উমর ফারুক : কাজী নজরুল ইসলাম
|
| উমর ফারুক : কাজী নজরুল ইসলাম |
উমর ফারুক
কাজী নজরুল ইসলাম
তিমির
রাত্রি-এশার আজান শুনি দূর মসজিদে,
প্রিয়-হারা কার কান্নার মত এ-বুকে আসিয়া বিঁধে!
আমির-উল্-মুমেনিন,
তোমার স্মৃতি যে আজানের ধ্বনি জানে না
মুয়াজ্জিন।
তকবির
শুনি, শয্যা ছাড়িয়া
চকিতে উঠিয়া বসি,
বাতায়নে চাই-উঠিয়াছে
কি রে গগনে
মরুর শশী?
ও-আজান, ও কি
পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান?
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ও কি ও তোমারি সে আহ্বান?
আবার লুটায়ে পড়ি!
‘সেদিন গিয়াছে’-শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি!
উমর! ফারুক! আখেরী নবির ওগো
দক্ষিণ-বাহু!
আহ্বান নয়- রূপ ধরে এসো!- গ্রাসে অন্ধতা-রাহু!
ইসলাম-রবি, জ্যোতি তার আজ দিনে দিনে বিমলিন!
সত্যের আলো নিভিয়া-জ্বলিছে জোনাকির আলো
ক্ষীণ!
শুধু আঙ্গুলি-হেলনে শাসন করিতে এ জগতের
দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমসের
ফিরদৌস
ছাড়ি নেমে এস তুমি সেই শমশের ধরি
আর একবার লোহিত-সাগরে লালে-লাল হয়ে মরি!
ইসলাম-সে তো
পরশ-মানিক
তারে কে পেয়েছে খুঁজি?
পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি।
আজ বুঝি-কেন বলিয়াছিলেন শেষ
পয়গম্বর-
‘মোর পরে যদি নবি হতাে কেউ, হতো সে এক উমর।’
অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধূলার
তখতে বসি
খেজুর পাতার প্রাসাদ তোমার বারে বারে গেছে খসি
সাইমুম-ঝড়ে। পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি কো নুয়ে,
ঊর্ধ্বের যারা-পড়েছে তাহারা, তুমি ছিলে জওয়াব ভুঁয়ে।
শত প্রলোভন
বিলাস বাসনা
ঐশ্বর্যের মদ
করেছে সালাম দূর হতে সব ছুঁইতে পারেনি পদ।
সবারে উর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়া তুমি ছিলে সব নিচে,
বুকে করে সবে বেড়া করি পার, আপনি রহিলে পিছে।
হেরি পশ্চাতে চাহি-
তুমি চলিয়াছ
রোদ্রদগ্ধ
দূর মরুপথ বাহি
জেরুজালেমের কিল্লা যথায় আছে অবরোধ করি
বীর মুসলিম সেনাদল তব বহু দিন মাস ধরি।
দুর্গের দ্বার খুলিবে তাহারা, বলেছে শত্রু শেষে-
উমর যদি গো সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করে এসে।
হায় রে আধেক ধরার মালিক আমিরুল-মুমেনিন
শুনে সে খবর একাকী উষ্ট্রে চলেছে
বিরামহীন
সাহারা
পারায়ে! ঝুলিতে দু খানা শুকনো
‘খবুজ’ রুটি
একটি
মশকে
একটুকু পানি খোর্মা দু তিন মুঠি!
প্রহরীবিহীন সম্রাট চলে একা পথে উটে চড়ি
চলেছে একটি মাত্র ভৃত্য উষ্ট্রের রশি ধরি!
মরুর সূর্য ঊর্ধ্ব আকাশে আগুন বৃষ্টি করে,
সে আগুন-তাতে খই সম ফোটে বালুকা মরুর পরে।
কিছুদুর যেতে উট হতে নামি কহিলে ভৃত্যে, ‘ভাই,
পেরেশান
বড় হয়েছ চলিয়া! এইবার আমি যাই
উষ্ট্রের রশি ধরিয়া অগ্রে, তুমি উঠে বস উটে;
তপ্ত বালুতে চলি যে চরণে রক্ত উঠেছে ফুটে।’
.........ভৃত্য দস্ত চুমি
কাঁদিয়া কহিল, ‘উমর! কেমনে এ আদেশ কর তুমি?
উষ্ট্রের পিঠে আরাম করিয়া গোলাম রহিবে বসি
আর হেঁটে যাবে খলিফা উমর ধরি সে উটের রশি?’
খলিফা হাসিয়া বলে,
‘তুমি জিতে গিয়ে বড় হতে চাও, ভাই রে, এমনি ছলে।
রোজ-কিয়ামতে আল্লাহ যে দিন কহিবে, ‘উমর! ওরে
করেনি খলিফা, মুসলিম-জাঁহা তোর সুখ তরে তোরে!’
কি দিব জওয়াব, কি করিয়া মুখ দেখাব রসুলে ভাই?
আমি তোমাদের প্রতিনিধি শুধু! মোর অধিকার নাই।
আরাম সুখের,-মানুষ হইয়া নিতে মানুষের সেবা!
ইসলাম বলে সকলে সমান, কে বড় ক্ষুদ্র কে-বা!
ভৃত্য চড়িল উটের পৃষ্ঠে উমর ধরিল রশি,
মানুষেরে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধূলায় নামিল শশী!
জানি না, সেদিন আকাশে পুষ্পবৃষ্টি হইল কি-না,
কি গান গাহিল মানুষে সেদিন বন্দি বিশ্ববীণা!
জানি না, সেদিন ফেরেশতা তব করেছে কি না স্তব,-
অনাগত কাল গেয়েছিল শুধু, ‘জয় জয় হে মানব।’...
তুমি
নির্ভীক,
এক খোদা ছাড়া করনিকো কারে ভয়,
সত্যব্রত
তোমায় তাইতে সবে
উদ্ধত
কয়।
মানুষ হইয়া মানুষের পূজা মানুষেরি অপমান,
তাই মহাবীর
খালেদেরে তুমি পাঠাইলে ফরমান,
সিপাহ-সালারে ইঙ্গিতে তব করিলে মামুলি সেনা,
বিশ্ব-বিজয়ী বীরেরে শাসিতে এতটুকু টলিলে না।
মানব-প্রেমিক! আজিকে তোমারে স্মরি,
মনে পড়ে তব মহত্ত্ব-কথা-সেদিন সে বিভাবরী
নগর-ভ্রমণে বাহিরিয়া তুমি দেখিতে পাইলে দূরে
মায়েরে ঘিরিয়া ক্ষুধাতুর দুটি শিশু সকরুণ সুরে
কাঁদিতেছে আর দুঃখিনী মাতা ছেলেরে ভুলাতে হায়,
উনানে শূন্য হাঁড়ি চড়াইয়া কাঁদিয়া অকূলে চায়!
শুনিয়া সকল-কাঁদিতে কাঁদিতে ছুটে গেলে মদিনাতে
বায়তুল-মাল হইতে লইয়া ঘৃত আটা নিজ হাতে,
বলিলে, ‘এ সব চাপাইয়া দাও আমার পিঠের পরে,
আমি লয়ে যাব বহিয়া এ-সব দুখিনী মায়ের ঘরে!’
কত লোক আসি আপনি চাহিল বহিতে তোমার বোঝা,
বলিলে, ‘বন্ধু, আমার এ ভার আমিই বহিব সোজা!
রোজ-কিয়ামতে কে বহিবে বল আমার পাপের ভার?
মম অপরাধে ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদিয়াছে, আজি তার
প্রায়শ্চিত্ত করিব আপনি!’-চলিলে নিশীথ রাতে
পৃষ্ঠে বহিয়া খাদ্যের বোঝা দুখিনীর আঙিনাতে।
এত যে কোমল প্রাণ,
করুণার বশে তবু গো ন্যায়ের করনি কো অপমান!
মদ্যপানের অপরাধে প্রিয় পুত্রেরে নিজ করে
মেরেছ দোর্রা, মরেছে
পুত্র তোমার চোখের পরে।
ক্ষমা চাহিয়াছে পুত্র, বলেছ পাষাণে বক্ষ বাঁধি-
‘অপরাধ করে তোরি মত স্বরে কাঁদিয়াছে অপরাধী।’
আবু শাহমার
গোরে
কাঁদিতে যাইয়া ফিরিয়া আসি গো তোমারে সালাম করে।
খাস দরবার ভরিয়া গিয়াছে হাজার দেশের লোকে,
‘কোথায় খলিফা’ কেবলি প্রশ্ন ভাসে উৎসুক চোখে,
একটি মাত্র
পিরান কাচিয়া শুকায়নি
তাহা বলে,
রোদ্রে ধরিয়া বসিয়া আছে গো খলিফা আঙিনা-তলে।
...হে খলিফাতুল মুসলিমিন! হে
চীরধারী
সম্রাট!
অপমান তব করিব না আজ করিয়া
নান্দী
পাঠ,
মানুষেরে তুমি বলেছ বন্ধু, বলিয়াছ ভাই, তাই
তোমারে এমন চোখের পানিতে স্মরি গো সর্বদাই। (সংক্ষেপিত)
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার উৎস নির্দেশ: |
|---|
| ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘জিঞ্জীর (১৯২৮)’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। কবিতাটি মাত্রাবৃত ছন্দে এবং সাধুভাষায় রচিত। |
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার শব্দার্থ ও টীকা: |
|---|
|
➠ তিমির- অন্ধকার। ➠ আমির উল-মুমেনিন- বিশ্বাসীদের নেতা; এখানে বিশেষভাবে বোঝানো হয়েছে মুসলামানদের ধর্মীয় প্রধান ও রাষ্ট্রীয় নেতা হজরত উমর (রা) কে। ➠ মুয়াজ্জিন- যিনি আজান দেন। ➠ তকবির- ‘আল্লাহ’ ধ্বনি বা রব। ➠ চকিতে- নিমিষে। ➠ বাতায়ন- জানালা। ➠ গগনে- আকাশে। ➠ মরুর শশী- মরুভূমি চাঁদ। ➠ পাপিয়ার ডাক- স্ত্রী পাখিটাকে বলা হয় পাপিয়া,আর পুরুষটি হলো পিউ। দুটোকে একত্রে পাপিয়া কিম্বা পিউ-পাপিয়া বলা হয়। এদের ডাক হিন্দিতে ‘পিউ কাঁহা’, বাংলায় ‘চোখ গেল’ ডাক অনুযায়ী ঐ নামেও চিহ্নিত করা হয়। সাধারণভাবে পাপিয়ার ডাক একটি পরিচিত এবং শ্রুতিমধুর শব্দ যা অনেকের কাছেই পরিচিত। ➠ শিয়র- মাথা। ➠ আখেরি- শেষ। ➠ দক্ষিণ বাহু- ডান হাত; কারো প্রধান অবলম্বন বা সহযোগীতা বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়। ➠ জ্যোতি- উজ্জ্বলতা; দীপ্তি। ➠ ক্ষীণ- মৃদু। ➠ তাপ- উত্তাপ। ➠ হস্ত- হাত। ➠ পেরেসান- বিপর্যস্ত; ক্লান্ত। ➠ পরশ-মানিক- স্পর্শমণি; যার ছোঁয়ায় লোহাও সোনা হয়। ➠ তখত- সিংহাসন। ➠ সাইমুম- শুকনো উত্তপ্ত শ্বাসরোধকারী প্রবল হাওয়া- বিশেষত মরুভূমির হাওয়া। ➠ মশক- পানি বইবার চামড়ার থলে। ➠ দোর্রা- চাবুক। ➠ চীর- ছিন্ন বস্ত্র। ➠ চীরধারী- ছিন্ন বস্ত্র পরিধানকারী। ➠ পিরান- জামা। ➠ নান্দী- স্তুতি; কাব্যপাঠ বা নাটকের শুরুতে ছোট করে মঙ্গলসূচক প্রশস্তি পাঠ। ➠ শমসের- তরবারি। ➠ দস্ত- হাত। ➠ পেরেশান- বিপর্যস্ত; ক্লান্ত। ➠ খালেদ- খালিদ বিন ওয়ালিদ সপ্তম শতাব্দীর একজন আরবের বীর সেনাপতি ছিলেন। খলিফা আবু বকর এবং উমরের সময়কার বীর যোদ্ধা। আবু বকর (রা)-এর মৃত্যুরপর উমর খলিফা হলে খালিদকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদাকে সেনাপতি নিয়োগ করেন। কারণ, অনেক মুসলিম বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, খালিদের কারণেই যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হচ্ছে। এই ব্যাপারে উমর বলেছিলেন : বিজয় আল্লাহর তরফ থেকে আসে; শুধু খালিদের কারণে নয়। ➠ উমর ফারুক- ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। ইসলাম ধর্মগ্রহণের পূর্বে তিনি পৌত্তলিক ছিলেন। তাঁর খেলাফতের সময়কাল দশ বছর (৬৩৪-৬৪৪ খিষ্টাব্দ)। তাঁর শাসনামলে ইসলামি রাষ্ট্রের সীমা আরব সাম্রাজ্য থেকে মিশর ও তুর্কিস্তানের সীমা পর্যন্ত প্রসারিত হয়। একজন ন্যায়নিষ্ঠ, নির্ভীক ও গণতন্ত্রমনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর খ্যাতি চির অম্লান। 'ফারুক' হজরত উমরের উপাধি। যিনি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেন তাঁকেই 'ফারুক' বলা হয়। হজরত উমর (রা.) ছিলেন সত্যের একজন দৃঢ়চিত্ত উপাসক। ➠ ‘তোমার স্মৃতি যে আযানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন’- হজরত উমরের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বে নামাজের জন্য প্রকাশ্য আজান দেয়ার রীতি ছিল না। কোরেশদের ভয়ে মুসলমানরা উচ্চরবে আজান দিতে সাহস পেত না। উমর ছিলেন কোরেশ বংশোদ্ভূত শ্রেষ্ঠবীর। তিনি যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন, তখন প্রকাশ্যে আজান দিতে আর কোনো বাধা রইল না। তাই আজানের সঙ্গে যে উমরের স্মৃতি বিজড়িত সে কথা অনেক মুয়াজ্জিন জানে না। ➠ জেরুজালেম- ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি প্রাচীন শহর জেরুজালেম। ➠ আবু শাহমা- হজরত উমরের পুত্র। মদপানের অপরাধে খলিফা তাকে ৮০টি বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন এবং নিজেই বেত্রাঘাত করেন। বেত্রাঘাতের ফলে আবু শাহমার মৃত্যু হয়। ➠ খলিফাতুল-মুসলেমিন- মুসলিমদের খলিফা; মুসলিমদের প্রতিনিধি |
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি: |
|---|
| ‘উমর ফারুক’ কবিতাটিতে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা)-এর জীবনাদর্শ, চরিত্র-মাহাত্ম্য, মানবিকতা এবং সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। খলিফা উমর (রা) ছিলেন একজন মহৎ ব্যক্তিত্ব। তাঁর চরিত্রে একাধারে বীরত্ব, কোমলতা, নিষ্ঠা এবং সাম্যবাদী আদর্শের অনন্য সমন্বয় ঘটেছিল। বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক হয়েও তিনি অতি সহজ, সরল, অনাড়ম্বর জীবনযাপন করেছেন। নিজ ভৃত্যকেও তিনি তাঁর সঙ্গে সমান মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত হননি। ন্যায়ের আদর্শ সমুন্নত রাখতে তিনি আপন সন্তানকে কঠোরতম শাস্তি দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি। তিনি ছিলেন আমির-উল-মুমেনিন। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে আদর্শবান ব্যক্তিত্ব বলে বিশ্বাস করেই বলেছিলেন, তাঁর পরে যদি কেউ নবি হতেন, তাহলে তিনি হতেন উমর। মহৎপ্রাণ ও আদর্শ মানব চরিত্র অর্জনের জন্য উমর ফারুককে কবি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে কবিতায় উপস্থাপন করেছেন। |
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার কবি পরিচিতি: |
|---|
|
কাজী নজরুল ইসলাম ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ সালে (২৪শে মে ১৮৯৯) ভারতের
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন। ছেলেবেলায় তিনি লেটো গানের দলে যোগ দেন। পরে বর্ধমান ও ময়মনসিংহের
ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯১৭ সালে তিনি
সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি যান। সেখানেই তাঁর
সাহিত্য-জীবনের সূচনা ঘটে। তাঁর লেখায় তিনি সামাজিক অবিচার ও পরাধীনতার
বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এজন্য তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ বলা হয়। বাংলা
সাহিত্য জগতে তাঁর আবির্ভাব এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। কবিতা, উপন্যাস,
নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখায় তিনি প্রতিভার
স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি গজল, খেয়াল ও রাগপ্রধান গান রচনা করে খ্যাতি অর্জন
করেন। আরবি-ফারসি শব্দের সার্থক ব্যবহার তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে।
মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে কবি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে
ফেলেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অসুস্থ কবিকে ঢাকায় আনা হয় এবং পরে তাঁকে
বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। তাঁকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবির
মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। তাঁর রচিত কাব্যগুলোর মধ্যে অগ্নিবীণা, বিষের
বাঁশি, ছায়ানট, প্রলয়শিখা, চক্রবাক, সিন্ধুহিন্দোল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি তাঁর
রচিত গল্প ও উপন্যাস। যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী ও রাজবন্দীর জবানবন্দী
তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। ২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ সালে কবি ঢাকার পি.জি. হাসপাতালে (বর্তমান নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদ-সংলগ্ন প্রাঙ্গণে তাঁকে পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।। |
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
|---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন |
|---|
| ----- |
| অনুধাবনমূলক প্রশ্ন |
|---|
| ------ |
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
|---|
| নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: কাজী পাড়ার চেয়ারম্যান আব্বাস আলী। একবার তার নির্বাচনি এলাকার অধিকাংশ মানুষ ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু বানভাসি মানুষ একদিনও চেয়ারম্যান সাহেবের দেখা পেলেন না। কারণ তিনি নাকি ঢাকায় জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন। অসহায় লোকগুলো খোলা আকাশের নিচে বোবা চাউনি মেলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়। বন্যা শেষে একদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেয়ারম্যানের বাগানবাড়ি তল্লাশি করে ত্রাণের প্রচুর টিন ও খাদ্যসামগ্রী উদ্ধার করে। ক. ‘উমর ফারুক’ কবিতা কোন কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে? খ. হজরত উমরকে ‘আমিরুল মুমেনিন’ বলার কারণ কী? গ. চেয়ারম্যান আব্বাস আলী যেদিক থেকে হজরত উমরের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো। ঘ. আব্বাস আলী চেয়ারম্যানকে উমরের মতো আদর্শ মানুষ হতে হলে কী কী করতে হবে “উমর ফারুক’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা করো। |
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
|---|
| নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: আহসান সাহেব শহরের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। অনেক অর্থসম্পদ থাকার পরও তিনি প্রয়োজনের বেশি খরচ করা পছন্দ করেন না। তার বাড়িতে আসবাবপত্র অত্যন্ত সীমিত। জামাকাপড় ও চলাফেরা অত্যন্ত সাধারণ। পাড়ার সাধারণ মানুষদের সাথে খুব সহজেই তিনি মিশে যান এবং তাদের দুঃখকষ্টের কথা শুনেন। ক. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন? খ. কবি আবু শাহমার কবরে গিয়ে হজরত উমরকে সালাম করে চলে আসেন কেন? গ. উদ্দীপকে ‘উমর ফারুক’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “সাব্বির সাহেব হজরত উমর (রা.)-এর সাথে আংশিক সাদৃশ্যপূর্ণ।”- বিশ্লেষণ করো। |
| ----------- |
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
|---|
| নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: সুফিয়া ১০ বছর ধরে বিশ্বস্ততার সাথে সিরাজ সাহেবের বাসায় কাজ করে। কিছুদিন আগে সিরাজ সাহেব জানতে পারেন। সুফিয়া সুযোগ পেলেই বাসা থেকে টাকাপয়সা চুরি করে। চুরির প্রমাণ পেয়ে সিরাজ সাহেব সুফিয়াকে এককালীন কিছু টাকা দিয়ে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেন। ক. উমর (রা.) নগর ভ্রমণে বের হয়ে কী দেখতে পান? খ, ‘সাইমুম-ঝড়ে। পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক’নুয়ে’- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘উমর ফারুক’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো। ঘ. “কিছুটা মিল থাকলেও ‘উমর ফারুক’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনাটির প্রেক্ষাপট ভিন্ন।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
| ----------- |
| ‘উমর ফারুক’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
|---|
| নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: আলম হোসেন কদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এলাকাবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টার শেষ নেই। তাঁর দানে এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটা দাতব্য প্রতিষ্ঠান। আবার অপরাধের শাস্তি দিতে তিনি কখনোই পিছপা নন। তাই তাঁর পুত্র রফিক গ্রামের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলে গ্রাম্য মজলিসে দোষী সাব্যস্ত করে নিজ হাতে তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন পিতার কাছে ক্ষমা চেয়েও শাস্তি থেকে মুক্তি পায়নি সে। আলম হোসেনের আদর্শ হলো- সাম্য, সুবিচার ও মানবতা। ক. ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত? খ. ‘সেদিন গিয়াছে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? গ. উদ্দীপকে আলম হোসেনের চরিত্রে হজরত উমর (রা)-এর কোন চারিত্রিক গুণাবলি প্রকাশ ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘আলম হোসেনের শাসনকার্যে উমর ফারুক (রা)-এর শাসনকার্যের প্রতিফলন ঘটেছে।’- উক্তিটি ‘উমর ফারুক’ কবিতাবলম্বনে বিশ্লেষণ করো। |
| ----------- |
| তথ্যসূত্র : |
|---|
|
১. বাংলা সাহিত্য : নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
ঢাকা, ২০২৫। ২. নজরুলের কবিতাসমগ্র: কবি নজরুল ইনসটিটিউট, তৃতীয় সংস্করণ, নভেম্বর ২০১৯। ৩. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |
| মূল কবিতা |
|---|
উমর ফারুক
তিমির রাত্রি-এশার আজান শুনি দূর মসজিদে, |
