পরিচ্ছেদ- ৪৭: চিঠিপত্র
![]() |
ভাব-সম্প্রসারণ |
চিঠিপত্র
বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষকে চিঠিপত্র লিখতে হয়। ব্যক্তিগত সংবাদ জানাতে বা জানতে, প্রাতিষ্ঠানিক রীতি বা নিয়ম মান্য করতে, আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জ্ঞাপনে, ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এ রকম নানা কারণে পত্র লেখা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের চিঠিপত্রের নমুনা এই পরিচ্ছেদে দেখানো হলো।
ব্যক্তিগত পত্র : |
---|
আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিত-অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে লিখিত যোগাযোগের উপায় হিসেবে ব্যক্তিগত পত্রের জন্ম। ইন্টারনেট প্রযুক্তির যুগেও ব্যক্তিগত পত্রের কদর কমেনি, বরং ধরন বদলেছে। পূর্বে প্রধানত ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত পত্রের আদান-প্রদান হতো। বর্তমানে ডাকের পাশাপাশি ই-মেইল আকারেও ব্যক্তিগত পত্রের আদান-প্রদান হয়। ব্যক্তিগত পত্রে মানুষের শিক্ষা, বুদ্ধিমত্তা, রুচি ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। ব্যক্তিগত পত্রের গঠনে উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচিত হতেও দেখা যায়। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছিন্নপত্র’, ‘রাশিয়ার চিঠি’, ‘জাপান-যাত্রী’ ইত্যাদি। ব্যক্তিগত চিঠি লেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হয়। পত্রের শুরুতে পত্ররচনার তারিখ ও স্থানের নাম উল্লেখ করতে হয়। যাকে চিঠি লেখা হচ্ছে, তার সঙ্গে পত্রলেখকের সম্পর্কের উপর নির্ভর করে তাকে কীভাবে সম্বোধন করা হবে। সাধারণত গুরুজনকে শ্রদ্ধেয়, মাননীয় ইত্যাদি সম্বোধন করা হয়। বয়সে ছোটো কাউকে পত্র লিখলে স্নেহের, কল্যাণীয় ইত্যাদি সম্বোধন করা হয়। বন্ধু বা প্রিয়জনের ক্ষেত্রে প্রিয়, প্রীতিভাজনেষু দিয়ে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। অপরিচিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে নাম বা পদবির আগে প্রিয় বা জনাব লিখে সম্বোধনের কাজ সারা যায়। পত্রের মূল বক্তব্যে যাবার আগে সৌজন্য প্রকাশক কথাবার্তা লেখা হয়ে থাকে। সহজ, সরল ও হৃদয়গ্রাহী করে লেখার উপরই চিঠির সার্থকতা নির্ভর করে। চিঠির পূর্বাপর বক্তব্যের সামঞ্জস্য, সংগতি ও ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়। পত্রের শেষে ‘ইতি’ লেখার একটি রেওয়াজ বাংলায় প্রচলিত আছে। এরপর সম্পর্ক অনুযায়ী বিদায় সম্ভাষণ লিখে চিঠির শেষে নাম লিখতে হয়। লিখিত চিঠিটি ডাকযোগে গেলে খামের উপরে নাম-ঠিকানা লিখতে হয়, ই-মেইল আকারে পাঠালে নির্দিষ্ট জায়গায় ই-মেইল ঠিকানা ও চিঠির বিষয় লিখতে হয়। এখানে কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্রের নমুনা উল্লেখ করা হলো। |
১. মাতার কাছে পুত্রের চিঠি
২রা সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রি.
শ্রদ্ধেয় মা, আমি নিরাপদে ছাত্রাবাসে পৌঁছেছি। যদিও আসার পথে বাড়ির কথা ভেবে আমার মন খারাপ লাগছিল। প্রতিবারই বাড়ি থেকে আসার সময়ে আমার এ রকম হয়। এসেই জানতে পারলাম আগামী ১০ই নভেম্বর থেকে আমাদের প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষা শুরু হবে। তাই পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার জন্য আশীর্বাদ কোরো। ছুটিতে বাড়ি গিয়ে লেখাপড়ায় খানিকটা ছেদ পড়েছিল। তাই এখন বেশি পরিশ্রম করে লেখাপড়ার সাময়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছি। মা, আমি তোমাকে আমার জীবনের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছি। আমি সেই লক্ষ্য পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করব, তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করার চেষ্টা করব। আসার সময়ে মেহরাবকে কিছুটা অসুস্থ দেখে এসেছি। এখন ও কেমন আছে, জানিয়ো। বাবাকে শরীরের প্রতি যত্ন নিতে বোলো। আমার জন্য চিন্তা কোরো না। আমি এখন ভালো আছি।
ইতি |
১. মাতার কাছে পুত্রের চিঠি
২রা সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রি.
স্নেহের প্রাপ্তি গত চিঠিতে তোমার প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল জেনেছি। প্রায় সবগুলো বিষয়ে ভালো করেছ। গণিতে খানিকটা কম নম্বর পেয়েছ। এতে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। গণিতের কোন বিষয়গুলো বুঝতে এখনও সমস্যা হচ্ছে, তা আগে শনাক্ত করো। প্রয়োজনে তোমার ক্লাসের গণিত শিক্ষকের সহযোগিতা নাও। মুখস্থ না করে বুঝে পড়ার চেষ্টা কোরো। সামনে তোমার নির্বাচনী পরীক্ষা এবং এসএসসি পরীক্ষারও খুব বেশি দেরি নেই। তাই এই সময়টা খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। জীবনে প্রতিটি মুহূর্তকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে হবে। পরীক্ষা শিক্ষাজীবনের একটি অংশ। তাই পরীক্ষাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই সময়ে কীভাবে সুস্থ থেকে নিয়মানুযায়ী পড়াশোনা করা যায়, সেদিকে খেয়াল রেখো। বেশি রাত জেগো না, যথাসময়ে খাবার খেয়ো। আমরা বাসার সবাই ভালো আছি।
ইতি
|
৩. ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি
৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ খ্রি.
প্রিয় মতি আমরা সেদিন সকালেই লালবাগের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। পুরান ঢাকার লালবাগে এর অবস্থান। দর্শনার্থীদের জন্য ঢোকার প্রবেশ পথে টিকিট কাউন্টার। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটলাম। ভিতরে প্রবেশ করার পর কয়েকজন বিদেশি দর্শনার্থীকে দেখলাম। ফটকের ভিতরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। মুঘল স্থাপত্য, মসজিদ, উন্মুক্ত মাঠ, সুসজ্জিত ফুলের বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু ১৬৭৮ সালে। তৎকালীন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র সুবেদার আজম শাহ এই কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে এর মূল নির্মাণ সম্পন্ন হয়। লালবাগ কেল্লা মোঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি তৈরিতে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর এবং রং-বেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে যে দরজাটি বর্তমানে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া আছে, সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরি বিবির সমাধি। পরি বিবি ছিলেন শায়েস্তা খাঁর অকালপ্রয়াত কন্যা। কেল্লার চত্বরে আরো রয়েছে কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মামখানা, উত্তর-পশ্চিমাংশের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শাহি মসজিদ ও একটি জাদুঘর। দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা আছে। স্থাপনাগুলো ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের খুব ভালো লেগেছে। সময় পেলে তুইও একবার দেখে আসিস বাংলার ইতিহাস-প্রসিদ্ধ লালবাগ কেল্লা। ভালো থাকিস।
ইতি |
৪. লেখকের কাছে পাঠকের চিঠি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ খ্রি.
জনাব আহমদ সাদিক ‘বাংলাদেশের প্রান্তিক-উৎসব’ বইটি পড়ে আমি খুব উপকৃত হয়েছি। মূলধারার উৎসবের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলে যে কত উৎসব আছে, তা আপনার বই পড়ার আগে জানতে পারিনি। আপনি একজন নিষ্ঠাবান গবেষক হিসেবে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। এই বই রচনায় আপনার সেই যোগ্যতার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেছে। আমি বেশি খুশি হয়েছি এই জন্য যে, সিলেট অঞ্চলের মণিপুরি, খাসিয়া ও চা শ্রমিকদের উৎসবের কথা আপনার বইয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। বইটির ভাষা ও অধ্যায়-বিভাজন আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। ৩১২ পৃষ্ঠার বইটি আমি দুই দিনে পড়ে শেষ করেছি। আপনার সঙ্গে দেখা করার প্রত্যাশা রইল। যদি কখনও সিলেটে আসেন, আমাকে জানালে ও আমাদের বাসায় আতিথ্য গ্রহণ করলে খুশি হব। আপনার জন্য শুভ কামনা।
ইতি
|
আমন্ত্রণপত্র : |
---|
সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানোর পত্রকে আমন্ত্রণপত্র বলে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, জন্মবার্ষিকী, বিবাহ, মৃত্যুবার্ষিকী, সাহিত্যসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বইমেলা, নাগরিক সংবর্ধনা, নাট্য-উৎসব, লোক-উৎসব ইত্যাদি উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্র রচনা করা হয়। আমন্ত্রণপত্র সাধারণত মুদ্রিত হয়। অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট তারিখের কিছুদিন পূর্বে আমন্ত্রিতদের মধ্যে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়। অনেক সময়ে আমন্ত্রণপত্রের উপরের দিকে অনুষ্ঠানের শিরোনাম লেখা থাকতে পারে। এখানে দুটি আমন্ত্রণপত্রের নমুনা উল্লেখ করা হলো: |
১. রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্র রবীন্দ্রজয়ন্তী ১৪২৮ সুধী আগামী ২৫শে বৈশাখ ১৪২৮ শনিবার ৮ই মে ২০২১ সকাল ১০টায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জামালপুর জিলা স্কুলের সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে স্কুল-মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন জামালপুর জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব আখতার জামান। ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সরকারি বিনোদ বিহারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. আয়াজ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব আউয়াল ফয়সাল। অনুষ্ঠানে আপনার উপস্থিতি আন্তরিকভাবে কামনা করি।
মুশফিক রোহান
অনুষ্ঠানসূচি |
২. নাগরিক সংবর্ধনা উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্র
সুধী অনুষ্ঠানে আপনার সবান্ধব উপস্থিতি কামনা করছি।
বিপুল বর্মণ
অনুষ্ঠানসূচি |
সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য চিঠি |
---|
স্থানীয় বা জাতীয় কোনো সমস্যার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সংবাদপত্রের চিঠিপত্র কলামে এক ধরনের পত্র মুদ্রিত হয়। এসব পত্রের একটি শিরোনাম থাকে। এতে সাধারণত কোনো সম্বোধন থাকে না। তবে পত্রলেখকের নাম ও পরিচয় মুদ্রিত হয়। পত্রিকায় এই ধরনের পত্র পাঠাতে পত্রিকা-সম্পাদকের বরাবর আলাদা একটি চিঠি লিখতে হয়। নিচে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে দুটি চিঠির নমুনা উল্লেখ করা হলো। |
১. স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুর্দশার কথা জানিয়ে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য চিঠি ৩রা জুন ২০২১ খ্রি.
সম্পাদক বিষয়: ‘চিঠিপত্র’ কলামে প্রকাশের জন্য পত্র।
মহোদয়
বিনীত জুলগাঁও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দিকে নজর দিন শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার জুলগাঁও একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম। দুই দশক আগে কমিউনিটি স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় পাহাড়-টিলা-বন পরিবেষ্টিত দুর্গম এ-অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশেপাশের ছয়টি গ্রামের দশ হাজার মানুষ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এখানকার চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য অন্তত পাঁচ জন চিকিৎসক থাকার কথা, আছেন তিন জন; তাঁরাও নিয়মিত আসেন না। ভবনটিও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। নিয়মিত ওষুধের সরবরাহ নেই। সাধারণ মানুষ যথাযথ চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যাচ্ছে। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা হয়তো জেলাশহরে বা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, এই করুণ অবস্থা থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে রক্ষা করা হোক। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে জুলগাঁও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জুলগাঁও গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।
জান্নাতুল মাওয়া |
২. সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিকারের দাবি জানিয়ে পত্রিকায় প্রকাশের উপযোগী চিঠি ২৫ এপ্রিল ২০১৯
সম্পাদক বিষয়: ‘চিঠিপত্র’ কলামে প্রকাশের জন্য পত্র।
মহোদয়
বিনীত সড়ক দুর্ঘটনার অবসান চাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রধান সমস্যা ও আতঙ্কের নাম সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায়ই টেলিভিশনের পর্দায় ও পত্রিকার পাতায় চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক খবর। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অনেক মানুষ আহত ও নিহত হচ্ছে। একটি পত্রিকার তথ্য মতে, ২০২০ সালে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না। আহত অনেকে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এই ধরনের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি এখন জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর প্রতিকার জরুরি। প্রতিটি মানুষের প্রাণ মহামূল্যবান। তাই আমরা চাই না, সড়ক দুর্ঘটনায় আর একটি প্রাণও ঝরে পড়ুক। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। আমাদের দেশে সাধারণত কয়েকটি কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে; যেমন অনুপযোগী রাস্তা, ত্রুটিযুক্ত গাড়ি, অনভিজ্ঞ চালক, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ, ওভারটেকিং, ট্রাফিক আইন অমান্য করা ইত্যাদি। পথচারীদের ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার ফলেও অনেক সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। সমস্যা যেহেতু চিহ্নিত, সেহেতু এর থেকে মুক্তির পথ বের করা আমাদের জন্য মোটেই কঠিন হবে না। রাস্তাগুলোকে নিয়মিত সংস্কার করার পাশাপাশি প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। আমরা আশা করি, সমস্যা দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিনীত |
মানপত্র |
---|
আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টিকে বরণ করা, বিদায় দেওয়া, সংবর্ধনা ও অভিনন্দন জানানোর জন্য যে পত্র রচনা করা হয়, তাকে মানপত্র বলে। মানপত্র সাধারণত বহু দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে পাঠ করা হয়। এ ধরনের পত্রের ভাষা খানিকটা অলংকারমণ্ডিত হতে পারে। তবে এর আয়তন সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। যাঁর বা যাঁদের উদ্দেশে মানপত্র পড়া হয়, মানপত্রে তাঁর বা তাঁদের দক্ষতা, যোগ্যতা, কৃতিত্ব প্রভৃতির উল্লেখ করা হয়ে থাকে। মানপত্র সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখে অথবা ছাপিয়ে বাঁধাই করা যেতে পারে। নিচে দুটি মানপত্রের নমুনা দেখানো হলো। |
১. এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে মানপত্র
বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের
হে বিদায়ী অগ্রজবৃন্দ
হে অগ্রজ সতীর্থবৃন্দ
হে অগ্রপথিকবৃন্দ
তোমাদের নতুন অভিযাত্রা সফল হোক।
তোমাদের প্রীতিধন্য অনুজবৃন্দ |
২. খ্যাতিমান কবি বা সাহিত্যিকের আগমন উপলক্ষে অভিনন্দনপত্র
রাজশাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে
হে বরেণ্য অতিথি
হে নন্দিত কথাশিল্পী
হে ভবিষ্যতের দিশারি তারিখ: ১২ ডিসেম্বর ২০২১
শ্রদ্ধাসহ, |
আবেদনপত্র |
---|
স্কুল-কলেজে কিংবা বিভিন্ন অফিসে বা সংস্থায় প্রতিষ্ঠান-প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অনুরোধ জানিয়ে পত্র লেখার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের পত্রকে দরখাস্ত বা আবেদনপত্র বলে। আবেদনপত্রের আকার সাধারণত সংক্ষিপ্ত হয়। সেখানে মূল প্রসঙ্গটি যথাযথভাবে উপস্থাপন করাটাই লক্ষ্য। এ ধরনের পত্রে অনেক সময়ে প্রমাণ স্বরূপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অনুলিপি সংযুক্ত করা হয়। নিচে তিনটি আবেদনপত্রের নমুনা দেখানো হলো। |
১. ছুটির জন্য আবেদন
১২ই জুলাই ২০২১ খ্রি. মাধ্যম: শ্রেণিশিক্ষক, নবম শ্রেণি বিষয়: অনুপস্থিতির কারণে ছুটি প্রদানের আবেদন।
মহোদয় আমার অনিচ্ছাকৃত অনুপস্থিত ওই ৩ দিনের ছুটি মঞ্জুর করতে আপনার সদয় মর্জি কামনা করছি।
বিনীত সংযুক্তি: ১. চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র |
২. পাঠাগার স্থাপনের জন্যে আবেদন
৪ই জুলাই ২০২১ খ্রি. বিষয়: পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন।
মহোদয় এই অবস্থায় ফুলঝুড়ি ইউনিয়নে একটি পাঠাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিনীত |
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৮তম, ২০১৫। |