রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

কবি-পরিচিতি

  1. জন্মসন ও স্থান:

    ১৮৬১ সালের ৭ই মে (২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

  2. পিতা-মাতা:

    পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদাসুন্দরী দেবী।
    তিনি ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্দশ সন্তান।

  3. ছদ্মনাম:

    ১. ভানুসিংহ ঠাকুর,
    ২. অকপট চন্দ্র ভাস্কর,
    ৩. আন্নাকালী পাকড়াশী,
    ৪. ষষ্ঠীচরণ দেবশর্মা,
    ৫. বানীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ,
    ৬. শ্রীমতী কনিষ্ঠা,
    ৭. শ্রীমতী মধ্যমা,
    ৮. দিকশূন্য ভট্টাচার্য,
    ৯. নবীন কিশোর শর্মন।

  4. উপাধি:

    ১. কবিগুরু বা গুরুদেব
    ২. বিশ্বকবি (প্রথম ‘বিশ্বকবি’ উপাধি দেন পণ্ডিত রোমান ক্যাথলিক ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়।)

  5. পড়াশোনা:

    বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হলেও তিনি বেশিদিন স্কুলের শাসনে থাকতে পারেননি। এমনকি সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথকে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হলেও দেড় বছর পরে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে তিনি দেশে ফিরে আসেন। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি লাভ করেননি, কিন্তু সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণা এক বিস্ময়ের বস্তু।

  6. কিছু তথ্য:

    ১. তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
    ২. প্রথম জীবনে বিহারীলাল চক্রবর্তীর অনুসারী ছিলেন। তার ‘কবিকাহিনী’ (১৮৭৮), বনফুল (১৮৮০), ভগ্নহৃদয় (১৮৮১) কাব্য তিনটিতে বিহারীলালের প্রভাব সুস্পষ্ট।
    ৩. ১৮৭৮ সালে প্রথমবার ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন।
    ৪. ১৮৮৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায় চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে ভরতারিণীর নাম হয়েছিল ‘মৃণালিনী দেবী’।
    ৫. ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ নামে একটি আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন যা ১৯২১ সালে ‘বিশ্বভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
    ৬. হিন্দু মুসলমানের মিলনের জন্য ‘রাখি বন্ধন’ উৎসবের প্রচলন করেন।
    ৭. ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট (২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮) মারা যান।

  7. সাহিত্যকর্ম:

    ১. রবীন্দ্রনাথ আট বছর বয়সে প্রথম কবিতা লিখেন। ১৮৭৪ সালে তের বছর বয়সে তাঁর কবিতা ‘অভিলাষ’ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় (সূত্র: বাংলাপিডিয়া), ‘হিন্দুমেলার উপহার’ অমৃতবাজার পত্রিকায় (সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান) প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সালে সতের বছর বয়সে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবি-কাহিনী’ প্রকাশিত হয়।
    ২. রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে- ৫২টি কাব্য, ১৩টি উপন্যাস, ৩৮টি নাটক, ৩৬টি প্রবন্ধ, ৯৫টি ছোটগল্প, ১৯১৫টি গান।

  8. কাব্যগ্রন্থ:

    ১. ‘কবি-কাহিনী’ (১৮৭৮) প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। ‘ভারতী’ পত্রিকায় পৌষ-চৈত্র ১২৮৪ সংখ্যায় এর কবিতাগুলি প্রকাশিত হয়।
    ২. বনফুল (১৮৮০/১২৮৬ বঙ্গাব্দ)। এটি রবীন্দ্রনাথ লিখিত সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ কাব্য। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকাশিত কাব্য। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার আরো চার বছর পূর্বে রচিত হয়। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ পনের বছর বয়সে কাব্যটি লিখেন এবং ধারাবাহিকভাবে ১২৮২ অগ্রহায়ণ থেকে ১২৮৩ আশ্বিন- কার্তিক পর্যন্ত ‘জ্ঞানাঙ্কুর ও প্রতিবিম্ব’ (সম্পাদক শ্রীকৃষ্ণ দাস) নামক মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, চার বছর পর যখন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় তখন তাঁর বয়স উনিশ।
    ৩. সন্ধ্যা সংগীত (১৮৮২)।
    ৪. ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (১৮৮৯)। ব্রজবুলি ভাষায় রচিত পদাবলী।
    ৫. সোনার তরী (১৮৯৪)। এতে কবি তার জীবন ও কীর্তির ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের কথা বলেছেন।
    ৬. চৈতালী (১৮৯৬)।
    ৭. চিত্রা (১৮৯৬)। এর বিখ্যাত কবিতা- ১৪০০ সাল, উর্বশী।
    ৮. কল্পনা (১৯০০)।
    ৯. ক্ষণিকা (১৯০০)।
    ১০. নৈবেদ্য (১৯০১)
    ১১. খেয়া (১৯০৬)। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করা হয়।
    ১২. গীতাঞ্জলি (১৯১০)। এ কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কাব্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই Song Offerings নামে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ইংরেজ কবি W.B. Yeats এর ভূমিকা লিখে দেন। যা ১৯১২ সালে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয়।
    ১৩. বলাকা (১৯১৬)। গতিচেতনা বিষয়ক কাব্য। কাব্যটি উইলিয়াম পিয়রসনকে উৎসর্গ করা হয়। এতে মোট ৪৫টি কবিতা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কবিতা- সবুজের অভিযান, শঙ্খ, ছবি, সাজাহান, বলাকা ইত্যাদি।
    ১৪. পলাতকা (১৯১৮)। এতে নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরা হয়েছে।
    ১৫. মানসী (১৯২০)
    ১৬. কথা ও কাহিনী (১৯২০)
    ১৭ পূরবী (১৯২৫)। আর্জেন্টিনার কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে উৎসর্গ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে 'বিজয়া' বলে সম্বোধন করতেন।
    ১৮. লেখন (১৯২৭)
    ১৯. মহুয়া (১৯২৯)
    ২০. পুনশ্চ (১৯৩২)
    ২১. পরিশেষ (১৯৩২)
    ২২. বিচিত্রতা (১৯৩৩)
    ২৩. শেষসপ্তক (১৯৩৫)
    ২৪. শ্যামলী (১৯৩৬)
    ২৫. পত্রপুট (১৯৩৬)
    ২৬. ছড়ার ছবি (১৯৩৭)
    ২৭. রোগশয্যায় (১৯৪০)
    ২৮. আরোগ্য (১৯৪১)
    ২৯. জন্মদিনে (১৯৪১)
    ৩০. শেষলেখা (১৯৪১) তার শেষ গ্রন্থ। মৃত্যুর পর প্রকাশিত।

  9. উপন্যাস:

    ১. করুণা (১৮৭৭): প্রথম লেখা উপন্যাস। উপন্যাসটি অসমাপ্ত, তাই একে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয় না। ভারতী পত্রিকায় এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
    ২. বৌঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩) প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য ও বাকলার জমিদার রামচন্দ্রের বিবাদকে উপজীব্য করে রচিত একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। এটি ভারতী পত্রিকায় প্রথম ছাপা হয়। সৌদামিনী দেবীকে গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়। পরবর্তীতে এর কাহিনি অবলম্বনে 'প্রায়শ্চিত্ত' নাটক রচনা করেন।
    ৩. রাজর্ষি (১৮৮৭)। ত্রিপুরার রাজপরিবারের ইতিহাস নিয়ে রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস। 'বালক' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ উপন্যাসের প্রথমাংশ নিয়ে ‘বিসর্জন’ নাটক রচিত হয়।
    ৪. চোখের বালি (১৯০৩)। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস।
    ৫. নৌকাডুবি (১৯০৬) সামাজিক উপন্যাস 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
    ৬. প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮) একটি হাস্যরসাত্মক উপন্যাস। এর নাট্যরূপ ‘চিরকুমার সভা’ প্রহসন।
    ৭. গোরা (১৯১০) রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘতম উপন্যাস।
    ৮. ঘরে বাইরে (১৯১৬)। এটি চলিত ভাষায় লেখা রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস। বৃটিশ ভারতের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রচিত। 'সুবজপত্র' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর উল্লেখযোগ্য চরিত্র- নিখিলেশ, বিমলা ও সন্দীপ। নিখিলেশ রাজবংশের যুবক অতিমাত্রায় শুদ্ধাচারী, বিমলা সাধারণ ঘরের মেয়ে, সন্দীপ স্বদেশী আন্দোলনের নেতা।
    ৯. চতুরঙ্গ (১৯১৬)। সাধু ভাষায় লিখিত সর্বশেষ উপন্যাস।
    ১০. যোগাযোগ (১৯২৯)। সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। মাসিক বিচিত্রায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশকালে নাম ছিল 'তিন পুরুষ'। উল্লেখযোগ্য চরিত্র- মধুসূদন ও কুমুদিনী।
    ১১. শেষের কবিতা (১৯২৯)। এটি ১৯২৮ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ছাপা হয়। এ উপন্যাসে ভাষাবিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ আছে।
    ১২. দুইবোন (১৯৩৩)। চরিত্র- শর্মিলা, উর্মিলা, শশাঙ্ক।
    ১৩. মালঞ্চ (১৯৩৪)।
    ১৪. চার অধ্যায় (১৯৩৪, শেষ উপন্যাস)। সমসাময়িক বিপ্লবী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত একটি বিয়োগান্ত প্রেমের উপন্যাস।

  10. নাটক:

    ১. রুদ্রচণ্ড (১৮৮১)। [অনেকের মতে এটি নাটক নয়, এতে সামান্য নাটকীয়তা আছে মাত্র।
    ২. বাল্মীকি প্রতিভা (১৮৮১)। প্রথম প্রকাশিত নাটক।
    ৩. রাজা ও রাণী (১৮৮৯)।
    ৪. বিসর্জন (১৮৯০): রাজর্ষি উপন্যাসের গল্পাংশ রচিত।
    ৫. শারদোৎসব (১৯০৮)।
    ৬. ডাকঘর (১৯১২)।
    ৭. অচলায়তন (১৯১২)।
    ৮. মুক্তধারা (১৯২২)।
    ৯. বসন্ত (১৯২৩)। এটি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন।
    ১০. রক্তকরবী (১৯২৬)।
    ১১. কালের যাত্রা (১৯৩২)। নাটকটি শরৎচন্দ্রকে উৎসর্গ করেন।

  11. নৃত্যনাট্য:

    নৃত্যনাট্য হলো গীতিনির্ভর নাট্যধর্মী নৃত্য। নানা কাহিনি অবলম্বনে এ নৃত্য নির্মিত হয়।
    ১. চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২)।
    ২. নটীর পূজা (১৯২৬)। এ নাটকে প্রথম অভিনয়ের সাথে নাচ ও গানের প্রয়োগ ঘটান।
    ৩. তাসের দেশ (১৯৩৩) নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করেন।
    ৪. চণ্ডালিকা (১৯৩৩)।
    ৫. শ্যামা (১৯৩৯)।
    ৬. মায়ার খেলা।

  12. প্রহসন:

    ১.গোড়ায় গলদ (১৮৯২)।
    ২. বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭)।
    ৩. হাস্যকৌতুক (১৯০৭)।
    ৪. চিরকুমার সভা (১৯২৬)। এটি ‘প্রজাপ্রতি নির্বন্ধ’ উপন্যাসের নাট্যরূপ।
    ৫. শেষ রক্ষা।

  13. প্রবন্ধ:

    ১. বিবিধ প্রসঙ্গ (১৮৮৩)।
    ২. কালান্তর (১৯৩৭, রাজনৈতিক প্রবন্ধ সংকলন)।

  14. ছোটগল্প:

    রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের জনক। তাঁর ছোটগল্পগুলো কাব্যধর্মী। ছোটগল্পের সংখ্যা ৯৫টি।
    ১. ভিখারিণী (১৮৭৪) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প।
    ২. দেনাপাওনা (১৮৯০)। বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্প।

  15. প্রেমের গল্প:

    • শাস্তি (১৮৯৩)। এই গল্পের নায়িকা চন্দরা। সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির, তবে তীব্র ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী চরিত্র এই চন্দরা।
    • অধ্যাপক
    • একরাত্রি। চরিত্র- সুরবালা।
    • নষ্টনীড়। চরিত্র- চারুলতা (চারু)।
    • পাত্র ও পাত্রী।
    • মধ্যবর্তিনী।
    • মহামায়া।
    • মাল্যদান।
    • দৃষ্টিদান।
    • ল্যাবরেটরি।
    • সমাপ্তি। চরিত্র- মৃন্ময়ী। বিখ্যাত উক্তি- ‘শিশুরাজ্যে এই মেয়েটি একটি ছোটখাট বর্গির উপদ্রব বলিলেই হয়।’
    • স্ত্রীর পত্র।
    • শেষকথা।

  16. সামাজিক গল্প:

    • পোস্ট মাস্টার। চরিত্র- রতন। শাহজাদপুর কাচারি বাড়ির একতলায় একটি পোস্ট অফিস ছিল। রবীন্দ্রনাথ শাহজাদপুরে আসলে সেখানকার পোস্ট মাস্টারের সাথে কথাবার্তা গল্পগুজব হতো। মূলত এই পোস্ট মাস্টারের জীবনের নানা দিক নিয়েই গল্পটি রচিত।
    • হৈমন্তী। চরিত্র-হৈমন্তী, অপু। এতে যৌতুক প্রথা প্রাধান্য পেয়েছে।
    • কাবুলিওয়ালা। চরিত্র- রহমত, খুকি। বিখ্যাত উক্তি- ...‘কিন্তু মঙ্গল আলোকে আমার শুভ উৎসব উজ্জ্বল হইয়া উঠিল।’
    • মুসলমানীর গল্প। এতে হিন্দু মুসলমান বিরোধের মূল কারণগুলো অনুসন্ধান করেছেন।
    • ছুটি। চরিত্র- ফটিক। কিশোর চরিত্র।
    • দেনাপাওনা
    • মেঘ ও রৌদ্র
    • দান প্রতিদান
    • ব্যবধান

  17. অতিপ্রাকৃত গল্প:

    • কঙ্কাল।
    • ক্ষুধিত পাষাণ।
    • গুপ্তধন।
    • জীবিত ও মৃত। বিখ্যাত উক্তি- কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই।
    • নিশীথে
    • মণিহার

  18. প্রকৃতি ও মানবসম্পর্কিত গল্প:

    • শুভা।
    • অতিথি।
    • আপদ।

  19. ভ্রমণকাহিনি:

    রবীন্দ্রনাথ মোট ১২ বার বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন। ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ সিংহল ভ্রমণ (১৯৩৪) করেন। এসব ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলো বিভিন্ন বইয়ে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
    • য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র (১৮৮১)। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থ তথা চলিত ভাষায় লেখা প্রথম গ্রন্থ।
    • য়ুরোপ প্রবাসীর ডায়রি (১৮৯১)
    • জাভা-যাত্রীর পত্র (১৯২৯)
    • রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১)
    • পারস্যে (১৯৩৬)
    • পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)।

  20. পত্র সংকলন :

    • ‘ছিন্নপত্র’ (১৯১২)। এতে মোট ১৫৩ টি পত্র আছে। এর প্রথম ৮টি পত্র শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে এবং ১৪৫টি পত্র ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লেখা।
    • ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ রানু অধিকারীকে লেখা।
    • ‘পথে ও পথের প্রান্তে’ নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা।

  21. চিত্রকলা:

    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় ৭০ ঊর্ধ্ব বয়সে। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ এর মধ্যে অঙ্কিত ছবি ও স্কেচের সংখ্যা প্রায় ২০০০।
    • নিজের আঁকা ছবিগুলোকে ‘শেষ বয়সের প্রিয়া’ বলে আখ্যায়িত করতেন।

  22. আত্মজীবনী:

    • জীবনস্মৃতি (১৯১২)
    • ছেলেবেলা (১৯৪০)
    • আত্মপরিচয় (১৯৪৩)

  23. সম্পাদিত পত্রিকা:

    • সাধনা (১৮৯১)। এ পত্রিকার আয়ু ছিল মাত্র চার বছর। প্রথম তিন বছর সম্পাদকের নাম ছিল রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথের ছেলে সুধীন্দ্রনাথের। চতুর্থ বছরে সম্পাদের নাম দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথের। তবে শুরু থেকেই এ পত্রিকার চালিকা শক্তি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
    • ভারতী
    • বঙ্গদর্শন
    • তত্ত্ববোধিনী
    • ভাণ্ডার

  24. নোবেল পুরস্কার:

    • ১৯১৩ সালের নভেম্বর মাসে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
    • ২০০৪ সালের ২৪শে মার্চ শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি উত্তরায়নের জাদুঘর থেকে নোবেল পুরস্কার পদক চুরি হয়। আজো তা উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি।

  25. সম্মাননা:

    • ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেন।
    • ১৯১৫ সালে বৃটিশ সরকার তাকে ‘নাইট’ উপাধি দেয়। কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের (১৯১৯) প্রতিবাদে তিনি সে উপাধি বর্জন করেন। উপাধি প্রত্যাখ্যান পত্রে তিনি লর্ড চেমসফোর্ডকে লিখেছিলেন- ‘আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।’
    • ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন স্যার এ এফ রহমান।
    • ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেন।

  26. রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ:

    রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ ছিলেন পীরালি ব্রাহ্মণ (বিধর্মীদের সংস্পর্শে এসে জাত হারানো ব্রাহ্মণরা হলেন পীরালি ব্রাহ্মণ)। তাঁর পূর্বপুরুষ জগন্নাথ কুশারীকে পিরালী ব্রাহ্মণ মেয়ে বিয়ের দায়ে হিন্দু সমাজচ্যুত করা হয়। তার ছেলে পঞ্চানন কুশারী ১৮ শতকের শুরুতে খুলনার দক্ষিণডিহি থেকে কলকাতার গোবিন্দপুরে এসে জেলে পাড়ার পুরোহিত হিসেবে কাজ করলে অনেকে ঠাকুর বলে ডাকেন। এ কাজের পাশাপাশি তিনি ইংরেজদের বাণিজ্য তরীতে দ্রব্য উঠা-নামানোর ঠিকাদারির কাজ করলে ইংরেজদের কাছেও ঠাকুর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং তাদের আনুকূল্য লাভ করেন। তারই একজন উত্তর পুরুষ দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের কাছ থেকে অর্থের পাশাপাশি প্রিন্স উপাধি লাভ করেছিলেন। এভাবে শত বছরের ব্যবধানে জেলেদের পুরোহিত থেকে কলকাতার প্রভাবশালী পরিবারে পরিণত হয়।

  27. রবীন্দ্রনাথের ঢাকায় আগমন:

    • রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় আসেন দুই বার।
    • ১৮৯৮ সালে প্রথম বার আসেন ঢাকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে যোগ দিতে। সম্মেলনটি হয়েছিল ঢাকার ক্রাউন থিয়েটারে। তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ, যোগেন্দ্রনাথ চৌধুরী প্রমুখ।
    • ১৯২৬ সালে দ্বিতীয় বার আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঢাকাবাসীর আমন্ত্রণে। ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উদ্দেশ্যে সফরসঙ্গীসহ নারায়ণগঞ্জে পৌঁছেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করেন। এ সময় ঢাকার বিভিন্ন সংঘঠনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
    • ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ কার্জন হলে তাকে সংবর্ধনা দেয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জি. এইচ. ল্যাংলি। সংবর্ধনাপত্র পাঠ করেন জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ড. আর সি মজুমদার। সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বক্তৃতা দেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল- The meaning of Art.
    • ১৩ ফেব্রুয়ারি কার্জন হলে দ্বিতীয় বক্তৃতা দেন। বিষয়বস্তু ছিল- The Rule of the Gaint.
    • ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় দিনে জগন্নাথ হলের ছাত্রদের অনুরোধে হল বার্ষিকী ‘বাসন্তিকা’র জন্য একটি গান লিখে দেন।
    গানটি ছিল-
    এই কথাটি মনে রেখো
    তোমাদের এই হাসি খেলায়
    আমি এই গান গেয়েছিলেম
    জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়।

Next Post Previous Post