‘বৃষ্টি’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

বৃষ্টি : ফররুখ আহমদ
 বৃষ্টি : ফররুখ আহমদ

মূলপাঠ:

বৃষ্টি এলো... বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি! পদ্মা মেঘনার
দুপাশে আবাদি গ্রাম, বৃষ্টি এলো পূবের হাওয়ায়,
বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়;
বিদ্যুৎ রূপসী পরী মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার।
দিকদিগন্তের পথে অপরূপ আভা দেখে তার
বর্ষণ-মুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়,
রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ তার স্পর্শ পেতে চায়,
নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার।

রুগ্‌ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন
রুক্ষ মাঠ আসমান শোনে সেই বর্ষণের সুর,

তৃষিত বনের সাথে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন,
পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর,
যেখানে বিস্মৃত দিন পড়ে আছে নিঃসঙ্গ নির্জন
সেখানে বর্ষার মেঘ জাগে আজ বিষণ্ণ মেদুর

উৎস নির্দেশ:
‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ফররুখ আহমদের ‘মুহূর্তের কবিতা’ কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা:
প্রতীক্ষিত- অপেক্ষারত
আবাদি গ্রাম- কৃষিজমি সংলগ্ন গ্রাম
বিদগ্ধ- সরস
বিদ্যুৎ রূপসী পরী- বিদ্যুৎ চমকানোকে লোকজ ধারণা অনুযায়ী সুন্দরী পরীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যে মেঘে মেঘে ঘুরে বেড়ায়।
সওয়ার- আরোহী
দিকদিগন্ত- দৃষ্টির শেষ সীমানা
অপরূপ- অতুলনীয়
আভা- দীপ্তি
বর্ষণ- বৃষ্টি
কেয়া- ফুল বিশেষ
রুগ্‌ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন
রুক্ষ মাঠ আসমান শোনে সেই বর্ষণের সুর,
তৃষিত বনের সাথে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন- দীর্ঘ বর্ষণহীন দিনে মাঠঘাট শুকিয়ে যে রুক্ষ মূর্তি ধারণ করেছে কবি তাকে রুগ্‌ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখন বর্ষণের শুরুতে তৃষ্ণাকাতর মাঠ-ঘাট ও বনে দেখা দিয়েছে প্রাণের জোয়ার।
তৃষাতপ্ত- পিপাসায় কাতর
বন্ধুর- অসমান
বিষণ্ণ মেদুর- বৃষ্টিবিহীন প্রকৃতির রুক্ষতা বৃষ্টির আগমনে দূরীভূত হয়েছে। প্রকৃতি এখন স্নিগ্ধকোমল হয়ে চারিদিক করে তুলেছে প্রাণোচ্ছল
মেদুর- কোমল

পাঠের উদ্দেশ্য:

পাঠ-পরিচিতি:
কৃষিপ্রধান বাংলার বহুপ্রতীক্ষিত বৃষ্টি নিয়ে কবিতাটি লিখিত। প্রকৃতিতে বর্ষা আসে প্রাণস্পন্দন নিয়ে। আর বৃষ্টিই বর্ষার প্রাণ। এ সময় নদীর দু-ধারে প্লাবন দেখা দেয়, ফলে পলিমাটির গৌরবে ফসল ভালো হয়। বৃষ্টির সময় আকাশের সর্বত্র মেঘের খেলা দেখা যায়, বর্ষার ফুল ফুটে সর্বত্র মোহিত হয়, রুক্ষ মাটি বৃষ্টিতে প্রাণ জুড়ায়। বৃষ্টির দিনে সংবেদনশীল মানুষও রসসিক্ত হয়ে ওঠে। তার মনে পড়ে সুখময় অতীত, পুরনো স্মৃতি, আর সে ভালোলাগার আলপনা আঁকে মনে মনে। এ বৃষ্টি কখনো বিষণ্ণও করে মন, একাকী জীবনে বাড়ায় বিরহ। সুতরাং বৃষ্টি শুধু প্রাকৃতিক ঘটনা বা প্রাকৃতিক পালাবদলের নিয়ামক নয়, এর সঙ্গে ব্যক্তির জীবনও কতটা সম্পৃক্ত তারই কাব্যরূপটি কবিতায় ফুটে উঠেছে।

‘বৃষ্টি’ কবিতার বৈশিষ্ট্য:
১। গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতির কী অবস্থা থাকে এবং বৃষ্টির ফলে তাতে কোন পরিবর্তন আসে, এই কবিতায় তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
২। এটি একটি সনেট কবিতা। সনেট কবিতা ১৪ চরণের হয়ে থাকে। এই চরণগুলো আবার দুটি স্তবকে বিভক্ত-প্রথম স্তবক ৮ চরণের এবং দ্বিতীয় স্তবক ৬ চরণের। এ ধরনের কবিতায় চরণের শেষে বিশেষ ধরনের মিল থাকে। যেমন, ‘বৃষ্টি’ কবিতার প্রথম স্তবকে ১ম, ৪র্থ, ৫ম ও ৮ম চরণের শেষে এক ধরনের মিল আছে; আবার ২য়, ৩য়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম চরণের শেষে অন্য ধরনের মিল আছে। এছাড়া দ্বিতীয় স্তবকে ৯ম, ১১শ ও ১৩শ চরণে এক ধরনের মিল এবং ১০ম, ১২শ ও ১৪শ চরণে আরেক ধরনের মিল। মিলের এই বিষয়টি ক, খ, গ ও ঘ দিয়ে বোঝানো হলো:
বৃষ্টি এলো... বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি!-পদ্মা মেঘনার ক
দুপাশে আবাদি গ্রামে, বৃষ্টি এলো পুবের হাওয়ায়, খ
বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়; খ
বিদ্যুৎ-রূপসী পরি মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার। ক
দিক-দিগন্তের পথে অপরূপ আভা দেখে তার ক
বর্ষণমুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়, খ
রৌদ্র-দগ্ধ ধানখেত আজ তার স্পর্শ পেতে চায়, খ
নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার। ক

রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন গ
রুক্ষ মাঠ আসমান শোনে সেই বর্ষণের সুর, ঘ
তৃষিত বনের সাথে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন, গ
পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর, ঘ
যেখানে বিস্মৃত দিন পড়ে আছে নিঃসঙ্গ নির্জন গ
সেখানে বর্ষার মেঘ জাগে আজ বিষণ্ণ মেদুর ॥ ঘ
৩। কবিতাটিতে দুই ধরনের অনুপ্রাস আছে:
ক. অন্ত্যমিল অনুপ্রাস: সওয়ার জোয়ার, বন্ধুর-মেদুর ইত্যাদি; এবং
খ. পুনরাবৃত্ত অনুপ্রাস: ‘বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার।’-এখানে ‘ন’ ও ‘র’ ধ্বনির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এগুলো শব্দালংকারের উদাহরণ।
৪। কবিতায় উপমার ব্যবহার হয়েছে। যেমন: ‘রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন’- এখানে রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতকে রুক্ষ মাঠের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এটি এক ধরনের অর্থালংকার।
৫। কবিতাটির লয় ধীর গতির।
৬। কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা।
৭। চরণগুলোর পর্ব-বিন্যাস এ রকম:
/বৃষ্টি এলো... বহু প্রতী/ক্ষিত বৃষ্টি!-পদ্মা মেঘনার
/দুপাশে আবাদি গ্রামে, বৃষ্টি এলো পুবের হাওয়ায়,
/বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ/ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়;
/বিদ্যুৎ-রূপসী পরি/মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার।

কবি পরিচিতি:
ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের ১০ই জুন মাগুরা জেলার মাঝআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খান সাবের সৈয়দ হাতেম আলী। ফররুখ আহমদ কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন এবং কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শনে অনার্স ও ইংরেজিতে অনার্সের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কর্মজীবনে তিনি নানা পদে নিয়োজিত হন এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারে স্টাফ রাইটার পদে নিয়োজিত ছিলেন। ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্য তাঁকে কাব্যসৃষ্টিতে প্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম্ মুনীরা, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা, পাখির বাসা, হাতেমতায়ী, নতুন লেখা, হরফের ছড়া, ছড়ার আসর ইত্যাদি। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, একুশে পদকসহ (মরণোত্তর) অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালের ১৯শে অক্টোবর তিনি পরলোকগমন করেন।

কর্ম-অনুশীলন:
১। বর্ষার ঋতুতে প্রকৃতি যে নব সাজে সজ্জিত হয়, তার বিবরণ দাও।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১। কবি বিদ্যুৎকে কার সঙ্গে তুলনা করেছেন?
ক. কন্যার
খ. পরী
গ. আলোর
ঘ. বৃষ্টির
২। ‘রুগ্‌ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন
রুক্ষ মাঠ আসমান’ - এ চিত্রকল্পে কী ফুটে উঠেছে?
ক. বুভুক্ষ মাঠের চিত্র
খ. বর্ষায় বাংলার প্রকৃতি
গ. বৃষ্টিহীন মাঠের রূপ
ঘ. প্রকৃতির বৈরিতা
৩। ‘আজিকার রোদ ঘুমায়ে পড়িছে ঘোলাটে মেঘের আড়ে’ - এ বক্তব্যের বিপরীত ভাব রয়েছে যে বাক্যে-
ক. বর্ষণমুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়
খ. রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ তার স্পর্শ পেতে চায়
গ. দু-পাশে আবাদি গ্রামে, বৃষ্টি এলো পুবের হাওয়ায়
ঘ. নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. ‘বৃষ্টি’ কবিতার কবির নাম কী?
উত্তর : ‘বৃষ্টি’ কবিতার কবির নাম ফররুখ আহমদ।
২. ফররুখ আহমদের কাব্যসৃষ্টির প্রেরণা কী ছিল?
উত্তর : ফররুখ আহমদের কাব্যসৃষ্টির প্রেরণা ছিল ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্য।
৩. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় কোনটিকে বহু প্রতীক্ষিত বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বৃষ্টিকে বহু প্রতীক্ষিত বলা হয়েছে।
৪. বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ কিসে ঢেকে গেল?
উত্তর : বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ কাজল ছায়ায় ঢেকে গেল।
৫. কে মেঘে মেঘে সওয়ার হয়েছে?
উত্তর : বিদ্যুৎ-রূপসী পরি মেঘে মেঘে সওয়ার হয়েছে।
৬. বর্ষণমুখর দিনে কে শিহরায়?
উত্তর : বর্ষণমুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়।
৭. বন্যা কোথায় পূর্ণ প্রাণের জোয়ার আনে?
উত্তর : বন্যা নদীর ফাটলে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার আনে।
৮. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় রুক্ষ, অসমান মাঠকে রুগ্ণ ভিখারির কিসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর : ‘বৃষ্টি’ কবিতায় রুক্ষ, অসমান মাঠকে রুগ্ণ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
৯. তৃষিত বনের সাথে কী জেগে ওঠে?
উত্তর : তৃষিত বনের সাথে তৃষাতপ্ত মন জেগে ওঠে।
১০. কোন ধারণা অনুযায়ী ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বিদ্যুৎ চমকানোকে সুন্দরী পরির সাথে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর : লোকজ ধারণা অনুযায়ী ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বিদ্যুৎ চমকানোকে সুন্দরী পরির সাথে তুলনা করা হয়েছে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. ‘বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়।’ চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : আলোচ্য চরণটিতে বৃষ্টি হওয়ার পূর্বমুহূর্তের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে।
বৃষ্টি হওয়ার পূর্বমুহূর্তে সারা আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। সূর্যও ঢাকা পড়ে ঘন মেঘের আস্তরণে। প্রকৃতির বুকেও তাই যেন কালো রঙের এক চাদর নেমে আসে। ‘বৃষ্টি’ কবিতায় কবি এই কালো ছায়াকে কাজলের সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করেছেন। বৃষ্টির আগমনী বার্তা বহন করে আনা মুহূর্তের এমন চমৎকার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে চরণটির মাধ্যমে।
২. বিদ্যুতৎ-রূপসী পরি মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার-কথাটির মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : কথাটির মাধ্যমে বর্ষণমুখর দিনে বিদ্যুতের ঝলকানির সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে।
বৃষ্টির দিনে আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকায়। ফলে দিগন্তজুড়ে তৈরি হয় অসাধারণ শোভা। লোকজ ধারণা অনুযায়ী বৃষ্টির সময় সুন্দরী কোনো পরি মেঘে মেঘে ঘুরে বেড়ায় বলেই এই ঘটনা তৈরি হয়। এই বিষয়টিকেই ‘বৃষ্টি’ কবিতায় কবি তার কল্পনার তুলি দিয়ে রাঙিয়ে উপস্থাপন করেছেন।
৩. ‘সেখানে বর্ষার মেঘ জাগে আজ বিষণ্ণ মেদুর’- কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বৃষ্টির দিনে প্রকৃতিতে একই সাথে যে বিষণ্ণতা ও সজীবতার উপস্থিতি লক্ষ করা যায় সে বিষয়টি বলা হয়েছে চরণটিতে।
বর্ষণহীন দিনে প্রকৃতিতে বিরাজ করে প্রাণশূন্যতা। বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রকৃতি থেকে রুক্ষতা দূর হয়ে যায়। প্রকৃতি স্নিগ্ধ কোমল হয়ে যায়। চারদিকে প্রাণের উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যায়। সেই সাথে মেঘে ঢাকা আকাশের কারণে প্রকৃতিকে বিরহকাতর, বিষণ্ণ বলে মনে হয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
কেউবা রঙিন কাঁথায় মেলিয়া বুকের স্বপনখানি,
তারে ভাষা দেয় দীঘল সূতার মায়াবী আখর টানি।
আজিকে বাহিরে শুধু স্পন্দন ছলছল জলধারে
বেণু-বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।
ক. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় কোন কোন নদীর কথা উলেণ্ঢখ রয়েছে?
খ. রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায় কেন ?
গ. ‘বেণু-বনে বায়ু নীড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।’ - উদ্দীপকের এ বক্তব্যের সাথে ‘বৃষ্টি’ কবিতার সাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধরো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বৃষ্টি’ কবিতার একটা বিশেষ ভাব প্রকাশ করে মাত্র, সমগ্র ভাব নয় - তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
ক. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় পদ্মা ও মেঘনা নদীর কথা উল্লেখ রয়েছে।
খ. প্রচণ্ড খরা থেকে বাঁচতে আর ফসলের সম্ভারে ভরিয়ে দিতে রৌদ্রদ্বগ্ধ ধানখেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায়।
ভীষণ রোদে মাঠ, ঘাট, ধানখেত যখন শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় তখন বৃষ্টি আসে আশীর্বাদ হয়ে। মাঠ-ঘাট-ধানখেত শুধু নয়, বৃষ্টির পরশে মানুষের মনও রসসিক্ত হয়ে ওঠে। রুক্ষ প্রকৃতিতে বৃষ্টি আসে প্রাণের শিহরণ নিয়ে। তীব্র রোদে ধানখেত হয়ে ওঠে রুক্ষ ও কঠিন। বৃষ্টির ছোঁয়া পেলে এই রু্ক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার হবে তাই রৌদ্রদগ্ধ ধানখেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায়।

গ. ‘বেণু-বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে’ উদ্দীপকের এ বক্তব্যের সাথে ‘বৃষ্টি’ কবিতায় উল্লিখিত নিঃসঙ্গ নির্জন জীবনের বিরহী চেতনার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর বর্ষার প্রবল বৃষ্টি প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে তোলে। বৃষ্টির হিমেল পরশে বন-বনানীর মতো মানুষের মনও সংবেদনশীল ও রসসিক্ত হয়ে ওঠে। মনে জেগে ওঠে সুখময় অতীতের নানা স্মৃতি। ভালো লাগা ভালোবাসার আলপনা মনে মনে আঁকতে থাকে। আবার নিঃসঙ্গ নির্জন মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে বিরহের সুর।
উদ্দীপকে বর্ষার দিনের একটি রূপচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। বর্ষার দিনে পল্লিবধূরা নিবিষ্ট মনে নকশিকাঁথায় ফুল তোলে। বাইরে অঝোর ধারায় চলে বর্ষণ। গৃহবধূরা যেন সুতার টানে টানে মনের স্বপ্ন বুনতে থাকে। এমন দিনে প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে যায়। প্রিয়জনের অনুপস্থিতি তখন মনকে বিষণ্ণ করে। বিরহ বেদনা আরো বাড়িয়ে দেয়। কাজেই বৃষ্টির প্রবল বর্ষণের সময় মানুষের মনে কল্পনার ডানা মেলে। মনে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি জাগে। উদ্দীপকে যেভাবে বলা হয়েছে ‘মন যেন চায় কারে’। অর্থাৎ প্রিয়জনের বিরহ মনকে আবিষ্ট করে। তাই ‘বেনু-বনে বায়ু নাড়ে, এলোকেশ, মন যেন চায় কারে’ উদ্দীপকের এ বক্তব্য ‘বৃষ্টি’ কবিতায় উল্লিখিত নিঃসঙ্গ নির্জন জীবনের বিরহী চেতনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় উল্লিখিত পুরনো দিনের স্মৃতি ও বিরহী হৃদয়ের ভাবটি উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার সমগ্র ভাবটি প্রকাশিত হয়নি।
গ্রীষ্মের কঠিন দাবদাহে প্রকৃতি অনেকটা বিবর্ণ হয়ে পড়ে। বর্ষার বৃষ্টিধারা বিবর্ণ পল্লি প্রকৃতিকে সজীব করে তোলে। টানা বর্ষণে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, নদী-নালা ভরে যায়। তৃষ্ণাকাতর মাঠ-ঘাট ও বনে দেখা দেয় প্রাণের জোয়ার। বৃষ্টি কবিতায় অঙ্কিত হয়েছে বাংলার সামগ্রিক জীবন ও প্রকৃতি। বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি আবাদি জমিতে আনে গৌরবের ফসল। এ সময় মেঘ ও বিদ্যুতের চমক যেন আকাশে খেলা করে। মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে পুরনো স্মৃতি। মনকে কখনও করে বিষণ্ণ। একাকী জীবনে বাড়ায় বিরহ।
উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি বর্ষণমুখর দিনে গৃহবধূরা তাদের অবসর কাটাতে নকশীকাঁথা সেলাই করে। এই সেলাইয়ের মধ্য দিয়ে যেন তারা স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি পড়ে। আশপাশের সবকিছু মিলে যেন জলাধারে পরিণত হয়। এমনি দিনে মনে পড়ে প্রিয়জনের কথা। মন যেন প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভে ব্যাকুল হয়ে উঠে।
আলোচ্য ‘বৃষ্টি’ কবিতা পর্যালোচনা করলে আমরা পাই, কবিতায় বর্ষণের সৌন্দর্য, এর ব্যাপকতা, বর্ষার কল্যাণকামিতা, মানবমনে বর্ষার প্রভাবসহ যাবতীয় বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে কেবল বর্ষণসিক্ত দিনে মানবমনের অনুভূতির দিকটি আলোচনা করা হয়েছে। কাজেই উদ্দীপকে ‘বৃষ্টি’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশিত হয়নি বরং বিশেষভাব প্রকাশিত হয়েছে মাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ [য.বো. ১৫]
‘গুরু গুরু ডাকে মেঘ ঘনঘটা চারিদিকে আজ
টুপটাপ বৃষ্টি ঝরে অঝোর ধারায়
নিজেকে হারিয়ে খুঁজি কিছু নাহি পাই
খুলেছি হৃদয় বাতায়ন ফেলে সব কাজ।
ক. বর্ষার প্রাণ কী?
খ. বৃষ্টির দিন একাকী জীবনে বিরহ বাড়ায় কেন?
গ. ‘খুলেছি হৃদয় বাতায়ন ফেলে সব কাজ’- উদ্দীপকের এ বক্তব্যের সাথে ‘বৃষ্টি’ কবিতার মিল কিসে? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বৃষ্টি’ কবিতার মূলভাবের প্রতিনিধিত্ব করছে- মূল্যায়ন করো।
ক. বর্ষার প্রাণ হলো বৃষ্টি।
খ. বৃষ্টির দিন মন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে বলে একাকী জীবনে বিরহ বাড়ে।
বৃষ্টির দিনে সংবেদনশীল মানুষ রসসিক্ত হয়ে পড়ে। অতীতের নানা সুখময় স্মৃতি মনের কোণে উঁকি দেয়। একাকী মানুষ তার আনন্দ বা কষ্টের অনুভূতিগুলো সম্পর্কে কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজে পায় না। তাই বৃষ্টির দিনে সঙ্গীহীন মানুষের মনে সঙ্গীর জন্য ব্যাকুলতা তৈরি হয়। মন বিরহী হয়ে ওঠে।

গ. বৃষ্টিমুখর দিনে প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষের মনও রসসিক্ত হয়ে ওঠে- ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বর্ণিত এ দিকটির সাথে প্রশ্নোক্ত বক্তব্যের মিল রয়েছে।
প্রকৃতিতে বর্ষা আসে প্রাণস্পন্দন নিয়ে। বর্ষায় বৃষ্টিতে সিক্ত হয়ে প্রকৃতি যেমন রসসিক্ত হয়ে ওঠে, মানুষের মনও তাই। মানুষ এমন দিনে উদাসী হয়ে পড়ে। মানুষের মনকে পুরনো স্মৃতিতে আসক্ত করে ফেলে। এই বৃষ্টি মানুষের মনকে সাময়িক মোহাবিষ্ট করে ফেলে। ফলে বৃষ্টির দিন প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষের জন্যও বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহন করে।
উদ্দীপকে কবি বৃষ্টির আগমনে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এই বৃষ্টি মানুষকে মনে করায় সুখময় অতীত, পুরনো স্মৃতি। ফলে মানুষ মনে মনে ভালোলাগার আলপনা আঁকে। আবার একাকী মানুষের বিরহকাতরতাও বাড়ায় এ বৃষ্টি। ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বর্ণিত এই দিকগুলো উদ্দীপকেও প্রতীয়মান হয়। বৃষ্টির পরশে উদ্দীপকের কবি সব কাজ ফেলে হৃদয়ের মণিকোঠার ঝাঁপি খুলে বসেছেন। আর এই উদাসী মানসিকতার দিকটিতেই ‘বৃষ্টি’ কবিতার সাথে প্রশ্নোক্ত বক্তব্যের মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বৃষ্টির আগমনে প্রকৃতির সাথে সাথে কবির মনের অনুভূতির পরিবর্তন ‘বৃষ্টি’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করেছে।
বৃষ্টি হলো বর্ষার প্রাণ। বর্ষায় বৃষ্টির সংস্পর্শে প্রকৃতি নতুন প্রাণস্পন্দনে জেগে ওঠে। এ সময় বর্ষার ফুলে মোহিত হয় প্রকৃতি, রসসিক্ত হয় রুক্ষ মাটি। আর প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনেও আসে পরিবর্তন। মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায় ঘুরপাক খায় নানা ঘটনা। বর্ষার আবেশে মানুষ হয়ে পড়ে মোহাচ্ছন্ন।
উদ্দীপকে বর্ষার আবেশে কবির হৃদয়ে ভাবের পরিবর্তন ঘটেছে। কবি বৃষ্টির স্নিগ্ধতায় হৃদয়ের বাতায়ন খুলে বসেছেন। বৃষ্টি মানুষকে মোহময় স্মৃতি মনে করায়। সুখময় স্মৃতি, পুরোনো অতীত মানুষকে মনে করিয়ে দেয় বৃষ্টির পরশ। উদ্দীপকের কবি বৃষ্টির পরশে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন। আর বৃষ্টির আবেশে মোহময় হওয়ার এই দিকটিই উদ্দীপক কবিতাংশের মূল কথা।
উদ্দীপকে কবি বৃষ্টিতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজে বেড়ান স্মৃতির আঙিনায়। উদ্দীপকের কবির এই ভাব ‘বৃষ্টি’ কবিতায়ও দৃশ্যমান হয়। সেখানে বৃষ্টি আবেশে মনে পড়ে সুখময় অতীত, পুরনো স্মৃতি প্রভৃতি। কবি বৃষ্টির আগমনে মনের এই পরিবর্তনকে কবিতায় তুলে ধরতে চেয়েছেন। ‘বৃষ্টি’ কবিতার কবির মনের অবস্থা এবং উদ্দীপকের কবির মনের অবস্থা একই। বৃষ্টির আগমন তাদের উভয়ের মনকেই আবিষ্ট করেছে। বৃষ্টির আগমনে প্রকৃতি ও মনের অবস্থার পরিবর্তনই ‘বৃষ্টি’ কবিতার মূলকথা। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘বৃষ্টি’ কবিতার মূলভাবের প্রতিনিধিত্ব করছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে
জানিনে, জানিনে
কিছুতে কেন যে মন লাগেনা।
ক. কোন হাওয়ায় বৃষ্টি এলো?
খ. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বৃষ্টিকে বহু প্রতীক্ষিত বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকে কবিতাংশটি ‘বৃষ্টি’ কবিতার কোন দিকটিকে মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বর্ষণমুখর দিনের যে চিত্র ‘বৃষ্টি’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে তার সম্পূর্ণটা উদ্দীপক কবিতাংশে নেই- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
ক. পুবের হাওয়ায় বৃষ্টি এলো।
খ. বৃষ্টির অভাবে মানবমন ও প্রকৃতি থেকে প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে যায় বলে ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বৃষ্টিকে বহু প্রতীক্ষিত বলা হয়েছে।
গ্রীষ্মকালের প্রখর তাপে মাঠ-ঘাট, বৃক্ষ সবকিছু প্রাণহীন হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবনও ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে। মানুষ তখন ব্যাকুল হয়ে থাকে এক পশলা বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টি কবিতার কবি ফররুখ আহমদের ভাষায় দগ্ধ প্রকৃতিও যেন উন্মুখ হয়ে থাকে বৃষ্টির শীতলতায় নিজেকে জুড়িয়ে নিতে। এ কারণেই ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বৃষ্টিকে বহু প্রতীক্ষিত বলা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকটি ‘বৃষ্টি’ কবিতায় উল্লিখিত বর্ষণমুখর দিনে বিরহী হৃদয়ের অনুভূতিকে বোঝানো হয়েছে।
বৃষ্টি প্রকৃতিতে নিয়ে আসে এক অন্য রকম প্রাণের স্পন্দন। বৃষ্টির সময় আকাশের সর্বত্র মেঘের খেলা দেখা যায়। বিভিন্ন ফলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিক। বৃষ্টিতে প্রাণ জুড়ায় রুক্ষ মাটি। সংবেদনশীল মানুষও বৃষ্টির দিনে রসসিক্ত হয়ে ওঠে। মনে পড়ে পুরনো স্মৃতি, মনে মনে আঁকে ভালোবাসার আলপনা। বৃষ্টি কখনও মনকে বিষণ্ণ করে। একাকী জীবনে বিরহের যাতনাকে বাড়িয়ে তোলে।
আলোচ্য উদ্দীপকে বর্ষণমুখর দিনের কথা বলা হয়েছে। যখন মন উতলা হয়ে ওঠে। কোনো কাজেই যেন মন বসে না। কিছুই যেন ভাল লাগে না। এখানে একাকী বিরহী জীবনের কথাই বোঝানো হয়েছে। উদ্দীপকে বৃষ্টি কবিতায় উল্লিখিত বর্ষণমুখর দিনের বিরহী চেতনাকে বোঝানো হয়েছে। যখন বৃষ্টির প্রভাবে মানুষের মন অনেকটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। প্রিয়জনের সন্তুষ্টির জন্য মন ব্যাকুল হয়। একাকী জীবনের এই মনোবেদনার কথাই প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বর্ণমুখর দিনের একটি সার্বিক চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপক কবিতাংশে কেবল একটি দিক- একাকী জীবনের বিরহ প্রকাশ পেয়েছে।
‘বৃষ্টি’ কবিতায় ফররুখ আহমদের বর্ষণমুখর দিনের গভীর অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটেছে। বর্ষার দিনেই সাধারণত প্রবল বৃষ্টিপাতে খালবিল নদীনালা টইটম্বুর হয়ে ওঠে। আকাশের সর্বত্র মেঘ ভেসে বেড়ায়। বর্ষাঋতুতে ফোটে নানা ফুল। বৃষ্টিতে সিগ্ধ হয়ে ওঠে রুক্ষ মাটি। রসসিক্ত হয়ে ওঠে মানুষের মন। তখন মনে পড়ে অতীত দিনের স্মৃতি। আর ভালোবাসার আলপনা আঁকে মনে মনে। একাকী মানুষের মন বৃষ্টিতে আরো বিষণ্ণœ হয়ে ওঠে। বিরহ বেদনা আরো বাড়িয়ে তোলে। ক্ষ উদ্দীপকে বর্ষণমুখর দিনে একাকী মানুষের মনে কীরূপ অনুভূতির সৃষ্টি করে তা-ই বোঝানো হয়েছে। এমন দিনে মন যেন শুধুই আনচান করে। কোনো কিছুতেই যেন মন ভরে না। কোনো কিছুই করতে ইচ্ছে করে না। বিরহী হৃদয়ের ব্যাকুলতাই যেন শুধু সত্য হয়ে ওঠে।
আলোচ্য ‘বৃষ্টি’ কবিতায় আমরা দেখি বৃষ্টির ফলে প্রকৃতিতে আসে বিপুল পরিবর্তন। প্রকৃতিতে অনেক পরিচ্ছন্ন অনেক সুন্দর মনে হয়। বৃষ্টি যেন আকস্মিক এসে ধুয়ে মুছে দিয়ে যায়। মাঠে ঘাটে সব ক্ষেত্রে জেগে ওঠে প্রাণের স্পন্দন। রুক্ষতা দূর হয়ে সবকিছুই যেন রসসিক্ত হয়ে ওঠে। মানব মনেও বৃষ্টির প্রভাবে অনেক বেশি বিরহ বেদনা জেগে ওঠে কারো কারো মনে। উদ্দীপকে বৃষ্টি দিনের এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে শুধু বিরহী হৃদয়ের ব্যাকুলতাকে তুলে ধরা হয়েছে। তাই বলা হয়েছে, বর্ষণমুখর দিনের যে চিত্র বৃষ্টি কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে তার সম্পূর্ণটা উদ্দীপক কবিতাংশে নেই। আংশিক চিত্র উল্লেখ হয়েছে মাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
আজি, বরিষণ মুখরিত শ্রাবণরাতি
স্মৃতিবেদনার মালা একেলা গাঁথি।
আজি, কোন ভুলে ভুলি আঁধার ঘরেতে রাখি দুয়ার খুলি
মনে হয় বুঝি আসিছে সে মোর দুখরজনীর সাথী।
ক. প্লাবন হলে কিসের গৌরবে ফসল ভালো হয়?
খ. পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর-পঙক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে ‘বৃষ্টি’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘বৃষ্টি’ কবিতার খণ্ডাংশ মাত্র’-উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
ক. প্লাবন হলে পলিমাটির গৌরবে ফসল ভালো হয়।
খ. বৃষ্টির দিনে মন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে এ বিষয়টি বোঝানো হয়েছে আলোচ্য চরণটিতে।
বর্ষণমুখর দিনে অনুভূতিপ্রবণ মানুষের মন রসসিক্ত হয়। স্মৃতির জানালা খুলে মানুষ চলে যায় বহুদূর। মনে পড়ে যায় সুখময় অতীত, পুরোনো স্মৃতি। সেই ভালোলাগা দিয়ে মানুষ আপন মনে আলপনা এঁকে চলে।
গ. উদ্দীপকে বৃষ্টি কবিতায় উল্লিখিত বর্ষণমুখর দিনের বিরহ-কাতরতা প্রকাশিত হয়েছে।
বর্ষণমুখর দিনে মানবমনে নানা অনুভূতির সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির দিনে সংবেদনশীল মানুষ রসসিক্ত হয়ে ওঠে। সে তখন সুখময় অতীত, পুরোনো স্মৃতি আর ভালোলাগার ছবি আঁকে মনে মনে। বৃষ্টির দিনে কারো কারো মন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। একাকী জীবনে বৃষ্টি বিরহকাতরতা জাগিয়ে তোলে।
উদ্দীপকে বর্ষণমুখরিত শ্রাবণরাতে একজন বিরহকাতর মানুষের কথা বলা হয়েছে। স্মৃতি-বেদনার মালা গাঁথছে। আর ভাবনাকাতর উদাসী মন দুয়ার খুলে রেখেছে মনের ভুলে। প্রিয়জনের আগমন প্রতীক্ষায় সে সময় গুনছে। যে হবে তার এই দুখরজনীর সাথি। ‘বৃষ্টি’ কবিতায়ও আমরা দেখি উদ্দীপকের মতোই নিঃসঙ্গ নির্জন জীবনে বর্ষার মেঘ মনে বিষণ্ণতা জাগায়।

ঘ. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় উল্লিখিত বিষয়ের মধ্যে কেবল একটি দিক বর্ষণমুখর দিনের বিরহকাতরতা উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে। তাই উদ্দীপকটি ‘বৃষ্টি’ কবিতার খÊাংশ মাত্র।
‘বৃষ্টি’ কবিতায় কবি ফররুখ আহমদ বর্ষা কীভাবে প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন নিয়ে আসে তা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। বর্ষার প্রাণ হচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টির আগমনে আকাশের সর্বত্র মেঘের খেলা দেখা যায়। বৃষ্টিতে রৌদ্রদগ্ধ ধানখেতে আনে প্রাণের জোয়ার। ফুল ফুটে সর্বত্র মোহিত হয়। বৃষ্টিতে প্রাণ জুড়ায় রুক্ষ মাটি। বৃষ্টির ফলে কারো কারো মন রসসিক্ত হয়ে ওঠে। আবার একাকী জীবনে বাড়িয়ে তোলে বিরহকাতরতা।
উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে বর্ষণমুখর শ্রাবণ রাতের কথা। এ সময় অতীত স্মৃতিগুলো একাকী জীবনে বেদনা হয়ে ধরা দেয়। কবি তাই আনমনা হয়ে পড়েন। অন্ধকার ঘরের দুয়ার খুলে রেখে ভাবেন এই বুঝি তাঁর প্রিয় মানুষটি চলে এলো। যে হবে তার দুঃখী হৃদয়ের একান্ত সাথি।
‘বৃষ্টি’ কবিতায় বর্ষার রূপবৈচিত্র্য, রৌদ্রদগ্ধ ধানখেত, নদী, পাখি, ফুল, আকাশে মেঘের খেলা ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। বৃষ্টি কীভাবে প্রকৃতিতে স্নিগ্ধতা ও কোমলতা ফিরিয়ে আনে সে কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি মানবমনের বিরহ ও স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে শুধুই বিরহ ও প্রিয় মিলনের আকাঙ্ক্ষাই ব্যক্ত হয়েছে। কাজেই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, উদ্দীপকটি বৃষ্টি কবিতার সমগ্র ভাবের ধারক নয়, খণ্ডাংশ মাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
বৃষ্টির ধারা নদীনালা, খালবিল পূর্ণ করে। অতিবৃষ্টিতে তারই উপচে পড়া পানিতে যে বন্যা দেখা দেয়, তা ঘরবাড়ি, মানুষ ও পশুর সর্বনাশ ঘটায়। অতি বৃষ্টির প্লাবণে বর্ষা মানবজীবনে অভিশাপ নিয়ে আসে।
ক. তৃষাতপ্ত শব্দের অর্থ কী?
খ. রুক্ষ মাঠকে রুগ্ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতো বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘বৃষ্টি’ কবিতার কোন দিকটির সাথে বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক ও বৃষ্টি কবিতার মূল চেতনা সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন-তোমার মতামত দাও।
ক. তৃষাতপ্ত শব্দের অর্থ পিপাসায় কাতর।
খ. রুক্ষ মাঠ অসমান বলেই একে রুগণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
বর্ষণহীন দিনে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে নিষ্প্রাণ রুক্ষমূর্তি ধারণ করে। তাকে দেখতে তখন একজন বৃদ্ধ রুগণ ভিখারির মতোই লাগে। বৃদ্ধ, রুগণ একজন মানুষের হাতের রগগুলো স্পষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে। জলের অভাবে রুক্ষ মাঠও তেমনি অসমতল বলে ‘বৃষ্টি’ কবিতার কবি আলোচ্য তুলনাটি ব্যবহার করেছেন।

গ. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বর্ণিত বৃষ্টি আশীর্বাদ হিসেবে এলেও উদ্দীপকের বর্ণনায় বৃষ্টি এসেছে অভিশাপ হিসেবে।
‘বৃষ্টি’ কবিতায় কবি ফররুখ আহমদ বলেছেন, বৃষ্টি আসে প্রকৃতির প্রাণ ফিরিয়ে দিতে। রুক্ষ প্রকৃতি বৃষ্টিতে ভিজে সিক্ত হয়। রৌদ্রদগ্ধ ধানখেতে আসে সজীবতা। প্রকৃতি যেন ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে নতুন রূপে সজ্জিত হয়। বর্ষার প্রভাবে বন্যা নদীর ফাটলে আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার। তাই বৃষ্টি হয় বহু প্রতীক্ষিত।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের বিড়ম্বনার কথা। অতিবৃষ্টির ফলে দেখা দেয় বন্যা। বন্যাপ্লাবিত হলে মানুষের ও পশুপাখির জীবনে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ। ঘরবাড়ি ও ফসল বিনষ্ট হয়। বৃষ্টি তখন মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসে। অন্যদিকে ‘বৃষ্টি’ কবিতায় বর্ণিত হয়েছে বৃষ্টির কল্যাণকামী দিক।

ঘ. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের ওপর বৃষ্টির ইতিবাচক প্রভাবের কথা বলা হলেও উদ্দীপকে রয়েছে ঠিক তার বিপরীত চিত্র। তাই আলোচ্য মন্তব্যটি যথার্থ।
‘বৃষ্টি’ কবিতায় কবি বৃষ্টির ফলে প্রকৃতিতে যে শান্ত ও স্নিগ্ধ রূপ ফুটে ওঠে সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। শুষ্ক প্রকৃতিতে বৃষ্টি হয়ে ওঠে বহু প্রতীক্ষিত ও আকাঙ্ক্ষিত। রৌদ্রদগ্ধ ধানখেত, কাঠফাটা রৌদ্রে চৌচির হাওয়া মাঠঘাট বৃষ্টিতে সিক্ত হয়। বৃষ্টি প্রকৃতিতে আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার। মানবমনকেও বৃষ্টি উদাস করে তোলে। অজানা এক ভালোলাগার দোলায় মন দুলতে থাকে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, বৃষ্টির ধারা নদী-নালা খালবিল পূর্ণ করে। অতিবৃষ্টিতে নদী ও খালবিলের উপচে পড়া পানিতে বন্যা দেখা দেয়। বন্যা মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলের জমিকে প্লাবিত করে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। তাই অতিবৃষ্টির কারণে বর্ষা মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসে। যার প্রভাব মানুষের মনেও পড়ে।
‘বৃষ্টি’ কবিতায় আমরা লক্ষ করি বৃষ্টি মানুষের জীবনে নিয়ে আসে প্রাণের ছোঁয়া, মনে জাগায় রোমাঞ্চ। প্রকৃতিতে নিয়ে আসে সজীবতা ও স্নিগ্ধতা। তাই বৃষ্টি আসে আশীর্বাদ হয়ে। আর উদ্দীপকের বৃষ্টি এসেছে অভিশাপ হয়ে। কারণ অতিবৃষ্টির প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা ধারণ করে রুদ্রমূর্তি। এই বন্যা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। প্রকৃতিকে এটি দূষিত করে। মানুষেরা হারায় তাদের সহায় সম্বল। জমির ফসল ভেসে গিয়ে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়। ফলে মানসিকভাবে অনেকেই ভেঙে পড়ে। পশুদের জীবনও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। আলোচ্য কবিতার মূলভাব হলো বর্ষণমুখরতার সৌন্দর্য তুলে ধরা। অন্যদিকে উদ্দীপকের মূলভাব হলো এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন, যা কবিতার মূলভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
-------------
-----------

তথ্যসূত্র:
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫।
Next Post Previous Post