‘নিমগাছ’ গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
নিমগাছ : বনফুল |
নিমগাছ
বনফুল
কেউ
ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে।পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পেষা কেউ!
কেউ বা ভাজছে গরম তেলে।
খোস দাদ হাজা চুলকানিতে লাগাবে।
চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ।
কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে।
এমনি কাঁচাই....
কিংবা ভেজে বেগুন সহযোগে।
যকৃতের পক্ষে ভারি উপকার।
কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কত লোক দাঁত ভালো থাকে। কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন।
বলেন- ‘নিমের হাওয়া ভালো, থাক, কেটো না।’
কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না।
আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে।
শান দিয়ে বাঁধিয়েও দেয় কেউ সে আর-এক আবর্জনা।
হঠাৎ একদিন একটা নতুন ধরনের লোক এলো।
মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিমগাছের দিকে। ছাল তুলল না, পাতা ছিঁড়ল না, ডাল ভাঙল না। মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু।
বলে উঠল- ‘বাঃ কী সুন্দর পাতাগুলি... কী রূপ! থোকা থোকা ফুলেরই বা কী বাহার... এক ঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাহ্-’
খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল।
কবিরাজ নয়, কবি।
নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারল না। মাটির ভিতরে শিকড় অনেক দূর চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।
ওদের বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মী বউটার ঠিক এই দশা।
উৎস নির্দেশ : |
---|
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের (বনফুল) অদৃশ্যলোক(১৯৪৭) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘নিমগাছ’ গল্প। |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
ছাল- বাকল, এখানে নিমগাছের বাকল। শিলে পেষা- শিল পাটায় বাটা। খোস- খুজলি; চুলকানি; চর্মরোগবিশেষ। এটি ছোঁয়াচে রোগ, তাই পরিবারের সদস্যরা একই বিছানায় শোয়া, ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে হলে, একই কাপড়-চোপড় ব্যবহার করলে অন্যদের রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। দাদ- এটি ছত্রাকের সংক্রমণ। যা ত্বকের আক্রান্ত স্থানে লাল আংটির মতো দেখা যায়। সাধারণত আক্রান্তস্থানে লাল, চুলকানি, বৃত্তাকার ফুসকুড়ি হিসাবে দেখা যায়। হাজা- দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ভেজা থাকার ফলে হাত বা পায়ের আঙুলে সৃষ্ট ক্ষতরোগবিশেষ। চুলকানি- এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা আচড়ের ইচ্ছা ঘটায়। অব্যর্থ- যা বিফল হবে না। কচি পাতাগুলো খায়ও- নিমের কচিপাতা খেলে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যকৃত- (জোককৃত) কলিজা (Liver) পঞ্চমুখ- পাঁচমুখ(শিব); মুখর। শান দিয়ে বাঁধানো- এখানে ইট ও সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানোকে বোঝাচ্ছে। কবিরাজ- যিনি গাছগাছালি পরিশোধন করে মনুষ্যরোগের চিকিৎসা করেন। গজালে- জন্মালে; অঙ্কুরিত হলে। বিজ্ঞরা- জ্ঞানীরা মুগ্ধদৃষ্টি- আত্মতৃপ্তির দৃষ্টি। থোকা থোকা- গুচ্ছ গুচ্ছ। বাহার- শোভা; সৌন্দর্য। নক্ষত্র- তারা। সবুজ সায়রে- সবুজ সাগরে; সবুজের সমুদ্রে। কবি- যিনি কবিতা লেখেন। শিকড় অনেক দূর চলে গেছে- প্রতীকাশ্রয়ে বর্ণিত। নিমগাছের শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে এবং চারিদিকে বিস্তৃতও হয়। লক্ষ্মী বউটার প্রতীক যেহেতু নিমগাছ সেহেতু নিমগাছের শিকড়ের সঙ্গে বউয়ের সংসারের জালে চারিদিকে আবদ্ধ হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। দশা- অবস্থা |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
‘নিমগাছ’ গল্পের সংক্ষিপ্ত অবয়বের মধ্যে লেখক বিপুল বক্তব্য উপস্থাপনের যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তা বাংলা সাহিত্যে বিরল। নিমগাছের বর্ণনা, এর পাতা, বাকল, ছায়ার ইত্যাদির বাহ্যিক উপকারিতা কবিতার মতো বর্ণনা করা হয়েছে এই গল্পে। কবিরাজ তার চিকিৎসার কাজে, সাধারণ মানুষ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে নিমগাছকে অনবরত ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কেউ এই গাছের সামান্যও যত্ন নেয় না। একজন কবি একদিন নিমগাছের গুণ ও রূপের প্রশংসা করে। নিমগাছের ভালো লাগে ঐ লোককে এবং সে তার সঙ্গে চলে যেতে চায়। কিন্তু মাটির গভীরে তার শিকড়। গাছটি যেতে পারে না। আসলে গাছ তো চলতে পারে না। এটি একটি প্রতীকী গল্প। প্রকৃতপক্ষে, ‘নিমগাছ’ গল্পটির নিমগাছ প্রতীকের সূত্রে বনফুল দেখিয়েছেন নারীর অপরিসীম আত্মত্যাগ। নারীর মানবিক মর্যাদা, পারিবারিক ও সামাজিক গুরুত্ব উপলব্ধি করার ইঙ্গিত দেয় গল্পটি। |
লেখক পরিচিতি : |
---|
প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। বিহারের পূর্ণিয়ার অন্তর্গত মণিহার
গ্রামে ১৮৯৯ সালের ১৯শে জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বনফুল পূর্ণিয়ার
সাহেবগঞ্জ ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, হাজারীবাগের সেন্ট কলম্বাস
কলেজ থেকে আই.এসসি এবং পাটনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে
এম.বি পাশ করেন।
মেডিক্যাল অফিসার পদে চাকরির মাধ্যমে বনফুলের কর্মজীবন শুরু। ১৯১৮ সালে
‘শনিবারের চিঠি’তে ব্যঙ্গ-কবিতা ও প্যারোডি লিখে তাঁর সাহিত্য অঙ্গনে
প্রবেশ। ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় তিনি একপাতা-আধপাতার গল্প লিখতেন। গল্পগুলো আকারে
ক্ষুদ্র, অথচ বক্তব্যে তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ: বনফুলের
গল্প, বনফুলের আরো গল্প, বাহুল্য, বিন্দুবিসর্গ ইত্যাদি। বাস্তবজীবনে ও
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র উপাদান তাঁর গল্প ও উপন্যাসে নিপুণভাবে প্রকাশিত
হয়েছে। বনফুলের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো:
তৃণখণ্ড, কিছুক্ষণ, দ্বৈরথ, জঙ্গম ইত্যাদি। বিভিন্ন পুরস্কারসহ তিনি
পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন। ১৯৭৯ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি বনফুল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।। |
কর্ম-অনুশীলন : |
---|
১। নিমগাছের গুণাগুণের একটি তালিকা তৈরি করো। ২। তোমার এলাকায় নিমগাছ রোপণের কর্মসূচি নেওয়া দরকার। এ কাজ করার জন্য তোমরা কী কী করবে? |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
১। নিমগাছের ছাল নিয়ে লোকজন কী কাজে লাগায়? ক. সিদ্ধ করে খায় খ. ভিজিয়ে খায় গ. শুকিয়ে খায় ঘ. রান্না করে খায় ২। বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশি হয় কেন? ক. এটা দেখতে সুন্দর খ. এটা উপকারী গ. এটা পরিবেশ-বান্ধব ঘ. এটা আকারে ছোট নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩-সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও: গফুরের প্রিয় ষাঁড় মহেশ। প্রায় আট বছর প্রতিপালন করছে গফুর সাধ্যমতো তার যত্ন নেয়। পরিবারের কেউ মহেশকে চায় না। কিন্তু গফুর সন্তানস্নেহে তাকে লালন করে। নিজের খাবার না খেয়ে মহেশকে খাওয়ায়, ঘরের চাল থেকে খড় পেড়ে মহেশকে খেতে দেয়। ৩। উদ্দীপকের মহেশ-এর সঙ্গে যেদিক দিয়ে ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউয়ের সাদৃশ্য করা যায়- i. অবদানে ii. প্রয়োজনীয়তায় iii.পরোপকারে নিচের কোনটি সঠিক? ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii ৪. সাদৃশ্য থাকলেও নিমগাছটা কোন বিচারে ব্যতিক্রম? ক. উপেক্ষিত খ. উপকারী গ. আত্মত্যাগী ঘ. নিরহংকারী |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
১.‘নিমগাছ’ গল্পটির রচয়িতা কে? উত্তর : নিমগাছ গল্পটির রচয়িতা বনফুল। ২. বনফুলের প্রকৃত নাম কী? উত্তর : বনফুলের প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। ৩. বনফুল কত সালে জন্মগ্রহণ করেন? উত্তর : বনফুল ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ৪. নিমগাছের কী ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করা হচ্ছে? উত্তর : নিমগাছের ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করা হচ্ছে। ৫. ‘নিমগাছ’ গল্পে গরম তেলে কী ভাজা হচ্ছে? উত্তর : নিমগাছ গল্পে গরম তেলে নিমের পাতা ভাজা হচ্ছে। ৬. নিমের কচিপাতা কী সহযোগে খাওয়া হয়? উত্তর : নিমের কচিপাতা বেগুন সহযোগে খাওয়া হয়। ৭. নিমের কচি ডাল চিবোলে কী ভালো থাকে? উত্তর : নিমের কচি ডাল চিবোলে দাঁত ভালো থাকে। ৮. বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে কারা খুশি হন? উত্তর : বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন। ৯. নিমগাছের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কারা? উত্তর : নিমগাছের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কবিরাজরা। ১০. নতুন ধরনের লোকটা কিসের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল? উত্তর : নতুন ধরনের লোকটা নিমগাছের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। ১১. নিমগাছের মতোই ঠিক এক দশা কার? উত্তর : নিমগাছের মতোই ঠিক এক দশা বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটার। ১২. কবিরাজ কী করেন? উত্তর : কবিরাজ গাছগাছালি পরিশোধন করে মনুষ্যরোগের চিকিৎসা করেন। ১৩. কবি কিসের পূজারি? উত্তর : কবি সৌন্দর্যের পূজারি। ১৪. ‘নিমগাছ’ গল্পটি বনফুলের কোন গ্রন্থের অন্তর্গত? উত্তর : ‘নিমগাছ’ গল্পটি বনফুলের ‘অদৃশ্যলোক’ গ্রন্থের অন্তর্গত। ১৫. ‘নিমগাছ’ গল্পের শেষ বাক্যটিতে লেখক কী পুরে দিয়েছেন? উত্তর : ‘নিমগাছ’ গল্পের শেষ বাক্যটিতে লেখক সীমাহীন কথার আখ্যান পুরে দিয়েছেন। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. কবিরাজরা নিমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন? উত্তর : নিমের বহুমুখী উপকারী গুণের কারণে কবিরাজরা নিমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ➠ যাঁরা গাছগাছালি পরিশোধন করে মনুষ্যরোগের চিকিৎসা করেন তাঁরাই কবিরাজ হিসেবে পরিচিত। এই শ্রেণির মানুষদের কাছে নিম অত্যন্ত মূল্যবান একটি বৃক্ষ। নিমের ছাল, পাতা, ডাল ইত্যাদি ঔষধি গুণসম্পন্ন। এগুলোর ব্যবহারে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের যত্ন নেওয়া যায় তেমনি অনেক জটিল রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এ কারণেই কবিরাজরা নিমের খুব তারিফ করেন। ২. নিমগাছের পাতা গরম তেলে ভাজা হয় কেন? উত্তর : খানিকটা উপাদেয় করে তোলার জন্য নিমের পাতা গরম তেলে ভাজা হয়। ➠ নিমগাছের পাতা বিশেষ ঔষধি গুণসম্পন্ন। কচি পাতাগুলো খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যকৃতের জন্য নিমের পাতা খুবই উপকারী। এসব কারণে মানুষ নিমপাতা পথ্য হিসেবে সেবন করে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত তেতো স্বাদযুক্ত হওয়ায় খাওয়ার সময় অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন। তেলে ভাজা হলে এর তেতোভাব কিছুটা কমে ও তুলনামূলক কম কষ্টে খাওয়া যায়। ৩. ‘একঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো। উত্তর : নিমগাছের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ কবি নিমের ফুল ও পাতা সম্পর্কে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে। ➠ কবিরা সৌন্দর্যের পূজারি। ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত কবির চোখে নিমগাছের রূপ অসামান্য। নিমের ফুলগুলো তার চোখে একঝাঁক নক্ষত্র। আর পাতাগুলো যেন সৃষ্টি করেছে সবুজের সাগর। উক্তিটির মাধ্যমে কবিচিত্তের প্রকৃতি-মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে। ৪. ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের সাথে বাড়ির লক্ষ্মীবউটার তুলনা দেওয়া হয়েছে কেন? উত্তর : ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত বাড়ির লক্ষ্মীবউটির জীবন গল্পের নিমগাছের মতোই দুঃখভরা বলে নিমগাছের সাথে তার তুলনা দেওয়া হয়েছে। ➠ বনফুল রচিত ‘নিমগাছ’ একটি প্রতীকী গল্প। এখানে নিমগাছের প্রতীকে অতি সংক্ষেপে অনেক বড় একটি প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। নিমগাছের কাছ থেকে মানুষ নানা রকম উপকার পায়। কিন্তু তার বিনিময়ে নিমগাছ পায় অবহেলা আর বঞ্চনা। ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত গৃহবধূর জীবনটাও ঠিক এমনই। এ কারণেই গল্পে নিমগাছের সাথে লক্ষ্মী গৃহবধূকে তুলনা করা হয়েছে। ৫. নতুন ধরনের লোকটা নিমগাছের ছাল, পাতা বা ডাল নিল না কেন? উত্তর : নতুন ধরনের লোকটা প্রকৃতিপ্রেমী বলে সে নিমগাছের ছাল, পাতা বা ডাল নিল না। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত নতুন ধরনের লোকটা একজন কবি। কবিরা সৌন্দর্যের পূজারি হয়। এই কবির কাছেও নিমগাছের প্রয়োজনের দিকের তুলনায় এর সৌন্দর্যের দিকটিই মুখ্য হয়ে ধরা পড়েছে। তাই সে নিমের ছাল তুলে, পাতা ছিঁড়ে বা ডাল ভেঙে এর সৌন্দর্যহানি করতে চায়নি। গাছটিকে কষ্ট দিতে চায়নি। তার বদলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে গাছের রূপ অবলোকন করেছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
রহিমদের বাড়িতে দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবৎ কাজ করছে আকলিমা খাতুন। এক কথায় সে
তাদের সংসারটা শুধু বাঁচিয়ে রেখেছে তা নয় বরং তাদের সমৃদ্ধির মূলে তার
অবদান সীমাহীন। বয়সের ভারে আজ সে অক্ষম হয়ে বিদায় নিতে চায়। কেননা তার
পক্ষে এখন আর গতর খাটানো অসম্ভব। তার এ প্রস্তাবে রহিম বলে, ‘আপনাকে কোথাও
যেতে হবে না। জীবনের বাকি সময়টুকু আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে কাটাবেন।’
ক. চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ কোনটি? খ. নিমগাছটি না কাটলেও কেউ তার যত্ন করে না কেন? গ. উদ্দীপকের আকলিমার সাথে ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউয়ের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধরো। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের সমগ্রভাবকে নয় বরং বিশেষ একটা দিককে তুলে ধরে”- যুক্তিসহ প্রমাণ করো। |
ক. চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ নিমগাছের পাতা। খ. ঔষধি গুণসম্পন্ন বলে নিমগাছ যত্ন না করলেও বেড়ে ওঠে। আর ঔষধি গুণ আছে বলেই বাড়ির আশপাশে জন্মালে কেউ কাটে না। ➠ বনফুলের প্রতীকী ও তাৎপর্যপূর্ণ গল্প ‘নিমগাছ’। লেখক এখানে নিমগাছ ও নিমপাতার গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন। নিমগাছ চর্মরোগ, কৃমিনাশক, পেটের পীড়া প্রভৃতি নিরাময়ে অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। নিমগাছের ছাল পাতা এবং নিমফল থেকে উৎপন্ন নিমতেল ওষুধ প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। নানাবিধ উপকারিতার জন্য এ গাছ কেউ সহজে কাটে না। গ. স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে নিমগাছ যেমন উপকারী, আকলিমাও রহিমদের পরিবারে তেমনি উপকারী ও প্রয়োজনীয়। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে লেখক নিমগাছের উপকারিতা তুলে ধরেছেন। নিম গাছের ছাল, পাতা, ফল খুবই উপকারী। গাছটি পরিবেশবান্ধব। এর ছাল, পাতা, ফল, চর্মরোগ, পেটের পীড়া, বমি প্রভৃতি নিরাময়ে খুব ভালো কাজ করে। কচি ডাল ভেঙে চিবালে দাঁত ভালো থাকে। কচি পাতা ভেজে বেগুনসহকারে খেলে যকৃতের খুব উপকার হয়। নিমের হাওয়া ভালো বলে এটিকে কেউ কাটতে দেয় না। ➠ উদ্দীপকের আকলিমা রহিমদের বাসায় কাজ করেন চল্লিশ বছর ধরে। ওই সংসারে তার অবদান অসামান্য ও সীমাহীন। বয়সের ভারে অক্ষম হয়ে পড়ায় তিনি বিদায় নিতে চান। তিনি মনে করেন তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। কিন্তু রহিম তাকে কোথাও যেতে দেয়নি। বরং পরিবারের সদস্য হয়ে বাকি জীবন কাটানোর পরামর্শ দিয়েছে। আকলিমার সাথে ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছের সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ আকলিমা নিমগাছের মতো একই স্থানে থেকে পরের উপকার করেছেন। ওই পরিবারে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছেন। উভয়ের কাজ পরের কল্যাণ। কিন্তু কেউ নিজের অবস্থান ছেড়ে যেতে পারেনি। আকলিমা শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও তিনি একটা মায়ার জালে আটকা পড়েছেন। ঘ. উদ্দীপকে আকলিমা খাতুনের শুধু পরার্থে বিশেষ অবদানের কথা বলা হয়েছে, ‘নিমগাছ’ গল্পের সমগ্রভাবকে পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরেনি। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে লেখক নিমগাছের গুণাগুণের পাশাপাশি একটি গভীর সত্যকে তুলে ধরেছেন। নিমগাছের পাতা, বাকল, ফল প্রভৃতি ঔষধি গুণসম্পন্ন। নিমগাছের ছায়া ও বাতাস বিশেষ উপকারী। নিমগাছের নানা উপকারিতা আছে বলে মুরব্বিরা এই গাছ কাটতে নিষেধ করেন। কিন্তু এটি খুব অনাদরে অবহেলায় বিনা পরিচর্চায় বড় হয়ে থাকে। লেখকের শুধু নিমগাছের গুণাগুণ বর্ণনাই উদ্দেশ্য নয়। তিনি মানবজীবনের গভীর তাৎপর্যের দিকটিও তুলে ধরেছেন। এত গুণাগুণ সত্ত্বেও নিমগাছটি যেমন ময়লা-আবর্জনায় মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে তেমনি বাড়ির গৃহকর্ম নিপুণা লক্ষ্মী বউটা শুধু কাজ করে যায়, কোথাও যেতে পারে না। মনের কোনো ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা পূরণের সাধ্য তার নেই। ➠ উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে গৃহকর্মী আকলিমা খাতুনের কথা। তিনি রহিমদের সংসারে চল্লিশ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি আজ বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তাই তিনি ভাবছেন তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। তিনি এই সংসার ছেড়ে চলে যেতে চান যদিও সংসারে তার ছিল অসামান্য অবদান। কিন্তু রহিম তাকে চলে যেতে নিষেধ করে তাকে বলেছে পরিবারের সদস্য হয়ে থাকতে। ➠ রহিমদের পরিবারে উদ্দীপকের আকলিমা খাতুনের অবদান অপরিসীম। তার অবদানে ওই পরিবার সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের উপকারিতার শেষ নেই। কিন্তু এটির কোনো চলৎশক্তি নেই, কোথাও যেতে পারে না। উদ্দীপকের আকলিমা হয়তো যেতে পারতেন তিনি কিন্তু এই বয়সে কোথায় যাবেন তাই রয়ে গেছেন। এছাড়া গল্পে একজন গৃহকর্মে নিপুণা লক্ষ্মী বউয়ের কথা চমৎকারভাবে শেষ লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে। একটি লাইনে এই গৃহবধূর অব্যক্ত সব কথাই যেন প্রকাশিত হয়েছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
ষাট বছরের বৃদ্ধ মকবুলের সাথে বিয়ে হয় তেরো বছরের টুনির। ধানভানা থেকে শুরু
করে জমির কাজ সবই মকবুল টুনির দ্বারা করায়। টুনির কর্মদক্ষতার জন্য মকবুলের
চাচাতো ভাই মন্তু টুনির রূপে ও গুণে মুগ্ধ। টুনি মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে
মন্তুর সাথে চলে যাওয়ার। কিন্তু সে যেতে পারে না। ক. বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে কারা খুশি হয়? খ. নিমগাছটার লোকটার সাথে চলে যেতে ইচ্ছে করে কেন? গ. উদ্দীপকের মকবুল ‘নিমগাছ’ গল্পের কার প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “টুনি যেন ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মীবউ”- তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। |
ক. বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন। খ. সবাই নিমগাছকে উপেক্ষা করে চললেও কবি নিমগাছকে মন থেকে ভালোবাসেন। তাই নিমগাছ কবির সাথে চলে যেতে চায়। ➠ নিমগাছের কাছ থেকে সবাই নানাভাবে উপকার পায়। কিন্তু সবার অবজ্ঞা ছাড়া নিমগাছ আর কিছুই পায় না। অন্যদিকে সৌন্দর্যের পূজারি কবি নিমগাছের রূপ দেখে মুগ্ধ হন। নিমগাছ থেকে কোনো উপকার নেওয়ার পরিবর্তে তিনি নিঃস্বার্থভাবে তার প্রশংসা করেন। নিমগাছের তাই ইচ্ছে হতে থাকে কবির সাথে চলে যেতে। মমতাশূন্য জীবন থেকে সে মুক্তি পেতে চায়। ‘নিমগাছ’ গল্পে বনফুল নিমগাছ প্রতীকের আড়ালে মানবমনেরই একটি বেদনাময় অনুভূতির চিত্রায়ণ করেছেন। গ. উদ্দীপকের মকবুল ‘নিমগাছ’ গল্পের সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতিনিধি। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমের নানা গুণের কথা বলা হয়েছে। নিমগাছের কাছ থেকে সবাই বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করে। কবিরাজ তার চিকিৎসার কাজে, সাধারণ মানুষ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে নিমগাছকে অনবরত ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কেউ নিমগাছের সামান্য যত্নটুকুও নেয় না। ➠ উদ্দীপকের মকবুল ‘নিমগাছ’ গল্পের এই সুবিধাভোগী শ্রেণিরই প্রতিনিধি। সুবিধাভোগী শ্রেণি যেরূপ নিমগাছের কাছ থেকে উপকারিতা গ্রহণ করে তেমনি মকবুলও টুনির কাছ থেকে শুধু সুবিধাই গ্রহণ করে। টুনির কর্মদক্ষতার কোনো মূল্যায়ন হয় না নিমগাছের মতোই। ফলে ‘নিমগাছ’ গল্পের সুবিধাভোগীরা প্রেক্ষাপট বিচারে উদ্দীপকের মকবুলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ঘ. কর্মদক্ষতার বিচারে উদ্দীপকের টুনি এবং ‘নিমগাছ’ গল্পের গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটি একই সুতোয় গাঁথা। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পটি একটি প্রতীকী গল্প। এই গল্পটিতে নিমগাছের বিভিন্ন গুণের বর্ণনা দিয়ে তার সাথে বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা বউয়ের তুলনা করা হয়েছে। বাড়ির বউ যেমন সম্পর্কের শেকড়ে বাঁধা থাকার কারণে সহজেই সেই বাড়ি ছেড়ে যেতে পারে না। গল্পের নিমগাছও তাই। সে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কবির সাথে যেতে পারে না শেকড় বহুদূর চলে যাওয়ায়। ➠ উদ্দীপকের টুনি একজন গৃহকর্ম-নিপুণা বউ। সে মকবুলের বাড়িতে ধানভানা থেকে শুরু করে বাড়ির সব কাজই অত্যন্ত নিপুণভাবে করে। তার কর্মদক্ষতা থাকলেও সে কোনো মূল্যায়ন পায় না মকবুলের কাছে। টুনির এই অবস্থা গল্পে বর্ণিত নিমগাছের সাথে সহজেই মিলে যায়। ➠ নিমগাছ যেমন অন্যের উপকার করেও কোনো মূল্যায়ন পায় না টুনিও তাই। ফলে সার্বিক বিচারে টুনি, নিমগাছ এবং গল্পের লক্ষ্মীবউ একই সুতোয় গাঁথা। ‘নিমগাছ’ গল্পে প্রতীকী অর্থে নিমগাছের সাথে বাড়ির বউয়ের তুলনা করা হয়েছে। কর্মদক্ষতা এবং প্রেক্ষাপট বিচার গল্পের নিমগাছ বাড়ির লক্ষ্মীবউটির প্রতীক। আবার উদ্দীপকের টুনিও কর্মদক্ষতা ও প্রেক্ষাপট বিচারে নিমগাছের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই “টুনি যেন ‘নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মীবউ”- এই বক্তব্যের সাথে আমি একমত। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
স্বামী-সন্তান আর শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে সুখের সংসার সূচনার। সবাই কীভাবে
সুস্থ ও সুন্দর থাকবে সেদিকে গভীর মনোযোগ তার। একইভাবে পরিবারের সদস্যরাও
তার প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল। একদিন সূচনার এক বান্ধবী তাকে প্রস্তাব করল সব
বান্ধবী মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু পরিবারের সবাইকে বাদ দিয়ে
একা যেতে তার মন সায় দেয় না। ক. কে নিমগাছের রূপ ও গুণের প্রশংসা করেন? খ. ‘মাটির ভিতরে শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে’- কথাটি কেন বলা হয়েছে? গ. ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত গৃহবধূর সাথে উদ্দীপকের গৃহবধূর অমিল ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের মতোই প্রতীকধর্মী- এ প্রসঙ্গে তোমার মতামত বিশ্লেষণ করো। |
ক. কবি নিমগাছের রূপ ও গুণের প্রশংসা করেন। খ. নিমগাছ তার বন্ধন ছেড়ে যেতে চাইলেও সেটা সম্ভব না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে বাক্যটি দ্বারা। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ সবাইকে অকাতরে সেবা দিয়ে গেলেও বিনিময়ে পায় নিদারুণ অবহেলা। তাই সহানুভূতিশীল কোনো মানুষ যখন তার প্রশংসা করে তখন নিমগাছের ইচ্ছা হয় লোকটার সাথে চলে যেতে। কিন্তু বহু বছর ধরে নিমের শেকড় মাটির অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে। তাই সে চাইলেও যেতে পারে না। এখানে নিমের শেকড়ের প্রতীকে মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের শৃঙ্খলকেই তুলে ধরা হয়েছে। গ. উদ্দীপকের গৃহবধূ তার কর্মদক্ষতা ও গুণের কারণে পরিবারের সবার ভালোবাসা পেলেও ‘নিমগাছ’ গল্পের গৃহবধূ এক্ষেত্রে থেকেছেন উপেক্ষিত। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে রূপক অর্থে নিমগাছের গুণাগুণ বর্ণনার মধ্য দিয়ে বাড়ির গৃহবধূর গুণাবলির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। গৃহবধূ নিমগাছের মতোই সর্বদা অন্যের উপকারে নিয়োজিত থাকলেও পরিবারের সকলের কাছে থেকেছেন উপেক্ষিত। তার উপকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না কেউ। ফলে তিনি থেকে যান নিমগাছের মতোই অযত্ন-অবহেলায়। ➠ উদ্দীপকের গৃহবধূ ‘নিমগাছ’ গল্পের গৃহবধূর মতো উপেক্ষিত হননি। তিনি নিজের কর্মদক্ষতায় সবাই ভালোবাসা অর্জন করেছেন। সবাই তার প্রতি থেকেছে যথেষ্ট যত্নশীল। কিন্তু ‘নিমগাছ’ গল্পের গৃহবধূ কর্মদক্ষতা দেখালেও কেউ তার প্রতি যত্নশীল হয়নি। ফলে উদ্দীপকের গৃহবধূর সাথে তার ভালোবাসা লাভের ক্ষেত্রে অমিল ফুটে ওঠে। ঘ. ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ রূপকার্থে ব্যবহৃত হলেও উদ্দীপকে সরাসরি গৃহবধূর বর্ণনা থাকায় উদ্দীপকটিকে প্রতীকধর্মী বলা যায় না। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছকে রূপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে বাড়ির লক্ষ্মী বউয়ের বর্ণনা দিতে রূপক হিসেবে নিমগাছের কথা বলা হয়েছে। নিমগাছ যেমন মানুষের উপকার করেও কোনো প্রতিদান পায় না তেমনি লক্ষ্মী গৃহবধূও পরিবারের সদস্যদের উপকার করে কোনো প্রতিদান পায় না। আর গৃহবধূর এই অবস্থা বোঝানোর জন্য প্রতীক হিসেবে নিমগাছকে ব্যবহার করা হয়েছে। ➠ উদ্দীপকে কোনো রূপকধর্মী আলোচনা নেই। সেখানে সূচনা নামক গৃহবধূর পরিবারে তার ভূমিকার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সরাসরি গৃহবধূর আলোচনার বাইরে কোনো রূপক ব্যবহার করা হয়নি। ফলে পাঠক সরাসারি সূচনার কথা জানতে পেরেছে। সংসারে তার অবস্থান সম্পর্কে অনুধাবন করতে পেরেছে। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত নিমগাছ হলো লক্ষ্মী গৃহবধূর প্রতীক। গৃহবধূর গুণের প্রশংসা করতে গিয়ে এখানে নিমগাছ রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘নিমগাছ’ গল্পের গৃহবধূ এবং উদ্দীপকের গৃহবধূ কর্মক্ষেত্রে একই ভূমিকা রাখলেও তাদের সম্পর্কে বর্ণনার ক্ষেত্রে দুইজন লেখক ভিন্ন ধারার আশ্রয় নিয়েছেন। ‘নিমগাছ’ গল্পে লেখক গৃহবধূর বর্ণনায় রূপকধর্মী আলোচনা করলেও উদ্দীপকে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে প্রশ্নে উল্লিখিত উদ্দীপকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের মতোই প্রতীকধর্মী- এ কথা ঠিক নয়। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
রহমান সাহেব অত্যন্ত পরোপকারী মনোভাবের মানুষ। যে কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য
করতে ছুটে যান তিনি। নিজের সমস্যার কথা চিন্তা না করে যথাসাধ্য সহযোগিতা
করেন। রহমান সাহেবের এ স্বভাবের কারণে তাঁর স্ত্রী মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত
হন। অন্যের উপকার করতে গিয়ে নিজের সমস্যা ডেকে আনার বিষয়টি মানতে পারেন না
তিনি। রহমান সাহেব স্ত্রীকে বোঝাতে চান- “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের
জন্য।” ক. বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে কারা খুশি হন? খ. বিজ্ঞরা নিমগাছ কাটতে নিষেধ করে কেন? গ. ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছের সাথে উদ্দীপকের রহমান সাহেবের সাদৃশ্য কোথায়? ঘ. ‘নিমগাছ’ গল্পের মতোই উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি যেন সীমাহীন কথার আখ্যান- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। |
ক. বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন। খ. নিমগাছ ঔষধি গুণসম্পন্ন বলে বিজ্ঞরা নিমগাছ কাটতে নিষেধ করেন। ➠ নিম অত্যন্ত উপকারী একটি গাছ। এর ডাল, পাতা, ছাল ইত্যাদি ঔষধি গুণের কারণে সুপরিচিত। মানব শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য নিমের বিভিন্ন অংশের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। এমনকি নিমের হাওয়াও স্বাস্থ্যকর। এসব কারণেই বিজ্ঞরা নিমগাছ কাটতে নিষেধ করেন। গ. অন্যের উপকার করার দিক থেকে উদ্দীপকের রহমান সাহেবের সাথে ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছের সাদৃশ্য বিদ্যমান। ➠ নিমগাছ একটি উপকারী বৃক্ষ। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে নিমগাছ নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। নিমগাছের পাতা, বাকল, ছায়া প্রভৃতির বিভিন্ন বাহ্যিক উপকারিতার কথা ‘নিমগাছ’ গল্পে সুনিপুণভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। কবিরাজ তার চিকিৎসার কাজে, সাধারণ মানুষ তার প্রতিদিনের কাজে অনবরত এই নিমগাছ ব্যবহার করে। ➠ উদ্দীপকের রহমান সাহেব ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত নিমগাছের মতোই উপকারী। তিনি নিজের সমস্যার কথা চিন্তা না করে যেমন অন্যের উপকার করেন, তেমনি গল্পের নিমগাছও নিজের ক্ষতি স্বীকার করে অন্যের উপকার করে। মূলত নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকার করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকের রহমান সাহেব এবং ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত নিমগাছ একই ভূমিকা পালন করেছে। ঘ. ‘নিমগাছ’ গল্পের মতোই উদ্দীপকের শেষ বাক্যটিতে গভীর ভাব ফুটে উঠেছে। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের অনেক উপকারিতার কথা বর্ণিত হয়েছে। মূলত রূপকার্থে নিমগাছের বর্ণনার মধ্যে দিয়ে বাড়ির লক্ষ্মীবউটির কথা তুলে ধরেছেন লেখক। আর সংসারে লক্ষ্মীবউটির সীমাহীন অবদানকে ধারণ করেছে ‘নিমগাছ’ গল্পের শেষ বাক্যটি। নিমগাছ যেমন মানুষের অনেক উপকার করেও কোনো সমাদর পায় না। আবার সেখান থেকে চলেও যেতে পারে না শিকড়ের টানে। সে রকম বাড়ির বউটিও বাড়ি থেকে যেতে পারে না। আর এটি বোঝাতেই গল্পে শেষ বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে। ➠ উদ্দীপকের শেষ বাক্যটিও ‘নিমগাছ’ গল্পের মতোই গভীর ভাব ধারণ করে আছে। সেখানে রহমান সাহেব মানবতার জয়গান গেয়েছেন। মানুষ মানুষের উপকারে যদি না আসে তাহলে আর কে আসবে? তাই মানুষ হিসেবে রহমান সাহেব মানুষের উপকার করেন। তার এই মানসিকতাকে সকলের জন্য গুরুত্ববহ করে তুলেছে উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে যেমন শেষ বাক্যে সীমাহীন কথা লুকিয়ে আছে তেমনি উদ্দীপকেও শেষ বাক্যে সীমাহীন কথা লুকিয়ে আছে। ‘নিমগাছ’ গল্পে বাড়ির লক্ষ্মীবউয়ের সমগ্র দুঃখ বেদনা ধারণ করে আছে শেষ বাক্যটি। আবার উদ্দীপকেও গভীর ভাব ধারণ করেছে শেষ বাক্যে। তাই বলা যায়, ‘নিমগাছ’ গল্পের মতোই উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি যেন সীমাহীন কথার আখ্যান’ প্রশ্নোক্ত এই উক্তিটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
বৃদ্ধ কালাম মিয়া সারা জীবন অনেক কষ্ট করে ছেলেদের লেখাপড়া করিয়েছেন। তারা
সবাই এখন শহরে প্রতিষ্ঠিত জীবন যাপন করছে। কালাম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ
হওয়ায় ছেলেরা তাকে শহরে এনে নিজেদের কাছে রেখেছে। তাদের মতামত হলো গ্রামে
থাকলে বাবার সেবাযত্ন ঠিকমতো হবে না। কিন্তু গ্রামের সাথে কালাম মিয়ার যে
নাড়ির সম্পর্ক। গ্রাম যেন তাঁকে বারবার ডাকে। তাঁর খুব ইচ্ছা করে সেই ডাকে
সাড়া দিতে। ক. নিমগাছের চারিদিকে কী এসে জমে? খ. ‘বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটার ঠিক এক দশা।’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো। গ. ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ এবং উদ্দীপকের কালাম মিয়ার প্রতি মানুষের আচরণের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরো। ঘ. গল্পের নিমগাছ এবং উদ্দীপকের বৃদ্ধের চলে যাওয়ার আকুতি কি একই সুরে গাঁথা? মতামত বিশ্লেষণ করো। |
ক. নিমগাছের চারিদিকে আবর্জনা এসে জমে। খ. ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউয়ের মনোবেদনার চিত্র প্রকাশিত হয়েছে উক্তিটি দ্বারা। ➠ আলোচ্য বাক্যটি ‘নিমগাছ’ গল্পের ম্যাজিক বাক্য। একটি মাত্র কথার ভেতর দিয়ে বনফুল বলে দিয়েছেন অনেক কথা। গল্পটিতে তিনি নিমগাছের প্রতীকের আড়ালে প্রতিষ্ঠা করেছেন মানবজীবনের গভীর একটি সত্যকে। নিমগাছের মতোই বাড়ির লক্ষ্মীবউটি সবাইকে হাসিমুখে সেবা দিয়ে যায়। অথচ নিমগাছের মতোই তার দিকে কারও কোনো মনোযোগ থাকে না। অবহেলা পাওয়ার দিক থেকে লেখক নিমগাছ ও বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটিকে এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়েছেন। গ. ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ মানুষের উপকার করেও অবহেলা পেয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকের কালাম মিয়া আদর-যত্ন লাভ করেছেন। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত নিমগাছের কাছ থেকে মানুষ নানা রকম উপকার ভোগ করে। কিন্তু কেউই নিমগাছের খোঁজ রাখে না। কবিরাজ তার চিকিৎসার কাজে, সাধারণ মানুষ তাদের প্রাত্যহিক কাজে অনবরত নিমগাছকে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু নিমগাছের সামান্য যত্নটুকুও কেউ নেয় না। ফলে অযত্নে অবহেলায় আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ➠ উদ্দীপকের কালাম মিয়া তাঁর সন্তানদের কাছে যথেষ্ট আদর-যত্ন লাভ করেন। তিনি সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সন্তানরাও তার প্রতিদান দিয়েছে। তাঁকে অসুস্থতায় শহরে এনে চিকিৎসা করিয়েছে। এমনকি তাঁর আদর যত্নের কমতি হবে ভেবে তারা তাঁকে গ্রামে ফিরে যেতে দিতেও চায় না। কালাম মিয়া এরূপ যত্ন-আত্তি পেলেও ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ পেয়েছে অবহেলা। আর এদিক থেকেই গল্পের নিমগাছ এবং উদ্দীপকের কালাম মিয়ার প্রতি মানুষের আচরণের বৈসাদৃশ্য ফুটে উঠেছে। ঘ. গল্পের নিমগাছ সেœহ-মমতা বঞ্চিত হয়ে চলে যেতে চাইলেও উদ্দীপকের বৃদ্ধ চলে যেতে চান গ্রামের প্রতি নাড়ির টানে। ➠ ‘নিমগাছ’ গল্পে সকলেই নিমগাছের কাছ থেকে উপকার ভোগ করে। কিন্তু কেউই নিমগাছের একটু যত্ন করে না। ফলে উপকার করে গেলেও প্রতিদানে সেœহবঞ্চিত হয়ে আবর্জনার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নিমগাছকে। তারপর যখন কবি এসে নিমগাছের প্রশংসা করে তখন তা নিমগাছের খুবই ভালো লাগে। সবসময় ভালোবাসাবঞ্চিত হয়ে থাকার কারণে কবির একটু ভালোবাসা তাকে খুব আকর্ষণ করে। তাই কবির সাথে তার চলে যেতে ইচ্ছে করে। ➠ উদ্দীপকের বৃদ্ধ কালাম মিয়া তাঁর জন্মস্থানের প্রতি ভালোবাসার টানে গ্রামে ফিরে যেতে চান। গ্রামের সাথে তাঁর নাড়ির সম্পর্ক। সারাজীবন গ্রামে থেকে গ্রামের প্রকৃতি ও মানুষের সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাই গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও গেলে কালাম মিয়ার মাঝে বিরহকাতরতা তৈরি হয়। এজন্য তিনি শহর থেকে গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হন। ➠ গল্পের নিমগাছ কেবল উপকার করে গেলেও তার প্রতিদানে পায় কেবল অবহেলা। তাই অভিমান করে চলে যেতে চায় কবির সাথে। অন্যদিকে উদ্দীপকের কালাম সাহেবের মনে আবেদন সৃষ্টি করে তাঁর গ্রাম। তাই তিনি আদর-যত্ন ফেলে চলে যেতে চান। নিমগাছ ভালোবাসাবঞ্চিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও উদ্দীপকের কালাম ভালোবাসাবঞ্চিত হননি। তাই গল্পের নিমগাছ এবং উদ্দীপকের কালাম মিয়ার চলে যাওয়ার আকুতি এক সূত্রে গাঁথা নয়। |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা সাহিত্য: নবম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫। |