অনুধাবন শক্তি: অষ্টম শ্রেণির নির্মিতি অংশ
![]() |
অনুধাবন শক্তি |
অনুধাবন শক্তি: |
---|
লিখিত যে কোনো বিষয়ে কোনো না কোনো মানুষ পাঠ করে থাকে কিন্তু যে অংশটুকু পড়ে তার মূলভাব সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে তাকে বলা হয় তার অনুধাবন দক্ষতা। একটি পাঠে কিছু শব্দ থাকে, কিছু নতুন বিষয় থাকতে পারে যার অর্থ বা ধারণা জানা না থাকলে পাঠটির পূর্ণ ধারণা লাভ সহজ হয় না। তাই একটি পাঠ সম্পূর্ণরূপে বুঝতে হলে পাঠ সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ও জানতে এবং বুঝতে হয়। আবার তা কেবল মুখস্ত করলে সেটি বেশিদিন মনে নাও থাকতে পারে। সেই জানা জ্ঞান অন্য কোনো পাঠের সাথে বা জ্ঞানের সাথে মেলাতে পারার ক্ষমতাও থাকতে হয়। এ ভাবেই অনুধাবন দক্ষতা পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হয়। |
১. নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং অনুধাবন করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : |
---|
স্পন্দন, প্রতীতি, প্রান্ত, হিমেল, বর্ণ, প্রাপ্তি শীতের ছুটিতে জগৎপট্টিতে
বেড়াতে গিয়েছে। ওরা সবাই এলাকাটি ঘুরে ঘুরে দেখল। ওখানে একটি প্রাথমিক
বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি বাজার আছে। এলাকার অধিকাংশ মানুষই
শিক্ষিত। কৃষিজীবী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষ সেখানে বসবাস
করে। বেশকিছু লোক জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ নানা দেশে চাকরি
নিয়ে গেছে। এলাকার জনগণ মোটামুটি সচ্ছল। বৈদেশিক অর্থ লেন-দেনের জন্য ওখানে
বেশকিছু ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোনো কোনো বাড়িতে ফুলের বাগান রয়েছে।
জগৎপট্টি বাংলাদেশের একটি আদর্শ গ্রামীণ এলাকা। ক. ‘প্রতীতি’ শব্দের অর্থ কী? ১ খ. কৃষিজীবী কারা? ১ গ. নানান পেশার মানুষ বলতে কী বুঝায়? ১ ঘ. জীবিকা বলতে কী বুঝ? ১ ঙ. আদর্শ গ্রামের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। ১ |
ক. ‘প্রতীতি’ শব্দের অর্থ জ্ঞান। খ. কৃষি কাজ করার মাধ্যমে যারা জীবিকা অর্জন করে তারাই কৃষিজীবী। গ. সব মানুষের জীবিকা অর্জনের পদ্ধতি এক নয়। একেক জন একেক ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকেন। কেউ চাকরি করেন, কেউ কৃষিকাজ করেন, কেউ মাছ ধরেন কেউ শিক্ষকতা করেন, কেউ বা ব্যবসা করেন। নানা পেশার মানুষ বলতে এই বৈচিত্রপূর্ণ কাজে নিয়োজিত মানুষদেরই বোঝানো যায়। ঘ. জীবন ধারণের জন্য আমরা যে কাজের সাথে জড়িত থাকি তা-ই আমাদের জীবিকা। মানুষের জীবন ধারনের জন্য অর্থ উপার্জন করতে হয়। এজন্য মানুষ নানা ধরনের কাজ করে। অর্থাৎ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত থাকে। এভাবে যে কাজ বা পেশায় নিয়োজিত থেকে আমরা পারিশ্রমিক অর্জন করি সেই কাজ বা পেশাই জীবিকা হিসেবে পরিচিত। ঙ. একটি আদর্শ গ্রাম বলতে আমরা বুঝি সেই গ্রামকে যেখানে জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থার সুন্দর সমন্বয় থাকে। একটি আদর্শ গ্রামে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দরকারি ব্যবসা, ধর্মীয় ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সঠিক পরিমাণে থাকে। জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত হয়। মানুষের মাঝে শান্তি-শৃঙ্খলা বিদ্যমান থাকে। |
২. নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং অনুধাবন করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : |
---|
দুঃখ চোখে জল হয়ে দেখা দেয়। চোখের পাতায় দুঃখ টলমল করে এক ফোঁটা জল হয়ে।
শহিদ মিনারের দিকে তাকালে মনে হয় মুক্তোর মতো; কিন্তু তা দুঃখের মুক্তো।
শহিদ মিনারও সুন্দর, কিন্তু অনেক বেদনার,। অনেক দীর্ঘশ্বাসের। কার চোখে
টলমল করছে ওই জলের ফোঁটা, ওই দুঃখে নীরবে কাঁদছে সবুজ বাংলাদেশ, তার চোখে
টলমল করছে কান্না। শহিদ মিনার বাংলাদেশের চোখের জল। ক. ‘নীরব’ শব্দের বিপরীত শব্দ কী? ১ খ. শহিদ মিনার বেদনার কেন? ১ গ. ‘দুঃখ’-এর দু’টি প্রতিশব্দ লেখ। ১ ঘ. শহিদ মিনার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের মধ্যে চেতনাগত সাদৃশ্য উল্লেখ করো। ২ |
ক. ‘নীরব’ শব্দের বিপরীত শব্দ ‘সরব’। খ. শহিদ মিনারের সাথে আমাদের ভাই হারানোর বেদনার স্মৃতি জড়িত। তাই শহিদ মিনার বেদনার। ১৯৫২ সালে ভাষা-আন্দোলনে পাকিস্তান সরকারের পুলিশের গুলিতে নৃশংস হত্যার শিকার হন- সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেকে। তাঁদের সেই মহান আত্মত্যাগের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় শহিদ মিনার। ভাই হারানোর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় বলে শহিদ মিনার বেদনার। গ. ‘দুঃখ’-এর দুটি প্রতিশব্দ হলো- কষ্ট ও বেদনা। ঘ. শহিদ মিনার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ উভয়ই আমাদের জাতীয় প্রতীক। শহিদ মিনার আমাদের মনে করিয়ে দেয় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন ও সেই আন্দোলনের শহিদদের কথা। আর স্মৃতিসৌধ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি মাতৃভাষার অধিকার। আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন স্বদেশভূমি। তাই উভয় স্থাপত্যই আমাদের মনে দেশপ্রেমের চেতনা জাগিয়ে তোলে। |
৩. নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং অনুধাবন করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : |
---|
সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও
নিরন্তর সাধনার দরকার হয়। সব মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। পরিশ্রমের
দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত
হিসেবে গ্রহণ করেছে, জীবন সংগ্রামে তারই জয় হয়েছে। কর্মের প্রতি
নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি জীবনে সফল সৈনিক হতে পারে। কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের
বোঝাস্বরূপ। অন্যদিকে, শ্রমশীলতাই মানব জীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। আমাদের
জীবনে উন্নতি করতে হলে, জীবনে সুখী হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। i. ‘সৌভাগ্য’ শব্দের বিপরীত শব্দ কী? ১ ii. সৌভাগ্য অর্জনের জন্য কী করতে হয়? ১ iii. কে সমাজের বোঝা? ১ iv. জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে হলে কিসের প্রয়োজন? ২ |
i. ‘সৌভাগ্য’ শব্দের বিপরীত শব্দ হচ্ছে ‘দুর্ভাগ্য’। ii. সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনা করতে হয়। iii. কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের বোঝা। iv. জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে হলে কর্মকাকে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পরিশ্রমই উন্নতির মূল চাবিকাঠি। কর্মের প্রতি একনিষ্ঠ ব্যক্তিগণই জীবন সংগ্রামে সফল হয়েছেন। |
৪. নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং অনুধাবন করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : |
---|
সুন্দরকে জানার যে জ্ঞান তার নাম ‘নন্দনতত্ত্ব’। নন্দনতত্ত্ব মানে সুন্দরকে
বিশ্লেষণ করা, সুন্দরকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা। সব সুন্দরের সৃষ্টির
মধ্যেই একটা রূপ আছে, তার নাম স্বাধীনতা- অপর নাম যা খুশি তাই করা। যে কাজ
সকলকে আনন্দ দেয়, খুশি করে তাই সুন্দর। স্বার্থপর বা অসংগত আমির খুশি নয়,
অনেক মনে খুশির বিস্তার করা আমি। অন্ধকার ঘর আলোকিত করার জন্যে নিয়ম মেনে
প্রদীপ জ্বালতে হয়, ঘরে অসংগত আগুন লাগিয়ে ঘর আলোকিত করা নয়। i. ‘আগুন’ শব্দের দুটি সমার্থক শব্দ লেখ। ১ ii. সুন্দর-এর বিপরীত শব্দ লেখ। ১ iii. সুন্দরকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার নাম কী? ১ iv. অন্ধকার ঘরে কীভাবে আগুন জ্বালাতে হবে? ১ v. অনুচ্ছেদে ‘স্বাধীনতা’ কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? ১ |
i. ‘আগুন’ শব্দের দুটি সমার্থক শব্দ হলো অগ্নি ও হুতাশন। ii. সুন্দর-এর বিপরীত শব্দ হলো কুৎসিত। iii. সুন্দরকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার নাম নন্দনতত্ত্ব। iv. অন্ধকার ঘরে নিয়ম মেনে আগুন জ্বালাতে হবে। সারা ঘরে যথেচ্ছভাবে আগুন না জ্বালিয়ে প্রদীপ জ্বালাতে হবে। v. অনুচ্ছেদে স্বাধীনতা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মনের আনন্দ প্রকাশ করা অর্থে। সুন্দর সৃষ্টির জন্য মানুষ নানা শিল্পমাধ্যম বেছে নেয়। সে মাধ্যমগুলোতে মনের স্বাধীনতা বা আনন্দের প্রকাশ ঘটে। |
৫. নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং অনুধাবন করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : |
---|
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: অষ্টম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,
বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |