের শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু কোনটি?
উত্তর: মানুষের শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু সাধনা।
২৪. কীসের দ্বারা মানুষের অন্তর পরিপূর্ণ হয়?
উত্তর: সাহিত্য, শিল্পকলার দ্বারা মানুষের অন্তর পরিপূর্ণ হয়।
২৫. বৃক্ষের অঙ্কুরিত হওয়া থেকে ফলবান হওয়া কীসের ইতিহাস?
উত্তর: বৃদ্ধির ইতিহাস।
২৬. বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে জীবনের কোন অর্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়?
উত্তর: বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে জীবনের গূঢ় অর্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।
২৭. ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি কে লিখেছেন?
উত্তর: মোতাহের হোসেন চৌধুরী।
২৮. হোসেন চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন কোন জেলায়?
উত্তর: নোয়াখালী জেলায়।
২৯. ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থটি কে লিখেছেন?
উত্তর: মোতাহের হোসেন চৌধুরী।
৩০. মোতাহের হোসেন চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন কত সালে?
উত্তর: ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর।
৩১. স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা অপরের সার্থকতায় কী সৃষ্টি করে?
উত্তর: অন্তরায় সৃষ্টি করে।
৩২. স্বল্পপ্রাণ মানুষেরা কোন দেবতার চরণে নিবেদিতপ্রাণ?
উত্তর: অহংকার দেবতার চরণে নিবেদিতপ্রাণ।
৩৩. বড় মানুষের বুদ্ধি কেমন হয়?
উত্তর: সূক্ষ্ম।
৩৪. বড় মানুষের কাছে কোনটি বড় হয়ে উঠবে?
উত্তর: কেবল জীবনের বিকাশই বড় হয়ে উঠবে।
৩৫. বৃক্ষকে কীসের জীবনের সার্থকতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত?
উত্তর: বৃক্ষকে মানুষের জীবনের সার্থকতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
৩৬. রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবনকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: নদীর সাথে।
৩৭. রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সাথে কে দ্বিমত পোষণ করেন?
উত্তর: মোতাহের হোসেন চৌধুরী।
৩৮. কার বেদনা সহজে উপলব্ধি করা যায়?
উত্তর: বৃক্ষের বেদনা সহজে উপলব্ধি করা যায়।
৩৯. নদী কোথায় পতিত হয়?
উত্তর: সাগরে।
৪০. কীসের ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না?
উত্তর: নদীর ছবি।
৪১. কীসের পরিবর্তনের ছবি আমাদের প্রত্যহ চোখে পড়ে?
উত্তর: বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি।
৪২. বৃক্ষ দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে নতি, শান্তি ও সেবার কী প্রচার করে?
উত্তর: নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে।
৪৩. নদীর সাগরে পতিত হওয়া প্রাপ্তি নয়, তবে কী?
উত্তর: আত্মবিসর্জন।
৪৪. বৃক্ষের পানে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ কী উপলব্ধি করেছেন?
উত্তর: অন্তরের সৃষ্টিধর্ম উপলব্ধি করেছেন।
৪৫. নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের কীসের গান গেয়ে শোনায়?
উত্তর: সার্থকতার গান গেয়ে শোনায়।
৪৬. কারা নিজের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?
উত্তর: মানুষ।
৪৭. মানুষের সুখ-দুঃখ বেদনার ফলে আত্মা কেমন হয়?
উত্তর: আত্মা পরিপক্ব হয়।
৪৮. পরিপক্বতা সম্পর্কে মহাকবি কী বলেছেন?
উত্তর: মহাকবি বলেছেন- 'জরঢ়বহবংং রং ধষষ'.
৪৯. মানুষের শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু কোনটি?
উত্তর: সাধনা।
৫০. কীসের দ্বারা মানুষের অন্তর পরিপূর্ণ হয়?
উত্তর: সাহিত্য, শিল্পকলার দ্বারা।
৫১. বৃক্ষের অঙ্কুরিত হওয়া থেকে ফলবান হওয়া কীসের ইতিহাস?
উত্তর: বৃদ্ধির ইতিহাস।
৫২. বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে জীবনের কোন অর্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়?
উত্তর: বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে জীবনের গূঢ় অর্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :

১. স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা কেন নিষ্ঠুর হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ লাভ করেনি বলে স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা নিষ্ঠুর হয়ে থাকে।
➠ স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা বিকশিত জীবনের স্বাদ পায়নি। এরা যে কোনো বিষয় অর্জনে জবরদস্তি করে। এরা নিজের জীবনকে সার্থক করে তোলার চেষ্টা করে না। অন্যের সার্থকতা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে। এরা কখনই প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ পায় না বলে নিষ্ঠুর ও বিকৃতিবুদ্ধিসম্পন্ন হয়। এদের একমাত্র দেবতা অহংকার।

২. মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না কেন? বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না, তাকে ফুল ফোটাতে হয়, ফল ধরাতে হয়।
➠ মাটির রস শোষণ করে বৃক্ষ নিজেকে বড়ো করে তোলে। এরপর বৃক্ষ পত্রপল্লবে সুশোভিত হয়। সমাজের কল্যাণের মধ্যদিয়েই বৃক্ষের কাজের শেষ নয়। এ কারণেই বলা হয়, শুধু মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না, তাকে আরও কিছু করতে হয়, যা মানুষের বিকশিত জীবনের ইঙ্গিত বহন করে।

৩. কেন রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর : নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ যতটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৃক্ষের ফুল ফোটানো ততটা স্পষ্ট নয়।
➠ তাই কবি নদীকে মানুষের জীবনের সাথে তুলনা করেছেন। কবি রবীন্দ্রনাথ নদীর গতির মধ্যেই মনুষ্যত্বের সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। তাঁর মতে, মনুষ্যত্বের বেদনা নদীর গতিতেই উপলব্ধি হয়। নদীর গতি সহজ নয়, তাকে অনেক বাধা ডিঙাতে হয়। যেমনটা মানুষকে নানা সমস্যার আবর্ত থেকে বেরিয়ে জীবন চালাতে হয়। এজন্য কবি মানুষের জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন।

৪. বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি কেন চোখে পড়ে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বৃক্ষ আমাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে, যার ফলে বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি প্রত্যহ আমাদের চোখে পড়ে।
➠ লেখক বলেছেন, নদী সাগরে পতিত হয়, কিন্তু তার ছবি আমরা প্রতিদিন দেখতে পাই না। বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানোর ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই। কেননা, বৃক্ষ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে অনবরত নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে। বৃক্ষের পরিবর্তনকে ঘরে বসেই মানুষ দেখতে পায়।

৫. মানুষের বৃদ্ধিতে নিজের মর্যাদা হয় কেন?
উত্তর : মানুষের বৃদ্ধিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে বলে সে মনের মতো বিকশিত হতে পারে, আর এখানেই মানুষের বৃদ্ধিতে মর্যাদাবোধ হয়।
➠ আমরা জানি, বৃক্ষ প্রকৃতির নিয়মেই বাড়ে, ফুল ফোটায়, ফসল ফলায়। তাদের বৃদ্ধির ওপর নিজেদের কোনো হাত নেই। কিন্তু মানুষের বৃদ্ধির ওপর নিজেদের হাত আছে। মানুষের বৃদ্ধি কেবল দৈহিক নয়, আত্মিকও বটে। মানুষকে আত্মা সৃষ্টি করে নিতে হয়, তা তৈরি পাওয়া যায় না। মানুষ তার শান্তি দিয়ে, বোধ শক্তি দিয়ে নিজেকে তৈরি করে।

৬. ‘সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি এক বড় জিনিস’- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: সাধনা না করলে প্রাপ্তির সাধ পাওয়া কঠিন। তাই সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি এক বড় জিনিস।
➠ বৃক্ষ আমাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে। নদী আপন গতিতে চলতেই থাকে। এতে কোনো ধীরস্থির ভাব নেই, যা আমরা বৃক্ষের মধ্যে দেখতে পাই। বৃক্ষের সাধনায় আমরা ফুল-ফল পাই। নদীর সাগরে পতিত হওয়ার প্রাপ্তি স্পষ্ট নয়, কিন্তু বৃক্ষের প্রাপ্তি আমাদের চোখের সামনেই ছবির মতো ফুটে ওঠে।

৭. ‘বৃক্ষের সার্থকতার ছবি যত সহজে উপলব্ধি করতে পারি, নদীর সার্থকতার ছবি তত সহজে উপলব্ধি করা যায় না’- বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘বৃক্ষের সার্থকতার ছবি যত সহজে উপলব্ধি করতে পারি, নদীর সার্থকতার ছবি তত সহজে উপলব্ধি করা যায় না’- কথাটি বলতে লেখক বৃক্ষের সাধনার কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
➠ মানুষের সাধনায় যে ধীরস্থির ভাব দেখতে পাওয়া যায়, তা বৃক্ষের সাধনা তেও পাওয়া যায়। অনবরত ছুটে চলা মানুষের সাধনা হওয়া উচিত নয়। বৃক্ষের মধ্যে গোপন ও নীরব সাধনা অভিব্যক্ত, নদীতে নয়। নদীর সাগরে পতিত হওয়ার ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না, কিন্তু বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানোর ছবি আমরা প্রতিদিন দেখতে পাই। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে বৃক্ষ সবসময় নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে।

৮. ‘বৃক্ষে প্রাপ্তি ও দান’-কথাটি লেখক কেন বলেছেন?
উত্তর: ‘বৃক্ষে প্রাপ্তি ও দান’-কথাটি লেখক বলেছেন বৃক্ষের সাধনার সার্থকতা বিষয়টি বোঝাতে।
➠ বৃক্ষ অনবরত আমাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে। নদীর সাগরে পতিত হওয়া দৃশ্য আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না। কিন্তু বৃক্ষ আমাদের চোখের সামনে ফুল ফোটায়, ফল জন্মায়, অর্থাৎ আমাদের ফল দান করে। বৃক্ষের প্রাপ্তি চোখের সামনে আমরা দেখতে পাই, বৃক্ষ থেকেই আমরা জীবন-সাধনার শিক্ষা নিই।

৯. তপোবন প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ কেন নদীর মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান?
উত্তর: নদীর গতিতে মনুষ্যত্ব দেখতে পান বলে নদীর মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান তপোবন প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ।
➠ বৃক্ষের ফুল ফোটার চেয়ে নদীর গতির মধ্যেই মানুষের বেদনা উপলব্ধি সহজ বলে মনে করেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি মনে করেন, ফুল ফোটা অনেক সহজ প্রক্রিয়া। কিন্তু নদীর গতি সহজ নয়- তাকে অনেক বাধা পেরিয়ে সমুদ্রে গিয়ে মিশতে হয়। নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে মনে করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

১০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখক তপোবন প্রেমিক বলেছেন কেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসাধারণ প্রকৃতিপ্রেমী ছিলেন বলে লেখক তাঁকে তপোবন প্রেমিক বলেছেন।
➠ প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় ঋষিরা ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। বৃক্ষ মানবজীবনের গূঢ় অর্থ সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাঝেও প্রকৃতি এসেছে নানা রূপবৈচিত্র্য নিয়ে। তাঁর রচিত বিভিন্ন কবিতায় বৃক্ষের বন্দনায় তা স্পষ্ট হয়। আর এ কারণেই লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তপোবন প্রেমিক বলেছেন।

১১. প্রাবন্ধিক জীবনকে বৃক্ষের মতো করে তুলতে বলেছেন কেন?
উত্তর: মহৎ ও আদর্শ জীবন গড়ে তোলার প্রত্যাশায় প্রাবন্ধিক জীবনকে বৃক্ষের মতো করে তুলতে বলেছেন।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বৃক্ষের জীবন থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে বলেছেন। তাঁর মতে, পরার্থে আত্মনিবেদনে বৃক্ষের যে ত্যাগ সে শিক্ষা আমাদের জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে পারে। বৃক্ষের সাধনা, ত্যাগ ও সেবা আদর্শ জীবনের প্রকৃত উদাহরণ। তাই বৃক্ষের শিক্ষামূলক দিকগুলো কাজে লাগিয়ে মহত্তম মানবজীবন গঠনের প্রত্যাশাতেই প্রাবন্ধিক জীবনকে বৃক্ষের মতো করে তুলতে বলেছেন।

১২. জীবনের গূঢ় অর্থ সম্পর্কে আমরা কীভাবে সচেতন হতে পারি?
উত্তর: পরার্থপর বৃক্ষের দিকে তাকালে আমরা জীবনের গূঢ় অর্থ সম্পর্কে সচেতন হতে পারি।
➠ অঙ্কুরোদ্গমের পর থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বৃক্ষ নিঃস্বার্থভাবে ফুল, ফল, ডাল, লতা-পাতা, ছায়া ইত্যাদির মাধ্যমে অন্যের সেবা করে। বৃক্ষের এই সেবাপরায়ণ ও মহৎ জীবন বিশ্লেষণ করে আমরা জীবনের গূঢ় অর্থ সম্পর্কে সচেতন হতে পারি। তখন খুব সহজেই অনুধাবন করা যাবে যে, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করাই আমাদের জীবনের সার্থকতা। আর এ সম্পর্কে সচেতন হতে হলে বৃক্ষের জীবনের দিকে তাকানোর বিকল্প নেই।

১৩. বৃক্ষের জীবনের গতি ও বিকাশ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বৃক্ষের জীবনের গতি ও বিকাশ বলতে লেখক বৃক্ষের বৃদ্ধি ও তার ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ হওয়াকে বুঝিয়েছেন।
➠ মাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষ প্রকৃতির নিয়ম মেনেই নিজেকে বিকশিত করে। ছোট থেকেই প্রকৃতির নিয়মের গতিকে আয়ত্ত করে সে নিজেকে একটু একটু করে বড় করে তোলে আর পরিণত বয়সে ফুল ও ফল প্রদান করে। লেখক বৃক্ষের এ পরিবর্তনকেই তার গতি ও বিকাশ বলেছেন।

১৪. সৃজনশীল মানুষের প্রাপ্তি ও দানে পার্থক্য দেখা যায় না কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সৃজনশীল মানুষের ক্ষেত্রে যা তার দান তাই তার প্রাপ্তি; এ কারণে তার প্রাপ্তি ও দানে পার্থক্য দেখা যায় না।
➠ প্রাবন্ধিকের মতে, সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি একটা বড় জিনিস; কারণ প্রাপ্তিতেই সাধনার সার্থকতা। বৃক্ষের ক্ষেত্রে ফুল ফোটানো ও ফুল থেকে ফল সৃষ্টি তার সাধনা; আবার ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ হওয়াটাই তার প্রাপ্তি। একইভাবে সৃজনশীল মানুষ আত্মার উৎসারণ থেকে যা সৃষ্টি করে তা অন্যের কাছে আশীর্বাদ হয়ে পৌছায়। এ কারণেই সৃজনশীল মানুষের প্রাপ্তি ও দানে পার্থক্য দেখা যায় না।

১৫. স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা কেন নিষ্ঠুর হয়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ লাভ করেনি বলে স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা নিষ্ঠুর হয়ে থাকে।
➠ স্বল্পবুদ্ধি মানুষেরা বিকশিত জীবনের স্বাদ পায়নি। এরা যে কোনো বিষয় অর্জনে জবরদস্তি করে। এরা নিজের জীবনকে সার্থক করে তোলার চেষ্টা করে না। অন্যের সার্থকতা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে। এরা কখনই প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ পায় না বলে নিষ্ঠুর ও বিকৃতিবুদ্ধিসম্পন্ন হয়। এদের একমাত্র দেবতা অহংকার।

১৬. মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না কেন? বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না, তাকে ফুল ফোটাতে হয়, ফল ধরাতে হয়।
➠ মাটির রস শোষণ করে বৃক্ষ নিজেকে বড় করে তোলে। এরপর বৃক্ষ পত্রপল্লবে সুশোভিত হয়। সমাজের কল্যাণের মধ্যদিয়েই বৃক্ষের কাজের শেষ নয়। এ কারণেই বলা হয়, শুধু মোটাসোটা হলেই বৃক্ষের কাজের সমাপ্তি হয় না, তাকে আরও কিছু করতে হয়, যা মানুষের বিকশিত জীবনের ইঙ্গিত বহন করে।

১৭. কেন রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ যতটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৃক্ষের ফুল ফোটানো ততটা স্পষ্ট নয়।
➠ তাই কবি নদীকে মানুষের জীবনের সাথে তুলনা করেছেন। কবি রবীন্দ্রনাথ নদীর গতির মধ্যেই মনুষ্যত্বের সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। তাঁর মতে, মনুষ্যত্বের বেদনা নদীর গতিতেই উপলব্ধি হয়। নদীর গতি সহজ নয়, তাকে অনেক বাধা ডিঙাতে হয়। যেমনটা মানুষকে নানা সমস্যার আবর্ত থেকে বেরিয়ে জীবন চালাতে হয়। এজন্য কবি মানুষের জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন।

১৮. বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি কেন চোখে পড়ে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বৃক্ষ আমাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে, যার ফলে বৃক্ষের পরিবর্তনের ছবি প্রত্যহ আমাদের চোখে পড়ে।
➠ লেখক বলেছেন, নদী সাগরে পতিত হয়, কিন্তু তার ছবি আমরা প্রতিদিন দেখতে পাই না। বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানোর ছবি আমরা প্রত্যক্ষ দেখতে পাই। কেননা, বৃক্ষ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে অনবরত নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে। বৃক্ষের পরিবর্তনকে ঘরে বসেই মানুষ দেখতে পায়।

১৯. মানুষের বৃদ্ধিতে নিজের মর্যাদা হয় কেন?
উত্তর: মানুষের বৃদ্ধিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে বলে সে মনের মতো বিকশিত হতে পারে, আর এখানেই মানুষের বৃদ্ধিতে মর্যাদাবোধ হয়।
➠ আমরা জানি, বৃক্ষ প্রকৃতির নিয়মেই বাড়ে, ফুল ফোটায়, ফসল ফলায়। তাদের বন্ধির ওপর নিজেদের কোনো হাত নেই। কিন্তু মানুষের বৃদ্ধির ওপর নিজেদের হাত আছে। মানুষের বৃদ্ধি কেবল দৈহিক নয়, আত্মিকও বটে। মানুষকে আত্মা সৃষ্টি করে নিতে হয়, তা তৈরি পাওয়া যায় না। মানুষ তার শিক্ষা দিয়ে, বোধ শক্তি দিয়ে নিজেকে তৈরি করে।

২০. কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন কেন?
উত্তর: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীকে মনুষ্যত্বের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছেন কারণ নদীর গতি ও প্রবাহে তিনি মনুষ্যত্বের বেদনা ও সংগ্রামের চিত্র দেখতে পেয়েছেন।
➠ নদী যেমন বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে চলে, তেমনি মানুষের জীবনেও নানা প্রতিবন্ধকতা ও দুঃখ থাকে, যেগুলোকে পেরিয়ে মানুষ তার লক্ষ্যকে অর্জন করে। নদীর প্রবাহ থেমে থেমে চলে, এবং তার পথের মধ্যে থাকে সংগ্রাম, কষ্ট, এবং আত্মবিশ্বাস। রবীন্দ্রনাথ এই ধারাকে মানুষের জীবনের সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে চলা ও অবিচল থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

২১. মানুষের জন্য সমাজের কাজ কী? বুঝিয়ে বলো।
উত্তর: মানুষের জন্য সমাজের কাজ হলো টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি বড় করে তোলা এবং বিকশিত জীবনের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা।
➠ মানুষ পৃথিবীতে আর দশটি প্রাণীর মতো নয়। তাকে বিকশিত জীবনে উত্তীর্ণ হতে হলে সমাজের অনেক রকম দায়বদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়। অনুকূল পরিবেশ ব্যতিরেকে মানুষ মানুষের মতো মার্জিত ও পরিশীলিত হয়ে উঠতে পারে না। মানুষকে বাইরে থেকে ও ভেতর থেকে মানুষ হওয়ার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা সমাজের বড় কাজ। তাহলে মানুষ সুন্দর সভ্য সহমর্মী সমাজের সদস্য হয়ে গড়ে উঠবে। এ কাজটি মানুষের জন্য করে দিতে সমাজ অঙ্গীকারাবদ্ধ।

২২. রবীন্দ্রনাথের সাথে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দর্শনের পার্থক্য হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের সাথে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দর্শনের চেতনাগত দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে।
➠ রবীন্দ্রনাথ জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন। যেখানে ভাঙা-গড়া আছে, উচ্ছলতা আছে। সে ক্ষতিও করে, উপকারও করে। কিন্তু মোতাহের হোসেন চৌধুরী বৃক্ষের কাছে মানবজীবনের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। বৃক্ষ শুধুই মঙ্গলের জন্য, অমঙ্গলের জন্য নয়। নদীতে মঙ্গল ও অমঙ্গল এবং আত্মবিসর্জন আছে, আত্ম-উৎকর্ষ নেই, যা বৃক্ষে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। বৃক্ষের মাঝেই মানবজীবনের সার্থকতার পূর্ণাঙ্গ চিত্র খুঁজে পাওয়া সম্ভব। জীবনদৃষ্টির ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ও মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মধ্যে তাই দর্শনগত পার্থক্য দেখা যায়।

২৩. বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা, তা নয়।- প্রশান্তিরও ইঙ্গিত। কেন?
উত্তর: বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা, তা নয় প্রশান্তিরও ইঙ্গিত। কারণ বৃক্ষ জীবনের গুরুভার বহন করে অতি শান্ত ও সহিষ্ণুতার সাথে।
➠ ধীরচিত্তে জীবনের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয়। অস্থির হয়ে জীবন চালাতে গেলে পদে পদে বিপদ ঘটতে পারে। এ কারণে জীবনের সমস্ত অর্জন ক্রমাগত ধৈর্য ধরে সাধনা দিয়ে জয় করে নিতে হয়।

২৪. স্বল্পপ্রাণ স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: যারা নিজের জীবনকে সুন্দর করার কথা না ভেবে অন্যের সফলতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে, তারাই স্বল্পপ্রাণ স্থুলবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।
➠ সমাজই বসবাসের উত্তম স্থান। অথচ এ স্থানে এমন কিছু লোক বাস করে যারা সৌন্দর্য্যের স্পর্শ থেকে দূরে থাকে, ফলে অন্যের সফলতার পথে বাধা হয়ে থাকতেই পছন্দ করে। তারাই মূলত স্বল্পপ্রাণ স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
এই যে বিটপি শ্রেণি হেরি সারি সারি-
কি আশ্চর্য শোভাময় যাই বলিহারি।
কেহবা সরল সাধু হৃদয় যেমন,
ফলভারে নত কেহ গুণীর মতন।
এদের স্বভাব ভালো মানবের চেয়ে,
ইচ্ছা যার দেখ দেখ জ্ঞানচক্ষে চেয়ে।
যখন মানবকুল ধনবান হয়,
তখন তাদের শির সমুন্নত রয়।
কিন্তু ফলশালী হলে এই তরুগণ,
অহংকারে উচ্চ শির না করে কখন।
ফলশূন্য হলে সদা থাকে সমুন্নত,
নীচ প্রায় কার ঠাঁই নহে অবনত। [তরু : কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার]

ক. মোতাহের হোসের চৌধুরী কোন আন্দোলনের কাণ্ডারি ছিলেন?
খ. কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন কেন?
গ. ‘বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়’- প্রবন্ধের এ উক্তিটি উদ্দীপকে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ’ এবং “জীবন ও বৃক্ষ” প্রবন্ধের ‘বৃক্ষ’ কি একসূত্রে গাঁথা?’- তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
ক. মোতাহের হোসেন চৌধুর ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামে এক যুগান্তকারী আন্দোলনের কাণ্ডারি ছিলেন।
খ. নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলেই কবি নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন।
➠ কোনো মানুষ কেবল জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ হয় না; তাকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। এই মনুষ্যত্ব অর্জন মোটেই সহজ কোনো বিষয় নয়। নদীকে যেমন বাঁকে-বাঁকে বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে চলতে হয়, তেমনি অনেক বাধা ডিঙিয়ে মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। মনুষ্যত্ব অর্জনের সঙ্গে নদীর পথ পেরোনোর বিষয়টি অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ বলেই কবি নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন।

গ. ‘বৃক্ষ ফলবান হলে নতমস্তিষ্কে থাকে আর ফলশূন্য হলে থাকে সদা সমুন্নত; যা মানজীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য’ এভাবেই উদ্দীপকে আলোচ্য উক্তিটি প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ তার মনুষ্যত্বের জন্য সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে বিবেচ্য। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। বিত্তশালী হলেও অহংকার না করে সকলের সঙ্গে বৃক্ষের জীবনকে সাদৃশ্যময় করে তোলা হয়েছে উদ্দীপকে। সরল সাধু বা গুণীরা মূলত ফলভারে নত বৃক্ষের মতোই। ফলশালী বৃক্ষ যেমন অহংকার না করে নতশিরে থাকে মানুষের জীবনার্থও তাই হওয়া উচিত। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেও প্রাবন্ধিক একই ধরনের মন্তব্য করে বলেছেন বৃক্ষের দিকে তাকালেই মানবজীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়। কেননা, বৃক্ষ কেবল মাটি থেকে রস গ্রহণ করে নিজের প্রয়োজনই মেটায় না, তাকে অপরের জন্য ফুল আর ফলও ধরাতে হয়। এভাবে পরার্থে জীবনকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়েই জীবনের তাৎপর্য অনুভূত হয়। উদ্দীপকের কবিতাতেও একইভাবে বিত্তশালী হয়েও অহংকার না করে নত থাকায় জীবনের তাৎপর্যকে উপলব্ধির বিষয়টি এসেছে। এভাবেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ’ এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের ‘বৃক্ষ’ একই সূত্রে গাঁথা।
➠ মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যত্ব অর্জন করে পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। বৃক্ষও নিজেকে পরিপুষ্ট করে অন্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য। এ জন্যই ‘বৃক্ষ’ কবিতা এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মানুষকে বৃক্ষ থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
➠ পরার্থে আত্মনিবেদিত সুকৃতিময় সার্থক বিবেকবোধসম্পন্ন মানবজীবনের মহত্তম প্রত্যাশা থেকেই লেখক মানুষের জীবন কাঠামোকে বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন বৃক্ষের বিকাশ, পরিপূর্ণতা ও সার্থকতার পেছনে রয়েছে তার নীরব সাধনা। বৃক্ষ ফুলে-ফলে পরিপূর্ণতা পেয়ে সে সব কিছু অন্যকে দান করে সার্থকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। মানবজীবনের স্বার্থকতার জন্যও তার নিজের সাধনা তেমনই হওয়া উচিত বলে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকের কবিতাতেও একইভাবে মানবজীবনের উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত সরলমনা সাধু মানুষদের তুলনা করা হয়েছে ফলভারে নত বৃক্ষের সঙ্গে। বলা হয়েছে, বৃক্ষের যে, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সেই বৈশিষ্ট্যে মানুষকে গুণান্বিত হতে। আর এতেই রয়েছে জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।
➠ উদ্দীপকের কবিতায় যেমন প্রকৃত মানবজীবনের সঙ্গে বৃক্ষকে তুলনা করা হয়েছে, ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেও একই বিষয় এসেছে। মূলত ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় রচনাতেই মানবজীবনের সঙ্গে বৃক্ষের জীবন সাধনাকে সাদৃশ্যপূর্ণ করা হয়েছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ’ এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে ‘বৃক্ষ’ একই সূত্রে গাঁথা।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ২

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সিরাজের অল্প বয়সে মা মারা যায়। কেউ তাকে আদর-যত্ন করেনি। স্কুলেও তাকে কখনো পাঠায়নি। সে টোকাই ছেলেদের সাথে ঘুরে-ফিরে বড় হয়ে উঠেছে। সে টাকা পেলে বোমাবাজি, খুনখারাবি সবকিছুই করতে পারে। সে পেশিশক্তির পূজারি। সে ভালো মানুষের সংস্রববঞ্চিত, তার কাছে দয়া-মায়া মানসিক গুণাবলি অনর্থক বিষয়। প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত একটা দানব ছাড়া সে আর অন্য কিছু নয়।

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম কত সালে?
খ. মানুষের জন্য সমাজের কাজ কী? বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের কোন অংশের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. ‘প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও দানব প্রকৃতির হয়।’- মূল্যায়ন করো।

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯০৩ সালে।
খ. মানুষের জন্য সমাজের কাজ হলো টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি বড় করে তোলা এবং বিকশিত জীবনের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা।
➠ মানুষ পৃথিবীতে আর দশটি প্রাণীর মতো নয়। তাকে বিকশিত জীবনে উত্তীর্ণ হতে হলে সমাজের অনেক রকম দায়বদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়। অনুকূল পরিবেশ ব্যতিরেকে মানুষ মানুষের মতো মার্জিত ও পরিশীলিত হয়ে উঠতে পারে না। মানুষকে বাইরে থেকে ও ভেতর থেকে মানুষ হওয়ার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা সমাজের বড় কাজ। তাহলে মানুষ সুন্দর সভ্য সহমমীর্ সমাজের সদস্য হয়ে গড়ে উঠবে। এ কাজটি মানুষের জন্য করে দিতে সমাজ অঙ্গীকারাবদ্ধ।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত মানুষের অমানবিক কদর্য চরিত্রের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
➠ মানুষকে মানুষ হওয়ার জন্য সমাজে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। প্রেম-প্রীতি-স্নেহ-মমতা ইত্যাদি মানবিক গুণ মানুষ সুষ্ঠু- সুস্থ সামাজিক পরিবেশ থেকে লাভ করে। প্রেম-স্নেহবঞ্চিত মানবশিশুকে আকারে মানুষের মতো দেখালেও কখনো কখনো তার ভেতর অন্যরকম হিংস্র পশু জন্ম নেয়।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, শৈশবে মাতৃহারা, সমাজের আদর-স্নেহ-মমতাবঞ্চিত সিরাজ টাকার বিনিময়ে সব ধরনের অপকর্ম দ্বিধাহীনচিত্তে করে। সমাজ তার ওপর নজর দেয়নি। সমাজ তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রথমাংশে দেখা যায়, স্বপ্রাণ বুদ্ধি ও জবরদি¯—প্রিয় মানুষে সংসার তথা সমাজ ভরে ওঠে। তারা সমাজকে এবং সমাজের মানুষকে পদে পদে বিঘ্ন সৃষ্টি করে পেছনে ঠেলে দেয়। তারা অন্যের জীবনের সার্থকতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রেম ও সৌন্দর্যবঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও বিকৃতবুদ্ধির হয়। তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এ কথাই উদ্দীপকে একই সুরে ধ্বনিত হয়েছে।

ঘ. ‘প্রেম-সৌন্দর্যবঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও দানব প্রকৃতির হয়।’- উক্তিটি যথাযথ।
➠ মানুষকে মানুষে পরিণত হতে হলে সমাজের ভালো মানুষ থেকে তার দেহ-মনে প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ আরোপ করতে হয়। তা না হলে সমাজে আদরবঞ্চিত-অবহেলিত শিশুরা মানুষ নামের অমানুষরূপে বেড়ে ওঠে। উদ্দীপকেও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে সে কথারই বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।
➠ উদ্দীপকের সিরাজ প্রেম-সৌন্দর্যের স্পর্শবঞ্চিত শিশু। জন্মের পর তার মা মারা যায়। সে সমাজের কাছে উপেক্ষার শিকার হয়। টোকাই শিশুদের সাথে বেড়ে ওঠে। কোনোরকম ভালো শিক্ষা সে জীবনে পায়নি। সে টাকার জন্য বোমাবাজি, খুন-খারাবি সবকিছুই দ্বিধাহীনভাবে করতে পারে। সে পেশিশক্তির পূজারি। তার কাছে দয়া-মায়া অনর্থক বিষয়। সে একটি মানবরূপী দানবে পরিণত হয়েছে। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রথম অংশ বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে এই মানুষের অমানুষ হয়ে ওঠার দিকটি আলোকপাত করা হয়েছে।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বর্ণনায় মানুষের বেড়ে ওঠার প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতার কথা যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় বলা হয়েছে। প্রেম-সৌন্দর্যের স্পর্শবঞ্চিত মানুষরাই নিষ্ঠুর ও বিকৃতবুদ্ধির হয়ে থাকে। তারা দানবের মত আচরণ করে। উদ্দীপকেও এ কথা সাদৃশ্যপূর্ণভাবে ফুটে উঠেছে, তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। উদ্দীপকের সিরাজ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাই যথাযথ।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মামুন পড়ার টেবিলের পাশের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। সে দেখতে পায় একটি ডালিম গাছ। তাতে লাল লাল ফুলের সমারোহ। এ গাছের চারাটি তিন বছর আগে বৃক্ষমেলা থেকে কিনে এনেছিল। মাত্র কয়েকটি বছরের মধ্যে গাছটি ফুল ফল দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। মামুন ভাবে গাছটি মাটির রস টেনে, আর বাতাস থেকে শক্তি সংগ্রহ করে নিজেকে বড় করে তুলেছে। সে তো ফল উৎপাদন করে নিজে খাবে না। পাখি খাবে, মানুষে খাবে। গাছটির জন্ম তাহলে অপরের সেবায়, নিজের জন্য নয়। সে নিজের দিকে তাকায়, তার পড়ালেখাও তো নিজের জন্য নয়, অন্যের তথা মানবকল্যাণের জন্য। সে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে সাধক পুরুষদের, সৃজনশীল শিল্পীদের মানবকল্যাণের কথা ভাবে।

ক. আত্মাকে মধুর ও পুষ্ট করা হয় কার উপভোগের জন্য?
খ. রবীন্দ্রনাথের সাথে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দর্শনের পার্থক্য হওয়ার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের মামুনের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির যে মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মূল সুর অভিন্ন”-মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

ক. স্রষ্টার উপভোগের জন্য।
খ. রবীন্দ্রনাথের সাথে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দর্শনের চেতনাগত দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে।
➠ রবীন্দ্রনাথ জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন। যেখানে ভাঙা-গড়া আছে, উচ্ছলতা আছে। সে ক্ষতিও করে, উপকারও করে। কিন্তু মোতাহের হোসেন চৌধুরী বৃক্ষের কাছে মানবজীবনের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। বৃক্ষ শুধুই মঙ্গলের জন্য, অমঙ্গলের জন্য নয়। নদীতে মঙ্গল ও অমঙ্গল এবং আত্মবিসর্জন আছে, আত্ম-উৎকর্ষ নেই, যা বৃক্ষে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। বৃক্ষের মাঝেই মানবজীবনের সার্থকতার পূর্ণাঙ্গ চিত্র খুঁজে পাওয়া সম্ভব। জীবনদৃষ্টির ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ও মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মধ্যে তাই দর্শনগত পার্থক্য দেখা যায়।

গ. উদ্দীপকের মামুনের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির গভীর মিল রয়েছে।
➠ প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ দর্শন থাকে। পৃথিবীতে যেমন মানুষের চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে অনুভব ও দৃষ্টিভঙ্গির তেমনি পার্থক্য রয়েছে। কখনো কখনো আবার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মিলও খুঁজে পাওয়া যায়। তদ্রƒপ উদ্দীপকের মামুনের এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের জীবনদৃষ্টির গভীর মিলের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।
➠ উদ্দীপকের মামুন ডালিম গাছের বেড়ে ওঠা, তাতে ফুল আসা, ফল ধরা ইত্যাদির মধ্যে বৃক্ষের সার্থকতা খুঁজে দেখেছে। তাতে সে দেখতে পেয়েছে বৃক্ষের জীবন তার নিজের জন্য নয়, সবটাই অপরের সেবায় উৎসর্গীকৃত। মামুন নিজের জীবনকেও সেখানে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে। মহাপুরুষ, সাধক, সৃজনশীল শিল্পীরা শিল্পকর্ম নিজের জন্য নয়, অন্যের আনন্দের জন্য সৃষ্টি করেন। যেমনটা ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখক জীবনদৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। তুলনামূলক রবীন্দ্রদর্শন ও তাঁর ব্যক্তিদর্শনের যুক্তিতর্কের বিচারে বৃক্ষের মধ্যে মানবজীবনের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। প্রবন্ধের লেখক ও উদ্দীপকের মামুনের জীবনবোধ ও মানবজীবনের সার্থকতার মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। তাই উদ্দীপকের মামুনের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মূলসুর অভিন্ন।”-মন্তব্যটি যথার্থ।
➠ মানবজীবনের সার্থকতা ধেয়ে চলার মধ্যে নয়। নীরব ও গভীর সাধনার মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠা ও নিজেকে পরিশীলিত ও মার্জিত মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের সেবায় নিবেদনের মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। বৃক্ষ যেমন নীরবে স্থির হয়ে শূন্য থেকে আলো-বাতাস, আর মাটি থেকে শক্তি সংগ্রহ করে অপরের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যে তার জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পায়, মানবজীবনও তদ্রƒপ অপরের জন্য। নিজের জন্য মানবের নিজের জীবন ও সাধনা নয়। উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে এই মূল চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।
➠ উদ্দীপকের মামুন পড়ার টেবিলের পাশে জানালার ওপারে, ডালিম গাছের মধ্যে সেবা ও জীবনের সার্থকতা দেখতে পেয়েছে। মহামানব ও সৃজনশীল মানুষের সাধনাও তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, তা শুধুই অপরের সেবায় নিবেদিত, অন্যের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত। ডালিম গাছের ফুল-ফল পাখির জন্য মানুষের সেবা বা খাদ্যের জন্য, ডালিম গাছের স্বার্থে নয়। মামুনের লেখাপড়াও তার নিজের জন্য নয়, মহামানবদের মতোই সব মানুষের সাধনা অন্যের উপকারের জন্য নিবেদিত। এই আত্মোউৎসর্গীকৃত সুর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মধ্যে বাস্তব ও যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় বিস্তৃত পরিসরে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপক ও প্রবন্ধের মৌলবাণী ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মানবজীবনের সার্থকতার কথা যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। বৃক্ষ ক্রমাগত সাধনার মধ্যদিয়ে পূর্ণতা লাভ করে এবং তার এ পূর্ণতা অপরের সেবায় উৎসর্গীকৃত।
➠ উদ্দীপকে মামুনের কথা ও দৃষ্টিতে সে একই জীবনের কল্যাণকামী সার্থকতার কথা একসুরে ধ্বনিত হয়েছে। তাই উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মূলসুর অভিন্ন বলাই যুক্তিসঙ্গত।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শিল্পী হাশেম খান শিল্পকলার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ও বিশ্বের ভাষা সৃষ্টির মধ্যে ঐক্য খুঁজে ফিরেছেন। বিশ্বচরাচরের সবকিছুই এক সুতোয় বাঁধা, এক সুরে যেন কথা কয় নীরব ভাষায়। আর তা তিনি যেন শিল্পীর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেয়েছেন। শিশুদের তিনি খুবই ভালোবাসতেন, সাহিত্য শিল্পকলার সাধনার মধ্যদিয়ে তিনি একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর মতে, মানুষকে উদার প্রেমিক, রুচিশীল মানুষ বানাতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই।

ক. সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি একটা কেমন জিনিস?
খ. বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা, তা নয়-প্রশান্তিরও ইঙ্গিত। কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সাথে কীভাবে বৈসাদৃশ্য?
ঘ. “রুচিশীল মানুষ সৃষ্টিতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই।”-মন্তব্যটি যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন কর।

ক. সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি একটা বড় জিনিস।
খ. বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা, তা নয় প্রশান্তিরও ইঙ্গিত। কারণ বৃক্ষ জীবনের গুরুভার বহন করে অতি শান্ত ও সহিষ্ণুতার সাথে। ধীরচিত্তে জীবনের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয়। অস্থির হয়ে জীবন চালাতে গেলে পদে পদে বিপদ ঘটতে পারে। এ কারণে জীবনের সমস্ত অর্জন ক্রমাগত ধৈর্য ধরে সাধনা দিয়ে জয় করে নিতে হয়।
➠ মূলত কেবল বৃক্ষের কাছেই সেই শিক্ষা পাওয়া যায়। সে কারণেই বলা হয়েছে, বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা, তা নয় প্রশান্তিরও ইঙ্গিত।

গ. ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনকে তুলনা করেছেন বৃক্ষের সঙ্গে। তিনি দেখিয়েছেন বৃক্ষের বিকাশ, পরিপূর্ণতা ও সার্থকতার পেছনে রয়েছে তার নীরব সাধনা। বৃক্ষ যেমন করে ফুলে ফলে পরিপূর্ণতা পায়, আর সে সব অন্যকে দান করে সার্থকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে, মানবজীবনের সার্থকতার জন্য তার নিজের সাধনাও তেমনি হওয়া উচিত বৃক্ষের মতো।
➠ উদ্দীপকের শিল্পী হাশেম খান শিল্পকলার মধ্যদিয়ে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ও বিশ্বের ভাষা তথা সকল সৃষ্টির মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে ফিরেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে কল্যাণ চিন্তা তাঁর ভেতর জেগে উঠতো। শিল্লী খান সাহেব যেহেতু শিল্পকলার লোক, তিনি শিল্পকলার চর্চার মধ্যদিয়ে মানবকল্যাণ ও বিশ্বের কল্যাণ চিন্তা করেছেন।
➠ আর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখক যেহেতু সাহিত্যিক, তিনি সাহিত্য ও শিল্পকলা উভয়েরই চর্চার মধ্যদিয়ে মানবসমাজকে এবং সভ্যতাকেও মানবিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। উদ্দীপক ও প্রবন্ধের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত সামান্য পার্থক্য দেখা যায়।

ঘ. “রুচিশীল মানুষ সৃষ্টিতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই।”-মন্তব্যটি খুবই সঙ্গতিপূর্ণ।
➠ মানুষের সুকুমার বৃত্তির উৎকর্ষ সাধনের জন্য শিল্পকলা চর্চা আবশ্যক। শিল্পকলা চর্চার মধ্যে আনন্দ আছে। সে আনন্দের স্পর্শে একজন মানুষ অনুভূতিশীল, সচেতন ও বিবেকবান হয়ে ওঠার সুযোগ লাভ করে। উদ্দীপকে ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে শিল্পকলা চর্চার মধ্যদিয়ে মানবিক উত্তরণের দিকটির কথা অভিন্ন সুরে ফুটে উঠেছে।
➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, শিল্পী সুলতান শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে মানুষকে মানবপ্রেম, দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিশ্ব চরাচরের সবকিছুর মধ্যদিয়ে তিনি এক অভিন্ন ঐক্য লক্ষ অর্জন করেছেন। শিশুদের ভালোবাসা দিয়ে চিত্রকলা শিক্ষা দিয়ে রুচিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে সমাজকল্যাণ ও দেশ সেবার স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে মানুষকে উদার, প্রেমিক, রুচিশীল মানুষ বানাতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই। আর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে সেই কথাই একটু বিস্তৃত পরিসরে প্রকাশ পেয়েছে। এখানে শিল্পকলার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জীবনের সার্থকতার জন্য বৃক্ষের কাছ থেকে সাধনার শিক্ষা নিয়ে সাহিত্য-শিল্পকলার চর্চার মধ্যদিয়ে মার্জিত প্রেমিক ও ধার্মিক মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণ মানব হতে উদাত্ত আহ্বানের পাশাপাশি পরিপক্ব মানসিকতা গড়ে তোলার ও স্রষ্টার সৃষ্টি উপভোগের উপাচার হিসেবে উপস্থাপনের কথা বলা হয়েছে।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মানবজীবনের সার্থকতা অর্জনের জন্য বৃক্ষের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ‘জীবনের গুরুভার বহনের’ কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকেও শিল্পকলা চর্চার বিষয় গুরুত্বের সাথে অভিন্ন সুরে ফুটে উঠেছে। তাই উদ্দীপক ও প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে বলা যায়, রুচিশীল মানুষ সৃষ্টিতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সমাজ মানুষের প্রধান আশ্রয়স্থল। এখানে সবার সাথে মিলেমিশে বাস করতে হয়। কিন্তু সমাজে এমন কিছু মানুষ থাকে, যারা সবসময় ভালো কাজের সমালোচনা করে ব্যক্তির বিকাশকে স্তিমিত করে দেয়। ফলে এ সমস্ত ব্যক্তি সফলতার পথে প্রধান অন্তরায়। সৎ চিন্তা ও মহৎ গুণাবলির অভাবই তাদের মনকে সংকীর্ণ করে রেখেছে।

ক. স্বল্পপ্রাণ, স্থূলবুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষে কী পরিপূর্ণ?
খ. স্বল্পপ্রাণ স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের কোন দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবের ধারক নয়।”-মন্তব্যটির সত্যাসত্য নিরূপণ কর।

ক. স্বল্পপ্রাণ, ¯ূ’লবুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষে সমাজ পরিপূর্ণ।
খ. যারা নিজের জীবনকে সুন্দর করার কথা না ভেবে অন্যের সফলতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে, তারাই স্বল্পপ্রাণ ¯ূ’লবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।
➠ সমাজই বসবাসের উত্তম স্থান। অথচ এ স্থানে এমন কিছু লোক বাস করে যারা সৌন্দর্যের স্পর্শ থেকে দূরে থাকে, ফলে অন্যের সফলতার পথে বাধা হয়ে থাকতেই পছন্দ করে। তারাই মূলত স্বল্পপ্রাণ ¯ূ’লবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।

গ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের স্বল্পপ্রাণ স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
➠ বিচিত্র মানুষের সমন্বয়ে সমাজ গড়ে ওঠে। তাই আচরণেও ভিন্নতা থাকে। একশ্রেণির মানুষ থাকে, যারা অন্যের বিকাশের পথে প্রধান অন্তরায় সৃষ্টি করে। এসব মানুষকে এড়িয়ে চলা উচিত।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয় সমাজের বিশেষ একশ্রেণির মানুষের পরিচয়বাহী, যারা সবসময় কল্যাণের পথে অন্তরায়। নিজেদের অহমিকাবোধে অন্ধ হয়ে অন্যের বিকাশকে হেয় করে থাকে। একইরূপে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে স্বল্পপ্রাণ, স্থূলবুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। যারা সবসময় অন্যের বিকাশকে ছোট করে দেখে। তারা অন্যের সফলতার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। মূলত ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের এ বিষয়টিই উদ্দীপকে প্রতিনিধিত্ব করে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবের ধারক নয়- মন্তব্যটি সত্য।
➠ বৃক্ষ পরোপকারের এক অনন্য আদর্শ। এটি নীরব সাধনায় ফল ও ফুল দিয়ে পরের কল্যাণ করতে পারলেই নিজেকে সার্থক মনে করে। বৃক্ষের এ অনিন্দ্য সুন্দর আদর্শ মানুষের জীবনে প্রতিফলিত হলে সমাজে অনাবিল শান্তি বিরাজ করবে।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়ে সমাজের স্বল্পপ্রাণ স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। যারা সবসময় অন্যের সাফল্যের পথে বড় বাধা হয়ে থাকে। নিজেদের অত্যধিক অহমিকাবোধে মহত্ত্বের আদর্শ তাদের স্পর্শ করতে পারে না। অন্যদিকে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। তাছাড়াও প্রবন্ধে বৃক্ষের আদর্শিক জীবন বর্ণিত হয়েছে। এখানে বর্ণিত হয়েছে নদীর গতির সাথে মানবজীবনের গতির পার্থক্য।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত আলোচনায় শধু স্বল্পপ্রাণ ¯ূ’লবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চিত্র ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে ‘জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধটিতে এ বিষয়টিই একমাত্র বিষয় হয়ে প্রকাশ পায়নি। বরং অন্যান্য বিষয় থাকার কারণে বলা যায়, উদ্দীপকে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না। মন্তব্যটির যথার্থতা রয়েছে।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আজিম সাহেব তাঁর বাড়ির চারপাশে অনেক বৃক্ষরোপণ করেছেন। তিনি বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। বিভিন্ন গাছে যখন ফুল ফোটে, ফল হয়, তখন তিনি আনন্দ খুঁজে পান। তিনি প্রকৃতির মধ্যেই জীবনের সার্থকতা খুঁজে নেন। ক. কীসের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়?
খ. ‘সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি এক বড় জিনিস’-উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের আজিম সাহেবের মানসিকতার সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি কি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রতিনিধিত্ব করছে? যুক্তিসহ তোমার মতামত দাও।

ক. বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়।
খ. সাধনা না করলে প্রাপ্তির সাধ পাওয়া কঠিন। তাই সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি এক বড় জিনিস।
➠ বৃক্ষ আমাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে। নদী আপন গতিতে চলতেই থাকে। এতে কোনো ধীরস্থির ভাব নেই, যা আমরা বৃক্ষের মধ্যে দেখতে পাই। বৃক্ষের সাধনায় আমরা ফুল-ফল পাই। নদীর সাগরে পতিত হওয়ার প্রাপ্তি স্পষ্ট নয়, কিন্তু বৃক্ষের প্রাপ্তি আমাদের চোখের সামনেই ছবির মতো ফুটে ওঠে।

গ. উদ্দীপকের আজিম সাহেবের মানসিকতার সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধ অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ উদ্দীপকের আজিম সাহেব বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। তিনি গাছপালা পছন্দ করেন। তার বাড়ির চারপাশে অনেক গাছ লাগিয়েছেন। বিভিন্ন গাছে যখন ফুল ফোটে, ফল ধরে, তখন তিনি অনেক খুশি হন এবং আনন্দিত হন। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন বলে তিনি প্রকৃতির মধ্যে, বৃক্ষের মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেও মোতাহের হোসেন চৌধুরী বৃক্ষের জয়গান গেয়েছেন। বৃক্ষের মধ্যে তিনি জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানোর মধ্যে বৃক্ষের সাধনার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বৃক্ষের নীরব সাধনায় আমরা আমাদের জীবনের সার্থকতা খুুঁজে পাই।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রতিনিধিত্ব করছে।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বৃক্ষের মাধ্যমে আমাদের জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধির বিষয়টি ফুটে উঠেছে। লেখক বৃক্ষের নীরব সাধনার মাধ্যমে প্রাপ্তির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বৃক্ষের কাছ থেকেই আমরা সাধনার মাধ্যমে প্রাপ্তির ছবি দেখতে পাই। নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার যে গান শোনায়, তা আমাদেরকে অনুভূতি দিয়ে, চিন্তা-চেতনা দিয়ে বুঝে নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে হয়।
➠ উদ্দীপকেও আজিম সাহেব বৃক্ষের মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পান। প্রকৃতিই তাঁকে জীবনের শান্তির পথ দেখায়। মানুষের অকল্যাণ সাধনে ব্যস্ত অহংকারী মানুষরা শুধু উন্নয়নের পথে বাধাই সৃষ্টি করে। মানুষকে ভালোবাসা যেন তাদের স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। সৌন্দর্যের মধ্যেও তারা অসুন্দর খুঁজে বেড়ায়। লেখক এদের জায়গায় বড় মনের মানুষদের আনার কথা বলেছেন- যাদের মন হবে বড় উদার, যারা মানুষের কল্যাণে বা সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করবে। আর এ জন্য বৃদ্ধের জীবনের গতি ও বিকাশকে উপলদ্ধি করলেই আমরা আমাদের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাব।
➠ সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের আজিম সাহেবের বৃক্ষপ্রেম ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেরই একটি অংশ মাত্র। তাই উদ্দীপকটি প্রবন্ধের প্রতিনিধিত্ব করে।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জহির সাহেব একজন ব্যাংকার। তার স্ত্রী একজন গৃহিণী; শৌখিনতার জন্য তিনি বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ লাগান। কিন্তু জহির সাহেব গাছ পছন্দ করেন না। তিনি গাছপালাকে আবর্জনা মনে করেন। ক. নদী কোথায় পতিত হয়?
খ. ‘বৃক্ষের সার্থকতার ছবি যত সহজে উপলব্ধি করতে পারি, নদীর সার্থকতার ছবি তত সহজে উপলব্ধি করা যায় না’- বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
গ. উদ্দীপকের জহির সাহেবের মানসিকতার সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্রভাবকে নয়, বিশেষ একটা দিককে তুলে ধরেছে।” - যুক্তিসহ প্রমাণ কর।

ক. নদী সাগরে পতিত হয়।
খ. ‘বৃক্ষের সার্থকতার ছবি যত সহজে উপলব্ধি করতে পারি, নদীর সার্থকতার ছবি তত সহজে উপলব্ধি করা যায় না’- কথাটি বলতে লেখক বৃক্ষের সাধনার কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
➠ মানুষের সাধনায় যে ধীরস্থির ভাব দেখতে পাওয়া যায়, তা বৃক্ষের সাধনা তেও পাওয়া যায়। অনবরত ছুটে চলা মানুষের সাধনা হওয়া উচিত নয়। বৃক্ষের মধ্যে গোপন ও নীরব সাধনা অভিব্যক্ত, নদীতে নয়। নদীর সাগরে পতিত হওয়ার ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না, কিন্তু বৃক্ষের ফুল ফোটানো ও ফল ধরানোর ছবি আমরা প্রতিদিন দেখতে পাই। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে বৃক্ষ সবসময় নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে।

গ. উদ্দীপকের জহির সাহেবের মানসিকতার সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু একেবারে বিপরীতধর্মী। তবে লেখক এ প্রবন্ধে এক ধরনের মানুষের কথা উলে¬খ করেছেন, যারা বিকৃত চিন্তাধারার।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী বৃক্ষের গোপন ও নীরব সাধনার কথা উল্লে¬খ করে আমাদের আত্মার বৃদ্ধির কথা বলেছেন। বৃক্ষের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের সার্থকতা সহজে উপলব্ধি করতে পারি। বৃক্ষ অনবরত নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে আমাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। আর তা থেকে আমরা জীবনের উন্নতির, সার্থকতার শিক্ষা নিতে পারি।
➠ উদ্দীপকে জহির সাহেব ব্যাংকে চাকরি করেন। তার গৃহিণী স্ত্রী শৌখিন বলে বাড়িতে নানা ধরনের ফুল ও ফলের গাছ লাগান। কিন্তু তার স্বামী জহির সাহেব গাছপালা অপছন্দ করেন। গাছপালাকে তিনি আবর্জনা মনে করেন। কিন্তু ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে লেখক বৃক্ষকে সার্থকতার প্রতীক মনে করেন। বৃক্ষ নীরব ভাষায় আমাদের সার্থকতার গান শোনায়।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্রভাবকে নয়, বরং বিশেষ একটা দিককে তুলে ধরেছে- উক্তিটি যৌক্তিক।
➠ উদ্দীপকে বৃক্ষের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। জহির সাহেব গাছপালা একেবারেই অপছন্দ করেন। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে লেখক বৃক্ষের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বৃক্ষ যে জীবনের সার্থকতার প্রতীক তা তুলে ধরেছেন।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে লেখক স্থলবুদ্ধি, স্বল্পপ্রাণ ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। এরা মানুষের অপকার করে, অনিষ্ট চিন্তা করে, যা অনেকটা জহির সাহেবের মানসিকতাকেই সামনে নিয়ে আসে। তাদের অন্তরে প্রেম নেই, যারা বৃক্ষকে, প্রকৃতিকে ভালোবাসে না। তারা সত্যিকার অর্থে অমানুষ। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে লেখক বৃক্ষের নীরব সাধনার কথা বলেছেন। বৃক্ষের কাছ থেকে আমরা জীবনসাধনার শিক্ষা লাভ করি, আত্মার বৃদ্ধির শিক্ষা লাভ করি। বৃক্ষ আমাদের জীবনের সঠিক পথ দেখায়, জীবনের প্রশান্তির উপায় বলে দেয়।
➠ কিন্তু উদ্দীপকে জহির সাহেব বৃক্ষকে অপছন্দ করেন। তিনি বৃক্ষকে আবর্জনা মনে করেন । গাছপালার প্রতি তার নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকে, যা ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বিপরীত দিক প্রকাশ করে।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শহরের ছেলেমেয়েরা অনেক গাছই চেনে না। তার গাছের সুশীতল বাতাস কিংবা গাছের ফুল বা ফলের সৌন্দর্য দেখতে পায় না। তারা সারাক্ষণই টিভিতে কার্টুন ও অন্যান্য অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকে। গাড়িঘোড়ার চাপ ও যান্ত্রিকতার কারণে তাদের মানসিকতাতেও যান্ত্রিকতার প্রভাব দেখা যায়। ক. কীসের ব্যাপারে প্রাপ্তি বড় জিনিস?
খ. ‘বৃক্ষে প্রাপ্তি ও দান’-কথাটি লেখক কেন বলেছেন?
গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তুর সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রতিনিধিত্ব করে”-মন্তব্যটির যৌক্তিকতা প্রমাণ কর।

ক. সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি বড় জিনিস।
খ. ‘বৃক্ষে প্রাপ্তি ও দান’-কথাটি লেখক বলেছেন বৃক্ষের সাধনার সার্থকতা বিষয়টি বোঝাতে।
➠ বৃক্ষ অনবরত আমাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে নতি, শান্তি ও সেবার বাণী প্রচার করে। নদীর সাগরে পতিত হওয়া দৃশ্য আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না। কিন্তু বৃক্ষ আমাদের চোখের সামনে ফুল ফোটায়, ফল জন্মায়, অর্থাৎ আমাদের ফল দান করে। বৃক্ষের প্রাপ্তি চোখের সামনে আমরা দেখতে পাই, বৃক্ষ থেকেই আমরা জীবন-সাধনার শিক্ষা নিই।

গ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু থেকে ভিন্ন। তবে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে প্রেম ও ভালোবাসার অভাবে স্থলবুদ্ধি, স্বল্পপ্রাণ ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষের চরিত্র উপস্থাপন করেছেন লেখক।
➠ উদ্দীপকে শহরের বাচ্চাদের মানসিকতায় বিপর্যস্ত ছেলেমেয়েদের রূপের কথা বলা হয়েছে। শহরের ছেলেরা বন্দি জীবনযাপন করে বলে তারা প্রকৃতির খোলা পরিবেশ পায় না, বৃক্ষের যে অপরূপ সৌন্দর্য তা দেখতে পায় না। ঘরের ভেতর বসে তারা শুধু টিভিতে কার্টুন দেখে। যান্ত্রিকজগতের সাথে মিশে যায়। ফলে তাদের মানসিক বিকাশ হয় না। ভবিষ্যতে এ অবস্থা চলতে থাকলে তারাও স্থলবুদ্ধি, স্বল্পপ্রাণ ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষে পরিণত হবে।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বৃক্ষের যে প্রশান্তি ও গুণাগুণ প্রাবন্ধিক উপস্থাপন করেছেন, তা থেকে শহরের ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত হতে দেখা যায়। যানজট ও যান্ত্রিক জটিলতায় শহরের ছেলেমেয়েরা বৃক্ষের প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়। তাদেরকে বৃক্ষের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে হবে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রতিনিধিত্ব করে না। আংশিক দিককে উপস্থাপন করে মাত্র।
➠ উদ্দীপকে শিশুদের নেতিবাচক মানসিক অবস্থা তৈরির কারণ হিসেবে প্রকৃতি থেকে দূরে থাকা, বৃক্ষের অপরূপ সৌন্দর্য এবং বৃক্ষের সাধনার বিষয় থেকে দূরত্বের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী বৃক্ষের জয়গান গেয়েছেন। বৃক্ষের সাধনার মধ্যে আমাদের জীবনের সাধনার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বৃক্ষ আমাদের জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধির বিষয়টি অনুধাবন করতে শেখায়। কূটবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের জায়গায় উদারচিত্তের মানুষেরা বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে সাধনার শিক্ষা নিয়ে জীবনের সার্থকতা লাভ করতে পারে।
➠ উদ্দীপকে যান্ত্রিকরূপের মধ্যে শিশুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের কূটবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের রূপের সাদৃশ্য থাকলেও পুরো প্রবন্ধের বিষয়বস্তু এখানে অনুপস্থিত।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯:

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জামিল সাহেব সুন্দরবন ভালোবাসেন। আর জলিল সাহেব নদী ভালোবাসেন। এ নিয়ে দুই বন্ধুর প্রায়ই ঝগড়া হয়। বৃক্ষের অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে জামিল সাহেব হারিয়ে যান। আর জলিল সাহেব নদীর ঢেউ দেখে পাগল হয়ে যান। জলিল সাহেবের মতে, নদীর গতিতে জীবনের গতি। ক. কীসের পানে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ অন্তরের সৃষ্টিধর্ম উপলব্ধি করেছেন?
খ. তপোবন প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ কেন নদীর মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান?
গ. উদ্দীপকের জামিল সাহেব ও জলিল সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্রভাবকে তুলে ধরেছে”-উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

ক. বৃক্ষের পানে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ অন্তরের সৃষ্টিধর্ম উপলব্ধি করেছেন।
খ. নদীর গতিতে মনুষ্যত্ব দেখতে পান বলে নদীর মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান তপোবন প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ।
➠ বৃক্ষের ফুল ফোটার চেয়ে নদীর গতির মধ্যেই মানুষের বেদনা উপলব্ধি সহজ বলে মনে করেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি মনে করেন, ফুল ফোটা অনেক সহজ প্রক্রিয়া। কিন্তু নদীর গতি সহজ নয়- তাকে অনেক বাধা পেরিয়ে সমুদ্রে গিয়ে মিশতে হয়। নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে মনে করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

গ. উদ্দীপকের জামিল সাহেব ও জলিল সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের রবীন্দ্রনাথ ও মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দৃষ্টিভঙ্গি এক।
➠ উদ্দীপকে জামিল সাহেব সুন্দরবন ভালোবাসেন। তিনি বৃক্ষপ্রেমিক। বৃক্ষের অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে তিনি জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান। আর তার বন্ধু জলিল সাহেব ভালোবাসেন নদী। নদীর ঢেউ দেখলে তিনি পাগল হয়ে যান। নদীর ঢেউয়ের গতিতে তিনি জীবনের গতি খুঁজে পান।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেও রবীন্দ্রনাথ নদীর গতির মধ্যে মনুষ্যত্বের সাদৃশ্য খুঁজে পান। তিনি মনে করেন, নদীর গতিকে অনেক কষ্ট করে, অনেক বাধা পেরিয়ে সাগরে গিয়ে মিশতে হয়। অন্যদিকে, মোতাহের হোসেন চৌধুরী বৃক্ষের মধ্যে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি করেন এবং জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান। তিনি মনে করেন, নদী সাগরে পতিত হওয়ার দৃশ্য আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না, কিন্তু বৃক্ষের ফুল ফোটানো, ফল ধরা-সব আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই। বৃক্ষের নীরব সাধনা আমরা আমাদের অনুভূতি দিয়ে বুঝতে পারি। প্রশ্নোক্ত উক্তিতে যে-কথা বলা হয়েছে তা সঠিক ও যথার্থ।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্রভাবকে তুলে ধরেছে।
➠ উদ্দীপকে জামিল সাহেব ও জলিল সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। দুই বন্ধু প্রায়ই ঝগড়া করেন। কারণ দুজনের পছন্দ ভিন্ন। একজন বৃক্ষকে পছন্দ করেন আর একজন নদীকে।
➠ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ও মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির উপস্থাপনের মধ্যদিয়ে আমরা জীবনের সার্থকতার চিত্র দেখতে পাই। রবীন্দ্রনাথ নদীকে মানুষ্যত্বের প্রতীক ও সার্থকতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলেও মোতাহের হোসেন চৌধুরী বৃক্ষকেই জীবনের সার্থকতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বৃক্ষ আমাদের জীবনে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর শিক্ষা দেয়। নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সাধনার যে গান শোনায় তা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে আমাদের আত্মিক বিকাশ ঘটাই। শুধু দৈহিক বিকাশ নয়, আত্মিক বিকাশ ঘটিয়ে জীবনে সফল হওয়া যায়। আর সে শিক্ষা আমরা বৃক্ষ থেকেই লাভ করি।
➠ বৃক্ষ আমাদেরকে জীবনের গূঢ় অর্থ সম্পর্কে সচেতন হতে সহায়তা করে। আমরা বৃক্ষের দিকে তাকিয়েই জীবন-সাধনার শিক্ষা লাভ করতে পারি। বৃক্ষের শান্তি ও সেবার বাণী থেকে আমরাও মানবকল্যাণের শিক্ষা পাই। আমরা আমাদের জীবনের প্রশান্তির ইঙ্গিত পাই। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে- কথাটি সঠিক।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০:

উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত হৃদয়বান, মানবদরদি কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন। মহান এ নেতার চিন্তা-চেতনায় সবসময় কাজ করতো বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ। তিনি কৈশোর থেকেই বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা। চল্লিশের দশকে এই তরুণ নেতা হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সংস্পর্শে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা।’ ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮-এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান,’ ৭০-এর নির্বাচনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে, সহ্য করতে হয়েছে অমানবিক নির্যাতন।

ক. জীবনের বিকাশ কাদের কাছে বড় হয়ে ওঠে?
খ. প্রাবন্ধিক জীবনের বিকাশ সাধন করতে বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের কোন দিকটির প্রতি নির্দেশ করেছেন? বিশ্লেষণ কর।
ঘ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটিই ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের কাম্য। -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক. সূক্ষ্মবুদ্ধি উদার হৃদয় গভীর চিত্ত ব্যক্তির।
খ. প্রাবন্ধিক জীবনে পূর্ণতা অর্জনের জন্য বিকাশ সাধন করতে বলেছেন।
সমাজে যারা বড় সূক্ষ্মবুদ্ধির মানুষ তাঁদের স্থান সবার উপরে। তাঁরা কেবল টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে না। বরং জীবনের বিকাশ সাধনই তাঁদের উদ্দেশ্য। স্বার্থরক্ষা নয়, স্বার্থদানের মধ্যেই তাঁরা প্রকৃত অর্জনকে খুঁজে পায়। এজন্যই প্রাবন্ধিক জীবনের বিকাশ সাধন করতে বলেছেন।

গ. উদ্দীপকটি মনোযোগ সহকারে পড়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনী অনুধাবন কর। তারপর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সঙ্গে তাঁর সাদৃশ্য নির্ণয় করে তা বিশ্লেষণ কর।

ঘ. উদ্দীপকটি ভালোভাবে পড়ে এর ফুটে ওঠা দিকটি অনুধাবন কর। এরপর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক যে সব বিষয় কামনা করেছেন তা বোঝার চেষ্টা কর। দেখবে উভয়ের কামনাই এক। এ বিষয়টি সহজ-সরল ভাষায় বিশ্লেষণ কর।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১:

উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
সুখ সুখ করি কেঁদো না আর।

ক. কাকে অনেক বাধা ডিঙানোর দুঃখ পেতে হয়?
খ. প্রাবন্ধিক পরার্থে আত্মনিবেদন করতে বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের শেষ দুই চরণে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে ফুটে ওঠা দিকটি তুলে ধর।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মূল সুর যেন একই ধারায় প্রবাহিত।- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক. নদীর গতিকে।
খ. প্রাবন্ধিক জীবনের বিকাশ সাধনের জন্য পরার্থে আত্মনিবেদন করতে বলেছেন।
স্বার্থ কখনই মানুষকে বড় করে তুলতে পারে না; বরং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। তাই সবাইকে নিঃস্বার্থ হতে হবে। ফলে দেখা যাবে একে অন্যের জন্যে বিলিয়ে দিচ্ছে নিজের জীবন। এজন্যই প্রাবন্ধিক পরার্থে আত্মনিবেদন করতে বলেছেন।

গ. প্রথমে উদ্দীপকটি ভালোভাবে পড়ে শেষ দুই চরণের ভাবার্থ অনুধাবন কর। তারপর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সঙ্গে উক্ত ভাবার্থের সাদৃশ্য নির্ণয় করে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকটি মনোযোগ সহকারে পড়ে মূল সুর অনুধাবন কর। তারপর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটির মূল সুর নির্ণয় কর। দেখবে উভয়ের মূল সুর অভিন্ন- এ বিষয়টি সহজ-সরল ভাষায় বিশ্লেষণ কর।


‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২:

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আবু সালেহ মুসানগর গ্রামে বাস করে। তার মধ্যে সামান্য দয়ামায়া বলতে কিছুই নেই। ভালোবেসে কিছু দেয়ার চেয়ে মেরে-ধরে কোনোকিছু আদায় করে নিতে সে বেশি পছন্দ করে। নিজের অর্থ-প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্য সে প্রতিনিয়ত অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করে বেড়ায়। তার এ হীন কর্মকাণ্ডে মুসানগরবাসী অস্থির হয়ে ওঠে।

ক. কার দিকে তাকিয়ে আমরা লাভবান হতে পারি?
খ. স্বল্পপ্রাণ বুদ্ধির মানুষের উদ্দেশ্য কী ও কেন?
গ. উদ্দীপকের আবু সালেহ ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের কোন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের একটি বিশেষ দিকের প্রতীকা। বিশ্লেষণ করো।

ক. গাছের দিকে।
খ. স্বল্পপ্রাণ ও বুদ্ধির মানুষের উদ্দেশ্য হলো সমাজে টিকে থাকা।
গ. উদ্দীপকটি ভালোভাবে পড়ে আবু সালেহ চরিত্রটির উদ্দেশ্য অনুধাবন কর। তারপর এর সঙ্গে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের শ্রেণিগত সাদৃশ্য নির্ণয় করে তা উপস্থাপন করো।

ঘ. উদ্দীপকটি মনোযোগ সহকারে পড়ে তা আয়ত্ত কর। এরপর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধটি পড়ে তার দিকগুলো নির্ণয় করো। দেখবে উভয়ের মধ্যে মিল-অমিল বিদ্যমান। এ বিষয়টিই বিশ্লেষণ করো।


তথ্যসূত্র :
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url