‘বহিপীর’ নাটকের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন, অনুধাবনমূলক প্রশ্ন, সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

বহিপীর
বহিপীর

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. বহিপীর নাটকে কে ঘর ছেড়ে পালিয়েছিল?
উত্তর : বহিপীর নাটকে তাহেরা ঘর ছেড়ে পালিয়েছিল।
২. বদলোকেরা কাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে?
উত্তর : বদলোকেরা তাহেরাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
৩. তাহেরা কাকে সাথে নিয়ে পালিয়েছিল
উত্তর : তাহেরা চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে পালিয়েছিল।
৪. বহিপীর নাটকে কার চোখে ভয় ও কান্না ছিল না?
উত্তর : বহিপীর নাটকে তাহেরার চোখে ভয় ও কান্না ছিল না।
৫. বহিপীর নাটকে নদীতে কী ভেসে যায়?
উত্তর : বহিপীর নাটকে নদীতে কচুরিপানা ভেসে যায়।
৬. তাহেরার পরিবারে কে কে ছিল?
উত্তর : তাহেরার পরিবারে বাবা ও সৎমা ছিল।
৭. “আমি কি বকরি-ঈদের গরু ছাগল নাকি?” কথাটি কার?
উত্তর : “আমি কি বকরি ঈদের গরু ছাগল নাকি?”- কথাটি তাহেরার।
৮. বজরার দুর্ঘটনায় কারা নাকানি-চুবানি খেয়েছেন?
উত্তর : বজরার দুর্ঘটনায় পীরসাহেব ও দুই সঙ্গী নাকানি-চুবানি খেয়েছেন।
৯. কলেজের পড়া শেষ করে কে ছাপাখানা দিতে চায়?
উত্তর : কলেজের পড়া শেষ করে হাশেম ছাপাখানা দিতে চায়।
১০. হাতেম আলির একমাত্র ছেলের নাম কী?
উত্তর : হাতেম আলীর একমাত্র ছেলের নাম হাশেম।
১১. কিসের ভাষায় কথা বলেন বলে পীরসাহেবের নাম বহিপীর হয়েছিল?
উত্তর : বইয়ের ভাষায় কথা বলেন বলে পীরসাহেবের নাম বহিপীর হয়েছিল।
১২. বহিপীরের মতে কোন ভাষার মতো পবিত্র ও গম্ভীর কোনো ভাষা নেই?
উত্তর : বহিপীরের মতে পুস্তকের ভাষার মতো পবিত্র ও গম্ভীর কোনো ভাষা নেই।
১৩. খোদার বাণী বহন করার উপযুক্ততা নেই কোন ভাষার?
উত্তর : খোদার বাণী বহন করার উপপুক্ততা নেই কথ্য ভাষার।
১৪. বহিপীরের বাড়ি কোথায়?
উত্তর : বহিপীরের বাড়ি সুনামগঞ্জে।
১৫. জমিদার হাতেম আলি বহিপীরের কাছে কী বলার জন্য মাফ চাইলেন?
উত্তর : জমিদার হাতেম আলি বহিপীরের কাছে ঝুট কথা বলার জন্য মাফ চাইলেন।
১৬. কোন আইনের কারণে জমিদার হাতেম আলির জমিদারি নিলামে উঠতে বসেছিল?
উত্তর : জমিদার হাতেম আলির জমিদারি নিলামে উঠতে বসেছিল সান্ধ্য আইনের কারণে।
১৭. বহিপীরের প্রথম স্ত্রীর এন্তেকাল হয় কত বছর আগে?
উত্তর : বহিপীরের প্রথম স্ত্রীর এন্তেকাল হয় চৌদ্দ বছর আগে।
১৮. বহিপীরের মতে, শিক্ষাদীক্ষার গাফিলতি হলে দোষটা কার ঘাড়ে পড়ে?
উত্তর : বহিপীরের মতে শিক্ষাদীক্ষার গাফিলতি হলে দোষটা পিতামাতার ঘাড়েই পড়ে।
১৯. খোদেজার মতে বিয়ে হলো কিসের কথা?
উত্তর : খোদেজার মতে বিয়ে হলো তকদিরের কথা।
২০. খোদেজার মতে কার সাথে বিয়ে হওয়া খারাপ কথা না?
উত্তর : খোদেজার মতে পীরের সাথে বিয়ে হওয়া খারাপ কথা না।
২১. বকরি ঈদ মানে কী?
উত্তর : বকরি ঈদ মানে কোরবানির ঈদ।
২২. বহিপীর সারা জীবন কাদের মঙ্গল কামনা করেছেন?
উত্তর : বহিপীর সারা জীবন মুরিদদের মঙ্গল কামনা করেছেন।
২৩. বহিপীর নাটকে কে সাঁতার জানে না?
উত্তর : বহিপীর নাটকে তাহেরা সাঁতার জানে না।
২৪. বহিপীর কাকে বাবা বলে সম্বোধন করেন?
উত্তর : বহিপীর হাশেমকে বাবা বলে সম্বোধন করেন।
২৫. কার মতে তাহেরার লজ্জাশরম নেই?
উত্তর : খোদেজার মতে তাহেরার লজ্জাশরম নেই।
২৬. হাতেম আলির বাল্যবন্ধুর নাম কী?
উত্তর : হাতেম আলির বাল্যবন্ধুর নাম আনোয়ার উদ্দিন।
২৭. কী হারালে হাতেম আলির পরিবার দেউলে হবে?
উত্তর : জমিদারি হারালে হাতেম আলির পরিবার দেউলে হবে।
২৮. জুম্মারাতে বহিপীরের সাথে কার বিয়ে হয়?
উত্তর : জুম্মারাতে বহিপীরের সাথে তাহেরার বিয়ে হয়।
২৯. বহিপীর তাহেরাকে খুঁজতে কোথায় গিয়েছিলেন?
উত্তর : বহিপীর তাহেরাকে খুঁজতে কদমতলা গিয়েছিলেন।
৩০. বহিপীরের মতে কারা পেটের কথা চেপে রাখতে পারে না?
উত্তর : বহিপীরের মতে স্ত্রীলোক পেটের কথা চেপে রাখতে পারে না।
৩১. তাহেরাকে বাঁচাতে হাশেম প্রয়োজনে কী করবে?
উত্তর : তাহেরাকে বাঁচাতে হাশেম প্রয়োজনে তাকে বিয়ে করবে।
৩২. জমিদার কার আগমনের অপেক্ষা করছিলেন?
উত্তর : জমিদার বাল্যবন্ধু আনোয়ার উদ্দিনের আগমনের অপেক্ষা করছিলেন।
৩৩. হাশেমের মতে বার্তাবাহককে কী হতে হয়?
উত্তর : হাশেমের মতে বার্তাবাহককে দলহীন হতে হয়।
৩৪. ‘বহিপীর’ নাটকে কে সাবধানী লোক?
উত্তর : ‘বহিপীর’ নাটকে পীর সাহেব সাবধানী লোক।
৩৫. বহিপীর কাকে পুলিশ ডাকতে বলল?
উত্তর : বহিপীর হকিকুল্লাহকে পুলিশ ডাকতে বলল।
৩৬. বিবির গায়ে হাত দেওয়ার জন্য বহিপীর কাকে মানা করলেন?
উত্তর : বিবির গায়ে হাত দেওয়ার জন্য বহিপীর হাশেমকে মানা করলেন।
৩৭. কে বহিপীরের ঘাড়ের ওপর জিব্রাইলের মতো দাঁড়িয়ে আছে?
উত্তর : হকিকুল্লাহ বহিপীরের ঘাড়ের পওর জিব্রাইলের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
৩৮. হাশেম তাহেরার কোথায় ব্যথা দিয়েছে?
উত্তর : হাশেম তাহেরার বাম বাহুতে ব্যথা দিয়েছে।
৩৯. হাতেম আলি শহরে এসেছে কী রক্ষা করতে?
উত্তর : হাতেম আলি শহরে এসেছে জমিদারি রক্ষা করতে।
৪০. হাশেম কার কথা ভেবে কাঁদল?
উত্তর : হাশেম তার বাবার কথা ভেবে কাঁদল।
৪১. ‘বহিপীর’ নাটকে খোদা কার দিলে রুহানি শক্তি দিয়েছেন বলে উল্লেখ আছে?
উত্তর : ‘বহিপীর’ নাটকে খোদা বহিপীরের দিলে রুহানি শক্তি দিয়েছেন বলে উল্লেখ আছে।
৪২. বহিপীরের মতে কে জীবনে স্নেহমমতা পায়নি?
উত্তর : বহিপীরের মতে তাহেরা জীবনে স্নেহমমতা পায়নি।
৪৩. কার মতে বহিপীর অনেক নেক মানুষ?
উত্তর : খোদেজার মতে বহিপীর অনেক নেক মানুষ।
৪৪. বহিপীরের পিঠ টিপে দেয় কে?
উত্তর : বহিপীরের পিঠ টিপে দেয় হকিকুল্লাহ।
৪৫. কারা নতুন জীবনের পথে যাচ্ছে?
উত্তর : হাশেম আর তাহেরা নতুন জীবনের পথে যাচ্ছে।
৪৬. তাহেরাকে কোথা থেকে উদ্ধার করা হয়?
উত্তর : তাহেরাকে ডেমরা ঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়।
৪৭. বহিপীরের কানে কোন ভাষা কটু ঠেকে?
উত্তর : বহিপীরের কানে কথ্য ভাষা কটু ঠেকে।
৪৮. কারা বহিপীরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে?
উত্তর : মুরিদরা বহিপীরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।
৪৯. বহিপীরের সবসময় কী করার অভ্যাস?
উত্তর : বহিপীরের সবসময় ওয়াজ-নসিহত করার অভ্যাস।
৫০. ‘বহিপীর’ নাটকে অঙ্ক কয়টি?
উত্তর : ‘বহিপীর’ নাটকে অঙ্ক দুইটি।
৫১. হাতেম আলির কাছে ‘জমিদার সাহেব’ নামটা কিসের মতো শোনায়?
উত্তর : হাতেম আলির কাছে ‘জমিদার সাহেব’ নামটা ঠাট্টার মতো শোনায়।
৫২. ‘বহিপীর’ নাটকে হাতেম আলির স্ত্রীর নাম কী?
উত্তর : ‘বহিপীর’ নাটকে হাতেম আলির স্ত্রীর নাম খোদেজা।
৫৩. বহিপীর কার মাঝে একজন অসাধারণ নারীর পরিচয় পেয়েছেন?
উত্তর : বহিপীর তাহেরার মাঝে একজন অসাধারণ নারীর পরিচয় পেয়েছেন।
৫৪. শহরে বহিপীরের কয়জন ধনী মুরিদ আছে?
উত্তর : শহরে বহিপীরের তিনজন ধনী মুরিদ আছে।
৫৫. পীরসাহেব হাতেম আলিকে কর্জ দেওয়ার বিনিময়ে কাকে ফেরত চান?
উত্তর : পীরসাহেব হাতেম আলিকে কর্জ দেওয়ার বিনিময়ে তাঁর বিবি তাহেরাকে ফেরত চান।
৫৬. কোনো বদদোয়া কার গায়ে লাগে না?
উত্তর : কোনো বদদোয়া পীরের গায়ে লাগে না।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. তাহেরা বাড়ি থেকে পালিয়েছিল কেন?
উত্তর : বহিপীরের সাথে বিয়েতে মত না থাকায় তাহেরা বাড়ি থেকে পালিয়েছিল।
➠ তাহেরার তুলনায় বহিপীরের বয়স অনেক বেশি। কিন্তু তাহেরার পিতামাতা বহিপীরের মুরিদ হওয়ায় তারা তার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাহেরার এই বিয়েতে কোনোভাবেই মত ছিল না। তাই সে এই বিয়ে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছিল। এজন্য তাহেরা বাড়ি থেকে পালিয়েছিল।
২. বহিপীর হাতেম আলির নৌকায় আশ্রয় নেন কেন?
উত্তর : ঝড়ের কবলে বহিপীরকে বহনকারী নৌকা ডুবে যাওয়ায় তিনি হাতেম আলির নৌকায় আশ্রয় নেন।
➠ বহিপীর তাহেরাকে খুঁজতে নৌকা নিয়ে তার খাদেমের সাথে বের হন। পথিমধ্যে নৌকাটি ঝড়ের কবলে পড়ে। তখন বহিপীরের নৌকা ও হাতেম আলির নৌকা একই সাথে খালের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছিল। সে সময় ধাক্কা খেয়ে বহিপীরের নৌকা ডুবে যায়। ফলে সাঁতরে বহিপীর হাতেম আলির নৌকায় আশ্রয় নেন।
৩. হাতেম আলির জমিদারি নিলামে উঠতে চলেছে কেন?
উত্তর : সান্ধ্য আইনের ফলে টাকা পরিশোধ করতে না পারায় হাতেম আলির জমিদারি নিলামে উঠতে চলেছে।
➠ হাতেম আলি রেশমপুরের জমিদার। কিন্তু তিনি এই জমিদারি হারাতে বসেছেন। সান্ধ্য আইনে নির্ধারিত সময়ের আগে খাজনা পরিশোধ না করলে জমিদারি নিলামে উঠত। হাতেম আলি অনেক চেষ্টা করেও খাজনার টাকা জোগাড় করতে পারেননি। এজন্য তিনি শহরে বন্ধুর কাছে গিয়েও খালি হাতে ফিরেছেন। ফলে তার জমিদারি নিলামে উঠতে চলেছে।
৪. বহিপীর নৌকা নিয়ে কদমতলার ঘাটের দিকে গিয়েছিলেন কেন?
উত্তর : বহিপীর তাহেরাকে খুঁজতে নৌকা নিয়ে কদমতলার ঘাটের দিকে গিয়েছিলেন।
➠ বহিপীরের বয়স বেশি হওয়ায় বালিকা তাহেরা বহিপীরের সাথে বিয়েতে রাজি ছিল না। এজন্য সে বিয়ের রাতেই পালিয়ে যায়। বহিপীর তাহেরার পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনে তার খাদেমকে নিয়ে নৌকা করে খুঁজতে বের হন। সে সময় বহিপীর তাহেরাকে খুঁজতে কদমতলার ঘাটের দিকেও গিয়েছিলেন।
৫. তাহেরা পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চায় কেন?
উত্তর : তাহেরা বহিপীরের সাথে যেতে ইচ্ছুক নয় বলে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চায়।
➠ তাহেরা বহিপীরকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় পালিয়ে যায়। কিন্তু তাহেরা যে বজরায় আশ্রয় নেয় ঝড়ের কবলে পড়ে বহিপীরও সেই বজরাতেই আশ্রয় নেয়। সেখানে তাহেরাকে বহিপীর ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে তাহেরা তাতে অস্বীকৃতি জানায় এবং প্রয়োজনে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চায়।
৬. “চারিদিকে আমি অন্ধকার দেখছি”- হাতেম আলির একথা বলার কারণ কী?
উত্তর : জমিদারির পতন আসন্ন জেনে হতাশায় হাতেম আলি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
➠ হাতেম আলি রেশমপুরের জমিদার। সে জমিদারি রক্ষার জন্য বাল্যবন্ধু আনোয়ারের কাছে টাকা কর্জ করতে গিয়েছিল। কিন্তু বন্ধু তাকে নিরাশ করে। ফলে খাজনা শোধ করতে না পারায় হাতেম আলির জমিদারি নিলামে উঠবে। এই দুশ্চিন্তায় হাতেম আলি বলেন ‘চারিদিকে আমি অন্ধকার দেখছি’।
৭. হাশেম তাহেরাকে বিয়ে করে হলেও বাঁচাতে চায় কেন?
উত্তর : তাহেরার প্রতি দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার কারণে হাশেম তাকে বিয়ে করে হলেও বহিপীরের হাত থেকে বাঁচাতে চায়।
➠ তাহেরা বালিকা মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তার পরিবার এক বুড়ো পীরের সাথে তার বিয়ে দেয়। কিন্তু তাহেরা এই বিয়ে না মেনে নিয়ে পালিয়ে যায় এবং ঘটনাক্রমে হাশেম আলিদের বজরায় আশ্রয় নেয়। তাহেরার মতো একজন বালিকা মেয়ের এই বিয়ে হাশেম আলিও মেনে নিতে পারেনি। একজন দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে সে তাহেরার পক্ষ অবলম্বন করে। বহিপীরের হাত থেকে তাহেরাকে সে বাঁচাতে চায়। প্রয়োজনে বিয়ে করে হলেও সে তাহেরাকে বাঁচাতে চায়।
৮. তাহেরা বহিপীরের সাথে বিয়েতে রাজি ছিল না কেন?
উত্তর : বয়সের ব্যবধান অনেক বেশি হওয়ায় তাহেরা বহিপীরের সাথে বিয়েতে রাজি ছিল না।
➠ তাহেরা একজন স্বাধীনচেতা নারী। তাহেরা বালিকা হলেও বহিপীর ছিলেন বুড়ো। তার পিতা বয়সের ব্যবধানের হিসাব না করে এই বুড়ো পীরের সাথেই বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু তাহেরা বহিপীরের সাথে তার বয়সের ব্যবধান মেনে নিতে পারেনি। তাই সে বিয়েতে রাজি ছিল না।
৯. তাহেরার পিতামাতা বহিপীরের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেন কেন?
উত্তর : তাহেরার পিতামাতা পীরসাহেবকে খুশি করার জন্য বহিপীরের সাথে তাহেরার বিয়ে ঠিক করেন।
➠ তাহেরার পিতামাতা ছিলেন বহিপীরের মুরিদ। বহিপীর অনেক দিন পর পর তাদের বাড়িতে গেলে তারা পীরের খেদমতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা মনে করে পীরের খেদমত করতে পারলেই অনেক অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। তাই তারা পীরকে খুশি রাখতে চান। আর পীরকে খুশি রাখার আশায় তারা তাহেরার সাথে পীরসাহেবের বিয়ে দিতে চান।
১০. হাশেম তাহেরাকে হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দেয় কেন?
উত্তর : তাহেরা নদীতে ঝাঁপ দিতে গেলে তাকে বাঁচানোর জন্য হাশেম হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়।
➠ তাহেরার প্রতি প্রথম থেকেই হাশেমের দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা জাগ্রত হয়। সে বহিপীরের কবল থেকে তাহেরাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বহিপীর বিভিন্ন কৌশলে তাহেরাকে নিয়ে যেতে চান। একপর্যায়ে পীরসাহেব পুলিশ ডাকতে পাঠালে তাহেরা নদীতে ঝাঁপ দিতে যায়। তখন তাকে বাঁচানোর জন্য হাশেম হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়।
১১. খোদেজার সাথে হাশেমের বিরোধ সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর : তাহেরাকে বহিপীরের সাথে পাঠানো নিয়ে খোদেজার সাথে হাশেমের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
➠ তাহেরা বাড়ি থেকে পালিয়ে হাতেম আলির বজরায় উঠেছে। অন্যদিকে বহিপীর তাহেরাকে খুঁজতে গিয়ে ঐ বজরায় এসেছে। সেখান থেকে বহিপীর তাহেরাকে নিয়ে যেতে চাইলে তাহেরা তাতে অস্বীকৃতি জানায়। কেননা সে বহিপীরের সাথে সংসার করতে রাজি নয়। সেখানে হাশেম তাহেরার পক্ষ নিলেও খোদেজা তাহেরাকে পাঠিয়ে দিতে চায়। আর এ নিয়ে খোদেজার সাথে হাশেমের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
১২. বাবার জমিদারি নিলামে ওঠার কথায় হাশেম কাঁদতে শুরু করে কেন?
উত্তর : বাবার জমিদারি নিলামে ওঠায় তার কষ্ট অনুধাবন করে হাশেম কাঁদতে শুরু করে।
➠ হাশেম একজন অনুভূতিবোধসম্পন্ন মানুষ। অন্যের দুঃখ কষ্ট তাকে ব্যথিত করে। তাহেরার প্রতি সে যেমন সমব্যথী হয়েছে তেমন বাবার জমিদারি হারোনোর কথাও তাকে ব্যথিত করেছে। বাবা জমিদারি হারানোতে তার বুকের মধ্যে কেমন অস্থিরতা কাজ করছে তা ভেবে হাশেম আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। আর এজন্য সে কেঁদে ফেলে।
১৩. খোদেজা খাল কেটে কুমির আনার কথা বলেছে কেন?
উত্তর : হাশেম তাহেরাকে বিয়ে করতে চাওয়ায় খোদেজা মনে করে সে খাল কেটে কুমির এনেছে।
➠ খোদেজা তাহেরাকে বিপদগ্রস্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তাদের বজরায় আশ্রয় দেয়। তার কাছে সকল ঘটনা শুনে হাশেম তাহেরার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। সে তাহেরাকে বিয়ে করে হলেও উদ্ধার করতে চায়। তখন খোদেজা তাহেরার প্রতি ইঙ্গিত করে খাল কেটে কুমির আনার কথা বলেছে।
১৪. হাতেম আলি বহিপীরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল কেন?
উত্তর : হাতেম আলি নিজের আত্মসম্মান বোধের কারণে বহিপীরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল।
➠ হাতেম আলি রেশমপুরের জমিদার। ফলে তিনি একজন আত্মসম্মানী মানুষ। কিন্তু টাকার অভাবে তিনি জমিদারি হারাতে বসেছেন। এ সময় বহিপীর তাহেরাকে সাথে যেতে রাজি করার বিনিময়ে হাতেম আলিকে জমিদারি রক্ষার টাকা দিতে চায়। কিন্তু এ প্রস্তাব মেনে নিতে হাতেম আলির আত্মসম্মানে বাধে। তাই তিনি বহিপীরের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
১৫. শেষ পর্যায়ে বহিপীর হাতেম আলিকে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া সাহায্য করতে চাইলেন কেন?
উত্তর : বহিপীরের মাঝে মানবতাবোধ জাগ্রত হওয়ায় শেষ পর্যায়ে তিনি হাতেম আলিকে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া সাহায্য করতে চাইলেন।
➠ বহিপীর তাহেরাকে সাথে নেওয়ার জন্য নানা রকম ফন্দি আঁটেন। কিন্তু কোনো কিছুতে কাজ না হওয়ায় হাতেম আলিকে সাহায্য করার বিনিময়ে তাহেরাকে চান। কিন্তু হাতেম আলি আত্মসম্মান বোধের কারণে বহিপীরের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে বহিপীরের মাঝেও মানবতাবোধ জন্মে। তিনি বুঝতে পারেন তাহেরার মতো বালিকাকে তার বিয়ে করা উচিত হয়নি। তাই তিনি শেষে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই হাতেম আলিকে সাহায্য করতে চান।
১৬. হাতেম আলি পীরসাহেবকে সাবধানী লোক বলেছে কেন?
উত্তর : কঠিন পরিস্থিতিতেও পীরসাহেবের স্থিরতা দেখে হাশেম আলি তাকে সাবধানী লোক বলেছে।
➠ বহিপীর কৌশলে তাহেরাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। এজন্য তিনি নানা রকম ফন্দি আঁটেন। কিন্তু কোনো ফন্দি-ফিকিরেই যখন কাজ হচ্ছিল না তখন তিনি উত্তেজিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি বুঝে কাজ করছিলেন। হাশেম আলি পীরসাহেবের এই কর্মকাণ্ড দেখে তাকে সাবধানী লোক বলেছে।
১৭. “ঝোঁক কেটে গেলে আপনার ছেলের মনে হতে পারে তিনি ভুল করেছেন” তাহেরা এ উক্তি করেছে কেন?
উত্তর : তাহেরাকে হাশেম বিয়ে করতে চাইলে হাশেমকে যাচাই করার উদ্দেশ্যে তাহেরা প্রশ্নোক্ত উক্তি করেছে।
➠ হাশেম দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা থেকে তাহেরাকে বহিপীরের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিয়ে করতে চায়। হাশেম এ কথা তার মায়ের সামনে তাহেরাকে জানায়। কিন্তু তাহেরা যথেষ্ট বুদ্ধিমতি নারী। তাই সে হাশেমকে যাচাই করে নিতে চায় সে কেন বিয়ে করতে চাচ্ছে। আর এ জন্যই তাহেরা প্রশ্নোক্ত উক্তি করে।
১৮. তাহেরা নিজেকে কোরবানির বকরি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন?
উত্তর : মা-বাবা তাহেরার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বুড়ো পীরের সাথে বিয়ে দেওয়ায় সে নিজেকে কোরবানির বকরি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
➠ বহিপীরের সাথে বিয়েতে তাহেরার কোনো মত ছিল না। তার বাবা-মা বহিপীরের ভক্ত হওয়ায় তারা বুড়ো বয়সী পীরের সাথে বিয়ে ঠিক করে। এ ক্ষেত্রে তারা তাহেরার মতামতের কোনো তোয়াক্কা করে না। তাই তাহেরা মনে করে কোরবানির বকরিকে যেমন ক্রেতা-বিক্রেতার ইচ্ছায় কেনাবেচা হয় তার সাথেও তেমন করা হচ্ছে। এজন্য সে নিজেকে কোরবানির বকরি ভেবে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
১৯. বহিপীর ও তার সঙ্গী পানিতে নাকানি চুবানি খেয়েছে কেন?
উত্তর : নৌকা ডুবে যাওয়ায় বহিপীর ও তার সঙ্গী পানিতে নাকানি চুবানি খেয়েছে।
➠ বহিপীর তার সঙ্গীকে নিয়ে তাহেরাকে খুঁজতে বেরিয়েছিল। পথিমধ্যে ঝড় শুরু হলে তারা দ্রুত খালের মধ্যে ঢুকতে যায়। সে সময় হাতেম আলির বজরার সাথে ধাক্কা লেগে তাদের নৌকা ডুবে যায়। আর এসময়ই বহিপীর ও তার সঙ্গী পানিতে নাকনি চুবানি খেয়েছে।
২০. হাতেম আলি সারা বিকেল বাল্যবন্ধু আনোয়ারের আশায় কাটায় কেন?
উত্তর : হাতেম আলি জমিদারি রক্ষায় বাল্যবন্ধু আনোয়ারের কাছ থেকে টাকা ধার নেবে বলে তার আশায় সারা বিকেল কাটায়।
➠ হাতেম আলির জমিদারি সূর্যাস্ত আইনে নিলামে উঠতে চলেছে। এজন্য শেষ মুহূর্তে সাহায্যের আশায় হাতেম আলি শহরে বন্ধুর কাছে আসে। কিন্তু সেখানেও নিরাশ হয়। তবুও হাতেম আলি মনে করে তার বন্ধু টাকা নিয়ে তার কাছে আসবে তার জমিদারি রক্ষা পাবে। তাই সে সারা বিকেল বন্ধু আনোয়ারের আশায় কাটায়।
২১. বহিপীর পুলিশে খবর দিতে চান কেন?
উত্তর : তাহেরা বহিপীরের সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানালে বহিপীর পুলিশে খবর দিতে চান।
➠ বহিপীরের সাথে বয়সের ব্যবধান বেশি হওয়ায় তাহেরা বিয়ের দিনই পালিয়ে আসে। তাহেরা বিয়েতে বহিপীরকে পছন্দ করে না। কিন্তু বহিপীর তাহেরাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। সব কৌশলে ব্যর্থ হলে তিনি আইনের মাধ্যমে তাহেরাকে নিয়ে যেতে পুলিশে খবর দিতে চান।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
আজাদের বাবা নামকরা পীর ছিলেন। কিন্তু আজাদ লেখাপড়া শিখেছেন। শহরে চাকরি করেন। দীর্ঘদিন পর গ্রামে বেড়াতে আসেন। গ্রামের মুরুব্বি তার কাছে এসে তাকে সালাম করতে যায়। আজাদ সাহেব নিজেই তাকে সালাম করেন, কিন্তু মুরুব্বি এ ঘটনায় নিজেকে পাপী মনে করেন। আরেক জন তার কাছে পানি পড়া নিতে আসে। তাকে আজাদ সাহেব বোঝানোর চেষ্টা করেন।
ক. বহিপীর নাটকের ১ম সংলাপটি কার?
খ. বিয়ে হলো তগদিরের কথা - এ কথাটি বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত গ্রামের মানুষগুলোর কার্যক্রমে ‘বহিপীর’ নাটকে প্রতিফলিত সমাজের কোন চিত্রকে ইঙ্গিত করে তা তুলে ধরো।
ঘ. উদ্দীপকের আজাদ চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীরের মতো ধর্মব্যবসায়ী নয় - মন্তব্যটি বিচার করো।
ক. বহিপীর নাটকের ১ম সংলাপটি হাশেমের।
খ. বিয়ের ব্যাপারটি মানুষের ইচ্ছায় নয় বরং দৈব নির্দেশে হয়। জমিদারপত্নী খোদেজা তাহেরাকে এভাবে বোঝানোর জন্য আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন।
➠ একজন বুড়ো মানুষের সাথে তাহেরার বিয়ে হওয়ায় সে বাড়ি ছেড়ে পালায়। নৌকায় আশ্রয়প্রার্থী তাহেরাকে বোঝানোর জন্য খোদেজা বলে ‘বিয়ে হলো তকদিরের কথা’। এতে মানুষের কোনো হাত নেই। এতে তৎকালীন সময়ে নারীর সবকিছু মাথা পেতে নেওয়ার প্রবণতাই ব্যক্ত হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত গ্রামের মানুষগুলোর কার্যক্রমে ‘বহিপীর’ নাটকে প্রতিফলিত ধর্মীয় কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজের চিত্রকে ইঙ্গিত করে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিষয়টি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। ধর্মীয় কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে এবং সওয়াবের আশায় এক শ্রেণির মানুষ বহিপীরের সব কথা মান্য করে চলে। পীরের সেবায় সর্বস্ব ত্যাগ করার মনোবৃত্তি পোষণ করে। তারা পীরকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করে। বহিপীরের প্রতি অন্ধভক্তির কারণে তাহেরার মা-বাবা তাকে একজন বুড়ো পীরের কাছে সঁপে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
➠ উদ্দীপকে পীরের প্রতি সীমাহীন অন্ধবিশ্বাসের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আজাদের বাবা নামকরা পীর হলেও আজাদ শিক্ষিত ও আধুনিক মানুষ। তিনি দীর্ঘদিন পর গ্রামে এলে গ্রামের মুরব্বি তাকে সালাম করতে চান। পীরের ছেলে বলে তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দেন। কিন্তু আজাদ সাহেব নিজেই তাঁকে সালাম করেন। এতে মুরব্বি লোকটির মনে অপরাধবোধ বোধ জাগ্রত হয় এবং নিজেকে পাপী মনে করেন। কেউ আবার তার কাছে পানি পড়া নিতে আসে। সুতরাং উদ্দীপক এবং আলোচ্য ‘বহিপীর’ নাটকে উভয় ক্ষেত্রেই আমরা পীরের প্রতি অযৌক্তিক অন্ধভক্তির দিকটি লক্ষ করি।

ঘ. উদ্দীপকের আজাদ একজন আধুনিক চিন্তাচেতনার মানুষ। পীরের সন্তান হলেও তিনি বহিপীরের মতো ধর্ম পুঁজি করে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেননি।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর একজন ধর্মব্যবসায়ী পীর। ধর্মকে ব্যবহার করে তিনি হয়েছেন প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক। চাইলে ধনী মুরিদেরা তার কাছে টাকা-পয়সাসহ সর্বস্ব তুলে দেয়। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তিনি নিজের আখের গুছিয়ে নেন।
➠ উদ্দীপকে আজাদ সাহেব ইচ্ছে করলে বাবার মতো পীর হতে পারতেন। কিন্তু তিনি শিক্ষিত আধুনিক মানুষ হিসেবে কুসংস্কারমুক্ত। যে কারণে বাবার বয়সী একজন বৃদ্ধ মুরব্বির সালাম গ্রহণ না করে নিজেই সালাম দিয়েছেন। আজাদ সাহেব সৎ জীবনযাপন করার জন্য একটি চাকরি করেন। তিনি পানি পড়া দিতেও রাজি হননি। ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীরের মতো ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে তিনি পীর হননি বা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেননি।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর একজন কূটবুদ্ধিসম্পন্ন সুযোগসন্ধানী পীর। তাঁর বৈষয়িক জ্ঞান অত্যন্ত প্রখর। বহিপীর প্রকৃতই যদি ধার্মিক হতেন তবে বৃদ্ধ বয়সে একটি কিশোরীকে বিয়ের চিন্তা করতে পারতেন না। আবার পীর হওয়ার কারণেই তাহেরার অমত সত্ত্বেও তার বাবা-মা সওয়াব লাভের আশায় এ বিয়ে সম্পন্ন করেছিল। ধর্ম ব্যবসায়ীরা এভাবেই মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে। অন্যদিকে উদ্দীপকে আজাদ সাহেবের প্রতি গ্রামের মানুষের অন্ধবিশ্বাস রয়েছে। কিন্তু তিনি সে অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে বহিপীরের মতো ভণ্ডপীর হননি। বরং তিনি মানুষকে এসব কুসংস্কারের ব্যাপারে বুঝিয়েছেন, সতর্ক করেছেন। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপকের আজাদ চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীরের মতো ধর্ম ব্যবসায়ী নন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
মঞ্জুর সাহেবের ভগ্নিপতি মারা যাওয়ার পর ভগিনী মাজেদাকে নিয়ে এসে মানুষ করে। টাকা বাঁচানোর জন্য মাজেদাকে ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রী এর প্রতিবাদ করে এবং তা হতে দেয়নি।
ক. সূর্যাস্ত আইন কত সালে প্রণীত হয়?
খ. জমিদার হাতেম আলির মনে শান্তি নেই কেন?
গ. উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের হাতেম আলি চরিত্রের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো।
ঘ. মাতৃসুলভ সহানুভূতি থাকলেও উদ্দীপকের মাজেদা চরিত্রটি পুরোপুরি ‘বহিপীর’ নাটকের খোদেজা চরিত্র নয়- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
ক. সূর্যান্ত আইন প্রণীত হয় ১৭৯৩ সালে।
খ. জমিদারি হারানোর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে জমিদার হাতেম আলির মনে শান্তি নেই।
➠ খাজনা বাকি পড়ে যাওয়ায় হাতেম আলির জমিদারি হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়। সূর্যাস্ত আইন অনুযায়ী যথাসময়ে খাজনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে জমিদারি নিলামে ওঠে। তখন কর্তৃপক্ষ অন্য কারো কাছে জমিদারি হস্তান্তর করে। জমিদারি বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও টাকার জোগাড় করতে পারেন না জমিদার হাতেম আলি। এমনি এক পরিস্থিতিতে হাতেম আলি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। জমিদারি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই হাতেম আলির মনে শান্তি নেই।

গ. ‘বহিপীর’ নাটকে হাতেম আলি টাকার বিনিময়ে তাঁর কাছে আশ্রিতার সর্বনাশ করতে রাজি হননি। তার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের চরিত্রের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ খাজনা বাকি পড়ায় হাতেম আলির জমিদারি নিলামে ওঠে। বন্ধুদের কাছে সাহায্য চেয়েও তিনি পাননি। এতে তিনি অত্যন্ত চিন্তিত ও বিমর্ষ হয়ে পড়েন। বহিপীরের কাছে ঘটনাটি খুলে বললে তাহেরাকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার শর্তে বহিপীর তাঁকে জমিদারি বাঁচানোর জন্য অর্থ ধার দিতে চান। এতে তাহেরা রাজি হলেও জমিদার রাজি হননি। কারণ নিজেকে তাঁর হৃদয়হীন ও কসাই মনে হতে থাকে। জমিদারি চলে গেলেও তিনি একটি নিষ্পাপ মেয়ের জীবন বিপন্ন করতে চাননি।
➠ উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের ভগ্নীপতি মারা গেলে ভগিনী মাজেদাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। টাকা বাঁচাতে মাজেদাকে তিনি ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে দিতে চান। যদিও স্ত্রীর বাধায় তিনি তা করতে পারেননি। মঞ্জুর সাহেব নিজের সুবিধার জন্য ভগিনীর ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে এমন একটি অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বহিপীর নাটকের জমিদার হাতেম আলি চরম বিপদগ্রস্ত হয়েও আশ্রিতা তাহেরাকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়ে নিজে সুখী হতে চাননি।

ঘ. ‘বহিপীর’ নাটকের খোদেজা চরিত্রে মাতৃসুলভ সহানুভূতি থাকলেও কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে তা পূর্ণরূপে বিকশিত হতে পারেনি। কিন্তু উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রীর মাঝে তা পূর্ণরূপে বিকাশ লাভ করেছে।
➠ বহিপীর নাটকে জমিদারপত্নী খোদেজা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অত্যন্ত ধর্মভীরু। অচেনা মেয়ে তাহেরাকে তিনি আশ্রয় বজরার দিয়েছেন। মেয়েটি দুঃখের কাহিনী শুনে ব্যথিতও হয়েছেন। কিন্তু যখনই শুনেছেন মেয়েটি একজন পীরের পালিয়ে আসা স্ত্রী তখন তাকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন। পীরের বদদোয়া কিংবা অমঙ্গলের চিন্তায় ভীত হয়েছেন।
➠ উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রী প্রতিবাদী, সাহসী নারী। যার তার সাথে মাজেদার বিয়ে হবে এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে একটা দায়সারা গোছের বিয়ে দিয়ে তিনি মাজেদার জীবনটাকে সংকটাপন্ন করতে চাননি। তাই তিনি সচেতনভাবে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন এবং বিয়েটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তার এই সাহসী কর্মকাণ্ডে তার মধ্যে মানবিকতাপূর্ণ ও মহতী হৃদয়ের পরিচয় পাই।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে খোদেজা চরিত্রে মাতৃসুলভ সহানুভূতি বিদ্যমান। জমিদারপত্নী খোদেজার কন্যাসন্তান ছিল না। তাই তিনি তাহেরাকে অনেকটা মেয়ের মতোই দেখেছেন। বিপদে ঠাঁই দিয়েছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাহেরা পানিতে ঝাঁপ দিতে গেলে হাশেম তাহেরাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয় সেখানেও তাঁর সম্মতি ছিল। আবার বহিপীরের কর্মকাণ্ডে হাশেম মার্জিত প্রতিবাদ করলে খোদেজা তা বারণ করেছে কিন্তু পুত্রের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেননি। অন্যদিকে মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রীর মধ্যেও মাতৃসুলভ সহানুভূতি কাজ করেছে। মাজেদাকে তিনি সতীনের ঘর করতে দিতে চাননি। তিনি নিশ্চিতই বুঝেছিলেন মাজেদা সেখানে শান্তিতে থাকবে না। মাতৃসুলভ সহানুভূতির পাশাপাশি তাঁর মধ্যে ছিল ন্যায়-অন্যায় বোধ। সমুন্নত ছিল বিবেক ও ব্যক্তিত্ববোধ। কিন্তু নাটকের খোদেজা বহিপীরের বদদোয়ার ভয়ে মাতৃস্নেহের বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করতে চেয়েছেন। খোদেজার ইচ্ছা ও ভবিষ্যতের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে ধর্মীয় চিন্তা। তাই উদ্দীপকের মঞ্জুর সাহেবের স্ত্রী চরিত্রটি বহিপীর নাটকের খোদেজা চরিত্র নয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
সুমির বাবা দিনমজুর। যৌতুকের টাকার অভাবে সুমির বাবা বৃদ্ধ মোড়লের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। সুমি রাজি না হয়ে কর্মের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে গেলে সবাই মিলে তাকে ধরে জোর করে বিয়ে দিতে চায়। তখন রাহুল প্রতিবাদ করে এ বিয়ে ঠেকায়। অবশেষে সে নিজেই বিনা যৌতুকে তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ক. নৌকার সঙ্গে কিসের ধাক্কা লেগেছিল?
খ. এমন মেয়েও কারো পেটে জন্মায় জানতাম না- এ কথাটি বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকের সুমি চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ - তা তুলে ধরো।
ঘ. প্রতিবাদের প্রতীক চরিত্র হিসেবে উদ্দীপকের রাহুল ও ‘বহিপীর’ নাটকের হাশেম আলি অভিন্ন - মূল্যায়ন করো।
ক. নৌকার সঙ্গে বজরার ধাক্কা লেগেছিল।
খ. তাহেরার দুঃসাহস লক্ষ করে ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত জমিদারের স্ত্রী খোদেজা তাহেরার উদ্দেশে উক্তিটি করেছেন।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে পীরের সাথে বিয়ে দিলে সে ঘর ছেড়ে পালায়। তাহেরা কিছুতেই একজন বুড়ো পীরকে স্বামী হিসেবে মানতে চায় না। পীরের হাত থেকে রক্ষা পেতে সে মরিয়া হয়ে ওঠে, আত্মহত্যার ভয় দেখায়। কিন্তু কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর স্বামীর ঘর করবে না এটা মেনে নিতে পারছিলেন না জমিদারের স্ত্রী খোদেজা। বিশেষত স্বামী যখন একজন পীর তখন কোনো মেয়ের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খোদেজার কাছে অকল্পনীয়। তাই খোদেজা এমন উক্তি করেছেন।

গ. অসম বিয়েতে রাজি না হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের সুমী চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরা এক প্রতিবাদী চরিত্র। কিশোরী তাহেরাকে মা-বাবা তার অমতে একজন বুড়ো পীরের সাথে বিয়ে দিলে সে বাড়ি ছেড়ে পালায়। কারণ একজন অপছন্দের মানুষের সাথে সে সারা জীবন কাটাতে চায় না। নিজের ভবিষ্যৎ ভেবে তাই সে পালাতে বাধ্য হয়।
➠ দরিদ্র দিনমজুরের মেয়ে হলেও উদ্দীপকের সুমি এক স্বাধীনচেতা তরুণী। যৌতুকের টাকার অভাবে তার বাবা তাকে এক বৃদ্ধ মোড়লের সাথে বিয়ে দিতে চায়। সুমির এতে ঘোর আপত্তি থাকায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য কাজের সন্ধানে বের হওয়ার উদ্যোগ নেয়। ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরাও জোর করে বিয়েতে বাধ্য করায় সে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।

ঘ. নারীর স্বাধীনতা রক্ষায় উদ্দীপকের রাহুল ও ‘বহিপীর’ নাটকের হাশেম আলি সমরূপ প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে জমিদারপুত্র হাশেম আলি অত্যন্ত যুক্তিবাদী, আধুনিক ও মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ। সে অসহায় তাহেরার সমস্যার প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করে। তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। মেয়েটি আত্মহত্যা করতে গেলে সে রক্ষা করে। সবাই মেয়েটির বিরুদ্ধে গেলেও সে তার পক্ষ তাকে ত্যাগ করেনি। একসময় সে তাহেরাকে নিয়ে অজানার উদ্দেশে রওনা দেয়। বহিপীরের হাত থেকে তাহেরার বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টাকে সে সফল করে তোলে।
➠ উদ্দীপকে সুমির দিনমজুর বাবা বৃদ্ধ মোড়লের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে এবং সবাই মিলে জোর করে বিয়ে দিতে চায়। তখন রাহুল প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং এই অসম বিয়ে বন্ধ করে দিতে সমর্থ হয়। পরে মানবিক কারণেই রাহুল বিনা যৌতুকে সুমিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। সামাজিক কুসংস্কারের শিকার নারীর জীবন রক্ষার চেষ্টা লক্ষ করা যায় রাহুল ও হাশেম আলি উভয়ের কর্মকাণ্ডে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে হাশেম আলি তাহেরার মানসিক সংকট ও অসহায় অবস্থাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিল। সংস্কারমুক্ত হাশেম তার মানবিক বিবেচনা দিয়েই তাহেরাকে বাঁচানোর প্রাণপণ উদ্যোগ নিয়েছিল। নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে ঘটনাপ্রবাহ যখন এগিয়ে চলছিল তখন হাসেম অত্যন্ত সচেতন ভূমিকা পালন করেছে। মায়ের ব্যঙ্গোক্তি, উপহাসকে সে কৌশলে এড়িয়ে গেছে। বহিপীরের কূটচালকেও সে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করেছে। উদ্দীপকের রাহুলও তেমনি সুমিকে সংকট থেকে বাঁচানোর জন্য রুখে দাঁড়িয়েছে। একটি অন্যায় ও অসম বিয়ে সে বন্ধ করে দিয়ে মেয়েটিকে অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা করেছে তাই বলা যায়, প্রতিবাদের প্রতীক চরিত্র হিসেবে উদ্দীপকের রাহুল ও বহিপীর নাটকের হাশেম আলি অভিন্ন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
মা কেঁদে কয়, ‘মঞ্জুলী মোর ওই তো কচি মেয়ে
ওরই সঙ্গে বিয়ে দেবে, বয়সে ওর চেয়ে
পাঁচগুণো সে বড়-
তাকে দেখে বাছা আমার ভয়েই জড়োসড়ো
এমন বিয়ে ঘটতে দেব নাকো।’
বাবা বললে, ‘কান্না তোমার রাখো।
পঞ্চাননকে পাওয়া গেছে অনেক দিনের খোঁজে
জাননা কি মস্ত কুলীন ওযে!
সমাজে তো উঠতে হবে
সেটা কি কেউ ভাবো?
ওকে ছাড়লে পাত্র কোথায় পাব!’
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষ সংলাপটি কার?
খ. হাতেম আলি তাহেরাকে পীরের হাতে দিলেন না কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের কোন সামাজিক অসংগতি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের মঞ্জুরির বাবা কি তাহেরার বাবার সার্থক প্রতিনিধি? তোমার মতামত দাও।
ক. ‘বহিপীর নাটকের শেষ সংলাপটি বহিপীরের।
খ. হাতেম আলির মাঝে মানবতাবোধের জাগরণ ঘটায় তিনি তাহেরাকে পীরের হাতে দিলেন না।
➠ পীরসাহেবের বয়স বেশি হওয়ায় তাহেরা তাকে বিয়ে করতে সম্মত ছিল না। এজন্য সে বিয়ের রাতেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং ঘটনাক্রমে হাতেম আলির নৌকায় আশ্রয় নেয়। পীরসাহেব হাতেম আলিকে জমিদারি রক্ষায় টাকা ধার দেওয়ার বিনিময়ে তাহেরাকে চায়। কিন্তু হাতেম আলির মাঝে মানবতাবোধের জাগরণ ঘটে। তিনি তাহেরার সিদ্ধান্তের ওপর নিজের স্বার্থবাদী চেতনা চাপিয়ে দিতে চান না। এজন্য তিনি তাহেরাকে পীরের হাতে তুলে দেননি।

গ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকে প্রতিফলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর মতামত অগ্রাহ্য করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।আমাদের সমাজে নারীরা অসহায়।
➠ পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে তাদের মতামতের কোনো মূল্য দেয় না কেউ। ‘বহিপীর’ নাটকেও নারীর অবমূল্যায়নের দিকটিই নাট্যকার তুলে ধরেছেন। বিয়েতে তাহেরা রাজি না থাকা সত্ত্বেও তার মতের প্রাধান্য না দিয়ে বহিপীর নামক এক বুড়ো পীরের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবমূল্যায়নের দিকটির প্রকাশ ঘটে।
➠ উদ্দীপকে নারীর অসহায়ত্বের দিকটিকে প্রধান করে তুলে ধরা হয়েছে। সমাজে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একাধিপত্য বিদ্যমান, যা মঞ্জুলীর বিয়েতে পরিলক্ষিত হয়। মঞ্জুলীর বিয়ের এই দিকটি ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার বিয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাহেরার বিয়েতে যেমন তার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি তেমনি উদ্দীপকের মঞ্জুলীর বিয়েতেও নেয়া হয় না।

ঘ. মেয়ের বিয়েতে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং স্বার্থবাদী চেতনার ক্ষেত্রে মিল থাকায় উদ্দীপকের মঞ্জুলীর বাবা তাহেরার বাবার সার্থক প্রতিনিধি।
➠ আমাদের সমাজের অনেকেই স্বার্থবাদী চেতনার নিগঢ়ে আবদ্ধ। তারা স্বার্থের কাছে হেরে গিয়ে নিজের বুদ্ধি-বিবেক বিসর্জন দেয়। সমাজের পুরুষেরা নিজের মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদের মতামতের কোনো তোয়াক্কাই করে না। আর এই মানসিকতা ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার বাবার মাঝে ফুটে উঠেছে। তিনি নিজের স্বার্থচিন্তা নিমগ্ন হয়ে মেয়ের মতামত যাচাই না করে বুড়ো পীরের সাথে বিয়ে ঠিক করেন।
➠ উদ্দীপকে মঞ্জুলীর বাবা নিজের স্বার্থচিন্তায় মগ্ন। স্বার্থের কাছে হেরে গিয়ে সে নিজের বিবেক-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়েছে। তার মাঝে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনোভাব থাকায় সে সংসারে নারীর কোনো মতামতকে গুরুত্ব দেয় না। তাই মঞ্জুলী এবং তার মায়ের অমত থাকা সত্ত্বেও সে নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে অটল থাকে। মূলত স্বার্থবাদী চেতনায় বন্দি থাকার কারণে মঞ্জুলীর বাবার কর্মকাণ্ডে ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার বাবার কর্মকাণ্ডের সাথে সাদৃশ্যময় হয়ে উঠেছে।
➠ বহিপীর নাটকে তাহেরার বাবা যেমন স্বার্থবাদী চেতনার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন, উদ্দীপকের মঞ্জুলীর বাবাও তাই করেছেন। তিনিও কুলীন ঘর দেখে মেয়ের সাথে পাত্রের বয়সের ব্যবধানে কোনো গুরুত্ব দেননি। বিয়েতে মেয়ের মত আছে কি নেই তারও কোনো তোয়াক্কা করেননি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে সংসারে পুরুষের আধিপত্য, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং নিজের স্বার্থচিন্তায় তাহেরার বাবা এবং মঞ্জুলীর বাবা একইরকম বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দিয়েছেন। ফলে তাদের চিন্তা-চেতনা এবং কর্মকাণ্ড একই ধরনের। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মঞ্জুলীর বাবা তাহেরার বাবার সার্থক প্রতিনিধি।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
লালসালু উপন্যাসের ভণ্ডপীর মজিদ কিশোরী জমিলাকে বিয়ে করে মাজারের সেবায় নিয়োজিত করে। কিন্তু জমিলা মজিদের ভণ্ডামির রহস্য বুঝতে পারে। সে মজিদের অবাধ্য হয়ে ওঠে। মজিদের গায়ে থু-থু মারে। স্বামী হিসেবে মজিদকে মেনে নেয়নি। বরং সে মজিদের বিরুদ্ধে আরও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। মজিদ শুধু বলে, নাফরমানি করিয়ো না।
ক. “কিন্তু আমাদের বজরায় কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না”- উক্তিটি কার?
খ. বহিপীর বইয়ের ভাষায় কথা বলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের মজিদ ও ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীর চরিত্রের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রটিকে পুরোপুরি নির্দেশ করে কি? বিচার করো।
ক. “কিন্তু আমাদের বজরায় কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না”-উক্তিটি খোদেজার।
খ. বহিপীর তাঁর কথায় ভাবগাম্ভীর্য আনার জন্য বইয়ের ভাষায় কথা বলেন।
➠ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহিপীরের মুরিদ রয়েছে। তারা একেকজন একেক ভাষায় কথা বলে। তাদের সাথে কথা বলার জন্য বহিপীর প্রমিত ভাষাকে বেছে নিয়েছেন। এই প্রমিত ভাষা হলো বইয়ের ভাষা। বহিপীরের মতে এই ভাষা পবিত্র ও ভাবগম্ভীর। বহিপীর ধর্মীয় কথা বলার তাতে ভাবগাম্ভীর্য আনতে চেয়েছেন। তাই তিনি বইয়ের ভাষায় কথা বলেন।

গ. মানুষের কুসংস্কার ও ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মব্যবসা করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকের মজিদ ও ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীর চরিত্রের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
➠ আমাদের সমাজে পীরপ্রথা জেঁকে বসেছে। গ্রামের অশিক্ষিত সহজ-সরল মানুষের কুসংস্কার ও ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে অনেকেই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভণ্ডপীরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর চরিত্রটি তেমনই এক ভণ্ডচরিত্র। অত্যন্ত ধূর্ত ও বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন বহিপীর সারা বছর মুরিদদের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে যান।
➠ উদ্দীপকের মজিদ বহিপীরের মতোই একটি ভণ্ডচরিত্র। মজিদ গ্রামের মানুষের সরল ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ব্যবসা করেন। তিনি যে ভণ্ডপীর তা তার স্ত্রী জমিলা বুঝতে পেরেছেন। ‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর চরিত্রের মাধ্যমে মজিদের মতোই এমন ভণ্ডপীরদের মুখোশ উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে।

ঘ. ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা থাকায় উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রটিকে পুরোপুরি নির্দেশ করে না।
➠ আমাদের সমাজে নারীরা পুরুষতান্ত্রিকতার শিকার হয়ে অসহায় অবস্থায় থাকে। তাদেরকে পুরুষের সকল নির্দেশ মেনে চলতে হয়। কিন্তু ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রটি এর ব্যতিক্রম। তাহেরা নিজের মতামত এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঘর ছেড়েছে, তবু অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এই তাহেরা চরিত্রের মাঝে অনমনীয় এবং মানবিক চরিত্রের এক অপূর্ব সম্মিলন ঘটিয়েছেন।
➠ উদ্দীপকের জমিলা একটি অনমনীয় চরিত্র। সে মজিদের ভণ্ডামির রহস্য বুঝতে পেরে এর প্রতিবাদ করেছে। অন্যায়কে চোখের সামনে দেখে সে চুপ করে থাকতে পারে নি। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সংসারে নারীকে নমনীয় করে রাখা হয়। তাদেরকে পুরুষের সকল সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়। কিন্তু উদ্দীপকে জমিলা এই প্রথাকে ভেঙে দিয়েছে। সে নিজের স্বামীর ভণ্ডামির প্রতিবাদ করেছে। জমিলার এই অনমনীয়তার দিকটি ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
➠ উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি প্রতিবাদী চরিত্র হলেও তা ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার সাথে সম্পূর্ণরূপে মেলে না। কেননা জমিলা ভণ্ডপীর মজিদের সংসারে থেকে মজিদের বিরোধিতা করলেও তাহেরা নিজেকে বহিপীরের স্ত্রী হিসেবেই মেনে নেয়নি। তাহেরা বহিপীরের সাথে অত্যন্ত অনমনীয়তা দেখালেও জমিদারের অসহায়ত্বে তার মাঝে মানবিকতা প্রকাশ পায়। কিন্তু উদ্দীপকের জমিলার মধ্যে প্রতিবাদী চেতনা থাকলেও তাহেরার মতো মানবিকতার কোনো দিক ফুটে ওঠেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি তাহেরা চরিত্রকে পুরোপুরি নির্দেশ করেনি।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
রেবেকা বেগম, ভাই মজিদ মিয়ার রাইসমিল রক্ষা করার জন্য টাকা দিতে চাইলেন। কিন্তু শর্ত হলো যে, মজিদ মিয়ার মেয়ে নূরজাহানকে রেবেকা বেগমের ছেলে রবিনের সাথে বিয়ে দিতে হবে। রবিন মাদকাসক্ত। নূরজাহান এ বিয়েতে রাজি নয় বলে জানিয়ে দিলে মজিদ মিয়া রেবেকা বেগমের টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালেন। রেবেকা বেগম এবার বললেন, বিয়ের শর্তে নয়। বোন হিসেবে তিনি টাকা দিতে চান।
ক. বহিপীরের সহকারী কে ছিল?
খ. হাতেম আলি চিকিৎসার অজুহাতে শহরে গিয়েছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকে মজিদের মাঝে ‘বহিপীর’ নাটকের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “বহিপীরের মতোই উদ্দীপকের রেবেকা বেগমের বোধোদয় ঘটেছে”- উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার করো।
ক. বহিপীরের সহকারী ছিল হকিকুল্লাহ্।
খ. হাতেম আলি তার জমিদারি রক্ষায় বন্ধুর কাছে টাকা ধার করার জন্য চিকিৎসার অযুহাতে শহরে গিয়েছিলেন।
➠ হাতেম আলি রেশমপুরের জমিদার। টাকার অভাবে সান্ধ্য আইনে তাঁর জমিদারি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। জমিদারি রক্ষা করতে হলে তাঁর অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল। এজন্যই তিনি শহরে বন্ধুর কাছে টাকা ধার করতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জমিদারি হারানোর শঙ্কার কথা তিনি তাঁর পরিবারের কাজে গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি চিকিৎসার অজুহাতে শহরে গিয়েছিলেন।

গ. সংকটাপন্ন হওয়া ও সে অবস্থায় বিবেক সমুন্নত রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিক থেকে উদ্দীপকের মজিদের সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের হাতেম আলি চরিত্রের মিল রয়েছে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ হাতেম আলির মাঝে স্থিতধী, আত্মনিমগ্ন হাতেম উচ্চ মানবিক চেতনা সম্পন্ন চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। হাতেম আলি একজন ক্ষয়িষ্ণু জমিদার। সূর্যাস্ত আইনের কারণে তাঁর জমিদারি হারানোর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। জমিদারি রক্ষার জন্য অর্থসংকটে ভুগলেও নিজের আত্মসম্মান রক্ষায় তিনি বহিপীরের শর্ত ফিরিয়ে দিয়েছেন।
➠ উদ্দীপকে মজিদ চরিত্রের প্রবল মানবিক চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। মজিদ নিজের রাইস মিল রক্ষার জন্য মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার শর্তে টাকা পেলেও তিনি সে টাকা গ্রহণ না করে সুবিবেচকের পরিচয় দিয়েছেন। ‘বহিপীর’ নাটকের হাতেম আলিও একই ধরনের সমস্যায় পড়েন। তবু তিনি নিজের নৈতিকতা বিসর্জন দেননি।

ঘ. বিনা শর্তে ভাইকে টাকা দিতে চাওয়ায় উদ্দীপকের রেবেকা বেগমের চরিত্রের মাঝে বহিপীরের মতোই মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
➠ ‘বহিপীর’ উপন্যাসে বর্ণিত বহিপীর চরিত্রের মাঝে বাস্তবজ্ঞান ও বিবেকবোধের প্রকাশ ঘটেছে। বহিপীর তাহেরাকে পাওয়ার জন্য নানা রকম চালাকির আশ্রয় নিলেও একসময় তাঁর মধ্যে মানবিকতাবোধ জাগ্রত হয়। ফলে তিনি ভুল পথ থেকে সরে আসেন। এর মাধ্যমে বহিপীরের নৈতিকতাবোধ ও বাস্তবজ্ঞানের প্রকাশ ঘটে।
➠ উদ্দীপকে রেবেকা বেগমের মাঝে বহিপীরের মতোই স্বার্থ হাসিলে কূটকৌশল গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তিনি ভাইয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নিজের মাদকাসক্ত ছেলের সাথে ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বহিপীরের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষণীয়। তিনি হাতেম আলির অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাহেরাকে ফেরত পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রেবেকা এবং বহিপীর উভয়ই তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয় এবং নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেন।
➠ বহিপীর তাহেরাকে পাওয়ার বিনিময়ে হাতেম আলিকে টাকা দিতে চাইলেও একসময় তাঁর বোধোদয় হয় এবং বিনা শর্তে টাকা দিতে চান। উদ্দীপকের রেবেকাও একসময় বিনা শর্তে ভাইকে টাকা দিতে চান। দুজনের ক্ষেত্রেই স্বার্থবাদী মনোভাব পরিহারের প্রবণতাটি লক্ষণীয়। স্বার্থের মোহ মানুষকে অনেক সময় অন্ধ করে দেয়। অনেক সময় মানুষ তার ভুল বুঝতে পারে ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নাটকের বহিপীর ও উদ্দীপকের রেবেকা উভয়ের ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি সত্য। তাই বলা যায়, বহিপীরের মতোই উদ্দীপকের রেবেকা বেগমের বোধোদয় ঘটেছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭
স্তবক-১ : মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?
স্তবক-২ : বল কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী-
পার হয় তোমাকে ধরে-
দুর্বল মানুষ যদি।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষ সংলাপটি কার?
খ. “এমন মেয়েও কারও পেটে জন্মায় জানতাম না”- কথাটি বলার কারণ কী?
গ. জমিদারি হারাতে বসা হাতেম আলির কাছে বহিপীরের প্রস্তাব স্তবক-১-এর ‘সহানুভূতি’ শব্দটির রূপক হতে পারে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তাহেরার প্রতি হাশেমের মনোভাব স্তবক-২- এর আলোকে মূল্যায়ন করো।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষ সংলাপটি বহিপীরের।
খ. তাহেরার দুঃসাহস লক্ষ করে ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত জমিদারের স্ত্রী খোদেজা তাহেরার উদ্দেশে উক্তিটি করেছেন।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে পীরের সাথে বিয়ে দিলে সে ঘর ছেড়ে পালায়। তাহেরা কিছুতেই একজন বুড়ো পীরকে স্বামী হিসেবে মানতে চায় না। পীরের হাত থেকে রক্ষা পেতে সে মরিয়া হয়ে ওঠে, আত্মহত্যার ভয় দেখায়। কিন্তু কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর স্বামীর ঘর করবে না এটা মেনে নিতে পারছিলেন না জমিদারের স্ত্রী খোদেজা। বিশেষত স্বামী যখন একজন পীর তখন কোনো মেয়ের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খোদেজার কাছে অকল্পনীয়। তাই খোদেজা এমন উক্তি করেছেন।

গ. জমিদারি হারাতে বসা হাতেম আলির কাছে বহিপীরের প্রস্তাব স্তবক-১-এর ‘সহানুভূতি’ শব্দটির রূপক হতে পারে না। কারণ বহিপীরের প্রস্তাবটি ছিল উদ্দেশ্যমূলক।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর একটি ধর্মব্যবসায়ী সুযোগসন্ধানী চরিত্র। ধর্মকেই তিনি জীবনজীবিকার অবলম্বন বানিয়েছেন। এই পীর তাঁর এক মুরিদের কিশোরী মেয়ে তাহেরাকে বিয়ে করেন। তাহেরা তাঁর হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়ি ছেড়ে পালায়। ঘটনাক্রমে তাহেরা জমিদার হাতেম আলির বজরায় আশ্রয় নেয়। সেখানে বহিপীর জমিদারের অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণ করে। জমিদারকে তাঁর জমিদারি বাঁচানোর টাকা ধার দিতে চান তাহেরাকে ফেরত পাওয়ার বিনিময়ে।
➠ উদ্দীপকে মানুষের সাথে মানুষের মানবিক আচরণের কথা বলা হয়েছে। মনুষ্যত্বের ধর্মই হচ্ছে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। একটি জীবন যেন আরেকটি জীবনের জন্য সহযোগী হয়ে উঠতে পারে। মানুষের দুঃখ যেন আর একটি মানুষ ভাগ করে নিতে পারে। মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি হতে হবে শর্তহীন। তা হতে হবে কেবলই মানবিক বিবেচনা থেকে। কিন্তু ‘বহিপীর’ নাটকে হাতেম আলির প্রতি পীর সাহেবের দেখানো সহানুভূতি আসলে ছিল তাহেরাকে পাওয়ার জন্য কৌশলমাত্র। স্বার্থসিদ্ধির ভাবনা জড়িত থাকায় জমিদারি হারাতে বসা হাতেম আলির কাছে বহিপীরের প্রস্তাব ‘সহানুভূতি’ শব্দটির রূপক হতে পারে না।

ঘ. স্তবক-২ -এর মনোভাব তাহেরার প্রতি হাশেমের সহযোগিতামূলক মনোভাবেরই প্রতিচ্ছবি।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকের বর্ণিত হাশেম একটি প্রতিবাদী চরিত্র যুবক। সে শিক্ষিত ও সংস্কারমুক্ত। তাহেরার সমস্যা বুঝে হাশেম তাকে সাহায্য করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। বৃদ্ধ ও কপট বহিপীরের হাত থেকে তাহেরাকে বাঁচানোর জন্য নিজেই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। মায়ের কাছে তাহেরার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেছে। বহিপীরের কূটচাল থেকে তাহেরাকে রক্ষার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে।
➠ স্তবক-২ -এ জীবনের এক চরম সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। সমাজের দুর্বল মানুষেরা যদি একজন সবল মানুষকে আশ্রয় করে কোনো সুবিধা বা কল্যাণ লাভ করে তবে তাতে তো দোষের কিছু নেই। জীবনের অথৈ নদীতে অসহায় মানুষ যাতে ডুবে না মরে সেজন্য শক্তিমান মানুষের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো। তার জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করা। এতে তো কোনো ক্ষতি নেই বরং এটি তার কর্তব্য। ‘বহিপীর নাটকের বর্ণিত হাশেম অসহায় তাহেরার পাশে এভাবেই দাঁড়িয়েছে।
➠ উদ্দীপকের হাশেমের মাঝে মানবিকতাবোধ পুরোপুরি বিদ্যমান। তার মানসিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা অনুসরণযোগ্য। কারো বিপদাপন্ন অবস্থাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা কাপুরুষতা। তাই সে জীবনসংকটে নিপতিত তাহেরার জীবন বাঁচিয়েছে। তাহেরার জীবন যাতে ব্যর্থ হয়ে না যায়, সে জন্য তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছে। হাশেমের সাহসী ও প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে একটি অসহায় মেয়ে শেষ পর্যন্ত স্বপ্নময় জীবনের সন্ধান পায়। তাই বলা যায়, তাহেরার প্রতি হাশেমের মনোভাব এবং স্তবক-২ -এর মনোভাব এক ও অভিন্ন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮
মীনার বয়স পনেরো। তার বিয়ের জন্য বাবা পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ধনাঢ্য পাত্র ঠিক করেছে। এ বিয়েতে মীনার মত নেই। কিন্তু বাবার সামনে প্রতিবাদ করার মতো শক্তি নেই তার, সে শুধু কাঁদে।
ক. হাতেম আলির জমিদারি কোথায় ছিল?
খ. পীরসাহেবকে বহিপীর বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের মীনার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের কোন চরিত্রে সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মীনা তাহেরাকে প্রতিনিধিত্ব করছে।-বিশ্লেষণ করো।
ক. হাতেম আলির জমিদারি ছিল রেশমপুরে।
খ. পীরসাহেব বইয়ের ভাষা তথা সাধু ভাষায় কথা বলেন বলে তাঁকে বহিপীর বলা হয়।
➠ আমাদের দেশে পীর প্রথার প্রচলন থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ পীরের ভক্ত হয়। কিন্তু দেশের সব অঞ্চলের মানুষের ভাষা এক নয়। ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত পীরসাহেব এজন্য সব অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের সুবিধার্থে বইয়ের ভাষায় কথা বলেন। আর এই বইয়ের ভাষায় কথা বলার কারণেই তাঁকে বহিপীর বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের মীনার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার সাদৃশ্য রয়েছে। উভয়ের বাবা তাদের অমতে জোরপূর্বক বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার বাবা বৃদ্ধ জোরপূর্বক বহিপীরের সাথে বিয়ে দিয়েছিল। কেবল পীরকে খুশি করার জন্যই নিষ্পাপ কিশোরী মেয়ে তাহেরাকে তার অমতেই বিয়ে দেওয়া হয়। তাহেরার বাবা পীরভক্ত ও ধর্মান্ধ হওয়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
➠ উদ্দীপকের মীনার বয়স পনেরো হলেও তার বাবা একজন ধনাঢ্য পাত্রের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। এটি একটি অসম বিয়ে তাই মীনার এতে মত নেই। প্রতিবাদ করার সাহস না থাকায় সে শুধু বসে বসে কাঁদছিল। ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার মতো উদ্দীপকের মীনাকেও তার বাবা তার অমতে বিয়ে দিতে চায়। এদিক থেকেই উভয়ের মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. নারীর অসহায়ত্বের দিক দিয়ে উদ্দীপকের মীনা ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরাকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর এক অসাধারণ সৃষ্টি। লেখক ধর্মের নামে কথিত পীরের ভণ্ডামির পাশাপাশি অসহায় নারীর করুণ আর্তি প্রকাশ করেছেন। একটি মেয়ে কার সাথে ঘর করবে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে যদি তার মতামতের কোনো মূল্যই না থাকে তবে তা সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে না। কারণ এতে তার জীবনটাই অর্থহীন হয়ে পড়ে। নাটকের তাহেরা এমন অসঙ্গতিরই শিকার।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত মীনার বাবা পঞ্চাশোর্ধ্ব ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। তারা বাবা তার মেয়ের ভালো লাগা মন্দ লাগার দিকে না তাকিয়ে অর্থ বিত্তকেই প্রাধান্য দিয়েছে। মীনার চোখের পানিতে অবিবেচক বাবার মন গলেনি। হৃদয়হীন মানুষের মতো সে নিজ মেয়ের অমতেই তার বিয়ে ঠিক করেছে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরাকে তার অমতে জোর করে বিয়ে দেয় তার বাবা ও সৎ মা। অন্যদিকে উদ্দীপকের মীনাকেও তার বাবা বিয়ে দিতে যায় তার মতামত না নিয়েই। নারী একসময় এমনভাবে অবহেলিত ছিল। তাদের মতামতের কোনো মূল্য ছিল না। ফলে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদের ওপর অনেক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হতো। নারীর এই অসহায় অবস্থা বিবেচনায় মীনা তাহেরাকে প্রতিনিধিত্ব করছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী প্রমা। তার যেমন বুদ্ধি তেমনই সাহস। একদিন রাতের বেলা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি থেকে ফেরার সময় তিনজন বখাটে ছেলে তার পথ আটকায়। সে মোটেও ভয় পায় না। বিপদ বুঝে প্রমা মোবাইলে শাহবাগ থানায় ডায়াল করে ঐ ছেলেদের সাথে হাসিমুখে কথা বলতে থাকে। কথার ছলে সে পুলিশকে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিলে দ্রুত পুলিশ এসে সেখানে পৌঁছে। তাদের একজন পালিয়ে গেলেও বাকি দুজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। লোকজন বলাবলি করতে থাকে ‘মেয়েটির সাহস আছে বটে’।
ক. বজরা কোন ঘাটে থেমেছিল?
খ. হাতেম আলির মন বিষণ্ণ কেন?
গ. প্রমার সাথে তাহেরার সাহসিকতার তুলনা করো।
ঘ. প্রমার সামাজিক বাস্তবতা- ‘বহিপীর’ নাটকের আলোকে মূল্যায়ন করো।
ক. বজরা ডেমরা ঘাটে থেমেছিল।
খ. জমিদারি হারানোর শঙ্কায় হাতেম আলির মন বিষণ্ণ।
➠ সান্ধ্য আইনের কারণে হাতেম আলি তার জমিদারি হারাতে বসেছেন। জমিদারি রক্ষার জন্য তিনি অসুস্থতার অজুহাতে শহরে বন্ধুর কাছে টাকা ধার করতে আসেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। ফলে পরদিন হাতেম আলির জমিদারি নিলামে উঠবে টাকা পরিশোধ করতে না পারায়। আর এই শঙ্কাতেই হাতেম আলির মন বিষণ্ণ।

গ. প্রতিবাদী চেতনা ধারণ ও সাহসিকতার দিক থেকে উদ্দীপকের প্রমার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরায় তুলনা করা যায়।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরাকে তার বাবা ও সৎমা জোর করে বিয়ে দিলেও তাহেরা তা মেনে নেয়নি। প্রতিবাদস্বরূপ সে ঘর ছেড়ে পালায়। পালিয়ে সে কোথায় যাবে সে ভাবনা না ভেবেই সে এই দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। বৃদ্ধ পীরের দাসী হয়ে সে থাকতে চায়নি। সে মনে করেছে ওই জীবনে তার কোনো মর্যাদা নেই। তাই ভাগ্যে যাই ঘটুক সে অজানার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
➠ উদ্দীপকের প্রমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। রাতের বেলা বখাটেরা তার পথ আটকালেও সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়নি। যার বিপদের কথা সে শাহবাগ থানাকে কৌশলে জানিয়ে দেয়। পুলিশ বখাটেদের গ্রেফতার করে। বুদ্ধিমত্তার জোরে সে বখাটেদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে। ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত তাহেরাও এমন সাহসের পরিচয় দিয়েছে, বুদ্ধিমত্তাও দেখিয়েছে। তাই বলা যায়, প্রমা ও তাহেরা দুজনেই সাহসী তরুণী। যারা ভয়কে জয় করতে পেরেছে।

ঘ. সময় ও প্রেক্ষিত বিবেচনায় উদ্দীপকের প্রমার সামাজিক বাস্তবতা এবং ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার সামাজিক বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন।
➠ যে সামাজিক বাস্তবতায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ‘বহিপীর’ নাটক রচনা করেছেন সেই বাস্তবতায় নাটকের প্রতিটি ঘটনা ও কাহিনীবিন্যাস অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই সমাজে ধর্মীয় কুসংস্কার ছিল ব্যাপক মাত্রায়। তখন ভণ্ডপীরদের দৌরাত্ম্য ছিল বেশি। পুরুষশাসিত সমাজে অবদমিত ছিল নারীর অধিকার। সমাজে সামন্তবাদী প্রথা চালু ছিল।
➠ উদ্দীপকের প্রমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। রাতের বেলা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি থেকে ফেরার সময় তিন বখাটে তার পথ আটকায়। বিপদ বুঝে সে কৌশলে পুলিশকে জানিয়ে দেয়। পুলিশ এসে বখাটেদের গ্রেফতার করে। উদ্দীপকের ঘটনাটি আধুনিক বাস্তবতার উদাহরণ হলেও ‘বহিপীর’ নাটকের বাস্তবতা ভিন্নতর।
➠ উদ্দীপকের প্রমার হাতের মুঠোয় আধুনিক প্রযুক্তি। সমাজে নারী স্বাধীনতার বিষয়টি উদ্দীপকে লক্ষণীয়। প্রমার এই সামাজিক বাস্তবতার ফলে সে সহজেই বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছে।
➠ অন্যদিকে তাহেরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল না। তার কাছে ছিল না আধুনিক প্রযুক্তিও। প্রাথমিকভাবে তাই ধর্মীয় কুসংস্কারের বলি হতে হয়েছিল তাকে। নারী হওয়ায় তার অনুভূতির প্রতি কেউ সম্মান জানায়নি। পীরের বদদোয়া লাগার ভয়ে সহায়তা করতে সাহস পায়নি। আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক হাশেম আলি তাকে সাহায্য না করলে হয়তো তার জীবনটা অনিশ্চয়তার আবরণেই ঢেকে যেত। তাই বলা যায়, প্রমার বাস্তবতা তাহেরার বাস্তবতার চেয়ে ভিন্ন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০
রাহেলার বয়স তেরো। দিনমজুর বাবা যৌতুকের টাকার অভাবে পিতার বয়সী এক লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করে। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয় রাহেলা। গার্মেন্টে চাকরি করে বাবার কষ্ট নিবারণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় সে।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষে সংলাপটি কার?
খ. একবার ঝুট কথা বললে উপায় নেই কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের রাহেলা এবং ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা সর্বক্ষেত্রে এক রকম নয়- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকের শেষে সংলাপটি বহিপীরের।
খ. একবার ঝুট কথা বললে তাকে ঢাকতে আরো অসংখ্য মিথ্যে কথা বলতে হয় বিধায় মিথ্যা একবার বললে আর উপায় নেই।
➠ জমিদার হাতেম আলি মিথ্যা কথা বলে শহরে এসেছেন। তাঁর অসুস্থতা না থাকলেও তিনি অসুস্থতার ভান করে শহরে ডাক্তার দেখাবেন বলে এসেছেন। কিন্তু তিনি যে উদ্দেশ্যে এসেছেন তা ব্যর্থ হয়ে এখন সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এজন্য এই মিথ্যা রক্ষা করতে আরো মিথ্যা বলতে হয়। তাই জমিদার বলেছেন একবার ঝুট কথা বললে আর উপায় নেই।
গ. অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত তাহেরার প্রতিবাদের দিকটি উদ্দীপকের রাহেলার মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তাহেরা। কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাবা ও সৎমা তাকে জোরপূর্বক বৃদ্ধ পীরের সাথে বিয়ে দেয়। তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই ঘটনা সে মেনে নেয়নি। উপায়ান্তর না দেখে সে ছোট এক চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীকালে জমিদারের বজরায় অবস্থানকালেও সে ছিল অনমনীয়। পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরবে তবু বহিপীরের ঘর সে করবে না, এটিই ছিল তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
➠ উদ্দীপকের কিশোরী রাহেলার বিয়ে ঠিক করা হয় পিতার বয়সী এক লোকের সাথে। বাবা যৌতুক দিতে পারবে না বলেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়। রাহেলা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং বিয়ে ভেঙে দেয়। বাবার দরিদ্র দশা দূর করতে সে গার্মেন্টে চাকরি করার উদ্যোগ নেয়। রাহেলার এই ভূমিকা ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া বিয়ের বিরুদ্ধে তাহেরার প্রতিবাদের দিকটিই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. অবস্থানগত কারণে উদ্দীপকের রাহেলা এবং ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা সর্বক্ষেত্রে এক রকম নয়।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধ বহিপীরের সাথে। তাহেরা মনে করেছে, এই পীরের সাথে ঘর করলে তার জীবনটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীকালে সে কোথায় থাকবে, কী করবে ইত্যাদি কোনো কিছু না ভেবেই ঘর ছাড়ে।
➠ উদ্দীপকের রাহেলার বিয়ে ঠিক হয় বাবার বয়সী এক মানুষের সাথে। রাহেলা এর তীব্র প্রতিবাদ করে বিয়ে ভেঙে দেয়। সেই সাথে সংসারের দারিদ্র্য দূর করার জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার এমন উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব ছিল না।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকের বাবা ও সৎমায়ের কাছে তাহেরা ছিল অনেকটা বোঝার মতো। বাবা ও সৎমা তাদের পীরকে খুশি করার জন্য তাহেরাকে পীরের হাতে তুলে দেয়। যে ঘটনার সাথে একজন সুযোগসন্ধানী ধূর্তপীর জড়িয়ে গেছে সেখানে তাহেরা উপায়হীন হয়ে পড়ে। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলেও তেমন লাভ হতো না। তাই পারিবারিক সমাধানের বিষয়টি তার কাছে মূল্যহীন হয়ে যায়। অন্যদিকে উদ্দীপকের রাহেলা ছিল অনেকটা স্বাধীন। সে নিজের মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছে। প্রতিবাদ করতে পেরেছে। জয়ীও হয়েছে। সেই সাথে পরিবারের সমস্যা দূরীকরণে আত্মপ্রত্যয়ী হয়েছে। উভয়েই প্রতিবাদী চরিত্র হলেও উদ্দীপকের রাহেলা এবং ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা সর্বক্ষেত্রে এক রকম নয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১
উচ্চশিক্ষিত শৈলী বিয়ের পর শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হয়। এতে তার স্বামী সামান্য অনীহা প্রকাশ করেন। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় শৈলীর স্বামী পঙ্গু হয়ে পড়লে শৈলীকে সংসারের হাল ধরতে হয়। এবার শৈলীর স্বামী উপলব্ধি করেন, সুখী ও সুন্দর সমাজ গঠনে নারীর স্বনির্ভরতা আবশ্যক।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকে ডেমরাঘাট থেকে উদ্ধার করা মেয়েটির নাম কী?
খ. ‘এমন মেয়েও পেটে কারো জন্মায় জানতাম না’- এ কথাটি বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকের শৈলী আর ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা চরিত্রের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “শৈলীর চেতনা প্রগতিশীল কিন্তু তাহেরার জীবনযাত্রা ছিল অনিশ্চিত”- কথাটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
ক. ‘বহিপীর’ নাটকে ডেমরাঘাট থেকে উদ্ধার করা মেয়েটির নাম তাহেরা।
খ. [সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ (খ) - এর উত্তর দেখো]
গ. সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের শৈলী আর ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যামান।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরা নারী অধিকার ও জাগরণের প্রতীক। তাহেরা শিক্ষিত না হলেও বুদ্ধিমতী ও স্পষ্টবাদী। সে সবসময় তার নিজস্বতা ও ব্যক্তিত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখতে চেষ্টা করেছে। তবে সে কোনো কর্মসংস্থান বা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেনি। সেই সামাজিক বাস্তবতায় হয়তো সেটি সম্ভব ছিল না। হাশেমের হাত ধরেই শেষ পর্যন্ত সে তার জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছিল।
➠ উদ্দীপকে শৈলী উচ্চশিক্ষিত। সে বিয়ের পর শিক্ষকতা শুরু করে। স্বামী পঙ্গু হয়ে গেলে সে-ই সংসারের হাল ধরে। একজন আত্মনির্ভরশীল নারী হিসেবে শৈলী নিজেকে গড়ে তোলে। কিন্তু নাটকের তাহেরার বাস্তবতার সেটি সম্ভব ছিল না।

ঘ. জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য উদ্দীপকের শৈলী সচেষ্ট ও আত্মনির্ভরশীল হলেও ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরার ক্ষেত্রে সেটি দেখা যায় না।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে তাহেরা এক সাহসী নারী। তার ভেতর আবেগ, অনুভূতি, মর্যাদাবোধ ছিল। কিন্তু সে বাস্তববাদী ছিল না। কারণ সে কোনো কিছু না ভেবেই বহিপীরের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাকে নির্ভর করতে হয়েছে মানুষের সহানুভূতি ও মানবিকতার ওপর।
➠ উদ্দীপকের শৈলী যথেষ্ট বাস্তববাদী একজন নারী। বিয়ের পর তাই শিক্ষকতার চাকরিকে বেছে নিয়েছে। স্বামী দুর্ঘটনায় পঙ্গু হলে সে সংসারে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। শৈলীর এই জীবনধর্মী ও বাস্তব পদক্ষেপে তার স্বামীও বুঝতে পেরেছে সুখী সুন্দর সমাজের জন্য নারীর একটি মজবুত অবস্থান দরকার। ‘বহিপীর’ নাটকের তাহেরা কারও মনে এমন পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে হাশেম যদি তাহেরার পাশে না দাঁড়াতো তাহলে তাহেরার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ত। ঘর ছেড়ে পালানোর সময় তাহেরার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তাহেরার বাস্তবতায় সেটি সম্ভবও ছিল না। তবে তাহেরার জীবনের যেকোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি ছিল না সেটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। সে অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু উদ্দীপকের শৈলী পরিশ্রম ও দক্ষতার মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। তার রয়েছে নিজস্ব পরিকল্পনা। স্বামীর জীবনে বড় একটি দুর্ঘটনার পরও সে হেরে যায়নি। বরং এগিয়ে চলছে সাহসিকতার সাথে। তাই বলা যায়, শৈলীর চেতনা প্রগতিশীল কিন্তু তাহেরার জীবনযাত্রা ছিল অনিশ্চিত- উক্তিটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২
চৌধুরী সাহেবের ছেলে মেধাতালিকায় স্থান না পেলেও চৌধুরী সাহেব তাকে ঐ স্কুলেই পড়াতে চান। তিনি প্রধান শিক্ষক কিবরিয়া সাহেবকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখান। পারিবারিক অনটনের কথা মাথায় এলেও অন্য একটি মেধাবী ছেলেকে বঞ্চিত করতে কিবরিয়া সাহেবের মন সায় দেয় না। তিনি চৌধুরী সাহেবের প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেন। চৌধুরী সাহেব এতে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন এবং কিবরিয়া সাহেবকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়ে যান।
ক. বহিপীর নাটকের রচয়িতা কে?
খ. তাহেরা উঁকি দিয়ে পীরসাহেবকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় কেন?
গ. ‘বহিপীর’ নাটকের হাতেম আলির সাথে উদ্দীপকের কিবরিয়া সাহেবকে কোন দিক থেকে মেলানো যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “মানুষের সততা ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীর এবং উদ্দীপকের চৌধুরী সাহেবের মনে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে”- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
ক. বহিপীর নাটকের রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
খ. যে পীরের সাথে বিয়ে দেওয়ায় তাহেরা পালিয়ে এসেছে তাকেই বজরায় দেখতে পেয়ে আতকে স্তব্ধ হয়ে যায়।
➠ তাহেরা একটি কম বয়সী বালিকা। কিন্তু তার পিতা জোর করে তার সাথে এক বুড়ো পীরের বিয়ে দেয়। এই বিয়ে তাহেরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাই বিয়ের রাত্রেই পালিয়ে যায়। ঘটনাক্রমে সে জমিদার হাতেম আলির আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে ঐ পীরসাহেবও ঝড়ের কবলে পড়ে আশ্রয় নেন। তাহেরা উঁকি দিয়ে বজরার আরেক কামরায় তাঁকে দেখেই স্তব্ধ হয়ে যায়।
গ. ‘বহিপীর’ নাটকে জমিদার হাতেম আলি এবং উদ্দীপকের কিবরিয়া সাহেব সততা প্রদর্শনের দিক থেকে তুলণীয়।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে বর্ণিত হাতেম আলি এক ক্ষহিষ্ণু জমিদার। খাজনা বাকি পড়ায় তাঁর জমিদারি নিলামে উঠেছে। ধূর্ত বহিপীর হাতেম আলির এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাহরোকে তার হাতে তুলে দেওয়ার শর্তে টাকা কর্জ দিতে চায়। জমিদার পরিবারকে বাঁচাতে তাহেরা এই শর্তে রাজি হলেও হাতেম আলির ভেতরে মনুষ্যত্ববোধ জেগে ওঠে। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন তাঁর জমিদারি চলে গেলেও তিনি অন্যায় শর্তে একটি অসহায় মেয়েকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দেবেন না। তাই বহিপীরকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি ওই শর্তে কর্জ নেবেন না।
➠ উদ্দীপকে বর্ণিত প্রধান শিক্ষক কিবরিয়া সাহেব টাকার লোভে অন্যায় ও অমানবিক কাজ করতে রাজি হননি। একটি মেধাবী ছাত্রকে বঞ্চিত করে চৌধুরী সাহেবের কথামতো অর্থের লোভে তার সন্তানকে ভর্তি করা অনৈতিক বিবেচনা ভেবেছেন। ফলে তিনি অন্যায় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। চৌধুরী সাহেবের হুমকি সত্ত্বেও তিনি সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। ‘বহিপীর’ নাটকেও আমরা লক্ষ করি সুযোগসন্ধানী বহিপীরের প্রস্তাব জমিদার হাতেম আলি প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিজের জীবনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জেনেও সততা, মানবিকতা ও নীতি আদর্শকে বড় করে দেখেছেন।

ঘ. মানুষের সততা ‘বহিপীর’ নাটকের ধূর্ত অর্থলোভী বহিপীরের মাঝে মানবিকতা সৃষ্টি করলেও উদ্দীপকের চৌধুরী সাহেবকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করেছে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে স্বার্থান্বেষী বহিপীর তাঁর মুরিদদের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মব্যবসা পরিচালনা করেন। এভাবে তিনি প্রচুর অর্থবিত্তের মালিকও হয়েছেন। অন্ধভক্ত মুরিদ সওয়াব লাভের আশায় তার কিশোরী কন্যাকে বহিপীরের হাতে তুলে দেয়। পীরের হাত থেকে বাঁচার জন্য কিশোরী তাহেরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাক্রমে জমিদার হাতেম আলির বজরায় তাদের সাক্ষাৎ ঘটে। তাহেরাকে পাওয়ার জন্য বহিপীর মরিয়া হয়ে ওঠেন। জমিদারি বাঁচাতে হাতেম আলিকে টাকা কর্জ দেওয়ার প্রস্তাব করেন বহিপীর। বিনিময়ে তাহেরাকে তাঁর হাতে তুলে দিতে বলেন। এক পর্যায়ে তাহেরা রাজি হলেও জমিদার টাকা নিতে রাজি হননি। একটি অসহায় মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাননি। এ ঘটনার বহিপীরের মাঝেও নৈতিকতা জেগে ওঠে।
➠ উদ্দীপকের চৌধুরী সাহেব ছেলের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও স্কুলে ভর্তির করার জন্য প্রধান শিক্ষক কিবরিয়া সাহেবকে মোট টাকার প্রলোভন দেখান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অন্য একজন মেধাবী ছাত্রকে বঞ্চিত করতে রাজি হননি। এতে চৌধুরী সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। প্রধান শিক্ষকের মতো চৌধুরীর সাহেবের মনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি বরং তিনি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছেন।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে জমিদার হাতেম আলীর সততার দৃষ্টান্ত দেখে ধূর্ত ও সুযোগসন্ধানী বহিপীরের মাঝেও মানবিক চেতনা জাগ্রত হয়। বহিপীর পরে কোনো শর্ত ছাড়াই হাতেম আলীর জমিদারি রক্ষা করার জন্য তার পাশে দাঁড়ান। তাহেরাকে জোর করে পাওয়ার মনোবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসেন। অন্যদিকে উদ্দীপকে প্রধান শিক্ষক কিবরিয়া চৌধুরী সাহেবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁর মনে এই সততা ও নৈতিকতার কোনোই প্রভাব পড়েনি। উল্টো প্রধান শিক্ষককে তিনি ভয়ভীতি দেখান। তাই বলা যায়, মানুষের সততা ‘বহিপীর’ নাটকের বহিপীর এবং উদ্দীপকের চৌধুরী সাহেবের মনে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩
সকলে বলে মনোয়ার হাজি একজন কামেল লোক। তার কাছে পানি পড়া নিলে যেকোনো রোগ ভালো হয়ে যায়। স্থানীয় চাষি গণি মিয়া বুকের ব্যথা সারানোর জন্য হাজি সাহেবের কাছে যেতে চাইলে তার কলেজপড়ুয়া ছেলে এর জন্য ডাক্তার দেখানোই ভালো বলে মন্তব্য করে। গণি মিয়া ছেলেকে ধমক দিয়ে বলে, চুপ কর বেয়াদব, উনি কামেল পীর। ওনার গজব পড়লে ধ্বংস হয়ে যাবি।
ক. আপনার তো বুড়োর সাথে বিয়ে হয়নি - তাহেরা এ কথা কাকে বলেছিল?
খ. খোদেজা তাহেরাকে পীরসাহেবের কাছে ফিরিয়ে দিতে চান কেন?
গ. উদ্দীপকের গণি মিয়ার মানসিকতার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের মূলভাবের প্রতিফলন ঘটেছে কি? তোমার মন্তব্য প্রতিষ্ঠা করো।
ক. আপনার তো বুড়োর সাথে বিয়ে হয়নি-তাহেরা এ কথা খোদেজাকে বলেছিল।
খ. পীরসাহেবের বদদোয়ার ভয়ে খোদেজা তাহেরাকে ফিরিয়ে দিতে চান।
➠ বৃদ্ধ পীরের সাথে বিয়েতে মত না থাকায় তাহেরা পালিয়ে এসেছিল। বহিপীর তাকে খুঁজতে এসে হাতেম আলির বজরায় পেয়ে যায়। পীরের দোয়া পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক কিছুই করে। খোদেজাও পীরের দোয়া পেতে চেয়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন বহিপীর বদদোয়া দিলে সংসারে ক্ষতি হবে। তাই পীরের বদদোয়া থেকে রক্ষা পেতে তিনি তাহেরাকে ফিরিয়ে দিতে চান।

গ. অন্ধবিশ্বাস পোষণের দিক থেকে উদ্দীপকের গণি মিয়ার মানসিকতার সাথে ‘বহিপীর’ নাটকের খোদেজা চরিত্রের মিল রয়েছে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে একজন সর্বগ্রাসী স্বার্থপর পীরের চরিত্র চিত্রণ করা হয়েছে। ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করেন। জমিদারপত্নী খোদেজা তেমনি পীরের অন্ধভক্ত। ধর্মভীরু খোদেজা একটি অচেনা অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দেন। যখনই জেনেছেন মেয়েটি পীরের পালিয়ে আসা স্ত্রী, তখন তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন। বিয়েটিকে অন্যায় মনে করলেও পীরের অভিশাপের ভয়ে ভীত থেকেছেন।
➠ উদ্দীপকের গণি মিয়া একজন চাষি। বুকে ব্যথা সারানোর জন্য সে কথিত কামেল পীর মনোয়ার হাজির কাছে যেতে চায় পানি পড়া আনার জন্য। তার বিশ্বাস পানি পড়া খেলে সে ভালো হয়ে যাবে। কলেজপড়ুয়া শিক্ষিত ছেলে এর প্রতিবাদ করলে গণি মিয়া রেগে যায় এবং পুত্রকে গালমন্দ করে। ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ও দেখায়। অসুখে বিসুখে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই সচেতন মানুষের কাজ। কিন্তু ধর্মীয় কুসংস্কার গণি মিয়াকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাই গণি মিয়ার এই ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের সাথে বহিপীর নাটকের খোদেজা চরিত্রের মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের মূলভাবের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। কারণ নাটকে সবশেষে সত্যই জয়যুক্ত হলেও উদ্দীপকে তা লক্ষ করা যায় না।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে শক্তিমান লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ধর্মের মুখোশধারী একজন পীরের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন। পীরসাহেব সারা বছর মুরিদদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান। তাদের কাছ থেকে অর্থ-সম্পদ সংগ্রহ করেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি একজন অন্ধভক্ত মুরিদের কিশোরী কন্যাকে বিয়ে করেন। প্রতিবাদী কিশোরী এই অন্যায় সিদ্ধান্ত না মেনে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। নানা কূটকৌশলে তাহেরাকে ফিরে পেতে চান বহিপীর। তাহেরার প্রতিবাদী ভূমিকা ও হাশেমের চারিত্রিক দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তাহেরা মুক্তি পায়।
➠ উদ্দীপকে ধর্মীয় কুসংস্কারের দিকটি আলোচিত হয়েছে। সেখানে গণি মিয়া তার চিরাচরিত ধর্মীয় কুসংস্কার অনুযায়ী বুকের ব্যথার উপশমের জন্য কথিত কামেল পীরের নিকট পানি পড়া আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার কলেজপড়ুয়া শিক্ষিত ছেলে এর প্রতিবাদ করে। কিন্তু গণি মিয়ার বদ্ধমূল বিশ্বাস যে, এতে ছেলে পীরের বদদোয়ায় ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে।
➠ ‘বহিপীর’ নাটকে ধর্মীয় গোঁড়ামি, ধর্মকে পুঁজি করে অর্থবিত্তের মালিক হওয়া, সত্য ও মানবাধিকারের পক্ষে জোরালো ও শক্ত অবস্থান, মানবিকতার জয় ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন সমাজের জমিদারি প্রথা পীরের উদ্দেশে সর্বস্ব নিবেদন করাসহ বহুবিধ বিষয় আলোচিত হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল ধর্মীয় কুসংস্কার ও এর প্রতিবাদের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা নেই। তাই উদ্দীপকে ‘বহিপীর’ নাটকের মূলভাবের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি।

Next Post Previous Post